মৃত ব্যক্তির পরিবার কর্তৃক খানার আয়োজন:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم

‏أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لَنْ يَدَعَهُنَّ النَّاسُ النِّيَاحَةُ وَالطَّعْنُ فِي الأَحْسَابِ وَالْعَدْوَى أَجْرَبَ بَعِيرٌ فَأَجْرَبَ مِائَةَ بَعِيرٍ مَنْ أَجْرَبَ الْبَعِيرَ الأَوَّلَ وَالأَنْوَاءُ مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا

অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উন্মাতদের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি (খারাপ) বিষয় আছে। তারা কখনও এগুলো (পুরোপুরি) ছাড়বে নাঃ মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ সহকারে ক্ৰন্দন করা, বংশ তুলে গালি দেওয়া, সংক্রামক রোগ সংক্রমিত হওয়ার ধারণা, একটি উট সংক্রমিত হলে একশটি উটে তা সংক্রমিত হওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রথমটি কিভাবে সংক্রমিত হল? আর নক্ষত্রের প্রভাব মান্য করা অর্থাৎ অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি হলো।
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ১০০১

উক্ত হাদিস থেকে জানতে পারলাম, বিলাপ করে ক্রন্দন করা জাহিলী যুগের প্রথা, যা ইসলামে চরমভাবে নিষিদ্ধ। মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খাবারের আয়োজন করা ঠিক তেমনি। যা নিন্মের হাদিস থেকে স্পষ্ট।

عن جَريرِ بنِ عبدِ اللهِ البَجَليِّ قال كنّا نعُدُّ الاجتِماعَ إلى أهلِ الميِّتِ وصَنيعةَ الطَّعامِ بعدَ دَفنِه مِن النِّياحةِ

অর্থ: জারীর ইবন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, ‘‘মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট সমবেত হওয়া এবং তারা খাবারের আয়োজন করাকে আমরা নিয়াহাহ (বিলাপ) গণ্য করতাম’’।
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ খ. ৬৯০৫ ইবনে মাজাহ: ১৬১২

হাদিসটির মান:

আকমাদ শাকের রহ. বলেন,

إسناده صحيح
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ খ. ১১ পৃ. ১২৬

শুয়াইব আল-আরনাউত রহ. বলেন,
إسناده صحيح
সূত্র: তাখরীজুল মুসনাদে হাদিস: ৬৯০৫

ইমাম নববী রহ. বলেন,
إسناده صحيح
সূত্র: আল-মাজমুউ খ. ৫ পৃ. ৩২০

উপরোক্ত হাদিস থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খাবারের আয়োজন করা সাহাবায়ে কেরামের যুগেই নিন্দনীয় ও অবৈধ বলে বিবেচিত ছিল।

 

ফকীহদের অভিমত:

হানাফী মাযহাব:

ইবনে আবেদীন শামী রহ. বলেন,

ويكره اتخاذ الضيافة من الطعام من أهل الميت لأنه شرع في السرور لا في الشرور وهي بدعة مستقبحة

অর্থাৎ আর মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে যিয়াফত খাবারের আয়োজন করা মাকরূহ। কেননা তা আনন্দের বেলায় শরীয়ত সম্মত, অনিষ্টতার বেলায় নয়। আর এটা মন্দ বিদ‘আত।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ১০ পৃ. ৩৬০

 

 

শাফেয়ী মাযহাব:

ইমাম নববী রহ. বলেন,

وَأَمَّا إِصْلَاحُ أَهْلِ الْمَيِّتِ طَعَامًا وَجَمْعُهُمُ النَّاسَ عَلَيْهِ فَلَمْ يُنْقَلْ فِيهِ شَيْءٌ وَهُوَ بِدْعَةٌ غَيْرُ مُسْتَحَبَّةٍ

অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খাবারের আয়োজন করা এবং খাওয়ার জন্য লোক জমায়েত করার বিষয়ে কোন কিছুই বর্ণিত হয়নি, বরং এটা নিন্দনীয় বিদ’আত।
সূত্র: রওযাতুত তালিবীন খ. ১ পৃ. ৬৬৫

 

মালেকী মাযহাব:

ইমাম হাত্তাব মালেকী রহ. বলেন,

أَمَّا إصْلَاحُ أَهْلِ الْمَيِّتِ طَعَامًا وَجَمْعُ النَّاسِ عَلَيْهِ فَقَدْ كَرِهَهُ جَمَاعَةٌ وَعَدُّوهُ مِنْ الْبِدَعِ لِأَنَّهُ لَمْ يُنْقَلْ فِيهِ شَيْءٌ

অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খাবারের আয়োজন করা এবং খাওয়ার জন্য লোক জমায়েত করাকে ফকীহদের বড় একটি দল মাকরুহ বলেছেন এবং বিদআতের মধ্যে গণণা করেছেন। কারণ এটা জায়েয হওয়ার পক্ষে কোনো কিছুই বর্ণিত হয়নি।
সূত্র: মাওয়াহেবুল জালীল লি-শারহী মুখতাছারি খলীল খ. ৩ পৃ. ৩৭

হাম্বলী মাযহাব:

ইবনে কুদামা হাম্বলী রহ. বলেন,

فَأَمَّا صُنْعُ أَهْلِ الْمَيِّتِ طَعَامًا لِلنَّاسِ فَمَكْرُوهٌ لِأَنَّ فِيهِ زِيَادَةً عَلَى مُصِيبَتِهِمْ وَشُغْلًا لَهُمْ إلَى شُغْلِهِمْ وَتَشَبُّهًا بِصُنْعِ أَهْلِ الْجَاهِلِيَّةِ

অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে মানুষের জন্য খানার আয়োজন করা মাকরুহ। কারণ এটার কারণে তাদের বিপদের উপর আরও বিপদ বৃদ্ধি করা হয় এবং তাদের ব্যস্ততার সাথে আরও কাজ সংযোজন করা হয় এবং এটা জাহিলে কালচারের সদৃশ্য।
সূত্র: আল-মুগনী খ. ২ পৃ. ৪১০

 

ইবনে তাইমিয়াহ রহ.

وَأَمَّا صَنْعَةُ أَهْلِ الْمَيِّتِ طَعَامًا يَدْعُونَ النَّاسَ إلَيْهِ فَهَذَا غَيْرُ مَشْرُوعٍ وَإِنَّمَا هُوَ بِدْعَةٌ

অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খাবার আয়োজন করা এবং মানুষকে দাওয়াত করা এটা শরীয়ত সম্মত নয়, এটা বিদঅাত
সূত্র: ফাতাওয়া কুবরা খ. ৩ পৃ. ৩৪

সৌদী আরবের সর্বোচ্চ ফাতাওয়া বোর্ডের সিদ্ধান্ত

وأما صنع الطعام من أهل الميت للناس فهو خلاف السنة

অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করা সুন্নাত পরিপন্থি (তথা বিদআত)।
সূত্র: লাজনাতুত দায়িমা খ. ৮ পৃ. ৩৮৭

ইজমা

واتفق الائمة الاربعة علي كراهة صنع اهل الميت طعاما للناس يجتمعون عليه

অর্থাৎ চার মাযহাবের সকল ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত যে, মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে মানুষের জন্য একত্রিত করে খানার আয়োজন করা মাকরুহ।
সূত্র: লাজনাতুত দায়িমা খ. ফাতাওয়া নং: ২১৭৫

Check Also

শবে বরাত

শবে বরাত মূূলত بَراءَةٌ শব্দের অর্থ ক্ষমা। শবে বরাত মানে ক্ষমার রজনী “ভাগ্য রজনী” নয়।” …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.