Home > হিজবুত তাওহীদ > অধ্যায় : হেযবুত তওহীদ ও পন্নী:

অধ্যায় : হেযবুত তওহীদ ও পন্নী:

অধ্যায় : হেযবুত তওহীদ।

প্রিয় পাঠক, বিষাক্ত ও ভেজাল-নকল বস্তু সমাজে মানুষকে গিলাতে সব সময় বিভিন্ন এডভ্যাটাইজ করানোর প্রয়োজন হয়। আর পচা চিংড়ীর খরিদদারেরা তা অকপটে গ্রহণ করে থাকে। ঠিকই একই পথ গ্রহণ করেছে হেযবুত তওহীদ। নিজেদের নষ্ট মতবাদ সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চটকদার কিছু কথা তারা আবিস্কার করে প্রচার করে থাকে।

পর্ব: হেযবুত তওহীদ:

চলুন হেযবুত তওহীদের ব্যাপারে তাদের মন্তব্যগুলো একনজরে দেখে নিই-
১. হেযবুত তওহীদ আল্লাহর তৈরি
২. হেযবুত তওহীদ মুক্তির একমাত্র পথ।
৩. পন্নীর ওপর আল্লাহ মো’জেজা ঘটিয়েছেন।
৪. পন্নীর মো’জেজার গতি নবীদের চেয়েও বেশি।
৫. পন্নীর মো’জেজা কোরআনের মতো অকাট্য।
৬. পন্নীর মো’জেজা মুহাম্মাদ সাঃ-এর মোজেজার মতো।
৭. মো’জেজার ভাষণে পন্নীকে সত্যায়ণ করা হয়েছিলো।
৮. পন্নীর মো’জেজা বিশ্বাস না করা মুনাফেকী।
৯. পন্নীর মোজেজা বিশ্বাস না করলে সে বেঈমান।
১০. পন্নীর মো’জেজা বিশ্বাস না করলে সে জাহান্নামী।
১১. পন্নীর মো’জেজা বিশ্বাস না করলে মুক্তি নেই।
১২. আল্লাহ নিজের কথা পন্নীর মুখ দিয়ে বলিয়েছেন।
১৩. কুরআন ও পন্নীর ভাষণ একই পর্য্যায়ভুক্ত ও রাশাদ খলিফার চেতনা।
১৪. হেযবুত তওহীদকে আল্লাহ সত্যায়ন করেছেন।
১৫. হেযবুত তওহীদ আল্লাহ নিজেই চালান।
১৬. হেযবুত তওহীদের বন্ধু আল্লাহ।
১৭. হেযবুত তওহীত বিশ্বের জন্য মনোনীত।
১৮. মানুষ সব চাহিদা পুরণ করতে পারবে হেযবুত তওহীদ।
১৯. হেযবুত তওহীদের কর্মসূচী স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন।
২০. পাঁচ দফা কর্মসূচী না মানলে সে কাফের হয়ে যাবে।
২১. হেযবুত তওহীদকে মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
২২. হেযবুত তওহীদের বিজয় অবশ্যম্ভাবি।
২৩. হেযবুত তওহীদ দাজ্জালের বিরোধি।
২৪. রাসুল সা. সাহাবা রা. ও হেযবুত তওহীদের আহব্বান একই।
২৫. হেযবুত তওহীদ রাসুলুল্লাহ সা. এর অনুসরণ করে।
২৬. প্রকৃত শিক্ষা হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে।
২৭. হেযবুত তওহীদ ইসলাম চায়।
২৮. পন্নীর ইসলাম আসল ইসলাম।
২৯. হেযবুত তওহীদ ধর্মের পক্ষ নিয়ে বলে।
৩০. স্বার্থে আঘাত আসাতেই আলেমরা হেযবুত তওহীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন।
৩১. হেযবুত তওহীদ জঙ্গি বিরোধী।
৩২. মিছিল মিটিং গর্হিত কাজ।
৩৩. হেযবুত তওহীদে আসলেই জান্নাত সুনিশ্চিত।
৩৪.  হেযবুত তওহীদে আসলে অমুসলিমরাও জান্নাতী।
৩৫. হেযবুত তওহীদে আসলেই দুই শহীদের মর্যাদা।
৩৬. হেযবুত তওহীদের সদস্যদের লাশ পচে না।
৩৭. হেযবুত তওহীদের সদস্যদের নামে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ বলা।
৩৮. হেযবুত তওহীদের জনৈক সদস্য সরাসরি আল্লাহকে দেখেছে।
৩৯. হেযবুত তওহীদের সদস্যদের মর্যাদা নবীদের চেয়েও বেশি।

হেযবুত তওহীদ কী আল্লাহর তৈরি?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, হেযবুত তওহীদ কোনো মানুষের সৃষ্টি নয়, বরং এটা সরাসরি মহান আল্লাহ’র তৈরি। এ সম্পর্কে স্বয়ং বায়াজীদ খান পন্নী লিখেছেন,
হেযবুত তওহীদ আল্লাহ সৃষ্ট আন্দোলন। কারণ এর প্রতিটি পদক্ষেপ আল্লাহর সিদ্ধান্ত মোতাবেক গৃহীত হয়। আল্লাহ তাঁর অপরিসীম সাহায্য হিজবুত তাওহীদের উপর ঢেলে দিয়েছেন। হেযবুত তওহীদের কর্মসূচি কী হবে তা আন্দোলন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিনেই আল্লাহ একটি সহি হাদিস থেকে বুঝিয়ে দেন। এই আন্দোলনের কর্মসূচি তাই কোন মানবীয় চিন্তাপ্রসূত কর্মসূচি নয়, এটি প্রণয়ন করেছেন সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা ও প্রভু স্বয়ং আল্লাহ। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৫/১৫, যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৬১

অনুরূপভাবে পন্নী সাহেবের অনুসারীরাও দাবি করে লিখেছেন,
হেযবুত তাওহীদ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ স্বয়ং’। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৫

অর্থাৎ পন্নী সাহেব ও তার অনুসারীরা দাবি করতে চান, হেযবুত তওহীদ কোনো মানুষের তৈরি নয়, বরং এটা সরাসরি মহান আল্লাহ’র তৈরি।

ইসলাম কী বলে?
হেযবুত তওহীদ প্রতিষ্ঠা কী আল্লাহ না পন্নী : হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা আল্লাহ তাআলা নন, বরং বায়াজীদ খান পন্নী নিজেই এটার প্রতিষ্ঠা করেন। এটা আমার দাবী নয়, বরং স্বয়ং পন্নী সাহেব ও তার একনিষ্ঠ ভক্তকুলেরও দাবি এটাই। বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখতে গিয়ে বলেন,
১৯৯৫ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে যারা আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন তাদের নিয়ে হিজবুত তাওহীদ নামে একটি আন্দোলন আরম্ভ করি। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৯

বুঝা গেলো, পন্নী সাহেব নিজেই স্বীকার করে গেছেন, হেযবুত তওহীদ প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি ও তাঁর সমর্থকরা মিলে। উপরন্তু হেযবুত তওহীদের কিছু সদস্যারাও লিখেছেন,
আমাদের এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি ছিলেন আন্দোলনের উদ্যোক্তা, আহবানকারী, প্রতিষ্ঠাতা এমাম। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৪৯

টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ১৯৯৫ সালে হিজবুত তওহীদ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৭

মাননীয় এমামুযযামান যখন কলেজে পড়েন তখন তিনি একটি স্বপ্নে কাবা শরীফের ভিতর ও বাহিরে দৃশ্য দেখেছিলেন। তিনি সেই স্বপ্নের দৃশ্যপটের সাথে মিলিয়ে হেযবুত তাওহীদের প্রতিকটি অঙ্কন করেছিলেন। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ২০

প্রিয় পাঠক, মিথ্যা কখনও স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় না। একদিন না একদিন সত্য ঠিকই উম্মোচিত হয়ে যায়। ঠিক তাই ঘটেছে পন্নী সাহেব ও তার অনুসারীদের বেলায়। যারা দিনরাত খেয়ে না খেয়ে হেযবুত তওহীদকে আল্লাহ পাক তৈরি করেছেন বলে মুখে ফেনা তোলে, সেই তারাই এমন কী পন্নী সাহেব নিজেও আবার দাবি করে বসলেন যে, হেযবুত তওহীদ আল্লাহ’র সৃষ্টি না, বরং পন্নীর হাতে তৈরি। আল্লাহ পাকের নামেও এরা মিথ্যাচার করতে দ্বিধাবোধ করে না। এদের চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?

মনে রাখতে হবে,  নিজের হাতে তৈরি করা কোনো কিছুকে মহান আল্লাহ’র নামে চালিয়ে দেওয়া এটা ইহুদী-খ্রিষ্টানদের অভ্যাস। তাদের এহেন বদঅভ্যাসকে সমালোচনা করে মহান রব বলেন,
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـذَا مِنْ عِندِ اللّهِ لِيَشْتَرُواْ بِهِ ثَمَناً قَلِيلاً فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا يَكْسِبُونَ
অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লেখে এবং বলে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ-যাতে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে। অতএব তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের হাতের লেখার জন্য এবং তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের উপার্জনের জন্যে। সূরা বাকারা : ৭৯

সুতরাং সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, হেযবুত তওহীদ আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নয়, এটা পুরোটাই বায়াজীদ খান পন্নীর নিজস্ব প্রতিষ্ঠার ফসল। এরপরও ‘হেযবুত তওহীদ আল্লাহ’র তৈরি’ দাবিটা ডাহা মিথ্যাচার ও আল্লাহর নামে মিথ্যা অপবাদ। আল্লাহর নামে মিথ্যা অপবাদ প্রদানকারীদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوْحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ
ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা বলেঃ আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার প্রতি কোন ওহী আসেনি। -সূরা আন’আম : ৯৩

হেযবুত তওহীদ কী মুক্তির একমাত্র পথ?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানতে পারলাম, হেযবুত তওহীদ আল্লাহ প্রদত্ত মতবাদ নয়, বরং এটা মানবরচিত মতবাদ, যার প্রতিষ্ঠাতা হলেন, বায়াজীদ থান পন্নী। এই হেযবুত তওহীদকে নিয়ে তাদের দাবি হলো, বর্তমানে হেযবুত তওহীদই একমাত্র মুক্তিপ্রাপ্ত দল, বা মুক্তির জন্য একমাত্র হেযবুত তওহীদই গ্রহণ করতে হবে। তারা লিখেছে,
আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর অসীম করুনায় আমরা মুক্তির পথ পেয়ে গেছি। এই জমিনে, এই বাংলার মাটিতে সত্য এসে গেছে, হেদায়েত এসে গেছে। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য এসে গেছে। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ১৭

অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ এই যে মহান আল্লাহ মানব জাতিকে তাদের নিজের তৈরি মৃত্যুর ফাঁদ থেকে কিভাবে উদ্ধার পাওয়া যাবে সে উপায় হেজবুত তাওহীদ কে দান করেছেন। এখন মানবজাতি যদি হেজবুত তাওহীদে এসে সেই উপায় অবলম্বন করে তবে তারা বাঁচবো। আর যদি অবজ্ঞা করে প্রত্যাখ্যান করে তবে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৫০

যতই অপপ্রচার করা হোক আল্লাহ সমস্ত মানবজাতির উদ্ধারকর্তা হিসেবে হিজবুত তাওহীদকে মনোনীত করেছেন। মানবজাতিকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করার সমাধান আল্লাহ হেযবুত তওহীদর কাছেই দিয়েছেন। তাই এই মহাসত্যকে যারা গ্রহন করবে না, তাদের মুক্তির উপায় নাই। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৫১

অর্থাৎ তারা দাবি করে থাকে, বর্তমানে মুক্তি পাওয়ার জন্য একমাত্র উপায় হলো, ‘হেযবুত তওহীদ গ্রহণ করা’। এটা গ্রহণ না করলে তাদের মুক্তি নেই, তারা নিশ্চিত ধ্বংশ হবে।

ইসলাম কী বলে?
এক. প্রিয় পাঠক, আগের পর্ব থেকে আমরা জানতে পারলাম, হেযবুত তওহীদ আল্লাহ তা’আলা’র তৈরি নয়, বরং এটা পন্নী সাহেবের বানানো। আর খোদ হেযবুত তওহীদই দাবি করেছে, মানবরচিত সবই মুক্তির পথ নয়, বরং মৃত্যুফাঁদ। তারা লিখেছে,
মানুষের আবিষ্কৃত জীবন ব্যবস্থা গুলোকে যত সুন্দর সুন্দর নামেই ডাকা হোক না কেন তা হচ্ছে মানব জাতির সামনে মৃত্যুর বিকল্প পথ। -শ্রেনীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৬৫

সুতরাং হেযবুত তওহীদের বক্তব্য থেকেই প্রমাণ হলো, মানবরচিত মতবাদ তথা পন্নী মতবাদও যেহেতু মানুষের বানানো মতবাদ সেহেতু এটাও মুক্তির পথ নয়, বরং মৃত্যুফাঁদ।

দুই. ইসলাম হলো, আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত সকল ধর্মের শেষ সংস্করণ। এ ইসলাম ছেড়ে ভিন্ন কোনো মত বা পথে মুক্তির কল্পনাও করা যায় না। উপরন্তু এই ইসলামের ভেতরেও ৭৩ দলের মধ্যে শুধুমাত্র। একটি দল তথা ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আত’ জান্নাতে যাবে। আর সকল দল জাহান্নামী। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
বনী ইসরাঈল যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উন্মাতের মধ্যেও কেউ তাই করবে। আর বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উন্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত। -জামে তিরমিযি, হাদিস : ২৬৪১

সুতরাং প্রমাণ হলো, সত্যিকারার্থে যারা নবিজি সাঃ-এর সুন্নাহ ও সাহাবাদের রা. পথে থাকবে সেই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতই জান্নাতে যাবে বা মুক্তি পাবে। অন্য সকল মতবাদের মানুষ জাহান্নামে যাবে। উপরন্তু আমরা আগেই জেনেছি যে, হেযবুত তওহীদ মহান আল্লাহ’র তৈরি নয়, বরং এটা পন্নী সাহেবের আবিস্কার। আর তারাই অন্যত্র বলেছেন, মানুষের তৈরি মতপথে চলে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। তারা লিখেছেন,
নিজেদের আবিস্কৃত বা ব্রিটিশদের প্রদর্শিত পথে চলে জান্নাতে যাওয়া যাবে এমন কোন কথা ইসলাম সমর্থন করে না’। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৫৭

সুতরাং বুঝা গেলো, মানব আবিস্কৃত হেযবুত তওহীদ গ্রহণ করে জান্নাতে যাওয়ার কল্পনা সুদূর পরাহত।

পন্নী ওপর কী মু’জিযা সংগঠিত হয়েছিলো?

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদের সকল দাবির মূল টার্ণিং পয়েন্ট হলো, তাদের এক কথিত মিথ্যা মু’জেজা। ০২/০২/২০০৮ সালে যাত্রাবাড়ী হেযবুত তওহীদের এক সদস্যের নাতনীর আকীকা অনুষ্ঠান ঘিরে ৩১৮ জন সদস্যের একটি অনুষ্ঠানে বায়াজীদ খান পন্নী সাহেব উপস্থিত হতে নানা পেরে মোবাইল যোগে ১০ মিনিট বক্তব্য প্রদান করেন। আর সে বক্তব্যের সময় নাকি সে ৮টি মোজেজা ঘটেছিলো। তার দাবী হচ্ছে “আমি নবী বা রাসুল না,কিন্তু আমার উপর আল্লাহ মো’জেজা ঘটিয়েছেন। শুধু এতটুকু দাবীতে তিনি ক্ষ্যান্ত হননি, বরং কতবড় অপদার্থ হলে এতবড় জঘন্য দাবী করা যায় যে, তিনি স্পষ্টাকারে দাবী করেছেন যে, “১০ মিনিটে ৮ টি মোজেজা আল্লাহ আমার উপর করেছেন। কোন নবীর ক্ষেত্রেও এমনটি হয়নি।” এমনকি সে তার মোজেজার ক্ষেত্রে যুক্তি পেশ করছে যে, আগের নবীদের উপর মোজেজা সংগঠিত হয়েছে ফিরিস্তাদের মাধ্যমে আর আমার উপর মোজেজা করেছেন আল্লাহ নিজে।এজন্য ১০ মিনিটে ৮ টি মোজেজা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু নবিদের মো’জেজায় মাধ্যম থাকায় তা সম্ভব হয়নি।নাউযুবিল্লাহ। চলুন পন্নী সাহেবের দাবিগুলো দেখা যাক। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী বলেন,
আল্লাহ নিজে ২৪ মহররম ১৪২৯ হেজরী মোতাবেক ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে এমামুযযামানের একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণের সময় একই সাথে ন্যূনতম  ৮টি মো’জেজা সংগঠিত করেন। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ২৪

এর চেয়ে বড় রহমত আর কি হোতে পারে? যে মো’জেজা তিনি নবীদের সময়ে ঘটাতেন একটা একটা কোরে, এখন তিনি নিজে এক সাথে ৮টা মো’জেজা ১০ মিনিটের মধ্যে ঘোটিয়ে দিলেন। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৬৭

২ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে মহান আল্লাহ এক মহান মোজেজা অর্থাৎ অলৌকিক ঘটনা সংগঠন করেন যার দ্বারা তিনি তিনটি বিষয় সত্যায়ন করেন। যথা: হেযবুত তওহীদ হক এর এমাম আল্লাহর মনোনীত হক এমাম, হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে সারা পৃথিবী আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। -সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ২৩

পন্নীর মো’জেজার গতি নবীদের চেয়েও বেশী:
এর চেয়ে বড় রহমত আর কি হোতে পারে? যে মো’জেজা তিনি নবীদের সময়ে ঘটাতেন একটা একটা কোরে, এখন তিনি নিজে এক সাথে ৮টা মো’জেজা ১০ মিনিটের মধ্যে ঘোটিয়ে দিলেন। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৬৭

আর একটা তফাৎ হোচ্ছে, নবীদের সময় একটা একটা কোরে মো’জেজা হোয়েছে। একদিন ঈসা (আ:) মৃতকে জীবিত কোরলেন,আরেকদিন অন্ধকে ভাল কোরলেন,আরেকদিন কুষ্ঠ রোগীকে ভাল কোরলেন অর্থাৎ একটা একটা কোরে, মুসা (আ:) এরও তাই। মাসাকে (আ:) বোললেন ‘সমুদ্রে বাড়ি দাও’, সমুদ্র বিভক্ত হোয়ে গেল।সব ঘটনা একটা একটা কোরে। এই একটা থেকে আরেকটা বহু দূর। আর হেযবুত তওহীদ কে আল্লাহ 10 মিনিটের মধ্যে ৭-৮ কোরে দিলেন। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৫

পন্নীর মু’জিযা কোরআনের মত অকাট্য:
সমস্ত কোর’আনকে আল্লাহ যেভাবে উনিশ সংখ্যার জালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধেছেন ঠিক একই ভাবে সেদিন এমামের সংক্ষিপ্ত ভাষণটিকে আল্লাহ বাঁধলেন তিন সংখ্যার জাল দিয়ে। উদ্দেশ্যও এক অর্থাৎ সত্যায়ন। এর দ্বারা আ আল্লাহ এটাই প্রকাশ কোরেছেন যে, ‘ঐ ভাষণে যে কথাগুলো বলা হোয়েছে যে মানুষটি বোলছেন তাঁর স্বরচিত মনগড়া কথা নয়,এগুলো আমারই (আল্লাহর) কথা এবং তিনি আমারই মনোনীত ব্যক্তি। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ২৪/৭৫/৯১

পন্নীর মু’জিযা মুহাম্মাদ সাঃ-এর মু’জিযার মত:
আমাদের রসুলের উপর যে আয়াতগুলো আসলো অর্থাৎ মো’জেজা বোলি যেগুলোকে, এগুলো চিন্তাভিত্তিক। আগেরগুলো অতখানি চিন্তা-ভিত্তিক ছিল না, সেগুলো এমন ছিল যা মানুষ চোখে দেখে ভয় পেয়ে বলে ‘আরে,আরে, এটা কি!’ এই ধরণের।’ এই যে ২ তারিখে যেটা হোলো সেটাও এমন। এটা নিয়ে ভাবো। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৫

মো’জেজার ভাষণে যা জানানো ছিলো:
২০০৮ সালে মহামহিম আল্লাহ এক মোজেজার (অলৌকিক ঘটনা) মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন যে তিনি এই দীনের যে আত্মা, আকিদা,ধারণা ও রূপ মানব জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন সেটাই একমাত্র হক, সত্য। পথের হেযবুত তওহীদ হক হিজবুত তাওহীদের এমাম হক এবং এই হেযবুত তওহীদ দিয়েই আল্লাহ অন্য সমস্ত জীবনব্যবস্থা লুপ্ত করে তার দীনুল হক সত্য জীবনব্যবস্থা এসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৩৩

পন্নীর মু’জিযা বিশ্বাস না করা মুনাফেকী:
হেযবুত তওহীদে যারা আছো তারা এটার সম্বন্ধে কোন সন্দেহ রাখবে না। সন্দেহই মোনাফেকী। ১০০% এর ভিতর যার মনে ৫% সন্দেহ আছে সে ৫% মোনাফেক, যার ১০% সন্দেহ আছে সে ১০% মোনাফেক। সন্দেহই মোনাফেকী। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৩

পন্নীর মু’জিযা বিশ্বাস না করলে সে বেঈমান:
এটা ঐ রকম যেরকম ইহুদীদের চোখের সামনে ঈসা (আ:) বোললেন, তিন দিনের মরা উঠে দাড়াও,উঠে দাড়াল,তারপরও তারা বিশ্বাস কোরল না।এই হেযবুত তওহীদের পুঞ্জিভূত এক জায়গায় ৭/৮ টা মো’জেজা, যারা বিশ্বাস কোরবে না তাদেরও ঐ একই পরিনতি। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৬২

পন্নীর মু’জিযা বিশ্বাস না করলে সে জাহান্নামি:
যে ইহুদীরা এ ঘটনা দেখল,তারপরও মুসা (আ:) এবং আল্লাহ সম্পর্কে অবিশ্বাস কোরবে,সন্দেহ কোরবে তাদের কি অবস্থা হবে? অবশ্যই জাহান্নাম। ২ তারিখের ঘটনাও তেমনি একটি ঘটনা, প্রত্যেকটা। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৫৭

যারা পরে ঐ ঘটনাটি যে এক অলৌকিক ব্যাপার, আল্লাহর মো’জেজা তা বুঝতে পারবে, তাদের মধ্য থেকে যারা হেযবুত তওহীদ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে তাদের শাস্তি হবে ভয়াবহ। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৯১

পন্নীর মু’জিযা বিশ্বাস না করলে মুক্তি নেই:
হেযবুত তওহীদের এ মো’জেজা ও অনেকেই বিশ্বাস কোরবে না, এমন কি আমার মনে হয় যারা ঘটনাস্থলে ছিল তাদের মধ্যেও অনেকে বিশ্বাস কোরবে না। তাদের মুক্তি নাই। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬২

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ও পন্নী সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্যগুলো থেকে বুঝা যায় যে, তিনি দাবি করছেন-
১. পন্নী সাহেবের উপর আল্লাহ মু’জিযা ঘটিয়েছেন।
২. পন্নীর মু’জিযার গতি নবীদের চেয়েও বেশী:
৩. পন্নীর মু’জিযা কোরআনের মত অকাট্য:
৪. পন্নীর মু’জিযা মুহাম্মাদ স: এর মোজেজার মত:
৫. পন্নীর মু’জিযার ভাষণে পন্নীকে সত্যায়ণ করা হয়েছিলো:
৬. পন্নীর মু’জিযা বিশ্বাস না করা মুনাফেকী:
৭. পন্নীর মু’জিযা বিশ্বাস না করলে সে বেঈমান:
৮. পন্নীর মু’জিযা বিশ্বাস না করলে সে জাহান্নামী:
৯. পন্নীর মু’জিযা বিশ্বাস না করলে মুক্তি নেই:

ইসলাম কী বলে?
মু’জিজা কেবল নবিদের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়। গত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে এমন কোন নজীর নেই যে, আল্লাহ তা’আলা নবী ছাড়া অন্য কাউকে সত্যায়নের জন্য নিজ থেকে মো’জেজা সংগঠিত করেছেন। কিন্তু আজব হলেও গুজব নয় পন্নী সাহেব সেটা করে বসলেন যে, তাকে সত্য প্রমাণিত করতে আল্লাহ তার উপর মো’জেজা ঘটিয়েছেন। পন্নী সাহেবের কথিত মো’জেজা সম্পর্কে আলোচনা করা আগে মো’জেজার অর্থ ও কাদের সাথে এর সম্পৃক্তা সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন আগে এর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ জানা যাক।

মু’জিযার শাব্দিক অর্থ: আল্লামা সাফারেনী রহি. বলেন,
المعجزة ماخوذة من العجز الذي هو ضد القدرة
আরবীতে معجزہ (মুজিজা) শব্দটি عجز থেকে নির্গত। যার শাব্দিক অর্থ অপারগ ও অক্ষম। যা সক্ষমতার বিপরীতে ব্যবহার হয়ে থাকে। (সেখান থেকে اسم فاعل হলো معجزہ অর্থাৎ অক্ষমকারী।)
সূত্র: শরহুল আক্বীদা (সাফারেনী) পৃ. ২৮০

মু’জিযার পারিভাষিক অর্থ: ইবনে হামদান রহি. বলেন,
الْمُعْجِزَةُ هِيَ مَا خَرَقَ الْعَادَةَ مِنْ قَوْلٍ أَوْ فِعْلٍ إِذَا وَافَقَ دَعْوَى الرِّسَالَةِ وَقَارَنَهَا وَطَابَقَهَا عَلَى جِهَةِ التَّحَدِّي ابْتِدَاءً بِحَيْثُ لَا يَقْدِرُ أَحَدٌ عَلَيْهَا وَلَا عَلَى مِثْلِهَا، وَلَا عَلَى مَا يُقَارِبُهَا”
মু’জিজা এমন এক অলৌকিক কথা ও কাজকে বলে যা রিসালাত দাবি সত্তায়িত করতে কোনো চ্যালেঞ্জের মুকাবেলায় ঘটে এবং যার সমতূল্য বা সমপর্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী অসম্ভব। -লাওয়ামিউল আনওয়ার : খ. ২ পৃ. ২৯০

আল্লামা মীর সায়্যিদ শরীফ জুরজানী রাহ. (৭৪০ হি.-৮১৬ হি.) মু‘জিযার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন-
المعجزة أمر خارق للعادة داعية إلى الخير والسعادة مقرونة بدعوى النبوة، قصد به إظهار صدق من ادعى أنه رسول من الله
মু‘জিযা এমন বিষয়, যা অলৌকিক বা সাধারণ ও চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রমরূপে প্রকাশ পায় এবং কল্যাণ ও সৌভাগ্যের প্রতি আহ্বান করে, যা নবুওতের দাবির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং তার দ্বারা এমন ব্যক্তির সত্যবাদিতা প্রকাশ করা উদ্দেশ্য, যিনি দাবি করেন যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত। -আত তা‘রীফাত, পৃ- ২২৫

উপরোক্ত সংজ্ঞা থেকে বোঝা যায় যে, মু‘জিযার মধ্যে চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা শর্ত থাকলে তাকে  মু‘জিযা বলে গণ্য করা হবে। শর্তগুলো এই-
ক. অলৌকিক বা সাধারণ ও চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়া।
খ. কল্যাণ ও সৌভাগ্যের প্রতি আহ্বান করা।
গ. নবুওতের দাবির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া।
ঘ. যিনি নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবি করেন, তার দাবির সত্যতা প্রকাশ করার উদ্দেশ্য থাকা।

মু‘জিযার শর্তগুলোর বিস্তারিত আরো ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইমাম কুরতুবী (৬৭১ হি.) তার তাফসীর গ্রন্থ ‘আলজামে লি আহকামিল কুরআনে’র ভূমিকায়। অবশ্য এ সংজ্ঞাগুলো হেযবুত তওহীদের লোকেরা মানবেন না। কারন তারা বলবে যে, এগুলো ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের বানানো সংজ্ঞা। এগুলো বিকৃত। এ বলে তারা সাথে সাথেই প্রত্যাক্ষান করে দিতে পারেন । তাই চলুন হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা পন্নী সাহেবের কাছে মো’জেজার সংজ্ঞা কি সেটা জেনে নিই। পন্নী  সাহেব নিজেই লিখেছেন-
নবী রসূলগণ যে সত্যিই আল্লাহর তরফ থেকে মনোনীত ও নবুয়্যত প্রাপ্ত ব্যক্তি তা সত্যায়নের জন্য যে অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা তাঁরা আল্লাহর হুকুমে ঘটিয়ে দেখাতেন সেগুলোই হোচ্ছে মো’জেজা। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃষ্ঠা: ৭

পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বোলছেন, ‘আমি প্রত্যেক নবী ও রসুলকে চিহ্ন দিয়েছি। তখন তিনি সেই চিহ্ন দেখাবেন এবং বোলবেন যে এই চিহ্ন দেখাতে তোমরা কেউ পার না। এটা আমার চিহ্ন অর্থাৎ প্রমাণ যে আমি আল্লাহর রসুল।এই চিহ্নই নবী রসুলদের মো’জেজা। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৬১

এমামুযযান বোলেছেন, অলৌকিক ঘটনা দুই রকম। একটাকে বলা হয় কেরামত,অন্যটি মো’জেজা।আধ্যাত্মিক সাধকরা বিশেষ প্রক্রিয়ার (তরীকা) মাধ্যমে বহুদিন কঠের সাধনা কোরে আত্মার ঘষামাজা কোরে অসাধারণ শক্তি অর্জন কোরে পানির উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন,ফুঁ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারেন ইত্যাদী অনেক রকম অলৈকিক কাজ করেন বা করান তার নাম হোল কেরামত। আর আল্লাহ যে অলৌকিক কাজ করেন বা করান তার নাম হোল মো’জেজা। দেখা যায় ইতিপূর্বে তিনি যে মো’জেজাগুলি সংঘটন কোরেছেন সেগুলি কোরেছেন তাঁর নবী রাসুলদের মাধ্যমে। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ১৫

প্রিয় পাঠক! আমরা প্রথমত এ ব্যাপারে স্পষ্ট হয়ে গেলাম যে, আরব-অনারবের সমস্ত মুসলিম একমত যে, যে সমস্ত অলৌকিক ঘটনা মহান আল্লাহ নবীদের দ্বারা সংগঠিত করেছেন, তাকেই মো’জেজা বলে। এমনকি তাদের বই থেকেও মো’জেজার সজ্ঞা হতে স্পষ্ট প্রমাণিত হল যে, মু’জিযার অন্যতম দিক হল- মু’জিযা নবুওয়াতের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ মোজেজা একমাত্র তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা নবী। এক কথায় নবীগণ ছাড়া মোজেজা সংগঠিত হয় না।

সুতরাং যে মো’জেজা নবিদের সাথে সংশ্লিষ্ট, সে মো’জেজা কী কোন উম্মত নিজের বেলায় দাবি করতে পারে? নিশ্চয় না। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ সে দাবিটি পন্নী সাহেব নিজের বেলায় করে বসেছেন। সুতরাং পন্নী সাহেব নিজেকে নবী দাবী না করেও নবুওয়াতের সাথে অবিচ্ছেদ্য অংশ মো”জেজার দাবী করে অত্যান্ত গভীরভাবে নিজেকে নবীই দাবী করেছেন কী না তা পাঠক মহলই বুঝবেন।

কথিত সে মুজিযা কী কী?
চলুন হাস্যকর ও মিথ্যা সে মোজেজা গুলো কি কি একটু দেখে নিই। বায়াজীদ খান পন্নীর হাস্যকর সেসব মু’জিযার আলোচনা তিনি তার বই ‘আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা’ নামক বইতে উল্লেখ্য করেছেন। সারসংক্ষেপ নিন্মে পেশ করছি-
১.পন্নীর বক্তব্যের সময় চারদিকে পিনপতন নিরাবতা তৈরি হওয়া।
২.উক্ত অনুষ্ঠানের নষ্ট সাউন্ডস্পীকার খুব ক্লিয়ার হয়ে যাওয়া।
৩. অনুষ্ঠানে থাকা ৩ টি দুগ্ধপোষ্য বাচ্চাসহ ৪৩ টি বাচ্চা কোন আওয়াজ না করা।
৪.বাহিরের দু’টি সাউন্ড কক্সের আওয়াজ তাদের অনুষ্ঠানে না আসা।
৫.বাতাস বন্ধ হয়ে যাওয়া।
৬.অনুষ্ঠানে ৫২ টি মোবাইল থাকা সত্বেও কোনটায় ফোন না আসা।
৭.সবাই ভাষণের প্রতি মনোযোগী হওয়া। অর্থাৎ বাহিরের কোন কথা কেউ না শোনা।
৮.ভাষণটি ৩ সংখ্যায় বিভাজ্য হওয়া। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা।

এগুলো কী মু’জেজা হতে পারে?
এক. প্রিয় পাঠক, আপনারাই বলুন উপরোক্ত ৮টি বিষয়ে অলৌকিক কিছু আছে বলে মনে হয়? আমার কাছে তো মনে হয়নি, বরং আমার কাছে মনে হয়েছে, ‘পাগলের সুখ মনে মনে’।  আপনাদের কাছে কী মনে হয়েছে তা জানি না। তবে আমাদের কাছে কিছু মনে হোক বা না হোক খোদ পন্নী সাহেবের কাছেও কিন্তু এখানে অলৌকিক কিছু মনে হয় নি। হ্যাঁ। এটা পন্নী সাহেব নিজেও বলেছেন,
এই ব্যাপারটা আমার কাছে একটি সাধারণ ঘটনা ছাড়া অন্য কিছুই মনে হয়নি। ওদের অনুরোধ যা আমার মনে এসেছিল কয়েকটি কথা বলে দিলাম ব্যস। এর মধ্যে কোন অসাধারণত্ব কোন বৈচিত্র বা কোন কিছু আমার মনে হয় নি, অতি সাধারণ একটি ঘটনা। অন্য কোন অনুভূতিও আমি অনুভব করিনি। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৮৮

যেখানে পন্নী সাহেব নিজেই কোনো অসাধারণ বা অলৌকিক কিছু মনে করতে পারেননি, সে ঘটনাকে আবার মো’জেজা বলে পন্নী সাহেব কী নিজেকে মানোসিক অসুস্থ বলে প্রমাণ দিলেন না?

দুই. আমরা আগেই জেনেছি মো’জেজার মাধ্যমে কোনো অলৌকিক জিনিষ দেখিয়ে নবুওয়াত বা রিসালাতকে সত্যায়িত করা হয়। অথচ পন্নী সাহেবের কথিত এ মো’জেজা তাৎক্ষনিক কেউ বুঝতে পারেননি। এখানে যে বিরাট মো’জেজা ঘটে গেলো সেটা নাকি তারা বুঝতে পেরেছেন ৩ মাস পর। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৫৬

বিষয়টিকে মো’জেজা না বলে কী গন্ডারের সাথে উদহরণ সবচে মানানসই নয়? শুনেছি গন্ডারের চামড়া পুরো হওয়ার কারণে তাকে কেউ কাতুকুতু দিলে ১ মাস পরে টের পায়। আর উনারা পন্নী সাহেবের মো’জেজা টের পেয়েছেন তিন মাস পর। আন্দাজ করুন গন্ডারের ইতিহাসকেও হার মানানো বিষয় নয় কী?

এরপরও হয়তো হেযবুত তওহীদের ভাইয়েরা এখানে অলৌকিক কিছু দেখার বিষয় স্বীকারোক্তি দেবেন। তাদের জন্য প্রত্যেকটি কথিত মো’জেজার বিষয়ে নিন্মে বাস্তবতার দৃষ্টি নিবন্ধ করার চেষ্টা করা হলো-

কথিত প্রথম মো’জেজা: পন্নীর বক্তব্যের সময় চারদিকে পিনপতন নিরাবতা তৈরি হওয়া।

নিরসন: কোনো এক সংগঠণের আমীর হোক বা কোনো মাহফিলের বক্তা বয়ান করার সময় অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যদি কথা বলেন, তাহলে সে সময় সকলের নিরবতা মানবসমাজে এটা একটা বাস্তব চিত্র। এটা সর্বক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এমনকি রাস্তার পাশে অনেক সময় হকার কিংবা কোনো পাগল বিভিন্ন ভাষণ দেয়, সেখানেও মানুষ চুপচাপ শ্রবণ করে থাকে। এটাও কী তাহলে মো’জেজার অংশ? যদি তাই হয়, তাহলে লক্ষ জনতা নিয়ে আমরা যখন বয়ান করি তাদের পিনপতন নিরবতাও তো এক মহা মো’জেজা! এটাকে কোনো শিক্ষিত মহল মো’জেজা মনে না করলেও হেযবুত তওহীদের ভাইয়েরা সেটার মধ্যে মো’জেজার গন্ধ পান।

কথিত দ্বিতীয় মো’জেজা: উক্ত অনুষ্ঠানের নষ্ট সাউন্ডস্পীকার খুব ক্লিয়ার হয়ে যাওয়া।

নিরসন: মাইকের সাউন্ড ক্লিয়ার হওয়া না হওয়া এটা যান্ত্রিক বিষয়। অনেক সময় নতুন মেশিনও কাজ করে না। আবার অনেক সময় বাদ দেওয়া মাইক্রোফোনও কাজে আসে। সেটাকেও যদি মো’জেজা বলতে হয়, তাহলে অনেক মাইক অপারেটরের মাধ্যমে অনেক সময় মো’জেজা সংগঠিত হয়ে থাকে, তাহলে পন্নীর মধ্যে আর মাইক অপারেটরের মধ্যে তফাৎ কী?

কথিত তৃতীয় মো’জেজা: অনুষ্ঠানে থাকা ৩ টি দুগ্ধপোষ্য বাচ্চাসহ ৪৩ টি বাচ্চা কোন আওয়াজ না করা।

নিরসন: বাচ্চারা স্বভাবতই ছোট্র হ্নদয়ের কোমলমতি শিশু। তারা অতিরিক্ত সাউন্ডে সাধারন চুপ থাকে। হয়তো ভয়ে বা বিস্ময়ে। আর সাধারণত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাবা-মা বাচ্চাদের প্রতি সতর্ক থাকেন, যেন বাচ্চারা ডিস্টার্ব না করে। এটাও যদি কেউ মনে করেন মো’জেজা, তাহলে লোকটাকে সুস্থ বলবেন কী করে?

কথিত চতুর্থ মো’জেজা: বাহিরের দু’টি সাউন্ড কক্সের আওয়াজ তাদের অনুষ্ঠানে না আসা।

নিরসন: যখন কেউ ডিজে পার্টির গানের অনুষ্ঠানে থাকে, বা কানে হেডফোন লাগিয়ে কিছু শ্রবন করে তখন বাহিরের কোনো আওয়াজ আসে কী? শুধু কী তাই? অনেক সময় দেখা যায় যদি কেউ কোনো জিনিষ গভীরভাবে পড়ে বা মনোযোগ সহকারে শোনে তখন তার পাশেই এসে কেউ কিছু বললে সে টের পায় না। তাহলে এটাকেও মো’জেজা বলবেন? কতই না হাস্যকর মোজেজা পন্নী সাহেবের!

কথিত পঞ্চম মো’জেজা: বাতাস বন্ধ হয়ে যাওয়া।

নিরসন: গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে যখন আমাদের মনোযোগ গভীরে নিমগ্ন থাকে, তখন আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় কাজ করে না, শরীরের অনুভূতি তখন অনেকাংশে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে গরম ঠান্ডাও অনুভূত হয় না। এটা মানবীয় একটি সিস্টেম। যেহেতু ঐ মজলিসে থাকা লোকজনের কাছে পন্নী সাহেব হলেন তাদের সফলতা ও বিফলতার মূল মন্ত্র সে হিসাবে তাদের কাছে পন্নী সাহেবের বক্তব্যগুলো অতিগুরুত্বপূর্ণ। সে হিসাবে তাদের কাছে বাহিরের বাতাস অনুভূত না হওয়াটাই স্বাভাবিক। এমনটা তো আমাদের মাহফিলের শ্রোতাদেরও অনেক সময় হয়ে থাকে। বড় কোনো বক্তার বয়ান শোনেন প্রচন্ড রৌদ্রে। অথচ তাদের গরমই উপলব্ধিতে আসে না। বয়ান শেষে দেখেন গা ভিজে গেছে। তাহলে এটাও কী বক্তার মো’জেজা বলবেন?

কথিত ষষ্ট মো’জেজা: অনুষ্ঠানে ৫২ টি মোবাইল থাকা সত্বেও কোনটায় ফোন না আসা।

নিরসন: আমরা যখন শুক্রবার দিন মসজিদে প্রবেশ করি এবং নামাজে দাঁড়াই তখন থেকে পুরো ১ ঘন্টা যাবৎ  ৫০০/৬০০ মানুষের কাছে থাকা ফোনে কারোর ফোনই তো বাজে না। কারণ সবাই সে সময় কেউ ফোন বন্ধ করে রাখে, কেউ বা সাউন্ড অফ করে রাখে। তাহলে এটাও কী মো’জেজা বলতে হবে?

কথিত সপ্তম মো’জেজা: সবাই ভাষণের প্রতি মনোযোগী হওয়া। অর্থাৎ বাহিরের কোন কথা কেউ না শোনা।

নিরসন: এটা তো আরও স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ তারা সবাই তাদের মহামান্য এমামের কথা শুনছিলেন। তার কথার প্রতি মননিবিষ্ট থাকবেই। এটাই তো স্বাভাবিক বাস্তবতা। এটাকে মো’জেজা বললে যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাগলা মলম বিক্রির চাপাবাজি মনোযোগ সহকারে শোনাটাও মো’জেজা বলতে হবে।

কথিত অষ্টম মো’জেজা: পন্নী সাহেবের ভাষণটি ৩ সংখ্যায় বিভাজ্য হওয়া।

পন্নী সাহেব তার ভিডিও বক্তব্যে অনেক লম্বা আলোচনা করেছেন এবং হেযবুত তওহীদও তার এ বিষয়ে বলেন,
‘সমস্ত কোর’আনকে আল্লাহ যেভাবে উনিশ সংখ্যার জালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধেছেন ঠিক একই ভাবে সেদিন এমামের সংক্ষিপ্ত ভাষণটিকে আল্লাহ বাঁধলেন তিন সংখ্যার জাল দিয়ে। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ.২৪/৭৫/৯১

নিরসন: মূলত পবিত্র কুরআনের ১৯ সংখ্যাতত্বের আবিষ্কারক রাশাদ খলিফা। প্রথমে জানা দরকার কে এই রাশাদ খলীফা? চলুন তার পরিচয় জেনে নেওয়া যাক।

কুরআনের সংখ্যাতত্বের আবিষ্কারক রাশাদ খলিফার পরিচয়:
রাশাদ খলিফা ১৯ নভেম্বর ১৯৩৫ সালে মিশরে জন্মগ্রহণ করেন।  রাশাদ খলিফা কায়রোর এইন শামস্ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ১৯৫৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং ১৯৬৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন জৈব-রসায়নবিদ্যায়। ১৯৭৫-৭৬সালে তিনি প্রায় বছর খানেক লিবিয়া সরকারের বিজ্ঞান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে রসায়নবিদ হিসেবে জাতিসংঘের অধীনে ভিয়েনাতে শিল্প উন্নয়ন সংস্থায় যোগ দেন এবংসেখান থেকে ১৯৮০ সালের দিকে সিনিয়র রসায়নবিদ হিসেবে আমেরিকার এরিজোনা রাজ্যের সরকারি রসায়ন বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি একজন আমেরিকান মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের একসাথে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে ছিল। যিনি ইসলামের অসংখ্য মৌলিক আক্বীদার উপর হামলা করেছিলেন, এমনকি নিজেকে নবী পর্যন্ত দাবি করেছিলেন।

রাশাদ খলীফার নবী দাবী: ইতিহাসের পাতায় রাশাদ খলীফা এক জঘণ্যতম নিকৃষ্ট ব্যক্তির নাম। যিনি নিজেকে নবী বলে দাবি করেছিলেন। নিন্মে কয়েকটি প্রমাণ দেওয়া হলো-
এক. এমনকি রাশাদ খলীফা নিজেকে Messenger Of God  তথা رسول خدا অর্থাৎআল্লাহর রাসুল বলে দাবি করেছেন এবং সেভাবেই তিনি সাক্ষর করতেন। নিন্মে তার সাক্ষর তুলে ধরা হলো-

দুই. রাশাদ খলীফা নিজেকে নবী বলে দাবি করেন। যা ‘Rashad Khalifa declares himself “Messenger Of God অর্থাৎ রাশাদ খলিফা নিজেকে আল্লাহ তা’আলার রাসুল হিসাবে ঘোষণা করেন’ শিরোনামে লেখা হয়েছে।
সূত্র: https://web.archive.org/web/20100404175811/http://www.mostmerciful.com/rashad-messenger.htm

তিন. এমনকি রাশাদ খলীফা নিজের ইংরেজি অনুবাদকৃত কোরানের ‘সুরা ফুরকান’, ‘সুরা ইয়াসিন’, ‘সুরা শুরা’ এবং ‘সুরা তাকবীর’-এর আয়াতে নিজের নাম পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিয়ে তাঁর বক্তব্যের ‘ধর্মীয় গ্রহণযোগ্যতা’ আদায়ের চেষ্টা করেছেন। যেমন তিনি সুরা ফুরকানের ৫৬ নং আয়াতের অর্থ করতে গিয়ে দাবী করেছেন, আল্লাহ নাকি তাকে বলেছেন-
We have sent you (Rashad) as a deliverer of good news, as well as a warner.
আমি আপনাকে (রাশাদ) সুসংবাদের বিতরণকারী হিসাবে এবং একজন ওয়ার্নার হিসাবে প্রেরণ করেছি। -https://web.archive.org/web/20100107023807/http://www.submission.org/suras/sura25.html

উপরোক্ত তিনটি প্রমাণ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, রাশাদ খলীফা নিজেকে নবী-রাসুল বলে দাবি করতেন। তার আরও অসংখ্য কুফরী মতবাদ রয়েছে। যে সম্পর্কে শায়খ মুফতী আবদুল মালেক হাফি. কর্তৃক লিখিত-‘১৯ সংখ্যাও কি কুরআনী মুজেযা?’ প্রবন্ধটি পড়তে পারেন।

১৯ সংখ্যা দিয়ে কুরআনের অলৌকিতার আবিস্কারক:
এই রাশাদ খলীফা ১৯৬৮ সাল থেকে কুরআনের গানিতিক কোড নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এই বিষয়ে তিনি বেশকিছু বই লিখেন। ১৯৮২ সালে তার আবিষ্কৃত ১৯ এর মিরাকল সবাইকে দেখানোর জন্য Quran:Visual Presentation Of The Miracle রচনা করেন। -Wikipedia

তিনি ১৯ তত্ত্বকে সার্থকতা দিতে গিয়ে সূরা তাওবাহ এর ১২৮ এবং ১২৯ নং আয়াতগুলো বাদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

রাশাদ খলিফার গবেষণার ত্রুটিসমূহ:
অসংখ্য অপশন থেকে রাশাদ খলিফার উনিশ দ্বারা বিভাজ্য প্রমান করা যায় এমন অপশনগুলো গ্রহণ করেছেন। বাকিগুলো ফেলে দিয়েছেন। যেখানে যেভাবে ইচ্ছা একটি ভিত দাঁড় করিয়ে ১৯-এর হিসেব পুরো করতে পারলেই যেন চলে। যেমন-

ক. রাশাদ খলিফার মতে কুরআন মাজীদের ১ম বাক্য ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ যাতে মোট অক্ষর সংখ্যা ১৯।

ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢ
–এর মোট হরফ কি ১৯, না ২০ না ২১?
‘খাড়া যবর’ তো মূলত আলিফ, একেও হিসাব করা হলে মোট হরফ সংখ্যা হবে ২১।

১৯ তত্ত্বের লোকেরা হরফ গণনার সময় কখনো লিপিশৈলী আবার কখনো উচ্চারণকে বুনিয়াদ বানান। যেখানে যে মানদণ্ড অবলম্বনের মাধ্যমে ১৯-এর হিসাব মিলে যায় সেখানে তাই করেন!

খ. রাশাদ খলীফা দাবি করেছে যে, কুরআন মাজীদের যে অংশ সর্বপ্রথম নাজিল হয়েছে (সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত) তার শব্দ সংখ্যা ১৯, আর সূরা আলাকের মোট আয়াত সংখ্যাও ১৯। অথচ এই পাঁচ আয়াতের মোট শব্দসংখ্যা ১৯ নয় বরং ২০। কারণ, ﻣﻦ ‘ﻣﺎ ‘ ﻟﻢ প্রত্যেকটি তো ভিন্ন ভিন্ন শব্দ। আর হরফে যার ( ﺏ ) এবং হরফে আতফ ( ﻭ )-কেও গণনা করলে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ২৩। তা ছাড়া প্রথম ও তৃতীয় আয়াতে ﺭﺑﻚ -কে দুই শব্দ ধরলে (অর্থের দিক থেকে বিষয়টি এমনই) মোট শব্দসংখ্যা দাঁড়াবে ২৫। মোটকথা ১৯ কোনোভাবেই সঠিক নয়।

এমনিভাবে সূরা আলাকের মোট আয়াতসংখ্যা কুফী ও বসরী গণনা অনুযায়ী তো ১৯-ই। কিন্তু মক্কী ও মাদানী গণনা অনুযায়ী মোট সংখ্যা ২০ এবং শামী গণনা অনুযায়ী ১৮। তা হলে ১৯-এর হিসাব কিভাবে ঠিক থাকলো?

গ. উপরন্তু সূরা ক্বালামে ১৩১ টি ن রয়েছে, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।

ঘ. তাছাড়া ن এর মত ص সূরা ছ্ব-দে এককভাবে রয়েছে। সূরা ছ্ব-দে ২৬ টি ص রয়েছে যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।

ঙ. সূরা মারইয়ামে ك আছে ১৩৭ টি যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।

চ. প্রাথমিক মুতাশাবিহাত আয়াত কোথাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য, কোথাও নয়। যেখানে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হয় না রাশাদ খলিফা সেখানে কম বেশি অক্ষর গুনেছেন। এমনকি অক্ষর যোগ করেছেন। তিনি মুতাশাবিহাত আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা স্পষ্টভাবেই প্রমানিত।

এধরনের আরো অনেক ত্রুটি বিচ্যুতিতে ভরা তার এই গবেষণা ।
[আরও দেখুনঃ https://mobile.facebook.com/notes/ibrahiim-burhaan/০৬-১৯-এর-মিরাকলের-অযৌক্তিকতা/281051868661566/?__tn__=HR ]

তার এ মতবাদ খণ্ডনে কয়েকটি কিতাব:
১. লাইসা ফিল ইসলামি তাকদীসুন লিলআরকাম,(১৯৮০ ঈ.) -উস্তাদ ইদরীস
২. তিসআতা আশারা মালাকান , (১৯৮৫ ঈ.)-হোসাইন নাজী মুহাম্মদ মহিউদ্দীন
৩. ফিতনাতুল কারনিল ইশরীন , প্রাগুক্ত
৪. ইজাযুল কুরআনিল কারীম , (১৯৯১ ঈ.) -ফযল হাসান আব্বাস
৫. আলবয়ান ফি ইজাযিল কুরআন , (১৯৯২ ঈ.) -সালাহ আবদুল ফাত্তাহ আল খালেদী

সংখ্যাগত বিশ্লেষণের বিশেষ কোন তাৎপর্য আছে কি?

গবেষকদের মতে ইচ্ছে করলেই যে কোন সংখ্যাকে অলৌকিক কিংবা তাৎপর্যময় সংখ্যা হিসবে হাজির করা যেতে পারে। যেমন-
এক. ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকায় ঘটে যাওয়া ৯/১১ এর ঘটনার ব্যাপারে টুইন টাওয়ারে হামলার তারিখ (৯+১+১)= ১১.

দুই. ১১ই সেপ্টেম্বর বছরের ২৫৪তম দিন, এই হিসেবে (২+৫+৪)= ১১.

তিন. ১১ই সেপ্টেম্বর পর বছর শেষ হতে ১১১ দিন বাকি। সেখান থেকে শুরু করে টুইন টাওয়ার 11 এর মত দেখতে।

চার. “New York City”, “Afghanistan”, “the Pentagon” ইত্যাদি সব কিছুতেই ১১টি শব্দ উল্লেখ করেই সাংখ্যিক তাৎপর্য খোঁজা যেতে পারে।

কিন্তু এ ব্যাপারগুলোকে গণিতবিদ জন এলেন পাউলোস তার Irreligion বইয়ে “আফটার দ্য ফ্যাক্ট – কোইন্সিডেন্স” (After the fact coincidence) বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাবে অনেক কিছুই আবার ১১ এর সাথে সম্পর্কহীন। যেমনঃ

হামলার বছর ২০০১=> ২+০+০+১= ৩ (১১ নয়)
হামলার সময়ে ৪ টি (১১টি নয়) বিমান যুক্ত ছিলো
বিমানে লোকের সংখ্যা ছিলো ২৬৬=> ২+৬+৬=১৪ (১১ নয়)
একটি প্লেন এর নাম্বার ৭৬৭ => ৭+৬+৭=২০ (১১ নয়)
আরেকটি প্লেন এর নাম্বার ৭৫৭ => ৭+৫+৭= ১৯ (১১ নয়) ইত্যাদি।

এছাড়াও, রুশ বংশোদ্ভুত গণিতবিদ এবং খ্রিস্টান ধর্মতাত্ত্বিক ড. ইভান পেনিন (১৮৫৫-১৯৪২) একদা দাবি তুলেছিলেন বাইবেল ‘ধর্মগ্রন্থটি ৭ সংখ্যা দ্বারা চমৎকারভাবে আবদ্ধ’। (Keith Newman, Is God A Mathematician?)

কেউ আবার ১২ এর সাথে বাইবেলের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।
ইহুদিদের বিখ্যাত শেমহামেফোরাস (Shemhamphorasch)। এক্সোডাসের ১৪:১৯-২১, এই তিনটি আয়াতের মাধ্যমে তারা স্রষ্টার ৭২টি নাম উদ্ভাবন করেছে। ইহদীরা দাবী করে এই প্রতিটি আয়াতে ৭২টি করে বর্ণ আছে।(“72 Names of God,” at The Kabbalah Centre International, ©2006 Kabbalah Centre International)

কাজেই কুরআনের ১৯-এর সাংখ্যিক তাৎপর্য কোন আলাদা গুরুত্ব দাবি করে না। কুরআনের সত্যতার দলীল কুরআন নিজেই। এই অকাট্য ও সুস্পষ্ট্য বাস্তবতা প্রমাণের জন্য এ ধরনের ভিত্তিহীন ও ভুল মতবাদের পিছনে পড়া আদৌ উচিত নয়।

সাধারণ সমস্ত ঘটনায় এ ধরণের সাংখ্যিক তাৎপর্য খোঁজার প্রয়াস নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে বহুভাবে সমালোচিত হয়েছে, অপবিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে পন্নী। সাহেবের কথিত মু’জেযা ৩ সংখ্যাজালে আবদ্ধ অলৌকিক বিষয়টিও তেমন ভুল প্রমাণিত। যদি এক মিথ্যা নবীর আবিস্কৃত অলৌকিক বিষয়কে তর্কের খাতিরে সত্য ধরেও নেওয়া হয়, তবুও পন্নী সাহেবের কথিত মু’জেযার ভেতর কোনো অলৌকিকতা নেই, বরং পন্নী সাহেব যে তার বক্তব্যকে ৩ সংখ্যাজালে আবদ্ধ বলে দাবি করেছেন এটাও চরম মিথ্যা। চলুনন কয়েকটি নমুনা পেশ করি-

পন্নী সাহেবের কথিত মু’জিযার ত্রুটি:
হিযবুত তাওহীদের দাবি হচ্ছে পন্নীর বক্তব্যে ৩ সংখ্যার সংখ্যাজাল বিদ্যমান। কিন্তু এখান থেকে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যাতে ৩ সংখ্যার সন্নিবেশ ঘটেনি।যেমন পন্নী সাহেবের ঐ ভাষণে বলা কথাগুলোর ভেতর-
১.’ডাইরেক্টলি কথা বলা’ শব্দটি এসেছে ২ বার।
২.’আল্লহর শোকর’ শব্দটি এসেছে ২ বার।
৩.’আল্লহর উপর তাওয়াক্কুল’ শব্দটি এসেছে ২ বার।
৪.’উম্মতে মুহাম্মদী’ শব্দটি এসেছে-৭ বার
৫.’হেযবুত তাওহীদ’ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে  ৪ বার। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তাওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ২৬-২৯

এগুলোর একটিও ৩ সংখ্যার সাথে সম্পর্কিত নয়। ইচ্ছে করলেই এ ধরনের আরও অমিল বের করা সম্ভব ।

উপরোক্ত সুদীর্ঘ আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে ,এসব সংখ্যাগত বিশ্লেষণের তাৎপর্য ভিত্তিহীন। সুতরাং যে কথিত মোজেযা ও ভাষণের অলৌকিক বিষয় দাবি করে ও এ দলিলের উপর ভিত্তি করে হেযবুত তাওহীদ পন্নী সাহেবকে আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি ও তার বক্তব্যকে আল্লাহর পক্ষ হতে সত্যায়নকৃত বলার প্রয়াস চালিয়েছে, সেই সংখ্যাতত্ত্বটাই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।এমতাবস্থায় ১৪০০ বছরের ইসলামকে এক নিমিষেই বিকৃত,নতুন পদ্ধতির সালাত,ইসলামের বিভিন্ন পরিভাষার মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে মু’জেযার দোহাই দিয়ে তা চালিয়ে দেয়ার শেষ পথটুকুও বন্ধ হয়ে গেল। আলহামদুলিল্লাহ। এভাবেই সকল মিথ্যুকরা নিজেদের জালে আবদ্ধ হয়ে যায়। আর চির সত্য দ্বীন ইসলাম টিকে থাকে আপন অবস্থায়। মহান রব বলেন,
إِنَّهُمْ يَكِيدُونَ كَيْدًا وَأَكِيدُ كَيْدًا فَمَهِّلِ الْكَافِرِينَ أَمْهِلْهُمْ رُوَيْدًا
তারা ভীষণ চক্রান্ত করে, আর আমিও কৌশল গ্রহণ করি। অতএব, কাফেরদেরকে অবকাশ দিন, তাদেরকে অবকাশ দিন, কিছু দিনের জন্যে। -সূরা ত্বরিক : ১৫-১৭

আল্লাহ নিজের কথা কী পন্নীর মুখ দিয়ে বলিয়েছেন?
উক্ত কথিত মু’জেযার ভাষণের বক্তব্যগুলোকে পন্নী সাহেব আল্লাহর কথা বলে দাবি করেন।

পন্নী সাহেব কী বলেন?
বায়াজীদ খান পন্নী সাহেব দাবি করে বলেন,
(২-২-২০০৮ সালের ভাষণ) টি প্রকৃতপক্ষে আল্লারই ভাষণ, যা আল্লাহ এমামুযযামানের মুখ দিয়ে বোলিয়েছেন। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ২৫

সমস্ত কোর’আনকে আল্লাহ যেভাবে উনিশ সংখ্যার জালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধেছেন ঠিক একই ভাবে সেদিন এমামের সংক্ষিপ্ত ভাষণটিকে আল্লাহ বাঁধলেন তিন সংখ্যার জাল দিয়ে। উদ্দেশ্যও এক অর্থাৎ সত্যায়ন। এর দ্বারা আ আল্লাহ এটাই প্রকাশ কোরেছেন যে, ‘ঐ ভাষণে যে কথাগুলো বলা হোয়েছে যে মানুষটি বোলছেন তাঁর স্বরচিত মনগড়া কথা নয়,এগুলো আমারই (আল্লাহর) কথা এবং তিনি আমারই মনোনীত ব্যক্তি। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ২৪/৭৫/৯১

এই ভাষণের কোন কিছুই এমামুযযামান চিন্তা ভাবনা কোরে বলেন নি,এটি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই ভাষণ যা আল্লাহ এমামুযযামানের মুখ দিয়ে বোলিয়েছেন। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ২৫/২৪

পন্নী সাহেবের উপরোক্ত মন্তব্য থেকে জানা গেলো, তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, ‘আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজের কথা পন্নী সাহেবের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন।’

ইসলাম কী বলে?
এক. মহান আল্লাহ তা’আলা অমুখাপেক্ষী। তিনি কোনো মাখলুকের প্রতি নির্ভরশীল নন। কিন্তু কোনো এক বিড়িখোরের মুখ দিয়ে আল্লাহ তাঁর নিজের কথা বলাবেন এটা কী কোনো সুস্থ মানুষের বিশ্বাস হতে পারে? নিশ্চয় না। উপরন্তু দুর্গন্ধযুক্ত কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে তো দূরের কথা ফিরিস্তাদের কাছেও গ্রহনযোগ্য নয়। এজন্য যদি কারো মুখে পেয়াজ বা রশুনের দূর্গন্ধ থাকে, তাহলে ফিরিস্তারা কষ্ট পান। হাদিস শরীফে আছে, নবিজি সাঃ বলেন,
مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ الْمُنْتِنَةِ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ الإِنْسُ
কেউ এসব দুর্গন্ধযুক্ত গাছ (উদ্ভিদ) খেলে সে যেন আমার মসজিদের নিকটে না আসে। কেননা মানুষ যেসব জিনিসে কষ্ট পায় মালাকগণও (ফেরেশতামণ্ডলী) সেসব জিনিসে কষ্ট পায়। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬৪

হযরত উমর রা. বলেন,
لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا وَجَدَ رِيحَهُمَا مِنَ الرَّجُلِ فِي الْمَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْبَقِيعِ فَمَنْ أَكَلَهُمَا فَلْيُمِتْهُمَا طَبْخًا
আমি দেখেছি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের কোন লোকের মুখ থেকে ঐ দু’টি জিনিসের গন্ধ পেলে তাকে বের করে দিতে আদেশ করতেন। আর তাদেরকে বাকীর দিকে বের করে দেয়া হত। তবে কেউ এ দুটি জিনিস (পিয়াজ ও রসুন) খেতে চাইলে যেন রান্না করে গন্ধ দূর করে নেয়। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬৭

প্রিয় পাঠক, আমরা উপরোক্ত দু’টি হাদিস থেকে বুঝতে পারছি যে, কারো মুখে দুর্গন্ধ থাকলে তার কাছে ফিরিস্তারাও আসেন না। সুতরাং যে বায়াজীদ খান পন্নী নিয়মিত বিড়ি টানতেন, তার মুখ দিয়ে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিবারক কথা বলাবেন এটা চুড়ান্ত হাস্যকর বিষয়।

দুই. উপরন্তু পন্নীর সেই ভাষণের কথাগুলো যে আল্লাহর কথা নয়, এটা তিনি নিজেই বলেছেন,
এই ব্যাপারটা আমার কাছে একটি সাধারণ ঘটনা ছাড়া অন্য কিছুই মনে হয়নি। ওদের অনুরোধ যা আমার মনে এসেছিল কয়েকটি কথা বলে দিলাম ব্যস। এর মধ্যে কোন অসাধারণত্ব কোন বৈচিত্র বা কোন কিছু আমার মনে হয় নি, অতি সাধারণ একটি ঘটনা। অন্য কোন অনুভূতিও আমি অনুভব করিনি। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৮৮

সুতরাং যে কথাগুলো ছিলো তার মনে আসা কিছু কথা, সে কথাগুলো আল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দেওয়া কতবড় অপরাধ! ভেবে দেখুন।

তিন. পন্নী সাহেবের ঐ ভাষণের কথাগুলো ছিলো নাকি আল্লাহরই কথা। অথচ ঐ ভাষণের একটি অংশ ছিলো এমন,
মামলা এবং সব মিলিয়ে খরচ খুব বেশি হয়ে যায় কাজেই এটা এখন আমাদের বাধ্য হয়ে এ্যাভয়েড  করতে হচ্ছে। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ২৭

আচ্ছা বলুন, ভাষণে থাকা কথাগুলো যদি আল্লাহরই কথা হয়ে থাকে, তাহলে ‘মামলা চালাতে কষ্ট হচ্ছে’ এটাও কী আল্লাহর কথা ছিলো? আল্লাহ পাকও কী অক্ষম তাহলে? নাউযুবিল্লাহ।  অথচ আল্লাহ পাক বলেন,
إِنَّ اللَّه عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ের উপর সর্বময় ক্ষমতাশীল। -সুরা বাকারা : ২০

পাঠক, এখন আপনারাই বলুন, সে কথাগুলো কী আদৌ আল্লাহর না পন্নীর? পন্নীর কথাকে আল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দেওয়া কত্তবড় জালিয়াতি ভেবেছেন কী?

কথিত সে মো’জেজার ভাষণে আরও বলা আছে,
মামলা ‘আমি ভবিষ্যতবানী করতে পারিনা। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ২৬-২৭

অথচ ভবিষ্যতের সকল খবর আল্লাহ তা’আলার কাছেই বিদ্যমান। মহান আল্লাহ বলেন,
وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلاَ حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الأَرْضِ وَلاَ رَطْبٍ وَلاَ يَابِسٍ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে। -সুরা আনআম : ৫৯

যেহেতু পন্নী সাহেবের সেই ভাষণে ছিলো, আমি ভবিষ্যতবানী করতে পারি না, অথচ মহান রব সকল ভবিষ্যতের খবর বলতে সক্ষম। বুঝা গেলো, উক্ত ভাষণের কথা গুলো আল্লাহ তা’আলার ছিলো না, বরং পন্নী সাহেবের নিজের বক্তব্য। কেউ মানুষের বক্তব্যকে আল্লাহ তা’আলার বক্তব্য বলে দাবি করা জঘন্যতম অন্যায়। এমন জঘন্য অপবাদকারীদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوْحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ
ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা বলেঃ আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার প্রতি কোন ওহী আসেনি। -সূরা আনআম : ৯৩

কুরআন ও পন্নীর ভাষণ কী একই পর্য্যায়ভুক্ত?

পন্নী কী বলে?
তার দাবি হলো, ‘আল্লাহ সংখ্যার মো’জেজা দ্বারা পবিত্র  কোর’আনকে যেমন সত্যায়ন কোরেছেন একইভাবে এমামের সেদিনের ভাষণটিকেও তিনি সংখ্যার মো’জেজা দিয়ে সত্যায়ন কোরেছেন, এই দৃষ্টিকোন থেকে আল কোর’আন ও এমামের ভাষণটি একই পর্য্যায়ভুক্ত হোয়ে যায়। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৩৩

পন্নী সাহেবের উপরোক্ত মন্তব্য থেকে জানা গেলো, পন্নী সাহেব বোঝাতে চাচ্ছেন- কুরআন ও পন্নীর ভাষণ একই পর্য্যায়ভুক্ত।

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কুরআন আল্লাহর বাণী। সেই পবিত্র কুরআনের ব্যাপারে মনগড়া উক্তিকারীদের ব্যাপারে হাদিস শরীফে সতর্ক করে বলা হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি সঠিক ইলম ব্যতীত কুরআন প্রসঙ্গে কোন কথা বলে, সে যেন জাহান্নামকে নিজের জন্য বাসস্থান বানিয়ে নিল। -জামে তিরমিযি, হাদিস নং- ২৯৫০

যেখানে পবিত্র কুরআনের ব্যাপারে নিজের মনগড়া কথা বলাকেও জাহান্নামের ঠিকানা বানানোর অপরাধ বলা হয়েছে, সেখানে একজন বিড়িখোরের ভাষণকে কুরআনের একই পর্য্যায়ভুক্ত বলাটা কতবড় অপরাধ ভেবে দেখুন।

পন্নী মো’জেজা বিশ্বাস না করা কী মুনাফেকী?
এ ব্যাপারে সমস্ত মুসলিম একমত, যে সমস্ত অলৌকিক ঘটনা নবীদের দ্বারা সংগঠিত হয়, তাকে মো’জেজা বলে এবং উম্মতের নেকবান্দাদের দ্বারা যেসব অলৌকিক ঘটনা ঘটে সেগুলোকে কারামত বলা হয়।
আরব-অনারবের সকলে একমত যে, মোজেজা নবিদের সাথে নির্ধারিত। এ ব্যাপারে পন্নী সাহেবও একমত। সুতরাং কোনো উম্মত যদি নিজের ক্ষেত্রে মোজেজা ঘটেছে দাবি করে সে নিতান্তই একজন প্রতারক। এরকম ভিত্তিহীন মু’যিজা অস্বীকার করাকেই তিনি মুনাফেকীর মানদন্ড হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এবং তাদেরকে জাহান্নামী ও বেঈমান বলে আখ্যায়িত করে তিনি নিজেকে সময়ের সবচে বড় ধোকাবাজী পরিচয় দিয়েছেন। সুতরাং তার এ ধোকায় বিশ্বাস করাটাই বেঈমান ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

পন্নীদের ব্যাপারে নবিজি সাঃ-এর ভবিষ্যতবানী:
নিজের মতবাদকে সত্য প্রমাণে পন্নী সাহেব নিজে থেকেই এমন উদ্ভট কথা আবিষ্কার করেছেন যে ব্যাপারে ১৪০০ বছর পূর্বেই রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদেরকে এসব প্রতারক থেকে সতর্ক করে গিয়েছেন। রাসূল সাঃ বলেছেন,
يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
শেষ যুগে কিছু সংখ্যক প্রতারক ও মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের কাছে এমন সব হাদীস বর্ণনা করবে যা কখনো তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা শোননি। সুতরাং তাদের থেকে সাবধান থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তারা যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনায় না ফেলতে পারে। -সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৭

উপরোক্ত হাদিস থেকে প্রমাণ হলো, যেন নবীজি সা.পন্নীদের মত প্রতারকদের থেকে সতর্ক করতেই হাদিসটি বলে গেছেন।

উপরন্তু ‘মোজেজা সরাসরি আল্লাহ ঘটিয়েছেন’ এমন দাবি করে পন্নী সাহেব সরাসরি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করেছেন। অথচ আল্লাহ তা’আলার উপর মিথ্যারোপ করার ভয়াবহ পরিনতি সম্পর্কে আল কোরআনের বাণী-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أُولَئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَى رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
আর তাদের চেয়ে বড় যালেম কে হতে পারে, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। এসব লোককে তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত সম্মূখীন করা হবে। আর সাক্ষিগণ বলতে থাকবে, এরাই ঐসব লোক, যারা তাদের পালনকর্তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। শুনে রাখ, যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে। -সুরা হুদ : ১৮

মনে রাখা চাই, বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। আলহামদুলিল্লাহ। একজন এসে বলবে যে, তার উপর মু’জেযা হয়েছে, আর যে কেউ তা বিস্বাস করবে? এটা কোন সুস্থ মানুষের পরিচয় হতে পারে না।

পন্নী সাহেবের দাবিগুলো এক নজরে খণ্ডন:

পন্নী সাহেবের উপরোল্লিখিত বক্তব্যের আলোকে বুঝে ছিলাম যে, তিনি দাবি করেছেন,
১. পন্নী সাহেবের উপর আল্লাহ মো’জেজা ঘটিয়েছেন।
২. পন্নীর মো’জেজা নবীদের চেয়েও বেশী:
৩. পন্নীর মো’জেজা কোরআনের মত অকাট্য:
৪. পন্নীর মো’জেজা মুহাম্মাদ স: এর মোজেজার মত:
৫. মো’জেজার ভাষণে পন্নীকে সত্যায়ণ করা হয়েছিলো:
৬. পন্নীর মো’জেজা বিশ্বাস না করা মুনাফেকী:
৭. পন্নীর মোজেজা বিশ্বাস না করলে সে বেঈমান:
৮. পন্নীর মো’জেজা বিশ্বাস না করলে সে জাহান্নামী:
৯. পন্নীর মো’জেজা বিশ্বাস না করলে মুক্তি নেই:

প্রিয় পাঠক, যে মু’জেযার ভিত্তি হলো মিথ্যার উপর। সে মুজেযা আল্লাহ ঘটিয়েছেন, সে মু’জেযা নবীদের চেয়েও বেশী, সে মু’জেযা কোরআনের মত অকাট্য, সে মু’জেযা মুহাম্মাদ সা. এর মু’জেযার মত, সে মু’জেযার ভাষণে পন্নীকে সত্যায়ণ করা হয়েছিলো, সে মু’জেযা বিশ্বাস না করলে সে মুনাফিক, বেঈমান ও জাহান্নামী এবং তার কোনো মুক্তি নেই’ ইত্যাদী বক্তব্যের কোনো অস্তিত্ব রইলো কী? এমন বেঈমান-প্রতারকদের থেকে মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাযত করেন। আমীন!

হেযবুত তওহীদকে কী আল্লাহ সত্যায়ন করেছেন?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, হেযবুত তওহীদকে মহান আল্লাহ নিজেই সত্যায়ন করেছেন। তারা লিখেছে,
২ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে মহান আল্লাহ এক মহান মোজেজা অর্থাৎ অলৌকিক ঘটনা সংগঠন করেন যার দ্বারা তিনি তিনটি বিষয় সত্যায়ন করেন। যথা: হেযবুত তওহীদ হক এর এমাম আল্লাহর মনোনীত হক এমাম, হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে সারা পৃথিবী আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ’। -সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ২৩

জবাব:
তাদের দাবিকৃত মু’জেজা পুরোটাই ভুয়া। যা মু’জেজা অধ্যায়ে বর্ণনা করেছি। সুতরাং কথিত যে মুজেজাই সঠিক নয়, সেখানে আল্লাহপাক এটা সেটা জানিয়েছেন, এগুলো সম্পূর্ণটাই মিথ্যাচার। আল্লাহপাকের নামে এত এত মিথ্যাচার করতেও তাদের বুক কাঁপে না। কেন জানেন? কারণ তারা আসলে মুসলমান নয়।

হেযবুত তওহীদ কী আল্লাহ নিজেই চালান?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা এবং তিনি নিজেই এটার সূচনালগ্ন থেকে পরিচালনা করছেন। তারা লিখেছে,
হেযবুত তাওহীদ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ স্বয়ং, তিনিই একে গত ১৯ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছেন। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৫

ইসলাম কী বলে?’
এই মিথ্যাবাদী, প্রতারকচক্র ঠিক এভাবেই চটকদার কথা বলে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান হরণ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ দলটা যে আল্লাহ পাক চালান না, তার কয়েকটি প্রমাণ নিন্মে পেশ করলাম।

এক. হেযবুত তওহীদের এ সংক্রান্ত সকল দাবির মূল টার্নিং পয়েন্ট হলো, তাদের কথিত মু’জিযা। সেদিনই নাকি আল্লাহপাক এ সব জানিয়ে দিয়েছেন। এটা যে চরম মিথ্যাচার তার একটা প্রমাণ হলো নিন্মের লেখাটা। পন্নী সাহেব তার ঐ কথিত মোজেজার ভাষণে বলেছিলেন,
মামলা এবং সব মিলিয়ে খরচ খুব বেশি হয়ে যায় কাজেই এটা এখন আমাদের বাধ্য হয়ে এ্যাভয়েড  করতে হচ্ছে’। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ২৭

প্রশ্ন হলো,যদি হেযবুত তওহীদকে সরাসরি আল্লাহ পাক চালান, তাহলে মামলার খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছিলো কেন? আল্লাহ পাক কী গরীব? নাউযুবিল্লাহ। বুঝা গেলো, এ দলটা শুরু থেকেই আল্লাহ পাক চালান না, বরং পন্নী চালাতেন, এজন্য মামলা চালাতে কষ্ট হতো।

দুই. যদি হেযবুত তওহীদ স্বয়ং আল্লাহ পাকই চালান, তাহলে তো ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকার কথা নয়। অথচ তারা নিজেরাই লিখেছেন,
আমাদের কোনো ভুল-ভ্রান্তি হলে আমাদেরকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন’। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষন : পৃ. ২৩

আমাদের উদ্দেশ্য মানুষের জন্য কিছু করা, কিন্তু চলার পথে ত্রুটি থাকতে পারে। কারণ মানুষ হিসাবে আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই। -মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা

বুঝা গেলো, যদি এটা সরাসরি আল্লাহ চালাতেন, তাহলে ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকতো না, যেহেতু তারা নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছেন যে,তাদের ভুল হতে পারে, সুতরাং বুঝা গেলো এ দলটা তারা নিজেরাই চালান। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার নাম ব্যবহার করে তারা চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছেন।

তিন. তাদের দাবি হলো, ‘মোল্লা ও মিডিয়ার এই একতরফা অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হেযবুত তওহীদের মতো দরিদ্র আন্দোলনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে দেশের অধিকাংশ মানুষের হেযবুত তাওহীদ সম্পর্কে বিরোধীদের প্রচারিত মিথ্যাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে থাকে। -মহাসত্যের আহ্বান, (ছোট) পৃ. ২৩

হেযবুত তওহীদকে সরাসরি আল্লাহ পরিচালনা করেন, অথচ তারা আবার দাবি করছে, মোল্লা ও মিডিয়ার কাছে তারা পরাস্ত। তার মানে কী আল্লাহ পাক মোল্লা ও মিডিয়ার সামনে অক্ষম? নাউযুবিল্লাহ। সুতরাং বুঝা গেলো, এ দলটা মহান আল্লাহ’র পরিচালিত মতবাদ নয়।

চার. হেযবুত তওহীদ যদি আল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত হতো, তাহলে তারা কোনো দিন সরকার বা মানবরচিত আইন মানতো না। অথচ এরা সরকারের আইনে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলে। দেখুন বাংলাদেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে তারা কী বলে-
হেযবুত তওহীদ সম্পূর্ণ আইন মান্যকারী একটি আন্দোলন’। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৯০

আমরা আমাদের দেশে প্রচলিত আইন ভঙ্গ না করার নীতি থেকে কখনোই বিচ্যুত হবো না ইনশাআল্লাহ’। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৪৮

এই ১৮ বছরর হেযবুত তওহীদ আন্দোলন দেশের কোন একটি আইনও ভঙ্গ করেনি, একটিও অপরাধ করে নি। এটি আল্লাহর সত্যদীন এর ফল’। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ২০

তার (পন্নী) ঘটনাবহুল ৮৬ বছরের জীবনে একবারের জন্যও আইনভঙ্গের কোনো রেকর্ড নেই’। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১২৭

আমাদের এমামের নীতি হলো আমাদের কোন সদস্য-সদস্যা কোন আইনবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী কাজে অংশ নিবে না’। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৯২

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, তারা বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপূর্ণ অনুসারী। প্রশ্ন হলো, হেযবুত তওহীদকে যদি সরাসরি আল্লাহ তা’আলা’ই পরিচালনা করে থাকেন, তাহলে আল্লাহ তা’আলা’র আইন না মেনে মানবরচিত সরকারী আইন মেনে চলে কেন? বিষয়টি কেমন হলো? যে দল চালাচ্ছেন আল্লাহ, সে দল চলে সরকারী আইনে! কী হাস্যকর ব্যাপার! আল্লাহ তাআলার নামে এমন মিথ্যাচার কল্পনা করা যায়?

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, হেযবুত তওহীদ আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নয়, এটার সত্যায়ন আল্লাহ তাআলা করেন নি এবংেএটাকে আল্লাহ তাআলা চালান না, বরং এটা পুরোটাই বায়াজীদ খান পন্নীর নিজস্ব প্রতিষ্ঠার পচা ফসল।

হেযবুত তওহীদের বন্ধু কী আল্লাহ?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, তাদের বন্ধু আল্লাহ। তারা লিখেছে,
এই পৃথিবীতে এক আল্লাহ এবং সত্য ধারণকারী একদল মানুষ ছাড়া আমাদের আর কোনো বন্ধু নেই’। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৬

ইসলাম কী বলে?
এক. হেযবুত তওহীদের বন্ধু আল্লাহ নন, বরং শয়তান ও তাগুতি শক্তিই তাদের বন্ধু।। যদি তাদের বন্ধু আল্লাহ তাআলা হতেন, তাহলে তারা তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে আল্লাহকেই মেনে নিতেন। অথচ তারা দাবি করেছেন,
আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল বিচারালয়’। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ১৯

যে দেশের বিচার চলে মানুষের তৈরি আইন মোতাবেক, সে বিচারালয় যাদের শেষ আশ্রয়স্থল হয়, তাদের বন্ধু কখনও আল্লাহ হতে পারে না। কারণ তারা কাফের। মহান রব বলেন,
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। -সূরা মায়িদা, আয়াত নং- ৪৪

সুতরাং কাফেররা যাদের শেষ আশ্রয়স্থল হয়, তারা কখনও আল্লাহর বন্ধু হতে পারে না।

দুই. হেযবুত তওহীদ পৃথিবীর সকল মুসলমানকে কাফের প্রমাণ করার জন্য লিখেছেন,
আল্লাহ যাদের ওয়ালী( অভিভাবক  বন্ধু) তারা কোনদিন পৃথিবীর সর্বত্র অন্য সমস্ত জাতির কাছে লাঞ্ছিত অপমানিত হতে পারে না। তাদের মা-বোনরক শত্রুদের দ্বারা ধর্ষিত হতে পারে না। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ১২

ফেসবুক তাওহীদের ২ জন কর্মী শহীদ হয়েছেন তা আর আহত হয়েছেন বহু সংখ্যক সদস্য সদস্য’। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ২০

অর্থাৎ তারা বলতে চায়, যারা শত্রুদের হাতে অপমানিত হয়, তারা কখনও মহান আল্লাহ’র বন্ধু হতে পারে না। তাহলে একই যুক্তিতে তারাও মহান আল্লাহ’র বন্ধু হতে পারেন না। কারণ তাদের উপরও সীমাহীন নির্যাতন হওয়ার ইতিহাস খোদ পন্নী সাহেবই লিখেছেন,
আমার ও আন্দোলনের কর্মীদের বহুবার গ্রেফতার করা হোয়েছে, রিমান্ডে নিয়ে বহুবার তাদের উপর শারীরিক, মানসিক নির্য্যাতন করা হয়েছে’। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৩৯

এ পর্যন্ত মোট ১২৯২ জন কর্মীকে ও ১৫টি শিশুকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের মধ্যে ২০৭ জনকে মোট ৭৫৬ দিন ধোরে জে.আই.সি, টি.এফ.আই. ও পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে’। -মহাসত্যের আহ্বান (ছোট) পৃ. ১৬

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো চিঠি যেটা ১৮/০৫/২০০৮ ঈসায়ী তারিখে পন্নী সাহেব পাঠিয়েছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছেন,
দেশজুড়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে নির্মম নির্যাতন ও প্রবল বাধার মুখে পড়তে হলো। ধর্মব্যবসায়ীরা বহু সদস্যের বাড়ি ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিল, বহুজনকে পূর্ব পুরুষের ভিটা থেকে উৎখাত করে দিল, বহুজন পিটিয়ে আহত করল এমনকি একজন পুরুষ একজন নারী সদস্যকে শহীদ করে ফেলল’। -জঙ্গিবাদ সংকট, পৃ. ৬৪

আমার কিছু কর্মী বেশ ভালোভাবেই আহত হলো অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেল অনেক কর্মীর বাড়ি-ঘর ভাঙ্চুর করা হল, বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল’। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ১৩

এ ছাড়াও নির্যাতনের ইতিহাস দেখতে চাইলে পড়ুন-
-ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৬৮/৬৯, যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ১৯/২০, হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, পৃ. ১৪

সুতরাং প্রমাণ হলো, তাদের উপর কঠিন নির্যাতন করা হয়েছে। আর তারা বলেছেন, আল্লাহ যাদের বন্ধু হন, তারা নির্যাতন ও অপমানিত হন না। তাহলে তাদের যুক্তিতেই তারা আল্লাহর বন্ধু নন।

হেযবুত তওহীত কী বিশ্বের জন্য মনোনিত?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, হেযবুত তওহীদকে আল্লাহ তা’আলা সারা বিশ্বের দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য মনোনীত করেছেন। তারা লিখেছেন,
আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন “হেযবুত তওহীদকে আল্লাহ সারা দুনিয়ায় সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য মনোনীত করেছেন। -মহাসত্যের আহ্বান, (ছোট) পৃ. ১৪

একটি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে একটি সম্ভাবনাহীন জাতিকে বিশ্ব নেতৃত্বে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে শক্তিশালী আদর্শ প্রয়োজন সেটা হেযবুত তওহীদের কাছে রয়েছে। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ১৪

যেহেতু মোজেজা সংগঠন করে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন যে হেযবুত তওহীদ কে আল্লাহ সারা দুনিয়ায় সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য মনোনীত করেছেন। সুতরাং হেজবুত তাওহীদ এর মাধ্যমেই যে দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদী-খ্রিস্টান সভ্যতার পতন হবে সেটাও সুস্পষ্ট হয়ে যায়। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ২৪

২ তারিখে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন। হেযবুত তওহীদের এবং আমার সত্যায়ন কোরলেন এবং জানিয়ে দিলেন যে, হেযবুত তওহীদ দিয়ে আল্লাহ তাঁর দীনুল হক্ সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরবেন। এ সম্বন্ধে তোমরা বিন্দুমাত্র সন্দেহ রেখো না। বিন্দুমাত্রও রাখবে না। রাখলে বিপদ আছে। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৫৭

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, আল্লাহ পাক তার সত্য দ্বীনকে সমস্ত বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করতে হেযবুত তওহীদকে মনোনিত করেছেন।

ইসলাম কী বলে?
সমস্ত বিশ্বের জন্য আল্লাহ তা’আলার মনোনীত একমাত্র ধর্ম হলো ইসলাম। যা বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সা. কে দিয়ে আল্লাহ পাক পাঠিয়েছেন। মহান রব বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য, মনোনীত দ্বীন একমাত্র ইসলাম। -সুরা আলে ইমরান : ১৯

সুতরাং বুঝা গেলো, সমগ্র বিশ্বের জন্য আল্লাহ তা’আলার মনোনিত একমাত্র দ্বীন হলো ইসলাম। হেযবুত তওহীদ নয়। কিন্তু মিথ্যা এক মু’জিযাকে কেন্দ্র করে পন্নী সাহেব বলে দিলেন, সমগ্র বিশ্বের জন্য তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠণ আল্লাহ’র মনোনিত। এ ব্যাপারে ১. কুরআন-হাদিসে কোনো ভবিষ্যত বানী নেই, ২. তাদের কথিত সে মু’জিযা মিথ্যা, যে মু’জিযা মিথ্যা, সে মু’জিযার সকল দাবিও মিথ্যা, ৩. উপরন্তু তারা নিজেরাই লিখেছেন,
আজ কোথাও তার প্রকৃত এবাদত অর্থাৎ খেলাফত নেই। এমনকি আমরা হেযবুত তাওহীদ যারা দীনুল হকে আছি, আমরাও প্রকৃত এবাদত কোরতে সমর্থ নই। -দাজ্জাল, পৃ. ৮৭

সুতরাং বুঝা গেলো, সমগ্র বিশ্বে আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য হেযবুত তওহীদকে মনোনীত করেন নি। যদি করতেন, তাহলে তারা তাদের পক্ষে অসম্ভব বলে দাবি করতো না।

মানুষ সব চাহিদা কী পুরণ করতে পারবে হেযবুত তওহীদ?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের বক্তব্য হলো, ‘মানুষের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারবে প্রকৃত ইসলাম যা হেযবুত তওহীদ উপস্থাপন করছে’। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২২

জবাব:
হেযবুত তওহীদের পক্ষে মানুষের সকল চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এটা তারাই দাবি করেছে,
আমাদের স্বল্প সংখ্যক মানুষের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার দ্বারা এই বিশাল কাজ প্রায় অসম্ভব। -ধর্ম বিশ্বাস, পৃ. ৩

হেযবুত তওহীদের কর্মসূচী:
নবিজি সাঃ-এর ইসলাম কী? ইসলামের মিশন কী? কর্মপন্থা কেমন হবে? সব বিষয়ই খুলে খুলে সাহাবায়ে কেরামকে রা. বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। কিন্তু হেযবুত তওহীদ নিজেদের কর্মসূচী হিসাবে ৫ টি জিনিষকে গ্রহণ করেছে। শুধু কী তাই? বরং তারা সেগুলোকে আল্লাহ প্রদত্ত্ব কর্মসূচী বলে দাবি করেছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
১. হেযবুত তওহীদের কর্মসূচী স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন।
২. পাঁচ দফা কর্মসূচী না মানলে সে কাফের হয়ে যাবে।

ইসলাম কী বলে?
হেযবুত তওহীদের প্রথমত দাবি হলো, হেযবুত তওহীদের কর্মসূচী স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন। তারা লিখেছে,
দীর্ঘ তেরশ’ বছর এই উম্মাহকে এই পবিত্র কর্মসূচি থেকে মাহরুম, বঞ্চিত রাখার পর রাহমানুর রহিম আল্লাহ তাঁর অসীম করুনায় তাঁর দেয়া কর্মসূচির পরিচয় এলহামের মাধ্যমে আমার হৃদয়ে নাযেল করেছেন। আমার মতো অশিক্ষিত, অযোগ্য ও মহাগোনাহগার মানুষকে, হেযবুত তওহীদের মত একটি ছোট্ট সংগঠনকে তিনি এত বড় অনুগ্রহ কেন করলেন, এত বড় নিয়ামত দান করলেন আমি জানি না। মাইয়াশা আল্লাহ (আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন) ছাড়া আমি আর কোন কারণ খুঁজে পাই না। এই মহা বিশ্ব-জগতের স্রষ্টা ও রব পালনকারী শুধু যে ঐ কর্মসূচি নতুন করে আমাদের দান করলেন তাই নয়, এ যে তাঁরই কাছ থেকে খাস, বিশেষ দান তা মানুষের মধ্যে প্রকাশ করার জন্য সর্বসমক্ষে অলৌকিকভাবে দান করলেন। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা ছাড়াও অনেক বহিরাগত লোকজনও তা চোখের সামনে দেখতে পেয়েছেন। আমি সারাজীবন আমার রব আল্লাহর পায়ে সাজদায় পড়ে থাকলেও এ দয়ার, নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারব না’। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৫০-৫১

বুঝা গেলো, তাদের দাবি হলো, তাদের এ পাঁচ দফা কর্মসূচী আল্লাহ তা’আলা দিয়েছেন। তাও নাকি দিয়েছেন ইলহামের মাধ্যমে। কি হাস্যকর? অথচ ইসলামের কর্মসূচী সেটাই যা আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসুল সা. কে দান করেছেন। সেগুলো কী কী তা নিন্মোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়। মহান রব বলেন,
كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولاً مِّنكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُواْ تَعْلَمُونَ
এ অনুগ্রহ ঠিক সেই রকমই) যেমন আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য হতে, যে তোমাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমতের তালীম দেয় এবং তোমাদেরকে এমন সব বিষয় শিক্ষা দেয় যা তোমরা জানতে না। -সুরা বাকারা : ১৫১

উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুল সা. কে ৪ টি কর্মসূচী দিয়ে পাঠিয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এক. কিতাবুল্লাহ পাঠ করে শুনানো:
অর্থাৎ উম্মাহকে কালামে পাক তিলাওয়াত করে শুনানো ছিলো নবীজির প্রথম দায়িত্ব। এর দ্বারা জানা গেল, কুরআন মাজীদের আয়াত তেলাওয়াত করাও একটি স্বতন্ত্র পুণ্যের কাজ ও কাম্য বস্তু, তা অর্থ না বুঝেই তিলাওয়াত করা হোক না কেন! কেননা কুরআন মাজীদের অর্থ শিক্ষা দানের বিষয়টি সামনে একটি পৃথক দায়িত্বরূপে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুই. উম্মাহকে আত্মশুদ্ধ করা:
নবিজি সাঃ-এর দ্বিতীয় দায়িত্ব বলা হয়েছে এই যে, তিনি মানুষকে পরিশুদ্ধ করবেন। এর দ্বারা তাঁর বাস্তব প্রশিক্ষণদানকে বোঝানো হয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি সাহাবায়ে কিরামের আখলাক-চরিত্র ও অভ্যন্তরীণ গুণাবলীকে পঙ্কিল ভাবাবেগ ও অনুচিত চাহিদা থেকে মুক্ত করত: তাদেরকে উন্নত বৈশিষ্ট্যাবলীতে বিমন্ডিত করে তোলেন। এর দ্বারা জানা গেল, মানুষের আত্মিক সংশোধনের জন্য কুরআন-সুন্নাহর কেবল পুঁথিগত বিদ্যাই যথেষ্ট নয়; বরং সে বিদ্যাকে নিজ জীবনে প্রতিফলিত করার বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ জরুরী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামকে নিজ সাহচর্যে রেখে তাঁদেরকে বাস্তব প্রশিক্ষণ দান করেছেন, তারপর সাহাবীগণ তাবিঈদেরকে এবং তাবিঈগণ তাবে তাবিঈনকে এভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এভাবে প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার এ ধারা শত-শত বছর ধরে চলে আসছে। অভ্যন্তরীণ আখলাক চরিত্রের এ প্রশিক্ষণ যে জ্ঞানের আলোকে দেওয়া হয় তাকে ‘ইলমুল ইহসান ও তাযকিয়া বলা হয। ‘তাসাওউফ’-ও মূলত এ জ্ঞানেরই নাম ছিল, যদিও এক শ্রেণীর অযোগ্যের হাতে পড়ে এ মহান বিদ্যায় অনেক সময় ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণার সংমিশ্রণ ঘটেছে, কিন্তু তার মূল এই তাযকিয়া (পরিশুদ্ধকরণ)-ই, যার কথা কুরআন মাজীদের এ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। বস্তুত তাসাওউফের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করার মত লোক সব যুগেই বর্তমান ছিল, যারা সে অনুযায়ী আমল করে নিজেদের জীবনকে উৎকর্ষমণ্ডিত করেছেন এবং যথারীতি তা করে যাচ্ছেন।

তিন. কিতাবুল্লাহ’র শিক্ষা প্রদান করা:
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল কুরআন মাজীদের শিক্ষা দান করার দায়িত্ব পালন। এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক শিক্ষাদান ব্যতিরেকে কুরআন মাজীদ যথাযথভাবে বোঝা সম্ভব নয়। কেবল তরজমা পড়ার দ্বারা কুরআনের সঠিক মর্ম অনুধাবন করা যেতে পারে না। আরববাসী তো আরবী ভাষা ভালোভাবেই জানত। তাদেরকে তরজমা শেখানোর জন্য কোনও শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল না। তথাপি যখন তাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে কুরআনের তালীম নিতে হয়েছে, তখন অন্যদের জন্য তো কুরআন বোঝার জন্য নববি ধারার তালীম গ্রহণ আরও বেশি প্রয়োজন। এই আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে,
وَيُعَلِّمُكُمْ مَا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ
এবং তোমাদেরকে এমন সব বিষয় শিক্ষা দেয় যা তোমরা জানতে না। এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে الْأَحْكَامَ وَشَرَائِعَ الْإِسْلَامِ তথা ইসলামী শরীয়াহ ও ইসলামের সকল বিধিবিধান।

চার. হিকমাহ শিক্ষা দেওয়া :
হিকমাহ অর্থ কী? হিকমাহ অর্থ করা হয়েছে ‘সুন্নাতে নববী’ তথা নবীজির সা. সকল সুন্নাহ। এর দ্বারা জানা গেল যে, প্রকৃত হিকমত ও জ্ঞান সেটাই, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন। এর দ্বারা কেবল তাঁর হাদীসসমূহের ‘হুজ্জত’ (প্রামাণিক মর্যাদাসম্পন্ন) হওয়াই বুঝে আসছে না; বরং আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, তাঁর কোনও নির্দেশ যদি কারও নিজ বুদ্ধি-বিবেচনা অনুযায়ী যুক্তিসম্মত মনে না হয়, তবে সেক্ষেত্রে তার বুদ্ধি-বিবেচনাকে মাপকাঠি মনে করা হবে না; বরং মাপকাঠি ধরা হবে নবিজি সাঃ-এর নির্দেশকেই।

প্রিয় পাঠক, এই চারটি কাজ হলো ইসলামের মূল কর্মসূচী। এই চারটি বিষয় এমন যা আদায় করলে ইসলামের কোনো সাইডই বাদ যাবে না, বরং সবগুলোই চলে আসবে। আল্লাহ পাক তাঁর নবীকে সা. কর্মসূচী দিলেন ৪ টি। অথচ পন্নী সাহেব দাবি করলেন, আল্লাহ তাকে অন্য ৫ টি কাজ কর্মসুচী হিসাবে দান করেছেন। এটা কী নিছক আল্লাহ তা’আলার নামে মিথ্যাচার নয়?

হেযবুত তওহীদের কর্মসূচী কী কী?
তাদের দাবি হলো, ইসলামের কর্মসূচী ৫ টি যথা-
(১) (সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে,) ঐক্যবদ্ধ হও।
(২) (যিনি নেতা হবেন তার আদেশ) শোন।
(৩) (নেতার ওই আদেশ) পালন করো।
(৪) হেজরত (অন্যায় ও অসত্যের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ) করো।
(৫) ( এই দীনুল হককে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করো। এখানে জেহাদ অর্থ: সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টা। যে ব্যক্তি এই ঐক্যবন্ধনী থেকে এক বিঘত পরিমাণ বহির্গত হলো সে নিশ্চয়ই তার গলা থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেললো- যদি না সে আবার ফিরে আসে (তওবা করে)। -আদর্শিক লড়াই, পৃষ্ঠা. ১৭

জবাব:
মূলত এই কর্মসূচীগুলো তারা আবিস্কার করেছে নিন্মোক্ত হাদিসকে কেন্দ্র করে। নবিজি সাঃ বলেন,
وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ إِلاَّ أَنْ يَرْجِعَ
আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলো প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা আমাকে আদেশ করেছেন। কথা শুনবে, আনুগত্য করবে, জিহাদ করবে, হিজরত করবে এবং জামা’আতবদ্ধ হয়ে থাকবে। যে লোক জামাআত হতে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হল সে ইসলামের বন্ধন তার ঘাড় হতে ফেলে দিল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। -জামে তিরমিযি, হাদিস নং- ২৮৬৩

উপরোক্ত হাদিসটি রাসুলুল্লাহ সাঃ সাহাবায়ে কেরামকে নির্দেশ করেছেন। সে হিসাবে এ বিষয়গুলোর প্রত্যেকটি অবশ্যই উম্মতকে মানতে হবে। কিন্তু এই বিষয়গুলোকেই ইসলামের মূল কর্মসুচী দাবি করা তো বোকামী। কেননা এগুলোকে কুরআন-সুন্নাহ’র কোথাও ইসলামের কর্মসূচী বলে দাবি করা হয় নি, বরং এগুলো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই বলে ইসলামের মূল কর্মসূচী নয়।

পাঁচ দফা না মানলে সে কী কাফের হবে?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘(পাঁচ দফা না মেনে) তারা যতই নামাজ পড়ুক রোজা রাখুক এমনকি নিজেকে মোমেন মুসলিম বলে বিশ্বাস করুক অর্থাৎ তারা আল্লাহ দৃষ্টিতে কাফের হয়ে যাবে। -সাওমের উদ্দেশ্য, পৃষ্ঠা. ১০

এজন্য তারা সাহাবায়ে কেরামকে রা. পর্যন্ত কাফের বানিয়ে দিয়েছে। তারা লিখেছে,
দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বনবীর ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর ইবলিস এই উম্মাহর আকিদায় বিকৃতি ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হল। যার ফলে এই জাতি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ ও ঐ ৫ দফা কর্মসূচী দু’টোই ত্যাগ করে ইসলাম ও উম্মতে মোহাম্মদীর দু’টো থেকেই বহিষ্কৃত হয়ে গেল। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৪৮

নাউযুবিল্লাহ। উদ্ভট একটা দাবি। যে দাবির আলোকে সাহাবায়ে কেরাম রা. পর্যন্ত কাফের হয়ে গেলো। আল্লাহ মাফ করুন। অথচ এই হেযবুত তওহীদই দাবি করেছে,
সেই আসহাব যারা আল্লাহর রাসূলের পদতলে বসে ইসলাম কি, এর উদ্দেশ্য কি, এর লক্ষ্য কি, এর সামরিক নীতি কি, এসব শিক্ষা করেছিলেন তারা ঠিক? নাকি কয়েকশ বছর পর যখন ইসলাম বিকৃত বিপরীত হয়ে পরিণামে শত্রুর গোলামে পরিণত তখনকার মানুষের অভিমত ঠিক? -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১২৮

তাহলে সাহাবায়ে কেরাম রা. নবিজি সাঃ-এর কাছে থেকে জানলেন না যে, এগুলো ইসলামের কর্মসূচী। কিন্তু ১৪০০ বছর পর পন্নী কিভাবে বুঝলেন? ভণ্ডামী আর কত দেখতে এ দেশের জাতি? তবে একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার। ইসলামের কোনো বিষয় যদি অলসতার কারণে অমান্য করা হয়, তবে কাফের হয় না। কিন্তু কোনো বিধান অস্বীকার করলে বা ঠাট্রা করলে কাফের হয়ে যায়। সে হিসাবে উপরোক্ত হাদিসের পাঁচটি বিষয়ের কোনো একটি বিষয়কে নিয়ে উপহাস করা বা অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যাবে। যেমন নামাজের ব্যাপারে নবিজি সাঃ বলেন,
مَن ترَك الصَّلاةَ فقد كفَر
যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দিলো, সে কাফের হয়ে যায়। -সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং- ১৪৬৩

নবিজি সাঃ-এর সুন্নাহ ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে,
مَن ترَكَ السُّنَّةَ فقَد كفرَ
যদি কেউ (নবীজির সা.) সুন্নাহ ছেড়ে দেয়, সে কাফের হয়ে যায়। -আল মুহাল্লা, খ. ৪ পৃ. ২৬৬

এ দু’টো হাদিসের বাহ্যিক দিক দেখলে তো মনে হয়, যে ব্যক্তি নামাজ বা নবীজির সা. সুন্নাহ ছেড়ে দেবে সে কাফের হয়ে যাবে। তাহলে এর জবাব কী দেবে হেযবুত তওহীদ? উল্লেখিত হাদিসের আলোকে ঐক্য ছেড়ে দেওয়ার কাফের হয়ে যাবে, যদি মেনে নিতে হয়, তাহলে নামাজ বা সুন্নাহ ছেড়ে দিলেও তো কাফের হয়ে যাবে। সবগুলোই তো সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু হেযবুত তওহীদ বলছে,
‘(পাঁচ দফা না মেনে) তারা যতই নামাজ পড়ুক রোজা রাখুক এমনকি নিজেকে মোমেন মুসলিম বলে বিশ্বাস করুক অর্থাৎ তারা আল্লাহ দৃষ্টিতে কাফের হয়ে যাবে। -সাওমের উদ্দেশ্য, পৃষ্ঠা. ১০

তাহলে নবি সাঃ-এর একই ধরণের হাদিস থাকা সত্ত্বেও ৫ দফা না মানলে কাফের হবে, কিন্তু নামাজ না পড়লে কাফের হবে না বিষয়টি কী হাদিসের সাথে দ্বিপাক্ষিক আচরণ নয়? সুতরাং বুঝা গেলো হাদিসে বর্ণিত কাফের বলা বা ঘাড় থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে যাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। মূলত এখানে নবীজি সা. কাফের বলেছেন উম্মতকে এগুলোর গুরুত্ব বুঝাতে বা এগুলো পরিত্যাগকারীদের ধমক হিসাবে।

উপরন্তু হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, ‘এই একটি শর্ত (তওহীদ) পালন করলে কোনো গুনাহই তাকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না;এমনকি মহানবীর উল্লেখিত ব্যভিচার ও চুরির মত কবিরা গোনাহও না। -আকীদা, পৃ.৭

উক্ত বক্তব্য দিয়ে হেযবুত তওহীদ বুঝাতে চায়, শুধু তাওহীদ বা আল্লাহর একাত্ববাদের স্বীকৃতি থাকলেই সে জান্নাতে যাবে। এখন যদি আমি প্রশ্ন করি এখানে ৫ দফা কর্মসূচীর শর্ত তো আপনারাই দিলেন না। তাহলে ৫ দফা না মানলে যে সে কাফের হয়ে যাবে এটা কী স্ববিরোধী বক্তব্য নয়। সুতরাং মূল কথা হলো, হাদিসে বর্ণিত ৫ টি আমল উম্মতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কিন্তু এগুলো যদি কেউ অস্বীকার না করে বা বিরোধিতা না করে জাষ্ট অলসতার কারণে যদি অমান্য করে তাহলে তাকে কাফের বলা যাবে না।

হেযবুত তওহীদকে মিটিয়ে দেওয়া কী সম্ভব না?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘তারা হেযবুত তওহীদকে ফু দিয়ে নিভিয়ে দিতে পারবে না’। -এসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৬৮, যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৬১

ইসলাম কী বলে?
পৃথিবীতে একমাত্র ইসলাম ধর্মটিই এমন, যা কেউ নিভিয়ে দিতে পারবে না বলে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন।
يُرِيدُونَ أَن يُطْفِؤُواْ نُورَ اللّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللّهُ إِلاَّ أَن يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। -সূরা তাওবা : ৩২

কিন্তু হেযবুত তওহীদ ইসলামের সে চ্যালেঞ্জকে নিজেদের দলের সাথে লাগিয়ে আয়াতের অপব্যাখ্যা করেছেন।

হেযবুত তওহীদের বিজয় কী অবশ্যম্ভাবি?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, যে মহাসত্য আল্লাহ হিজবুত তওহীদকে দান করেছেন তার বিজয় অবশ্যম্ভাবি। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৫

ইসলাম কী বলে?;
পৃথিবীতে একমাত্র ইসলামের বিজয় আবশ্যম্ভাবি। আর এ কাজটি করতে মহান আল্লাহ তাঁর হাবিব মুহাম্মাদ সাঃ কে পাঠিয়েছিলেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। -সূরা তাওবা : ৩৩

সুতরাং ইসলামের আবশ্যকীয় বিজয়কে নিজেদের দলের সাথে লাগিয়ে তারা আয়াতটির অপব্যখ্যা করেছেন।

হেযবুত তওহীদ কী দাজ্জাল বিরোধি?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, দাজ্জালকে চিহ্নিত করেছেন একমাত্র বায়াজীদ খান পন্নী। আর তার অনুসারীরাই এই দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। তারা লিখেছেন,
দাজ্জালের হাত থেকে পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব ছিনিয়ে নিয়ে আল্লাহর হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই সংগ্রাম করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। -ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ২০

হেযবুত তাওহীদের মূল কাজই হল মানবজাতিকে ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করা এবং মানবজাতির অশান্তির মূল কারণ দাজ্জালের অনুসরণ না করে সমগ্র পৃথিবীকে সৃষ্টিকর্তা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা। -সবার ঊর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১৯

জবাব:
এক. দাজ্জাল এখনও আসেনি, হাদিসে বর্ণিত দাজ্জালের সকল পরিচয় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু পন্নী সাহেব এসে দাবি করে বসলো যে, দাজ্জাল চলে এসেছে। আর সে দাজ্জাল হলো ইহুদী-খ্রিষ্টানদের যান্ত্রিক সভ্যতা। তারা লিখেছে,
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, পত্রপত্রিকা রেডিও এবং ইহুদি খ্রিস্টানদের যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে ‘দাজ্জাল। দেখুন তারা লিখেছেন,

দাজ্জালের পত্র-পত্রিকায়, রেডিও-টেলিভিশনে, আলোচনা-বক্তৃতায় এবং শিক্ষাব্যবস্থায় অবিশ্রান্তভাবে প্রচারের ফলে প্রায় সমস্ত মানবজাতির মিথ্যাকে, একুফরকে সত্য বোলে গ্রহণ কোরেছে। -মহাসত্যের আহ্বান (ছোট) পৃ. ১০

পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ইহুদি খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে বিশ্বনবী বর্ণিত সেই দাজ্জাল’। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১৮

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, পত্রপত্রিকা, রেডিও, বিমান ইত্যাদী ইহুদী-খ্রিষ্টানদের সকল যান্ত্রিক সভ্যতাই হলো, দাজ্জাল। যতি তাই হয়, তাহলে সে দাজ্জালকে পরিত্যাগ করা উচিৎ। অথচ বায়াজীদ খান পন্নী সাহেব নিজেই এ সকল জিনিষগুলো ব্যবহার করেছেন। প্রমাণ নিন-
পন্নী সাহেব বিমানে চড়তেন। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ১২৩,
পন্নী সসাহেব ফোন ব্যবহার করতেন, নিয়মিত পত্রিকা পড়তেন, নিয়মিত রেডিও শুনতেন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৪৩

শুধু তাই নয়, বর্তমানের হেযবুত তওহীদের সকল সদস্যরা ইহুদী-খ্রিষ্টানদের সকল যান্ত্রিক সভ্যতা ব্যবহার করে থাকেন। তাহলে তাদের মতবাদ যদি সত্য হয়, তাহলে তাদের কাজ অনুযায়ী বুঝা গেলো, তারা দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না, বরং নিজেরাই দাজ্জালের দালাল।

দুই. দাজ্জালের চেতনা ও হেযবুত তওহীদ: দাজ্জালের চেতনা কি হবে, সেটা বায়েজিদ খান পন্নী লিখেছেন যে, দাজ্জাল এসে বলবে,
হে মুসলমান, খ্রিস্টান, ইহুদী, বৌদ্ধ, হিন্দু ধর্মের লোকেরা! তোমরা তোমাদের ধর্ম যে যার মত পালন করো। অসুবিধা নেই। আমার কোন আপত্তি নেই। তবে সাবধান! কখনো সার্বভৌমত্ব তথা তওহীদের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলো না। কারণ আমিই রব। -দাজ্জাল, পৃ. ৭৩

ঠিক একই কথা হেযবুত তওহীদও বলে যাচ্ছে, তাদের বক্তব্যও হলো,
আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। আমাদের কথা হচ্ছে যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে। আমরা যদি শান্তিতে জীবন যাপন করতে চাই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিময় জীবন উপহার দিতে চাই তার জন্য আমাদেরকে সকল প্রকার কলহ-বিবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৫

সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী জাতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে হেযবুত তৌহিদ। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৪৬

সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে এক জাতিতে পরিণত করার জন্যই যামানার এমামের আবির্ভাব। ভারতবর্ষে আগত আল্লাহর সকল অবতারদেরকে নবী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি সালাম পেশ করেছেন। -শিক্ষাব্যবস্থা পৃষ্ঠা-৯০

আমরা সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এক স্রষ্টার বান্দা হিসাবে তাঁর বিধানের দিকে ফিরে যাওয়ার কথা বলছি। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৭৫

সুতরাং সকল ধর্ম পালন করার বৈধতার ব্যাপারে হেযবুত তওহীদ ও দাজ্জালের চেতনা এক ও অভিন্ন। সুতরাং বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদ দাজ্জাল বিরোধী নয়, বরং তারা নিজেরাই দাজ্জালের পেতাত্মা।

তিন. দাজ্জালের আইন ও হেযবুত তওহীদ: হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী লিখেছেন,
রাজতন্ত্র সমাজতন্ত্র গণতন্ত্র সাম্যবাদ একনায়কতন্ত্র এ সবই দাজ্জাল এর বিভিন্ন রূপ। -দাজ্জাল, পৃ. ৯০

অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চান, মানবরচিত সকল আইন মূলত দাজ্জালের রুপ। অথচ সেই আইনগুলোই সারাজিবন পন্নী সাহেব পালন করে গেছেন।
পন্নী ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক। তিনি তাঁর সমগ্র জীবন সত্য সন্ধানে এবং সত্যের জন্য লড়াই করে গেছেন। তার ৮৬ বছরের জীবনে একবারের জন্য আইন ভঙ্গের কোনো রেকর্ড নেই, নৈতিক স্খলনের কোনো নজির নেই। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ৯০

এমনকি তিনি এই আইন মানতেই তার অনুসারীদেরকে নির্দেশ জারি করে লিখেছেন,
আমার কঠিন নির্দেশ দেয়া আছে কোন মোজাহেদ কোন রকম বে-আইনঅ কাজ করবে না, কোন আইন ভঙ্গ করবে না। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৬৯

সুতরাং বুঝা গেলো, পন্নী সাহেব ও হেযবুত তওহীদ দাজ্জালের বিরোধী নন, বরং দাজ্জালের পরম অনুসারী।

রাসুল সা. সাহাবা রা. ও হেযবুত তওহীদের আহব্বান কী একই?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, সাহাবাদের রা. কাজ ও হেযবুত তওহীদের মিশন এক ও অভিন্ন। তারা লিখেছেন,
তাদের (সাহাবাদের) জাতিগত মূলমন্ত্র ছিল একটাই, স্রষ্টার হুকুমের বাইরে আর কোনো হুকুম আমরা মানি না এবং যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে গোটা জনগোষ্ঠী ছিল ঐক্যবদ্ধ। আর এটাই হচ্ছে হেযবুত তাওহীদের আহবান। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৯

রসূলুল্লাহ স: যা করেননি, করতে বলেননি তা কোনোদিনও হেজবুত তওহীদ করবে না। -সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১৪

জবাব:
হেযবুত তওহীদ ইসলামের আইন মান্য করে না, বরং মানবরচিত বাংলাদেশের আইন পুরোপুরিভাবে মেনে চলে। দেখুন তারা লিখেছেন,
আমরা আমাদের দেশে প্রচলিত আইন ভঙ্গ না করার নীতি থেকে কখনোই বিচ্যুত হবো না ইনশাআল্লাহ’। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৪৮

এই ১৮ বছরর হেযবুত তওহীদ আন্দোলন দেশের কোন একটি আইনও ভঙ্গ করেনি, একটিও অপরাধ করে নি। এটি আল্লাহর সত্যদীন এর ফল’। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ২০

তার (পন্নী) ঘটনাবহুল ৮৬ বছরের জীবনে একবারের জন্যও আইনভঙ্গের কোনো রেকর্ড নেই’। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১২৭

আমাদের এমামের নীতি হলো আমাদের কোন সদস্য-সদস্যা কোন আইনবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী কাজে অংশ নিবে না’। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৯২

সুতরাং বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদের যে দাবি যে, তারা রাসুলুল্লাহ সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রা.এর মূলমন্ত্রই মেনে চলে তা ডাহা মিথ্যাচার।

উপরন্তু এ দলটা পন্নী সাহেব ও তার আদর্শিক চেতনার অনুসারী। এখানে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রা. এর অনুসরণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা যে পন্নী সাহেবের কথাই মেনে চলে তা তাদের বই থেকেই দেখুন-
আমরা এমামুয্যামানের অনুপ্রেরণায় উৎসাহিত হয়ে মাঠে-ময়দানে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ১০

আমাদের পৃথক কোনো সত্তা নেই। আমাদের মৌলিক পরিচয় হলো, আমরা এমামুযযামানের আত্মার সন্তান, তার কথাই আমাদের কথা, তার শিক্ষা প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের একমাত্র কাজ। -শোষণের হাতিয়ার, পৃ. ১০২

সুতরাং বুঝা গেলো, এ দলটা পন্নী সাহেব ও তাগুতের আদর্শই মেনে চলেন। সেটাকে রাসুলুল্লাহ সাঃ ও সাহাবাদের অনুসারী বলে দাবি করা নিতান্তই সর্বৈব মিথ্যাচার।

উপরন্তু সাহাবাদের কাজ কী ছিলো, সে সমম্পর্কে হেযবুত তওহীদ লিখেছে,
প্রতিটি সাহাবা তাদের পার্থিব সবকিছু কোরবান করে স্ত্রী-পুত্রকে আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়ে বছরের পর বছর আরব থেকে বহুদূরে অজানা-অচেনা দেশের সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৪৮

কিন্তু আমরা তো হেযবুত তওহীদের কাউকে স্বশস্র সংগ্রামে দেখি না। সুতরাং তাদের দাবিতে এ দলটা সাহাবাদের রা. অনুসারী নয়।

হেযবুত তওহীদ কী রাসুলুল্লাহ সা. এর অনুসরণ করে?

হেযবুত তওহীদের দাবি হলো,
নবীজির সা. বিরোধী কিছু করবে না হেযবুত তওহীদ
রসূলুল্লাহ স: যা করেননি, করতে বলেননি তা কোনোদিনও হেজবুত তওহীদ করবে না। -সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১৪

অর্থাৎ তারা দাবি করে থাকেন যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর নির্দেশিত পথ ও মত থেকে তারা কখনও বিচ্যুত হবে না। প্রশ্ন হলো, নবীজির সা. পথ কী?

নবিজি সাঃ-এর পথ কী?
তারা নিজেরাই নবিজি সাঃ-এর পথ কী সে সম্পর্কে লিখেছে,
(নবীজির স: জামানায়) এই অকল্পনীয় অবস্থা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? এর একমাত্র কারণ মানুষ মানবরচিত সকল ব্যবস্থা বিধান প্রত্যাখ্যান করে তার স্রষ্টার দেওয়া জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ ও জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে সামগ্রিকভাবে প্রয়োগ করেছেন অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া আর কারো বিধান গ্রহণ করি না এই মূলমন্ত্রকে জীবন পরিচালনা করেছিল। -হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, পৃ. ৮

অর্থাৎ তারাও স্বীকার করে থাকেন যে, নবিজি সাঃ কখনও মানবরচিত আইন মান্য করেন নি এবং তারা আগে বললেন, নবিজি সাঃ-এর পথ থেকে তারা কখনও বিচ্যুৎ হবে না। অথচ হেযবুত তওহীদের নীতি হলো, বাংলাদেশের আইন মান্য করা থেকে তারা কখনও বিচ্যুৎ হবে না। দেখুন তারা কী লিখেছে-
আমরা আমাদের দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ না করার নীতি থেতে কখনোই বিচ্যুৎ হবো না ইনশাআল্লাহ। -দৈনিক বজ্রশক্তি সংকলন, সংখ্যা ১৫ জুলাই-আগষ্ট ২০১৭, পৃ. ৫

তাহলে পাঠক, আপনারাই বলুন, হেযবুত তওহীদের পথ কী রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর পথ না দাজ্জালের পথ। তাদের দাবিতেও তো মানবরচিত আইন সবই দাজ্জালের পথ। তাহলে বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদের পথ রাসুলুল্লাহ সা. এর পথ নয়, বরং দাজ্জালের পথ।

প্রকৃত শিক্ষা কী হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে?

হেযবুত তওহীদের দাবি:
ধর্মের এই প্রকৃত শিক্ষা কোন স্কুলেও নাই, মাদ্রাসায়ও নাই, আছে একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছে। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৩

সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন সমস্ত দুনিয়ার শিক্ষকের আসনে বসবে এই জাতি ( হেযবুত তওহীদ) এবং সমস্ত দুনিয়াকে মুক্তির পথ দেখাবে উপেক্ষিত এই জাতি (হেযবুত তওহীদ)’। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৫৯

প্রকৃত শিক্ষা হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে?
হেযবুত তওহীদের এমাম থেকে নিয়ে সকল সদস্য আগাগোড়া মুর্খ। এটা আমার কথা নয়, বরং খোদ হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা পন্নী বলেছে,
আমি বাংলা জানি,যেটুকু জানা দরকার মানুষের,ইংলিশ জানি, যতটুকু মানুষের জানা দরকার,আমি আরবী জানি না,আরবীতে আমি নিরক্ষর। ঠিক আক্ষরিকভাবে নয়,কিন্তু আমি আরবী জানি না। আর যে এসলাম নিয়ে কথা সেই এসলাম রোয়েছে কোর’আন-হাদীসে আর সেটার ভাষা আরবী।ওখানে আমি বাস্তবিক অর্থে নিরক্ষর। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৫৫

হেযবুত তওহীদের দ্বিতীয় এমাম হুসাইন সেলিম তার এক ভাষণে বলেছে,
আমরা অতি সাধারণ মানুষ, গুনাগার মানুষ, সেই জ্ঞান, সেই পবিত্রতা, সেই প্রজ্ঞা সেই পরিচিতি আমাদের নেই’। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষন, পৃ. ২৩

সুতরাং যাদের কোনো জ্ঞান নেই, পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত পড়লেও বুঝার উপায় নেই আরবী রা চায়না ভাষা পড়লো, সেই তারাই পৃথিবীর শিক্ষকের আসনে বসবে! কী হাস্যকর! আসলে মূর্খতা যে মুর্খ সে ব্যাপারেও মূর্খ।

হেযবুত তওহীদ কী ইসলাম চায়?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা মৌখিকভাবে দাবি করে থাকে যে, তারা ইসলাম চায়। তারা বলেছে,
হেযবুত তাওহীদ ইসলাম চাই। -জেহাদ কেতাল ও সন্ত্রাস, পৃ. ২১

দ্বীনের ব্যাপারে আমি নিজ থেকে কোন কথা বোলি না আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা বলছেন তাই তোমাদেরকে বোলি’। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৪৪

রসূলুল্লাহ স: যা করেননি, করতে বলেননি তা কোনোদিনও হেজবুত তওহীদ করবে না’। -সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১৪

হেজবুত তাওহীদ প্রকাশ্যভাবে চায় আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা (দীন) পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠিত হোক’। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৫১

অর্থাৎ তারা বলতে চায়, আসল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল মিশন।

জবাব:
অথচ ইসলাম প্রতিষ্ঠা তাদের মিশন নয়, এটা তারা নিজেরাই লিখেছেন,
মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। -সকল ধর্মের মর্মকথা সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১০

আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। আমাদের কথা হচ্ছে যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৫

সুতরাং বুঝা গেলো, তারা ইসলাম চায় বলে যে দাবি করে থাকেন, তা ডাহা মিথ্যাচার।

পন্নীর ইসলাম কী আসল ইসলাম?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
প্রিয় পাঠক, রাসুলুল্লাহ সা. ইন্তেকালের পর ইসলাম বিদ্বেষীরা বিভিন্নভাবে ইসলামকে সমাজ থেকে আলাদা করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, আছে এবং থাকবে। কেউ সরাসরি ইসলামকে অস্বীকার করেছে। আবার কেউ কৌশলে ‘ইসলাম বিকৃত’ বলে দাবি করে ইসলামের নামে নিজস্ব মতবাদ সমাজে প্রচলন করতে চেয়ছে। আর এ কাজটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আজও ইসলামকে বিকৃত বলে নতুন ধর্ম প্রচলন করার মিশনে নেমেছে অসংখ্য সংগঠণ। তার মধ্যে অন্যতম হলো, হেযবুত তওহীদ। তারা ইসলামকে বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে আঘাত করে বায়াজীদ খান পন্নীর ধর্ম চালাতে বদ্ধপরিকর। আর এটা বাস্তবায়ণ করতে তারা একটা স্লোগান তুলেছে, ‘আসল ইসলাম কী তা একমাত্র পন্নী সাহেব বুঝেছেন। চলুন তাদের বই থেকে দেখা যাক তারা কি বলতে চায়-
সেই হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম মহান আল্লাহ আবার দয়া করে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান যামানার এমাম এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী কে বুঝিয়ে দিয়েছেন। – জঙ্গিবাদ সংকট সমাধানের উপায়, পৃ. ৫০

আল্লাহ অতি দয়া করে তাঁর প্রকৃত ইসলাম যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে বুঝিয়েছেন। হেযবুত তাওহীদ সেই প্রকৃত ইসলামের ধারক। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৫

আল্লাহ আমাদেরকে দয়া করে ইসলামের প্রকৃত আকীদা দান করেছেন। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৩৯

যে এসলাম আপনারা আজকে ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা, পুরোহিতদের কাছে দেখছেন, আমরা সেই এসলামের কথা বোলছি না। এসলামের সত্যরূপ তাদের কাছে নেই, তারা কেউ হানাফী, কেউ হাম্বলী কেউ শিয়া, কেউ সুন্নী, কেউ ওয়াহাবী কেউ সালাফী কেউ বাহায়ী হয় তারা এই বিকৃত এবং অনেকাংশে মনগড়া এসলামগুলি শিক্ষা কোরেছেন ব্রিটিশ খ্রিস্টানদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলি থেকে। সুতরাং তাদের কাছে যে এসলাম আছে সেটা দিয়ে অমন শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা করার চিন্তাও হাস্যকর। আমরা বোলছি আল্লাহর সত্যদীন এসলামের কথা যার রূপরেখা যামানার এমাম দিয়ে গেছেন। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৮

আমরা হেযবুত তওহীদ আল্লাহর রহমে সেই প্রকৃত ইসলাম মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সৌভাগ্য লাভ কোরেছি। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ৫

আল্লাহর রহমে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আবার সে হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম বুঝতে পেরেছেন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৮৯

এ জাতির জন্য বিরাট আশার কথা ও সুসংবাদ এই যে,১৩০০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই প্রকৃত এসলাম আল্লাহ দয়া কোরে এ যামানার এমাম, এমামুযযামান, The Leaderof the Time জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১০৯

ইসলাম কী বলে?
প্রকৃত ইসলাম সেটাই যা ধারাবাহিকভাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে সাহাবায়ে কেরামের রা. মাধ্যমে তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আয়েম্মায়ে কেরাম, মুজতাহিদীন, মুফাসসিরিনে, মুআররিখিন সকল উলামা ও মুসলিম মিল্লাত পেয়েছেন। সে ইসলাম যে আজও অবিকৃত আছে, তা আমি ‘ইসলাম অধ্যায়ে’ বিস্তারিত লিখেছি। সুতরাং প্রচলিত ইসলামই আসল ইসলাম। এর বিপরীতে পন্নী সাহেব যেটাকে দাঁড় করিয়েছেন, তা পুরোটাই তার মস্তিস্কনিসৃত। প্রচলিত ইসলাম সম্পর্কেই মহান রব বলেন,
وَهَـذَا صِرَاطُ رَبِّكَ مُسْتَقِيمًا قَدْ فَصَّلْنَا الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَذَّكَّرُونَ
আর এটাই আপনার পালনকর্তার সরল পথ। আমি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্যে আয়াতসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা করেছি। -সুরা আন’আম : ১২৬

সুতরাং অবিকৃত ইসলাম সম্পর্কে যারা এমন উদ্ভট কথা আবিস্কার করে তাদের ব্যাপারে নিন্মোক্ত হাদিসটি যথার্থ। নবিজি সাঃ বলেন,
يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
শেষ যামানায় ইসলামের বেশধারী এমন কিছু মিথ্যাবাদী প্রতারক বের হবে। যারা তোমাদের নিকট (ধর্মীয় বিষয়ে) এমন কিছু কথা বলবে, যা তোমরা তো শোনোই নাই এবং তোমাদের বাপ দাদারাও শোনে নাই। সুতরাং সাবধান! তোমরা তাদের নিকট থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকবে এবং তাদের ফিতনায় জড়িত হবে না। – সহীহ মুসলিম, হাদিস : ৭

সুতরাং হেযবুত তওহীদের অনুসারীদের কাছে বিনীত অনুরোধ। ফিরে আসুন। গোপনভাবে আপনার ঈমানকে নষ্ট করে মুরতাদ বানানো হচ্ছে। একটু চোখ খুলুন।

হেযবুত তওহীদ কী ধর্মের পক্ষ নিয়ে বলে?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা কোথাও কোথাও দাবি করেছেন যে, তারা ধর্ম প্রচার করছে। তাদের লেখাটা হলো এই,
হেযবুত তওহীদ ধর্মের পক্ষ নিয়েছে। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৩৬

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায় যে,তারা ধর্মের পক্ষ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

জবাব:
হেযবুত তওহীদের কোনো ধর্ম নেই এবং তারা কোনো ধর্মের দিকে মানুষকে ডাকছেও না। এ সম্পর্কে তারা অসংখ্য জায়গায় লিখেছে,
মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। -সকল ধর্মের মর্মকথা সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১০

আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। আমাদের কথা হচ্ছে যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে। আমরা যদি শান্তিতে জীবন যাপন করতে চাই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিময় জীবন উপহার দিতে চাই তার জন্য আমাদেরকে সকল প্রকার কলহ-বিবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৫

আমরা বলি না যে, আপনারা আল্লাহ বিশ্বাসী হয়ে যান, মো’মেন হয়ে যান, পরকালে বিশ্বাসী হয়ে যান, আল্লাহর প্রতি কে ঈমান আনবে না আনবে সেটা তারা আল্লাহ সঙ্গে বুঝবে। সুতরাং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৫১

সুতরাং প্রমাণ হলো,হেযবুত তওহীদ ধর্মের কাজ করছে না, বরং তাদের কাজ হলো, ধর্মহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যা নাস্তিকদের মিশন।

স্বার্থে আঘাত আসাতেই কী আলেমরা হেযবুত তওহীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, আলেমরা হেযবুত তওহীদের বিরোধীতা করার মূল কারণই হলো, আলেমদের স্বার্থে আঘাত আসা। তারা লিখেছে,
ধর্ম ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আঘাত আসার কারণেই মূলত আমাদের উপরে মিথ্যাচার করে জনসাধারণকে ক্ষিপ্ত করা হয়েছে। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৩৯

জবাব:
মূলত হেযবুত তওহীদের শত শত কুফরী মতবাদের কারণেই আলেমরা তাদের বিরোধীতা করে থাকেন। কারণ আলেমদের কাজই হলো, ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিদ্বেষের জবাব দেওয়া। যারা এসব কাজ করেন, তারা নবীজি সা. এর সাচ্চা এবং ন্যায়সঙ্গত উম্মত। ইলম বিল্লাহ (আল্লাহকে জানা) ও ইলম বিআমরিল্লাহ’ (আল্লাহর বিধান জানা) এই দুই গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিরাই হয়ে থাকেন, নবীর ওয়ারিছ এবং তাঁদের সম্পর্কেই হাদীস শরীফে বলা হয়েছে নবিজি সাঃ বলেন,
يحمِلُ هذا العِلمَ مِن كلِّ خَلَفٍ عُدولُهُ، يَنْفُونَ عنهُ تحريفَ الغالينَ، وانتحالَ المُبطِلينَ، وتأويلَ الجاهِلينَ
এই ইলমকে ধারণ করবে প্রত্যেক উত্তর প্রজন্মের আস্থাভাজন শ্রেণী। তাঁরা একে মুক্ত রাখবে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি থেকে, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার থেকে এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে। -আল ক্বওলুল আলী, হাদিস নং- ২২৭

অপর এক বর্ণানায় এসেছে, আবদুর রহমান ইবনু আলা আল হাযরামী রহি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে এমন এক লোক বর্ণনা করেছেন, যিনি নবী সা. কে বলতে শুনেছেন, তিনি সাঃ বলেছেন,
إِنَّهُ سَيَكُونُ فِي آخِرِ هَذِهِ الْأُمَّةِ قَوْمٌ لَهُمْ مِثْلُ أَجْرِ أَوَّلِهِمْ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقَاتِلُونَ أَهْلَ الْفِتَنِ
অদূর ভবিষ্যতে এ উম্মতের শেষলগ্নে এমন এক সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে, যাঁদের ভালো ’আমলের সাওয়াব তাদের প্রথম যুগের লোকেদের বরাবর হবে। তাঁরা মানুষদেরকে ভালো কাজ করতে আদেশ করবেন এবং মন্দকাজ হতে বারণ করবেন। আর ফিতনাবাজদের সাথে যুদ্ধ করবেন। -মিশকাত, হাদিস নং- ৬২৮৯

সুতরাং আলেমদের নামে এমন ডাহা মিথ্যাচার যারা করে, তারা যে মুসলিম নয়, এটা সহজেই অনুমেয়। মূলত আলেমদের বিরোধীতা করা কারণ হলো, সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে আলেমদের থেকে আলাদা করা। কারণ এটা করতে পারলেই তাকে ফুটবলের মত খেলা যায়। আর এটাই চায় হেযবুত তওহীদ।

হেযবুত তওহীদ কী জঙ্গী বিরোধি?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, তারা জঙ্গী বিরোধী কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। তারা লিখেছেন,
হিজবুত তাওহীদের বিরুদ্ধে জঙ্গী সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৪১

হেযবুত তওহীদের সদস্যরাও যেকোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত হয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সত্য প্রচার করে যাচ্ছে কেবল জাতির মুক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তির আশায়। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৩

জঙ্গিবাদ ধ্বংস করতে যে শক্তিশালী যুক্তি, তথ্য,প্রমাণ প্রয়োজন তা একমাত্র হেযবুত তাওহীদের কাছেই আছে। তাই জঙ্গিবাদ দমন এবং একেবারে নির্মূল করতে হেযবুত তওহীদ ছাড়া সম্ভব নয়। -জঙ্গীবাদ সঙ্কট, পৃ. ৩৮/৪০

জবাব:
মূলত হেযবুত তওহীদ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জঙ্গী কার্যক্রম শুরু করে। যার কারণে তাদের একটি বইও নিষিদ্ধ করা হয়। পন্নী সাহেবের প্রথম লেখা বই ‘এ এসলাম এসলামই নয় বই’টি (জঙ্গীবাদের উস্কানীদাতা হিসাবে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষিদ্ধ। -মহাসত্যের আহ্বান, (ছোট)-২৩, যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৫৯

সে সময় সরকারি লোক দাওয়াত দিলেও তারা আসতেন না। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৪৭

এবং সরকার তাদেরকে কালো তালিকাভূক্ত করে। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫০-৫১

উপরন্তু তারা জিহাদ, কিতাল সম্পর্কে অসংখ্য বিকৃতি করে, যা জঙ্গী তৈরিতে খুব সাহায্য করে থাকে। তারা নিজেরাই লিখেছে,
কোরআনের দু’একটি আয়াত তুলে এনে দু’একটি হাদিস তুলে এনে ইসলামের নাম ব্যবহার করে বহু ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। মুসলমানদেরকে প্রকৃতপক্ষে কোরআন কি, হাদিস কি তা বিস্তারিত ভাবে এবং ভালোভাবে বুঝে নেওয়ার দরকার আছে। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৪৯

অর্থাৎ তারা নিজেরাও জানে যে, হাদিস-কুরআনের অপব্যাখ্যা দিয়েই মূলত মানুষকে জঙ্গী বানানো যায়। তাহলে চলুন দেখা যাক, এ সব ব্যাপারে তাদের কিছু বক্তব্য দেখে নেওয়া যাক-

এক. যোদ্ধা না হলে সে ইসলামের প্রাথমিক সদস্য পদই পাবে না:
এই দীনের মধ্যে প্রবেশ করতেই একজন মানুষকে যোদ্ধা হতে হবে,যোদ্ধা না হয়ে কেউ এই দীনে প্রবেশই করতে পারবে না।অর্থাৎ যে যোদ্ধা নয় এই দীনুল ইসলামের একজন প্রথমিক সদস্য হওয়ারও যোগ্যতা তার নেই। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ১৮/৪৭

নবিজি সাঃ-এর প্রধান মিশন ছিলো যোদ্ধা বানানো:
তিনি উম্মতে মোহাম্মদীকে আদেশ করেছেন সশস্ত্র সংগ্রাম করে এই দীন সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিা করে সমস্ত অশান্তি অন্যায় রক্তপাত নিশ্চিহ্ন করে পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। (সূরা আনফাল ৩৯)। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৩৮

সাহাবাদের আসল চরিত্র ছিলো যোদ্ধার চরিত্র:
আল্লাহর রসুলের ইসলাম যে জাতি গঠন করেছিল সে জাতির চরিত্রের সর্ব প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যোদ্ধার চরিত্র, তার প্রমাণ জাতির নেতা আল্লাহর রসুল (দ.) সহ সমস্ত জাতির মধ্যে এমন একটা লোকও বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যেত না যার শরীরে অস্ত্রের আঘাত নেই। বর্তমানের ইসলাম যে জাতি গঠন করে তার চরিত্রের সর্ব প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাপুরুষতা।ছোট-বড় সমস্ত রকম সংঘর্ষ, বিপদ আপদ থেকে পলায়ন। যে যত বেশি ধার্মিক সে ততো বেশি কাপুরুষ; এদের গায়ে সুচের খোঁচারও দাগ নেই। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ১৭

সাহাবারা যুদ্ধে যুদ্ধে জিবন দিয়েছেন:
স্ত্রী-পুত্র পরিবার ত্যাগ কোরে, বাড়ি-ঘর সহায়-সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ কোরে অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে, নির্মম অত্যাচার সহ্য কোরে, অভিযানে বের হোয়ে গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন দিয়ে এই হল তার উম্মাহ, উম্মতে মোহাম্মদী তার প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী জাতি। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৭৫

(সাহাবায়ে কেরাম) এই রিবাতগুলোর (দূর্গ) মধ্যে  প্রহরীর কাজ করতেন, কুচকাওয়াজ করতেন, অস্ত্র ও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতেন। অবশ্যই সালাত সওমও পালন করতেন ফরদ হিসাবে। -বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৫২

সাহাবারা যুদ্ধ করেছিলেন রাষ্ট্র দখলের জন্য :
উম্মতে মোহাম্মাদী যত যুদ্ধ করেছিলো সব রাষ্ট্রদখল করে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৭

যিনি যতবড় আলেম তিনি ততবড় যোদ্ধা হবেন:
এই জ্ঞানের দুয়ার আলীকেই রা: আমরা দেখি সিংহের বিক্রমে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরতে। তার অনন্য সাহসিকতায ও বীরত্বের জন্য রাসুলুল্লাহ তাকে আরেকটি উপাধি দিয়েছিলেন সেটা হল আসাদুল্লাহ বা আল্লাগর সিংহ। সুতরাং যিনি দীনের যত বড় আলেম হবেন, তিনি তত বড় যোদ্ধা হবেন। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৪০

যিনি যতবড় মুমিন তিনি ততবড় যোদ্ধা:
এ জাতির (সাহাবায়ে কেরাম) মধ্যে কোনো পুরোহিত শ্রেণী ছিল না, সবাই ছিলেন যোদ্ধা।যিনি যতবড় মো’মেন তিনি ছিলেন ততবড় যোদ্ধা’। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ২৬, এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৭/৩৮/৬১

ইসলাম প্রতিষ্ঠার একমাত্র নিতি হলো যুদ্ধ:
চলমান পক্রিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৫৯/৬২

রাষ্ট্রশক্তি কেউ বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেয় না, এটাও জানা কথা। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৭/৩৭

দীনুল হককে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করাে নীতি হচ্ছে সামরিক, অর্থাৎ জেহাদ,কেতাল।আল্লাহ নীতি হিসাবে যুদ্ধকে নির্ধারণ করেছেন বলেই তাঁর নির্দেশে তাঁর রসুল মাত্র সাড়ে নয় বছরের মধ্যে কম করে হলেও ৭৮ টি যুদ্ধ করেছেন। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ১২/১৬/৬২

নবিজি সাঃ-এর দায়িত্ব ছিলো স্বশস্ত্র সংগ্রাম করা:
তিনি (নবীজি সা.) আল্লাহ থেকে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে নিজের দায়িত্ব ঘোষণা করলেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি ততক্ষণ পর্যন্ত স্বশস্ত্র সংগ্রাম (কেতাল) চালিয়ে যেতে, যে পর্যন্ত না প্রত্যেকটি মানুষ আল্লাহকে তাদের একমাত্র এলাহ হিসাবে এবং আমাকে আল্লাহর রসূল হিসাবে মেনে না নেয় (আব্দুল্লাহ এবনে ওমর রা: থেকে বোখারী)। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৯৯

প্রকৃত ইসলাম তাসবীহ রেখে তরবারী হাতে দেয়:
আল্লাহর রসুলের ইসলাম নির্জনবাসি কামেল সুফী সাধক ওয়ায়েস করনী (রা.) কে নির্জনবাস থেকে বের করে এনে তলোয়ার হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ করেছিল। আর বর্তমানের এই ইসলাম যোদ্ধার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তার হাতে তসবিহ ধরিয়ে দিয়ে মসজিদে আর খানকায় বসিয়ে দেয়। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ১৬

দ্বীন কায়েমের একমাত্র পথ স্বশস্ত্র সংগ্রাম:
রসুলের মাত্র ৯ বছরের মধ্যে ১০৭ টি যুদ্ধ থেকেই আর সন্দেহের কোনো অবকাশই থাকে না যে সর্বজ্ঞানী আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্যে সশস্ত্র সংগ্রাম, যুদ্ধকেই নীতি হিসেবে বেছে নিয়েছেন। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৪৮

সেই দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি, প্রক্রিয়া যে অন্য কোনো পন্থা নয় সশস্ত্র সংগ্রাম এ সিদ্ধান্ত আর কারো নয় স্বয়ং আল্লাহর। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৪৮

জিহাদই একমাত্র নবিজি সাঃ-এর সুন্নাহ:
নবীজির সা. সুন্নাহ হলো, শুধুমাত্র জিহাদ, অন্যগুলো ব্যক্তিগত অভ্যাস। -আকিদা পৃ. ১৪ এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৯

মোমেন হতে জিহাদই শর্ত:
নিজেদের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে সংগ্রাম করার মধ্যে দিয়েই মোমেন হতে হবে, অন্য কোন পন্থা আল্লাহ দেননি। এই মুমিনের জন্য নামাজ রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ ইসলামের অন্যান্য সব আমল। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১১৩

জিহাদ না করলে সে উম্মতে মুহাম্মাদী নয়:
যারা সেই কাজ অর্থাৎ জেহাদ চালিয়ে যাবে না তারা যত বড় মুসল্লি হোন যতবড় মুত্তাকি, আলেম, দরবেশ, পীর-মাশায়েখ হোন না কেন উম্মতে মোহাম্মদী নন। হাশরের দিন তাঁর উম্মত হিসাবে রসুলের সাফাতের উপর তাদের কোনো দাবি থাকবে না। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৩৯

উম্মতে মুহাম্মদীর সংজ্ঞা হল, আল্লাহ যে কাজের দায়িত্ব দিয়ে তার রসূলকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ও যে দায়িত্ব তিনি তার গঠিত জাতির ওপর অর্পণ করে চেলে গিয়েছেন, যে বা যারা সেই কাজ চালিয়ে যাবে শুধু তারাই উম্মতে মুহাম্মদী। যারা সেই কাজ অর্থাৎ জেহাদ চালিয়ে যাবে না তারা যত বড় মুসল্লিই হন,যত বড় মুত্তাকি, আলেম দরবেশ হন না কেন-উম্মতে মুহাম্মদী নন। হাশরের দিন তার উম্মত হিসাবে রসূলের শাফায়াতের ওপর তাদের কোন দাবী থাকবে না। -ইসলামের প্রকৃত আকীদা, পৃষ্ঠা নং-১৬

জিহাদ ত্যাগ করলেই বেঈমান:
জেহাদ ত্যাগ করার কারণে এই জনসংখ্যা বহু আগেই মোমেনের সংজ্ঞা থেকে বহিষ্কার হোয়ে গেছে। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১০৮/১০৫ আকীদা, পৃ. ১৮

আল্লাহ কোথাও বলেন নাই যে, সালাত (নামাজ) ত্যাগ করলে বা সওম (রোজা) ত্যাগ করলে বা হজ্ব ত্যাগ করলে বা অন্য যে কোন এবাদত ত্যাগ করলে কঠিন শাস্তি দিয়ে এই দীন থেকেই বহিস্কৃত করবেন শুধু জেহাদ (সংগ্রাম) এবং আল্লাহর রাস্তায় (জেহাদে) ব্যয় ছাড়া। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ১৫

জিহাদ না করলে সে কাফের ও জাহান্নামী:
জেহাদ না করলে সে কাফের,মোশরেক ও যতই ইবাদত করুক সে জাহান্নামী। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ১৬

জিহাদই জান্নাতের একমাত্র পথ:
জান্নাত কান্নাকাটি করে দোয়া করে পাওয়ার বিষয় নয়। এটি একটি লেনদেনের বিষয়। মোমেন নিজের জীবন ও সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে বিনিময় আল্লাহ তাকে জান্নাত দেবেন। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ৭

মুজাহিদদের মর্যাদা নবিদের চেয়েও বেশী:
তওহীদের ওপর ইসলামে ঈমানের পরই শ্রেষ্ঠ আমল ঐ তওহীদ প্রতিষ্ঠার জেহাদ বলেই তার পুরস্কার আল্লাহ রেখেছেন ইসলামের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান যে পুরস্কার ও সম্মান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যে আল্লাহর নবীদেরও ছাড়িয়ে গেছে। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৩৯/৪১/৪৯

জিহাদ আত্মরক্ষামূলক নয় বরং আক্রমানত্মক:
ইসলামের জিহাদ আত্মরক্ষামূলক নয় বরং প্রচন্ডভাবে আক্রমানত্মক। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৪৫/৪৬

জান্নাতে যাবার জন্য দুটি শর্ত: ঐক্যবদ্ধ ও সংগ্রাম।
জান্নাতে যাওয়ার জন্য দুটি শর্ত এক. আল্লাহর তাওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং দুই. রসুলের পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য অর্থাৎ সমস্ত পৃথিবীময় ন্যায়, শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক সংগ্রাম করে যাওয়া। ব্যস এই দুইটি শর্ত যারা পূরণ করতে পারবেন তারাই মুমিন, তারাই সেই জান্নাতি ফেরকা তাতে সন্দেহ নেই’। – প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ১১২

তওহীদ ও জিহাদে থাকলে কবীরা গুনাহও জাহান্নামে পাঠাবে না:
তাওহীদে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে মগ্ন হলে তার ব্যক্তিগত জীবনের কোন গুনাহ এমনকি চুরি-ডাকাতি জেনা ব্যভিচারে ও তাকে জান্নাত  থেকে ফেরাতে পারবে না। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ১১৪

দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ ও কিতাল করা:
এই কাজ করার জন্য নীতি হিসাবে দিলেন সর্বাত্মক সংগ্রামের। – শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৫২

এই প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া হিসাবে আল্লাহ নির্ধারণ করলেন জেহাদ ও কেতাল অর্থাৎ সংগ্রাম। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৬২

সাহাবাদের গঠন করেছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য:
এই উম্মাহকে গঠন করেছিলেন, আর সেটি হলো সশস্ত্র সংগ্রাম করে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর আইন-কানুন অর্থাৎ দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও কার্যকরী করে মানবজাতির ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের সমস্ত অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, শোষণ, অত্যাচার নিঃশেষ করে দিয়ে নায়, সুবিচার, নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৭

যতদিন ওই দায়িত্বপূর্ণ করা না হবে ততদিন তার উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব অপূর্ণ, অসমাপ্ত থেকে যাবে। তাই তিনি এমন একটি জাতি সৃষ্টি করলেন পৃথিবী থেকে তাঁর চলে যাওয়ার পরও সে জাতি তার উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য তাঁরই মত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। এই জাতি হলো তাঁর উম্মাহ, উম্মতে মুহাম্মাদী -মোহাম্মাদের জাতি। -আকিদা, পৃ. ১২, এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৭৫

আবু বকর রা: থেকে শুরু করে হাজার হাজার আসহাব তাদের শুধু মাকে ছেড়ে নয়, বাপ-মা স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সম্পত্তি বাড়ি-ঘরে হেলায় ত্যাগ করে এসে মহানবীর স: সঙ্গী হয়েছেন। তার সঙ্গে সব রকম দুঃখ বরণ করেছেন। বছরের-পর-বছর ছায়াহীন উত্তপ্ত মরুভূমিতে কাটিয়েছেন। বিশ্বনবীর দায়িত্ব পূরণের সশস্ত্র সংগ্রামে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ২০

প্রতিটি সাহাবা তাদের পার্থিব সবকিছু কোরবান করে স্ত্রী-পুত্রকে আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়ে বছরের পর বছর আরব থেকে বহুদূরে অজানা-অচেনা দেশের সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন’। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৪৮

নবিজি সাঃ সাহাবাদের রা. গঠণ করেছিলেন স্বশস্ত্র সংগ্রামের জন্য:
শেষ রাসুল এই জাতিটিকে গঠন করেছিলেন সশস্ত্র সংগ্রাম করে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর আইন কানুন অর্থাৎ দ্বীন প্রতিষ্ঠার কার্যকারী করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। -যুগসন্ধিক্ষণে আমরা, পৃ. ১

অস্ত্রের সাথে সম্পর্ক না থাকলে সে জান্নাতে যেতে পারবে না:
যে মো’মেনের (ঈমানদারের) তলোয়ারের অর্থাৎ অস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক নেই তিনি কোনো দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে লিখতে গেলে শেষ নেই। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৪০

সুতরাং এর পরও কী বলা যাবে যে  এই হেযবুত তওহীদ জঙ্গী নয়? এধরণের বক্তব্যগুলো যদি জঙ্গীবাদের সহায়ক না হয়, তাহলে জঙ্গীবাদ কাদেরকে বলা হবে?

মিছিল মিটিং কী গর্হিত কাজ?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো,
রাস্তাঘাটে মিছিল-মিটিং হরতাল অবরোধ গাড়ি ভাঙচুর জ্বালাও-পোড়াও প্রতিরোধ করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করার মতো এসব কর্মকাণ্ড প্রত্যন্ত গর্হিতকাজ মনে করি। -সবার উর্ধ্বে মানবতা পৃ. ১৪

জবাব:
অথচ এই কাজটি তারা নিয়মিত করে থাকে। এমনকি এই গর্হিত কাজটাকে তারা আিনগত অধিকার বলেও দাবি করে থাকে। দেখুন তারা কী বলে?
হিজবুত তাওহীদের প্রচারকার্য করার এমনকি মিছিল সভা-সমাবেশ করার ও আইনগত অধিকার রয়েছে। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ২৫

প্রশ্ন হলো, একই বিষয় অধিকার আবার গর্হিত কাজ হয় কিভাবে?

হেযবুত তওহীদের সদস্যদের মর্যাদা:

ইসলামের চুড়ান্ত নিয়ম হলো, কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার। আর আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক ওহী প্রাপ্ত হয়ে নবীজি সা. সাহাবায়ে কেরামের রা. ক্ষেত্রে জান্নাতী বলে সু-সংবাদ দিয়ে গেছেন। কিন্তু বায়াজীদ খান পন্নী তিনিও নবীজির সা. মত নিজের সহকর্মীদের জান্নাতের সার্টিফিকেট দিয়ে গেছেন। নাউযুবিল্লাহ। চলুন তিনি কী বলেছেন আগে দেখে নেওয়া যাক।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
এ প্রসঙ্গে তাদের কয়েকটা দাবি হলো-
১. হেযবুত তওহীদে আসলেই জান্নাত সুনিশ্চিত।
২. হেযবুত তওহীদে আসলে অমুসলিমরাও জান্নাতী।
৩. হেযবুত তওহীদে আসলেই দুই শহীদের মর্যাদা।
৪. হেযবুত তওহীদের সদস্যদের লাশ পচে না।
৫. হেযবুত তওহীদের সদস্যদের নামে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ বলা।
৬. হেযবুত তওহীদের জনৈক সদস্য সরাসরি আল্লাহকে দেখেছে।
৭. হেযবুত তওহীদের সদস্যদের মর্যাদা নবীদের চেয়েও বেশি।

হেযবুত তওহীদের সদস্যরা কী জান্নাতী?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা পন্নী বলেছে,
হেযবুত তওহীদে যারা সত্যিকার ভাবে এসেছ তাদের জন্য জান্নাত তো নিশ্চিত। এইখানেও যেন কারো মনে কোন সন্দেহ না থাকে যে জান্নাত নিশ্চিত। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ.৬৩

অর্থাৎ তিনি বলতে চান, হেযবুত তওহীদের প্রকৃত অনুসারীরা নিশ্চিত জান্নাতী।

ইসলাম কী বলে?
কাউকে নিশ্চিতরূপে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা হাদিস অনুযায়ী নিষেধ। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ-কে বলতে শুনেছি,
كَانَ رَجُلَانِ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ مُتَوَاخِيَيْنِ، فَكَانَ أَحَدُهُمَا يُذْنِبُ وَالْآخَرُ مُجْتَهِدٌ فِي الْعِبَادَةِ، فَكَانَ لَا يَزَالُ الْمُجْتَهِدُ يَرَى الْآخَرَ عَلَى الذَّنْبِ فَيَقُولُ أَقْصِرْ فَوَجَدَهُ يَوْمًا عَلَى ذَنْبٍ، فَقَالَ لَهُ: أَقْصِرْ. فَقَالَ: خَلِّنِي وَرَبِّي أَبُعِثْتَ عَلَيَّ رَقِيبًا؟ فَقَالَ: وَاللَّهِ لَا يَغْفِرُ اللَّهُ لَكَ أَوْ لَا يُدْخِلُكَ اللَّهُ الْجَنَّةَ، فَقَبَضَ أَرْوَاحَهُمَا فَاجْتَمَعَا، عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ، فَقَالَ لِهَذَا الْمُجْتَهِدِ: أَكُنْتَ بِي عَالِمًا؟ أَوْ كُنْتَ عَلَى مَا فِي يَدِي قَادِرًا، وَقَالَ لِلْمُذْنِبِ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِي، وَقَالَ لِلْآخَرِ: اذْهَبُوا بِهِ إِلَى النَّارِ
বনি ইসরাইলে দুই বন্ধু ছিল। তাদের একজন পাপ করত, দ্বিতীয়জন খুব ইবাদত গুজার ছিল। ইবাদত গুজার তার বন্ধুকে সর্বদা পাপে লিপ্ত দেখত, তাই সে বলত বিরত হও, একদিন সে তাকে কোন পাপে লিপ্ত দেখে বলে: বিরত হও। সে বলল: আমাকে ও আমার রবকে থাকতে দাও, তোমাকে কি আমার ওপর পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছে? ফলে সে বলল: আল্লাহর কসম আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না, অথবা তোমাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর তাদের উভয়ের রূহ কবজ করা হল এবং তারা উভয়ে আল্লাহর দরবারে একত্র হল। তিনি ইবাদত গুজারকে বলেন: তুমি কি আমার ব্যাপারে অবগত ছিলে? অথবা আমার হাতে যা রয়েছে তার ওপর তুমি ক্ষমতাবান ছিলে? আর পাপীকে তিনি বলেন: যাও আমার রহমতে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর ব্যক্তির জন্য বলেন: তাকে নিয়ে জাহান্নামে যাও? -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৯০১

উক্ত হাদিস থেকে স্পষ্ট হলো কাউকে জাহান্নামি বলার ভয়াবহতা কত মারাত্মক! কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা একমাত্র তার দ্বারাই সম্ভব যার নিকট ওহী আসে। সে হিসাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর ভিত্তিতেই সাহাবায়ে কেরামকে রা. জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

কিন্তু বায়াজীদ খান পন্নী ও হেযবুত তওহীদের কারও কাছে কী ওহী আসে? নিশ্চয় না। তাহলে তারা কাউকে নিশ্চিতরূপে জান্নাতী কিভাবে বলে? এটা কী দ্বীনের নামে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ নয়? এমনিভাবে কোনো নেককারকেও জান্নাতি বলে সুসংবাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ কারও আখেরী আমল সম্পর্কে এক আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারে না। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يُرْسَلُ الْمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ وَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ فَوَالَّذِي لاَ إِلَهَ غَيْرُهُ إِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا
তোমাদের প্রত্যেকের শুক্ৰকীট তার মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন একত্রিত করা হয়। তারপর হুবহু চল্লিশ দিন জমাট রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। তারপর হুবহু চল্লিশ দিনে তা একটি মাংস টুকরায় পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতাকে প্রেরণ করা হয়। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়। আর তাকে চারটি কালিমা (বিষয়) লিপিবদ্ধ করার আদেশ করা হয়। রিযক, মৃত্যুক্ষণ, কর্ম, বদকার ও নেক্কার। সে সত্তার শপথ! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝ হতে কেউ জান্নাতীদের ’আমলের ন্যায় আমল করতে থাকে। অবশেষে তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র একহাত দূরত্ব থাকে। অতঃপর ভাগ্যের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তোমাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি জাহান্নামের কাজ-কর্ম করতে থাকে। ফলে জাহান্নামের মাঝে ও তার মাঝে মাত্র একহাত দূরত্ব থাকে। তারপর ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে। অবশেষে জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৬৬১৬

এই হাদিসটি থেকে বুঝা যায়, কোনো নেককার মানুষকেও সুনিশ্চিতরূপে জান্নাতী বলার কোনো অবকাশ নেই। কারণ কারও আখেরি আমল সম্পর্কে আমরা ওয়াকিফহাল নই। সেখানে হেযবুত তওহীদের কাফেরদের ব্যাপারে কিভাবে জান্নাতী বলা যায়?

হেযবুত তওহীদের সদস্যরা কী জান্নাতি?
মুহাম্মাদ সাঃ-এর আগমনের পর একমাত্র ইসলাম ছাড়া সকল মত ও পথ জাহান্নামীদের পথ। অথচ হেযবুত তওহীদের আক্বীদা হলো, তাদের ধর্ম ইসলাম নয়, বরং মানবতা। এমনকি ইসলাম তাদের মিশন নয় বলে তারা জোর দাবি করে থাকে। তারা লিখেছে,
মানুষের ধর্ম কি? মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের দুঃখ কষ্ট হৃদয়ে অনুভব করে এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় সে-ই ধার্মিক। অথচ প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সুরা কালাম, শাস্ত্র মুখস্থ বলতে পারে, নামাজ-রোযা,পূজা, প্রার্থনা করে সে-ই ধার্মিক। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪৫

এজন্য তারা ইসলামের দিকেও ডাকে না বলে দাবি করেছে,
আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৫

উপরোক্ত দুটি বক্তব্য থেকে বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদের মিশন ইসলাম নয় এবং তারা ধর্ম হিসাবে মানে নাস্তিকদের ধর্ম ‘মানবতা’ কে। অথচ আল্লাহপাক বলেন,
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত (জাহান্নামী)। -সুরা আলে ইমরান : ৮৫

সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে যারা নাস্তিকদের ধর্ম ‘মানবতা’ কে যারা ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করেছে। এমনকি ইসলমের প্রায় সকল বিধানকে বিকৃতিকারী ও অমান্যকারী এই দলের সদস্যরা  মুসলিম নয়, বরং আগা-গোড়া কাফের। সুতরাং কোনো কাফেরকে জান্নাতী বলা মানেই পুরো কুরআন-হাদিসকে অস্বীকার করা। কারণ কোনো কাফেরের জন্য জান্নাত হালাল নয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
يَلْقَى إِبْرَاهِيْمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ فَيَقُوْلُ لَهُ إِبْرَاهِيْمُ أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لَا تَعْصِنِيْ فَيَقُوْلُ أَبُوْهُ فَالْيَوْمَ لَا أَعْصِيكَ فَيَقُوْلُ إِبْرَاهِيْمُ يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِيْ أَنْ لَا تُخْزِيَنِيْ يَوْمَ يُبْعَثُوْنَ فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الأَبْعَدِ فَيَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى إِنِّيْ حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ ثُمَّ يُقَالُ يَا إِبْرَاهِيْمُ مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ فَيَنْظُرُ فَإِذَا هُوَ بِذِيْخٍ مُلْتَطِخٍ فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ
কিয়ামতের দিন ইবরাহীম আ. তার পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমন্ডলে কালি এবং ধূলাবালি থাকবে। তখন ইবরাহীম আ. তাকে বললেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। অতঃপর ইবরাহীম আ. আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সঙ্গে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহম হতে বঞ্চিত হবার চেয়ে বেশী অপমান আমার জন্য আর কী হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইবরাহীম! তোমার পদতলে কী? তখন তিনি নীচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার জায়গায় সর্বাঙ্গে রক্তমাখা একটি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৩৩৫০

সুতরাং বুঝা গেলো, কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম। তাহলে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা কাফের হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে তাদেরকে নিশ্চিত জান্নাতী বলে আখ্যায়িত করা যায়? আসলে মূলত ধর্মব্যাবসায়ীরা সব সময় ধর্মকে ব্যবহার করে চটকদার কথা শুনিয়ে মানুষকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে থাকে। পন্নী সাহেবও সে দিক থেকে পিছিয়ে ছিলেন না,বরং পরিপূর্ণভাবে সে পথেই হেটেছেন। মানুষকে সস্তা জান্নাতের টিকেট ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ধর্মব্যবসাকে চাঙ্গা রেখেছেন। আল্লাহ পাক তাদের এহেন ষড়যন্ত্র থেকে জাতিকে হিফাযত করেন। আমীন!

হেযবুত তওহীদে আসলে কী অমুসলিমরাও জান্নাতী?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, হেযবুত তওহীদের দ্বিতীয় এমাম হুসাইন সেলিম সাহেব বলছেন,
তোমরা হিন্দুদের হও,খ্রিষ্টান হও, ইহুদী হও যে যে ধর্মের হও না কেন? তোমরা যদি হেযবুত তওহীদের ডাকে সাড়া দাও, তবে তোমরা জান্নাতি। তোমাদের আর কোথাও যেতে হবে না।

মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না’। -সকল ধর্মের মর্মকথা সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১০

হেযবুত তওহীদে যারা সত্যিকার ভাবে এসেছ তাদের জন্য জান্নাত তো নিশ্চিত। এইখানেও যেন কারো মনে কোন সন্দেহ না থাকে যে জান্নাত নিশ্চিত। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৩

ইসলাম কী বলে?
নবিজি সাঃ-এর আগমনের পর  ভিন্ন ধর্ম মেনে কোনো অমুসলিম জান্নাতে যেতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত (জাহান্নামী)। -সুরা আলে ইমরান : ৮৫

সুতরাং বুঝা গেলো, কোনো অমুসলিম জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

হেযবুত তওহীদের সদস্যরা কী শহীদ?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা পন্নী বলেছে,
এমনিতেতো হেযবুত তওহীদে আসলেই দুই শহীদের মর্যাদা। যে নাকি শেষ পর্যন্ত আছে। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৪

দাজ্জাল প্রতিরোধ করার কারণে হেযবুত তওহীদের সকলকে মহান আল্লাহ জীবন্ত অবস্থায় শহীদ হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন। -মহা সত্যের আহ্বান (ছোট) পৃ. ১২

ইসলাম কী বলে?
মূলত হেযবুত তওহীদ এ সকল দাবি করে থাকে এ কারণে যে, তারা মনে করে দাজ্জাল চলে এসেছে। অথচ এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‘দাজ্জাল কী কোনো সভ্যতা নাকি মানুষ’? পর্বে। সেখানে প্রমাণ করা হয়েছে যে, এখনও দাজ্জালের আগমন ঘটেনি, বরং তাদের দাবিগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত ও হাস্যকর। যেহেতু এখনও দাজ্জালের আগমন ঘটেনি এবং ঈসা আ. এরও আগমণ ঘটেনি এবং হিযবুত তাওহীদ সশস্ত্র জিহাদে লিপ্ত নেই, তাই দাজ্জাল প্রতিরোধের ফজিলত নিজের দলের পক্ষে বর্ণনা করা ও নিজেদেরকে শহীদ দাবি করা নিছক হঠকারিতা ছাড়া কিছুই নয়।

উপরন্তু তারা নিজেদেরকে শহীদ বলে দাবি করলেও মনে প্রাণে সেটা নিজেরাই বিশ্বাস করে না। যদি করতো, তাহলে বায়াজীদ খান পন্নীর মৃত্যুর পর তাকে গোসল ছাড়া দাফন করা হতো। কারণ হাদিস শরীফে শহীদের লাশ গোসল করাতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং বুঝা গেলো, তারা এমন শহীদ যে নিজেরাই সেটা বিশ্বাস করতে পারে না। কারণ কাফের কখনও শহীদ হয় না, হতে পারে না।

হেযবুত তওহীদের সদস্যদের লাশ কী পচে না?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, ‘বিশ্বনবী বলেছেন, ‘অভিশপ্ত দাজ্জালকে যারা প্রতিরোধ করবে তাদের মরতবা বদর ও ওহুদ যুদ্ধে শহীদের মরতবার সমান হবে (বোখারী ও মুসলিম)।” রাসূলুল্লাহর এই হাদীসটি এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে ।মাননীয় এমামুজ্জামান দাজ্জালকে চিহ্নিত করেছেন এবং তাঁর অনুসারীগণ দাজ্জালের পরিচয় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছেন,এভাবে তারা দাজ্জালকে প্রতিরোধ করছেন ।হেযবুত তওহীদ ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউই দাজ্জালকে দাজ্জাল বলে চিনছেন না,সুতরাং তাকে প্রতিরোধও করছেন না।কাজেই বিশ্বনবীর হাদীস মোতাবেক হেযবুত তওহীদের প্রত্যেক অকপট মোজাহেদ মোজাহেদা জীবিত অবস্থাতেই দুই জন কোরে শহীদের সমান। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১৯

কার্য্যত দেখা যাচ্ছে, দাজ্জালকে প্রতিরোধ করার কারণে হেযবুত তওহীদের মোজাহেদ মোজাহেদারা দুই শহীদের মরতবা লাভ কোরছেন। আপাতঃদৃষ্টিতে মারা গেলেও তারা প্রকৃতপক্ষে জীবন্ত এবং অমর। সে কারণেই এন্তেকালের পর তাদের দেহ শক্ত হোচ্ছে না- নরম থাকছে, মৃতের ন্যায় শীতলও হোচ্ছে না। -মহাসত্যের আহবান, পৃ. ১১/১২

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, হেযবুত তওহীদের সদস্যদের লাশ পচে না, বরং শহীদদের মত তাজা থাকে।

ইসলাম কী বলে?
আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, তাদের প্রতিষ্ঠাতা ও গুরু বায়াজীদ খান পন্নীর লাশ পচে মাটির সাথে মিশে গেছে। যদি তারা প্রমাণ দেখতে চায়, তাহলে পন্নীর কবর খুঁড়ে দেখতে পারে। যাদের গুরুর লাশই পচে-গলে শেষ হয়ে যায়, তার আত্মার সন্তানদের লাশ কেমন হতে পারে তা অনুমেয়।

হেযবুত ততওহীদের সদস্যদের নামে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ বলা:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা পন্নী সাহেব বলেছেন, তার সদস্যদের নাম শেষে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ (আল্লাহ তার উপর খুশি) বলা উচিৎ। তিনি বলেন,
এই অসাধারণ অথচ সংক্ষিপ্ত ভাষণের মধ্য দিয়ে এই প্রথম হেযবুত তওহীদের মোজাহেদ মোজাহেদারা মৃত্যু পর্যন্ত তওহীদে দৃঢ় থাকলে তারা যে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ হবেন এই শুভ সংবাদ দেওয়া হলো।-আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৮৩

ইসলাম কী বলে?
আমরা জানি, এই বাক্যটি ব্যবহার হয় সাহাবায়ে কেরামের রা. শানে। মহান আল্লাহ সাহাবায়ে কেরামের রা. শানে বলেন,
وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা। -সুরা তাওবা : ১০০

উক্ত আয়াত থেকে বুঝা গেলো, ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ আল্লাহ পাক বলেছেন, সাহাবায়ে কেরামের রা. শানে। এটা শুধু আমার কথা নয়, বরং হেযবুত তওহীদই লিখেছে,
আজ আমরা তাদের (সাহাবীদের) নামের পরে বলি রাদিয়াল্লাহু আনহুম অর্থাৎ আল্লাহ তার প্রতি খুশি। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৭৯

যে বাক্যটি মহান রব সসাহাবায়ে কেরামের শানে ব্যবহার করেছেন, সেই একই বাক্য হেযবুত তওহীদের কুফরী মতবাদে বিশ্বাসীদের নামের শেষে বলার প্রমাণ কী? অবশ্য তারা বলবে, ঐ কথিত মু’জেজার দিনে পন্নীর দেওয়া ভাষণ হলো দলীল। অথচ এই পুরো কথিত মু’জেজাটা যে পুরোটাই মিথ্যা তা আমি পন্নীর মু’জেজা অধ্যায়ে প্রমাণ করেছি। সুতরাং মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত এক ফালতু ঘটনা কখনও দলীল হতে পারে না। অতএব তাদের নামের শেষে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ বলা চরম মুর্খতা ও ভ্রান্তি।

হেযবুত তওহীদের সদস্যদের মর্যাদা কী নবিদের চেয়েও বেশি?
নবিরা হলে আল্লাহপাকের নির্বাচিত বান্দা। তাঁরাই আল্লাহপাকের কাছে সবচে নির্ভরযোগ্য বলেই নবুওয়াত ও রিসালাতের মুকুট তাঁদেরকেই দেওয়া হয়েছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী দাবি করেছেন, তার সকল কর্মীর মর্যাদা সাহাবায়ে কেরাম ও নবিদের চেয়েও বেশি। দেখুন তিনি কী বলেন,

দাজ্জালকে মানুষের কাছে চিনিয়ে দেওয়াই হোচ্ছে দাজ্জাল প্রতিরোধের সর্বশ্রেষ্ঠ পথ। এই কাজটিই এই লোকগুলি আপ্রাণ চেষ্টায় কোরে যাচ্ছেন। যেহেতু দাজ্জালকে চিহ্নিত করার পর সমস্ত পৃথিবীতে শুধু এই দলটিই দাজ্জালকে প্রতিরোধ কোরে যাচ্ছে, সেহেতু এরাই রসুল বর্ণিত জীবিত অবস্থায় দুই শাহাদাতের মর্তবা লাভকারী সেই দল। -দাজ্জাল? ইহুদী-খ্রিস্টান সভ্যতা : পৃ. ৯০

দাজ্জালকে প্রতিরোধকারীদের জন্য আল্লাহ যে সম্মান ও পুরস্কার নির্ধারণ কোরে রেখেছেন তা সমস্ত এসলামে আর কারও জন্য রাখেন নি; এমনকি অন্যান্য শহীদের এবং নবী রাসূলদের জন্যও নয়। কোন শহীদদের বা নবী-রাসূলদের দুই দুইটি শাহাদতের সম্মান ও পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় নি। তাও বদরের ও ওহোদের যুদ্ধের শহীদদের সমান এবং শহীদ না হয়ে ঐ সম্মান ও পুরস্কার। -দাজ্জাল? ইহুদী-খ্রিস্টান সভ্যতা : পৃ. ৮৯

দাজ্জালের প্রতিরোধকারীদের আল্লাহ বদরের এবং ওহোদের যুদ্ধের শহীদের সম্মিলিত পুরস্কার, সম্মান ও বৈশিষ্ট্য দান কোরবেন  সমস্ত এসলামে আমি কোথাও কোন কাজের, কোন সৎকার্য্যের জন্য এতবড়, এত অকল্পনীয় বিরাট পুরস্কার ও সম্মান দেখি না। এ পুরস্কার ও সম্মান সমস্ত শহীদদের জন্য পুরস্কার ও সম্মানকে বহুদূর ছাড়িয়ে গেছে। এই অকল্পনীয় সম্মান পুরস্কারের সুযোগ কোন নবী রসুল পান নি। কোন উম্মাহও পান নি।  কারণ তাদের সময় দাজ্জাল আবির্ভূত হয়নি। দাজ্জাল আবির্ভূত হোয়েছে আমাদের সময়। -দাজ্জাল? ইহুদী-খ্রিস্টান সভ্যতা : পৃ. ৮৯

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, হেযবুত তওহীদের সদস্যরা দাজ্জালের সাথে জিহাদ করছে, তাই তারা মৃত্যুবরণ না করেও দুই শহীদের মর্যাদা পাচ্ছে। আর তাদের এ সম্মান এতো বেশি যে সে পরিমান সম্মান নবি এবং সাহাবারও পান নি।

ইসলাম কী বলে?
প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদের এই আক্বীদা বা বিশ্বাসটা শিয়াদের থেকে চুরি করা। শিয়াদের মতবাদ হলো, তাদের বারো ইমামের মর্যাদা নবিদের থেকেও বেশি। দুয়েকটাা প্রমাণ পেশ করলাম।
শিয়া শায়েখ আল্লামা সাইয়েদ আলী বেহবাহানী বলেন,
أن أئمتنا سلام الله عليهم أفضل من سائر الأنبياء حتى أولي العزم منهم
আমাদের ইমামগণ, সকল নবিদের থেকে উত্তম, এমনকি তাদের থেকেও যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। -মিসবাহুল হিদায়াহ ফি ইছবাতিল ওয়ালায়াহ : পৃ. ১৩৩

শিয়াদের সবচে প্রভাবশালী শায়খ আল্লামা বাকের মাজলিসি তার লিখিত ‘বিহারুল আনওয়ার’ কিতাবে এ ব্যাপারে একটা অধ্যায় রচনা করে নাম দিয়েছেন,
باب تفضيلهم عليهم السلام علي الانبياء وعلي جميع الخلق
ইমামদের মর্যাদা নবিদের থেকে বেশি ও সকল সৃষ্টি থেকে মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া প্রসঙ্গ। -বিহারুল আনওয়ার : খ. ২৬ পৃ. ২৬৭

উক্ত অধ্যায়ে শায়খ মাজলিসি বলেন,
أئمتنا عليهم السلام أفضل من سائر الأنبياء
আমাদের ইমামগণ, সকল নবিদের থেকে উত্তম। -বিহারুল আনওয়ার খ. ২৬ পৃ. ২৯৭

বুঝা গেলো, শিয়াদের মতবাদ হলো, তাদের বারো ইমামের মর্যাদা নবিদের থেকেও বেশি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে হেযবুত তওহীদের শিয়াদের এই মতবাদকে আরো ব্যাপকতা দিয়ে তাদের সকল সদস্যদের মর্যাদা সকল সাহাবা ও নবিদের থেকেও বেশি বলে ঘোষণা দিয়েছে। অথচ ইসলামে নবিদের থেকে সম্মান কাউকে দেওয়া হয় নি। এমনকি সাহাবায়ে কেরামকেও রা. না। অথচ সাহাবায়ে কেরাম রা হলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে শ্রেষ্ট মর্যাদা সম্পন্ন। এ কথা খোদ আল্লাহ তাআলাই বলেছেন,
لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। [সুরা হাদিদ আয়াত : ১০]

সাহাবায়ে কেরামের রা. মর্যাদা ও প্রশংসা  পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ নিজেই করেছেন।
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তাঁর সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। তুমি তাদেরকে দেখবে (কখনও) রুকুতে, (কখনও) সিজদায়, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি সন্ধানে রত। তাদের আলামত তাদের চেহারায় পরিস্ফুট, সিজদার ফলে। এই হল তাদের সেই গুণাবলী, যা তাওরাতে বর্ণিত আছে। আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত এই, যেন এক শস্যক্ষেত্র, যা তার কুঁড়ি বের করল, তারপর তাকে শক্ত করল। তারপর তা পুষ্ট হল। তারপর তা নিজ কাণ্ডের উপর এভাবে সোজা দাঁড়িয়ে গেল যে, তা কৃষকদেরকে মুগ্ধ করে ফেলে। এটা এইজন্য যে, আল্লাহ তাদের (উন্নতি) দ্বারা কাফেরদের অন্তর্দাহ সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে মাগফিরাত ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। -সুরা ফাতহ, আয়াত : ২৯

হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন,
لا تسبُّوا أصحابَ محمَّدٍ صلّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فلَمُقامُ أحدِهِم ساعةً خيرٌ مِن عمَلِ أحدِكُم عُمرَهُ
তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের মন্দ বলো না, তাদের এক মুহুর্তের সৎকাজ তোমাদের সারা জীবনের সৎকাজের চেয়ে উত্তম। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৩৩

হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
أكرموا أصحابِي فإنهم خيارُكم
তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব। -সুনানে তিরমিযি, হাদিস : ২১৬৫

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
لا تسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهباً ما أدرك مد أحدهم ولا نصيفه
তোমরা আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলোনা। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বততূল্য স্বর্ণও দান করে,তবুও তাঁদের সোয়া সের যব সদাকা করার সমানও হতে পারেনা বরং এর অর্ধেকেরও বরাবর হতে পারেনা। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩৬৭৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,
إنّ اللهَ نظرَ في قُلوبِ العِبادِ، فوجدَ قلبَ مُحمَّدٍ صلّى الله عليهِ وعلى آلِهِ وسلَّمَ خيرَ قلوبِ العِبادِ، فاصطَفاهُ لنَفسِهِ، فابتعثَهُ برِسالتِهِ، ثمَّ نَظرَ في قلوبِ العبادِ بعدَ قَلبِ محمَّدٍ، فوجدَ قلوبَ أصحابِهِ خيرَ قُلوبِ العبادِ، فجعلَهُم وزراءَ نبيِّهِ، يُقاتِلونَ على دينِهِ، فلَمّا رأى المسلِمونَ حَسنًا، فَهوَ عندَ اللهِ حسنٌ، وما رأوا سيِّئًا فَهوَ عندَ اللهِ سَيِّءٌ
আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের অন্তরের দিকে তাকালেন, এবং মুহাম্মাদ সাঃ-এর হৃদয় খুঁজে পেলেন তাঁর বান্দাদের হৃদয়ের মধ্যে সর্বোত্তম। তাই তিনি তাঁকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন এবং রিসালাতের জন্য নির্বাচিত করেছেন। নবিজি সাঃ-এর অন্তর দেখার পর বাকি বান্দাদের অন্তরের দিকে তাকিয়ে সাহাবাদের অন্তরগুলো পেলেন সর্বসেরা। ফলে তাঁদেরকে তাঁর নবি (মুহাম্মাদ সাঃ-এর) সাথিসঙ্গী হিশাবে নির্বাচিত করলেন, যাঁরা তাঁর সাথে দ্বীনের জন্য জিহাদ করবে। [মুসনাদে আহমাদ : খ. ৫ পৃ. ২১১]

হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবি সাঃ বলেছেন,
واختار لي من أصحابِي أربعةً يعني أبا بكرٍ وعمرَ وعثمانَ وعليًّا رحمهم اللهُ فجعلهم أصحابِي وقال في أصحابِي كلِّهم خيرٌ واختار أمتي على الأممِ
কেবল নবী-রাসূলগণ ব্যতীত, আমার সাহাবীগণ থেকে চারজনকে আমার জন্য মনোনীত করেছেন, তারা হলেন হযরত আবু বকর, রা. হযরত ওমর রা. হযরত ওসমান রা. ও হযরত আলী রা.। তাঁরা আমার শ্রেষ্ঠ সাহাবী। তবে আমার সকল সাহাবী উত্তম। সকল উম্মত থেকে আমার উম্মতকে মনোনীত করেছেন। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ : খ. ১০ পৃ. ১৮

ইমাম আজুররী নিজ সনদে ইমাম আবু উসামা রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, তাকে একদা প্রশ্ন করা হলো,
أيهما أفضل معاوية أو عمر بن عبد العزيز فقال أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يقاس بهم أحد
হযরত মুয়াবিয়া ও উমর ইবনে আব্দুল আজির এর মধ্যে কে উত্তম? তিনি বললেন, রাসূল স. এর সাহাবীদের সাথে অন্য কারও তুলনা করা হবে না। -কিতাবুশ শরীআহ, বর্ণনা : ২০১১

উপরন্তু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রহি. কে হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো,
قد سئل عبد الله بن المبارك  أيهما أفضل معاوية بن أبي سفيان أم عمر بن عبد العزيز فقال و الله إن الغبار الذي دخل في أنف معاوية مع رسول الله صلى الله عليه وسلم أفضل من عمر بألف مرة
একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রা. কে প্রশ্নর করা হলো, কে উত্তম? হযরত মুয়াবিয়া রা. না কি উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ.? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহর শপথ, রাসূল স. এর সাথে চলার সময় হযরত মুয়াবিয়া রা. এর নাকে যেই ধুলো প্রবেশ করেছে, সেটি হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ থেকে হাজারগুণ উত্তম। -ওফায়াতুল আইয়ান, (ইবনে খল্লিকান) খ. ৩ পৃ. ৩৩

উপরিউক্ত আয়াত-হাদিস ও আসার থেকে জানতে পারলাম সাহাবায়ে কেরামের যে মর্যাদা মহান রব দান করেছেন, সে মর্যাদা থেকে বেশি হওয়া তো দূরের কথা, বরং তাঁদের মর্যাদার ধারেকাছেও যাওয়া কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ এই সাহাবায়ে কেরামের রা. থেকে মর্যাদা সম্পন্ন হলেন, নবি-রাসুলগণ। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবি সাঃ বলেছেন,
إن اللهَ اختار أصحابِي على العالمينَ سوى النبيينَ والمرسلينَ
আল্লাহ তাআলা আমার সাহাবাদেরকে মনোনিত করেছেন বিশ্ববাসীর উপর। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ : খ. ১০ পৃ. ১৮

কয়েকজন নবির নাম উল্লেখ্য করে মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطًا وَكُلاًّ فضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِينَ
এবং ইসরাঈল, ইয়াসা, ইউনূস, লূতকে প্রত্যেককেই আমি সারা বিশ্বের উপর গৌরবাম্বিত করেছি। -সুরা আনাম : ৮৬

বুঝা গেলো, ইসলামে সবচে বেশি মর্যাদা সম্পন্ন হলেন, সাহাবায়ে কেরাম রা.। আর সকল সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে বেশি মর্যাদা সম্পন্ন হলেন, নবি-রাসুলগণ। আর এ জন্যই যারা আল্লাহ ও রাসুল সাঃ-এর হুকুম মানবে তাঁদের ঠিকানা কাদের সাথে হবে তা আল্লাহপাক জানিয়েছেন,
وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَـئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاء وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـئِكَ رَفِيقًا
আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। -সুরা নিসা : ৬৯

উক্ত আয়াতে যারা আল্লাহপাক ও রাসুল সাঃ-এর হুকুম মানবে তাদেরকে যাঁদের সাথে জান্নাতে রাখা হবে, তাদের সিরিয়াল বলতে গিয়ে সর্বপ্রথম নবিদের নাম উল্লেখ্য করে বুঝানো হয়েছে, নবিগণই সবার থেকে মর্যাদাসম্পন্ন। সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলামে কোনো মানুষের মর্যাদা নবিদের মর্যাদা থেকে বেশি হওয়া তো দূরের কথা সাহাবায়ে কেরামের পায়ের ধুলোর সমানও মর্যাদা কোনো উম্মতের হতে পারে না। অথচ হেযবুত তওহীদের এই সব কাফেরদের মর্যাদা নবি এবং সাহাবাদের থেকেও বেশি! এটা কী কল্পনাও করা যায়?

হেযবুত তওহীদের সদস্যরা কাফের কেন?
হেযবতু তওহীদের সদস্যরা কাফের কেন? কী কী কারণে? পুরো কিতাবটি জুড়ে তার প্রমাণ ভরপুর। এরপরও চলুন হেযবুত তওহীদের বক্তব্য থেকেই তাদের কাফের হওয়ার বিষয়টি দেখা যাক।

হেযবুত তওহীদ পৌনে দুইশো কোটি মুসলিম সভ্যতাকে কাফের বলে বিশ্বাস করে থাকে। আর এটার কারণ হিসাবে তারা দাবি করে যে, বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের উপর বেঈমানদের চলমান নির্যাতন প্রমাণ করে মুসলিমরা কাফের। তারা লিখেছে,
এটা পরীক্ষা নয়, শাস্তি। মুমিনদের আল্লাহ শাস্তি দেন না, আজাব দেন না, গজব দেন না। মুমিনদের প্রতি তিনি সদয়, করুণাময়, ক্ষমাশীল। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ:৫৩

হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মুসলিমরা যেহেতু বিশ্বব্যাপী নির্যতনের স্বীকার হচ্ছে, সেহেতু সব মুসলমানরা কাফের, যদি তাই হয়, তাহলে দেখা যাক, হেযবুত তওহীদের উপর কোনো নির্যাতন গেছে বা যাচ্ছে কী না? বায়াজীদ খান পন্নী কর্তৃক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো চিঠি যেটা ১৮/০৫/২০০৮ ঈসায়ী তারিখে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে লেখা রয়েছে,
দেশজুড়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে নির্মম নির্যাতন ও প্রবল বাধার মুখে পড়তে হলো। ধর্মব্যবসায়ীরা বহু সদস্যের বাড়ি ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিল, বহুজনকে পূর্ব পুরুষের ভিটা থেকে উৎখাত করে দিল, বহুজন পিটিয়ে আহত করল এমনকি একজন পুরুষ একজন নারী সদস্যকে শহীদ করে ফেলল। -জঙ্গিবাদ সংকট : পৃ. ৬৪

এ পর্যন্ত মোট ১২৯২ জন কর্মীকে ও ১৫টি শিশুকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের মধ্যে ২০৭ জনকে মোট ৭৫৬ দিন ধোরে জে.আই.সি, টি.এফ.আই. ও পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। -মহাসত্যের আহ্বান (ছোট) : পৃ. ১৬

অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিস কোন কথা না শুনে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার কোরে কোর্টে চালান দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে চালান দেবার আগে অপরাধের কোনো কারণ ছাড়াই কর্মীদের অমানুষিক নির্যাতন কোরছে, ইলেকট্রিক শক দিচ্ছে। -যামানার এমামের পত্রাবলী : পৃ. ১৯

মোট ৯০ টি মামলার মধ্যে মাত্র ২’টি মামলায় হেযবুত তাওহীদের কর্মীদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। -যামানার এমামের পত্রাবলী : পৃ. ২০

আমার ও আন্দোলনের কর্মীদের বহুবার গ্রেফতার করা হোয়েছে, রিমান্ডে নিয়ে বহুবার তাদের উপর শারীরিক, মানসিক নির্য্যাতন করা হয়েছে। -যামানার এমামের পত্রাবলী : পৃ. ৩৯

সুতরাং হেযবুত তওহীদের কথা যদি সত্য হয় তাহলে চরম নির্যাতনের স্বীকার হওয়ার কারণে হেযবুত তওহীদ নিজেদের ফাতাওয়ায় নিজেরাই কাফের। সুতরাং কোনো কাফেরের ব্যাপারে জিবন্ত শহীদ, জান্নাতী, রাদিয়াল্লাহু আনহু বলা বা তাদের লাশ পচে না গলে না এমন বক্তব্য নিতান্তই হাস্যকর, গর্হিত ও সর্বৈব মিথ্যাচার।

জনৈক সদস্য আল্লাহকে সরাসরি দেখেছে:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ তাদের এ ভ্রান্ত ও কুফরী মতবাদকে সঠিক হিসাবে জাতির সামনে পেশ করার জন্য এমন কোনো মিথ্যা নেই যা অবলম্বন করেনি। এমনকি তারা আল্লাহ তা’আলার শানেও মিথ্যাচার করেছে। তাদের দাবি হলো, তাদের জনৈক সদস্য আল্লাহকে দেখেছে এবং পন্নী সাহেবের মিথ্যা মো’জেজার সত্যায়ন করার ব্যার্থ চেষ্টা করেছে। এর একটি বাস্তব নমুনা নিন্মে পেশ করছি। তাদের হুবহু লেখাটা তুলে ধরছি,

‘[ঢাকার শ্যামপুর শাখার মুজাহের মো: হাবিবুর রহমানের প্রতি আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ কোরেছেন, যার ফলে তিনি ২ তারিখের মো’জেজা কিভাবে সংঘটিত হলো তা দেখতে পেরেছেন। হাবিবুর রহমানের নিজের ভাষায় শুনুন  তারর অসাধারণ অভিজ্ঞতার বিবরণ।] আমি ১৬/০৪/২০০৮ ঈসায়ী ফজরের সালাহ কায়েম কোরি।সালাহ শেষে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কোরি। আমি অন্যান্য বিষয়ের সাথে এও চাই যে, “হে আল্লাহ তুমি আমাকে মো’জেজা বুঝিয়ে দাও।” উপলব্ধি করার শক্তি দাও। আমার তো তোমার মো’জেজা বোঝার সেই জ্ঞান নেই, তাই তুমিই আমাকে বুঝিয়ে দাও।” এই বোলে আমি মোনাজাত শেষ কোরি এবং মুসল্লায় বসা অবস্থায় চোখ বন্ধ কোরে মো’জেজা নিয়ে চিন্তা কোরতে থাকি। এমতাবস্থায় আমার অন্তরে সেই মো’জেজার স্থানের দৃশ্যটি সসম্পূর্ণ ভেসে উঠলো। আমি দেখলাম ছাদের পূর্ব উত্তর কোণে, যেখান থেকে ছাদটি সম্পূর্ণ দেখা যায় সেখানে, কিছুটা উপরে একটি ছায়ার মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। আমি বুঝলাম- সেটি স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামীন, আমি আল্লাহকে দেখছি। দেখলাম স্বয়ং আল্লাহ তার হাত উঠিয়ে আঙ্গুল খাঁড়া কোরে সরাসরি হুকুম কোরছেন যে, “এই বাতাস বন্ধ হও! এই শব্দ বন্দ হও!”এভাবে আল্লাহ একটা একটা কোরে আদেশ দিয়ে সেগুলো বন্ধ কোরে দিচ্ছেন। এরকম দেখার পর হঠাৎ আমি চৈতন্য ফিরে পাই। এরপর আমার ভিতর প্রচন্ড অস্থিরতার সৃষ্টি হয় এবং আমি বাসা থেকে বের হোয়ে পড়ি এবং আমার আমীরের বাসায় গিয়ে তার কাছে ঘটনাটি খুলে বোলি। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৮৪

এই ছিলো তাদের মিথ্যাচারের জলন্ত নমুনা।

ইসলাম কী বলে?
নবি মুসা আ. আল্লাহ তাআলাকে দেখতে চেয়েও পারেন নি। মহান আল্লাহ সে ঘটনাটি পবিত্র কুরআনে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَمَّا جَاء مُوسَى لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَانِي وَلَـكِنِ انظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي فَلَمَّا تَجَلَّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ موسَى صَعِقًا فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ
তারপর মূসা যখন আমার প্রতিশ্রুত সময় অনুযায়ী এসে হাযির হলেন এবং তাঁর সাথে তার পরওয়ারদেগার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রভু, তোমার দীদার (দেখা) আমাকে দাও, যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কস্মিনকালেও দেখতে পাবে না, তবে তুমি পাহাড়ের দিকে দেখতে থাক, সেটি যদি স্বস্থানে দঁড়িয়ে থাকে তবে তুমিও আমাকে দেখতে পাবে। তারপর যখন তার পরওয়ারদেগার পাহাড়ের উপর আপন জ্যোতির বিকিরণ ঘটালেন, সেটিকে বিধ্বস্ত করে দিলেন এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। অতঃপর যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে এল; বললেন, হে প্রভু! তোমার সত্তা পবিত্র, তোমার দরবারে আমি তওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপন করছি। -সুরা আ’রাফ : ১৪৩

উক্ত আয়াতটি থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, এই দুনিয়ায় আল্লাহ তা’আলাকে দেখতে পাওয়ার দাবি করা সুস্পষ্টভাবে কুরআন মাজীদ বিরোধী। সুতরাং আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ প্রদানকারীদের ওপর আল্লাহর লা’নত।

পর্ব: পন্নী।
হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে তাদের হাস্যকর দাবিগুলো জানার পর চলুন এবার দেখা যাক তাদের বিড়িখোর, রাজাকার, মুরতাদ পন্নীর ব্যাপারে কি বলা হয়েছে তা একটু দেখে নেওয়া যাক।
১. পন্নী আল্লাহ’র সত্যায়িত এমাম।
২. পন্নী বিশ্বের এমাম।
৩. পন্নীকে না মানলে মুক্তি নেই।
৪. পন্নীর সান্নিধ্যে জান্নাতের শান্তি মিলতো।
৫. পন্নীর শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা।
৬. পন্নী জিবনে একবারো মিথ্যা বলে নি।
৭. পন্নীর ভূয়া কারামতের দাবি।
৮. পন্নীর জন্য নবিদের থেকেও দুআ করা দরকার।
৯. মানবরচিত আইন পালনে পন্নী ও হেযবুতের অনুসরণ।
১০. বাংলাদেশের আইন মানা দ্বীনের অংশ।
১১. পন্নী হাদিয়া নিতো না।
১২. এনায়াতুল্লাহ মাশরেকী, মওদুদী ও পন্নী।
১৩. বায়াজীদ খান পন্নী রাজাকার ছিলো।

পন্নী কী আল্লাহ’র সত্যায়িত এমাম?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
পন্নী সাহেব দাবি করেছেন, আল্লাহ তা’আলা নাকি তাকে বলেছেন, তিনি জাতির এমাম এবং হক! তিনি লিখেছেন,
২ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে মহান আল্লাহ এক মহান মোজেজা অর্থাৎ অলৌকিক ঘটনা সংগঠন করেন যার দ্বারা তিনি তিনটি বিষয় সত্যায়ন করেন। যথা: হেযবুত তওহীদ হক এর এমাম আল্লাহর মনোনীত হক এমাম, হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে সারা পৃথিবী আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ’। -সবার উর্ধ্বে মানবতা-২৩, আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ২৪

মুসলিম দাবিদার বিশ্ব যখন ইহুদী-খ্রিস্টানদের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, ঠিক সেই মুহূর্তে আল্লাহ এই জাতির উপর সদয় হলেন, তিনি পৃথিবীতে পাঠালেন তাঁর মনোনীত একজন মহামানব যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ৮৫

অর্থাৎ পন্নী সাহেব ও তার অনুসারীদের দাবি হলো, তিনি আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত সত্য এমাম।

ইসলাম কী বলে?
একজন বিড়িখোর এমন দাবি করতেই পারেন। কারণ ব্যক্তি জিবনে তিনি অনেক পেশা ও নেশায় যুক্ত হয়েও কোনো কিছুতে সফলতা পাননি। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১২৬  অতঃপর সব কিছু থেকে ব্যর্থ হয়ে জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ধর্মব্যবসায়ী এমাম বনে গেলেন। তবে তিনি তার এ ধর্মব্যবসার কাজে সবচে বেশি ব্যাবহার করেছেন ‘আল্লাহ’কে। কথায় কথায় তিনি দাবি করতেন, আল্লাহ আমাকে এটা বলেছেন, এটা জানিয়েছেন, ওটা করবেন বলে আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন। ইত্যাদী। নাউযুবিল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা কবে, কখন, কোথায় বলেছেন এমন কথা? এর কোনো সূত্র আছে কী তার কাছে? নিশ্চয় না। তাহলে তিনি এসব উদ্ভট কথা পেলেন কোথায়? ওহী ছাড়া এমন দাবি কেউ করতে পারে কী? মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহ কাউকে সরাসরি বা কোনো ফিরিস্তার মাধ্যমে কিছু বললে সেটাকে ওহী বলা হয়। অথচ রাসুলুল্লাহ সা. ১৪০০ বছর আগেই জানিয়ে গেছেন যে, ওহী আর আসবে না। নবিজি সাঃ বলেন,
وَإِنَّ الْوَحْىَ قَدِ انْقَطَعَ
নিশ্চয় ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ২৬৪১

সুতরাং যেহেতু ওহীর রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, সেহেতু আল্লাহ পাক পন্নী সাহেবকে সত্য ও মনোনীত এমাম বলে  জানিয়েছেন, এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা। আর মিথ্যা অপবাদটা দেওয়া হয়েছে আল্লাহ তাআলার ওপর। এমন মিথ্যুকদের ব্যাপারেই আল্লাহপাক বলেছেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوْحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ
ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা বলে, আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার প্রতি কোন ওহী আসেনি। -সুরা আনআম : ৯৩

সুতরাং প্রমাণ হলো, পন্নী সাহেবের উপর কোনো ওহী আসে নি, সুতরাং তিনি এমাম নন। উপরন্তু নবিজি সাঃ-এর ইন্তেকালের ১৩/১৪ শ’ বছর পর কোনো ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত হবেন এমন কোনো ভবিষ্যতবানী আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সা. করে যাননি। যাঁদের ব্যাপারে ভবিষ্যতবানী করা হয়েছে, তিনি হলেন, হযরত ইমাম মাহদী আ. ও ঈসা আ.। কিন্তু এই লোকটা হঠাৎ করেই এক উদ্ভট দাবি করে বসলেন, আর আমরা বোকার মত তার পেছনে দৌঁড়াচ্ছি! এটার যৌক্তিকতা কী?

পন্নী কী বিশ্বের এমাম?

পন্নী সাহেব কী বলেন?
বায়াজীদ খান পন্নী নামক সময়ের এক প্রশিদ্ধ রাজাকার ও বিড়িখোর হিসেবে জনসমাজে পরিচিত, বন্য পশুশিকারী ও হোমিও ডাক্তার খ্যাত এ ব্যক্তি নিজেকে এমামুযযামান বা যামানার এমাম বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে দিনরাত মেহনত করে গেছেন এবং তার অনুসারীরা তাকে যামানার এমাম হিসাবেই মান্য করাকে ঈমানের অংশ মনে করে থাকেন। চলুন আগে তাদের দাবিগুলো দেখে নেওয়া যাক-

পন্নী কেবল মোসলিম উম্মাহর এমাম নন, তিনি বিশ্ববাসীর এমাম। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৩৯

এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ মানব জাতির মধ্য থেকে মাননীয় এমামুযযামানকে এ যুগের নেতা হিসেবে মনোনীত করেছেন। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৫

মানবজাতির জন্য মহাসংবাদ এই যে, সেই প্রকৃত নেতা যার জন্য একটি জাতিকে হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয় সেই যোগ্য নেতৃত্বের সন্ধান আমরা লাভ কোরেছি। তিনি হলেন এই যামানার এমাম, হেযবুত তওহীদের এমাম, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। – এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৩৮

অর্থাৎ তারা বলতে চায়, বায়াজীদ খান পন্নী বিশ্বের এমাম।

ইসলাম কী বলে?
আল্লাহর দ্বীন পরিপূর্ণ। এই দ্বীনের জন্য নতুনভাবে কাউকে প্রেরণ করার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র আখেরী যামানায় ঈসা আ. ও ইমাম মাহদী আ. আসবেন দাজ্জালের ফিৎনার পরিসমাপ্তি ঘটাবার জন্য। তাছাড়া এই দ্বীনের হিফাযতের জন্য কোনো মহামানব আল্লাহ তা’আলা যদি পাঠাতেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর নবী সা. কে দিয়ে ভবিষ্যতবানী করাতেন। কিন্তু এমন কোনো আয়াত বা হাদিস নেই যেখানে কোনো বিড়িখোর মুর্খকে এমাম হিসাবে প্রেরণ করার ভবিষ্যতবানী করা হয়েছে। আখেরী যামানার বিশ্ববাসীর এমাম একমাত্র ইমাম মাহদী আ.। যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নবিজি সাঃ বলেন,
كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ
সেদিন কেমন হবে তোমাদের অবস্থা যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারইয়াম নেমে আসবেন এবং তোমাদের মধ্যে হতেই একজন ইমাম হবেন’। (অর্থাৎ তোমাদের সাথে জামা’তে শরীক হয়ে ঈসা আ. তোমাদের ইমামের পিছনে নামায আদায় করবেন।) -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩৪৪৯

অর্থাৎ ঈসা আ. এর সময় একজন ইমাম আল্লাহ পাক পাঠাবেন। যিনি পুরো বিশ্বের এমাম হবেন। তিনি হলেন হযরত ইমাম মাহদী আ.। তাঁর সম্পর্কে নিন্মোক্ত হাদিসটি দেখুন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন,
الْمَهْدِيُّ مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الْأَنْفِ يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا، يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ
আমার বংশ থেকে মাহদীর আবির্ভাব হবে, সে হবে প্রশস্ত ললাট ও উন্নত নাকবিশিষ্ট। তখনকার দুনিয়া যেরূপে যুলুমে ভরে যাবে, সে তার বিপরীতে তা ইনসাফে ভরে দিবে, আর সে সাত বছর রাজত্ব করবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৫

সুতরাং বুঝা গেলো, যামানার ইমাম হলেন হযরত ইমাম মাহদী আ.। কিন্তু পন্নী সাহেব যে নিজেকে যামানার এমাম দাবি করলেন, তার মানে কী তিনি নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করে বসলেন না? তিনি নিজেকে ইমাম মাহদী আ. এর কাজ কর্ম নিজের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করে সেটারই প্রমাণ করতে চেয়েছেন বলে বুঝা যায়। যেমন উপরোক্ত হাদিসটি থেকে জানা গেলো, ইমাম মাহদী আ. এর মাধ্যমে সকল অন্যায় দূরিভূত হবে। ঠিক একই দাবি পন্নী সাহেব নিজের মতবাদ নিয়ে দাবি করে বসেছেন। তিনি লেখেন-
কুরুক্ষেত্রের ধ্বংসযজ্ঞের পর যেমন নতুন শান্তিময় যুগের সূচনা হয়েছিল, নূহের বন্যার পর যেমন নতুন সভ্যতার সূচনা হয়েছিল, তেমনি এবার আল্লাহ নতুন বিশ্বব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য হিজবুত তাওহীদকে সৃষ্টি করেছেন। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৩৯

দাজ্জালের হাত থেকে পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব ছিনিয়ে নিয়ে আল্লাহর হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই সংগ্রাম করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। -ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ২০

সুতরাং বুঝা গেলো, ইনিয়ে বিনিয়ে তিনি নিজেকে ইমাম মাহদী বলেই দাবি করতে চেষ্টা করে গেছেন। এই পন্নী সাহেব ছিলেন একজন পাক্কা রাজাকার। যাকে ৭১ সালে মুক্তিবাহিনী লুটপাট, ধর্ষণ ইত্যাদীর অপরাধে দড়ি দিয়ে বেঁধে পিটিয়েছিলো, খালি পায়ে ১২ মাইল পর্যন্ত হাটতে বাধ্য করেছিলো। ভক্তদের নিয়ে আলোচনার আসনে বসে নিয়মিত বিড়ি পান করতেন। ইসলামী লেবাস-পোষাক মুক্ত ও ওয়াজীব দাঁড়িহীন এ লোকটি জাতির এমাম হয়ে গেলেন? মূলত নবী দাবীদার মালউন মির্জা কাদিয়ানী নিজেকে সর্বপ্রথমে এমামুযযামার দাবি করেছিলো। মির্জা কাদিয়ানী দাবি করেছিলেন,
امام الزمان میں ہوں
এমামুযযামান মূলত আমিই। -রুহানী খাযায়েন খ. ১৩ পৃ. ৪৯৫

ঠিক মির্জা কাদিয়ানীর সূত্র ধরে সময়ের মিথ্যুক বায়াজীদ খান পন্নীও নিজেকে ‘এমামুযযামান’ বলে দাবি করে বসেন। সচেতন মহলের উচিৎ সত্য-মিথ্যা যাচাই করে পথ চলা। পন্নী সাহেবকে এমাম মনে করা, আর শয়তানকে গুরু মানা একই কথা। আল্লাহ পাক এমন ধোকাবাজ, প্রতারক ইমাম থেকে মুসলিম মিল্লাহকে হিফাযত করেন।

পন্নীকে না মানলে কী মুক্তি নেই?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, এখনকার সময়ের জন্য বায়াজীদ খান পন্নী সাহেবই আল্লাহর মনোনীত এমাম।কাজেই এই সময়ে যারা মুমিন ও মুসলিম হতে চায় এবং আল্লাহর সঠিক দিক নির্দেশনা ও হেদায়াহ লাভ করতে চায় তাদের বায়াজীদ খান পন্নীর আনুগত্য ছাড়া মুক্তি নেই। তাদের কয়েকটি দাবি:

পন্নীকে মুক্তির পথ বুঝিয়ে দিয়েছেন:
এমনই সঙ্কটকালে আল্লাহ করুনা কোরে এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে এর থেকে মুক্তির উপায় বুঝিয়ে দিয়েছে অর্থাৎ সমাধান পাওয়া গেছে। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৫৩

মানবজাতির বাঁচার উপায় কি সেটা আল্লাহ দয়াকরে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী কে বুঝিয়ে দিয়েছেন। -আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই, পৃ. ১৮

পন্নীকে না মানলে সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করবে:
যে ব্যক্তি তার যামানার এমামের বায়াত না নিয়ে মারা গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব পৃ. ৩৮

মুক্তির একমাত্র পথ পন্নীকে মানা:
এখন মানব জাতির সামনে একটি মাত্র পথ খোলা আছে তাহলো এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর এই ডাক গ্রহণ করে বর্তমানের প্রচলিত বিকৃত ও বিপরীতমুখী ইসলাম ত্যাগ করে প্রকৃত ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১৫

পন্নী সাহেবকে না মানলে মুক্তি নেই:
এখনই জাতির সামনে একটি মাত্র পথ খোলা আছে, তা হোল এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর এই ডাক গ্রহণ কোরে বর্তমানের প্রচলিত বিকৃত ও বিপরীতমুখী এসলাম ত্যাগ কোরে প্রকৃত এসলাম গ্রহণ কোরতে হবে। -মহাসত্যের আহ্বান, (ছোট) পৃ. ৮

মুমিন হতে হলে পন্নীকে মানতে হবে:
এখনকার সময়ের জন্য তিনিই আল্লাহর মনোনীত এমাম। কাজেই এই সময়ে যারা মো’মেন মুসলিম হতে চায়, আল্লাহর সঠিক দিক নির্দেশনা, হেদায়াহ লাভ করতে চায় তাদের এমামুযযামানের আনুগত্য করা ছাড়া মুক্তি নেই। -হেযবুত তাওহীদের ওয়েবসাইটে মাননীয় এমামুযযামান বিষয়ের অধিনে রচিত ‘যামানার এমাম শব্দের অর্থ কী’ প্রবন্ধের শেষ প্যারা।

ইসলাম কী বলে?
প্রিয় পাঠক, আগের পর্বের আলোচনা থেকে প্রমাণ হয়েছিলো যে, পন্নী ‘যামানার এমাম’ এটা তার পরিস্কার মিথ্যা দাবি। সুতরাং তিনি কোনো এমাম নন এটা প্রমাণিত। অথচ সেই মিথ্যুক তথাকথিত এমাম পন্নী সাহেব দাবী করেছেন,  ‘তাকে না মানলে মুমিন হওয়া যায় না এবং তার মুক্তি নেই।’ এটা ছিলো বায়াজীদ খান পন্নীর আরও চমৎকার মিথ্যাচার। যে লোকটা আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দিতে পারে, সে তো এমন মিথ্যাচার করতেই পারে। যে লোকটা এমামই নন, তাকে মানার প্রশ্নেই আসে না।

জাতি কী পন্নীকে মানতে বাধ্য?
মূলত পন্নী সাহেব যে দাবি করেছিলেন যে, তাকে ছাড়া আরও কিছুই মানা যাবে না, ঠিক একই দাবি মির্জা কাদিয়ানী করেছিলেন। মির্জা কাদিয়ানী বলেছিলো,
میرے بغیر سب تاریکی ہے
আমি ব্যতিত সব পরিত্যক্ত। -কিশতিয়ে নুহ, পৃ. ৫৭, রুহানী খাযায়েন, খ. ১৯ পৃ. ৬১

সুতরাং বুঝা গেলো, এই ক্ষেত্রে মির্জা কাদিয়ানী ও বায়াজীদ খান পন্নী ভাই ভাই, তাদের কোনো বিভেদ নেই। মূলত এই পন্নী নিজেকে এমাম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে মহান রবের উপর মিথ্যা অভিযোগ করেছে, এবং অসংখ্য কুফরী মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করে গেছে। যা এ কিতাবের প্রতিটি পাতায় পাতায় পাবেন। সেই কাফেরকে মানা কোনো মুসলমানের জন্য জায়েযই হতে পারে না। রাসুলুল্লাহ সাঃ মুসলিম শাসকদের ব্যাপারেও বলেন,
اسمعوا وأطيعوا إلا أن تروا كفراً بواحاً عندكم عليه من الله برهان
তোমরা শাসকের কথা শ্রবণ করবে ও তার অনুগত থাকবে। কিন্তু যদি স্পষ্ট কুফরী দেখ, তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে আলাদা কথা। -সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৭০৫৬

বুঝা গেলো, সুস্পষ্ট কুফরী যার ভেতরে বিদ্যমান তাকে মানা ইসলামের পরিস্কার নিষেধ। সুতরাং প্রকাশ্য কুফরীতে লিপ্ত পন্নী সাহেবকে মানলে মুমিন হওয়া তো প্রশ্নেই আসে না, বরং তাকে মানলে নিশ্চিত কাফের হতে হবে। উপরন্তু এই মিথ্যুক পন্নী সাহেব আরও দাবি করেছেন,
নেতার আদেশ যদি ভুল মনে হয় তবুও তা দ্বিধাহীনভাবে পালন করবে। আদেশ ভুল হলে নেতা সেজন্য দায়ী থাকবে, পালনকারী নয়। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৫৪

নাউযুবিল্লাহ। অথচ কারও ভুলের ক্ষেত্রে অনুসরণ করার ব্যাপারে হাদিস শরীফে নবিজি সাঃ বলেন,
لاَ طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةٍ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ
আল্লাহর নাফরমানীর কাজে কারও কোনরূপ আনুগত্য করা যাবে না। আনুগত্য করতে হয় কেবলমাত্র ন্যায়সঙ্গত কাজে। -সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৭২৫৭ ,

সুতরাং কুরআন -হাদীস ও ইসলামের মৌলিক আক্বীদার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী বায়েজিদ খান পন্নীর আনুগত্য করার কোনো সুযোগ নেই, বরং তার অনুসরণ করলে মু’মিন নয় বরং ঈমান হারানো ছাড়া উপায় নেই।

উপরন্তু খোদদ বায়াজীদ খান পন্নী নিজের মতবাদ গ্রহণ না করলে তার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি লিখেছে,
আমার অক্ষম কলম দিয়ে যা লিখেছি তা আমার কথা নয় আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা বলেছেন তাই বোলেছি এবং কোথায় বলছেন তা উদ্ধৃতি দিয়েছি। মাত্র একটি কি দু’টি বিষয় আমি আমার নিজের অভিমত পেশ করেছি এবং অভিমত গ্রহণ করতে কাউকে জোর করছি না। ঐ গুলি সম্বন্ধে কেউ আমার সঙ্গে একমত না হলে আমার কোন আপত্তি নেই। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৩২

সুতরাং পন্নী সাহেবের মতবাদ না মানলে তার পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি করা হয়নি। যদি তার মতবাদ না মানলে তার মুক্তি না হওয়ার আশঙ্কা থাকতো, তাহলে তিনি আপত্তি নেই বললেন কেন? বুঝা গেলো, তিনি নিজেই জানতেন, তার মতবাদ পুরোটাই তার মনগড়া।

পন্নীর সান্নিধ্যে জান্নাতের শান্তি মিলতো?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
পন্নী সাহেবের উত্তরসূরীরা দাবি করে বলে থাকেন যে,
আমাদের এমাম ছিলেন এমন এক পরশপাথর যার সংস্পর্শ মানুষকে জান্নাতের শান্তি দিত। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৪১

জবাব:
অথচ আমরা জানি, পন্নী তার ভক্তদের সামনে নিয়মিত বিড়ি সেবন করতেন। প্রশ্ন হলো, বিড়ির ধোয়া আর জান্নাতের ঘ্রাণ কী একই? কী হাস্যকর!

পন্নী কী সাহাবাদের মতো?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তার (পন্নীর) এই অসীম সাহসিকতা ও দৃঢ়তা কেবলমাত্র প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী সাথেই তুলনীয়। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৪৩

অর্থাৎ তারা বলতে চায়, বায়াজীদ খান পন্নীর সাহসীকতা ও ঈমানী দৃঢ়তার তুলনা একমাত্র সাহাবাদের রা. সাথেই চলে।

জবাব:
হেযবুত তওহীদের কাছে সাহাবাদের রা. কাজই নাকি ছিলো শুধুমিত্র স্বশস্ত্র সংগ্রাম। তারা লিখেছে,
আল্লাহ-রাসুলের সাহাবারা ছিলেন ভয়ঙ্কর দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৭৮

এ জাতির (সাহাবায়ে কেরাম) মধ্যে কোনো পুরোহিত শ্রেণী ছিল না, সবাই ছিলেন যোদ্ধা। যিনি যতবড় মো’মেন তিনি ছিলেন ততবড় যোদ্ধা। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ২৬

প্রতিটি সাহাবা তাদের পার্থিব সবকিছু কোরবান করে স্ত্রী-পুত্রকে আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়ে বছরের পর বছর আরব থেকে বহুদূরে অজানা-অচেনা দেশের সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৪৮

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, সাহাবায়ে কেরাম রা. সবাই ছিলেন যোদ্ধা। অথচ পন্নী সাহেব জিবনে ইসলামের জন্য অস্ত্র ধরেছেন এমন কোনো ইতিহাস তারা বর্ণনা করে নি। অথচ সেই পন্নীকে সাহাবাদের রা. সাথে তুলনা করে বাঘের সাথে বিড়ালের তুলনা নয় তো?

পন্নীর শিক্ষাই কী প্রকৃত শিক্ষা?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা লিখেছে, ‘মহামান্য এমামুযযামান কে মহান আল্লাহ উভয় জ্ঞানই (অর্জিত ও অর্পিত জ্ঞান) দান করেছেন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৪৩

পন্নীর শিক্ষায় যদি এই জাতি নিজেদেরকে শিক্ষিত করে তোলে, তার দেখানো পথে যদি এ জাতি চলে তবে এই জাতির উত্থানকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮৮

জবাব:
পন্নী সাহেব নিজেই দাবি করেছেন যে, তিনি ছিলের মূর্খ। দেখুন তিনি কী লিখেছে,
আমি বাংলা জানি,যেটুকু জানা দরকার মানুষের,ইংলিশ জানি, যতটুকু মানুষের জানা দরকার,আমি আরবী জানি না,আরবীতে আমি নিরক্ষর। ঠিক আক্ষরিকভাবে নয়,কিন্তু আমি আরবী জানি না। আর যে এসলাম নিয়ে কথা সেই এসলাম রোয়েছে কোর’আন-হাদীসে আর সেটার ভাষা আরবী।ওখানে আমি বাস্তবিক অর্থে নিরক্ষর।’ -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৫৫

বুঝা গেলো, তিনি ইসলামী শিক্ষায় নিরক্ষর ছিলেন। তার শিক্ষাজীবন নিয়ে খোদ হেযবুত তওহীদই লিখেছে,
(পন্নী সাহেবের শিক্ষাজীবন শুরু হয় রোকাইয়া উচ্চ মাদ্রাসায় যার নামকরণ হয়েছিল করটিয়ার সা’দাত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর স্ত্রী অর্থাৎ এমামুযযামানের দাদীর নামে। দুই বছর মাদ্রাসায় পড়ার পর তিনি ভর্তি হন এইচ. এন. ইনস্টিটিউশনে। এই স্কুল থেকে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৪২ সনে মেট্রিকুলেশন (বর্তমানে এস,এস,সি) পাস করেন। এরপর সা’দাত কলেজে কিছুদিন অতিবাহিত করে ভর্তি হন বগুড়া আজিজুল হক কলেজে। সেখানে প্রথম বর্ষ শেষ করে দ্বিতীয় বর্ষে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন যা বর্তমানে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কলেজ নামে পরিচিত। সেখান থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক সমাপ্ত করেন। এরপর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১২৫

সুতরাং বুঝা গেলো, তিনি জেনারেল শিক্ষিত মানুষ ছিলেন। ইসলামী জ্ঞানে তার কোনো অবদানই ছিলো না। সেই পন্নী সাহেবের শিক্ষা গ্রহণ করা এই মূর্খ জাতিই নাকি একদিন বিশ্বের শিক্ষকের আসনে বসবে। তারা লিখেছেন,
সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন সমস্ত দুনিয়ার শিক্ষকের আসনে বসবে এই জাতি ( হেযবুত তওহীদ) এবং সমস্ত দুনিয়াকে মুক্তির পথ দেখাবে উপেক্ষিত এই জাতি (হেযবুত তওহীদ)। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৫৯

কী হাস্যকর!

পন্নী জিবনে কী একবারো মিথ্যা বলে নি?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা লিখেছে, ‘আধ্যাত্মিক ও মানবিক চরিতে বলিয়ান এ মহামানব সারাজীবনে একটিও মিথ্যা শব্দ উচ্চারণ করেন নাই। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১২৭

পন্নী সাহেব ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক। তিনি তাঁর সমগ্র জীবন সত্য সন্ধানে এবং সত্যের জন্য লড়াই করে গেছেন। তার ৮৬ বছরের জীবনে একবারের জন্য আইন ভঙ্গের কোনো রেকর্ড নেই, নৈতিক স্খলনের কোনো নজির নেই। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ৯০

জবাব:
গত কয়েক শতাব্দীতে যারা স্বীকৃত ও জঘন্য মিথ্যুক হিসাবে পরিচিত ছিলেন তার মধ্যে বায়াজীদ খান পন্নী সাহেব অন্যতম। পন্নী সাহেব আল্লাহ তা’আলার নামে যেসব মিথ্যাচার করেছেন, তা শয়তানকেও হার মানিয়েছে। নিন্মে তার কয়েকটি মিথ্যার প্রমাণ পেশ করছি
এক. তারা লিখেছে, ‘কালপরিক্রমায় আল্লাহ পন্নীকে দিয়ে হেযবুত তওহীদ আন্দোলন গঠন করালেন’। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৬১

অর্থাৎ পন্নী সাহেবের দাবি হলো, হেযবুত তওহীদকে আল্লাহ তাআলা নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন। অথচ তিনি অন্যত্র দাবি করেন আল্লাহ নয়, তিনিই হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি লিখেছেন,
১৯৯৫ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে যারা আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন তাদের নিয়ে হিজবুত তাওহীদ নামে একটি আন্দোলন আরম্ভ করি। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৯

প্রশ্ন হলো, কোনটা সত্য? প্রথমটা না দ্বিতীয়টা? যদি প্রথমটি সত্য হয়, তাহলে দ্বিতীয়টা মিথ্যা। ফলাফল পন্নী সাহেব মিথ্যুক।

দুই. পন্নী সাহেব দাবি করে লিখেছেন, ‘আল্লাহ নিজে তার মাধ্যমে মু’জিযা সংগঠণ করেছেন। পন্নীর বক্তব্য হলো,
আল্লাহ নিজে ২৪ মহররম ১৪২৯ হেজরী মোতাবেক ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে এমামুযযামানের একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণের সময় একই সাথে ন্যূনতম  ৮টি মো’জেজা সংগঠিত করেন। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ২৪

কিন্তু অন্যত্র আবার লিখেছে,
এই ব্যাপারটা আমার কাছে একটি সাধারণ ঘটনা ছাড়া অন্য কিছুই মনে হয়নি। ওদের অনুরোধ যা আমার মনে এসেছিল কয়েকটি কথা বলে দিলাম ব্যস। এর মধ্যে কোন অসাধারণত্ব কোন বৈচিত্র বা কোন কিছু আমার মনে হয় নি, অতি সাধারণ একটি ঘটনা। অন্য কোন অনুভূতিও আমি অনুভব করিনি। -আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৮৮

অর্থাৎ তিনি প্রথমত দাবি করেন, আল্লাহ পাক তার মাধ্যমে মু’জেজা সংগঠণ করেছেন। আবার পরে দাবি করলেন, এখানে অলৌকিক কিছু ছিলো না। প্রশ্ন হলো, পন্নী সাহেবের কোন কথাটা সত্য? আগেরটা না পরেররটা? একটা সত্য হলে, অপরটা মিথ্যা। বেলা শেষে তিনি মিথ্যুক।

তিন. বায়াজীদ খান পন্নী বলেছে,
হিজবুত তাওহীদের বিরুদ্ধে জঙ্গী সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৪১

অথচ জঙ্গিবাদের উস্কানীদাতা হিসাবে পন্নী সাহেবের প্রথম বই  ‘এ এসলাম এসলামই নয়’ বইটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষিদ্ধ করা হয়। -মহাসত্যের আহ্বান, (ছোট) পৃ. ২৩

চার. বায়াজীদ খান পন্নী সাহেবের দাবি হলো,
হেজবুত তাওহীদ প্রকাশ্যভাবে চায় আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা (দীন) পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠিত হোক। -যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৫১

অথচ হেযবুত তওহীদের দাবি কী সেটা এভাবে লেখা হয়েছে, ‘আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। আমাদের কথা হচ্ছে যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে’। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৫

মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। -সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১০

অর্থাৎ পন্নী সাহেবের দাবি হলো, হেযবুত তওহীদ ইসলাম চায়, অথচ হেযবুত তওহীদ দাবি করছে, নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তাহলে পন্নী সাহেব কী সত্যবাদী না চরম মিথ্যুক? প্রশ্ন হলো, এত বড় বড় মিথ্যাচার করার পরও পন্নী সাহেবকে সত্যের মূর্ত প্রতীক বলা যায় কীভাবে? যাহোক, এমনিভাবে যদি তার মিথ্যার ফিরিস্তি তুলে ধরতে যাই, তাহলে কিতাবটি অনেক দীর্ঘ হবে। যে লোকটা আল্লাহ পাকের নামে এমন এমন জঘন্য মিথ্যাচার করতে পারে, সে যদি সত্যের মূর্তপ্রতিক হয়, তাহলে সত্য সেখানে লজ্জিত।

পন্নীর ভুয়া কারামতের দাবি:
পন্নী সাহেবকে আল্লাহ প্রিয় বান্দা হিসাবে প্রমাণ করার জন্য হেযবুত তওহীদের লোকেরা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। তারা পন্নী সাহেবের একটা কারামাত(?) পেশ করে লিখেছেন,
তাঁর (পন্নী সাহেবের) চারপাশে তখন বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ হচ্ছে। অনেকের গায়েই গুলি লাগলো, কিন্তু আল্লাহর রহমতে এমামুযযামানের গায়ে কোন গুলির আঁচড়ও লাগল না। তিনি সেদিন উপলব্ধি করেন যে আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখলেন নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। -প্রিয় দেশবাসী পৃ:১২৪

অর্ধাৎ তারা বুঝাতে চায় যে, পন্নী সাহেবের গায়ে গুলি না লাগাটাই তার বুযুর্গীর প্রমাণ। অথচ এমন অসংখ্য ঘটনা অন্য কাফের-মুশরিকদের ব্যাপারেও পাওয়া যাবে। তাই বলে তাদেরকেও কী ওলী বলা যাবে?

পন্নীর জন্য কী নবিদের থেকেও দুআ করা দরকার?

হেযবুত তওহীদ পন্নী সাহেবকে মাথায় উঠাতে উঠাতে নবীজির সা. থেকেও গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। তারা লিখেছেন,
রসুলুল্লাহর জন্য আসহাবরা দোয়া কোরেছেন, কেয়ামত পর্য্যন্ত তাঁর উম্মার সকল সদস্য দোয়া কোরবেন, আমাদের এমামের জন্য আরও বেশী দোয়া করা দরকার। কারণ কোন নবীর সামনে দাজ্জাল ছিলো না; মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শত্রু দাজ্জালকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের এমাম দাঁড়িয়েছেন। সুতরাং দৃঢ়তার জন্য দোয়া তাঁর সবচাইতে বেশি দরকার। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৮৩

জবাব:
আমি ‘দাজ্জাল’ পর্বে প্রমাণ করেছি যে, পৃথিবীতে এখনও দাজ্জাল আসেনি এবং পন্নী সাহেব দাজ্জাল হিসাবে যাকে চিহ্নিত করেছে, তা নিতান্তই মনগড়া ও অপব্যখ্যা। সুতরাং যেহেতু পন্নী সাহেব দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি, সেহেতু তার জন্য দু’আ করার প্রয়োজনই নেই, বরং জায়েযও নেই। কারণ আগেই প্রমাণ করেছি যে, পন্নী সাহেব কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে এবং নিজের ফাতাওয়ায়ও কাফের এবং মুশরিক। আর কোনো কাফেরের জন্য মাগফিরাতের দু’আ করা পবিত্র কুরআনে নিষেধ। মহান রব বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَن يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُواْ أُوْلِي قُرْبَى مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
এটা নবী ও মুমিনদের পক্ষে শোভনীয় নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তাতে তারা আত্মীয়-স্বজনই হোক না কেন, যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, তারা জাহান্নামী। -সুরা তাওবা : ১১৩

সুতরাং পন্নী সাহেবের জন্য দু’আ করা কোনো মুসলমানের জন্য জায়েয নেই, বরং হারাম।

মানবরচিত আইন পালনে পন্নী ও হেযবুতের অনুসরণ:
বাহ্যিকদদৃষ্টিতে লক্ষ্য করা যায় ও তাদের সুস্পষ্ট দাবি হলো, হেযবুত তওহীদ মানবরচিত আইন মানে না। অথচ তারাই সবচে বেশি মানবরচিত আইন মানেন বলে তারা স্বগর্বে বলে বেড়ান। এ বিষয়ে বুঝার জন্য সর্বপ্রথম বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে জানা দরকার, এটা কী মানবরচিত আইন নাকি আল্লাহ তাআলার আইন?

বিশ্বময় মানরচিত আইন চলে:
তারা লিখেছেন, ‘পৃথিবীর কোথাও, একটি রাষ্ট্রেও আল্লাহর বিধান দিয়ে শাসন কার্য করা হয় না। অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য করা হয় না। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৮২

হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি সহ সমস্ত মানব জাতি আজ তার সমষ্টিগত জীবন মানুষের তৈরি জীবন ব্যবস্থা দিয়ে পরিচালনা করছে। – সবার ঊর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১৯

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রেই আল্লাহ’র আইন চলে না। যা চলে সবই মানবরচিত আইন। মীলত এই মানবরচিত আইনগুলো সবই তৈরি করা হয়েছে আল্লাহ তা’আলার আইনকে দমিয়ে রাখার জন্য। অথচ ইসলাম ধর্ম একটি চুড়ান্ত ধর্ম। যার ভেতরে মানবজিবনের ব্যক্তিগতজীবন থেকে নিয়ে রাষ্ট্রনীতি সবই বিদ্যমান। সুতরাং ইসলাম বাদ দিয়ে মানবরচিত কোনো তন্ত্রমন্ত্র মানা ইসলামকে অবজ্ঞা করার নামান্তর। এজন্য আল্লাহপাক বলেন,
وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ اللّهُ وَلاَ تَتَّبِعْ أَهْوَاءهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَن بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللّهُ إِلَيْكَ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ
এবং (আমি আদেশ করছি যে,) তুমি মানুষের মধ্যে সেই বিধান অনুসারেই বিচার করবে, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবে না। তাদের ব্যাপারে সাবধান থেক, পাছে তারা তোমাকে এমন কোন বিধান থেকে বিচ্যুত করে, যা আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রেখ, আল্লাহ তাদের কোনও কোনও পাপের কারণে তাদেরকে বিপদাপন্ন করার ইচ্ছা করেছেন। ৪৬ তাদের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। -সুরা মায়িদা : ৪৯

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। -সুরা মায়িদা : ৪৪

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
হে নবী! আল্লাহকে ভয় করুন এবং কাফের ও কপট বিশ্বাসীদের কথা মানবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। -সুরা আহযাব : ১

সুতরাং বুঝা গেলো, মানবরচিত গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, সাম্যবাদ, জাতীয়বাত, পুঁজিবাদসহ সকল তন্ত্রমন্ত্র মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য। কোনো মুসলিমের জন্য এগুলো মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা শুধু আমার বক্তব্য নয়, বরং হেযবুত তওহীদ তাদের বইগুলোতে এর স্বপক্ষে অসংখ্য বক্তব্য দিয়েছে। চলুন কয়েকটা নমুনা দেখি।

মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানার কারণে কেউ মুসলিম নয়:
মুসলিম নামের এই জনসংখ্যাও ইহুদী- খ্রিস্টান সভ্যতার তৈরি করা গণতন্ত্র রাজতন্ত্র সমাজতন্ত্র একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি বিবিদ মতবাদকে গ্রহণ করে জীবন পরিচালনা করছে সুতরাং তারা আল্লাহর বদলে মানুষকে তাদের হুকুমদাতা, এলাহ সাব্যস্ত করছে তারা তো এসলামেই নেই। -ইসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১৩৮

মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানার কারণে সকল মুসলমান কাফের ও মুশরিক:
এই মোসলেম দাবিদার জনসংখ্যাটি তাদের জাতীয় জীবনে কেউ গণতন্ত্র,কেউ সমাজতন্ত্র,কেউ রাজতন্ত্র,কেউ একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্র-মন্ত্র,ism,cracy ইত্যাদি মেনে চোলছে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদ দিয়ে ঐ সমস্ত তন্ত্রমন্ত্রের সার্বভৌমত্ব মানছে,এভাবে তারাও কার্যতঃ (Defacto) মোশরেক ও কাফেরে পরিনত হোয়েছে। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৭৯/১৩৮

জাতীয় জীবনে মানুষের তৈরি, ইউরোপের তৈরি আইন-কানুন গ্রহণ করে জাতি কার্যত কাফের মুশরেক হয়ে গেল এবং সেই যে কাফের মোশরেক হলো তা থেকে আজও প্রত্যাবর্তন করে নি আজও সেই মোশরেকই আছে? -শিক্ষাব্যবস্থার : পৃ. ১৭

শেরক হচ্ছে জীবনের যেখানে যে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কোনো বক্তব্য বা বিধান আছে, সেখানে তাদের সেই বিধানকে অমান্য করে অন্য কারো তৈরি করা বিধান মানা। আজ সেই শেরকে পুরো মানবজাতিকে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আছে। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৭৬

মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানলে চিরস্থায়ী জাহান্নাম:
যখনই মানুষ আল্লাহর দেওয়া সেই দীনকে প্রত্যাখ্যান করে নিজেরা তাদের জীবন ব্যবস্থা বানিয়ে নিয়েছে তখনই তাদের জীবনে নেমে এসেছে অশান্তি। তাদের এই অশান্তি কেবল দুনিয়াবি তা নয় আল্লাহ দীন প্রত্যাখান করার শাস্তিস্বরূপ আখেরাতেও তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে। -সম্মানিত আলেমদের প্রতি : পৃ. ২

মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র দাজ্জালের বিভিন্ন রুপ:
রাজতন্ত্র সমাজতন্ত্র গণতন্ত্র সাম্যবাদ একনায়কতন্ত্র এ সবই দাজ্জাল এর বিভিন্ন রূপ। -দাজ্জাল : পৃ. ৯০

যখন ধর্মনিরপেক্ষতার জন্ম দিল, স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব মানুষের হাতে এল তখনই দাজ্জালের জন্ম হলো। -দাজ্জাল : পৃ. ৪৫

উপরোক্ত বক্তব্যগুলো থেকে বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদের দাবি হচ্ছে-
১. মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানার কারণে কেউ মুসলিম নয়।
২. মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানার কারণে সকল মুসলমান কাফের ও মুশরিক।
৩. মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানলে চিরস্থায়ী জাহান্নাম:
৪. মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র দাজ্জালের বিভিন্ন রুপ:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ কাদের আইন মেনে চলে? এ প্রশ্নের জবাব তাদের বই থেকেই চলুন দেখা যাক। তারা লিখেছে,

বাংলাদেশের আইন মান্য করতেই হবে।
হেযবুত তওহীদের জন্মের সময় থেকে আমি নীতি হিসাবে রসুলের এই তরিকা অনুসরণ কোরেছি। আমার কঠিন নির্দেশ দেয়া আছে কোন মোজাহেদ কোন রকম বে-আইনি কাজ কোরবে না, কোন আইন ভঙ্গ করবে না, কোন বে-আইনি অস্ত্র হাতে নেবে না। যদি আমি জানতে পারি যে কোন মুজাহেদদের কাছে কোন বে-আইনি অস্ত্র আছে তবে আমি পুলিসে খবর দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেব। -জেহাদ, কেতাল ও সন্ত্রাস : পৃ. ৭

আমরা আমাদের দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ না করার নীতি থেতে কখনোই বিচ্যুৎ হবো না ইনশাআল্লাহ। -দৈনিক বজ্রশক্তি সংকলন, সংখ্যা ১৫ জুলাই-আগষ্ট ২০১৭, পৃ. ৫

পন্নী আমৃত্যু দেশের আইন মেনে চলেছেন:
পন্নী ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক। তিনি তাঁর সমগ্র জীবন সত্য সন্ধানে এবং সত্যের জন্য লড়াই করে গেছেন। তার ৮৬ বছরের জীবনে একবারের জন্য আইন ভঙ্গের কোনো রেকর্ড নেই, নৈতিক স্খলনের কোনো নজির নেই। -শিক্ষাব্যবস্থা : পৃ. ৯০

দেশের প্রচলিত আইন মান্যকারী দল হেযবুত তওহীদ:
এই ১৮ বছরর হেযবুত তওহীদ আন্দোলন দেশের কোন একটি আইনও ভঙ্গ করেনি, একটিও অপরাধ করে নি। এটি আল্লাহর সত্যদীন এর ফল। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ২০

বিগত ২০ বছরে আমাদের একজন সদস্যও আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়নি। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৫০

উপরোক্ত বক্তব্যগুলো থেকে বুঝতে পারলাম, হেযবুত তওহীদের সাংবিধানিক নিয়ম হলো, দেশের প্রচলিত আইন মানতে হবে। পন্নী সাহেব সারা জিবন দেশের প্রচলিত আইন মানতে মানতেই মারা গেলেন। তাদের কর্মীরা আইন মেনে চলেন। কেউ আইন ভঙ্গ করলে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেবেন।এই যে আইনের প্রতি তাদের এত এত শ্রদ্ধা। তো দেশের প্রচলিতএ আইনটা কোন আইন? চলুন তারা কী বলে দেখা যাক।
পৃথিবীর কোথাও, একটি রাষ্ট্রেও আল্লাহর বিধান দিয়ে শাসনকার্য করা হয় না অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য করা হয় না। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৮২

আজ দুনিয়ায় যা চলছে তা শেরক ও কুফর। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৩১

আজ আমাদের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক জীবন পরিচালিত হচ্ছে পাশ্চাত্যে খ্রীষ্টানদের তৈরি করা নানা রকম তন্ত্র দিয়ে আর ব্যক্তিগত ধর্মীয় জীবন পরিচালিত হচ্ছে খ্রীষ্টান পণ্ডিতদের তৈরি করা বিকৃত, বিপরীতমুখী ইসলাম দিয়ে আল্লাহর রাসুলের এসলাম দিয়ে নয়। -ইসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩

বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীময় মানবরচিত আইন চলছে। সেই মানবরচিত আইন মেনেই পন্নী সাহেব মৃত্যুবরণ করেছেন। তাহলে হেযবুতত তওহীদের ভায়েরা আপনারাই বলুন, আপনাদের ফাতাওয়ায় ছিলো-
১. মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানার কারণে কেউ মুসলিম নয়।
২. মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানার কারণে সকল মুসলমান কাফের ও মুশরিক।
৩. মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানলে চিরস্থায়ী জাহান্নাম:
৪. মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র দাজ্জালের বিভিন্ন রুপ:

তাহলে আপনাদের ফাতাওয়ায় আপনাদের আত্মার পিতা মাহামান্য এমামুযযামান (!) কী মুসলিম ছিলেন নাকি দাজ্জালের সদস্য, চিরস্থায়ী জাহান্নামী ও কাফের মুশরিক ছিলেন না? যদি ন্যায়সঙ্গতভাবে বলেন, তিনি কাফের, তাহলে একজন কাফেরের পেছনে অযথা কেন দৌড়াচ্ছেন? অথচ মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
হে নবী! আল্লাহকে ভয় করুন এবং কাফের ও কপট বিশ্বাসীদের কথা মানবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। -সুরা আহযাব : ১

আর যদি বলেন, না তিনি মুসলিম ছিলেন। তাহলে আপনাদের লিখিত দাবি নিশ্চিত মিথ্যা। অথচ এই মানবরচিত তন্ত্র-মন্ত্রের জন্য পুরো বিশ্বের সকল মুসলিমকে কাফের বানিয়েছেন। এটা কী তাহলে দ্বীপাক্ষিক আচরণ হয়ে গেলো না?

উপরন্তু মানবরচিত আইনে প্রচলিত বাংলাদেশের আদালত হলো আপনাদের পন্নী সাহেবের কাছে শেষ আশ্রয়স্থল। তিনি নিজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে দেওয়া চিঠিতে লিখেছিলেন,
আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল বিচারালয়। -যামানার এমামের পত্রাবলী : পৃ. ১৯

অথচ পন্নী সাহেবই আবার লিখেছেন অন্য বইয়ে,
মুসলিম দুনিয়াতে আজ সেই আইনে বিচার হয় না, বিচার হয় পাশ্চাত্যের মানুষের তৈরি, গায়রুল্লাহর আইনে, দণ্ড হয় পাশ্চাত্যের দণ্ডবিধি মোতাবেক অর্থনীতি পরিচালিত হয় পাশ্চাত্যের সুদভিত্তিক অর্থনীতির মোতাবেক। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৯৩

পবিত্র কোর’আনে প্রদত্ত এই সংজ্ঞার আলোকে বর্তমান পৃথিবীর কোনো শাসকই জালেমের সংজ্ঞার বাইরে যান না। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৫২

আপনাদের আত্মার পিতা পন্নী সাহেব যদি মুসলিমই হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি কাফেরদের বিচারালয়কে কিভাবে শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে গন্য করলেন? অথচ মহান রব বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُواْ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُواْ إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُواْ أَن يَكْفُرُواْ بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلاَلاً بَعِيدًا
(হে নবী!) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে, তোমার প্রতি যে কালাম নাযিল করা হয়েছে তারা তাতেও ঈমান এনেছে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছিল তাতেও, (কিন্তু) তাদের অবস্থা এই যে, তারা তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়? অথচ তাদেরকে আদেশ করা হয়েছিল, যেন (সুস্পষ্টভাবে) তাকে অস্বীকার করে। বস্তুত শয়তান তাদেরকে চরমভাবে গোমরাহ করতে চায়। -সুরা নিসা : ৬০

সুতরাং বুঝা গেলো, মানবরচিত আইন মেনে আপনারা কাফের, মুশরিক, চিরস্থায়ী জাহান্নামী ও দাজ্জালের পরম অনুসারী। এরপরও যদি তাকে মানতে চান তাহলে নিন্মোক্ত আয়াত আপনাকে স্বরণ করাতে চাই। কিয়ামতের দিন আপনাদের অবস্থা কী হবে তা আল্লাহ পাক অগ্রীম জানিয়ে দিয়েছেন,
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا يَا وَيْلَتَى لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنسَانِ خَذُولًا
জালেম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দূর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়। -সুরা ফুরক্বান : ২৭-২৯

আল্লাহ পাক আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন। আমীন!

তাগুত ও হেযবুত :
মানবরচিত আইন দিয়ে কার্যপরিচালক সরকারকে যারা ‘তাগুত’ বলে আখ্যায়িত করে হেযবুত তওহীদ তাদেরকে উগ্রবাদী ট্যাগ লাগান। তারা লিখেছে,
মানদণ্ডের প্রশ্নে রাষ্ট্রের সাথে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের এই দূরত্বকেই কাজে লাগাচ্ছে উগ্র মতাদর্শীরা। তারা সরকারকে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাগুত ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে উত্তেজিত করে তুলছে। -হলি আর্টিজেনে হামলার পর : পৃ. ১৮

অথচ তারা নিজেরা আরও শক্ত ভাষায় বলে থাকেন,
জাতীয় জীবনে মানুষের তৈরি, ইউরোপের তৈরি আইন-কানুন গ্রহণ করে জাতি কার্যত কাফের মুশরেক হয়ে গেল এবং সেই যে কাফের মোশরেক হলো তা থেকে আজও প্রত্যাবর্তন করে নি আজও সেই মোশরেকই আছে। -শিক্ষাব্যবস্থার পৃ. ১৭

পবিত্র কোর’আনে প্রদত্ত এই সংজ্ঞার আলোকে বর্তমান পৃথিবীর কোনো শাসকই জালেমের সংজ্ঞার বাইরে যান না। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৫২

তাহলে আলেমরা যদি তাগুত বলার কারণে উগ্রবাদী হয়ে থাকেন, তাহলে সরকারকে জালেম ও কাফের-মুশরিক বলার কারণে হেযবুত তওহীদ কী কট্ররপন্থী উগ্রবাদী নয়?

গণতন্ত্র ও হেযবুত:
মুখে মুখে গনতন্ত্র বিরোধী বলে দাবি করা এই হেযবুত তওহীদ কিন্তু মূলত গনতন্ত্রের একান্ত অনুগামী। তারা গণতন্ত্রের বিরোধীতায় বক্তব্য লিখেছেন,
যে গণতন্ত্র প্রতারণার হাতিয়ার, সেই গণতন্ত্রকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখান করতে হবে। এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। ঔষধ বলে বিষ খাওয়ানো আর চলবে না। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ২৯

অথচ তারাই আবার লিখেছে,
আমাদের (হেযবুত তওহীদের) বক্তব্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৫৩

তাহলে কী হেযবুত তওহীদ গনতন্ত্র মেনে নেয় নি?

বাংলাদেশের আইন মানা কী দ্বীনের অংশ?
উপরন্তু তারা আরও দাবি করলেন যে, বাংলাদেশের আইন মানাটাই আল্লাহ তা’আলার সত্য দ্বীনের ফল। দেখুন কী বলে-
এই ১৮ বছরর হেযবুত তওহীদ আন্দোলন দেশের কোন একটি আইনও ভঙ্গ করেনি, একটিও অপরাধ করে নি। এটি আল্লাহর সত্যদীন এর ফল। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ২০

জবাব:
তারা আগেই লিখেছেন,
পৃথিবীর কোথাও, একটি রাষ্ট্রেও আল্লাহর বিধান দিয়ে শাসন কার্য করা হয় না। অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য করা হয় না। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৮২

তাহলে আমার প্রশ্ন হলো, আল্লাহ পাকের আনুগত্যহীন বিধান পালন করা আল্লাহ তা’আলার সত্য দ্বীনের ফল হয় কিভাবে? আশা করি তারা জবাব দেবেন।

পন্নী হাদিয়া নিতো না:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা লিখেছে, ‘পন্নী হাদিয়া গ্রহণ করতেন না। কেউ কিছু কিনে নিয়ে বাসায় গেলে তিনি তার দাম দিয়ে দিতেন। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ১২৪

জবাব:
হাদিয়া আদান প্রদান করা নবিজি সাঃ থেকে স্বীকৃত একটি সুন্নাহ। আদর্শ সমাজের লেন-দেনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পারস্পরিক হাদিয়া-তোহফা আদান-প্রদান। নবীজি সা. এর প্রতি খুব উৎসাহিত করেছেন। হেকমত হল, এর দ্বারা অন্তরে মহব্বত ভালোবাসা তৈরি হয়। সম্পর্ক দৃঢ় হয়। যেটি দুনিয়ার জীবনে অনেক বড় নিয়ামত। অনেক বিপৎ-মুসিবত থেকে হেফাজতের মাধ্যম। শান্তি-নিরাপত্তা লাভের খুব সহায়ক। সেটাকে তারা আমল তো করেই নি, বরং তা করাতেই পন্নীরর প্রতি প্রশংসার ফেনা তুলছেন। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْبَلُ الْهَدِيَّةَ وَيُثِيبُ عَلَيْهَا
রাসুলুল্লাহ সাঃ হাদীয়া (উপঢৌকন) গ্ৰহণ করতেন এবং তার প্রতিদানও দিতেন। – সহিহ বুখারী : হাদিস নং :২৫৮৫

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি নবিজি সাঃ হতে বর্ণনা করেন। নবিজি সাঃ বলেছেন,
تَهَادُوْا تَحَابُّوا
তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান কর, তাহলে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে। -আল আদাবুল মুফরাদ : হাদিস নং : ৫৯৪

হিংসা দূর করার উপায় হাদিয়া:
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
تَهَادَوْا فَإِنَّ الْهَدِيَّةَ تَسُلُّ السَّخِيمَةَ
আপোষে হাদিয়া দিতে থাকো, কেননা হাদিয়া দ্বারা মনের হিংসা-বিদ্বেষজনিত গ্লানি দূর হয়ে যায়। -মুসনাদে বাযযার : হাদিস নং : ৭৫২৯

এটা শুধু আমার কথাই নয়, বরং খোদ হেযবুত তওহীদও দাবি করেছে,
আল্লাহর রাসূল বলেছেন, তোমরা পরস্পরে হাদিয়ার আদান-প্রদান করো, তাহলে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় করো তাহলে অন্তরে সংকীর্ণতা হিংসা বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৭৭

সুতরাং যেহেতু পন্নী সাহেব হাদিয়া গ্রহণ করতেন না, সে কারণেই মূলত মুসলমান ও আলেমদের প্রতি তার অন্তরে এত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছিলো। উপরন্তু যিনি নবীজির সা. স্পষ্ট হাদিয়ার সুন্নাত পালন করতেন না, সেই তিনিই আবার দাবি করছেন,
রাসুলুল্লাহ সাঃ যা করেন নি, করতে বলেননি তা কোনোদিনও হেজবুত তওহীদ করবে না। -সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ১৪

সেই পন্নী সাহেবের ব্যাপারে আবার তারা দাবি করছেন,
আল্লাহর রহমে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আবার সে হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম বুঝতে পেরেছেন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৮৯

কী হাস্যকর!

এনায়াতুল্লাহ মাশরেকী, মওদুদী ও পন্নী:
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী সাহেব মূলত তার এ সংগঠণ তৈরির অবকাঠামোর ধারণা পায় আরেক কুফরী সংগঠণ তাহরিকে খাকসার থেকে। এই খাকসার আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন মুসলিম ও আলেম বিদ্বেষী এনায়েতুল্লাহ খান মাশরেকী। চলুন তাদের সামান্য ইতিহাস দেখা যাক,
এনায়েতুল্লাহ খান মাশরেকী অমৃতসরে (পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত) ২৫ আগস্ট ১৮৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিলো আতা মুহাম্মাদ। এই আতা মুহাম্মাদ ছিলেন চরমভাবে হাদিস অস্বীকারকারী। যার প্রভাব তার ছেলে এনায়েতুল্লাহ মাশরেকীর উপরও পড়ে। ফলে মাশরেকী সাহেব নিজেও সুস্পষ্টভাবে কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে হাদিস অগ্রহনযোগ্য বলে দাবি করেন। অবশেষে তিনি ১৯৩১ সালে তাহরিকে খাকসার বা খাকসার আন্দোলন নামে একটি সংগঠণ প্রতিষ্ঠা করেন। তার বিশ্বাস ছিলো প্রচলিত ইসলাম ভুল ও বিকৃত এবং তিনি আরও দাবি করেন যে, মুসলমান হতে হলে অবশ্যই তাকে সৈনিকের জিবন গ্রহণ করতে হবে। তিনি কমিউনিজের প্রতি বেশ আকৃষ্ট ছিলেন। সকল ধর্মের বৈশিষ্ট বজায় রেখে সর্বধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করত সহনশীল আচরন প্রদর্শন করা। তাদের সদস্যদের মধ্যে যারা মুসলিম তাদের জন্য মসজিদে নামাজ আদায় করা এবং হিন্দুদের জন্য খাকসারদের মন্দিরে গীতাপাঠ ও উপাসনা করা হতো।  এ ছাড়াও ইসলাম ও মুসলিমসহ ইসলামের অসংখ্য বিষয় সম্পর্কে মাশরেকী চরমভাবে বিকৃত করেন। ফলে তৎকালীন সময়ের উলামায়ে কেরাম তাকে কাফের বলে ঘোষণা দেন।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই মাশরেকীই ছিলেন হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নীর মহাগুরু ও প্রধান নেতা। পন্নী সাহেবের ইতিহাস লিখতে গিয়ে হেযবুত তওহীদ লিখেছে,
কলকাতায় তার (পন্নীর) শিক্ষা লাভের সময় পুরো ভারত উপমহাদেশ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তাল আর কলকাতা ছিল এই বিপ্লবের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। আন্দোলনের এই চরম মুহূর্তে তরুণ এমামুযযামান ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। সেই সুবাদে তিনি এই সংগ্রামের কিংবদন্তী তুল্য নেতৃবৃন্দসহ লাভ করেন যাদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অরবিন্দু বোস,শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দী , মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী অন্যতম। উপমহাদেশের দুটি বৃহৎ ও প্রসিদ্ধ দল ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নেতৃত্ব দান করেছিল যথা- মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ। কিন্তু এমামুযযামান এই দুটি বড় দলের একটিতেও যুক্ত না হয়ে যোগ দিলেন আল্লামা এনায়েতুল্লাহ খান মাশরেকির প্রতিষ্ঠিত ‘তেহরিক এ খাকসার’ আন্দোলনে। এমামুযযামান ছাত্র বয়সে উক্ত আন্দোলনে সাধারণ একজন সদস্য হিসেবে যোগদান করেও খুব দ্রুত তার চেয়ে বয়োজৈষ্ঠ ও পুরাতন নেতাদের ছাড়িয়ে পূর্ববাংলার কমান্ডারের দায়িত্ব পদ লাভ করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি দুঃসাহসী কর্মকান্ড ও সহজাত নেতৃত্বের গুণে আন্দোলনে কর্ণধার আল্লামা মাশরেকির নজরে আসেন এবং স্বয়ং আল্লামা মাশরেকী তাঁকে সমগ্র ভারত বর্ষ থেকে বিশেষ কাজের জন্য বাছাইকৃত ৯৬ জন “সালার-এ-খাস হিন্দ’ (বিশেষ কমান্ডার ভারত) এর একজন হিসেবে নির্বাচিত করেন। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ৮৬,   এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১২৭ আল্লাহ’র মোজেজা, পৃ. ৯২, মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১২৫-১২৬

বুঝা গেলো, মাশরেকীর আদর্শেই আদর্শবান ছিলো বায়াজীদ খান পন্নী।

তাহরীকে খাকসার থেকে হেযবুত তওহীদ গঠণ:
এনায়াতুল্লাহ খান মাশরেকী একপর্যায়ে নিজেই খাকসার আন্দোলনের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। এতে সালারে খাসসহ অন্য খাকসাররা মানসিকভাবে প্রচণ্ড মর্মাহত হন। ভেঙে পড়েন অনেকেই। দেখুন হেযবুত তওহীদ কী লিখেছে-
আল্লামা এনায়েত উল্লাহ খান মাশরেকী ‘খাকসার’ আন্দোলন ভেঙ্গে দেওয়ার পর আন্দোলনের এসলামপ্রিয় নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা চান আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখতে। এ জন্য তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং করোটিয়াতে এমামুযযামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে আন্দোলনের নেতৃত্বভার গ্রহণ করার জন্য সনির্বদ্ধ অনুরোধ করেন। -শিক্ষাব্যবস্থা : পৃ. ৮৬-৮৭

কিন্তু বায়াজীদ খান পন্নী তাদের অনুরোধ সাথে সাথেই গ্রহণ করেননি। তিনি চেয়েছিলেন নিজস্ব একটা ক্রেডিট। নিজস্ব মতবাদ হিসাবে প্রচার করতেই তিনি কয়েকবছর কালক্ষেপণ করেন। অবশেষে ১৯৯৫ সালে তিনি খাকসার আন্দোলনের মতবাদকে সামনে রেখেই ‘হেযবুত তওহীদ’ নামে নতুন দলের প্রতিষ্ঠা করেন। দলটা যদিও নতুন নামে হয়, কিন্তু এর মৌলিক আকীদা ও বিশ্বাস গ্রহণ করা হয় অধিকাংশটাই মাশরেকীর খাকসার থেকে। দেখুন নিন্মে কয়েকটা মতবাদ তুলে ধরছি-

ইসলাম নিয়ে মাশরেকী ও পন্নীর বক্তব্য:
ইসলাম সম্পর্কে এনায়েতুল্লাহ খান মাশরেকীর বক্তব্য ছিলো, তের’শ বছর আগেই ইসলাম হারিয়ে গেছে। বর্তমানে যেটা চলতে তা ভুল ইসলাম। আসল ইসলাম একমাত্র তাহরিকে খাকসারের কাছেই রয়েছে। দেখুন তিনি কী বলেন,
ہم نے تيرہ سو برس کی بھول اورکئی سو برس کی خطائے کبير کے بعد پھر اپنے سچے اور اصلی، پھر قطعی اور خدائی، ہاں آخری محمد کے آخری اسلام کو پھر پاليا ہے
তেরশ বছরের গলদ এবং শত শত বছরের বিকৃতির পর আসল, সত্য, অকাট্ট, আখেরী নবীর আনিত আখেরী ইসলাম পুনরায় আমরা পেয়েছি। -কওলে ফায়সাল, পৃ. ১৩

ঠিক একই কথা বায়াজীদ খান পন্নী সাহেবও দাবি করে বলেছে,
প্রকৃত এসলাম তেরশ’ বছর আগেই হারিয়ে গেছে। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৬১

যে এসলাম চোলছে পৃথিবীতে এটা ভুল। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৫৪

আল্লাহ আমাদেরকে দয়া করে ইসলামের প্রকৃত আকীদা দান করেছেন। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৩৯

প্রথম শতাব্দীর ইসলাম: মাশরেকী ও পন্নী:
এনায়েতুল্লাহ মাশরেকী বলেন, প্রথম শতাব্দীতেই আসল ইসলাম ছিলো। পরবর্তীতের তা বিকৃত হয়ে গেছে। মাশরেকী বলেছে,
اس واقع الامر سے انکار کرنا محال ہے کہ خاتم النبیین کا لایا ہو اسلام در اصل وہی قرن اول کا اسلام تھا
এ বাস্তব সত্য অস্বীকার করা অসম্ভব যে, শেষ নবীর সা. আনীত ইসলাম আসলে প্রথম শতাব্দীর ইসলাম। -তাযকিরা (মূখবন্ধ) খ. ১ পৃ. ৭৪

ঠিক একই কথা পন্নী সাহেবও বলেছে,
প্রকৃত ইসলাম হারিয়ে গেছে রসূলুল্লাহর বিদায় নেওয়ার ৬০/৭০বছর পরেই। এরপর এসলামের বিধান মোটামুটি চালু থাকলেও তার আত্মা হারিয়ে যোতে আরম্ভ করে। তার প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার যতটুকুই অবশিষ্ট ছিল তার প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছিল অনাবিল শান্তি সমৃদ্ধি। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০২-৩

একমাত্র দ্বীনে মুস্তাকিম খাকসার ও হেযবুত তওহীদ:
এনায়েতুল্লাহ মাশরেকী বলেন, তাহরিকে খাকসারের মাধ্যমেই আসল ইসলাম ও সত্যিকারের দ্বীনে মুস্তাকিমে পৌঁছানো সম্ভব।
خاکسار تحریک اس اصلی دین کی طرف ایک راہ راست اور واحد صراط مستقيم ہے
খাকসার আন্দোলন ঐ প্রকৃত দীন পর্যন্ত পৌঁছার একটি ও একমাত্র সঠিক রাস্তা। -কওলে ফায়সাল, পৃ. ১৪

ঠিক একই কথা বায়াজীদ খান পন্নী সাহেবও লিখেছেন,
২ তারিখে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন। হেযবুত তওহীদের এবং আমার সত্যায়ন কোরলেন এবং জানিয়ে দিলেন যে, হেযবুত তওহীদ দিয়ে আল্লাহ তাঁর দীনুল হক্ সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরবেন। এ সম্বন্ধে তোমরা বিন্দুমাত্র সন্দেহ রেখো না। বিন্দুমাত্রও রাখবে না। রাখলে বিপদ আছে’। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৫৭

মানবজাতির এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করার সমাধান আল্লাহ হেযবুত তওহীদের কাছেই দিয়েছেন, তাই এই মহাসত্যকে যারা গ্রহন করবে না তাদের মুক্তির উপায় নাই। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃষ্ঠা. ২৮

আল্লাহ অতি দয়া করে তাঁর প্রকৃত ইসলাম যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে বুঝিয়েছেন। হেযবুত তাওহীদ সেই প্রকৃত ইসলামের ধারক। -আদর্শিক লড়াই : পৃ. ১৫

এ জাতির জন্য বিরাট আশার কথা ও সুসংবাদ এই যে,১৩০০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই প্রকৃত এসলাম আল্লাহ দয়া কোরে এ যামানার এমাম, এমামুযযামান, The Leaderof the Time জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১০৯

আসল ইসলাম: মাশরেকী ও পন্নী:
তাহরিতে খাকসার নিয়ে এনায়েতুল্লাহ মাশরেকী বলেছে,
خاکسار تحریک عين اسلام ہے
সত্যিকারের ইসলাম হলো খাকসার আন্দোলন। -মৌলবীউ কা গলত মাযহাব, পৃ. ২৭৮

ঠিক একই দাবি পন্নীরা বলেন,
প্রকৃত শিক্ষা একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে
ধর্মের এই প্রকৃত শিক্ষা কোন স্কুলেও নাই, মাদ্রাসায়ও নাই, আছে একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছে। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৩

ইসলামের পুনর্জীবনে মাশরেকী ও পন্নী:
এনায়েতুল্লাহ খান মাশরেকী বলেন,
ہم دین اسلام کو از سر نو زندہ کرنے کے لئے اٹھے ہيں
আমরা ইসলাম ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জেগেছি। -কওলে ফায়সাল, পৃ. ৫০

ঠিক একই দাবি বায়েজীদ খান পন্নী সাহেবও করেছেন,
আমরা হেযবুত তওহীদ আল্লাহর রহমে সেই প্রকৃত ইসলাম মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সৌভাগ্য লাভ কোরেছি। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ৫

আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর অসীম করুনায় আমরা মুক্তির পথ পেয়ে গেছি। এই জমিনে, এই বাংলার মাটিতে সত্য এসে গেছে, হেদায়েত এসে গেছে। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য এসে গেছে। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ : পৃ. ১৭

এনায়েতুল্লাহ মাশরেকীর বিস্তারিত মতবাদসমূহ জানতে আল্লামা আবু ওফা সানাউল্লাহ রহি. এর লেখা ‘খাকসারী তাহরীক আওর উস কা বানী’ কিতাবটি পড়তে পারেন। এ কিতাবটি পুরোটা পড়লে এবং হেযবুত তওহীদের পুরো মতবাদ জানলে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে যে, পন্নী সাহেব মূলত এনায়েতুল্লাহ খান মাশরেকীর মতবাদ সামনে রেখেই হেযবুত তওহীদ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। জনাব পন্নী সাহেবের আরেক আদর্শগুরু হলেন, জনাব মাওলানা মওদুদী সাহেব। তিনিও ইসলামের মৌলিক কিছু বিষয় অস্পষ্ট হয়ে ভুল প্রচলন হওয়ার দাবি করেছিলেন। বিষয়টা দেখতে মওদুদী সাহেবের লেখা ‘কুরআন কি চার বুনিয়াদি ইসতেলাহিঁ’ বইটা পড়তে পারে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম বিকৃতির দাবি পন্নী সাহেবের প্রতি আল্লাহর ইলহাম নয়; বরং তার আদর্শগুরু মাশরেকী ও মওদুদী সাহেবের ইলহাম!

এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করছি না। কারণ বর্তমানের হেযবুত তওহীদ আর পন্নী সাহেবের হেযবুত তওহীদের মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও পুরোপুরি মিল নেই। বর্তমানের হেযবুত তওহীদ মূলত নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীদের নিউ ভার্সন। যা আমি তথ্যপ্রমাণসহ আমার লেখা আরেকটি কিতাব ‘তাওহীদের আড়ালে নাস্তিকতা’ বইটিতে পেশ করেছি।

বায়াজীদ খান পন্নী রাজাকার ছিলো :
৭১ সালে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী ও তার বাবা ছিলেন অনেব বড় রাজাকার। এ বিষয়টি বুঝার জন্য প্রথমে দুটি বিষয় আমাদের জানতে হবে।
১. পন্নীর বাবার নাম কী? ২. পন্নীর ডাক নাম কী?

পন্নীর বাবার নাম:
টাঙ্গাইলের করটিয়ার জমিদার পরিবারই হলো পন্নীদের পরিবার। তার বাবার নাম ছিলো, ‘মেহেদী আলী খান খসরু পন্নী। -শ্রেণিহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ১৮৪

পন্নীর ডাক নাম: বায়াজীদ খান পন্নীর ডাক নাম ছিলো, ‘সেলিম খান পন্নী। -শ্রেণিহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ১৮৬

এখন চলুন আমরা দেখি এই মেহেদী আলী খান পন্নী এবং সেলিম (বায়জীদ) খান পন্নী ৭১ সালে কি ভূমিকা রেখেছিল। তার বিস্তারিত বিবরণী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার লিখিত ‘স্বাধীনতা ‘৭১’ বইটিতে লিখেছেন। বঙ্গবীর লেখেন,
টাঙ্গাইল হানাদার শিবিরে তৎপরতা শেষ নেই। ছুঁড়ে-দেওয়া উচ্ছিষ্টের হাড়-গোড় ভাগাভাগি কামড়া-কামড়ির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে হানাদার -সমর্থক কিছু প্রভুভক্ত রাজনৈতিক হ্যাংলা কুকুর। খান সেনাদের চাইতে তাদের উৎসাহ যেন বেশি। টাঙ্গাইল হানাদার প্রধান পাণ্ডা কাগমারি কলেজের কুখ্যাত অধ্যাপক আব্দুল খালেককে সাধারণ সম্পাদক, হেকিম হাবিবুর রহমানকে শান্তি কমিটির সভাপতি করে (৫১ বিশিষ্ট) সদস্য করা হয়েছে। যার ১০ নাম্বারে ‘করটিয়ার জমিদার মেহেদী খান পন্নী খসরু (বায়াজীদ খান পন্নীর বাবা) এবং ১১ নাম্বারেই রয়েছেন ‘জমিদার-পূত্র সেলিম খান পন্নী অর্থাৎ বায়াজীদ খান পন্নী। -স্বাধীনতা ‘৭১ : পৃ. ৬৪৬-৬৪৭

তিনি আরো লেখেন,
আরো অনেককে নিয়ে টাঙ্গাইল জেলা শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কর্মকর্তারাই ছিল শান্তির নামে অশান্তির মূল। রাজাকার বানানো, ঘর-বাড়ি জ্বালানো, লুটতরাজ, নারী অপহরণ ও ধর্ষণে_ হেন জঘন্য অপকর্ম নেই যা শান্তিকমিটির সদস্যরা করেনি। আব্দুল খালেক এদের সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। এ ব্যাপারে করটিয়ার জমিদার মেহেদী খান পন্নীর (খসরু) স্থান দ্বিতীয়। রাজাকার-দল ভারী করতে দেয় পাল্লা পাল্লি-কে কার চাইতে বেশি রাজাকার বানাতে পারে। -স্বাধীনতা ‘৭১ : পৃ. ৬৪৮

পন্নীদের অপমানজনক বিচার:
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী পন্নীদের বিচারের ঘটনা বিস্তারিতভাবে তার এ বইটিতে তুলে ধরেছেন এভাবে,

‘পন্নীদের বিচার: আকাল আকাল’ ২০ নভেম্বর। হানাদারদের প্রথম সারির দালাল করটিয়ার জমিদার খসরু খান পন্নী, তার দুই ছেলে-সেলিম (বায়াজীদ) খান ও বাবলু খান পন্নীকে কোমারে দড়ি বেঁধে এলাচী পুর আনা হয়েছিল। তাদের বিচার। ইতিমধ্যে পন্নীদের নিয়ে পরস্পরবিরোধী ছোটখাটো দু’একটা ঘটনা ঘটে গেছে। কোন-কোন মুক্তিযোদ্ধা পন্নীদের বিন্দুমাত্র মর্যাদা দিতে চাইনি। আবার দু’চারজন ছিল যারা হাজার হলেও তো জমিদার। গরিবের রক্তশোষক জমিদাররাও তাদের অহংকার ঠাট-বাট বজায় রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

অনেকটা শরৎচন্দ্রের নতুনদা’র হারানো পাম্প সু খোঁজার মতো। কোমরে দড়ি বাঁধার সময় তারা মুক্তিযোদ্ধাদের খুব অনুনয়-বিনয় করেছিল,কোমরে দড়ি বাঁধলে নাকি মানসম্মান থাকবে না। এলাচীপুরে যখন একটি বাড়িতে রাখা হয়, তখনও সাধারণ মানুষের রক্তের পয়সায় কেনা দুগ্ধ-ধবল-ফেননিভ মোলায়েম মখমলের বিছানায় অভ্যস্ত জমিদাররা সাধারণ শক্ত বিছানায় শুতে পারে না। গরিব প্রজাদের পিঠে চাবুক মেরে যারা বেড়ে উঠেছে, তাদের শক্ত কাঠের বেঞ্চিতে বসলে ইজ্জত যায়। দরিদ্র জনগণের মুখের গ্রাস কেড়ে পোলাও-কোরমায় অভ্যস্ত, গ্রামের সাধারণ খাবারে তাদের পেট জ্বালা করে। প্রথম-প্রথম এমনি নানা অনুযোগ করার পর যখন তারা বুঝল, তাদের কোনো বিশেষ মর্যাদা দেয়া হবে না, তখন শক্ত বিছানা, গ্রামের খাবার, বেঞ্চে বসা-কোন কিছুতেই আর অসুবিধা হয়নি। এলাচীপুর ও লাউহাটিতে রাখার সময়ে লাউহাটির চেয়ারমান ও স্বেচ্ছাসেবক কমান্ডার কামাল খাঁ পন্নীদের সাথে অপ্রয়োজনে বার কয়েক দেখা করেছে। কর্নেল ফজলুর রহমানের কাছে কামাল খাঁ একটি লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রস্তাবটি হলো দুই-তিনলক্ষ টাকা অর্থদণ্ড করে তাদেরকে ছেড়ে দিলে তারা মুক্তিবাহিনীর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে। এই সমস্ত কোন ঘটনাযই আমার অজানা ছিল না। তাই অবিলম্বে পন্নীদের ব্যাপারটা সেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। এই ধরনের জঘন্য প্রকৃতির লোকদের সংস্পর্শে মুক্তিযোদ্ধারা যত কম থাকে ততই মঙ্গল। ২ ডিসেম্বর দুপুরে কেদারপুর বাজারের পাশে খালের ধারে দুটি বিচার অনুষ্ঠিত হলো। প্রথমটি বিচার নয়, শুনানী। ধৈর্য ধরে রবিউলের সমস্ত কথা শুনে বললাম,
‘যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে আসলে একজন কমান্ডারকে যতটা দায়ী করা উচিত, এইক্ষেত্রে রবিউলকে তার চাইতেও বেশি দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। কারণ রবিউল শুধু পালিয়ে আসেনি, তার ভীরুতার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, এমনকি দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছে। তাই আমি মনে করি, ক্যাপ্টেন রবিউলের ব্যাপারে আরো খুঁটিয়ে দেখে বিচার করা উচিত। এজন্য তাকে সদর দপ্তরে অভ্যন্তরীণ রেখে একটি ট্রাইব্যুনালের হাতে বিচারের ভার ছেড়ে দেওয়া উচিত।
কমান্ডার রবিউলকে সরিয়ে নিলে রাজাকার হোতা, হানাদার দালালদের কোমরে দড়ি বেঁধে হাজির করা হল। করোটিয়ার জঘন্য বদমেজাজী জমিদার খসরু খান পন্নী ও তার দুই ছেলে সেলিম (বায়াজীদ) খান,বাবুল খান পন্নীর বাঁধন খুলে দেয়া হল। প্রথমে খসরু খান পন্নীর ছোট ছেলে বাবুল খান পন্নী কে জিজ্ঞেস করা হলো,
-তোমার কিছু বলার আছে?
-আমাকে কি কারনে আনা হয়েছে জানিনা। বাবা এবং ভাই বর্তমান সরকারের সাথে যুক্ত থাকলেও আমি নই। আমার আর কিছু বলার নেই?
এসময় খসরু খান পন্নী বসার জন্য চেয়ার চাইলেও তাকে জানিয়ে দেয়া হলো, কোন অভিযুক্তকে বিচারের সময় চেয়ার দেয়া হয়না এবং কোন অভিযুক্তকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত না-হওয়া পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে না। গাদি- গাদি টাকা আছে বলে তোমাদের জন্য এই রীতির কোনো হেরফের হবে না।
সেলিম (বায়াজীদ) খান পন্নী বিন্দুমাত্র আত্মপক্ষ সমর্থন না করে বলল,
–আমরা রাজাকার গঠন করেছি। আমরা এখন বুঝতে পারছি অন্যায় হয়েছে। আপনারা আমাদের অর্থদণ্ড করে অন্তত একবার সুযোগ দিন। আমরা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলছি, এরপর সর্বস্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করব।
পর্যায়ক্রমে খসরু খান পন্নী কে তার কিছু বলার আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলাম। খসরু খান পন্নী ও সবকিছু অকপটে স্বীকার করে বলল,
–আমাদের ভুল স্বীকার করছি। (একেবারে গলে গিয়ে) বাবা, আপনারা আমাদের অর্থদন্ড করে এবারের মত মাফ করুন।
–তোমাদের অর্থদণ্ড করা হলে তা কত হতে পারে বলে মনে করো?
আমার কথা শুনে খসরু খান পন্নী যেন কিছুটা ভরসা পেল। সে বেশ বিগলিত গলায় বলল,
–আমাদের আগের অবস্থা নেই। বাড়িতে কোন টাকা-পয়সা নেই। অর্থদণ্ড করা হলে বাড়ির বউদের গহনা ও বগুড়ার যে জমি আছে তা বিক্রি করে শোধ করতে হবে। সাহেব, আপনিই ভেবে চিন্তে বলে দিন।
পন্নীকে ব্যঙ্গ করে বললাম,
–না, সাহেব অর্থদণ্ডের পরিমাণ নিরূপণ করবে না। তোমাকেই তিনি পরিমাণটা বলতে বলছেন। খসরু খান পন্নী কয়েকবার হাত কচলে বললো,
–দুই লাখ হলে…আমরা কোনক্রমে শোধ করতে পারবো। তিন লাখ দিতে কষ্ট হবে। আপনি দয়া করে এর মধ্যে একটা ঠিক করে দিন।
–আমি খুব ভাল করে জানি, তোমাদের বিন্দুমাত্র লজ্জা-শরম নেই। তুমি যদি আমাকে তোমার জমিদারের প্রজা ভেবে থাক, তাহলে ভুল করছ। আমি তোমাদের মত লোকের মোসাহেব নই। তুমি কামাল খাঁকে দিয়ে কর্নেল ফজলুকে দুই লাখ টাকা পাইয়ে দেবার লোভ দেখিয়েছ। এমনিতেই রাজাকার বানানোর জন্য তোমার হাড়-মাংস কুত্তা দিয়ে খাওয়ান উচিত। তার উপর আবার মুক্তিবাহিনীকে অর্থের লোভ দেখাচ্ছ? নিশ্চয়ই অর্থদণ্ড হবে, তবে তোমার ইচ্ছা মতো না।
এ কথা শুনে খসরু খান পন্নী কেঁদে ফেলে হাতজোড় করে বলল,বাবা আমার অন্যায় হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করেন। এর চেয়ে বেশি জরিমানা আমরা দিতে পারব না।
–শুধু অর্থদণ্ড নয়, বেত্রাঘাত হবে। আমরা খুব ভাল করেই জানি, অর্থশালীদের শুধু অর্থ দণ্ড তাদের গায়ে-পায়ে বাজে না। বড় ছেলেসহ তোমাকে মুক্তিবাহিনী গুলি করে মারত। তবে আর-একবার অপরাধ করার জন্য বেত্রাঘাত ও অর্থদণ্ড করে ভবিষ্যতের টোপ হিসেবে রেখে দিচ্ছে। আরেকবার অপরাধ করলে মুক্তিবাহিনী তোমাদের পরপারে পাঠিয়ে দেবে।
খসরু খানের বাক শক্তি রহিত, একেবারে থ মেরে গেল। চোখ ফ্যাকাসে। তাকে দেখে মনে হবে একটা মৃতদেহ দড়িতে বেঁধে রাখা হয়েছে।
‘আসামিদের মধ্যে দু’জন –খসরু ও সেলিম (বায়াজীদ) খান পন্নী হানাদারদের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এরা দু’জন টাঙ্গাইলের চার ভাগের এক ভাগ রাজাকার বানিয়েছে। দু’জনকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে এবারের মতো বেত্রাঘাত ও অর্থদণ্ড করা হলো। বাবুল খান পন্নী হানাদারদের সাথে সক্রীয় না থাকায় তাকে মুক্তি দেওয়া হলো।
খসরু খান ও সেলিম (বায়াজীদ)খান পন্নীর একশ’-এক টাকা করে দুইজনের দুই’শ দুই টাকা জরিমানা ও প্রত্যেককে পাঁচটি করে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেওয়া হলো। খসরু খান পন্নীর বয়স যেহেতু ষাটের উর্ধ্বে সেহেতু তাকে মৃদু বেত্রাঘাত করা হবে। বেত্রাঘাত শেষে এরা পায়ে হেঁটে পাকা সড়ক পর্যন্ত যাবে। কোন যানবাহন ব্যবহার করতে পারবে না।
বিচার শেষে কামাল খাঁ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সে নানাভাবে বলার চেষ্টা করছিল, –স্যার, আমি অমন ভাবে বলি নাই। আমাকে পন্নী সাহেব বলেছিলেন, তাই কর্ণেল সাহেবকে বলেছিলাম, এদের অর্থদণ্ড করে ছেড়ে দেওয়া যায় কিনা।
–বুঝতে পারছি, আপনি ধনী মানুষ। জমিদাররা আপনার মত ধনী। আর একসময় তো আপনারা ওদের প্রজা ছিলেন। তাই মনিবের নুনের গুন ভুলতে পারেননি। এতে আর আপনার দোষ কি?
বিচার শেষে পন্নীদের বিদায় করে দেওয়া হলো। এখানেও কামাল খাঁ তার শ্রেণী স্বার্থে কাজ করে। কেদারপুর থেকে পাকা রাস্তা বারো মাইল। এতটা রাস্তা হেঁটে যেতে সত্যিই খসরু খান পন্নীর খুব কষ্ট হচ্ছিল। পন্নীরা যখন কেদারপুর থেকে চার-পাঁচ মাইল পাড়ি দিয়েছে, অন্য পথে কামাল খাঁ তখন ঘোড়ার গাড়িতে তাদের তুলে দিতে যাচ্ছিল। তার ধারণা ছিল, অতদূর মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো আর লক্ষ্য করবে না। কিন্তু দুটি গাড়ি যখন বানাইলের কাছে পৌঁছে, তখন একদল মুক্তিযোদ্ধা গাড়ির গতিরোধ করে। অপরিচিত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গাড়ির গতিরোধ করায় কামাল খাঁ নিজের পরিচয় দিয়ে বলল,
–দয়া করে গাড়ি ছেড়ে দিন। এর আমার আত্মীয়। আমার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
কামাল খাওয়ার অনুরোধ মুক্তিযোদ্ধারা শোনেনি। গাড়ি থেকে পন্নীদের নামিয়ে নেয়। তাদের এক কথা, ‘আপনাদের আবার কেদারপুরে যেতে হবে।’ পন্নীরা ঘোড়ার গাড়িতে যেতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধারা তাতেও আপত্তি তোলে। বাধ্য হয়ে পন্নীদের আবার তাদের হেঁটে কেদারপুর ফিরতে হয়।

পন্নীদের দেখে হাসতে হাসতে বললাম, ‘চোর বাটপারদের এমনই হয়।

তবে নির্দোষ বাবুল খান পন্নী কে মুক্তিযোদ্ধারা ফিরিয়ে এনে ঠিক করেনি। বাবুল খান পন্নী ইচ্ছা করলে এখানে থেকে যে কোনভাবে যেতে পারেন। কিন্তু বাকি দু’জনকে অবশ্যই পায়ে হেঁটে পাকা সড়ক পর্যন্ত যেতে হবে। আর-একবার ছলের আশ্রয় নিলে গুলি করা হবে।
শওকত আলী ব্যারিস্টারের চাচাতো ভাই লাউহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল খাঁকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেওয়া হলো, ‘স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যথেষ্ট অবদান থাকলেও আপনার অতীত কার্যকলাপ খুব প্রশংসনীয় নয়। আবার এই ধরনের অসৎ পন্থা অবলম্বন করলে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়েই গুলি করা হবে।
কামাল খাঁ ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তাকে যে এবারই গুলি করা হলো না, সেটাই তার পরম সৌভাগ্য। কামাল খাঁ এরপর আর তেমন ছলা কলা করেনি। পন্নীরাও পায়ে হেঁটে ঢাকা-টাঙ্গাইল পাকা সড়ক পর্যন্ত যেতে আর কোন চাতুরি করেনি। -স্বাধীনতা ‘৭১ : পৃ. ৭০৬-৭১০

প্রিয় পাঠক! এই হলঁ বায়াজীদ খান পন্নী ও তার পরিবারের অবস্থা।বলুন এমন জঘন্য লোক কি করে এমামুযযামান হয়?

উপরন্তু হেযবুত তওহীদ লিখেছে,
‘একাত্তরে যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদের সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণই ছিল ধর্ম। ধর্মীয় উম্মাদনা থেকেই জঙ্গিবাদের সূচনা হয়। -জঙ্গিবাদ সংকট : পৃ. ৬৯

৭১ সালেও ধর্মের ব্যাপক অপব্যবহার করা হয়েছে। তাই ধর্মব্যবসা ও জঙ্গিবাদ একই বৃক্ষের দুটি শাখা। ধর্মব্যবসায়ীরাই ইসলামের প্রধান শত্রু। এদের দ্বারাই ধর্মগুলো বিকৃত হয়ে মানবজাতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তাই এদেরকে রসুলুল্লাহ আসমানের নিচে নিকৃষ্টতম জীব হিসাবে  বর্ণনা করেছেন। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৮২

তাহলে বুঝা গেলো বায়াজীদ খান পন্নীই জঙ্গিবাদ তৈরি করতে বদ্ধপরিকর ছিলো এবং সেই আসমানের নিচে সর্বনিকৃষ্ট। অথচ সেই নিকৃষ্ট এক নরকের কীটকে মহামান্য এমাম বলে যারা মানতে পারে তারা আর যাইহোক শিক্ষিত হতে পারে না।

নেতার ভুল আদেশও পালন করতে হবে:
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
নেতার আদেশ যদি ভুল মনে হয় তবুও তা দ্বিধাহীনভাবে পালন করবে। আদেশ ভুল হলে নেতা সেজন্য দায়ী থাকবে, পালনকারী নয়। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৫৪

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের বক্তব্য হলো, নেতা ভুল করলেও তা মানতে হবে।

ইসলাম কী বলে?
রাসূুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق
স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই। -জামে সগীর : হাদিস নং : ৯৮৮৪

হযরত উবাদাহ রা. বলেন,
بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةً عَلَيْنَا وَأَنْ لاَ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ إِلاَّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنْ اللهِ فِيهِ بُرْهَانٌ
আমাদের থেকে যে ওয়াদা তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণরূপে শোনা ও মানার উপর বাই’আত করলাম। আরও (বাই’আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঝাগড়া করব না। কিন্তু যদি স্পষ্ট কুফরী দেখ, তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে আলাদা কথা। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৭০৫৬

নবীজি সা. আরও স্পষ্ট করে বলেন,

لا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةٍ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ
আল্লাহর নাফরমানীর কাজে কোনরূপ আনুগত্য নেই। আনুগত্য করতে হয় কেবলমাত্র ন্যায়সঙ্গত কাজে। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৭২৫৭

ইসলামের প্রথম খলীফা আমিরুল মুমিনিন হযরত আবু বকর রা. খলীফা হওয়ার পর জনগনের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দেন, সে ভাষণে বলেন,
أطِيعُوني ما أطعْتُ اللهَ ورسولَه فإذا عصَيْتُ اللهَ ورسولَه فلا طاعةَ لي عليكم
তোমরা আমার অনুসরণ করবে সেসব বিষয়ে যে বিষয়ে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুসরণ করবো। যখনই আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হবো, তখন তোমাদের আমার প্রতি কোনো অনুসরণ নেই। -মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : বর্ণনা নং : ২০৭০২

সুতরাং বুঝা গেলো, নেতার আদেশ-নিষেধ মান্য করতে হবে সেগুলো, যেগুলো কুরআন-সুন্নাহ সম্মত। নিজের মনগড়া ও ইসলাম বিরোধী কোনো কথা মানা যাবে না।

Check Also

আত্মশুদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান:

নফস হলো মানব জিবনের এক ভয়ঙ্কর ফিৎনার কেন্দ্রস্থল। কারণ নফস বেশিরভাগ সময়েই মানুষকে খারাপ কর্মের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.