Home > হিজবুত তাওহীদ > নারী ও হেযবুত তওহীদ।

নারী ও হেযবুত তওহীদ।

 

ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়কে যার যার স্থানে সম্মান প্রদান করেছে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আছে, যেখানে নারীর দায়িত্ব পুরুষের উপর অর্পন করা হয়েছে। যেমন নারীর ভরণপোষণ, খাবার, বাসস্থান সবই পুরুষের উপর ন্যাস্ত করেছেন মহান আল্লাহ পাক। কিন্তু পুরুষের ভরণপোষণ, খাবার বা বাসস্থান মহিলার উপর ন্যস্ত করা হয়নি। এভাবে অসংখ্য বিষয় আছে যেটার দ্বারা প্রমাণিত হয়, নারী-পুরুষের অধিকার কখনও সমান হতে পারে না। বরং যার যার অধিকার স্বীয় স্থানে রাখাই যথার্থ। কিন্তু নারী পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে নাস্তিকরা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। তারা নারীদেরকে পুরুষের সাথে সর্বত্র, সকল কাজে অংশগ্রহন করাকে নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ফলে নারীর সম্মানের বস্তু থেকে ট্যাম্পুর ড্রাইভার বানিয়ে ছেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নারী অধিকার বিষয়ে নাস্তিকদের চেতনা ও হেযবুত তওহীদের চেতনা এক ও অভিন্ন। চলুন প্রথমে একনজরে তাদের মন্তব্যগুলো দেখে নেওয়া যাক। তাদের দাবি হলো-
১. নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২. নারীদের ঘরে রাখার সিস্টেমটা খৃষ্টানদের?
৩. নারী নেতৃত্ব হারাম নয়।
৪. নারী নেতৃত্ব নবিজি সাঃ-এর যুগেই ছিলো।
৫. মসজিদে,ঈদগাহে,বাজার-ঘাটে নারী আনতে হবে।
৬. সফরে মহিলার সাথে মাহরাম যাওয়া আবশ্যক নয়।
৭. নারী-পুরুষের খেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
৮. বোরখা শয়তানের আবিস্কার।
৯. নবিজির মিটিংয়ে কোনো পর্দা ছিলো না।
১০. পর্দার ওয়াজ কী জরুরি নয়?

সুতরাং বুঝা গেলো, নারীদের সমান অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নাস্তিকদের সাথে হেযবুত তওহীদ মিল অত্যান্ত গভীর। চলুন প্রত্যেকটা বিষয়ে প্রমাণসহ আলোচনা করা যাক।

নারী-পুরুষেরর অধিকার সমান?
হাল যামানার নাস্তিক্যবাদ নারীদের সমানাধিকারের স্লোগান তুলেছে। ফলে ঘরের নারী রাস্তায় নেমে ট্যাম্পুর ড্রাইভার হচ্ছে। অথচ ইসলাম তাদের দিয়েছে সীমাহীন মর্যাদা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নাস্তিকদের সাথে হেযবুত তওহীদও মুল মিলিয়েছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা নারীদেরকে পুরুষের সাথে কাজ করার প্রতি শুধু উদ্ভুদ্ধ নয়, বরং নিয়ম বানিয়ে নিয়েছে। চলুন তারা কী লিখেছে দেখে নেওয়া যাক,
জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক অংশকে অনগ্রসর রেখে জাতীয় উন্নয়ন ও মুক্তি সম্ভব নয়। এজন্য হেজবুত তাওহীদ আন্দোলনের প্রায় সকল কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়। আমীরের দায়ীত্ব থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কাজ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কাজে, হিসাব রক্ষণ বিভাগের কাজে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে, সভা, সমাবেশ, সেমিনার,র্যালী, মানববন্ধন এমনকি মাঠে-ময়দানে পত্রিকা বই বিক্রির কাজেও নারীরা অংশগ্রহণ করেন। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ২৩

ইসলাম কিন্তু বৈধ কোনো কাজের ক্ষেত্রে নারীর ওপর কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করে নি। উপার্জনের যে কাজ পুরুষের জন্য বৈধ সেই কাজ নারীর জন্যও বৈধ। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৫

নিজেদের পার্থিব সম্পদ বিসর্জন দিয়ে মানবজাতিকে চলমান অন্যায়, অশান্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য হিজবুত তাওহীদের নারীরা পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৬

হেযবুত তওহীদের নারীরা এই দুই ধরনের অন্ধকার থেকে বের হয়ে এসেছে। তারা শালীনতা সহকারে পুরুষের পাশাপাশি সব কাজে অংশগ্রহণ করে। শহরে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তারা তওহীদের বালাগ দিয়েছেন। তারা পত্রিকা বিক্রি করছে, সেমিনার করছে, আলোচনা সভায ও বক্তৃতায় অংশগ্রহণ করছে, সাংবাদিকতা করছে, অফিসে কাজ করছে, চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে, শিক্ষকতা করছে, গার্মেন্টে চাকুরি করছে, অনেকে ঘরে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করে তা বিক্রি করছে। যে কোনো কাজেই তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে। সত্য প্রচার এর কারণে তারাও অনেক জেল জুলুমের শিকার হয়েছে, ধর্মব্যবসায়ীদের অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছে, নিজের ঘরবাড়ি ও সংসার থেকে বহিস্কৃত হয়েছে, অনেকে স্বামী-সন্তান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন যেটা অনেক নারী সাহাবীদের বেলায় হয়েছিল। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৬

বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদ সেই নাস্তিক্যবাদের স্লোগানে সহমত পেশ করে একই আন্দোলনের সহকর্মী হিসাবে কাজ করছে হেযবুত তওহীদ।

ইসলাম কী বলে?
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্মগত যোগ্যতা, ক্ষমতা, দৈহিক গঠন ও দায়িত্বের দিক দিয়ে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। প্রথম পার্থক্য হলো, মানবজীবনের দুটি অংশ, ঘর ও বাহির। নারী ঘরে, পুরুষ বাইরে। বাইরের যাবতীয় কষ্টকর ও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজ পুরুষের উপর অর্পিত। আর নারীর মৌলিক দায়িত্ব সন্তানের লালন-পালন ও ঘরোয়া পরিবেশকে সুসজ্জিত করা। সেইসাথে তার কোমল স্বভাবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সহজ ও অপেক্ষাকৃত হালকা কাজও তারা করতে পারেন। কোনো কোনো অপরিহার্য ধর্মীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তারা ঘরের বাইরেও যেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রেও ইসলামের বিধান মান্য করেই যেতে হবে। দ্বিতীয় পার্থক্য হলো, যেহেতু জন্মগতভাবে নারী আকর্ষণীয় ও কোমল স্বভাবের সেহেতু নারী ও পুরুষের স্বতন্ত্র অবস্থান ও কর্মক্ষেত্র অত্যাবশ্যক। নারীকে শালীন পোশাক ও পর্দার বিধান মেনে চলার হুকুম দেয়া হয়েছে। এটি অলঙ্ঘনীয় বিধান।

ইসলাম নারীকে মর্যাদা দিয়েছে সীমাহীন। কখনও মেয়ে হিসাবে, কখনও মা হিসাবে, কখনও স্ত্রী হিসাবে। উপরন্তু নারীর প্রতি চোখ তুলে তাকানোও নিষেধ। নারীর বিপদ হবে, তাই কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে, এমন নির্দেশনা খোদ নবীজি সা. দিয়ে গেছেন। নারীর প্রতি সকল প্রকারের অন্যায়কে ঘোষণা করলো মহাপাপ, কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু দুঃখজনক, আজকের ‘পুরুষতান্ত্রিক’ সমাজে নারী মুক্তির মেকি শ্লোগানে নাস্তিক্যবাদ পরোক্ষভাবে নারীর অধিকার নষ্টে দিনরাত মেহনত করে যাচ্ছে। তাদের কারণে আজ নারী সমাজ নতুন গাড়ির ‘মডেল’,পণ্যের অ্যাডে ‘নারীপণ্য’? অর্থের বিনিময়ে কেনা যায় নারীর রূপ-যৌবন। অফিসের ‘বস’ তার জিবনে হয়ে গেছে ভাগ্যপতি। এটা শুধু আমাদের কথা নয়, খোদ হেযবুত তওহীদও লিখেছে,

বর্তমানে জীবিকার জন্য মাটিকাটা, ট্রাক থেকে ইট নামানো-ইট তোলা, কৃষিকাজ, দিনমজুরের কাজ করা, উদয়াস্ত কঠোর পরিশ্রমের কাজ করাকে তার অধিকার বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু এগুলো আসলে নারীর অধিকার নয় বরং অধিকার হারানোর করুণ পরিণতি। আল্লাহ প্রথমে পুরুষ সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু পৃথিবীতে মানবজাতির বিকাশের প্রয়োজনেই তিনি নারীকে সৃষ্টি করলেন এবং নারী-পুরুষ পরস্পরের মধ্যে তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি করলেন মূলত ঐ বংশগতি রক্ষার জন্যই। নারীকে দিলেন করুণা, ভালোবাসা, মমতায় পূর্ণ হ্লেপরায়ণ হৃদয় যেন সে তার সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করে তোলে। নারী ও পুরুষের মৌলিক কাজকে যদি উপেক্ষা করা হয় তাহলে মানবজাতিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে, নতুবা মহাবিপর্যয়ে সৃষ্টি হবে। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৪

পশ্চিমা সভ্যতা নারীকে বাহারী পন্যে ও ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের কুসংস্কার, কুপমন্ডুকতা, স্থবিরতা নারীর জীবন কি এভাবেই ভারসাম্যহীন করে রেখেছে। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৩

নারী তার এই চিরন্তন অধিকার কখন হারিয়ে ফেলল? যখন মানুষ ইবলিশের প্রচারণায় প্রচোরিত হয় জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করলো, তখন নারী-পুরুষ উভয়ের যার যার অবস্থান ও প্রকৃতিদত্ত দায়িত্ব থেকে সরে গেল। বর্তমান সভ্যতায় জীবনযাত্রায় মনোনয়নের যে ঊর্ধ্বশ্বাস চলছে তাতে নারী-পুরুষ উভয়কে জীবিকার অন্বেষণে ঝাঁপিয়ে পড়তে হচ্ছে। জীবিকার সংগ্রাম দিন দিস কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। সেই সংগ্রামে পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে অথবা অংশগ্রহণ করে নারী তার শারীরিক লাবণ্য, মানসিক সৌরভ, চারিত্রিক মাধুর্য- এক কথায় তার নারীত্ব হারিয়ে ফেলেছে। এতে তার দৈহিক গড়ন পুরুষালি হয়ে যাচ্ছে, তার কিন্নর কন্ঠ হয়ে যাচ্ছে কর্কশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেমন প্রকৃতির সবচেয়ে কোমল, ভঙ্গুর এবং নরম জিনিসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনই সত্যের আলো থেকে বিচ্যুত হবার ফলে সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্থ হয় নারী ও শিশুরা। লোহাকে আগুনে পুড়িয়ে আকৃতি দিতে হয় কিন্তু ফুলকে রাখতে হয় ফুলবাগানে কিংবা ফুলদানিতে। সেই ফুলকে যদি কামারশালায় নিয়ে তপ্ত আগুনে পুড়িয়ে হাতুড়ি পেটা করা হয় তার পরিণতি কী হবে? আজ নারীকে তাই করা হয়েছে এতে তার মর্যাদা বাড়েনি বরং সে নিজের সমস্ত অধিকার হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৫

হেযবুত তওহীদের এই বক্তব্য থেকে এটা বুঝতে পারছি যে, নারীদেরকে পুরুষের মত বিভিন্ন কর্মে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহ দেওয়া মানেই তাদের অধিকার বিনষ্ট করার নামান্তর।

ইসলাম ও নারীর উপার্জন:
ইসলামে নারীর উপর কারো ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেই, বরং একজন নারী বিবাহের আগ পর্যন্ত বাবা-ভাইয়ের অধিনম্ত থেকে সকল ভরণ-পোষণ পাবে, বিয়ের সময় স্বামী কর্তৃক দেনমোহর ও ভরণ-পোষণ পাবে। উপরন্তু মিরাসও পাবে। তবে মর্যাদা ও নিরাপত্তা ঠিক রেখে অর্থ উপার্জনের অধিকারও ইসলাম দিয়েছে। তবে নারী-পুরুষের সমান অধিকার হিসাবে অর্থ উপার্জন ও খরচ চাপিয়ে দিলে নারীর প্রতি সেটা হবে অবিচার। ইসলাম নারীকে সে অবিচারের পথ বন্ধ করে দিলেও হেযবুত ও নাস্তিক সে পথ রুদ্ধ করার মিশনে নেমেছে।

নারীর সকল দায়িত্ব পুরুষের:
সৃষ্টির উদ্দেশ্য, দৈহিক ও মানসিক গঠন ইত্যাদি দিক থেকে আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষের মাঝে কিছু পার্থক্য রেখেছেন। পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন পূর্ণ শক্তি দিয়ে। নারীর সকল দায়িত্ব পালন, তার নিরাপত্তা বিধান, ভরণ-পোষণ ও বংশের সংরক্ষণ ও প্রতিপালন তার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

মোহরানা: ইসলামে নারীকে বিবাহের সময় মোহরানা প্রদান করতে হয়। আল্লাহ তা’আলা পুরুষ জাতিকে লক্ষ্য করে বলেন,
فما استمتعتم به منهن فاتوهن اجورهن فريضة
অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে প্রদান করবে। -সুরা নিসা : ২৪

এই মোহরানা খুশি মনে আদায় করতে নির্দেশ দিয়ে মহান রব বলেন,
واتوا النساء صدقاتهن نحلة فان طبن لكم عن شيئ منه نفسا فكلوا هنيئا مرئيا
এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে ছেড়ে  দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর। -সুরা নিসা : ৪

ভরণপোষণ: উপরন্তু নারীদের ভরণ-পোষণের পুরোটাই বহন করবে স্বামী। মহান রব বলেন,
لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ
বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয়  করবে। -সুরা তালাক : ৭

পুরুষের এই দায়িত্ব-কর্তব্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হাদীস শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট স্ত্রীর প্রতি পুরুষের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
أَطْعِمُوهُنَّ مِمَّا تَأْكُلُونَ وَاكْسُوهُنَّ مِمَّا تَكْتَسُونَ وَلَا تَضْرِبُوهُنَّ وَلَا تُقَبِّحُوهُنَّ
যখন তুমি খাবে তখন তাকেও খাওয়াবে, যখন তুমি বস্ত্র পরিধান করবে তখন তাকেও পরিধান করাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ২১৪৪

অন্য হাদীসে আছে হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لاَ يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ ‏.‏ فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানাত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে, তবে হালকাভাবে প্রহার কর। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের হাক্ব (হক) রয়েছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৪৭;

বাচ্চাদের খরচ: পাশাপাশি নারীর গর্ভজাত সন্তানের দায়িত্বও পুরুষের উপর। মহান রব বলেন,
وَعلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা। -সুরা বাকারা : ২৩৩

সুতরাং বুঝা গেলো, সকল খরচাদি বহন করার দায়িত্ব পুরুষের উপর। সেজন্য উপার্জনের দায়িত্বও পুরুষের উপর।

উপার্জনের দায়িত্ব পুরুষের: উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা বোঝা যায় যে, নারীর সকল গুরুভার পুরুষের কাধে। পুরুষের দায়িত্ব হল নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। আর এসবের যোগান দেওয়ার জন্য প্রয়োজন জীবিকা উপার্জনের। সুতরাং তাকে গ্রহণ করতে হবে চাকরি, ব্যবসা কিংবা অন্য কোনো পেশা। আর ঘরের কোণে বসে এ দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন ঘরের বাইরে বের হওয়া। এমনকি প্রয়োজনে দূর দূরান্ত সফর করা। এজন্য পুরুষকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে যেন তোমরা সফলকাম হও। -সুরা জুম’আ : ১০

সুতরাং বহিরাঙ্গনই হলো পুরুষের প্রধান কর্মক্ষেত্র। বাইরে অবস্থান হল তার সাধারণ অবস্থা। ঘরে বসে থাকা পুরুষের জন্য শোভনীয় নয়। পক্ষান্তরে নারীকে আল্লাহ বানিয়েছেন দুনিয়ার জান্নাত। তিনি স্বামীর জন্য প্রশান্তি, সন্তানের জন্য আশ্রয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً
আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সংগিনীদেরকে যেন তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। -সুরা রূম : ২১

সুতরাং সৃষ্টিগতভাবে নারীজাতি কোমল ও আকর্ষণীয়। সে হিসাবে তার কোমলতা ও প্রশান্তিদায়ক হওয়া নির্ভর করে তার ঘরে অবস্থান করা। কারণ পুরুষের মত সমানতালে যখন নারীও বিভিন্ন কাজ-কর্মে লিপ্ত হয় তখন তার কোমলতা পরিবর্তন হয়ে রূঢ়রুপ ধারণ করে। উপরন্তু নারী ঘর থেকে বের হলে তার আকর্ষণীয়তা অনিনাপত্তার কারণ হয়ে দাড়ায়। এজন্য নারী জাতিকে পরপুরুষ থেকে পর্দা করতে বলা হয়েছে, কিন্তু নারীর নিজের ও নিজের সৌন্দর্যকে পরপুরুষ থেকে আড়াল রাখার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হল গৃহে অবস্থান। কেননা গৃহের চার দেয়াল এবং পর পুরুষের সামনে না যাওয়া ও তাদের সঙ্গে উঠাবসা-চলাফেরা থেকে বিরত থাকাই নারীর জন্য বড় পর্দা। আর এজন্যই আল্লাহ তাআলা নারীকে আদেশ করেছেন গৃহের অভ্যন্তরে অবস্থানের। ইরশাদ করেছেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَ
আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। -সুরা আহযাব : ৩৩

সুতরাং গৃহে অবস্থানই হল নারীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং এটিই তার প্রধান কর্মক্ষেত্র। তবে প্রয়োজনে সে বাইরে যেতে পারবে। কিন্তু বাইরে অবস্থান শুধু প্রয়োজনবশত ও প্রয়োজন পরিমাণ হতে হবে। আর এ সময়ও নিজেকে ও নিজের সৌন্দর্যকে রাখতে হবে পরপুরুষের দৃষ্টির আড়ালে। অথচ হেযবুত তওহীদ নারীদের ঘর থেকে বের করার মিশনে নেমেছে।

নারীদের ঘরে রাখার সিস্টেমটা খৃষ্টানদের?
পূর্বের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম, মহিলাদের প্রধান কর্মক্ষেত্র হলো, তার ঘর।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মহিলাদের ঘরে রাখার প্রচলণটা খৃষ্টানদের। তারা লিখেছে,
আজকের ধর্মের নামে যে সন্ত্রাস চলছে, ব্যবসা চলছে, রাজনীতি চলছে, ধর্মের বিধি-নিষেধের বেড়ি পরিয়ে নারীদেরকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পোশাক লেবাস ও আচার-আচরণে মধ্যে ধর্ম আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সঙ্গীত, সাহিত্য, কলা, সংস্কৃতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদিকে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন করে ফেলা হয়েছে, কেবল তাই নয় এগুলিকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এগুলো সব কিছুই করা হচ্ছে বিকৃত এসলামের ধারণা মোতাবেক। আরো সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে এইসব ধারণার অধিকাংশই মধ্যযুগীয় খ্রিস্টীয় মতবাদ যা সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামের গায়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৫৪

ইসলাম কী বলে?
কুরআন মাজীদে নারীদেরকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের আদেশ করা হয়েছে। মহান রব ইরশাদ করেছেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَ
আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহেলী যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। -সুরা আহযাব : ৩৩

এই আয়াতে গৃহকে নারীর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। এটি ছাড়া সমগ্র কুরআন মজীদে আর মাত্র দুটি আয়াত এমন আছে, যেখানে গৃহের সম্বন্ধ নারীর দিকে করা হয়েছে। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নারীর দিকে গৃহের এই সম্বন্ধ তার মালিকানা বোঝানোর জন্য নয়; বরং তা নারীর জন্য সর্বদা গৃহে অবস্থান  আবশ্যক হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। অতএব বোঝা গেল, নারীর প্রধান কর্মক্ষেত্র ও তার সকল কর্মব্যস্ততা হবে গৃহের অভ্যন্তরে। ঘরোয়া ও সাংসারিক কাজকর্মই হবে তার প্রধান কাজ। আর পুরুষের কর্মক্ষেত্র ও কর্মব্যস্ততা হবে গৃহের বাইরে।

নারী-পুরুষ প্রত্যেকের সমাজ হবে আলাদা। নারীর বিশেষ সমাজ শুধু নারীর সঙ্গে; গৃহের অভ্যন্তরে। আর পুরুষের বিশেষ সমাজ হবে শুধু পুরুষের সঙ্গে ও গৃহের বাইরে। তো ইসলামে যেহেতু নারীকে ঘরে অবস্থানের বিধান দেওয়া হয়েছে তাই সমাজের কর্তব্য, তাকে এই বিধান পালনের সুযোগ দেওয়া। চাপ প্রয়োগ করে বা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নারীকে এই বিধান পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এটা নারীর ধর্মীয় অধিকার। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ একটি হাদিসে তার ‘সমর্থিত ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন এভাবে-
وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ بَعْلِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ
একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন নারী হল তার স্বামীর ‘গৃহবাসী ও তার সন্তান-সন্ততির’ রক্ষনাবেক্ষনকারী। (এটাই তার জিম্মাদারী ও দায়িত্ব)। সে তাদের ব্যপারে জিজ্ঞাসীত হবে। -সহিহ বুখারী : হাদীস নং : ২৫৫৪

প্রিয় পাঠক, এই হাদীসে পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে যে, নারীদের দায়িত্ব হল বাড়ির ব্যবস্থাপনার দেখাশোনা করা, সন্তান-সন্ততির তরবিয়ত ও পরিচর্যা করা এবং ব্যক্তিগত ব্যপারগুলোর সু-বন্দোবস্থ করা। গৃহের বহিঃর্ভাগের কোনো দায়িত্ব তার কাধে সোপর্দ করা হয়নি। এ কথাটি যে শুধু আমাদের কথা, তাই নয়, বরং হেযবুত তওহীদও নারী অধিকার বিষয়ে প্রসঙ্গক্রমে বলেই ফেলেছে-

নারীর অধিকার হলো সে একটি সংসার লাভ করবে যেখানে তার সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা থাকবে।… যেহেতু নারীর শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষ অপেক্ষা কোমলতর তাই জীবনের প্রতিটি অবস্থানেই তার সুরক্ষার আবশ্যকতা রয়েছে। এজন্য পুরুষকে পারিবারিক জীবনে নারী রক্ষাকারী ও অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৬৪

পুরুষের কাজ বাহিরে মহিলার কাজ ঘরে। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৬১

সুতরাং বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদও জানে যে, নারীদের কাজ হলো ঘরে। তাছাড়া সৃষ্টি ও উদ্দেশ্য বিচারেও গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান নারীর অধিকার। কেননা আল্লাহ তাআলা নারীকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বল করে। তাকে সৃষ্টি করেছেন আদমের পাজর থেকে। ফলে সে আদমের (পুরুষের) একটি অংশবিশেষ। নারীকে মুখোমুখি হতে হয় ঋতুচক্রের, ধারণ করতে হয় গর্ভ, সহ্য করতে হয় প্রসব বেদনা, স্তন্যদান ও আনুষঙ্গিক দায়িত্ব। সর্বোপরি তাকে পালন করতে হয় ভবিষ্যত প্রজন্মের লালন-পালনের গুরুভার। আর এ কথা তো দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, যে নারী অফিস-আদালত, কল-কারখানায় কাজ করে তার পক্ষে এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়। কেননা সে তো সর্বদা ব্যস্ত থাকে তার কর্মক্ষেত্রের নানা কাজে। অফিসের বিভিন্ন দায়িত্বে তাকে সময় দিতে হয়। ফলে ঘরে তার সময় দেওয়া, সন্তানদের দেখাশোনা, খোঁজখবর নেওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

সুতরাং সৃষ্টি-উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিচারেও ঘরে অবস্থানের সুযোগ নারীর প্রাপ্য। এটা তার মানবিক অধিকার। বিশেষত যখন বর্তমান সমাজে নারীর নিরাপত্তা সর্বোচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ সর্বত্রই যখন নারী অনিরাপদ। তার ইজ্জত-সতিত্ব, জীবন-প্রাণ যখন প্রতি মুহূর্তে চরম হুমকির সম্মুখীন তখন নারীর জন্য ঘরের নিরাপত্তা বলয় ছেড়ে নিজেকে নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি করা, নিজের সতীত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে পদে পদে উত্যক্ততা, ধর্ষণের শিকার হওয়ার কোনো যুক্তি হতে পারে না।

অথচ দুঃখজনক বাস্তবতা হল, প্রগতির দাবিদার এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও নারীবাদী এবং হেযবুত তওহীদ মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দিয়ে নারীকে আজ ঘরের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের হীন স্বার্থে তারা নারীকে ও নারীর রূপ-সৌন্দর্যকে ব্যবসার পণ্যে পরিণত করছে। তারা নারীকে বোঝাচ্ছে যে, ঘরের কোণে পড়ে থাকায় কোনো স্বাধীনতা নেই। স্বামীর অনুগত থাকায় কোনো সম্মান নেই। প্রকৃত সম্মান কেবল বাইরের জীবনে। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও উপার্জন করতে হবে। কমপক্ষে নিজের প্রয়োজন পূরণের মতো উপার্জন-উৎস তার থাকতে হবে। তবেই সে হবে প্রকৃত সুখী, প্রকৃত স্বাধীন। তারা দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে আনে পশ্চিমা সভ্যতাকে। যেখানে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বাজার-শপিংমলসহ সর্বত্র নারীরা কাজ করে চলেছে।

আর অবলা নারীও প্রলুব্ধ হয়ে নির্বোধের মতোই পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণে মেতে উঠেছে। প্রগতিশীল হওয়ার তাগিদে ও হেযবুত তওহীদের ধোকায় পড়ে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে অফিস-আদালতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘরের চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকাকে পরাধীনতা মনে করতে শুরু করেছে। স্বামীর অনুগত হওয়াকে অসম্মান মনে করছে। যে বিষয়টা আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ দিলেন, সেটাকে খ্রিষ্টানদের নিয়ম বলে অবিহিত করা কী সরাসরি আল্লাহ পাকের বিরোধীতার শামিল নয়? কারণ মহান রব বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلاَ تَبْغُواْ عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। -সুরা নিসা : ৩৪

وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللّهُ عَزِيزٌ حَكُيمٌ
নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপর পুরুষের মর্যাদা আছে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। -সুরা বাকারা : ২২৮

সুতরাং বুঝা গেলো, নারী-পুরুষের মধ্যে পুরুষকে বিশেষ মর্যাদায় আসীন করেছেন খোদ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা। কিন্তু নাস্তিকদের সাথে তালে তাল দিয়ে পবিত্র কুরআনকমের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হেযবুত তওহীদ বেঈমানদের খুশি করতে চায়।

নারী নেতৃত্ব হালাল?
ইসলামে নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়। সমাজ বা রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেয়ার যে যোগ্যতা থাকা জরুরী, সেটা আল্লাহ তাআলা নারীকে দেন নি। যার কারণে মহিলারা নামাজের ইমামতি করার অনুমতি শরীয়ত কর্তৃক পান নি। উপরন্তু নারী নেতৃত্বকে বিফলতার কারণ হিসাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে সেই নবীজি সা. এর যুগে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা এই মহাসত্যকে অস্বীকার করে নাস্তিকদের সুরে কথা বলছে। তারা দাবি করে লিখেছে,

১. নারী নেতৃত্ব আল্লাহ হারাম করেননি।
নারীদের ঘরে থাকতে হবে, নারী নেতৃত্ব হারাম, ছেলেদের দাড়ি রাখতে হবে, আরবে লেবাস পড়তে হবে, নাচ গান ছবি আঁকা ভাস্কর্য তৈরি সব হারাম। কোরআন এগুলোর একটাকেও প্রত্যক্ষভাবে হারাম করেনি। কিন্তু ফতোয়া দিয়ে সবই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১০

২. নারীদের নেতৃত্বের অধিকার নবীজি সাঃ দিয়েছেন:
নারীদেরকে আল্লাহর রাসুল মানুষের মর্যাদা দিলেন। তাদেরকে প্রতিটি সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এমনকি নেতৃত্বে অধিকার দিলেন তাদেরকে দুর্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত করলেন। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১৬

মদিনার বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন শেফা রা:। এভাবে নারীর ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণ ছিল সমাজের সর্বত্র। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৬৩

৩. আলেমরা মিথ্যা ফাতাওয়া দিয়ে নারী নেতৃত্ব হারাম করেছে:
প্রকৃত ইসলামে নারীকে যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছিল সেটা এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। বর্তমানের বিকৃত ইসলামে তার লেশমাত্রও নেই। তাই এখন নারী অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা ইসলামের ঘোরবিরোধী। হবে না-ই বা কেন? শত বছর ধরে নারীকে ঐসব বিকৃত ফতোয়ার বলি হয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ইসলামের নামে নারীকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, শোষণ করা হয়েছে, অবদমিত করা হয়েছে। কোরআন নারী ও পুরুষকে একে অপরের সহযোগী বলে ঘোষণা দিয়েছে। সেটা অবশ্যই জীবনের সর্ব অঙ্গনে। কিন্তু ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে সামাজিক জীবনের সকল কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করা হয়েছে। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৫

ইসলাম কী বলে?
নারী নেতৃত্ব ইসলামে হারাম করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে পুরুষ হওয়া শর্ত। ইসলামের প্রথম যুগের সাহাবায়ে কেরাম রা. ও তাবেয়ীন সবাই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। যার কারণে খুলাফায়ে রাশেদা হিসাবে কোনো নারী সাহাবী ছিলেন না। সাহাবা-তাবেয়ীদেরই অনুসরণ করেছেন সব মাজহাবের ইমামগণ, ফুকাহায়ে কেরাম, উলামায়ে কেরাম, মুহাদ্দিসগণ ও মুফাসসিরগণ। সবাই ইজমা (ঐকমত্য পোষণ) করেছেন যে, নারীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহণের যোগ্য নয়, কোনো ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান নেতা (খলিফা) হিসেবে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া জায়েজ নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ
পুরুষরা নারীদের উপর অভিভাবক, কর্তা, এটা এজন্য যে, আল্লাহ তা’য়ালা কতককে কতকের উপর ফজীলত দান করেছেন। -সুরা নিসা : ৩৪

উপরন্তু হযরত আবু বাকরাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
لَقَدْ نَفَعَنِي اللهُ بِكَلِمَةٍ سَمِعْتُهَا مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَيَّامَ الْجَمَلِ بَعْدَ مَا كِدْتُ أَنْ أَلْحَقَ بِأَصْحَابِ الْجَمَلِ فَأُقَاتِلَ مَعَهُمْ قَالَ لَمَّا بَلَغَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّ أَهْلَ فَارِسَ قَدْ مَلَّكُوْا عَلَيْهِمْ بِنْتَ كِسْرَى قَالَ لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمْ إِمْرَأَةً
রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে শ্রুত একটি বাণীর দ্বারা আল্লাহ জঙ্গে জামালের (উষ্ট্রের যুদ্ধ) দিন আমার মহা উপকার করেছেন, যে সময় আমি সাহাবায়ে কিরামের সঙ্গে মিলিত হয়ে জামাল যুদ্ধে শারীক হতে প্রায় প্রস্তুত হয়েছিলাম। আবূ বাকরাহ (রাঃ) বলেন, সে বাণীটি হল, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যবাসী কিসরা কন্যাকে তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছেন, তখন তিনি বললেন, সে জাতি কক্ষণো সফল হবে না স্ত্রীলোক যাদের প্রশাসক হয়। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৪৪২৫

হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
إِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ خِيَارَكُمْ وَأَغْنِيَاؤُكُمْ سُمَحَاءَكُمْ وَأُمُورُكُمْ شُورَى بَيْنَكُمْ فَظَهْرُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ بَطْنِهَا وَإِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ شِرَارَكُمْ وَأَغْنِيَاؤُكُمْ بُخَلاَءَكُمْ وَأُمُورُكُمْ إِلَى نِسَائِكُمْ فَبَطْنُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ ظَهْرِهَا ‏
যখন তোমাদের মধ্যকার উত্তম লোক তোমাদের শাসক হবে তোমাদের সম্পদশালীরা দানশীল হবে এবং তোমাদের কর্ম পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে, তখন ভূতলের তুলনায় ভূপৃষ্ঠই তোমাদের জন্য উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের মধ্যকার খারাপ লোক তোমাদের শাসক হবে, তোমাদের সম্পদশালীরা কৃপণ হবে এবং তোমাদের কার্যবলী তোমাদের নারীদের উপর ন্যস্ত করা হবে তখন ভূতলই ভূপৃষ্ঠের তুলনায় তোমাদের জন্য উত্তম হবে (অর্থাৎ জীবনের চেয়ে মৃত্যুই উত্তম)। -সুনানে তিরমিযী : হাদীস নং : ২২৬৬

হযরত আবু বাকরাহ রা. বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عِنْدَ بَعْضِ نِسَائِهِ فَأَتَاهُ بَشِيرٌ يُبَشِّرُهُ بِظَفَرِ أَصْحَابِهِ قَالَ فَخَرَّ سَاجِدًا ثُمَّ قَالَ لِلرَّسُولِ حَدِّثْنِي قَالَ الَّذِي يَلِي أَحَدَهُمُ امْرَأَةٌ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلَكَتِ الرِّجَالُ حِينَ أَطَاعَتِ النِّسَاءَ
রাসুলে করীম সা. একবার কোথাও সৈন্যদল প্রেরন করলেন। সেখান থেকে এক ব্যক্তি বিজয়ের সু-সংবাদ নিয়ে এলে বিজয়ের সুসংবাদ শুনে তিনি সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন। সিজদা’র পর তিনি সংবাদ বাহককে বললেন, বিস্তারিত বিবরণ বলো। সংবাদদাতা বিস্তারিত ঘটনাবলীর মধ্যে একটি বিষয় এও ছিল যে, একজন নারী তাদের নেতৃত্ব করছিল। রাসুলুল্লাহ সা. একথা শুনে বললেন, পুরুষরা যখন নারীদের অনুগত্য করা শুরু করে দিবে, তখন তারা বরবাদ-ধ্বংস হয়ে যাবে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস নং- ৭৮৭০

সুতরাং উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণ হলো, নারী নেতৃত্ব ইসলামে পরিস্কার হারাম।

আয়েশা রা. ও নারী নেতৃত্ব:
নারী নেতৃত্ব হালাল প্রমাণ করতে হেযবুত তওহীদ একটা দলীল পেশ করে থাকে। তারা লিখেছে,
১৪০০ বছর আগে যে যুগে মেয়ে শিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো সেই সময়ে ইসলাম এমন পরিবর্তন এনেছিল যে আম্মা আয়েশা রা: উটের যুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব পর্যন্ত দিয়েছিলেন। মদিনার বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন শেফা রা:। এভাবে নারীর ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণ ছিল সমাজের সর্বত্র। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৩

অর্থাৎ তারা নারী নেতৃত্ব বৈধ প্রমাণে আম্মাজান আয়েশা রা. এর জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধের বিষয়টা টেনে নিয়ে এসেছে। চলুন এ বিষয়টি একটু জেনে নেওয়া যাক। প্রথমত জানতে হবে জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধ কাকে বলে?

উটের যুদ্ধ কী?
উটের যুদ্ধ বলতে ইহুদীবাদী সাবায়ী চক্রের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে সাহাবাদের মধ্যে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়। উভয় পক্ষই ছিলেন দ্বীনের পক্ষে। হকের পক্ষে। কোন দলই যুদ্ধ কামনা করেন নি। কিন্তু রাতের গভীরে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থানকারী দুই বাহিনীর উপরই এক সাথে হামলা করে বসে সাবায়ী চক্র। ফলে সৃষ্ট হয় বিভ্রান্তির। হযরত তালহা, হযরত জুবায়ের ও হযরত আয়শা রা. এর বাহিনী মনে করেন হযরত আলী রা. এর বাহিনী হামলা করেছে, আর হযরত আলী রা. এর বাহিনী মনে করেন অপরপক্ষ হামলা করেছে। এ ভুল বুঝাবুঝির কারণে শুরু হয় এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ইতিহাসের এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডীর জন্ম দেয় কুখ্যাত সাবায়ী চক্র। রাতের গভীরে সংঘটিত হওয়া এ দুঃখজনক ভুল বুঝাবুঝির যুদ্ধটিই ইতিহাসে জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ। আব্দুল্লাহ বিন সাবার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয় এক মর্মান্তিক ইতিহাস। নির্দোষ ১০ হাজার মুসলমান শহীদ হন সে যুদ্ধে। -তারীখে তাবারী, খ. ৩ পৃ. ৫৪

আয়েশা রা. কী উটের যুদ্ধে নেতৃত্বব দিয়েছিলেন?
ইসলামের ইতিহাসে শুধু আয়শা রা. নয়, কোন মুসলিম নারীই প্রধান নেত্রী হয়ে যুদ্ধ করেন নি, বরং সহযোগী ছিলেন। হযরত আয়শা রা. জঙ্গে জামালে তিনিই মূল নেত্রী ছিলেন না। মূল ছিলেন হযরত জুবাইর রা. এবং তালহা রা. সহ অন্য সাহাবীরা। সবচে বড় কথা হলো, জঙ্গে জামালে হযরত আয়শা রা. যুদ্ধ করার জন্য আসেনই নি, যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছাই ছিল না। ঘটনাক্রমে চক্রান্তের শিকার উভয় মুসলিম বাহিনী। গভীর রাতে ভুল বুঝাবুঝির কারণে সৃষ্ট বিশৃংখল যুদ্ধের নেতৃত্ব হযরত আয়শা রা. করেছেন একথা একটি বোকামীসূলভ মন্তব্য। তিনি হযরত জুবাইর রা. এবং হযরত তালহা রা. এর সাথে সে ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত থাকলেই নেতৃত্ব হয়ে যায় এমন কথা বলাটা অযৌক্তিক।

যুদ্ধক্ষেত্রে ও চিকিৎসায় নারী সাহাবী রা.
নারী নেতৃত্বকে বৈধতা দিতে হেযবুত তওহীদ আরো কয়েকটা দলীল পেশ করে থাকে। তারা লিখেছে,
প্রকৃত ইসলামে নারীর আল্লাহ-রসূলের সাথে থেকে যুদ্ধ করেছে, যুদ্ধাহতদের সেবা করেছে, যুদ্ধের রসদ সরবরাহের কাজ করেছে, পুরুষদেরকে যুদ্ধের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেছে, হাসপাতাল পরিচালনা করেছে এবং স্বয়ং যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬২

যে যোদ্ধাদেরকে তারা(মহিলা সাহাবারা) চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তারা কিন্তু অধিকাংশই ছিলেন আলেমদের ভাষায় বেগানা পুরুষ। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৩

মসজিদে নববীর পাশে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য একটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছিল, যার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন একজন নারী। রুফাইদা রা:। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ৪৭

ইসলাম কী বলে?
এক. যুদ্ধক্ষেত্রে নবিজি সাঃ-এর সাথে নারী সাহাবীরাও অংশগ্রহণ করতেন। এর মানে কী তাঁরা নেতৃত্বে ছিলেন? তাঁরা যদি নেতৃত্বে থাকেন,তাহলে নবিজি সাঃ কী তাদের অনুগত হয়ে যুদ্ধ করতেন? কী হাস্যকর দাবি!

দুই. যুদ্ধক্ষেত্র হোক বা স্বাভাবিক অবস্থা হোক। সর্বক্ষেত্রেই পর পুরুষ রোগীর জন্য মহিলা ডাক্তার অথবা মহিলা রোগীর জন্য পুরুষ ডাক্তারের চিকিৎসা প্রদান করা অতীব প্রয়োজনে বৈধ। তবে শর্ত হলো, প্রয়োজন অতিরিক্ত অঙ্গ দেখা বা স্পর্শ করা বৈধ নয়। ইবনে হাজার আসকালানী রহি. বলেন,
تَجُوزُ مُدَاوَاةُ الْأَجَانِبِ عِنْدَ الضَّرُورَةِ ، وَتُقَدَّرُ بِقَدْرِهَا فِيمَا يَتَعَلَّقُ بِالنَّظَرِ وَالْجَسِّ بِالْيَدِ وَغَيْرِ ذَلِكَ
প্রয়োজনের সময় অপরিচিত পুরুষের জন্য নারীদের চিকিৎসা বৈধ, তবে প্রয়োজন পরিমান দেখা বা স্পর্শ করা যাবে। -ফাতহুল বারী, খ. ১০ পৃ. ১৩৬

কিন্তু হযরত রুফায়দা আসলামী রা. যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা দিতেন, এটা কী নারী নেতৃত্বের কোনো প্রমাণ হলো? মুর্খতারও তো একটা সীমা থাকে। যাহোক, নারী নেতৃত্ব জায়েয নয়। এটা কুরআন সুন্নাহর পাশাপাশি উম্মতের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত।

সকল উম্মতের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত:
নারী নেতৃত্ব হারাম হওয়ার ব্যাপারে সকল উম্মতের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত রয়েছে। এব্যাপারে ইবনে হাযাম রহি. বলেন,
و اتفقوا ان الامامة لا تجوز لامراة
সকল ওলামায়ে কেরাম এব্যপারে একমত যে, কোনো নারীর জন্য ‘রাষ্ট্র প্রধান’ হওয়া জায়েয নয়। -মারাতিবুল ইজমা : পৃ. ১২৬

সুতরাং এমন সুস্পষ্ট আয়াত,হাদিস ও উম্মতের ইজমা তথা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত থাকা সত্তেও যারা নারী নেতৃত্ব হালাল দাবি করে, তারা মুক্তমনাদের মিশন বাস্তবায়ন করতে চায়।

মসজিদে,ঈদগাহে,বাজার-ঘাটে নারী আনা যাবে?
নারীরা সর্বদিক দিয়ে আবরণ। সে হিসাবে তারা সর্ববিষয়ে তাদের জন্য ঘরই উত্তম। চাই সেটা দুনিয়াবি হোক বা আখেরাতের বিষয়।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘আল্লাহর রসূল নারীদের পর্দা দোহাই দিয়ে ঘরের কোনায় বসিয়ে রেখেছিলেন এমন কোনো ইতিহাস কেউ দেখাতে পারবেন না। তারা আল্লাহ-রসূলের সাথে একসাথে সালাহ কায়েম করতেন, রসূলের সামনে বসে কথা শুনতেন, জাতীয় বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। এমনকি ব্যক্তিগত সামান্য বিষয়েও রাসুলুল্লাহর সাথে আলাপ করতেন। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৬২

মহিলাদের কে ঈদের সালাতে যেতে আদেশ করতে হবে। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৬২

ইসলাম কী বলে?
হযরত উম্মে  হুমাইদ আস সাআদী রা. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রাসুলুল্লাহ স: এর নিকট এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাই। নবি কারীম সাঃ উত্তরে বললেন,
قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلاةَ مَعِي وَصَلاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ وَصَلاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلاتِكِ فِي دَارِكِ وَصَلاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ وَصَلاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي مَسْجِدِي قَالَ فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِي أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ فَكَانَتْ تُصَلِّي فِيهِ حَتَّى لَقِيَتْ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ
আমি ভালো করেই জানি, তুমি আমার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাও। কিন্তু তোমার জন্য তোমার রুমে নামাজ আদায় করা অন্য রুমে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার ঘরের কোনো রুমে আদায় করা বাড়িতে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার  বাড়িতে নামাজ আদায় করা কওমের (এলাকার ) মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার কওমের (এলাকার ) মসজিদে নামাজ আদায় করা আমার পিছনে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এরপর ঐ মহিলা তার অন্ধকার কুঠরিতে নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে নেয়। এবং মৃত্যু পর্যমত সেখানেই নামাজ আদায় করতে থাকে। -মুসনাদে আহমাদ :  হাদিস নং : ২৭০৯০

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ
যদি রাসুলুল্লাহ সাঃ বর্তমানকালের মহিলাদের অবস্থা দেখতেন তাহলে তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন। যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনি ইসরাইলের মহিলাদেরকে। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৮৬৯

উপরন্তু হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. নিজে জুমআর দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। -আল মু’জামুল কাবির : হাদিস নং : ৯৪৭৫

সুতরাং ইসলামের সম্পূর্ণ বিধিবিধান না জেনে মহিলাদের ঘর থেকে বের করে মসজিদে,বাজার-ঘাটে,ঈদগাহে আনার চেষ্টা করা কতটুকু ইসলাম সম্মত?

সফরে মহিলার সাথে মাহরামের যাওয়া আলেমদের ফাতাওয়া?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ সকল বিষয়ে আলেমদের দোষী সাব্যস্ত করতে মরিয়া। সে ধারাবাহিকতায় ‘মহিলার সাথে সফরে পুরুষ মাহরামের যাওয়া বাধ্যতামূলক’  হওয়ার ব্যাপারটিও আলেমদের ফাতাওয়া বলে কটুক্তি করে বসলো। তারা লিখেছে,
তারা (আলেমরা) লিখেছেন, মেয়েরা ঘরে থাকবে বাইরে গেলেও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে যাবে। যদিও আল্লাহ সমস্ত বিশ্বে বিচরণ করার নির্দেশ দেন সেখানে নিরাপত্তার অজুহাত তুলে মেয়েদেরকে মসজিদে যেতে দিতে নারাজ, তাহলে তারা বিশ্বের অপর প্রান্তে নারীদেরকে যেতে দেবেন কোন মাসালা মোতাবেক? এখানেই তো প্রচলিত ইসলামের শরা-শরীয়ত শেষ। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ২৫

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, মহিলারা একা সফর করতে পারবে। সফরে মহিলাদের সাথে নিকটাত্মীয় কোনো মাহরামকে নিতে হবে এটা আলেমদের অযৌক্তিক ও শরীয়া বিরোধী ফাতাওয়া।

ইসলাম কী বলে?
অথচ এ ফাতাওয়াটা খোদ রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর। হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাঃ বলেছেন,
لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُسَافِرَ مَسِيرَةَ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لَيْسَ مَعَهَا حُرْمَةٌ ‏
যে মহিলা আল্লাহ্ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে কোন মাহরাম পুরুষকে সাথে না নিয়ে একদিন ও এক রাত্রির পথ সফর করা জায়িয নয়। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং- ১০৮৮

সুতরাং বুঝা গেলো, মহিলারা নিকটাত্মীয় (মাহরাম) ছাড়া সফর করতে পারবে না। এটা আলেমদের ফাতাওয়া নয়, বরং বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সা. এর ফাতাওয়া। প্রশ্ন হলো, মুহামামাদ সা. এর ফাতাওয়ায়ও হেযবুত তওহীদের এলার্জী কেন? কারণ একটাই হেযবুত তওহীদ ইসলামের পক্ষের শক্তি নয়।

নারী-পুরুষ একসাথে খেলায় অংশগ্রহন করতে পারবে?
নারীজাতি সৃষ্টিগতভাবে কোমল ও আকর্ষণীয়। পুরুষের সাথে সর্বত্র অংশগ্রহণ করা বা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা ইসলামে বৈধ নয়।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা নারীবাদী নাস্তিকদের মিশন বাস্তবায়ণ করতে খেলাধুলাতেও অংশগ্রহণ করার নীতি চালু করেছে। তাদের নীতিমালা দেখুন,
কাবাডি আবার জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তিনি (পন্নী) তার জীবদ্দশায় “তাওহীদ কাবাডি দল” প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা সারাদেশে অসংখ্য কাবাডি টুর্নামেন্টের আয়োজন করে আসছেন।  মহামান্য এমামুয্যামানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাননীয় ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমও ‘তওহীদ ফুটবল ক্লাব’ গঠন করেছেন। কাজেই হেযবুত তওহীদের সকল নারী-পুরুষকে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করার জন্য আন্দোলনের সব শাখায় একটি ক্রীড়া বিভাগ থাকবে যার দায়িত্ব পালন করবেন একজন ক্রীড়া সম্পাদক। জাতীয়ভাবে পরিচালিত বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা এবং তাদের আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের চেষ্টা করা। -গঠনতন্ত্র : পৃ. ৩২

ইসলাম কী বলে?
কুরআন মজীদে নারীদেরকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের আদেশ করা হয়েছে। মহান রব ইরশাদ করেছেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَ
আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহেলী যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। -সুররা আহযাব : ৩৩

হাদিস শরীফে হযরত আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ
মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। সে বাইরে বের হলে শাইতান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। -জামে তিরমিযি : হাদিস নং : ১১৭৩

সুতরাং জাহিলী যুগের চেতনা জাগ্রত করতে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করতে হেযবুত তওহীদ প্রমাণই করে দিয়েছে যে, তারা মুসলমান নয়।

ইসলামে বোরখা ও হেযবুত তওহীদের ভ্রান্তি:
প্রিয় পাঠক, আমাদের সকলের জানা থাকা দরকার যে, ইসলামের শুরু যুগে পর্দার কোনো বিধানই ছিলো না। ফলে নারী পুরুষ এক সাথে দেখা করা বৈধ ছিল। কিন্তু পরবর্তিতে পর্দার কয়েকটি আয়াত নাজিল করে এ ব্যাপারে মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে সতর্কতা জারি করা হয়। ফলে নবীজি সা. এর স্ত্রীগণও পুরুষের সামনে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। এমনকি পুরুষ সাহাবাগণ তাঁদের সামনে আসলে তাঁরা মুখমণ্ডল কাপড় দিয়ে ঢেকে নিতেন। যা হাদিসে ভুরিভুরি প্রমাণ পাওয়া যায়।

উপরন্তু বর্তমানে নারীদের ইভটিজিং ও ধর্ষণ থেকে বেঁচে থাকার জন্য বোরখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যা বর্তমানের পরিসংখ্যান দেখলে যে কেউ ক্লিয়ার বুঝতে সক্ষম হবেন। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক ও মুক্তমনারা সর্বদা এ বোরখা নিয়ে বেশ বিষোদগার করেই চলেছে। তাদের দাবি হলো এ বোরখা নারীদের মধ্যযুগীয় সভ্যতা শিখাচ্ছে, চলমান বিশ্বে তাদেরকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ইত্যাদী ইত্যাদী।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের বর্তমান এমাম হুসাইন সেলিম মহিলাদের মুখমণ্ডল আবৃতকারী বোরখাকে নাস্তিকদের মতই বারবার কটাক্ষ করে কথা বলে, ‘বোরখা পরা মানেই নারীদেরকে বাক্সবন্দী করা, বোরখাওয়ালীরা আলাভোলা এমনকি বোরখা নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে কটুক্তি করে থাকে’। শুধু কী তাই? বোরখাকে শয়তানের আবিস্কার বলেও বক্তব্য দিয়েছেন এই তথাকথিত এমাম। যা অনলাইনে অহরহ পাওয়া যায়। চলুন তাদের কয়েকটা মন্তব্য নিন্মে তুলে ধরা হলো-

বোরখার আইন আল্লাহ ও রাসুল সাঃ-এর নয়:
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে পুরুষদেরকে আরবের জোব্বা পরিধান করতে হবে, মেয়েদেরকে আপদমস্তক ঢাকা বোরকা পরিধান করতে হবে। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৭

নারীদেরকে বোরখার নামে বাক্সবন্দী করা হয়েছে:
বর্তমানে ইসলামে ধার্মিক মেয়েদের তাদের বাক্সবন্দি অবস্থা থেকে বের করে চৌরাস্তার মোড়ে ছেড়ে দিয়ে আসলে তারা ওখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারেন না, ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। -ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ১৮

বোরখা পরিয়ে নারীদের অবলা প্রাণীতে পরিনত করা হয়েছে:
নারীকে একশ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী ধর্মের দোহাই দিয়ে, পর্দার অজুহাতে, তাদের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষার অজুহাতে মিথ্যে ফতোয়ার বেড়াজালে বন্দি করে আপদমস্তক কাপড়ে আবৃত কিম্ভূত কিমাকার অবলা প্রাণীতে পরিণত করে রেখেছে। তারা মনে করে নারীর পৃথিবী সম্পর্কে জানার দরকার নেই, শিক্ষালাভের প্রয়োজন নেই। নারী নেতৃত্বকে হারাম ফতোয়া দিয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ বানিয়ে রাখতে চায়। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬৩

বোরখা শয়তানের আবিস্কার:
বোরখা শয়তানের আবিস্কার। -ভিডিও লিংক- https://youtu.be/Q4swgJBQsVo

বোরখার কারণে নারীদের অধিকার হরণ করা হয়েছে।
এসলাম নারী ও পুরুষ উভয়কে শালীনতার হুকুম দিয়েছে কিন্তু তার মানে কি এই যে নারীকে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে,কিম্ভুতদর্শন অবয়বে ঘর থেকে বের হতে হবে?মোটেই নয়।কিন্তু এসব বিকৃতিই আজ সমাজের গভীরে দৃঢ়মূল হোয়ে আছে। স্বভাবতই এই অপ্রাকৃতিক শরীয়তের বিরুদ্ধে মোসলেম নারীর হৃদয় একসময় বিদ্রোহ কোরে উঠেছে,তারা প্রকৃত এসলামের রূপ সন্দর্শন করে নি,মানবাধিকার লংঘনকারী নির্যাতনমূলক পর্দাপ্রথাকেই তারা ভেবেছে এসলামের বিধান।এই অন্যায়ের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা খোদ এসলামকেই নিষ্পেষণের কল বোলে মনে কোরছে। -সম্পাদকীয়-দৈনিক দেশেরপত্র, সাপ্তাহিক সংকলন, সংখ্যা-১৫, সোমবার, ২৩ জুন ২০১৪

ইসলাম কী বলে?
ইসলামে নারীদের মুখসহ আপাদমস্তক ঢেকে রাখার নির্দেশ কুরআন-সুন্নাহ থেকে পাওয়া যায় অর্থাৎ নারীদের জন্য পর পুরুষের সামনে মুখসর্বস্ব শরীর ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
হে নবি, আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের ‘জিলবাবের” কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। -সুরা আহযাব : ৫৯

উক্ত আয়াতে নারীদের উপরে জিলবাব টেনে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জিলবাব অর্থ কি?
জিলবাবের অর্থ সম্পর্কে ইমাম কুরতুবী রহি. বলেন,
أَنَّهُ الثَّوْبُ الَّذِي يَسْتُرُ جَمِيعَ الْبَدَنِ
জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমন্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। -তাফসীরে কুরতুবী : খ. ১৪ পৃ. ২৪৩

উপরন্তু আয়াতের তাফসীরে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস রা. (যিনি সমস্ত মুফাসসিরদের সর্দার) তিনি বলেন,
ذَلِكَ أَنْ تَلْوِيَهُ الْمَرْأَةُ حَتَّى لَا يَظْهَرَ مِنْهَا إِلَّا عَيْنٌ وَاحِدَةٌ تُبْصِرُ بِهَا
(আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদের আদেশ করেছেন) তারা যেন কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাথা থেকে চাদর টেনে সম্পূর্ণ মুখমন্ডল আবৃত করে, শুধু (চলার জন্য) এক চোখ খোলা রাখে। -তাফসীরে কুরতুবী : খ. ১৪ পৃ. ২৪৩

উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো, নারীদের মুখমণ্ডলসহ পূর্ণ শরীর আবৃত করা ফরজ।

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে। -সুরা নূর : ৩১

উক্ত আয়াত সম্পর্কে আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, যখন আয়াতটি নাযিল হলো,
أَخَذْنَ أُزْرَهُنَّ فَشَقَّقْنَهَا مِنْ قِبَلِ الْحَوَاشِيْ فَاخْتَمَرْنَ بِهَا
তখন মুহাজির মহিলারা তাদের তহবন্দের পার্শ্ব ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমন্ডল ঢাকতে লাগলেন। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৪৭৫৯

মহান রব আরো বলেন,
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। -সুরা নূর : ৩০

প্রিয় পাঠক, এখানে সুক্ষ্ম একটি বিষয় খেয়াল করুন, বেগানা পুরুষদের থেকে নারীদের দেহো যেহেতু পরিপূর্ণ ঢেকে রাখা ফরজ, তাহলে মহান আল্লাহ পুরুষদেরকে নারীদের কোন অঙ্গ দেখা থেকে চক্ষু অবনত করার কথা বললেন? নিশ্চয় চেহারা। সুতরাং আয়াতটি থেকে ক্লিয়ার বুঝা যাচ্ছে মহিলাদের চেহারা দেখাও জায়েয নয়। এ কথাটি হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আলী রা. কে নবি সাঃ বলেন-
فلا تُتْبِعِ النَّظرةَ النَّظرةَ فإنَّ لكَ الأُولى وليسَتْ لكَ الآخِرةُ
হে আলী, (নারীদের দিকে হঠাৎ নজর পড়ে গেলে) দ্বিতীয়বার তাকাবে না, কারণ প্রথমবার তোমার জন্য সুযোগ রয়েছে, দ্বিতীয়বার নয়। -ইবনে হিব্বান : হাদিস নং : ৫৫৭

এ আয়াত এবং হাদিস থেকে সুস্পষ্ট বোঝা গেল যে, নারীদের চেহারা দেখাও বৈধ নয়। অতএব মহিলাদের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরপুরুষের দেখা জায়েয নেই বলে যেমন অন্যান্য অঙ্গ ঢেকে রাখা জরুরী, তেমনিভাবে চেহারাও যেহেতু বেগানা পুরুষের জন্য দেখা জায়েয নেই, সেহেতু মহিলারা চেহারাও ঢেকে রাখবে অন্য অঙ্গের মত। এটাও জরুরী।

হযরত আসমা বিনতে অাবি বকর রাঃ বলেন যে,
كنا نغطي وجوهنا من الرجال
আমরা পুরুষের থেকে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম। -মুসতাদরাকে হাকেম : খ. ১ পৃ. ৬২৫

হযরত উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর হজ্বের বিবরণে বলেছেন,
كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا عَلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ
ইহরামের কারণে তাঁরা নেকাব খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষেরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করতেন, তখন মহিলারা মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলতেন। পুরুষরা চলে যাওয়ার পর তাঁরা নেকাব তুলে ফেলতেন। -সুনানে আবু দাউদ : হাদিস নং- ১৮৩৩

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের মুখমণ্ডলও পর্দার অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু সময়ের চরম কুফরি সংগঠন হেযবুত তওহীদ মুখমণ্ডল ঢাকার বিষয়টি মানতেই নারাজ। কিন্তু কেন? কারণ এরা তসলিমা নাসরিনদের পেতাত্মা।

নবিজি সাঃ-এর সামনে কী পর্দা টানানো থাকতো?
হেযবুত তওহীদের দ্বিতীয় এমাম হুসাইন সেলিমকে জনৈক ব্যক্তি মহিলাদের সেমিনারে আসা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাবে বলেন, ‘
নবিজি সাঃ মহিলাদের সামনে পর্দা টানিয়ে রাখতেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই’। এ সম্পর্কে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে অহরহ ভিডিও পাওয়া যায়। তারা এ কথা একটু অস্পষ্টভাবে লিখেছে,
আল্লাহর রসূল নারীদের পর্দা দোহাই দিয়ে ঘরের কোনায় বসিয়ে রেখেছিলেন এমন কোনো ইতিহাস কেউ দেখাতে পারবেন না। তারা আল্লাহ-রসূলের সাথে একসাথে সালাহ কায়েম করতেন, রসূলের সামনে বসে কথা শুনতেন, জাতীয় বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। এমনকি ব্যক্তিগত সামান্য বিষয়েও রাসুলুল্লাহর সাথে আলাপ করতেন। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬২

সুতরাং তারা বুঝা চাচ্ছে, মহিলাদের সামনে পর্দা টানানোর ইতিহাস ইসলামে নেই। চলুন নিন্মে কয়েকটি প্রমাণ দেখা যাক। মহান আল্লাহপাক বলেন,
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ
আর (হে নবির সাহাবাগণ) তোমরা (নবি সঃ এর) স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। -সুরা আহযাব : ৫৩

পাঠক, এখানে ভাবনার বিষয় যে, নবিজি সাঃ-এর স্ত্রীগণ উম্মতের রুহানী মা। যাঁদের বিবাহ করাও উম্মতের জন্য চিরস্থায়ী হারাম। তারপরও তাঁদের সামনা-সামনি গিয়ে দেখা-সাক্ষাত খোদ সাহাবীদের জন্যও মহান আল্লাহ নিষেধ করে দিলেন। যদি নবীজি সা. এর স্ত্রীগণ ও সাহাবাদের ব্যাপারে সামনা সামনি হওয়া নিষেধ হয়, তাহলে আজ হেযবুত তওহীদ পর্দা না টানিয়ে, মহিলাদের সরাসরি সামনে বসিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য দেয়া কি কুরআন শরীফের প্রকাশ্য বিরোধিতা নয়?

হযরত আয়েশা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَوْمَتْ امْرَأَةٌ مِنْ وَرَاءِ سِتْرٍ بِيَدِهَا، كِتَابٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَبَضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ، فَقَالَ: مَا أَدْرِي أَيَدُ رَجُلٍ، أَمْ يَدُ امْرَأَةٍ؟ قَالَتْ: بَلِ امْرَأَةٌ، قَالَ: لَوْ كُنْتِ امْرَأَةً لَغَيَّرْتِ أَظْفَارَكِ يَعْنِي بِالْحِنَّاءِ
এক মহিলা পর্দার আড়াল থেকে একটি কিতাব হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে বাড়িয়ে দিলো। রাসুলুল্লাহ সাঃ তাঁর হাত না বাড়িয়ে বললেন, আমি বুঝতে পারছি না এটা কোনো পুরুষের হাত না কি নারীর হাত? তিনি বললেন, বরং নারীর হাত। নবিজি সাঃ বললেন, তুমি মহিলা হলে অবশ্যই তোমার নখগুলো মেহেদীর রঙ দ্বারা রঞ্জিত করতে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪১৬৬

উক্ত হাদিসে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ পাওয়া গেলো, উক্ত মহিলা সাহাবি  নবিজি সাঃ-এর সামনে না এসে পর্দার অপর প্রান্ত থেকে হাত বাড়িয়েছেন। হযরত উম্মে সালামা রাঃ বলেন
أنَّها كانتْ عند رسولِ اللهِ ﷺ ومَيْمُونةُ قالَتْ فبَيْنا نحن عندهُ أقْبلَ ابْنُ أمِّ مَكتومٍ فدَخَلَ عليه وذلكَ بعدَ ما أُمِرْنا بِالحجابِ فقال رسولُ اللهِ ﷺ احْتَجَبا مِنهُ فقُلتُ يا رسولَ اللهِ ألَيْسَ هو أعْمى لا يُبصِرُنا ولا يَعرِفُنا فقال رسولُ اللهِ ﷺ أفَعَمْياوانِ أنتُما ألَستُما تُبْصِرانِه
আমি ও মায়মুনা একদিন নবিজির কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় (অন্ধ সাহাবী) আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাঃ নবিজির কাছে প্রবেশ করলেন।আর এ ঘটনা ছিল পর্দার আয়াত নাজিল হবার পর।নবি সঃ আমাদের বললেন যাও পর্দা করো।আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল! সে তো অন্ধ, আমাদের দেখতে বা চিনতে পারবে না। নবি সঃ বললেন সে যদিও তোমাদের দেখতে পারবে না কিন্তু তোমরা কি দেখতে পারবে না? তোমরাও কি অন্ধ? -জামে তিরমিযি, হাদিস নং-২৭৭৮

প্রিয় পাঠক, উক্ত হাদিসে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়-
এক. পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার পরের ঘটনা’ বলে উনি এটা বুঝালেন যে, পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার পর আমরা আগে যেভাবে পুরুষের সাথে দেখা করা বৈধ মনে করতাম, সে সুযোগটা কিন্তু পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার পর আর অবশিষ্ট ছিলো না।

দুই. উক্ত হাদিসে নবিজি সাঃ-এর দু’জন স্ত্রী বললেন যে, হে নবি, তিনি তো অন্ধ, তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পারবেন না। তার অর্থ হচ্ছে- তিনি যদি অন্ধ না হতেন, তাহলে তো আমাদের দেখতে পেতেন, তখন না হয় গুনাহ হতো, কিন্তু তিনি যেহেতু অন্ধ, সেহেতু তিনি আমাদের দেখতে পারবেন না, সুতরাং গুনাহ হবে না। অতএব বুঝা গেল, মহিলাদের চেহারা দেখা গুনাহের কাজ এটা উনারা আগ থেকেই জানতেন এবং মানতেন।

তিন. হাদিসটি থেকে এটাও বুঝা গেল যে, প্রয়োজন ছাড়া মহিলারাও পুরুষকে দেখা বৈধ নয়। আর এ কারণেই নবিজি সাঃ তাঁদেরকে ঘরে যেতে বলেছিলেন।

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা দিয়ে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহিলা-পুরুষ পরস্পরে দেখা সাক্ষাৎ বৈধ নয়। এটা কুরআন মাজিদ ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এতদ্বসত্বেও হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নারী-পুরুষ এক সাথে মিটিং-সেমিনার করে মূলত ইসলামের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চরম ভাবে ইসলামকে আহত করে চলেছে। শুধু তাই নয়, বরং বোরখাকে যে বা যারা শয়তানের আবিস্কার বলতে চায় আসলে ওরা কারা? স্পষ্ট এ সকল আয়াত-হাদিসকে অস্বীকার করে যারা বোরখা বিরোধী কথা বলে তারা কি তসলিমা নাসরিনের মিশন বাস্তবায়নে ব্যস্ত নয়?

পর্দার ওয়াজ কী জরুরি নয়?
পর্দা সম্পর্কে হেযবুত তওহীদের কটুক্তি দেখলে মনে হয়, পর্দার বিরোধিতা করাই যেন হেযবুত তওহীদের মিশন। তারা আরও লিখেছে,
আমার প্রশ্ন যে সমাজে ২/৩ বছরের শিশুকন্যা ধর্ষিতা হয়, সেখানে পর্দা নিয়ে ওয়াজ করা গুরুত্বপূর্ণ নাকি সমাজ পাল্টানোর জন্য আলেমদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ? -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৫

জবাব:
শুধু সংগ্রাম করে কোনোদিন মানুষের আত্মিক পরিবর্তন পূর্ণভাবে সম্ভব নয়। সকল অপরাধ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে প্রয়োজন মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধতা। যখন মানুষের আত্মশুদ্ধ হবে তখন সে ২/৩ বছরের শিশু কেন বিশ্বসুন্দরীর দিকেও তাকাবে না। সমাজ পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু তারচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের আত্মশুদ্ধি করা। সুতরাং সংগ্রামের কথা বলে পর্দার ওয়াজের বিরোধিতা করা নিছক ইসলামের বিরোধিতার শামিল।

শালীন পোষাক কোনটা?
মহিলাদের পোষাকের ক্ষেত্রে হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, শালীন পোষাক হওয়া বাধ্যতামূলক। তারা লিখেছে,
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোনরূপ বাধ্যবাধকতা নেই যে, পুরুষদেরকে আরবীয় জুব্বা পরিধান করতে হবে, মেয়েদেরকে আপাদমস্তক ঢাকা বোরকা পরিধান করতে হবে পৃথিবীর একেক অঞ্চলের মানুষ একেক ধরনের পোশাক পরে থাকে। ভৌগলিক অবস্থা, জলবায়ু ঐতিহাসিক পটভূমি ইত্যাদি এলাকার মানুষের পোশাক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসলাম যেহেতু সমগ্র পৃথিবীর জন্য এসেছে তাই এর কোন নির্দিষ্ট পোশাক থাকা সম্ভবও নয়। শুধু একটি মাত্র শর্ত আল্লাহ দিয়েছেন তা হলো পোশাক যেন শালীনতা পরিপন্থী না হয়। অশালীন পোশাক পরিধান করা নিশ্চয় কোন ধর্মমতেই অনুমোদিত নয়। -আসুন-সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৭

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, পোষাক যদি শালীন হয়, তাহলে সেটাই যথেষ্ট। আপাদমস্তক ঢাকা জরুরী নয়।

জবাব:
হেযবুত তওহীদের কাছে আমার প্রশ্ন ‘পোষাকের ক্ষেত্রে শুধু শালীনতা শর্ত’ এটা কোন আয়াত বা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত? এরপরও যদি তর্কের খাতিরে ধরে নিই যে, পোষাক শালীন হলেই যথেষ্ট তাহলে হেযবুত তওহীদের কাছে শালীন বলতে কোন পোষাক বুঝায়? শালীন শব্দের ব্যাখ্যা কে দেবে? হেযবুত তওহীদ না কুরআন সুন্নাহ ও সাহাবারা রা.? নিশ্চয় কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবারা।  কারণ ইসলামের সকল ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দিয়েছেন সাহাবায়ে কেরাম রা.। কারণ হেযবুত তওহীদই বলেছে,
‘প্রকৃত ইসলাম কি তা ঐ আসহাবদের চেয়ে বেশি কেউ জানতে বুঝতে পারতে পারে না, তা অসম্ভব। কারণ তারা আল্লাহর রসূলের সঙ্গে সর্বদা থেকে তার সঙ্গে অবিরত সংগ্রাম করে তার প্রতি সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে যে প্রকৃত শিক্ষা তার কাছ থেকে লাভ করেছেন, সে শিক্ষা পরবর্তীতে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১৮

সুতরাং পোষাক কেমন হবে সেটাও সাহাবায়ে কেরামের রা. থেতেই জেনে নেওয়া উচিৎ। আর উপরে আলোচনায় আপনারা দেখেছেন যে, সাহাবায়ে কেরাম রা. নারীদের পোষাকের ব্যাপারে মুখমণ্ডলসহ পুরো শরীর আবৃত করার কথা বলেছেন। সুতরাং প্রমাণ হলো, নারীদের জন্য পরপুরুষের সামনে মুখমণ্ডলসহ আাদমস্তক ঢেকে রাখা ফরজ। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সহিহ বুঝ দান করুন। আমীন!

Check Also

মানবতাই ধর্ম:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মানতে নারাজ। তাদের কাছে ধর্ম হলো, ‘মানবতা’ বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.