কেয়ামতের বড় আলামতে মধ্যে অন্যতম একটি আলামত হলো দাজ্জালের আগমন। এ দাজ্জাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সহিহ হাদিসসমূহে ভরপুর বিদ্যমান।সে কোথা থেকে বের হবে, দেখতে কেমন হবে, বয়স কেমন হবে, গায়ের রং কেমন হবে, তার চোখ কেমন হবে, চুল কেমন হবে , কপালে কী লেখা থাকবে, কারা তার অনুসরণ করবে সবিস্তারে নবীজি সা. তার পরিচয় উম্মতকে জানিয়ে সতর্ক করে গেছেন। ফলে নবীজির সা. কথানুযায়ী সকল সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীনে কেরাম, সালাফ-খলাফ, ফুকাহা, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিনসহ সকল উম্মাহ এ ব্যাপারে ১৪০০ বছর যাবৎ একমত পোষণ করে আসছেন যে, দাজ্জাল একজন মানুষ।
কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, নবিজি সাঃ-এর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে সকল মুসলিম উম্মাহর সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আরবিতে নিরক্ষর এক দিকভ্রান্ত জাহিল বায়াজীদ খান পন্নী দাবী করে বসলেন যে, দাজ্জাল কোনো মানুষ নয়, বরং ইহুদী-খ্রীষ্টান সভ্যতাই হলো দাজ্জাল। অবশ্য তিনি এ কনসেপ্টটি পেয়েছেন ইহুদী ঘরে জন্ম নেওয়া এক নও মুসলিম থেকে। যা পন্নী সাহেব তার ‘দাজ্জাল’ নামক বইয়ে তুলে ধরেছেন। প্রথমে চলুন দাজ্জাল সম্পর্কে পন্নী সাহেবের মন্তব্য দেখে নেওয়া যাক।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী লিখেছে,
পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ইহুদি খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে বিশ্বনবী বর্ণিত সেই দাজ্জাল,যে দানব ৪৭৫ বছর আগেই জন্ম নিয়ে তার শৈশব, কৌশর পার হয়ে বর্তমানে যৌবনে উপনীত হয়েছে এবং দোর্দণ্ড প্রতাপে সারা পৃথিবীকে পদদলিত করে চলছে; আজ মুসলিমসহ সমস্ত পৃথিবী অর্থাৎ মানবজাতি তাকে প্রভু বলে মেনে নিয়ে তার পায়ে সাজদায় পোড়ে আছে। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ১৮
দাজ্জাল এমন কোন বস্তু নয় যা চোখে দেখা যায়( Visible) বা স্পর্শ করা যায় ( Tangible)। বর্তমান ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতাই হচ্ছে সেই মহাশক্তিধর দানব দাজ্জাল এবং যান্ত্রিক প্রযুক্তি হচ্ছে তার বাহন।-মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ১৯
এতদিন তো মানুষ বোসে আছে এক চোখ কানা দাজ্জাল আসবে বিরাট ঘোড়ায় চোড়ে। কিন্তু ওটা তো কোনদিনই হবেনা, দাজ্জাল যে এসে গেছে এটা আল্লাহর রহমে আমি প্রমাণ কোরেছি দাজ্জাল বইয়ে, সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ কোরছি,। কেউ যুক্তি প্রমাণ দিয়ে এটা কাটতে পারে নাই। তারমানে দাজ্জাল এসে গেছে এবং এখন সে একদম পূর্ণ শক্তিমান। এখন আমার মতে, এই হিসাব মোতাবেক যেকোনো সময়ই ঈসা (আ:) আসার সময় হোয়ে গেছে। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৬৭
পন্নী সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্যগুলো থেকে এ কথা বুঝতে পারলাম যে, পন্নী সাহেব বুঝাতে চান, ‘দাজ্জাল কোনো মানুষ নয়, বরং ইহুদী-খ্রিষ্টান সভ্যতাই হলো দাজ্জাল।’
ইসলাম কী বলে?
এ ব্যাপারে আলোচনার আগে প্রথমত দাজ্জালের পূর্ণ নাম ও অর্থ জেনে নেওয়া যাক।
দাজ্জালের নাম : দাজ্জালের পুরো নাম المسيحُ الدَّجّالُ ‘আল মাসীহুদ দাজ্জাল’।
নামকরণের কারণ:
মাসীহ : মাসীহ অর্থ সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহি. বলেন,
يُقَالُ إِنَّهُ سُمِّيَ بِذَلِكَ لِكَوْنِهِ يَمْسَحُ الْأَرْضَ وَقِيلَ سُمِّيَ بِذَلِكَ لِأَنَّهُ مَمْسُوحُ الْعَيْنِ
বলা হয় যে, তাকে এই নামে নামকরণ করা হয়েছে, কারণ সে পৃথিবী ধ্বংস করবে এবং কারো মতে, যেহেতু তার এক চোখ কানা থাকবে, তাই এ নামে তাকে নামকরণ করা হয়েছে। -ফাতহুল বারী : খ. ৬ পৃ. ৫৪৪
দাজ্জাল : ‘দাজ্জাল’ শব্দের অর্থ প্রসঙ্গে হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী রহি. বলেছেন,
مِنَ الدَّجَلِ وَهُوَ التَّغْطِيَةُ وَسُمِّيَ الْكَذَّابُ دَجَّالًا لِأَنَّهُ يُغَطِّي الْحَقَّ بِبَاطِلِهِ
দাজ্জাল ‘শব্দটি دجَل (দাজালুন) শব্দ হতে এসেছে। যার অর্থ হলো, কোনো কিছুকে আচ্ছাদিত করা। এছাড়াও মিথ্যুককেও দাজ্জাল বলা হয়। কেননা সে বাতিল দ্বারা হক্ব আচ্ছাদিত করবে। -ফাতহুল বারী : খ. ১৩ পৃ. ৯৭
এক কথায় মক্কা-মদীনা ব্যতীত সমগ্র বিশ্ব ভ্রমণকারী বাতিল দ্বারা হক্বকে আচ্ছাদিতকারী, উভয় চোখ বিকৃত ও এক চোখ কানা ব্যক্তিকেই হাদীছে ‘আল মাসীহুদ দাজ্জাল’ বলা হয়েছে।
দাজ্জাল মানুষ না সভ্যতা?
এই দাজ্জাল কোনো সভ্যতার নাম নয়, বরং দাজ্জাল একজন মানুষেরই নাম। নবীজি সা. দাজ্জালের পূর্ণ পরিচয় হাদিসের মাধ্যমে উম্মাহকে জানিয়ে দিয়ে গেছেন। এমনকি তার আত্মপ্রকাশের স্থান, তার চোখ, কপাল, কালার, চুল, বয়স ইত্যাদী সম্পর্কেও নবীজি সা. জানিয়ে দিয়ে গেছেন। নিচে তার কয়েকটি বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরলাম।
প্রকাশের স্থান : দাজ্জালের আবির্ভাবের স্থান সম্পর্কেও বলা হয়েছে,
وإنَّه يخرُجُ في يَهوديَّةِ أصْبَهانَ
দাজ্জাল আবির্ভূত হবে ইসফাহানের ইহুদিদের ভেতর থেকে। -মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং : ২৪৫১১
পৃথিবিতে অবস্থান : এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম রা. বলেন,
قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا لَبْثُهُ فِي الأَرْضِ قَالَ أَرْبَعُونَ يَوْمًا يَوْمٌ كَسَنَةٍ وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ
আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাঃ সে পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চল্লিশদিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৩৭
কপালে কাফের লেখা : হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
الدَّجَّالُ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ ك ف ر أَىْ كَافِرٌ
দাজ্জালের দু চোখের মধ্যস্থলে ك ف ر অর্থাৎ- কাফির লেখা থাকবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৩৩
দাজ্জালের গতি : হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
كَالْغَيْثِ اسْتَدْبَرَتْهُ الرِّيحُ
বাতাসের প্রবাহ মেঘমালাকে যে রকম হাকিয়ে নিয়ে যায়। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৩৭
আকাশ-যমীনও দাজ্জালের কথা শুনবে: হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
فَيَأْمُرُ السَّمَاءَ فَتُمْطِرُ وَالأَرْضَ فَتُنْبِتُ
অতঃপর সে আকাশমণ্ডলীকে আদেশ করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিবে, ফলে ভূমি গাছ-পালা ও শস্য উৎপন্ন করবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৩৭
বয়স ও চুল : হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
إِنَّهُ شَابٌّ قَطَطٌ
দাজ্জাল যুবক এবং ঘন চুল বিশিষ্ট হবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৩৭
নবিজি সাঃ বলেন,
وإنَّه جَعْدٌ آدَمُ
তার চুল হবে কোকড়ানো। -মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং : ২৩৬৮৫
গায়ের পশম : হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
جُفَالُ الشَّعَرِ
তার দেহে ঘন পশম হবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৩৪
ডান চোখ ট্যাঁরা : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
أَلَا إِنَّ الْمَسِيْحَ الدَّجَّالَ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ
সাবধান! মাসীহ দাজ্জালের ডান চক্ষু ট্যাঁরা। তার চক্ষু যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মত। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৩৪৩৯
বাম চোখ লেপা :
হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
وإِنَّ الدجالَ ممسوحُ العينِ اليُسْرى عليها ظَفْرَةٌ غليظةٌ
দাজ্জালের বাম চক্ষু লেপা হবে এবং তার চোখের উপর নখের মতো পুরু চামড়া থাকবে। -মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং : ২৩৪৩৯
একত্রে কয়েকটি নমুনা: হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ سَبْطُ الشَّعَرِ بَيْنَ رَجُلَيْنِ يَنْطُفُ رَأْسُهُ مَاءً فَقُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا ابْنُ مَرْيَمَ فَذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ فَإِذَا رَجُلٌ أَحْمَرُ جَسِيمٌ جَعْدُ الرَّأْسِ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا هَذَا الدَّجَّالُ أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ وَابْنُ قَطَنٍ رَجُلٌ مِنْ بَنِي الْمُصْطَلِقِ مِنْ خُزَاعَةَ
আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন আমি আমাকে কা’বা গৃহ তাওয়াফরত অবস্থায় দেখতে পেলাম। এমন সময় সোজা চুলওয়ালা একজন পুরুষকে দু’জন পুরুষের মাঝে দেখলাম, যার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা বলল, ইবনু মারইয়াম। এরপর আমি ফিরে আসতে লাগলাম। এ সময় একজন লাল রঙের মোটাসোটা, কোঁকড়ান চুলওয়ালা, ডানচোখ কানা ব্যক্তিকে দেখলাম। তার চোখটি যেন ভাসমান আঙুর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কে? তারা বলল, এ হচ্ছে দাজ্জাল। তার সঙ্গে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হল ইবনু কাতান। আর ইবনু কাতান হল বনূ মুস্তালিক গোত্রের খুযাআ বংশের একজন লোক। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৭০২৬
দাজ্জালের অনুসারীরা ও তাদের পরিচয়:
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ
আসবাহান এর সত্তর হাজার ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুসারী হবে, তাদের শরীরে তায়ালিসাহ (প্রাচীন ইহুদীদের ধর্মীয় তোয়ালে) থাকবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৪৪
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
على كلِّ رجُلٍ منهم ساجٌ وسيفٌ مُحَلًّى
তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে চাদরে আবৃত কারুকার্যকৃত তরবারি থাকবে। -মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং : ১৪১১২
দাজ্জালের অনুসারীদের সংখ্যা, অবতরণস্থল ও চেহারার ধরণ:
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
لينزلنَّ الدجالُ خُوزَ وَكَرْمانَ في سبعينَ ألفًا وجوههم كالْمَجانِّ الْمُطْرَقَةِ
দাজ্জাল ৭০ হাজার লোক নিয়ে খুঁজ ও কিরমান নামক এলাকায় অবতরণ করবে। তাদের চেহারা দেখতে হবে চ্যাপ্টার ঢালের মত।-মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং : ৮৪৫৩
দাজ্জালের সময় আরবের জনসংখ্যা: উম্মু শারীক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবিজি সাঃ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
لَيَفِرَّنَّ النَّاسُ مِنَ الدَّجَّالِ فِي الْجِبَالِ قَالَتْ أُمُّ شَرِيكٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَيْنَ الْعَرَبُ يَوْمَئِذٍ قَالَ هُمْ قَلِيلٌ
লোকেরা দাজ্জালের আতঙ্কে পর্বতে পালিয়ে যাবে। এ কথা শুনে উম্মু শারীক বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সাঃ সেদিন আরবের মানুষেরা কোথায় থাকবে? জবাবে তিনি বললেন, তখন তারা সংখ্যায় নগণ্য হবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৪৫
দ্জ্জাল মাদীনায় ঢুকতে পারবে না: দাজ্জাল পুরো পৃথিবী চুষে বেড়াবে, কিন্তু মদীনায় ঢুকতে পারবে না। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
عَلَى أَنْقَابِ الْمَدِينَةِ مَلاَئِكَةٌ لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ وَلاَ الدَّجَّالُ
মাদ্বীনার প্রবেশপথগুলোতে ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন। কাজেই সেখানে প্লেগ ও দাজ্জাল প্রবেশ করবে না। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৭১৩৩
হাদিসটি থেকে বুঝা গেলো, দাজ্জাল মাদীনায় ঢুকতে পারবে না। অথচ পন্নী সাহেবের দাবী হলো, ‘ইহুদি খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে দাজ্জাল’। তাই যদি হয়, তাহলে প্রতিনিয়ত বিমান কিভাবে মদীনায় প্রবেশ করছে? সুতরাং এটা যে এক ডাহা মিথ্যাচার তার প্রমাণ হলো নবীজির সা. এই হাদিসটিই।
উপরন্তু দাজ্জালের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিলো সাহাবী তামীম আদ-দারীর রা.। এই সাহাবীকে দাজ্জাল বলেছিলো,
وَإِنِّي مُخْبِرُكُمْ عَنِّي إِنِّي أَنَا الْمَسِيحُ وَإِنِّي أُوشِكُ أَنْ يُؤْذَنَ لِي فِي الْخُرُوجِ فَأَخْرُجَ فَأَسِيرَ فِي الأَرْضِ فَلاَ أَدَعَ قَرْيَةً إِلاَّ هَبَطْتُهَا فِي أَرْبَعِينَ لَيْلَةً غَيْرَ مَكَّةَ وَطَيْبَةَ فَهُمَا مُحَرَّمَتَانِ عَلَىَّ كِلْتَاهُمَا كُلَّمَا أَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَ وَاحِدَةً أَوْ وَاحِدًا مِنْهُمَا اسْتَقْبَلَنِي مَلَكٌ بِيَدِهِ السَّيْفُ صَلْتًا يَصُدُّنِي عَنْهَا وَإِنَّ عَلَى كُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلاَئِكَةً يَحْرُسُونَهَا
এখন আমি নিজের ব্যাপারে তোমাদেরকে বলছি, আমিই মাসীহ দাজ্জাল। অতি সত্ত্বরই আমি এখান থেকে বাইরে যাবার অনুমতি পেয়ে যাব। বাইরে যেয়ে আমি সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ প্রদক্ষিণ করব। চল্লিশ দিনের ভেতর এমন কোন জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ না করব। তবে মক্কাহ্ ও তাইবাহ এ দুটি স্থানে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। যখন আমি এ দু’টির কোন স্থানে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন এক ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারি হাতে সম্মুখে এসে আমাকে বাধা দিবে। এ দুটি স্থানের সকল রাস্তায় ফেরেশতাদের পাহারা থাকবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৪২
সুতরাং প্রমাণ হলো, দাজ্জাল মদীনায় প্রবেশ করতে পারবেনা। তাহলে ইহুদি-খ্রিস্টানদের আবিষ্কৃত বিমান যদি দাজ্জাল হয়ে থাকে, তাহলে সে বিমান মক্কা-মদীনায় ঢুকছে কীভাবে? তাহলে প্রকারান্তে পন্নী কী নবিজি সাঃ কে মিথ্যুক প্রমাণ করলো না?
দাজ্জালের মেয়াদ: দাজ্জাল সম্পর্কে সহিহ মত হলো, সে ৪০ দিন অবস্থান করবে। হাদিস শরীফে এসেছে,
وإنَّه يَمكُثُ في الأرضِ أربَعينَ صَباحًا
দাজ্জাল পৃথিবীতে ৪০ দিন অবস্থান করবে। -মুসনাদে আহমাদ : ২৩৬৮৩
হাদিসটির মান: ইবনে হাজার আসকালানি রহি. বলেন, رجاله ثقات অর্থাৎ হাদিসটির বর্ণানাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য। -ফাতহুল বারী : খ. ১৩ পৃ. ১১২
সুতরাং প্রমাণ হলো, দাজ্জাল এ পৃথিবীদের অবস্থান করবে মাত্র ৪০ দিন। যদিও একটি মত আছে ৪০ বছরের। তবে সহিহ মত হলো ৪০ দিন।
আল্লাহ ও নবি দাবি: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মু’তামির রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
الدجالُ ليس بِهِ خفاءٌ إنه يجيءُ من قِبَلِ المشرِقِ فيدعو لي فيُتَّبَعُ وينصِبُ للناسِ فيُقاتِلُهُمْ ويظْهَرُ عليهم فَلا يزالُ على ذلِكَ حتى يَقْدَمَ الكوفَةَ فيُظْهِرُ دينَ اللهِ ويعملُ بِهِ فيُتَّبَعُ ويُحَبُّ على ذَلِكَ ثم يقولُ بعد ذلِكَ إني نَبِيٌّ فَيَفْزَعُ من ذلِكَ كُلُّ ذي لبٍّ ويفارِقُهُ فَيَمْكُثُ بَعْدَ ذَلِكَ حَتّى يَقُولَ أنا اللهُ فتُغْشى عيْنُهُ وتُقْطَعُ أذُنُهُ ويُكْتَبُ بَيْنَ عينَيْهِ كافِرٌ
দাজ্জালের বিষয়টি গোপনীয় নয়। সে পূর্ব দিক থেকে এসে নিজের দিকে আহ্বান জানাতে থাকবে। ফলে তার অনুসরণ করা হবে। সে মানুষের সঙ্গে লড়াই করার জন্য দাঁড়িয়ে যাবে এবং তাদের সঙ্গে লড়াই করে বিজয়ী হবে। এভাবে তার মিশন চলতে থাকবে। অবশেষে সে কুফাতে এসে আল্লাহ দ্বীনের উপর বিজয় লাভ করবে। এভাবেই তার অনুসরণ হুকুম কার্যকর থাকবে। অবশেষে নিজেকে নবী দাবি করবে। তখন প্রত্যেকে আতঙ্কিত হয়ে তাকে পরিত্যাগ করবে। এভাবে চলতে থাকবে। অবশেষে সে বলবে, ‘আমি আল্লাহ’। তখন তার চোখ ঢেকে ফেলা হবে, কান কেটে ফেলা হবে এবং তার দুই চোখ কাফের লেখা হবে। -ফাতহুল বারী : খ. ১৩ পৃ. ৯১
দাজ্জাল যে নবি দাবি করবে এর স্বপক্ষে আরো হাদিস রয়েছে। যেমন: সহিহ বুখারী, হাদিস: ৩৬০৯ সহিহ ইবনে খুযাইমা খ. ২ পৃ. ৫২৩ মুসলিম: ১৫৭ তিরমিযি: ২২১৮ আহমাদ: ৯৫৪৩
দাজ্জালের মৃত্যুর স্থান: সিরিয়া বা ফিলিস্তিনের একটি জায়গার নাম ‘বাবে লুদ’। সেখানেই দাজ্জালকে হত্যা করা হবে। এ সম্পর্কে ইমাম ইবনে হিব্বান রহি. সহিহ সনদে একটি হাদিস নকল করেছেন। হযরত মাজমা বিনতে জারিয়া রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
يقتُلُ ابنُ مَريمَ الدَّجّالَ ببابِ لُدّ
মারইয়াম পূত্র ঈসা আ. তাকে ‘বাবে লুদ’ নামক জায়গায় হত্যা করবেন। -সহিহ ইবনে হিব্বান : হাদিস নং : ১১৮৬
প্রিয় পাঠক, প্রমাণ হলো, দাজ্জাল কোনো সভ্যতার নাম নয়, বরং দাজ্জাল হলো, একজন মানুষ। এত এত সুস্পষ্ট বর্ণিত হাদিস থাকা সত্ত্বেও হেযবুত তওহীদ দাবি করে বসেছে, ‘দাজ্জাল কোনো মানুষ হবে না, বরং ইহুদী-খ্রিষ্টান সভ্যতাই হলো দাজ্জাল’। এ কথার মত জঘন্য মিথ্যা অপব্যখ্যা আর কী হতে পারে? এরপরও যদি কোনো সংশয় থাকে, তাহলে নিন্মোক্ত তামীম আদ-দারী রা. এর হাদিসটি খেয়াল করুন।
فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَتَهُ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقَالَ ” لِيَلْزَمْ كُلُّ إِنْسَانٍ مُصَلاَّهُ ” . ثُمَّ قَالَ ” أَتَدْرُونَ لِمَ جَمَعْتُكُمْ ” . قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . قَالَ ” إِنِّي وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُكُمْ لِرَغْبَةٍ وَلاَ لِرَهْبَةٍ وَلَكِنْ جَمَعْتُكُمْ لأَنَّ تَمِيمًا الدَّارِيَّ كَانَ رَجُلاً نَصْرَانِيًّا فَجَاءَ فَبَايَعَ وَأَسْلَمَ وَحَدَّثَنِي حَدِيثًا وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْ مَسِيحِ الدَّجَّالِ حَدَّثَنِي أَنَّهُ رَكِبَ فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ مَعَ ثَلاَثِينَ رَجُلاً مِنْ لَخْمٍ وَجُذَامَ فَلَعِبَ بِهِمُ الْمَوْجُ شَهْرًا فِي الْبَحْرِ ثُمَّ أَرْفَئُوا إِلَى جَزِيرَةٍ فِي الْبَحْرِ حَتَّى مَغْرِبِ الشَّمْسِ فَجَلَسُوا فِي أَقْرُبِ السَّفِينَةِ فَدَخَلُوا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْهُمْ دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يَدْرُونَ مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقَالُوا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ . قَالُوا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتْ أَيُّهَا الْقَوْمُ انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ . قَالَ لَمَّا سَمَّتْ لَنَا رَجُلاً فَرِقْنَا مِنْهَا أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً – قَالَ – فَانْطَلَقْنَا سِرَاعًا حَتَّى دَخَلْنَا الدَّيْرَ فَإِذَا فِيهِ أَعْظَمُ إِنْسَانٍ رَأَيْنَاهُ قَطُّ خَلْقًا وَأَشَدُّهُ وِثَاقًا مَجْمُوعَةٌ يَدَاهُ إِلَى عُنُقِهِ مَا بَيْنَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى كَعْبَيْهِ بِالْحَدِيدِ قُلْنَا وَيْلَكَ مَا أَنْتَ قَالَ قَدْ قَدَرْتُمْ عَلَى خَبَرِي فَأَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ قَالُوا نَحْنُ أُنَاسٌ مِنَ الْعَرَبِ رَكِبْنَا فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ فَصَادَفْنَا الْبَحْرَ حِينَ اغْتَلَمَ فَلَعِبَ بِنَا الْمَوْجُ شَهْرًا ثُمَّ أَرْفَأْنَا إِلَى جَزِيرَتِكَ هَذِهِ فَجَلَسْنَا فِي أَقْرُبِهَا فَدَخَلْنَا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْنَا دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يُدْرَى مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقُلْنَا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ . قُلْنَا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتِ اعْمِدُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ فَأَقْبَلْنَا إِلَيْكَ سِرَاعًا وَفَزِعْنَا مِنْهَا وَلَمْ نَأْمَنْ أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً فَقَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ نَخْلِ بَيْسَانَ قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ أَسْأَلُكُمْ عَنْ نَخْلِهَا هَلْ يُثْمِرُ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ . قَالَ أَمَا إِنَّهُ يُوشِكُ أَنْ لاَ تُثْمِرَ قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ بُحَيْرَةِ الطَّبَرِيَّةِ . قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِيهَا مَاءٌ قَالُوا هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ . قَالَ أَمَا إِنَّ مَاءَهَا يُوشِكُ أَنْ يَذْهَبَ . قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ عَيْنِ زُغَرَ . قَالُوا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِي الْعَيْنِ مَاءٌ وَهَلْ يَزْرَعُ أَهْلُهَا بِمَاءِ الْعَيْنِ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ وَأَهْلُهَا يَزْرَعُونَ مِنْ مَائِهَا
قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ نَبِيِّ الأُمِّيِّينَ مَا فَعَلَ قَالُوا قَدْ خَرَجَ مِنْ مَكَّةَ وَنَزَلَ يَثْرِبَ . قَالَ أَقَاتَلَهُ الْعَرَبُ قُلْنَا نَعَمْ . قَالَ كَيْفَ صَنَعَ بِهِمْ فَأَخْبَرْنَاهُ أَنَّهُ قَدْ ظَهَرَ عَلَى مَنْ يَلِيهِ مِنَ الْعَرَبِ وَأَطَاعُوهُ قَالَ لَهُمْ قَدْ كَانَ ذَلِكَ قُلْنَا نَعَمْ . قَالَ أَمَا إِنَّ ذَاكَ خَيْرٌ لَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ وَإِنِّي مُخْبِرُكُمْ عَنِّي إِنِّي أَنَا الْمَسِيحُ وَإِنِّي أُوشِكُ أَنْ يُؤْذَنَ لِي فِي الْخُرُوجِ فَأَخْرُجَ فَأَسِيرَ فِي الأَرْضِ فَلاَ أَدَعَ قَرْيَةً إِلاَّ هَبَطْتُهَا فِي أَرْبَعِينَ لَيْلَةً غَيْرَ مَكَّةَ وَطَيْبَةَ فَهُمَا مُحَرَّمَتَانِ عَلَىَّ كِلْتَاهُمَا كُلَّمَا أَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَ وَاحِدَةً أَوْ وَاحِدًا مِنْهُمَا اسْتَقْبَلَنِي مَلَكٌ بِيَدِهِ السَّيْفُ صَلْتًا يَصُدُّنِي عَنْهَا وَإِنَّ عَلَى كُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلاَئِكَةً يَحْرُسُونَهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَطَعَنَ بِمِخْصَرَتِهِ فِي الْمِنْبَرِ ” هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ ” . يَعْنِي الْمَدِينَةَ ” أَلاَ هَلْ كُنْتُ حَدَّثْتُكُمْ ذَلِكَ ” . فَقَالَ النَّاسُ نَعَمْ ” فَإِنَّهُ أَعْجَبَنِي حَدِيثُ تَمِيمٍ أَنَّهُ وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْهُ وَعَنِ الْمَدِينَةِ وَمَكَّةَ أَلاَ إِنَّهُ فِي بَحْرِ الشَّامِ أَوْ بَحْرِ الْيَمَنِ لاَ بَلْ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ ما هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ ” . وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى الْمَشْرِقِ . قَالَتْ فَحَفِظْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم .
অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়ন্তে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় মিম্বারে বসে গেলেন। অতঃপর বললেন, প্রত্যেকেই আপন আপন স্থানে বসে যাও। তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান, আমি কি জন্য তোমাদেরকে সমবেত করেছি? সাহাবায়ে কিরাম বললেন, আল্লাহ ও তার রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ আমি তোমাদেরকে কোন আশা বা ভয়-ভীতির জন্য জমায়েত করিনি। তবে আমি তোমাদেরকে কেবল এজন্য জমায়েত করেছি যে, তামীম আদ দারী (রাযিঃ) প্রথমে খ্রীস্টান ছিল। সে আমার কাছে এসে বাই’আত গ্রহণ করেছে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। সে আমার নিকট এমন একটি কাহিনী বর্ণনা করেছে যদ্বারা আমার সে বর্ণনার সত্যায়ন হয়ে যায়, যা আমি দাজ্জালের ব্যাপারে তোমাদের নিকট বর্ণনা করেছিলাম। সে আমাকে বলেছে যে, একবার সে লাখ্ম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশজন লোকসহ একটি সামুদ্রিক জাহাজে আরোহণ করেছিল। সামুদ্রিক ঝড় এক মাস পর্যন্ত তাদেরকে নিয়ে খেলা করতে থাকে। অতঃপর সূর্যাস্তের সময় তারা সমুদ্রের এক দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করে। তারপর তারা ছোট ছোট নৌকায় বসে ঐ দ্বীপে প্রবেশ করে। দ্বীপে নামতেই জন্তুর ন্যায় একটি জিনিস তাদের দেখতে পায়। তার পূর্ণ দেহ পশমে ভরা ছিল। পশমের কারণে তার আগা-পাছা চেনার উপায় ছিল না। লোকেরা তাকে বলল, হতভাগা, তুই কে? সে বলল, আমি জাস্সা-সাহ। লোকেরা বলল, “জাস্সা-সাহ! আবার কি? সে বললঃ ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, সেখানে চলো। সেখানে এক লোক গভীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষা করছে। তামীম আদ দারী (রাযিঃ) বলেন, তার মুখে এক লোকের কথা শুনে আমরা ভয়ে শঙ্কিত হলাম যে, সে আবার শাইতান (শয়তান) তো নয়! আমরা দ্রুত পদব্রজে গীর্জায় প্রবেশ করতেই এক দীর্ঘাকৃতির এক লোককে দেখতে পেলাম। যা ইতোপূর্বে এমন আমরা আর কক্ষনো দেখিনি। লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় দু’ হাটুর মধ্য দিয়ে তার উভয় হাত ঘাড়ের সাথে মিলানো।
আমরা তাকে বললাম, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে বলল, তোমরা আমার সন্ধান কিছু না কিছু পেয়েই গেছ। এখন তোমরা বলো, তোমাদের পরিচয় কি? তারা বলল, আমরা আরবের বাসিন্দা। আমরা সমুদ্রে নৌকায় চড়ে ভ্রমণ করছিলাম। আমরা সমুদ্রকে উত্তাল তরঙ্গে উদ্বেলিত অবস্থায় পেয়েছি। এক মাস পর্যন্ত ঝড়ের কবলে থেকে অবশেষে আমরা তোমার এ দ্বীপে এসে পৌছেছি। অতঃপর ছোট ছোট নৌকায় আরোহণ করে এ দ্বীপে আমরা প্রবেশ করেছি। এখানে আমরা একটি সর্বাঙ্গ পশমে আবৃত জন্তুকে দেখতে পেয়েছি। পশমের মাত্রাতিরিক্তের কারণে আমরা তার আগা-পাছা চিনতে পারছি না। আমরা তাকে বলেছি, তোর সর্বনাশ হোক! তুই কে? সে বলেছে, সে নাকি জাসসা-সাহ। আমরা বললাম, জাসসা-সাহ! আবার কি? তখন সে বলেছে, ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, তোমরা সেখানে চলো। সেখানে এক লোক গভীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা দ্রুত তোর কাছে এসে গেছি। আমরা তার কথায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি না জানি এ আবার কোন জিন ভূত কিনা?
অতঃপর সে বলল, তোমরা আমাকে বাইসানের খেজুর বাগানের সংবাদ বলো। আমরা বললাম, এর কোন বিষয়টি সম্পর্কে তুই সংবাদ জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, বাইসানের খেজুর বাগানে ফল আসে কি না, এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি। তাকে আমরা বললাম, হ্যাঁ, আছে। সে বলল, সেদিন নিকটেই যেদিন এগুলোতে কোন ফল ধরবে না। তারপর সে বলল, আচ্ছা, তিবরিয়্যা সমুদ্রের ব্যাপারে আমাকে অবগত করো। আমরা বললাম, এর কোন বিষয় সম্পর্কে তুই আমাদের থেকে জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, এর মধ্যে পানি আছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, সেখানে বহু পানি আছে। অতঃপর সে বলল, সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন এ সাগরে পানি থাকবে না। সে আবার বলল, ’যুগার’ এর ঝর্ণার ব্যাপারে তোমরা আমাকে অবহিত করো। তারা বলল, তুই এর কি সম্পর্কে আমাদের নিকট জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, এর ঝর্ণাতে পানি আছে কি? আর এ জনপদের লোকেরা তাদের ক্ষেত্রে এ ঝর্ণার পানি দেয় কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, এতে অনেক পানি আছে এবং এ জনপদের লোকেরা এ পানির মাধ্যমেই তাদের ক্ষেত আবাদ করে।
সে আবার বলল, তোমরা আমাকে উম্মীদের নবীর ব্যাপারে খবর দাও। সে এখন কি করছে? তারা বলল, তিনি মক্কাহ থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে এসেছেন। সে জিজ্ঞেস করল, আরবের লোকেরা তার সাথে যুদ্ধ করেছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, করেছে। সে বলল, সে তাদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করেছে। আমরা তাকে খবর দিলাম যে, তিনি আরবের পার্শ্ববর্তী এলাকায় জয়ী হয়েছেন এবং তারা তার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, এ কি হয়েই গেছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, বশ্যতা স্বীকার করে নেয়াই জনগণের জন্য কল্যাণকর ছিল।
এখন আমি নিজের ব্যাপারে তোমাদেরকে বলছি, আমিই মাসীহ দাজ্জাল। অতি সত্ত্বরই আমি এখান থেকে বাইরে যাবার অনুমতি পেয়ে যাব। বাইরে যেয়ে আমি সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ প্রদক্ষিণ করব। চল্লিশ দিনের ভেতর এমন কোন জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ না করব। তবে মক্কাহ্ ও তাইবাহ এ দুটি স্থানে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। যখন আমি এ দু’টির কোন স্থানে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন এক ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারি হাতে সম্মুখে এসে আমাকে বাধা দিবে। এ দুটি স্থানের সকল রাস্তায় ফেরেশতাদের পাহারা থাকবে।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ছড়ি দ্বারা মিম্বারে আঘাত করে বললেন, এ হচ্ছে তাইবাহ, এ হচ্ছে তাইবাহ, এ হচ্ছে তাইবাহ। অর্থাৎ- তাইবাহ অর্থ এ মদীনাই। সাবধান! আমি কি এ কথাটি ইতোপূর্বে তোমাদেরকে বলিনি? তখন লোকেরা বলল, হ্যাঁ, আপনি বলেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তামীম আদ দারীর কথাটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। যেহেতু তা সামঞ্জস্যপূর্ণ আমার ঐ বর্ণনার, যা আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মদীনাহ ও মক্কাহ বিষয়ে ইতোপূর্বে বলেছি। জেনে রেখ। উল্লেখিত দ্বীপ সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়ামান সাগরের পার্শ্বস্থ সাগরের মাঝে অবস্থিত। যা পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত, পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত, পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত। এ সময় তিনি নিজ হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন। বর্ণনাকারী ফাতিমাহ বিনতু কায়স (রাযিঃ) বলেন, এ হাদীস আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সংরক্ষণ করেছি। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৪২
হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ إِنَّهُ خَارِجٌ خَلَّةً بَيْنَ الشَّأْمِ وَالْعِرَاقِ فَعَاثَ يَمِينًا وَعَاثَ شِمَالاً يَا عِبَادَ اللَّهِ فَاثْبُتُوا ” . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا لَبْثُهُ فِي الأَرْضِ قَالَ ” أَرْبَعُونَ يَوْمًا يَوْمٌ كَسَنَةٍ وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ ” . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلاَةُ يَوْمٍ قَالَ ” لاَ اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ ” . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا إِسْرَاعُهُ فِي الأَرْضِ قَالَ ” كَالْغَيْثِ اسْتَدْبَرَتْهُ الرِّيحُ فَيَأْتِي عَلَى الْقَوْمِ فَيَدْعُوهُمْ فَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَجِيبُونَ لَهُ فَيَأْمُرُ السَّمَاءَ فَتُمْطِرُ وَالأَرْضَ فَتُنْبِتُ فَتَرُوحُ عَلَيْهِمْ سَارِحَتُهُمْ أَطْوَلَ مَا كَانَتْ ذُرًا وَأَسْبَغَهُ ضُرُوعًا وَأَمَدَّهُ خَوَاصِرَ ثُمَّ يَأْتِي الْقَوْمَ فَيَدْعُوهُمْ فَيَرُدُّونَ عَلَيْهِ قَوْلَهُ فَيَنْصَرِفُ عَنْهُمْ فَيُصْبِحُونَ مُمْحِلِينَ لَيْسَ بِأَيْدِيهِمْ شَىْءٌ مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَيَمُرُّ بِالْخَرِبَةِ فَيَقُولُ لَهَا أَخْرِجِي كُنُوزَكِ . فَتَتْبَعُهُ كُنُوزُهَا كَيَعَاسِيبِ النَّحْلِ ثُمَّ يَدْعُو رَجُلاً مُمْتَلِئًا شَبَابًا فَيَضْرِبُهُ بِالسَّيْفِ فَيَقْطَعُهُ جَزْلَتَيْنِ رَمْيَةَ الْغَرَضِ ثُمَّ يَدْعُوهُ فَيُقْبِلُ وَيَتَهَلَّلُ وَجْهُهُ يَضْحَكُ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ فَيَنْزِلُ عِنْدَ الْمَنَارَةِ الْبَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ بَيْنَ مَهْرُودَتَيْنِ وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ إِذَا طَأْطَأَ رَأَسَهُ قَطَرَ وَإِذَا رَفَعَهُ تَحَدَّرَ مِنْهُ جُمَانٌ كَاللُّؤْلُؤِ فَلاَ يَحِلُّ لِكَافِرٍ يَجِدُ رِيحَ نَفَسِهِ إِلاَّ مَاتَ وَنَفَسُهُ يَنْتَهِي حَيْثُ يَنْتَهِي طَرْفُهُ فَيَطْلُبُهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَابِ لُدٍّ فَيَقْتُلُهُ ثُمَّ يَأْتِي عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ قَوْمٌ قَدْ عَصَمَهُمُ اللَّهُ مِنْهُ فَيَمْسَحُ عَنْ وُجُوهِهِمْ وَيُحَدِّثُهُمْ بِدَرَجَاتِهِمْ فِي الْجَنَّةِ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى إِنِّي قَدْ أَخْرَجْتُ عِبَادًا لِي لاَ يَدَانِ لأَحَدٍ بِقِتَالِهِمْ فَحَرِّزْ عِبَادِي إِلَى الطُّورِ . وَيَبْعَثُ اللَّهُ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ فَيَمُرُّ
أَوَائِلُهُمْ عَلَى بُحَيْرَةِ طَبَرِيَّةَ فَيَشْرَبُونَ مَا فِيهَا وَيَمُرُّ آخِرُهُمْ فَيَقُولُونَ لَقَدْ كَانَ بِهَذِهِ مَرَّةً مَاءٌ . وَيُحْصَرُ نَبِيُّ اللَّهُ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ حَتَّى يَكُونَ رَأْسُ الثَّوْرِ لأَحَدِهِمْ خَيْرًا مِنْ مِائَةِ دِينَارٍ لأَحَدِكُمُ الْيَوْمَ فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ فَيُرْسِلُ اللَّهُ عَلَيْهُمُ النَّغَفَ فِي رِقَابِهِمْ فَيُصْبِحُونَ فَرْسَى كَمَوْتِ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ يَهْبِطُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى الأَرْضِ فَلاَ يَجِدُونَ فِي الأَرْضِ مَوْضِعَ شِبْرٍ إِلاَّ مَلأَهُ زَهَمُهُمْ وَنَتْنُهُمْ فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى اللَّهِ فَيُرْسِلُ اللَّهُ طَيْرًا كَأَعْنَاقِ الْبُخْتِ فَتَحْمِلُهُمْ فَتَطْرَحُهُمْ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ مَطَرًا لاَ يَكُنُّ مِنْهُ بَيْتُ مَدَرٍ وَلاَ وَبَرٍ فَيَغْسِلُ الأَرْضَ حَتَّى يَتْرُكَهَا كَالزَّلَفَةِ ثُمَّ يُقَالُ لِلأَرْضِ أَنْبِتِي ثَمَرَتَكِ وَرُدِّي بَرَكَتَكِ . فَيَوْمَئِذٍ تَأْكُلُ الْعِصَابَةُ مِنَ الرُّمَّانَةِ وَيَسْتَظِلُّونَ بِقِحْفِهَا وَيُبَارَكُ فِي الرِّسْلِ حَتَّى أَنَّ اللِّقْحَةَ مِنَ الإِبِلِ لَتَكْفِي الْفِئَامَ مِنَ النَّاسِ وَاللِّقْحَةَ مِنَ الْبَقَرِ لَتَكْفِي الْقَبِيلَةَ مِنَ النَّاسِ وَاللِّقْحَةَ مِنَ الْغَنَمِ لَتَكْفِي الْفَخِذَ مِنَ النَّاسِ فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ رِيحًا طَيِّبَةً فَتَأْخُذُهُمْ تَحْتَ آبَاطِهِمْ فَتَقْبِضُ رُوحَ كُلِّ مُؤْمِنٍ وَكُلِّ مُسْلِمٍ وَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ يَتَهَارَجُونَ فِيهَا تَهَارُجَ الْحُمُرِ فَعَلَيْهِمْ تَقُومُ السَّاعَةُ
দাজ্জাল যুবক এবং ঘন চুল বিশিষ্ট হবে, চোখ আঙ্গুরের ন্যায় হবে। আমি তাকে কাফির ’আবদুল উয্যা ইবনু কাতান এর মতো মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা আল-কাহফ-এর প্রথমোক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে দুর্যোগ সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা অটল থাকবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চল্লিশদিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে।
আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, সেটাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাব করে তোমাদের দিনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দুনিয়াতে দাজ্জালের অগ্রসরতা কি রকম বৃদ্ধি পাবে? তিনি বললেন, বাতাসের প্রবাহ মেঘমালাকে যে রকম হাকিয়ে নিয়ে যায়। সে এক কাওমের কাছে এসে তাদেরকে কুফুরীর দিকে ডাকবে। তারা তার উপর ঈমান আনবে এবং তার আহ্বানে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশমণ্ডলীকে আদেশ করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিবে, ফলে ভূমি গাছ-পালা ও শস্য উৎপন্ন করবে। তারপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদি পশুগুলো পূর্বের চেয়ে বেশি লম্বা কুজ, প্রশস্ত স্তন এবং পেটভর্তি অবস্থায় তাদের কাছে ফিরে আসবে।
তারপর দাজ্জাল অপর এক কাওমেরর কাছে আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি ডাকবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে প্রত্যাবর্তন করবে। অমনি তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ কিছুই থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে সেটাকে সম্বোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন জমিনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার চতুষ্পার্শে একত্রিত হতে থাকবে, যেমন মধু মক্ষিকা তাদের সর্দারের চারপাশে সমবেত হয়।
অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দুটুকরো করে ফেলবে। তারপর সে আবার তাকে আহবান করবে। যুবক আলোকময় হাস্যোজ্জল চেহারায় তার সম্মুখে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রববুল আলামীন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) কে প্রেরণ করবেন। তিনি দু’ ফেরেশতার কাঁধের উপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রং এর জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকবেন তখন ফোটা ফোটা ঘাম তার শরীর থেকে গড়িয়ে পড়বে। তিনি যে কোন কফিরের কাছে যাবেন সে তার শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তার দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততদূর পর্যন্ত পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে বাবে লুদ নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন।
অতঃপর ঈসা (আঃ) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন। ঈসা (আঃ) তাদের কাছে গিয়ে তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহের ব্যাপারে খবর দিবেন। এমন সময় আল্লাহ তা’আলা ঈসা (আঃ) এর প্রতি এ মর্মে ওয়াহী অবতীর্ণ করবেন যে, আমি আমার এমন বান্দাদের আবির্ভাব ঘটেয়েছি, যাদের সঙ্গে কারোই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। অতঃপর তুমি আমার মুমিন বান্দাদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে চলে যাও। তখন আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুজ-মাজুজ কাওমকে পাঠাবেন। তারা ছাড়া পেয়ে পৃথিবীর সব প্রান্তে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তাদের প্রথম দলটি “বুহাইরায়ে তাবরিয়া”র (ভূমধ্যসাগর) উপকূলে এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে। তারপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ স্থান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে কোন সময় পানি ছিল কি?
তারা আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এবং তার সাথীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ দীনারের মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যবান প্রতিপন্ন হবে। তখন আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এবং তার সঙ্গীগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা ইয়া’জুজ-মা’জুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব পাঠাবেন। তাদের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে। এতে একজন মানুষের মৃত্যুর মতো তারাও সবাই মরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারপর ঈসা (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় হতে জমিনে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যথায় তাদের পচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই। অতঃপর ’ঈসা (আঃ) এবং তার সঙ্গীগণ পুনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। তখন আল্লাহ তা’আলা উটের ঘাড়ের মতো লম্বা এক ধরনের পাখি পাঠাবেন। তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছানুসারে কোন স্থানে নিয়ে ফেলবে।
এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যার ফলে কাঁচা-পাকা কোন গৃহই আর অবশিষ্ট থাকবে না। এতে জমিন বিধৌত হয়ে উদ্ভিদ শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পুনরায় জমিনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে জমিন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন করো এবং তোমার বারাকাত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে। দুধের মধ্যে বারাকাত হবে। ফলে দুগ্ধবতী একটি উটই একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী একগোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানদের (একটি ছোট গোত্রের) জন্য। এ সময় আল্লাহ তা’আলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বায়ু প্রেরণ করবেন। এ বায়ু সকল মুমিন লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে এবং সমস্ত মুমিন মুসলিমদের রূহ কবয করে নিয়ে যাবে। তখন একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকী থাকবে। তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের সাথে প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। এদের উপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৩৭
প্রিয় পাঠক, দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলে বইটি অনেক দীর্ঘ হবে। এখানে সামান্য আলোচনা করা হয়েছে। এর দ্বারা আপনার কী মনে হলো? দাজ্জাল কী কোনো সভ্যতার নাম নাকি কোনো মানুষের নাম? দাজ্জাল মানুষ হওয়ার পক্ষে এত এত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হাদিস থাকার পরও যেই হেযবুত তওহীদ দাজ্জালের থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে দিয়ে কোনো এক সভ্যতার দিকে ঘুরিয়ে দিতে চায়, তারা আসলে কারা ভেবে নিন।