Home > খুতুবাতে আইয়ুবী দা.বা. > বান্দা হোন, অনিয়মও নিয়ম হয়ে যাবে:

বান্দা হোন, অনিয়মও নিয়ম হয়ে যাবে:

 

আমাদের দাম সবচেয়ে বেশি হবে তখন, যখন আমরা আল্লাহর বান্দা হবো। মানুষের মূল্য ততক্ষণ পর্যন্ত হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহর বান্দা হয় না সব মানুষ আল্লাহর বান্দা না এজন্য সব মানুষ আল্লাহর পেয়ারা না কিন্তু যারা আল্লাহর বান্দা তার আল্লাহর পেয়ারা এর জন্য মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হলো সে আল্লাহর বান্দা যে বান্দার মসনদ দখল করে নিল সে সফল হয়ে গেলে। আর যে বান্দা হতে পারলোনা সে যত কিছুই অর্জন করুক না কেন সে আল্লাহর মাহবুব না এজন্য সকলকে বান্দা হতে হবে আল্লাহর। এজন্য খুব গুরুত্ব সহকারে আল্লাহর বান্দাদের যে গুনগুলো আছে, সেগুলো অর্জন করতে হবে। কারণ বান্দার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি। এমপি-মন্ত্রির পাওয়ার বেশি না। এমপি-মন্ত্রি হলে সফল না, বান্দা হলে সফল।

আমি এক মাহফিলে গিয়েছি। সেখানে এক সাবেক এমপি পাশে বসা। আমি তো বেশি কথা বলছি না, তিনি সব বলে ফেলছেন। বলছেন, হুজুর, আমি দুইবার এর এমপি। আমি বললাম, মাশাআল্লাহ। আবার বলে, আমি একবারের মন্ত্রীও ছিলাম। আমি বললাম মাশাআল্লাহ। তিনি বলছেন, আমি সরকারের চাকরিও করেছি, আমি ডিসির দায়িত্ব পালন করেছি, টিএনও’র দায়িত্বও পালন করেছি। একা একাই বলে সব। তারপর বলে, আমি বর্তমান সরকারের এই দায়িত্বে আছি। হুজুর, আমার স্টুডেন্ট লাইফটা গোল্ডেন লাইফ। হুজুর, আমার সব ফার্স্টক্লাস করা, ডাবল এম এ। আমি তো বাংলাদেশের থেকে ডিগ্রি নিয়েছি তো নিয়েছি,এমনকি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অমুক বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে এসেছি। আমি খুব সুখে আছি হুজুর। আমার দুটি ছেলে একটি মেয়ে। একটা কানাডায় একটা আমেরিকায় সেটেল হয়ে গেছে। আমি ছাত্র জামানায় খুব ভালো ছিলা। কলেজের ভিপি ছিলাম। একা একাই বলে সব। আমি তো কিছু বলি না। চুপ করে শুনছি। অনেক কথা শোনার পর আমি বললাম, আপনার ভেতরে তো অনেক কিছুই আছে বুঝলাম। এখন আপনি বলেন যে, আমি আল্লাহর ছোট একটা বান্দা, ব্যস, এতটুকুই বলেন। আমি একথা বলার পর লোকটার মুখে একেবারেই তালা লেগে গেছে, যেন কিছুই আর বলতে পারছেনা। চুপচাপ বসে আছেন কিছুক্ষণ পর বললেন, হুজুর, আমি আল্লাহর বান্দা এটা বলার সাহস হয় না হুজুর। আমি মুখের উপরে তো কিছু বলতে পারি না, মনে মনে বলছি, বান্দা বলার সাহস পাবেন কেমনে? নামাজ পড়েন না, দাঁড়ি কেটে পুরো ক্লিয়ার, সুরত তো এখনো পাল্টাতে পারলেন না। আল্লাহই জানেন আর কি করেন না করেন। বান্দা হতে যা যা করা লাগে, সেগুলো কি করেন? মনে মনে বলি আর কি।

এত কিছুই লাগবে না, শুধু যদি শুধু আল্লাহর বান্দা হতে পারেন, তাহলে সে সফল হয়ে গেল। যে আল্লাহর হয়ে যাবে, আল্লাহ তার হয়ে যাবেন। আমরা যদি বন্দা হয়ে যাযই, তাহলে আল্লাহ আমাদের হয়ে যাবেন। অর্থাৎ বান্দা আল্লাহর হয়ে যাবে, আল্লাহ বান্দার হয়ে যাবে।

من كان لله كان الله له

অর্থাৎ যে আল্লাহর, আল্লাহ তার। আমাদের জীবনের সফলতা হলো, আল্লাহর বান্দা হয়ে যাওয়ার ভেতরে এবং আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হলো, আমরা আল্লাহর বান্দা। এজন্য আল্লাহকে ডাকবেন, ইয়া আল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। বান্দাদের কাজ হলো আল্লাহর জিকির বেশি করা। বান্দার কিছু কিছু সময় এমন আসে, যে সময় আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কোনো চারা থাকে না। যেমন ধরুন যে লোকটি করোনায় আক্রান্ত, তার আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই। ডাক্তারও শরীরে হাত দিয়ে ধরবে না, মরলেও ছেলেরা হাত দিয়ে ধরবে না, লাঠি দিয়ে খোঁচা দিয়ে ফেলে দেবে। দেখছেন না কিছু ভিডিও অনলাইনে? লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ যোয়ালিমিন। এই আয়াত প্রতিদিন বেশি বেশি তেলাওয়াত করবেন। এখন তো কেউই স্কুল বন্ধ করে দিতে বলছেন কেউ আবার ওয়াজ বন্ধ করে দিতে বলছেন। একজন বলেছিলো, আউশ করে পাগল হইলাম, ভালো হইলাম না। করোনা করতে করতে যখন ধরে বসবে তখন বুঝবেন। এজন্য এখনো সময় আছে-

ففروا الي الله

অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ফিরে আসো সময় আছে ভালো হয়ে যাও কারণ আমাদের জীবনে যত মুসিবত আসে এসব আমাদের হাতের কামাই, আমাদের পাপাচার আর গুনাহের কারণে আসমানের মালিক নারাজ হয়ে গেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের কঠিন কঠিন পঙ্গপাল আসছে পাকিস্তানি ইন্ডিয়ায় বিভিন্ন রাষ্ট্রে ঢুকেছে। হেলিকপ্টার দিয়ে মারার চেষ্টা করছে কিন্তু মরে না কারণ আল্লাহ সৈনিক তো এরা। ফসল কেটে দিয়ে চলে যায়। আগের জমানার সরাসরি আগুন আসতো, এখন পঙ্গপাল আসছে। এই মুসিবত গুলো দিন দিন যদি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে, তখন আর কোনো উপায় থাকবেনা। কারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করার টাকা থাকলে না করবে, টাকা যখন থাকবে না তখন কি করবে? তখন তরবারি যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। এভাবেই ধীরে ধীরে ইমাম মাহাদী আ. চলে আসবেন। এজন্য ঐ সময় যেন মসিবতে পড়ে না যাযই, এজন্য আগেভাগেই বান্দার খাতায় নাম লেখানো দরকার। আমরা সব জায়গায় নাম উঠানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু বান্দার খাতায় নাম উঠানোর চেষ্টা করলাম না, তো আমরা বোকা।

الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت

অর্থাৎ চালাক হতে গেলে আখেরাতের সফলতা অর্জন করতে হবে। দুনিয়াতে অনেকের সফল কিন্তু যে আখেরাতে সফল সে আসল সফল এমপি মন্ত্রী ইত্যাদি পদ দিয়ে কেয়ামতে সফলতা হবে না, সফলতা আসবে একমাত্র বান্দা হলে। এজন্য বান্দা হতে হবে। এমপি মন্ত্রী প্রেসিডেন্টের পাওয়ার কম, বান্দার পাওয়ার বেশি। ফিরিস্তার পাওয়ার কম, বান্দার পাওয়ার বেশি। কারণ ফিরিস্তা যেখানে যেতে পারেন না, বান্দা সেখানে যেতে পারে। যেমন নবীজির সা. আসল পরিচয় তিনি আল্লাহর খাস বান্দা যেমন কালেমার ভেতরেই আমরা আগে সাক্ষী দেই যে, নবীজি আল্লাহর বান্দা, তারপর বলি আল্লাহর রাসুল। যেমন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসুলূহু’ এখানে নবীজির ব্যাপারে আগে আবদুহু তথা বান্দা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তাহলে আমাদের নবীজির সা. প্রথম পরিচয় হলো বান্দা, আর এই বান্দার পাওয়ার জিব্রাঈলের আ. চেয়েও বেশি। আমাদের নবী বান্দা যার হাতের ইশারায়

وانشق القمر

চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। বান্দার পাওয়ার এত যে এক রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, মসজিদে আকসা থেকে সাত আসমান পার হয়ে সিদরাতুল মুনতাহা পার হয়ে জিবরাঈল আমীন যেখানে যেতে পারেন না, সেই আরশে আজীমে চলে গেছেন। যেখানে আর কারও নিমন্ত্রণ নেই, সেখানে বান্দার নিমন্ত্রণ। আরে বান্দাকে নিমন্ত্রণ করেছেন সরাসরি আল্লাহ। আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাকে সফর করিয়েছি,

سبحان الذي اسري

বান্দর পাওয়ার বেশি কারণ বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক। আর

من كان لله كان الله له

অর্থাৎ যে আল্লাহর, আল্লাহ তার। এজন্য বান্দার মর্যাদা এত উপরে, যেখানে জ্বীনও যেতে পারে না ফিরিশতাও যেতে পারে না। এজন্য বান্দার পদ অর্জন করো। বান্দার জন্য আল্লাহ কিনা করেন? বান্দার জন্য আল্লাহ অনিয়ম কে নিয়োম করে দেন, কিন্তু শর্ত হলো, বান্দা আল্লাহর পছন্দের হতে হবে। আর যদি বান্দা অপছন্দের হয়, তাহলে তার জন্য নিয়ম হবে গজব। তখন নিয়ম ক্যান্সেল হয়ে অনিয়মের গজব শুরু হয়ে যাবে, কিন্তু যদি পছন্দের হয়, তাহলে অনিয়ম নিয়ম হয়ে নুসরত (সাহায্য) হয়ে যাবে। যেমন শাহজালাল মুজার্রাদে ইয়ামেনি রহ. আল্লাহর বান্দা। তিনি পানির মধ্যে জায়নামাজ বিছিয়েছেন। অথচ পানির নিয়ম হল কাপড় ভেজে, ভাসে না,  কাঠ ভাসে। পানির নিয়ম হলো, কাপড় ভেজে। কিন্তু যখন সেটা বান্দ বিছিয়েছেন, তখন আল্লাহ বলেন সাবধান ভিজাস না। অনিয়ম এটা নিয়তে পরিনত হয়ে গেছে, অর্থাৎ জায়নামাজকে নৌকা বানিয়ে উত্তাল সমুদ্র পার হয়ে চলে গেছে।

হযরত ইবরাহীম আ. আল্লাহর বান্দা। তাঁকে আগুনে ফেলা হয়েছে। অথচ আগুনের বৈশিষ্ট্য হলো সে জ্বালিয়ে দেয়, মুআনাকা-মুসাফাহা করে না। আদর করে মাথায় হাত দেয় না, চুমা খেয়ে আই লাভ ইউ বলে না, বরং আগুনের নিয়ম হলো জ্বালিয়ে ছাই বানিয়ে দেয়। সে আগুনে যখন এমন কাউকে ফেলা হয়েছে, যিনি আল্লাহর বান্দা, যাঁর জন্য আল্লাহ আছেন। তখন আল্লাহ আগুনকে নতুন নিয়ম জারি করলেন যে, হে আগুন, তোমার বৈশিষ্ট্য হলো জ্বালিয়ে দেওয়া। কিন্তু আজকে নতুন নিয়ম পরিবর্তন করে আমার বান্দা ইবরাহীমের আ. নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে দাও। কারণ ইবরাহীম যে আমার খলিল (বন্ধু)। আল্লাহ বলেন, আমি আগুনকে বললাম,

قلنا يا نار

আগুনকে পোড়ানোর ক্ষমতা ক্যান্সেল করে দিলেন আল্লাহ। কার জন্য করলেন? বান্দার জন্য। বান্দার জন্য বে-আইন আইন হয়ে গেল। অর্থাৎ যে আগুনের নিয়ম হলো, জ্বালিয়ে দেওয়া, সে আগুনের নতুন নিয়ম হলো, আরামদায়ক ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।

শুধু কি তাই? বান্দার জন্য আল্লাহ পানির রাস্তা বানিয়েছেন। হাটার রাস্তা নয়, বরং ঘোড়া চালানোর রাস্তা। যে সাহাবীরা কুরআন-হাদিস বর্ণনা করেন, সেই সাহাবীরা মুমিনদের কারামত বর্ণনা করেন। সাহাবী সাগর পাড়ি দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে যাবেন, সাগর পাড়ে এসে, পানির মধ্যে ঘোড়ার দুই পা ফেলে আল্লাহকে ডেকে বলেন, আল্লাহ যাই?
আল্লাহ বলেন ঠিক আছে যাও। সাহাবী রা. সবাইকে ডেকে বলে দিলেন, কেউ নিচের দিকে তাঁকাবে না। শুধু লাগাম টানবে, আর সামনে আগাবে। পিপাসা লাগলে নিচের পানি পান করবে না। তাকবীর দিয়ে সামনে যখন সাহাবী সামনে চলতে লাগলেন, পেছন পেছন সকল সাহাবী সমুদ্রে তাঁদের ঘোড়া চালিয়ে দিলেন। পানির উপর দিয়ে চলে যাচ্ছেন, সাতরিয়ে নয়, বরং ঘোড়া চালিয়ে। এমনকি ঘোড়ার খুরের মধ্যেও পানি লাগছে না।

বলেন সুবহানাল্লাহ। সুবহানাল্লাহ বললে জান্নাতের ছায়াদার গাছ হবে। বলেন সুবহানাল্লাহ। মিজান ভরা নেক হবে। বলেন সুবহানাল্লাহ।

চলতে চলতে যখন সমুদ্রের মাঝ পথে চলে গেলেন, তখন এক সাহাবীর ঘোড়ার গলায় পানির একটা মগ বাঁধা ছিলো। চলন্ত অবস্থায় পেয়ালার রশিটা ছিঁড়ে পড়ে গেছে। কিন্তু আমি নির্দেশ নিচে তাকানো যাবে না, সফরে কেউ যাত্রা বিরতি করবে না, শুধু সামনে চলবে। দলবদ্ধভাবে চলবে, কেউ পিছনে পড়বে না। পিছন থেকে সৈনিক চিৎকার দিয়ে বলছেন, হে প্রধান সেনাপতি, আমার পানির পিয়ালাটা পড়ে গেছে একটু দাঁড়ান। সেনাপতি বললেন নিচে তাকিও না, সামনে চলো, অনেক ভালো ভালো পিয়ালা সামনে আছে। সেনা বললেন যে, সেনাপতি, এটা যেমন তেমন পেয়ালা না এটি এমন পেয়ালা, যার মধ্যে আমার নবীজির সা. ঠোট মোবারক লাগিয়ে পানি পান করেছেন, যে জায়গায় নবীজির ঠোঁটে লাগিয়েছেন ওই জায়গাটা আমি চিহ্ন দিয়ে রেখেছি, আমি যখন পানি পান করি, ওই জায়গায় ঠোঁট রেখে পানি পান করি। পিয়ালার ঐ জায়গায় ঠোঁট লাগিয়ে আমি নবীজির ঠোটের খুশবু নিই। আমি আমার পেয়ালা উঠিয়ে না দিলে আমি সামনে যাবো না। কারণ এটা যেনতেন পিয়ালা না।

কিছু কমদামী জিনিষ অনেক মূল্যবান হয়ে যায়। আমি এক বুড়া নেতা (কাকড় বিশ্বাস) বাড়িতে গিয়েছি। গিয়ে দেখি মোটামুটি স্বাধীনতার পর থেকে যত পত্রিকা ছাপা হয়েছে, সব তার বাড়িতে বাঁধাই করে করে রাখা। কোরআন শরীফও মানুষ এত যত্ন করে রাখে না। বিশাল রুম ভর্তি পত্রিকা। স্মৃতির আলমারি আছে একটা, তার মধ্যে একটা মেডেল আছে, একটা মগ আছে। রেখে দিয়েছে। প্রত্যেকটার নিচে আবার প্রাপ্তির বিষয়টি লিখে রেখেছে। ব্যক্তির ছোয়ার কারণে জিনিষের দাম বেড়ে যায়।

আমার বাবার আলমারিতে ২৫ বছর আগের পাগড়ী যেটা পীরজি হুজুর, হাফেজ্জী হুজুরের কাছ থেকে বড়কাটারা মাদরাসায় হিফজ শেষ করার পর পেয়েছিলেন, সেটা আমার মাথায় পেঁচিয়ে দিয়েছেন আর কেঁদে কেঁদে বলছেন, এই পাগড়িটার কত যে দাম এটা পীরজি হুজুর এবং হাফেজ্জী হুজুর আমার মাথায় পেচিয়ে দিয়েছিলেন।

باب صلاة الطالب والمطلوب

এক সাহাবী নবীজিকে সা. খুশি করে ফেলছেন। নবীজি বলেলেন, হে সাহাবী তোমার কি কি দরকার আমাকে বল যা চাইবে সেটাই দেব সাহাবী বললেন আপনার লাঠিটা দেন। নবীজি সা. লাঠি দিয়ে দিয়েছেন। লাঠিটা পেয়ে তিনি বুকের মধ্যে আগলে রেখেছেন, লাঠিকে চুমা খাচ্ছেন। বাড়িতে নিয়ে আতর-গোলাপ লাগিয়ে সুন্দর করে আলমারিতে রেখে সন্তানদের দেখাচ্ছেন। এটা নবীজির সা. হাতের লাঠি, তিনি আমাকে দিয়েছেন। এটা আলমারিতে রেখে দিলাম। এই লাঠির কোন ইজ্জত নষ্ট হয়, এমন কোন আচরণ কখনো করবে না। আর আমি মারা গেলে আমার লাশের সাথে লাঠিটাও দিয়ে দিয়ে। আমার মন বলে, আমার নবীর হাতের ছোঁয়া যে লাঠিতে লেগেছে, সে লাঠি যে কবরে থাকবে ঐ কবরে আল্লাহ আগুন পাঠাবেন না।

كتاب الجنائز

মুসলিম শরীফের হাদীস নবীজিকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন নবীজির সা. একজন খাদেম এসে চাদর বিছিয়ে দিচ্ছেন। পৃথিবীর আর কারো কবরে বিছানা নাই আবু বকরের রা. কবরে বিছানা নাই, মাহদী আ. আসবেন মৃত্যুবরণ করবেন, তার কবরেও বিছানা থাকবে না, ঈসা আ. আসবেন, তাঁর কবরেও বিছানা থাকবে না। এটা একমাত্র নবীজির সা. নবীজির সা. শান। কারণ নবী তো নবী বিশ্বনবী। তিনি নবীদের নবী। তাঁর সম্মানের কবরেও, আখেরাতেও মাকামে মাহমুদওয়ালা নবী।

কয়েকজন সাহাবী এসে বললেন, কিরে কবরের বিছানা বিছাও কেন? তিনি বললেন, খবরদার! কাপড়ে হাত দিওনা। আমাকে বিছাতে দাও। দেখোনা কাপড়টা কত পুরাতন। এর উপরে আমার নবীজি সা. এত শুয়েছেন এত আরাম করেছেন যে, নবীজির গায়ের ছোয়ায় ছোয়ায় এত দাম হয়ে গেছে, এ কাপড়টা নবীজির সা. সাথে কবরে গেলে এর সম্মান থাকবে। এর সাথে অন্যের শরীরের ছোঁয়া লাগলে এর মান নষ্ট হবে। আমি আমার নবীজির সা. চাদরের সম্মান নষ্ট হতে দেবো না।

এজন্য খাদিজাতুল কুবরা ইন্তেকালের আগে নবীজিকে বলছিলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি ইন্তেকাল করলেন আপনার শরীরের একটা কাপড় আমার কাফন বানিয়ে দেবেন। কারণ যে কাপড়ের সাথে আপনার দেহের ছোঁয়া লেগেছে, ঐ কাপড় আমার শরীরে থাকলে কবরে গেলে প্রমাণ হবে আমি আপনার দলের লোক। তোমার কাছে কোন বুযুর্গের হাতে ছোঁয়ার কোনো জিনিষের দাম না থাকলে কি হবে, সাহাবীর কাছে তো নবীজির হাতের জিনিষের দাম আছে।

সাহাবী আজব সাহাবী। নবীজিকেও সা. খুশি করতে চান, আল্লাহকেও খুশি করতে চান। নবীজী সা. বললেন, আমাকে অমুকে খুব জ্বালায় রে, তার কল্লাটা আনলে ভালো লাগতো। সাহাবী যাওয়ার পথে আছরের সময় হয়ে গেছে, এখন দুশমন ধরতে গেলে আসরের নামাজ ছুটে যায়, আর আছর পড়তে গেলে দুশমন চলে যায়। কি করা? এই মুহূর্তে তিনি হাঁটছেন আর নামাজ পড়ছেন।

সেই সাহাবী বললেন সেনাপতি, নবীজির ঠোঁটের ছোঁয়া লাগা সেই পিয়ালাটা আমাকে উঠিয়ে দেন। সেনাপতি এক হাতে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে আরেক হাত  পানির দিকে দিয়ে বলছেন, কিরে কেউ আছো নাকি? হে আল্লাহর মাখলুক, এই মাত্র একটা পেয়ালা সাগর পানিতে পড়ে গেছে যে পেয়ালার মধ্যে আল্লাহর দোস্তের ঠোঁট লেগেছে। জানো? আমরা হিজবুল্লাহ (আল্লাহর সৈনিক), আমরা যুদ্ধে যাচ্ছি নবীজির সা
ঠোটের ছোঁয়া যেই পিয়ালায় লেগেছে সেটা ফিরিয়ে দাও। একথা আহবান করতে দেরি হয়েছে, পানির নিচ থেকে একটা মাছ পিয়ালাটা সেনাপতির হাতে পৌঁছে দিয়েছে।

جو تو میرا تو سب میرا فلک میرا زمیں میری
اگر اک تو نہیں میرا تو کوئی شئے نہیں میری

বান্দা যখন আল্লাহর পছন্দের হয়ে যায়, তখন আল্লাহ বান্দার হয়ে যায়। আর

من له المولي فله الكل

মাখলুকাতও তার কথা বলে, তার গোলাম হয়ে যায়। এজন্য একজন মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো সে আল্লাহর বান্দা। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সা. গল্প শুনাচ্ছেন, বন্ধু, আমি এক বান্দার কথা আপনাকে শুনাই, দেখেন সে বলে কি-

ذِكْرُ رَحْمَةِ رَبِّكَ عَبْدَهُ زَكَرِيَّا
إِذْ نَادَى رَبَّهُ نِدَاء خَفِيًّا

অর্থাৎ এটা আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি। যখন সে তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করেছিল নিভৃতে।
সুরা মারইয়াম, আয়াত: ২-৩

আল্লাহ বলেন, বন্ধু, দেখছেন? জাকারিয়া আ. আমার কাছে মেহরাবের কাছে বসে গোপনে গোপনে নি:শব্দে, চুপকি চুপকি ডেকে বলেন, ও আল্লাহ, আমাকে একটা সন্তান দেন। কোন বয়সে ডাকছেন? নতুন বিয়ে করে? না না। চরম বয়োবৃদ্ধ, হাড্ডি দুর্বল, চুল -দাঁড়ি পেকে গেছে, বিবিও আবার বন্ধা। এ রকম অনিয়মিত আমার কাছে চায় আল্লাহ-

رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا

অর্থাৎ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে একা রেখো না।
সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯

وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ

তুমি তো উত্তম ওয়ারিসদাতা।
সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯

হে আল্লাহ তুমি আমাকে ওয়ারিশ দাও। ইয়াকুবের আ. ওরাসাত পায় এমন কেউ আমাকে দাও। আমাকে তুমি একা ছেড়ে দিও না আল্লাহ। আমার বান্দার চেয়েছে গোপনে, কিন্তু আমি দিয়েছি প্রকাশ্যে। আমি তাঁকে একা ছাড়িনি। সাথে সাথেই বলে দিয়েছি,

يَا زَكَرِيَّا إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ اسْمُهُ يَحْيَى لَمْ نَجْعَل لَّهُ مِن قَبْلُ سَمِيًّا

অর্থ: হে যাকারিয়া, আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম হবে ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে এই নামে আমি কারও নাম করণ করিনি।
সুরা মারিয়াম, আয়াত: ৭

অর্থাৎ হে যাকারিয়া, সন্তান চেয়েছিলে, কোনো মেয়ে দিলাম না, ছেলে দিলাম। এমন ছেলে দিলাম যাকে নবী বানিয়ে দিলাম, শুধু নবী না তাকে আসমানী কিতাবও দিলাম,শুধু তাই না আনকমন নামও মেনশন করে দিলাম, তার নাম হবে ইয়াহইয়া। এই নামে পৃথিবীতে আর কারও নাম রাখা হয় নাই।
ছোট অবস্থাতেই চার বছর বয়সেই নবী বানিয়ে দিলাম।

কিন্তু দুআ করে যেন বিপদে পড়ে গেলেন। আল্লাহ, আমার কামানের বাচ্চা হবে

رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي

হে আমার পালনকর্তা আমার অস্থি বয়স-ভারাবনত হয়েছে।
সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৪

وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا
অর্থ: বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে;
সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৪

وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا

এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা;
সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৫

হে আল্লাহ, হে আল্লাহ আমার বাচ্চা কেমনে হবে? আমার হাড্ডি তো দুর্বল, চুল-দাঁড়ি সব সাদা হয়ে গেছে। ওদিকে আমার স্ত্রীও তো বন্ধ কেমনে হবে? যৌবনও তো নাই। আল্লাহ বললেন, তোমারটা অনিয়মেই হবে, বিবির কাছে যাওয়াই লাগবেনা। তোমার যৌবন ও লাগবে না। এই যামানায় তো ঘর সংসার করার পরেও বাচ্চা হয়না, কিরে বাচ্চা হয় না কেন? বলে, ভালোবাসা জমুক আগে। আমার কাছে এসে এক লোক বললেন, হুজুর, আমার মেয়ের বাচ্চা-কাচ্চা হয় না। আমি বললাম কেন হয় না? বলে, আমরা হতে দেই না। কেন দেন না? বলে, ভালোবাসা আগে জমুক। বললাম, আপনি উল্টা মহব্বত জমাতে চান কেন? বাচ্চা হইলে তো উভয়ের মধ্যে মহব্বত জমানোর জিম্মাদার হবেন আল্লাহ। অনেক মহিলারা বাচ্চা নেয়না, স্বামী এসে বলে, কি রে বাচ্চা নাও না কেন? বলে তুমি আমার ভালোবাসো কি না? স্বামী বলে, আচ্ছা ঠিক আছে, আই লাভ ইউ। বলে না এত টুকু তে হবে না। ঠিক আছে, দোকান লিখে দিলাম। বলে না এতেও হবে না। বলে একাউন্টে যে টাকা আছে ওটা দিয়ে দিলাম। বলে না হবে না। ঠিক আছে উত্তর পাড়ার জায়গা এক কানি লিখে দিলাম। স্ত্রী বলে, এবার হতে পারে। এটা হল এখনকার বাচ্চাকাচ্চা নেওয়ার সিস্টেম এখন। আগে তোমার থেকে সবকিছু নেবে, তারপর তোমার বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।

হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম বললেন,

رَبِّ اجْعَل لِّي آيَةً

হে আমার পালনকর্তা, আমাকে একটি নির্দশন দিন।
সুরা মারইয়াম, আয়াত: ১০

অর্থাৎ এমনি এমনি কি হয়? একটা নিদর্শন তো বলেন। আল্লাহ বললেন,

آيَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَ لَيَالٍ سَوِيًّا

তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ অবস্থায় তিন দিন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলবে না
সুরা মারইয়াম, আয়াত: ১০

অর্থাৎ তুমি তিনদিন কথা বন্ধ রাখবা ওদিকে বাচ্চা হবে। তিনি বললেন, বন্ধার বাচ্চা হবে? আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ। এই যে অনিয়ম নিয়ম হচ্ছে কার জন্য হচ্ছে? বান্দার জন্য। এখন আমরা যদি চাই আমাদের জন্যও অনিয়ম নিয়ম হোক, তাহলে বান্দা হওয়ার দরকার আছে না নাই? অবশ্যই আছে। কিভাবে হবেন নামাজ বাদ দিয়ে? নিশ্চয় না। গুনাহ করে বান্দা হবেন? নিশ্চয় না। ইসলাম ছেড়ে? নিশ্চয় না। তাহলে বান্দা হতে হলে এগুলো সব ধরতে হবে না হবে না শুধু বান্দা না মর্যাদার বান্দা যে বান্দার জন্য অনিয়ম নিয়ম হয় এমন বান্দা যদি হতে হয় কিছু কোয়ালিটি আছে না আল্লাহ বলেন

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ أُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

অর্থ: যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। সে সমস্ত লোক যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
তারাই হল সত্যিকার ঈমানদার! তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রুযী।
সুরা আনফাল, আয়াত: ২-৪

যদি বান্দা আল্লাহর পছন্দের কোয়ালিটিগুলো মেইন্টেইন করতে পারে, তাহলে বান্দাকে ইজ্জত বাড়িয়ে দেবেন আল্লাহ, রিযিক দেবেন আল্লাহ, মাগফিরাত দিবেন আল্লাহ। ইজ্জতও ফিরে আসবে, মাফ চাইবে আর মাফ হয়ে যাবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.