Home > সুন্নাতি জিবন > প্রসঙ্গ : উযু

প্রসঙ্গ : উযু

পবিত্রতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কুরআনে কারীমে মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই সকল লোককে ভালোবাসেন, যারা তাঁর দিকে বেশি বেশি রুজু করে এবং ভালোবাসেন তাদেরকে, যারা বেশি বেশি পাক-পবিত্র থাকে। –সুরা বাকারা : ২২২

হযরত আবু মালিক আল আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏ الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ
পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক অংশ। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২২৩

সুতরাং পবিত্রতা মহান রব্ব-এর কাছে অনেক পছন্দনীয় আমল, যাকে ঈমানের অংশ হিশাবে আখ্যায়ীত করা হয়েছে। আর এই পবিত্রতা অর্জনের একটা মাধ্যম হলো উযু। পাশাপাশি উযু করলে আরও কয়েকটা ফযিলত নিন্মে উল্লেখ্য করলাম। হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِ الْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ – فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ – فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلاَهُ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ – حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوبِ
কোন মুসলিম কিংবা মু’মিন বান্দা (রাবীর সন্দেহ) ওযুর সময় যখন মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সাথে অথবা (তিনি বলেছেন) পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় এবং যখন সে দু’টি হাত ধৌত করে তখন তার দু’হাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ পানির অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে পা দুটি ধৌত করে, তখন তার দু’পা দিয়ে হাটার মাধ্যমে অর্জিত সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়, এমনকি সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪৬৫

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,
سَمِعْتُ خَلِيلِي صلى الله عليه وسلم يَقُولُ تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُؤْمِنِ حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوءُ
আমি আমার দোস্ত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, মুমিনের উযুর পানি যে পর্যন্ত পৌঁছবে, কিয়ামতের দিন তার অলঙ্কারও সে পর্যন্ত পৌঁছবে। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪৭৯

হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত।, তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَتَى الْمَقْبُرَةَ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا.‏ قَالُوا أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ.‏ فَقَالُوا كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلاً لَهُ خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَىْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلاَ يَعْرِفُ خَيْلَهُ.‏ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ.‏ قَالَ فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنَ الْوُضُوءِ
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবরস্থানে এসে বললেন, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে কবরবাসী মু’মিনগণ! ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয় আমাদের ভাইদেরকে দেখি। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বললেন, তোমরা তো আমার সাহাবা। আর যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তারা আমাদের ভাই। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনার উম্মতের মধ্যে যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেন, কেন, যদি কোন ব্যক্তি সাদা রঙের কপাল ও সাদা রঙের হাত-পা বিশিষ্ট ঘোড়া অনেকগুলো কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায় তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারবে না? তারা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, তারা (আমার উম্মত) সেদিন এমন অবস্থা আসবে যে, উযুর ফলে তাদের মুখমণ্ডল, হাত-পা জ্যোতির্ময় হবে। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪৭২

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ.‏ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ.‏ قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ ‏
আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে উযু করা, মসজিদে আসার জন্যে বেশি পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের জন্যে প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হল সীমান্ত প্রহরা। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৫১

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لا يَتَوضَّأُ أحَدٌ فيُحسِنُ وُضوءَه ويُسبِغُه، ثُمَّ يَأتي المَسجِدَ لا يُريدُ إلّا الصَّلاةَ إلّا تَبَشْبَشَ اللهُ به كما يَتَبَشْبَشُ أهْلُ الغائِبِ بطَلْعتِه
যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে শুধুমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, আল্লাহ তার প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যাক্তি তার পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়। –কিতাবুল আসমা ওয়াস সিফাত, পৃ. ৬০৩

তাহিয়্যাতুল উযুর ফযিলত : উযু করার পর দুই রাকাত নামাজ পড়াও অনেক ফযিলতের কাজ। হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ لِبِلاَلٍ يَا بِلاَلُ! حَدِّثْنِي بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الإِسْلاَمِ فَإِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الجَنَّةِ قَالَ: مَا عَمِلْتُ عَمَلاً أَرْجَى عَندي مِنْ أَنِّي لَمْ أَتَطَهَّرْ طُهُوراً فِي سَاعَةٍ مِنْ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ إِلاَّ صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّي
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে বিলাল! আমাকে সর্বাধিক আশাপ্রদ আমল বল, যা তুমি ইসলাম গ্রহণের পর বাস্তবায়িত করেছ। কেননা, আমি (মি’রাজের রাতে) জান্নাতের মধ্যে আমার সম্মুখে তোমার জুতার শব্দ শুনেছি। বিলাল (রাঃ) বললেন, আমার দৃষ্টিতে এর চাইতে বেশী আশাপ্রদ এমন কোন আমল করিনি যে, আমি যখনই রাত-দিনের মধ্যে যে কোন সময় পবিত্রতা অর্জন (ওযূ, গোসল বা তায়াম্মুম) করেছি, তখনই ততটুকু নামায পড়েছি, যতটুকু নামায পড়া আমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ ছিল।

আরেক হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏ يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ، فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللَّهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ، وَإِلاَّ أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ
তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঠ দেয়। প্রতি গিঠে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঠ খুলে যায়, পরে উযূ করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়, অতঃপর সালাত আদায় করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলূষ কালিমা ও আলস্য সহকারে। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৭৭৬,

সুতরাং উযু অবস্থায় থাকা এবং উযু পরবর্তী সময়ে দুই রাকাত নামাজ আদায়ে আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত।

নামাজের জন্য উুযু শর্ত : এছাড়াও আমাদের উপর যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে, সেই নামাজ আদায় করার জন্য পবিত্রতা অর্জন করা একটি শর্ত। হযরত আবু হুরাইরা রা. সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لاَ يَقْبَلُ اللهُ صَلاَةَ أَحَدِكُمْ إِذَا أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ
বায়ু বের হলে ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তোমাদের কারো সালাত কবুল করবেন না। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৬৯৫৪

সুতরাং ছোট নাাপাকী হালত থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য উযু করা জরুরি। কিন্তু এই উযুর জন্য কিছু ফরজ নিয়ম এবং কিছু সুন্নাত নিয়ম রয়েছে।

উযুর ফরজসমূহ : উযুর চারটি ফরজ বিধান রয়েছে। যা কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নামাজের জন্য উঠবে, তখন নিজেদের চেহারা ও কনুই পর্যন্ত নিজেদের হাত ধুয়ে নিবে, নিজেদের মাথাসমূহ মাসাহ করবে এবং টাখনু পর্যন্ত নিজেদের পা (-ও ধুয়ে নেবে)। –সুরা মায়িদা : ১৬

এই আয়াতে উযুর জন্য চারটি বিষয়কে ফরয করা হয়েছে।
১। পূর্ণ মুখমণ্ডল একবার ধৌত করা।
২। কনুইসহ দুই হাত একবার করে ধোয়া ।
৩। মাথার চারভাগের একভাগ একবার মসেহ করা ।
৪। টাখনুসহ দুই পা একবার করে ধোয়া ।
উপরোক্ত চার অঙ্গের ধৌতকরণের দ্বারাই অযু হয়ে যায়। তবে
সুন্নতগুলোসহ অযু করার দ্বারা অযু পূর্ণতা লাভ করে এবং বেশী
সওয়াব পাওয়া যায় ।

এগুলো উত্তমরূপে ও যত্নসহকারে আদায় করলেই অযু পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এই চারটি ফরজের কোনো একটি বা অংশবিশেষও যদি ছুটে যায়,
তবে অযু শুদ্ধ হবে না।

উযুর সুন্নাতসমূহ : তবে ফরজের পাশাপাশি উযুতে কিছু সুন্নাত নিয়ম রয়েছে। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে উযু করেছেন, সেভাবে উযু করা। নিন্মে উযুর সুন্নাতসমূহ বর্ণনা করা হলো।

১. উযুর শুরুতে ‘নিয়্যত করা’। অর্থাৎ অযুকারী মনে মনে এই নিয়ত করবে যে, আমি পবিত্রতা অর্জন করা ও নামাজ জায়েজ হওয়ার জন্য অযু করছি। নিয়্যত ব্যতিত আল্লাহ তাআলার কাছে কোনো আমলই কবুল হয় না। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন,
سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী হয়। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১

২. ‘বিসমিল্লাহ’ বলা : হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
من ذكر اللهَ عندَ وضوئِه طهَّرَ اللهُ جسدَه كُلَّهُ ومن لم يذكرِ اللهَ لم يَطْهُرْ منه إلا ما أصاب الماءَ
ইহইয়াউ উলূদ্দীন, খ. ১ পৃ. ১৩৪

হযরত রাবাহ ইবনে আব্দুর রাহমান ইবন আবী সুফইয়ান ইবনু হুওয়ায়তিব রহি. তাঁর পিতামহী থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন,
لاَ وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম নিবে না, তার অযু (কবুল) হবে না। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ২৫

তবে যদি
وفي المجتبى لو قال بسم الله الرحمن الرحيم باسم الله العظيم ، والحمد لله على دين الإسلام فحسن
–আল বিনায়াহ, খ. ১ পৃ. ১৩৬

৩. দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত পৃথকভাবে তিনবার ধোয়া। হযরত ইবনে আবু আওস রা. তাঁর দাদার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَوْكَفَ ثَلَاثًا
আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এ-কে (অযর সময় হাতের কব্জিতে) তিনবার করে পানি ঢালতে দেখেছি। –নাসাঈ, হাদিস নং : ৮৩

হুমরান রহি. হতে বর্ণিত,
أَنَّهُ، رَأَى عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ دَعَا بِإِنَاءٍ، فَأَفْرَغَ عَلَى كَفَّيْهِ ثَلاَثَ مِرَارٍ فَغَسَلَهُمَا
তিনি ‘উসমান ইবনু আফফান (রাযি.)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে তা ধুয়ে নিলেন। –সহি বুখারী, হাদিস নং : ১৫৯

৪. মিসওয়াক করা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَولا أن أشقَّ على أمَّتي لأمرتُهُم بالسِّواكِ معَ كلِّ وُضوءٍ
আমি যদি আমার উম্মতের উপর কষ্টকর হয়ে যাওয়ার আশংকা না করতাম, তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক অযুর সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম। –সহিহ ইবনে খুযাইমা, খ. ১ পৃ৷ ২৫৮

বি.দ্র. মিসওয়াক ধরার নিয়ম হলো,রডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি মিসওয়াকের নিচে রাখবে, আর বাকি আঙ্গুলগুলো মিসওয়াকের উপরে রেখে মুখের ডান দিক থেকে মাজা শুরু করবে। পাশাপাশি জিহ্বাও পরিষ্কার করে নেবে। তবে মিসওয়াক যদি সাথে না থাকে, তাহলে অন্তত আঙ্গুল দ্বারা দাঁত মেজে নোয়া উচিত।

৫. তিন বার গড়গড়াসহ কুলি করা।
৬. তিন বার নাকে পানি দেওয়া ও নাক ঝেড়ে পরিস্কার করা।
হযরত আমর ইবনু ইয়াহইয়া আল-মাযিনী হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে উযু করতেন, তুমি কী আমাকে তা দেখাতে পারো? আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা. বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি উযুর পানি আনালেন এবং উযুর পূর্ণ বিবরণ দেখালেন। যার ভেতর এটাও ছিলো যে,
ثُمَّ تَمَضْمَضَ، وَاسْتَنْثَرَ ثَلَاثًا
এরপর তিনবার করে গড়গড়াসহ কুলি করলেন ও নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে পরিষ্কার করলেন। –সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ১১৮

৭. নাকে পানি দেওয়া ও কুলি করার সময় বেশি পানি ব্যবহার করা। তবে যদি রোযাদার হয়, তাহলে নাকে পানি দেওয়া ও কুলি করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। লাকীত ইবনে সাবিরা রহি. হতে, তিনি তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করে বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, উযু প্রসঙ্গে আমাকে জানিয়ে দিন। তিনি বললেন,
أَسْبِغِ الْوُضُوءَ وَخَلِّلْ بَيْنَ الأَصَابِعِ وَبَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا
ভালোভাবে উযু করো, আঙ্গুলগুলোর মাঝে খিলাল করো এবং রোযা পালনকারী না হলে নাকের গভীরে পানি পৌঁছাও। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ৭৮৮

৮. প্রত্যেক অঙ্গ তিন বার করে ধৌত করা। হযরত আবু হাইয়্যাহ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَأَيْتُ عَلِيًّا تَوَضَّأَ فَذَكَرَ وُضُوءَهُ كُلَّهُ ثَلَاثًا ثَلَاثًا قَالَ– ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّمَا أَحْبَبْتُ أَنْ أُرِيَكُمْ طُهُورَ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم
আমি আলী রা.-কে উযু করতে দেখেছি, তিনি প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধৌত করেছেন, তারপর মাথা মাসাহ্ করেছেন এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়েছেন। অতঃপর বলেছেন, আমার আগ্রহ ছিলো, তোমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযু (করার পদ্ধতি) দেখানো। –সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ১১৬

৯. মুখমণ্ডল ধৌত করার সময় দাড়ি খিলাল করা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অযু কেমন ছিলো, সেটা দেখানোর সময়–
ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا
এরপর চেহারা তিনবার ধুইলেন। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৮৫

হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُخَلِّلُ لِحْيَتَهُ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি খিলাল করতেন। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ৩১

দাড়ি খিলাল করার সুন্নাহ নিয়ম : হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ أَخَذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَأَدْخَلَهُ تَحْتَ حَنَكِهِ، فَخَلَّلَ بِهِ لِحْيَتَهُ وَقَالَ هَكَذَا أَمَرَنِي رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন। তারপর ঐ পানি চোয়ালের নিম্নদেশে (থুতনির নীচে) লাগিয়ে দাড়ি খিলাল করতেন এবং বলতেন, আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করারই নির্দেশ দিয়েছেন। –সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ১৪৫

ঠিক এভাবেই দাঁড়ি খিলাল করা এবং খিলাল শেষে এটা পড়া–
هَكَذَا أَمَرَنِي رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ
আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করারই নির্দেশ দিয়েছেন।

১০. হাত-পা ধোঁয়ার সময় আঙ্গুল গুলোর ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করা।
হযরত লাকীত ইবনু সাবিরা রহি. হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ওযু প্রসঙ্গে আমাকে জানিয়ে দিন।
قَالَ ‏أَسْبِغِ الْوُضُوءَ وَخَلِّلْ بَيْنَ الأَصَابِعِ

তিনি বললেন, ভালোভাবে ওযু কর, আঙ্গুলগুলোর মাঝে খিলাল করো। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ৭৮৮

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
خلِّلوا أصابعَكم لا تتخلَّلُها النّارُ يومَ القيامةِ
মুখতাসারুল মাকাসিদ, হাদিস নং : ৪১৫

১১. নতুন পানি দ্বারা একবার সমস্ত মাথা মাসাহ করা।
১২. মাথা মাসাহ করার সময় দুই কান মাসাহ করা।
হযরত রুবায়্যি’ বিনতে মুআববিয ইবনে আফরা রা. থেকে বর্ণিত,
أَنَّهَا رَأَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَتَوَضَّأُ قَالَتْ مَسَحَ رَأْسَهُ وَمَسَحَ مَا أَقْبَلَ مِنْهُ وَمَا أَدْبَرَ وَصُدْغَيْهِ وَأُذُنَيْهِ مَرَّةً وَاحِدَةً
তিনি রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযু করতে দেখেছেন। রুবায়্যি রা. বলেন, তিনি তাঁর মাথার সম্মুখ ভাগ ও পশ্চাৎ, কানপট্টি এবং তাঁর দুইকান একবার মাসেহ করলেন। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ৩৪

আরেকটি হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আসিম আল-মাযিনী রহি. সূত্রে বর্ণিত,
أَنَّهُ رَأَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ وُضُوءَهُ وَقَالَ وَمَسَحَ رَأْسَهُ بِمَاءٍ غَيْرِ فَضْلِ يَدَيْهِ
তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অযু দেখেছেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অযুর বিবরণ দিয়ে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের অবশিষ্ট পানি দিয়ে নয় (বরং নতুন পানি দিয়ে) মাথা মাসাহ্ করেছেন। –সুনান আবু দাউদ হাদিস: ১২০

বি.দ্র. কানের ছিদ্রের মধ্যে কনিষ্ঠাঙ্গুল এবং ভেতরের অবশিষ্টাংশে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা মাসাহ করা। তবে এ ক্ষেত্রে মাথা মাসাহ করার সময় যে পানি নিয়েছিলো, সেই পানি দিয়েই কান মাসাহ করতে হবে, কান মাসাহের জন্য আলাদা পানি নেওয়া যাবে না।

১৩. উযুর অঙ্গগুলো উত্তমরূপে ঘর্ষণ করে ধৌত করা। হযরত আব্বাদ বিন তামীম তাঁর চাচা আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ রা. থেকে বর্ণনা করে বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتي بِثُلُثَي مُدٍّ مَاءً فَتَوَضَّأَ فجعل يدلك ذراعيه
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক মুদ (৬২৫ মিলি) এর দুই-তৃতীয়াংশ পরিমাণ পানি দেওয়া হলো, অতঃপর তিনি ওযূ করেন এবং তিনি তাঁর দুই হাত ঘষে পরিস্কার করতে লাগলেন। –সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং : ১০৮০

হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ
যে ব্যক্তি ওযু করে এবং তা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমস্ত পাপ ঝরে যায়, এমনকি তার নখের ভিতর থেকেও (গুনাহ) বের হয়ে যায়। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৪৫

১৪. বিরতিহীনভাবে একের পর এক অঙ্গ ধৌত করা। অর্থাৎ এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার আগেই আরেক অঙ্গ ধৌত করা। হানাফী মাযহাবের বিখ্যাৎ গ্রন্থ ‘আল-বিনায়াহ’-তে এসেছে,
والموالات وهو ان ان لا يفصل بين أفعال الوضوء بعمل ليس منه
আল বিনায়াহ, খ. ১ পৃ. ১৮৮

১৫. অযুর ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে উযু করা। অর্থাৎ যেভাবে হাদিসে উযুর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, সেভাবে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে উযু করা। হানাফী মাযহাবের বিখ্যাৎ গ্রন্থ ‘আল-বিনায়াহ’-তে এসেছে,
فالترتيب في الوضوء سنة عندنا
আল বিনায়াহ, খ. ১ পৃ. ১৮২

১৬. প্রত্যেকটি অঙ্গ ডান দিক দিয়ে ধোয়া। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا لَبِسْتُمْ، وَإِذَا تَوَضَّأتُمْ، فَابْدَأُوا بِأَيَامِنِكُمْ
তোমরা কাপড় পরিধান করার সময় ও অজু করার সময় তোমাদের ডান দিক থেকে আর‎ম্ভ করো। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪১৪১

১৭. মাথা সামনের দিক থেকে মাসাহ শুরু করা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অযু কেমন ছিলো, সেটা দেখানোর সময় এটাও দেখালেন,
ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ، فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ، بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ، حَتَّى ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ، ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ‏
তারপর দু’ হাত দিয়ে মাথা মাসেহ করলেন। অর্থাৎ হাত দু’টি সামনে ও পিছনে নিলেন। মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করে উভয় হাত গর্দান পর্যন্ত নিলেন। তারপর আবার যেখান থেকে নিয়েছিলেন, সেখানেই ফিরিয়ে আনলেন।–সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৮৫

১৮. ঘাড় মাসাহ করা। তবে গলার সামনের অংশ তথা কণ্ঠনালী মাসাহ না করা। হযরত ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ بِيَدَيْهِ عَلَى عُنُقِهِ وُقِيَ الْغُلَّ يَوْمَ الْقِيَامَة
যে ব্যক্তি অজু করে এবং উভয় হাত দিয়ে ঘাড় মাসেহ করে, তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন [আযাবের] বেড়ি থেকে বাঁচানো হবে। –আত-তালখীসুল হাবীর, খ. ১ পৃ. ৯৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ ইবনে আসিম আল-মাযিনী রহি. সূত্রে বর্ণিত,
أَنَّهُ رَأَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ وُضُوءَهُ وَقَالَ وَمَسَحَ رَأْسَهُ بِمَاءٍ غَيْرِ فَضْلِ يَدَيْهِ
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অযু দেখেছেন ব্যক্ত করে বর্ণনা করেন, তিনি হাতের অবশিষ্ট পানি দিয়ে নয় (বরং নতুন পানি দিয়ে) মাথা মাসাহ্ করেছেন। –সুনান আবু দাউদ হাদিস: ১২০

১৯. উযুর শেষে কালেমায়ে শাহাদাৎ পড়া।
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ – أَوْ فَيُسْبِغُ – الْوُضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে-
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ
‘আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয় আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসুলুহু”। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪৪১

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ فُتِحَتْ لَهُ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করার পর বলে–
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ তা’আলা ব্যতিত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন শরীক নেই; আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দাহ ও তারই রাসূল। (এরপর পড়বে–)
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে নিজ ইচ্ছামত যে কোন দরজা দিয়েই তাতে যেতে পারবে। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ৫৫

এই দুআর বৈশিষ্ট সম্পর্কে মোল্লা আলী ক্বারী রহি. লিখেছেন,
فيكون فيه إشارة إلى أن طهارة الأعضاء الظاهرة لما كانت بيدنا فطهرناها، وأما طهارة الأحوال الباطنة فإنما هي بيدك فأنت طهرها بفضلك وكرمك
এই হাদিসের মধ্যে একটি ইঙ্গিত রয়েছে, (বান্দা বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জন করে যে এই কামনাই করলো যে, হে আল্লাহ,) বাহ্যিক অঙ্গগুলির পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম যেহেতু আমাদের হাতে ছিলো, আমরা সেগুলো পবিত্র করেছি। কিন্তু অভ্যন্তরীণ পবিত্রতার বিষয়টি তো আপনার হাতে, তাই আপনি আপনার দয়া এবং উদারতা দিয়ে সেটা পবিত্র করে দিন। –মিরকাত, খ. ২ পৃ. ১৬

Check Also

—ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরবর্তী সুন্নতসমূহ

এক. ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দুই হাতে চোখ-মুখ মৃদু কচলানো, যেন ঘুমের প্রভাব দূর হয়ে …

Leave a Reply