Home > সমসাময়িক ফিৎনা > নামাজ পড়লে জান্নাত পাবেন এমন কোনো আয়াত কি নেই?

নামাজ পড়লে জান্নাত পাবেন এমন কোনো আয়াত কি নেই?

এক মুর্খ জাহিল আলোচক দাবি করেছেন,
‘নামাজ পড়লে জান্নাত দেবে এমন আয়াত কুরআনে কোথাও পাইনি। চলুন এ ব্যাপারে কুরআন শরীফের কোনো দলীল আছে কি না দেখে নেওয়া যাক।

মুত্তাকিদের জন্য জান্নাত:
জান্নাত কাদের জন্য বানানো হয়েছে, সে কথা মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআন শরীফে বলেছেন,

وَسَارِعُواْ إِلَى مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

অর্থ: তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে মুত্তাকি (পরহেযগারদের) জন্য।
সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ১৩৩

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘জান্নাত নির্মান করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’ অর্থাৎ মুত্তাকিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। এখন দেখা যাক, ‘মুত্তাকি’ কারা? মুত্তাকিদের পরিচয় খোদ আল্লাহ তা’আলা নিজেই দিয়েছেন,

ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ

অর্থ: এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী মুত্তাকি (পরহেযগারদের) জন্য, যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।
সুরা বাকারা, আয়াত নং- ২-৩

উক্ত আয়াতে নামাজীদেরকে মুত্তাকি বলা হয়েছে। আর উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, জান্নাত মুত্তাকিদের জন্য। সুতরাং প্রমাণ হলো, কেউ নামাজ পড়লে হয় মুত্তাকি আর আর মুত্তাকিদের জন্য জান্নাত। এত সুস্পষ্ট আয়াত থাকতেও যারা ‘নামাজ পড়লে আল্লাহ জান্নাত দেবেন’ এমন কোনো আয়াত খুঁজে পান না  তারা হয়তো মুর্খ অথবা শিক্ষিত প্রতারক।

বেনামাজীদের জন্য জাহান্নাম।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়ে জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হবে। সুরা মুদ্দিসসিরের ৪২ থেকে ৪৭ নং আয়াত পর্যন্ত কথোপকথন উল্লেখ্য করা হয়েছে। প্রশ্ন করা হবে-

مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ

অর্থাৎ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে?

তখন জাহান্নামীরা জবাব দেবে,

قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّين حَتَّى أَتَانَا الْيَقِينُ

অর্থাৎ তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম, আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত।
সূরা মুদ্দিসসির, আয়াত নং- ৪২-৪৭

উক্ত আয়াতে জাহান্নামে যাওয়ার প্রথম কারণ হিসাবে নামাজ না পড়ার অপরাধ বলা হয়েছে। সুতরাং আয়াত দ্বারা বুঝতে পারলাম, নামাজ না পড়ার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। সুতরাং নামাজ পড়লে জান্নাতে যাওয়া যাবে এমন কোনো কথা কুরআনে নেই বলে জাতিকে নামাজের প্রতি অবহেলায় উৎসাহিত করা কোনো মুসলিমের কাজ হতে পারে না। মনে রাখা উচিৎ হাদিস শরীফে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে,

عن أنس رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِياَمَةِ الصَّلاَةُ يُنْظَرُ فِيْ صَلاَتِهِ فَإنْ صَلَحَتْ فَقَدْ أفْلَحَ وإنْ فَسَدَتْ خاَبَ وَخَسِرَ

অর্থ: হযরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ’’কিয়ামতের দিন বান্দা সর্বপ্রথম যে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে, তা হচ্ছে নামায। তার নামাযের দিকে দৃষ্টিপাত করা হবে। যদি তার নামায সংশোধন বা বিশুদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে সে মুক্তি পেয়ে যাবে। আর তার নামায যদি বরবাদ থাকে, তাহলে সে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে।’’
সূত্র: আত তারগীব ওয়াত তারহীব খ. ১ পৃ. ১৩০

সুতরাং নামাজের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন মূর্খতাসুলভ বক্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

Check Also

নামাজ জান্নাতের চাবি নয়?

বর্তমান সময়ে অনেক আলোচক দাবি করে বসেছেন, নামাজ জান্নাতের চাবি এ বিষয়ক হাদিসটি জাল। নাউযুবিল্লাহ। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.