স্ত্রীরা দাসী নয়, জীবনসঙ্গী:
وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ.
অর্থ: এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আর এক নিদর্শন (হচ্ছে): তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতি সৃষ্টি করেছেন; নিশ্চয় চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন আছে। (সূরা রুম-21)
নবিজি স্ত্রীদের কাজে সাহায্য করতেন:
عَنِ الأَسْوَدِ، قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ مَا كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ فِي بَيْتِهِ قَالَتْ كَانَ يَكُونُ فِي مِهْنَةِ أَهْلِهِ ـ تَعْنِي خِدْمَةَ أَهْلِهِ ـ فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ.
অর্থ: হজরত আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মহানবী (সা.) দিনের বেলায় ঘরে অবস্থানকালীন সময়ে কী করতেন? তখন তিনি বললেন, নবীজি (সা.) ঘরের কাজে স্ত্রীদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। এরপর যখন নামাজের সময় হতো তখন মসজিদে চলে যেতেন।’
সূত্র: সহিহ বুখারি হাদিস-৬৭৬
عَنِ الأَسْوَدِ، قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ مَا كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ فِي أَهْلِهِ قَالَتْ كَانَ فِي مِهْنَةِ أَهْلِهِ، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ.
অর্থ: আসওয়াদ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ গৃহে কী কাজ করতেন? তিনি বললেনঃ তিনি পারিবারিক কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। যখন সালাতের সময় উপস্থিত হত, তখন উঠে সালাতে চলে যেতেন।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদীস- ৬০৩৯
স্ত্রীর খাবারের ঠোট রাখার স্থানে ঠোট রাখতেন:
عن عائشة أم المؤمنين:] كُنْتُ أشْرَبُ وأَنا حائِضٌ، ثُمَّ أُناوِلُهُ النبيَّ ﷺ فَيَضَعُ فاهُ على مَوْضِعِ فِيَّ، فَيَشْرَبُ، وأَتَعَرَّقُ العَرْقَ وأَنا حائِضٌ، ثُمَّ أُناوِلُهُ النبيَّ ﷺ فَيَضَعُ فاهُ على مَوْضِعِ فِيَّ. وَلَمْ يَذْكُرْ زُهَيْرٌ فَيَشْرَبُ
অর্থ: যখন উম্মুল মু’মিনীন আ’ইশা (রা.) গ্লাসে করে পানি খেতেন, আল্লাহর রাসুল ﷺ ঠিক প্রিয়
সহধর্মিণীর ঠোট লাগা অংশে ঠোট লাগিয়ে
পানি পান করতেন। যখন আ’ইশা (রা.) গোশত
খেতেন, তখন আল্লাহর রাসুল ﷺ আ’ইশা হতে
গোশতটা টান দিয়ে নিয়ে নিতেন, এবং ঠিক
আ’ইশা (রা.) যেদিকটায় ঠোট লাগিয়ে
খেয়েছেন, একই স্থান থেকে তিনি ﷺ ও
খাওয়া শুরু করতেন।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস-৩০০
স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেয়া:
عن سعد بن أبي وقاص:] إنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بها وجْهَ اللَّهِ إلّا أُجِرْتَ عَلَيْها، حتّى ما تَجْعَلُ في فَمِ امْرَأَتِكَ
অর্থ: সা‘আদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশে যা-ই ব্যয় কর না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।’
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস-৫৬
স্ত্রীর সাথে ফুর্তি করা:
عن عائشة أم المؤمنين:] أنَّها كانت مع النَّبيِّ ﷺ في سفَرٍ، قالت: فسابَقْتُهُ فسبَقْتُهُ على رِجْلَيَّ، فلمّا حمَلْتُ اللَّحْمَ سابَقْتُهُ فسبَقني، فقال: هذه بتِلك السَّبْقةِ.
অর্থ: হযরত আয়শা রাযিযাল্লাহু তায়ালা আনহা কোন এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলেন৷ তিনি বলেন,আমরা দুজন দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং আমি বিজয়ী হলাম৷ অতপর যখন আমার গড়ন ভারী হলো তখন আবার প্রতিযোগিতা করলাম এবার রাসূল বিজয়ী হলেন এবং বললেন এটা প্রথম প্রতিযোগিতায় তুমি জিতে যাওয়ার বদলা।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদীস-২৫৭৮
খাবারের দোষ ধরতেন না:
عن أبي هريرة:] ما عابَ النبيُّ ﷺ طَعامًا قَطُّ، إنِ اشْتَهاهُ أكَلَهُ، وإنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ.
অর্থ: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। পছন্দ হলে খেতেন , পছন্দ না হলে খেতেন না।
সূত্র: সহীহ বুখারী হাদিস-৫৪০৯ মুসলিম-২০৬৪
স্ত্রীকে মারার বিধান:
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلاَ تَبْغُواْ عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
অর্থ: পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।
সুরা নিসা আয়াত-৩৪
স্ত্রীদের প্রতি সদায় হওয়া:
عن أبي هريرة:] مَن كانَ يُؤْمِنُ باللَّهِ واليَومِ الآخِرِ فلا يُؤْذِي جارَهُ، واسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا، فإنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِن ضِلَعٍ، وإنَّ أعْوَجَ شيءٍ في الضِّلَعِ أعْلاهُ، فإنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وإنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أعْوَجَ، فاسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا
অর্থ: তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।’
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস-৫১৮৫ মুসলিম-১৪৬৮
মৃদু আঘাত করা-
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
فَاتَّقُوا اللهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ، وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ، فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
অর্থ: তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা আল্লাহর আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ। আল্লাহর বাণী সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা তোমাদের গৃহে এমন লোককে প্রবেশ করতে দিবে না যাকে তোমরা পছন্দ কর না। কিন্তু তারা যদি নির্দেশ লঙ্ঘন করে এরূপ করে ফেলে তবে, তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু প্রহার যেন কঠিন ও কষ্টদায়ক না হয়। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে, তোমরা সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক তাদের খানা-পিনা ও কাপড়ের ব্যবস্থা করবে। [মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮
মেসওয়াকের মত কিছু দিয়ে মারা-
قَالَ عَطَاءٌ: قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ مَا الضَّرْبُ غَيْرُ الْمُبَرِّحِ؟ قَالَ بِالسِّوَاكِ وَنَحْوِهِ
আত্বা [রহ.] বলেন, ইবন আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, উক্ত প্রহার কিরূপ হবে? তিনি বললেন, মেসওয়াক বা অনুরূপ বস্তু দ্বারা প্রহার হতে হবে। (তাফসীরে কুরতুবী)
চেহারায় না মারা-
عن معاوية بن حيدة القشيري:] يا رسول اللهِ ما حق زوجة أحدنا عليه قال أن تطعمها إذا طعمت وتكسوها إذا اكتسيت أو اكتسبت ولا تضرب الوجه ولا تقبح ولا تهجر إلا في البيت
অর্থ: হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেনঃ “তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমণ্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে। সূত্র: আবু দাউদ : ২১৪২
স্বামী স্ত্রীর উভয় পক্ষ থেকে দুজন লোক ডাকা-
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُواْ حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلاَحًا يُوَفِّقِ اللّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا
অর্থ: যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।
সুরা নিসা আয়াত-৩৫
আয়েশা রা: কে থাপ্পড় মারার অভিযোগ:
নবিজির কাছে স্ত্রী প্রিয় ছিল:
عن أنس بن مالك حُبِّب إليَّ من الدنيا النساءُ والطيبُ وجعلت قرةُ عيني في الصلاةِ
অর্থ: দুনিয়ার বস্তু নিচয়ের মধ্যে আমি ভালবাসি নারী এবং সুগন্ধি আর আমার চোখ শীতলকারী হল নামায।
সূত্র: সুনানে নাসাঈ হাদিস-৩৯৩৯ আহমাদ-১৩০৭৯
স্ত্রীর সাথে ভাল ব্যবহার করা
عن أبي هريرة أكملُ المؤمنين إيمانًا أحسنُهم خُلقًا وخيارُكم خيارُكم لأهلِه
অর্থ: আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিনদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই পরিপূর্ণ ঈমানদার যিনি তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা চরিত্রবান। তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি- যে তার স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে ভাল।
সূত্র: তিরমিযী হাদিস-১১৬২ আবূ দাঊদ হা. ৪৬৮২
নবিজি স্ত্রীদের কাছে প্রিয় ছিলেন:
عن عائشة أم المؤمنين:] خَيْرُكُمْ خَيْرَكُمْ لأهلِهِ وأنا خَيْرُكُمْ لأهلِي وإذا ماتَ صاحِبُكُمْ فَدَعُوهُ
অর্থ: হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীদের জন্য তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি।’
সূত্র: সুনানে তিরমিজি হাদিস-৩৮৯৫ দারেমী-২২৬০
স্ত্রীরা বন্ধু:
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ
অর্থ: আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। সুরা তাওবা আয়াত-৭১
স্ত্রীরা তোমাদের পোষাক:
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
অর্থ: তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। সুরা বাকারা আয়াত-১৮৭
নবিজি স্ত্রীকে মারেন নি:
عن عائشة أم المؤمنين ما ضَرَبَ رَسولُ اللهِ صَلّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ شيئًا قَطُّ بيَدِهِ، وَلا امْرَأَةً، وَلا خادِمًا، إلّا أَنْ يُجاهِدَ في سَبيلِ اللهِ، وَما نِيلَ منه شيءٌ قَطُّ، فَيَنْتَقِمَ مِن صاحِبِهِ، إلّا أَنْ يُنْتَهَكَ شيءٌ مِن مَحارِمِ اللهِ، فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
অর্থ: আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি।
সূত্র: সহীহুল বুখারী ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৮, আবূ দাউদ ৪৭৮৫, ৪৭৮৬, আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪৩০৯, ২৪৪৬৪, ২৫৪২৫, ২৭৬৫৮, মুয়াত্তা মালেক ১৬৭১, দারেমী ২২১৮, গয়াতুল মারাম ২৫২, মুখতাসার শামাইল ২৯৯
স্ত্রীদের দায়িত্বশীল:
[عن عبدالله بن عمر:] أَلا كُلُّكُمْ راعٍ وكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عن رَعِيَّتِهِ، فالإِمامُ الذي على النّاسِ راعٍ وهو مَسْئُولٌ عن رَعِيَّتِهِ، والرَّجُلُ راعٍ على أهْلِ بَيْتِهِ، وهو مَسْئُولٌ عن رَعِيَّتِهِ، والمَرْأَةُ راعِيَةٌ على أهْلِ بَيْتِ زَوْجِها، ووَلَدِهِ وهي مَسْئُولَةٌ عنْهمْ، وعَبْدُ الرَّجُلِ راعٍ على مالِ سَيِّدِهِ وهو مَسْئُولٌ عنْه، ألا فَكُلُّكُمْ راعٍ وكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عن رَعِيَّتِهِ.
অর্থ: শুনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা প্রহরী। আর প্রত্যেককেই তার অধিনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। ইমাম বা নেতা যিনি শাসন করেন সাধারণ মানুষকে তাকেও তার অধিনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। একজন পুরুষ তার বাড়ির লোকদের রাখাল বা প্রহরী। তাকে তার অধিনস্ত লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামীর ঘরের লোকদের এবং সন্তানদের রাখাল বা প্রহরী। তাকে তার অধিনস্ত লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
সূত্র: সুহীহ বুখারী হাদিস-৭১৩৮
স্ত্রীকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো:
یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ قُوۤا۟ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِیكُمۡ نَارࣰا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَیۡهَا مَلَـٰۤىِٕكَةٌ غِلَاظࣱ شِدَادࣱ لَّا یَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَاۤ أَمَرَهُمۡ وَیَفۡعَلُونَ مَا یُؤۡمَرُون
অর্থ: হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।
সুরা আত তাহরীম আয়াত-৬
বিজ্ঞান:
শরীরের (Body) ভেতরে রক্ত (blood) সদা চলমান অবস্থায় থাকে। হৃদপিণ্ডের (heart) কাজ হলো এ রক্তকে পাম্প (blood circulation) করে রক্ত সঞ্চালণের মাধ্যমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ব্লাড ভেসেল নামক পাইপগুলোর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির(gravitation) সাথে পাল্লা দিয়ে, হৃদপিণ্ড থেকে রক্তের পায়ে পৌঁছানো লাগে এবং পা থেকে আবার মাথায় চলাচল করতে হয়।আমরা নিঃশ্বাস নেয়া বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি, যা ফুসফুস থেকে আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত দ্বারা চালিত হয়, যা তাদের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি দেয়। তাই সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহ ব্যবস্থা শরীরের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। যা
১. কোষ বৃদ্ধি করে।
২. অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৩. পুষ্টি সরবরাহ করে।
৪. নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষ থেকে বর্জ্য বাইরে বহন করে নিয়ে আসে।
ভাল রক্ত সঞ্চালন সিস্টেম ছাড়া, আমাদের শরীর ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, পরিমিত পর্যায়ে শরীরে প্রহার করা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রক্তের প্রবাহকে উৎসাহিত করতে এবং শরীর থেকে সার্কুলেশন-ব্লকিং টক্সিনগুলিকে মুক্ত করে দেয়। অর্থাৎ, রক্তের এই চলাচলের রাস্তায় যেই সকল দূষিত দ্রব্য শরীরে জমা হয়, নিয়মিত শরীরে পরিমিত মাত্রায় আঘাতের মাধ্যমে দূষিত দ্রব্যগুলো রক্তের সাথে মিশে বর্জ্য হিসেবে বের হয়ে আসে।
অভিযোগ:
হাদিসে আছে, হযরত আয়শা হতে বর্ণিত, তিনি (মুহাম্মদ) আমাকে বুকের ওপর আঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। [সহি মুসলিম, বই -৪, হাদিস -২১২৭]’
জবাব:
শুধু তাই নয়, আমেরিকার নাসা (The National Aeronautics and Space Administration-NASA) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত শরীরে পরিমিত পর্যায়ে প্রহার ব্যথা হ্রাস করে, ঘুম উন্নত করে, ইনসোমেনিয়ার রোগ ভাল করে, ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে, মানসিকভাবে মানুষকে শক্ত করে, এবং আরও অনেক সুবিধা।
আধুনিক সময়ে বেশিরভাগ নারীরাই ইনসোমেনিয়ার শিকার। তারা ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না, তাদের শরীরে নানা ধরণের ব্যাথা বেদনা তারা অনুভব করে। অথচ, সেই ১৪০০ বছর আগেই ইসলাম মানব জাতির জন্য দিয়ে এর সমাধান দিয়ে গেছে।ধরুন, একজন মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেছে। ধরুন, তার হৃদপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন যেকোন ডাক্তারই সর্বপ্রথম যেই কাজটি করবেন, তা হচ্ছে, হৃদপিণ্ডটিকে সচল করবার জন্য বুকে চাপ দেয়া। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয়, cardiopulmonary resuscitation বা হৃদপিণ্ডের নবজীবনসঞ্চার।
ধরুন, তাতেও কাজ হলও না। তখন ডাক্তার কী করেন? ডাক্তার একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে হৃদপিণ্ডটি সচল করেন। যন্ত্রটি মানুষকে সাময়িক যন্ত্রণা দিলেও, এতে আল্লাহর রহমতে মানুষের জীবন রক্ষা পায়। হৃদপিণ্ড আবার সচল হয়।
জীববিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের শরীরের কোষগুলো বেশিদিন বাঁচে না। কিছুদিনের মধ্যেই কোষগুলো মারা যায়। এই মৃত কোষগুলোকে পুনরায় সচল এবং কার্যক্ষম হতে পারে শুধুমাত্র শরীরে হালকা প্রহারের মাধ্যমেই। এই কারণেই উন্নত বিশ্বে এখন অসংখ্য মেসেজ পার্লার। শরীরে ব্যাথা সৃষ্টি করে রোগ ব্যাধি উপশম তো এখন সকল বিজ্ঞানীই একবাক্যে স্বীকার করেন। ভেবে দেখুন, সেই ১৪০০ বছর আগে মানব দেহের এত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় একমাত্র আল্লাহ পাক ছাড়া আর কে জানতে পারে? বুঝতে পারে? আর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যে হযরত আয়শা (রাঃ) কে কেন বুকে ব্যাথা দিয়েছিলেন, সেটি তো আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের দ্বারাই প্রমাণিত। ডাক্তাররা যখন রোগীর জীবন বাঁচাতে cardiopulmonary resuscitation মেশিন ব্যবহার করেন, সেটাকেও কী আপনি নারী নির্যাতন বলবেন?