মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম আ.। সত্য কি না?
প্রিয় পাঠক, যুগ যুগ ধরে পবিত্র কুরআন সম্মত একটি বিষয় হলো, মুসলিম জাতির পিতা হলেন খলীলুল্লাহ হযরত ইবরাহীম আ.। কিন্তু সম্প্রতি সসময়ে তথাকথিত কিছু শায়খগণ দাবি করে বসেছেন যে, ইবরাহীম আ. মুসলিম জাতির পিতা নন। এমন ডাহা মিথ্যা কথা যারা দাবি করেছেন, তাদের জন্য নিন্মে দু’টি আয়াত আগে দেখে নেওয়া যাক।
আয়াত: ১
মহান আল্লাহ বলেন,
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ
অর্থ: হে পরওয়ারদেগার! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ কর এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর।
সূরা বাকারা আয়াত: ১২৮
উক্ত আয়াতে আগত সকল মুসলমানদেরকে ইবরাহীম আ. নিজের সন্তান বলে দাবী করেছেন।
আয়াত: ২
মহান আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের জাতির পিতা বলে ইবরাহীম আ. এর নাম সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ্য করে বলেন,
مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمينَ
অর্থ: তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন।
সূরা হাজ্ব, আয়াত: ৭৮
উক্ত দু’টি আয়াতের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, ইবরাহীম আ. মুসলিম জাতির পিতা।
অভিযোগ: ১
হ্যাঁ। অনেকে দাবি করবেন যে, আয়াতটির সম্বোধন তো কুরাইশরা। কারণ ইবরাহীম আ. এর পূত্র ইসমাঈল আ. হলেন, আরবদের পিতা। তাহলে বুঝা গেল ইবরাহীম আ. কুরাইশদের পিতা, মুসলিমদের জন্য পিতা নন।
জবাব:
উক্ত বিষয়টি বুঝার জজন্য প্রথমত, আয়াতটির অর্থ জানা দরকার। আয়াতটির অর্থ করতে গিয়ে ইমাম যাজ্জাজ রহ. বলেন,
الْمَعْنَى اتَّبِعُوا مِلَّةَ أَبِيكُمْ
অর্থাৎ এর অর্থ হলো, তোমরা তোমাদের পিতার ধর্ম অনুসরণ করো।
সূত্র: তাফসীরে কুরতুবী খ. ১২ পৃ. ৯২
এক.
প্রিয় পাঠক, উক্ত আয়াতের অর্থ জানার পর আয়াতের বিধানের দিকে একটু খেয়াল করুন। মহান আল্লাহ তা’আলা উক্ত আয়াতটির মাধ্যমে সকল মুসলিমদেরকে ইবরাহীম আ. এর ধর্ম মান্য করার হুকুম প্রদান করেছেন। বুঝা গেলো, আয়াতটি শুধু আরবের কুরাইশদের জন্য অবতীর্ণ ছিলো না। যদি আয়াতটি শুধু কুরাইশদের জন্য নির্দিষ্ট করে ধর্তব্য হয়, তাহলে এ আয়াদের বিধান অন্যদের জন্য কার্যকরী হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আয়াতের বিধান যেমন সকল মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য, তেমনি ইবরাহীম আ. সব মুসলিমদের জন্য পিতা।
উপরন্তু আয়াতটি সকল উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য যে নাজিল করা হয়েছে এর দ্বিতীয় প্রমাণ হলো, আয়াতটির ২য় অংশে বলা হয়েছে, هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمينَ অর্থাৎ তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন। বুঝা গেলো আয়াতটি শুধু আরবদের জন্য নয়, বরং আয়াতটি দিয়ে সকল মুসলমান উদ্দেশ্য।
দুই.
যদি ধরেও নিই যে, আয়াতটি শুধুমাত্র কুরাইশদের জন্য নাজিল হয়েছে, তবুও ইবরাহীম আ. মুসলিম জাতির পিতা হতে অসুবিধা নেই। কারণ আমাদের নবীজি সা. নিজেও কুরাইশী ছিলেন। সে হিসাবে ইবরাহীম আ. আমাদের নবীজিরও সা. পিতা ছিলেন, সে হিসাবে তিনি উম্মতে মুহাম্মাদীরও পিতা।
তিন.
আহলে হাদিসের তাফসীর থেকে জবাব:
হয়তো বলবেন, এটা আমাদের মনগড়া কথা। নিশ্চয় না। আমাদের বানানো কথাএ হিসাবে মেনে নেওয়ার কোনো দরকার নেই, বরং আহলে হাদিসদের লিখিত তাফসীর ‘তাফসীরে আহসানুল বায়ান’ যেটা সৌদী আরব থেকে ছাপা হয়েছে। যার সম্পাদনা করেছেন ‘আব্দুল হামীদ মাদানী’ ইসলামিক সেন্টার আল মাজমাআহ সৌদী আরব। সেখানে ৫৯৬-৫৯৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
“আরব জাতি ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর বংশধর ছিলেন। সেই হিসাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হলেন আরববাসীর আদি পিতা। আর আনারবরাও ইবরাহীম আ. কে একজন সম্মানীয় ব্যক্তি হিসাবে শ্রদ্ধা করত, যেমন পুত্র তার পিতাকে শ্রদ্ধা করে থাকে। সেই হিসাবে তিনি সকলের আদি পিতা ছিলেন। এছাড়াও ইসলামের নবী আরবী হওয়ার কারণে ইব্রাহিম আ. তাঁরও পিতা ছিলেন। আর এই জন্য তিনি সকল উম্মতের মোহাম্মদীর পিতা হলেন।”
সূত্র: তাফসীরে আহসানুল বয়ান পৃ. ৫৯৬-৫৯৭
তাফসীরে বাগাবীতে বলা হয়েছে:
وإبراهيم أب لهم على معنى وجوب احترامه وحفظ حقه كما يجب احترام الأب
অর্থাৎ তিনি মুসলিম জাতির পিতা এই অর্থে যে, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তার হক সংরক্ষণ করা তেমন অপরিহার্য, যেমন পিতার সম্মান রক্ষা করা অপরিহার্য।
সূত্র: তাফসিরে বাগাবী খ. ৫ পৃ. ৪০৩
তাফসিরে কুরতুবী:
তাফসিরে কুরতুবীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা এসেছে এভাবে:
لأن حرمة إبراهيم على المسلمين كحرمة الوالد على الولد
অর্থ: (সকল মুসলিমকে উদ্দেশ্য করেই ইবরাহীমকে আ. ‘পিতা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে যদিও সকল মুসলিম তার সন্তান নয়।) এর কারণ হল, মুসলিমদের নিকট ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর মর্যাদা পুত্রের নিকট পিতার মর্যাদা সমতুল্য।”
সূত্র: তাফসীরে কুরতুবী খ. ৩ পৃ. ১৯৩
অভিযোগ: ২
আমাদের বংশপরম্পরা তো ইবরাহীম আ. এর সাথে মেলে না। তাহলে তাঁকে পিতা বলা কতটুকু ঠিক?
জবাব:
আল্লাহ তা’আলা নবীজির সা. স্ত্রীদেরকে আমাদের জন্য ‘মা’ বলেছেন। পবিত্র কুরআনের আয়াত দেখুন।
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ
অর্থ; ‘আর তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণ তাদের (মুসলিমদের) মা।’
সূরা আহযাব, আয়াত নং ৬
উপরন্তু নবীজি সা. নিজেও নিজেকে পিতা বলে দাবী করেছেন বলে হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, যে হাদিসটির সনদকে আহলে হাদিসের ইমাম শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী মরহুম সহিহ বলেছেন। হাদিসটি সহিহ ইবনে হিব্বানেও ১৪৪০ নং হাদিস হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত নবীজি সা. বলেন,
إنَّما أنا لكم مِثْلُ الوالدِ
অর্থাৎ নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য বাবা সমুতুল্য।
সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস: ১৪৪০
এখানে নবীজি সা. এর স্ত্রীদেরকে ‘মা’ এবং নবীজি সা. কে ‘বাবা’ বলা হয়েছে। অথচ বংশপরম্পরায় তো আমরা সবাই সাইয়্যেদ বংশের না। তাহলে নবীজির সা. এর দাবীও কি ভুল?
আসলে সম্মানের দিক থেকে তাঁরা পিতা। এটা সাহাবায়ে কেরাম রা. অকপটে মেনে নিয়েছেন, তাবেয়ীগণ মেনে নিয়েছেন, সমস্ত মুসলমানরা মেনে নিয়েছেন, কিন্তু আহলে হাদিসদের মানতে অসুবিধা কি?
সুরা হজ্বের ৭৮ নং আয়াতে র ব্যাখ্যায় জমহুর মুফাসসিরের মত হচ্ছে ইব্রাহিব (আঃ) আরব জাতির আদি পিতা এবং ইসমাঈল আঃ এর মাধ্যমে কোরাইশদের পিতৃপুরুষ। মুফতি আল্লামা শফি (রঃ) তাঁর কৃত মা’আরেফুল কোরানে ‘তাফসিরে মাযহারি’ থেকে নকল করে একথাই লিখেছেন। এর পর তিনি লিখেছেন “কেউ কেউ তাঁকে মুসলিম জাতির পিতা বলেছেন”। বাস্তব কথা হচ্ছে এই “কেউ কেউ” এর সংখ্যা অতি নগণ্য। এর কারণ হচ্ছে পবিত্র কোরানে মুসলমানদেরকে ৭ স্থানে বনি আদম বলেছেন কিন্তু বনি ইব্রাহিম বলে কোন বক্যে একবারও সম্বোধন করেন নাই। যদি পবিত্র কোরানে “ইয়া বানি ইব্রাহিম” বলে কোন বাক্য দেখাতে পারেন তবে মানবো ইব্রাহিম (আঃ) মুসলিম জাতির পিতা। আপনি নিজেই স্বীকার করেছে সহিহ হাদিসে নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ নিজেকে মুসলমানদের পিতা সমতুল্য বলেছেন কিন্তু নবি (সঃ) কে মুসলমান জাতির পিতা বলছেন না কেন? সেখানেও তে্না পেঁচিয়ে ইব্রাহিম (আঃ) কে মুসলিম জাতির পিতা বলছে; আশ্চর্য ! এর কারণ পবিত্র কোরানে আল্লাহ বলেছেন مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَآ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰـكِنْ رَّسُوْلَ اللّٰهِ وَخَاتَمَ النَّبِيّٖنَ ؕ وَكَانَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيْمًا
সূরা নম্বরঃ ৩৩, আয়াত নম্বরঃ ৪০।
নিয়ে কতো বড় বাটপারি করেছে।
👉মুসলমানের “জাতির পিতা” ইব্রাহিম (আঃ); এই কথাটি এদেশে প্রথম আবিষ্কার ও প্রচার করেছে মওদূদীবাদী জামায়াত নেতা, ভূয়া মুফাচ্ছের, বিতর্কিত বক্তা দেল্যা রাজাকার। এর পর দেওবন্দি কওমি আলেমরা সেটা আওড়াতে থাকে। এ সব শুনতে শুনতে আওয়ামী লীগের নেতারাও সেটা গ্রহণ করে বলতে থাকে যে “ইব্রাহিম (আঃ) মুসলিম জাতির পিতা আর বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির পিতা”। অশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এরা একবারও প্রশ্ন করলো না জিন্নাহ সাহেব যখন ‘বাবায়ে কওম’ বা জাতির পিতা ছিলো তখন কেন মওদূদী সাহেব তার কৃত বিতর্কিত “তাফহিমুক কোরানে” এই আয়াতের তাফসিরে ইব্রাহিম (আঃ) কে “মুসলিম জাতির পিতা” উল্লেখ করেন নাই (কমেন্ট বক্সে স্ক্রিনশট দিলাম)? মওদূদী কেন জিন্নাহ সাহেবকে নিয়ে একবারের জন্যও এই প্রশ্ন তোলেন নাই? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিলো এই ভূয়া মুফাচ্ছের পবিত্র কোরান নিয়ে বাটপারি করে সফল হয়েছে; কিন্তু তা অসম্ভব। আল্লাহ বলেন –
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا ٱلذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَـٰفِظُونَ
অনুবাদ – ৯. নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক। এক দেল্য কেন হাজারো দেল্য মিলে এই কোরানের একটি শব্দের বিকৃত করতে পারবে না। আল্লাহ বলেন —
(وَقُل جاءَ الحَقُّ وَزَهَقَ الباطِلُ إِنَّ الباطِلَ كانَ زَهوقًا )
অনুবাদ – সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হতে বাধ্য৷
প্রথমে দেল্যা রাজাকারের দাবি তুলে ধরছি ——
👹👿 তাফসিরে দেল্যা – পবিত্র কোরানে সুরা হজ্বের ৭৮ নং আয়াতের সে তর্জমা করেছে এ রকম – আল্লাহ বলেছেন – ( مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ) তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। দেল্যার দাবি “তোমাদের পিতা” বলতে আল্লাহ ইব্রাহিম (আঃ) কে মুসলিম জাতির পিতা বুঝিয়েছেন। এটাকে পোক্ত করতে আয়াতের পরবর্তী অংশ নিয়ে দেল্যা ২য় প্রতারণার আশ্রয় নেয়। (هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ مِن قَبْلُ وَفِي هَـٰذَا) তিনি তোমাদেকে মুসলমান নামকরন করেছেন; পূর্বে এবং এই কোরানে। দেল্যার মতে এই ‘তিনি’ হচ্ছেন ইব্রাহিম (আঃ)। আউজু বিল্লাহে মিনাশ-শাইতোয়ানির রযীম।
💚💚 প্রসিদ্ধ মুফাচ্ছেগণের তাফসিরঃ — সুরা(২২) হজ্বের শেষ আয়াত অর্থাৎ ৭৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন – ২২:৭৮ وَ جَاهِدُوۡا فِی اللّٰهِ حَقَّ جِهَادِهٖ ؕ هُوَ اجۡتَبٰىکُمۡ وَ مَا جَعَلَ عَلَیۡکُمۡ فِی الدِّیۡنِ مِنۡ حَرَجٍ ؕ مِلَّۃَ اَبِیۡکُمۡ اِبۡرٰهِیۡمَ ؕ هُوَ سَمّٰىکُمُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ۬ۙ مِنۡ قَبۡلُ وَ فِیۡ هٰذَا لِیَکُوۡنَ الرَّسُوۡلُ شَهِیۡدًا عَلَیۡکُمۡ وَ تَکُوۡنُوۡا شُهَدَآءَ عَلَی النَّاسِ ۚۖ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ اعۡتَصِمُوۡا بِاللّٰهِ ؕ هُوَ مَوۡلٰىکُمۡ ۚ فَنِعۡمَ الۡمَوۡلٰی وَ نِعۡمَ النَّصِیۡرُ
অনুবাদ – ৭৮ — (১)আর জিহাদ কর আল্লাহর পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত। (২)👉তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে (কোরাইশদের) মনোনীত করেছেন। (৩) তিনি (আল্লাহ) দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। (৪) এটি তোমাদের (কোরাইশদের) পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত (ধর্ম)। (৫),👉তিনি (আল্লাহ) আগে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও; (৬) যাতে রাসূল তোমাদের (কোরাইশদের) জন্য সাক্ষীস্বরূপ হন এবং তোমরা সাক্ষীস্বরূপ হও মানুষের (পরবর্তি মুসলমানদের) জন্য।(৭) কাজেই তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও(৮) এবং অবলম্বন হিসেবে আল্লাহকে মজবুতভাবে ধারণ কর(৯); তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের অভিভাবক, তিনি (আল্লাহ) কতই না উত্তম অভিভাবক আর কতই না উত্তম সাহায্যকারী!
➡️ সাহাবা, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী থেকে শুরু করে প্রসিদ্ধ মুফাচ্ছেরিন একরামের ব্যাখ্যা হচ্ছে – ( مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ) “তোমাদের পিতার ধর্ম” (৪) বলতে ইব্রাহিম (আঃ) কে কোরাইশদের আদি পিতা বুঝিয়েছেন। কোরাইশরা ইসমাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে ইব্রাহিম (আঃ) এর সরাসরি বংশধর। তাদের আদি পিতা ইব্রাহিম (আঃ)। তাঁর মিল্লাত বা ধর্ম ছিলো তাওহিদ ভিত্তিক। আল্লাহ (সোব: ওয়া:) তাদেরকে মুসলমান বলেছেন। আয়াতটি কোরাইশদেরকে উদ্দেশ্য করেই নাযিল হয়েছে। ইব্রাহম আঃ কে আবুল আরব এবং আবুল আম্বিয়াও বলা হয়। আল্লাহ সবচেয়ে বেশি নবি পাঠিয়েছেন ইব্রাহিম (আঃ) এর বংশ থেকে। ইহুদী খ্রিষ্টান এবং মুসলমানের নবিগণের আদি পিতা হচ্ছেন ইব্রাহিম। আরব জাতির উত্থান হয়েছে ইব্রাহিম (আঃ) এর বংশধর থেকে [তাফসীরে কুরতুবি, ইবনে কাসীর, মাযহারী, মা’আরেফুল কোর’আন, (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৬/১৮৯)]।
“তোমাদের” বলতে কাদেরকে বুঝিয়েছেন তা আয়াতটির ২য় বাক্যে স্পষ্ট ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন – هُوَ اجۡتَبٰىکُمۡ তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে (ইব্রাহিমের সন্তানদেরকে/বংশধরকে) মনোনীত করেছেন(৩)।
এ সম্পর্কে নবি (সঃ) বলেছেন –
عن واثلة بن الأسقع عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى كِنَانَةَ مِنْ وَلَدِ إِسْمَعِيلَ وَاصْطَفَى قُرَيْشًا مِنْ كِنَانَةَ وَاصْطَفَى مِنْ قُرَيْشٍ بَنِي هَاشِمٍ وَاصْطَفَانِي مِنْ بَنِي هَاشِمٍ
2276 صحيح مسلم كتاب الفضائل باب فضل نسب
অনুবাদ — আল্লাহ ইব্রাহিম (আঃ) এর বংশ থেকে অর্থাৎ বনী-ইসমাঈলের মধ্য থেকে কেনানা গোত্রকে মনোনীত করেছেন, অতঃপর কেনানার মধ্য থেকে কুরাইশকে, অতঃপর কুরাইশের মধ্য থেকে বনী-হাশেমকে এবং বনী-হাশেমের মধ্য থেকে আমাকে মনোনীত করেছেন। [মুসলিমঃ ২২৭৬]। অতএব এই আয়াতে তোমাদের পিতা বলতে নিঃসন্দেহে কোরাইশদের পিতৃপুরুষ বুঝানো হয়েছে।
💚💚পবিত্র কোরানে মানবজাতিকে ( یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ) “হে আদম সন্তানগন” বলে ৭ বার সম্বোধন করেছেন। ৩ টি আয়াতে বলেছেন – আদম ও তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে সারা মানব জাতি সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ পবিত্র কোরানে ইহুদিদেরকে ( یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ) “হে ইসরাঈলের/ইয়াকুবের সন্তানগণ” বলে অসংখ্যবার সম্বোধন করেছেন। দেখার বিষয় হচ্ছে আল্লাহ (সুবঃ ওয়াঃ) পবিত্র কোরানে মুসলমানদেরকে ( یٰبَنِیۡۤ إِبْرَاهِيمَ) “হে ইব্রাহিমের সন্তানগণ” বলে কতবার সম্বোধন করেছেন; একবারও না। হারামাইনের মুফতিগণকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন ” আল্লাহ কি একবারও “হে বনি ইব্রাহম” বলে সম্বোধন করেছেন? করেন নাই। তাহলে মুসলমানদেরকে بَنِیۡۤ إِبْرَاهِيمَ বলার আমি কে? আয়াতে বলা হয়েছে “তোমাদের পিতা”; “মুসলিম জাতির পিতা” বলা হয় নাই। অতএব “ইব্রাহিম (আঃ) মুসলিম জাতির পিতা” দেল্যা রাজাকারের এই দাবির কোনই ভিত্তি নাই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই সে পবিত্র কোরানের অপব্যাখ্যা করেছে। আগেই উল্লেখ করেছি জামায়াতিদের প্রতিষ্ঠাতা মওদূদী সাহেবও তাঁর কৃত তাফহিমুল কোরানে এই দাবি করেন নাই।