Home > হিজবুত তাওহীদ > হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই।

হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই।

হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই:

নাস্তিক-মুরতাদরা ইসলামের চুড়ান্ত দুশমন। সাধারণত অন্য ধর্মের লোকেরা যতটুকু ইসলামের উপর আঘাত না করে, তার চেয়ে হাজার গুন বেশি আঘাত করে থাকে নাস্তিক্যবাদ। তাদের সারা দিন-রাতের মিশন একটাই ইসলাম সম্পর্কে মানুষের ধারণা নেগেটিভ বানিয়ে দেওয়া। একে একে ইসলামের সকল বিধানের উপর তারা সামলোনচার তীর ছুঁড়ে থাকে। উপরন্তু মহান চরিত্রের অধিকারী নবীজি সা. এর চরিত্র নিয়ে তাদের চরম বিষোদগার রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা, নবী-রাসুলগণ, আখেরাত, তাক্বদীর, আসমানী কিতাবসহ কোনো কিছুতেই তাদের বিশ্বাস নেই। ইসলাম ধর্মের বিরোধীতা করাই যেন তাদের সকাল বিকালের আহার। অথচ ইসলামের এই চুড়ান্ত দুশমনেরা হেযবুত তওহীদের পরম বন্ধু। নাস্তিকদের ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের বক্তব্য ও মায়া-মমতা দেখলে অবাক হবেন। বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন যে, হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই। এ বিষয়ে বলার আগে নাস্তিকদের একটি গভীর ষড়যন্ত্রের কথা আপনাদেরকে বলতে চাই।

নাস্তিক মুফাসসিলের গভীর ষড়যন্ত্রের রুপরেখা:

গত ২০২১ সালে নাস্তিক মুফাসসিল ইসলামের একটা সিক্রেট ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় তার অজান্তেই। সেখানে তাকে তার অনুসারীদেরকে লক্ষ্য করে বলতে দেখা যায়, ‘আমরা নাস্তিকরা কখনও সফল হবো না, কারণ আমাদের কোনো দেশ নাই, রাজনৈতিক পরিচয় নাই। সুতরাং ইসলামী মৌলবাদকে ধ্বংস করতে হলে, তোমাদেরকে মুসলিমদের মাধ্যমে শেষ করতে হবে। একটি ইসলামিক দল খুলতে হবে। যারা প্রত্যক্ষ্যভাবে পরিচয় দেবে ইসলামিক দল, কিন্তু মতবাত প্রচার করবে আমাদের নাস্তিকদের’।
সূত্র: সংরক্ষিত ভিডিও লিংক

প্রিয় পাঠক, এটা ছিলো নাস্তিক মুফাসসিলের বক্তব্যের সারনির্যাস। যেখানে ইসলাম নিয়ে তার গভীর ষড়যন্ত্রের রুপ ফুটে উঠেছে, আর সে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ণে তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নাস্তিকদের এ গভীর ষড়যন্ত্রের মিশন বাস্তবায়ণ করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। মুখে তাওহীদ ও ইসলামের কথা বললেও তাদের আকীদা ও বিশ্বাস নাস্তিকদের সাথে কী চমৎকার মিল! উপরন্তু নাস্তিকদের সাথে হেযবুত তওহীদের গোপন যোগাযোগের একটা অডিও রেকর্ড আমার হাতে চলে এসেছে তাদের অজান্তেই।

নাস্তিক আসাদ নূর কী বলেছিলো হেযবুত তওহীদকে?
আমার কাছে অত্যান্ত গোপন মারফতে হেযবুত তওহীদের মুখপাত্র আসাদ আলীর কাছে পাঠানো নাস্তিক আসাদ নূরের একটা অডিও রেকর্ড চলে আসে। সেখানে শোনা যযাচ্ছে, হেযবুত তওহীদের আসাদ আলী নাস্তিক আসাদ নূরের সাথে যোগাযোগ করলে নাস্তিক আসাদ নূর যা বলেছিলো, তার সারসংক্ষেপ হলো-

‘ আসাদ ভাই, আমি একটা কাজ করছি, হাটছি, এজন্য লিখতে পারছি না দুঃখিত। আমি আপনার বেশ কয়েকটা ভিডিও দেখেছি,  আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। বাংলাদেশে অনেক ইউটিউবার কাজ করে, কিন্তু আপনার বাচনভঙ্গি মানে পুরো ব্যাপরটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে, অসাধারণ। আপনি চালিয়ে যান এটা আপনাকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাবে আমার মনে হয়। এ ধার্মিক কে নাস্তিক এটাতো বিষয় না আপনি মানুষের জন্য কতটা ভালো কাজ করছেন সেটা হল মূল বিষয় এ ধর্ম সেরা কি পরিমাণ বেপরোয়া হয়েছে তা হয়তো আপনি হাড়ে হাটে টের পাচ্ছেন এবং এদের বিরুদ্ধে কথা বললে কি পরিমান ভোগান্তিতে পড়তে হয় তা আমি মনে করি আপনি ভালই বুঝেছেন। আপনার ফেসবুকে কমেন্টগুলো দেখি আমার মনে হয় আপনি বিপদে পড়তে পারেন আপনাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখে আমার মনে হয় আপনার সরকার থেকে ভালো সাপোর্ট পান। আর আপনি মাঝেমধ্যে নাস্তিকদের নিয়েও কিছু ভিডিও করেন। কারণ তারা তাকে গালাগাল দেয় তারা কিন্তু ধরে নিয়েছে আমি নাস্তিক। আপনার একাউন্টে এক মেয়ের ভিডিও দেখলাম, তার ড্রেসাপ অনেক সুন্দর। তাকে দিয়ে অনুরোধ ও নমনীয়ভাবে কিছু কাজ করলে ধর্মান্ধদের মনে কিছু দাগ টানবে আশা করি। সর্বোপরি আপনার জন্য শুভ কামনা। আপনাদের মত লোক আমাদেে সমাজ সংস্কারে প্রয়োজন। আপনাদের মত লোক বিপদে পড়লে, সেটা আমাদের সমাজের জন্য অনেক ক্ষতি। আপনাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আমরা সাইলেন্টলি খেয়াল রাখি। খুবই চমৎকার এগিয়ে যান। আপনারা ধর্মে থেকে যে পরিমান ধর্মব্যবসায়ীদের প্রটেক্ট করছেন খুবই চমৎকার। আপনার জন্য শুভ কামনা।
সূত্র: সংরক্ষিত অডিও রেকর্ড।

আসাদ নূরের রেকর্ড থেকে জানা গেলো, সাইলেন্টলি নাস্তিকরা হেযবুত তওহীদকে পর্যবেক্ষণ করে থাকে এবং আসাদ নূর আসাদ আলীকে শিখিয়ে দিচ্ছে, মাঝে মধ্যে নাস্তিকদের বিরুদ্ধেও দু’য়েকটা ভিডিও বানাবেন, অন্যথায় জনগন ধরেই ফেলবে যে আপনারা নাস্তিক। ভাবুন, কত গভীরে হেযবুত তওহীদ কাজ করে যাচ্ছে। নাস্তিক আসাদ নূরের অডিও রেকর্ড থেকে আরও বুঝতে পারলাম যে, নাস্তিক মুফাসসসিলের সেই গভীর ষড়যন্ত্রের রুপরেখা বাস্তবায়ণ করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। অর্থাৎ হেযবুত তওহীদ নাম ধারণ করেছে ইসলামের, তাওহীদের নাম বিকিয়ে মতবাদ প্রচার করছে নাস্তিকদের।

পাশাপাশি হেযবুত তওহীদ নাস্তিকদের অধিকার আদায় এবং তাদের সততা প্রমাণ, তাদের প্রতি দরদ ও ভালোবাসার বহির্প্রকাশ প্রমাণ করে ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’। চলুন হেযবুত তওহীদের সাথে নাস্তিকদের মিল কোথায় নিন্মে আলোচনা করা যাক। তবে বিষয়টি তাদের জন্য বুঝতে সহজ হবে, যারা নাস্তিকদের মতবাদ ও মিশন সম্পর্কে ধারণা রাখেন। এ বিষয়ে দুই কেন্দ্রীক আলোচনা করবো।
১. নাস্তিকদের পক্ষে হেযবুত তওহীদের অবস্থান:
২. হেযবুত তওহীদের সাথে নাস্তিকদের মিল কোথায়?

নাস্তিকদের পক্ষে হেযবুত তওহীদের অবস্থান:

হেযবুত তওহীদের কাছে নাস্তিকরা যেন মায়ের পেটের আপন ভাই। যার কারণে নাস্তিকদের সকল কষ্ট তারা অনুভব করে হাড়ে হাড়ে। চলুন এ ব্যাপারে জানার আগে সংক্ষেপে দেখা যাক, তারা নাস্তিকদের সম্পর্কে হেযবুত তওহীদ কী কী বলেছে-

১. নাস্তিকরা পরিপূর্ণ ধার্মিক।
২. নাস্তিকরা মুত্তাকি।
৩. নাস্তিকদের দুঃখ-কষ্ট বুঝা উচিৎ।
৪. নাস্তিকদের অধিকার সংরক্ষণ করা জরুরী।
৫. নাস্তিকদের প্রতি হেযবুত তওহীদ আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।
৬. ডানপন্থীরা সমাজকে পশুর সমাজে বানিয়েছে।
৭. বামপন্থীরা ডানপন্থীদের থেকে অনেক এগিয়ে।
৮. বামপন্থিদের অবজ্ঞা করা যাবে না।
৯. নাস্তিকদের জন্য ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যুক্তিসঙ্গত।
১০. লেলিন, কালমার্কস, মাও সেতুংদের ধর্মের বিরোধীতা ঠিক ছিলো।
১১. আব্রাহাম লিংকন মুক্তির বানী এনেছিলেন। তাকে নাস্তিক না বলা।
১২. হুমায়ুন আজাদ ধর্মের বিরোধীতা করে ভুল করেননি।
১৩. ইসলামের ব্যার্থতার কারণেই পুঁজিবাদ তৈরি হয়েছে।
১৪. আল্লাহর উপর ঈমান আনা জরুরি নয়:
১৫. মানবতাবাদী নাস্তিকরাও মোমেন:
১৬. ধর্মগ্রহণ করা জরুরি নয়:
১৭. মানবতাবাদী নাস্তিকরাও জান্নাতে যাবে।
১৮. নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাওয়া অন্যায়।

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদের এসব বক্তব্য দেখে কী অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন এসব কথা তারা বলতে পারেন না? আমি বানিয়ে বলছি? অবাক হবার কিছু নেই। এই দাবিগুলো খোদ হেযবুত তওহীদেরই। তারা তাদের বইগুলোতে হুবহু ঠিক এগুলোই লিখেছে। চলুন প্রত্যেকটা বিষয়ে প্রমাণসহ বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

১. নাস্তিকরা পরিপূর্ণ ধার্মিক:

হেযবুত তওহীদ নাস্তিকদের ধার্মহীন মনে করেন না, বরং তাদেরকে পরিপূর্ণ ধার্মিক মনে করে থাকে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা নাস্তিকদের ব্যাপারে লিখতে গিয়ে এক পর্যায়ে লিখেছেন,

‘আমরা তাদেরকে (নাস্তিকদেরকে) ধর্মহীন মনে করি না। কারণ মানুষের পরম ধর্ম ‘মানবতা’ যা তাদের মধ্যে পুরোমাত্রায়ই আছে’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের মতবাদ হলো, নাস্তিকদের মধ্যে পরিপূর্ণ ধর্ম রয়েছে, সে হিসাবে তারা ধার্মিক।

ইসলাম কী বলে?

এক.
নাস্তিকরা মুলত কোনো বিশেষ ধর্মের অনুসারী নয়, তারা কোন ধর্মের আচার অনুষ্ঠানও পালন করে না এবং তারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কে বিশ্বাস করে না। সুতরাং যাদের মধ্যে আল্লাহ পাকের বিশ্বাস ও নবী-রাসুলগণ, আল্লাহর কিতাব, আখেরাতেে বিশ্বাস কিছুই নেই, তারা কিভাবে ধার্মিক হতে পারে এটা আমার জানা নেই।

দুই.
হেযবুত তওহীদের কাছে পৃথিবীর সকল ধর্মই আল্লাহ’র প্রেরিত। তারা লিখেছে,

‘সকল ধর্মই আল্লাহর প্রেরিত ধর্মপ্রবর্তকগণও তাই’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮৩

প্রশ্ন হলো, হেযবুত তওহীদের কাছে তো সকল ধর্মই আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত, সেই আল্লাহর প্রতিই যাদের বিশ্বাস নেই, সেই নাস্তিকরা ধার্মিক হয় কিভাবে?

তিন.
নাস্তিকদের মূল মিশন হলো, ধর্মকে মানব জিবন থেকে ঝেড়ে ফেলা। এটা খোদ হেযবুত তওহীদই লিখেছে,

‘মুক্তমনারা (নাস্তিকরা) মানব জীবন থেকে ধর্মকে ঝেড়ে ফেলতে চান’।
সূত্র: জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস, পৃ. ৭০

তাহলে আমার প্রশ্ন হলো, যে নাস্তিকদের ধর্মহীন সমাজ গঠণ করতেই মরিয়া, ধর্মের বিরোধীতা করাই হলো যাদের মূল কাজ, তারা ধার্মিক হয় কিভাবে? কোনো সুস্থ মানুষ কী এটা বিশ্বাস করতে পারে?নিশ্চয় না। সুতরাং প্রমাণ হলো, নাস্তিকদের কোনো ধর্ম নেই, সেহেতু তারা ধার্মিক হতে পারে না। যদিও তারা ‘মানবধর্ম’কে নিজেদের ধর্ম হিসাবে জানান দিতে চায়, কিন্তু মৌলিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানবধর্ম কোনো ধর্মই না। সুতরাং ধর্মহীন নাস্তিকদের ধার্মিক বলে প্রচার করে তাদেরকে এত সাধু বানাতে হেযবুত তওহীদের প্রয়োজন পড়লো কেন? কারণ একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

২. নাস্তিকরা মুত্তাকি:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, নাস্তিকরাও মুত্তাকি। তারা লিখেছে,

‘অন্যান্য ধর্মে, এমন কি আল্লাহকে অবিশ্বাসকারী নাস্তিক কমিউনিস্টদের মধ্যেও বহু মানুষ আছেন যারা ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-অঠিক দেখে জীবনের পথ চলতে চেষ্টা করেন। তারা মিথ্যা বলেন না, মানুষকে ঠকান না, অন্যের ক্ষতি করেন না, যতটুকু পারেন অন্যের ভালো করেন, গরিবকে সাহায্য করেন ইত্যাদি। তারা মুত্তাকী কিন্তু তারা হেদায়েতে নেই’।
সূত্র: তাকওয়া ও হেদায়াহ, পৃ. ৭

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চাচ্ছে ১. নাস্তিকরা মুত্তাকি, ২. নাস্তিকরা হিদায়াতে নেই।

ইসলাম কী বলে?

এক.
পবিত্র কুরআনের ‘মুত্তাকী’ কারা? তাদের পরিচয় কী? এর জবাব খোদ আল্লাহ তা’আলাই পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন। মুত্তাকির প্রথম গুন হলো, অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনয়ন করা। মহান রব বলেন,

ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ والَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ

অর্থ: এটি এমন কিতাব, যার মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই। এটা মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত। (মুত্তাকি তারা) যারা অদৃশ্য জিনিসসমূহে ঈমান রাখে এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা-কিছু দিয়েছি, তা থেকে (আল্লাহর সন্তোষজনক কাজে) ব্যয় করে এবং যারা ঈমান রাখে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও এবং তারা আখিরাতে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে।
সূরা বাকারা, আয়াত নং- ২-৪

উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ মুত্তাকিদের পরিচয় তুলে ধরেছেন ৫ টি-
১. যারা অদৃশ্য জিনিসসমূহে ঈমান রাখে।
২. যারা সালাত কায়েম করে।
৩. আল্লাহর দেওয়া সম্পদ তাঁর রাস্তায় ব্যায় করে।
৪. যারা আল্লাহর কিতাবসমূহের উপর ঈমান আনে।
৫. আখেরাতে বিশ্বাস করে।
উক্ত বিষয়ে যারা ঈমান রাখে তারাই মুত্তাকি। কিন্তু আপনারাই বলুন তো, এ ৫ টি গুনাবলীর কোনটাই কী নাস্তিকদের মাঝে আছে? নিশ্চয় নেই। তাহলে নাস্তিকরা মুত্তাকি কিভাবে হলো।

দুই.
হেযবুত তওওহীদ তাদের উপরোক্ত বক্তব্যে দ্বিতীয়ত দাবি করেছিলো, নাস্তিকরা হিদায়াতে নেই। এটাই তো বড় প্রমাণ যে নাস্তিকরা মুত্তাকি নয়। কারণ মুত্তাকি ব্যক্তিরাই হিদায়াতে থাকে। কারণ আল্লাহ পাক উক্ত আয়াতেই মুত্তাকিদের পরিচয় দিয়েই শেষাংশে বলেন,

أُوْلَـئِكَ عَلَى هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থ: এরাই এমন লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সঠিক পথের (হিদায়াতের) উপর আছে এবং এরাই এমন লোক, যারা সফলতা লাভকারী।
সূরা বাকারা, আয়াত নং- ৫

উক্ত আয়াতের মুত্তাকিদের পরিচয় দিয়েই আল্লাহ পাক বলেছেন, তারা হিদায়াতের উপর আছে। সুতরাং মুত্তাকি হলে অবশ্যই হিদায়াতের উপর থাকা অনিবার্য। যেহেতু নাস্তিকরা হিদায়াতে নেই, সেহেতু তাদেরকে মুত্তাকি বলা চরম মুর্খতা ও পবিত্র কুরআন বিরোধীতার শামিল। মনে রাখতে হবে, মহান রব মুত্তাকিদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। মহান রব বলেন,

قُلۡ أَؤُنَبِّئُكُم بِخَیۡرࣲ مِّن ذَ ٰ⁠لِكُمۡۖ لِلَّذِینَ ٱتَّقَوۡا۟ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّـٰتࣱ تَجۡرِی مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَـٰرُ خَـٰلِدِینَ فِیهَا وَأَزۡوَ ٰ⁠جࣱ مُّطَهَّرَةࣱ وَرِضۡوَ ٰ⁠نࣱ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِیرُۢ بِٱلۡعِبَادِ

অর্থ: বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এসবের চাইতেও উত্তম বিষয়ের সন্ধান বলবো?-যারা মুত্তাকি, আল্লাহর নিকট তাদের জন্যে রয়েছে বেহেশত, যার তলদেশে প্রস্রবণ প্রবাহিত-তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আর রয়েছে পরিচ্ছন্ন সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখেন।
সুরা আলে ইমরান আয়াত-১৫

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

وَلَدَارُ ٱلۡـَٔاخِرَةِ خَیۡرࣱ لِّلَّذِینَ ٱتَّقَوۡا۟ۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ

অর্থ: যারা মুত্তাকী তাদের জন্য পরকালই শ্রেয়; তোমরা কি বুঝো না?
সুরা ইউসুফ, আয়াত নং- ১০৯

মহান রব আরও বলেন,

وَلَدَارُ ٱلۡـَٔاخِرَةِ خَیۡرࣱۚ وَلَنِعۡمَ دَارُ ٱلۡمُتَّقِینَ

অর্থ: (মুত্তাকিদের জন্যে) পরকালের গৃহ আরও উত্তম। মুত্তাকিদের গৃহ কতই না চমৎকার!
সুরা নাহল আয়াত নং- ৩০

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে বুঝতে পারলাম, জান্নাত মুত্তাকিদের জন্য, পক্ষান্তরে নাস্তিকদের জন্য জান্নাত হারাম। মহান রব বলেন,

وَمَن يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُوْلَـئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থ: যদি তোমাদের মধ্যে কেউ নিজ দীন পরিত্যাগ করে, তারপর কাফির অবস্থায় মারা যায়, তবে এরূপ লোকের কর্ম দুনিয়া ও আখিরাতে বৃথা যাবে। তারাই জাহান্নামী। তারা সেখানেই সর্বদা থাকবে।
সূরা বাকারা, আয়াত নং- ২১৭

সুতরাং নাস্তিকদের মুত্তাকি বলা মানেই, তাদেরকে জান্নাতী বলা। যা পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট বিরোধীতার শামিল।

মুত্তাকি ব্যক্তি আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ:
উপরন্তু মুত্তাকি ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সর্বোৎকৃষ্ট। মহান রব বলেন,

إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ

অর্থ: তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী।
সূরা, হুজুরাত, আয়াত নং- ১৩

মুত্তাকি ব্যক্তি নবীজির সা. বন্ধু:
পাশাপাশি মুত্তাকি ব্যক্তি নবীজির সা. পরম বন্ধু। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত নবিজি স: বলেন,

إنما أوليائي المتقون

অর্থ:  আমার বন্ধু হচ্ছে মুত্তাকি ব্যক্তিগণ।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪২৪২

উপরোক্ত আয়াত ও হহাদিস থেকে জানতে পারলাম, মমুত্তাকি ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসুল সা. এর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত ও অধিকতর আপন। কিন্তু নাস্তিকরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে কাছে সবচে নিকৃষ্ট। সুতরাং প্রমাণ হলো, নাস্তিকরা কোনোভাবেই মুত্তাকি হতে পারে না, বরং নাস্তিকদের মুত্তাকি বলা সরাসরি কুরআন-হাদিসের অবমাননার শামিল। তবুও হেযবুত তওহীদ নাস্তিকদের দালালী করতে গিয়ে ইসলামের এ চরম অবমাননা করেই যাচ্ছে। কিন্তু কেন? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

৩. নাস্তিকদের দুঃখ-কষ্ট বুঝা উচিৎ।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ হাসে, যখন নাস্তিকরা হাসে, আবার হেযবুত তওহীদ তখনই কাঁদে, যখন নাস্তিকরা কাঁদে। কারণ তারা তো চোরে চোরে তালতো ভাই। নাস্তিকদের প্রতি হেযবুত তওহীদের দরদ দেখুন। তারা লিখেছে,

‘পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে যেকোন ধর্মের মানুষ এমনকি ধর্ম অস্বীকারকারী তথা নাস্তিক ব্যক্তিও যদি দুঃখ-কষ্টের মধ্যে পতিত হয় তবে তার সমপরিমাণ দুঃখ সকলের অনুভব করা উচিত’।
সূত্র: শিক্ষাব্যবস্থা, পৃষ্ঠা. ৮৩

ইসলাম কী বলে?
নাস্তিকদের মূল মিশনই হলো আল্লাহ তা’আলা, রাসুল সা. পবিত্র কুরআন ও  ইসলামকে নিয়ে ঠাট্রা করা ও আল্লাহ’র দ্বীনকে মিটিয়ে দেওয়া। এমন লোকদের সাহায্য করা তো দূরের কথা তাদের সাথে বসাকেও ইসলাম সমর্থন করে না। মহান রব বলেন,

وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللّهِ يُكَفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُواْ مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوضُواْ فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ إِنَّ اللّهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِينَ وَالْكَافِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا

অর্থ: আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।
সূরা নিসা, আয়াত নং- ১৪০

উক্ত আয়াত থেকে জানতে পারলাম, ইসলামের চরম এ দুশমনদেে সাথে বৈঠক করাও আল্লাহ নিষেধ করে দিয়েছেন, সেই তাদের দুঃখে দুঃখি হওয়া, তাদের কষ্ট হ্নদয় দিয়ে অনুধাবণ করে তাদের সাহায্য করতে হেযবুত তওহীদের এত আগ্রহ কেন? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

৪. নাস্তিকদের অধিকার সংরক্ষণ করা জরুরী।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
সময়ের সবচে বড় জালেম ও ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীরা দিবানিশি ইসলামের মূলে আঘাত করেই চলেছে। তারা ‘কোনো ধর্ম মানেনা’ স্লোগান দিয়ে মূলত ইসলামের শেকড় কাটতেই আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু এই আল্লাহদ্রোহী জাতিটার অধিকার সংরক্ষণ করার মিশনে নেমেছে হেযবুত তওহীদ। তাদের বক্তব্য হলো, নাস্তিকদের নাস্তিকতার স্বাধীনতা আল্লাহই দিয়েছেন। অতএব মুসলমানদের উচিৎ তাদের এ স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা। নাউযুবিল্লাহ। কী লিখেছে দেখুন-

‘নাস্তিক বা আস্তিক যে কোনোটি হওয়ার স্বাধীনতা আল্লাহই মানুষকে দিয়েছেন ।তাই যারা বিশ্বাস করেন যে নিখুঁত সৃষ্টি আছে,কিন্তু তার কোন স্রষ্টা নেই,তাদের এই বিশ্বাস করার স্বাধীনতা( Freedom of thinking) সংরক্ষণ করাও একজন প্রকৃত ধার্মিকের কর্তব্য। আল্লাহ যখন মেঘমালা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন সেই বৃষ্টি ধার্মিকের বাড়িতেও পড়ে,আল্লাহদ্রোহীর বাড়িতেও পড়ে।আল্লাহ প্রদত্ত কোনো নেয়ামত থেকেই তারা কেউ বঞ্চিত হয় না,বৈষম্যের শিকারও হয় না। সুতরাং আল্লাহর এই উদারতা ধার্মিকেরও অনুসরণীয়’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃষ্ঠা. ১৩ /১৪

‘ধর্মব্যবসায়ীরা ফতোয়াবাজি করে প্রগতি ও মুক্তচিন্তার সকল পথ রুদ্ধ করেছে। শিল্প সংস্কৃতির চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করছে’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃষ্ঠা. ৩

‘আমরা মনে করি যারা নাস্তিক তারাও মানুষ। সুতরাং মানুষ হিসেবে যে অধিকার একজন আস্তিক পেতে পারে, একজন নাস্তিকও তাই পাবে’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃষ্ঠা. ১০

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদ বলতে চায়, নাস্তিকদের বিশ্বাস সংরক্ষণ করা ও তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।

ইসলাম কী বলে?

এক.
নাস্তিকতা ইসলামে চরম গর্হিত কাজ বলে বিবেচিত। যার সাহায্য করা কোনো মুসলমানের জন্য জায়েয নয়। কেননা পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ

অর্থ: এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সাহায্য করো না।
সূরা মায়িদা, আয়াত নং- ২

দুই.
আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্ব অস্বীকার করা সবচে নিকৃষ্ট ও গর্হিত কাজ। আর গর্হিত কাজের ব্যাপারে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি,

مَن رَأى مِنكُم مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بيَدِهِ، فإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسانِهِ، فإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وذلكَ أضْعَفُ الإيمانِ

অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ যবান দ্বারা (উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে)। যদি (তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমান।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৪৯

তিন.
পৃথিবীর সবচে বড় জুলুমের নাম হলো আল্লাহকে বিশ্বাস না করা। সুতরাং জালেমের সাহায্য তার কাজে সহযোগীতা করার মাধ্যমে নয়, বরং তার এহেন কাজ থেকে বিরত রাখাই তাকে সাহায্য করার শামিল।  হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,

انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَذَا نَنْصُرُهُ مَظْلُومًا فَكَيْفَ نَنْصُرُهُ ظَالِمًا قَالَ تَأْخُذُ فَوْقَ يَدَيْهِ

অর্থাৎ তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে জালেম হোক অথবা মাজলুম। তিনি (আনাস রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, মাযলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু জালেমকে কি করে সাহায্য করব? নবীজি সা. বললেন, তুমি তার হাত ধরে তাকে বিরত রাখবে। (অর্থাৎ তাকে জুলুম করতে দিবে না)।
সূত্র: সহিহ সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ২৪৪৩

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে প্রমাণ হলো যে, অন্যায় ও গর্হিত কাজের প্রশ্রয় বা সংরক্ষণ নয়, বরং তা প্রতিরোধ করতে হবে। কিন্তু যারা আল্লাহ তা’আলার সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, আল্লাহ’র অস্তিত্ব অস্বীকার করে, তাদের এহেন চিন্তাভাবনাকে সংরক্ষণ করা কি করে একজন ধার্মিকের কর্তব্য হতে পারে? আল্লাহ’র অস্তিত্ব অস্বীকার করার মত নিকৃষ্ট পাপকাজের সংরক্ষণ করা ধার্মিকের কর্তব্য বলে ঘোষণাকারীরা কি আদৌ তাওহীদের দল হতে পারে?

একটি অসাড় যুক্তি:
উপরন্তু হেযবুত তওহীদ উক্ত বক্তব্যের শেষাংশে আস্তিক-নাস্তিক সকলের আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক নিয়ামতপ্রাপ্তি সম্পর্কে হেযবুত তাওহীদ হাস্যকর এক যুক্তি উপস্থাপন করে লিখেছেন,

‘আল্লাহ যখন মেঘমালা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন সেই বৃষ্টি ধার্মিকের বাড়িতেও পড়ে,আল্লাহদ্রোহীর বাড়িতেও পড়ে।আল্লাহ প্রদত্ত কোনো নেয়ামত থেকেই তারা কেউ বঞ্চিত হয় না,বৈষম্যের শিকারও হয় না। সুতরাং আল্লাহর এই উদারতা ধার্মিকেরও অনুসরণীয়।’
সূত্র: চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াইয়ের অপরিহার্যতা, পৃ. ১৩

অর্থাৎ নাস্তিকদের বিশ্বাস ও অধিকার সংরক্ষণকে বৈধতা দিতে হেযবুত তওহীদ বুঝাতে চায়, আস্তিকের মত নাস্তিকদেরও তো আল্লাহ বৃষ্টি দেন, আল্লাহ তো নাস্তিকদের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করেন না। তাহলে মুসলমানরা কেন তাদের অধিকার সংরক্ষণ করবে না?

যৌক্তিক জবাব:
সকলেই আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে যদি নাস্তিকের বিশ্বাসের স্বাধীনতা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তবে চোর-ডাকাত,ব্যভিচারী ইত্যাদি অপরাধীরাও তো আল্লাহ ততা’আলা নিয়ামতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে, তাহলে এখন কি তথাকথিত উদারতা ও কর্মস্বাধীনতার স্লোগানে তাদেরকেও রাষ্ট্রীয় বিচারের আওতাধীন করা থেকে বিরত থাকতে হবে? এরচে খোড়া যুক্তি আর কী হতে পারে? আসলে এ যুক্তিটা যে মূর্খতা ও অমূলক তা হেযবুত তওহীদও জানে। এরপরও নাস্তিকদের দরদী হয়ে এসব অসাড় যুক্তি দিয়ে তাদের দালালী করার পেছনে মূল রহস্য কী? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

৫. নাস্তিকদের প্রতি হেযবুত তওহীদ আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
মানবতার সেবায় যারা নিয়োজিত, সেসব নাস্তিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তৃপ্তি ঢেকুর তোলেন হেযবুত তওহীদ। তারা লিখেছে,

‘মানবতার কল্যাণে যারা নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে বিপ্লবের অগ্নিময় পথকে সঙ্গী করে জীবন কাটিয়ে গেছেন, আমরা হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাই, যদিও তারা অনেকেই হয়তো নাস্তিক ছিলেন’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃষ্ঠা. ১১

ইসলাম কী বলে?

এক.
হেযবুত তওহীদ তাদের বইগুলোতে বিশ্বব্যাপী সকল মুসলমান কাফের ও মুশরিক ও মালাউন, আলেমরা ধর্মব্যবসায়ী ও আবু জেহেল, আবু লাহাবের মত কাফের এবং ইহুদীদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে গালাগাল করে থাকে। মুসলমানদের ব্যাপারে তারা বলে থাকে-

‘আল্লাহ দৃষ্টিতে তারা (মুসলিমরা) কাফের মুশরিক এবং অভিশপ্ত মালাউন’।
সূত্র: শ্রেনীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৪৮

কিন্তু নাস্তিকরা তাদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। প্রশ্ন হলো, কেন? মুসলমানরা এত খারাপ, কিন্তু নাস্তিকরা শ্রদ্ধার পাত্র কেন? জবাব একটাই, ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

দুই.
নাস্তিকরা তাদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হলেও আল্লাহ পাকের কাছে নাস্তিকরা শয়তান কর্তৃক প্রভাবিত। মহান রব বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ

অর্থ: প্রকৃতপক্ষে যারা তাদের সামনে হেদায়াত পরিস্ফুট হয়ে যাওয়ার পরও পেছন ফিরিয়ে চলে যায়, শয়তান তাদেরকে ফুসলানি দিয়েছে এবং তাদেরকে অসম্ভব আশা দিয়েছে।
সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত নং- ২৫

প্রশ্ন হলো, শয়তানের অনুসারীরা হেযবুত তওহীদের কাছে এত শ্রদ্ধা পাত্র কেন? জবাব একটাই, হেযবুত তওহীদ-নাস্তিক ভাই ভাই।

৬. ডানপন্থীরা সমাজকে পশুর সমাজে বানিয়েছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
বামপন্থি ও নাস্তিকরা সব সময় ডানপন্থীদের ব্যাপারে বলে থাকে, ডানপন্থীদের মাধ্যমে জাতির কোনো উপকার হবে না, বরং দেশ পিছনে পড়ে যাবে। আর এদিকে হেযবুত তওহীদ তো আরও কঠিন ভাষায় লিখেছে,

‘ডানপন্থীদের দ্বারা ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে মানুষের সমাজকে পশুর সমাজে পরিণত করছে’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৯

ইসলাম কী বলে?
বামপন্থি ও নাস্তিকরা ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের ব্যাপারে হরদম কটুক্তি করে থাকে। হেযবুত তওহীদও সে কর্মপন্থা বাদ দেননি। তারা বর্তমানে নাস্তিকদের খুশি রাখতে গিয়ে ডানপন্থিদের বিরোধীতা করছে, কিন্তু তাদের আত্মার এমাম পন্নী সাহেব বামপন্থিদের সন্ত্রাসী বলে জানতেন, পন্নী সাহেব লিখেছিলেন,

‘একটি অপরাধ না করা হিজবুত তাওহীদের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ (মিডিয়া) পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হয়েছে, তার তুলনায় ঐ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বামপন্থী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে তার শতকরা এক ভাগ প্রচারও তারা চালায়নি’।
সূত্র: যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ৫৪

উক্ত লেখা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, পন্নী সাহেবের কাছে বামপন্থীরা ছিলেন সন্তাসী সংগঠন। সুতরাং বর্তমানের হেযবুত তওহীদের কাছে আমার প্রশ্ন হলো, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো কিভাবে সমাজ পরিবর্তন করতে পারে? আশা করি উত্তর তারাই দেবেন। তবে মনে রাখা উচিৎ ডানপন্থীরা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম ও সংবিধান হিসাবে কুরআন-সুন্নাহকে প্রমোট করে থাকে। যারা কুরআন-সুন্নাহ থেকে বিমুখ হবে তাদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى

অর্থ: আর যে আমার কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে বড় সংকটময়। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাব।
সূরা ত্বহা, আয়াত নং- ১২৪

সুতরাং প্রমাণ হলো, ডানপন্থীদের দ্বারা সমাজ পশুর সমাজে পরিনত হয়নি, হচ্ছে না এবং হবে না, হতে পারে না। উপরন্তু ডানপন্থীদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,

وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ فَسَلَامٌ لَكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ

অর্থ: আর সে যদি হয় ডানপন্থীদের একজন, তবে (তাকে বলা হবে), ‘তোমাকে সালাম, যেহেতু তুমি ডানদিকের একজন’।
সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত নং- ৯০-৯১

সুতরাং বুঝা গেলো, ডানপন্থীরা দুনিয়া-আখেরাতের মঙ্গলের ফিকির করে থাকে। কিন্তু বামপন্থীরা তা সহ্য করতে পারে না। তবে প্রশ্ন হলো, বামপন্থীদের সুরে হেযবুত তওহীদও কেন কথা বলে? জবাব একটাই হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই। আল্লাহ পাক আমাদেরকে দুনিয়া-আখেরাতে ডানপন্থীদের অন্তর্ভূক্ত করেন। আমীন!

৭. বামপন্থীরা ডানপন্থীদের থেকে অনেক এগিয়ে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
বর্তমানের হেযবুত তওহীদের কাছে সমাজ পরিবর্তনে বামপন্থীরা ডানপন্থিদের থেকে অনেক এগিয়ে। তারা বুঝাতে চায় মানুষ হিসাবে ডানপন্থীদের তুলনায় বামপন্থীরা অনেক এগিয়ে আছে। তারা লিখেছে,

‘সেই বিকৃত ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াই প্রতিটি বোধসম্পন্ন মানুষের অবশ্যকর্তব্য। সে দিক থেকে ডানপন্থী রাজনীতির দাবিদারদের থেকে মানুষ হিসেবে বামপন্থীরা এগিয়ে আছেন’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৯

ইসলাম কী বলে?
হেযবুত তওহীদ নিজেদেরকে খুব বুদ্ধিমান মনে করলেও আদতে তারা কাকের মত। কাক যেমন চোখ বন্ধ করলে মনে করে তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না। ঠিক তেমনিভাবে হেযবুত তওহীদও মনে করে তাদের লেখাগুলো কেউ দেখছে না। তারা একদিকে নাস্তিকদের দালালী ঠিক রাখতে গিয়ে ডানপন্থীদের বিরোধীতা করছেন, অপরদিকে সরলমনা মুসলমানদের মিস গাউড করে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে গিয়ে লিখছে,

‘যারা মনে করেন স্রষ্টাই নেই, ধর্মগুলো মানুষের বানানো তারা নিজেদেরকে অনেক জ্ঞানী ভাবতে পারেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অজ্ঞান ও দৃষ্টিহীন’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃষ্ঠা-১০

আমার প্রশ্ন হলো, যারা দৃষ্টিহীন তারা ডানপন্থীদের থেকে কিভাবে এগিয়ে থাকতে পারেন? তবে হ্যাঁ, বামপন্থীরা ধর্মীয় সহিংসতা ও ইসলামের বিরোধীতায় শুধু এগিয়ে নয়, চুড়ান্ত ধাপে উপনীত। অথচ হেযবুত তওহীদ সেই নাস্তিকদের দালালী করেই যাচ্ছে। অথচ বামপন্থীদের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,

وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ فِي سَمُومٍ وَحَمِيمٍ وَظِلٍّ مِنْ يَحْمُومٍ لَا بَارِدٍ وَلَا كَرِيمٍ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ مُتْرَفِينَ وَكَانُوا يُصِرُّونَ عَلَى الْحِنْثِ الْعَظِيمِ وَكَانُوا يَقُولُونَ أَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَئِنَّا لَمَبْعُوثُونَ أَوَآبَاؤُنَا الْأَوَّلُونَ قُلْ إِنَّ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ لَمَجْمُوعُونَ إِلَى مِيقَاتِ يَوْمٍ مَعْلُومٍ ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الضَّالُّونَ الْمُكَذِّبُونَ لَآكِلُونَ مِنْ شَجَرٍ مِنْ زَقُّومٍ فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ هَذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّينِ

অর্থ: আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানিতে, আর প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ার ছায়ায়, যা শীতলও নয়, সখু করও নয়। নিশ্চয় তারা ইতঃপূবের্ বিলাসিতায় মগ্ন ছিল, আর তারা জঘন্য পাপে লেগে থাকত। আর তারা বলত, ‘আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হব?’ ‘আমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষরাও?’ বল, ‘নিশ্চয় পূর্ববর্তীরা ও পরবর্তীরা, এক নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে অবশ্যই একত্র হবে’। তারপর হে পথভ্রষ্ট ও অস্বীকারকারীরা, তোমরা অবশ্যই যাক্কূম গাছ থেকে খাবে, অতঃপর তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে। তদুপরি পান করবে প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানি। অতঃপর তোমরা তা পান করবে তৃষ্ণাতুর উটের ন্যায়। প্রতিফল দিবসে এই হবে তাদের মেহমানদারী।
সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত নং- ৪১-৫৬

সুতরাং যে বামপন্থীদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট জাহান্নামের হুশিয়ারী এসেছে, সে বামপন্থীদের ব্যাপারে হেযবুত তওহীদ এত দালালি কেন করে? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

৮. বামপন্থিদের অবজ্ঞা করা যাবে না।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
যারা ইসলামকে অবহেলা ও অবজ্ঞা  করে থাকে, সেই বামপন্থীদেরকে হেযবুত তওহীদরা অবজ্ঞা করতে পারেন না। তারা লিখেছে,

‘যারা রাসুলুল্লাহকে নিজেদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন তাদের অনুভূতিকে অবজ্ঞা করার কোন উপায় নেই। ঠিক একইভাবে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির অভিলাষী বাম আদর্শকেও আমরা অবজ্ঞা করতে পারিনা’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃষ্ঠা. ১০

ইসলাম কী বলে?
যারা ইসলামতন্ত্র সমাজ থেকে উঠিয়ে দিয়ে, মানবরচিত আইন প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর, সেই বামপন্থিরা হেযবুত তওহীদের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। অথচ বামপন্থীরা মুরতাদ ও কাফের। যারা দিবানিশি ইসলামকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা কাট্রা কাফের। তাদের ঠিকানা চিরস্থায়ী জাহান্নাম। মহান রব বলেন,

وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ
فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থ: যদি তোমাদের মধ্যে কেউ নিজ দীন পরিত্যাগ করে, তারপর কাফির অবস্থায় মারা যায়, তবে এরূপ লোকের কর্ম দুনিয়া ও আখিরাতে বৃথা যাবে। তারাই জাহান্নামী। তারা সেখানেই সর্বদা থাকবে।
সূরা বাকারা, আয়াত নং- ২১৭

যাদেরকে আল্লাহ পাক কিয়ামতে অবজ্ঞা করে জাহান্নামে দেবেন, সেই বামপন্থিদের প্রতি হেযবুত তওহীদের এত দরদ কেন? কারণ একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

৯. নাস্তিকদের জন্য ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যুক্তিসঙ্গত।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
কুকুরের মধ্যে আর ধর্মহীন মানুষের মধ্যে আদতে কোনো তথাৎ নেই। কারণ কুকুরের যেমন কোনো ধর্ম নেই, ধর্মহীনদেরও তেমন ধর্ম নেই। ঠিক তেমনিভাবে কুকুর যেন স্বাধীন ও মুক্তমনা, ঠিক তদ্রুপ নাস্তিকরাও স্বাধীন ও মুক্তমনা। সভ্য মানুষের জন্য এভাবে মুক্ত হওয়া কখনই উচিৎ নয়, যুক্তিসঙ্গত নয়। কিন্তু হেযবুত তওহীদ নাস্তিকদের এহেন কাজকে বৈধতা দিয়ে দিচ্ছে পাইকারি দরে। হেযবুত তওহীদ বুঝাতে চায়, পৃথিবীর সব ধর্ম বিকৃত ও কুপমন্ডুকতা। এই কুপমন্ডুকতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত। তারা লিখেছে,

‘অনেক যুক্তিশীল মানুষ ধর্মের নামে চলা এই কুপমন্ডুকতাকে মেনে নিতে না পেরে পুরোপুরি ধর্মবিদ্বেষী হয়েছেন’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৯

‘আমরা দেখেছি বাম আদর্শের অনুসারীরা মূলত ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অন্ধত্ব থেকে নিজেদের মননকে মুক্ত করতে সচেষ্ট। বর্তমানে পৃথিবীতে বিরাজিত সবগুলো ধর্মই যখন বিকৃত হয়ে ধর্মব্যবসায়ীদের পণ্যে পরিণত হয়েছে, সেগুলো সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থীদের দ্বারাই এবং তথাকথিত ডানপন্থীদের দ্বারা ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে মানুষের সমাজকে পশুর সমাজে পরিণত করছে, সেই বিকৃত ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াই প্রতিটি বোধসম্পন্ন মানুষের অবশ্যকর্তব্য’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৯

‘বিকৃত ধর্মের আঘাতে জর্জরিত ক্লান্ত মানুষ এমন স্বপ্ন দেখতে বাধ্য হচ্ছে’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ:১৬১

ইসলাম কী বলে?
এ ব্যাপারে প্রথম জেনে রাখা উচিৎ, ইসলাম অবিকৃত অবস্থায় আজও রয়েছে, ইসলাম বিকৃত হওয়ার যে আজগুবি গল্প হেযবুত তওহীদ শুনাচ্ছেন, তা নিতান্তই ভিত্তিহীন। কারণ হেযবুত তওহীদ নিজেরাই দাবি করেছে,

আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ:) এর উপর অবতীর্ণ এই সত্যদীন আল্লাহর সৃষ্টিজগতের মতই নিঁখুত ও অবিকৃত। আল্লাহর সৃষ্টি কেমন নিখুঁত,…. আল্লাহর দেওয়া সত্যদীনও এমনই নিখুঁত।”
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই, পৃ. ১৯-২০

“মুক্তির পথ তো রসুল দেখিয়েই গেছেন আর শেষ বিধানও আল্লাহর দয়ায় অবিকৃত ছিল এবং আজও আছে।”
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ৯

সুতরাং প্রমাণ হলো, নবীজির সা. ইসলাম আজও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু ইসলামকে বিকৃত বলে দাবি করে নাস্তিকদের কর্মকে সঠিক প্রমাণ করতে হেযবুত তওহীদের এত আগ্রহ কেন? জবাব একটাই বর্তমানের হেযবুত তওহীদ আর নাস্তিক্যবাদ এক মায়ের দুই সন্তান। পার্থক্য এতটুকু নাস্তিকরা ইসলাম ও আল্লাহ-রাসুলের কথা বলে না, কিন্তু এরা সেগুলো ব্যবহার করেই নাস্তিকতা দিকে মানুষের মননকে আকৃষ্ট করছে।

মনে রাখতে হবে, ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার মত জঘণ্য অপরাধের শাস্তি কী সে সম্পর্কে মহান রব বলেন,

وَمَن يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُوْلَـئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থ: যদি তোমাদের মধ্যে কেউ নিজ দীন পরিত্যাগ করে, তারপর কাফির অবস্থায় মারা যায়, তবে এরূপ লোকের কর্ম দুনিয়া ও আখিরাতে বৃথা যাবে। তারাই জাহান্নামী। তারা সেখানেই সর্বদা থাকবে।
সূরা বাকারা, আয়াত নং- ২১৭

মুরতাদদেরকে শয়তানের দ্বারা প্ররোচিত বলে মহান রব বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ

অর্থ: প্রকৃতপক্ষে যারা তাদের সামনে হেদায়াত পরিস্ফুট হয়ে যাওয়ার পরও পেছন ফিরিয়ে চলে যায়, শয়তান তাদেরকে ফুসলানি দিয়েছে এবং তাদেরকে অসম্ভব আশা দিয়েছে।
সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত নং- ২৫

সুতরাং ইসলাম ধর্ম ছেড়ে দেওয়া কোনো অবস্থায় জায়েয নেই। কোনো যুক্তি পেশ করেও না। কিন্তু হেযবুত তওহীদের কী হলো? তারা হঠাৎ নাস্তিকদের কাজ সঠিক বলে তারা কী বুঝাতে চান? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

১০. লেলিন, কালমার্কস, মাও সেতুংদের ধর্ম বিরোধীতা ঠিক ছিলো।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ সময়ের ভাইরাল নাস্তিকদের ব্যাপারেও খুব পজেটিভ আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। তারা ইসলামের চরম দুশমন লেলিন, কালমার্কস, মাও সেতুংদের ধর্ম বিরোধীতা ঠিক ছিলো বলে দাবি করে লিখেছে,

‘তোমরা এই মুক্তির বাণী নিয়ে, এই সাম্যের বাণী এই মুক্তির গান নিয়ে তোমরা কেন সেখানে গেলে না? যখন তোমরা যেতে ব্যর্থ হয়েছে তখন তোমাদের ধর্ম তাদের কাছে আবেদন হারিয়েছে। এই দোষ কি লেলিন, কালমার্কস মাও সেতুংদের। কাজেই শত্রুতা করে কোন লাভ নেই’।
সূত্র: সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ২০

‘প্রচলিত ধর্মগুলোর অসারতা ধর্মের ধারক-বাহকদের অন্ধত্ব দেখেই ধর্মকেই অবাঞ্চিত ঘোষণা করলেন মার্কস। বললেন জনগণের সুখলাভের প্রথম শর্ত হল ধর্মের বিলোপ সাধন করতে হবে। মানুষ ধর্মের বিকৃতরুপের অসারতা ও কুফল বুঝতো তাই এই বক্তব্যের যুক্তি খুঁজে পেল’।
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ১১

ইসলাম কী বলে?
বেঈমানদের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বধীর ও অন্ধ বলেছেন। মহান রব বলেন,

إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاء إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ

অর্থ: স্মরণ রেখ, তুমি মৃতদেরকে (তোমার কথা) শোনাতে পারবে না এবং বধিরকেও পারবে না ডাক শোনাতে, যখন তারা পেছন ফিরে চলে যায়।
সূরা নামল, আয়াত নং- ৮০

সুতরাং অমুসলিমরা অন্ধ, তারা ইসলামের সৌন্দর্য না দেখেই  ইসলামের চরম বিরোধিতা করে গেছেন। কিন্তু ইসলামের সেই চরম দুমশন লেলিন, কালমার্কস, মাও সেতুংদের সঠিক প্রমাণ করতে হেযবুত তওহীদের এত মাথা ব্যাথা কেন? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

১১. আব্রাহাম লিংকন মুক্তির বানী এনেছিলেন।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
আব্রাহাম লিংকনের ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের বক্তব্য হলো,

‘মানুষের সমস্যা সমাধানে ধর্মের ধারক-বাহকরা সমাধান না নিয়ে আসায় মুক্তির বাণী নিয়ে আসলেন লিংকন আসলেন জেফারসন আসলেন ওয়াশিংটন তাদেরকে ইসলামের পন্ডিত আলেম-ওলামারা কাফের নাস্তিক বলে গালিগালাজ করেন’।
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ১১

ইসলাম কী বলে?
আব্রাহাম লিঙ্কন ছিলেন একজন মার্কিন রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী । তিনি ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৫ সালে তার হত্যার আগ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের পূর্ণ অনুসারী ছিলেন না। সে হিসাবে তিনি মুক্তির দিশা তালাশ করতে কোথাও গেছেন বলেও কোনো প্রমাণ নেই। তিনি আল্লাহর দ্বীন ফেলে নিজ থেকে আবিস্কার করা যে মতবাদ নিয়ে আসলেন সেটা কী মুক্তির পথ হতে পারে? বরং এসব মহাপণ্ডিতরা মুসলিমদের বোকা মনে করে থাকে। এদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاء أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاء وَلَـكِن لاَّ يَعْلَمُونَ

অর্থ: যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরাও সেই রকম ঈমান আন, যেমন অন্য লোকে ঈমান এনেছে। তখন তারা বলে, আমরাও কি সেই রকম ঈমান আনব, যে রকম ঈমান এনেছে নির্বোধ লোকেরা? জেনে রেখ, এরাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না।
সূরা বাকারা, আয়াত নং- ১৩

সুতরাং যে লোকটা মুক্তির পথ তালাশই করেননি, সে মুক্তির পথ পাবে কিভাবে? তার পথ মুক্তির পথ হয় কিভাবে? আর মানবরচিত কোনো মতবাদ কী কখনও মুক্তির পথ হতে পারে? নিশ্চয় না। মুক্তির একমাত্র পথ তো সেটাই যা রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর উম্মাহকে দেখিয়ে গেছেন, জানিয়ে গেছেন। কিন্তু আব্রাহাম লিঙ্কন কর্তৃক রচিত পথকে মুক্তির পথ বলে দাবি করে মূলত হেযবুত তওহীদ কী বুঝাতে চায়? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

১২. হুমায়ুন আজাদের ধর্মের বিরোধীতা করে ভুল করেননি।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
বাঙ্গালী ইতিহাসের পাতায় এক নোংড়া লম্পট ও নাস্তিকের নাম হুমায়ুন আজাদ। তার নাস্তিকতা ও লাম্পট্য ইতিহাস দেখতে তার লেখা ‘আমার ধর্মবিশ্বাস’ ‘মাতাল তরুনী’ ইত্যাদী বইগুলো পড়লে ঘৃণায় থু আসে। কিন্তু এই সর্বনিকৃষ্ট মানুষটা সম্পর্কে হেযবুত তওহীদের কত দরদ জানেন? হেযবুত তওহীদের বক্তব্য হলো, হুমায়ুন আজাদ ধর্মের বিরোধীতা করে ভুল করেননি। তারা লিখেছে,

‘যে ধর্মের উত্থান দেখে হুমায়ুন আজাদ আতঙ্কিত। সেটা আতঙ্কিত হওয়ারই মতো। কারণ সেটা ধর্ম নয়, ধর্মের উল্টোটা’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৬৪

ইসলাম কী বলে?
নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ তার বইগুলোর মধ্যে পবিত্র কুরআন ও ইসলামের অসংখ্য আইন সম্পর্কে ঘৃণিত মন্তব্য ও সমালোচনা করেছেন। যার পক্ষে সাফাই গাওয়া একমাত্র নাস্তিকদের পক্ষেই মানায়। প্রশ্ন হলো, ইসলাম নিয়ে কটুক্তিকারী ও কুৎসা রটনাকারী এই নরকের কীটকে এত সাপোর্ট দিতে হেযবুত তওহীদের এত আগ্রহ কেন? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

১৩. ইসলামের ব্যার্থতার কারণেই পুঁজিবাদ তৈরি হয়েছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
এই ধ্বংসাত্মক পুঁজিবাদী সভ্যতা সম্পর্কে হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, ইসলামের ব্যার্থতার কারণেই পুঁজিবাদ তৈরি হয়েছে। তারা লিখেছে,

‘উম্মতে মোহাম্মদী তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটা বিকল্প ব্যবস্থা উদ্ভাবন করতে হলো এবং সেটা করা হলো এবং স্বভাবতই সেটা ঐ পুঁজিবাদের মতোই হল মানুষ দ্বারা সৃষ্ট এবং সেটার স্রষ্টা হলেন কার্লমার্কস’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৩১

ইসলাম কী বলে?
সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ অর্থনৈতিক অভিশাপ। সমাজতন্ত্র স্বাধীন মানুষকে পরাধীন, যান্ত্রিক ও ইতর বস্ত্ততে পরিণত করে। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থনীতি মানুষকে বল্গাহীন স্বাধীন, নিপীড়ক, স্বার্থপর ও স্বেচ্ছাচারী করে তুলে। আর ইসলামী অর্থনীতি এই দুই মেরুর অর্থ ব্যবস্থার মাঝে সমন্বয় সাধন করে সমৃদ্ধশালী, সার্বজনীন কল্যাণকামী সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে। মোটকথা মানব রচিত কোন তন্ত্র-মন্ত্র বা অর্থব্যবস্থা সার্বজনীন হ’তে পারে না। অর্থনৈতিক সফলতা ও মুক্তি একমাত্র আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত সত্যের উৎস কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী অর্থনীতির মাঝেই নিহিত আছে। ইসলাম কখনও ব্যার্থ ছিলো না, কিয়ামত পর্যন্ত ব্যর্থ হবে না। কারণ ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ পবিত্র কুরআন ও নবীজির সা. হাদিসের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। যা আজও অবিকৃত। মহান রব বলেন,

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

অর্থ: আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
সূরা হিজর, আয়াত নং- ৯

সুতরাং কালমার্কস যদি অবিকৃত সে কুরআন দেখতো, নবীজির সুন্নাহ দেখতো, তাহলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে নতুন কোনো সভ্যতার প্রয়োজন হতো না। কারণ পবিত্র কুরআনে অর্থনীতিতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা, অর্থনীতিতে সুনীতি প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি উৎখাত করা, নির্যাতিত ও বঞ্চিতদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা, কল্যাণকর দ্রব্যের উৎপাদনে উৎসাহিতকরণ ও অকল্যাণকর দ্রব্যের উৎপাদন নিষিদ্ধ করণ, সম্পদের সুষম বণ্টন, সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার, সূদ-ঘুষ, ধোঁকামুক্ত অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, ব্যবসা-বাণিজ্য ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা প্রবর্তন সম্পর্কে সুবিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। কিন্তু সেগুলো না দেখে কালমার্কস যে পুঁজিবাদী সভ্যতার আবিস্কার করেছে, তা যুগযুগ ধরে পৃথিবীবাসীকে নরকে দহন করছে। এর অপরাধের পূর্ণ দায় বর্তায় কালমার্কসের উপর। এখানে ইসলামের কোনো ব্যার্থতার নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কালমার্কসকে বাঁচাতে ইসলামকে ব্যার্থ বলতে হেযবুত তওহীদের বুক কাঁপলো না কেন? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

১৪. আল্লাহর উপর ঈমান আনা জরুরি নয়:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?

আমি এ কথা বারবার বুঝাতে চাচ্ছি, হেযবুত তওহীদ মূলত নাস্তিকদের দোসর। আর কারণেই হেযবুত তওহীদ এখন নাস্তিকদেরও তাদের দিকে আহ্বান করে যাচ্ছে। তারা বলতে চায়, সবাই হেযবুত তওহীদের ডাকে সাড়া দিন। হেযবুত তওহীদে আসতে ধর্ম মানতে হবে না, এমনকি আল্লাহ তা”আলার উপর বিশ্বাসীও হতে হবে না। তারা লিখেছে,

‘আমরা বলি না যে, আপনারা আল্লাহ বিশ্বাসী হয়ে যান, মো’মেন হয়ে যান, পরকালে বিশ্বাসী হয়ে যান, আল্লাহর প্রতি কে ঈমান আনবে না আনবে সেটা তারা আল্লাহ সঙ্গে বুঝবে। সুতরাং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়,আমাদের কাজ আল্লাহর শেষ রসুলের আনীত আকাশের মত উদার, সমুদ্রের মতো বিশাল, দুর্দান্ত গতিশীল ইসলামকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করে মানবজাতিকে শান্তিময়, নিরাপদ, ন্যায়, ও সুবিচারে পূর্ণ একটি জীবন উপহার দেওয়া’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৫১

ইসলাম কি বলে?
প্রিয় পাঠক! সকল নবীদেরকে আল্লাহ এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন একটি দাওয়াতে মিশন দিয়ে। সেটা হল, হে মানবজাতি বলো, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই”। সকল নবী-রাসুলগণ তাঁরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করতে ও আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করার দাওয়াত দিয়ে গেছেন আজিবন। শেষ নবী মুহাম্মাদ সা. তাঁরও এই কাজই ছিলো মূল কাজ। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ হেযবুত তওহীদ নিজেদেরকে সত্যিকারের ইসলামের ধারক-বাহক দাবি করলেও মানুষকে ঈমান ও ইসলামের ধর্মের দিকে ডাকার মিশন নিয়ে তারা নামেনি। অথচ আল্লাহ তা’আলার উপর ঈমান আনয়ণের প্রতি নির্দেশ করে মহান আল্লাহ বলেন,

فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

অর্থ: কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।
সুরাঃ বাকারা আয়াত-১৮৬

উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর সেটি হলো, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।

শুধু তাই নয়, বরং আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. এবং আল্লাহর নাযিলকৃত পবিত্র কুরআনের প্রতি সমস্ত মানুষের ঈমান আনয়ন করা ফরজ ঘোষণা করতে আল্লাহ বলেন,

فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنزَلْنَا وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

অর্থ: অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং অবতীর্ন নূরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।
সুরা তাগাবুন আয়াত-৮

উক্ত আয়াতে আল্লাহর উপর, তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. এর উপর এবং পবিত্র কুরআনের উপর ঈমান আনার সরাসরি নির্দেশ করেছেন মহান আল্লাহ নিজেই। আল্লাহর উপর, তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. এর উপর এবং পবিত্র কুরআনের উপর ঈমান আনার পাশাপাশি পূর্বযুগের নবীদের উপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাবের উপরও ঈমান আনার নির্দেশ এসেছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রসূলও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রসূলের উপর এবং সেসমস্ত কিতাবের উপর, যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে।
সুরাঃ নিসা আয়াত- ১৩৬

প্রিয় পাঠক, আমরা উক্ত আয়াতগুলো থেকে কয়েকটি বিষয় জানতে পারলাম-
১. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ফরজ।
২. মুহাম্মাদ সা. এর উপর ঈমান আনা ফরজ।
৩. পবিত্র কুরআনের উপর ঈমান আনা ফরজ।
৪. অন্যান্য আসমানী কিতাবের উপর ঈমান আনা ফরজ।

উক্ত আয়াতগুলো থেকে সকল পাঠক অন্তত এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, বান্দাদের কাছ থেকে আল্লাহর চাওয়া বা অভিপ্রায় কি? আল্লাহর অভিপ্রায় হচ্ছে, বান্দারা যেন, আল্লাহ,রাসুল সা., কুরআন ইত্যাদীর উপর ঈমান আনয়ণ করে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবী হলো-
“আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়।”
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ: ৫২

তাহলে আল্লাহ পাকের অভিপ্রায় আর হেযবুত তওহীদের কর্মকান্ড আদৌ কি মিললো? নিশ্চয় না। উপরন্তু আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের ব্যাপারে ক্ষমাপ্রাপ্তী ও জান্নাতের যাওয়ার মাধ্যম বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ

অর্থ: হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য।
সুরাঃ ছ-ফ আয়াত-১০-১৩

অন্য আয়াতে কারীমায় এসেছে,

سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

অর্থ: তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত। এটা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণের প্রতি বিশ্বাসস্থাপনকারীদের জন্যে। এটা আল্লাহর কৃপা, তিনি যাকে ইচ্ছা, এটা দান করেন। আল্লাহ মহান কৃপার অধিকারী।
সুরাঃ হাদিদ, আয়াত নং- ২১

পাশাপাশি ঈমান আনয়ণ; রহমত ও সঠিক পথের মাধ্যম। পবিত্র কুরআনে এসেছে,

فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا

অর্থ: অতএব, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি তাদেরকে স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান দেবেন এবং নিজের দিকে আসার মত সরল পথে তুলে দেবেন।
সুরাঃ নিসা আয়াত: ১৭৫

ঈমান সফলতার লক্ষণ। মহান রব বলেন,

فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থাৎ সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। (সুরাঃ আ’রাফ আয়াত: ১৫৭)

ঈমান আনয়ণ: সত্যবাদীদের প্রথম আলামত। মহান রব বলেন,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ

অর্থ: তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।
সুরাঃ হাদিদ আয়াত: ১৫

আল্লাহ তা’য়ালা আরও বলেন,

وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ أُولَئِكَ هُمُ الصِّدِّيقُونَ وَالشُّهَدَاءُ عِنْدَ رَبِّهِمْ لَهُمْ أَجْرُهُمْ وَنُورُهُمْ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ

অর্থ: আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তারাই তাদের পালনকর্তার কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত। তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার ও জ্যোতি এবং যারা কাফের ও আমার নিদর্শন অস্বীকারকারী তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে।
সুরাঃ হাদিদ আয়াত: ১৯

প্রিয় পাঠক, উল্লেখিত আয়াতসমূহ দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম-
১. রহমত প্রাপ্তীর মাধ্যম।
২. সঠিক পথের দিশা।
৩. ক্ষমাপ্রাপ্তী।
৪. সত্যবাদীদের আলামত।
৫. সফলতার লক্ষণ।
৬. জান্নাতের যাওয়ার মাধ্যম একমাত্র ঈমান আনয়ণ করা।

উপরন্তু ঈমানের দাওয়াত; সকল নবীগণের আগমণের উদ্দেশ্য। আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন,

إِذْ جَاءتْهُمُ الرُّسُلُ مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ

অর্থ: যখন তাদের কাছে রসূলগণ এসেছিলেন সম্মুখ দিক থেকে এবং পিছন দিক থেকে এ কথা বলতে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও পূজা করো না।
সুরাঃ ফুসসিলাত আয়াত: ১৪

হযরত মুহাম্মাদ সা. এর কর্মসূচী; ঈমানের দাওয়াত। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

অর্থ: বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।
সুরাঃ আ’রাফ আয়াত: ১৫৮

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ لِتُؤْمِنُوا بِرَبِّكُمْ وَقَدْ أَخَذَ مِيثَاقَكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

অর্থ: তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছ না, অথচ রসূল তোমাদেরকে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার দাওয়াত দিচ্ছেন? আল্লাহ তো পূর্বেই তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছেন-যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
সুরা: হাদিদ, আয়াত নং- ৮

উক্ত আয়াতগুলো থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হলো-
১. সকল নবীগণের কাজ ছিল সকল শিরক থেকে মুক্ত করে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করা।
২. ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক আখেরী নবী মুহাম্মাদ সা. এর কর্মসূচি ছিলো উম্মত যেন ঈমাণ আনয়ণ করে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবী হলো-

‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৫২

তাহলে ইসলামের প্রবর্তক নবী মুহাম্মাদ সা. এর কর্মসুচী আর হেযবুত তওহীদের কর্মকান্ড আদৌ কি মিললো? নিশ্চয় না।

সুতরাং কুফরী সংগঠন হেযবুত তওহীদ যারা ঈমানের দাওয়াত দেওয়া নিজেদের মিশন বানায়নি, বরং যারা দাবী করছে,

“আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়।”
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ: ৫২

তারা কি আদৌ আল্লাহর প্রকৃত ধর্মের ধারক-বাহক হতে পারে? নিশ্চয় না। তাহলে প্রশ্ন হলো, এরা কারা? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

১৫. মানবতাবাদী নাস্তিকরাও মোমেন:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা বুঝাতে চায়, মোমেন হওয়ার জন্য একটাই শর্ত মানুষের কল্যানে কাজ করা। মোমেন হওয়ার জন্য ঈমান আনাও শর্ত নয়। তারা লিখেছে,

‘নিজেদের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে সংগ্রাম করার মধ্যে দিয়েই মোমেন হতে হবে, অন্য কোন পন্থা আল্লাহ দেননি’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-১১৩

‘মানুষের শান্তির লক্ষ্যে কাজ করাই মানুষের প্রকৃত এবাদত। নবী-রাসূল অবতারগণ এ লক্ষ্যেই সংগ্রাম করে গেছেন। এ কাজ যারা করবে তারাই স্রষ্টার সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি পাবে, তারাই প্রকৃত মোমেন বা বিশ্বাসী’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮৩

সূত্রাপুরে হেযবুত তওহীদ আয়োজীত একটা সম্মেলনে তাদের দ্বিতীয় এমাম হুসাইন সেলিম বিভিন্ন ধর্মের লোকদের উদ্দেশ্য করে বলেন,

‘হে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা! হে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা! হে খৃষ্টান ধর্মের অনুসারীরা! হে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা! আজ সারা দুনিয়াময় মানবতা বিপর্যস্ত। এই মানুষকে রক্ষার জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন। তাহলে আপনারা হবেন ধার্মিক, আপনার হবেন মো’মেন। আপনারা হবেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা, আপনাদের জন্য জান্নাত -স্বর্গ রয়েছে’।
সূত্র: সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ২১

অর্থাৎ তাদের কাছে মোমেন, আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও জান্নাতী হওয়ার জন্য একটাই কাজ করা শর্ত, সেটা হলো মানবতার কল্যানে কাজ করা।

ইসলাম কী বলে?

মুমিন কারা?
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা দেখুন। মহান রব বলেন,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِذَا كَانُوا مَعَهُ عَلَى أَمْرٍ جَامِعٍ لَمْ يَذْهَبُوا حَتَّى يَسْتَأْذِنُوهُ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُولَئِكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَنْ لِمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

অর্থ: মুমিন তো তারাই; যারা আল্লাহর ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং রসূলের সাথে কোন সমষ্টিগত কাজে শরীক হলে তাঁর কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ ব্যতীত চলে যায় না। যারা আপনার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে, তারাই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। অতএব তারা আপনার কাছে তাদের কোন কাজের জন্যে অনুমতি চাইলে আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুমতি দিন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, মেহেরবান।
সুরাঃ নূর আয়াত: ৬২

কাফের কারা?
কাফেরের প্রথম আলামত আল্লাহকে অবিশ্বাস করা। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

وَمَنْ لَمْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَعِيرًا

অর্থ: যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস করে না, আমি সেসব কাফেরের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।
সুরাঃ ফাতহ আয়াত: ১৩

উক্ত আয়াত দুটি থেকে বুঝতে পারলাম-
১. যারা ঈমান আনবে তারা মুমিন।
২. যারা ঈমান আনবে না তারা কাফের।

উপরন্তু আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনা পথভ্রষ্টতা। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا

অর্থ: যে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।
সুরাঃ নিসা আয়াত আয়াত: ১৩৬

ঈমান না থাকা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থ: যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।
সুরাঃ বাকারা আয়াত: ২৫৭

প্রিয় পাঠক, উল্লেখিত দু’টি আয়াত থেকে জানতে পারলাম-
১. ঈমান আনয়ণ না করা ভ্রষ্টতার লক্ষণ।
২. ঈমান আনয়ণ না করা জাহান্নামী হওয়ার লক্ষণ।

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে বুঝতে পারলাম,

আল্লাহ, ফিরিস্তা, আম্বিয়ায়ে কেরাম, আসমানী কিতাব, আখেরাতের বিশ্বাস ইত্যাদীর প্রতি ঈমান না থাকলে সে মুমিন নয়, জান্নাতী নয়, বরং চুড়ান্ত ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী। কিন্তু হেযবুত তওহীদ মুমিনের জন্য এসবের প্রতি ঈমান আনয়ন জরুরী মনে করে না, বরং মানবতাবাদী অমুসলিম এমনকি নাস্তিকদেরও মুমিন বলে আখ্যায়িত করে থাকে। কিন্তু কেন? কারণ একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

১৬. ধর্মগ্রহণ করা জরুরি নয়:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ মূলত নাস্তিকদের পক্ষো দালালী ঠিক রাখতে গিয়ে ধর্মকে একেবারে মূল্যহীন বানিয়ে ফেলেছে। ধর্মগ্রহণ তাদের কাছে জরুরী কোনো বিষয়ই না। হেযবুত তওহীদের নিন্মোক্ত বক্তব্যের শেষাংশটুকু একটু গভীরভাবে পড়বেন। পারলে ২/৩ বার পড়ুন। তারা কী লিখেছে,

‘কাজেই এই আদর্শের লড়াইয়ে বাম আদর্শের সৈনিকদের কেউ এগিয়ে আসতে হবে আমরা বলছি না যে আপনাকে বিশেষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। মানুষকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গিবাদ ধর্মব্যবসা স্বার্থের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা দরকার মোটিভেশন করা দরকার সেটা ত্যাগী মানুষদেরকে দিয়েই। আমাদের ইহকালের সমস্যা তাই সমাধানটাও ইহকালের হিসেবেই করতে চাই।পবিত্র কোর’আনে আছে যার ইহকাল ভালো তার পরকালও ভালো’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৪

ইসলাম কী বলে?
প্রিয় পাঠক! উক্ত বক্তব্যগুলো একটু খেয়াল করুন কত গভীরভাবে তারা মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। তারা বামপন্থীদের উদ্দ্যেশ্য করে বলেছে, ধর্মগ্রহণ জরুরি বিষয় নয়, বরং মানুষকে বাঁচানোর আন্দোলনে করে শান্তি ফিরাতে পারলে, তারা পরকালেও ভালো, মানে জান্নাত পাবে। তার মানে তারা উক্ত বক্তব্য দিয়ে দাবি করেছে, ধর্ম কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ নয়। আসতাগফিরুল্লাহ। কী জঘণ্যতা! কত মারাত্মক বক্তব্য! অথচ সকল নবী-রাসুলগণকে আল্লাহ পাক যে দাওয়াতের মিশন দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তার মূল বিষয় ছিলো আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহ্বান করা। সে কথা খোদ আল্লাহ তা’য়ালাই বলেছেন-

شَرَعَ لَکُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا وَصّٰی بِہٖ نُوۡحًا وَّالَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ وَمَا وَصَّیۡنَا بِہٖۤ اِبۡرٰہِیۡمَ وَمُوۡسٰی وَعِیۡسٰۤی اَنۡ اَقِیۡمُوا الدِّیۡنَ وَلَا تَتَفَرَّقُوۡا فِیۡہِ ؕ کَبُرَ عَلَی الۡمُشۡرِکِیۡنَ مَا تَدۡعُوۡہُمۡ اِلَیۡہِ ؕ اَللّٰہُ یَجۡتَبِیۡۤ اِلَیۡہِ مَنۡ یَّشَآءُ وَیَہۡدِیۡۤ اِلَیۡہِ مَنۡ یُّنِیۡبُ

অর্থ: তিনি তোমাদের জন্য দীনের সেই পন্থাই স্থির করেছেন, যার হুকুম দিয়েছিলেন তিনি নূহকে এবং (হে রাসূল!) যা আমি ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে পাঠিয়েছি এবং যার হুকুম দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে, তোমরা দীন কায়েম কর এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি করো না। (তা সত্ত্বেও) তুমি মুশরিকদেরকে যে দিকে ডাকছ তা তাদের কাছে অত্যন্ত কঠিন মনে হয়। আল্লাহ যাকে চান বেছে নিয়ে নিজের দিকে টানেন। আর যে-কেউ তার অভিমুখী হয় তাকে নিজের কাছে পৌঁছে দেন।
সূরা শুরা, আয়াত নং- ১৩

উক্ত আয়াতে কারীমা থেকে বুঝা গেলো, সকল নবীদের কাজ ছিলো আল্লাহ দ্বীনের মিশন বাস্তবায়ণ করা। উপরন্তু আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করা ছিলো সকল নবীদের আল্লাহ কর্তৃক দায়িত্ব। মহান রব বলেন,

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

অর্থ: আর আমি প্রত্যেক জাতির কাছে একজন রাসুল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো।
সুরা নাহাল, আয়াত নং- ৩৬

উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, সমস্ত নবীগণ আ. স্বীয় গোত্রকে মূর্তির ইবাদত থেকে বিরত থাকতে বলতেন। প্রশ্ন হলো, কি বলে দাওয়াত দিতেন তাঁরা ? সে জবাবও আল্লাহ তা’য়ালা দিয়েছেন-

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ

অর্থ: আর আপনার পূর্বে আমি যে রাসুলই প্রেরণ করেছি, তার ওপর এই প্রত্যাদেশই করেছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো।
সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং- ২৫

সুতরাং বুঝা গেলো, সকল নবীদের মূল কাজ হলো, আল্লাহর দাসত্বের দিকে আহ্বান করা। সুতরাং যারা মুসলমান হবেন, তাদেরও মূল মিশন হবে ধর্মের। কিন্তু হেযবুত তওহীদের কাছে সেটা মূল কাজ নয়। বরং মানবসেবাই মূল কাজ। আর এই ঈমানের শর্ত ছাড়াই বাম আদর্শের লোকগুলোকেও হেযবুত তওহীদ নিজেদের দলে আহ্বান করে যাচ্ছে। অথচ ইন্তেকালের আগে নবীজি সা. বললেন,

أَخْرِجُوا الْمُشْرِكِيْنَ مِنْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ

অর্থাৎ আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের বহিষ্কার করে দাও।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৪৪৩১

সুতরাং যে ইসলাম নবীজি সা. নিয়ে দুনিয়াতে আগমণ করলেন, সে নবী মুহাম্মাদ সা. নিজে বেঈমানদের জাযিরাতুল আরব থেকে বহিস্কার করে দিতে বললেন। কিন্তু হেযবুত তওহীদ সকল বেঈমান এমনকি নাস্তিকদেরকেও নিজেদের কাছে ডাকছে, কিন্তু ধর্মেে জন্য ডাকছে না। বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদ কোনো ধর্মীয় চেতনার নাম নয়, বরং ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

১৭. মানবতাবাদী নাস্তিকরাও জান্নাতে যাবে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের মূল বক্তব্য হলো, মানবতার কাজ যে করবে সেই ধর্মিক, সেই মুমিন, সেই জান্নাতী। এ ক্ষেত্রে কোনো ধর্ম পালন করা জরুরি নয়। নিন্মে তাদের বক্তব্যগুলো তুলে ধরছি-

এক.
মানবতাই ধর্ম:

‘মানুষের ধর্ম কি? মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের দুঃখ কষ্ট হৃদয়ে অনুভব করে এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় সে-ই ধার্মিক। অথচ প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সুরা কালাম, শাস্ত্র মুখস্থ বলতে পারে, নামাজ-রোযা,পূজা, প্রার্থনা করে সে-ই ধার্মিক।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪৫

দুই.
মানবতাবাদীরাই মুমিন:

‘নিজেদের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে সংগ্রাম করার মধ্যে দিয়েই মোমেন হতে হবে, অন্য কোন পন্থা আল্লাহ দেননি। এই মুমিনের জন্য নামাজ রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ ইসলামের অন্যান্য সব আমল’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১১৩

তিন.
মানবতাবাদীরাই শহীদ:

‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা জীবন দেয়, মানবতার কল্যাণে যারা জীবন দেয়, মানুষের মুক্তির জন্য যারা জীবন দেয় তারাই হচ্ছে শহীদ’।
সূত্র: সূত্রাপুরে এমামের ভাষন, পৃ. ১৫

চার.
মানবতার কাজ না করলে সে কাফের:

‘যদি আমার জীবন-সম্পদ মানুষের কল্যাণে ব্যয় না করি, আমি কাফের হয়ে যাব, মো’মেন হতে পারব না’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৪

পাঁচ.
মানবতার কাজ না করলে সে ধার্মিক নয়:

‘কেউ যদি নামাজ রোজা হজ্ব পূজা-অর্চনা উপাসনা ইত্যাদি নিয়ে দিনরাত ব্যপৃত থাকে, কিন্তু তার ভিতরে মানবতার গুণাবলী না থাকে তাহলে সে প্রকৃত ধার্মিক নয়, আল্লাহর প্রকৃত উপাসক নয়’।
সূত্র: ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ১৪

ছয়.
মানবতাবাদী নাস্তিকরাও ধার্মিক:

‘আমরা তাদেরকে ধর্মহীন মনে করি না। কারণ মানুষের পরম ধর্ম ‘মানবতা’ যা তাদের মধ্যে পুরোমাত্রায়ই আছে’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১

সাত.
মানবতার কল্যানে কাজ করাই ইবাদত ও জান্নাতের পথ:

‘এখন মানুষকে বোঝাতে হবে- মানবতার কল্যাণে কাজ করাই তোমার প্রকৃত এবাদত, এই এবাদতই আল্লাহর কাম্য, এটা করলেই জান্নাত সুনিশ্চিত’।
সূত্র: জঙ্গীবাদ সংকট, পৃ. ৭৬ ধর্মবিস্বাস, পৃ. ১২

আট.
মানবতাবাদী বামপন্থীরাও জান্নাতী:

‘কাজেই এই আদর্শের লড়াইয়ে বাম আদর্শের সৈনিকদের কেউ এগিয়ে আসতে হবে আমরা বলছি না যে আপনাকে বিশেষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। মানুষকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গিবাদ ধর্মব্যবসা স্বার্থের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা দরকার মোটিভেশন করা দরকার সেটা ত্যাগী মানুষদেরকে দিয়েই। আমাদের ইহকালের সমস্যা তাই সমাধানটাও ইহকালের হিসেবেই করতে চাই।পবিত্র কোর’আনে আছে যার ইহকাল ভালো তার পরকালও ভালো’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৪

‘এক কথায় মানুষকে সুখ-শান্তি নিরপত্তার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোই মানুষের প্রকৃত এবাদত। এই এবাদত করলে সে পরকালে জান্নাত পাবে।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-৫১

নয়.
মানবতাবাদী নাস্তিকরা মুত্তাকি:

‘অন্যান্য ধর্মে, এমন কি আল্লাহকে অবিশ্বাসকারী নাস্তিক কমিউনিস্টদের মধ্যেও বহু মানুষ আছেন যারা ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-অঠিক দেখে জীবনের পথ চলতে চেষ্টা করেন। তারা মিথ্যা বলেন না, মানুষকে ঠকান না, অন্যের ক্ষতি করেন না, যতটুকু পারেন অন্যের ভালো করেন, গরিবকে সাহায্য করেন ইত্যাদি। তারা মুত্তাকী’।
সূত্র: তাকওয়া ও হেদায়াহ, পৃ. ৭

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, মানবতার কাজ করলেই সে ধার্মিক, মোমেন, শহীদ এবং মানবতার কাজ করলে সে অমুসলিম এমনকি নাস্তিক হলেও সে পরকালে জান্নাত পাবে।

ইসলাম কী বলে?
মানব সেবা ইসলাম ধর্মের একটি বিশেষ আমল। কিন্তু মানবসেবাই ইসলাম নয়। মুসলমান না হয়ে যেকোনো কাজ করেই জান্নাতে যাওয়া যাবে না। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ স: বলেন,

والذي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بيَدِهِ لا يَسْمَعُ بي أحَدٌ مِن هذِه الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ ولا نَصْرانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ ولَمْ يُؤْمِنْ بالَّذِي أُرْسِلْتُ به إلّا كانَ مِن أصْحابِ النّارِ

অর্থাৎ সেই স্বত্তার কসম যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, যে কেউ, হোক সে ইহুদি অথবা খ্রীস্টান, আমার সম্পর্কে শুনে থাকে এবং আমার বয়ে আনা বার্তার প্রতি বিশ্বাস ছাড়াই মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামীদের একজন হবে।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস, হাদিস নং- ১৫৩

হাদিসে আরও এসেছে,

عن أبي هريرة قالَ قالَ رَسولُ اللَّهِ ﷺ كُلُّ أُمَّتي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلّا مَن أَبى قالوا يا رَسُولَ اللَّهِ وَمَن يَأْبى قالَ مَن أَطاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ وَمَن عَصانِي فقَدْ أَبى

অর্থ: আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে, তবে যে অস্বীকৃতি জানায় সে ছাড়া। বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ, অস্বীকৃতি জানায় কে? তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমাকে অস্বীকার করবে, সে জাহান্নামে যাবে।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৭২৮০

সুতরাং উপরোক্ত দু’টি হাদিস থেকে বুঝা গেলো, নবীজির সা. অনুসরণ ছাড়া হাজারও মানবসেবা করেও জান্নাতে প্রবেশ অসম্ভব। তবে হ্যাঁ, অমুসলিম যারা ভালো কাজ করবে, তাদের প্রতিদান দুনিয়াতেই দেওয়া হবে। আখেরাতে তাদের কোনো মূল্যায়ণ হবে না। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত নবীজি সা. বলেন,

إنَّ اللَّهَ لا يَظْلِمُ مُؤْمِنًا حَسَنَةً يُعْطى بها في الدُّنْيا ويُجْزى بها في الآخِرَةِ وأَمّا الكافِرُ فيُطْعَمُ بحَسَناتِ ما عَمِلَ بها لِلَّهِ في الدُّنْيا حتّى إذا أفْضى إلى الآخِرَةِ لَمْ تَكُنْ له حَسَنَةٌ يُجْزى بها

অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের সাথে তাদের ভাল কাজের প্রতিদান দেয়ার ব্যাপারে অন্যায় আচরণ করবেন না । তিনি এই পৃথিবীতে ভাল কাজের কারণে তাদের পুরস্কৃত করবেন এবং আখিরাতেও তাদের ভাল কাজের জন্য তাদের প্রতিদান দেবেন । আর কাফিরদের জন্য , তাদের ভাল কাজের জন্য (যা তারা আল্লাহর ওয়াস্তে করেছিল) এই পৃথিবীতেই তাদের জীবন জীবিকার ভাল উপকরণ দেয়া হবে , অতঃপর যখন সে পরকালে যাবে , তখন তাকে প্রতিদান দেয়ার জন্য কোন ভাল কাজ অবশিষ্ট থাকবে না।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৮০৮

বুঝা গেলো, মুসলমান ছাড়া মানবতাবাদী অমুসলিমরা তাদের প্রতিদান দুনিয়াতে পাবে, আখেরাতে নয়। অথচ হেযবুত তওহীদ বামপন্থীদের উদ্দেশ্যে মানবসেবার প্রতি আহ্বান করতে গিয়ে বললেন,

‘আমাদের ইহকালের সমস্যা তাই সমাধানটাও ইহকালের হিসেবেই করতে চাই।পবিত্র কোর’আনে আছে যার ইহকাল ভালো তার পরকালও ভালো’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৪

অথচ নবীজি সা. বললেন, অমুসলিমদের প্রতিদান শুধুমাত্র দুনিয়ায় হবে আখেরাতে থাকবে তারা শুণ্য। হাদিসে কুদসীতে আরও এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন,

يَلْقَى إِبْرَاهِيْمُ أَبَاهُ فَيَقُوْلُ يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِيْ أَنْ لَا تُخْزِيَنِيْ يَوْمَ يُبْعَثُوْنَ فَيَقُوْلُ اللهُ إِنِّيْ حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ.

অর্থাৎ (হাশরের ময়দানে ইব্রাহীম আ. তাঁর পিতার সাক্ষাৎ পেয়ে বলবেন, ইয়া রব! আপনি আমার সঙ্গে ওয়া’দা করেছেন যে, কিয়ামতের দিন আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, আমি কাফিরদের উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৪৭৬৯

সুতরাং প্রমাণ হলো, অমুসলিম, নাস্তিক-মুরতাদ, কাফেররা যতবড়ই মানবদরদী হোক না কেন তাদের জন্য জান্নাত হারাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য হেযবুত তওহীদ ঘুরিয়ে পেচিয়ে তাদেরকে জান্নাতী বানাতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু কেন? কারণ একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

১৮. নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাওয়া অন্যায়।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা নাস্তিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। তাদের কষ্ট ও বিপত হেযবুত তওহীদ একদসই সহ্য করতে পারেনা। এজন্য তারা লিখেছে,

‘অন্য কোন আদর্শের অনুসারীরা ইসলামের সমালোচনা করতেই পারেন….. আল্লাহ স্বয়ং যেখানে তার কোরআন সম্পর্কে সৃষ্টি সম্পর্কে, আয়াত এমনকি তার নিজের সম্পর্কে ভুল সন্ধান করার জন্য আহবান করছেন সেখানে কেউ যদি ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করে, তার দৃষ্টিতে ধরা পড়া কোন অসঙ্গতি তুলে ধরে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আক্রোশ প্রদর্শন করা, তাকে আক্রমণ করা, তাকে হত্যা করা ইত্যাদি অবশ্যই অন্যায্য ও প্রগতিশীল, ক্ষুদ্রতা,অযৌক্তিক, আল্লাহর অভিপ্রায় বহির্ভূত কাজ’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃষ্ঠা. ১২

অর্থাৎ তারা বলতে চায়, ইসলাম নিয়ে কেউ সমালোচনা করলে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেও অন্যায়।

ইসলাম কী বলে?
হেযবুত তওহীদ যদি মুসলমান হতো, তাহলে আগে নাস্তিকদের প্রশ্ন করার স্বাধীনতা আদায়ের পক্ষে না বলে নাস্তিকরা ইসলামকে নিয়ে যেসব কটুক্তি করে থাকে, সেগুলো যেন বন্ধ হয়, সে ব্যাপারে মুখ খুলতে। কিন্তু না। তারা সে ব্যাপারে নিরব থাকলেও নাস্তিকদের অধিকার আদায়ে তারা খুব সচেষ্ট। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া অন্যায় বলে দাবি করেছো তারা। নিন্মে কয়েকটি হাদিস পেশ করছি-

এক.
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন,

من سب نبيًّا فاقتلوه ومن سب أصحابى فاضربوه

অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবীকে সা. মন্দ বলে (সমালোচনা করে) তাকে হত্যা করো।
সূত্র: তারিখে দিমাশক, হাদিস নং- ৮৮৬৫

দুই.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

أَنَّ أَعْمَى كَانَتْ لَهُ أُمُّ وَلَدٍ تَشْتُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَقَعُ فِيهِ، فَيَنْهَاهَا، فَلَا تَنْتَهِي، وَيَزْجُرُهَا فَلَا تَنْزَجِرُ، قَالَ: فَلَمَّا كَانَتْ ذَاتَ لَيْلَةٍ، جَعَلَتْ تَقَعُ فِي النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَشْتُمُهُ، فَأَخَذَ الْمِغْوَلَ فَوَضَعَهُ فِي بَطْنِهَا، وَاتَّكَأَ عَلَيْهَا فَقَتَلَهَا، فَوَقَعَ بَيْنَ رِجْلَيْهَا طِفْلٌ، فَلَطَّخَتْ مَا هُنَاكَ بِالدَّمِ، فَلَمَّا أَصْبَحَ ذُكِرَ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَمَعَ النَّاسَ فَقَالَ: أَنْشُدُ اللَّهَ رَجُلًا فَعَلَ مَا فَعَلَ لِي عَلَيْهِ حَقٌّ إِلَّا قَامَ، فَقَامَ الْأَعْمَى يَتَخَطَّى النَّاسَ وَهُوَ يَتَزَلْزَلُ حَتَّى قَعَدَ بَيْنَ يَدَيِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنَا صَاحِبُهَا، كَانَتْ تَشْتُمُكَ، وَتَقَعُ فِيكَ، فَأَنْهَاهَا فَلَا تَنْتَهِي، وَأَزْجُرُهَا، فَلَا تَنْزَجِرُ، وَلِي مِنْهَا ابْنَانِ مِثْلُ اللُّؤْلُؤَتَيْنِ، وَكَانَتْ بِي رَفِيقَةً، فَلَمَّا كَانَ الْبَارِحَةَ جَعَلَتْ تَشْتُمُكَ، وَتَقَعُ فِيكَ، فَأَخَذْتُ الْمِغْوَلَ فَوَضَعْتُهُ فِي بَطْنِهَا، وَاتَّكَأْتُ عَلَيْهَا حَتَّى قَتَلْتُهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَا اشْهَدُوا أَنَّ دَمَهَا هَدَرٌ

অর্থাৎ জনৈক অন্ধ লোকের একটি উম্মু ওয়ালাদ’ ক্রীতদাসী ছিলো। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গালি দিতো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতো। অন্ধ লোকটি তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে বিরত হতো না। সে তাকে ভৎর্সনা করতো; কিন্তু তাতেও সে বিরত হতো না। এক রাতে সে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গালি দিতে শুরু করলো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে লাগলো, সে একটি একটি ধারালো ছোরা নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে তাতে চোপ দিয়ে তাহেত্যা করলো। তার দু’ পায়ের মাঝখানে একটি শিশু পতিত হয়ে রক্তে রঞ্জিত হলো। ভোরবেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘটনাটি অবহিত হয়ে লোকজনকে সমবেত করে বলেনঃ আমি আল্লাহর কসম করে বলছিঃ যে ব্যক্তি একাজ করেছে, সে যদি না দাঁড়ায় তবে তার উপর আমার অধিকার আছে।

একথা শুনে অন্ধ লোকটি মানুষের ভিড় ঠেলে কাঁপতে কাঁপতে সামনে অগ্রসর হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এসে বসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সেই নিহত দাসীর মনিব। সে আপনাকে গালাগালি করতো এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলতো। আমি নিষেধ করতাম; কিন্তু সে বিরত হতো না। আমি তাকে ধমক দিতাম; কিন্তু সে তাতেও বিরত হতো না। তার গর্ভজাত মুক্তার মতো আমার দু’টি ছেলে আছে, আর সে আমার খুব প্রিয়পাত্রী ছিলো। গত রাতে সে আপনাকে গালাগালি শুরু করে এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বললে, আমি তখন একটি ধারালো ছুরি নিয়ে তার পেটে স্থাপন করে তাতে চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সাক্ষী থাকো, তার রক্ত বৃথা গেলো।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৩৬১

তিন.
হযরত আবু মূসা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَدِمَ عَلَيَّ مُعَاذٌ، وَأَنَا بِالْيَمَنِ، وَرَجُلٌ كَانَ يَهُودِيًّا فَأَسْلَمَ فَارْتَدَّ عَنِ الْإِسْلَامِ، فَلَمَّا قَدِمَ مُعَاذٌ، قَالَ: لَا أَنْزِلُ عَنْ دَابَّتِي حَتَّى يُقْتَلَ، فَقُتِلَ، قَالَ أَحَدُهُمَا: وَكَانَ قَدْ اسْتُتِيبَ قَبْلَ ذَلِكَ

অর্থাৎ আমি ইয়ামেনে অবস্থানকালে মু’আয রা. আমার নিকট আসলেন। একটি লোক ইয়াহুদী ছিলো, সে মুসলিম হয়ে আবার ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়। মু’আয (রাঃ) এসে বলেন, একে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি আমার জন্তুযান থেকে নামবো না। অতঃপর তাকে হত্যা করা হলো। তালহা ও বুরাইদাহ উভয়ের একজন বলেন, হত্যা করার পূর্বে তাকে ইসলামে ফিরে আসার আহবান জানানো হয়েছিলো।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৩৫৫

চার.
হযরত ইকরামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أتي علي رضي الله عنه بزنادقة فأحرقهم. فبلغ ذلك ابن عباس فقال : لو كنت أنا لم أحرقهم، لنهي رسول الله صلى الله عليه وسلم : لا تعذبوا بعذاب الله، ولقتلتهم لقول رسول الله صلى الله عليه وسلم : من بدل دينه فاقتلوه.

অর্থাৎ হযরত আলী রা. এর নিকট কয়েকজন মুরতাদ-যিন্দীককে ধরে আনা হল। তিনি তাদের পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এ-খবর ইবনে আববাস রা এর নিকট পৌছলে তিনি বললেন, আমি হলে পুড়িয়ে হত্যা করার আদেশ দিতাম না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ পাকের শাস্তি দানের বস্তু (আগুন) দ্বারা শাস্তি দিও না।’ আমি বরং এদেরকে হত্যা করতাম। কেননা আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘যে নিজের দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে’।
সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৬৯২২

পাঁচ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

لا يحل دم امرء مسلم يشهد أن لا إله إلا الله وأني رسول الله إلا بإحدى ثلاث النفس بالنفس والثيب الزاني والمفارق لدينه التارك للجماعة

অর্থাৎ যে মুসলমান সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল, তিন কারণের কোনো একটি ব্যতীত তার রক্ত প্রবাহিত করা হালাল নয় : অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করা, ইসলাম ত্যাগ করে উম্মত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।
সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৬৮৭৮

উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে এ কথা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. কে গালী দেবে বা মুরতাদ হয়ে যাবে তাদের একমাত্র শাস্তি হত্যা করা। আর এজন্যই সকল উম্মতের সিদ্ধান্ত হলো, যে ব্যক্তি নবীজির সা. সমালোচনা করবে বা গালি দেবে, তাকে হত্যা করতে হবে।

উম্মতের ঐক্যবদ্ধ সীদ্ধান্ত:
এ ব্যাপারে সকল উম্মাহ একমত যে, যারা মুরতাদ তাদের একমাত্র শাস্তি ‘হত্যা করা’। এ ব্যাপারে ইবনে আব্দুল বার রহি. লিখেছেন,

إن من ارتد عن دينه حل دمه وضربت عنقه والأمة مجتمعة على ذلك

অর্থাৎ যে তার দ্বীন ত্যাগ করে তাকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যাবে এবং তার শিরশ্ছেদ করা হবে। মুরতাদের এ শাস্তির বিষয়ে পুরো উম্মতের সুপ্রতিষ্ঠিত ইজমা তথা মতৈক্য রয়েছে।
সূত্র: আত-তামহীদ খ. ২ পৃ. ৬২৭

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহি. বলেন,

من شتم النبي صلى الله عليه وسلم قُتل وذلك أنه إذا شتم فقد ارتد عن الإسلام ولا يشتم مسلم النبي صلى الله عليه وسلم

অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবীজিকে সা. গালি দেবে তাকে হত্যা করতে হবে। কারণ যখন কেউ নবীজিকে সা. গালি দেয়, তখন সে মুরতাদ হয়ে যায়। কারণ কোনো মুসলমান নবীজিকে সা. গালি দিতে পারে না।
সূত্র: তাকরীবুস সারেমিল মাসলুল, পৃ. ২৭৩

ইবনে কুদামা হাম্বলী রহি. লিখেছেন,

وأجمع أهل العلم على وجوب قتل المرتدين. وروي ذلك عن أبي بكر، وعثمان، وعلي، ومعاذ، وأبي موسى، وابن عباس، وخالد وغيرهم، ولم ينكر على ذلك. فكان إجماعا.

অর্থাৎ সব ধরনের মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এ বিষয়ে আলেমগণের ইজমা তথা মতৈক্য রয়েছে। হযরত আবু বকর, উসমান, আলী, মুআয, আবু মুসা, ইবনে আববাস এবং খালিদ ইবনে ওয়ালীদ প্রমুখ সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকে এ শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আর এ শাস্তির উপর কোনো সাহাবী আপত্তি করেননি। অতএব মৃত্যুদন্ডের এ বিধানের উপর সাহাবায়ে কেরামেরও ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
সূত্র: আল-মুগনী খ. ১১ পৃ. ৮৯

মুরতাদের মৃত্যুদন্ডের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে ইবনুল কায়্যিম আলজাওযিয়্যাহ রহি. লিখেছেন,

فأما القتل فجعله عقوبة أعظم الجنايات، كالجناية على النفس … وكالجناية على الدين بالطعن فيه والارتداد عنه، وهذه الجناية أولى بالقتل … إذ بقائه بين أظهر العباد مفسرة لهم، ولا خير يرجى في بقائه ولا مصلحة.

অর্থাৎ মৃত্যুদন্ড হলো সর্বোচ্চ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি। সর্বোচ্চ অপরাধ যেমন, মানুষ হত্যা, দ্বীনের বিষয়ে কটূক্তি করা বা দ্বীন ত্যাগ করার মাধ্যমে দ্বীনের উপর আঘাত হানা ইত্যাদি। ইরতিদাদের অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেওয়া খুবই যুক্তিসঙ্গত। কারণ সমাজে মুরতাদের অবস্থান সংঘাত-সহিংসতা ও আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণ হয়ে থাকে। এমন ব্যক্তির বেঁচে থাকার মাঝে কোনো মঙ্গলের আশা করা যায় না। একে বাঁচিয়ে রাখা বরং অনেক বড় নির্বুদ্ধিতা।
সূত্র: আল মাদখাল খ. ১ পৃ. ৭১

সুতরাং প্রমাণ হলো, কেউ আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসুল সা. এবং ইসলামকে নিয়ে কেউ সমালোচনা করলে বা মুরতাদ হয়ে গেলে তার একমাত্র বিচার হলো ‘হত্যা করা’। কিন্তু কুরআন-হাদিসে বর্ণিত এমন সুস্পষ্ট বিষয়কে অন্যায় বলা কী কোনো মুসলমানের দ্বারা সম্ভব? নিশ্চয় না। নাস্তিকদের দালালী করতে গিয়ে যারা নবীজির সা. বিধানকে অযৌক্তিক ও অন্যায় বলতে পারে, তারা কী মুসলমান হতে পারে? কখনই না, বরং হেযবুত তওহীদ মুসলমান হলে, নাস্তিক-মুরতাদদের ব্যাপারে মৃত্যুদণ্ডের স্লোগান তুলতো। তা না করে তাদের বাঁচানোর জন্য এত প্রচেষ্টাই প্রমাণ করে ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

যৌক্তিক দলীল:
ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করা বা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. কে গালী দেওয়া চুড়ান্ত অপরাধ। অপরাধীকে বিচার করা যদি অন্যায় হয়, তাহলে চোর-ডাকাত, ধর্ষক, দূর্নীতিবাজদের যখন সরকার গ্রেফতার করে তখন সরকারের বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদ কেন স্লোগান তোলে না? আলেমরা ধর্মীয় কাজে বেতন নিলে ঢাকার মুক্তমঞ্চে দাড়িয়ে শতশত কর্মী বাহিনী নিয়ে সেলিম সাহেব কেন স্লোগান দেন ‘ধর্মব্যাবসার ঠিকানা, বাংলাদেশে হবে না’? সুতরাং চোরের পক্ষে অবস্থান নেওয়া আর নাস্তিকদের প্রতি সদয় হওয়া আলাদা কিছু নয়। তবে ভাবার বিষয় হলো, ইসলামের চরম দুশমনদের দুঃখে হেযবুত তওহীদ এত দুঃখি কেন। তাদের বাঁচাতে হেযবুত তওহীদের এত আগ্রহ কেন? জবাব একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

নাস্তিকদের সাথে হেযবুত তওহীদের মিল কোথায়?

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ পর্যন্ত নাস্তিকদের প্রতি হেযবুত তওহীদের কিছু দরদের আলাপ দেখলেন। এখন আপনাদের হাতে কলমে দেখাতে চাই, নাস্তিকদের সাথে হেযবুত তওহীদের আসলে মিল কোথায়? এ বিষয়ে বলার আগে প্রথম পৃষ্ঠার দিকে আলোচিত নাস্তিক মুফাসসিলের ষড়যন্ত্রের রূপরেখা আর হেযবুত তওহীদের আসাদ আলীকে পাঠানো নাস্তিক আসাদ নূরের অডিও রেকর্ডের কথা  মনে রাখা দরকার। যদি মনে না থাকে তাহলে আবার পড়ে আসুন। এবার শুনে রাখুন, মানবজাতিকে ইসলাম ও ধর্ম থেকে দূরে সরাতে নাস্তিকদের আবিস্কৃত যত মতবাদ আছে, প্রায় সকল মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। নিন্মে নাস্তিকদের সাথে হেযবুত তওহীদের হুবহু মিল কোথায় তার সংক্ষিপ্ত চার্ট দেওয়া হলো-

১. সব কিছুর মানদণ্ডে যুক্তি।
২. প্রকৃতির প্রতি বিশ্বাস করা।
৩. মানবধর্ম বড় ধর্ম।
৪. ধর্মহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মিশন বাস্তবায়ন।
৫. ইসলামের দিকে আহ্বান না করা।
৬. ইসলাম নিয়ে মারাত্মক সমালোচনা।
৭. মুসলমানদের নিয়ে জঘন্য কটুক্তি।
৮. আলেমদের নিয়ে নিকৃষ্ট কটুক্তি।
৯. মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন।
১০. সহশিক্ষার পক্ষ অবলম্বন।
১১. নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিতকরণ।
১২. নারী নেতৃত্বের পক্ষ অবলম্বন।
১৩. বোরখা: নারীদের অধিকার খর্ব করা।
১৪. জন্মনিয়ন্ত্রণ মিশন।
১৫. দাঁড়ি-টুপি, জুব্বা, পাগড়ী নিয়ে কটুক্তি।
১৬. হজ্বে যাওয়া নিয়ে কটুক্তি।
১৭. বিভিন্ন দিবস পালনের বৈধতা।
১৮. গান, বাদ্যযন্ত্র, চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয়, নৃত্য, নাচ, চিত্রাঙ্কন ও ভাষ্কর্য নির্মানের বৈধতা।
১৯. ডানপন্থীদের নিয়ে কটুক্তি।
২০. বামপন্থীদের সফলতার গান।
২১. নাস্তিকদের বাক স্বাধীনতার পক্ষাবলম্বন।

সংক্ষেপে দেখার পর এবার চলুন প্রত্যেকটি বিষয়ে প্রমাণসহ দেখা যাক।

এক. যুক্তিই সব কিছুর মানদণ্ড:

ইসলাম কী বলে?
সর্বপ্রথম যুক্তির চর্চা শুরু হয় শয়তানের মাধ্যমে। আল্লাহ পাক যখন শয়তানকে আদম আ. কে সিজদা দিতে নির্দেশ করে ছিলেন, ঠিক তখন ইবলিস যুক্তি পেশ করে সিজদা থেকে বিরত ছিলো। আল্লাহ পাক তখন তাকে প্রশ্ন করলেন,

قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلاَّ تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَاْ خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ

অর্থ: আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।
সূরা আরাফ, আয়াত নং- ১২

শয়তানের দাম্ভিকতা সূলভ যুক্তি শুনে মহান রব বলেন,
قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ

অর্থ: আল্লাহ বললেনঃ বের হয়ে যা, এখান থেকে। কারণ, তুই অভিশপ্ত। তোর প্রতি আমার এ অভিশাপ বিচার দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
সূরা সোয়াদ, আয়াত নং- ৭৭-৭৮

সুতরাং বুঝা গেলো, যুক্তি সবসময় সঠিক রাস্তার প্রদর্শক হতে পারে না। যদি হতো, তাহলে ইবলিস আল্লাহর কাছ থেকে বিতাড়িত হতো না। মনে রাখতে হবে ইসলামের মূল হলো, ওহী। যেখানে যুক্তি তালাশের কোনো সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে সবচে চমৎকার করে হযরত আলী রা. বলেছেন,

لَوْ كَانَ الدِّيْنُ بِالرَّاْىِ لَكَانَ اَسْفَلَ الْخُفِّ اَوْلى بِالْمَسْحِ مِنْ اَعْلَاهُ وَقَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَمْسَحُ عَلى ظَاهِرِ خُفَّيْهِ

অর্থাৎ দ্বীন যদি (মানুষের জন্য) যুক্তি অনুসারেই হতো, তাহলে মোজার উপরের চেয়ে নীচের দিকে মাসাহ করাই উত্তম হত। অথচ আমি রসূলুল্লাহকে সা. দেখেছি যে, তিনি তাঁর মোজার উপরের দিক মাসাহ করেছেন।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ১৬২

সুতরাং বুঝা গেলো , ইসলাম যুক্তির আলোকে চলে না। ইসলাম চলে ওহীর আলোকে। তবে যুক্তি সহায়ক হিসাবে চলতে পারে, যে যুক্তি ইসলাম সম্মত সেটা মানতে আমাদের অসুবিধা নেই, কিন্তু যে যুক্তি ইসলামসম্মত নয়, সেটা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকদের মূল দর্শন হলো (logic) বা যুক্তি। অর্থাৎ সব কিছু যুক্তির আলোকেই মাপতে হবে। যেটা যুক্তির সাথে মেলে না, নাস্তিকরা সেটা মানে না। ফলে এই যুক্তি চর্চায় তারা বেঈমান ও ইসলাম বিদ্বেষী হচ্ছে। এটা হেযবুত তওহীদও জানে,

‘অনেক যুক্তিশীল মানুষ ধর্মের নামে চলা এই কুপমন্ডুকতাকে মেনে নিতে না পেরে পুরোপুরি ধর্মবিদ্বেষী হয়েছেন’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৯

সুতরাং বুঝা গেলো, যুক্তিচর্চা ইসলাম বিদ্বেষী বানায়। দুঃখজনক হলেও সত্য সে পথেই হেটেছে হেযবুত তওহীদ।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
যুক্তিচর্চায় হেযবুত তওহীদের দর্শনও ঠিক নাস্তিকদের মতই। তাদের বক্তব্য হলো, ঈমান ও ইসলাম মানতে হবে যুক্তির আলোকে। তারা লিখেছে,

‘আমরা মনে করি, আল্লাহ যদি চাইতেন সবাই আল্লাহর উপর ঈমান রাখবে সেটা আল্লাহ এক মুহূর্তেই করতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ চান মানুষ তার যুক্তি-বিচার দিয়ে আল্লাহকে জেনে নিক’।
সূত্র: চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াইয়ের অপরিহার্যতা, পৃ. ১৩

‘বাস্তবে ইসলাম কোন অন্ধভাবে বিশ্বাসের যোগ্য বিষয় নয়। প্রকৃত ইসলাম যুক্তির উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। আর তাই যুক্তি দিয়ে ইসলামকে নিরীক্ষণ করতে হবে’।
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ৩৬

বুঝা গেলো, যুক্তির জগতে হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’। কারণ উভয়ের টার্গেট জাতিকে ইসলাম বিদ্বেষী বানানো।

দুই. প্রকৃতির প্রতি বিশ্বাস করা।

ইসলাম কী বলে?
পৃথিবীর যা কিছু হয়, সবই আল্লাহ তা’আলা থেকেই হয়। সৃষ্টির কোনো নিজস্ব ক্ষমতা নেই। সকল কিছু একমাত্র ক্ষমাশীল মহান আল্লাহ। আল্লাহ পাক বলেন,

یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَی الۡاَرۡضِ ثُمَّ یَعۡرُجُ اِلَیۡهِ

অর্থ: তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন।
সূরা সাজদাহ, আয়াত নং- ৫

সুতরাং বুঝা গেলো, আসমান যমীনের সব কিছু পরিচালিত হয় আল্লাহ পাকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। কিন্তু নাস্তিকরা বলে ভিন্ন কথা।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকরা বলে স্রষ্টা বলে কিছু নেই, বরং প্রাকৃতিকভাবে সব কিছু হয়, অর্থাৎ প্রকৃতিই সব করছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ প্রকৃতির ব্যাপারে ঠিক নাস্তিকদের মত করেই বলেছে,

‘প্রকৃতির নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৩৮/৩৯

‘প্রকৃতিই তাকে রুহ্ম পরিবেশে কাজ করে উপার্জন করার সামর্থ্য বেশি দান করেছে’।
সূত্র: গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬১

বুঝা গেলো, প্রকৃতির বিশ্বাসে ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

তিন. মানবধর্ম বড় ধর্ম।

ইসলাম কী বলে?
হযরত মুহাম্মাদ সা. আখেরী নবী, তাঁর আনীত ধর্ম ইসলামও শেষ ধর্ম। সে হিসাবে বর্তমান মানবজাতির জন্য একমাত্র ধর্ম হলো, ‘ইসলাম। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

অর্থ: যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ৮৫

সুতরাং বুঝা গেলো, বর্তমানে পালনীয় ও মনোনীত ধর্ম হলো ‘ইসলাম’। হিন্তু নাস্তিকরা বানিয়েছে আরেক ধর্ম।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকরা যদিও ধর্ম বলে কিছু বিশ্বাস করে না। তবে তারা বলে, Humanism is a big religion অর্থাৎ ‘মানবধর্ম’ বড়ধর্ম। এ কথা হেযবুত তওহীদও স্বীকার করে থাকে। হেযবুত তওহীদ লিখেছে,

‘যারা প্যাকটিক্যাল নাস্তিক তাদের অভিমত হলো আল্লাহ থাকা বা না থাকাতে মানুষের কিছু নেই। আল্লাহ ছাড়াও মানুষ চলতে সক্ষম, সবচেয়ে বড় ধর্ম মানব ধর্ম। যার সঙ্গে ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক না থাকলেও চলবে’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ কবিতা ইসলাম পৃষ্ঠা-১৭৭

তারা আরও লিখেছে,

‘আমরা তাদেরকে (নাস্তিকদের) ধর্মহীন মনে করি না। কারণ মানুষের পরম ধর্ম ‘মানবতা’ যা তাদের মধ্যে পুরোমাত্রায়ই আছে”।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদও বিশ্বাস করে-
১. নাস্তিকদের ধর্মের নাম মানবতা।
২. মানবধর্মের সাথে আল্লাহর বিশ্বাস থাকা জরুরি নয়।

আর এ কারণেই নাস্তিকদের মূল থিম হলো, মানবসেবায় সবাইকে নিয়োজিত করা। নামাজ,রোজা,হজ্ব ইত্যাদীকে তারা কোনো ইবাদত মনে করে না।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ ঠিক এ কথাগুলো হুবহু দাবি করে যাচ্ছে। তারা লিখেছে,

‘মানুষের ধর্ম কি? মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের দুঃখ কষ্ট হৃদয়ে অনুভব করে এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় সে-ই ধার্মিক। অথচ প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সুরা কালাম, শাস্ত্র মুখস্থ বলতে পারে, নামাজ-রোযা,পূজা, প্রার্থনা করে সে-ই ধার্মিক’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪৫

‘এখন মানুষকে বোঝাতে হবে- মানবতার কল্যাণে কাজ করাই তোমার প্রকৃত এবাদত, এই এবাদতই আল্লাহর কাম্য, এটা করলেই জান্নাত সুনিশ্চিত’।
সূত্র: জঙ্গীবাদ সংকট, পৃ. ৭৬ ধর্মবিস্বাস, পৃ. ১২

‘নামাজ রোযা, হজ্ব, পূজা, প্রার্থনা, তীর্থযাত্রা মানুষের মূল এবাদত নয়। মানবজাতি যেন সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারে এ লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম, প্রকৃত এবাদত।
সূত্র: জঙ্গিবাদ সংকট, পৃ. ৫৬

তারা আরও লিখেছে,

‘আমরা বলি না যে, আপনারা আল্লাহ বিশ্বাসী হয়ে যান, মো’মেন হয়ে যান, পরকালে বিশ্বাসী হয়ে যান, আল্লাহর প্রতি কে ঈমান আনবে না আনবে সেটা তারা আল্লাহ সঙ্গে বুঝবে। সুতরাং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়,আমাদের কাজ আল্লাহর শেষ রসুলের আনীত আকাশের মত উদার, সমুদ্রের মতো বিশাল, দুর্দান্ত গতিশীল ইসলামকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করে মানবজাতিকে শান্তিময়, নিরাপদ, ন্যায়, ও সুবিচারে পূর্ণ একটি জীবন উপহার দেওয়া’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৫১

বুঝা গেলো, নাস্তিকদের ধর্ম ও বিশ্বাস অর্থাৎ ‘মানবতা’ আর হেযবুত তওহীদের ধর্ম ও বিশ্বাস মানবতা এক ও অভিন্ন। এজন্য তারা নাস্তিকদেরকেও তাদের দলে আহ্বান করে থাকে। তারা লিখেছে,

‘ডান-বাম যা-ই হোন না কেন, মানুষের অশ্রুতে যার হৃদয় সিক্ত হয়, ঘুঁনে ধরা সমাজটিকে যারা পুনঃ নির্মাণ করতে চান, সর্বপ্রকার অবিচার অত্যাচার ও শোষণের প্রতিবাদে যার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ওঠে, সেই মানবধর্মের অনুসারীদের প্রতি আমাদের আহ্বান- আসুন পাওয়া গেছে।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃষ্ঠা-১২

সুতরাং মানবতাকে ধর্ম হিসাবে নাস্তিকরা যেমন কবুল করেছে, ঠিক তেমনিভাবে হেযবুত তওহীদও মানবতাকে ধর্ম হিসাবে মেনে নিয়েছে। সুতরাং ধর্মের ব্যাপারে হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

চার. ধর্মহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মিশন বাস্তবায়ন:

ইসলাম কী বলে?
কোনো যুগেই আল্লাহ পাক মানবজাতিকে ধর্মহীন রাখেননি, সকল যুগে সকল জাতিকে সুপথে চালানোর জন্য মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসুলকে দিয়ে ধর্ম পাঠিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় শেষ ধর্ম হিসাবে ইসলাম ধর্মকেই আল্লাহ পাক মনোনীত করেছেন। মহান রব বলেন,

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ

অর্থ: নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ১৯

সুতরাং বুঝা গেলো, বর্তমানে একমাত্র ইসলাম ধর্মই আল্লাহ’র রাস্তা, ধর্মহীনতা আল্লাহর রাস্তা নয়।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকদের মূল চেতনা হলো, ধর্মহীনতা বা ধর্মহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। যা হেযবুত তওহীদও জানে। তারা লিখেছে,

‘মুক্তমনারা মানব জীবন থেকে ধর্মকে ঝেড়ে ফেলতে চান।
সূত্র: জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস, পৃ. ৭০

সুতরাং বুঝা গেলো, নাস্তিকরা ধর্মহীনতা চায়। ধর্মকে তুলে দিয়ে জাতিকে পশু বানাতে চায়।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
ধর্মহীন সমাজ বিনির্মানে নাস্তিকরা প্রচলিত ধর্মগুলোর ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগ করে থাকে। ঠিক একই অভিযোগগুলো হেযবুত তওহীদও করেছে। চলুন নিন্মে কয়েকটা উদহরণ হিসাবে পেশ করি।

এক.
সকল সমস্যার মূল হলো ধর্ম:

নাস্তিকরা পৃথিবীর সকল সমস্যার মূল হিসাবে মনে করে ধর্মকে। ঠিক একই দাবি করেছে হেযবুত তওহীদ। তারা লিখেছে,

‘চলমান দুনিয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে বড় বড় সমস্যাগুলো বিরাজ করছে সেগুলোর উৎপত্তি ধর্মকে কেন্দ্র করেই। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের প্রসঙ্গে এখানে আসছি না, তবে সেখানেও যাবতীয় সংকটের প্রধান কারণ যে ধর্ম একটু ভেবে দেখলে সকলে তা বুঝতে সক্ষম হবেন’।
সূত্র: জঙ্গিবাদ সংকট, পৃ. ৬৬

দুই.
ধর্মগুলো অশান্তির কারণ:

নাস্তিকরা পৃথিবীময় অশান্তির মূল কারণ হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয় ধর্মকে, ঠিকই একই অভিযোগ হেযবুত তওহীদও করে লিখেছে,

‘প্রচলিত ধর্ম গুলোই মানুষের জীবনে অনেকাংশে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে’।
সূত্র: ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ৫ জঙ্গিবাদ সংকট, পৃ. ৬৭

তিন.
ধর্মগুলোর কারণে রক্তপাত হচ্ছে:

নাস্তিকরা ধর্মের উপর অভিযোগ করে বলে থাকে, ধর্মের কারণে মারামারি ও রক্তপাত হয়। ঠিক একই অভিযোগ করে থাকে হেযবুত তওহীদও। তারা লিখেছে,

‘ধর্মের নামে যে পরিমাণ রক্তপাত হয়েছে তেমনটা আর কোনো কারণে হয়নি’।
সূত্র: ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ৭২

চার.
ধর্ম থেকে জঙ্গিবাদ তৈরি হয়:

নাস্তিকদের অভিযোগ হলো, ধর্মের কারণে জঙ্গিবাদ তৈরি হয়, হেযবুত তওহীদ আরও জঘন্য ভাষায় বলেছে,

‘ধর্ম থেকে জন্ম নিচ্ছে জঙ্গিবাদ ফতোয়াবাজি সাম্প্রদায়িকতা হুজুগে উম্মাদনা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষতিকারক রোগজীবাণু, প্যারাসাইট’।
সূত্র: ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩৯

পাঁচ.
ধর্মগুলো বিষাক্ত:

নাস্তিকরা ধর্মকে বিষবৃক্ষ বলে দাবি করে থাকে। ঠিক একই অভিযোগ তুলেছে হেযবুত তওহীদও। তারা লিখেছে,

‘ধর্ম থেকে ধর্ম ব্যবসার মাধ্যমে এর প্রাণকে নিংড়িয়ে নিয়ে বের করে নেওয়া হয়েছে, ফলে বর্তমানে প্রতিটি ধর্মই বিষে পরিণত হয়েছে। খাদ্য হিসেবে মানুষকে সেই বিষাক্ত বর্জ্যই গেলানো হচ্ছে।
সূত্র: ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩৯

ছয়.
ধর্মগুলো আফিম:

নাস্তিকরা ধর্মকে আফিম বলে কটাক্ষ করে থাকে। ঠিক সে কথাটিই সত্যায়ণ করে থাকে হেযবুত তওহীদ। তারা লিখেছে,

‘কাল মার্কস পৃথিবীর দিকে চেয়ে যে ধর্ম’গুলো তখন দেখলেন সে গুলোকে তিনি আফিম আখ্যা দিয়েছিলেন সে জন্য তাকে কিছুমাত্র দোষ দেই না। তিনি একেবারে সত্য কথা বলেছিলেন’।
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ১৭

‘কাল মার্চ সকল ধর্মকে আফিম বলেছেন। সেজন্য তাকে কিছুমাত্র দোষ দেই না, তিনি একেবারে সত্য কথা বলেছিলেন। কারন পৃথিবীতে কোন ধর্ম অবিকৃত ছিল না’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৬০

সাত. সমস্যার সমাধান কোন ধর্মে নেই:
নাস্তিকরা বলে কোনো ধর্ম দিয়ে দেশ চালানো সম্ভব নয়। ঠিক একই কথা হেযবুত তওহীদও লিখেছে,

‘মানুষের আত্মিক এবং মানসিক পরিশুদ্ধির এই প্রশিক্ষণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা গুলির মধ্যে নেই, ধর্ম গুলির মধ্যে অনুপস্থিত’।
সূত্র: ধর্ম বিশ্বাস, পৃ. ১৫

সুতরাং বুঝা গেলো, মুখে মুখে ধর্মের কথা বললেও মূলত হেযবুত তওহীদ ধর্মহীন সমাজ গঠনে নাস্তিকদের পূর্ণ অনুসারী। হেযবুত তওহীদও নাস্তিকদের মত জাতিকে নাস্তিক্যবাদের মানবধর্মের দিকে আকৃষ্ট করে যাচ্ছে। সে হিসাবে ধর্মহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

পাঁচ. ইসলামের দিকে আহ্বান না করা।

ইসলাম কী বলে?
ইসলাম ধর্ম আল্লাহ পাকের মনোনীত ধর্ম। এই ইসলাম ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ বা মত মুক্তির পথ নয়। কারণ ইসলামই আল্লাহ তা’আলার কাছে মনোনীত ধর্ম। মহান আল্লাহ বলেন,

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا

অর্থ: আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
সূরা মায়িদা, আয়াত নং- ৩

আর এ কারণেই নবীজি সা. আজিবন দ্বীন ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করে গেছেন। সুতরাং নবীজি সা. ও তাঁর সাহাবাদের মূল মিশন ছিলো ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করা। এটাই হওয়া দরকার সকল মুসলমানের মিশন। কিন্তু নাস্তিকদের মিশন ভিন্ন।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকরা কখনও ইসলাম ধর্ম বা কোনো ধর্মের দিকে মানুষকে আহ্বান করে না, বরং তাদের মৌখিক বক্তব্য হলো, সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মান ও মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই করা। এ ক্ষেত্রে নাস্তিকরা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের দিকে আহ্বান করা প্রয়োজন মনে করে না।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
ঠিক একই বক্তব্য হলো, হেযবুত তওহীদের। তাদের নিন্মোক্ত তিনটা বক্তব্য তুলে ধরলাম-

‘মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম পরিবর্তন করা এসলামের উদ্দেশ্য নয়, এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনে ন্যায়-সুবিচার শান্তি প্রতিষ্ঠা করা’।
আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৮

‘আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। আমাদের কথা হচ্ছে যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৫

‘মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না’।
সূত্র: সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১০

সুতরাং বুঝা গেলো, নাস্তিকরা যেমন ইসলাম ধর্মের দিকে মানুষকে আহ্বান করে না, ঠিক তেমনিভাবে হেযবুত তওহীদও ইসলামের দিকে মানুষকে ডাকে না। এদিক দিয়ে ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

ছয়. ইসলাম নিয়ে মারাত্মক সমালোচনা।

ইসলাম কী বলে?
‘ইসলাম ধর্ম’ আল্লাহ তা’আলার মনোনীত ধর্ম। যা গ্রহণ করা মানবজাতির সবার জন্য জরুরি। এই ইসলামের সমালোচনা একমাত্র তারাই করতে পারে, যারা বিধর্মীদের মদদপুষ্ট।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে হরদম ভরপুর সমালোচনা করে থাকে এবং সমালোচনা করতে গিয়ে তারা ইসলামের উপর বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরে। ঠিক একই অভিযোগগুলো হেযবুত তওহীদও তুলে ধরেছে। নিন্মে কয়েকটা পয়েন্ট তুলে ধরা হলো-

এক.
ইসলাম প্রাচীন ধারণা:

নাস্তিকরা বলে থাকে, ইসলাম প্রাচীন যুগের মতবাদ। জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে এ ইসলাম চলবে না। ঠিক একই অভিযোগ তুলেছে হেযবুত তওহীদ। তারা লিখেছে,

‘যে ইসলাম আজ নানা প্রকার রূপ নিয়ে আমাদের ১৬০ কোটি মুসলমানের দ্বারা চর্চিত হচ্ছে তা কোনোভাবেই বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার যুগের উপযোগী নয়’।
সূত্র: ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১১৫

দুই.
ইসলাম দিয়ে শান্তি আসবে না:

নাস্তিকদের বক্তব্য হলো, ইসলাম ধর্ম দিয়ে শান্তি কামনা করা বোকামী। ঠিক একইভাবে হেযবুত তওহীদ লিখেছে,

‘তাদের কাছে যে এসলাম আছে সেটা দিয়ে অমন শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা করার চিন্তাও হাস্যকর’।
আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৮

তারা আরও লিখেছে,

‘তাদের বৃহত্তর ভাগ বিশ্বাস করেন যে জন্মসূত্রে মুসলিম হওয়ার বদৌলতে লক্ষ কোটি বছর যদি জাহান্নামের আগুনে জ্বলতেও হয়, তবুও এক সময় তারা জান্নাতে যাবেনই। সুতরাং চিন্তিত হওয়ার মতো তেমন কিছু ঘটেনি। এই দুনিয়ায় মার খাচ্ছি, ঐ দুনিয়ায় জান্নাতের ফল খেয়ে সব ব্যাথা, বেদনা লাঞ্ছনা অপমান ভুলে যাব। তারা জান্নাতে তাদের স্তরে উন্নীত করার জন্য সাধ্যমত আমল করেন যেমন, নামাজ রোজা করেন, ওয়াজের সময় ওয়াজ শোনেন, হজ্বে এস্তেমায় জান। দাড়ি রেখে নিজেকে উম্মতে মোহাম্মদ বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। তাদের এই সত্য বুঝার মত সেই চিন্তা শক্তি নেই যে, যে ধর্মচর্চা তাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা অপমান থেকে রক্ষা করতে পারছে না, সেই ধর্ম পালন করে পরকালীন মুক্তির আশা পোষণ করা সুদূর পরাহত’।
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ৫১

তিন.
ইসলাম মানুষকে প্রতারিত করে:

নাস্তিকদের চেতনা হলো, ইসলাম ধর্ম মানুষকে সঠিক পথ দেখায় না, বরং সঠিক মনে করে যারা এ ইসলামের ফাঁদে পড়ে, তারা ধোকা খায়। ঠিক একই বক্তব্য হেযবুত তওহীদও দিয়ে লিখেছে,

‘মানুষ এখন জীবন রক্ষার আশায় ধর্মের দিকেই যেতে চাইবে,কেননা তাদের বস্তুত শান্তি দরকার।কিন্তু মরিচিকা যেমন তৃষিতকে তৃপ্ত করতে পারে না,আরো ক্লিষ্ট করে তেমনি ১৩০০ বছর ধরে বহুভাবে বিকৃত হওয়া ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মগুলোও মানুষকে কেবল সুখস্বপ্নে বিভোর করে প্রতারিত করে এবং করবে’।
সূত্র: চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াই, পৃ. ৫

চার.
ইসলাম একটি নারকীয় সিস্টেম।

নাস্তিকরা বলে, ইসলাম কোনো শান্তির পথ নয়, বরং এটা নারকীয় সিস্টেম। ঠিক একই দাবি তুলেছে হেযবুত তওহীদ। তারা লিখেছে,

‘আসুন, আমরা সবাই মিলে এই নারকীয় সিস্টেমটাকে পাল্টাই। হেযবুত তওহীদ এর প্রতিষ্ঠাতা এমাম এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আল্লাহ-রসুলের হারিয়ে যাওয়া যে প্রকৃত, সত্য জীবনব্যবস্থা মানবজাতির সামনে তুলে ধোরেছেন তা গ্রহণ কোরি।’
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই-২০

সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলামের সমালোচনায় হেযবুত তওহীদ নাস্তিকদের সাথে সমানতালে এগিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

সাত. মুসলমানদের জঘন্য কটুক্তি।

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র মুসলামনদের প্রসংশা করেছেন খোদ আল্লাহ তা’আলা। মহান রব বলেন,

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ

অর্থ: তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ১১০

উপরন্তু মুসলমানদের সমালোচকদের ব্যাপারে হাদিস শরীফে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ

অর্থাৎ মুসলিমকে গালি দেয়া বা সমালোচনা করা ফাসিকী এবং তাকে হত্যা করা কুফুরী’।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৬০৪৪

সুতরাং প্রমাণ হলো, মুসলমানদের সম্মান দিয়েছেন খোদ আল্লাহ পাক। মুসলমানদের সমালোচনা করা বিরাট বড় অন্যায়।

নাস্তিকরা কী বলে?
কিন্তু নাস্তিকদের দিন-রাতের আমলই হলো, মুসলমানদের গালি দেওয়া ও সমালোচনা করা। এগুলো না করলে যেন তাদের দায়িত্বই পূর্ণ হয় না। অনলাইনের কল্যানে নাস্তিকদের অসভ্যতা এখন জাতি দেখছে প্রতিনিয়ত।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
দুঃখজনক হলেও সত্য, হেযবুত তওহীদ মুসলমানদের সমালোচনায় নাস্তিকদের থেকেও কয়েকগুন এগিয়ে। চলুন তাদের মুসলিম সমালোচনার কয়েকটা দিক তুলে ধরি-

এক.
মুসলমানরা কাফের-মুশরিক:

‘মোমেন মোসলেম দাবিদার ১৫০ কোটি এ জনসংখ্যা যে প্রকৃত পক্ষে মো’মেন,আল্লাহ রসুলের দৃঢ় বিশ্বাস ও বহু আমল সত্ত্বেও তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মোশরেক এবং কাফের’।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১০৮

‘আমি যে পৃথিবীর দেড়শো কোটি মানুষকে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের বলছি আমার এ কথার গুরুত্ব ও দায়ীত্ব সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ সচেতন’।
সূত্র: এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ১১

দুই. মুসলিমরা জাহান্নামী:

‘জীবনের সর্বাঙ্গনে আল্লাহর হুকুমকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষের হুকুম মেনে নিয়ে মানব জাতি আজ বক্রপথে চলছে, তাদের নিশ্চিত গন্তব্য জাহান্নাম’।
সূত্র: বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৩৬

তিন. মুসলিমরা গলিত লাশ ও দূর্গন্ধময়:

‘অর্ধেক দুনিয়া জুড়ে ১৫০ কোটিরও বেশি উম্মতে মুহাম্মাদীর দাবিদার এ জাতি বিরাট এক গলিত লাশের ন্যায় পড়ে আছে, কোন কাজেই আসছে না, শুধু গন্ধ ছড়াচ্ছে’।
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৫৯/৬০

চার. বিজ্ঞানের যুগে মুসলিমরা অজ্ঞ জাতি:

‘বিজ্ঞান চিকিৎসা রসায়ন অংক ইত্যাদী সর্বরকম জ্ঞান থেকে এ জাতি বঞ্চিত হয়ে এক অশিক্ষিত অন্ধ জাতিতে পরিণত হয়েছে’।
সূত্র: শ্রেনীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৭৬

পাঁচ. মুসলিমরা দাজ্জালের অনুসারী:

‘দাজ্জালের দাবি সমস্ত মানবজাতি মেনে নিয়েছে, এমনকি মোসলেম হবার দাবীদার জাতীটিও মেনে নিয়ে দাজ্জালের পায়ে সেজদাবনত হয়ে দাজ্জালের জাহান্নামে পড়ে আছে’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, (ছোট) পৃ. ৬/১০

ছয়. মুসলিমরা মালাউন:

‘আল্লাহ দৃষ্টিতে তারা (মুসলিমরা) কাফের মুশরিক এবং অভিশপ্ত মালাউন’।
সূত্র: শ্রেনীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৪৮ ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ১৪

সাত. মুসলিমরা ইয়াহুদীদের চেয়েও অভিশপ্ত:

‘এই জাতি এখন আল্লাহর লা’নতের ও গযবের বস্তু,এর অবস্থা এখন অতীতের অভিশপ্ত ইহুদী জাতির চেয়েও নিকৃষ্ট’।
সূত্র: এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ১৩ এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৮৩ ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৬০

আট. মুসলিমরা সর্বনিকৃষ্ট জাতি:

‘দুনিয়াময় মুসলিম নামক ১৫০ কোটি জনসংখ্যা যাদেরকে আল্লাহ কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলেছেন, যাদেরকে আল্লাহ মনোনীত করেছেন দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আজ তারা নিজেরাই অন্যায় অবিচার যুদ্ধ হানাহানি রক্তপাত দারিদ্র্য অশিক্ষা অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়েছে সর্বদিক থেকে সর্বনিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়েছে’।
সূত্র: এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ:২৫/৭৪

নয়. মুসলিমরা কুকুরের চেয়ে নিকৃষ্ট:

‘বর্তমানে মোমেন মুসলিম হবার দাবিদার কোন দেশের একক ওপরে লিপ্ত তা নিঃসন্দেহে চৌদ্দশ বছর আগের আরব দেশের উপর কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্টতর’।
সূত্র: এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ১১

সুতরাং প্রমাণ হলো, মুসলিমদের গালি দেওয়া ও সমালোচনার ক্ষেত্রে হেযবুত তওহীদ নাস্তিকদেরও হার মানিয়েছে। কারণ হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

আট. আলেমদের নিয়ে নিকৃষ্ট কটুক্তি।

ইসলাম কী বলে?
সর্বশ্রেষ্ট জীব মানুষ, মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট মুমিন, মুমিনদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট হলেন আলেম-উলামা। পবিত্র কুরআন তাই বলে,

یَرۡفَعِ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ ۙ وَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ دَرَجٰتٍ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদা দেবেন, আর যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উচ্চ করবেন।
সূরা মুজাদালাহ, আয়াত নং- ১১

বোঝা গেলো, আলেম-উলামাদের সম্মান দান করেছেন মহান আল্লাহ। তাঁদের সমালোচনা করা একমাত্র বেঈমানদের কাজ। মূলক শয়তান মানুষকে আলেমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, তার কারণ হলো, যখন কাউকে আলেমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়, তখন তাকে ভুল বুঝিয়ে বেঈমান বানানো সম্ভব।

নাস্তিকরা কী বলে?

নাস্তিকরা আলেমদের নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়। এমনকি তাদের বিপদে ফেলতে গত কিছুদিন আগে ১১৬ জন আলেমকে ধর্মব্যবসায়ী বলে তারা লিষ্টও করেছে। আলেমদের প্রতি নাস্তিকদের অভিযোগগুলো হলো-

১. আলেমরা ধর্মব্যবসায়ী।
২. আলেমরা উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসী।
৩. আলেমরা উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাস জন্ম দেয়।
৪. আলেমদের মাধ্যমে জঙ্গী হচ্ছে।
৫. আলেমরা প্রতারক।
৬. আলেমরা কুয়োর ব্যাঙ।
৭. আলেমরা কুপমন্ডুক।
৮. আলেমদের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা নেই।
৯. আলেমদের রাষ্ট্রচালানোর যোগ্যতা নেই।
১০. আলেমদের অনুসরণ করা যাবে না।
১১. আলেমদের হাতে ধর্ম রাখা যাবে না।
১২ আলেমরা সর্বনিকৃষ্ট।

এই ছাড়াও নাস্তিকরা অনেক অভিযোগ করে আলেমদের সমালোচিত করার চেষ্টা করে থাকে। তবে উক্ত বিষয়গুলো খুব কমন অভিযোগ তাদের।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ ঠিক হুবহু সে শব্দগুলো আলেমদের শানে ব্যবহার করে থাকে। চলুন প্রমাণ দেখা যাক-

এক. আলেমরা ধর্মব্যবসায়ী:
নাস্তিকদের মত ঠিক একই পথের পথিক হেযবুত তওহীদ। তারাও আলেমদের ধর্মব্যবসায়ী প্রমাণ করতে গিয়ে ‘ধর্মব্যবসার ফাঁদে’ নামক একটা বই লিখেছে। তারা আরও বলেছে,

‘এই বিকৃত বিপরীতমুখী এসলামটিকেই ধর্মব্যবসায়ী আলেম,মোল্লা,পীর,মাশায়েখ শ্রেণী বিক্রি কোরে খাচ্ছে। এটা আল্লাহর এসলাম নয় তাই এর অনুসারীরাও মোসলেম নয়’।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৭৫

দুই. আলেমরা উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসী:
হেযবুত তওহীদও নাস্তিকদের মত আলেমদের সমালোচনা করে উগ্রপন্থী ট্যাগ লাগিয়ে থাকে। তারা লিখেছে,

‘মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে, মিথ্যা গুজব রটিয়ে, কারো বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে, ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায়, ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এই ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠী’।
সূত্র: প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৮৬

‘ধর্মব্যবসায়ী আলেমরা ইসলামের এমন অপব্যবহার করেছে, এমন চাঁদাবাজি, এমন সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে যে  সাধারণ মানুষও এখন ইসলামের কথা শুনে ভয় পায়। এইসব মোল্লাদের কারণে আল্লাহ রাসুলের নাম কালিমালিপ্ত হয়েছে। তাদের জন্য ইসলামের প্রতি মানুষ বিতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। মুক্তির শেষ পথ যে ইসলাম তার দুয়ারও এই ব্যবসায়ীরা প্রায় বন্ধ করে ফেলেছে। এখনও যদি তাদেরকে নিবৃত্ত করা না যায় তবে তার শেষ রক্ষা করা যাবে না’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৩৪

তিন. আলেমরা উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাস জন্ম দেয়:
হেযবুত তওহীদও নাস্তিকদের মত দাবি করে থাকে, আলেমদের উস্কানীতে মানুষ উগ্রপন্থী হচ্ছে। তারা লিখেছে,

‘তথা কথিত আলেমদের বয়ানে শুধু মানুষকে ক্ষিপ্ত করে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো ব্যতীত ইতিবাচক কোনো কিছুই তাদের দ্বারা হয় না। এরা শুধু এগুলো কাড়িকাড়ি টাকা উপার্জন করে। কিন্তু তাদের ওয়াজে কোন সুদের মহাজন সুদ ছেড়ে দেয় না, কোন মাদক ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে দেয় না। ব্যভিচারী ভালো হয়ে যায় না। প্রকৃত ইসলাম বর্বর আরবদের মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটিয়ে ছিল এদের দ্বারা সেটা হয় না শুধু হুজুগ সৃষ্টি, ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের ধর্মানুভূতিতে উস্কে দিয়ে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি ছাড়া কিছুই হয় না’।
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ৪৪

‘ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারনায় পড়ে বিকৃত এসলাম পালনের জন্য পরকালীন তহবিলও শূন্য। দুনিয়ার জিবনে অন্যায়,অবিচার,অশান্তি আর পরকালীন জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে এই শ্রেণীটির অবধারিত গন্তব্য দাঁড়িয়েছে পাইকারী হারে জাহান্নাম’।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১২৫

‘বর্তমানে পৃথিবীতে বিরাজিত সবগুলো ধর্মই যখন বিকৃত হয়ে ধর্মব্যবসায়ীদের পণ্যে পরিণত হয়েছে, সেগুলো সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থীদের দ্বারাই এবং তথাকথিত ডানপন্থীদের দ্বারা ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে মানুষের সমাজকে পশুর সমাজে পরিণত করছে’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৯

‘ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণীর ফতোয়াবাজি, অপরাজনীতি আর পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আমরা হাজারো ভাগে বিভক্ত হয়ে হানাহানি-মারামারি দলাদলি, হত্যা, রক্তপাতে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছি’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮১

চার. আলেমদের মাধ্যমে জঙ্গী হচ্ছে:
নাস্তিকদের কমন একটা কথা হলো, আলেমদের কারণে উগ্রতা ও জঙ্গিবাদ জন্ম নেয়। ঠিক সে কথাটা হেযবুত তওহীদও বলে থাকে,

‘তারা (আলেমরা) ফতোয়াবাজি করে প্রগতি ও মুক্তচিন্তার সকল পথ রুদ্ধ করেছে’। শিল্প সংস্কৃতির চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের কথায় মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মঘাতী হচ্ছে, এখানে ওখানে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে, সন্ত্রাসী করছে। অপরদিকে পরাশক্তি এই জঙ্গিদেরকে নিজেদের সম্রাজ্যবাদ বিস্তারের গুটি হিসেবে ব্যবহার করছে’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃ. ৩

পাঁচ. আলেমরা প্রতারক:
নাস্তিকদের মত হেযবুত তওহীদও আলেমদের প্রতারক ও ধোকাবাজ বলে। তারা লিখেছে,

‘মানুষ ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারণার শিকার হয়ে দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই হারাচ্ছে’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪২

ছয়. আলেমরা কুয়োর ব্যাঙ:
আলেমদের নামে কুয়য়োর ব্যাঙ শব্দটার আবিস্কার হলো নাস্তিকরা। ঠিক সে শব্দটাই আলেমদের শানে ব্যবহার করে থাকে হেযবুত তওহীদ। তারা লিখেছে,

‘এই জাতির ধর্ম ব্যবসায়ী আলেম সমাজ আজ কুয়োর ব্যাঙ। দুনিয়ার খবর যারা রাখেন তাদের চোখের অবজ্ঞার পাত্র, হাসির খোরাক’।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩২

সাত. আলেমরা কুপমন্ডুক:
এই শব্দটাও নাস্তিকদের আবিস্কার। তারা আলেমদের নামে এই শব্দটা দিবানিশি জপতে থাকে। ঠিক তেমনিভাবে হেযবুত তওহীদও দাবি করেছে,

‘এই কূপমন্ডুক ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা হারানোর ভয়ে (হিজবুত তাওহীদকে) সমর্থন না জানিয়ে মিথ্যা প্রচার করে চলেছে’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৬৪

আট. আলেমদের নেতৃত্ব দেওয়া ও রাষ্ট্র চালানোর যোগ্যতা নেই:
নাস্তিকরা নিজেদের গুরুত্ব সরকারের কাছে টিকিয়ে রাখার জন্য দাবি করে থাকে, তারাই জ্ঞানী, আলেমদের নেতৃত্ব ও রাষ্ট্র চালানোর যোগ্যতা নেই। ঠিক নাস্তিকদের মত হেযবুত তওহীদও দাবি করেছে, আলেমদের সমাজের নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। তারা লিখেছে,

‘পরনির্ভরশীল মেরুদণ্ডহীন এসব ধর্মগুরুদের সমাজে নেতা হিসেবে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, শুধু তা-ই নয় তাদের এ জনসংখ্যার নেতৃত্ব দেওয়ার নূন্যতম যোগ্যতা নেই’।
সূত্র: এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৩৭

‘নানাবিধ কারণে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন তা এদের (আলেমদের) মধ্যে গড়ে ওঠেনি’।
সূত্র: জঙ্গীবাদ সঙ্কট, পৃ. ৬৬

নয়. আলেমরা ইহুদী পণ্ডিতদের মত অহংকারী:
জাতির শ্রেষ্ট সন্তান আলেমদের শানে হেযবুত তওহীদের আরেকটা সমালোচনা হলো,

‘ইহুদী ধর্মের রাব্বাইরা যেমন তাদের ধর্মীয় জ্ঞানের জন্য প্রচন্ড অহঙ্কারী,তেমনি বিকৃত এসলামের এ ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারাও তাই’।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৩৫

দশ. আলেমরা কাফের মুশরিক ও জাহান্নামী:
যেই আলেমরা মানুষকে কুফর-শিরক থেকে বাঁচাতে দিনরাত মেহনত করেন, সেই আলেম-উলামারা হেযবুত তওহীদের কাছে কাফের, মুশরিক ও জাহান্নামী। তারা লিখেছে,

‘গত তেরশ বছরে যে এসলামটি এ জাতি আঁকড়ে ধরে আছে, আমাদের এমাম সেটিকে বোলেছেন, “এ এসলাম এসলামই নয়”। শুধু তা-ই নয়, এ বিকৃত এসলামের অনুসারীদেরকে তিনি বোলেছেন কার্যতঃ কাফের মোশরেক যার মধ্যে এ দীর্ঘসময়ের সকল আলেম-ওলামা পীর,দরবেশ,মোফাসসের,মোহাদ্দেসরা এসে যায়’।
সূত্র: এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৪২ দাজ্জাল, পৃ. ৬৮

১১. আলেমদের অন্ধ অনুসরণ করার কথা কোথাও নেই:
আলেমদের অনুসরণ না করলে জাতি সত্যমিথ্যা যাচাই-বাছাই করতে পারবে না। এজন্য আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে জ্ঞানীদের অনুসরণ করতে বলেছেন,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ

অর্থ: আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।
সূরা নাহল, আয়াত নং- ৪৩

কিন্তু হেযবুত তওহীদ বলছে ভিন্ন কথা। তারা লিখেছে,

‘সমগ্র কোরর’আন খুঁজে একটি আয়াতও পাওয়া যাবে না যেখানে আল্লাহ কেবল একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষকে দীনের জ্ঞান অর্জন করতে বলেছেন, আর অন্যদেরকে চোখ কান বুঁজে সেই শ্রেণীর অনুসরণ করতে বলেছেন’।
সূত্র: তওহীদ জান্নাতের চাবি, পৃ. ২৫

তারা আরও লিখেছে,

বর্তমানে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ধর্মব্যবসায়ীদের আনুগত্য করে আল্লাহর হুকুমকে লঙ্ঘন করে চলেছে।
সূত্র: ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে পৃষ্ঠা-২৭

‘ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারনায় পড়ে বিকৃত এসলাম পালনের জন্য পরকালীন তহবিলও শূন্য।দুনিয়ার জিবনে অন্যায়,অবিচার,অশান্তি আর পরকালীন জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে এই শ্রেণীটির অবধারিত গন্তব্য দাঁড়িয়েছে পাইকারী হারে জাহান্নাম।’
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১২৫

অর্থাৎ আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আলেমদের থেকে জেনে নাও এবং সে অনুযায়ী আমল করো, আর হেযবুত তওহীদ বলছে, আলেমদের মানলে জাহান্নামে যেতে হবে। বলুন কে সঠিক?

বারো. আলেমদের হাতে ধর্ম রাখা যাবে না:
এটা নাস্তিকদের কমন ডায়ালগ। তারা ধর্মপ্রাণ মানুষকে আলেমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে বলে থাকে, ধর্মের ভার আলেমদের হাতে রাখা যাবে না। ঠিক সে কথাটাই হেযবুত তওহীদও বলেছে,

‘ধর্মের নিয়ন্ত্রণ আর ধর্মজীবী শ্রেণীটির হাতে রাখা যাবে না। রাখলে তা পুনঃ পুনঃ একই রকম দুঃখজনক পরিস্থিতির জন্ম দেবে’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৯২

‘মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে ধর্মব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের যতদিন ফেলে রাখা হবে, ততদিনে নতুন নতুন জঙ্গি দল, সুফিসাধক, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হবে আর সন্ত্রাস চলবে, প্রতারণা চলবে,যুদ্ধ চলছে’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ ও প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৬৭

তেরো. আলেমরা সর্বনিকৃষ্ট:
সমালোচনার চুড়ান্ত ধাপে উপনীত হেযবুত তওহীদ নাস্তিকদের মত আলেমদের নিকৃষ্ট জীব বলে অভিহিত করে লিখেছে,

‘এই আলেমগণ সর্ব নিকৃষ্ট জীব কারণ তারা ধর্মের ধ্বজাধারী হয়েও মানুষকে সত্য মিথ্যার জ্ঞান দিচ্ছে না’।
সূত্র: ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ৩৮

‘আখেরি জামানার এই আলেমদের সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল বলেছেন আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব। দীন বিক্রি ছাড়াও খ্রিস্টান যাজকদের মত চারিত্রিক অধঃপতনেও এই আলেম সম্প্রদায় কম যান না’।
সূত্র: এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৩৭

সুতরাং বুঝা গেলো, আলেম-উলামার সমালোচনায় হেযবুত তওহীদ ও নাস্তিক্যবাদ সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ কী? কারণ একটাই, ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

নয়. মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন:

ইসলাম কী বলে?
রাসুলুল্লাহ সা. নিজে আসহাবে সুফফার সাহাবাদেরকে দারুল আরকামে মাদরাসা গড়ে তোলেন। উপমহাদেশে হযরত কাসেম নানুতুবী রহি. স্বপ্নে রাসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক নির্দেশনা পেয়ে দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার মূল বিষয়বস্তু হলো, কুরআন-সুন্নাহর চর্চা করা। যাদের ব্যাপারে হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ

অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে ব্যক্তি কুরআন নিজে শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ১৪৫২

সুতরাং বুঝা গেলো, মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে শ্রেষ্ট জাতিতে পরিনত করে।

নাস্তিকরা কী বলে?
এই মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নাস্তিকরা এই বাংলাদেশেও কিছুদিন আগে সরকারের কাছে রিপোর্ট করেছে। এবং তারা অভিযোগ করে থাকে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা সমাজের কোনো উপকারে আসছে না।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
ঠিক নাস্তিকদের সূরে সূর মিলিয়ে মাদরাসার ব্যাপারে একই অভিযোগ তুলেছে হেযবুত তওহীদ। তারা লিখেছে,

এক. মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা শুধু ধর্মব্যবসায়ী বানায়:

‘এই দুই প্রকার মাদ্রাসার (কওমী ও আলীয়া) চিন্তা-চেতনা ও সিলেবাস-কারিকুলামে কিছুটা ব্যবধান থাকলেও দিনশেষে দু’টো ব্যবস্থাই এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিপুল পরিমাণ ধর্মব্যবসায়ী যোগ করা ছাড়া আর কোন অবদান রাখে না।
সূত্র: ধর্মব্যবসার ফাঁদে পৃ:৬৩

দুই. ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা মাদরাসায় নাই:
‘ধর্মের এই প্রকৃত শিক্ষা কোন স্কুলেও নাই, মাদ্রাসায়ও নাই, আছে একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছে’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৩

তিন. মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থার কারণে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে:

‘এই দুটির শিক্ষাব্যবস্থার আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ফলে সাধারণ ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ দিগ্বিদিক শূন্য এবং প্রায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত’।
সূত্র: ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ৬৫

চার. মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা পরিহার করতে হবে:

‘প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিহার করতে হবে’।
সূত্র: ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৬৭

সুতরাং বুঝা গেলো, মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়ে নাস্তিকদের অভিযোগ ও হেযবুত তওহীদের অভিযোগ একই, বরং হেযবুত তওহীদ আরও এক ধাপ এগিয়ে। কারণ হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

দশ. সহশিক্ষার পক্ষ অবলম্বন।

ইসলাম কী বলে?
নারী-পুরুষ একসাথে বসে পড়াশোনা করা নৈতিক পদস্খলন ও আদর্শ বিচ্যুতির অন্যতম কারণ। বর্তমানে ধর্ষণের আধিক্যতা মূল কারণ উদঘাটন করলেই এর রহস্য হিসাবে বেরিয়ে আসবে ‘সহশিক্ষা’। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ

অর্থাৎ মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। সে বাইরে বের হলে শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়।
সূত্র: জামে তিরমিযি, হাদিস নং- ১১৭৩

এজন্য মহিলাদের জন্য আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা উচিৎ। নবীজি সা. নিজেও মহিলাদেরকে নির্দিষ্ট স্থানে তা’লিম দিতেন। এ ব্যাপারে আবু সাঈদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

جَاءَتْ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ ذَهَبَ الرِّجَالُ بِحَدِيثِكَ فَاجْعَلْ لَنَا مِنْ نَفْسِكَ يَوْمًا نَأْتِيكَ فِيهِ تُعَلِّمُنَا مِمَّا عَلَّمَكَ اللهُ فَقَالَ اجْتَمِعْنَ فِي يَوْمِ كَذَا وَكَذَا فِي مَكَانِ كَذَا وَكَذَا فَاجْتَمَعْنَ فَأَتَاهُنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَعَلَّمَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَهُ اللهُ

অর্থাৎ এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাদীস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তাত্থেকে আপনি আমাদের শিখাবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে। সে মোতাবেক তারা একত্রিত হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন।
সূত্র: বুখারী হাদিস- ৭৩১০ মুসলিম-২৬৩৩

সুতরাং বুঝা গেলো, নবীজির সা. যামানায়ও মহিলাদের শিক্ষার জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিলো।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকদের অন্যতম মিশন হলো, (Co-education System) বা ছেলে-মেয়ে উভয়ই শিক্ষকের সামনে বসে শিক্ষা অর্জন করা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনও করে  থাকে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
নাস্তিকদের মত ঠিক একই মিশন বাস্তবায়ন করতে হেযবুত তওহীদ দলীল পেশ করে থাকে। তারা লিখেছে,

‘মানব জাতির মহান শিক্ষক নবী করিম (দ:) এর সামনে বসে নারী-পুরুষ উভয় শিক্ষা অর্জন করতেন, কাজেই প্রকৃত ইসলামেও নারী-পুরুষ উভয়ই শিক্ষকের সামনে বসে শিক্ষা অর্জন করবেন (Co-education System)’।
সূত্র: চলমান সংকট নিরসনে হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবনা, পৃ. ৮

‘নারীরা মহানবীর সামনাসামনি বসে আলোচনা শুনতেন, শিক্ষা গ্রহণ করতেন, মহানবীকে প্রশ্ন করে জরুরি বিষয় জেনে নিতেন। অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। এ সময়ে মহানবী ও মেয়েদের মাঝে কোনো কাপড় টাঙ্গানো ছিল এই ব্যাপারে কেউ কোন দলিল দেখাতে পারবে না’।
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই, পৃ. ১৩

সুতরাং বুঝা গেলো, সহশিক্ষা বাস্তবায়নে হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই।

এগারো. নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিতকরণ:

ইসলাম কী বলে?
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়কে যার যার স্থানে সম্মান প্রদান করেছে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আছে, যেখানে নারীর দায়িত্ব পুরুষের উপর অর্পন করা হয়েছে। যেমন নারীর ভরণপোষণ, খাবার, বাসস্থান সবই পুরুষের উপর ন্যাস্ত করেছেন মহান আল্লাহ পাক। কিন্তু পুরুষের ভরণপোষণ, খাবার বা বাসস্থান মহিলার উপর ন্যস্ত করা হয়নি। এভাবে অসংখ্য বিষয় আছে যেটার দ্বারা প্রমাণিত হয়, নারী-পুরুষের অধিকার কখনও সমান হতে পারে না। বরং যার যার অধিকার স্বীয় স্থানে রাখাই যথার্থ।

নাস্তিকরা কী বলে?
নারী পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে নাস্তিকরা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। তারা নারীদেরকে পুরুষের সাথে সর্বত্র, সকল কাজে অংশগ্রহন করাকে নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ফলে নারীর সম্মানের বস্তু থেকে ট্যাম্পুর ড্রাইভার বানিয়ে ছেড়েছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
ঠিক হুবহু একই বক্তব্য হলো, হেযবুতি নাস্তিকদের। তারা লিখেছে,

‘জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক অংশকে অনগ্রসর রেখে জাতীয় উন্নয়ন ও মুক্তি সম্ভব নয়। এজন্য হেজবুত তাওহীদ আন্দোলনের প্রায় সকল কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়। আমীরের দায়ীত্ব থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কাজ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কাজে, হিসাব রক্ষণ বিভাগের কাজে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে, সভা, সমাবেশ, সেমিনার,র্যালী, মানববন্ধন এমনকি মাঠে-ময়দানে পত্রিকা বই বিক্রির কাজেও নারীরা অংশগ্রহণ করেন’।
সূত্র: গঠনতন্ত্র, পৃ. ২৩

‘পুরুষের মত সকল কাজ নারীদের করাও বৈধ
ইসলাম কিন্তু বৈধ কোনো কাজের ক্ষেত্রে নারীর ওপর কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করে নি। উপার্জনের যে কাজ পুরুষের জন্য বৈধ সেই কাজ নারীর জন্যও বৈধ’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৫

‘হেযবুত তওহীদ নারীরা সমানাধিকার নিশ্চিত করে
নিজেদের পার্থিব সম্পদ বিসর্জন দিয়ে মানবজাতিকে চলমান অন্যায়, অশান্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য হিজবুত তাওহীদের নারীরা পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৬

সুতরাং বুঝা গেলো, নারীদের সমান অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নাস্তিকদের সাথে হেযবুত তওহীদ মিল অত্যান্ত গভীর। কারণ হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

বারো. নারী নেতৃত্বের পক্ষ অবলম্বন:

ইসলাম কী বলে?
নারী ক্ষমতায়ন, নারী নেতৃত্ব ইসলামে জায়েয নয়, বরং নারীদের নেতৃত্ব দেবে পুরুষ। মহান রব পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ

অর্থ: পুরুষরা নারীদের উপর অভিভাবক, কর্তা, এটা এজন্য যে, আল্লাহ তা’য়ালা কতককে কতকের উপর ফজীলত দান করেছেন’।
সূরা নিসা, আয়াত নং- ৩৪

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকরা নারীদের নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার মিশনে কাজ করে যাচ্ছে খেয়ে না খেয়ে। তাদের মূল থিম হলো, পুরুষরা যা পারবে, নারীরাও তা করতে অসুবিধা কী? এজন্য নাস্তিকরা নারী নেতৃত্বকে সূদৃঢ় করতে আন্দোলন করে থাকে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে নাস্তিকদের মত ঠিক একই মিশন বাস্তবায়ণ করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। তাদের বক্তব্য হলো,

‘নারীদের নেতৃত্বের অধিকার নবীজি সা. দিয়েছেন
নারীদেরকে আল্লাহর রাসুল মানুষের মর্যাদা দিলেন। তাদেরকে প্রতিটি সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এমনকি নেতৃত্বে অধিকার দিলেন তাদেরকে দুর্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত করলেন’।
সূত্র: ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১১৬

‘নারীদের ঘরে থাকতে হবে, নারী নেতৃত্ব হারাম, ছেলেদের দাড়ি রাখতে হবে, আরবে লেবাস পড়তে হবে, নাচ গান ছবি আঁকা ভাস্কর্য তৈরি সব হারাম। কোরআন এগুলোর একটাকেও প্রত্যক্ষভাবে হারাম করেনি। কিন্তু ফতোয়া দিয়ে সবই নিষিদ্ধ করা হয়েছে’।
সূত্র: ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১১০

সুতরাং বুঝা গেলো, নারী নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

তেরো. বোরখা: নারীদের অধিকার খর্ব করা:

ইসলাম কী বলে?
বোরখা বা পর্দা নারীর সম্ভ্রম রক্ষার অন্যতম একটি উপায়। সমস্ত মুখমণ্ডল ঢাকাও পর্দার অন্তুর্ভূক্ত। যা বর্তমানে একমাত্র বোরখা,হিজাব এবং নেকাবের মাধ্যমেই সম্ভব। হাদিসে এসেছে,

أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا كَانَتْ تَقُوْلُ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ (وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوْبِهِنَّ) أَخَذْنَ أُزْرَهُنَّ فَشَقَّقْنَهَا مِنْ قِبَلِ الْحَوَاشِيْ فَاخْتَمَرْنَ بِهَا

অর্থ: হযরত আয়েশা রাঃ বলতেন, যখন এ আয়াতটি নাযিল হলো,

وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوْبِهِنَّ

অর্থাৎ ‘‘তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে’’ তখন মুহাজির মহিলারা তাদের তহবন্দের পার্শ্ব ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমন্ডল ঢাকতে লাগলেন।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৪৭৫৯

সুতরাং বুঝা গেলো, বোরখা,হিজাব এবং নেকাব পর্দার গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকরা বোরখার নিয়ে খুব বিরক্ত। তাদের বক্তব্য হলো, বোরখার কারণে মহিলারা অবলা প্রাণীতে পরিনত হয় এবং বোরখা নারীদের অধিকার খর্ব করা হয়।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
ঠিক হুবহু একই কথা হেযবুত তওহীদ বলে থাকে। তারা লিখেছে,

‘নারীকে একশ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী ধর্মের দোহাই দিয়ে, পর্দার অজুহাতে, তাদের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষার অজুহাতে মিথ্যে ফতোয়ার বেড়াজালে বন্দি করে আপদমস্তক কাপড়ে আবৃত কিম্ভূত কিমাকার অবলা প্রাণীতে পরিণত করে রেখেছে’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৩

‘এসলাম নারী ও পুরুষ উভয়কে শালীনতার হুকুম দিয়েছে কিন্তু তার মানে কি এই যে নারীকে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে,কিম্ভুতদর্শন অবয়বে ঘর থেকে বের হতে হবে?মোটেই নয়।কিন্তু এসব বিকৃতিই আজ সমাজের গভীরে দৃঢ়মূল হোয়ে আছে। স্বভাবতই এই অপ্রাকৃতিক শরীয়তের বিরুদ্ধে মোসলেম নারীর হৃদয় একসময় বিদ্রোহ কোরে উঠেছে,তারা প্রকৃত এসলামের রূপ সন্দর্শন করে নি,মানবাধিকার লংঘনকারী নির্যাতনমূলক পর্দাপ্রথাকেই তারা ভেবেছে এসলামের বিধান।এই অন্যায়ের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা খোদ এসলামকেই নিষ্পেষণের কল বোলে মনে কোরছে’।
সূত্র: সম্পাদকীয়-দৈনিক দেশেরপত্র, সাপ্তাহিক সংকলন, সোমবার, ২৩ জুন ২০১৪

এমনকি নাস্তিকদের থেকে আরও এগিয়ে হেযবুত তওহীদ বলছে, ‘বোরখা শয়তানের আবিস্কার’।
সূত্রঃ ভিডিও লিংক- https://youtu.be/Q4swgJBQsVo

সুতরাং নাস্তিকরা যেমন মহিলাদেরকে ঘর থেকে বেপর্দাসহ বের হতে উদ্ভুদ্ধ করছে, ঠিক তেমনিভাবে হেযবুত তওহীদও সে পথের পথিক। কারণ হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

চৌদ্দ: জন্মনিয়ন্ত্রণ মিশন:

ইসলাম কী বলে?
কোনো কারণ ছাড়া ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণকে বৈধ বলে না। উপরন্তু নবীজি সা. কিয়ামতের দিন স্বীয় উম্মাহর বিশালতা নিয়ে গর্ব করবেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. নবীজি সা. থেকে বর্ণনা করেন,

عن أنس بن مالك عن النبي صلي الله عليه وسلم تزوجوا الودودَ الولودَ فإني مكاثرٌ بكم الأممَ يومَ القيامةِ

অর্থাৎ তোমরা অধিক সন্তান প্রসবকারী মেয়েকে বিবাহ কর।কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে কিয়ামতের মাঠে গর্ব করব’।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস-২০৫০

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকরা জনসংখ্যা বুদ্ধির প্রতিরোধে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করতে গিয়ে বলে থাকে, ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটা হলে ভালো হয়’।

ষড়যন্ত্রের রুপরেখা:
নাস্তিকরা জানে যে, আগামী ২০৫০ সালে পৃথিবীর ক্ষমতা মুসলিমদের হাতে যেতে পারে। এ ব্যাপারে আগে এতটা রিপোর্ট দেখুন। দৈনিক কালেরকণ্ঠ একটি রিপোর্ট পেশ করে লিখেছিলি,

‘বর্তমানে আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.১ শতাংশ তথা ৩৫ লাখ মুসলিম। ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর হিসাবে তারা তৃতীয় বৃহত্তম। মার্কিন এক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বলছে, ইসলাম ধর্মগ্রহণ ও মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বর্তমানের মতো অব্যাহত থাকলে ২০৪০ সালে ইহুদিদের পেছনে ফেলে মুসলিমরা হবে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি।
আর ২০৫০ সালে আনুমানিক সংখ্যা দাঁড়াবে অন্তত ৮১ লাখ। বর্তমানের চেয়ে যা দ্বিগুণেরও বেশি। তখন মোট জনসংখ্যার ২.১ শতাংশ থাকবে মুসলমান’।
সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ঈসায়ী

সুতরাং সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষীরা মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য মনোভাব দূর করার জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি মুসলমানদের উদ্ভুদ্ধ করে যাচ্ছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ তো নাস্তিক-বেঈমানদের থেকে আরও কঠিন অভিযোগ তুলেছে। তারা লিখেছে,

‘জনসংখ্যার আধিক্য, অসম বন্টন আর সম্পদের স্বল্পতা মানুষের আত্মাকে বিনষ্ট করে দেয়। যারা কোনদিন চুরি করেনি তারা হয়ো ওঠে চোর, যারা কোনোদিন খুন-খারাবির কথা কল্পনাও করেনি তারাও সন্তান-সন্ততিদের জন্য এই কাজটি করে’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৩৭

‘জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানব জাতিকে ধ্বংসের কিনারায় এনে পৌঁছে দিয়েছে’।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৩৭

সুতরাং বুঝা গেলো, মুসলমানদের আধিপত্য অর্জনের পেছনে নাস্তিক-বেঈমানরা যেমন ষড়যন্ত্র করছে, ঠিক হেযবুত তওহীদও তেমনই করে যাচ্ছে। কারণ ওরা তো চোরে চোরে তালতো ভাই।

পনেরো: দাঁড়ি-টুপি, জুব্বা, পাগড়ী নিয়ে কটুক্তি:

ইসলাম কী বলে?
অন্তত এক মুষ্ঠি দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব, টুপি, পাগড়ী ও নবীজির সা. মত পোষাক পরিধান করা সুন্নাহ। চলুন প্রত্যেকটির প্রমাণ আগে দেখে নেওয়া যাক-

দাঁড়ি.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,

عَنِ النبيِّ ﷺ أنّه أمَرَ بإحْفاءِ الشَّوارِبِ وإعْفاءِ اللِّحْيَةِ

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সা. আমাদেরকে গোঁফ খাটো করতে এবং দাড়ি লম্বা করতে আদেশ করেছেন।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৫৯

টুপি:
হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كان لرسول الله قلنسوة بيضاء لاطئة اى لازقة يلبسها

অর্থাৎ রাসুল সা. এমন সাদা টুপি পরতেন যা মাথার সাথে লেগে থাকতো ৷
সুত্র: তারিখে দিমাস্ক, খ. ৪ পৃ. ১৯৩

পাগড়ি:
হাদিস শরীফে এসেছে, জাফার ইবনু আমর ইবনু হুরায়স রা. এর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন,

كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى الْمِنْبَرِ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ قَدْ أَرْخَى طَرَفَيْهَا بَيْنَ كَتِفَيْهِ

অর্থাৎ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় মিম্বারের উপর (উপবিষ্ট) দেখতে পাচ্ছি এবং তিনি পাগড়ীর দু’ প্রান্ত কাঁধের মাঝ বরাবর ঝুলিয়ে রেখেছেন।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৩২০৩

জুব্বা.
হযরত মুগীরাহ ইবনে শু’বা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

انْطَلَقَ النبيُّ ﷺ لِحاجَتِهِ، ثُمَّ أقْبَلَ، فَتَلَقَّيْتُهُ بماءٍ، فَتَوَضَّأَ، وعليه جُبَّةٌ شَأْمِيَّةٌ

অর্থাৎ আল্লাহর রসূল সা. একদা হাজত পূরণের জন্য গেলেন। সেখান থেকে ফিরে এলে, আমি তাঁর নিকট পানি নিয়ে গেলাম। তিনি তা দিয়ে উযূ করেন। তাঁর পরিধানে ছিল সিরীয় জুব্বা।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস নং- ৫৭৯৮

সুতরাং প্রমাণ হলো, দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা বা পাঞ্জাবি ও পাগড়ীর সাথে নবীজির সা. সম্পৃক্ততা রয়েছে। আর নবীজিই সা. হলেন উম্মতের আদর্শ। সেহেতু উম্মতও তা অনুসরণ করবে এটাই তো ইসলামের দাবি।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকরা দাঁড়ি,টুপি, জুব্বা, পাগড়ীর ব্যাপারে খেয়ে না খেয়ে কটুক্তি করে থাকে। তসলিমা নাসরিন দাঁড়ির বিরুদ্ধে চরম বিষোদগার করেছিলো, নাস্তিকরা রাজাকারের ছবি অঙ্কন করতে এই জিনিষগুলো ছবিতে যুক্ত করে দেয়। নাস্তিকরা দাঁড়ি, টুপি,জুব্বা ও পাগড়ী পরিহিত যে কাউকে দেখে নাক ছিটকায়।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদও দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা,পাগড়ীর ব্যাপারে বলেছে,

‘প্রকৃতপক্ষে দাড়ি, টুপি, পাগড়ী, জোব্বার সাথে এসলামের কোন সম্পর্ক নাই। প্রকৃতির আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থার সাথে এগুলো সম্পর্ক রয়েছে। টুপি তো ইহুদীরা,শিখরা বা অন্যান্য ধর্মের ধর্মগুরুরাও পরেন, তাদেরও দাঁড়ি আছে, তারাও জোব্বা পড়েন, তাদের অনেকেই পাগড়ী পরেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাড়ি-টুপি, জোব্বা সবই ছিল। শুধু ধর্মীয় সাধু-সন্ন্যাসী নয়, আল্লাহর অস্তিত্বে সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী হিসাবে পরিচিত অনেকেরই দাড়ি ছিল যেমন কার্ল মার্কস, চার্লস ডারউইন,আব্রাহাম লিঙ্কন প্রমুখ’।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩১

নবীজি সা. কখনও কাফেরদের পোষাক পরিধান করেননি, তাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করেননি। যা নিন্মোক্ত হাদিস থেকে প্রমাণিত। হাদিস শরীফে এসেছে,

أنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَخْبَرَهُ قَالَ رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ ‏إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا

অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ’আস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পরিধানে হলুদ রংয়ের (জাফরান রঙে) দুটি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফিরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২০৭৭

সুতরাং প্রমাণ হলো, নবীজি সা. কাফেরদের কোনো পোষাক নিজেও পরতেন না, অন্যদেরও পরতে দিতেন না। কিন্তু হেযবুত তওহীদ নবীজি সা. ও সাহাবাদের দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা, পাগড়ীকে  কাফেরদের বলে চিহ্নিত করার মূল কারণ কী? এগুলো থেকে জাতিকে বিমুখ করার জন্য নয় কী? তাহলে এগুলো থেকে জাতিকে বিরত থাকতে উদ্ভুদ্ধ নাস্তিকরাও করে, হেযবুত তওহীদও করে। তাহলে তফাৎ কী? কোনোই তফাৎ নেই, বরং হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

ষোলো. হজ্বে যাওয়া নিয়ে কটুক্তি।

ইসলাম কী বলে?
ইসলামের ৫ স্তম্ভের একটি হলো বায়তুল্লাহ গিয়ে হজ্বব্রত পালন করা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন,

وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا ؕ وَ مَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ

অর্থ. মানুষের মধ্যে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ্জ করা ফরয। কেউ (এটা) অস্বীকার করলে আল্লাহ তো বিশ্ব জগতের সমস্ত মানুষ হতে অমুখাপেক্ষী।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ৯৭

সুতরাং বুঝা গেলো, পবিত্র হজ্বব্রত পালন করতে বায়তুল্লাহ বা কা’বা শরীফ যাওয়া বাধ্যতামূলক।

নাস্তিকরা কী বলে?
সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী হজ্ব নিয়ে কটুক্তি করেছিলেন। তার মূল বক্তব্য ছিলো, ‘এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে’।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ২৯-১০-১৪ ঈসায়ী।

অর্থাৎ তার বক্তব্য ছিলো, দেশের টাকা সৌদীকে কেন দিয়ে আসছি আমরা? এ সম্পর্কে নাস্তিকদের আরও অনেক মন্তব্য রয়েছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদও ঠিক নাস্তিকদের মত করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছে,

‘ইসলামের অন্য সব কাজের মতোই আজ হজ্ব সম্বন্ধেও এই জাতির আকীদা বিকৃত হয়ে গেছে। এই বিকৃত আকীদায় হজ্ব আজ সম্পূর্ণরূপে একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার পথ। প্রথম প্রশ্ন হোচ্ছে- আল্লাহ সর্বত্র আছেন, সৃষ্টির প্রতি অনু-পরামাণুতে আছেন, তবে তাঁকে ডাকতে, তাঁর সান্নিধ্যের জন্য এত কষ্ট কোরে দূরে যেতে হবে কেন’?
সূত্র: হিযবুত তাওহীদের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত ‘মোসলেম উম্মাহর বার্ষিক মহাসম্মেলন’ প্রবন্ধ- প্যারা নং- ১

বুঝা গেলো, হজ্বব্রত পালন করা নিয়ে হেযবুত তওহীদের মন্তব্য ঠিক নাস্তিকদের সাথে হুবহু মিলে যায়। কারণ কী? কারণ একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

সতেরো. বিভিন্ন দিবস পালনের বৈধতা:

ইসলাম কী বলে?
ইসলামে দু’টি দিবস ছাড়া আর কোনো দিবস নেই। নবীজির সা. নিন্মোক্ত হাদিস থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। হযরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সা. যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন মদীনাবাসীদের দু’টি দিবস ছিল, যে সময় তারা খেলাধুলা, রঙ-তামাশা ইত্যাদি উৎসব করতেন। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, এ দু’টি দিবস কী? তারা বললেন, আমরা এতে জাহিলী যুগে খেলতামাশা উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন : ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ১১৩৪,

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকরা কোনো ইবাদত করে না, কিন্তু তাদের বাৎসরিক কিছু আমল আছে, যেমন বিভিন্ন উৎসব পালন করা। বিভিন্ন জিবজন্তুর মূর্তি বা ছবি বানিয়ে সে উৎসব নাস্তিকরা পালন করে থাকে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
ঠিক এই বিষয়টা সহিহ প্রমাণ করতে হেযবুত তওহীদ যুক্তি পেশ করে লিখেছে,

‘আমাদের দেশে আবহমানকাল থেকে চলে আসা নবান্ন উৎসব চৈত্রসংক্রান্তি বা পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি কোনো উৎসবই শরিয়ত পরিপন্থি হতে পারেনা’।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৯৪

সুতরাং বুঝা গেলো, দিবস পালনে হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

আঠারো. গান, বাদ্যযন্ত্র, চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয়, নৃত্য, নাচ, চিত্রাঙ্কন ও ভাষ্কর্য নির্মান।

ইসলাম কী বলে?
ইসলামে বাজনাসমেত গান, অশ্লীল গান, চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয়, নৃত্য, নাচ, চিত্রাঙ্কন ও ভাষ্কর্য নির্মান হারাম।

বাদ্যযন্ত্র:
বাদ্যযন্ত্র হারাম। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত আবু উমামা বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী সা. বলেছেন,

إنَّ اللهَ بَعَثَني رَحمةً للعالمينَ وهُدًى للعالمينَ وأمَرَني ربِّي بمَحقِ المَعازفِ والمَزاميرِ والأَوْثانِ والصُّلُبِ وأمْرِ الجاهليَّةِ

অর্থাৎ আবু উমামা বাহিলী রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী সঃ বলেছেন যে,মহান আল্লাহ আমাকে বিশ্ববাসির জন্য রহমত এবং পথপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন এবং আমাকে আদেশ করেছেন যেন আমি বাদ্যযন্ত্র এবং মূর্তি,ক্রুশ এবং জাহিলী যুগের কর্ম ধংশ করে দিই।
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ২২৩০৭ ত্বয়ালিসি, হাদিস-১২৩০ তবরানী হাদিস-৭৮০৩

চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয়,নৃত্য:
চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয় নৃত্য ইত্যাদীতে মহিলাদের অংশগ্রহণ পাশাপাশি অশ্লীতাও বিদ্যমান। যা সকলের জানা। সুতরাং এটা ইসলামে বৈধ নয়। কারণ মহিলাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে,

وقرن في بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولي

অর্থাৎ তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।
সুরা আহযাব, আয়াত নং- ৩৩

ভাষ্কর্য:
ভাষ্কর্য হারাম সম্পর্কে কুরআন শরীফের আয়াত নিন্মে পেশ করা হলো। মহান আল্লাহ বলেন,

فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَ اجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُّوْرِۙ

অর্থ: তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’
সূরা হজ্জ, আয়াত নং- ৩০

চিত্রাঙ্কন:
চিত্রাঙ্কন করা হারাম। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُوْنَ.

অর্থাৎ প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।’
সূত্র: সহীহ বুখারী হাদিস নং- ৫৯৫০

সুতরাং বুঝা গেলো, বাদ্যযন্ত্র, চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয়, নৃত্য, চিত্রাঙ্কন, ভাষ্কর্য নির্মান ইসলামের হারাম।

নাস্তিকরা কী বলে?

নাস্তিকদের কাছে গান, বাদ্যযন্ত্র, চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয়, নৃত্য, চিত্রাঙ্কন, ভাষ্কর্য নির্মাণ ইত্যাদী কোনো অন্যায় কাজ নয়, বরং এগুলো তাদের চেতনা বিকাশের হাতিয়ার।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
নাস্তিক্যবাদের এসব বিষয়গুলোকে বৈধতা দিতে হেযবুত তওহীদ লিখেছে,

‘যে কোন জিনিস হারাম কিনা তা জানার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কেতাব দেখতে হবে।কোরআনে যা কিছু নিষিদ্ধ করা হোয়েছে সেগুলি ছাড়া আর সবই বৈধ।এখন কোরআনে দেখুন গান,বাদ্যযন্ত্র,চলচিত্র,নাট্যকলা,অভিনয়,নৃত্য,চিত্রাঙ্কন, ভাষ্কর্য নির্মাণ ইত্যাদি আল্লাহ হারাম কোরেছেন কিনা? যদি না কোরে থাকেন তাহলে এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ।আল্লাহ যেটিকে বৈধ কোরেছেন সেটিকে কোন আলেম,মুফতি,ফকীহ ,মোফাসসের হারাম করার অধিকার রাখেন না’।
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১২

মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত সুর, বিভিন্ন তার যন্ত্রের ওপর আঘাত বা ঘর্ষণজনিত আওয়াজ,দফ, তবলা বা অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ও হারাম নয়।
সূত্র: গনমাধ্যমের করণীয় পৃষ্ঠা-৬০

সুতরাং বুঝা গেলো, সংস্কৃতির বিষয়ে নাস্তিকদের দৃষ্টিভঙ্গি আর হেযবুত তওহীদের দৃষ্টিভঙ্গি এক ও অভিন্ন। কারণ ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

উনিশ. ডানপন্থীদের নিয়ে কটুক্তি:

ইসলাম কী বলে?

ডানপন্থীরা সব সময় মানুষকে নীতিনৈতিকতার কথা বলেন। দূর্ণীতি, সুদ, ঘুশ, চুরি, ডাকাতী, ব্যাভিচার, ধর্ষণ প্রতিরোধে ডানপন্থীরা সবসময় সচেতনতা তৈরি করে যাচ্ছেন। যার ফলে আজও যদি কেউ চুরি, ঘুশ, দূর্ণীতি, অবিচার মুক্ত থাকছেন, খবর নিয়ে দেখবেন এর পেছনে কোনো আলেমের মেহনত রয়েছে। সুতরাং এটা প্রমাণিত যে, ডানপন্থীদের দ্বারা কারও ক্ষতি হচ্ছে না, বরং ক্ষতিকারক জিনিষগুলো স্ক্যান করার মেহনত করে থাকেন ডানপন্থীরা। উপরন্তু ডানপন্থীদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,

وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ فَسَلَامٌ لَكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ

অর্থ: আর সে যদি হয় ডানপন্থীদের একজন, তবে (তাকে বলা হবে), ‘তোমাকে সালাম, যেহেতু তুমি ডানদিকের একজন’।
সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত নং- ৯০-৯১

আল্লাহ পাক আমাদেরকে ডানপন্থীদের অন্তুর্ভূক্ত করেন। আমীন! সুতরাং ডানপন্থীরা দুনিয়া-আখেরাতে উভয় জগতে সফল হবেন, এটাই চুড়ান্ত।

নাস্তিকরা কী বলে?
বামপন্থি ও নাস্তিকরা ডানপন্থীদের ব্যাপারে হরদম কটুক্তি করে থাকে। তারা বলে থাকে, ডানপন্থীদের মাধ্যমে জাতির কোনো উপকার হবে না, বরং দেশ পিছনে পড়ে যাবে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদও নাস্তিকদের এ মন্তব্য ফেলে দেননি, বরং পুরোপুরি সহমত পেশ করে লিখেছে,

‘ডানপন্থীদের দ্বারা ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে মানুষের সমাজকে পশুর সমাজে পরিণত করছে’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৯

সুতরাং বুঝা গেলো, ডানপন্থীদের কটুক্তির সিনিয়ালে, ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

কুড়ি. বামপন্থীদের সফলতার গান।

ইসলাম কী বলে?
বামপন্থীদের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,

وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ فِي سَمُومٍ وَحَمِيمٍ وَظِلٍّ مِنْ يَحْمُومٍ لَا بَارِدٍ وَلَا كَرِيمٍ

অর্থ: আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানিতে, আর প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ার ছায়ায়, যা শীতলও নয়, সখু করও নয়।
সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত নং- ৪১-৪৪

অর্থাৎ বামপন্থীরা নিশ্চিত জাহান্নামী।

নাস্তিকরা কী বলে?
বামপন্থী ও নাস্তিক তো এক ঘাটের মাঝি। তারা শুধু নিজেদেরকেই একমাত্র মনুষত্য ধারণকারী হিসাবে পরিচয় দিতে চায়। তাদের দাবি হলো, মানবতার জন্য শুধু তারাই কাজ করেন এবং সমাজ বিনির্মানেই শুধু তারাই কাজ করেন।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের কাছে সমাজ পরিবর্তনে বামপন্থীরা ডানপন্থিদের থেকে অনেক এগিয়ে। তারা বর্তমানে লিখেছে,

‘সেই বিকৃত ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াই প্রতিটি বোধসম্পন্ন মানুষের অবশ্যকর্তব্য। সে দিক থেকে ডানপন্থী রাজনীতির দাবিদারদের থেকে মানুষ হিসেবে বামপন্থীরা এগিয়ে আছেন’।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৯

সুতরাং বুঝা গেলো, বামপন্থী-নাস্তিকদের মন্তব্য ও হেযবুত তওহীদের মন্তব্য এক ও অভিন্ন। কারণ একটাই ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

একুশ. নাস্তিকদের বাক স্বাধীনতা পক্ষাবলম্বন:

ইসলাম কী বলে?
ইসলামে কারো ধর্মপালনে হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু ইসলাম ধর্ম নিয়ে কেউ কটুক্তি করলে, তার ব্যাপারে ইসলামের আইন রয়েছে। মহান আল্লাহ তাদেরকে কাফের বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِؤُونَ لاَ تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِن نَّعْفُ عَن طَآئِفَةٍ مِّنكُمْ نُعَذِّبْ طَآئِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُواْ مُجْرِمِينَ

অর্থ: তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জোর দিয়েই বলবে, ‘আমরা হাস্য রস আর খেল-তামাশা করছিলাম।’ বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রসূলকে নিয়ে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে?’ তোমরা এখন অজুহাত দেখিয়োনা, তোমরাতো ঈমান আনার পর কুফরী করেছো।
সূরা তাওবা, আয়াত নং- ৬৫-৬৬

হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন,

من سب نبيًّا فاقتلوه ومن سب أصحابى فاضربوه

অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবীকে সা. মন্দ বলে (সমালোচনা করে) তাকে হত্যা করো।
সূত্র: তারিখে দিমাশক, হাদিস নং- ৮৮৬৫

বাক স্বাধীনতা ও ইসলাম নিয়ে কটুক্তি কখনও এক বিষয় নয়। ইসলাম সাম্প্রদায়িক সম্পৃতির কথা বলে। কিন্তু কেউ ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করবে, আর তাকে বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে বাঁচিয়ে দেওয়া হবে, এটা কাম্য নয়।

নাস্তিকরা কী বলে?
নাস্তিকদের বক্তব্য হলো, সবার বাকস্বাধীনতা থাকা উচিৎ। এই বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এমন কোনো বিশ্রী শব্দ নেই যা নাস্তিকরা আল্লাহ, রাসুল সা. ও ইসলামকে নিয়ে করে না। কিন্তু যখনই এর বিচার করা হয়, তখনই আবার নাস্তিকরা প্রশ্ন উঠিয়ে বলে ‘এটা অনৈতিক’।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ ঠিক নাস্তিকদের মত একই ভাবে শাস্তি দেওয়া নিয়ে অনৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছে। তারা লিখেছে,

‘অন্য কোন আদর্শের অনুসারীরা ইসলামের সমালোচনা করতেই পারেন….. আল্লাহ স্বয়ং যেখানে তার কোরআন সম্পর্কে সৃষ্টি সম্পর্কে, আয়াত এমনকি তার নিজের সম্পর্কে ভুল সন্ধান করার জন্য আহবান করছেন সেখানে কেউ যদি ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করে, তার দৃষ্টিতে ধরা পড়া কোন অসঙ্গতি তুলে ধরে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আক্রোশ প্রদর্শন করা, তাকে আক্রমণ করা, তাকে হত্যা করা ইত্যাদি অবশ্যই অন্যায্য ও প্রগতিশীল, ক্ষুদ্রতা,অযৌক্তিক, আল্লাহর অভিপ্রায় বহির্ভূত কাজ’।
সূত্র: আদর্শিক লড়াই, পৃষ্ঠা. ১২

সুতরাং বুঝা গেলো, নাস্তিকদের প্রশ্ন আর হেযবুত তওহীদের দাবি এক ও অভিন্ন। কারণ ‘হেযবুত-নাস্তিক ভাই ভাই’।

প্রিয় পাঠক, ‘নাস্তিকদের সাথে হেযবুত তওহীদের মিল কোথায়’? এ প্রসঙ্গে ২১ টা পয়েন্ট তুলে ধরলাম। এ থেকে কী এটা প্রতিয়মান হয় না যে, সেই নাস্তিক মুফাসসিলের মিশন ( একটা মুসলিম দল গঠণ করতে হবে, যারা মৌখিকভাবে ইসলামের কথা বলবে, কিন্তু মতবাদ প্রচার করবে নাস্তিকদের) বাস্তবায়ণ করছে না হেযবুত তওহীদ? আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে হেযবুত তওহীদের গভীর এ ষড়যন্ত্র বুঝার এবং তাদের মত অন্য সকল কুফরী সংগঠন থেকে জাতিকে সতর্ক থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন!

 

Check Also

মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা:

আল্লাহ’র দ্বীনের একমাত্র হিফাযতকারী শিক্ষাব্যবস্থা হলো, মাদরাসা। যেখানে দিবানিশি আল্লাহ তাআলার কুরআন ও তাঁর রাসুল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.