Home > সমসাময়িক ফিৎনা > নবিজি সাঃ কী গায়েব জানতেন?

নবিজি সাঃ কী গায়েব জানতেন?

রাসুলুল্লাহ সাঃ গায়েবের সকল বিষয় জানেন বলে বর্তমানে কথিত সুন্নিরা দাবি করে বসেছেন। অথচ গায়েবের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। নিন্মে কয়েকটি আয়াত পেশ করছি,
قُل لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۚ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ ۚ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
বল, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ইচ্ছা না করেন, আমি আমার নিজেরও কোন উপকার ও অপকার করার ক্ষমতা রাখি না। আমার যদি গায়েব সম্পর্কে জানা থাকত, তবে ভালো-ভালো জিনিস প্রচুর পরিমাণে সংগ্রহ করে নিতাম এবং কোনও রকম কষ্ট আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা সেই সকল লোকের জন্য, যারা (আমার কথা) মানে। [সুরা আল আ’রাফ : ১৮৮]

وَلَا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ إِنِّي مَلَكٌ وَلَا أَقُولُ لِلَّذِينَ تَزْدَرِي أَعْيُنُكُمْ لَن يُؤْتِيَهُمُ اللَّهُ خَيْرًا ۖ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا فِي أَنفُسِهِمْ ۖ إِنِّي إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِينَ
(হে নবি, আপনি বলুন,) আমি তোমাদেরকে বলছি না যে, আমার হাতে আল্লাহর ধন-ভাণ্ডার আছে, এবং এটাও নয় যে, আমি গায়েব জানি এবং আমি একথাও বলছি না যে, আমি কোনও ফেরেশতা। ২১ তোমাদের দৃষ্টিতে যারা হেয়, তাদের সম্পর্কে আমি একথা বলতে পারি না যে, আল্লাহ তাদেরকে কোনও মঙ্গল দান করবেন না। তাদের অন্তরে যা-কিছু আছে, তা আল্লাহই সর্বাপেক্ষা বেশি জানেন। আমি তাদের সম্পর্কে এরূপ কথা বললে নিশ্চয়ই আমি জালিমদের মধ্যে গণ্য হব। [সুরা হুদ : ৩১]

অভিযোগ:
وَلَا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ
এ আয়াত পড়লে তারা বলে থাকে হাদিসে আসছে
وإنِّي أُعْطِيتُ مَفاتِيحَ خَزائِنِ الأرْضِ، أوْ مَفاتِيحَ الأرْضِ، وإنِّي واللهِ ما أخافُ علَيْكُم أنْ تُشْرِكُوا بَعْدِي، ولَكِنِّي أخافُ علَيْكُم أنْ تَنافَسُوا فِيها
সহিহ বুখারী, হাদিস : ৪০৮৫

জবাব:
১. এখানে শুধু দুনিয়ার কথা বলা হয়েছে অন্য কিছু বলা হয়নি
২. তাও আবার ৫ টা ব্যাতিত। নবিজি সাঃ বলেন,
١- [عن عبد الله بن عمر:] أوتيتُ مفاتيحَ كلِّ شيءٍ إلّا الخَمسَ { إنّ اللهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السّاعَةِ } الآَيَةَ.
السيوطي (ت ٩١١)، الخصائص الكبرى ٢‏/١٩٥  •  إسناده صحيح

অভিযোগ:
وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ

তারা বলে, গায়েব দুই প্রকার। ১. জাতি, ২. আতায়ী

وَيَقُولُونَ لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ ۖ فَقُلْ إِنَّمَا الْغَيْبُ لِلَّهِ فَانتَظِرُوا إِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُنتَظِرِينَ
তারা বলে, এ নবীর প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কোনও নিদর্শন কেন অবতীর্ণ করা হল না? (হে নবী! উত্তরে) তুমি বলে দাও, অদৃশ্যের বিষয়সমূহ তো কেবল আল্লাহরই এখতিয়ারে। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর। আমিও তোমাদের সঙ্গে অপেক্ষা করছি। [সুরা ইউনুস : ২০]

قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ ۚ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
বলে দাও, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না। এবং মানুষ জানে না তাদেরকে কখন পুনর্জীবিত করা হবে। [আন নামল : ৬৫]

وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
আর তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের কুঞ্জি। তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থলে ও জলে যা-কিছু আছে, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত। (কোনও গাছের) এমন কোনও পাতা ঝরে না, যে সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত নন। মাটির অন্ধকারে কোনও শস্যদানা অথবা আর্দ্র বা শুষ্ক এমন কোনও জিনিস নেই যা এক উন্মুক্ত কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই। [আল আনআ’ম : ৫৯]

এভাবে কোরআনের আরো বহু আয়াত পেশ করা যাবে। যেগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে রাসুলুল্লাহ সাঃ সকল গায়েব জানতেন না।

তাহলে তিনি ভবিষ্যতবানী করতেন কীভাবে?
তাহলে প্রশ্ন হলো, নবিজি সাঃ তো ভবিষ্যতের অনেক বিষয় অগ্রীম সতর্ক করে গেছেন, যেমন কিয়ামতের আলামতসমূহ এবং যা বাস্তবেই ঘটে চলেছে। তাহলে তিনি এগুলো কীভাবে বলে গেলেন? এটি কী গায়েব জানার প্রমাণ নয়?

জবাব:
মূলত যেসকল বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ অগ্রীম ভবিষ্যতবানী করে গেছেন, সেগুলো তিনি ওহীর মাধ্যমে আল্লাহপাকের কাছ থেকেই জেনে বলে গেছেন। এ কথাটাও পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন।
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا
তিনিই সকল গায়েব বিষয় জানেন। তিনি তাঁর গায়েবের জ্ঞান সম্পর্কে কাউকে অবহিত করেন না। তবে তিনি যাকে (এ কাজের জন্য) মনোনীত করেছেন সেই রাসুল ছাড়া।  এরূপ ক্ষেত্রে তিনি সেই রাসূলের সামনে ও পেছনে কিছু প্রহরী নিযুক্ত করেন। [সুরা জ্বিন : ২৬-২৭]

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা ছাড়া আলিমুল গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞাতা আর কেউ নেই। তবে তিনি তাঁর নবি-রাসুলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন ওহীর মাধ্যমে গায়েবের সংবাদ দান করেন। এরূপ ক্ষেত্রে ফেরেশতাগণকে সেই ওহীর পাহারাদার করে পাঠানো হয়, যাতে শয়তান তাতে কোন রকমের হস্তক্ষেপ করতে না পারে। এ কথার প্রমাণ নিন্মের আয়াত থেকেই পাওয়া যায়। মহান রব বলেন,
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
সে তার নিজ খেয়াল-খুশী থেকে কিছু বলে না। এটা তো খালেস ওহী, যা তাঁর কাছে পাঠানো হয়। [সূরা আন-নাজম : ৩-৪]

আর এটাকেই অনেকে গায়েব মনে করে বিতর্ক শুরু করে দেয়। আশ্চর্য! এটা যদি গায়েব হয়, তাহলে ওহী কোনটা? তাছাড়া এ জাতীয় গায়েব  তো রাসূল সাঃ এর আগেই জিব্রাইল আঃ জানতেন।

পরিশিষ্ট:
এ ব্যাপারে সর্বশেষ একটি হাদিস পেশ করতে চাই। আম্মাজান আয়িশাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ الْغَيْبَ فَقَدْ كَذَبَ وَهُوَ يَقُولُ لاَ يَعْلَمُ الْغَيْبَ إِلاَّ اللهُ
আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলে মুহাম্মাদ সাঃ গায়েব জানেন, সেও মিথ্যা বলল। কেননা আল্লাহ্ বলেন, গায়িব জানেন একমাত্র আল্লাহ্। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৭৩৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নং : ৬৮৬৬

Check Also

নামাজ পড়লে জান্নাত পাবেন এমন কোনো আয়াত কি নেই?

এক মুর্খ জাহিল আলোচক দাবি করেছেন, ‘নামাজ পড়লে জান্নাত দেবে এমন আয়াত কুরআনে কোথাও পাইনি। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.