Home > ফাইনাল > নবীজির সা. মুখে কি দুর্গন্ধ ছিলো?

নবীজির সা. মুখে কি দুর্গন্ধ ছিলো?

রাসুলুল্লাহ সা. ছিলেন সর্বকালের, সকল মানুষের জন্য অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। নবীজির সা. সকল বিষয়ই উম্মতের জন্য এক মহান সবক। এজন্য আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় হাবিবের সৌন্দর্য, চরিত্র বা পরিচ্ছন্নতায় কোনো ধরণের ত্রুটি থাকার সুযোগ দেননি। মানবীয় ত্রুটি ও স্বভাবগত সকল দোষ-ত্রুটি থেকে তিনি ছিলেন পবিত্র। যদি তিনি সকল দোষ থেকে পবিত্র না হতেন, তাহলে মহান আল্লাহ তাঁকে অনুসরণের কথা বলতেন না।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পরিস্কার-পরিচ্ছনতার মূর্তপ্রতিক সেই নবীজি সা. কে নিয়ে জঘণ্যতম একটি মিথ্যাচার করে বসলেন, সময়ের আলোচিত-সমালোচিত একজন লা-মাযহাবী শায়খ। তিনি একটি কথা প্রসঙ্গে বলে বসলেন, “নবী মুহাম্মাদ সা. এর মুখে মানবিক দুর্গন্ধ ছিলো, এজন্য জিবরাঈল আ. এসে বলতেন মুখে গন্ধ আছে, মুখটা পরিস্কার করুন, মুখটা পরিস্কার করুন, মুখটা পরিস্কার করুন। যতবার আসে ততবার বলেন, দাঁত পরিস্কার করতে।” (নাউযুবিল্লাহ)

কতবড় জঘন্য মিথ্যাচার! কিভাবে সম্ভব একজন মুসলমানের পক্ষে এমন বাজে মন্তব্য করা? অথচ পরিস্কার-পরিচ্চন্নতার ব্যাপারে নবীজি সা. বলেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏عُرِضَتْ عَلَىَّ أُجُورُ أُمَّتِي حَتَّى الْقَذَاةُ يُخْرِجُهَا الرَّجُلُ مِنَ الْمَسْجِدِ

অর্থ: হযরত আনাস ইবনু মালিক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন; আমার উম্মতের কাজের বিনিময় (সওয়াব) আমাকে দেখান হয়েছে- এমনকি মসজিদের সামান্য ময়লা পরিস্কারকারীর ছওয়াবও।
সূত্র: সুনান আবু দাউদ হাদিস: ৪৬১

নবীজি সা. আরও বলেন,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم ‏مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ يَعْنِي الثُّومَ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا

অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি এ জাতীয় গাছ থেকে খায়, তিনি এ দ্বারা রসুন বুঝিয়েছেন, সে যেন আমাদের মসজিদে না আসে।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৮৫৩

অন্য এক বর্ণানায় আসছে,

حتّى يذهبَ ريحُها منه

অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত মুখের দুর্গন্ধ না যায়, (ততক্ষণ পর্যন্ত মসজিদের কাছে না আসে।)
সূত্র: আল ইলালুল কাবীর, (বুখারী) হাদিস নং ৩০১

মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে মজলিসে আসা নিষেধ:

অপর আরেকটি হাদিসে এসেছে,

فلا يُؤذِيَنّا في مجالسِنا

অর্থাৎ সে যেন আমাদেরকে কষ্ট না দেয়।
সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫৪৬১

মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে জামা’আতে নামাজ পড়তে আসা নিষেধ:

অপর আরেক বর্ণানায় আসছে,

فلا يَقْرَبَنّا ولا يُصَلِّي معنا

অর্থাৎ সে যেন আমাদের ধারে কাছেও না আসে এবং আমাদের সাথে নামাজ না পড়ে।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৬২

সুতরাং উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে জানতে পারলাম, রাসুলুল্লাহ সা. মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে-মজলিসে আসতে সাহাবায়ে কেরাম রা. কে বিষেধ করতেন। অথচ সেই নবীজিই সা. সাহাবাদের রা. সাথে বৈঠকে কথা বলতেন, জামা’আতে নামাজ পড়াতে আসতেন, আর তাঁর মুখে দুর্গন্ধ থাকতো, এটা ডাহা মিথ্যা বৈ আর কি হতে পারে?

আরেকটি হাদিসে আসছে, হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত নবীজি সা. বলেন,

مَن أكَل مِن هذه الشَّجرةِ المُنتِنةِ فلا يقربَنَّ مسجدَنا فإنَّ الملائكةَ تتأذّى ممّا يتأذّى منه النّاسُ

অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধময় গাছের ফল খায়, সে যেন আমাদের মসজিদের কাছেও না আসে। কারণ মানুষ যে জিনিষে কষ্ট পায়, সে জিনিষে ফিরিস্তারাও কষ্ট পায়।
সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ২০৯০ (হাদিস সহিহ)

মসজিদে যেহেতু ফিরিস্তারা থাকেন, সেজন্য মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে আসতে নবীজি সা. নিষেধ করেছেন। আর আমরা জানি, রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে প্রায় সময় ফিরিস্তারা আসতেন। সুতরাং যেই নবী সা. নিজে ফিরিস্তাদের কষ্টদায়ক বিষয় থেকে বিরত থাকতে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এমন খাবার খেতে নিষেধ করতেন, সেই নবী সা. মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে ঘুরতেন! এটা কি সুস্থ কোন মানুষ বিশ্বাস করতে পারে? কি জঘন্যতম মিথ্যাচার নবীজির সা. নামে।

প্রিয় পাঠক, নবীজি সা. এর শরীর মোবারকের ঘাম থেকে কেমন ঘ্রাণ ছিলো চলুন দেখা যাক।

হযরত আনাস রা. বলেন,

وَلاَ شَمِمْتُ مِسْكَةً وَلاَ عَبِيرَةً أَطْيَبَ رَائِحَةً مِنْ رَائِحَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏

অর্থ: আর আমি রাসুলুল্লাহ সা. এর (শরীরের) ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধযুক্ত কোন মিশক বা আম্বর পাইনি।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ১৯৭৩

অপর একটি রেওয়ায়েতে রয়েছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ عِنْدَنَا فَعَرِقَ وَجَاءَتْ أُمِّي بِقَارُورَةٍ فَجَعَلَتْ تَسْلُتُ الْعَرَقَ فِيهَا فَاسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا الَّذِي تَصْنَعِينَ ‏قَالَتْ هَذَا عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِي طِيبِنَا وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ

অর্থ: হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের গৃহে আসলেন এবং আরাম করলেন। তিনি ঘর্মাক্ত হলেন, আর আমার মা একটি ছোট বোতল নিয়ে মুছে তাতে ভরতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, হে উম্মু সুলায়ম! একি করছ? আমার মা বললেন, এ হচ্ছে আপনার ঘাম, যা আমরা সুগন্ধির সঙ্গে মেশাই, আর এ তো সব সুগন্ধির সেরা সুগন্ধি।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৩৩১

প্রিয় পাঠক, স্বাভাবিকভাবে মানুষের ঘাম থেকে দুর্গন্ধ বের হয়, কিন্তু রাসুলুল্লাহ সা. এর ঘাম মোবারক থেকে মেশকে আম্বরের ঘ্রাণ বের হতো। এটা তাঁর মু’জিজা। তাহলে ঘামে যদি সুগন্ধ হয়, তাহলে  মুখে দুর্গন্ধ ছিলো এটা কি জলন্ত মিথ্যাচার নয়?

নবীজির সা. থুথু মোবারক মিষ্টি ছিল।

সাভাবিকভাবে মানুষের থুথু স্বাভাবিক রকমের হয়ে থাকে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সা. এর থুথু মোবারক তুলনাহীন মিষ্টি ছিলো। যা হাদিস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়।

عن أنس أن النبي صلى الله عليه وسلم بزق في بئر داره فلم يكن بالمدينة بئر أعذب منها

অর্থ: হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি সা. তাঁর (আনাস রা.) বাড়িতে অবস্থিত কুপটিতে থুথু ফেলেছিলেন, ফলে সেটা মাদীনায় এত বেশি মিষ্টি পানির কুপ আর একটিও ছিল না।
সূত্র: ওফাউল ওফা খ. ২ পৃৃ. ১২৫

সুতরাং যে নবীজির সা. সিরাত-সুরত অন্যদের থেকে ভিন্ন রকম ছিলো, সে নবীজির সা. সবই ছিলো তুলনাহীন। সুতরাং অন্যদের সাথে নবীজিকে সা. তুলনা করা কি মুর্খতা নয়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.