প্রিয় পাঠক,
পেশাব-পায়খানারত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া ইসলামী শরীয়তে মাকরুহে তাহরীমি বলা হয়েছে। কেননা সে অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা বা সালামের উত্তর দেওয়া জায়েয নয়। অবশ্য কেউ অজান্তেই যদি সালাম দিয়ে দেয়, তাহলে ওযূ করার পর তার উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। অথচ বর্তমানের তথাকথিত কিছু শায়খরা প্রচার করছে যে, সর্বাবস্থায় সালাম দেওয়া যাবে। এমনকি তারা এটাও দাবি করেছেন যে, ‘কোনো অবস্থায় সালাম দেওয়া নিষেধ রয়েছে’ এমন কোনো হাদিস পৃথিবীতে নেই এবং সালাম দেওয়া যাবেনা, এরকম জায়গা পৃথিবীতে নেই। অতএব যারা মদ খাচ্ছে, তাদেরকেও সালাম দেওয়া যাবে, পেশাব-পায়খানা করছে, তাকেও সালাম দেওয়া যাবে। (নাউযুবিল্লাহ)।
তাহলে চলুন, এ ব্যাপারে হাদিসে কি আছে দেখে নেওয়া যাক। হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً مَرَّ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَبُولُ فَسَلَّمَ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক সাহাবী পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন প্রস্রাব করছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম করলেন। কিন্তু তিনি তাঁর জবাব দিলেন না।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৭০
অন্য আরেকটি হাদিসে আরও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَجُلاً مَرَّ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَبُولُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا رَأَيْتَنِي عَلَى مِثْلِ هَذِهِ الْحَالَةِ فَلاَ تُسَلِّمْ عَلَىَّ فَإِنَّكَ إِنْ فَعَلْتَ ذَلِكَ لَمْ أَرُدَّ عَلَيْكَ
অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক সাহাবী নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তখন পেশাবরত ছিলেন। তিনি তাঁকে সালাম করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি আমাকে এরকম অবস্থায় দেখতে পেলে, আমাকে সালাম দেবে না। কারণ তুমি তা করলে আমি তোমার সালামের উত্তর তো দিতে পারবো না।
সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৫২
হাদিসের মান:
১. ইমাম আলাউদ্দীন মুগলতায়ী রহ. বলেন,
إسناده لا بأس به
অর্থাৎ এ হাদিসটির সনদে কোনো সমস্যা নেই।
সূত্র: শরহে ইবনে মাজাহ খ. ১ পৃ. ১৯০
২. ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,
سنده حسن
অর্থাৎ হাদিসটির সনদ হাসান।
সূত্র: আল ফুতুহাতুর রব্বানিয়্যাহ খ. ১ পৃ. ৩৯৪
শুধু তাই নয়, সালাফী বা আহলে হাদিসদের ইমাম শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ. সনদটিকে সহিহ বলেছেন।
সূত্র: সহিহ আল জামে পৃ. ১৬১ হাদিস নং- ৫৭৫
চার মাযহাবের ফাতাওয়া:
ذهب المالكية والشافعية والحنابلة إلى كراهة إلقاء السلام على المتغوط وكره ذلك الحنفية أيضا
অর্থাৎ মালেকী, শাফেয়ী, হাম্বলী ও হানাফী মাযহাবের ইমামরাও পেশাব-পায়খানাকারীকে সালাম দেওয়া মাকরুহ (তাহরীমি) মনে করেন।
সূত্র: আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ খ. ৩৪ পৃ. ১১
সকল উম্মতের সিদ্ধান্ত:
ইমাম ইবনে হুমাম হানাফী রহ. বলেন,
أجمعوا أن المتغوط لا يلزمه الرد في الحال ولا بعده لأن السلام عليه حرام
অর্থাৎ এ ব্যাপারে সকল উম্মাহ একমত যে, পেশাব-পায়খানা অবস্থায় বা তার পরে সালামের জবাব দেয়া আবশ্যক নয়, কারণ এমন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া নিষেধ।
সূত্র: ফাতাওয়া কাযিখান খ. ১ পৃ. ৭৭
এ সম্পর্কে আরো দেখুন-
মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৮৫৫৫, সুনানে আবূ দাঊদ: ১৭, সুনানে নাসাঈ: ৩৮, দারেমী: ২৬৪১
সুতরাং বুঝা গেলো, পেশাব-পায়খানা করা অবস্থায় কাউকে সালাম দেওয়া নবীজি সা. থেকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও যারা এটাকে বৈধতা দিতে চান, তারা হয়তো হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞ নতুবা ইসলাম বিদ্বেষী।