Home > হিজবুত তাওহীদ > মানবতাই ধর্ম:

মানবতাই ধর্ম:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মানতে নারাজ। তাদের কাছে ধর্ম হলো, ‘মানবতা’ বা ‘মানবধর্ম’। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে মানবধর্ম মূলত কাদের ধর্ম সে সম্পর্কে আগে আলচনা করা যাক।

‘মানবতা’ বা ‘মানবধর্ম’ নাস্তিকদের ধর্ম:
যারা নাস্তিকতা নিয়ে গবেষণা করেন, তারা জানেন যে, নাস্তিকদের মূল মিশন হলো, ‘মানবতা’ বা হিউম্যানিটি’। এই মানবতাকেই নাস্তিকরা ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের স্লোগান হলো, ‘বিমূর্ত মানব ধর্মের মূর্ত রূপই হলো ‘মহাধর্ম’। তারা আরও বলে থাকে, ‘ধর্ম আছে মন্দির, মসজিদ, গির্জায়, তার বাইরে আছে মানবধর্ম’। ‘মানবতা’ যে নাস্তিকদের ধর্মের নাম এটা হেযবুত তওহীদও স্বীকার করে থাকে। চলুন তারা কী লিখেছে দেখা যাক-
যারা প্যাকটিক্যাল নাস্তিক তাদের অভিমত হলো আল্লাহ থাকা বা না থাকাতে মানুষের কিছু নেই। আল্লাহ ছাড়াও মানুষ চলতে সক্ষম, সবচেয়ে বড় ধর্ম মানব ধর্ম। যার সঙ্গে ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক না থাকলেও চলবে। এরাই ধর্মের সবই বিধিব্যবস্থাকে তুলে দিয়ে নিজেদের মনগড়া বিধান দিয়ে মানব সমাজ পরিচালনা করতে চান। আজকের যে বিশ্ব ব্যবস্থার  মধ্যে আমরা বসবাস করছি সেটা মূলত এই প্রকার নাস্তিকতা থেকেই উৎসারিত ধর্মনিরপেক্ষতা। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ কবিতা ইসলাম : পৃ. ১৭৭

সুতরাং প্রমাণ হলো, ‘মানবতা’ বা ‘মানবধর্ম’ হলো নাস্তিকদের ধর্ম। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হেযবুত তওহীদের কাছে এই মানবধর্ম বা মানবতাই একমাত্র ধর্ম। প্রথমত হেযবুত তওহীদের দাবিগুলো এক নজরে তুলে ধরা হলো-
১. মানবতাই ধর্ম।
২. মানবতার কাজ না করলে সে ধার্মিক নয়।
৩. মানবতা না থাকলে সে বিধর্মী।
৪. সকল ধর্মের বড় ধর্ম মানবতা।
৪. মানবতার কল্যানই ইবাদত।
৫. মানবতার কাজ করলেই সে মুমিন ও আল্লাহর কাছে প্রিয়।
৬. মানবতার পাশে না দাঁড়ি ইবাদত করেও জান্নাত মিলবে না।
৭. শুধু মানবসেবাই কী আল্লাহর কাম্য।
৮. ধর্মও নবীদের প্রধান উদ্দেশ্য মানবতা।
৯. ধর্মের মৌলিক উদ্দেশ্য আখেরাতের ফিকির নয়, বরং মানবসেবা।
১০. মানবতার কাজ না করলে কোনো আমলই কবুল হবে না।
১১. মানবকল্যানে আত্মনিয়োগ না করলে তার ইবাদত নিরর্থক ও সে জাহান্নামী।
১২. মানুষের উপকার হয় এমন সব কাজই সওয়াবের কাজ।
১৩. মানবতাবাদীরা শহীদ।
১৪. শিক্ষার মূল টার্গেট মানবতাবোধ।
১৫. মানবতাবাদীরাই সফল।
১৬. মানবতার কাজ না করলে সে কাফের।
১৭. মানবসেবা করলেই কী জান্নাত।

অর্থাৎ বুঝা যাচ্ছে তাদের দাবি মোতাবেক মানবতাই হলো একমাত্র দ্বীনধর্ম। চলুন প্রত্যরকটা বিষয়ে প্রমাণভিত্তিক কিছু আলোচনা দেখা যাক।

মানবতাই কী ধর্ম?
বর্তমানের সঠিক দ্বীন বা ধর্ম হলো একমাত্র ইসলাম। যা পবিত্র কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু নাস্তিকরা ধর্ম হিশাবে মানবতাকে গ্রহণ করে নিয়েছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ইসলাম ধর্ম নয়, বরং ধর্ম হলো মানবতা। দেখুন তারা কী লিখেছে,
ধর্ম হলো মানবতা:
প্রচলিত ধারণা হচ্ছে- যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সুরা কালাম শাস্ত্র মুখস্থ বলতে পারে, নামাজ-রোজা প্রার্থনা করে সে-ই ধার্মিক। এটা সঠিক ধারণা নয়। মানুষের প্রকৃত ধর্ম আসলে কি? মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের দুঃখ কষ্ট হৃদয় অনুভব করে এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় সে-ই ধার্মিক। *গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৪৩

নামাজ রোযা, হজ্ব, পূজা, প্রার্থনা, তীর্থযাত্রা মানুষের মূল এবাদত নয়। মানবজাতি যেন সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারে এ লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম, প্রকৃত এবাদত। -জঙ্গিবাদ সঙ্কট : পৃ. ৫৬

যেমন আগুনের ধর্ম পোড়ানো ঠিক একইভাবে মানুষের ধর্ম হলো মানবতা। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৩৬

দেশরক্ষার জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করাকে আমরা ধর্ম মনে করি। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৪১

মানবতার কাজ না করলে সে ধার্মিক নয়:
কেউ যদি নামাজ রোজা হজ্ব পূজা-অর্চনা উপাসনা ইত্যাদি নিয়ে দিনরাত ব্যপৃত থাকে, কিন্তু তার ভিতরে মানবতার গুণাবলী না থাকে তাহলে সে প্রকৃত ধার্মিক নয়, আল্লাহর প্রকৃত উপাসক নয়। -ধর্ম বিশ্বাস : পৃ. ১৪

মানবতা না থাকলে সে বিধর্মী:
মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতাবোধ, মনুষত্ব। মানুষ যদি স্বার্থপর হয়, ন্যায়-অন্যায়ের বোধ হারিয়ে ফেলে, অপরের প্রতি দয়া ও করুণার অনুভূতি হারায় তখন মানুষও তার ধর্ম হারায় এবং বিধর্মী হয়ে যায়। -জঙ্গিবাদ সঙ্কট : পৃ. ৫৫

সকল ধর্মের বড় ধর্ম মানবতা:
সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা। -সোনাইমুড়ীতে হামলার নেপথ্যে : পৃ. ১

নামাজ রোযা ধর্মের আত্মা নয়, মানবতাই আসল আত্মা:
আমাদেরকে বুঝতে হবে যে নামাজ-রোজা উপবাস, উপাসনা, পূজা-অর্চনা ধর্মের মূল কাজ নয়। মানুষের শান্তিই সকল ধর্মের লক্ষ্য, সকল ধর্মের আত্মা। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ১০৪

মানবতার কল্যানই ইবাদত:
এখন জাতির এই সঙ্কটকালে সকল আত্মকেন্দ্রিকতা ত্যাগ করে প্রকৃত এবাদতে ফিরে আসুন, সে এবাদত করার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ মানবতার কল্যাণ। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৭৫

প্রকৃতপক্ষে এবাদত হচ্ছে মানুষের শান্তির লক্ষ্যে কাজ করা। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৩৭

মানবতার কাজ করলেই সে মুমিন ও আল্লাহর কাছে প্রিয়:
আর এ ধর্ম পালন করা অর্থাৎ মানুষের শান্তির লক্ষ্যে কাজ করাই মানুষের প্রকৃত এবাদত। নবী-রাসূল অবতারগণ এ লক্ষ্যেই সংগ্রাম করে গেছেন। এ কাজ যারা করবে তারাই স্রষ্টার সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি পাবে, তারাই প্রকৃত মোমেন বা বিশ্বাসী। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮৩

মানবতার কাজই সওয়াবের কাজ:
মানুষের তথা মানবজাতির উপকার হয় বা কল্যাণ হয় এমন কথা কাজ বা চিন্তা সবই সওয়াবের কাজ। -হলি আর্টিজেনের পর : পৃ. ২৩

মানবতার পাশে না দাঁড়ি ইবাদত করেও জান্নাত মিলবে না:
কিন্তু মানুষের অশান্তির মধ্যে ফেলে রেখে চার দেয়ালের মধ্যে এবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকলে স্রষ্টার আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন না পরকালেও মুক্তি মিলবে না। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৮৩

অর্থাৎ তাদের ভাষ্যমতে মানবধর্মই আসল ধর্ম ও বড় ধর্ম, এবং এ ধর্মের অনুসারীরা ধার্মিক, মুমিন ও আল্লাহর কাছে প্রিয়, নেককার এবং জান্নাতী। কিন্তু যারা মানবতার পাশে দাঁড়ায় না তারা বিধর্মী ও জাহান্নামী। তাদের কোনো আমলেই জান্নাত মিলবে না।

ইসলাম কী বলে?
প্রথমেই জানিয়ে রাখা উচিৎ, ইসলাম ধর্মে মানবতার প্রতি দয়াশীল হওয়ার অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুরআন-হাদিসে। এমনকি রবের সন্তুষ্টি অর্জনে আল্লাহর সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।  নিন্মে কয়েকটি আয়াত ও হাদিস পেশ করছি-
জান্নাতীদের গুনাবলী সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاء وَلَا شُكُورًا
তারা আল্লাহর ভালোবাসায় মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে খাবার দান করে। (এবং তাদেরকে বলে,) আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে। আমরা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না। -সুরা আদ-দাহর : ৮-৯

আবদুল্লাহ্‌ ইবন আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করীম সাঃ বলেন,
الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا أَهْلَ الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ
দয়াকারীদের উপর রাহমান অর্থাৎ আল্লাহ্‌ দয়া করেন। তোমরা যমীনবাসীদের উপর রহম করো, তাহলে আসমানের অধিপতি আল্লাহ্‌ তোমাদের উপর রহম করবেন। -সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪৮৫৭

সালিম রহি. তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নবি সাঃ বলেছেন,
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ مَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ فَإِنَّ اللَّهَ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ بِهَا كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই স্বরূপ। কাজেই কেউ যেন কারো উপর জুলুম না করে এবং কাউকে যেন বিপদের মধ্যে না ফেলো। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব অভিযোগ পূরণ করে, আল্লাহ্‌ তার সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কষ্ট দূর করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তার কষ্ট দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ক্রটি গোপন করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তা’আলা তার সব ক্রটি-বিচ্যূতিকে গোপন রাখবেন। -সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪৮১৩

হযরত উসামাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ بِنْتًا لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَرْسَلَتْ إِلَيْهِ وَمَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ وَسَعْدٌ وَأُبَيٌّ أَنَّ ابْنِي قَدْ احْتُضِرَ فَاشْهَدْنَا فَأَرْسَلَ يَقْرَأُ السَّلاَمَ وَيَقُولُ إِنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ وَمَا أَعْطَى وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ مُسَمًّى فَلْتَصْبِرْ وَتَحْتَسِبْ فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ تُقْسِمُ عَلَيْهِ فَقَامَ وَقُمْنَا مَعَهُ فَلَمَّا قَعَدَ رُفِعَ إِلَيْهِ فَأَقْعَدَهُ فِي حَجْرِهِ وَنَفْسُ الصَّبِيِّ جُئِّثُ فَفَاضَتْ عَيْنَا رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ سَعْدٌ مَا هَذَا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ هَذِهِ رَحْمَةٌ يَضَعُهَا اللهُ فِي قُلُوبِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ
একবার উসামাহ ইবনু যায়দ, সা’দ ও ’উবাই রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক কন্যা তাঁর কাছে খবর পাঠালেন যে, আমার পুত্র মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। কাজেই তিনি যেন আমাদের নিকট আসেন। তিনি সালামের সঙ্গে এ কথা বলে পাঠালেন যে, আল্লাহ্ যা দান করেন আর যা নিয়ে নেন সব কিছুই আল্লাহর জন্য। আর সব কিছুই আল্লাহর নিকট নির্ধারিত আছে। অতএব তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সাওয়াবের আশা কর। এরপর তাঁর কন্যা কসম দিয়ে আবার খবর পাঠালেন। এতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে দাঁড়ালাম।

(সেখানে গিয়ে) তিনি যখন বসলেন, শিশুটিকে তাঁর সামনে আনা হল। তিনি তাকে নিজের কোলে নিয়ে বসালেন, আর শিশুটির শ্বাস নিঃশেষ হয়ে আসছিল। এতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’চোখ অশ্রু প্রবাহিত করল। তখন সা’দ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ কী ব্যাপার? তিনি বললেনঃ এ হল রহমত, যা আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তার মনের ভিতরে দিয়ে থাকেন। আর আল্লাহ্ কেবলমাত্র তাঁর দয়ালু বান্দাদের ওপরই দয়া করে থাকেন। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৬৬৫৫

প্রিয় পাঠক, এ সম্পর্কে আরও অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে, যেখান থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, সৃষ্টিজগতের উপর দয়া করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যার প্রতিদান সীমাহীন। কিন্তু এই মানবসেবা কে মানবধর্ম বা মানবতা নাম দিয়ে সেটাকে ধর্ম হিশাবে গ্রহণ করা চরম ভ্রষ্টতা ও নাস্তিকদের সদস্য হওয়ার নামান্তর।

মানবতা কী ধর্ম হতে পারে?
হেযবুত তওহীদের দ্বিতীয় এমাম হুসাইন সেলিমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মানুষ যা ধারণ করে সেটাই ধর্ম। যুক্তি পেশ করে তারা লিখেছেন,
যেমন আগুনের ধর্ম পোড়ানো ঠিক একইভাবে মানুষের ধর্ম হলো মানবতা। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৩৬

অথচ বাংলা অভিধানে ধর্মের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে,
ধর্ম’ ঈশ্বর ও উপাসনা পদ্ধতির বিষয়ে মতবাদ। -বাংলা একাডেমী আধুনিক বাংলা অভিধান, পৃ. ৬৯১

সুতরাং বুঝা গেলো, ধর্মের যে সংজ্ঞা হেযবুত তওহীদ পেশ করে থাকে, সেটা তাদের নিজস্ব মনগড়া মতবাদ। মূলত ইসলামী আকীদা, ইবাদত, সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি এবং শিক্ষাসহ মানব জীবনের সবকিছু এই ধর্মের ব্যাপকতার আওতাভুক্ত।

আল্লাহর মনোনীত ধর্ম কী?
আল্লাহ পাকের কাছে মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম। এই ইসলাম ধর্ম ব্যতিত পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়। কুরআন করীমে ইরশাদ হয়েছে,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلامَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম। এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে ইসলামকে (চিরকালের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। -সুরা মায়েদা : ৩

মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি একমাত্র এ ধর্মের মাঝে নিহিত। কারণ ইসলামই একমাত্র আল্লাহপাকের মনোনিত ধর্ম। ইরশাদ হয়েছে ,
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلامُ
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন কেবল ইসলাম। -সুরা আলে ইমরান : ১৯

এজন্য ইসলামে প্রবেশ করতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। পবিত্র কুরআনে আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
হে মু’মিনগণ ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চিত জেন, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সুরা বাকারা : ২০৮

সুতরাং কুরআন-সুন্নায় মানব জীবনের সকল বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং বিধিবিধান রয়েছে। ফেকাহ শাস্ত্রে খুটিনাটি সব কিছুর বিস্তারিত আলোচনা আছে। এর কিছু মান্য করা, কিছুকে অস্বীকার করা কুফরী। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ. البقرة
তবে তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ এবং কিছু অংশ অস্বীকার কর? তাহলে বল, যারা এরূপ করে তাদের শাস্তি এছাড়া আর কী হতে পারে যে, পার্থিব জীবনে তাদের জন্য থাকবে লাঞ্ছনা। আর কিয়ামতের দিন তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে কঠিনতর আযাবের দিকে? তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে উদাসীন নন। -সুরা বাকারা : ৮৫

ইসলাম-পূর্ব আসমানী ধর্মগুলো সারা পৃথিবীর জন্য এবং সব যুগের জন্য ছিলো না। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেগুলোতে জীবনের সকল বিষয়ের সমাধান নেই এবং সেগুলো পূর্ণাঙ্গ নয়। কিন্তু ইসলাম এর ব্যতিক্রম। সুতরাং ইসলাম ব্যতিত অন্য কোনো ধর্ম পালন করা সুস্পষ্টভাবে অগ্রহনযোগ্য ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। মহান রব বলেন,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনও দ্বীন অবলম্বন করতে চাবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না এবং আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। -সুরা আলে ইমরান : ৮৫

সুতরাং প্রমাণ হলো ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম। মানবতা এই ইসলাম ধর্মেরই একটি অংশ। কিন্তু কোনো অংশকে মূল বানানো মূর্খতা ও ভ্রষ্টতা। সুতরাং ধর্ম হলো ইসলাম আর সেই ইসলামের একটি পালনীয় আমল হলো মানবসেবা।

মানবতা বা মানবধর্ম কোনো ধর্ম হতে পারে না কেন?
এক. মানবতা যদি ধর্ম হয়, তাহলে মানুষের বিবেক হবে তার সংবিধান। কিন্তু এই বিবেক নামক সংবিধান কী সব সময় সঠিকটা খুঁজে বের করতে পারবে? যেমন ধরুন, নাস্তিকদের বিবেক তার মা বা বোনের সাথেও যৌবিক চাহিদা পূরণ করাকে যুক্তিসঙ্গত মনে করে। তাহলে এই বিবেক দিয়ে মানবধর্ম পরিচালনা করলে সমাজ কী আলোকিত হবে না পশুর সমাজ হবে? সুতরাং বুঝা গেলো, মানবতা কোনো ধর্ম হতে পারে না।

দুই. মানবতাবাদীদের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই। যেমন, আমরা সবাই জানি যে আমাদের উচিত বাবা-মার সাথে ভালো ব্যবহার করা। কিন্তু, কতটুকু ভালো ব্যবহারকে ভালো ব্যবহার বলবো? কে এটার স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দিবে? অথচ, ইসলাম বলে, বাবা-মার সাথে এমনভাবে ভালো ব্যবহার করো যে তাদের প্রতি কখনো উহ্‌ শব্দ পর্যন্ত করবে না। এমনিভাবে, মানুষের জীবনের প্রতিটা কাজের স্ট্যান্ডার্ড ধর্ম (বিশেষ করে ইসলাম) নির্ধারিত করে দেয়, ফলে পথহারা মানুষ পথ খুঁজে পায়। কিন্তু এটা মানবতার বিবেক ঠিক করে দিতে পারে না।

তিন. মানুষ এমন একটা প্রাণী যার ব্রেইন ওয়াশ করা খুব সহজ, আর একবার ব্রেন ওয়াশ হয়ে গেলে সে মানুষ হত্যার মত ঘোরতর খারাপ কাজকেও সে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মেনে নিতে পারে (যেটা আসলে অমানবিক!)। যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার জার্মানদের এমনভাবে ব্রেইন ওয়াশ করেছিল যে তারা অনায়াসে গণহত্যা সমর্থন করেছিলো। আবার, প্রিয়নবী মুহাম্মদ(সা) এর আগমনের আগে আরবের রীতি ছিল মেয়েদের জ্যান্ত কবর দেয়া, এটাকে তারা খুব স্বাভাবিক মনে করত! কারণ, তাদের ব্রেইন এভাবেই ওয়াশ হয়ে গিয়েছিল। এক সময় আমেরিকায় সমকামীদের ঘৃণার চোখ্যে দেখা হতো, অথচ এখন দেখা হয় সম্মানের চোখে! আজকের সমাজে ভাই-বোন বিছানায় শোয়াকে (Incest) ঘৃণার চোখে দেখা হয়, কিন্তু সেইদিন খুব বেশী দূরে নাই যেইদিন এই নোংরা কাজটাকেও মানবতার চোখে ‘হালাল’ হবে! সুতরাং বুঝা গেলো, মানবতাকে ধর্মের স্থানে আসীন করলে সমাজটা পশুর সমাজে পরিনত হতে বাধ্য।

চার. মানবধর্মে স্রষ্টায় বিশ্বাসী হওয়া জরুরী নয়। অথচ স্রষ্টার নিয়ম ছাড়া সৃষ্টি কখনও শান্তির পথ পেতে পারে না। সুতরাং শান্তিময় সমাজ গঠণে আল্লাহর দেওয়া ইসলাম ছাড়া ভিন্ন কোনো ধর্ম গ্রহণ করা সম্ভব নয়। উপরন্তু আল্লাহর ভয় না থাকলে, কখনও মানুষ পরিপূর্ণ ভালো হয় না। কারণ মানুষ সৃষ্টিগতভাবে অন্যায়প্রিয়। সুযোগ পেলেই সে অন্যায়ে জড়িত হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর ভয় থাকলে সে গোপনেও পাপে জড়িত হয় না। সুতরাং অন্যায়মুক্ত সমাজ গঠণে মানবতাকে ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত নয়।

পাঁচ. মানবের মস্তিস্কেনিসৃত আইন কখনও অপরিবর্তিত থাকে না। সময়ে সময়ে তা সবাই নিজের মন মত পরিবর্তন করে নেয়। যেমন বাংলাদেশের সংববিধান অলরেডি ১৫ বার পরিবর্তন করা হয়েছে। সুতরাং মানবতাকে ধর্ম বানালে সে ধর্মের নিয়মকানুন হবে নিজ স্বার্থ মোতাবেক। সুতরাং মানবতার সংবিধান সমাজকে কখনও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে না।

ছয়. মানবতাবাদীরা প্রায়শ:ই হয়ে দাঁড়ায় সুবিধাবাদী। একজন মানবতাবাদী যে শাস্তি সবার জন্য অমানবিক মনে করে, সেই একই শাস্তি তার চরম শত্রুর জন্য সঠিক বলে মনে করতে পারে। উদাহরণ দিচ্ছি। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় মানবতাবাদীরা কিন্তু এইসব অপরাধীদের ফাঁসীর জন্য গলা ফাটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু, এরাই আবার অন্য আলোচনায় বলবেন মানুষের ফাঁসী দেয়া ঘোরতর অপরাধ, যেহেতু আমরা প্রাণ দিতে পারি না, কাজেই প্রাণ নেয়ার অধিকারো আমাদের নেই। বুঝা গেলো, মানবতা কখনও স্বার্থহীন দাবিতে অনড় থাকতে পারে না। কিন্তু ইসলামের নিয়ম সর্বকালে, সর্বসময় এক ও অপরিবর্তিত। ফলে মানবতার দাবিতে নির্দোষ শত্রুও অপরাধীর বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়, কিন্তু ইসলামের নিরাপরাধা শত্রুও মুক্তি পায়। বুঝা গেলো, মানবতা কখনও ধর্ম হতে পারে না।

সাত. মানবতাবাদীরা সব সময় কৃতজ্ঞতার দাবিদার হয়। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করলে বিবেকের আদালতে সে মর্মাহত হয়। ধরুন আপনার এক প্রতিবেশী আপনার কাছে একদিন সাহায্য চাইলো, আপনি তাকে সাহায্য করলেন, কিন্তু বিনিময়ে সে আপনাকে ধন্যবাদ জানালো না, আপনি কিন্তু মন:ক্ষুণ্ন হবেন। দ্বিতীয় একদিন সে সাহায্য চাইলো, আপনি সেদিনো তাকে সাহায্য করলেন, এবারো সে আপনাকে ধন্যবাদ জানালো না, আপনি কিন্তু আসলেই মন:ক্ষুন্ন হবেন এবার, এবং খুব সম্ভবত: তৃতীয়দিন সে যখন সাহায্য চাইবে আপনি তাকে সাহায্য করবেন না। কারণ, মানুষ জন্মগতভাবে প্রতিদান প্রিয় (এরজন্যই বছর শেষে বেতন না বাড়লে আপনার মন খারাপ হয়ে যায়!), সে একদিন ফ্রি ফ্রি কাজ করে দিবে, ২ দিন করে দিবে, কিন্তু তৃতীয় দিন আর করবে না। অথচ, আপনি যদি একজন প্রকৃত ধার্মিক হয়ে থাকেন, আপনি কিন্তু তা-ও ঐ মানুষটির উপকার করে যাবেন, ধন্যবাদে তোয়াক্কা করবেন না। কারণ, যে আল্লাহয় বিশ্বাস করে, সে পরকালে বিশ্বাস করে। একজন প্রকৃত ধার্মিক মানুষ এই দুনিয়ায় মানুষের কাছ থেকে প্রতিদান পাবার আশায় কাজ করে না, সে কাজ করে করে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাবার আশায়। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে মানবধর্মে বিশ্বাসী হয়ে মানবতার কাজে সর্বাবস্থায় অটল থাকা যায় না, বরং মানবতার কাজে অটল থাকতে একমাত্র ইসলাম প্রয়োজন।

আট. কেউ অপরাধ করলে মানবতার দাবি হলো, তার সমালোচনা করতে অসুবিধা নেই। কিন্তু ইসলাম বলে ব্যক্তিগত দোষ চর্চা করো না। কোনো মুমিন অন্য মুমিনের দোষ গোপন কররেও কিয়ামতেও আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন। সুতরাং বুঝা গেলো, পরনিন্দা ও দোষচর্চা বন্ধ করতে একমাত্র ইসলাম প্রয়োজন। মানবধর্ম এখানে চরমভাবে ব্যার্থ।

নয়. পৃথিবীর সকল গবেষণা উপস্থিত করলে দেখা যাবে একমাত্র মুসলিমরা যে পরিমান মানবসেবা করে, তার ১০০ ভাগের ১ ভাগও মানবতাবাদীরা করে না। সুতরাং বুঝা গেলো, মানবসেবায়ও একমাত্র ইসলাম ধর্ম এগিয়ে।

দশ. মানবতাবাদীরা কখনও অশান্তিতে পড়লে হতাশ হয়, কেউ তেউ তো আত্মহত্যা করে। কিন্তু মুসলিমরা হতাশায় পড়লে আল্লাহকে ডাকে। ফলে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করে। অনেক নাস্তিকরাও প্রশান্তির কোনো পথ না পেয়ে আল্লাহকে ডাকে। বুঝা গেলো, প্রশান্তির জন্য ইসলাম ধর্ম পালন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখানেও মানবধর্ম চরমভাবে ব্যর্থ। সব মিলিয়ে মানবধর্ম কোনো ধর্ম হতে পারে না।

শুধু মানবসেবাই কী আল্লাহর কাম্য?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মানবসেবা করাই আল্লাহর চাওয়া। এটা করলেই তিনি খুশি। তারা লিখেছে,

‘আর এ ধর্ম পালন করা অর্থাৎ মানুষের শান্তির লক্ষ্যে কাজ করাই মানুষের প্রকৃত এবাদত। নবী-রাসূল অবতারগণ এ লক্ষ্যেই সংগ্রাম করে গেছেন। এ কাজ যারা করবে তারাই স্রষ্টার সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি পাবে, তারাই প্রকৃত মোমেন বা বিশ্বাসী। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৮৩

এখন মানুষকে বোঝাতে হবে মানবতার কল্যাণে কাজ করাই তোমার প্রকৃত এবাদত, এই এবাদতই আল্লাহর কাম্য এটা করলেই জান্নাত সুনিশ্চিত। -ধর্মবিশ্বাস : পৃ. ১২

ইসলাম কী বলে?
আল্লাহ পাকের প্রধানতম চাহিদা হলো, তাঁর পরিচয় লাভ করা। এটার জন্যই আল্লাহ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মহান রব বলেন,
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ
আমি জ্বিন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই দাসত্ব করবে। -সুরা যারিয়াত : ৫৬

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
ليقروا بالعبودة طوعا وكَرها
মানবজাতি যেন সেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করে। -তাফসীরে তাবারী : খ. ১১ পৃ. ৪৭৬

আল্লাহর সন্তুষ্টি কীসে?
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثًا وَيَكْرَهُ لَكُمْ ثَلاَثًا فَيَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَأَنْ تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُوا
আল্লাহ তা’আলা তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। তোমাদের জন্য তিনি যা পছন্দ করেন, তা হলঃ ১. তোমরা তারই ইবাদাত করবে, ২. তার সঙ্গে কিছুই শারীক করবে না এবং ৩. তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে ধারণ করবে ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৭১৫

সুতরাং বুঝা গেলো, আল্লাহর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি শুধুমাত্র মানবসেবায় কথাটা সঠিক নয়। উপরন্তু একজন মানুষ মারা গেলে তার কবরে যেসব প্রশ্ন করা হবে তা নিন্মোক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়। হাদিস শরীফে এসেছে, নবিজি সাঃ বলেন,
وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ خَفْقَ نِعَالِهِمْ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ حِينَ يُقَالُ لَهُ: يَا هَذَا، مَنْ رَبُّكَ وَمَا دِينُكَ وَمَنْ نَبِيُّكَ
মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়, যখন তারা ফিরে যেতে থাকে, আর তখনই তাকে বলা হয়, হে অমুক! তোমার রব কে? তোমার দীন কি এবং তোমার নবী কে? -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৭৫৩

উক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা গেলো, কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। যার মধ্যে মানবসেবার কথাটি কিন্তু নেই। বুঝা গেলো, শুধৃ মানবসেবাই আল্লাহ’র কাম্য নয়। কিন্তু মনে রাখা চাই, মানবসেবাও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, কিন্তু আল্লাহ পাকের মূল চাহিদা শুধুমাত্র মানবসেবা নয়।

ধর্মও নবীদের প্রধান উদ্দেশ্য মানবতা?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, সকল ধর্মের ও নবীদের আগমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো মানবতার কল্যানে কাজ করা। তারা লিখেছে,

ধর্মের আগমনের প্রধান উদ্দেশ্য মানবতার কল্যাণ। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ৮

স্রষ্টার প্রেরিত সকল ধর্মের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য হবে মানবতার কল্যাণ। যে ধর্মের উদ্দেশ্য মানবতার কল্যাণ নয়, সেটা আল্লাহর ধর্মই নয়। -জঙ্গিবাদ সঙ্কট, পৃ. ১০

মানুষের কল্যাণের জন্য সংগ্রাম ব্যতিরেকে এসলামই অসম্পূর্ণ। -জঙ্গিবাদ সঙ্কট, পৃ. ৫৪

সকল ধর্মের অবতার ও মহামানবদের জীবনে রয়েছে শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস অথচ আজকের সমাজের মানুষের ধর্মীয় জীবনের নেতৃত্ব প্রদানকারী ধর্মব্যবসা আলেম পুরোহিতরা মানুষকে কেবল পরকালমুখী হতে শিক্ষা দেন। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪৬

সকল ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মপ্রবর্তক নবী-রসূল অবতারগণ এসেছেন এক স্রষ্টার পক্ষ থেকে, তারা সবাই মানুষকে স্বার্থহীনভাবে মানবকল্যাণে ব্রতী হবার শিক্ষা প্রদান করেছেন। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৩৮

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, সকল ধর্ম ও নবীদের আগমণের আসল ও মূল উদ্দেশ্য ছিলো মানবতার কল্যানে কাজ করা।

ইসলাম কী বলে?
সকল ধর্ম ও নবীদের মূল মিশন কী ছিলো তা পবিত্র কুরআনেই মহান আল্লাহ বলে দিয়েছেন।

এক. আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহ্বান করা:
সকল নবী-রাসুলগণকে আল্লাহ পাক যে দাওয়াতের মিশন দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তার মূল বিষয় ছিলো আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহ্বান করা। সে কথা খোদ আল্লাহ তাআলাই বলেছেন,
شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاء وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ
তিনি তোমাদের জন্য দীনের সেই পন্থাই স্থির করেছেন, যার হুকুম দিয়েছিলেন তিনি নূহকে এবং (হে রাসূল!) যা আমি ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে পাঠিয়েছি এবং যার হুকুম দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে, তোমরা দীন কায়েম কর এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি করো না। (তা সত্ত্বেও) তুমি মুশরিকদেরকে যে দিকে ডাকছ তা তাদের কাছে অত্যন্ত কঠিন মনে হয়। আল্লাহ যাকে চান বেছে নিয়ে নিজের দিকে টানেন। আর যে-কেউ তার অভিমুখী হয় তাকে নিজের কাছে পৌঁছে দেন। -সুরা শুরা : ১৩

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। -সূরা তাওবা : ৩৩

সুতরাং বুঝা গেলো, সকল নবী-রাসুলসহ শেষ নবী মুহাম্মাদ সা. এর মিশন ছিলো আল্লাহর দ্বীন মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করার মেহনত করা। এখানে বলা হয়নি মানবসেবা করাই নবীদের কাজ ছিলো।

দুই. আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করা:
আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদ সা. কে জানিয়ে দিয়েছেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
আর আমি প্রত্যেক জাতির কাছে একজন রাসুল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো। -সুরা নাহাল, আয়াত নং- ৩৬

উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, সমস্ত নবিগণ আ. স্বীয় গোত্রকে মূর্তির উপাসনা ও তাগুত থেকে বিরত থাকতে বলতেন। প্রশ্ন হলো, কি বলে দাওয়াত দিতেন তাঁরা ? সে জবাবও আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন-
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
আর আপনার পূর্বে আমি যে রাসুলই প্রেরণ করেছি, তার ওপর এই প্রত্যাদেশই করেছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। -সুরা আম্বিয়া : ২৫

উক্ত আয়াতগগুলো থেকে বুঝা গেলো, সকল নবীদের কাজ ছিলো আল্লাহ দ্বীন ও তাঁর ইবাদতের দিকে মানুষকে আহ্বান করা। সুতরাং মানবসেবাই মানুষের মূল ধর্ম এবং এ মানবসেবার জন্যই সকল নবীদের আগমণ হয়েছে এ কথাটা সর্বৈব মিথ্যাচার।

ধর্মের মৌলিক উদ্দেশ্য মানবসেবা না আখেরাতের ফিকির?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘সকল ধর্মের অবতার ও মহামানবদের জীবনে রয়েছে শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস অথচ আজকের সমাজের মানুষের ধর্মীয় জীবনের নেতৃত্ব প্রদানকারী ধর্মব্যবসা আলেম পুরোহিতরা মানুষকে কেবল পরকালমুখী হতে শিক্ষা দেন। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪৬

ইসলাম কী বলে?
ধর্মের মৌলিক উদ্দেশ্য আখেরাতমুখী করা। আখেরাতের বিষয়ে উদ্ভুদ্ধ করতে মহান রব বলেন,
وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْأُولَى
আপনার জন্যে পরকাল ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়। -সুরা দুহা : ৪

সুতরাং বুঝা গেলো, আখেরাতমুখী চেতনা জাগ্রত করতে আল্লাহ পাক নবী-রাসুলগণকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু হেযবুত তওহীদ সেটা মানতেই নারাজ।

মানবতার কাজ না করলে কিছুই কবুল হবে না:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, সমাজ তথা মানবজাতির শান্তির লক্ষ্যে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে প্রচেষ্টা না করলে কারো কোন আমলই কবুল হবে না, তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৪৪

ইসলাম কী বলে?
প্রত্যেকটি আমল কবুল হওয়া বা না হওয়া নির্ভর করে তার নিয়্যতের উপর। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ
কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশেই হবে, যে জন্যে, সে হিজরত করেছে। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং :১

মহান রব বলেন,
لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ
আল্লাহর কাছে তাদের গোশত পৌঁছে না আর তাদের রক্তও না, বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে। -সুরা হাজ্ব : ৩৭

সুতরাং বুঝা গেলো, আমল কবুল হওয়া বা না হওয়া নির্ভর করে মানুষের নিয়ত ও তাক্বওয়ার উপরে। অবশ্য মানবসেবা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, কিন্তু অন্যান্য আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারটি মানবসেবার উপর নির্ভরশীল নয়।

মানবকল্যানে আত্মনিয়োগ না করলে তার ইবাদত নিরর্থক ও সে জাহান্নামী:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, কেবল তাদের উপাসনাই আল্লাহ কবুল করেন যারা নিরন্তর মানুষের কল্যাণে কাজ করে যায়। -সবার ঊর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ৯

আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষকে অশান্তির আগুনে জ্বলতে দেখেও যারা কাপুরুষের মতো ঘরে লুকায় আর এবাদত মনে করে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্ব করে, নানা উপাসনায় মশগুল থাকে তাদেরকে আল্লাহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। -ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ৩,

যখন মানবতা ভূলুণ্ঠিত, আর্ত মানুষের ক্রন্দনে আকাশ-বাতাস ভরাক্রান্ত, নিষ্পাপ শিশুর রক্তে সিক্ত হয়ে আছে পৃথিবীর মাটি, ধর্ষিতার লজ্জায় দুনিয়া অন্ধকার তখন যারা মসজিদে বসে হালকায়ে জিকিরের রব তুলছেন, যারা নিভৃত গৃহকোণে এতেকাফ করছেন, যারা হজ্বে গিয়ে সাফা-মারওয়া প্রদক্ষিণ করছেন, যারা গভীর রাতে উঠে তাহাজ্জুদ গুজারি হচ্ছেন, কঠিন অধ্যবসায় করে মহা আলেম হচ্ছেন, মনে রাখবেন এ সব পশুশ্রম।আল্লাহর ওসবে দরকার নেই। মানুষের কল্যাণের জন্যই ধর্ম। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৭৪

স্বার্থপরের নামাজ নেই, স্বার্থপরের সমাজ নাই, স্বার্থপরের জান্নাত নেই। একইভাবে যে আলমের জ্ঞান বা যে ধনীর ধন মানুষের কল্যাণে লাগেনা সে আলেম ও ধনীকেও আল্লাহর প্রয়োজন নেই। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ৯

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মানবসেবা না করলে তার সকল আমল পরিত্যাজ্য। তার কোনো আমলই কোনো কাজে আসবে না।

ইসলাম কী বলে?
আল্লাহ পাক মুমিনের কোনো কাজ নষ্ট করবেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন,
إِنَّ اللّهَ لاَ يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎ কর্মশীল লোকদের শ্রমফল (সাওয়াব) বিনষ্ট করেননা। -সুরা তাওবাহ : ১২০

উপরন্তু হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
إنَّ اللَّهَ لا يَظْلِمُ مُؤْمِنًا حَسَنَةً يُعْطى بها في الدُّنْيا ويُجْزى بها في الآخِرَةِ وأَمّا الكافِرُ فيُطْعَمُ بحَسَناتِ ما عَمِلَ بها لِلَّهِ في الدُّنْيا حتّى إذا أفْضى إلى الآخِرَةِ لَمْ تَكُنْ له حَسَنَةٌ يُجْزى بها
আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের সাথে তাদের ভাল কাজের প্রতিদান দেয়ার ব্যাপারে অন্যায় আচরণ করবেন না । তিনি এই পৃথিবীতে ভাল কাজের কারণে তাদের পুরস্কৃত করবেন এবং আখিরাতেও তাদের ভাল কাজের জন্য তাদের প্রতিদান দেবেন । আর কাফিরদের জন্য , তাদের ভাল কাজের জন্য (যা তারা আল্লাহর ওয়াস্তে করেছিল) এই পৃথিবীতেই তাদের জীবন জীবিকার ভাল উপকরণ দেয়া হবে , অতঃপর যখন সে পরকালে যাবে , তখন তাকে প্রতিদান দেয়ার জন্য কোন ভাল কাজ অবশিষ্ট থাকবে না। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৮০৮

সুতরাং প্রমাণ হলো, নেককার মুমিনদের কোনো নেকি আল্লাহ পাক নষ্ট করবেন না। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এ বিষয়টা মানতেই নারাজ। কেমন যেন যেভাবেই হোক তাদের মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। কারণ তারা কো নাস্তিকদের বেষ্ট ফ্রেন্ড।

উপরন্তু হেযবুত তওহীদের কাছে জান্নাতে যাওয়ার জন্য শর্ত শুধুমাত্র তাওহীদ। তারা লিখেছে,
আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে দিলেন- আমার তাওহীদকে, আমার সার্বভৌমত্বকে যে বা যারা স্বীকার কোরে নেবে, তা থেকে বিচ্যুত হবে না তারা কত এবাদত কোরেছে, তারা কত গোনাহ কোরেছে, কিছুই আমি দেখবো না, তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবো, তারা ব্যভিচার ও চুরি করলেও। -দাজ্জাল : পৃ. ১৫

বুঝা গেলো, হেযবুত ততওহীদের দাবিমতে, ‘শুধুমাত্র তাওহীদ থাকলেই সে জান্নাতে যাবে’ তাহলে হেযবুত তওহীদের কাছে প্রশ্ন হলো, কোনো তাওহীদবাদী যদি মানবসেবায় নিয়োজিত না হয় তাহলে সে জাহান্নামে যাবে কথাটা কী আপনাদের মতের সাথে সাংঘর্ষিক নয়? আসলে মুর্খ এ গোষ্ঠিটা কী বলে নিজেও বোঝে না।

মানুষের উপকার হয় এমন সব কাজই সওয়াবের কাজ?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, মানুষের ক্ষতি হয় এমন সব কথা ও কাজই গুনাহ-এর কাজ, আর মানুষের উপকার,কল্যান হয় এমন সব কাজই সওয়াবের কাজ। -সবার ঊর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ১০

ইসলাম কী বলে?
মানুষের উপকার হয়, এমন সব কাজই সওয়াবের কাজ এ দাবিটা মূলত নাস্তিকদের। তারা বলে থাকে মানব কল্যানের সবই পূণ্যর কাজ। হেযবুত তওহীদও সেই একই কথা বলে থাকে। মূলক কুরআন-সুন্নাহ যেটাকে সওয়াবের কাজ বলেছে, সেটাই সওয়াবের কাজ। মানুষের উপকার করতে কোনো বিধবা নারীর বিবাহবহির্ভূত যৌবিক চাহিদা পূরণ কী সওয়াবের কাজ? এটাও তো তার উপকার করার শামিল। এমন ভুরি ভুরি প্রমাণ দেওয়া যাবে, যেখানে প্রকাশ্যভাবে উপকারের কাজ সওয়াব নয়, বরং পরিস্কার কবীরা গুনাহের অন্তুর্ভূক্ত।

মানবতাবাদীরাই শহীদ:
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘মানবতার কল্যাণে যারা নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে বিপ্লবের অগ্নিময় পথকে সঙ্গী করে জীবন কাটিয়ে গেছেন, আমরা হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাই। যদিও তারা অনেকেই হয়তো নাস্তিক ছিলেন। সেটা কোন মূখ্য বিষয় নয়। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ কবিতা ইসলাম : পৃ. ১১

অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা জীবন দেয়, মানবতার কল্যাণে যারা জীবন দেয়, মানুষের মুক্তির জন্য যারা জীবন দেয় তারাই হচ্ছে শহীদ। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষন, পৃ. ১৫

ইসলাম কী বলে?
ইসলামে শহীদ তারাই যাঁদের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ শহীদ হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা দিয়েছে। চলুন একটি হাদিস দেখা যাক। হযরত আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
مَا تَعُدُّونَ الشَّهِيدَ فِيكُمْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيدٌ قَالَ إِنَّ شُهَدَاءَ أُمَّتِي إِذًا لِقَلِيلٌ مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ مَاتَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ مَاتَ فِي الطَّاعُونِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ مَاتَ فِي الْبَطْنِ فهوَ شهيدٌ
তোমাদের মধ্যকার কাকে তোমরা শহীদ বলে মনে কর? সাহাবীগণ সমস্বরে বলে উঠল, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিহত হয়, সেই শহীদ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তাহলে তো আমার উম্মাতের মধ্যে শাহীদের সংখ্যা খুবই নগণ্য হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ; যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিয়োজিত থেকে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ এবং যে ব্যক্তি প্লেগরোগে মৃত্যুবরণ করে, সেও শহীদ। আর যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণ করে, সেও শহীদ। -সহীহ মুসলিম : হাদিস নং- ১৯১৫,

সুতরাং মানবসেবায় নিয়োজিত অমুসলিম বা নাস্তিকদের ব্যাপারে শহীদ বলা চরম মূর্খতা ও ইসলাম বিদ্বেষী মতবাদ। উপরন্তু অমুসলিমরা যতবড় মানবসেবী হোক না কেন, তারা শহীদ হওয়া তো দূরের কথা তাদের সকল ভালো কাজ বিফল হবে। মহান রব বলেন,
لَئِنۡ اَشۡرَکۡتَ لَیَحۡبَطَنَّ عَمَلُکَ وَلَتَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
তুমি যদি শিরক কর, তবে নির্ঘাত তোমার সমস্ত কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। -সুরা যুমার : ৬৫

সুতরাং প্রমাণ হলো, অমুসলিমদের শহীদ বা জান্নাতী বলা সুস্পষ্টভাবে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী চেতনা।

শিক্ষার মূল টার্গেট মানবতাবোধ:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘যে জ্ঞান সমাজের বা জাতির কল্যাণে লাগে না সেই জ্ঞান অর্থহীন। আর অসৎ ব্যক্তির জ্ঞান বিষমাত্র। যা মানুষের শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ১৮

শিক্ষার উদ্দেশ্যই হবে মানবতার কল্যাণ। আত্মিক চারিত্রিক ও জাগতিক জ্ঞানের সমন্বয়ে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা হবে যেখানে শিক্ষক হবেন মানবতাবাদী মহান আদর্শের প্রতীক। তিনি শিক্ষাদানকে মানবজাতির প্রতি নিজের কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা বলে এবং সকল জ্ঞানকে স্রষ্টার পক্ষ  থেকে আমানত বলে মনে করবেন। -প্রস্তাবনা :  পৃ. ৭

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের কাছে শিক্ষার মূল টার্গেট হতে হবে মানবকল্যান।

ইসলাম কী বলে?
শিক্ষার মূল টার্গেট হতে হবে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ইচ্ছা না থাকলে কোনো জ্ঞানই কিয়ামতে উপকারে আসবে না। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ ‏.‏ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ ‏.‏ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ ‏.‏ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে যে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তার প্রদত্ত নি’আমাতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে) তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এত বড় নি’আমাত পেয়ে বিনিময়ে তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে কুরআন অধ্যয়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্যে যাতে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে যাতে লোকে বলে, তুমি একজন কারী। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে, সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ১৯০৫

সুতরাং বুঝা গেলো, রবের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত ছাড়া কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা বা মানুষকে শিখানোর পরও জাহান্নামে যেতে হবে।

মানবতাবাদীরাই সফল:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, মানুষ তার সমগ্র জীবনকালকে যদি অন্য মানুষের কল্যাণে, জগতের কল্যাণে উৎসর্গ করতে পারে তবেই তার মানবজনম পূর্ণরূপে সার্থক হলো। -সবার ঊর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ১৭

মানুষকে ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে সুখী-সমৃদ্ধ করতে পারার মধ্যে আমাদের পরকালীন জান্নাত এবং মানবজনমের সার্থকতা নিহিত আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। -জঙ্গিবাদ সঙ্কট : পৃ. ৫৭

ইসলাম কী বলে?
মহান রবের কাছে সফলতার মানদণ্ড হলো, ঈমান ও আত্মশুদ্ধ হওয়া। মহান রব বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে। -সুরা মুমিনুন : ১

আল্লাহ পাক আরো বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا
যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। -সুরা শামস : ৯-১০

সুতরাং বুঝা গেলো, ঈমান ও তাযকিয়াতুন নাফস ব্যতিত যত আমলই হোক না কেন তাদেরকে সফল বলা কুরআন বিরোধীতার শামিল।

মানবতার কাজ না করলে সে কাফের।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের কাছে মানবতাই ধর্ম। এই ধর্ম পালন না করলে সে কাফের। ফলে সে জাহান্নামে যাবে। তারা লিখেছে,
যদি আমার জীবন-সম্পদ মানুষের কল্যাণে ব্যয় না করি, আমি কাফের হয়ে যাব, মো’মেন হতে পারব না। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৫৪

আর এ ধর্ম পালন করা অর্থাৎ মানুষের শান্তির লক্ষ্যে কাজ করাই মানুষের প্রকৃত এবাদত। নবী-রাসূল অবতারগণ এ লক্ষ্যেই সংগ্রাম করে গেছেন। এ কাক যারা করবে তারাই স্রষ্টার সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি পাবে, তারাই প্রকৃত মোমেন বা বিশ্বাসী। কিন্তু মানুষের অশান্তির মধ্যে ফেলে রেখে চার দেয়ালের মধ্যে এবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকলে স্রষ্টার আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন না পরকালেও মুক্তি মিলবে না। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৮৩

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মানবসেবায় যে নিয়োজিত থাকবে না, সে কাফের।

ইসলাম কী বলে?
মানবসেবা করা ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল। কিন্তু এটা না করে জান্নাতে যাওয়া যাবে না, এমন কথা ইসলাম বিরোধী। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ سَيُخَلِّصُ رَجُلاً مِنْ أُمَّتِي عَلَى رُءُوسِ الْخَلاَئِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلاًّ كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ مَدِّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَقُولُ أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الْحَافِظُونَ فَيَقُولُ لاَ يَا رَبِّ ‏.‏ فَيَقُولُ أَفَلَكَ عُذْرٌ فَيَقُولُ لاَ يَا رَبِّ ‏.‏ فَيَقُولُ بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً فَإِنَّهُ لاَ ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ فَتَخْرُجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فَيَقُولُ احْضُرْ وَزْنَكَ فَيَقُولُ يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلاَّتِ فَقَالَ إِنَّكَ لاَ تُظْلَمُ ‏.‏ قَالَ فَتُوضَعُ السِّجِلاَّتُ فِي كِفَّةٍ وَالْبِطَاقَةُ فِي كِفَّةٍ فَطَاشَتِ السِّجِلاَّتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ فَلاَ يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللَّهِ شَيْءٌ
আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের একজনকে সমস্ত সৃষ্টির সামনে আলাদা করে এনে উপস্থিত করবেন। তিনি তার সামনে নিরানব্বইটি আমলনামার খাতা খুলে ধরবেন। প্রতিটি খাতা দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তারপর তিনি প্রশ্ন করবেন, তুমি কি এগুলো হতে কোন একটি (গুনাহ) অস্বীকার করতে পার? আমার লেখক ফেরেশতারা কি তোমার উপর যুলুম করেছে? সে বলবে, না, হে প্ৰভু!

তিনি আবার প্রশ্ন করবেনঃ তোমার কোন অভিযোগ আছে কি? সে বলবে, না, হে আমার প্রভু! তিনি বলবেনঃ আমার নিকট তোমার একটি সাওয়াব আছে। আজ তোমার উপর এতটুকু যুলুমও করা হবে না। তখন ছোট একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে। তাতে লিখা থাকবেঃ “আমি সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল”।

তিনি তাকে বলবেনঃ দাড়িপাল্লার সামনে যাও। সে বলবে, হে প্ৰভু! এতগুলো খাতার বিপরীতে এই সামান্য কাগজটুকুর কি আর ওজন হবে? তিনি বলবেনঃ তোমার উপর কোন রকম যুলুম করা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর খাতাগুলো এক পাল্লায় রাখা হবে এবং উক্ত টুকরাটি আরেক পাল্লায় রাখা হবে। ওজনে খাতাগুলোর পাল্লা হালকা হবে এবং কাগজের টুকরার পাল্লা ভারী হবে। আর আল্লাহ তা’আলার নামের বিপরীতে কোন কিছুই ভারী হতে পারে না। -জামে তিরমিযি : হাদিস নং : ২৬৩৯

উক্ত হাদিস থেকে বুঝা গেলো, যে ব্যক্তি কোনো আমলই করতে পারেনি, কিন্তু শুধুমাত্র একবার কালেমা পড়েছিলো, তাকেও আল্লাহ পাক রহম করে জান্নাত দিতে পারেনা। যদি মানবসেবা না করলে কাফের হয়ে যেতো, তাহলে তাকে আল্লাহ পাক জান্নাত দিতেন না। কারণ জান্নাত কাফেরদের জন্য হারাম। সুতরাং প্রমাণ হলো, মানবসেবা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল হলেও সেটা না করলে কেউ কাফের হয়ে যাবে বিষয়টা সত্য নয়। এটা হেযবুত তওহীদের মনগড়া মতবাদ। অবশ্য মানবসেবা নামক ইসলামের এ বিধানকে  কেউ অস্বীকার করলে সে কাফের হয়ে যাবে।

উপরন্তু একমাত্র শিরক আল্লাহ পাক ক্ষমা করেন না। মহান রব বলেন,
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء وَمَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। -সুরা নিসা : ১১৬

সুতরাং বুঝা গেলো, মানবসেবা না করাকে কুফর এবং শিরকের পর্যায়ে অন্তুর্ভূক্ত করা চরম ইসলাম বিরোধী কাজ।

মানবসেবা করলেই কী জান্নাত?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মানবসেবা করলেই সে জান্নাতে যাবে। তারা লিখেছে,
মানুষ যদি বুঝতে সক্ষম হতো যে মানুষের উপকার করাই ধর্মের শিক্ষা, এটাই তার জান্নাতে যাওয়ার পথ, তাহলে মানবসমাজ কি এত দুঃখ দারিদ্র্য, বৈষম্য, অবিচার আর অশান্তিতে পূর্ণ হতো? -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৩৭

এক কথায় মানুষকে সুখ-শান্তি নিরপত্তার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোই মানুষের প্রকৃত এবাদত। এই এবাদত করলে সে পরকালে জান্নাত পাবে। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৫১

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, মানবসেবা করলেই জান্নাত সুনিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে তারা ইসলামের অন্য কোনো বিধিবিধান এমনকি ঈমানেরও শর্ত রাখেনি। দেখুন তারা কী বলে-
এখন মানুষকে বোঝাতে হবে মানবতার কল্যাণে কাজ করাযই তোমার প্রকৃত এবাদত, এই এবাদতই আল্লাহর কাম্য এটা করলেই জান্নাত সুনিশ্চিত। -ধর্মবিশ্বাস : পৃ. ১২

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মানবসেবা করাটাই মূল, এটা করলেই জান্নাত।

ইসলাম কী বলে?
মানবসেবা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। তবে এটা করলেই জান্নাতে চলে যাবে এটা চরম বিভ্রান্তিকর তথ্য। কারণ হেযবুত তওহীদের দাবিমতে মানবসেবার অন্যতম কাজ হলো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। সেই সংগ্রামে খোদ নবীজির সা. সাথে জনৈক ব্যক্তি অংশ গ্রহণ করার পরও তিনি জাহান্নামী হয়েছিলেন। হাদিস শরীফে এসেছে। সাহল ইবনু সা‘দ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
الْتَقَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَالْمُشْرِكُوْنَ فِيْ بَعْضِ مَغَازِيْهِ فَاقْتَتَلُوْا فَمَالَ كُلُّ قَوْمٍ إِلَى عَسْكَرِهِمْ وَفِي الْمُسْلِمِيْنَ رَجُلٌ لَا يَدَعُ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ شَاذَّةً وَلَا فَاذَّةً إِلَّا اتَّبَعَهَا فَضَرَبَهَا بِسَيْفِهِ فَقِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا أَجْزَأَ أَحَدٌ مَا أَجْزَأَ فُلَانٌ فَقَالَ إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَقَالُوْا أَيُّنَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ إِنْ كَانَ هَذَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ لَأَتَّبِعَنَّهُ فَإِذَا أَسْرَعَ وَأَبْطَأَ كُنْتُ مَعَهُ حَتَّى جُرِحَ فَاسْتَعْجَلَ الْمَوْتَ فَوَضَعَ نِصَابَ سَيْفِهِ بِالأَرْضِ وَذُبَابَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهِ ثُمَّ تَحَامَلَ عَلَيْهِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَجَاءَ الرَّجُلُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ فَقَالَ وَمَا ذَاكَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فِيْمَا يَبْدُوْ لِلنَّاسِ وَإِنَّهُ لَمِنْ أَهْلِ النَّارِ وَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فِيْمَا يَبْدُوْ لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ
কোন এক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাঃ এবং মুশরিকরা মুখোমুখী হলেন। তাদের মধ্যে তুমুল লড়াই হল। (শেষে) সকলেই আপন আপন সেনা ছাউনীতে ফিরে গেল। মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে মুশরিকদের কোন একাকী কিংবা দলবদ্ধ কোন শত্রুকেই রেহাই দেয়নি বরং তাড়িয়ে নিয়ে তরবারি দ্বারা হত্যা করেছে। তখন বলা হল! হে আল্লাহর রাসূল! অমুক লোক আজ যতটা ‘আমল করেছে অন্য কেউ ততটা করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ব্যক্তি জাহান্নামী। তারা বলল, তা হলে আমাদের মধ্যে আর কে জান্নাতী হবে যদি এ ব্যক্তিই জাহান্নামী হয়? তখন কাফেলার মধ্য থেকে একজন বলল, অবশ্যই আমি তাকে অনুসরণ করে দেখব (তিনি বলেন) লোকটির দ্রুত গতিতে বা ধীর গতিতে আমি তার সঙ্গে থাকতাম। শেষে, লোকটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে যন্ত্রণার চোটে সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করে তার তরবারির বাঁট মাটিতে রাখলো এবং ধারালো দিক নিজের বুকের মাঝে রেখে এর উপর সজোরে চেপে ধরে আত্মহত্যা করল। তখন (অনুসরণকারী) সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? তিনি তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সব ঘটনা জানালেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউ কেউ জান্নাতবাসীদের মতো ‘আমল করতে থাকে আর লোকজন তাকে তেমনই মনে করে থাকে অথচ সে জাহান্নামী। আবার কেউ কেউ জাহান্নামীর মতো ‘আমল করে থাকে আর লোকজনও তাকে তাই মনে করে অথচ সে জান্নাতী। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৪২০৭

পাশাপাশি জান্নাতে যাওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো, ঈমান। পাশাপাশি ইখলাসও জরুরী। কিয়ামতে এক মানবসেবীকে উপস্থিত করে প্রশ্ন করা হবে। যার বর্ণনা হাদিস শরীফে এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلاَّ أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ ‏.‏ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হবে যাকে আল্লাহ তা’আলা সচ্ছলতা এবং সর্ববিধ বিত্ত-বৈভব দান করেছেন। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নিআমাতসমূহের কথা তাকে বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (এবং স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এসব নি’আমাতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছো? জবাবে সে বলবে, সম্পদ ব্যয়ের এমন কোন খাত নেই যাতে সম্পদ ব্যয় করা তুমি পছন্দ কর, আমি সে খাতে তোমার সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করেছি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছে। তুমি বরং এ জন্যে তা করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে ’দানবীর’ বলে অভিহিত করে। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ১৯০৫

সুতরাং বুঝা গেলো, মানবসেবা করলেই জান্নাতে যেতে পারবে এটা সঠিক নয়। মানবসেবার পাশাপাশি ইখলাসওয়ালা হওয়া শর্ত। পাশাপাশি মুসলিম হওয়াও জরুরী। কারণ কোনো অমুসলিমের জন্য কিয়ামতে কোনো পুরস্কার থাকবে না।সুতরাং বুঝা গেলো, মানবসেবা করলেই জান্নাতে চলে যাবে এটা সত্য নয়।

মানবতাবাদী অমুসলিমরাও কী জান্নাতী?
কিয়ামতের দিন কোনো বেঈমানের জন্য কোনো সুসংবাদ থাকবে না। সে যতবড় মানবতাবাদী হোক না কেন? মহান রব বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللّهِ وَالْمَلآئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা’নত। -সুরা বাকারা : ১৬১

হযরত আনাস বিন মালেক রা: থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন,
إنَّ الكافِرَ إذا عَمِلَ حَسَنَةً أُطْعِمَ بها طُعْمَةً مِنَ الدُّنْيا وأَمّا المُؤْمِنُ فإنَّ اللَّهَ يَدَّخِرُ له حَسَناتِهِ في الآخِرَةِ ويُعْقِبُهُ رِزْقًا في الدُّنْيا على طاعَتِهِ
কাফের যদি দুনিয়াতে কোন নেক আমল করে তবে এর প্রতিদান স্বরূপ দুনিয়াতেই তাকে জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আর মুমিনদের নেকী আল্লাহ তা’আলা আখিরাতের জন্য জমা করে রেখে দেন এবং আনুগত্যের প্রতিফল স্বরূপ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে পৃথিবীতেও জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৮০৮

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
ما أحسنَ من محسنٍ من مسلمٍ ولا كافرٍ إلّا أُثيبَ قلنا يا رسولَ اللَّهِ هذهِ إثابةُ المسلمِ قد عرفناها فما إثابةُ الكافرِ قالَ إذا تصدَّقَ بصدقةٍ أو وصلَ رحمًا أو عمِلَ حسنةً أثابَهُ اللَّهُ وإثابتُهُ المالُ والولدُ في الدُّنيا وعذابٌ دونَ العذابِ يعني في الآخرةِ وقرأ {أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذابِ
যে কোন মুসলিম কিংবা কাফের ভাল কাজ করলে আল্লাহ তার প্রতিদান দেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহﷺ ! মুসলিমদের বিষয় তো বুঝলাম। তবে আল্লাহ কাফেরকে কী জাতীয় প্রতিদান দেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ উত্তর দেন, যদি সে সদকা করে বা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে কিংবা অন্য কোন ভাল কাজ করে, তাহলে আল্লাহ এর প্রতিদান তার সহায়-সম্পদে, সন্তান-সন্ততিতে, স্বাস্থ্য-সুস্থতায় এবং অনুরূপ বিষয়ে দান করেন। আর আখেরাতো বড় আযাব হতে ছোট আযাব। তারপর তিনি [সূরা ম’মিন ৪৬] তেলাওয়াত করলেন, أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ ‘ফেরাউন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ : খ. ৩ পৃ. ১১৪

সুতরাং প্রমাণ হলো, মানবসেবা করলেই জান্নাতে চলে যাবে কথাটা সত্য নয়। ঈমান, ইসলাম ও ইখলাসও জরুরী।

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো-
মানবতাই বড় ধর্ম তো দূরের কথা কোনো ধর্ম হতে পারে না এবং এর অনুসারীরা ধার্মিক হতে পারে না, বরং মানবতা বা মানবধর্ম নাস্তিকদের ধর্ম। এ ধর্ম অনুসরণ করলেই জান্নাতে যাবে বা না করলে জাহান্নামে যাবে এবং সে কাফের হয়ে যাবে এসব দাবি সর্বৈব মিথ্যাচার। সুতরাং যে ইসলাম রবের কাছে মনোনীত সেটা পরিত্যাগ করে নাস্তিকদের মানবধর্মকে যারা ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করেছে, সেই হেযবুত তওহীদ আর যাই হোক মুসলিম হতে পারে না।

Check Also

আত্মশুদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান:

নফস হলো মানব জিবনের এক ভয়ঙ্কর ফিৎনার কেন্দ্রস্থল। কারণ নফস বেশিরভাগ সময়েই মানুষকে খারাপ কর্মের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.