এক. মাথা ঢেকে প্রবেশ করা।
দুই. জুতা সেন্ডেল পরিধান করে প্রবেশ করা।
বাথরুমে প্রবেশ করার আগে মাথা ঢেকে নেয়া এবং জুতা পরিধান করা। কারণ হাদিসে এসেছে, হযরত হাবিব ইবনে সালেহ রহি. বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ لَبِسَ حِذَاءَهُ وَغَطَّى رَأْسَهُ
রাসূলুল্লাহ্ সা. শৌচাগারে প্রবেশ করার সময় জুতা পরিধান করতেন এবং মাথা আবৃত করতেন। –সুনানে কুবরা (বায়হাকী), হাদিস নং : ৪৫৬
আল্লাহর নাম, খুরআনের আয়াত বা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম সম্বলিত কোনো কিছু সাথে না নেওয়া.
আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম বা কুরআনের আয়াত লিখিত আংটি খুলে রেখে টয়লেটে যাওয়া। অর্থাৎ আংটি অথবা কোনো জিনিষে যদি কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম বা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম লেখা থাকে এবং তা প্রকাশমান থাকে অর্থাৎ দেখা যায়, তাহলে সেটা খুলে বাথরুমে প্রবেশ করতে হবে। বাথরুম শেষে পূনরায় পরে নেবে। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ نَزَعَ خَاتَمَهُ
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন টয়লেটে প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর আংটি খুলে রাখতেন। –সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং : ৫২১২
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আংটি খুলে রাখার কারণ হলো, তিনি যে আংটি পরতেন, তাতে ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ নকশা করা ছিলো। হাদিস শরীফে এসেছে,
لَبِسَ خَاتَمًا مِنْ وَرِقٍ وَنَقَشَ فِيهِ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ
(নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রূপার আংটি পরতেন, যাতে তিনি ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’ নকশা করিয়ে নেন। –সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং : ৫২১৫
যেহেতু আল্লাহ ও তার রাসুল সা. এর নাম আংটিতে লেখা ছিল, সেজন্য তিনি উক্ত আংটি খুলে বাথরুমে প্রবেশ করতেন। সুতরাং বুঝা গেলো, শরীরে কোনো কিছু যদি আল্লাহ তাআলার নাম, কুরআনের আয়াত বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম থাকে এবং তা দেখা যায়, তাহলে সেটা নিয়ে টয়লেটে যাওয়া যাবে না তবে তাবিজ যা মোম দ্বারা মুখ আটকানো থাকে, এমন তাবিজ নিয়ে বাথরুমে যেতে অসুবিধা নেই।
তিনটা ঢেলা, টিস্যু এবং পানি নিয়ে প্রবেশ করা। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إذا ذهَبَ أحَدُكم إلى الغائطِ فلْيَذهَبْ معه بثلاثةِ أحجارٍ يَستطيبُ بهنَّ فإنَّها تجزئُ عنه
যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় যাবে, সে যেন তিনটি পাথর (এবং পানি) নিয়ে যায়। সে তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। আর এটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। –সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং :/৪০
টীকা : যদি আগ থেকেই বাথরুমে ঢিলা, টিস্যু বা পানির ব্যবস্থা করা থাকে, তাহলে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আর বর্তমানে যেহেতু ঢিলা ব্যবহারে পরিবেশ নোংড়া হয়, সেহেতু উলামায়ে কেরাম টিস্যু ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেন বাথরুম নোংড়া না হয়। –পিয়ারে নবী কি পিয়ারি সুন্নাতি, পৃ. ৭
টয়েলেটে প্রবেশের পূর্বে দুআ পড়া : হাদিসে এসেছে, হযরত আনাস রা. বলেন,
كانَ إذا دخلَ الْكَنِيفَ قال بسمِ اللهِ اللهمَّ إنِّي أعوذُ بكَ منَ الخُبُثِ والخبائثِ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টয়লেটে প্রবেশকালে পড়তেন,
بسمِ اللهِ اللهمَّ إنِّي أعوذُ بكَ منَ الخُبُثِ والخبائثِ
(উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হ, আল্ল-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-ইস) অর্থাৎ আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি – অপবিত্র, অকল্যাণ, খারাপ কর্ম থেকে বা পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে। –জামে সগীর, হাদিস নং : ৬৬৪৬
বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা : বাথরুমে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাম পা দিয়ে পণবেশ করা এবং বের হওয়ার সময় ডান পা দিয়ে বের হওযা সুন্নাত। হাদিসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় সহধর্মিনী হাফছা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَجْعَلُ يَمِينَهُ لِطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ وَيَجْعَلُ شِمَالَهُ لِمَا سِوَى ذَلِكَ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদ্য গ্রহণ, পানি পান ও বস্ত্র পরিধানের সময় স্বীয় ডান হাত ব্যবহার করতেন, এছাড়া অন্যান্য যাবতীয় কাজে বাম হাত ব্যবহার করতেন। (অর্থাৎ তিনি ভাল কাজের জন্য ডান হাত এবং নিকৃষ্ট কাজের জন্য বাম হাত ব্যবহার করতেন)। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৩২
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা, বলেন,
من بدأ برجله اليمنى قبل يساره إذا دخل الخلاء ابتلي بالفقر
যে ব্যক্তি টয়লেটে প্রবেশের সময় বাম পায়ের আগে ডান পা দিয়ে প্রবেশ শুরু করবে, সে দারিদ্র্যের কবলে পড়বে। -আল মুবদি শরহুল মুকনি, খ. ১ পৃ. ৫৮
এজন্য উলামায়ে কেরাম বলেন,
ويقدم رجله اليسرى في الدخول واليمنى في الخروج
সে প্রবেশের সময় তার বাম পা সামনে রাখে এবং বের হওয়ার সময় তার ডান পা সামনে রাখে। -শরহুল উমদাহ, খ. ১ পৃ. ২১
কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে না বসা। কারণ হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْغَائِطَ فَلاَ يَسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ وَلاَ يُوَلِّهَا ظَهْرَهُ
তোমাদের কেউ যখন শৌচাগারে যায়, তখন সে যেন কিবলার দিকে মুখ না করে এবং তার দিকে পিঠও না করে। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৪৪
যথাসম্ভব বসার নিকটবর্তী হয়ে সতর খোলা। হাদিসে এসেছে, হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كانَ إذا أرادَ الحاجةَ لمْ يرفعْ ثوبَهُ حتى يدنُو مِنَ الأرضِ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পেশাব-পায়খানার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি জমীনের নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত কাপড় উঠাতেন না। –জামে সগীর, হাদিস নং : ৬৫২৬
দাঁড়িয়ে পেশাব বা পায়খানা না করা। হযরত উমার রা. বলেন,
رَآنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَبُولُ قَائِمًا فَقَالَ يَا عُمَرُ لاَ تَبُلْ قَائِمًا فَمَا بُلْتُ قَائِمًا بَعْدُ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখেন। অতঃপর তিনি বলেন, হে উমার! দাঁড়িয়ে পেশাব করো না। (উমার রা. বলেন,) তারপর আমি আর কখনও দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ১২
পেশাব ও নাপাক পানির ছিটা হতে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বেঁচে থাকা।
হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَرَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার দু’টি কবরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বললেনঃ এদের আযাব দেওয়া হচ্ছে, কোন কঠিন পাপের জন্য তাদের আযাব হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে সতর্ক থাকত না। আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ২১৮
নরম জায়গায় পেশাব করা, যেন পেশাবের ছিঁটা কাপড়ের না লেগে বরং মাটিতে চু্ষে নেয়। হযরত আবু মুসা রা. সূত্রে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يَبُولَ فَلْيَرْتَدْ لِبَوْلِهِ مَوْضِعًا
তোমাদের কেউ পেশাব করতে চাইলে যেন নীচু নরম জায়গা অনুসন্ধান করে নেয়। –সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ৩
তিনটি ঢিলা, কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করা। হযরত সালমান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
لَقَدْ نَهَانَا…أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন…তিনটি ঢিলার কম দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪৯৪
ঢিলা বা টিস্যু ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করা। অর্থাৎ তিনটি ঢিলা,কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করার পর অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা। হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ الْخَلاَءَ، فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلاَمٌ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ، وَعَنَزَةً، يَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শৌচাগারে যেতেন তখন আমি ও আরেকটি ছেলে পানির পাত্র এবং ’আনাযা’ (এমন লাঠি যার মাথায় লোহা লাগানো থাকে।) নিয়ে যেতাম। তিনি পানি দ্বারা ইসতিনজা করতেন। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৫৪
আনেক হাদিসে এসেছে, হযরত আলী রা. বলেছেন,
إِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَبْعَرُونَ بَعْرًا وَإِنَّكُمْ تَثْلِطُونَ ثَلْطًا فَأَتْبِعُوا الْحِجَارَةَ بِالْمَاءِ
তোমাদের পূর্বের লোকেরা পশুর মত (শক্ত) মল ত্যাগ করত। আর তোমরা পাখির মত (নরম) মল ত্যাগ কর। তাই তোমরা ঢিলা ব্যবহারের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করবে। –সুনানে বায়হাকী, খ. ১ পৃ. ১০৬
উপরন্তু আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে এমন লোকদের প্রশংসা করে বলেন,
فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا ۚ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ
তাতে এমন লোক আছে, যারা পাক-পবিত্রতাকে বেশি পছন্দ করে। আল্লাহ পাক-পবিত্র লোকদের পছন্দ করেন। –সুরা তাওবা : ১০৮
অত্র আয়াতের তাফসীরের ভেতর এসেছে, হযরত আবু আইউব আনসারী, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ ও আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন,
উক্ত আয়াত নাযিল হলে আনসার সাহাবাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করলেন,
يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَثْنَى عَلَيْكُمْ فِي الطُّهُورِ فَمَا طُهُورُكُمْ قَالُوا نَتَوَضَّأُ لِلصَّلاَةِ وَنَغْتَسِلُ مِنَ الْجَنَابَةِ وَنَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ قَالَ هُوَ ذَلِكَ فَعَلَيْكُمُوهُ
হে আনসার সম্প্রদায়, আল্লাহ তোমাদের পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে প্রশংসা করেছেন। তোমরা কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করো? তারা বললেন, আমরা নামাজের জন্য উযু করি, জানাবাতের (শারীরিক অপবিত্রতা দূরীকরণের) জন্য গোসল করি এবং পানি দিয়ে শৌচকর্ম করি। তিনি বললেন, এটাই (প্রশংসার) কারণ। অতএব তোমরা এটাকে অপরিহার্যরূপে ধারণ করো। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ৩৫৫
ঢিলা ও পানির খরচ করার সময় বাম হাত ব্যবহার করা। হযরত আবু কাতাদা রা. তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَإِذَا أَتَى الْخَلاَءَ فَلاَ يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ وَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِينِهِ
এবং তোমাদের কেউ শৌচাগারে যায় তখন তার পুরূষাঙ্গ যেন ডান হাত দিয়ে স্পর্শ না করে এবং ডান হাতে ইস্তিঞ্জা না করে। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৫৪
যেখানে পেশাবও পায়খানার জন্য নির্ধারিত কোন জায়গা নেই, সেখানে এমন ভাবে বসা যেন সতর কারো নজরে না পড়ে। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَأْتِي الْبَرَازَ حَتَّى يَتَغَيَّبَ فَلاَ يُرَى
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে এতটা দূরে যেতেন যে, তাঁকে দেখা যেতো না। –সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ৩৩৫
কোনো ধরণের কথা না বলা। কারণ হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন,
سَمِعْتُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لَا يَخْرُجُ الرَّجُلَانِ يَضْرِبَانِ الْغَائِطَ كَاشِفَيْنِ عَنْ عَوْرَتِهِمَا يَتَحَدَّثَانِ فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَمْقُتُ عَلَى ذَلِكَ
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, দুই ব্যক্তি একই সঙ্গে পেশাব-পায়খানায় জন্য বের হবে না এবং আপন লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করে কথাবার্তা বলবে না। কারণ এরূপ কাজে মহাসম্মানিত আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। –সুনানে কুবরা (বাইহাকী), হাদিস নং: ৪৮৩
এমনকি আল্লাহর জিকিরও মুখে উচ্চারণ করা যাবে না। হযরত ইকরামা রহি. বলেন,
لا يذكر الله وهو على الخلاء بلسانه ولكن بقلبه
পায়খানা-পেশাব করা অবস্থায় মুখ দ্বারা আল্লাহর যিকির করবে না, বরং অন্তরে অন্তরে করবে। –আল মুগনী, খ. ১ পৃ. ১৬৬
তবে একান্ত প্রয়োজন হলে বলা যেতে পারে।
সালামের আদান-প্রদান না করাা। ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ رَجُلاً سَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَبُولُ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রস্রাবরত অবস্থায় একজন লোক তাকে সালাম দিলেন। কিন্তু তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দেননি। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৩৭০
পেশাবের ফোটা আসা বন্ধ হওয়ার জন্য আড়ালে সামান্য চলাফেরা করা বা গলায় খাকরি ইত্যাদী দেওয়া। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ مَكَّةَ أَوِ الْمَدِينَةِ سَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِي قُبُورِهِمَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ ثُمَّ قَالَ: بَلَى كَانَ أَحَدُهُمَا لَا يَسْتَبْرِئُ مِنْ بَوْلِهِ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার অথবা মক্কার এক বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তখন দুই ব্যক্তির আওয়ায শুনতে পেলেন, যাদেরকে কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদেরকে আযাব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বড় কোনো বিষয়ে তাদের আযাব দেওয়া হচ্ছে না। এরপর বললেন, হ্যাঁ, (তবে বড় গুনাহ)। তাদের একজন পেশাব থেকে ইস্তিবরা করতো না। –সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং : ২০৭৬
“ইস্তিবরা” কী? আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাসহ অনেক কিতাবে বলা হয়েছে,
طلب البراءة من الخارج بما تعارفه الإنسان من مشي أو تنحنح أو غيرهما إلى أن تنقطع المادة
ইস্তিবরা হলো, পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য প্রত্যেকের অভ্যাস অনুযায়ী এই পর্যন্ত হাঁটা-হাঁটি, গলা খাকরি ইত্যাদি করা, যেন পেশাবের কিছুই বাকি না থাকে। –রদ্দুল মুহতার, খ. ১ পৃ. ৫৫৮; আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, খ. ৪ পৃ. ১১৩
বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় দুআ পড়া। হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا خَرَجَ مِنَ الْخَلاَءِ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الأَذَى وَعَافَانِي
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন টয়লেট থেকে বের হতেন, তখন বলতেন,
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الأَذَى وَعَافَانِي
(আল-হামদু লিল্লাহিল্লাযী আযহাবা আন্নিল আযা ওয়াআ-ফা-নি) অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য যিনি আমার থেকে কষ্ট দূর করেছেন এবং স্বস্তি দান করেছেন। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ৩০১
মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বলেছেন, বাথরুমে প্রবেশ করার সময় উক্ত দুআটি পড়লে খবিশ জ্বিন এবং লোকটির মাঝে একটি পর্দা পড়ে যায়। ফলে জ্বিন উক্ত লোকটির লজ্জাস্থান আর দেখতে পায় না।
বাথরুমে থেকে বের হওয়ার সময় ডান পা দিয়ে বের হওযা সুন্নাত। হাদিসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় সহধর্মিনী হাফছা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَجْعَلُ يَمِينَهُ لِطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ وَيَجْعَلُ شِمَالَهُ لِمَا سِوَى ذَلِكَ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদ্য গ্রহণ, পানি পান ও বস্ত্র পরিধানের সময় স্বীয় ডান হাত ব্যবহার করতেন, এছাড়া অন্যান্য যাবতীয় কাজে বাম হাত ব্যবহার করতেন। (অর্থাৎ তিনি ভাল কাজের জন্য ডান হাত এবং নিকৃষ্ট কাজের জন্য বাম হাত ব্যবহার করতেন)।–সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৩২
এজন্য উলামায়ে কেরাম বলেন,
ويقدم رجله اليسرى في الدخول واليمنى في الخروج
সে প্রবেশের সময় তার বাম পা সামনে রাখে এবং বের হওয়ার সময় তার ডান পা সামনে রাখে। -শরহুল উমদাহ, খ. ১ পৃ. ২১
টীকা :
এক. চলাচলের রাস্তা ও ছায়াদার গাছের নিচে বা মানুষের জন্য কষ্টদায়ক হয়, এমন জায়গায় পেশাব-পায়খানা না করা উচিত। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
اتَّقُوا اللاَّعِنَيْن قَالُوا وَمَا اللاَّعِنَانِ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الَّذِي يَتَخَلَّى فِي طَرِيقِ النَّاسِ أَوْ ظِلِّهِمْ
তোমরা দুই অভিশাপ আনয়নকারী কর্ম থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, দুই অভিশাপ আনয়নকারী কর্ম কী? তিনি বললেন, লোকেদের রাস্তায় ও ছায়াতে পেশাব-পায়খানা করা। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ২৫
দুই. কবরস্থান ও বাজারে পেশাব পায়খানা না করা। হযরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَأَنْ أَمْشِيَ عَلَى جَمْرَةٍ أَوْ سَيْفٍ أَوْ أَخْصِفَ نَعْلِي بِرِجْلِي أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَمْشِيَ عَلَى قَبْرِ مُسْلِمٍ وَمَا أُبَالِي أَوَسْطَ الْقُبُورِ قَضَيْتُ حَاجَتِي أَوْ وَسْطَ السُّوقِ
কোন মুসলিমের কবরের উপর দিয়ে আমার হেঁটে যাওয়া অপেক্ষা জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর দিয়ে অথবা তরবারির উপর দিয়ে আমার হেঁটে যাওয়া অথবা আমার জুতাজোড়া আমার পায়ের সাথে সেলাই করে দেওয়া আমার নিকট অধিক প্রিয়। আর কবরস্থানে পায়খানা করা এবং বাজারের মাঝখানে পায়খানা করার মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখি না। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৫৬৭