প্রসঙ্গ : মসজিদ
মসজিদ আল্লাহ তাআলার কাছে মসজিদ সবচে প্রিয় স্থান। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أَحَبُّ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ مَسَاجِدُهَا وَأَبْغَضُ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ أَسْوَاقُهَا
আল্লাহ তাআলার কাছে সব চাইতে প্রিয় জায়গা হলো, ‘মাসজিদসমূহ’। আর সব চাইতে খারাপ জায়গা হলো, ‘বাজারসমূহ’। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৬৭১
কারণ এই মসজিদেই আল্লাহপাকের জিকির সবচেয়ে বেশি করা হয়৷ মহান রব্ব বলেন,
وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا
মসজিদসমূহ যাতে আল্লাহর যিকির বেশি করা হয়। –সুরা হজ্ব : ৪০
যারা উযু করে মসজিদে যায়, তাদের ব্যাপারে হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لا يَتَوضَّأُ أحَدٌ فيُحسِنُ وُضوءَه ويُسبِغُه، ثُمَّ يَأتي المَسجِدَ لا يُريدُ إلّا الصَّلاةَ إلّا تَبَشْبَشَ اللهُ به كما يَتَبَشْبَشُ أهْلُ الغائِبِ بطَلْعتِه
যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে শুধুমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, আল্লাহ তার প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যাক্তি তার পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়। –কিতাবুল আসমা ওয়াস সিফাত, পৃ. ৬০৩
আরেকটি হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ. قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ
আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে উযু করা, মসজিদে আসার জন্যে বেশি পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের জন্যে প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হল সীমান্ত প্রহরা। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৫১
সুতরাং বেশি বেশি মসজিদে যাওয়ার অভ্যাস গঠণ করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কর্তব্য।
মসজিদে প্রবেশ করার সুন্নাতসমূহ :
মসজিদে প্রবেশ করার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক কিছু সুন্নাহ আমল রয়েছে৷ চলুন আজ সেগুলো আমরা শিখে আমল করার প্রস্তুতি নিই।
এক. ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা। হযরত আনাস রা. বলতেন,
من السنة اذا دخلت المسجد ان تبدأ برجلك اليمني واذا خرجت ان تبدأ برجلك اليسري
যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং যখন বের হবে তখন বাম পা দিয়ে বের হবে, এটা সুন্নাত এর অন্তর্ভুক্ত। –আল মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন, হাদিস নং : ৮২২
দুই. পা বাড়ানোর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। নবীকন্যা হযরত ফাতিমা রা. বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ يَقُولُ بِسْمِ اللَّهِ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশকালে বলতেন,
بِسْمِ اللَّهِ
আল্লাহ্র নামে (প্রবেশ করলাম)। –সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ৭৭১
তিন. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর দরুদ ও সালাম পাঠ করা। হযরত ফাতিমা রা. বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে ঢুকতেন তখন মুহাম্মাদের (স্বয়ং নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ৩১৪
চার. মসজিদে প্রবেশের দুআ পড়া। হযরত আবু উসায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন বলবে,
اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
হে আল্লাহ! তুমি তোমার অনুগ্রহের দরজা আমার জন্য খুলে দাও।)।
(উচ্চারণ: আল্লহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রহমতিক)
আর যখন বের হয়ে যাব, তখন বলবে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহপ্রার্থ)
(উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিক)। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৭১৩
এই তিনটি দু’আ এক সাথে করে এভাবে পড়া যায়,
بِسْمِ اللَّهِ الصلوة والسلام علي رسول الله اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
(উচ্চারণ : বিসমিল্লাহ, আস সলাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ আল্লহুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রহমতিক)
পাঁচ. ই’তিকাফের নিয়তে প্রবেশ করা। হাদিস শরীফে এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
من اعتكف يوما ابتغاء وجه الله جعل الله بينه وبين النار ثلاث خنادق أبعد مما بين الخافقين
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এতেকাফ করবে, আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করবেন, প্রত্যেক পরিখার প্রশস্ততা দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি। –শুয়াবুল ঈমান (বায়হাকী), হাদিস নং : ৩৯৬৫
এছাড়াও হাদিস শরীফে এসেছে, আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنِ اعتَكَفَ إِيمَاناً وَاحتِساباً غُفِرَ لَهُ مَا تقدم من ذنبه
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের প্রত্যাশায় ই’তিকাফ করবে, তার পেছনের জীবনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। –ফায়যুল কাদীর হাদিস: ৮৪৮০
টীকা : এক. সুন্নাত নামাজ ঘরে পড়ে মসজিদে যাওয়া সুন্নাত। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রা. হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
فَصَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ فَإِنَّ أَفْضَلَ الصَّلاَةِ صَلاَةُ الْمَرْءِ فِي بَيْتِهِ إِلاَّ الْمَكْتُوبَةَ
হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই সালাত আদায় কর। কেননা, ফরজ সালাত ছাড়া লোকেরা ঘরে যে সালাত আদায় করে তা-ই উত্তম। –সহিহ বুখারী, হাদিস, নং : ৭৩১
দুই. উযু করে মসজিদে যাওয়া সুন্নাত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ ثُمَّ يَعْمِدُ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ هَذِهِ الْمَسَاجِدِ إِلاَّ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِكُلِّ خَطْوَةٍ يَخْطُوهَا حَسَنَةً وَيَرْفَعُهُ بِهَا دَرَجَةً وَيَحُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً
কেউ যদি অতি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সালাত আদায় করার জন্য) কোন একটি মসজিদে উপস্থিত হয় তাহলে মসজিদে যেতে সে যতবার পদক্ষেপ ফেলবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য একটি নেকী লিখে দেন, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং একটি করে পাপ দূর করে দেন। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৬৫৪
তিন.. মসজিদে যেতে তাড়াহুড়ো না করা। হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে,
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ تَأتُوهَا وَأنْتُمْ تَسْعَونَ وَأتُوهَا وَأنْتُمْ تَمْشُوْنَ وَعَلَيْكُمُ السَّكِيْنَةُ فَمَا أدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
যখন নামাযের জন্য ইক্বামত (তাকবীর) দেওয়া হয়, তখন তোমরা তাতে দৌঁড়ে আসবে না, বরং তোমরা গাম্ভীর্য-সহকারে স্বাভাবিকরূপে হেঁটে আসবে। তারপর যতটা নামায (ইমামের সাথে) পাবে, পড়ে নেবে। আর যতটা ছুটে যাবে, ততটা (নিজে) পূরণ করে নেবে। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৯০৮
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নাহসমূহ : মসজিদে থেকে বের হওয়ার জন্যও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক কিছু সুন্নাহ আমল রয়েছে।
এক. বাম পা দিয়ে বের হওয়া। হযরত আনাস রা. বলতেন,
من السنة اذا دخلت المسجد ان تبدأ برجلك اليمني واذا خرجت ان تبدأ برجلك اليسري
যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং যখন বের হবে তখন বাম পা দিয়ে বের হবে, এটা সুন্নাত এর অন্তর্ভুক্ত। –আল মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন, হাদিস নং : ৮২২
দুই. বিসমিল্লাহ পড়া, তিন. দরুদ শরীফ পড়া। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
وإذا خرجَ قالَ بِسمِ اللَّهِ اللَّهمَّ صلِّ على مُحمَّدٍ
(নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদ থেকে) যখন বের হতেন, তখন বলতেন,
بِسمِ اللَّهِ اللَّهمَّ صلِّ على مُحمَّدٍ
আল্লাহর নামে বের হচ্ছি, হে আল্লাহ, মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-এর উপর শান্তি বর্ষণ করুন।
(উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদ)। –আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হাদিস নং : ৮৮
চার. মসজিদ থেকে বের হওয়ার দু’আ পড়া। হযরত আবু উসায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, র্সুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন বলবে,
اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
(উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রহমতিক)
হে আল্লাহ! তুমি তোমার অনুগ্রহের দরজা আমার জন্য খুলে দাও। আর যখন বের হয়ে যাব, তখন বলবে,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহপ্রার্থী।
(উচ্চারণ: আল্ল-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিক)। –সহিহ মুসলিম হাদিস: ৭১৩
এ তিনটি দু’আ এক সাথে এভাবে পড়া যায়,
بِسْمِ اللَّهِ الصلوة والسلام علي رسول الله للَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
(উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি, আল্লহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদ, আল্লহুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিক)।