আল্লাহকে ভয় করলে ২০টি ফায়দা ৷
মা. শাকের উল্লাহ আল আসাদ ৷৷
আল্লাহ তা’লা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
অর্থ-
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো। এবং মুসলমান না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করো না ৷
সুত্রঃ- সুরা আলে ইমরান আয়াত নং ১০২ ।
আর রাসুল সাঃ হাদিসে বলেছেন-
اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ
অর্থ- তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ তা’লাকে ভয় করো ৷
অতএব আমাদের সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে ৷ আর সর্বদা আল্লাহকে ভয় করলে ২০টি ফায়দা আছে ৷
(১) আমল সমূহকে ত্রুটি মুক্ত করে করে দিবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ قُوْلُوْا قَوْلًا سَدِیْدًاۙ یُّصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ
অর্থ
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য-সঠিক কথা বল ৷ তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের আমল সমূহকে ত্রুটিমুক্ত করে দিবেন ৷
সুত্রঃ- সুরা আহযাব আয়াত নং ৭১-৭২ ।
(২) আল্লাহ তা’লা ভালোবাসবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন যে-
مَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ وَ اتَّقٰى فَاِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَّقِیْنَ
অর্থ
যে ব্যক্তি প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে ৷ অবশ্যয় আল্লাহ তা’লা মুত্তাকীদের ভালোবাসেন ৷
সুত্রঃ- সুরা আলে ইমরান আয়াত নং ৭৬ ।
(৩) প্রত্যক কাজ সহজ করে দিবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেন-
وَ مَنْ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ اَمْرِهٖ یُسْرًا
অর্থ
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজসাধ্য করে দেন ৷
সুত্রঃ- সুরা আত তালাক আয়াত নং ৪ ।
(৪) রিজিক বাড়িয়ে দিবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন যে-
وَ مَنْ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًاۙ وَّ یَرْزُقْهُ مِنْ حَیْثُ لَا یَحْتَسِبُ
অর্থ
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তা’লা তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোন পথ তৈরী করে দিবেন ৷ এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিজিক দিবেন ৷
সুত্রঃ- সুরা আত তালাক আয়াত নং ২-৩ ।
(৫) গুনাহ মাফ করে মহাপুরুস্কার দিবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন যে,
وَ مَنْ یَّتَّقِ اللّٰهَ یُكَفِّرْ عَنْهُ سَیِّاٰتِهٖ وَ یُعْظِمْ لَهٗۤ اَجْرًا
অর্থ
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার পাপরাশি মার্জনা করবেন ৷ এবং তাকে মহা পুরুস্কার দান করবেন ৷
সুত্রঃ- সুরা আত তালাক আয়াত নং ৫ ।
(৬) সত্য মিথ্যা যাচাই করার জন্য অন্তরদৃষ্টি দিবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ تَتَّقُوا اللّٰهَ یَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّ یُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ١ؕ وَ اللّٰهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِیْمِ
অর্থ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে আল্লাহ তা’লা তোমাদেরকে সত্য মিথ্যা পার্থক্য করার শক্তি দিবেন ৷
সুত্রঃ- সুরা আনফাল আয়াত নং ২৯ ।
(৭) মুহসিনীনদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন –
مَنْ یَّتَّقِ وَ یَصْبِرْ فَاِنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِیْنَ
অর্থ
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে এবং সবর করে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’লা মুহসিনীনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না ৷
সুত্রঃ- সুরা ইউসুফ আয়াত ৯০ ৷
(৮) আসমান জমিনের বারকাহ’র দরজা খুলে দিবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন-
وَ لَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَ اتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَیْهِمْ بَرَكٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الْاَرْضِ
অর্থ
যদি সে জনপদবাসী ঈমান আনত, এবং আল্লাহকে ভয় করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর বরকতের দরজা উন্মুক্ত করে দিতাম ৷
সুত্রঃ- সুরা আরাফ আয়াত নং ৯৬ ।
(৯) পরকালে উত্তম ঘরের ব্যবস্থা করে দিবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন-
وَ لَدَارُ الْاٰخِرَةِ خَیْرٌ لِّلَّذِیْنَ اتَّقَوْا١ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
অর্থ
যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পরকালের আবাস (ঘর) কতই না শ্রেয়? তোমরা কি বুঝ না?
সুত্রঃ- সুরা ইউসুফ আয়াত নং ১০৯ ।
(১০) আল্লাহকে ভয় করলে দু’টি জান্নত দিবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন-
وَ لِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ جَنَّتٰنِۚ
অর্থ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে হাজির হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে তার জন্য দু’টি জান্নাত ৷
সুত্রঃ- সুরা আর রহমান আয়াত নং ৪৬।
(১১) আল্লাহকে ভয় করলে মৃত্যুর পর তার ঠিকানা হবে জান্নাত ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন-
وَ اَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ وَ نَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰىۙ فَاِنَّ الْجَنَّةَ هِیَ الْمَاْوٰىؕ
অর্থ
যে ব্যক্তি নিজের রবের সামনে দাড়াবার ব্যাপারে ভয় করেছিল ৷ এবং নফসকে কারাপ কামনা থেকে বিরত রেখেছিল ৷ তার ঠিকানা হবে জান্নাত ৷
সুত্রঃ- সুরা আন-নাজিয়াত আয়াত নং ৪০-৪১।
(১২) যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতে অসংখ্য নিয়ামত ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন-
نَّ لِلْمُتَّقِیْنَ مَفَازًاۙ حَدَآئِقَ وَ اَعْنَابًاۙ وَّ كَوَاعِبَ اَتْرَابًاۙ وَّ كَاْسًا دِهَاقًاؕ لَا یَسْمَعُوْنَ فِیْهَا لَغْوًا وَّ لَا كِذّٰبًاۚ
অর্থ
নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সাফল্য ৷ উদ্যানরাজি ও আঙ্গুর ৷ সমবয়স্কা পূর্ণ যৌবনা তরুণী ৷ এবং পূর্ণ পানপাত্র ৷ সেখানে তারা অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না ৷
সুত্রঃ- সুরা আন-নবা আয়াত নং ৩১-৩৫ ।
(১৩) যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জাহান্নাম থেকে নাজাত দেয়া হবে ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেন-
ثُمَّ نُنَجِّی الَّذِیْنَ اتَّقَوْا وَّ نَذَرُ الظّٰلِمِیْنَ فِیْهَا جِثِیًّا
অর্থ
তারপর আমি মুত্তাকীদের নাজাত দিবো ৷ এবং জালেমদেরকে তার মধ্য নিক্ষিপ্ত অবস্থায় রেখে দেবো ৷
সুত্রঃ- সুরা মরয়াম আয়াত নং ৭২ ।
(১৪) যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন ৷ যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন –
مَنْ خَشِیَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَیْبِ وَ جَآءَ بِقَلْبٍ مُّنِیْبِۙ اِ۟دْخُلُوْهَا بِسَلٰمٍ١ؕ ذٰلِكَ یَوْمُ الْخُلُوْدِ
অর্থ
যারা না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে, এবং বিনীত চিত্তে উপস্থিত হয় ৷ তাদের বলা হবে- তোমরা এতে শান্তিতে প্রবেশ কর, তা অনন্ত জীবনের দিন ৷
সুত্রঃ- সুরা ক্বাফ আয়াত নং ৩৩-৩৪ ।
(১৫) কিয়ামতের দিবসে আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া প্রদান করবে ৷ যেমন রাসুল সাঃ বলেছেন-
ورجل ذكر الله خاليا ففاضت عيناه
অর্থ
যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে আল্লাহর ভয়ে তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে ৷ আল্লাহ তা’লা তাদেরকে কিয়ামতের দিবসে আরশের নিচে ছায়া দিবেন ৷
সুত্রঃ- সহীহ বোখারী হাদিস নং ৬৬০ ।
(১৬) জাহান্নামের আগুন তাদের স্পর্শ করতে পারবে না ৷ যেমন রাসুল সাঃ হাদিসে বলেছেন-
قَالَ رَسُول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
অর্থ
রাসুল সাঃ বলেছেন, জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না ৷ আল্লাহর ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে, এবং আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ নিরাপত্তার জন্য পাহারা দিয়ে ঘুম বিহীনভাবে রাত পার করে ৷
সুত্রঃ- তিরমিযি হাদিস নং ১৬৩৯ ।
(১৭) আল্লাহকে ভয় করার কারণে অধিকাংশ লোক জান্নাতে যাবে ৷ যেমন রাসুল সাঃ বলেছেন –
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ ” تَقْوَى اللَّهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ
অর্থ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাঃ কে প্রশ্ন করা হলো- কোন কর্মটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন আল্লাহ্ভীতি, ও উত্তম চরিত্র।
সুত্রঃ- জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২০০৪ ৷
(১৮) যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের কিয়ামতের দিন নিরাপত্তা দেয়া হবে ৷ যেমন হাদিসে কুদসিতে এসেছে যে-
إذا خافني في الدنيا آمنته يوم القيامة
অর্থ
যদি কেউ পৃথিবীতে আমাকে ভয় করে, আমি কিয়ামতের দিবসে তাকে নিরাপত্তা দিবো ৷
সুত্রঃ- সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং ৬৩৯ ।
(১৯) যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা কখনো জাহান্নামে যাবে না ৷ যেমন হাদিসে এসেছে যে-
قَالَ لَا يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ تَعَالَى حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، وَلَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدُخَانُ نَارِ جَهَنّم
অর্থ
রাসুল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র ভয়ে ক্রন্দন করেছে, সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না দুধ স্তনে পুনঃপ্রবেশ করবে। আর আল্লাহ্র রাস্তায় ধূলা এবং জাহান্নামের আগুনের ধোঁয়া একত্রিত হবে না।
সুত্রঃ- সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১০৮
(২০) মুত্তাকীদের ক্ষমা করার একটি দৃষ্টান্ত ৷
হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এটাও বলতে শুনেছি যে, কোন এক ব্যক্তির মৃত্যুর সময় হাযির হল। যখন সে জীবন হতে নিরাশ হয়ে গেল। তখন সে তার পরিজনকে ওসীয়াত করল, আমি যখন মরে যাব তখন আমার জন্য অনেকগুলো কাষ্ঠ একত্র করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিও। আগুন যখন আমার গোশত খেয়ে ফেলবে এবং আমার হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে আর আমার হাড়গুলো বেরিয়ে আসবে, তখন তোমরা তা পিষে ফেলবে। অতঃপর যেদিন দেখবে খুব হাওয়া বইছে, তখন সেই ছাইগুলোকে উড়িয়ে দেব। তার স্বজনেরা তাই করল। অতঃপর আল্লাহ্ সে সব একত্র করলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ কাজ তুমি কেন করলে? সে জবাব দিল, আপনার ভয়ে। তখন আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। উক্বাহ ইব্নু আম্র (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে ঐ ব্যক্তি ছিল কাফন চোর।
সুত্রঃ- সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪৫২
প্রিয় পাঠক বন্ধুগণঃ- চলুন সকলেই প্রতিনিয়ত আল্লাহকে ভয় করে চলি ৷ আল্লাহ আমাদের সকলকে মুত্তাকী হওয়ার তাওফীক দিন ৷ আমীন ৷