বর্তমান সময়ে কিছু মানুষ প্রচার করে যাচ্ছেন যে, নবীজি সা. এর আমল নামায় কোনো সাওয়াব পাঠানো যাবে না। অথচ রাসুল সা. এর ইন্তেকালের পর একাধিক সাহাবা রা. সহ অসংখ্য ইমামগণ নবীজির নামে আমল পাঠিয়েছেন। যেমন-
হযরত আলী রা. এর আমল
হযরত আলী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন। তাবেয়ী হযরত হানাশ রহ. বলেন,
رَأَيْتُ عَلِيّا يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ مَا هَذَا فَقَالَ إِنّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَوْصَانِي أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي عَنْهُ
অর্থাৎ আমি আলী রা. কে দেখলাম, দুটি দুম্বা কুরবানী করছেন। আমি বললাম, দুটি কেন করছেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ওসীয়ত করেছেন, তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করতে। তাই আমি তাঁর পক্ষ থেকেও কুরবানী করছি।
সসূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদীস: ২৭৯০ জামে তিরমিযী: ১৪৯৫ মুসনাদে আহমাদ: ১২৮৬
ইবনে উমার রা. এর আমল:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. নবীজির সা. পক্ষ থেকে উমরা করেছেন।
أَنَّ ابْن عُمَرَ كَانَ يَعْتَمِرُ عَنْهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُمُرًا بَعْدَ مَوْتِهِ مِنْ غَيْرِ وَصِيَّةٍ
অর্থ: ইবনে উমর রাযি. রাসুল সা. এর ইন্তেকালের পর তার পক্ষ থেকে কোন ধরণের ওসিয়ত ছাড়া অনেক উমরা করেছেন।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ৩ পৃ. ১৫৩
উপরোক্ত রেওয়ায়েত দুটি থেকে একথা প্রমাণিত হলো যে, নবীজি সা. এর আমল নামায় নেকি পাঠানোর জন্য নবীজির সা. পক্ষ থেকে আমল করা যায়।
নবীজি সা. এর আমল:
নবীজি সা. উম্মতের পক্ষ থেকে আমল করেছেন।হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ضحّى رسولُ اللهِ ﷺ بكبشَيْنِ أملحَيْنِ أحَدُهما عنه وعن أهلِ بيتِه والآخَرُ عنه وعمَّن لَمْ يُضَحِّ مِن أُمَّتِه
রাসুলুল্লাহ সা. দুটি ধুসর বর্ণের দুম্বা কুরবানী করতেন, একটা তাঁর নিজের ও পরিবারের পক্ষ থেকে আর একটি তাঁর উম্মতের মধ্যে যারা কুরবানী করেননি তাদের পক্ষ থেকে।
সূ্ত্র: তবরানী খ: ৬ পৃ: ৩০০
সুৎরাং নবীজি সা. উম্মতের তরফ থেকে কুরবানী দিয়েছেন, কিন্তু উম্মত নবীজির সা. জন্য কোনো আমলই পাঠাতে পারবে না এটা কেমন অনর্থক কথা?
মৃত মানুষের জন্য আমল পাঠানো:
সাধারণ মৃত মানুষের জন্য আমল পাঠানো যায়। যা হাদিস শরীফ থেকে প্রমাণিত।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَبِي مَاتَ وَتَرَكَ مَالاً وَلَمْ يُوصِ فَهَل يُكَفَّرُ عنهُ أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهُ قَالَ نَعَمْ
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার পিতা মারা গেছেন এবং তিনি কিছু সম্পদ রেখে গেছেন; কিন্তু ওয়াসিয়্যাত করেননি। তার পক্ষ থেকে সদাকাহ্ করা হলে কি তার গুনাহ ক্ষমা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ ।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ১৬৩০
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللَّهَ، فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ
অর্থ’ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুহায়না গোত্রের একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, আমার আম্মা হাজ্জের মানত করেছিলেন তবে তিনি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় না করেই ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার পক্ষ হতে তুমি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় কর। তুমি কি মনে কর যদি তোমার আম্মার উপর ঋন থাকত তা হলে তুমি কি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হকই সবচাইতে অধিক আদায়যোগ্য।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ১৮৫২
উপরোক্ত দুটি হাদিস থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, যেকোনো মৃত মানুষের কবরে আমল পাঠানো যায়, তাহলে সর্বশ্রেষ্ট মানব নবী মুহাম্মাদ সা. এর জন্য উম্মত আমল পাঠাতে পারবে না এটি কেমন মুর্খতা?
নবীজির সা. জন্য হাদিয়া:
নবীজি সা. এর জন্য হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয ছিল। হাদিস শরীফে আসছে,
عَنْ أَنَسٍ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أُتِيَ بِلَحْمٍ تُصُدِّقَ بِهِ عَلَى بَرِيرَةَ فَقَالَ هُوَ عَلَيْهَا صَدَقَةٌ وَهُوَ لَنَا هَدِيَّةٌ
অর্থ: আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, বারীরা রা. কে সাদ্কাকৃ্ত গোশতের কিছ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া হল। তিনি বললেন, তা বারীরার জন্য সা’দ্কা এবং আমাদের জন্য হাদিয়া।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ১৪৯৫
উক্ত হাদিস থেকে জানা গেল, নবীজি সা. কে সাহাবায়ে কেরাম হাদিয়া দিলে তিনি গ্রহণ করতেন, তাহলে তাঁকে দুনিয়ার আসবাব হাদিয়া দেওয়া জায়েয হলে, নেকি হাদিয়া দিলে অবৈধ হবে কেন?
ইমামদের মতামত
হানাফী মাযহাবে ফাতাওয়া।
ইবনে আবেদীন শামী রহ. বলেন,
قَوْلُ عُلَمَائِنَا لَهُ أَنْ يَجْعَلَ ثَوَابَ عَمَلِهِ لِغَيْرِهِ يَدْخُلُ فِيهِ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فَإِنَّهُ أَحَقُّ بِذَلِكَ حَيْثُ أَنْقَذَنَا مِنْ الضَّلَالَةِ، فَفِي ذَلِكَ نَوْعُ شُكْرٍ
অর্থ: আমাদের ইমামদের বক্তব্য হলো, নিজের করা আমলের নেকি অন্যের জন্য দেওয়া যাবে, যার ভেতর নবীজিও সা. অন্তুর্ভূক্ত হবেন। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়াব পাওয়ার অধিক হকদার। কারণ, তিনি আমাদের ভ্রষ্টতা থেকে আলোর পথে পথ প্রদর্শন করেছেন। সাওয়াব পৌঁছানোর মাধ্যমে এক ধরণের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয়।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ৩ পৃ. ১৫৩
হাম্বলী মাযহাবের মতামত:
হাম্বলি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম আলাউদ্দিন আস-সাদী আল হাম্বলী রহ.বলেন:
قَالَ الْمَجْدُ يُسْتَحَبُّ إهْدَاءُ الْقُرَبِ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي الْفُنُونِ يُسْتَحَبُّ إهْدَاءُ الْقُرَبِ حَتَّى لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থাৎ মাজদ (ইবনে তাইমিয়া) রাহি. বলেন: কোন ইবাদাত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য হাদিয়া পাঠানো মুস্তাহাব। তিনি ‘ফুনুন’ এ বলেন: কোন ইবাদাত হাদিয়া পাঠানো মুস্তাহাব, এমনকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাসাল্লামকে পাঠানোও মুস্তাহাব।
সূত্র: আল ইনসাফ ফি মা’রিফাতির রাজিহ মিনাল খিলাফ খ. ২ পৃ. ৫৩৪
ইবনুল মুওয়াফ্ফিক রহ. এর আমল:
ইবনুল মুওয়াফ্ফিক রহ. নবীজি সা. এর নামে ৭০ টি হজ করেছেন।
حَجَّ ابْنُ الْمُوَفَّقِ وَهُوَ فِي طَبَقَةِ الْجُنَيْدِ عَنْهُ سَبْعِينَ حَجَّةً
অর্থ: ইবনুল মুওয়াফিফক যিনি জুনাঈদ বাগদাদী রহ. এর সমমানের ইমাম, তিনি রাসুল এর নামে ৭০ টি হজ করেছেন।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ৩ পৃ. ১৫৩
ইবনুস সিরাজ রহ. এর আমল:
ইবনুস সিরাজ রহ. নবীজির সা. জন্য ১০ হাজার কার কুরআন খতম করেছেন এবং এমনিভাবে কুরবানিও করেছেন।
خَتَمَ ابْنُ السِّرَاجِ عَنْهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْثَرَ مِنْ عَشَرَةِ آلَافٍ خَتْمَةٍ وَضَحَّى عَنْهُ مِثْلَ ذَلِكَ
অর্থ: ইবনুস সিরাজ ১০ হাজার কুরআন খতম করেছেন এবং এমনিভাবে কুরবানিও করেছেন।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ৩ পৃ. ১৫৩
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নবীজির সা. নামে সওয়াব পাঠানো এটা নাজায়েয বা বিদআত বলা চরম ধৃষ্টতা।
একটি প্রশ্ন
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে, হাদিস শরীফে এসেছে যে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,
مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ
অর্থ: যে ব্যক্তি কোন ভাল আমলের পথ প্রদর্শন করে, তার জন্যে ‘আমলকারীর সমান সাওয়াব রয়েছে।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ১৮৯৩
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, ভাল আমলের কথা যিনি বলে দেবেন, তিনি আমলকারীর সমপরিমান নেকি পাবেন। আর আমরা জানি সকল আমলের কথা নবীজি সা. শিখিয়ে গেছেন উম্মতকে। তাহলে তো নবীজির সা. আমলের খাতায় সকল উম্মতের করা আমলের সমপরিমান নেকি অটোমেটিক পৌঁছে যায়। তাহলে আবার এক্সট্রা নবীজির আমলনামায় সওয়াব পৌঁছানোর জন্য আমল করার কি দরকার?
জবাব:
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন,
ان الله و ملائكته يصلون علي النبي يا ايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما
অর্থ: আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি ছলাত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর।
সুরা আহযাব আয়াত: ৫৬
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নিজেই নবীজির সা. জন্য এক্সট্রা দরুদ পাঠাতে বলেছেন।
উপরোল্লেখিত আয়াত থেকে প্রমাণ হলো, নবীজির সা. জন্য দরুদ হাদিয়া পাঠানো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। যা এক্সট্রাভাবে আমল করার কথা খোদ আল্লাহ বলেছেন।
এরপরও যারা “নবীজির জন্য নেকি পাঠানো যাবে না” বলে প্রচার করছেন, তাদের জন্য ইবনে হাজার হাইতামি রহ. বলেন, শায়খুল ইসলাম আবু ইয়াহইয়া জাকারিয়া আনসারি শাফেয়ী রহ. কে একজন বক্তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সে বলেছে,
لَا يجوز إِجْمَاعًا لقارىء الْقُرْآن والْحَدِيث أَن يهدي مثل ثَوَاب ذَلِك فِي صَحَائِف سيدنَا رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَبِه أفتى المتقدمون والمتأخرون
অর্থ: সমস্ত উম্মতের ঐক্যমতে নাকি কুরআন ও হাদিস তিলাওয়াতের সাওয়াব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাদিয়া হিসেবে প্রেরণ করা জায়েজ নেই? এ ফাতাওয়াটাই নাকি মুতাকাদ্দিমিন ও মুতাআখখিরিন ইমামগণ দিয়েছে?
জবাবে তিনি বললেন:
بِأَن مَا ادَّعَاهُ هَذَا الْوَاعِظ الْقَلِيل الْمعرفَة يسْتَحق بكذبه على الْإِجْمَاع التعزيز الْبَالِغ وزعمه أَن ذَلِك لَا يجوز الْحق خِلَافه بل يجوز
অর্থাৎ এ স্বল্প জ্ঞানী বক্তা যে মিথ্যা ঐক্যমতের দাবি করেছে, এ জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। সে ধারণা করছে এটা জায়েজ নেই! অথচ বাস্তবতা এর বিপরিত, বরং জায়েজ আছে।
সূত্র: আল ফাতাওয়া আলহাদিসিয়্যাহ পৃ. ২৮
আসসালামুয়ালাইকুম,
আমি কি আমার বাবা মা’র কাযা নামাজ আদায় করে দিতে পারব?
রোজা রেখে তারপর এর সওয়াব বাবা মার নামে পৌছে দিব নাকি রোযা রাখার আগে নিয়ত করতে হবে বাবা মার পক্ষে
জি