আছরের নামাজ পড়ে চা খাওয়াটা আমার পুরাতন অভ্যাস। মসজিদের ইমাম সাহেবকে নিয়ে চা স্টলে বসে আছি। হঠাৎ পাশে দেখলাম দুজন কথা কাটাকাটি করছে। কৌতুহলি হয়ে কাছে গিয়ে দেখি জনৈক মুসলিম ব্যক্তি একজন লোকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলছেন- ‘তোরা নাস্তিকরা সব হারামজাদা’।
এ কথা বলতেই নাস্তিক বেচারাও ক্ষিপ্ত হয়ে গলা ফাটিয়ে বললেন “কেন বাজে কথা বলছেন? আপনার মতো ধর্মান্ধরা আসলে অভদ্র। সভ্যতা বলতে কিছুই শেখেননি।
এভাবে চিল্লাচিল্লি করে এক পর্যায়ে নাস্তিক লোকটি পুরো বাজারে হাঙ্গামাই শুরু করে দিলেন। প্রভাবশালী কিছু মানুষ ও স্থানীয় মেম্বার সাহেবকে জড়ো করে বিচার দিতে শুরু করলেন। পরিবেশ অত্যান্ত ঘোলাটে। না জানি মুসলিম লোকটার কি হাল-দশা করে ছাড়েন।
পাশে দাড়িয়ে চুপিসারে শুনছিলাম তাদের ঝগড়া। মুসলিম লোকটা যারপরনাই বিপদে পড়েছেন। আমিও তাই একটু-আধটু করে এগিয়ে গেলাম। উপস্থিত সবাইকে সালাম দিয়ে বললাম- ‘যদি অনুমতি দিতেন, তাহলে একটা কথা বলতে চাই’।
মোল্লাবেশে আমাকে দেখেই তো নাস্তিক বেচারা এদিক সেদিক তাকিয়ে রাগী কণ্ঠে বললো- আপনাদের মোল্লাদের আর কিই বা কাজ আছে! সারাদিন এই মাসলা-ওই মাসলা, হালাল-হারাম করে করে এ দেশ-জাতি সব নষ্ট করে দিচ্ছেন আপনারা।
আমি শান্তভাবে বললাম- ভাই, আপনি কি ইসলাম মানেন না?
: না
: কেন মানেন না?
: আমি মুক্তমনে চলতে চাই। মানুষ হিসাবে আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে।
: যদি আরেকটু বুঝিয়ে বলতেন!
: আরে মশাই শোনেন, এই আপনার মতো মোল্লারাই ইসলামের দোহাই দিয়ে সব বন্ধ করে দিয়েছেন। মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছেন। ধর্মের বেড়ি পরিয়ে সকলকে পরাধীন করতে চাচ্ছেন। এই যে দেখুন, আপনারা সেই আদিম যুগের মতো মহিলাদেরকে পর্দার নামে বোরখা পরিয়ে বাক্সবন্দী করে ফেলেছেন। কোনো ছেলে-মেয়ে ফোনালাপ বা ফেসবুকে চ্যাটিং করলেও আপনাদের ফাতাওয়ার বেড়াজলে তাদের আবদ্ধ হতে হয়। কেন আপনারা এভাবে ফতোয়াবাজি করেন? স্বাধীন দেশে কেন আপনাদের কথা শুনে আমাদের পরাধীন হয়ে থাকতে হবে?
: আচ্ছা, এই যে পর্দা না করা কিংবা ছেলেমেয়ে চ্যাটিং-ফোনালাপ ইত্যাদি হোক সেটা কি আপনি চান?
: হ্যাঁ অবশ্যই চাই, শুধু এই নয়, ছেলে-মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে সব বিষয়ে তাদের নিজের সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে সেটাই চাই।
: যদি তারা ফিজিক্যাল রিলেশনে জড়িয়ে যায়?
: তো কি হইছে? জড়াতেই পারে, বললাম না তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত, এটা স্বাধীন দেশ, বুঝতে হবে।
: ও আচ্ছা, তা আপনি সবাইকে ডেকে এনে এখানে কেন বসেছেন সেটা কি জানতে পারি?
পাশ থেকে মেম্বার মশাই উত্তর দিলেন- হুজুর, এই লোকটিকে ঐ ছেলেটি হারামজাদা বলেছে, এজন্য তিনি বিচার ডেকেছেন।
আমি মেম্বারের দিকে তাকিয়ে বললাম ‘মেম্বার সাব; হারামজাদা কাকে বলে বলুন তো?’
: “বাবা-মায়ের বৈবাহিক বৈধ সম্পর্কে যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেনি তাকে হারামজাদা বলে।”
এবার আমি মুচকি হেসে বললাম ‘তাহলে নাস্তিকদের হারামজাদা বললে সমস্যা কি?’
পাশে দাড়িয়ে থাকা নাস্তিক লোকটি চোখ রাঙ্গিয়ে বললেন, এটা আপনি কি বললেন?
আমি এবার শব্দ করে হেসে বললাম- ‘আপনি একটু আগেই বললেন যে এটা স্বাধীন দেশ, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে, আরো বললেন যে কেউ চাইলে নিজ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিয়ে ছাড়া ফিজিক্যাল রিলেশন করতেই পারে। তো বিয়েশাদী ছাড়া সহবাসে যে সন্তান জন্মায় তাকেই তো হারামজাদা বলে। তাহলে আপনি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে অবৈধ শারিরিক সম্পর্ক সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, কিন্তু এ অবৈধ দুর্ঘটনায় জন্মানো সন্তানকে হারামজাদা বললে বিচার চাইবেন! এটা কেমন কথা?’
বেচারা মাথা নিচু করে বললেন- ভাই সব বুঝলাম, কিন্তু আমিতো আর হারামজাদা নই তাইনা?
: হ্যাঁ তা হতে পারে, কিন্তু কেউ যদি চায় যে ডাকাতে এই সমাজ ভরে যাক, তাহলে বলাই যায় যে সে নিজেও একজন ডাকাত কিংবা ডাকাতদের দোসর। কারণ ভালো মানুষ কখনো এটা চাইবে না যে সমাজে ডাকাত বেড়ে যাক।
মেম্বার সাহেব হেসে দিয়ে বললেন- বুঝেছি হুজুর, আর বেশি বইলেন না, ইজ্জত খতম হওয়ার পথে…
মুসলিম ব্যক্তিটি আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। আমার সাথে থাকা ইমাম সাহেব সবার উদ্যেশ্যে বললেন- ‘আসল ব্যাপারটা কী জানেন? নাস্তিকরা এই স্বাধীনতার কথা বলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে হারামজাদা বানাতে চায়। এটাই তাদের মিশন’।
পুরো মজলিস জুড়ে পিনপতন নীরবতা। নাস্তিক ব্যাক্তিটি নিচু স্বরে বললেন ‘হুম বুঝেছি ভাই’
কি বুঝলেন?
আমার ছেলেকে এমন কথা কেউ বললে?
আলহামদুলিল্লাহ। হে রব, সবই তোমার মেহেরবানী।
এই যে আবার শুরু। কৃতিত্বটা আল্লাহকে কেন?