Home > খুতুবাতে আইয়ুবী দা.বা. > আল্লাহ তা’য়ালা ভালোবাসা চান:

আল্লাহ তা’য়ালা ভালোবাসা চান:

 

আল্লাহ তায়ালা ইরাদা (চাইলেন) কেউ তাঁকে ভালোবাসুক, কেউ তাঁকে বলুক যে, হে আল্লাহ, আমি আপনাকে ভালোবাসি এবং এ ভালবাসা প্রকাশ করুক। প্রেমিক চায় প্রেমিকা তাকে ভালোবাসুক, প্রেমিকা চায় প্রেমিক তাকে ভালোবাসুক। মা চায় সন্তান তাকে ভালোবাসুক, সন্তান চায় তার মা তাকে ভালোবাসুক। স্বামী চায় স্ত্রী তাকে ভালোবাসুক, স্ত্রী চায় স্বামী তাকে ভালোবাসুক। ভালোবাসার চাহিদা যেরকম সকলের ভেতরে আছে, ঠিক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ পাক বলেন, আমিও চাইলাম, ان احبب অর্থাৎ আমাকে কেউ ভালোবাসুক। আল্লাহ পাক বলেন, কে ভালবাসবে আমাকে? فخلقت الخلق অর্থাৎ আমি সৃষ্টি বানালাম। আমার সৃষ্টির সবাই আমাকে ভালবাসবে। একারণে আল্লাহ পাকের যত সৃষ্টি আছে, যা কিছু আল্লাহপাক বানিয়েছেন সকল মাখলুক আল্লাহকে ভালোবাসে। এজন্য মানুষ যেহেতু শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সেহেতু আল্লাহ পাক চান মানুষের ভালোবাসা হবে তীব্র।

والذين آمنوا اشد حبا لله

নরমাল ভালোবাসা যেটা, এটাতো পশুপাখির ভেতরেও আছে। সকল প্রাণীরা আল্লাহকে ভালবাসে এবং তারা তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে এবং আল্লাহ পাকও সকল প্রাণীকে ভালোবাসেন। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা হবে আল্লাহর জন্য সর্বোচ্চ। সুতরাং মানুষের ভালোবাসা যেহেতু তীব্র, শ্রেষ্ঠ। সরহেতু আল্লাহ পাকও মানুষকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসেন। একারণে সকল প্রাণীকে মিলে যাকে ভালবাসে তার জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করা সৃষ্টিকুলের জন্য আল্লাহ পাকের শরিয়ত করে দিয়েছেন। এর জন্য সকল মাখলুকের শরীয়ত হলো, আল্লাহর ভালোবাসা মানুষের খেদমতের মাধ্যমে প্রকাশ করে। কিন্তু মানুষের ভালবাসার স্টাইল সর্বোচ্চ সুন্দর। এজন্য মানুষ আল্লাহর ভালোবাসা ইবাদতের মাধ্যমে প্রকাশ করে। কিন্তু সব প্রাণীরাই আল্লাহ পাককে ভালোবাসে, আল্লাহও সকল প্রাণীদেরকে ভালোবাসেন এবং সকল প্রাণীরা তাদের ভালোবাসা প্রকাশও করে,

يسبح لله مل في السموات وما في الارض

সৃষ্টিকুলের ভেতরে যা কিছু আছে, এরা সবাই মিলে আল্লাহ পাককে ভালোবাসে, আসমান-যমীন এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, সকলে মিলে আল্লাহর ভালোবাসার তাসবিহাতের মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং ওরা সকলেই আল্লাহ পাকের নামের যিকির করে। সুবহানাল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহু আকবার। এই যেমন আমরা আল্লাহর ভালোবাসায় আল্লাহর নাম নিলাম, সব প্রাণীরাই এরকম আল্লাহ পাকের নামের তাসবিহ জপে।

হাদিসে পাকে আছে, বুখারিতেও আছে, জনৈক নবী-পয়গম্বর শুয়ে ঘুমাচ্ছেন, আরাম করছেন। তো উনাকে একটা পিপড়া কামড় দিয়েছে। কিছু পিপড়ার কামড়ে বিষ আছে। কালো পিপড়া কামড় দেয় না, কিন্তু লাল পিপড়া কামড় দেয়, ব্যথা পাওয়া যায়। আরও বিষাক্ত কিছু বড়সড় পিপীলিকা আছে, জঙ্গলের পিপীলিকা আরও বেশি বিষাক্ত। ওরা কামড় দিলে ফুলে যায়, রক্ত জমে যায়। কিছু কিছু পিপিলিকার মুখের সামনের ভাগে ধারালো দুটো কেচি আছে। ওরা যদি ভালো করে ধরে, তাহলে চামড়া কেটে যায়।

নবী পয়গম্বর তিনি আরাম করছেন, তো পিপীলিকা তাঁকে কামড় দিয়েছে, ফুলে বেদনা হয়ে গেছে। পয়গম্বর গায়ে ব্যথা পেয়েছেন। সকলের মেজাজ তো আর একরকম থাকে না। ঐ পয়গম্বর তো গরম এজন্য ক্ষেপে গেছেন। সব রকমের মানুষের মেজাজ একরকম না। কিছু মানুষ আছে নরম, কিছু মানুষ আছে গরম। মুমিনের ভেতরেও কিছু গরম মানুষ আছেন। নবীদের ভেতরেও কিছু মানুষ আছেন, সাহাবায়ে কেরামের ভেতরেও কিছু গরম মানুষ আছেন। নবীদের ভেতরেও কিছু গরম মানুষ আছেন, যেমন মুসা আ. গরম পায়গম্বর। থাপ্পড় দিয়েছেন, তো মানুষ মরে গেছে। সাহাবীদের ভেতরেও কিছু গরম মানুষ আছেন। যেমন হযরত ওমর রা. গরম। উনি যে পথে চলতেন, সে পথে শয়তানও যায় না।

তো ঐ পয়গম্বরের মেজাজ যেহেতু কড়া-গরম, সেহেতু পিপীলিকা কামড় দেওয়ায় রাগান্বিত হয়ে সকল পিপীলিকার বাসাসহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ পাক সাথে সাথে পয়গম্বরের কাছে ওহী পাঠিয়েছেন, ‘তোমাকে কামড় দিয়েছে একটা পিপিলিকা, আর তুমি هلكت الامة অর্থাৎ একটা পিপীলিকা তোমাকে কেটেছে, কামড় দিয়েছে, আর তুমি পুরা পিপীলিকার বাসাসহ জ্বালিয়ে দিলে? অথচ ওরা আমার নামের তসবিহ জপছিলো। সুবহানাল্লাহ।

মনে করেন, আক্রমণ করেছে একজন। আর রাগ করে গ্রামসহ জ্বালিয়ে দিয়েছে। ঠিক তেমন অপরাধ করেছে একটা পিপীলিকায, আর জ্বালিয়ে দিলেন সকলকে। অথচ তারা আল্লাহর নামে যিকির করছিলো। হাদিসে পাকে আছে, পয়গম্বর এত শরমিন্দা (লজ্জিত) হয়েছেন যে, এই লজ্জায় দুইশত বছর পর্যন্ত তিনি কেঁদেছেন, যে আল্লাহ নামের জিকিরকারী একদল পিপীলিকাকে তিনি জ্বালিয়ে দিয়েছেন। এমনি তো ফিহকের কিতাবে আছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কোন বিষাক্ত প্রাণী যেমন সাপের উপর রাগ করে লেজ ধরে চুলার মধ্যে দিয়ে পোড়ানো হারাম। কেউ জ্বালানো নিষেধ,হারাম। তাহলে মানুষের ঘর জ্বালানো কিভাবে জায়েজ হয়?

বাঘ-সিংহ হিংস্র তবুও তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারা জায়েজ নাই। কারণ আগুন দিয়ে আল্লাহ পাক তাকেই পোড়াবেন, যার ভেতরে আল্লাহর মহব্বত নেই। অথচ আল্লাহ সকল মাখলুকের মধ্যে আল্লাহর মহব্বত আছে। সে প্রাণীটা যদি নাপাকও হয়, তারপরেও তার ভেতরে, আল্লাহর মহব্বত আছে। এ কারণেই তো নাপাক কুকুরকে কেউ পানি পান করিয়েছেন, তো আল্লাহ পাক তাঁকে যিনার গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন।

বুখারী শরীফে হাদিস আছে, এক মহিলা রাস্তা দিয়ে চলছেন, তো দেখতে পেলেন যে, একটা পিপাসিত কুকুর পিপাসায় কাতর হয়ে জিহ্বা বের হয়ে আছে। অথচ এ কুকুরটা এমন একটা প্রাণী,  যেটা ঘরে থাকলে রহমতের ফিরিস্তা ঘরে ঢোকেন না, যে কুকুরের গায়ে কাপড় লাগলে ঐ কাপড় পড়ে নামাজ চলে না, যে কুকুর কোনো পানির বর্তনের ভেতরে মুখ দিলে, বর্তন পাক করার জন্য ৭ বার না ধুলে পাক হয় না। এমন এক নিকৃষ্ট প্রাণীকেই ঐ মহিলা দরদ করে ফেলেছেন। পানি কিভাবে, কোত্থেকে তুলবে? নিজের পায়ের মোজাটা বালতি বানিয়ে, গায়ের উড়না চিরে এটাকে রশি বানিয়ে ওড়নার ভেতর বেঁধে  অপরপ্রান্ত হাতে রেখে, পায়ের মোজা কূপের ভেতরে নামিয়ে পানি উত্তোলন করে মহিলা একটা নাপাক প্রাণী কুকুরের জন্য মহব্বত প্রকাশ করে  পানি পান করিয়েছেন। আরশের মালিক আল্লাহ তাঁর উপর এত খুশি হয়েছেন যে, আল্লাহ পাক তাঁর জিন্দেগীর যিনার সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

নাপাক প্রাণীর উপর রহম করাটাও ইবাদত হয়ে গেছে। এজন্য নবীজি সা. হাদিস বলেন,

ارحموا من الخ

অর্থাৎ যমীনের উপরে যারা আছে, তাদের সাথে মহব্বতের ও রহমের আচরণ করো, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তোমার উপর রহম করবেন। একটা পিঁপড়ার ভেতরেও আল্লাহর মহব্বত আছে। আর এই মহব্বতগুলোই হলো বেলায়াত। মহব্বতের খাজানা যখন কারো হৃদয় হয়ে যায়, তখন তার নামটা বেলায়েতের দপ্তরে চলে যায়, ওলী-আউলিয়ার দপ্তরে চলে যায়। আল্লাহ পাক চাইলেন আল্লাহ পাককে কেউ ভালোবাসুক। এজন্য এ সৃষ্টি জগৎ তিনি বানিয়েছেন। এ কারণে আল্লাহ পাকের মহব্বত সকল প্রাণীরাই প্রকাশ করে। শুধু আল্লাহর মহব্বত প্রকাশ করেনা, বরং নবীদের মহব্বতও প্রাণীর ভেতরে আছে। নবীজির কাছে প্রাণীরাও এসেছে, জঙ্গলের প্রাণীও নবীজির সা. মহব্বত প্রকাশ করেছে, হায় আফসোস! ইনসান হয়ে নবীর সা. মহব্বত প্রকাশ করো না? পিপড়ায়ও আল্লাহর মহব্বত প্রকাশ করেছে  মানুষ হয়ে, আল্লাহর মহব্বত করতে পারোনা? গরু-ছাগল উটের ভেতরেও আল্লাহর মহব্বত আছে, তোমার ভেতরে আল্লাহর মহব্বত নাই? তাহলে মনে রাখো-

اولئك كالانعام الخ

অর্থাৎ তুমি চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও খারাপ। কারণ প্রাণীর ভেতরেও আল্লাহর মহব্বত আছে, নবীর মহব্বতও আছে। হাদিসে পাকে ওয়াকিয়া (ঘটনা) এসেছে, شكاية الجمل তথা উটের অভিযোগ।  নবীর সা. সামনে উট এসে হাজির হয়ে গেছে। উট তার মাথাটা জমিনে ঠুকাচ্ছে আর চোখ বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। আল্লাহর নবীর সা. সাথে কথোপকথন হয়ে গেছে। আজব নবীর উম্মত আপনি-আমি। যে নবী উটের জন্যও রহমত, যে নবী পিপিলিকার জন্যও রহমত, যে নবী বনের বাঘের জন্যও রহমত, গাছের জন্যও রহমত-

وما ارسلناك الا رحمة للعالمين

আপনার-আমার নবীকে আল্লাহ পাক বিশ্বনবী বানিয়েছেন, সারা জাহানেরও নবী বানিয়েছেন, কায়েনাতের (সৃষ্টিকুলের? রহমত বানিয়েছেন, নবীদেরও নবী বানিয়েছেন, যমীন-আসমানেরও নবী বানিয়েছেন।এজন্য নবীর মহব্বত আকাশের চাঁদের ভিতরেও আছে। আঙ্গুল ইশারা করেছেন, তো চাঁদ নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে,

وانشق القمر

অর্থাৎ চাঁদ সাথে দুই টুকরো হয়ে গেছে। নবীজির সা. মহব্বত উটের মধ্যেও আছে। আল্লাহর প্রতি মহব্বত এটা ঈমান, নবীর সা. প্রতি মহব্বত এটাও ঈমান।

لا يؤمن احدكم حتي

মানুষের দিলেও নবীর সা. মহব্বত থাকবে। শুধু  মিষ্টি খাওয়ার মহব্বত নয় কিন্তু। সর্বোচ্চ মহব্বত থাকতে হবে। কারণ নবীর সা. প্রতি মহব্বত উটের ভেতরেও আছে। নবীজির সা. মহব্বত পাখির ভেতরেও আছে, নবীজি সা. পাখির জন্যও রহমত, পিঁপড়ার ভেতরেও নবীর সা. মহব্বত আছে।

আল্লামা জালালুদ্দিন রুমী রহ. লেখেন, সাগর পাড়ের এক পিঁপড়া আল্লাহকে ডেকে বলছেন,

ساحل سے لگا دے میرے عشق کا سفینہ
یا رب دکھا دے مجھے مکہ اور مدینہ

তো পিপড়ার মধ্যেও নবীর সা. মহব্বত আছে।

তো উট নবীজির সা. কাছে এসে শেকায়াত (অভিযোগ) করছে, হে আল্লাহর নবী, আমার মনিব (মালিক) আমাকে খাবার কম দেয়, অথচ কাজ বেশি নেয়। সে আমার উপরে জুলুম করছে। আল্লাহর নবী সা. বললেন, উটের মালিককে ডেকে আনো। মালিককে হাজির করা হলো। আল্লাহর রাসূল সা. বললেন, এই, ইনসাফ করো। সে তো আল্লাহর পিয়ারা। সে আল্লাহকে ভালবাসে, আল্লাহও তাক ভালবাসেন। তার উপরে জুলুম করো না। তার সাথেও ইনসাফ করো। এ কারণে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, কোন প্রাণীর বদ দু’আ নিও না। ইনসানের বদ দু’আ তো দূরের কথা, গরু-ছাগল, পাকপাখালির বদ দু’আও জিবনে গ্রহণ করো না। এমনকি কোন গবাদি পশুকেও কখনো কষ্ট দিওনা।

কারণ মানুষকে কষ্ট দিলে তো মাপ নেওয়া সহজ। কারণ তোমার ভাষা মানুষ বুঝবে, তার ভাষা তুমি বুঝবে।  কিন্তু বোবা জানোয়ার প্রাণীকে যদি তুমি কষ্ট দাও, তাহলে কখনো তোমার বুঝে আসলেও তুমি তাকে তোমার ভাষা বোঝাতে পারবে না। আর তার ভাষা তুমিও বুঝবে না। এ জন্য গরুকেও কেউ কষ্ট দিতে নেই। কিছু গৃহস্থ আছে, যারা গরুকে কাজ করাতে করাতে হাড্ডি বের করে ফেলে। এদেরও একটা বিচার হবে। ইনসাফ করে নাই সে। তবে এগুলোর বিচার দুনিয়ায় ঘটে যায়। কেউ যদি প্রাণীকে খুশি করে নেয়, তাহলে দুনিয়ায় পুরস্কার পেয়ে যায়। আর যদি প্রাণীকূলকে কষ্ট দিয়ে দেয়, তাহলে দুনিয়ায় সাজা পেয়ে যায়। কিন্তু ওদেরকেউ কষ্ট দেওয়া নিষেধ।

এজন্য হাদীস শরীফে আছে, সাহাবায়ে কেরামের জামা’আত নিয়ে আল্লাহর নবী সা. চলছেন। পাখির ঝাঁক থেকে একটা পাখির কিচির মিচির আওয়াজ দিততে দিতে পাখির জামা’আত থেকে আলাদা হয়ে সাহাবীর মাথার উপরে উড়ছে। নবীজি সা. পাখির দিকে তাকিয়েছেন। তিনি তো পাখির জন্যও রহমত। আল্লাহর নবী সাহাবীদের জামাতকে লক্ষ্য করে বললেন, এ জামাতের মধ্যে কেউ কি এই পাখির বাচ্চা এনেছো নাকি? নওজোয়ান এক সাহাবী চাদরের নিচ থেকে পাখির বাচ্চাটা বের করে বলেন, হে আল্লাহর নবী, আমি এনেছি, দেখেন এটা কত সুন্দর! আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, তুমি মায়ের কাছ থেকে সন্তানকে আলাদা করে মাকে কষ্ট দিয়েছো। শোনো! ওদেরকে কষ্ট দিও না। ওরা আল্লাহর নামের তাসবীহ জপে। আল্লাহু আকবার।

يسبح لله مل في السموات وما في الارض

অর্থাৎ এই এতদুভয়ের ভেতরে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর নামের তাসবীহ জপে। পাখ-পাখালিরাও আল্লাহর নামের তসবি জপে। ওদেরকে কষ্ট দিও না। মায়ের থেকে সন্তানকে আলাদা করেছো। যাও দ্রুত সন্তানগুলোকে মায়ের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসো। রহম করো, তো আসমানের মালিক আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করবেন। কারণ প্রাণীর দীলের ভেতরেও আল্লাহর মহব্বত আছে, নবীর মহব্বতও আছে, এমনকি কা’বার মহব্বতও আছে। এ কারণে আবরাহার বাদশা যখন বায়তুল্লাহ ভাঙার জন্য এসেছে, তখন এ কা’বার হিফাযত আল্লাহ মানুষ দিয়ে করেননি, সেদিন আল্লাহ এক ঝাঁক পাখি পাঠিয়ে কা’বাকে আল্লাহ হিফাযত করেছেন।

الم تر كيف فعل الي ابابيل

অর্থাৎ আবাবিল পাখি পাঠিয়েছেন। তাদের ভেতরেও কা’বাব মহব্বত আছে। কিন্তু হার (প্রত্যেক) জামানায় কা’বার মহব্বতের মুমিনের বড় অভাব। এখন তো কেউ কেউ কা’বা ছেড়ে বাবা ধরেছে। ওদের কা’বা লাগে না। বাবাই ওদের কা’বা। দয়ালবাবা কেবলা কাবা। যে বাবাকে ধরলে কা’বার প্রেম অন্তরে ঢোকে না, আল্লাহর মহব্বত অন্তরে প্রবেশ করে না, নামাজের প্রেম ঢোকে না, সেটা বাবা নয়, সেটা শয়তান। তবে দুনিয়াতে কিছু লোক আছে, যাদের কাছে গেলে কা’বাহারাদের অন্তরে কা’বার প্রেম ঢুকে যায়। তারা সাদিকীন, আউলিয়াউ আল্লাহ। তাদের কাছে গেলে যারা কা’বা ভুলে গিয়েছিলো, তারা কা’বা মুখী হয়ে নামাজী হয়ে যায়। তার সাদিকীন, আল্লাওয়ালা, আল্লাহর পিয়ারা বান্দা।

আল্লাহর পিয়ারা বান্দাদের বড় দাম। আল্লাহর দেওয়া দীলে মহব্বত নিয়ে, আল্লাহর দেওয়া যবানে মহব্বতের সাথে যারা ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ করে, মাওলা খোঁজে তাদের বড় দাম। কত দাম? হাদিসে পাকে এসেছে, لا تقوم الساعة কেয়ামত সংঘটিত হবে না। কতক্ষণ পর্যন্ত? যতক্ষণ এ যমীনে বসে বসে একজন আল্লাহর আশেক ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলবে, আল্লাহর মহব্বত প্রকাশ করবে, আল্লাহর নামের জিকির করবে, এমন একজন মানুষ যমীনের উপরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ কেয়ামত সংঘটিত করবেন না। একজন আল্লাহর আশেক মানুষের এত দাম যে, একজন মানুষের জন্য আসমান-জমিন মালিক সবকিছু ঠিক রাখবেন। আল্লাহু আকবার! তবে শর্ত হলো, মানুষটি আল্লাহর প্রেমের আশেক হতে হবে।

তুমি কেমন মুসলমান! পাখির ভেতরে আল্লাহর প্রেম আছে, তোমার ভেতরে নেই। উটের ভেতরে, গাছের ভেতরে নবীর সা. প্রেম আছে, তোমার ভেতরে নাই, তুমি কেমন মুসলমান! পাখপাখালির ভেতরেও কা’বার মুহাব্বত আছে, কিন্তু তোমার ভেতরে প্রেম নাই। তুমি কেমন মুসলমান! তাহলে তুমি নামের মুসলমান মাত্র, হাকিকতে (বাস্তবে) তুমি মুসলমান নও। তুমি নেতা ইশারা বোঝো, দলের নির্দেশনা বোঝো, কিন্তু আল্লাহর নির্দেশনা তুমি বোঝো না, নেতার সন্তুষ্টি বোঝো, নবীর সন্তুষ্টি তুমি বোঝোনা, তুমি ভূয়া মুসলমান। অথচ হাইওয়ান-জানোয়ারেও নবীর মানশা (ইচ্ছা) বুঝেছে, পশুপাখিরাও নবীর মানশা বুঝেছে, নবীর ইচ্ছা বুঝেছে, তারা নবীর সা. ইচ্ছা বাস্তবায়ণ করে দিয়েছে।

আল্লাহর নবী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে গিয়েছেন। মদিনায় সরওয়ারে দু’আলম নবীর সা. কদম রেখেছেন, তো মদিনায় চাঁদ উঠে গেছে।  বাচ্চারা গান গেয়েছে-

طلع البدر علينا الخ

বাচ্চারা নবীর আগমনের গান গাচ্ছেন, সারোয়ার দু’আলম নবী সা. মাদীনায় ঢোকার সাথে সাথে তাঁকে ঘরে নেওয়ার জন্য সবাই পাগল হয়ে গেছে। নবীজির সা. কাপড়-হাত, গায়ের চাদর-জামা ধরে ছোট ছোট বাচ্চারা টানছে আর তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করছেন। আর বলছেন, ছারকার, আমাদের ঘরে চলেন। এত আশেক নবী সা. কেমনে থামাবেন? ফলে নবীজি সা. বললেন, এটা আমার উট, যার উপর সওয়ার হয়ে আমি মাদীনায় এসেছি, আমার এ উটটাআমি ছেড়ে দিলাম, উটটা যার বাড়ির সামনে গিয়ে থামবে, সেটা হবে আমার থাকার জায়গা। আজীব এক নুকতা (সুক্ষ কথা) নবীজি সা. একটা উটকে বললেন, এটা আমার উট। তুমি চক্ষু বন্ধ করে ভাবো তো, তোমাকে নবীজি সা. কি বলবেন যে, এটা আমার উম্মত? তোমাকে-আমাকে যদি নবীজি সা. এটা নাই বলেন, তাহলে তোমার আমার চেয়েও বড় কপাল পোড়া এ মাটির উপরে আর কে আছে? কি ব্যর্থতা যে, উট নবীর সা. প্রতি এত পরিমান ভালোবাসা দেখিয়েছে যে, সে সফল হয়ে গেছে, কিন্তু তুমি-আমি বিফল হয়ে গেলাম।

প্রসঙ্গ-কথা, সাহাবায়ে কেরাম তো নবীজির সা. আঁচল ধরে টেনেছেন, তোমরা কার আচল ধরে টানবা?

انما العلماء ورثة الانبياء

অর্থাৎ আখেরী যামানায় কেয়ামত পর্যন্ত নতুন করে নবী হয়ে, মদিনার হেলাল হয়ে কেউ আসবে না। তবে কিয়ামত পর্যন্ত একদল মানুষ এই যমীনে আসবে, যারা ওরাসাতুল আম্বিয়া, আল্লাহর মনোনীত বান্দা, যাঁদের সীনা ইলমের খাজানা বানিয়ে আল্লাহ হেফাজত করছেন। যাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভেতরে ইবাদতের রং লাগিয়ে আল্লাহ আল্লাহর গোলামের রং হিফাযত করছেন। এ মানুষগুলো হলেন, নায়েবে নবী। হায়রে কপাল পোড়া মুসলমান! যে মৌলবীদের আচল ধরে, হাত ধরে টানা দরকার ছিল যে, চলেন আমার ঘরে বসেন, আমার ঘরে একটু বরকত দিয়ে যান, সেই মৌলবী, সেই হাফেজে কুরআনকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে! কে বলেছে তোর নাম মুসলমানের খাতায় আছে? এদের সম্মান তো হাশরের ময়দানেও হবে। তাঁরা শাফাআতকারী হবেন। জাহান্নামীদেরকে বের করে করে জান্নাতে নেবেন।

নবী সা. যেমন জাহান্নামী উম্মতকে বের করে জান্নাতে নেবেন, তেমনিভাবে হাফেজে কুরআন ও আলেমরা শাফাআতকারী হবে, জাহান্নাম থেকে মানুষ বাহির করবে। উচিৎ তো ছিল, তাদেরকে দিয়ে টানাটানি করা। কিন্তু কি এক যুগ আসলো, যমীনর আলেমের রক্ত ঝরতে দেখা যায়। মুসলমানের হাতে আলেম শহীদ হয়ে যায়। আজব যুগ! ফিৎনার চূড়ান্ত রুপ প্রকাশ পাচ্ছে। ঐ জাতীর কপাল পুড়ে যায়, যে জাতী আলেমের ইজ্জত ভুলে যায়। তাদের তাক্বদীর পুড়ে যায়। আলেম-উলামা শ্রদ্ধার পাত্র, তাদেরকে মহব্বতের দুলহান বানিয়ে রাখতে হবে।

নবী তো দুলহান। মাদীনায় নবীকে সা. নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। সবাই তাঁকে ঘরে নিতে চায়। আল্লাহর রাসূল সা. বললেন, আমাকে নিয়ে তোমরা টানাটানি করো না। আমার এ উটটি ছেড়ে দিলাম, যাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে বসবে, সেটা আমার বাড়ি, সেখানেই আমি থাকবো। আল্লাহ রাসুল উট ছেড়ে দিলেন। উটটি যেই সাহাবীর বাড়ির সামনে দিয়ে যায়, সেই ইশারা দেয় যে, এই বাড়ির সামনে বসে পড়ো না। কিন্তু সে জানে কোথায় গিয়ে বসতে হবে, কিন্তু তুমি বুঝোনা কোথায় বসতে হবে। কোন জায়গায় দাঁড়াতে হবে উট বোঝে, কিন্তু ঈমানদার, কোথায় গিয়ে তোমাকে দাঁড়াতে হবে, তুমি বোঝোনা। কিন্তু উঠের ভেতর এ যোগ্যতা আছে, ঐ যোগ্যতার কারণে আল্লাহ উটটি জান্নাতে দেবেন।

কিছু প্রাণী আল্লাহর জান্নাতে যাবে, তার মধ্যে নবীজির সা. ناقة অর্থাৎ এ উটটিও আল্লাহর জান্নাতে যাবে। সালেহ আ. এর উটনি আল্লাহর জান্নাতী। হুদহুদ পাখি আল্লাহর জান্নাতী, সুরাতুল বাকারায় যে গাভীর বর্ণনা এসেছে, সেটাও জানাতী, সুলাইমান আ. এর সাথে আলাপচারিতায় মগ্ন পিপিলিকাও জান্নাতী। কিছু কিছু প্রাণীও তো জান্নাতে যাবে, কিন্তু জান্নাতের সনদ নিয়ে জন্মিয়েও কিছু কপাল পোড়া জাহান্নামে যাবে। কালিমার সনদ নিয়ে জন্মেছে, কিন্তু কালেমার সম্মান রক্ষা করেনি। কালেমা ওয়ালার ঘরে জন্মেছে, কিন্তু আল্লাহর মহব্বত দীলে রাখেনি, নবীর উম্মতের পরিচয় নামের শুরুতে মুহাম্মদ নিয়ে জন্মেছে, কিন্তু মোহাম্মদের আদর্শ ধরেনি, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. এর আদর্শিক উম্মতের আদর্শিক খাতায় নিজের নাম নেয়নি। ঠিকানা হয়ে যাবে জাহান্নাম। কিন্তু উট নবীজির সা. ইচ্ছা বুঝেছে। এজন্য তার জায়গা হবে আল্লাহর জান্নাত। উট চলছে। যেতে যেতে হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর রা. বাড়িতে গিয়ে বসে পড়েছে। একেবারে নবীজিকে সা. নবীজির সা. বাড়ি নিয়ে গেছে।

হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর রা. বাড়ি এটা সেই বাড়ি, যেটা ইয়ামানের বাদশা তুব্বা মদিনার উপর যাওয়ার সময় তাওরাত খুললে তাওরাতের আলেমরা বলেন, বাদশা, এই মাদীনা বড় দামি মাদীনা, এখানে বিশ্ব পয়গম্বরের কবর হবে, এখানে জান্নাতের মাটি আছে, এ মাদীনায় মসজিদুন নববী হবে, সারোয়ারে দু’আলম নবীর সা. বাসস্থান হবে, মক্কার লোকদের অত্যাচারের হাবিবে কিবরিয়া হিজরত করে এ মাদীনায় আসবেন, বাদশা তুব্বা বলেন, তাহলে আমি ঐ নবীর সা. জন্য কিছু হাদিয়া রেখে যেতে চাই। দোতলা বাড়ি নির্মাণ করতে তিনি সেখানে আকামত (অবস্থান) করলেন। ইতিহাস বলে, এটা সেই তুব্বা বাদশার বানানো হাদিয়ার বাড়ি। যার নেমপ্লেট পর্যন্ত মাটির নিচে সংরক্ষিত পাওয়া গেছে, যেটাতে তুব্বা লিখে গেছেন, বিশ্বনবী, হাবিবে কিবরিয়ার জন্য তুব্বার পক্ষ থেকে এটা হাদিয়া দিলাম। উট নবীর ইচ্ছা বুঝছে, চিনছে, আল্লাহর ফায়সালাও বুঝছে। আবু আইয়ুব আনসারীর রা. বাড়িতে গিয়ে উট বসে গেছে। নবীজি সা. উক্ত বাড়িতে উঠে গেছেন। এই জামানায় নবীয়ে পাকের সা. মানশা বুঝা, ইসলামকে বুঝা, অথবা আল্লাহ পাকের মহব্বত প্রকাশ করার মুমিনের তো বড় অভাব। অথচ এই মহব্বতগুলোর মজমা (সমষ্টি) যতদিন পর্যন্ত নিজেকে কেউ না বানাবে, ততদিন পর্যন্ত কেউ আল্লাহর পিয়ারা হতে পারবে না।

তবে কেউ যদি দুনিয়াতে আল্লাহর মহব্বতের মালিক হয়ে যায়, নবীর সা. মহব্বত, কা’বার মহব্বতের মালিক, কুরআনের মহব্বতের মালিক, সুন্নতের মহব্বতের মালিক হয়ে যায়, এ সকল মহব্বতগুলো যার ভেতরে এসে যায়, শাইখুল ইসলাম রহ. বলেন, তার নামটা আসমানে ওলীর দপ্তরে উঠে যায়, সে আউলিয়াউ আল্লাহ হয়ে যায়। আর আল্লাহ পাক আমাদেরকে ওলী হতে নির্দেশ করেছেন।আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, ভালো করে জেনে রাখো, শুধুমাত্র তাদের চিন্তা ও ভয় নেই যারা আল্লাহওয়ালা-

الا ان اولياء الله

অর্থাৎ কেউ আউলিয়া আল্লাহ হয়ে যায়, তার কোন ভয় ও চিন্তা নেই। গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে, কিন্তু চিন্তা পেরেশানি এখনও যায়নি, ভালো চাকরি পেয়েছে, কিন্তু টেনশন ফ্রী হয়নি, বড় বাণিজ্যিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমডি, স্বত্বাধিকারী হয়েছে, কিন্তু তার টেনশন দূর হয়নি। কিন্তু কেউ যদি আউলিয়া আল্লাহর দলে ঢুকে যায়, তার কোন ভয় নেই, কোনো চিন্তা নেই। তার ভয় ও চিন্তা শেষ হয়ে গেছে। আউলিয়া আল্লাহ হওয়ার জন্য হৃদয়ের মহব্বত রাখবে আল্লাহর। আমাদের মালিক আল্লাহ। আল্লাহর নাম যত জপবেন, তত দীলের মধ্যে আল্লাহর মহব্বত বাড়তে থাকবে।

আল্লাহর মহব্বত অন্তরে বাড়ানোর উত্তম মাধ্যম হলো, যিকরুল্লাহ। যত বেশি জিকির করবেন, দীলে তত আল্লাহর মহব্বত বাড়বে। আল্লাহর মহব্বত বোঝা যাবে কেমনে? আল্লাহর মহব্বত তার ভেতরে আছে, যার ভেতর আল্লাহ পাকের মহব্বতের রং ফুটবে। আল্লাহর গোলামীর কাজ তার পছন্দের কাজ হয়ে যাবে, নামাজ পড়া তার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ হয়ে যাবে, কুরআন শরীফ, জিকির করা, রোজা রাখা তার জন্য শ্রেষ্ঠ কাজ হয়ে যাবে। অতএব আল্লাহর মহব্বত শেখার জন্য আল্লাহর মহব্বতওয়ালা মানুষের কাছে যেতে হয়। কিছু কিছু মানুষ আছে, তাদের কাছে গেলে আল্লাহর মহব্বত শেখা যায়। ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর মহব্বতের হক আদায় হয়। যার ভেতর যত ইবাদত পাওয়া যায়, তার তত মহব্বত বেড়ে যায়। ফরজ ইবাদত, ওয়াজীব ইবাদত, সুন্নাতের ইবাদত, নফল ইবাদত, যত প্রকারের মুস্তাহাব্বাত আছে ওগুলোও আমল করতে হয়। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লেই আল্লাহর মহব্বতের পূর্ণতা হয় না। আল্লাহর মহব্বতের পূর্ণতার জন্য নাওয়ায়েল পড়তে হয়। শুধুমাত্র ৪ রাকাত, ২ রাকাত, আর তিন রাকাত করে ফরজগুলো হিফাযত করেই ব্যস নিজের মনমত চলছে, এটা আল্লাহর মহব্বতের পূর্ণতা নয়।

ফরজ তো পড়বে পড়বে, এহতেমামের (গুরুত্বসহকারে) সাথে সুন্নতগুলো পড়বে। আল্লাহর ভালোবাসা অধিক এটা ইজহার করার জন্য ইশরাক পড়বে, আওয়াবীন পড়বে, চাশত পড়বে। হাজার হাজার জনতা বয়ান শুনার জন্য আসছেন। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, কারা কারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন? মহব্বতের পরীক্ষায় ফেল করবে, আল্লাহ যাকে হেফাজত করেছেন, সে তো পাস করবেই। আরেকটু নিচের দিকে যদি যাওয়া হয়, কারা কারা ইশরাক পড়ার অভ্যাস করেছেন, তাহলে ৯৯% ফেল করবে। যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আওয়াবীন, চাশত পড়ার অভ্যাস কার কার আছে নিয়মিত? তাহলে ফেল করবে। ওগুলো তো চেনেই না। মহব্বত এতো কম। এবাদতগুলোর সাথে নামের পরিচিতিটুকু পর্যন্ত নেই। কোন নামাজের কি ফজিলত-বরকতএটা জানা নেই। অথচ হাদীসে পাকে আছে, সূর্যোদয়ের পরে কেউ যদি আল্লাহর মহব্বত প্রকাশ করতে দু’রাকাত ইশরাকের নামাজ পড়ে, সে যদি দরিদ্র লোকও হয়, তবুও আসমানের মালিক আল্লাহ তার আমল নামায় হজ্ব ও উমরার সাওয়াক উঠিয়ে দেবেন। চাশতের চার রাকাতও যদি পড়ে, মহব্বত আরও প্রকাশ পায়।

শুধু রমাযানের রোজা রেখে, আল্লাহর মহব্বত প্রকাশ করা যায়? না। আইয়ামে বীযের রোজাও রাখতে। তবে এই মহব্বতের হক্ব নবীদের পরে সর্বোচ্চ আদায় করেছেন সাহাবায়ে কেরাম রা.। তাঁরা সারারাত নামাজ পড়েছেন, দু’রাকাত নামাজে কুরআন খতম করেছেন, সারাজীবন রাতের ঘুম নিজেদের জন্য হারাম বানিয়েছেন, সারা জিন্দেগিভর দিনের খানা নিজের জন্য হারাম করে ফেলেছেন।

এমন একজন সাহাবীর নাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা.। নবীজির কাছে এসে বলেন, ওগো আল্লাহর নবী, আমি প্রত্যেকদিন রোযা রাখার অনুমতি চাই, আপনি আমাকে রোযা রাখার অনুমতি দেন। আল্লাহর নবী সা. বলেন, হে সাহাবী, প্রতিদিন রোযা রাখতে হবে না, আইয়ামে বীযের (আরবী মাসের ১৩-১৪-১৫ তারিখ রোজা রাখো। সাহাবী বললেন, না। হে আল্লাহর নবী, আমার দেহে শক্তি আছে, আমি প্রতিদিন রোজা রাখতে পারবো, আপনি আমাকে অনুমতি দেন না। কাকুতি-মিনতি করে চোখের পানি ফেলে কেঁদে কেঁদে সারা বছর রোজা রাখার অনুমতি নিয়েছেন। এবার তিনি সারা বছর রোযা রাখেন, মুহাদ্দিসিনে কেরাম বলেন, আসলে সাহাবীর দীলের মধ্যে মাওলার প্রেমের আগুন এমনভাবে জ্বলে উঠেছে যে, তিনি সারা রাত্রে ঘুমাতে পারে না, সারারাত তিনি জায়নামাজে দাঁড়িয়ে থাকেন। অর্থাৎ এশা থেকে ফজর পর্যন্ত রাতের বেলায় মুসল্লার উপরে থাকেন। যিকির-আযকার কুরআন হাকিমের তিলাওয়াত, নাওয়াফেল ইবাদতের মধ্যে ফজর পর্যন্ত সারারাত জেগে জেগে মালিকের গোলামী করেন, আর বলেন, মাওলা, সবাই ঘুমাচ্ছে, আমি কিন্তু জেগে আছি তোমার প্রেমে।

যেহেতু সাহাবী রাতের বেলায় ঘুমান না, এজন্য দিনের বেলায় ঘুমান। কারণ সাহাবীর রা. ইরাদা হলো, আমার ঘুমটা যেন রোযার হালতে হয়ে যায়। আমি যখন ঘুমায় তখনও যেন এবাদতের একটা সীল আমার লাশের মধ্যে লাগানো থাকে। আজরাইল আ. যদি ধরেও ফেলেন, তাহলে রোজার সীল লাগানো অবস্থায় যেন আমাকে কবরে নিয়ে যায়, রাতের বেলায় ধরে তো যেন আমাকে জায়নামাজে পেয়ে যায়। আর দিনের বেলায় যদি আমি কাজে-কর্মেও থাকি, তাও যেন আমাকে এই এবাদতের মধ্যে পেয়ে যায়। এবার সাহাবী সারা বছর রোযা রাখা শুরু করে দিলেন। উক্ত সাহাবী রা. লম্বা হায়াৎ পেয়েছেন। হাদিসে পাকে আছে, ৮৯ বছর হায়াৎ পেয়েছেন। সাহাবীদের জীবনীতে পাওয়া যায় যে, তিনি জীবনের শেষ ভাগে যখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, প্রতিদিন তো রোযা রাখতে পারেন না, কারণ তাঁর কষ্ট হয়ে যায়। অসুস্থ হয়ে গেছেন। ডাক্তার এসে বলেন, আপনার এখন আর প্রতিদিন রোযা রাখার দরকার নেই। আপনি এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। মাঝে মধ্যে রোজা ভাঙতে পারেন।

আল্লাহর মহব্বত কত! নবীর মহব্বত কত! সাহাবী কাঁদের আর বলেন, ইবাদতের যে কালারটা আমি নবীর মাধ্যমে পাস করিয়ে নিজের জিন্দেগীতে ফিট করেছি, এই কালার ছেড়ে আজরাইলের আ. কাছে ধরা খেতে চাই না। যদি মরেও যাই তবুও রোযা ছাড়তে পারবো না। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিদিন রোযা রেখেছেন, এমনকি যেদিন তিনি ইন্তেকাল করেছেন, ঐদিন সাহাবী রোযার হালতে মৃত্যুবরণ করেছেন। আল্লাহর মহব্বত প্রকাশ।  বছরে বছরে গরু দিয়ে আল্লাহর মহব্বত প্রকাশ করা যায় নাকি? বছরে বছরে একটা উরশ করে লাফালাফি করে আল্লাহর মহব্বত প্রকাশ করা যায় নাকি? বছরে একদিন নবীর সা. নামে ঈদ পালন করে নবীর মহব্বত প্রকাশ করো? এ ভাওতাবাজি তোমাদের কে শিখিয়েছে? মহব্বত প্রকাশ করার জন্য আলাদা ত্বরিকা আছে। আল্লাহর মহব্বত প্রকাশ করার ত্বরীকা হলো, ইবাদত, আর নবীজির সা. প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার ত্বরীকা হলো, সুন্নাত পালন করা। জিবনের প্রতিটা ধাপে ধাপে, কদমে কদমে, নকশায় নকশায় নবীজির সুন্নাতের নমুনা সেট করবে। নবী পাকের ভালোবাসা এই ভাবে যারা প্রকাশ করবে, তারাই আউলিয়া আল্লাহ। লালসালু টানিলে, গেট করলে আর উরশ করলে আল্লাওয়ালা হয় না রে?  বোকা কোথাকার, বোকার স্বর্গরাণী বসবাস করো তুমি।

সুন্নতের মহাব্বত, আউলিয়া আল্লাহর আলামত। ইবাদতের মোহাব্বত, আউলিয়া আল্লাহর আলামত। সেটা যদি রিক্সাওয়ালার ভেতরেও এসে যায়, তাহলে তাঁর নামটাও ওলীর দফতরে চলে যায়। তার তখন পীরে কামেল হওয়া লাগেনা। রিক্সাওয়ালা চালায়, কিন্তু তার মধ্যে এই মহব্বতগুলো আছে সেও ওলী হয়ে যায়। তখন তাঁকে আল্লাহ রাসূল বলবেন, এটা আমার উম্মত, তখন তাঁর ব্যাপারে আল্লাহ বলবেন, এটা আমার বান্দা, আমি তাঁকে ভালোবাসি তোমরা সবাই ওকে ভালোবাসো। আল্লাহ পাক তখন ভালোবাসার জন্য নির্দেশ করেন। তখন মাখলুকাতও তাকে ভালবাসেন। আল্লাহর রাসুল, সারওয়ারে দু’আলম নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. এর মহব্বত নবীর ইত্তেবা’র মাধ্যমে এই পরিমাণ নিজেদের মধ্যে রাখবেন, যেন নবীয়ে পাক হাশরের ময়দানে বলেন, হে আল্লাহ, এটা আমার উম্মত, তাঁর মধ্যে সুন্নাত দেখো না তুমি? তাঁকে ছেড়ে দাও। নবীর সা. মহব্বত যার ভেতরে থাকে, নবীজি সা. তাঁকে কাছে রাখেন, নবীজি সা. তাঁকে খুশি রাখেন।

মসজিদে নববীর ভেতরে খেজুর গাছ, মরা কাঠ, সত্যিকারের আশেক গাছের মধ্যে নবীজির সা. মহব্বত পাওয়া গেছে, তো নবীজি সে গাছটাকে মসজিদে নববীর মধ্যে দাফন করে রেখে দিয়েছেন। সুতরাং নবীজির সা. কামেল কামেল সত্তিকারের আশেকদেরকে রেখে একা একা জান্নাতে যাবেন না।

নবীজি সা. আশেকদের খুশি করেন।হাবিবে কিবরিয়া, মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ বাহির থেকে যখন মদিনায় ঢুকতেন, তখন এমন পথ দিয়ে ঢুকতেন, যে পথ দিয়ে ওহুদ পাহাড় দেখা যায়, কারণ ওহুদ পাহাড় নবীজিকে সা. মহব্বত করতেন। ঘটনাচক্রে একদিন আল্লাহর রাসুল সা. বাহিরে গেছেন আল্লাহর রাসূল। কিন্তু মদীনায় যে পথ দিয়ে ঢুকছেন, সে পথ দিয়ে ওহুদ পাহাড় দেখা যায়না। সাথে সাথেই নবীজির সা. কাছে জিবরাঈল আ. এসে বলেন, ওগো সরকার, এই পথে কেন হাটছেন? ওহুদ পাহাড় আপনার প্রেমে কেঁদে জারজার। নবীজী সা. বলেন, জিবরাঈল, ওহুদ পাহাড় কাঁদে কেন? জিবরাঈল আ. বললেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি মদীনায় যখন ওহুদ দেখে দেখে ঢোকেন, তখন ওহুদও তো আপনাকে দেখে। আজকে আপনি মদিনা মদীনায় ঢুকছেন, কিন্তু ওহুদ তো আপনাকে দেখে না। এ কারনে ওহুদ পাহাড় কান্না শুরু করেছে।

নবীজি সা. এবার কাফেলা নিয়ে ঘুরে আবার ঐ পথ ধরেছেন, যে পথ দিয়ে গেলে ওহুদ পাহাড় দেখা যায়। যখন পাহাড়ের পাদদেশে আসলেন তো দাঁড়িয়ে বলেন, هذا احد হে সাহাবীরা এটা হলো ওহুদ يحبني وانا احبه সে আমাকে ভালোবাসে আমি রাসূলও তাকে ভালোবাসি। এজন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সা. মহব্বত করা যেমন ঈমান, ঠিক তেমনি ওহুদ পাহাড়কেউ মহাব্বত করা ঈমান, মাদীনাকে মহব্বত করাও ঈমান। আল্লাহর প্রত্যেকটা সৃষ্টির মহব্বত দীলে রাখা ঈমান। এজন্য কেউ কখনো কোন প্রাণীর বদ দু’আ গ্রহণ করো না। মানুষের বদ দু’আ তো অনেক দূরের কথা। প্রাণীকুলও আল্লাহর মহব্বত করে। তুমি তো মাজারে গিয়ে বাবার কাছে চাও, খাজার কাছে চাওয, আল্লাহর কাছে চাইতে জানো না। বোকা গ্রুপের সভাপতি তুমি। কিন্তু প্রাণীরাও আল্লাহর কাছেই চায় এবং আজব! ওরা আল্লাহর কাছে চায়, আল্লাহও ওদেরকে দেন।

এক পয়গম্বর সালাতুল ইস্তেস্কা করার জন্য উম্মতকে নিয়ে যাচ্ছেন। ইস্তেস্কার নামাজ মাঠে গিয়ে দু’রাকাত নামাজ পড়ে, তওবা করে পানি চাইতে হয়, তাঞরে আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তওবা করলে বৃষ্টি হয়।

فقلت استغفروا ربكم …مدرارا

চাইলে আল্লাহ দেন, এটা আল্লাহ তা’আলার ওয়াদা। কিন্তু এখন তো আর এস্তেস্কার তওবা করে নামাজ পড়ে পানি চাওয়ার ইবাদত মুসলিম মিল্লাতের ভেতরে নেই। জানও নানা কিভাবে ইস্তেস্কার নামাজ পড়তে হয়। কারণ শিক্ষানীতি ইসলাম শূণ্যতা, এমনকি মুসলমানের আমলশূন্য করার জন্য ভন্ডপীরের আগমন ঘটেছে। যারা দাওয়াত ও তাবলীগ ও হক্কানী পীরের মুকাবেলায় এই যমীনের উপর কাজ করে মানুষকে ইবাদতের প্রশিক্ষণ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। কোনো ইবাদতই এখন আর মুমিন চেনে না। শুধু কি তাই? এখন তো পেট্রলপাম্পও আছে, এখন যমীন ফেটে গেলে, ভালো পাম লাগিয়ে পানি উত্তোলন করে যমীন ভিজানোর আমল উপহার দিয়েছে বিজ্ঞান। আর আগের একটা যামানা গেছে, যখন পাম্প-টিউবয়েল কিছু ছিলো না, এমনকি যদি মানুষের পানি পান করতে হতো, তাহলে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাইতো, বৃষ্টির পানি ঝরলে মশকজাত করে সারা বছর তা পান করতো। ঘনঘন ইস্তেস্কার নামাজ পড়তেন। আপনারাও বুযুর্গদের আমলে ইস্তেস্কার নামাজ শেষ করে বাড়িতে যাওয়ার আগেই বৃষ্টি পেয়েছেন। আর এখন বৃষ্টি নামার জন্য নামাজ পড়ার দরকার হয় না, বরং বৃষ্টি বন্ধ করার জন্য নামাজ পড়া দরকার। অতিবৃষ্টি আর অনাবৃষ্টির আজাব শুরু হয়েছে। বৃষ্টি হয় না, হয় না, পানি নেই। আবার যখন হয়, তখন রাস্তাও পুকুর হয়ে যায়। এগুলো সব গুনাহের আছর।

তো ঐ পায়গম্বর উম্মতকে নিয়ে যখন এস্তেস্কার নামাজ পড়ার জন্য মাঠে গেছেন, তখন আল্লাহ তাঁকে ডেকে বলছেন, হে পয়গম্বর, ইস্তেস্কার নামাজ পড়া লাগবে না, চচলে যাযাও।বৃষ্টির চুক্তি শেষ হয়ে গেছে, এখনই বৃষ্টি এসে পড়বে। নবী বললেন, হে আল্লাহ, আমি এই এলাকার উম্মতের জন্য আমি নবী, কন্ট্রাক হলে তো আমার সাথে হওয়ার কথা।  কিন্তু পানির চুক্তি অন্য কে করলো? আল্লাহ তা’আলা তখন বললেন যে, এক ঝাঁক পিপিলিকা মাটির উপরে এসেছিলো, তারা মাটির উপরে এসে আমার কাছে দরখাস্ত করেছে, হে আল্লাহ, মানুষের গুনাহের কারণে কি আমরাও কষ্ট পাবো? আমরা বাঁচবো কেমনে? গর্তের ভেতরে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। আরাম দেন। পিপড়ার সর্দারে দু’আ করে গেছে, তার দু’আ কবুল করে ফেলেছি। তোমার ইস্তেস্কা করা লাগবেনা। আল্লাহু আকবার!

এজন্য ফকিহরা বলেন, ইস্তেসকার নামাজ পড়তে শুধু নিজেরা যাবে না, বরং গবাদি পশু গরু-ছাগলও সাথে করে নিয়ে যাবে। তাদেরকে মাঠের পাশে রৌদ্রে এক পাশে বেঁধে রাখবে, আর তোমরা নামাজে দাঁড়িয়ে যাবে। এক দিকে তোমরা বৃষ্টি চাইবে, অপর দিকে ওরা রোদের তাঁপে বৃষ্টি চাইবে। তাহলে তোমাদের দু’আ কবুল না হলেও, ওদের দু’আয় বৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। এটা হলো ইস্তেস্কার নামাজের ত্বরীকা। অন্য কোনো নামাজ পড়তে গরু-ছাগল নেয়া লাগে না, কিন্তু ইস্তেস্কার নামাজ পড়তে গরু-ছাগল নিয়ে যাওয়া সুন্নাত। সুতরাং এই মহাব্বত গুলো যদি কোন কুৎসিত গোলামের মধ্যেও এসে যায়, তাহলে সেও ফিরদাউস জান্নাতের সরদার হয়ে যায়। আল্লাহু আকবার!

আল্লাহ নবীর সা. কাছে মাদীনার গ্রামের একটা কালো কুৎসিত গোলাম আসা যাওয়া করতেন। বড় কোনো তিজারত (ব্যবসা) তার নেই। তাঁর কর্মে হলো, শাক কুড়িয়ে বিক্রি করেন। যেমন আমাদের দেশে কিছু গরিব মানুষ আছে, যারা শাপলা অথবা কলমি শাক কুড়িয়ে বিক্রি করে। এত গরীব। সে সাহাবীও এমন গরীব ছিলেন। শাক বিক্রি করতেন আর নবীজির সা. কাছে গিয়ে বসে থাকতেন। আল্লাহর নবী সা. তাঁকে এত ভালোবাসতেন যে, তিনি নবীজির সা. কাছে গেলে নবীজি সা. তাঁকে বুকে জড়িয়ে নিতেন। আর সকল সাহাবীদেরকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বলতেন, সে আমার জংলি বন্ধু, গ্রাম্য বন্ধু, আর আমি তাঁর মাদীনা (শহরের) বন্ধু। তুমি-আমি সফল হবো তখন, যখন আল্লাহর রসূল সা. ময়দানে মাহশরে বলবেন, হে আল্লাহ, এটা অমুক এলাকার ছোট্ট ঝুপড়িতে বসবাসকারী আব্দুর রহমান। সে আমার বন্ধু, আর আমি তাঁর মাদীনার বন্ধু। আল্লাহর রাসুল যদি এই ভালোবাসা তোমাকে দেন, তাহলে তুমি আউলিয়া আল্লাহ। খালি মিলাদ পড়লে, আর লাফালাফি করলেই তুমি ওলী না।

এই ভালোবাসা তুমি পাবে কি না নিজেকে জিজ্ঞেস করো। তবে আমাদের কিছু আউলিয়া আল্লাহ আছেন, যাদের ব্যাপারে নি:সন্দেহে বলা যায়, তাদেরকে আল্লাহর রসূল বলবেন, হে আল্লাহ, এটা আমার বাংলার বন্ধু,  আমি তাঁর মাদীনার বন্ধু। আমাদের যে বুড়া বুড়া বুযুর্গরা আছেন, যারা সুন্নাতের খেলাফ কোনো কাজ করেন না, তাদেরকে আল্লাহ বলবেন, এটা আমার অমুক জায়গার বন্ধু, আর আমি তার মাদীনার বন্ধু। কাপাসিয়া হযরত ‘তালিমুস সুন্নাহ’ কিতাব লিখেছেন, উম্মতকে সুন্নাত শিখানোর জন্য পাগল, পেরেশান। আল্লাহর রাসুল সা. তাঁদেরকে বলবেন, এটা আমার কাপাসিয়ার বন্ধু, গওহরপুরের বন্ধু, কাতিয়ার বন্ধু, হাটহাজারীর বন্ধু, এটা আমার বাংলার বন্ধু, এটা দেওবন্দের বন্ধু। আর আমি তাঁর মাদীনার বন্ধু।

নবীজি সা. কালা এই শাক বিক্রেতা গোলাম মানুষটিকে এত ভালোবাসতেন, একবার তিনি শাক নিয়ে বাজারে এসেছেন, বসে বসে বিক্রি করছেন। আল্লাহর রাসূল সা. তাঁকে দেখে সামনে দিয়ে না গিয়ে পেছন দিক দিয়ে গিয়ে যে তাঁর পাশে মাটিতে লেপটা দিয়ে বসে গেছেন। কেমন ভালোবাসা বিতরণ করছেন! নবীজি সা. তাঁর হাতটা ধরে উপরে উঠিয়ে বলছেন, হে মাদীনার বাজারে লোকেরা, দেখে নাও। এটা আমার কালা গোলাম। আমি আমার এই গোলামটি বিক্রি করবো। কেউ কিনবে নাকি? নবীজির সা. দিকে তাঁকিয়ে গোলামটি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, অবশ্যই আমি আপনার গোলাম। কিন্তু এত কালা গরিব মানুষকে কে পছন্দ করবে? আল্লাহর নবী সা. তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, হে কালা গোলাম, তোমাকে এই পৃথিবীর কেউ পছন্দ না করলেও কি হবে? আরশের মালিক আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেন, মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেন।

نہ کالی کو دیکھے نہ گوری کو دیکھے
پیا جس کو چاہے سہا گن وہی ہے

আল্লাহ ও আল্লার রাসূলের সা. কাছে এই ভালোবাসা প্রাপ্তির মেহনত আজ থেকে করবো। ইনশাআল্লাহ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো। আর সুন্নত কাটবো না। আর আলেম-উলামার পিছন থেকে সরে দাঁড়াবো না। আল্লাহ তুমি সবাইকে কবুল করো। হে আল্লাহ, আমাদের সকলের দীলের মধ্যে আহলুস সুন্নাত এর মহব্বত দান করো। হে আল্লাহ, উলামাদের মহব্বত দান করো। আলেম-উলামার পিছু পিছু ইক্তেদা করার যোগ্যতা আমাদের সব ভাইকে তুমি দান করো।

আলোচনার সারনির্জাস ছিলো, পাখিরাও নবীর সা. আশেক, মুমিন হয়ে আপনি-আমি যদি নবীর আশেক না হতে পারি, তাহলে এরচে বৃথা জিবন আর হয় না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আশেক হিসেবে কবুল করে নিন। আমীন! সুম্মা আমীন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.