Home > হিজবুত তাওহীদ > মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা:

মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা:

আল্লাহ’র দ্বীনের একমাত্র হিফাযতকারী শিক্ষাব্যবস্থা হলো, মাদরাসা। যেখানে দিবানিশি আল্লাহ তাআলার কুরআন ও তাঁর রাসুল সাঃ-এর সুন্নাহ’র চর্চা হয়। উপরন্তু মদ, জুয়া, হানাহানী, ইভটিজিং, ধর্ষণ, সুদ, ঘুশ, নৈতিকতার পদস্খলনসহ যত অপরাধ রয়েছে, সকল অপরাধ থেকে নিবৃত থাকে এই মাদরাসা ওয়ালারা। মাদরাসা পড়ুয়া কোনো আলেমের বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রমে থাকে বলে কোন প্রমাণ আজ অবদি দেখানো যাবে না। এক কথায় আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর একমাত্র মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু ইহুদি-খ্রিস্টান ও নাস্তিকরা এই মাদরাসার বিরুদ্ধে এমন কোনো ষড়যন্ত্র নেই যা করে নি, করছে না।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই ইহুদি-খ্রিস্টান ও নাস্তিকদের চেয়ে এই মাদরাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সবাইকে হার মানিয়েছে হেযবুত তওহীদ। চলুন প্রথমত তাদের দাবিগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। তাদের দাবি হলো-
১. মাদরাসা থেকে দ্বীনের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া হয় না।
২. মাদরাসা বস্তুবাদ ও বিভক্তির শিক্ষা দেয়।
৩. মাদরাসা চালু থাকলে অন্যায় দমন করা যাবে না।
৪. মাদরাসা থেকেও জঙ্গি হয়।
৫. মাদরাসা শিক্ষা ধর্মব্যবসা চালু রাখে।
৬. মাদরাসায় ধর্মব্যাবসায়ী তৈরি ছাড়া কোনো উপকার হয় না।
৭. মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে হবে:

ইসলাম কী বলে?
মানবজাতির নৈতিক পদস্খলন থেকে মুক্ত করে সোনালি সমাজ উপহার দিতে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থান কোনো তুলনা চলে না। যুগে যুগে সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রের রুপরেখা রুখে দেওয়ার জন্য বিশেষ করে কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা সবচে বেশি ভূমিকা রেখেছে। এ জন্য মাদরাসা ধ্বংস করার জন্য খ্রিস্টানরা বিভিন্ন ধরণের রুপরেখা তৈরি করে। তার মধ্যে জেনারেল ও আলিয়া শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছে।

জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থা:
জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিলো খ্রিস্টানরা। চলুন এ সম্পর্কে হেযবুত তওহীদ কী লিখেছে দেখা যাক-
(মুসলিম জাতিকে গোলাম করার জন্য ইউরোপের খ্রিস্টানরা) সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করেছিল। তার একটি হচ্ছে, শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ শিক্ষাব্যবস্থা হলো এমন এক মাধ্যম যা দ্বারা মানুষের চরিত্রকে যেমনভাবে ইচ্ছা, তৈরি করা যায়। চরিত্রবান মানুষও তৈরি করা যায়, আবার দুশ্চরিত্র মানুষেও পরিণত করা যায়। কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তারই উপর নির্ভর করে সে মানুষটি কেমন মানুষ হবে। দখলকারী শক্তিগুলো তাদের অধিকৃত মুসলিম দেশগুলিতে মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা চালু করল। ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করল স্কুল-কলেজের মাধ্যমে। আরেকটি মাদরাসা শিক্ষা। -শিক্ষাব্যবস্থা পৃ. ২৭

স্কুল-কলেজে তাকে নৈতিকতার কোন শিক্ষা দেওয়া হয় না। পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাবে সে শিক্ষিত সন্তানের মন-মানসিকতার আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়…তাছাড়া সমাজের কোথাও সে নৈতিকতার শিক্ষা পায়না আর্থিক নৈতিক শিক্ষা আল্লাহর নিত্ত-উপস্থিতির ধারণা এদের ব্যক্তি জীবনে নেই বলে এদের নিজেদের লোভ হিংসা অহংকার ইত্যাদির উপর কোন নিয়ন্ত্রন নেই। এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে তার শাস্তির ভয়। -শিক্ষাব্যবস্থা :পৃ. ৮

স্কুল-কলেজে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া হয় নাই, আল্লাহ-রাসুলের শিক্ষা দেওয়া হয় নাই। শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ রাজা-রানীর ইতিহাস। অন্যদিকে ইসলাম সম্পর্কে, ধর্ম সম্পর্কে একটা নেতিবাচক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। স্বার্থপরতা আত্মকেন্দ্রিকতা শেখানো হয়েছে। শিক্ষা হয়ে গেছে এখন অর্থ রোজগারের একমাত্র মাধ্যম। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ১৩

সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় দীন সম্পর্কে প্রায় কিছুই শিক্ষা দেওয়া হয় না এবং সুদভিত্তিক অংক ব্রিটিশ রাজা রানীর ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, পাশ্চাত্যের ধর্মহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা, পাশ্চাত্য বস্তুবাদী দর্শন ইত্যাদি শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম সম্পর্কে বিশেষ করে ইসলাম সম্পর্কে একটা বিদ্বেষভাব শিক্ষার্থীদের মনে প্রবেশ করানো হয়। ওখান থেকে যারা বের হয় তারা চরম আত্মকেন্দ্রিক ও সার্থপর। তারা নিজেদের বৈষয়িক উন্নতি ছাড়া আর কিছুই ভাবেন না। তারা অধিকাংশই আল্লাহকে মনে করেন প্রাচীন যুগের মানুষদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চতুর প্রকৃতির লোকদের তৈরি করা জুজু। আল্লাহর দ্বীনকে মনে করেন সেকেলে মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা। ধর্মকে মনে করেন কল্পকাহিনী। তাদের দৃষ্টিতে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে ধর্ম অচল। এদের মধ্যে অনেক এমন রয়েছে যারা প্রচন্ড ধর্মবিদ্বেষী অথচ মুসলিম পরিবারের জন্য। এর মূল কারণ বস্তুবাদী ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ৬৪

বুঝা গেলো, জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থা পুরোটাই মুসলিমদের ধ্বংশ করার জন্য আবিস্কার করেছিলো খ্রিস্টানরা।

আলিয়া মাদরাসার ইতিহাস:
কওমি ধারার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে ইংরেজরা মুসলমানদের ধর্ম শেখানোর জন্য কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। এ জেড এম শামসুল আলম লিখেছেন : ‘ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ সালে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। কলকাতা মাদ্রাসার মুসলিম অধ্যক্ষ ছিলেন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ১৪৭ বছর পর ১৯২৭ সালে নিযুক্ত শামসুল উলামা কামালুদ্দিন আহমদ। এর আগে প্রথম অধ্যক্ষ ড. এ স্পেনজার থেকে আলেকজান্ডার হেমিলটন হার্লি পর্যন্ত ২৫ জন অধ্যক্ষ ছিলেন ইংরেজ নাছারা। ১৭৮০ সালে মাদ্রাসা স্থাপিত হওয়ার পর ১৭৯০ পর্যন্ত ১০ বছর কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার পাঠ্যতালিকায় দারসে নেজামিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। অতঃপর মাদ্রাসা সিলেবাস থেকে হাদিস, তাফসির বাদ দেওয়া হয়। ১১৮ বছর পর ১৯০৮ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় হাদিস, তাফসির শিক্ষা চালু করা হয় এবং সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে নাম দেওয়া হয় টাইটেল।(মাদ্রাসা শিক্ষা : পৃ. ৪)

এ সম্পর্কে খোদ হেযবুত তওহীদই লিখেছে,
আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন (১৭৮০) সনে গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস। এই আলিয়া মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন একজন ব্রিটিশ খিস্টান, নাম ড.এ. স্প্রিঙ্গার এম.এ।  তারপর একাদিক্রমে ২৭ জন খ্রিস্টান এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।   এবং তা করেছেন তারা ক্রমাগত ১৪৬ বছর (১৭৮০ থেকে ১৯২৬)।এই ২৬ জন খ্রিস্টান পণ্ডিত অধ্যক্ষ পদে থেকে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ৭৬ বছর ধরে মুসলিম দাবিদার ছাত্রদেরকে বিকৃত ইসলাম শিখিয়েছেন। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ২৪

কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসার মত বহু মাদ্রাসা খ্রিস্টান প্রভুরা বিরাট মোসলেম বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করে লক্ষ লক্ষ আলেম, ফাজেল, কামেল ইত্যাদি তৈরি করে সমাজের মধ্যে ছেড়ে দেয়। নিরক্ষর মূর্খ জনসাধারণ তাদের কাছ থেকে এসলাম শেখে। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ২৬

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ ইয়াকুব শরীফ লিখেছেন, মুসলমানরা ছিল বীরের জাতি। ইংরেজ বেনিয়ারা ছলে বলে কৌশলে তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাদের প্রচলিত ধর্ম, শিক্ষা ও মর্যাদা হরণ করার জন্য পদে পদে যে সব ষড়যন্ত্র করেছিল আলিয়া মাদ্রাসা তারই একটি ফসল। বাস্তব ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোসলমানদের ধোঁকা দেওয়াই ছিল তাদের আসল উদ্দেশ্য। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ২৬

বুঝতে পারলাম, ইংরেজরা মুসলমানদের ধ্বংস করা এ তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে সকল কওমি মাদরাসা বন্ধ করে দেয় এবং তাদের নিজস্ব চেতনা জাগ্রত করার জন্য আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে। এবার চলুন কওমি মাদরাসার ইতিহাস সম্পর্কে একটু জেনে নিই।

কওমী মাদরাসার ইতিহাস:
কওমী শিক্ষাব্যবস্থা ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনের মূল ভূমিকা রাখে। চলুন এ সম্পর্কে কিছু ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক।
মুঘল শাসনামলের শেষ দিকের কথা। তখন পুরো ভারতবর্ষে  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত বর্ষের ক্ষমতা নিজ হাতে নিয়ে নিয়েছিল। সেই দিন মুসনাদুল হিন্দ শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ. এর সুযোগ্য সন্তান হযরত শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভি রহ. দীপ্ত কণ্ঠে ফতোয়া দিয়েছিলেন যে- ‘ভারতবর্ষ এখন দারুল হরব’। (শত্রুকবলিত দেশ) তাই প্রত্যেক ভারতবাসীর উপর ফরজ হলো- একে স্বাধীন করা। তার এই সাহসী উচ্চারণ পুরো দিকদিগন্তে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের ন্যায়। ফলে দিশেহারা মুসলিম জাতি উলামায়ে কেরাম’র নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লব সমাপ্ত শুরু করেন। যার ফলশ্রুতিতে শুরু হয়, আলেম-উলামার উপর দমন-নিপীড়ন। হাজার হাজার আলেম-উলামাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। দিল্লির প্রতিটা অলিগলি আলেম ওলামার রক্তে রঞ্জিত হয়। এহেন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল যে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ইসলামের নামটুকু হয়তো আর বাকি থাকবে না। বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যত আরো খতরনাকই হবে- জাতির এমনই এক ক্রান্তিলগ্নে প্রয়োজন দেখা দিল এমন একদল দীক্ষাপ্রাপ্ত সচেতন মুজাহিদ তৈরি করা; যাদের মাধ্যমে আযাদি আন্দোলনের স্রোতধারাকে ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেয়া সহজতর হবে। তাই দীর্ঘ চিন্তা-ভাবনা, শলা-পরামর্শের পর সাময়িকভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ রেখে সাম্রাজ্যবাদ ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় উজ্জীবিত, দীনি চেতনায় উৎসর্গ একদল জানবায মুজাহিদ তৈরির লক্ষ্যে এবং ইলমে নববির সংরক্ষণ ও ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারের মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৮৬৬ ঈসায়ি সনের ৩০ মে, মোতাবেক ১৫ই মুহররম ১২৮৩ হিজরি সনে ভারতের উত্তর প্রদেশস্থ সাহারানপুর জেলায় দেওবন্দ নামক গ্রামে ঐতিহাসিক সাত্তা মসজিদ প্রাঙ্গনে একটি ডালিম গাছের ছায়ায়, ইলহামিভাবে কোনো প্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের দারুল উলুম দেওবন্দ। -মুখতাসার তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, মাও. মুহাম্মদ উল্লাহ কাসিমী, পৃ. ৫৯, মাকতাবায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ)

দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পেছনে অলোকিক এক ঘটনা:
দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পেছনেও রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনা। দারুল উলুম দেওবন্দের সূচনাকালেও রয়েছে কিছু মানুষের ত্যাগ। যথাক্রমে তাঁরা হলেন মাওলানা কাসেম নানুতবি রহ. (ইন্তেকাল-১২৯৭ হি.), মাওলানা ইয়াকুব নানুতবি রহ. (১৩০২ হি.), হাজি আবেদ হোসাইন রহ. (১৩৩১ হি.), মাওলানা শাহ রফি উদ্দিন রহ. (১৩০৮ হি.), মাওলানা যুলফিকার দেওবন্দি রহ. (১৩২২ হি.), মাওলানা ফযলুর রহমান উসমানি রহ. (১৩২৫ হি.) প্রমুখ। তো তাদের মধ্য হতে মাও. রফি উদ্দিন ছিলেন অন্যতম। তিনি একদিন ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁকে নিয়ে গিয়ে বর্তমান সাত্তা মসজিদের পাশে একটি স্থানে দাগ টেনে দিলেন এবং সেখানেই মাদরাসার ভিত্তি স্থাপন করতে বলেন। তিনি যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন, সত্যিই তিনি রাসুলের দেখিয়ে দেয়া স্থানে টেনে যাওয়া দাগ দেখতে পেলেন। অবশেষে সেখানেই বিখ্যাত ইলমি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ’র শিক্ষাভবন নির্মাণ হলো। (তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, ভূমিকা; মাকতাবায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ; ইখলাস কা তাজমহল)

বুঝা গেলো কওমি মাদরাসা সত্যনিষ্ঠ কিছু আলেম-উলামা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আর এ জন্যই উপমহাদেশে খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বেশি মাথাব্যাথা ছিলো কওমি মাদরাসা নিয়ে। ফলে তারা মাদরাসা বন্ধ করার জন্য সকল কার্যক্রম হাতে নেয়।

কওমি মাদরাসা নিয়ে বৃটিশদের ষড়যন্ত্র:
শুরুতে জেনে রাখুন, উপমহাদেশে মুসলমানদের কোমর ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য যে কয়েকটা মিশন বৃটিশরা হাতে নিয়েছিলো, তার মধ্যে অন্যতম হলো, মাদরাসা ও আলেম-উলামা ধ্বংশ করা। নিন্মে দৈনিক জাতীয় পত্রিকা কালেরকণ্ঠের একটি লেখা হুবহু তুলে ধরছি। এই লেখাটা ভালো করে পড়লে হেযবুত তওহীদ ও বৃটিশদের সকল ষড়যন্ত্র বুঝতে পারবেন বলে আশা করি। লেখাটি হলো-
১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়, ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লবের পর গোটা পাক-ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ বেনিয়াদের চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশরা এসেই মুসলমানদের সমূলে উৎপাটনের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। তারা চিন্তা করে, রাজ্যহারা মুসলমানদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও ধর্মীয় দিক থেকে পঙ্গু ও সর্বস্বান্ত করতে না পারলে মুসলমানরা সুযোগ পেলেই ক্ষমতা দখলের লড়াই শুরু করবে। তাই তারা মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা আমূল পরিবর্তনে মনোযোগ দেয়। প্রথমেই তারা তৎকালীন সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী শিক্ষামাধ্যম কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করার ফন্দি বের করে। গবেষক এ জেড এম শামসুল আলম লিখেছেন : ‘বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়ের পর থেকে প্রায় ৫০০ বছর পর্যন্ত সুবে বাংলা ছিল জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র। মুসলিম সুবাদার, সুলতান, নায়েব, নাজিমগণ মাদ্রাসা ও খানকার জন্য উদার হস্তে দান করতেন। নগদ অর্থ যা দিতেন, লাখেরাজ সম্পদ দিতেন তার চেয়ে অনেক বেশি।

পলাশীর যুদ্ধ, উদয়নালা-বক্সারের পরাজয়ের পর ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির নামেমাত্র মোগল বাদশা শাহ আলম সুবে বাংলার দেওয়ানি বা রাজস্বব্যবস্থার দায়িত্ব বার্ষিক ২৬ লাখ টাকার নজরানার বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন। ১৭৬৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সম্পাদিত নবাব মীরজাফর ও রবার্ট ক্লাইভ চুক্তিমূলে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি নবাব মীরজাফরকে আদায়কৃত রাজস্ব থেকে প্রদান করত ৫৩,৮৬,১৩১ টাকা। এ সামান্য টাকার বিনিময়ে বাংলার জনগণের ভাগ্য বিক্রয় হয়ে গেল ইংরেজদের হাতে। ইংরেজরা সুবে বাংলার খাজনা আদায়ের দায়িত্ব পেয়ে লক্ষ করে যে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় ৮০ হাজার মক্তব ও মাদ্রাসা ছিল। এই ৮০ হাজার মক্তব, মাদ্রাসা ও খানকার জন্য বাংলার চার ভাগের এক ভাগ জমি লাখেরাজভাবে বরাদ্দ ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি ক্রমেই এই লাখেরাজ সম্পত্তি আইন, বিধিবিধান প্রণয়ন ও জোরজবরদস্তি করে দেশের হিন্দু জমিদার ও প্রজাদের ইজারা দিতে থাকে। এ-সংক্রান্ত তিনটি বিধান হলো : (১) ১৭৯৩ সালের রেগুলেশন—১৯, (২) ১৯১৮ সালের রেগুলেশন—২, (৩) রিজামসান ল অব ১৮২৮ (লাখেরাজ ভূমি পুনঃ গ্রহণ আইন)। ফলে মাদ্রাসার আয় কমতে থাকে। বহু মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। গুটি কয়েক মাদ্রাসা কোনো রকমে অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ১৭৬৫ সালে বাংলায় মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল আশি হাজার। ২০০ বছর পর ১৯৬৫ সালে এ সংখ্যা দুই হাজারের নিচে নেমে আসে। [এ জেড এম শামসুল আলম, মাদ্রাসা শিক্ষা, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিমিটেড, চট্টগ্রাম-ঢাকা, দ্বিতীয় সংস্করণ : মে-২০০২, পৃ. ৩-৪]

এ ব্যাপারে হান্টারের বক্তব্য হলো, ‘শত শত মুসলমান পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল এবং তাদের শিক্ষাপ্রণালী, যা এত দিন লাখেরাজ ওয়াকেফর জমিজমার ওপর নির্ভরশীল ছিল, মারাত্মক আঘাত পেল। মুসলমান আলিম-সমাজ (ওয়াকেফর জমিজমার মামলা নিয়ে) প্রায় আঠারো বছরের হয়রানির পর একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল। (ইন্ডিয়ান মুসলমানস, পৃ. ১২১-১২২)

কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী ছিল, তা বোঝার জন্য হান্টারের মূল্যায়ন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। হান্টার লিখেছেন : ‘এ দেশটা আমাদের হুকুমতে আসার আগে মুসলমানরা শুধু শাসন ব্যাপারেই নয়, শিক্ষা ক্ষেত্রেও ভারতের শ্রেষ্ঠ জাতি ছিল। ভারতের যে প্রসিদ্ধ (ইংরেজ) রাষ্ট্রনেতা তাদের ভালোভাবে জানেন, তাঁর কথায় : ভারতীয় মুসলমানদের এমন একটা শিক্ষাপ্রণালী ছিল, যেটা আমাদের আমদানি করা প্রণালীর চেয়ে নিম্ন হলেও কোনো ক্রমেই ঘৃণার যোগ্য ছিল না। তার দ্বারা উচ্চস্তরের জ্ঞান বিকাশ ও বুদ্ধিবৃত্তি পরিচ্ছন্ন হতো। সেটা পুরনো ছাঁচের হলেও তার ভিত্তিমূল সুদৃঢ় ছিল এবং সেকালের অন্য সব প্রণালীর চেয়ে নিঃসন্দেহে উত্কৃষ্ট ছিল। এই শিক্ষাব্যবস্থায়ই তারা মানসিক ও আর্থিক প্রাধান্য সহজেই অধিকার করেছিল।’ (ইন্ডিয়ান মুসলমানস, পৃষ্ঠা-১১৬)

ইংরেজদের দুই ধারার শিক্ষার বিপরীতে ১৮৬৬ সালে তৎকালীন আলেমসমাজের উদ্যোগে ভারতের দেওবন্দে বিশ্বের প্রথম কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে উপমহাদেশে তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়। -দৈনিক কালেরকণ্ঠ প্রকাশ: ১১ নভেম্বর, ২০১৬ ঈসায়ী

এই ছিলো সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। অর্থাৎ ইংরেজদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা কওমি মাদরাসা বন্ধ করে আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে। হয়তো হেযবুত তওহীদে কেউ কেউ এই পরম সত্যকেও বিশ্বাস করবে না। এজন্য হেযবুত তওহীদের বই থেকেই প্রমাণ নিন, তারা নিজেরাই লিখেছে,
মাদ্রাসার মধ্যে দুই ভাগ, একটা হল শত শত বছরের প্রাচীন কওমি ধারা, আরেকটি হলো ব্রিটিশদের তৈরি করা আলিয়া। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ১৩

ইংরেজরা মুসলিমদের ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য কয়েকটি উপায় বেছে নিল, তারা কতকগুলি মাদ্রাসা বন্ধ করে দিলে, ও কতকগুলি কে সর্বপ্রকার সাহায্য বন্ধ করে দিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্যে ফেলে দিল। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ২৩

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে জানতে পারলাম-
১. জেনারেল ও আলিয়া শিক্ষাব্যবস্থা খ্রিস্টানদের আবিস্কার।
২. কওমি মাদরাসা মুসলিম মনিষিদের আবিস্কার।

অথচ দিবালোকের ন্যায় এতো সুস্পষ্ট বিষয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হেযবুত তওহীদ কওমি-আলিয়াকে এক করে সকল মাদরাসার বিরোধিতা করে যাচ্ছে। তারা লিখেছে,
আলিয়া আর কওমি ধারার মধ্যে পার্থক্য এটুকুই যে একটি সরকারি অর্থায়নে চলে, আরেকটি জনগণের টাকায় চলে। একটি কম গোড়া, আরেকটি বেশি গোড়া, সঠিক শিক্ষা না পেলেও ধর্মীয় চেতনা ঠিকই রয়ে গেছে। -আক্রান্ত দেশ ও ইসলাম : পৃ. ১৫

মাদরাসা থেকে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া হয় না:
শিক্ষাব্যবস্থা পরিষ্কার দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল- এক ভাগ শিখলো একটা বিকৃত, মরা, বিতর্ক সর্বস্ব ধর্ম যেখানে পার্থিব কিছুই নেই। কাজেই ধর্ম বিক্রি করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। অন্য ভাগে মানুষ যা শিখল তার প্রায় সবটুকুই পার্থিব রোজগার করে চাকরি-বাকরি করে জীবন যাপন করতে পারে, কিন্তু ধর্ম আত্মা, মুসলিম হিসাবে তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে কিছুই শিখলো না। -যামানার এমামের পত্রাবলী : পৃ. ১৫

ধর্মের এই প্রকৃত শিক্ষা কোন স্কুলেও নাই, মাদ্রাসায়ও নাই, আছে একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছে। -আদর্শিক লড়াই পৃ:১৩

মাদরাসা বস্তুবাদ ও বিভক্তির শিক্ষা দেয়:
স্কুল-কলেজের মত মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থাযও আমাদেরকে সমান বস্তুবাদের শিক্ষা দিচ্ছে। সেখান থেকে পাশ করে বেরিয়ে আসা লোকেরা জনগণকে পরকালের পেছনে ছুটিয়ে দেন, কিন্তু নিজেরা ছুটতে থাকেন বস্তুর পেছনে, অর্থের পেছনে। এক্ষেত্রে হালাল-হারাম নীতি দুর্নীতি কোন তোয়াক্কা তারা করেন না উভয় ব্যবস্থাপনাই স্বার্থপর পয়দা করে এবং বিভক্তির শিক্ষা দেয়। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৬৭

মাদরাসা থেকেও জঙ্গি হয়:
এতদিন বলা হতো মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি হয়, আমি অস্বীকার করি না মাদ্রাসা থেকেও জঙ্গি হয়। এখন দেখা যাচ্ছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও জঙ্গী হচ্ছে। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ : পৃ. ১২

মাদরাসা চালু থাকলে অন্যায় দমন করা যাবে না:
যতদিন এই বিকৃত ইসলাম শিক্ষাদান চলবে, ততদিন ধর্মব্যবসায়ী সৃষ্টি হবে তারা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি অপব্যবহার করবে। এই বিকৃত ইসলাম শিক্ষার পথ খোলা রেখে ফতোয়াবাজি, জঙ্গিবাদ, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি, ধর্মান্ধতা কস্মিনকালেও নির্মূল করা যাবে না। দুষ্টক্ষতকে ব্যান্ডেজ দিয়ে যতই ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন ভিতরে ভিতরে তা রক্তকে দূষিত করে দেয়।শুধু জঙ্গিবাদ নয় যেকোনো সামাজিক অপরাধ মোকাবেলায় (দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, যৌতুক, ধর্ষণ, পারিবারিক  হত্যাকাণ্ড, চুরি-ছিনতাই প্রভৃতি) ধর্মহীন শুষ্ক উপদেশ উলুবনে মুক্তো ছড়ানোর মতো অর্থহীন হবে। -জঙ্গীবাদ সঙ্কট, পৃ. ৪৬

মাদরাসায় ধর্মব্যাবসায়ী তৈরি ছাড়া আর কোনো উপকার হয় না:
এই মাদ্রাসারই আরেকটি ভাগ উপমহাদেশে চালু রয়েছে যাকে দেওবন্দী বা কওমী মাদ্রাসা বলা হয়ে থাকে। এদের সিলেবাসেও সেই তাওহীদ, ইসলামের খুঁটিনাটি মাসলা-মাসায়েল যে বিধান কোথাও প্রতিষ্ঠিত নেই সেই বিধানের সূক্ষ্ম গবেষণা দিয়ে পূর্ণ। তবে এই মাদ্রাসা থেকে যারা বের হন তারা সেই ব্রিটিশ যুগ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে আন্দোলনের নামে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ঈমানী চেতনাকে ব্যবহার করছেন। কিন্তু ইসলামের কতটুকু উপকার হয়েছে তা এসবের ফলাফলে দেবে। তারা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পাশ করা আলেমদের আলেমই মনে করেন না। আলিয়ার প্রতি অবজ্ঞার ভাব কওমীদের মস্তিষ্কে বদ্ধমূল করে দেওয়া হয়। ঠিক একইভাবে আলিয়া মাদরাসার আলেমরাও কওমী আলেমদেরকে ধর্মান্ধ গোড়াপন্থী বলেই মনে করেন। এই দুই প্রকার মাদ্রাসার চিন্তা-চেতনা ও সিলেবাস-কারিকুলামে কিছুটা ব্যবধান থাকলেও দিনশেষে দু’টো ব্যবস্থাই এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিপুল পরিমাণ ধর্মব্যবসায়ী যোগ করা ছাড়া আর কোন অবদান রাখে না। [ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৬৩]

মাদ্রাসা শিক্ষিতরা বাধ্য হয়েই হারাম পথে (ধর্মব্যবসা করে) উপার্জন করেন। ব্রিটিশরা এটাই চেয়েছিল। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১৬৭

মাদরাসা শিক্ষা ধর্মব্যবসা চালু রাখে:
মাদ্রাসায় আল্লাহ রাসুলের ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া হয় নাই। মানবতার কল্যাণে নিজের জীবন সম্পদ উৎসর্গ করার শিক্ষা দেওয়া হয় নাই। বরং ইসলাম কে কাজে লাগিয়ে একেক জন একেক ভাবে অর্থ রোজগার করছেন। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ১২

মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে হবে:
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা জরুরি। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৬৭

ধর্ম ব্যবসার বিষবৃক্ষ এবং ধর্মের অপব্যবহার বন্ধ করতে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা ছড়াতে হবে এবং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার প্রচার ব্যতিত এই সংকট থেকে জাতি মুক্তি পাবে না। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১৬৫

প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিহার করতে হবে। – ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৬৭

ইসলাম কী বলে?
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, খ্রিষ্টানরা উপমহাদেশে সকল মাদরাসা ধ্বংশ করে দিয়েছিলো, নিজেদের মতপথ প্রতিষ্ঠা করতে জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থা ও আলিয়া মাদরাসা চালু করে দিয়েছিলো, কিন্তু কওমি মাদরাসার মূল কেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা বৃটিশদের বিতাড়িত করা ও ইসলাম হিফাযতের জন্য তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু সেই কওমি মাদরাসার বিরুদ্ধেও তাদের কলম চলেছে। তাহলে আমরা এতটুকু বলতে পারি, উপমহাদেশ থেকে বৃটিশরা চলে গেলেও হেযবুত তওহীদের মত পেতাত্মারা আজও বৃটিশদের ইসলাম ধ্বংশের সে ষড়যন্ত্র চালু রেখেছে।

ইসলাম চর্চার ফযিলত:
মূলত তাদের মূল টার্গেট হলো, কুরআন-সুন্নাহর চর্চাকে সমাজ থেকে উঠিয়ে দেওয়া। তবেই খ্রিস্টানদের মতো তারাও তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। এ জন্য কুরআন-সুন্নাত চর্চার কিছু ফযিলত আপনাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। কুরআন-সুন্নাহ’র চর্চা করার অসংখ্য ফযিলত রয়েছে। নিন্মে কয়েকটি ফযিলত উল্লেখ্য করলাম। হযরত উসমান রা. সূত্রে বর্ণিত, নবি সাঃ বলেন,
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে ব্যক্তি কুরআন নিজে শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ১৪৫২

হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন,
نَضَّرَ اللَّهُ عَبْدًا سَمِعَ مَقَالَتِي فَوَعَاهَا ثُمَّ بَلَّغَهَا عَنِّي
অর্থাৎ আল্লাহ সেই বান্দাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করুন যে আমার বক্তব্য শুনে তা স্মৃতিতে ধারণ করেছে, অতঃপর আমার পক্ষ থেকে তা (অন্যদের নিকট) প্রচার করেছে। -সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং- ২৩৬

হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন,
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَبْتَغِي فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الْحِيتَانُ فِي الْمَاءِ وَفَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইলম তালাশের উদ্দেশ্যে পথ চলে আল্লাহ্ তা’আলা এর দ্বারা তাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করেন। (অন্য বর্ণনায় এসেছে, জান্নাতের পথ সুগম করেন) ইলম অন্বেষণকারীর সন্তুুষ্টির জন্য ফিরিশতাগণও তাদের পাখা নামিয়ে দেন। আসমানে যা কিছু আছে এবং যমিনে যা কিছু আছে, এমনকি পানির মৎস্য পর্যন্ত আলিমের জন্য ইস্তিগফার করে। একজন আবেদের উপর একজন আলিমের ফযীলত সেরূপ যেরূপ নক্ষত্রপুঞ্জের উপর চাঁদের ফযীলত। আলিমগণ হলেন আম্বিয়া কিরামের ওয়ারিছ। নবীগণ তো মীরাছ হিসাবে দীনার বা দিরহাম রেখে যান না। তাঁরা মীরাছ হিসাবে রেখে যান ইলম, যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল সে তো পূর্ণ হিস্যা লাভ করল। -জামে তিরমিযি, হাদিস নং- ২৬৮২

এ ছাড়াও অগণিত, অসংখ্য আয়াত এবং হাদিস রয়েছে। সবগুলো লিখলে কয়েক খন্ডের কিতাব প্রয়োজন। তবে প্রশ্ন হলো, হেযবুত তওহীদ যদি মুসলমানই হয়ে থাকে, তাহলে কেন এই মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলে? তাহলে কী আমরা ধরে নেবো না যে, তারা খ্রিস্টানদের পথেই হাটছে?

সহশিক্ষা ও হেযবুত তওহীদ:
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
বর্তমানে হেযবুত তওহীদ নামক কুফরী সংগঠনটি নাস্তিকদের সুরে সুর মিলিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন যে, (Co-education System) অর্থাৎ নারী-পুরুষ এক সাথে শিক্ষা অর্জন করবে। অর্থাৎ তারা সহশিক্ষার পক্ষে তাদের সদস্যদের উদ্ভুদ্ধ করে চলেছেন। তাদের দাবি হলো,

মানবজাতির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। আমাদের সমাজে এই নারীরা সর্বক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ, এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রধান একটি কারণ ধর্মীয় কুসংস্কার ও প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু প্রকৃত এসলামে নারীকে যে স্বাধীনতা দেয়া হোয়েছে সেটা মানব সৃষ্ট কোনো ব্যবস্থাতেই দেওয়া হয় নি। কিন্তু এসলামের অন্যান্য সকল দিক যেমন হারিয়ে গেছে তেমনি নারী সম্পর্কে ইসলামের সঠিক আকীদার হারিয়ে গেছে। আজকের এসলাম প্রকৃত এসলামে সম্পূর্ণ বিপরীত। -আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই, পৃ. ১২

নারীরা মহানবীর সামনাসামনি বসে আলোচনা শুনতেন, শিক্ষা গ্রহণ করতেন, মহানবীকে প্রশ্ন করে জরুরি বিষয় জেনে নিতেন। অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। এ সময়ে মহানবী ও মেয়েদের মাঝে কোনো কাপড় টাঙ্গানো ছিল এই ব্যাপারে কেউ কোন দলিল দেখাতে পারবে না। -আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই, পৃ. ১৩

তার সামনে বসে নারী-পুরুষ উভয়ই শিক্ষা অর্জন করতেন কাজেই প্রকৃত ইসলামের নারী পুরুষ উভয়েই একই সঙ্গে শিক্ষা অর্জন করবে। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ৬

মানব জাতির মহান শিক্ষক নবী করিম (দ:) এর সামনে বসে নারী-পুরুষ উভয় শিক্ষা অর্জন করতেন, কাজেই প্রকৃত ইসলামেও নারী-পুরুষ উভয়ই শিক্ষকের সামনে বসে শিক্ষা অর্জন করবেন (Co-education System)। -চলমান সংকট নিরসনে হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবনা, পৃ. ৮

এগুলো হলো হেযবুত তওহীদের দাবি। অর্থাৎ তাদের মূল দাবি হলো, ছেলে-মেয়ে এক সাথে পাশাপাশি বসে পড়াশোনা করবে। এটাই নবীজির সা. প্রদর্শিত পথ। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে দেখা যাক সহশিক্ষা নিয়ে বর্তমান বাস্তবতা ও ইসলামের বক্তব্য কি?

ইসলাম কী বলে?
শিক্ষা অর্জন করা পুরুষের উপর যেমন ফরজ তেমনি নারীর উপরও শিক্ষা অর্জন করা ফরজ। নারীদের উচ্চশিক্ষা লাভ করতে ইসলামের কোনো বাধা নেই, বরং ইসলাম সব সময় উৎসাহিত করে। তবে যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামের পর্দার বিধান লংঘন হয়, সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলাম সমর্থন করে না। নারী-পুরুষ আলাদা অবস্থানে থেকে পর্দা রক্ষা করে শিক্ষা অর্জন করবে-এটাই ইসলামের চিরন্তন বিধান। তবে নারীকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে। ইসলামের দিকনির্দেশনা গুলো নারী-পুরুষ সবাইকে অবশ্যই মানতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সহশিক্ষার ফলে ইসলামের বেশ কয়েকটি বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

এক. পর্দাহীনতা:
নারীকে যথাসম্ভব ঘরে থাকা উচিত। একান্তই যদি তাকে ঘর থেকে বের হতে হয়, তাহলে পর্দা করেই বের হতে হবে। কারণ মহিলারা হলো বেগানা পুরুষের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء
মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী। [সূরা আলে ইমরান : ১৪]

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ
আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৪৮০৮

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
المرأةُ عورةٌ فإذا خرَجَتْ اسْتَشْرَفَها الشيطانُ
মহিলারা হলো পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং, তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাইরে আসে তখন শয়তান তাদেরকে (অন্য পুরুষের দৃষ্টিতে) সুসজ্জিত করে দেখায়। -জামে তিরমিযি, হাদিস : ১১৭৩

দুই. বেগানা (ছাত্রী/শিক্ষিকার) দিকে তাকানো:
সহশিক্ষার আরেকটা খারাপ দিক হলো, যখন টিচার ক্লাসে আসেন, তখন স্টুডেন্ট টিচারের দিকে তাকাতে হয়। অথচ মহিলাদের জন্য পুরুষের দিকে তাকানো বা পুরুষের জন্য মহিলাদের দিকে তাকানো ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। মহান রব পবিত্র কালামে পাকে বলেন-
قُل لِّلۡمُؤۡمِنِینَ یَغُضُّوا۟ مِنۡ أَبۡصَـٰرِهِمۡ
হে নবী! আপনি ঈমানদার পূরুষদের বলে দেন তারা যেন (মহিলাদের দিকে তাকানো থেকে) নিজেদের চক্ষু অবনত করে রাখে। [সুরা নূর : ৩১]

এমনিভাবে মহিলারদের জন্য বেগানা পুরুষের দিকে বিনা প্রয়োজনর তাকানো নিষেধ। মহান আল্লাহ বলেন,
وقل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم
অর্থ: আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। [সুরা নুর : ৩১]

হযরত উম্মে সালামা রাঃ বলেন,
أنَّها كانتْ عند رسولِ اللهِ ﷺ ومَيْمُونةُ، قالَتْ: فبَيْنا نحن عندهُ أقْبلَ ابْنُ أمِّ مَكتومٍ فدَخَلَ عليه وذلكَ بعدَ ما أُمِرْنا بِالحجابِ فقال رسولُ اللهِ ﷺ احْتَجَبا مِنهُ فقُلتُ يا رسولَ اللهِ ألَيْسَ هو أعْمى لا يُبصِرُنا ولا يَعرِفُنا فقال رسولُ اللهِ ﷺ أفَعَمْياوانِ أنتُما ألَستُما تُبْصِرانِه
আমি ও মায়মুনা একদিন নবিজি সাঃ-এর কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় (অন্ধ সাহাবী) আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা. নবিজি সাঃ-এর কাছে প্রবেশ করলেন।আর এ ঘটনা ছিল পর্দার আয়াত নাজিল হবার পর। নবি সাঃ আমাদের বললেন, যাও পর্দা করো। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল! সে তো অন্ধ, আমাদের দেখতে বা চিনতে পারবে না। নবি সঃ বললেন সে যদিও তোমাদের দেখতে পারবে না কিন্তু তোমরা কি দেখতে পারবে না? তোমরাও কি অন্ধ? -জামে তিরমিযি, হাদিস : ২৭৭৮

প্রিয় পাঠক, এখানে ভাবনার বিষয় যে, নবিজি সা. স্ত্রীগণ আমাদের রুহানী মা। তারপরও তাঁদের সামনা সামনি গিয়ে দেখা-সাক্ষাত সাহাবীদের জন্যও মহান আল্লাহ নিষেধ করে দিলেন। নবিজি স: এর স্ত্রীগণ ও সাহাবাদের ব্যাপারে সামনা সামনি হওয়াও নিষেধ হয়। এতগুলো আয়াত-হাদিসের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আজ হেযবুত তওহীদ ছেলে-মেয়ে সরাসরি সামনে বসিয়ে সহশিক্ষা জায়েয বলা কি কুরআন -হাদিসের প্রকাশ্য বিরোধিতা নয়?

একান্ত প্রয়োজন ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা:
তবে একান্ত প্রয়োজন যদি হয়, অর্থাৎ বর্তমানে নারীদের জন্য গাইনী বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তার প্রয়োজন ইত্যাদী কারণে যদি মেয়েদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে সে ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানে মেয়েরা পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা,
الضرورات تبيح المحظورات
জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। [আল আশবাহ ওয়ান নাযাইর : খ. ১ পৃ. ৭৮]

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়। কেননা, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। [সূরা তাগাবুন : ১৬]

তবে এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা হলো বর্তমানে মেয়েদের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে বর্তমানে সহশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নেই। এজন্য আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,
اختلاط الطلاب بالطالبات والمدرسين بالمدرسات في دور التعليم محرم لما يفضي إليه من الفتنة وإثارة الشهوة والوقوع في الفاحشة ، ويتضاعف الإثم وتعظم الجريمة إذا كشفت المدرسات أو التلميذات شيئاً من عوراتهن ، أو لبسن ملابس شفافة تشف عما وراءها ، أو لبسن ملابس ضيقة تحدد أعضاءهن ، أو داعبن الطلاب أو الأساتذة ومزحن معهم أو نحو ذلك مما يفضي إلى انتهاك الحرمات والفوضى في الأعراض
বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানকালীন ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকার সহাবস্থান হারাম। কেননা, এটি ফেতনা, অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে যখন শিক্ষিকারা কিংবা ছাত্রীরা নিজেদের সতরের কোনো অংশ খোলা রাখে কিংবা অন্যের সামনে পিনপিনে পোশাক, অঙ্গভঙ্গী প্রকাশক আঁটসাঁট জামা পরিধান করে কিংবা তারা যখন ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্রা ইত্যাদি করে তখন পাপাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধ আরো বিশাল হয়ে ওঠে; যা সম্ভ্রমহানি ও ইজ্জত লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায়। [ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা : খ. ১৭ পৃ. ৫৩]

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে আরো বলা হয়েছে,
فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك
সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া। [ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা : খ. ১২ পৃ. ১৫৬]

নবিজি সাঃ-এর যামানায় মহিলাদের শিক্ষাব্যবস্থা:
হযরত আবূ সা‘ঈদ রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
جاءَتِ امْرَأَةٌ إلى رَسولِاللَّهِ صَلّى اللهُ عليه وسلَّمَ فَقالَتْ يا رَسولَ اللَّهِ ذَهَبَ الرِّجالُ بحَديثِكَ فاجْعَلْ لَنا مِن نَفْسِكَ يَوْمًا نَأْتِيكَ فيهتُعَلِّمُنا ممّا عَلَّمَكَ اللَّهُ فَقالَ اجْتَمِعْنَ في يَومِ كَذا وكَذا فيمَكانِ كَذا وكَذا فاجْتَمَعْنَ فأتاهُنَّ رَسولُ اللَّهِ صَلّى اللهُعليه وسلَّمَ فَعَلَّمَهُنَّ ممّا عَلَّمَهُ اللَّهُ
এক মহিলা নবিজি সাঃ-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাদীস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তাত্থেকে আপনি আমাদের শিখাবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে। সে মোতাবেক তাঁরা একত্রিত হলেন এবং নবিজি: সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাঁদের শিক্ষা দিলেন। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৭৩১০

অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,
أنَّ نسوةً مِن الأنصارِ قُلْنَ له يا رسولَ اللهِ إنّا لا نستطيعُ أنْ نأتيَك مع الرِّجالِ فقال رسولُ اللهِ ﷺ موعدُكنَّ بيتُ فلانةَ فجاء فتحدَّث معهنَّ
অর্থাৎ একবার কিছু সংখ্যক নারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার মজলিসে পুরুষদের সাথে বসতে পারি না। আমাদের জন্য একটি দিন ধার্য করুন যাতে সেদিনটিতে আমরা আপনার নিকট আসতে পারি। তিনি বললেন,
موعدكن بيت فلانة
অর্থাৎ নির্ধারিত দিন অমুক মহিলার ঘরে জমায়েত হও। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে তাদেরকে ওয়ায-নসীহত করলেন। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস : ২৯৪১

একটি প্রশ্ন:
আমরা জানি নবিজি সাঃ-এর যামানায় মসজিদের নববীর পাশেই আসহাবে সুফফার সদস্যদের নিয়ে একটি আবাসিক মাদরাসা তৈরি করা হয়েছিল। হেযবুত তওহীদের কাছে প্রশ্ন, সেখানে নারী সাহাবারা লেখাপড়া করতেন কি? নিশ্চয় না। তাহলে আপনারা সহশিক্ষার বৈধতা পেলেন কোথায়?

সুতরাং সহশিক্ষার এতগুলো কুফল জেনে এবং বুখারী শরীফের হাদিসে নবিজি সা. এর যামানার মহিলা সাহাবাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সুস্পষ্টভাবে জানার পরও হেযবুত তওহীদ কিভাবে দাবী করেন যে, নবীজির সা. যামানায় মহিলা-পুরুষ এক সাথে শিক্ষা অর্জন করেছেন?

সকলের জেনে রাখা উচিৎ সহশিক্ষার মাধ্যমে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা উম্মুক্ত করতে নাস্তিক্যবাদ ও মুক্তমনারা আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছে।তাদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে হেযবুত তওহীদের বক্তব্য নিঃসন্দেহে নাস্তিকতাকে প্রমোট করা ছাড়া কিছু না। আল্লাহ তা’য়ালা হেযবুত তওহীদ নামক এ কুফরী সংগঠনের কালো ছোবল থেকে সকল মুসলিমকে হিফাযত করেন। আমিন!

Check Also

মানবতাই ধর্ম:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মানতে নারাজ। তাদের কাছে ধর্ম হলো, ‘মানবতা’ বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.