Home > শায়খের বায়ানাত > যিন্দেগীর টার্গেট

যিন্দেগীর টার্গেট

 

বয়ানের কথা সামনে আসলে পেরেসান হয়ে যাই:

আজকে এক ভাই জিজ্ঞাসা করছিলেন যে, আমাকে এত বিমর্ষ লাগছে কেন? আসলে যেদিন ইসলাহী মজলিস থাকে সেদিনটাকে আমার কাছে কিয়ামতের মত মনে হয়। উস্তাযতের সাথে মাশওয়ারা করি। উস্তাযরা বলেন, হওয়া দরকার।

আমি আমার শায়খকে সেদিন বললাম যে, হযরত, আমাকে মাফ করে দেন। আমি এত বড় দায়িত্ব নিতে পারবো না। কারণ এ মজলিসগুলো অনেক ভারি মজলিস। আসলে এ কথাগুলো আমাদের বড়দের বলা দরকার। কিন্তু বড়দের নির্দেশে এখন আমাদের বলতে হয়।

আগে তো ওয়াজে নিজের কাছে কাউকে গণনাই মনে হতো না। যেদিন হযরতওয়ালার সাখে সম্পর্ক হয়েছে, সেদিন থেকে বয়ানের কথা সামনে আসলে হাত পা কাঁপতে থাকে। কারণ এটা তো আমাদের কাজ না, এটা তো বড়দের কাজ।  আল্লাহ তা’আলা যেন বড়দের নেক দৃষ্টি আমাদের জন্য দান করেন।

যিন্দেগীর টার্গেট কি?

আমাদের যিন্দেগীর একমাত্র টার্গেট হলো, আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছানো। আল্লাহকে চেনা। তবে আমরা অনেক কঠিন সময় পার করছি। অবশ্য আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট। কারণ আল্লাহকে পাওয়ার জন্য আগেও উপকরণ যেমন ছিলো, কিয়ামত পর্যন্ত সেটা বলবৎ থাকবে। তবে আল্লাহ আমাদেরকে হিম্মতের সাথে আগাতে বলেছেন। তিনিই ব্যবস্থা করবেন।

আমাদেরকে আল্লাহ যেমন বানিয়েছেন, আসমান-যমীনকে যেমন আল্লাহ বানিয়েছেন, চন্দ্র-সূর্যকে যেমন আল্লাহ বানিয়েছেন,  আবার শয়তানকেও তেমন আল্লাহই বানিয়েছেন। শয়তানের খালেক অন্য কেউ না, বরং আল্লাহই বানিয়েছেন। শয়তানের টার্গেট হলো, আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে না দেয়া, তবে এই বাধা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ কিছু মাধ্যম বলেছেন। সেই মাধ্যমগুলোকে আমাদের হাসেল করতে হবে।

এক.

একটি ফিকহী মাসআলা হলো, যদি কারো নেসাব পরিমান মাল থাকে, চাই স্বর্ণ-রুপা হোক বা টাকা। তাহলে সেটার উপর যাকাত ফরজ হয়। তবে واجب الاداء অর্থাৎ যাকাত দিতে হবে এক বছর পর। যেমন যদি কেউ ১০ লক্ষ টাকার মালিক হয় এবং ১০ লাখ টাকা এক বছর পর্যন্ত তার হস্তগত ছিলো,  তাহলে ১০ লক্ষ টাকার উপর যাকাত আসবে। তবে যদি উদহরণ স্বরুপ ১৮ই মে পর্যন্ত ১০ লক্ষ টাকার মালিক ছিলো, কিন্তু ১৭ই মে আরও ২ লক্ষ টাকার নতুনভাবে মালিক হয়েছে, তাহলে ঐ ১০ লক্ষ টাকার সোহবতে ২ লক্ষ টাকা আসার কারণেই এই নবাগত ২ লক্ষ টাকার উপরেও ১০ লক্ষ টাকার মতই যাকাত আসবে।

মানুষ দিনরাত আরামের ঘুম হারাম করে সম্পদ ধরে রাখে যেন নষ্ট না হয়। একটি বছর পর্যন্ত কষ্ট করে টাকা ধরে রাখার পর সেটার উপর যেমন যাকাত আসে, ঐ টাকার নিসবতে আসার কারণে ২ লক্ষ টাকার উপরেও তেমন যাকাত আসবে।

কুতুবে আলম শাহ হাকিম মুহাম্মাদ আখতার সাহাব রহ. বলেন,

انسے ملنے کی یہی یک راہ ملنے والوں سے راہ پیدا کر

অর্থাৎ যারা কষ্ট আর মেহনত-মুজাহাদা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মারিফাত,তাআল্লুক মাআল্লাহর নিসবত ও আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পেরেছেন, আল্লাহর সম্পর্কের নূর যারা অর্জন করতে পেরেছেন, তাদের সোহবতে কম মেহনত করা মানুষ যারা আসবে, তাদের সোহবতের ওসীলায় আল্লাহ এদেরকেও দামি বানিয়ে দেবেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُم مِّنْ عَمَلِهِم مِّن شَيْءٍ كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ

অর্থাৎ যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃত কর্মের জন্য দায়ী।
সুরা তুর আয়াত: ২১

আমার ভাই, আমাদের দুই পাশে বড় বড় দুশমন রয়েছে,
হাদিস শরীফে এসেছে,

أعدى أعدائِكَ نفسُكَ الَّتي بينَ جَنبيكَ

অর্থাৎ তোমার জিবনের সবচে বড় দুশমন তোমার পাশেই থাকে।
সূত্র: কাশফুল খফা খ. ১ পৃ. ১৬০

আমাদের দুই পাশে বড় বড় দুশমন। যেই দুশমনের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা হযরত ইউসুফ আ. কে বলেছেন,

إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّ

অর্থ: নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন
সুরা ইউসুফ আয়াত: ৫৩

অর্থাৎ নফসে আম্মারা তো আমাদের সাথেই রয়েছে। কিন্তু আমরা তো ভাই, কমজোর। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

وَخُلِقَ الإِنسَانُ ضَعِيفًا

অর্থ: মানুষ দুর্বল সৃজিত হয়েছে।
সুরা নিসা আয়াত: ২৮

আমরা তো ভাবছি, অনেক ইবাদত করে ফেলছি। মনে রাখবেন, ইশরাক, চাশত, আওয়াবীন, তাহাজ্জুদ, হজ্ব-ওমরা করা সহজ। তবে অনেক ফেমাস হয়েও নিজেকে অন্যের কাছে সোপর্দ করা অনেক কঠিন।

মাঝে মাঝে শায়খের কাছে গেলে হয়রান লাগে। সেখানে গিয়ে দেখি বড় বড় শায়খুল হাদিস, মুহতামিম পড়ে আছেন। এমনও মানুষ দেখেছি ৫০ বছর বুখারী শরীফ পড়াচ্ছেন। কোন যোগ্যতার অভাব তাদের? কিন্তু কিসের জন্য এখানে পড়ে আছেন তাঁরা ?

হাকিমুল উম্মত, মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ্ আশরাফী আলী থানভী রহ. এর আজাল্লে খলীফা শাহ্ আব্দুল গণী ফুলপুরী রহ. নকল করেন।

کچھ ہونا میرا ذلت و خواری کا سبب ہے یہ ہے میرا اعجاز کہ میں کچھ بھی نہیں ہوں

অর্থাৎ বড় কিছু হয়ে যাওয়া এটা অপদস্ততার কারণ। এটাই তো আমার বড় সম্মান,সুখ্যাতি যে, আমি কিছুই না

مٹا دے اپنی ہستی کو اگر کچھ مرتبہ چاہے
کہ دانہ خاک میں مل کر گل و گلزار ہوتا ہے

হাফেজ্জী হুজুর রহ, এর জনৈক খলীফা। গিয়ে দেখি হযরত ওয়ালার কাছে বায়’আত হয়েছেন। আমি তো নিজেকে বুঝাইতেই পারি না যে, আয়ে আল্লাহ, এটা কি দেখছি!

কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক যে প্রশংসা ‘ইবাদুর রহমান’কে করেছেন, আর অন্য কাউকে করেননি।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا

অর্থাৎ এবং রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।
সরা ফুরক্বান আয়াত: ৬৩

এজন্য আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. তাক্বওয়ার সংগা করেছেন এভাবে যে,

التقوى أن لا يرى نفسه خيرا من أحد

অর্থাৎ তাক্বওয়া হলো, নিজেকে অন্যের থেকে সেরা মনে না করা।
সূত্র: তাফসীরে সা’লাবী খ. ১ পৃ. ১৪২

হযরতওয়ালা বলেন যে, থানভী রহ. নিজেও বলতেন, নিজেকে কারো থেকে সেরা মনে না করা। এটা মনে করা যে, আমার থেকে বর্তমানের সকল মুমিন সেরা। আর ভবিষ্যতের কুকুর,জানোয়ারও আমার থেকে সেরা। সুবহানাল্লাহ! কি চমৎকার উসূল মেনে তাঁরা বড় হয়েছে।

দীলের খোরাক কি?

হযরতওয়ালা করাচী রহ. বলেন,
কাঠের বাক্সের ভেতর যত দামি জিনিষ থাকে, তাহলে ঐ কাঠের বাক্সের দাম তত দামি হয়ে যায়। তো জেনে রাখুন, সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের খোরাক আছে। দীলেরও একটা খোরাক আছে। আর দীলের সে খোরাকটি হলো, ‘মহব্বত।’

এখন জানা দরকার খোরাক কয় প্রকার?
খোরাক বা খাবার হলো দুই রকম। ১. উন্নত ২. অনুন্নত।
যে খাবার যত মানসম্মত, তার দ্বারা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ততবেশি সতেজ ও শক্তিশালী হয়, আর যে খাবার যত অনুন্নত, তার দ্বারা শরীরের তত বেশী ক্ষতি হয়।

তেমনি মহব্বত নামক এ খোরাকও দুই প্রকার ১. মাজাযী ২. হাকীকী।
মাজাযী মহব্বত হলো, দুনিয়ার নাজায়েয মহব্বত।
আর হাকীকী মহব্বত হলো, আল্লাহর মহব্বত।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

مَا عِندَكُمْ يَنفَدُ وَمَا عِندَ اللّهِ بَاقٍ

অর্থাৎ তোমাদের কাছে যা আছে নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে, কখনও তা শেষ হবে না।
সুরা নাহল আয়াত: ৯৬

كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ

অর্থাৎ আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবে।
সুরা ক্বসাস আয়াত: ৮৮

সুতরাং বুঝা গেল আল্লাহ ব্যতিত সব কিছু ধ্বংশশীল। সুতরাং নাজায়েয মহব্বত নামক এ ফানী বা ধ্বংশশীল জিনিষের মহব্বত যার অন্তরে থাকবে, তার দীল শক্ত হয় না, বরং ধ্বংশ হয়ে যায়। আর অন্তরে যদি আল্লাহর মহব্বত থাকে, তাহলে আল্লাহ যেমন চিরস্থায়ী ও শক্তিশালী, ঠিক ঐ দীলও তেমন সতেজ ও শক্তিশালী হয়, সে দীল কখনও মরে না। এমনকি আল্লাহ যেমন দামি, ঐ অন্তরও তেমন দামি হয়ে যায়।

নবীজি সা. বলেন,

إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ

অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চাল-চলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ৬৪৩৭

মনে রাখা উচিৎ, অন্তরটাই আল্লাহ দেখেন। সুতরাং সে অন্তরটাকে আল্লাহর মহব্বত দিয়ে সজ্জিত করা উচিৎ।

২৫ রোয়ায় তো হযরতওয়ার কাছ থেকে সকল সালেকীনরা চলে যান, তো আমি সময়টাকে সুযোগ মনে করে ২৯ রমাযানে হরযতওয়ালার সোহবত নিতে গেলেম। হযরতজ্বীর ছোট্র একটি কামরা। দেখা করে বের হয়ে দেখি প্রচুর ভিড়। হযরতওয়ালা তো কালো মানুষ, কিন্তু এতদ্বসত্তেও হযরতওয়ালাকে এক নজর দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করছেন।  মসনবীয়ে রুমীতে আল্লামা রুমী রহ. বলেন,

دیدان او دیدان خالق شدن

অর্থাৎ কোনো আল্লাহওয়ালাকে দেখা মানে আল্লাহকে দেখা।

হযরতওয়ালা করাচীকে রহ.একজন প্রশ্ন করলেন, হযরতজ্বী, বাবা-মায়ের চেহারার দিকে মহব্বতের নজরে দেখলে তো একটি কবুল হজ্ব ও ওমরার সওয়াব পাওয়া যায়। বলেন তো, হজ্ব-ওমরায় গেলে সর্বপ্রথম কাজ কি? কা’বার তাওয়াফ করা। অর্থাৎ প্রথম কাজই হলো কা’বা দেখা।

তো হযরতওয়ালা করাচী বলেন, ভাই, পিতা-মাতাকে দেখলে তো কাবা পাওয়া যায়, আর কোনো আল্লাহওয়ালাকে মহব্বতের নজরে দেখলে কা’বাওয়ালাকে পাওয়া যায়।

মজলিসের ফযীলত:

আমরা হযরতওয়ালার মজলিসে গেলে যত ভিড় হোক ঠেলে এক নজর দেখে আসি। বুখারী শরীফে একটি রেওয়ায়েত আসছে,

١- [عن أنس بن مالك:] أن رسولَ اللهِ ﷺ كان يعِظُ أصحابَه فإذا ثلاثةُ نفرٍ يمرونَ فجاء أحدُهم فجلس إلى النبيِّ ﷺ ومضى الثاني قليلًا ثم جلس ومضى الثالثُ على وجهِه فقال رسولُ اللهِ ﷺ ألا أُنبِّئُكم بهؤلاءِ الثلاثةِ أمّا الذي جاء فجلس فإنه تاب فتاب اللهُ عليه وأما الذي مضى قليلًا ثم جلس فإنه استحيا فاستحيا اللهُ منه وأما الذي مضى على وجهِه فإنه استغنى فاستغنى اللهُ عنه
الهيثمي (ت ٨٠٧)، مجمع الزوائد ١٠‏/٢٣٤  •  رجاله ثقات‏‏  •  شرح رواية أخرى

তাক্বওয়ার আরেকটি সংগা হলো,

اذا قال قال لله واذا سكت سكت لله واذا ذكر ذكر لله

অর্থাৎ যখন কথা বলবে, তো আল্লাহর জন্যই বলবে, যখন চুপ থাকবে, তো আল্লাহর জন্যই নিরব থাকবে, যখন আলোচনা করবে, তো আল্লাহর জন্যই আলোচনাই করবে। অর্থাৎ মুত্তাকি হলো সে, যার সব কিছু হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।

হযরত ওয়ালা করাচী রহ. বলেন,
যদি রেডিওর কাটা ভয়েস অফ আমেরিকা বা রেডিও জেদ্দার উপর রাখেন, তাহলে সেখানের খবর আসবে। এক কথায় রেডিওর কাটা যেখানে রাখবেন, সেখানকার খবর আসবে। সুতরাং যদি কেউ তার দীলের কাটাটা যদি আল্লাহর মহব্বতের দিকে ফিরিয়ে রাখে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার দীলের উপরে আল্লাহর মহব্বতের খবর আসতে থাকবে।

আর হাদিস শরীফে এসেছে, আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত নবীজি সা. বলেছেন,

من أحب شيئا أكثر ذكره

অর্থাৎ যে যাকে বেশি ভালোবাসে তার কথা সে বেশি বলতে থাকে।
সূত্র: কিতাবুল ফিরদাউস (দায়লামী) খ. ১ পৃ. ১৮২৯

বাদামওয়ালা ঘুমের মধ্যেও ‘বাদাম’ ‘বাদাম’ বলে কেন?
বাসের কন্ট্রাকটার ঘুমের মধ্যেও ‘মিরপুর-নিউমার্কেট’ ‘ ‘মিরপুর-নিউমার্কেট’ বলে কেন?

আসলে সারাদিনের মুযাকারা যা ছিলো,

اذا تكرر تقرر في القلب

অর্থাৎ মানুষ যেটা বারবার বারবার তোহরায় বা জপতে থাকে, সেটা তার অন্তরে বসে যায়। ঠিক তেমনি যদি কারো সারা দিনের মুযাকারা, আলোচনা, চিন্তা-ফিকির তার মাওলাকে নিয়ে হয়, তাহলে তার শয়নে-স্বপনে, সর্বাবস্থায় তার দীল থেকে তার মাওলা পাকের আওয়াজই বের হবে।

শুনেছি বড়দের কাছ থেকে, হাফেজ্জী হুজুর রহ. যদি চুপ করে কখনও বসেও থাকতেন, তবুও তাঁর সামনে থাকা লোকজন অনুভব করতেন, যেন হুজুরের দীল থেকে মাওলা পাকের জিকিরের আওয়াজ বের হচ্ছে।

হাদিস শরীফে এসেছে, মোল্লা আলী ক্বারী রহ. নকল করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,

الذاكر كالواقف علي الباب

অর্থাৎ মাওলা পাককে স্বরণ করে সবসময় সে যেন আল্লাহর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

خولے یا نہ خولے در اسپے ہوں کیوں تیری نظر
تو تو بس اپنا کام کر یعنی سلا لگائے جا

হযরতওয়ালা করাচী রহ. বলেন, তুমি মাওলায়ে পাকের দরজায় নক করতে থাকো। সকাল-বিকাল জিকির করতে থাকো।

‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’….

আল্লাহ তা’য়ালাকে পাওয়ার রাস্তা হলো তাক্বওয়া।

তাক্বওয়া আরেকটি সংগা হলো,

الاجتناب عن المعصية

অর্থাৎ তাক্বওয়া মানেই হলো গুনাহ ছেড়ে দেওয়া।

আমার ভাই, আজ ওয়াদা করুন, আর গুনাহ করবো না। ঠিক আছে তো? আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করেন।

হযরতওয়ালা করাচী রহ. বলেন,
মানুষের মধ্যে গুনাহের যে চাহিদা আসে, সেটা গুনাহ করে কখনও তৃপ্ত বা ঠান্ডা করা যায় না, বরং গুনাহের চাহিদা থেকে দীলকে ঠান্ডা করার একমাত্র মাধ্যম হলো ‘যিকরুল্লাহ’ বা আল্লাহর যিকির।

বিষয়টি বুঝার জন্য একটি উদহরণ শুনুন,
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে প্রশ্ন করবেন

يَوْمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ وَتَقُولُ هَلْ مِن مَّزِيدٍ

অর্থ: যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব; তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবেঃ আরও আছে কি?
সুরা ক্বাফ আয়াত: ৩০

অর্থাৎ জাহান্নাম গুনাহগারদের দ্বারা পূর্ণ হবে না। কিন্তু আল্লাহর কুদরতি কদমে পূর্ণ হয়ে যাবে। হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يُلْقَى فِي النَّارِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ حَتَّى يَضَعَ قَدَمَهُ فَتَقُوْلُ قَطْ قَطْ

অর্থ: হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হলে জাহান্নাম বলবে, আরো আছে কি? শেষে আল্লাহ্ তাঁর পা সেখানে রাখবেন, তখন সে বলবে, আর না, আর না।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৪৮৪৮

আমার ভাই, জাহান্নামের পেট যেমন গুনাহগারদের দিয়ে ভরবে না, তেমনি কোনো গুনাহগারের চাহিদা গুনাহ দিয়েও পূরণ হবে না। কিন্তু আল্লাহর কুদরতি কদম দিয়ে যেমন জাহান্নামের পেট ভরে যায়, ঠিক তেমনি মানুষের গুনাহের চাহিদাও যদি দমন করতে হয়, তাহলে মানুষের অন্তরে আল্লাহর মহব্বতের নূর আসতে হবে।

এখন হয়তো কেউ কেউ আকল খাটাচ্ছে। কিন্তু আল্লামা রুমী রহ. বলেন,

آزمودم عقل دور اندیش را
بعد از این دیوانه سازم خویش را

অনেক পরীক্ষা করেছি, কিন্তু বুদ্ধি খাটিয়ে আসলে কোনো লাভ নাই।

নূরটা কোথায় পাবো?

কেউ যদি সাতার শিখতে চায় এবং এরজন্য যদি বই পড়েই সাতার শিখতে যায়, তাহলে সাতার শিখতে পারবে না, বরং সাতার জানে এমন একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির কাছে যেতে হবে। আমি যাত্রাবাড়ী তা’মিরুল মিল্লাতে হিফজ পড়েছি। তো সেখানে আমার উস্তায ছিলেন হাফেজ আব্দুল হাফিজ সাহেব। ফরিদপুর বাড়ি। তিনি আমাদের নিয়ে পুকুরের মাঝখানে ছেড়ে দিতেন। কোনো রকম ছাত্ররা চেষ্টা করে পানি খেতে খেতে শিখতাম।

তো হযরতওয়ালা করাচী রহ. বলেন, যেই নূর অন্তরে আসলে গুনাহের চাহিদা মিছমার হয়ে যাবে। সেই নূর অর্জন করতে হলে, নূর অর্জনকারীদের কাছেই যেতে হবে।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিতত, নবীজি সা. বলেন,

سبَق المُفرِّدونَ سبَق المُفرِّدونَ قالوا يا رسولَ اللهِ ما المُفرِّدونَ قال الذّاكرونَ اللهَ كثيرًا والذّاكراتُ

অর্থাৎ মুফাররিদরা অগ্রগামী হয়ে গেছে। সাহাবায়ে কেরাম রা. বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, মুফাররিদ কারা? নবীজি সা. বলেন, যারা বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করে।
সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৮৫৮

উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বলেন,

الذين لا لذة لهم الا بذكره

অর্থাৎ যাদের আল্লাহর জিকির ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না।
সূত্র: মিরকাতুল মাফাতিহ খ. ৫ পৃ.

جدھر جاتے ہے ہم تیرا
کوئی محفل ہوں تو تیرے نام لیتے

دنیا کے مشغلوں  میں بھی وہ با خدا رہے
سب کے ساتھ رہتے بھی سب سے جدا رہے

অর্থাৎ দুনিয়ার এই ব্যস্ততা ও এই হাজার মানুষের মাঝে থেকেও তাদের দীল আলাদা থাকে, তাদের দীল আল্লাহ থেকে আলাদা হয় না। তারাই হলেন, মুফাররিদুন। তারাই অগ্রগামী।

হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ. এর আজাল্লে খলীফা, খাজা আজিজুল হাসান মাজযুব রহ. বলেন,

قریب جلتے ہوئے دل کے اپنا دل کر دے
یہ آگ لگتی نہیں ہے لگائی جاتی ہے
جو آگ کی خاصیت وہ عشق کی خاصیت
اِک سینہ بہ سینہ ہے اِک خانہ بہ خانہ ہے

অর্থাৎ আগুনের যে বৈশিষ্ট্য সেটা মহব্বতেরও সে বৈশিষ্ট্য। এ মহব্বতের আগুন যাদের অন্তরে আছে, তাদের কাছে কেউ গেলে তাদের অন্তরেও মহব্বতের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে।

তবে শর্ত হলো, নিজেকে কেনো আহলুল্লাহর সোহবতে সোপর্দ করা। কারণ যদি কলের নিচে বর্তন রাখা না হয়, সে বর্তনে যেমন পানি পড়ে না, ঠিক তদ্রুপ যেসকল আল্লাহওয়ালাদের অন্তরে আল্লাহর মহব্বতের আগুন জ্বলছে, তাদের কাছে যতক্ষণ নিজেকে সোপর্দ করা না হয়, ততক্ষণ এ মহব্বতের নূর সাপ্লাই হয় না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর।
সুরা তাওবা আয়াত: ১১৯

হযরত সুফিয়ান সাওরী রহ. তাক্বওয়ার আরেকটি সংগা লিখেছেন, তিনি বলেন,

التقوى أن تزين سرك للحق كما تزين علانيتك للخلق

অর্থাৎ তাক্বওয়া হলো, তুমি মানুষের জন্য যেমন সাজো, তেমনি আল্লাহর জন্যও তোমার ভেতরটা সাজাও।
সূত্র: তাফসীরে সা’লাবী খ. ১ পৃ.

অনেক আগে আমাকে ধরে এক টিভি সেন্টারে নিয়ে গিয়েছিলো। আগে তো জানতাম না এ টিভি সেন্টার কি জিনিষ। গিয়ে দেখি কিছু মহিলা আসছে মেকাপ করাবে। আমি ইস্তেঞ্জার কথা বলে ভেগে আসছি। আজও আসছি, কালও আসছি।

আমার ভাই, বুঝাতে চাই, আমরা মানুষের জন্য যেমন সাজি, তেমনি আল্লাহর জন্য আমাদের ভেতরটা সাজানো দরকার।

এক মহিলার বাচ্চা হয় না।

تزودوا الولود الودود

স্বামী বলল, দিতে পারি, কিন্তু শর্ত হলো, সে যেন আমার থেকে সুন্দরী না হয়। তাহরে আমার থেকে তাকে বেশি ভালোবাসবেন।

তেমনি আল্লাহও চান হে বান্দা

الم نجعل له عينين
فباي الاء الخ
خلقت بيدي

আসমান-যমীন চন্দ্র,সূর্য, ফিরিস্তা কাউে নিজের হাত দিয়ে বানাননি, শুধু মানুষকে বানিয়েছেন।

هل تري من فطور

তুমি যখন জানোই, যে আমি সব করেছি, সুতরাং তুমি আমার থেকে আর কাউে বেশি ভালোবাসতে পারো না।

١- [عن عبدالله بن عباس:] قُلنا لابنِ عبّاسٍ: أرأيتَ قولَ اللهِ عزَّ وجلَّ: ما جَعَلَ اللَّهُ لِرَجُلٍ مِنْ قَلْبَيْنِ فِي جَوْفِهِ ما عنى بذلك؟ قال: قام نبيُّ اللهِ صلّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ يومًا يصلِّي، فخطرَ خطرةً، فقال المنافِقونَ الَّذين يصلُّون معَهُ: ألا ترى أن له قَلبينِ: قلبًا معَكُم، وقلبًا معَهُم. فأنزل اللهُ: ما جَعَلَ اللَّهُ لِرَجُلٍ مِنْ قَلْبَيْنِ فِي جَوْفِهِ
الترمذي (ت ٢٧٩)، سنن الترمذي ٣١٩٩  •  حسن

আল্লাহ তা’আলা হাত দুটো দিয়েছেন, পা দুটো দিয়েছেন, চোখ দুটো দিয়েছেন, কান দুটো দিয়েছেন, কিন্তু ক্বলব বা অন্তর দিয়েছেন একটাই। কারণ ঐ অন্তরে শুধু আমারই জায়গা হবে, অন্য কারো না।

ما وسعني سماءي ولا ارضي انما وسعني قلب عبدي

অর্থাৎ আমাকে আসমানও সামলাতে পারে না, যমীনও সামলাতে পারে না, আমি আল্লাহর নূরের তাজাল্লিকে সামলাতে পারে একমাত্র আমার খাছ বান্দাদের অন্তর।।

قلوب المؤمن عرش الله

অর্থাৎ আল্লাহর নূরের তাজাল্লির খাযানা হলো একমাত্র ঈমানদার বান্দাদের অন্তর।

সুতরাং সেই মহব্বতের নূর যদি অন্তরে হাসিল করতে পারি, তাহলে গুনাহের ইচ্ছা সমূলে উৎপাটন হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ। আর সেই নূর অর্জন করতে হলে নূরওয়ালাদের কাছে যেতে হবে।

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

أَفَمَن شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِّن رَّبِّهِ

অর্থ: আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোর মাঝে রয়েছে।
সুরা যুমার আয়াত: ২২

উক্ত আয়াতের অধীনে আল্লামা আলুসী রহ. তাফসীরে আলুসী খ. ২৩ পৃ. ২৫৭ তে একটি হাদিস নকল করেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তিসি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. উক্ত আয়াত তিলাওয়াতের পর আমরা প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, অন্তর প্রশস্ত হবে কিভাবে? নবীজি সা. জবাব দিলেন,

إذا دَخَلَ النُّورُ القَلْبَ انْشَرَحَ اي اتسع

অর্থাৎ অন্তরে যখন সেই নূর প্রবেশ করবে তখন অন্তর প্রশস্ত হয়ে যাবে।

উপরন্তু রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,

أَلا إن سِلْعَةَ اللهِ غاليةٌ، أَلا إن سِلْعَةَ اللهِ الجنةُ
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ২৪৫০

সুতরাং যেহেতু আল্লাহর মূল্য অনেক বেশি এজন্য আল্লাহর নূর যখন কারো অন্তরে চলে আসে, তখন অন্তর প্রশস্ত হয়ে যায়।

সাহাকায়ে কেরাম রা. আবার প্রশ্ন করলেন,

يا رسول الله وما علامة ذلك ؟

হে আল্লাহর রাসুল সা. নূর যে আসছে এটার কোনো আলামত বা চিহ্ন আছে? নবীজি সা. বললেন, হ্যাঁ আছে।
১. والتجافي عن دار الغرور অর্থাৎ দুনিয়া নামক এ ধোকার জগৎ থেকে যারা নিজেকে আলাদা রাখে।

دنیاکی مشغلو سے

২.
. قال : الإنابة إلى دار الخلود

৩. والاستعداد للموت قبل نزوله

আল্লামা ফরীদ উদ্দীন আত্তার রহ. আতরের ব্যবসা করতেন। তো তাঁর কাছে একবার এক বুযুর্গ এসেছেন। এসে সব বোতলের দিকে তাকিয়ে দেখছেন। তো আত্তার রহ. প্রশ্ন করলেন যে, হযরত, আপনি কি দেখছেন? তখন বুযুর্গ বললেন, আমি দেছি এতগুলো বোতলের ভেতর যে আপনার জান ঢুকে আছে, তো এতগুলো শিশি থেকে তোমার রুহ বের হবে কেমনে? অর্থাৎ এতগুলো বোতলের মাঝে আপনার মহব্বত ঢুকে আছে, তো কিভাবে আপনার জান বের হবে? তো আত্তার রহ. বিষয়টি বুঝতে না পেরে জবাব দিলেন, আপনার জান যেভাবে বের হবে আমারটাও সেভাবে বের হবে। তখন তিনি বললেন, ও, তাই? তখন বুযুর্গ নিজের কাছে থাকা একটি চাদর আবৃত হয়ে দোকানের ফ্লোরে শুয়ে পড়লেন। দীর্ঘক্ষণ তো তিনি ওঠেন না। পরে চাদর সরিয়ে দেখলেন বুযুর্গ দুনিয়া থেকে মাওলা পাকের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন।

والاستعداد للموت قبل نزوله

آکر قضا با ہوش کرائے ایک ھنگمائے بے حیا خاموش کر گئے

আমি শুরুতে দুটি আয়াত তিলাওয়াত করেছি।
يا ايها الذين امنوا اتقوا الله و كونوا مع الصادقين

এখানে كونوا আমরের সিগা। আর আমর তৈরি হয় মুযারের থেকে আর মুযারের মধ্যে দুটি অর্থ পাওয়া যায় হাল মুস্তাকবিল। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহওয়ালাদের সাথে সব সময় থাকো।

হযরতওয়ালা করাচীর রহ. প্রথম শায়খ শাহ আব্দুল গণী ফুলপুরী রহ. যখন ইন্তেকাল করলেন, তো সাথে সাথেই শাহ আবরারুল হক হারদূয়ী রহ. এর হাতে বায়আত হয়ে গেলেন। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন كونوا مع الصادقين অর্থাৎ সব সময় আহলুল্লাহদের সোহবতে থাকো। নাগাহ হওয়া যাবে না।

আচ্ছা বলুন তো, আমরা যদি ট্রিটমেন্টের জন্য কোনো ডাক্তারকে দেখাই, হঠাৎ তিনি মারা গেলেন, তখন কি আমরা ঐ ডাক্তারের কবরস্খানে গিয়ে পড়ে থাকবো? ঐ মৃত ডাক্তারকে দিয়ে ইনজেকশন দেওয়াবো? নাকি অন্য জিবিত কোনো ডাক্তারের কাছে যাবো? নিশ্চয় জিবিত ডাক্তারের কাছে যাবো। কারণ সুস্থতার জন্য তো ডাক্তার লাগবেই।

তো আল্লাহ পাকের মানশা হলো, সব সময় আল্লাহওয়ালাদের সোহবতে থাকো। তিনি যদি মারা যান তো আরেকজনকে খোঁজো।

আমাদের প্রফেসর হামিদুর রহমান সাহাব রহ. হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর কাছে  বায়আত ছিলেন। হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পরপরই শাহ আবরারুল হক হারদূয়ী রহ. এর কাছে বায়আত হয়েছিলেন। তবে এখন হন না কেন? وفيه نظر
এখানে বলা ঠিক নয়, তবুও উলামায়ে কেরাম আছেন বলে বলছি, مبني কয় প্রকার? দুই প্রকার। ১. اصل مبني  ২. مشابه مبني

অর্থাৎ এক প্রকার مبني আছে যা مبني এর সাথে সাদৃশ্য থাকার কারণে সেটাও مبني এর হুকুমে চলে আসে।

তো সুলুকের লাইনে যারা মেহনত করতে থাকেন, আহলুল্লাহদের সংস্পর্শে আসার কারণে তারা এক পর্যায়ে এমন হয়, এমন হয় যে, আল্লাহর সাথে তাঁদের সম্পর্ক স্থীর হয়ে যায়। তখন সে অন্তরে আল্লাহ ছাড়া আর কিছু আসে না। তখন নিসবতে ইত্তেহাদী হয়ে যায়, ফলে আম্বিয়ারা যেমন মা’সুম বা নিস্পাপ হয়ে যান, এ জাতীয় আহলুল্লাহরাও মাহফুজ বা গুনাহ থেকে সংরক্ষিত হয়ে যান। তাঁদের দ্বারা আর গুনাহ প্রকাশ হয় না। এজন্য অনেকের নামেন শেষে বলি حفظه الله অর্থাৎ তিনি আল্লাহ কর্তৃক মাহফুজ বা সংরক্ষিত। এটা আমরা সুধারণাবসত বলে থাকি।

আরেকটি আয়াত বলেছিলাম,

والذين امنوا اشد حبا لله

সুতরাং আল্লাহকে সবচে বেশি মহব্বত করা জরুরি। আর এ মহব্বতের নূর যার অন্তরে পয়দা হবে, তাকে আল্লাহ নিজে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।ইনশাআল্লাহ।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,

إنَّ أَوْلى النّاسِ بي المتَّقونَ مَن كانوا وحيثُ كانوا

অর্থাৎ আমার সবচে প্রিয় বান্দা তারা যারা মুত্তাকি। সে যে কেউ হোক না কেন, যেখানেই থাকুক না কেন।
সূত্র: মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ. ৯ পৃ. ২৫

নবীজি সা. আরও বলেন,

١- [عن سمرة بن جندب:] من اتقى اللهَ عز وجل عاش قويًّا، وسار في بلادِ عدُوِّهِ آمنًا
الألباني (ت ١٤٢٠)، السلسلة الضعيفة ٢٨٨٩  •  ضعيف

অর্থাৎ যে তাক্বওয়ার সাথে চলবে, তার জিবন হবে অনেক মজবুত, সে তার শত্রুর এলাকায়ও নিরাপদে চলবে।

ياد كرتا ہے زمانہ انی انسانوں کو
جو رعب دیتے پڑتے ہوئے طوفانوں کو
তারা মজবুতির সাথে দুনিয়ায় বেঁচে থাকে, তারা যেখানেই থাকে না কেন, এরা অত্যান্ত নিরাপদে থাকে।

واخر دعونا ان الحمد لله رب العالمين

 

মাসিক ইসলাহী মজলিস

স্থান: শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামে মসজিদ কম্প্লেক্স, মুসলিম বাজার,মিরপুর-১২ ঢাকা। তারিখ: ১৭-১০-১৪৪৩ হিজরী ১৯-৫-২০২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.