মানুষের জিবনের ভয়ঙ্কর তিন শত্রু:
মানুষ যেন আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে এজন্য
তিনটি জিনিষ মানুষের অন্তরেওয়াসওয়াসা বা ককুমন্ত্রণা দেয়:
ثلاثة مصادر الذي يوسوس في صدور الناس الاول : النفس وهي الأمَّارة بالسوء و الثاني شياطين الجن والثالث شياطين الإنس
অর্থাৎ তিনটি জিনিষ মানুষের অন্তরের কুমন্ত্রণা দেয়। এক. নফসে আম্মারা ২. জ্বীন শয়তান ৩. মানুষরুপী শয়তান।
এক. নফসে আম্মারা:
আমাদেরকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে না দেয়ার জন্য ২৪ ঘন্টা ডিউটি করে এক মহাদুশমন। তার নাম নফসে আম্মারা। যেই দুশমনের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা হযরত ইউসুফ আ. কে বলেছেন,
إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيَ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ। কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু।
সুরা ইউসুফ আয়াত: ৫৩
অপর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ
অর্থ: আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি।
সুরা ক্বাফ আয়াত: ১৬
এজন্য নবীজি সা. বলেন,
أعدى أعدائِكَ نفسُكَ الَّتي بينَ جَنبيكَ
অর্থাৎ তোমার জিবনের সবচে বড় দুশমন তোমার পাশেই থাকে।
সূত্র: কাশফুল খফা খ. ১ পৃ. ১৬০
উক্ত আয়াত দুটি থেকে বুঝতে পারলাম ‘নফসে আম্মারা’ আমাদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। আর এটাই আমাদের জন্য সবচে বড় দুশমন।
দুই. জ্বিন শয়তান।
জ্বীন শয়তানও এক মহাদুশমন আমাদের। কুরআন শরীফে আল্লাহ তা’আলা ইবলিসে ব্যাপারে বলেন, যখন আদম আ. কে সৃষ্টির পর তাঁকে সিজদা দেয়ার জন্য ফিরিস্তাদেরকে নির্দেশ দিলেন, তখন ইবলিস অস্বীকৃতি জানানোর পাশাপাশি দাম্ভিকতার সাথে বলল, আপনি আমাকে আগুন দিয়ে বানিয়েছেন, আর আদমকে বানিয়েছেন মাটি দিয়ে। অতএব আমি তো তার থেকেও দামি। তখন আল্লাহ তা’আলা ইবলিসকে বললেন, বের হয়ে যা। তোর উপর আজ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আমার অভিসাপ। তখন ইবলিস বললো,
قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
অর্থ: সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।আল্লাহ বললেনঃ তোকে অবকাশ দেয়া হল। সে সময়ের দিন পর্যন্ত যা জানা। সে বলল, আপনার ইযযতের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করে দেব। তবে তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদেরকে ছাড়া।
সুরা ছোয়াদ আয়াত: ৭৯-৮৩
অপর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
অর্থ: হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
সুরা ইয়াসিন আয়াত: ৬০
বুঝা গেলো, শয়তানও আমাদের চরম দুশমন।
তিন. মানুষ রুপী শয়তান:
মানুষরুপী শয়তানও মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ
অর্থ: যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
সুরা নাস আয়াত: ৫-৬
কিন্তু মানুষরুপী শয়তান জ্বীন শয়তান থেকেও অনেক ভয়ঙ্কর। অসংখ্য তাফসীরের মধ্যে এসেছে,
شياطين الإنس أشد على الناس من شياطين الجن شيطان الجن يوسوس ولا تراه وهذا يعاينك معاينة
অর্থাৎ মানুষরুপী শয়তান জ্বীন শয়তান থেকেও অত্যান্ত ভয়ঙ্কর। কারণ শয়তান অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় কিন্তু দেখা যায় না, আর মানুষ কুমন্ত্রণা দেয় প্রকাশ্যে।
সূত্র: তাফসীরে কাবীর খ. ৭ পৃ. ৫৭১
এজন্য,রাসুলুল্লাহ সা. বন্ধুনির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ
অর্থাৎ হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস: ৪৮৩৩
প্রিয় পাঠক, উক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, আমাদের পাশে এ বড়বড় তিনটি দুশমন ওৎ পেতে বসে আছে। তাদের কাজ হলো, মানুষ কিভাবে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায় সেটার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। অপরদিকে আমরা বড় দুর্বল সৃষ্টি আল্লাহর। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
وَخُلِقَ الإِنسَانُ ضَعِيفًا
অর্থ: মানুষ দুর্বল সৃজিত হয়েছে।
সুরা নিসা আয়াত: ২৮
সব মিলিয়ে আমরা এক কঠিনভাবে ও কঠিনতম সময়র জিবনযাপন করছি। এ অবস্থায় আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছানো আমাদের জন্য অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু অসম্ভব নয়। কারণ এ উপকরণগুলো আগেও ছিলো। তথাপিও অসংখ্য বুযুর্গরা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য হিম্মত হারানোর সুযোগ নেই।