সম্প্রতি সময়ে গাইরে মুকাল্লিদ ও জামাআতে ইসলামীর কিছু সমর্থক ভাই বলে থাকেন যে, আলেমদের নামে মাওলানা বলা শিরক। এর কারণ হিসাবে তারা উল্লেখ্য করেন, যেহেতু আল্লাহ নিজের ক্ষেত্রে ‘মাওলানা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন, সেহেতু অন্য কারো জন্যই এ শব্দটি আর ব্যবহার করা যাবে না, করলে শিরক হবে। অথচ কুরআন-হাদিসে তাদের এ দাবির বিপক্ষে সরাসরি প্রমাণ রয়েছে।
এক.
যেমন গোলামের মুনিবকে ‘মাওলা’ বলেছেন খোদ আল্লাহ তা’আলা। আল্লাহ পাক বলেন,
وَضَرَبَ اللّهُ مَثَلاً رَّجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لاَ يَقْدِرُ عَلَىَ شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَى مَوْلاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّههُّ لاَ يَأْتِ بِخَيْرٍ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَن يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَهُوَ عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
অর্থ: আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, দু’ব্যক্তির, একজন বোবা কোন কাজ করতে পারে না। সে মালিকের উপর বোঝা। যেদিকে তাকে পাঠায়, কোন সঠিক কাজ করে আসে না। সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায় বিচারের আদেশ করে এবং সরল পথে কায়েম রয়েছে।
সূরা নাহল, আয়াত: ৭৬
উক্ত আয়াতে وَهُوَ كَلٌّ عَلَى مَوْلاهُ অর্থাৎ সে মালিকের উপর বোঝা। এখানে মুনিবকে গোলামের মাওলা বলা হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর সিফাতী নাম মাওলানা হওয়ায় আলেমদেরকে মাওলানা বলা যদি শিরক হয়, তাহলে মুনিবের গোলামকে মাওলা বলাও তো শিরক হওয়ার কথা। অথচ এ শব্দটি আল্লাহ নিজে মুনিবদের জন্য ব্যবহার করেছেন।
দুই.
উপরন্তু রাসূলুলুল্লাহ সা. হযরত যায়েদ বিন হারেসা রা. কে বলেছেন,
انت اخونا ومولانا
অর্থাৎ তুমি আমার ভাই এবং মাওলানা।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস: ৪২৫১
তিন.
বরং নবীজী সা. গোলামদের শিখিয়েছেন যেন গোলামরা তার মনীবকে বলে-“সাইয়্যিদী ওয়া মাওলায়া”। নবীজি সা. বলের,
لاَ يَقُلْ أَحَدُكُمْ أَطْعِمْ رَبَّكَ، وَضِّئْ رَبَّكَ، اسْقِ رَبَّكَ. وَلْيَقُلْ سَيِّدِي مَوْلاَىَ
অর্থ: তোমার প্রভুকে আহার করাও “তোমার প্রভুকে অযু করাও “তোমরা প্রভুকে পান করাও” আর যেন (গোলাম বাঁদীরা)-এরূপ বলে, “আমার মনিব”, আমার (মাওলায়া) অভিভাবক।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস: ২৫৫২
তাহলে আবুল আ’লা মওদুদীর নাম কি শিরক?
জামাআতে ইসলামীর বক্তা তারেক মনোয়ারা ভাই তার এক বয়ানে এ দাবি করেছেন যে, মাওলানা বলা শিরক। কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, মাওলানা শব্দটি আল্লাহ নিজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। আর আল্লাহর নামে যেটা ব্যবহার হয়, সেটা অন্যদের নামে ব্যবহার শিরক।
জবাব:
উপরে এটার দলীল দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে, আল্লাহর নামে ব্যবহ্নত শব্দ অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা শিরক, তাহলে জামাআতে ইসলামীরর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর নামও শিরক হওয়ার কথা। কারণ, জামাআতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতার নাম হলো, আবু আ’লা মওদুদী। আর আ’লা হলো, আল্লাহর একটি সিফাতী নাম।মহান রব বলেন,
سَبِّحِ ٱسۡمَ رَبِّكَ ٱلۡأَعۡلَى
সূরা আ’লা, আয়াত: ১
সুতরাং ‘মাওলা’ যেমন আল্লাহর সিফাতী নাম, তেমনি ‘আ’লা’ এটাও আল্লাহর সিফাতী নাম। সুতরাং আলেমদের জন্য ‘মাওলানা’ বলা যদি শিরক হয়, তাহলে মওদুদী সাহেবের আবু আ’লা শব্দটাও শিরক।