Home > মওদুদী ফিৎনা > আলী রা. সম্পর্কে মওদুদী মরহুম

আলী রা. সম্পর্কে মওদুদী মরহুম

প্রিয় পাঠক, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ৪ জন হলেন শ্রেষ্ট। যাঁদেরকে খৃলাফায়ে রাশেদীন বলা হয়। এ ৪ খলিফার ১ জন হলেন হযরত আলী রা:। আলী রা. ছিলেন মহান আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসুল সা. এর কাছে অত্যান্ত প্রিয়। সেজন্য আলী রা. এর প্রতি বিদ্বেষপোষণকারীকে নবী সা. মুনাফিক বলেছেন। আলী রা. এর সমালোচনা করা মানে খোদ নবী সা. এর সমালোচনা করা। কিন্তু এতদ্বসত্তেও মওদুদী মরহুমের নাপাক কলম থেকে এ গুরুত্বপূর্ণ সাহাবীও বাদ পড়েননি। চলুন মওদুদী মরহুমের নাপাক সমালোচনা দেখার আগে আলী রা. সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো দেখা যাক।

আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সা. কাছে প্রিয় ছিলেন হযরত আলী রা.

عَنْ سَلَمَةَ قَالَ كَانَ عَلِيٌّ قَدْ تَخَلَّفَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيْ خَيْبَرَ وَكَانَ بِهِ رَمَدٌ فَقَالَ أَنَا أَتَخَلَّفُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ فَخَرَجَ عَلِيٌّ فَلَحِقَ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا كَانَ مَسَاءُ اللَّيْلَةِ الَّتِيْ فَتَحَهَا اللهُ فِيْ صَبَاحِهَا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَاعْطِيَنَّ الرَّايَةَ أَوْ لَيَأْخُذَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَوْ قَالَ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ يَفْتَحُ اللهُ عَلَيْهِ فَإِذَا نَحْنُ بِعَلِيٍّ وَمَا نَرْجُوْهُ فَقَالُوْا هَذَا عَلِيٌّ فَأَعْطَاهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الرَّايَةَ فَفَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ

অর্থ: হযরত সালামাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আলী রা. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যাননি। কেননা তাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যাব না? অতঃপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মিলিত হলেন। যেদিন সকালে আল্লাহ্ বিজয় দান করলেন, তার আগের রাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী কাল ভোরে আমি এমন এক লোককে পতাকা দিব, অথবা বলেছিলেন যে, এমন এক লোক ঝান্ডা ধারণ করবে যাঁকে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালবাসেন, অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা বিজয় দান করবেন। অতঃপর আমরা দেখতে পেলাম তিনি হলেন ‘আলী (রাঃ), অথচ আমরা তাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করিনি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে ‘আলী (রাঃ)। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকেই দিলেন এবং তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ্ তা‘আলা বিজয় দিলেন।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৩৭০২

মুসা আ: এর কাছে হারুণ আ: যেমন, নবীজি সা. এর কাছে আলী রা. তেমন।

عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ إِلَى تَبُوْكَ وَاسْتَخْلَفَ عَلِيًّا فَقَالَ أَتُخَلِّفُنِيْ فِي الصِّبْيَانِ وَالنِّسَاءِ قَالَ أَلَا تَرْضَى أَنْ تَكُوْنَ مِنِّيْ بِمَنْزِلَةِ هَارُوْنَ مِنْ مُوْسَى إِلَّا أَنَّهُ لَيْسَ نَبِيٌّ بَعْدِي

অর্থ: হযরত মুস‘আব ইবনু সা‘দ তাঁর পিতা (আবূ ওয়াক্কাস) রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা হন। আর ‘আলী রা. কে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত করেন। ‘আলী রা. বলেন, আপনি কি আমাকে শিশু ও মহিলাদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এ কথায় রাযী নও যে, তুমি আমার কাছে সে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হারূন যে মর্যাদায় মূসার কাছে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, [হারূন (আঃ) নাবী ছিলেন আর] আমার পরে কোন নাবী নেই।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৪৪১৬

সত্যকে আলী রা. এর সাথে ঘোরানোর দোয়া।

নবীজি সা. আলী রা. এর জন্য দোয়া করতে গিয়ে বলেন,

رَحِمَ اللهُ عليًّا اللهمَّ أدِرِ الحقَّ مَعَهُ حيثُ دارَ

অর্থ: আল্লাহ আলীর ওপর রহমত বর্ষণ করুন! হে আল্লাহ! আলী যেখানেই থাকে, সত্যকে তার সাথে ঘোরাও।
সূত্র: জামে সগীর হাদিস: ৪৩৯৬ তিরিমযি: ৩৭১৪ মুসনাদে বাযযার: ৭০৬

আল্লাহর জন্যই আলী রা. কঠোর হন

নবীজি সা. সমবেত সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

أيُّها الناسُ لا تشكوا عليًّا فواللهِ إنه لأُخَيشِنٌ في ذاتِ اللهِ أو في سبيلِ اللهِ

অর্থ: হে লোকসকল! আলীর বিরুদ্ধে নালিশ করতে যেও না। সে আল্লাহর কারণে অথবা তাঁর সন্তুষ্টির জন্যেই কঠোর হয়।
সূত্র: আল বাদরুল মুনির খ: ৮ পৃ: ২৪৯ আহমাদ: ১১৮১৭ হাকেম: ৪৬৫৪

জ্ঞানের জগতে আলী রা.

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,

أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَ عَليُّ بَابُهَا، فَمَنْ أَرَادَ الْمَدِينَةَ فَلْيَأتِ البَابَ

অর্থ: আমি সমস্ত জ্ঞানের নগরী আর আলী তার তোরণ। কাজেই যে এই নগরীতে প্রবেশ করবে তাকে তোরণ বা দ্বারের মধ্য দিয়ে আসতে হবে।
সূত্র: জামে সগীর হাদিস: ২৬৯০ আল মাকাসিদুল হাসানাহ: ১২৩

নবীজি সা. এর দায়িত্ব পালনে আলী রা.

হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ حُبْشِيِّ بْنِ جُنَادَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ عَلِيٌّ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ وَلاَ يُؤَدِّي عَنِّي إِلاَّ عَلِيٌّ

অর্থ: হুবশী ইবনু জুনাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ আলী আমার থেকে এবং আমি তার থেকে। আলীই আমার পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারে।
সূত্র: সুনানে তিরমিযি হাদিস: ৩৭১৯ নাসাঈ: ৮১৪৭ আহমাদ: ১৭৫০৫ ইবনে মাযা: ১১৯ জামে সগীর: ৫৫৭৭

নবীজি সা. যার বন্ধু আলীও রা. তার বন্ধু

বিশ্বনবী সা. আলী রা. সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন,

مَن كنتُ مَولاه فهذا مَولاه اللَّهُمَّ والِ مَن والاه وعادِ مَن عاداه

অর্থ: আমি যার সাথী বা পৃষ্ঠপোষক, ‘আলীও তার সাথী বা পৃষ্ঠপোষক।। হে আল্লাহ! যে আলীকে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবাস আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে তুমি তার সাথে শত্রুতা করো।
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ হাদিস: ১৯৩০২ সুনানে কুবরা (নাসাঈ) : ৮৪৭৮

আলী রা. কে ভালোবাসার নির্দেশ

হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِحُبِّ أَرْبَعَةٍ وَأَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُحِبُّهُمْ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ قَالَ عَلِيٌّ مِنْهُمْ يَقُولُ ذَلِكَ ثَلاَثًا ‏وَأَبُو ذَرٍّ وَسَلْمَانُ وَالْمِقْدَادُ

অর্থ: হযরত বুরাইদাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা চার ব্যাক্তিকে ভালোবাসতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাকে অবহিত করেছেন যে, তিনিও তাদের ভালোবাসেন। বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তারা কারা? তিনি বলেনঃ আলী তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। (অপর তিনজন) আবূ যার, সালমান ও মিক্বদাদ।
সূত্র: সুনানে তিরমিযি হাদিস: ৩৭১৮ ইবনে মাযা: ১৪৯ আহমাদ: ২৩০১৪ জামে সগীর: ১৬৮৬

আলী রা. কে ঘৃণা করে মুনাফিকরা

عن أم سلمة أم المؤمنين قالت كان رسولُ اللهِ ﷺ يقول لا يحبُّ عليًّا منافقٌ ولا يُبغِضُه مؤمنٌ

অর্থ: হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে ববর্ণিত নবীজি সা. বলতেন, মুনাফিকরা আলীকে ভালোবাসে না,আর মুমিন তাঁকে ঘৃণা করে না।
সূত্র: সুনানে তিরমিযি হাদিস: ৩৭১৭ মুসলিম: ৭৮ আল আওয়াছিম ওয়াল কাওয়াছিম খ: ৮ পৃ: ১১৪

আলী রা. অপমানকারীরাই অপদস্থ হবে

হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. কে আলী রা. এর কাঁধে হাত রেখে বলতে শুনেছি নবীজি সা. বলেছেন,

هذا أمير البررة قاتل الفجرة منصور من نصره مخذول من خذله

অর্থ: এই আলী সৎ কর্মশীলদের ইমাম, অন্যায়কারীদের নিধনকারী। যে তাকে সাহায্য করবে সে সাফল্য লাভ করবে (সাহায্য প্রাপ্ত হবে) এবং যে তাকে হীন করার চেষ্টা করবে সে নিজেই হীন হবে।
সূত্র: আস মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন হাদিস: ৪৬৯৯

আলী রা. কে কষ্ট দেয়া মানে নবীজিকে কষ্ট দেয়া

নবীজি সা. বলেন,

مَن آذى علِيًّا فقد آذاني

অর্থ: যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিল, সে আমাকেই কষ্ট দিল।
সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস: ৬৯২৩ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ: ৯ পৃ: ১৩২

আলী রা. কে গালি দেয়া মানে নবীজি সা. কে গালি দেয়া,

مَن سبَّ عليًّا فقد سبَّني ومَن سبَّني فقد سبَّ اللهَ

অর্থ: যে ব্যক্তি আলীকে গালমন্দ করে সে যেন আমাকেই গালি দিল।
সূত্র: জামে সগীর হাদিস: ৮৭১৭

আলী রা. এর শত্রুদের জন্য নবীজির সা. ধ্বংসের দোয়া

নবী সা. হযরত আলী রা. কে বলেন,

يا علي أنت سيد في الدنيا سيد في الآخرة حبيبك حبيبي وحبيبي حبيب الله وعدوك عدوي وعدوي عدو الله والويل لمن أبغضك بعدي

অর্থ: হে আলী! তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে নেতা,তোমার বন্ধু আমার বন্ধু এবং আমার বন্ধু আল্লাহর বন্ধু। তোমার শত্রু আমার শত্রু এবং আমার শত্রু আল্লাহর শত্রু। ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য যে আমার পর তোমার সঙ্গে শত্রুতা করবে।
সূত্র: মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন হাদিস: ৪৬৯৫

 

جنگ جمل کے بعد انہوں نے قاتلین عثمانؓ کے بارے میں اپنا رویہ بدل دیا۔ انکے پورے زمانہ خلافت میں ہم کو صرف ایک ہی کام ایسا نظر آیا جس کو غلط کہنے کے سوا چارہ نہیں
সূত্র: খেলাফত ও মুলুকিয়াত পৃ: ১৪৬

Check Also

অশ্লীল এলাকায়ে যিনার শাস্তি রজমকে জুলুম বলা:

যিনার শাস্তি জুলুম: جہاں معیار اخلاق بھی اتنا پست ہو کہ ناجائز تعلقات کو کچھ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.