পুরুষের জন্য ঈদুল আযহার নামাজ:
ঈদুল আযহার নামায প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষের উপর ওয়াজিব। নিন্মে কয়েকটি দলীল দেওয়া হলো,
এক.
পবিত্র কুরআনুল কারীমের ভেতরে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা আদেশ দিয়ে বলে-
فصل لربك وانحر
অর্থাৎ আপনি আপনার রবের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কোরবানী করুন।
সুরা কাউসার-২
আয়াতের তাফসীর:
প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা কুরতুবী রহ. এবং আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপথী রহ. এই আয়াতের অধীনে লিখেছেন,
قال عكرمة وعطاء و قتادة فصل لربك وانحر صلاة العيد يوم النحر ونحر نسكك فعلى هذا يثبت به وجوب صلاة العيد والأضحية
অর্থ: হযরত ইকরিমা, হযরত আতা এবং হযরত কাতাদাহ রহ. বলেন, فصل لربك এর মধ্যে فصل দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঈদের নামাজ
এবং وانحر দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরবানী।
এতে প্রমাণিত হয় যে, ঈদের নামাজ এবং কুরবানী ওয়াজিব।
সূত্র: তাফসীরে মাযহারী খ. ১০ পৃ. ৩৩৭ তাফসীরে কুরতুবী খ: ২০ পৃ: ১৯৫
ইমাম আবূ বকর জাসসাস রহ. এই আয়াতের অধীনে লিখেছেন,
قال الحسن صلاة العيد يوم النحر و نحر البدن … قال أبو بكر هذا التأويل يتضمن معنين أحدهما إيجاب صلاة الأضحى والثاني وجوب الأضحية
অর্থ: হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন,
এই আয়াতে যে فصل لربك দ্বারা যে নামাজের কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে ঈদের নামাজ
এবং وانحر দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরবানী।
ইমাম আবু বকর জাসসাস রহ. বলেন, এতে দুটি বিষয় প্রমাণিত হয় ক. ঈদের নামাজ ওয়াজিব খ. কুরবানী করা ওয়াজিব।
সূত্র: আহকামুল কুরআন (জাসসাস) খ. ৩ পৃ. ৪১৯ (সূরা কাওছার এর তাফসীর)।
দুই.
হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فَقَالَ إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِه مِنْ يَوْمِنَا هٰذَا أَنْ نُصَلِّيَ ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ هٰذَا فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا وَمَنْ نَحَرَ فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ يُقَدِّمُه لِأَهْلِه لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَيْءٍ
অর্থ: হযরত বারা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুৎবা দেয়ার সময় বলতে শুনেছিঃ আমাদের আজকের এ দিনে সর্বপ্রথম আমরা যে কাজটি করব তা হল সালাত আদায়। অতঃপর আমরা ফিরে গিয়ে কুরবানী করব। যে ব্যক্তি এভাবে করবে সে আমাদের সুন্নাতকে অনুসরণ করবে। আর যে ব্যক্তি পূর্বেই যবহ্ করল, তা তার পরিবার পরিজনের জন্য অগ্রিম গোশত প্রেরণ, তা কিছুতেই কুরবানী নয়।
সূত্র: সহীহ বুখারী হাদিস: ৫৫৬০
তিন.
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন,
قال جندب بن سفيان البجلي رضى الله عنه صَلّى النبيُّ ﷺ يَومَ النَّحْرِ ثُمَّ خَطَبَ ثُمَّ ذَبَحَ فَقالَ مَن ذَبَحَ قَبْلَ أنْ يُصَلِّيَ فَلْيَذْبَحْ أُخْرى مَكانَها ومَن لَمْ يَذْبَحْ فَلْيَذْبَحْ باسْمِ اللَّهِ
অর্থঃ সাহাবি জুনদাব ইবনে সুফিয়ান আল-বাজালী (রা.) বলেছেন, নবী কারীম (সা.) কুরবানীর দিন সালাত আদায় করলেন অত:পর খুতবা দিলেন তারপর পশু যবেহ করলেন। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে যবেহ করেছে সে যেন আবার অন্য স্থানে যবেহ করে। আর যে যবেহ করেনি সে যেন আল্লাহর নামে যবেহ করে।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদীস: ৯৮৫
চার.
আরেকটি হাদিসে এসেছে,
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا وَمَنْ نَحَرَ قَبْلَ الصَّلاَةِ فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ قَدَّمَهُ لأَهْلِهِ لَيْسَ مِنَ النُّسْكِ فِي شَىْءٍ
অর্থঃ হযরত বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজকের এ দিনে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সালাত আদায় করা। অতঃপর আমরা ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। কাজেই যে ব্যক্তি তা করল, সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করল, তা শুধু গোশ্ত বলেই গণ্য হবে, যা সে পরিবারবর্গের জন্য পূর্বেই করে ফেলেছে। এতে কুরবানীর কিছুই নেই।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস: ৯৭৬
উক্ত আয়াত এবং হাদিসগুলো থেকে প্রমাণিত হলো যে, ঈদুর আযহার নামাজ পড়া পুরুষের জন্য ওয়াজীব।
মেয়েদের জন্য ঈদুল আযহার নামাজ:
মেয়েদের উপর ঈদুল আযহার নামাজ ওয়াজিব নয়, বরং মহিলাদের জন্য ঈদগাহে বা মসজিদে গিয়ে জামাতে নামায পড়া মাকরূহ। তবে যদি নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে। সুতরাং মেয়েরা ঈদের নামাযের জন্য ইদগাহে যাবে না। তেমনিভাবে নিজ গৃহে নিজেরা জামাত করেও পড়বে না। কারণ মহিলাদের আসল স্থান হলো, তাদের বসবাসের ঘর। নারীদের মসজিদে এসে নামায পড়া রাসূল সা. পছন্দ করতেন না।
প্রমাণ: এক
হাদিসের ভেতর আসছে,
عن عبد الله بن سويد الأنصاري عن عمته امرأة أبي حميد الساعدي : أنها جاءت النبي صلى الله عليه و سلم فقالت : يا رسول الله صلى الله عليه و سلم إني أحب الصلاة معك فقال : قد علمت أنك تحبين الصلاة معي و صلاتك في بيتك خير من صلاتك في حجرتك و صلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك و صلاتك في دارك خير من صلاتك في مسجد قومك و صلاتك في مسجد قومك خير من صلاتك في مسجدي فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها و أظلمه فكانت تصلي فيه حتى لقيت الله عز و جل
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী রা. তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল সা. এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল; নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজী সা. বললেন; আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর। অথচ তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম আমার মসজিদে [মসজিদে নববীতে] নামায পড়ার চেয়ে। তারপর তিনি আদেশ দিলেন, তাঁর গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত।
সূত্র: সহীহ ইবনে খুজাইমা হাদীস: ১৬৮৯ ইলাউস সুনান খ. ৩ পৃ. ২৬
হাদিসটির মান:
১. ইবনে হিব্বান রহ. হাদিসটি সহিহ সনদে উল্লেখ্য করেছেন।
সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস: ২২১৭
২. আল্লামা আহমাদ শাকের রহ. বলেন,
حديث صحيح
অর্থাৎ এটা হাদিস সহিহ।
সূত্র: আল-মুহাল্লা খ. ৩ পৃ. ১৩৩
৩. লা-মাযহাবীদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত বলেন,
حديث قوي
অর্থাৎ হাদিসটির সনদ শক্তিশালী।
সূত্র: তাখরীজ সহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস: ২২১৭
৪. হাদিসটি সম্পর্কে আহলে হাদিসের মূখপাত্র শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. বলেন,
حديث حسن
অর্থাৎ হাদিসটির সনদ হাসান।
সূত্র: সহিহ আল-মাওয়ারেদ হাদিস: ২৮৬ সহিহ ইবনে খুযাইমা: ১৬৮৯
দুই.
অপর আরেকটি হাদিসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم قَالَ صَلَاةُ الْمَرْأَةِ فِي بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي حُجْرَتِهَا وَصَلَاتُهَا فِي مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي بَيْتِهَا
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; নারীদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় সালাত আদায়ের চাইতে তার গৃহে সালাত আদায় করা উত্তম। আর নারীদের জন্য গৃহের অন্য কোন স্থানে সালাত আদায়ের চাইতে তার গোপন কামরায় সালাত আদায় করা অধিক উত্তম।
সূত্র: সুনান আবু দাউদ হাদিস: ৫৭০
হাদিসটির মান:
১. বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আল্লামা নববী রহ. বলেন,
إسناده صحيح على شرط مسلم
অর্থাৎ ইমাম মুসলিম রহ. শর্তানুসারে হাদিসটির সনদ সহিহ।
সূত্র: আল খুলাছাহ খ. ২ পৃ. ৬৭৭
২. হাদিসটি সম্পর্কে আহলে হাদিসের মূখপাত্র শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. বলেন,
حديث صحيح
অর্থাৎ হাদিসটি সহিহ।
সূত্র: সহিহ আল-জামে হাদিস: ৩৮৩৩
উক্ত হাদিসগুলো থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ইসলামের স্বর্ণযুগ নবীজির সা. যুগেও মহিলাদের মসজিদে না আসার ব্যাপারে নবিজি সা. উৎসাহ দিয়েছেন। অতএব ১৪০০ বছর পর যখন চারদিকে ফিতনার সয়লাব, তখন মহিলাদের মসজিদে বা ঈদগাহে আসার কোনই সুযোগ আছে কি?
একটি অভিযোগ:
বুখারী শরীফের একটি হাদিসে এসেছে,
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ أُمِرْنَا أَنْ نُخْرِجَ الْحُيَّضَ يَوْمَ الْعِيدَيْنِ وَذَوَاتِ الْخُدُورِ فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَدَعْوَتَهُمْ وَيَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ عَنْ مُصَلاَّهُنَّ قَالَتْ امْرَأَةٌ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِحْدَانَا لَيْسَ لَهَا جِلْبَابٌ قَالَ لِتُلْبِسْهَا صَاحِبَتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا
অর্থ: উম্মে ‘আতিয়্যাহ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিবসে ঋতুমতী এবং পর্দানশীন নারীদের বের করে আনার আদেশ দিলেন, যাতে তারা মুসলমানদের জামা‘আত ও দু‘আয় অংশ গ্রহণ করতে পারে। অবশ্য ঋতুমতী নারীগণ সালাতের জায়গা হতে দূরে অবস্থান করবে। এক মহিলা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো কারো ওড়না নেই। তিনি বললেনঃ তার সাথীর উচিত তাকে নিজের ওড়না পরিয়ে দেয়া।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস-৩৫১ মুসলিম-৮৯০
উক্ত হাদিসে তো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া বাধ্যতামূলক?
জবাব:
১. উক্ত হাদিসটি নবীজি সা.নবুওয়াত প্রাপ্তীর এর শুরু যুগের, যে সময় ওহী নাজিল হতো। আল্লাহ তা’য়ালার তরফ থেকে ওহীর মাধ্যমে নতুন নতুন বিধান আসতো, তাই নারী সাহাবীরা রাসূল সা. এর জমানায় ওহীর বানী শুনার জন্য মসজিদে আসতো। কারণ দৈনন্দিন জীবনের বিধিবিধান জানা মহিলা সাহাবাদের জন্য জরুরী ছিল।
এটি ছিল শুধুই প্রয়োজনের তাগিতে। কিন্তু সে প্রয়োজন রাসূল সা. ইন্তেকালের দ্বারা বন্ধ হয়ে গেছে।
২. নবীজি সা. এর উপস্থিতিতে পুরুষ-নারী এক সাথে হওয়ার কারনে কোন ফিতনার আশংকা ছিল না। উপরন্তু সে সময় ফিতনার অসংখ্য ছিল না বললেই চলে। তারপর পরবর্তিতে নবিজি স: সতর্ক করে দিয়ে বললেন “তোমরা ঘরে পড়ো,সেটাই উত্তম। উপরন্তু আম্মাজান আয়েশা রা. এর মতামতও নিন্মে পেশ করা হলো,
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ قُلْتُ لِعَمْرَةَ أَوَ مُنِعْنَ قَالَتْ نَعَمْ
অর্থ: হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন যে, নারীরা কী অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তাহলে বনী ইসরাঈলের নারীদের যেমন বারণ করা হয়েছিল, তেমনি এদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন। (রাবী ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ রহ. বলেন,) আমি ‘আমরাহ রা. কে জিজ্ঞেস করলাম, তাদের কি নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি বললেন, হাঁ।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৮৬৯ সহিহ মুসলিম: ১০২৭
এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, রাসূল সা. এর ইন্তেকালের পর মুসলিম নারীদের চলনে যতটুকু পরিবর্তন হয়েছে, এতেই আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. এমন মন্তব্য করলেন, তাহলে বর্তমান নারীদের পোশাকের দৃশ্য দেখলে আম্মাজান আয়েশা রা. কী করতেন?
সাহাবায়ে কেরামের রা. আমল:
এরপর মানুষের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে সাহবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণ পুরোপুরিভাবে মহিলাদের মসজিদে আসার ব্যপারে কঠোর হয়ে গেলেন। নিন্মে কয়েকটি প্রমাণ পেশ করা হলো,
১. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: এর অভিমত:
عن سعد بن إياس أبي عمرو الشيباني أنَّه رأى عبدَ اللهِ يُخرِجُ النِّساءَ مِنَ المسجدِ يومَ الجُمُعةِ ويقولُ اخرُجْنَ إلى بُيوتِكُنَّ خيرٌ لَكُنَّ
অর্থ: হযরত আবু আমর বিন শায়বানী থেকে বর্ণিত। তিনি দেখেছেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ মহিলাদের মসজিদে থেকে বের করে দিতেন। আর বলতেন যে, মসজিদের চেয়ে তোমাদের জন্য ঘরই উত্তম।
সূত্র: মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ:২ পৃ:৩৮ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদীস-৫২০১ আত তারগীব খ:১ পৃ:১৮১ মুসান্নাফে ইবনুল জি’দ হাদিস-৪২৯ সুনানে বায়হাকী কুবরা হাদীস-৫৪৪১ আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৪৭৫ (হাদিসের সনদ ত্রুটিমুক্ত)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,
عن عبد الله بن مسعود قال صلاة المرأة فى بيتها أفضل من صلاتها فيما سواها ثم قال إن المرأة إذا خرجت تشرف لها الشيطان
অর্থ: হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মহিলাদের জন্য নিজ বাসস্থানে নামাজ আদায় করা অন্য সকল স্থানে আদায় করার চেয়ে উত্তম। কেননা, মহিলারা বাসস্থানের বাইরে বের হলে শয়তান তার দিকে উঁকি-ঝুকি মারে।
সূত্র: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস: ৫১১৬
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,
عن سعد بن اياس قال رأيت عبد الله يخرج النساء من المسجد يوم الجمعة ويقول اخرجن فان هذا ليس لكن
অর্থ: হযরত আবু আমর বিন শায়বানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে দেখেছি, তিনি জুমআর দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছেন আর বলছেন, বের হও তোমরা, এটা তোমাদের জন্য নয়।
সূত্র: সুনানে কুবরা (বাইহাকী) হাদিস: ৫৬৫১
২. উরওয়া ইবনে যুবাইর রা: এর অভিমত:
হিশাম ইবনে উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত,
عن هشام بن عروة عن ابيه انه كان لا يدع امراة من اهله تخرج الي فطر ولا الي الاضحي
অর্থ: হযরত হিশাম থেকে বর্ণিত, তার পিতা (উরওয়া ইবনে যুবাইর রা:) তাঁর পরিবারের কোন মহিলাকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে বের হতে দিতেন না।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ হাদিস: ৫৮৪
৩. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা: এর অভিমত:
নাফে রহ. থেকে বর্ণিত,
عن ابن عمر انه كان لا يخرج نساءه في العيدين
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা: তাঁর পরিবারের মহিলাদেরকে দুই ঈদে বের হতে দিতেন না।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ হাদিস: ৫৮৪২
তাবেয়ীদের অভিমত:
(১) কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ র: এ অভিমত:
حدثنا عبد الرحمن بن القاسم قال كان القاسم اشد شيئ علي العواتق لا يدعهن يخرجن في الفطر والاضحي
অর্থ: আব্দুর রহমান ইবনে কাসিম র: বলেন, হযরত কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহায় যুবতী মেয়েদের ঘর থেকে বের না হবার ব্যাপারে খুব কঠোর ছিলেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ হাদিস-৫৮৪৪
(২) ইবরাহীম নাখায়ী র: এর অভিমত:
عن منصور عن ابراهيم قال كان يكره خروج النساء في العيدين
অর্থ: মানসুর থেকে বর্ণিত, ইবরাহীম নাখায়ী র: দুই ঈদে মহিলাদের (ঘর থেকে) বের হওয়া অপছন্দ করতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ হাদিস-৫৮৪১
عن منصور عن ابراهيم قال كره للشابة ان تخرج الي العيدين
অর্থ: মানসুর থেকে বর্ণিত, ইবরাহীম নাখায়ী র: দুই ঈদে যুবতী মেয়েদের (ঘর থেকে) বের হওয়া অপছন্দ করতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ হাদিস-৫৮৪৫
(৩) আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক র: এর অভিমত:
قال ابن المبارك اكره اليوم للنساء الخروج في العيدين
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক র: বলেন, বর্তমানে মেয়েদের জন্য দুই ঈদে বের হওয়া আমি মাকরুহ মনে করি।
সূত্র: আল ইস্তেযকার হাদিস-১০৩১৪
(৪) সুফিয়ান ছাওরী র: এর অভিমত:
قال الثوري اكره اليوم الخروج للنساء في العيدين
অর্থ: হযরত সুফিয়ান ছাওরী র: বলেন, বর্তমানে মেয়েদের ঈদগাহে যাওয়া আমি মাকরুহ মনে করি।
সূত্র: আল ইস্তেযকার হাদিস-১০৩১৩
عن سفيان انه كره اليوم الخروج للنساء الي العيدين
অর্থ: হযরত সুফিয়ান ছাওরী র: থেকে বর্ণিত, তিনি বর্তমানে মেয়েদের জন্য দুই ঈদের সময় বের হওয়াকে মাকরুহ মনে করতেন।
সূত্র: সুনানে তিরমিয খ:১ পৃ:৩০১ হাদিস-৫৪০ তুহফাতুল আহওয়াযী খ:৩ পৃ:৭৪
(৫) ইয়াহইয়া আল আনসারী র: এর অভিমত:
ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল আল-আনসারী রহ. (১৪৩ হি.) বলেন,
قال يحيي الانصاري لا نعرف خروج المرأة الشابة عندنا في العيدين
অর্থ: হযরত ইয়াহইয়া আল আনসারী র: বলেন, আমাদের সময় দুই ঈদে যুবতী মেয়েদের বের হওয়ার প্রচলন ছিলো না।
সূত্র: আল আওসাত খ:৪ পৃ:২৬৩ আল মুগনী খ:২ পৃ:১১৬ উমদাতুল কারী খ. ৩ পৃ. ৩০৫
উপরোক্ত হাদীসসমূহ এবং আছারের আলোকে একথা পরিস্কার যে, বর্তমানে মহিলাদের ঈদগাহে ও মসজিদে আসা মাকরূহ। সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীনদের কাছে অপছন্দনীয় কাজ এমনকি নবিজি সা. এর কথায় মহিলাদের মসজিদ থেকে ঘরে ইবাদত যদি উত্তম হয়, তাহলে ফিতনার এ যুগে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে মসজিদে আনার পক্ষে যারা ফাতাওয়া দেওয়া যায় কি?
বর্তমানে ফিৎনার আশংকা ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম নারীদের ঈদগাহে ও মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করেন। এটা না জায়েজ নয়, তবে মাকরূহ। সেই সাথে ইসলামের মূল স্পিরিটের বিপরীত পদ্ধতি। কারণ ইসলামের মূল থিউরী হল নারীরা থাকবে বাড়িকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে। রাস্তাঘাটে অবাধে বিচরণ এটা তাদের কাজ নয়।
আরও দেখুন:
কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনা খ. ১ পৃ. ২০১ কিতাবুল আছার পৃ. ২৪৭ হেদায়া খ. ১ পৃ. ১২৬ বাদায়েউস সানায়ে খ. ১ পৃ. ৬১৭; আদ্দুররুল মুখতার খ. ১ পৃ. ৫৬৬; মাসাইলুল ইমাম আহমদ পৃ. ১১৫; আল মুদাওওয়ানা খ. ১ পৃ. ১৫৫ শরহুল মুহাযযাব খ. ৫ পৃ. ১৩