এক. সাদা পোশাক পরিধান করা। হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الْبَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمُ الْبَيَاضَ، فَإِنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ
তোমরা সাদা পোশাক পরো, কেননা তা তোমাদের সর্বোত্ততম পোশাক। আর তোমাদের মৃতদেরকেও সাদা কাপড়ে কাফন দাও। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০৬১
দুই. কোর্তা পরিধান করা। হযরত উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ أَحَبُّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَمِيصَ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় পোশাক ছিলো ‘কোর্তা’। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০২৫
তবে পোষাকের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা পোষাক পরিধান করা। আঁটসাঁট পোষাক পরিধান না করা। হযরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ لِبْسَتَيْنِ، أَنْ يَحْتَبِيَ الرَّجُلُ مُفْضِيًا بِفَرْجِهِ إِلَى السَّمَاءِ، وَيَلْبَسُ ثَوْبَهُ، وَأَحَدُ جَانِبَيْهِ خَارِجٌ، وَيُلْقِي ثَوْبَهُ عَلَى عَاتِقِهِ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ভাবে কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। এক. মানুষের এমনভাবে লেপ্টে পোশাক পরা যে, লজ্জাস্থান আকাশের দিকে উন্মুক্ত হয়ে থাকে। দুই. কাপড় এভাবে পরা যে, শরীরের একদিক বের হয়ে থাকে, আর অবশিষ্ট কাপড় কাঁধে ফেলে রাখা হয়। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০৮০
এছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা, ময়লা কাপড় না পরা। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَتَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَى رَجُلًا شَعِثًا قَدْ تَفَرَّقَ شَعْرُهُ فَقَالَ: أَمَا كَانَ يَجِدُ هَذَا مَا يُسَكِّنُ بِهِ شَعْرَهُ، وَرَأَى رَجُلًا آخَرَ وَعَلْيِهِ ثِيَابٌ وَسِخَةٌ، فَقَالَ أَمَا كَانَ هَذَا يَجِدُ مَاءً يَغْسِلُ بِهِ ثَوْبَهُ
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে এসে এক বিক্ষিপ্ত চুলওয়ালাকে দেখে বললেনঃ লোকটি কি তার চুলগুলো আচড়ানোর জন্য কিছু পায় না? তিনি ময়লা কাপড় পরিহিত অপর ব্যক্তিকে দেখে বলেনঃ লোকটি কি তার কাপড় ধোয়ার জন্য কিছু পায় না? –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০৬২
তিন. জামা, পাজামা-সেলওয়ার, লুঙ্গী, জুতা, মোজা ইত্যাদী পরিধান করার সময় প্রথমে ডান হাত এবং ডান পা প্রবেশ করানো, অতঃপর বাম হাত এবং বাম পা ঢুকানো। এভাবে যেকোনো ভালো কাজ ডান দিক দিয়ে করা সুন্নাত। হাদিসে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ في شَأنِهِ كُلِّهِ : في طُهُورِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَتَنَعُّلِهِ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত কাজে (যেমন) ওযূ করা, মাথা আঁচড়ানো ও জুতা পরা (প্রভৃতি সমস্ত ভাল) কাজে ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৫৯২৬
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا لَبِسْتُمْ، وَإِذَا تَوَضَّأتُمْ، فَابْدَأُوا بِأَيَامِنِكُمْ
তোমরা কাপড় পরিধান করার সময় ও অজু করার সময় তোমাদের ডান দিক থেকে আরম্ভ করো। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪১৪১
চার. পাজামা, সেলওয়ার, লুঙ্গি ইত্যাদি নিসফে সাক তথা পায়ের নলার মধ্যভাগ পর্যন্ত পরা। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِزْرَةُ الْمُسْلِمِ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ، وَلَا حَرَجَ – أَوْ لَا جُنَاحَ – فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَعْبَيْنِ
মুসলিমের পরিধেয় লুঙ্গি-পায়জামা নলার মধ্যভাগ পর্যন্ত থাকবে, তবে টাখনুদ্বয় পর্যন্ত রাখলেও কোনো গুনাহ হবে না। কিন্তু টাখনুদ্বয়ের নীচে গেলে তা জাহান্নামের আগুনে যাবে। যে অহংকারবশত নিজের লুঙ্গি হেঁচড়িয়ে চলে, আল্লাহ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবেন না। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০৯৩
পাঁচ. টাখনুর নীচে কাপড় পরা নিষিদ্ধ। এতে আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট হন।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
، مَا كَانَ أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ فَهُوَ فِي النَّارِ، مَنْ جَرَّ إِزَارَهُ بَطَرًا لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ
কিন্তু টাখনুদ্বয়ের নীচে গেলে তা জাহান্নামের আগুনে যাবে। যে অহংকারবশত নিজের লুঙ্গি হেঁচড়িয়ে চলে, আল্লাহ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবেন না। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০৯৩
ছয়. সাধারণভাবে কাপড় পরিধান করার সময় দুআ পড়া। হযরত মুয়াজ ইবনে আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَمَنْ لَبِسَ ثَوْبًا فَقَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ
আর যে ব্যক্তি কাপড় পরিধান করে এ দু’আ পড়বে,
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ
সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে পড়িয়েছেন এবং এর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আমার শক্তি ও চেষ্টা ছাড়া” তার আগের ও পরের জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০২৩
সাত. নতুন কাপড় পরিধান করে দুআ পড়া। হযরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
مَنْ لَبِسَ ثَوْبًا جَدِيدًا فَقَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أُوَارِي بِهِ عَوْرَتِي وَأَتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي ثُمَّ عَمَدَ إِلَى الثَّوْبِ الَّذِي أَخْلَقَ فَتَصَدَّقَ بِهِ كَانَ فِي كَنَفِ اللَّهِ وَفِي حِفْظِ اللَّهِ وَفِي سَتْرِ اللَّهِ حَيًّا وَمَيِّتًا
যে ব্যক্তি নতুন কাপড় পোশাক) পরে বলে,
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أُوَارِي بِهِ عَوْرَتِي وَأَتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি আমাকে পরিয়েছেন, যা দিয়ে আমি আমার লজ্জাস্থান ঢেকে রেখেছি এবং আমার জীবনকে (দৈহিক সৌষ্ঠব) সুসজ্জিত করেছি”, তারপর নিজের পরার পুরানো বস্ত্র দান করে, সে জীবনে ও মরণে আল্লাহ তা’আলার আশ্রয়ে, আল্লাহ তা’আলার হিফাজাতে এবং আল্লাহ্ তা’আলার সুরক্ষিত প্রাচীরে থাকে। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ৩৫৫৭
আট. টুপি পরাও সুন্নাত। হযরত হাসান বিন মেহরান রহি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন সাহাবী বলেছেন,
أكلت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، ورأيت عليه قلنسوة بيضاء
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর দস্তরখানে খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি। –আল ইসাবাহ, খ. ৪ পৃ. ৩৩৯
নয়. কালো রঙ-এর পাগড়ী পরাও সুন্নাত। হযরত জাবের রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَامَ الْفَتْحِ مَكَّةَ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেন। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০৭৬
কোন উজর না থাকলে টুপির সাথে সব সময় পাগড়ী পরিধান করা উচিত। শুধু নামাযের সময় পাগড়ী পরিধান করার হাদীস পাওয়া যায় না।
দশ. পাগড়ীর শামলা রাখাও সুন্নাত। হযরত আমর ইবনুল হুরাইস রা. বলেন,
رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ، وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ قَدْ أَرْخَى طَرَفَهَا بَيْنَ كَتِفَيْهِ
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে দেখেছি, তাঁর পাগড়ির দু’ পাশ তাঁর কাঁধের উপর ঝুলছিলো। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০৭৭
এগারো. পাগড়ির নীচে টুপি পরা। হযরত রুকানা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ চারাল্পাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
إِنَّ فَرْقَ مَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْمُشْرِكِينَ الْعَمَائِمُ عَلَى الْقَلاَنِسِ
আমাদের ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য হল টুপির উপর পাগড়ী পরা। –জামে তিরমিযি, হাতিস নং : ১৭৮৪
বারো. ‘বিসমিল্লাহ’ বলে কাপড় খোলা আরম্ভ করা। হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
سَتْرُ ما بينَ أَعْيُنِ الجِنِّ وعَوْراتِ بَنِي آدمَ إذا وضعَ أحدُهُمْ ثَوْبَهُ أنْ يقولَ: بسمِ اللهِ
জিনদের চোখ এবং আদম সন্তানদের গোপনাঙ্গের মধ্যবর্তী পর্দা হলো, যখন তাদের কেউ তার পোশাক খুলবে, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। –জামে সগীর, হাদিস নং : ৪৬৪৭
তেরো. জামা, পাজামা-সেলওয়ার, লুঙ্গী, জুতা, মোজা ইত্যাদী খোলার সময় বাম দিক থেকে শুরু করা। হযরত আয়েশা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم الْيُمْنَى لِطُهُورِهِ، وَطَعَامِهِ وَكَانَتْ يَدُهُ الْيُسْرَى لِخَلَائِهِ، وَمَا كَانَ مِنْ أَذًى
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ডান হাত ছিল পবিত্রতা অর্জন ও খাদ্য গ্রহণের জন্য। আর তাঁর বাম হাত ছিল শৌচ ও অন্যান্য নিকৃষ্ট বা কষ্টদায়ক কাজের জন্য। –সুনানে আবু দাউদ হাদিস, হাদিস নং : ৩৩
আরেকটি হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذا انْتَعَلَ أَحدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ باليُمْنَى، وَإِذا نَزَع فَلْيَبْدَأْ بِالشِّمالِ، لِتَكُنِ اليُمْنَى أَوَّلَهُما تُنْعَلُ، وآخرَهُمَا تُنْزَعُ
তোমাদের কেউ যখন জুতা পরে, তখন সে যেন ডান পা দিয়ে শুরু করে, আর যখন খুলতে চায়, তখন যেন বাম পা দিয়ে খোলা শুরু করে, যেন প্রথমে জুতা পরা যায় এবং শেষে খোলা যায়। -আত-তামহীদ, খ. ১৮ পৃ. ১৮১