الْحَمْد لِلهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ ونؤمن به ونتوكل عليه وَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلْه فَلاَ هَادِىَ لَهُ، وَنشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَنشْهَدُ أَنَّ سيدنا وسندنا وحبيبنا وطبيبنا ومحبوبنا ومرشدنا ومولانا مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ارسله بالحق بشيرا ونذيرا وداعيا الي الله باذنه وسراجا منيرا اما بعد فاعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ آمَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ وقال النبي صلي الله عليه وسلم الْمُسْلِمُ مَن سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِن لِسانِهِ ويَدِهِ
او كما قال عليه الصلوة والسلام
اللَّهمَّ صلِّ على محمَّدٍ وعلى آلِ محمَّدٍ، كما صلَّيْتَ على إبراهيمَ وعلى آلِ إبراهيمَ إنَّك حميدٌ مجيدٌ، اللَّهمَّ بارِكْ على محمَّدٍ وعلى آلِ محمَّدٍ، كما باركْتَ على إبراهيمَ وعلى آلِ إبراهيمَ إنَّك حميدٌ مجيدٌ، اللَّهمَّ وترحَّمْ على محمَّدٍ وعلى آلِ محمَّدٍ، كما ترحَّمتَ على إبراهيمَ وعلى آلِ إبراهيمَ إنَّك حميدٌ مجيدٌ
بلغ العُلا بكمالـــــــهِ كشف الدُجى بجمالـهِ حَسُنت جميعُ خصالهِ صَلُّوا عليه و آلــــــهِ
رہےِ میرَا مَسکَن حوالئیِِِ کَعبَہ بنےِ مِیرَا مَدفَن دِیَارِ
بلغ العُلا بكمالـــــــهِ كشف الدُجى بجمالـهِ حَسُنت جميعُ خصالهِ صَلُّوا عليه و آلــــــهِ
আলহামদুলিল্লাহ। আয়োজিত তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের মুহতারাম সভাপতি, উপস্থিত হযরত বুযুর্গ ওলামায়ে কেরাম, সম্মুখ পানে উপস্থিত সমবেত দ্বীন প্রিয়, ইসলাম প্রিয় ঈমানদার মুমিন-মুসলমান ভাইয়েরা, বুড়া বাবারা, যুবক ভাইয়েরা, পর্দার আড়ালের মা বোনেরা। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ করছেন নেককারদের কাছে বেশি বেশি যেতে, আয়াতে কারীমা আল্লাহ তা’আলা বলছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।
সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯
অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারেরা, আল্লাহকে ভয় করো, নেককারদের মজলিসে বেশি বেশি যাও। এটা আল্লাহ তা’আলার একটি নির্দেশ। নেককারদের সঙ্গ নাও, নেককাদের কাছে যাও। আল্লাহ আদেশ করলেন। কারণ নেককারদের পরিবেশে, নেককারদের সোহবতেই মানুষকে নেক বানাবে। আর অসৎ সঙ্গ মানুষকে অসৎ বানিয়ে দেয়। সৎসঙ্গে সর্গবাস, আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। এজন্য আমাদের মুরুব্বীরা বলেন যে, নেক মজলিসে বেশি বেশি যাও প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন কোন না কোন নেককারের মজলিসে গিয়ে বসো। তাহলে নেককারদের মজলিসে যাওয়া।
صحبت صالح ترا صالح کند صحبت طالح ترا طالح کند
নেককারদের কাছে গেলে নেক হওয়া যাবে। নেককারদের সহবত তোমাকে নেক বানাবে। আর অসৎ লোকদের সঙ্গ নিলে তুমি অসৎ বদকার হয়ে যাবে। এজন্য শরীয়তে ইসলামীর কিছু কিছু কাজ বেশি বেশি করা। তার মধ্যে একটি হলো, নেক মজলিসে বেশি বেশি যাওয়া। মুসলমানরা বেশি বেশি শুকরিয়া করবে। একটু আগে আপনাদের কে বললাম না যে, বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আর কাছরাতে শুকর তথা বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করবে। এগুলো শরীয়তের বিধান যে, মুসলমান বেশি বেশি শুকর করবে। আল্লাহর কাছে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দের কালিমা হলো শুকরিয়ার কালিমা। আলহামদুলিল্লাহ। কেউ যদি শুকরিয়া আদায় করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার উপরে খুশি হয়ে যান। আর আল্লাহ হুমকি দিয়েছেন, সাবধান! যদি শুকর না করো, তাহলে আজাব দেবো। আর শুকরিয়া আদায় করলে নেয়ামত বাড়িয়ে দেবো। এজন্য বেশি বেশি শুকর করা। আল্লাহ বলেন,
لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
অর্থ: যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।
সুরা ইবরাহীম, আয়াত: ৭
তাহলে কিছু কিছু এবাদত বেশি করতে বলেছেন আল্লাহ তা’আলা। ঐ গুলো বলতে ছিলাম। একটা বললাম, কাছরাতে সোহবতে আহলুল্লাহ ( অর্থাৎ আল্লাহ ওয়ালাদের মজলিসে বেশি বেশি যাওয়া) দ্বিতীয় আর একটা হলো, কাছরাতে শুকর ( অর্থাৎ বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা) আর একটা হল কাছরাতে যিকরুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার জিকির বেশি বেশি করা। যে যত বেশি জিকির করে, সে ততো বেশি আল্লাহ তা’আলার পেয়ারা হয়। সুবহানাল্লাহ! যত জিকির করবে, তত আল্লাহর পেয়ারা বান্দা হয়। তাই আল্লাহর নির্দেশ দিচ্ছেন।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
অর্থ: হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর।
সুরা আহযাব, আয়াত: ৪১-৪২
তার মানে শুধু সকাল আর শুধু বিকাল না। সকাল থেকে সন্ধা আবার সসন্ধা থেকে সকাল। পুরো সময় তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ করো, ডাকাডাকি করো। যিকিরে তোমরা বেশি বেশি করো আল্লাহর নাম জপো। বেশি বেশি আল্লার নাম জপা। আমাদের তো সারাদিন আল্লাহর নাম আসতেই চায় না। আল্লাহর নাম নিতে চায় না, আলহামদুলিল্লাহ বলতে চায় না, সুবহানাল্লাহ বলতে চায় না, ইয়া আল্লাহ, ডাক দিতে চায় না, অথচ ‘আল্লাহ’ বলে যদি কোন বান্দা ডাক দেয়, আল্লাহ কত খুশি হন? আল্লাহ তা’আলা তখন বলতে থাকেন, ফিরিস্তারা দেখো, আমার বান্দাকে আমি কত ঝামেলা দিয়ে রেখেছি, তোমাদের তো ইন্তেঞ্জার হাজত নেই, বিবি দরকার নেই, তোমাদের তো দরকারি হাজতই দেইনি, তোমাদের রুজি করার দরকার নেই, ঘুমের দরকার নেই। কিন্তু আমার বান্দাকে আমি কত দরকার দিয়ে ব্যস্ত করে রেখেছি, খানা ছাড়া অচল হয়ে যাবে, কামাই তার করতে হবে। খানা খেলো একটু পরে আবার বাথরুমে যেতে হবে। আবার তার যৌবিক চাহিদা পূরণ করতে হবে, বিবি পালতে হবে, পর্দায় রাখতে হবে, তার দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছি। এতো দায়িত্ব পাওয়ার পরও আমার বান্দা আমাকে ভোলেননি, আমাকে ডাকলো। দেখলে? তোমরা সাক্ষী থাকো, ও আমার বান্দা। এজন্য আমাকে ডেকেছে। আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি। সূরা আলে ইমরানের ১০২ নাম্বার আয়াত আপনাদের সামনে তেলাওয়াত করছি, আয়াতে কারীমায় আল্লাহ পাক বলছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না
এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ ঈমানদারদের বড় আদর করে ডেকে বলছেন, হে ঈমানদারেরা, اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ তোমরা আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় করো। সাবধান! মুসলমান না হয়ে কিন্তু তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। মুসলমান না হয়ে কিন্তু কবরে এসো না। তার কারণ হলো, কোন বান্দা যদি মুসলমান হয়ে মারা যায়, সে জান্নাতে চলে যায়। মুসলমান সোজা আল্লাহর কাছে চলে যায়। আর কেউ যদি মুসলমান না হতে পারে, তাহলে কিন্তু কবর থেকেই জাহান্নাম শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ পাক মুসলমান হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে বলেছেন
এখন একটা হলো, মুসলমান কাকে বলা হয়? আরেকটা কথা হলো, মরার আগে তো মুসলমান হয়ে কবরে যেতে বলেছেন। এ মরন কবে আসবে? এজন্য হাদিসে মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্বরণ করতে বলা হয়েছে। কারণ কারো ভেতরে মৃত্যুর স্মরণ বেশি থাকলে, সে গুনাহ করতে পারবে না। যেমন কারো কাছে যদি আজরাইল আ. এসে সরাসরি মৃত্যুর কথা বলে যায়, সে কি গুনাহ করতে পারবে? কেউ যদি জানে যে, সে ক্যান্সারের রোগী, সে কি মিথ্যা কথা বলবে? ঘুষ খাবে? ডাকাতি করবে? কারণ সে জানে যে, সে দুদিন পরেই মারা যাবে। এজন্য নিশ্চিত মৃত্যু জেনে কেউ গুনাহ করতে পারে না। এজন্য আল্লাহ ইয়াদে মউত তথা মৃত্যুর স্মরণ বেশি বেশি করতে বলছেন যে, হে, তোমরা যেনো মুসলমান না হয়ে মরো না।
এই মুসলমান কাকে বলা হয়? শুধু কালেমা পড়ার নাম কিন্তু মুসলমান না। কালেমা তো হলো, ঈমানের ভর্তি ফরম, যার মাধ্যমে কেবল ঈমানদার হয়ে, মুসলমান হিসেবে নাম লিখিয়েছে। আর তাক্বওয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে মুসলমানিত্ব হেফাজত করতে হয় এবং মুসলমানিত্বের পূর্ণতা আনতে হয়। মুসলমানি তো কোন সীলের নাম নয় যে, খৎনা করালাম আর মুসলমান হয়ে গেলাম।
مسلمانی بود گردن نہادن
মুসলমানের শুধু কালেমা বা সীল নয়, বরং পূর্ণ আত্মসমর্পণ করার নাম মুসলমান। কমপ্লিট নিজেকে আল্লাহ তা’আলার কাছে কমপ্লিট বিধানের উপরে নিজেকে চালানো এবং আল্লাহর অপছন্দের কাজ থেকে নিজেকে কমপ্লিট বাঁচিয়ে রাখার নাম হল কমপ্লিট মুসলমানী।
گردن نہادن بطاعت
আল্লাহর আনুগত্যের সামনে নিজের গর্দানকে ঝুঁকিয়ে রাখা। এটার নাম হল মুসলমানী। কখনো আল্লাহর বিধানের বাহিরে গর্দান না ঝুকানো। আমরা তো শুধু সীলের মুসলমান। যেমন আমাদের মুসলমানি করিয়েছি এজন্য আমরা মুসলমান। অথচ নামাজ নাই, রোজা নাই, এবাদত-বন্দেগী নাই, হালাল-হারামের তমীয নাই, কিছু নাই। অথচ আমরা মুসলমান। আমাদের মুসলমানী নাম আছে, কিন্তু মুসলমান হইনি। আমাদের আখলাক চরিত্রে মুসলমান মনে হয় না। আগের জামানায় মুসলমানদের আখলাক দেখে, কাফেররা মুসলমান হয়ে যেতো। কিন্তু আমাদের দেখে মুসলমানরা কাফের হয়ে যাচ্ছে। মাইকেল এইচ হার্ট দ্বি হান্ড্রেড বই লিখেছে। যেখানে ১০০ মনীষীর জীবনী জমা করেছে। সে একজন খ্রিস্টান হয়েও ১০০ মনীষীর ভেতরে এক নাম্বার জায়গায় আপনার-আমার নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’র সা. নাম এনেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনি খ্রিস্টান হয়ে এক’শ মনীষীর নামের মধ্যে সর্বপ্রথম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’র সা. নাম আনলেন। কিন্তু মুসলমান হন না কেন? তিনি বলেছেন, মুহাম্মাদের সা. নাম এক নাম্বারে দিয়েছি তার চরিত্র আখলাক জেনে। কিন্তু এখনকার মুসলমানদের আখলাক দেখলে আমার মুসলমান হতে মনে চায় না। কারণ আমাদের ভিতরে এখন আর মুসলমানিত্ব বাকি নেই।
ہم مسلمان ہے مگر ہم مے مسلمانی نہیں
ہم مے ایمان ہے مگر ہم مومن کامل نہیں
কবে মুসলমান হব? এখন মুসলমান হতে হবে। ঐ যে ইবরাহিম পয়গম্বরকে আ. আল্লাহ ডেকে বলেন,
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থ: স্মরণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেনঃ অনুগত হও। সে বললঃ আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম।
সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩১
হে ইব্রাহীম মুসলমান হয়ে যাও। ইব্রাহিম আ. বলেন, মুসলমান হয়ে গেছি। ماضي এর صيغة অর্থাৎ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, আত্মসমর্পণ করে কমপ্লিট মুসলমান হও। কিন্তু ইবরাহিম আ. বললেন, আত্মসমর্পণ করে মুসলমান হয়ে গেছি। কখন হয়েছেন? আল্লাহ বলছেন, তুমি মুসলমান হও, অথচ তিনি বলছেন, হয়ে গেছি। আল্লাহর কথা আর ইবরাহিমের আ. কথার মাঝে তো একটা সময় আছে। এ সময়ের মধ্যেই ইবরাহিম আ. নিজের মুখ দিয়ে মুসলমান হয়ে গেছি বলার আগেই তিনি মুসলমান হয়ে গেছেন। সুবহানআল্লাহ।
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আগে মুসলমান হয়ে তারপরে বলেছেন, আমি আত্মসমর্পণ করেছি তো। মুসলমান হয়ে গিয়েছি তো। আর আমাদেরকে যদি বলা হয় যে, ভাই, নামাজ পড়েন না কেন? রোজা রাখেন না কেন? দাঁড়ি-টুপি রাখেন না কেন? ধর্ম মানেন না কেন? জবাব দেয়, হুজুর, বয়স ৪০ বছর হয়নি তো এখনও। ৪০ বছর আগে হোক, তারপর নামাজ-রোযা করবোনে। দাঁড়ি রাখবোনা। একটু বুড়ো হয়ে নিই। দ্বীনধর্ম পালন করবো নে। এই জবাবই দেয়। কে বলেছে আপনি বুড়ো হওয়ার চান্স পাবেন? এখনই তো তোমার মৃত্যু হতে পারে। পারে কিনা? মৃত্যু অস্বীকার করার কোন কায়দা কি আছে? কেউ যদি মুসলমান হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়, তাহলে তার মৃত্যু হবে এক রকম। আল্লাহ পাক জান্নাত খোলা অবস্থায় তার সামনে রাখবেন এবং সে কালেমা পড়তে পড়তে জান্নাতে ঢুকে পড়বে। আর যদি মুসলমান না হয়ে মারা যায়, তাহলে তার মৃত্যু হবে অন্যরকম। বড় ভয়াবহ অবস্থায় তার মৃত্যু হবে। কার মরণ কখন আসবে, এটা কারো কি জানা আছে? না।
মৃত্যু এমন এক নিশ্চিত সংবাদের নাম, যে সংবাদের অস্বীকারকারী কেউ নাই। নাস্তিক-মুরতাদ যারা কবর অস্বীকার করে, কবরের আজাব যারা অস্বীকার করে, আল্লাহকে যারা অস্বীকার করে, হাশর অস্বীকার করে, কিন্তু দুনিয়ার মাটির উপর এমন কেউ নেই, যে মৃত্যুকে অস্বীকার করবে। নেই এমন কেউ নেই। মৃত্যু আসবে আসবে। সকলকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে। যেখানেই থাকো, মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতেই হবে। মরণ থেকে পালানোর কোন জায়গা নেই। মরণ থেকে কেউ যদি পালন করতে আকাশেও যায়, আজরাঈল আ. আকাশও চেনেন।যদি সিন্দুকের মধ্যে যায়, আজরাইল সিন্দুকের তালাও খুলতে পারেন। যদি কাচের গ্লাসের ভিতরে চলে যায়, আজরাঈল আ. সেখানেও যেতে পারেন। যে গ্লাসের ভেতরে পিপিলিকাও ঢুকতে পারে না, কিন্তু আজরাঈল দরজা-জানালাহীন সেখানেও যেতে পারেন।
মরন থেকে যতই পালাও, মরণ তোমায় লইবে ঘিরি, যদিও শুধু আকাশ পানে, পালাও সেথাই লাগাই সিড়ি।
যদি সিড়ি লাগিয়ে আকাশেও কেউ যায়, সেখানে মৃত্যু যাবে। কখন যাবে? সেটা কেউ জানেনা। কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যু বরণ করতে হবে, এটা জানা আছে।
তাফসীরের ঘটনা,
এক মহিলা তো মৃত্যুর থেকে বাঁচার জন্য কাঁচের গ্লাস বানিয়ে, তার মধ্যে ঢুকেছে। মহিলা বাচ্চা প্রসব করবেন, ইতিমধ্যর তার গোলামকে আদেশ করলেন, হে গোলাম, আমার প্রসব বেদনা উঠেছে, তুমি আমার জন্য আগুন নিয়ে আসো। আগুন আনার জন্য গোলাম রওনা দিয়েছে, ঘরের বাহিরে যাওয়া মাত্রই দাঁড়ি-টুপি, পাঞ্জাবীওয়ালা এক মুরুব্বীর সাথে দেখা হয়ে গেছে। গোলাম বুজুর্গকে দেখে সালাম করলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’। হুজুর বলেন, ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। বুজুর্গ বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছো? গোলাম বললেন, আগুন আনতে যাচ্ছি। কিসের আগুন? বললেন, আমার মুনিব বাচ্চা প্রসব করবে, প্রসব বেদনা উঠেছে, এজন্য আগুন লাগবে। কারণ প্রসবের সময় আগুন খুব উপকারী হয়। মুসা আ. আগুন আনতে গিয়ে নবুয়াত পেয়ে গেছেন। তিনি শুয়াইব আ. এর কন্যা বিয়ে করেছেন, এবার বিবির প্রসব বেদনা উঠলে, দেখলেন পাহাড়ে আগুন দেখা যাচ্ছে। ত্বুর পাহাড়ে আগুন আনতে গেলে দেখলেন নূর জ্বলছে। আল্লাহ বলেন, হে মুসা, আগুন মনে করো না।
اني انا الله
এখানে আমি আল্লাহ নিজে তোমার জন্য আছি। দুনিয়ার নুর নিতে এসেছিলে, নবুয়ওতের নূর দিয়ে দিলাম। যাও বনি ইসরাইলের কাছে যাও। তো বাচ্চা প্রসবের সময় আগুন উপকারি হয়।
তো গোলাম আগুন আনতে যাওয়ার সময় বুযুর্গ বললেন, কার জন্য আগুন আনতে যাও? জানো নাকি, বাচ্চা প্রসব হয়ে গেছে। গোলাম বললেন, হ্যাঁ ঐ যে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কি হয়েছে? বলে একটা মেয়ে সন্তান হয়েছে, এজন্য আগুন আনতে যাচ্ছে। বুযুর্গ বললেন, তার পেট থেকে যে বাচ্চা জন্ম হয়েছে, এই কন্যাটা ১০০ জন যুবকের চরিত্র নষ্ট করবে। তার মানে যে মেয়েটার জন্ম হয়েছে সে এক’শ জন পুরুষের সাথে যেনা করবে। নাউজুবিল্লাহ। গোলাম এমন একজন মানুষের মুখ থেকে কথাটা শুনেছে, যার কথা বিশ্বাস হয়েছে। কারশ কিছু মানুষ এমন আছে যাদের চেহারা দেখলে মনে হয় যে, এমন চেহারার মানুষ মিথ্যা বলতে পারে না। কারণ যারা নেককার হয়, তাদের চেহারার মধ্যেই সত্যবাদীত্বের চিহ্ন থাকে। আর যারা বাটপার, তাদের চেহারার মধ্যেই বাটপারীর ছাপ থাকে। কারণ বাটপার মানুষের বাটপারীর ছাপ তাদের চেহারায় থাকে, আর যারা নেককার, তাদের নেক ও সততার নূর তাদের চেহারায় থাকে, সে কালো হলেও। আর যে বদকার তারা চেহারা সাদা ধবধবে হলেও, তার কপাল দিয়ে আগুন বের হয়, দেখা যায় যে, এটা বদকার, চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। তো নেককারের চেহারায় সততার ছাপ থাকে, যার ফলে তার কথা তাড়াতাড়ি বিশ্বাস হয়।
তো নেককার মানুষটি যখন বললেন যে, এ মেয়েটি ১০০ যুবকের সাথে যিনা করবে। জানো? তখন গোলাম বললেন তাহলে তো আমি তাকে জানেই রাখবো না। গোলামের কোমরের মধ্যে একটা ছুরি ছিল, আগুন আনতে না গিয়ে আবার মুনিবের ঘরে প্রবেশ করলো। গিয়ে দেখে বাচ্চাটা শুয়ে আছে, আর তার মুনিব পাশে রক্ত মাখা অবস্থায় পড়ে আছে। গোলামটা ঘরে ঢুকেই নিজের কোমর থেকে ছুরি বের করে বাচ্চাটার পেটের মধ্যে আঘাত করে পেট ফেঁড়ে ফেলেছে, নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়েছে, মহিলা চিৎকার দিতে শুরু করে দিলো। ছুরি হাতে গোলাম এবার চিন্তা করে হায় হায়! এটা কি করলাম? এবার তো আমার বাঁচার উপায় নেই। যদি বলে, কি জন্য বাচ্চাটার পেটে ছুরি মেরেছো? তখন কি বলবো? যদি বলি, ১০০ পুরুষের সাথে যিনা করবে এজন্য মেরেছি, কেউ তো বিশ্বাস করবে না। দেখি যার কথায় মারলাম সে সাক্ষিটা কোথায় গেলো? ঘরের বাহিরে গিয়ে দেখে বুযুর্গটা সেখানে নেই। এবার গোলাম বাঁচান জন্য পালাচ্ছে। কারণ মানুষ জানলে তো তাকে মেরে ফেলবে, কারণ মাসুম বাচ্চার পেটে ছুরি মেরেছি।
এবার গোলাম ওখান থেকে এমন দূর দেশে চলে গেছে, যেখান থেকে এই দেশের দূরত্ব শত শত মাইল। এদিকে আল্লাহর কাজ আল্লাহ করেন। কে কখন মারা যাবে, একথা এক আল্লাহই জানেন। অনেকে বড় বড় দুর্ঘটনা পড়ার পরও তার কিছুই হয় না। অথচ অনেকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় মারা যায়। অনেকের বড় বড় অপারেশনের পরও দীর্ঘদিন বেঁচে যায়, হসপিটাল থেকে ফেরৎ দিয়ে দেয়, তবুও বেঁচে যায়। আমার সাথে একজন ক্যান্সারের রোগীর দেখা হয়েছে, যাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। লোকটি মারা যাবে যাবে অবস্থায় বায়তুল্লায় চলে গেছেন। মুক্তাগাছা বাড়ি। আব্দুর রহমান হাফেজ্জী হুজুর ময়মনসিংহের বড় আলেম। হুজুর তাকে বললেন, আল্লাহর বান্দা, যমযম খেয়ে দোয়া করলে তো দু’আ কবুল হয়, আপনি একটু যমযমের পানি শিফার নিয়তে খান। যযমযমের মালিক তো আল্লাহ। তিনি তোমাকে শিফা দিতে পারেন। লোকটা বাইতুল্লাহ সামনে নিয়ে যখন আবেগ ভরা কন্ঠে, চোখের পানি ছেড়ে জমজম খেয়েছেন, আল্লাহ সাথে সাথেই তার ক্যান্সার ভালো করে দিয়েছেন। তিনি এখনো জীবিত আছেন। অতএব কার মরণ কোথায়,কিভাবে হবে কেউ জানে না। শুধুমাত্র জানেন আল্লাহ।
অতএব হে যুবক ভাইয়েরা, এই চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই যে, তুমি বৃদ্ধ হবে বা ৪০ বছর বয়স পাবে। তুমি আগামীকাল মরতে পারো, আবার বৃদ্ধ লোকটি অনেক দিন বাঁচতে পারে। কার মৃত্যু কবে হবে, এটা কেবল আল্লাহই জানেন। ইমাম মালেক রহ. মক্কা মুয়াযযামায় ৪০ বছর অবস্থান করেছেন, জিবনের শেষ সময়টি তিনি মাদীনায় কাটানোর জন্য হিজরত করলেন। আর চিন্তা করছেন, আর কখনও মাদীনার বাহিরে যাবো না। কারণ তাঁর যিন্দেগীর শেষ তামান্না হলো, মাদীনার মাটিতে মৃত্যুবরণ করবেন এবং উনার কবরটা মাদীনার মধ্যে হবে। যেন হাশরের কঠিন ময়দানে মাদীনাওয়ালার পাশাপাশি মাদীনার মাটি থেকে আল্লাহর আদালতে দাঁড়াতে পারেন। সুবহানাল্লাহ।
এবার হজ্বের মৌসুম চলে আসছে, মাদীনার হাজ্ববীরা এহরামের কাপড় পড়ে পড়ে মক্কায় যাচ্ছেন। ইমাম মালেক মনে করলেন, যদি আরাফার ময়দানে হাজিরা দিতে পারতাম! কিন্তু আবার ভাবছেন, যদি এমন হয় যে, আমি যদি আরাফার ময়দানে যাই, আর মক্কায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যায়, তাহলে তো মাদীনায় ঘুমাতে পারবো না। তাহলে একটু জানার চেষ্টা করে দেখি, হায়াত কতদিন আছে? এজন্য তিনি ইস্তেখারা করলেন, ইস্তেখারার স্বপ্নে দেখছেন মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সা. ইমাম মালিককে রহ. পাঁচ আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেছেন। ইমাম মালেক স্বপ্নটি দেখে পেরেশান হয়ে গেলেন যে, পাঁচ দিন? না পাঁচ মাস? নাকি পাঁচ বছর বাঁচবো। যদি পাঁচ মাসও হয়, তবুও তো যাওয়া যায়, কিন্তু পাঁচদিন হলে তো আর যাওয়া যাবে না।
অতঃপর তিনি তাঁর খাদেমকে বললেন যে, খাদেম, রাসূলুল্লাহ আমাকে পাঁচ আঙ্গুল দেখিয়েছেন তুমি যাও বর্তমান সময়ের স্বপ্ন সম্রাট ইবনে সিরিনের কাছ থেকে ব্যাখ্যাটি নিয়ে এসো। তাকে গিয়ে বলবে, হে আল্লাহর ওলি, একজন স্বপ্ন দেখেছেন যে, নবীজি সা. তাঁকে পাঁচ আঙ্গুল দেখিয়েছেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যা কি হবে? তবে সাবধান! আমার নাম কিন্তু বলোনা। ইবনে সিরিনকে রহ. স্বপ্ন বলার পর, তিনি বললেন, আগে নাম বলো। খাদেম বললেন যে, নাম বলা তো নিষেধ করা হয়েছে। ইবনে সিরিন বলেন, নাম না বললে তো ব্যাখ্যা বলবো না। কারণ আমি জানি, এমন স্বপ্ন এই যুগে ইমাম মালেক ছাড়া আর কেউ দেখতে পারে না। নাম বলো।
নাম না বলার কারনে তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা না দেওয়ায় খাদেম আবার ইমাম মালিকের রহ. কাছে ফিরে গিয়ে বললেন যে, হে ইমাম মালিক, ইবনে সিরিনকে রহ. স্বপ্নের তাবির বলতে বললাম। কিন্তু তিনি বললেন, নাম না বললে তিনি ব্যাখ্যা বলবেন না। আবার তিনি বললেন, এমন স্বপ্ন যুগের ইমাম ইমাম মালিক ছাড়া আর কেউ দেখতে পারে না। আমি কি তার কাছে আপনার নাম বলবো কিনা? ইমাম মালিক রহ. বললেন, গোপন রেখে আর লাভ কি? তিনি তো জেনেই গেছেন। যাও গিয়ে বলে দাও।
অতঃপর খাদেম এসে ইবনে সিরিনের রহ. কাছে ইমাম মালিকের রহ. নাম বলে দিলেন। ইবনে সিরিন বলেন যুগের এত যিন্দা আলেম কবরের সবচেয়ে বড় আলেমদের স্বপ্ন দেখেছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেম হলেন, সারকারে দু’আলম মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সা.। তিনি হাতের পাঁচ আঙ্গুল দেখিয়েছেন, এর মানে হলো, হে ইমাম মালিক, অনেক জ্ঞান তুমি অর্জন করেছো, কিন্তু পাঁচটি জ্ঞান তুমি কেন আমি রাসুল নিজেও পাইনি, দুনিয়ার অন্য কোনো পায়গম্বারও জানেন না। তুমি সেগুলো জানার চেষ্টা করো না। সে পাঁচটি ইলমের সিন্দুক শুধুমাত্র আল্লাহ তাঁর নিজের কাছেই রেখেছেন। ঐ সিন্দুকের ইলম কোনো নবী-রাসুলকেও দেননি। আল্লাহর রাসুল সা. সেই কথাগুলো পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়েছেন। সেগুলো কি কি? আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
সুরা লুকমান, আয়াত: ৩৪
আল্লাহ তা’আলা পাঁচটি ইলম নিজের কাছে রেখেছেন, যে জ্ঞান কোন নবী-রাসুলকেও দেননি। এটা কিয়ামত পর্যন্ত কোন মানুষকেও দেওয়া হবে না। ঐ ইলমের খাজানার আল্লাহ নিজের কাছে রেখেছেন।
১. إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ কেয়ামত কবে হবে। কে জানেন? আল্লাহ। গত কয়েক বছর আগে একবার কিয়ামতের ঘোষণা হয়েগিয়েছিলো।
২. وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ কবে, কখন, কোথায় বৃষ্টি হবে। কে জানেন? আল্লাহ। আবহাওয়া দপ্তর জানে? তারা বলেন, সম্ভবত হতেও পারে, নাও হতে পারে। তারা বলেন, হ্যাঁ, ওমুক বঙ্গোপসাগরের এত এত কিলোমিটার দূর থেকে একটা ঘূর্ণিঝড় আসছে, আঘাত করতে পারে, কিন্তু না। এটা ঘুরে ওমুক জায়গায় চলে গেছে। বৃষ্টি হতে পারে পারে, ঘুরছে। কিন্তু না। হলো না তো। কেন? কারণ আল্লাহ তা’আলা যেখানে চাইবেন, সেখানে বৃষ্টি দেবেন। তা ছাড়া বাতাস দিয়ে বৃষ্টি অন্য জায়গায় ঘুরিয়ে দেবেন।
৩. وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ অর্থাৎ মায়ের পেটে এক কতরা (ফোটা) পানি, ওটা কি ছেলে না মেয়ে একমাত্র জানেন আল্লাহ। নাকি আলট্রাসনোগ্রাম করে জানা যায়? জানা যায় তখন, যখন। রেডি হয়ে যায়। এর আগে না। আগেই যদি জানতে পারতো, হয়তো মেয়ে বলে শেষ করে দিতো। ফেলে দিতো। সুতরাং এক কতরা এই পানি থেকে ছেলে না মেয়ে কি হবে এটা একমাত্র জানেন আল্লাহ।
৪. وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا কে কোথায় খানা খাবে, কার লোকমা কোথায় আছে, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। লোকমা রেডি করে ফেলেছেন, এমন সময় এমন সংবাদ আসছে, যেখানে লোকমা রেখে চলে গেছে, সেখানে গিয়ে খানা খেয়েছে। অতএব তার রিজিক কোথায় আছে, সে জানেনা। আল্লাহ জানেন।
৫. وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ কোন মানুষ কোথায় কিভাবে মারা যাবে এটাও আল্লাহ জানেন।
তো ঐ গোলাম তো বাচ্চার পেটে একটা ছুরি মেরেছে মেরে ফেলবে বলে। কিন্তু মউতের মালিক তো আল্লাহ। মা হাতে শুই-সুতো দিয়ে নাড়িভুঁড়ি গুলো বাচ্চার পেটের ভিতর দিয়ে সেলাই করে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তো আল্লাহ কুদরতি ভাবে তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন, ফলে বাচ্চাটা মরে নাই। যুবক তো সেখান থেকে পালিয়ে বহুদূর চলে গিয়েছিলেন, ওখানে গিয়ে অনেক ধনসম্পদের মালিক হয়ে গেছে। কারে কখন আল্লাহ কত সম্পদ দেবেন সেটাও আল্লাহ জানেন। বাড়িতে অনেক টাকা-পয়সা পাঠিয়েছে, বিরাট বড় রাজপ্রাসাদ বানিয়েছে। বাড়ির মুরুব্বিদের কাছে চিঠি লিখেছে, বাবা-মা, অনেক টাকা পাঠিয়ে দিলাম, বাড়ি-ঘর রেডি করেছি। আমার জন্য সুন্দরী একটা মেয়ে তালাশ করেন, যে আমার প্রাসাদের সাথে মানায় মুরুব্বীরা খুঁজে একটা মেয়ে বের করেছে, যে এলাকার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। বাড়ি আসার পর যুবকের সাথে তার বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে।
বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী যখন একসাথে হয়েছে, ঘুমানোর সময় স্ত্রীর পেটের দিকে তাকিয়ে দেখে পেটে বিরাট বড় একটা কাঁটা দাগ। জিজ্ঞেস করলো, তোমার পেটে এই কাটার দাগ দেখা যাচ্ছে কেন? এটা কিসের দাগ? তোমার কি কোন অপারেশন হয়েছিল? নাকি দুর্ঘটনা হয়েছিলো? মেয়ে মূল রহস্য বলছে যে, আমার জন্ম হওয়ার পর আমার মায়ের ক্রীতদাস-গোলাম আমার পেটে ছুরি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলো, ঐ দাগটা এখানে রয়ে গেছে। সে গোলামটা এখন কোথায় জানি না। সেতো আমারে মেরে ফেলার জন্য ছুরি মেরে ছিলো। কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। যুবকের তো এখন কৌতুহলী জেগেছে, তাহলে তো অনেক কিছুই জানার বাকি আছে। স্ত্রীকে বলল, বিবি, তুমি যদি সেই কন্যাই হয়ে থাকো, তাহলে আরেকটা সংবাদ শুনে নাও, যে গোলাম তোমার পেটে ছুরি মেরেছিলো, সে গোলাম হলাম আমি। আমি তোমাকে মেরেছিলাম। কিন্তু বিবি কেন মেরেছিলাম জানো? এক বুযুর্গ বলেছিলেন, তুমি নাকি ১০০ যুবকের সাথে যেনা-ব্যভিচার করবে। তাই রাগে তোমার পেটে ছুরি মেরেছিলাম। মহিলা তখন বলছে, যেহেতু সত্য জেনে গেছে, তাহলে বলে দিই। সে বলছে, হ্যাঁ, আমি সেই মেয়ে, যে ১০০ পুরুষের সাথে যেনা করেছি।
এবার যুবক বলছে, তাহলে তো তোমাকে এখন মারা যাবে না। কারণ আমি আরও একটা ভবিষ্যৎ বাণী তাঁর থেকে শুনেছিলাম। একটা তো সত্য প্রমাণিত হলো। আরও একটা দেখার বাকি। তিনি বলেছিলেন, তোমার মৃত্যুটা একটা মাকড়শারজাল কারণে হবে। সেটা কেমনে হবে দেখা দরকার। স্ত্রী বলছে, স্বামী, তওবার কারণে তো আর কোনো গুনাহ থাকেনা। আমি খালেস দিলে তওবা করে নিলাম। আপনি আমাকে আপনার বন্ধনে রাখুন। আল্লাহ তওবাকারীকে মাফ করে দেন, আপনিও আমাকে মাফ করে দেন। আর আপনার কাছে আমার আর্জি, আপনি আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে রাখবেন, যেখানে মাকড়শা যেতে পারে না। আপনাকে তো আল্লাহর ধন-দৌলত কম দেযননি।
স্বামী স্ত্রীর জন্য রাজপ্রাসাদের ছাদে কাচের গ্লাস দিয়ে সুন্দর একটা ঘর বানিয়ে দিলো। যেখানে কোন পোকা-মাকড় বা পিপীলিকা ঢোকার সুযোগ নেই। সেখানে নিজের বিবিকে রাখে। কিন্তু
إِذَا جَاۤءَ أَجَلُهُمۡ
কারণ মৃত্যু যখন এসে যাবে,
فَلَا یَسۡتَـٔۡخِرُونَ سَاعَةࣰ وَلَا یَسۡتَقۡدِمُونَ
এক সেকেন্ড পরেও আসবে না, এক সেকেন্ড আগেও আসবে না। মৃত্যু একদিন তার কাছেও এসে গেছে। স্বামী আর স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলো, জেগে হঠাৎ স্বামী তাকিয়ে দেখে ছাদের উপরে একটা মাকড়শা দেখা যাচ্ছে।
মরন থেকে যতই পালাও, মরণ তোমায় লইবে ঘিরি, যদিও শুধু আকাশ পানে, পালাও সেথাই লাগাই সিড়ি।
যতই পালাবেন মৃত্যু থেকে, পালানোর কোনো উপায় নাই। আপনার আমারও উপায় নাই মৃত্যু থেকে পালানোর। সবাইকে মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়াতে হবে। আল্লাহর এ কথাই বলেন, হে ঈমানদার, আমাকে ভয় করার মতো ভয় করো। সাবধান! মুসলমান না হয়ে তোমরা কিন্তু মৃত্যুবরণ করো না। তার মানে মৃত্যুবরণ করার আগে পুরোপুরি মুসলমান হয়ে যাও। আবার মৃত্যুটাকে আল্লাহ গোপন করে রাখলেন, কার মৃত্যু কখন হবে, কোথায় হবে, তাও কারো জানা নাই। তার মানে খবরটা শোনার সাথে সাথে এক্ষুনি তওবা করে পরিপূর্ণ মুসলমান হয়ে যাও। কখন? এখনই, এ মূহুর্তেই। এটার নাম মুসলমানী। যদি এই মৃত্যুর স্মরণ কারো থাকে, তাহলে এই অপরাধ, গুনাহ তার আর হবে না। মৃত্যু তার কাছে আসবেই।
স্বামী শুয়ে শুয়ে মাকড়সাকে দেখে স্ত্রীকে বলল, এই বিবি, আমি শুনেছি একটা মাকড়শার কারণে তোমার মৃত্যু হবে, এই ভয়ে কাঁচের ঘরে তোমাকে রাখলাম, কিন্তু ঐ যে মাকড়সা দেখা যায়। আমার মনে হচ্ছে, মাকড়শার কাছে তুমি নিরাপদ না। স্ত্রী বলে, কি বলেন? এই ছোট্র মাকড়শা আমাকে মারবে? এ রকম মাকড়শা তো কত মারলাম। এ রকম মাকড়শার বাসা তো লাঠি দিয়ে বাড়িয়ে কত ভাঙলাম! এমন দুর্বল একটা সৃষ্টির কাছে আমার মৃত্যু হবে। ভেবে হেসে দিয়েছে। হাসতে হাসতে হাতে একটা লাঠি নিয়ে নিজের হাতে মাকড়সার জালে বাড়ি দিয়ে ভাঙ্গতে গেছে।
কিন্তু সে তো জানে না ঐ মাকড়শা আর এই মাকড়শা এক না। আজরাঈল মাকড়সার রূপ ধরে এসে পড়েছে। মাকড়শার মাধ্যমে আল্লাহ তার মৃত্যু তার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মহিলা লাঠি দিয়ে গুতা দিয়ে মাকড়সার জাল মাটিতে ফেলে দিয়েছে। মাকড়শাকে মেরে ফেলেছে। রাগ-গোস্বায় ফেটে যাচ্ছে যে, আমার স্বামী বলে তোদের কাছে নাকি আমার মৃত্যু হবে। শুধু লাঠি দিয়ে মেরে ক্ষান্ত হয়নি, বরং নিজের পায়ের গোড়ালি দিয়ে পিষে ফেলছে। তাফসীরের কিতাবে এসেছে, মাকড়শার ভেতর থেকে কাটার মত একটা বিষাক্ত কাটা তার পায়ের ভেতর ঢুকে গেছে। সাথে সাথেই বিষের যন্ত্রণায় মহিলা মারা গেছে। মরণ থেকে পালিয়ে কাচের ঘরে গিয়েও কিন্তু কেউ বাচতে পারবেনা। মৃত্যু যখন কারো কাছে এসে যাবে, এসি লাগিয়ে রাখলেও কাজ হবে না, বাড়িতে দারোয়ান কয়েকটা লাগিয়ে পাহারা দিলেও ফেরাতে পারবে না। সকলের সামনে থেকে মায়ার বাঁধন ছেড়ে আপনাকে আমাকে নিয়ে যাবে।
আল্লাহর নবী বলেন, মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো। যারা বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করতে পারবে, তাদের জীবনের গুনাহ হবে না। এজন্য বুজুর্গরা চোখ বন্ধ করে মোরাকাবা করে করে মৃত্যুর কথা স্মরণ করেন। এজন্য রাসুলুল্লাহ সা. মৃত্যুর স্মরণ বেশি বেশি হওয়ার ইবাদতও শিখিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, মৃত্যুর স্মরণ হয় না? তাহলে জানাজার নামাজ পড়ো। জানাজা পড়লে মৃত্যুর স্মরণ হবে। আর কি করবে? মৃত মানুষের গোসল দাও। তাহলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে। আমাদের দেশের নিয়ম হলো, মানুষ মরে গেলে আমরা নিজেরা গোসল দেই না। অথচ বাবা মারা গেলে সন্তানের জন্য জরুরী বাবাকে ডলে-ঘষে গোসল দেবে। সন্তান মারা গেলে বাবা গোসল দেবে। তাহলে ঐ বাবার জীবনে গুনাহ হবে না। সন্তান পিতার লাশ গোসল দেবে। তাহলে সন্তান বাবার মৃত্যুর মাধ্যমে গুনাহ করতে পারবেনা।
অথচ আমরা কি করি? পুরো গ্রামের যত মানুষ আছে, তাদের লাশ মাত্র দুই-এক জন গোসল দেয়। আর এরা গোসল দিতে দিতে এদের রুহু মরে গেছে। এরা আরও দু’আ করে যে, আরেকটা মরে না কেন? তাহলে ৩/৪ শ টাকা পেতাম। এদের মউতের ভয় আসবে তো দূরের কথা, বরং গোসল দেওয়া এদের তিজারত বা ব্যবসায় পরিণত হয়ে গেছে, কবর খোঁড়া কিছু মানুষ ব্যবসায় পরিণত করেছে, কবর খুঁড়লে তাদেরকে টাকা দেওয়া হয়। এরা আরও দু’আ করে যে, আর একটা মরে না কেন? তাহলে তো ৩/৪ শ টাকা পেতাম। কিন্তু না। এটা সবার কাজ। সন্তান মারা গেলে বাবা সন্তানকে গোসল দেবে, মা ইন্তেকাল করলে কন্যারা গোসল দেবে, কন্যা যদি মারা যায়, তাহলে মা নিজে গোসল দেবে। আর চিন্তা করবে যে, আমার কন্যা তো চলে গেলো, এবার তো আমিও যাবো। তাহলে তো আর গুনাহ করা যাবে না। বাবা তার সন্তানের লাশ গোসল দেবে। আর ভাববে যে, সন্তান চোখের সামনে থেকে চলে গেলো, এখন আমিও তো চলে যাবো। তাহলে ঐ বাবা আর গুনাহ করতে পারবে না।
কিতাবে এসেছে, কোন মানুষ যদি মৃত ব্যক্তিকে ডলে-ঘষে গোসল দেয়, তাহলে ঐ হাত ৪০ দিন পর্যন্ত গুনাহ করতে পারবে না। আর যদি গোসল দিতে গিয়ে কোন বান্দা আজাব দেখে ফেলে, কেননা কখনো কখনো মৃত্যুর সময় পায়খানা-পেশাব বের হয়ে যায়, রক্ত বের হয়ে যায়, মুখ বাঁকা হয়ে যায়। যে ব্যক্তি গোসল দেবে, সে যদি নিজের হাত দিয়ে পায়খানা-পেশাবগুলো পরিস্কার করে, আতর-গোলাপ দিয়ে মেখে, বাঁকা মুখটা হাত দিয়ে টিপে টিপে সোজা করে দিতে পারে, আর বাহিরে এসে বলে, আলহামদুলিল্লাহ! কত সুন্দর মৃত্যু হয়েছে! এমন কোন কথা যদি কোন দিলওয়ালা বান্দা বলতে পারে, তার মানে হলো, আল্লাহর বান্দার মৃত্যুর সময়ের একটা দোষ গোপন রাখতে পারে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার ৭০ টা দোষ গোপন করে ফেলবেন। হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি বান্দার দোষ গোপন করবে হাশরের ময়দানে আল্লাহ তার দোষ গোপন করবেন এবং বিনা হিসাবে আল্লাহ জান্নাতে ঢুকিয়ে দেবেন। সুবহানাল্লাহ। এজন্য বুযুর্গরা শিখিয়েছেন, মৃত্যুর ইয়াদ (স্বরণ) হয় না? তাহলে মরা মানুষকে গোসল দাও। তাহলে তোমার মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে। জানাজার নামাজ পড়ো, মানুষের কবরে মাটি দাও, বসে বসে মৃত্যুর মোরাকাবা করো, কবর জিয়ারত করো, চোখ বন্ধ করে চিন্তা করো যে, ওখানে কেউ ঘুমিয়ে গেছে। ফুল নিয়ে কবরে যেতে হয় না বেটা, বরং কবরে গিয়ে চিন্তা করতে হয় যে, এখানে আমার মত অনেক মানুষ ঘুমিয়ে গেছে, তাহলে আমারও তো একদিন এভাবে ঘুমাতে হবে। এমন ফিকিরগুলো করার মাধ্যমে মৃত্যুর স্মরণ করো। যারা মৃত্যুর স্বরণ বেশি বেশি করবে, তাদের ঘুনাহ হবে না, তাদের মুসলমানিত্বের হিফাযত হবে। এজন্য আল্লাহ তাআলা বলেছেন, সাবধান! মুসলমান না হয়ে কিন্তু তোমরা মরো না। মুসলমানের মৃত্যু কিন্তু এরকম, কেউ যদি মরার আগে মুসলমান হয়ে যেতে পারে, তাহলে তাঁর মৃত্যু হবে কেমন? মায়ের কোলে সন্তান দুধ পান করতে করতে ঘুমিয়ে গেলে যেমন আরামে ঘুমিয়ে যায়, একটা মানুষ যদি মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে তার মৃত্যু এমন হবে যে, সে জান্নাতের বিছানায় কালেমা পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাবে। আর যদি মুসলমান না হয়, তাহলে কত কষ্ট হবে? কষ্টের একটা মৃত্যু তার হবে।
এক নেতা যিনা-ব্যভিচার করে, মরার ডর (ভয়) নাই। একদিন দরজা বন্ধ করে যিনার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে, এমন সময় নেতার ঘরে কে যেন আওয়াজ দিচ্ছে। এই, দরজা খোলো, দরজা খোলো। নেতা এক মেয়েকে উলঙ্গ করে যিনার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে। নেতা বলে কে? লোকটি বললেন, আমি ওমুক। বলে এখন সময় নাই, জরুরী কাজে ব্যস্ত আছি। চলে যাও। একথা বলে বিদায় হতে বলছে। কিছু সময় পর দরজায় দাঁড়ানো ব্যক্তি বলছে, আমি এমন এক আগন্তুক আসছি, যে কারো দরজায় থেকে আর ফেরত যাযই না। আমার নাম আজরাইল। দরজা না খুললেও আমি ঘরে ঢুকতে পারি। আজরাইলর আ. তো ঘরে ঢুকে দরজা খোলা লাগে না। হঠাৎ আজরাইল ঘরের মধ্যে ঢুকে নেতার মাথার চুল ধরে দাঁড় করিয়েছে এবং এমন অবস্থায় তার জান কবজ করেছে যে, কষ্ট আর কষ্ট। কেমন কষ্ট? কিতাবের মধ্যে আসছে, গুনাগারের রুহ যখন আজরাইল আ. বের করে নিয়ে যান, তখন তার জান টুকরা-টুকরা করে ছিড়ে বের করে আনা হয়।
আর যদি নেককার বান্দা হয়, তাহলে তার জান এত আরামের সাথে বের করে চলে যায়, কেমন যেন মায়ের কোলে ঘুমিয়ে যায়। ঐ যে এক মুসলমান কোথাও যাচ্ছেন, মাথায় তরকারির বোঝায। হঠাৎ সামনে একজন দাঁড়িয়ে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ। লোকটি বলেন, আপনি কে? কে আপনি সালাম দিলেন? আগন্তুক বলেন, আমি আজরাইল। নেককার মুসলমান মুচকি হেসে দিয়ে নিজের মাথার তরকারীর বোঝ মাথা থেকে নামিয়ে বলেন আজরাইল ভাই, আমি তো আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। কখন আপনি আমাকে নিতে আসবেন, আর আমি আমার আল্লাহর কাছে যাবো, এই অপেক্ষায় ছিলাম। আর আজরাঈল ভাই, আমি আমার তরকারির বোঝা নিচে নামিয়েছি, যেকোনো সময় আমার মৃত্যু হতে পারে, এজন্য আমি অযু করে ঘর থেকে বের হয়েছি। আজরাঈল ভাই, আমার এখনো ওজু আছে, আমার ঘাড়ের উপরে যে গামছাটা দেখছেন, এটা আমার জায়নামাজ। কোথাও নামাজের সময় হয়ে গেলে এটা বিছিয়ে আমি নামাজে দাঁড়িয়ে যাই।
আজরাইল ভাই, আমি ওযু করে ঘর থেকে বের হয়েছি। আর এই যে গামছাটা কিবলার দিকে বিছালাম। আমাকে দু’রাকাত নামাজ পড়ার ইজাজত (অনুমতি) চাচ্ছি। নামাজের ভেতরে আমি যখন মালিকের দরবারে সিজদায় পড়ে যাবো, আজরাইল ভাই, ঐ সময় সিজদার হালতে আপনি আমার জান বাহির করে নিয়ে যাবেন। আমি যে মুসলমান, আমার জিন্দেগীর কোন আমল যদি কবুল নাও হয়, তবে আমার মৃত্যুর চিত্র যদি সিজদার হালতে হয়, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে বলবো, হে আল্লাহ, আমি কিন্তু মুসলমান। তোমার কদমে থাকা অবস্থায় আমার মৃত্যু হয়েছে। আমার জীবনের কোন আমল কবুল না হলেও মৃত্যুর সময় সেজদার বরকতের তুমি আমাকে মাফ করে দাও।
আজরাইল এমন অবস্থায় তার জানটা বের করে নিয়ে গেছেন, আটার বস্তা থেকে চুল বাহির করা যেমন সহজ, মায়ের কোলে সন্তান ঘুমিয়ে গেলে যেমন সহজ, ঠিক এরকম ভাবে আল্লাহর বান্দা জায়নামাজে সিজদায় পড়া অবস্থায় জান্নাতের বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছে। এত আসানির (সহজে) আল্লাহ তা’আলা তার জানটা বের করে নিয়েছেন। আর যদি গুনাহগার হয়, তাহলে তার অনেক কষ্ট হয়।
কিতাবের মধ্যে এসেছে, ইদরীস পয়গম্বর যে শখ করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তার শখের মৃত্যুতেও কিন্তু অনেক কষ্ট হয়েছে। আজরাইল আ. আল্লাহর কাছে গিয়ে বলেন, হে আল্লাহ, তোমার ইদরীসকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে, আমি তার সাথে একটু বন্ধুত্ব করতে চাই। আল্লাহ তা’আলা বললেন, ঠিক আছে। যাও যদি বন্ধুত্ব হয়, তো হতে পারে। আজরাঈল আ. এসে ইদরীস আ. কে বললেন, হে ইদরীস, আপনার সাথে আমি বন্ধুত্ব করতে এসেছি। পায়গম্বর ইদরীস আ. বলেন, আমি যার-তার সাথে বন্ধুত্ব করি না। কিন্তু তুমি আজরাইল এসেছো, যেহেতু আমার সাথে দোস্তি করতে চাও, তাহলে আমার তিনটি শর্ত আছে, আমার শর্তগুলো পূরণ করলে, আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করবো।
এক নাম্বার শর্ত, তুমি তো আজরাইল। তুমি তো মানুষের জান কবজ করো। তাহলে আমাকে মৃত্যুর যন্ত্রণা কেমন সেটা একটু দেখাতে হবে। সেটা এভাবে যে, তুমি এখন আমাকে মারবে, মেরে মৃত্যুর কষ্টটা আমাকে দেখাবে। তারপর একটা শর্ত পূরণ হবে। আরও এমন দুটি শর্ত আছে। এরকম তিনটি শর্ত পূরণ করলে আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারি। বন্ধু বন্ধুর জন্য কি না করে? অতপর আজরাঈল আ. আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ, গিয়েছিলাম তো ভালো জায়গায়, কিন্তু সেখানেও ভেজাল। তিনি বলেন, তাকে মেরে মৃত্যুর যন্ত্রণা দেখাতে হবে, তারপর বন্ধুত্ব করবে। তাহলে তাকে কি মেরে দেখানো যায়? অনুমতি দিলে তাকে মেরে ফেলে একটু মৃত্যুর যন্ত্রণা দেখাই? আল্লাহ বললেন, যেহেতু সে দেখতে চাচ্ছে, ঠিক আছে তাকে মারো, মেরে আবার তার ভেতর রুহ ঢুকিয়ে দেবে। এবার আজরাঈল আ. তাঁর রুহ বের করে আবার ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এবার আজরাঈল আ. বললেন, মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করেছেন তো? বললেন, হ্যাঁ। আজরাঈল বললেন, তাহলে এবার দোস্তি হতে পারে তো? তিনি বললেন, না। আরও বাকি আছে। কি? বললেন, জাহান্নামের আগুন ও আজাব কেমন সেটা দেখাতে হবে। জাহান্নামের ঢুকাবেন আবার বের করে আনবেন। আজরাঈল বললেন, আল্লাহ সে তো এবার জাহান্নাম দেখতে চায়। আল্লাহ বললেন, ঠিক আছে। আজরাঈল আ. তাঁকে জাহান্নামে ঢুকিয়ে আবার বের করে আনলেন। ইদরীস আ. বললেন, আর একটা শর্ত বাকি আছে। কি? বললেন, জান্নাতের সুখ কেমন সেটা দেখতে চাই। জান্নাতে ঢুকাবেন, আবার বের করে আনবেন। আজরাইল আ. তাঁকে জান্নাতে ঢুকালেন। ঢুকানোর পর ইদরীস আ. বললেন, মৃত্যু মানুষের একবারই হয়, আর যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে সে তো আর বের হয় না। আমি আর বের হবো না। চলে যাও।
কিন্তু এই মৃত্যুতে ইদরীসের আ. কেমন কষ্ট হয়েছিলো জানেন? কেমন যেন একটা তাজা ছাগলকে যদি পিছনে দুই পা উপরের দিকে লটকিয়ে বা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, আর তাজা ছাগলের শরীর থেকে যদি তাজা চাড়মা টেনে টেনে খোলা হয়, এক টানে যদি চামড়া নাভি পর্যন্ত খোলা হয়, দ্বিতীয় টানে যদি গলা পর্যন্ত খোলা হয়, তৃতীয় টানে যদি গোটা চামড়া খোলা হয়, ঐ তাজা ছাগলটার যেমন কষ্ট হতে পারে,ইদরীসের আ. শখের মৃত্যুতে তার চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি কষ্ট হয়েছে। আর যদি বেইমান হয়, তার কষ্ট কেমন হতে পারে! বেইমানের মৃত্যুবরণ বড় ভয়ানক।
আর যদি কেউ মুসলমান হতে পারে, তার মৃত্যু বড় আসান হয়। এজন্য আল্লাহ তা’আলা বলছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২
মুসলমানদেরকে আল্লাহ বলছেন, হে ঈমানদারেরা, আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় করো, আর মুসলমান না হয়ে কিন্তু মৃত্যুবরণ করো না। এই আয়াত সামনে রেখে আপনাদের কাছে যে কয়েকটা কথা আমি বললাম, দোয়া করি, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে-আমাকে, সকলকে মৃত্যুবরণ করার আগেই মুসলমান হওয়ার তাওফীক দান করেন। আমীন!
আমার আলোচনার শুরু অংশে আমি বলেছিলাম, কিছু কাজ মুসলমানের বেশি বেশি করতে হবে। আমরা সে কাজগুলো করবো। ইনশাআল্লাহ। তার মধ্যে অন্যতম কাজ হলো, মৃত্যুর স্বরণ বেশি বেশি করা। কারণ কার মৃত্যু কখন, কোথায় হবে জানা আছে? নাই। তাই এখনই মুসলমান হওয়া দরকার। মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করলে কিন্তু আল্লাহর কাছে জাহান্নামী হিসেবে পেশ হতে হবে। যদি কালেমাওয়ালা মুমিনও হয়। কারণ ঈমানদারী আর মুসলমানীত্বের ভেতরে অনেক বড় গ্যাপ রয়েছে। ঈমানদারী তো কালিমা পড়ার নাম। মুসলমান হতে হলে পূর্ণাঙ্গ ইত্তেবা (আনুগত্যতা) লাগে, আল্লাহ যা যা করতে বলেছেন, তা তা করতে হবে। আল্লাহ যা যা ছাড়তে বলেছেন, তা সব ছেড়ে মুসলমান হতে হবে। আনুগত্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে একটা মানুষ হয় মুসলমান। আল্লাহ তা’আলা সেই আনুগত্যের মুসলমানী আমাদেরকে যেন দান করেন। আল্লাহ তা’আলা নামের মুসলমানিত্ব থেকে আনুগত্যর মুসলমানীত্বের দিকে আমাদেরকে অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দান করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কবুল করে নিন আমীন!
یہ جو کچھ ہوا یا رب تیرے کرم سے ہوا جو کچھ ہوگا تیرے کرم سے ہی ہوگا
وآخر دعونا ان الحمد لله رب العالمين