Home > হিজবুত তাওহীদ > আল্লাহপাকের ব্যাপারে মন্তব্য:

আল্লাহপাকের ব্যাপারে মন্তব্য:

মহান আল্লাহপাক এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তিনি কারো পিতা নন, তাঁর কোনো স্ত্রী বা সন্তান নেই, তিনি অতুলনীয়, তাঁর সাথে কারো শরীকস্থাপন করার কোনো সুযোগ নেই। না তাঁর জাতের সাথে, না তাঁর সিফাত বা গুনাবলির সাথে। তিনি চিরঞ্জিব, তাঁর কোনো মৃত্যু নেই, তন্দ্রাও নেই। তাঁর ক্ষমতা সর্বময় ও সর্বত্র সমানভাবে চলমান। তিনি প্রভূত্বের আসনে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। তাঁর ওপর কারো কোনো ক্ষমতা চলে না, তাঁর ক্ষমতায় কেউ হস্তক্ষেপও করতে পারে না। তিনিই সবার স্রষ্টা, অতএব সকল মানবমণ্ডিল জন্য তাঁর নৈকট্য অর্জন করা ফরজে আইন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হেযবুত তওহীদ খোদ আল্লাহপাকের ব্যাপারে যেসকল আকীদা পোষণ করে তা নির্ঘাত শিরক ও কুফরি। চলুন এক নজরে সেসব বিশ্বাসগুলো জেনে নেওয়া যাক। তাদের দাবি হলো-
১. আল্লাহ তাআলা প্রভুত্বের আসনে নেই!
২. আল্লাহর প্রভূত্বের আসন ফিরিয়ে দিতে হেযবুত তওহীদ চেষ্টা করছে।
৩. আল্লাহ, ঈশ্বর, গড, ব্রহ্মা সবই এক।
৪. আল্লাহর সকল গুনাবলী মানুষের মাঝে আছে।
৫. মানুষের ক্ষমতা আল্লাহর মতোই।
৬. ইবলিসের কাছে আল্লাহ হেরে গেছেন।
৭. আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা আবশ্যক নয়।

চলুন প্রত্যেকটি বিষয়ে প্রমাণসহ আলোচনা করা যাক।

আল্লাহ তাআলা প্রভুত্বের আসনে নেই!

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
বাংলাদেশে গড়ে ওঠা নতুন উগ্রবাদি একটি কুফরী দলের নাম হেযবুত তাওহীদ। এদের অনেকগুলো মনগড়া বিশ্বাসের মধ্যে একটি হলো- ‘আল্লাহ তায়ালা প্রভুত্বের আসনে নেই’। নাউযুবিল্লাহ। দেখুন তারা কী লিখেছেন,
সমস্ত পৃথিবী যার করতলগত সেই মহা শক্তিধর দাজ্জালকে হটিয়ে দিয়ে প্রভুত্বের আসনে আল্লাহ তায়ালাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার মতো আপাতঃ দৃষ্টিতে অসম্ভব কাজটি করার দায়িত্বে তোমরা নিজেদের নিয়োজিত করেছো। – আসমাউ ওয়া আত্তাবেয়্যু, পৃ. ৬

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো,
১. বর্তমানে আল্লাহ পাক তাঁর প্রভূত্বের আসনে নেই।
২. আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রভূত্বের আসন ফিরে পেতে হেযবুত তওহীদ কে দায়িত্ব দিয়েছেন।

ইসলাম কী বলে?
এক. আল্লাহ পাক কী তাঁর প্রভূত্বের আসনে নেই?
প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন, তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের দু’টি বিষয় আগে জানতে হবে। তাহলে বুঝতে সহজ হবে। ১. ‘প্রভুত্ব’ অর্থ কী? ২. ‘পুনঃপ্রতিষ্ঠিত’ অর্থ কী?

প্রভুত্ব অর্থ কী?
প্রভূ আর প্রভূত্বের মাঝে বিস্তর তফাৎ আছে। যেহেতু এটা বাংলা শব্দ সেহেতু বাংলা অভিধান থেকে জেনে নেওয়া উচিৎ। চলুন কী লেখা আছে দেখা যাক-
প্রভু’ অর্থ হলো- আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবান, মনিব, পূজনীয় সত্তা। আর ‘প্রভুত্ব’ অর্থ হলো- ঐ আল্লাহ তা’আলার কর্তৃত্ব, আধিপত্য, প্রভুশক্তি, এক কথায় বলি আল্লাহ তা’আলার ক্ষমতা। -আধুনিক বাংলা অভিধান, পৃ. ৮৭১

তাহলে হেযবুত তওহীদের বক্তব্য অনুসারে বুঝা গেলো আল্লাহ তাঁর প্রভুত্বের আসনে তথা নিজের ক্ষমতার আসনে এখন নেই। তাই তাঁকে পূনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

পুনঃপ্রতিষ্ঠিত’ অর্থ কী?
তাদের উল্লেখ করা ‘পুনঃপ্রতিষ্ঠিত’ শব্দটির অর্থ হলো – কোন জিনিস আগে প্রতিষ্ঠিত ছিলো, কিন্তু এখন নেই, ফলে পরবর্তীতে আবার প্রতিষ্ঠিত হলে, এটাকেই বলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত। যেমনঃ প্রচার-পুনঃপ্রচার, প্রবেশ – পুনঃপ্রবেশ। ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠিত – পুনঃপ্রতিষ্ঠিত। বাংলায় ‘পুনঃ’ শব্দটি, পুনরায়/দ্বিতীয়বার অর্থে ব্যবহারিত হয়’। -বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান, পৃ. ৮৩০

তাহলে তাদের বক্তব্য থেকে বুঝা গেলো, আল্লাহ পাক তাঁর ক্ষমতার আসনে আগে ছিলেন, কিন্তু এখন নেই, তাই পুনরায় সে আসনে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অথচ পবিত্র কোরআন মাজিদে অসংখ্য জায়গায় বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ পাকের ক্ষমতা চিরস্থায়ী। নিন্মে ককয়েকটি আয়াত পেশ করা হলো। মহান রব বলেন,
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ
আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। তাঁহাকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করেনা। আকাশ ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সমস্ত তাহারই। -সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৫

প্রিয় পাঠক! এই আয়াতে যে القيوم শব্দ এসেছে, এই القيوم শব্দের ব্যাখ্যায় সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
الَّذِي لَا يَحُولُ وَلَا يَزُولُ
যিনি পরিবর্তন বা বিলীন হন না। -তাফসীরে কুরতুবী, খ. ৪ পৃ. ২৬৮

অর্থাৎ القيوم শব্দের অর্থ হলো-সৃষ্টির তত্ত্বাবধান ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য যে সত্ত্বা অনাদি ও অনন্তকালব্যাপী বিরাজমান, আপন সত্তার জন্য যিনি কাহারও মুখাপেক্ষী নন। অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
পূণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। -সূরা মূলক : ১

وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ إِلاَّ عَلَى اللّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে। -সূরা হুদা : ৬

إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়। অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। -সূরা ইয়াসিন : ৮২-৮৩

وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ
তোমার রব যা ইচ্ছা, তাই সৃষ্টি করেন। -সুরা কাসাস : ৬৮

فعال لما يريد
আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তাই করেন। -সুরা বুরুজ : ১৫

এই আয়াতগুলোর মাধ্যমেই প্রমাণিত হলো, আল্লাহ পাক, যখন যা ইচ্ছা তাই করেন এবং করতে সক্ষম। যদি আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রভুত্ব তথা ক্ষমতার আসনে না থাকেন, তাহলে আল্লাহ যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করেন কিভাবে? সুতরাং আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা চিরস্থায়ী ও সর্ব সময়ে চলমান। সাময়িক সময়ের জন্য আল্লাহ তা’আলা ক্ষমতা বিহীন থাকবেন, এটা কল্পনাও করাও অসম্ভব। সুতরাং আল্লাহর ক্ষমতা চিরস্থায়ী কেউ তাঁকে তাঁর ক্ষমতার আসন থেকে হটাতে পারে না। তাহলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার তো প্রশ্নই আসেনা! এমন বিশ্বাস যারা রাখে, তারা নিশ্চিত মুসলমান হতে পারে না।

আল্লাহর প্রভূত্বের আসন ফিরিয়ে দিতে হেযবুত তওহীদ চেষ্টা করছে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, ‘দাজ্জালের হাত থেকে পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব ছিনিয়ে নিয়ে আল্লাহর হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই সংগ্রাম করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। -ধর্মবিশ্বাস পৃ. ২০

এর দ্বারা তারা কী বুঝাতে চাচ্ছে? আল্লাহ তাঁর আসন ফিরে পেতে হেযবুত তওহীদের মুখাপেক্ষী? যদি তাই হয়, তাহলে আল্লাহ পাকের বানী মনে রাখা চাই, মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করছেন,
اللّٰه الصمد
আল্লাহ কাহারো মুখাপেক্ষী নন, (সকলেই তাহার মুখাপেক্ষী)। -সূরা ইখলাস : ২

সুতরাং প্রমাণ হলো, আল্লাহ পাক তাঁর প্রভুত্ব তথা ক্ষমতার আসনে সর্বদার জন্য ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তিনি যেহেতু তাঁর ক্ষমতার আসন থেকে সামান্য সময়ের জন্যও বিচ্যুৎ নন, সেহেতু হেযবুত তওহীদ সে আসন ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করছে বলে এ দাবিটা চরম মিথ্যা ও বানোয়াট এবং আল্লাহ পাকের নামে সর্বৈব মিথ্যাচার। এদের ব্যাপারেই মহান রব বলেন,
لَّعْنَةُ اللّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ
তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। -সূরা আলে ইমরান : ৬১

আল্লাহ, ঈশ্বর, গড, ব্রহ্মা সবই এক:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, মুসলমানদের আল্লাহ, খ্রিষ্টানদের গড, হিন্দুদের ব্রহ্মা সবই এক। সবাই তারই আনুগত্য করছে। তারা লিখেছে,
সকলের আদিতে যিনি তিনি স্রষ্টা, সবকিছু শেষেও তিনি। তিনিই আলফা, তিনিই ওমেগা। কারো কাছে তিনি আল্লাহ, কারো কাছে ব্রহ্মা, কারো কাছে গড। সে যে নামেই ডাকুক সেই মহান সৃষ্টার প্রশ্নহীন আনুগত্যই সকল দর্শনের ভিত্তি’। -সকণ ধর্মের মর্মকথা সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ৪

অর্থাৎ তারা দাবি করতে চায়-
১. ব্রহ্মা, গড, ঈশ্বর ও আল্লাহ তা’আলা একই সত্তা।
২. মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মাবলম্বীরা প্রশ্নহীনভাকে আল্লাহ তা’আলারই আনুগত্য করছে।

ইসলাম কী বলে?
মুসলমানদের আল্লাহ তা’আলা, হিন্দুদের ব্রহ্মা ও খ্রিষ্টানদের আলফা-ওমেগা, গড বা ঈশ্বর কখনই এক নয়। অর্থাৎ মুসলমানদের আল্লাহ’র প্রতি যে বিশ্বাস তার সাথে হিন্দু ব্রহ্মা ও খ্রিষ্টানদের গড বা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস কখনই এক নয়, বরং আসমান যমীনের ব্যবধান। কারণ হিন্দুরা যাবে ব্রহ্মা মনে করে মুসলমানরা তাকে আল্লাহ মনে করেন না। দেখুন আল্লাহ তা’আলা ও ব্রহ্মার মাঝে কত তফাৎ!

হিন্দুদের ব্রহ্মা:
হিন্দুরা যাকে ব্রহ্মা মনে করেন, তার ব্যাপারে তাদের ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে,
সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী, দেবসেনা ও দৈত্যসেনা এঁর দুই কন্যা। ব্রহ্মা চতুর্ভুজ চতুরানন ও রক্তবর্ণ। প্রথমে তাঁর পাঁচটি মস্তক ছিলো; কিন্তু একদা শিবের প্রতি অসম্মানসূচক বাক্য উচ্চারণ করায় শিবের তৃতীয় নয়নের অগ্নীতে ব্রহ্মার একটি মস্তক দগ্ধ হয়। ব্রহ্মার বাহন হংস’। -পৌরনিক অবিধান পৃ. ৩৮৩

তাদের ধর্মগ্রন্থে আরও লেখা আছে, ‘শতরুপা, প্রথমা নারী। তিনি ব্রহ্মার কন্যা। মৎসপুরানে আছে, নয় জন মানসপুত্র সৃষ্টি করার পর ব্রম্মা এক কন্যা সৃষ্টি । এই কন্যাই শতরূপা, সাবিত্রী, গায়ত্রী, স্বরস্বতী, ও ব্রাহ্মণী নামে খ্যাতা। শতরূপার রূপে মুগ্ধ হয়ে সৃষ্টিকর্তা ব্রম্মা তার কন্যা শতরূপাকে গ্রহণ করেন। ব্রহ্মা তার কন্যার সঙ্গে অজাচারের ফলে প্রথম মনু সায়ম্ভুব-এর জন্ম হয়’। -পৌরাণিক অভিধান, পৃ. ৪৯৫

অর্থাৎ হিন্দুরা যাকে ব্রহ্মা মনে করেন, তার ৫টি মাথা ছিলো, শিব একটি মাথা ধ্বংশ করে দেয়, তার কালার রক্তবর্ণ, তার সন্তান-স্ত্রী সবই আছে। এমন কি ব্রহ্মা নিজের মেয়ের সাথে কুকর্ম করে মনুকে জন্ম দেন। অথচ মুসলমানরা যাঁকে আল্লাহ মনে করেন, তিনি এ সব থেকে পবিত্র। আল্লাহ পাক ঈমানদের বিশ্বাস সম্পর্কে বলেন,
وَأَنَّهُ تَعَالَى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا
এবং আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই। -সূরা জ্বিন : ৩

সুতরাং প্রমাণ হলো, হিন্দুদের ব্রহ্মা আর মুসলমানদের। আল্লাহ কস্মিনকালেও এক হতে পারে না।

খ্রিষ্টানদের গড বা ঈশ্বর:
তদ্রুপ খ্রিষ্টানরা যাকে আলফা ওমেগা বা গড-ঈশ্বর বলে তার প্রতি যে বিশ্বাস রাখে, সে বিশ্বাস মুসলমানদের হতেই পারে না। চলুন খ্রিষ্টানদের ঈশ্বর সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস কী তা দেখে নেওয়া যাক-

খ্রিষ্টানদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস:
১. ঈশ্বর অনেক কিছুই দেখেন না’। -পয়দায়েশ ৩:৯, ১৮:২০-২১
২. ঈশ্বর না বুঝে কাজ করে পরে অনুশোচনা করেন। -পয়দায়েশ ৬:৫-৭
৩. ঈশ্বর অমঙ্গল বিধান দেন। -ইহিস্কেল ২০:২৫
৪. ঈশ্বর মানুষের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছেন। -পয়দায়েশ ১৮:১-১৮
৫. ঈশ্বর সাতটি বৃহৎ জাতিকে গণহত্যার মাধ্যমে নির্দয়ভাবে নির্মূল করতে বলেন এবং ক্ষমা করতে নিষেধ করেন’। -দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১-২
৬. ঈশ্বর মানুষের পাপের শাস্তি তার সন্তান এবং স্ত্রীদের দেন। -হোশেয় ১৩:১৬
৭. ঈশ্বর ইবলিসের সাথে বিতর্কে জিততে বা নিজের কথা সত্যতা প্রমাণ করতে তার প্রিয় শয়তানের হাতে সমর্পণ করেন। -আইয়ুব ২:১-১০
৮. ঈশ্বর ব্যাভিচারের ব্যবস্থা করে দেন। -২ শমূয়েল ১২:১১

প্রিয় পাঠক, এখন আপনারাই বলুন, খ্রিষ্টানরা যাকে ঈশ্বর মনে করেন এবং যার প্রতি এ রকম ধারণা বা বিশ্বাস রাখেন, এই ঈশ্বর আর মুসলমানদের আল্লাহ তা’আলা কী কখনই এক হতে পারেন?

খ্রিষ্টানরা যাকে গড বা ঈশ্বর মনে করেন,তারা দাবি করেন যে ঈশ্বরের পূত্র হলেন যিশুখ্রিস্ট। -যোহন ১০:২৫-৩৯
উপরন্তু খ্রিষ্টান যিশুখ্রিস্টকে ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করে থাকেন’। -যোহন ১:১-৪, ১০:৩০

প্রিয় পাঠক, এখন আপনারাই বলুন, খ্রিষ্টানরা ঈশ্বর বলে যাঁকে অবিহিত করেন, তাদের ঈশ্বর আর মুসলমানদের আল্লাহ কী কখনই এক হতে পারে? আল্লাহ তা’আলার নামের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে কী বলা হয়েছে? যারা কোরআন ও হাদিসের সামান্য জ্ঞান রাখে তারাও জানেন যে, কোরআন-হাদিসে আল্লাহর অসংখ্য সুন্দর সুন্দর বর্ণিত হয়েছে। আর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সে সকল নামের ওসিলা দিয়ে দু’আ করার এবং সে সব নাম ধরে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلِلَّـهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে সব নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে’। -সূরা আরাফ : ১৮০

অত্র আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহপাকের নামে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। হেযবুত তওহীদ কী এ আয়াতটি দেখে না? দেখবে কিভাবে? কুরআন শরীফ তো পড়তেও জানে না এ জাহেলরা।

আল্লাহর নাম:
আল্লাহ পাক তাঁর নামের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলেন,
قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الأسْمَاءُ الْحُسْنَى
তুমি বল, তোমরা আল্লাহ নামে ডাক কিংবা রহমান নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই রয়েছে উত্তম নামসমূহ। -সূরা ইসরা : ১১০

হাদিস শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন:
أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ ، أَوْ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ
আমি আপনার সেই সকল নাম ধরে প্রার্থনা করছি, যে নামগুলো আপনি নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন। অথবা সৃষ্ট জগতের কাউকে শিক্ষা দিয়েছেন, অথবা আপনার কিতাবে নাজিল করেছেন অথবা আপনার নিজের কাছেই ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান)এ সংরক্ষিত রেখে দিয়েছেন। -মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং : ৩৭১২

সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলামে আল্লাহ পাকের নাম কী কী তা বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ পাকের নাম কতটি?
আল্লাহ তায়ালার নামের সংখ্যার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। নবিজি সাঃ ইরশাদ করেন,
إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلاَّ وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ ‏
অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম অর্থাৎ- এক কমে একশটি নাম রয়েছে। যে লোক তা মুখস্ত বা আয়াত্ত করবে সে জান্নাতে গমন করবে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০৩

সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল, আল্লাহ তা’আলা যে সকল নাম নিজের জন্য পছন্দ করেছেন, সেগুলো ধরে আহ্বান করা। এ ছাড়া অন্যান্য নাম বর্জন করা উচিৎ। অতএব আল্লাহ তা’আলাকে বুঝাতে গড, ঈশ্বর ইত্যাদি শব্দ পরিত্যাগ করা উচিৎ। তবে অনারব ভাষায় তার নামের অর্থ ধরে আহ্বান করায় কোন আপত্তি নেই। যাহোক, ঈশ্বর, গড, ব্রহ্মা ইত্যাদী যেহেতু কুরআন-সুন্নাহ’ই বর্ণিত হয়নি, সেহেতু বিজাতীয়দের খুশি করতে আল্লাহ, গড, ঈশ্বর, ব্রহ্মা, আলফা-ওমেগা সব এক করার সুযোগ নেই।

আল্লাহর রুহ ও সকল গুনাবলী মানুষের মাঝে আছে?
আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরীক নেই, হতে পারে না, হবে না। তিনি অমুখাপেক্ষী, তাঁর কোনো সমকক্ষ নেই। তিনি তাঁর সত্তায় এবং সিফাতে তথা সকল গুনাবলীতে এক ও অদ্বিতীয়। কিন্তু হেযবুত তওহীদ আল্লাহর সাথে অশংশিদারিত্ব স্থাপন করেছে সুস্পষ্টভাবে। চলুন আগে তাদের কিছু বক্তব্য দেখে নেওয়া যাক।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
নিন্মে হেযবুত তওহীদের কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরা হলো,

আল্লাহ তাঁর নিজের আত্মা ও সমস্ত সিফত মানুষকে প্রদান করেছেন। তাই আল্লাহ সৃষ্টি করলেন আদম আ. কে । যেহেতু এর দেহের ভেতর তিনি তাঁর নিজের আত্মা স্থাপন করবেন সেই সম্মানে আদমের দেহ তিনি তৈরী করলেন কোনো কুন আদেশ দিয়ে নয় তাঁর নিজের হাতে। তারপর তাঁর দেহের মধ্যে আল্লাহ তাঁর নিজের আত্মা থেকে ফুঁকে (প্রবেশ করিয়ে) দিলেন, আল্লাহ তাঁর নিজের আত্মা, যেটাকে তিনি বলেছেন আমার আত্মা, সেটা থেকে আদমের মধ্যে ফুঁকে দেওয়ার অর্থ আল্লাহর কাদেরিয়াত অর্থাৎ যা ইচ্ছা তা করার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিসহ আল্লাহর সমস্ত সিফত, গুন, চরিত্র আদমের মধ্যে চলে আসা।-দাজ্জাল : পৃ. ১০

মানুষের ভেতর স্রষ্টার রূহ অর্থাৎ পরমাত্মার অংশ রয়েছে। -আক্রান্ত দেশ ও ইসলাম : পৃ. ১৯

মানুষ জন্তু জানোয়ারের মত কেবল দেহসর্বস্ব ভোগ সর্বোস্ব প্রাণী নয়, তার ভিতরে আছে আল্লাহর রূহ, আল্লাহর আত্মা, এজন্য মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ৯

তিনি (আল্লাহ) নিজ হাত দিয়ে আদমকে বানালেন এবং তার ভিতর নিজের রুহ প্রবেশ করিয়ে দিলেন, মানুষ আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হল। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৬৭

মানুষের মধ্যে তার নিজের  রূহ প্রবিষ্ট করেছেন ফলে মানুষই একমাত্র সৃষ্টি যা আল্লাহর পবিত্র রুহ নিজের সত্তায় ধারণ করে। এর অর্থ সে আল্লাহর গুণাবলী তথা সিফাতগুলো ধারণ করছে। -গঠনতন্ত্র : পৃ. ৯

আদমের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি যা আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই তা এবং আল্লাহর অন্যান্য সকল সিফাত বা গুন প্রবেশ করিয়ে দিলেন। কাজেই এই নতুন অসাধারণ সৃষ্টির নাম দিলেন আল্লাহ খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি। -আকীদা : পৃ. ৫

আল্লাহর রুহ আদমের অর্থাৎ মানুষের ভেতরে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে অন্যান্য সমস্ত সৃষ্ট জিনিষের চেয়ে বহু ঊর্ধ্বে উঠে গেল, কারন তার মধ্যে তখন স্বয়ং আল্লাহর সমস্ত সীফতসহ স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি এসে গেল যা আর কোন সৃস্ট জীবের মধ্যে নাই  : তাকওয়া ও হেদায়া : পৃ. ১

আল্লাহ তার নিজের আত্মা যেটাকে তিনি বলছেন আমার আত্মা সেটা থেকে আদমের মধ্যে ফুঁকে দেওয়ার অর্থ আল্লাহর কাদেরিয়াত অর্থাৎ যা ইচ্ছা তা করার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিসহ আল্লাহর সমস্ত সিফত,গুন, চরিত্র আদমের মধ্যে চলে আসা। আল্লাহর রূহ আদমের অর্থাৎ মানুষের ভেতরে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে অন্যান্য সমস্ত সৃষ্ট জিনিসের চেয়ে বহু উর্ধ্বে উঠে গেল। কারণ তার মধ্যে তখন স্বয়ং আল্লাহর সমস্ত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এসে গেল। আর কোন সৃষ্টির মধ্যে নেই। -দাজ্জাল : পৃ. ১০

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদ বুঝাতে চায়, আল্লাহ তাঁর স্বীয় রুহ তথা পরম আত্মা মানুষের মধ্যে ফুঁ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফলে আল্লাহর যত গুনেগুনান্বিত সব গুন বান্দারও আছে, এমনকি আল্লাহর সকল স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি বান্দারও আছে। নাউযুবিল্লাহ।

ইসলাম কী বলে?
প্রিয় পাঠক, তাওহীদের কথা বলে মুখে ফেনা তোলা লোকগুলো এতটাই গভীরভাবে আম জনতার মাঝে শিরক ঢুকাচ্ছে, যা হঠাৎ কেউ ধরতে পারবে না। উপরে খেয়াল করুন, হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, আল্লাহর পরম আত্মা এবং তিনি যত গুনেগুনান্বিত সব গুন বান্দারও আছে, এমনকি আল্লাহর সকল স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি বান্দারও আছে। অথচ এ আক্বীদা কোনো মুসলিমের আক্বীদা নয়, বরং এটা খ্রিস্টান ও মুশরিকদের আকীদা। যেটাকে ‘আক্কীদায়ে হুলুল’ বলে। অথচ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের স্বীকৃত আকীদা হলো, আল্লাহপাকের যাত ও সিফাত ‘কাদীম’ তথা অবিনশ্বর। তাঁর কোনো শুরু-শেষ নেই। তিনি তেমন, তিনি যেমন। তাঁর কোনো তুলনা নেই। তিনি স্রষ্টা বাকি সবই তাঁর সৃষ্টি। তিনি যেহেতু অবিনশ্বর, সেহেতু তাঁর যাত বা গুনাবলী কারো মধ্যে প্রবেশ করে না। কারণ সকল সৃষ্টি ধ্বংশশীল। সুতরাং যদি আল্লাহপাকের কোনো সিফাত বা গুনাবলী কোনো সৃষ্টির মধ্যে প্রবেশ করে, তাহলে ঐ সৃষ্টি ধ্বংশের সাথে সাথেই আল্লাহপাকের সিফাতও ধ্বংশ হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে। যা কল্পনা করাও অসম্ভব। অথচ হেযবুত তওহীদ আল্লাহপাকের সিফাত তথা শুধু গুনাবলী নয়, বরং ‘সরাসরি আল্লাহর রুহ বান্দার মধ্যে আছে’ বলে আল্লাহপাকের যাতের ব্যাপারে এমন আকীদা পোষন করেছে। অথচ এমন আকীদা পোষণ করা সরাসরি শিরক। এ ব্যাপারে ইমাম হামোবী রহি. লিখেছেন,
ومن قال: إن شيئاً من صفات الله حال في العبد، أو قال بالتبعيض على الله فقد كفر
যে ব্যক্তি বলবে আল্লাহ তাআলার সিফাত সমূহের মধ্যে থেকে কোনো সিফাত বান্দার মাঝে প্রবেশ করেছে, কিংবা আল্লাহর যাত বা সিফাতের কোনো অংশ বান্দার মাঝে প্রবেশ করার প্রবক্ত হবে সে কাফের। -আল ফাতাওয়া আল হামোবীয়াহ : খ. ১ পৃ. ১১১

ইমাম তহাবী রাহ. আল্লাহ তাআলার ওপর মানবীয় গুণ আরোপের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন-
ومن وَصَفَ الله بمعنى من معاني البشر فقد كفر، فمن أبصر هذا اعتبر، وعن مثل قول الكفار انزجر، وعلم أنه بصفاته ليس كالبشر.
যারা আল্লাহ তাআলাকে মানবীয় কোনো বৈশিষ্ট্যে বিশেষিত করে তারা মূলত কুফরে লিপ্ত হয়। সুতরাং যারা এবিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হয় তারা সঠিক শিক্ষা লাভ করে, তারা কাফেরদের মতো কথা বলা থেকে বিরত থাকে এবং তারা বুঝতে পারে যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর গুণাবলির ক্ষেত্রে মানুষের মতো নন। -আলআকীদাতুত তহাবিয়্যাহ, পৃ. ৫৭-৫৮

খ্রিষ্টান মতবাদ ও হেযবুত তওহীদের মতবাদ অভিন্ন:
সমস্ত নবী-রাসূল একমত যে, রূহ আল্লাহর সৃষ্টি, তৈরি, তাঁর দ্বারা প্রতিপালিত ও তাঁরই হুকুমে পরিচালিত। মহান রব বলেন,
وَیَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلرُّوحِۖ قُلِ ٱلرُّوحُ مِنۡ أَمۡرِ رَبِّی وَمَاۤ أُوتِیتُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِ إِلَّا قَلِیلࣰا
(হে নবী!) তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, রূহ আমার প্রতিপালকের হুকুমঘটিত। তোমাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে সামান্যমাত্র। -সুরা ইসরা : ৮৫

সুতরাং বুঝা গেলো, রুহ এটা আল্লাহপাকের হুকুমে পরিচালিত একটি বিষয়। এটা দীনের অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞাতব্য বিষয়, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সকল সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের যুগে এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য ছিলো না, আর এ তিনটি যুগ ছিলো সর্বোত্তম যুগ। এরপর পথভ্রষ্ট ও অভিশপ্ত খ্রিষ্টানরা দাবি করলো যে, রূহ আল্লাহর সৃষ্টি নয়; বরং তারা মনে করে থাকে ‘ঈসা আ.-এর মধ্যে আল্লাহর রুহের অংশ আছে।’ আর এই কারণেই তারা ঈসা আ. থে আল্লাহর সন্তান বলে দাবি করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ। এব্যাপারে বিশিষ্ট ইমাম হযরত মুহাম্মদ বিন নছর আল মারওয়াযী রহি. বলেন,
تأوَّل صنف من الزناديقة وصنف من الروافض في روح آدم ما تأولته النصارى في روح عيسى وما تأوله قوم من أن الروح إنفصل من ذات الله فصار فى المؤمن
যিন্দিক ও রাফেযীদের এক দল আদম আ. এর রূহের ব্যাপারে এমন ব্যাখ্যা করে, খ্রিষ্টানরা ঈসা আ. এর রূহের ব্যাপারে যেমন ব্যাখ্যা করেছে। এ ধরণের ব্যাখ্যা আরো এক দল করে যে, রূহ আল্লাহ তায়ালার যাত থেকে পৃথক হয়ে মুমিনদের মাঝে প্রবেশ করেছে। -আর রূহ ফিল কালাম আলা আরওয়াহীল আমওয়াত। -পৃ. ১৬৩

ইমাম মুহাম্মদ বিন নছর আল মারওয়াযী রহি.-এর এ বক্তব্য দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলার আত্মা আদম আ. এর মাঝে প্রবেশ করার এ আকীদা বস্তুত খ্রিষ্টান, মুরতাদ ও রাফেযীদের আকীদা। এমনকি ইবনে কাসীর রহি. বলেন,
أي من خلقه ومِنْ عنده  وليست (مِنْ) للتبعيض كما تقوله النصارى عليهم لعائن الله المتتابعة بل هي لابتداء الغاية
‘আল্লাহর রুহ থেকে’ মানে হলো, তার সৃষ্টি থেকে বা তাঁর পক্ষ থেকে। আল্লাহর অংশ থেকে নয়। যেমনটা মনে করে অভিশপ্ত খ্রিষ্টানলা। (অর্থাৎ তারা মনে করে ঈসা আ. আল্লাহর সত্ত্বার অংশ’।)  সুতরাং এখানে من ‘থেকে’ শব্দটা ابتداء এর তথা ‘শুরু” অর্থ বুঝানোর জন্য ব্যবহ্নত হয়েছে, تبعيض তথা (আল্লাহর) অংশ বুঝানোর জন্য নয়। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৪ পৃ. ৩৮৯

বুঝতে পারলাম এই আকীদাটা তথা ঈসা আ.-এর ভেতর আল্লাহর রুহ তথা পরমাত্মার অংশ রয়েছে বলে ঈসা আ.-কে আল্লাহর অংশ বলে বিশ্বাস করে থাকে খ্রিষ্টানরা। কিন্তু হেযবুত তওহীদরা তো পুরো মানবজাতিকে আল্লাহর অংশ বলে দাবি করে বসলো। তাহলে এই আক্বীদার কারণে হেযবুত তওহীদ কী খ্রিষ্টানদের চেয়েও বড় কাফের-মুশরিক নয়? এমন কুফরী ধারণা বা বিশ্বাস মুসলমানদের অন্তরে প্রবেশ করিয়ে মুসলিমদের মুশরিক বানানোর মিশন হাতে নিয়ে হেযবুত তওহীদ কী মাঠে নামেনি?

আল্লাহ’র রুহ মানে কী?
তবে একটি প্রশ্ন থেকেই যায় যে, আল্লাহ তো নিজেই বলেছেন, তাঁর রুহ তিনি বান্দার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন। এর অর্থ কী? চলুন এ সম্পর্কিত আগে আয়াতটি দেখা যাক। মহান আল্লাহ বলেন,
ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِ
অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন। -সুরা সাজদাহ : ৯

উক্ত আয়াতসহ অন্য যেসকল আয়াতে আদম আ. ও মানুষের ভেতর আল্লাহ’র রুহ ফুঁকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেখানে আল্লাহ তাঁর রুহ তাঁর বান্দার মাঝে ফুঁকে দিয়েছেন এর অর্থ এমনটা নয় যে, আল্লাহ তাঁর সত্ত্বাগত রুহের অংশ বান্দার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন, বরং আল্লাহর রুহ মানুষের মাঝে ফুঁকে দেওয়ার প্রকৃত অর্থ হলো, মানবজাতির গুরুত্ব ও সম্মানের আধিক্যতা বুঝানো। চলুন এ ব্যাপারে কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরা যাক। ইবনে আব্বাস রা. এর বক্তব্য:
أنَّ الرَّوْحَ خَلْقٌ مِن خَلْقِ اللَّهِ عَزَّ وجَلَّ صُوَرُهم عَلى صُوَرِ بَنِي آَدَمِ
‘রুহ’ আল্লাহর সৃষ্টি থেকে একটি সৃষ্টি। যা আল্লাহ তাআলা আদম সন্তানের আকারে গঠন করেছেন। -তাফসীরে জাওযী, খ. ৫ পৃ. ৬০

ইমাম রাযী রহি. বলেন,
وإنَّما أضافَ اللَّهُ سُبْحانَهُ رُوحَ آدَمَ إلى نَفْسِهِ تَشْرِيفًا لَهُ وتَكْرِيمًا
‘আদমের রুহ’কে আল্লাহ তাঁর নিজের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, হয়েছে আদমের সম্মানার্থে। -তাফসীরে রাযী : খ. ১৯ পৃ. ১৮৬

ইমাম কুরতুবী রহি. বলেন,
فَالرُّوحُ خَلْقٌ مِنْ خَلْقِهِ أَضَافَهُ إِلَى نَفْسِهِ تَشْرِيفًا وَتَكْرِيمًا كَقَوْلِهِ أَرْضِي وَسَمَائِي وَبَيْتِي وَنَاقَةُ اللَّهِ وَشَهْرُ اللَّهِ وَمِثْلُهُ
‘রুহ’ হলো আল্লাহর সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত। মানুষের রুহকে আল্লাহ তাঁর নিজের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, হয়েছে মানুষের সম্মানার্থে। যেমন- অন্যত্রে আল্লাহর বলা ‘আমার যমীন, আমার আসমান, আমার ঘর এবং আল্লাহর উটনী, আল্লাহর মাস ইত্যাদী। -তাফসীরে কুরতুবী : খ. ৯ পৃ. ১৭

বিষয়টি বুঝতে নিন্মোক্ত দুটি আয়াতের দিকে খেয়াল করুন। আল্লাহ পাক বলেন,
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
যখন আমি ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে। -সুরা হাজ্ব : ২৬

উক্ত আয়াতে কা’বা শরীফকে আল্লাহ পাক নিজের ঘর বলেছেন। এর অর্থ কী সেখানে আল্লাহ বসবাস করেন? নাউযুবিল্লাহ। নিশ্চয় না। কিন্তু ঘরটিকে আল্লাহ তা’আলা নিজের ঘর বলে আখ্যায়িত করেছেন কা’বা শরীফের সম্মানার্থে।

উপরন্তু সামুদ জাতিকে আল্লাহ সেই আলোচিত উটনীর ব্যাপারে বলেছিলেন,
هَـذِهِ نَاقَةُ اللّهِ لَكُمْ آيَةً
এটি আল্লাহর উষ্টী তোমাদের জন্যে প্রমাণ স্বরুপ। -সুরা আ’রাফ : ৭৩

উক্ত আয়াতে উট ও কা’বাকে আল্লাহ তাআলা রুপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। আল্লাম মাহমুদ বাগদাদী আলুসী রহ. বলেন,
أضافَ الرُّوحَ إلَيْهِ تَعالى تَشْرِيفًا لَهُ كَما فِي بَيْتِ اللَّهِ تَعالى وناقَةِ اللَّهِ تَعالى
রুহকে আল্লাহ নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছেন মানুষের সম্মানার্থে। যেমন কা’বাকে বাইতুল্লাহ এবং (সালেহ আ. এর উটকে) আল্লাহ তাআলার উট বলা। -তাফসীরে রুহুল মা’আনী, খ. ৮ পৃ. ১২১

এমনিভাবে নবী হযরত ঈসা আ. কে ‘রুহুল্লাহ’ বলা হয়। এগুলো সব কিছুই রুপক অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে, নির্দিষ্ট বিষয়কে সম্মান প্রদান করার জন্য। ইমাম বুখারি র. এর উস্তাদ নাঈম ইবনে হাম্মাদ র.বলেন ,
من شبه الله بخلقه كفر ومن حجد ما وصف الله به نفسه أو وصف به رسوله كفر وليس فيما وصف الله به نفسه أو وصف به رسوله تشبيه ولا تمثيل
যে ব্যক্তি আল্লাহকে মাখলুকের সঙ্গে তুলনা করল, সে কাফের হয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি এমন কোনো বিশেষণ অস্বীকার করল, যা আল্লাহ তাআলা নিজের ওপর প্রয়োগ করেছেন, অথবা তাঁর রাসূল তাঁর ওপর প্রয়োগ করেছেন, সেও কাফের হয়ে গেল। আর আল্লাহ তাঁর নিজের ওপর যে বিশেষণ প্রয়োগ করেছেন অথবা তাঁর রাসূল তাঁর ওপর যে বিশেষণ প্রয়োগ করেছেন, তাতে কোনো তাশবিহ তথা সাদৃশ্যকরণ, তামছীল তথা উপমানির্ধারণ নেই। -সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২০ পৃ. ৮৮

মনে রাখতে হবে, আল্লাহর রুহ ও তাঁর সমস্ত সিফাত মানুষের মধ্যে থাকা এই আকীদা একেবারেই শিরক ও কুফুরি। কারণ কোনো বান্দার মধ্যে আল্লাহর সব গুনাবলী বিদ্যমান বলে আল্লাহর সকল গুনাবলীর সাথে শরিক স্থাপন করা হয়েছে। অথচ আল্লাহ তাআলার সমকক্ষ বা অংশীদার হয় না। আল্লাহ তাআলা পরিস্কার ঘোষনা দিয়েছেন
وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
এবং তাঁর সমতুল্য, সমকক্ষ কেউ নেই। -সুরা ইখলাস : ৪

سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। -সুরা যুমার : ৬৭

যারা রবের সাথে অন্য কিছুর অংশীদার সাব্যস্ত করে তাদের ক্ষমা নেই। মহান আল্লাহ বলেন-
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء وَمَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করলো। -সুরা নিসা : ৪৮

শিরক মিশ্রিত কোনো নেক আমলই আল্লাহ তা’আলা কুবল করেন না, বরং শিরক সম্পাদনকারী সম্পূর্ণরূপে ইসলাম থেকে খারিজ-বহিস্কৃত। আল্লাহ পাক আরো বলেন,
وَلَوْ أَشْرَكُواْ لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
যদি তাঁরা (নবী রাসূলগণ) শিরক করতেন তবে অবশ্যই তাদের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যেত। -সুরা আনআ’ম : ৮৮

وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
এবং আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। -সুরা যুমার : ৬৫

উপরন্তু  শিরককারী জাহান্নামী যাবে। মহান রব বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। -সূরা মায়িদা : ৭২

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে বুঝা গেলো-
১. আল্লাহ তাআলার সমকক্ষ বা অংশীদার হয় না।
২. মুশরিকদের ক্ষমা নেই।
৩. মুশরিকদের সকল আমল বরবাদ।
৪. মুশরিকরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
সুতরাং আল্লাহর সকল গুনাবলী বান্দার মধ্যে রয়েছে বলে হেযবুত তওহীদের আক্বীদা স্ম্পূর্ণরুপে শিরকি আক্বীদা, যা ক্ষমাযোগ্য নয়।

যুক্তির আলোকে দলীল:
আল্লাহর রুহ মানে যদি আল্লাহর অংশগত রুহ হয়, তাহলে প্রশ্ন এসে যায়।
এক. মানুষের রুহ যদি আল্লাহর রুহের অংশ হয়, তাহলে হযরত আজরাঈল আ. যে মানুষের রুহ কবজ করেন, তাহলে এ কথা কী বলতে হবে না যে, আজরাঈল আ. আল্লাহর রুহ কবজ করেন। নাউযুবিল্লাহ। এটা কী কোনো বুদ্ধিমানের আক্বীদা হতে পারে? নিশ্চয় নয়।

এক. আল্লাহরই রুহ যদি অন্যদের মধ্যে থাকে, তবে তাদের রুহ কবজ মানেই কী আল্লাহর রুহ কবজ করা নয়?

দুই. হাদিস শরীফে অসংখ্য জায়গায় ঈসা আ. কে সরাসরি আল্লাহর রুহ বলা হয়েছে। এখন আল্লাহর রুহ বান্দার মধ্যে ফুঁকে দেওয়া হয়েছে, এটার অর্থ যদি হয়, আল্লাহর সত্ত্বাগত রুহের অংশ মানুষের মাঝে দেওয়া হয়েছে, তাহলে তো ঈসা আ. কে আল্লাহর রুহ বলার কারণে ঈসা আ. কে ‘আংশিক আল্লাহ’ বলে মেনে নিতে হবে। নাউযুবিল্লাহ।

সুতরাং বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদের এ আক্বীদা একটি কুফরী ও শিরকি আক্বীদা এবং খ্রিষ্টানদের আক্বীদা। যা কোনো মুসলিমের আক্বীদা হতে পারে না। সুতরাং চলুন সবাই এ কুফরী আক্বীদা থেকে নিজেকে বাঁচাই অন্যকেও বাঁচাতে সাহায্য করি।

মানুষের ক্ষমতা আল্লাহর মতোই।
মানুষকে আল্লাহ সবচে সম্মান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু সকল কিছুর ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর কাছে। এটা মুসলিমদের ও মুমিনদের আকীদা। কিন্তু হেযবুত তওহীদ নামক কুফরী দলের আকীদা হলো, আল্লাহর যত ক্ষমতা রয়েছে, সকল ক্ষমতা মানুষকে দিয়েই তিনি সৃষ্টি করেছেন।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘আদমের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি যা আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই তা এবং আল্লাহর অন্যান্য সকল সিফাত বা গুন প্রবেশ করিয়ে দিলেন। কাজেই এই নতুন অসাধারণ সৃষ্টির নাম দিলেন আল্লাহ খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি। -আকীদা : পৃ. ৫

আল্লাহ তার নিজের আত্মা যেটাকে তিনি বলছেন আমার আত্মা সেটা থেকে আদমের মধ্যে ফুঁকে দেওয়ার অর্থ আল্লাহর কাদেরিয়াত অর্থাৎ যা ইচ্ছা তা করার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিসহ আল্লাহর সমস্ত সিফত,গুন, চরিত্র আদমের মধ্যে চলে আসা। আল্লাহর রূহ আদমের অর্থাৎ মানুষের ভেতরে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে অন্যান্য সমস্ত সৃষ্ট জিনিসের চেয়ে বহু উর্ধ্বে উঠে গেল। কারণ তার মধ্যে তখন স্বয়ং আল্লাহর সমস্ত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এসে গেল। আর কোন সৃষ্টির মধ্যে নেই। -দাজ্জাল : পৃ. ১০

অর্থাৎ মানুষের মধ্যে আল্লাহর সমস্ত গুণ তথা শক্তি বা ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তার অর্থ হলো, আল্লাহর মধ্যে যে সব গুনাবলী আছে, সে সকল গুনাবলী মানুষের মধ্যেও রয়েছে।

ইসলাম কী বলে?
‘তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত’ হলো, ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অর্থাৎ এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর সকল সিফাতে কামাল তথা পূর্ণাঙ্গ গুণাবলিতে গুণান্বিত এবং সকল অপূর্ণাঙ্গ গুণাবলি থেকে পবিত্র এবং তিনি এ ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় এবং অতুলনীয়।

এ প্রকার তাওহিদে বিশ্বাস পোষণের পদ্ধতি হলো, আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজের জন্য যেসব নাম ও গুণাবলি তালিকাভুক্ত করেছেন অথবা যেসব নাম ও গুণের কথা উল্লেখ করেছেন- যা কুরআন-সুন্নাহ’য় উল্লিখিত হয়েছে- শব্দে অথবা অর্থে- সে-সবে কোনোরূপ বিকৃতিসাধন, অস্বীকৃতি ও বাতিলকরণ, তার হাকীকত কী তা নির্ণয়করণ ও তার ধরন-ধারণ নির্দিষ্টকরণ, এবং সৃষ্টিজীবের কোনো গুণের সঙ্গে সাদৃশ্যকরণ ব্যতীত তা মেনে নেয়া ও বিশ্বাস করা। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা সকল ক্ষমতায় ও গুনাবলীতে এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর ক্ষমতার অংশীদারিত্ব স্থাপন করা পরিস্কার শিরক। মহান আল্লাহ বলেন,
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْء
কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। -সুরা, শুরা : ১১

অর্থাৎ জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি,দেখা,শোনা,সৃষ্টি ইত্যাদী সকল বিষয়ে আল্লাহর সাথে কারও কোনো তুলনা নেই। যারা আল্লাহর সমকক্ষ মানুষকে বানাতে চায় তারা কি মুশিরক নয়? আল্লাহ তাআলা আরও স্পষ্ট করে বলেছেন,
قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ قُلِ اللّهُ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِ أَوْلِيَاء لاَ يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الأَعْمَى وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ أَمْ جَعَلُواْ لِلّهِ شُرَكَاء خَلَقُواْ كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ قُلِ اللّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
জিজ্ঞেস করুন নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা কে? বলে দিনঃ আল্লাহ! বলুনঃ তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা নিজেদের ভাল-মন্দের ও মালিক নয়? বলুনঃ অন্ধ চক্ষুষ্মান কি সমান হয়? অথবা কোথাও কি অন্ধকার ও আলো সমান হয়। তবে কি তারা আল্লাহর জন্য এমন অংশীদার স্থির করেছে যে, তারা কিছু সৃষ্টি করেছে, যেমন সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ? অতঃপর তাদের সৃষ্টি এরূপ বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুনঃ আল্লাহই প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনি একাই এমন, একচ্ছত্র পরাক্রমশালী। -সুরা রা’দ : ১৬

সুতরাং আল্লাহর কোনো গুনাবলীতে অশংশিদারিত্ব স্থাপন করার কোনো সুযোগ নেই। এজন্য আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَتَجْعَلُونَ لَهُ أَندَادًا ذَلِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ
এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। -সূরা ফুসসিলাত : ৯

قُلْ إِنَّمَا هُوَ إِلَـهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ
আপনি বলে দিনঃ আমি এরূপ সাক্ষ্য দেব না। বলে দিনঃ তিনিই একমাত্র উপাস্য; আমি অবশ্যই তোমাদের শিরক থেকে মুক্ত। -সুরা আন’আম : ১৯

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তাঁর সামষ্টিক সিফাত ও গুনাবলীতে এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর সমকক্ষ স্থীর করা পরিস্কার শিরক। সুতরাং এরপরও যদি কেউ এ কথা বলে যে, ‘আল্লাহর কাদেরিয়াত অর্থাৎ যা ইচ্ছা তা করার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিসহ আল্লাহর সমস্ত সিফত,গুন, চরিত্র আদমের মধ্যে রয়েছে’ এটা কি সুস্পষ্টভাবে শিরকি বক্তব্য নয়?

যদি মানুষের মধ্যে আল্লাহর সকল ক্ষমতা থাকে, তাহলে মানুষ অসুস্থতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না কেন? না ঘুমিয়ে থাকতে পারে না কেন? মৃত্যু থেকে বাঁচতে পারে না কেন? অথচ আল্লাহ হলেন তিনি-
اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব (চির জীবিত) সবকিছুর সর্বদা রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। -সুরা বাকারা : ২৫৫

সুতরাং প্রমাণ হলো, মানুষের জন্য আল্লাহর সকল ইচ্ছাশক্তির মালিক হওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। এটা যেমন আক্বীদা বিবর্জিত, তেমনি বাস্তবতা বহির্ভুত একটি ডাহা মিথ্যাচার ও চরম শিরকি আক্বীদা।

ইবলিস ও দাজ্জালের কাছে আল্লাহ হেরে গেছেন :
আল্লাহ মহান। যাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তিনি সর্বদা ক্ষমতাধর ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ইবলিস আল্লাহপাককে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলো, আল্লাহও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু আল্লাহ ইবলিসের চ্যালেঞ্জে হেরে গেছেন। দেখুন তারা কী লিখেছে,

ইবলিস আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল :
মানব সৃষ্টির সূচনা লগ্নে মহান আল্লাহর সঙ্গে ইবলিশের একটি চ্যালেঞ্জ হয়। সেই চ্যালেঞ্জের বিষয়বস্তু ছিল, মানবজাতি পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করবে নাকি মারামারি কাটাকাটি হানাহানি রক্তপাতে লিপ্ত থাকবে? মানুষ যদি শান্তিতে থাকে তাহলে চ্যালেঞ্জ আল্লাহ বিজয়ী হবেন, আর যদি অশান্তি অরাজকতা মধ্যে বাস করে তাহলে ইবলিশ বিজয়ী হবে। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৯৭

আল্লাহও ইবলিসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন :
এই দীনের, জীবনব্যবস্থার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, পৃথিবীতে সব রকম অন্যায়, অবিচার, শোষণ, অশান্তি, রক্তপাত বন্ধ করে শান্তি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। এটাই হলো আল্লাহর প্রতি এবলিসের চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। -শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৫৭

হার-জিতের মানদণ্ড :
মানব সৃষ্টির সূচনা লগ্নে মহান আল্লাহর সঙ্গে ইবলিশের একটি চ্যালেঞ্জ হয়। সেই চ্যালেঞ্জের বিষয়বস্তু ছিল, মানবজাতি পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করবে নাকি মারামারি কাটাকাটি হানাহানি রক্তপাতে লিপ্ত থাকবে? মানুষ যদি শান্তিতে থাকে তাহলে চ্যালেঞ্জ আল্লাহ বিজয়ী হবেন, আর যদি অশান্তি অরাজকতা মধ্যে বাস করে তাহলে ইবলিশ বিজয়ী হবে। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৯৭

ঐ তওহীদ ও দীন সমস্ত মানবজাতির ওপর কার্যকর না করার গেলে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ হেরে যাবেন। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৩৯

মানুষ অশান্তিতে পতিত হলেই ইবলিশের জয় এবং আল্লাহর পরাজয়। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৫৯

ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ হেরে গেছেন :
আজ সমস্ত পৃথিবীকে ইবলিস জিতে আছে। যে ফাসাদ আর সাফাকুদ্দিমার চ্যালেঞ্জ সে আল্লাহকে দিয়েছিল তা দিয়ে আজ পৃথিবী ভরপুর। আর আল্লাহ যে সুবিচার, ন্যায় ও শান্তি (ইসলাম) কথা বলেছিলেন তা আজ পৃথিবীতে কোথাও নেই।যে উম্মাহ, জাতির উপর আল্লাহ কে জয়ী করাবার দায়িত্ব বিশ্বনবী দিয়ে গিয়েছেন, সে জাতি তার ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে দাড়ি লম্বা করে টুপি পাগড়ি আলখাল্লা পরে মসজিদে দৌড়াচ্ছে। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৩৪

আজ সমস্ত পৃথিবীকে ইবলিস জিতে আছে। যে ফাসাদ আর সাফাকুদ্দিমার চ্যালেঞ্জ সে আল্লাহকে দিয়েছিল তা দিয়ে আজ পৃথিবী ভরপুর। আর আল্লাহ যে সুবিচার, ন্যায় ও শান্তি (ইসলাম) কথা বলেছিলেন তা আজ পৃথিবীতে কোথাও নেই। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-৩৪

আজ সর্বত্র ঘোর অশান্তি, যার অর্থ আজ ইবলিশ বিজয়ী হয়ে আছে। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১৩১

দাজ্জালের কাছে আল্লাহ পরাজিত হয়েছেন:
দাজ্জাল আল্লাহকে তার সার্বভৌমত্বের (উলুহিয়্যাতের) আসন থেকে চ্যুত করে নিজে সে আসনে বসতে চায়। …যা হোক একনায়কতন্ত্র ও সাম্যবাদের এ পরাজয়ের পর থেকে ধনতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক শক্তিই আজ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সার্বভৌমত্বের অধিকারী এবং এই শক্তিই আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে পরাজিত করে নিজে প্রতিষ্ঠিত অয়ছে। -দাজ্জাল : পৃ. ৯০-৯১

বর্তমান পৃথিবী দাজ্জালের অধীন, পশ্চিমারা এখন বিজয়ী জাতি। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৯৭

উপরোক্ত বক্তব্যগুলো দিয়ে তারা সুস্পষ্টভাবে বলেছে, দাজ্জাল ও ইবলিস জিতে আছে, আর আল্লাহ হেরে গেছেন। নাউযুবিল্লাহ। আসতাগফিরুল্লাহ।

ইসলাম কী বলে?
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত বক্তব্যগুলো কী কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে ্লা সম্ভব? একমাত্র বেঈমান ছাড়া কারো পক্ষে আল্লাহ তা’আলার শানে এমন জঘন্য উক্তি করা কী কোনোভাবেই পসিবল? অথচ সমস্ত ক্ষমতার মালিক হলেন মহান আল্লাহ। তাঁর উপর কোন ক্ষমতাধর নেই। মহান রব বলেন,
يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْ كُلَّمَا أَضَاء لَهُم مَّشَوْاْ فِيهِ وَإِذَا أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُواْ وَلَوْ شَاء اللّهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ إِنَّ اللَّه عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
বিদ্যুতালোকে যখন সামান্য আলোকিত হয়, তখন কিছুটা পথ চলে। আবার যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তাহলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ের উপর সর্বময় ক্ষমতাশীল। -সুরা বাকারা : ২০

أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللّهَ عَلَىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
তুমি কি জানো না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান? -সুরা বাকারা : ১০৬

إِنَّ اللّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। -সুরা বাকারা : ১০৯

أَيْنَ مَا تَكُونُواْ يَأْتِ بِكُمُ اللّهُ جَمِيعًا إِنَّ اللّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। -সুরা বাকারা : ১৪৮

আল্লাহ পাক সবার উপর ক্ষমতাবান’ এ সম্পর্কে আরও কয়েকটি আয়াতে বলা আছে। যেমন সূরা বাকারা,  আয়াত নং-  ২৫৯, ২৮৪ সুরা আলে ইমরান আয়াত: ২৬, ২৯, ১৬৫, ১৮৯ সূরা নিসা, আয়াত নং- ১৩৩, ১৪৯ সূরা মায়িদা, আয়াত নং- ১৭, ১৯, ৪০

সূতরাং এত এত আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো, আল্লাহ সব বিষয়ে ক্ষমাবান, তাঁকে হারাবো কোনো মাখলুকের পক্ষে সম্ভব নয়। এতগুলো আয়াত থাকতে, আল্লাহ পাকের শানে কীভাবে এমন জঘন্য উক্তি করা যায় যে, ‘আল্লাহ ইবলিসের কাছে হেরে গেছেন’? এমন আকীদা পোষণ করা কি কুফরী নয়?

উপরন্তু আল্লাহ তা’আলা এক ও অদ্বিতীয়। বিশ্ব ভুমণ্ডলে সকল বস্তু আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা পুরো দুনিয়ার একচ্ছত্র অধিকারী। সকল সৃষ্টি আল্লাহর তাআলার হুকুম ও ইচ্ছায় পরিচালিত হয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়তে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعِنۡدَہٗ مَفَاتِحُ الۡغَیۡبِ لَا یَعۡلَمُہَاۤ اِلَّا ہُوَ ؕ وَیَعۡلَمُ مَا فِی الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ ؕ وَمَا تَسۡقُطُ مِنۡ وَّرَقَۃٍ اِلَّا یَعۡلَمُہَا وَلَا حَبَّۃٍ فِیۡ ظُلُمٰتِ الۡاَرۡضِ وَلَا رَطۡبٍ وَّلَا یَابِسٍ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ
আর তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের কুঞ্জি। তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থলে ও জলে যা-কিছু আছে, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত। (কোনও গাছের) এমন কোনও পাতা ঝরে না, যে সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত নন। মাটির অন্ধকারে কোনও শস্যদানা অথবা আর্দ্র বা শুষ্ক এমন কোনও জিনিস নেই যা এক উন্মুক্ত কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই। -সুরা আনআম : ৫৯

এআয়াত পরিষ্কার প্রমাণ করে বিশ্বের প্রতিটি বালুকণা, ছোটবড় সকল সৃষ্টির উপর আল্লাহ তাআলার পূর্ণ কর্তৃত্ব
বিদ্যমান। যেখানে গাছের একটি পাতা ও ক্ষুদ্র দানা পর্যন্ত আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত নড়াচড়া করার অধিকার রাখেনা, সেখানে আল্লাহর কোনো সৃষ্টি কীভাবে আল্লাহ তাআলাকে পরাজিত করতে পারে? এটি কী আল্লাহর ব্যাপারে মিষ্টার পন্নীর চরম ধৃষ্টতা ও চরম মূর্খতা নয়?

কমনসেন্স কী বলে?
আল্লাহপাক অতীত, বর্তমান,ভবিষ্যতের সকল গায়েবের খবর জানেন। যেহেতু আল্লাহপাক জানেন, ভবিষ্যতে কী ঘটবে না ঘটবে। যদি তিনি পরাজয় হওয়ারই থাকতো, তাহলে তিনি কী সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতেন? কোনো বুদ্ধিমান কী পরাজয় নিশ্চিত জেনেও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে? নিশ্চয় না। তাহলে বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদের এ দাবির পেছনে কোনো ঘাপলা আছে।

আল্লাহর সাথে ইবলিসের কী চ্যালেঞ্জ ছিলো?
এ সম্পর্কে খুব স্পষ্ট আকারে মহান আল্লাহ পাক সেই কথোপকথন উল্লেখ্য করেছেন। ইবলিসকে আল্লাহ পাক বিতাড়িত করার পর ইবলিস বলেছিলো,
قَالَ رَبِّ بِمَآ أَغْوَيْتَنِي لأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الأَرْضِ وَلأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ إِلاَّ عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
সে (ইবলিস) বলল, হে আমার পলনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেবো। তবে আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত। -সুরা হিজর : ৩৯-৪০

প্রিয় পাঠক, এখানে একটু খেয়াল করুন, ইবলিস চ্যালেঞ্জ করার সময় কিন্তু এ কথা বলেনি যে, পৃথিবীতে রক্তপাত ঘটাবো বা আপনার আইন বিরোধীভাবে সবাইকে চালাবো, বরং বলেছিলো, আপনার নেককার মনোনীত বান্দা ব্যতিত সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেবো। এখন আপনারাই বলুন, আল্লাহর মনোনিত কোনো বান্দাকে ইবলিস কী পথভ্রষ্ট করতে পেরেছে? নিশ্চয় না। সকল নবী, ওলীদের তো শয়তান গোমরাহ করতে পারে নি। তাহলে ইবলিস জিতলো কীভাবে? আল্লাহর আয়াতের অপব্যাখ্যা করে রবের উপর এতো বড় ব্যার্থতার দায় যারা চাপিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না, তারা কি আদৌ মুসলমান হতে পারে? বরং এই হেযবুত তওহীদের লোকদেরই শয়তান পথভ্রষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। সে হিসাবে ‘হযেবুত তওহীদের উপরই ইবলিস বিজয়ী হয়েছে’ এটা বলা যুক্তিসঙ্গত, আল্লাহর উপর বিজয় লাভ করেনি আদৌ। কখনও বিজয়ী হতেও পারবে না। কারণ মহান রব সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। আল্লাহ পাক আমাদের এই কুফরী জাতি থেকে আমাদের সবাইকে হিফাযত করেন।

আল্লাহ’র সিফাত অস্বীকার :

প্রিয় পাঠক, এখানে হেযবুত তওহীদ জয়-পরাজয়ের মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে যদি মানুষ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে তবে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ জয়ী হবেন আর যদি মানুষ আল্লাহ’র হুকুম প্রত্যাখ্যান করে তবে ইবলিস জয়ী হবে আল্লাহ পরাজিত হবেন। নাউযুবিল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ’র রাজত্বের উপর মাখলুকের কর্মের প্রভাব রয়েছে। মহান আল্লাহ’র শানে কতটা মারাত্মক বেয়াদবি! মূলত এই বক্তব্য দিয়ে তারা আল্লাহ’র সিফাতের অস্বীকার করেছে। অথচ আল্লাহ তাঁর নিজের জন্য যেসকল সিফাত সাব্যস্ত করেছেন সেগুলোর উপর পরিপূর্ণ ঈমান আনা ব্যতিত একজন ব্যক্তির তাওহীদ পূর্ণতা পায় না। কিন্তু হেযবুত তওহীদ আল্লাহপাক সম্পর্কে যে আক্বীদা প্রকাশ করেছে তা বিশ্বাস করলে আল্লাহ’র বহু সিফাতের অস্বীকার অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। মনে রাখা চাই, ‘পরাজয়’ একটি ত্রুটি। অথচ আল্লাহ সকল দোষ-ত্রুটি হতে চিরপবিত্র। দেখুন আল্লাহপাকের একটি সিফাত হচ্ছে, তিনি الْقُدُّوس অর্থাৎ পূত পবিত্র, মহামহিম, মহিমাময়। তিনি সকল ত্রুটি, দুর্বলতা ও অকল্যাণ থেকে মুক্ত ও পবিত্র। যাবতীয় পূর্ণতা ও যোগ্যতার অধিকারী কেবল তিনি। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوس
তিনি (আল্লাহ) পূতপবিত্র মহান বাদশাহ। -সুরা হাশর : ২৩

এ ব্যাপারে সহিহ সনদে হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ وَسُجُودِهِ : سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلائِكَةِ وَالرُّوح
রাসূলুল্লাহ রুকু এবং সিজদায় বলতেনঃ (মহান আল্লাহ) পূত পবিত্র, মহিমাময় এবং ফেরেশতা মণ্ডলী ও জিবরাইলের প্রভু। -সহীহ মুসলিম : হাদিস নং : ৪৮৭

যেখানে কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর পবিত্রতার ঘোষণা দিয়েছেন সেখানে আল্লাহ তা’য়ালার ক্ষেত্রে ‘পরাজয়ের’ ত্রুটি সাব্যস্ত করা কি তাওহীদ থেকে বিচ্যুতি নয়? নিন্মে মহান রবের আরো কয়েকটি সিফাত বা গুনাবলি নিয়ে আলোচনা করা হলো-

মহান আল্লাহ’র একটি সিফাত হলো, তিনি القَدِير অর্থাৎ সর্বশক্তিমান। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَوتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا
আসমান ও যমীনে এমন কোন কিছুই নেই যা আল্লাহকে পরাস্থ (অক্ষম) করতে পারে, নিশ্চয়ই তিনি মহাজ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান। -সূরা ফাত্বির : ৪৪

আল্লাহ’র আরেকটি সিফাত হচ্ছে, তিনি الْقَاهِرُ অর্থাৎ প্রতাপশালী, পরাক্রমশালী, প্রবল, অপ্রতিরোধ্য, পরাস্তকারী। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ
তিনিই পরাক্রান্ত স্বীয় বান্দাদের উপর। -সুরা আনআম : ১৮

ইমাম ইবনুল আসির রহি. الْقَاهِرُ শব্দের অর্থ লিখেছেন,
القاهر هو الغالب جميع الخلق
যিনি সকল সৃষ্টির উপর বিজয়ী। -লিসানুল আরব, ইবনু মুনযির : খ. ৫ পৃ. ১২০

আল্লাহপাকের আরেকটি সিফাত হচ্ছে তিনি; الْقَهَّارُ অর্থাৎ মহা প্রতাপশালী, মহা প্রবল, মহা পরাক্রান্ত, মহা পরাক্রমশালী। মহ্ন আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
তিনি একক, মহা পরাক্রমশালী। -সুরা রা’দ : ১৬

ইমাম হালীমী (রহিঃ) “আল ক্বহহার” শব্দের অর্থ বলেন,
الَّذِي يَقْهَرُ وَلا يُقْهَرُ بِحَالٍ
যিনি পরাজিত করেন কিন্তু কোনো অবস্থায় তাকে পরাজিত করা যায় না। -আলআসমা ওয়াস সিফাত, বাইহাক্বী : খ. ১ পৃ. ১৬৪

মহান আল্লাহ’র আরেকটি সিফাত হলো, তিনি الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ অর্থাৎ মহা পরাক্রমশালী, অতি প্রভাবশালী, মহা সম্মানিত। মহান রব বলেন,
وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ
তিনি মহাপ্রবল, মহা পরাক্রমশালী। -সুরা শুরা : ১৯

উল্লেখ্য যে, আল্লাহপাকের গুনবাচক নাম ‘الْعَزِيزُ’ এর অর্থ হচ্ছে-
الغالب الذي لا يقهر
অর্থাৎ এমন বিজেতা যাকে পরাজিত করা যায়না। – সফওয়াতুত তাফাসীর : খ. ২ পৃ. ৫৪৬

অন্য বর্ননায়,
الغالب الذي لا يغلبه احد
এমন বিজয়ী যার উপরে কেউই বিজয়ী হতে পারে না। সফওয়াতুত তাফাসীর : খ. ২ পৃ. ৫৪৬

এ ব্যাপারে আরো অসংখ্য আয়াত এসেছে। যেমন
وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। -সুরা মায়িদা : ১২০

الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ
(আল্লাহ) মহা পরাক্রম, মহাপ্রতাশালী, পরম গৌরবান্বিত। -সুরা হাশর : ২৩

فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيكٍ مُقْتَدِرٍ
সত্যের আসনে, সর্বশক্তিমান রাজাধিরাজের সান্নিধ্যে। -সুরা ক্বামার : ৫৫

ইমাম খাত্বাবী রহি. المقتدر শব্দের অর্থ করতে গিয়ে বলেন,
المقتدر هو التام القدرة الذي لا يمتنع عليه شيء ولا يحتجز عنه بمنعة وقوة
যিনি সর্বশক্তিমান, যাকে কোন কিছুই বাধা দিতে পারেনা আর কোন কিছুই তাকে
বাধা ও শক্তি প্রয়োগ করতঃ প্রতিরোধ করতে পারেনা। -শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী : পৃ. ২২৫

এইরূপ আরও বহু আয়াতে আল্লাহপাক নিজের শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। যেখানে আল্লাহ তাআলা নিজের শানে স্বয়ং এমন পরাক্রমের পরিচয় দিয়েছেন, সেখানে ইবলিস
আল্লাহপাকের সামান্য একটি মাখলুক হয়ে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলাকে পরাজিত করার আদৌ ক্ষমতা রাখে কি?

সৃষ্টির অবাধ্যতা স্রষ্টার রাজত্বে হ্রাস করে না:
সকল মাখলুক তাঁর হুকুম পালন করলে যেমন তাঁর রাজত্বে কোনো বৃদ্ধি আসে না, ঠিক তেমনি সমগ্র মাখলুক তাঁর হুকুম প্রত্যাখ্যান করলেও তাঁর রাজত্বে কোনো প্রভাব পড়েনা। কারণ তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
إِن تَكْفُرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنكُمْ
যদি তোমরা কুফুরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। -সুরা যুমার : ৭

وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَلَمِينَ
আর যে কেউ কুফরী করল সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন। -সুরা আলে ইমরান : ৯৭

وَقَالَ مُوسَى إِن تَكْفُرُوا أَنتُمْ وَمَن فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ
এবং মূসা বললেনঃ তোমরা এবং পৃথিবীর সবাই যদি কুফরী করো, তথাপি আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, যাবতীয় গুনের আধার। -সুরা ইবরাহীম : ৮

উপরন্তু বিষয়টি হাদীসে কুদসীতে আরও স্পষ্ট করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مَا نقص ذلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئًا
হে আমার বান্দারা! তোমাদের আদি-অন্ত, তোমাদের মানুষ ও জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচাইতে বেশী ভয় পায়, তোমরা সবাই যদি তার মতো হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব একটুও বৃদ্ধি পাবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের আদি-অন্ত, তোমাদের সকল মানুষ ও জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর সবচাইতে পাপিষ্ঠ, তোমরা সবাই যদি তার মতো হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে না। -সহীহ মুসলিম : ২৫৭৭

প্রিয় পাঠক, কুরআন ও হাদীসের এমন সুস্পষ্ট দলিলের ভিত্তিতে একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে গোটা দুনিয়ার সকল মানুষও যদি কুফুরী করে তাহলেও আল্লাহ * -র রাজত্বে কোনো কমতি আসে না। এমতাবস্থায় বর্তমানে পৃথিবীতে আল্লাহর হুকুম কায়েম নেই এই অজুহাতে ইবলিসকে জয়ী এবং আল্লাহ তাআলাকে পরাজিত সাব্যস্ত করা কুফুরীর শামিল। তাওহীদের দল বলে দাবিদার হেযবুত তওহীদের নিজেদের তাওহীদেরই যদি এমন বেহাল দশা হয় তবে আর এই নামের যথার্থতা কোথায় রইল?

আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা আবশ্যক নয়!
প্রিয় পাঠক, মহান আল্লাহ আমাদেরকে অহেতুক সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ চান যেন সকল বান্দা তাঁকে ভালোবাসেন, তাঁকে মহব্বত করেন। যারা রব থেকে দূরে সরে যায়, তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ
হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করলো? -সুরা ইনফিতার : ৬

সুতরাং বুঝা গেলো, আল্লাহর চাওয়া হলো, তাঁর বান্দারা  দুনিয়াপ্রীতি থেকে সরে তাঁর ভালোবাসা কামনা করুক। অতএব একথা চিরসত্য যে, সকল বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা মূল টার্গেট।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল বিষয়টি আবশ্যক নয় বলে দাবি করছে হেযবুত তওহীদ। তারা লিখেছে,
প্রশ্ন আসে, তবে কি আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের প্রয়োজনীয়তা এ দীনে নেই? আছে, আগেই বলেছি, এ দীন ভারসাম্য যুক্ত। কাজেই দুটোই আছে, কিন্তু প্রথম হলো পৃথিবীতে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করে তারপর আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা। প্রথমটা ফরজ, দ্বিতীয় টা নফল। ফরদ নামাজ বাদ দিয়ে শুধু সুন্নত বা নফল নামাজ পড়লে শরীয়া মোতাবেকই তা যেমন নাজায়েয, ঠিক তেমনি বিশ্ব নবীর উপর আল্লাহ দেয়া দায়িত্বকে পূর্ণ করার ফরদ কাজ বাদ দিয়ে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের পক্রিয়া অর্থাৎ নফল কাজ নিয়ে ব্যস্ত হলে তা ঐ শরীয়াহ মোতাবেকই জায়েজ হবে না। -এ ইসলাম ইসলামই নয় : পৃ. ১১০

তাসাউফের মাধ্যমে স্রষ্টার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করে তাঁর নৈকট্য লাভের প্রক্রিয়া শিক্ষা দেওয়া মোহাম্মদের স: লক্ষ্য নয়। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে সেখানে নতুন আইন, নতুন সমাজ ব্যবস্থা স্থাপন করা, একটা সম্পূর্ণ নতুন রাজনৈতিক আর্থসামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। -বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ১৭

প্রিয় পাঠক, একটু ভেবে দেখুন তো কথাটি কতবড় ভয়ঙ্কর কথা। সুতরাং হেযবুত তওহীদের উক্ত বক্তব্য থেকে তারা দুটি বিষয় স্পষ্ট করতে চেয়েছে।
ক. ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা ফরজ আর আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা নফল, তথা আবশ্যক নয়।
খ. ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার প্রচেষ্টা নাজায়েয।

ইসলাম কী বলে?
ক. মহান আল্লাহ তাঁর নৈকট্য অর্জন করা সর্বাবস্থায় ফরজ। এ সম্পর্কে পবিত্র  কুরআন এবং নবীজির সা. অসংখ্য হাদিস রয়েছে। চলুন কয়েকটি প্রমাণ দেখা যাক। মহান রব বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ أَندَاداً يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلّهِ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلّهِ جَمِيعاً وَأَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ
আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হ’ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। -সুরা বাকারা : ১৬৫

প্রিয় দ্বীনি ভাই, উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ ঈমানদারদের পরিচয় বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ ঈমানদার হলো তারা, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। সুতরাং বুঝা গেলো ঈমানদার হলো, যাঁদের অন্তরে সবচে বেশি আল্লাহর ভালোবাসা থাকবে। সুতরাং যারা আল্লাহর নৈকট্যকে আবশ্যকীয় মনে করে না, তারা কখনও ঈমানদার হতে পারে না।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُواْ فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর (ওসীলা) নৈকট্য অন্বেষন কর এবং তাঁর পথে জেহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। -সুরা মায়িদা : ৩৫

ওসীলা’ শব্দের অর্থ কী?
রঈসুল মুফাসসিরিন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এ ব্যাপারে মতামত পেশ করেছেন,
عَنْ عَطَاءٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَيِ الْقُرْبَةَ
বিশিষ্ট তাবেয়ী আতা রহি. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, (ওসীলা) অর্থ হলো, নৈকট্য অর্জণ করা। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৩ পৃ. ৭৫

ইবনে কাসীর রহি. আরো বলেন,
وَكَذَا قَالَ مُجَاهِدٌ وَعَطَاءٌ وَأَبُو وَائِلٍ وَالْحَسَنُ وَقَتَادَةُ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ كَثِيرٍ وَالسُّدِّيُّ وَابْنُ زَيْدٍ
এমনই মত পোষণ করেছেন (অসংখ্য তাবেয়ী, যেমন) হযরত মুজাহিদ, আতা, আবু ওয়ায়িল, হাসান বসরী, কাতাদাহ, আব্দুল্লাহ ইবনে কাসীর, সুদ্দী এবং ইবনে যায়েদ রহি. প্রমুখ। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৩ পৃ. ৭৫

তাবেয়ী কাতাদাহ রহি. বলেন,
قوله فيها أى تقربوا إليه بطاعته والعمل بما يرضيه
আয়াতের অর্থ হলো- ‘তোমরা তাঁর আনুগত্য করার মাধ্যমে এবং যে সকল কাজ তিনি খুশী হন তার মাধ্যমে তাঁর (আল্লাহর) নিকটবর্তী হও। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৩ পৃ. ১০৩

এ কথাগুলো উল্লেখ করার পর ইমাম ইবন কাসীর রহি. বলেন,
وهذا الذى قاله هؤلاء الأئمة لا خلاف بين المفسرين فيه
এ সকল মহান ইমামগণ আয়াতের তাফসীরে এ কথাগুলোই বলেছেন। যে ব্যাপারে মুফাসসিরদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৩ পৃ. ১০৩

সুতরাং প্রমাণ হলো, ওসীলা শব্দের অর্থ হলো, নৈকট্য অর্জন করা। আর এ আয়াত দিয়ে সে প্রমাণ হলো যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নৈকট্য অর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা ফরজ।

অভিযোগ ও জবাব:
হেযবুত তওহীদ হয়তো দাবি করতে পারে যে, এখানে ‘ওসীলা’ শব্দের অর্থ ‘নৈকট্য অর্জন করা’ এটা আমাদের মনগড়া ব্যাখ্যা। তাহলে নিন্মের আয়াতটি দেখুন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
আপনি সেজদা করুন ও আমার নৈকট্য অর্জন করুন। -সুরা আলাক : ১৯

উক্ত আয়াতের তাফসীর কাতে গিয়ে ইমাম কুরতুবী রহি.বলেন,
واسجد أي صل لله واقترب أَيْ تَقَرَّبْ إِلَى اللَّهِ جَلَّ ثَنَاؤُهُ بِالطَّاعَةِ وَالْعِبَادَةِ
‘সেজদা করুন’ অর্থ হলো, ‘আল্লাহর জন্য নামাজ পড়ুন’ এবং ‘নৈকট্য অর্জন করুন’ অর্থ হলো, অনুসরণ ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। -তাফসীরে কুরতুবী : খ. ২০ পৃ. ১১৪

প্রিয় পাঠক, এ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে নৈকট্য অর্জনের সরাসরি শব্দটিই আল্লাহ তাআলা ব্যবহার করেছেন। সুতরাং এখন তো আর অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং প্রমাণ হলো, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা এটা মহান রবের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট বিধান।

প্রশ্ন ও জবাব :
তবে প্রশ্ন হলো, এ নৈকট্য অর্জন করা নফল না ফরজ? এটা বুঝার জন্য খেয়াল করুন। উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর নৈকট্য অর্জনের কথা বলতে গিয়ে صيغة الامر তথা আদেশসূচক বাক্য ব্যবহার করেছেন। আর পবিত্র কুরআনের সকল আদেশসূচক শব্দ ফরজ বা ওয়াজীবের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অবশ্য যেসব বিষয়ে ভিন্ন কোনো বিধান বর্ণিত হয়, সেগুলোর কথা ভিন্ন। কিন্তু এ আয়াতে বর্ণিত বিধানের বিপরীত ভিন্ন কোনো বিধান অন্য কোথাও নেই। আরও স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে, হযরত আবূ উমামাহ্ রা. বলেন, আমর ইবনু আবাসাহ রা. আমার কাছে রিওয়ায়াত করেছেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনি বলতে শুনেছেন,
أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الرَّبُّ مِنَ الْعَبْدِ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ الآخِرِ فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ مِمَّنْ يَذْكُرُ اللَّهَ فِي تِلْكَ السَّاعَةِ فَكُنْ ‏
আল্লাহ তা’আলা শেষ রাতে তার বান্দার সবচেয়ে নিকটবর্তী হন। অতএব যারা এ সময় আল্লাহর যিকর করে (নামায পড়ে ও দু’আ করে), তুমি পারলে তাদের দলভুক্ত হয়ে যাও। -জামে তিরমিযি : হাদিস নং : ৩৫৭৯

সুতরাং বুঝা গেলো, আল্লাহর নৈকট্য অর্জণ করা নফল নয়, বরং ফরজ।

খ. ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার প্রচেষ্টা নাজায়েয?

তাদের দাবি ছিলো, ‘আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠান আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সকল প্রক্রিয়া তথা আমল নাজায়েয’।

ইসলাম কী বলে?
এক. উপরোক্ত আয়াতটিতে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য কোনো শর্তারোপ করা হয়নি। অর্থাৎ ‘ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যাবে কি যাবে না, এমন কোনো শর্তারোপ মহান আল্লাহ করেননি। অতএব বুঝা গেলো, আল্লাহর নির্দেশ হলো, সর্বহালতে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা লাগবেই। এটা আল্লাহর নির্দেশ, তথা ফরজ। সুতরাং কুরআনে কারীমের مطلق তথা শর্তহীন আয়াতকে مقيد তথা শর্তযুক্ত করার অধিকার পৃথিবীর কারো নেই। অতএব আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রচেষ্টা করার আগে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করার শর্তারোপ করা কুরআনের অপব্যাখ্যার শামিল। সুতরাং ‘ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা নাজায়েয’ এটা একটি ডাহা মিথ্যাচার। ও খোদাদ্রোহীতার শামিল।

দুই. উপরিউউক্ত আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ। তখনও ইসলামি শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত হয় নি, এর আগেই এ আয়াত নাজিল হয়েছিলো। সুতরাং আল্লাহ তাআলা নিজেই তাঁর আইন প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগেই তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সিজদা বা নামাজের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সুতরাং বুঝা গেলো, সর্বহালতে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তাঁর নৈকট্য অর্জন করা ফরজ। এর বিপরীতে গিয়ে যে কথা হেযবুত তওহীদ দাবি করেছে, এটা উক্ত আয়াতকে অস্বীকার করার অপরাধে তাদের মুসলিম বলার কোনো সুযোগ আছে কি?

তিন. হাদিসে কুদসীতে এসেছে, হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাঃ তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
إِذَا تَقَرَّبَ الْعَبْدُ إِلَيَّ شِبْرًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَإِذَا تَقَرَّبَ مِنِّي ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَإِذَا أَتَانِي مَشْيًا أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً
তিনি বলেনঃ আমার বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত নিকটবর্তী হয়, আমি তখন তার দিকে এক হাত নিকটবর্তী হই। আর সে যখন আমার দিকে এক হাত নিকটবর্তী হয়, আমি তখন তার দিকে দু’হাত নিকটবর্তী হই। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৭৫৩৬

চার. আরেকটি হাদিসে কুদসীতে এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَىَّ عَبْدِي بِشَىْءٍ أَحَبَّ إِلَىَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَىَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطُشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي لأُعْطِيَنَّهُ وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَىْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ
আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যাক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে শত্রুতা রাখবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করি। আমার বান্দা আমি যা তার উপর ফরয করেছি সেই ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোন ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু সাওয়াল করে, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যে কোন কাজ করতে চাইলে এটাতে কোন রকম দ্বিধা সংকোচ করি-না যতটা দ্বিধা সংকোচ মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে করি। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার কষ্ট অপছন্দ করি। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৬৫০২

সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকারীরা কত প্রিয় মহান রবের কাছে। অথচ এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি থেকে দূরে রাখার জন্য তারা কত ভয়ঙ্কর ছক এঁকেছে।

পাঁচ. প্রিয় পাঠক, আপনার কমনসেন্সসকে একবার প্রশ্ন করুন তো, যিনি আমাদের সৃষ্টি করলেন, নিয়মিত লালন-পালন করে যাচ্ছেন, তাঁর নৈকট্য অর্জন করার জন্য কোনো দলীল প্রয়োজন হয়? এটা তো সর্বজনবিদিত বিষয় যে, গোলাম তাঁর মালিকের নৈকট্য অর্জন করবে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের নৈকট্য অর্জন করবে এবং করে থাকে। এটা নৈতিকতার দাবি। তাহলে রব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন আবশ্যকীয় নয়, এটা কি কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ বিশ্বাস করবে? আর যারা এমন কথা প্রচার করে যাচ্ছেন, তারা কিভাবে মুমিন-মুসলিম হয়, এটা পাঠকদের বিবেকের কাছে সোপর্দ করলাম।

Check Also

আত্মশুদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান:

নফস হলো মানব জিবনের এক ভয়ঙ্কর ফিৎনার কেন্দ্রস্থল। কারণ নফস বেশিরভাগ সময়েই মানুষকে খারাপ কর্মের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.