Home > মওদুদী ফিৎনা > নামাজ, রোযা ইবাদত নয়, ট্রেণিং : মিষ্টার মওদুদী।

নামাজ, রোযা ইবাদত নয়, ট্রেণিং : মিষ্টার মওদুদী।

দ্বীনের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর খেলাফত কায়েম করা:

উপমহাদেশে মিস্টার মওদুদী সাহেব এমন এক ব্যক্তির নাম যিনি ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্যের ওপরও হামলা করেছেন। তার বক্তব্যমতে ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘রাষ্ট্র কায়েম করা’ আর ‘নামাজ,রোযা,হজ্ব, যাকাত ইত্যাদী মূল ইবাদত নয়, বরং এগুলো সব ট্রেণিং। চলুন আগ মওদুদী সাহেবের নিন্মোক্ত বক্তব্যসমূহ দেখে নেওয়া যাক-
اسلام کا مقصود حقیقی محتصر الفاظ میں تو صرف اتنا کہ دیناہی کافی ہے کہ وہ مقصد انسان پر  سے انسان کی حکومت  کو مٹا کر خدائے واحد کی حکومت قائم کرنا ہے اور اس مقصد کیلئے سردھڑی کی بازی لگا دینے اور جان توڑ کوشش کرنے کا نام جہاد ہے اور نماز روزہ حج زکوۃ سب اسی کام کی تیاری کی لیئے ہیں
ইসলামের মূল উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত কথায় মানুষের উপর মানুষের শাসন মিটিয়ে এক খোদার শাসন কায়েম করা। এর জন্যে মস্তক-মেরুদন্ডের বাজি লাগিয়ে আপ্রাণ চেষ্টার নাম জিহাদ। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত এসব সে উদ্দেশ্যেরই প্রস্তুতির জন্যে। -খুতবাত : পৃ. ২৫৭

মওদুদী সাহেব দ্বীনের অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে একটি নীতিদীর্ঘ ভূমিকার পর তিনি বলেন,
 اس تشریح سے یہ بات صاف ہوجاتاہے کہ دین در اصل حکومت  کا نام ہے شریعت اس حکومت کا قانون ہے اور عبادت اس كے قانون اور ضابطے کی پابندی ہے
উক্ত ব্যাখ্যার আলোকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, দ্বীন মূলতঃ রাষ্ট্রের নাম, শরীয়ত হল সে রাষ্ট্রের বিধান। আর ইবাদত হলো এর আইন-কানুন পালন করা। -খুতবাত, পৃ. ২৬৮

لیکن حقیقت یہ ہے کہ اسلام کسی مذہب کا اور  مسلمان کسی قوم کا نام نہیں ہے۔ بلکہ دراصل ایک انقلابی نظریہ ومسلک ہے۔
বাস্তব কথা হল ইসলাম কোন ধর্মের নাম নয়। এবং মুসলমান কোন জাতির নাম নয়। বরং মূলতঃ ইসলাম একটি বিপ্লবী চিন্তাধারা ও পদ্ধতি এবং মুসলমান সেই আন্তর্জাতিক বিপ্লবী বাহিনীর নাম। -তাফহীমাত : খ. ১ পৃ. ৭৪

উপরিউক্ত বক্তব্য থেকে বুঝতে পারলাম মওদুদী সাহেবের কাছে দ্বীন মানেই রাষ্ট্র কায়েম করা। নিন্মে দেখুন নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত সবই ট্রেণিং বলে দাবি করেছেন।
عبادات ایک تربیتی کورس ہیں یہ نماز ، روزہ اور یہ زکوۃ اور حج در اصل اسی تیاری اور  تربیت کےلئے ہیں جس طرح تمام دنیا کی سلطنتیں اپنی فوج، پولیس اور رسول سروس کے لئے آدمیوں کو پہلے خاص قسم کی ٹریننگ دیتی ہیں پھر اس سے کام لیتی ہیں اسی طرح اللہ کا دین (اسلام) بھی ان تمام آدمیوں کو جو اس کی ملازمت میں بھرتی ہوں
ইবাদাত একটি প্রশিক্ষণ কোর্স। নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্ব মূলতঃ তারই প্রস্তুতি ও ট্রেনিংয়ের জন্যে। যেভাবে বিশ্বের সমস্ত রাজ্য তাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বার্তাবাহক পরিষেবার জন্য প্রথমে মানুষদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয় এবং তারপর তাদের থেকে কাজ নেয়। একইভাবে আল্লাহর দ্বীন (ইসলাম)ও এর সেবায় নিয়োজিত সকল মানুষদের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত হয়। -খুতবাত, পৃ. ২৬৪

سب سے بڑی غلطی یہی ہے کہ اپ نے نماز روزوں کے ارکان اور ان کی ظاہری صورت  ہی  کو اصل عبادت سمجہ رکہا ہے اور آپ اس خیال خام میں مبتلا ہو گئے ہیں کہ جس نے یہ ارکان پوری طرح ادا کر دیئے اس نے بس اللہ کی عبادت  کردی۔
সর্বাপেক্ষা বড় ভুল এই যে, আপনি নামায রোযার আরকান ও বাহ্যিক আকৃতিকেই আসল ইবাদত মনে করেছেন।এবং আপনি এই খাম খেয়ালীপনায় লিপ্ত যে-যে ব্যক্তি এই আরকান সমূহকে পূর্ণরূপে আদায় করলো, সে আল্লার ইবাদত করে নিলো। -খুতবাত : পৃ. ১৫৭

মওদূদী সাহেবের বক্তব্যের সার সংক্ষেপ হলো-
(ক) দ্বীন মূলতঃ রাষ্ট্রের নাম।
(খ) রাষ্ট্র ছাড়া দ্বীন অস্তিত্বহীন ও কাল্পনিক চিত্রের ন্যয় নিরর্থক।
(গ) ইসলাম একটি বিপ্লবী চিন্তাধারার নাম। ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতকে ইবাদত মনে করা মারাত্মক ভুল। বরং নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ট্রেণিং।

দ্বীন প্রতিষ্ঠা করাই কী ইসলামের মূল উদ্দেশ্য?
মওদূদী সাহেব দ্বীনের যে ব্যাখ্যা করেছেন তা আদৌ শরয়ী ব্যাখ্যা নয়। দ্বীন কী এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠারমৌলিক উদ্দেশ্য কী তা সবই পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নববীতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। চলুন দেখে নিই দ্বীন মানে কী?

দ্বীন কী : দ্বীন হলো ইসলাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। -সুরা আলে ইমরান : ১৯

উক্ত আয়াত থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেলো, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র ‘দ্বীন’ হচ্ছে ‘ইসলাম’। এখন জানতে হবে ‘ইসলাম’ কী?

ইসলাম কাকে বলে : এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সা. থেকে বর্ণিত একটি সহিহ হাদিস তুলে ধরা হলো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جاءَ جِبريلُ ﷺ إلى النَّبيِّ ﷺ فقال يا مُحمَّدُ ما الإسْلامُ فقال تَعبُدُ اللهَ لا تُشرِكُ به شَيئًا وتُقيمُ الصَّلاةَ وتُؤْتي الزَّكاةَ وتَصومُ رَمَضانَ وتَحُجُّ البَيتَ قال فإذا فَعَلتُ ذلك فأنا مُسلِمٌ قال نَعَمْ قال صَدَقتَ
একদা নবিজি সাঃ-এর কাছে জিবরাঈল আ. এসে প্রশ্ন করলেন, হে মুহাম্মাদ, বলুন তো ইসলাম কী? তদুত্তরে নবীজি সা. বললেন, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন, তবে তাঁর সাথে কোনো শরীক করবেন না, এবং নামাজ কায়েম করবেন, যাকাত আদায় করবেন, রমাযানের রোযা রাখবেন এবং বাইতুল্লাহর হজ্ব করবেন। তিনি আরও বললেন, আমি যখন এটা করবো, তখনই আমি মুসলিম। হযরত জিবরাঈল আ. বললেন, হ্যাঁ। আপনি সত্য বলেছেন। -মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং : ৫৮৫৬

আরেকটি হাদিসে এসেছে, হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল,
فأيُّ الإسلامِ أفضلُ قال الإيمانُ قال وما الإيمانُ قال أن تُؤمِنَ باللهِ وملائكتِه وكتبِه ورسلِه والبعثِ بعدَ الموتِ قال فأيُّ الإيمانِ أفضلُ قال الهجرةُ قال ما الهجرةُ قال أن تهجُرَ السُّوءَ
কোন ইসলাম উত্তম? নবীজি সা. বললেন, ঈমান। সাহাবী প্রশ্ন বললেন, ঈমান কী? নবীজি সা. বললেন, তুমি বিশ্বাস রাখবে, আল্লাহ’র উপর, তাঁর ফিরিস্তাদের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর, তাঁর রাসুলদের উপর এবং মৃত্যুর পর পূনরুত্থানের উপর। অতপর তিনি প্রশ্ন করলেন, কোন ঈমান উত্তম? নবীজি সা. বললেন, হিজরত। সাহাবী প্রশ্ন করলেন, হিজরত কী? নবীজি সা. বললেন, খারাপ কাজ ছেড়ে দেওয়া। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ : খ. ১ পৃ. ৪৬

সুতরাং উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিস দু’টি থেকে বুঝা গেলো, দ্বীন হলো ‘ইসলাম’ আর ‘ইসলাম’ মানে হলো, আল্লাহপাকের সাথে শরীক বিহীন ইবাদত করা, নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত আদায় করা এবং উত্তম ইসলাম হিসাবে আল্লাহ ও তাঁর ফিরিস্তাকুল, আম্বিয়ায়ে কেরাম রা. আসমানী কিতাবসমূহ এবং পূনরুত্থানে বিশ্বাস করা এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এগুলোকে বুঝানো হয়েছে।

মোটকথা আল্লাহ পাক বললেন যে, তার নিকট একমাত্র দ্বীন হচ্ছে ‘ইসলাম’। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. এবং জিবরাঈল আ. এর কাছে দ্বীন হচ্ছে, তাওহীদ ও রেসালাতের ওপর ঈমান এবং শিরক বিহীন ইবাদত তথা নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদী। আর এ কারণে মুসলিম উম্মাহর আক্বীদাও তাই। অথচ মওদূদী সাহেবের কাছে এগুলো দ্বীন নয়। দ্বীন হচ্ছে রাষ্ট্র ও জিহাদ আর সে রাষ্ট্র অর্জনের ট্রেনিং হলো, নামায রোযা, হজ্ব, যাকাত। রাষ্ট্র ছাড়া এসব ইবাদাতও নিরর্থক ও অস্তিত্ববিহীন কাল্পনিক নক্‌শা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং জিব্রাঈল আ.-এর বর্ণনার বিপরীতে দ্বীনের এহেন ব্যাপারকে যদি অপব্যাখ্যা না বলা যায়, তাহলে অপব্যাখ্যা আর কোন বস্তুকে বলবে?

বস্তুতঃ পবিত্র কুরআনের বহু আয়াত এবং রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বহু হাদীসের দ্বারা একথা একদম পরিষ্কার যে দ্বীনের মূল বিষয় ঈমান, নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত ইত্যাদী। বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহ তাআলার মূল চাওয়া এগুলোই। আরো কিছু ইবাদাত আছে তবে সেগুলো প্রাসঙ্গিক বা সম্পূরক। তাছাড়া বান্দাদের পরস্পরে  চলতে গেলে পারিবারিক বিষয়, সামাজিকতা-জাতীয়তা ও লেন-দেনের প্রসঙ্গ আসে। সেগুলোও যেন খোদার মর্জীতে হয়ে বান্দা আরামে জীবন-যাপন করতে পারে এজন্যে মুআমালাত, মুআশারাত, আখলাক ও সিয়াসাত বা হুকুমত তথা শাসন বিষয়ক বিধি-বিধান দেওয়া হয়েছে। আর মূল ইবাদতসহ অন্যান্য বিধি বিধান সূচারু রূপে আঞ্জাম দেওয়ার দ্বারা বান্দা হবে ভূ-পৃষ্ঠে আল্লাহর খলীফা তথা প্রতিনিধি। এ প্রতিনিধিত্ব যে বাধা দেবে তার বিরুদ্ধে মুসলমান জিহাদ করবে। এক কথায় ঈমান ও মৌলিক ইবাদাত তথা নামায রোযা, যাকাত, হজ্ব, এগুলোই দ্বীনের মূল ও কাণ্ড। আর জিহাদ সিয়াসতসহ অন্য সব বিধি-বিধান হলো নিজ নিজ পজিশনভেদে শাখা-প্রশাখা। আর এজন্যই ইসলামে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদী ইসলামের মূল স্তম্ভ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. সালাত কায়িম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৮

কিন্তু মওদুদী সাহেব ও হেযবুত তওহীদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ঘোষণার বিপরীতে হুকুমাত তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও জিহাদকে মূল দ্বীন আর নামায, রোযা, যাকাত, হজ্ব কে তার ট্রেনিং বলার মাধ্যমে শাখা-প্রশাখাকে মূল ও কাণ্ড, আর মূল ও কাণ্ডকে শাখা-প্রশাখা বানিয়ে দিলেন, যাতে রয়েছে আক্বীদার খারাবীসহ আরো বহুবিধ খারাবী, যা বিবেকবান মাত্রই বুঝতে পারছেন। অপর আয়াতে মহান রব আরও বলেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে । তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে; সালাত কায়েম করে এবং জাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন। -সুরা বাইয়িনা : ৫

উপরিউক্ত আয়াতে একেবারে দিনের আলোর ন্যায় সুস্পষ্টভাবে মহান রব সঠিক দ্বীন হিসাবে উল্লেখ্য করলেন, একনিষ্ঠ ইবাদত ও নামাজ, যাকাতকে। এরপরও যদি কেউ বলে, ইবাদত, নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদী এগুলো দ্বীনের মৌলিক উদ্দেশ্য নয়, বরং খিলাফত প্রতিষ্ঠা হলো দ্বীনের মূল আর অন্যান্য ইবাদত হলো ট্রেনিং তাহলে এ মতবাদ কী সরাসরি কুরআনের আয়াত বিরোধি নয়?

মনে রাখা দরকার, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার মূল টার্গেট হলো, ইসলামের ইবাদত তথা নামাজ, যাকাত ইত্যাদী প্রতিষ্ঠিত করা। মহান রব বলেন,
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে। -সুরা হাজ্ব : ৪১

প্রিয় পাঠক, এখানে দেখুন, আল্লাহ তাআলা জিহাদ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর খলীফাদের নামাজ, যাকাত ইত্যাদী প্রতিষ্ঠার কথা বললেন, তাহলে নামাজ কতো গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই নামাজকে বলা হচ্ছে জিহাদের ট্রেণিং! এটা ছেলেকে বাপ মনে করার মতো নয় কি? কতোবড় হাস্যকর কথা! সুতরাং আয়াতটি থেকে প্রমাণ হলো, রাষ্টে খিলাফত কায়েমের মূল টার্গেটই হলো নামাজ, যাকাত, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদী প্রতিষ্ঠিত করা। সুতরাং ইবাদতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই হুকুমতের বিধান, হুকুমতের ট্রেনিং নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত নয়।

রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম না হলে এর কোনো দাম নেই?
প্রিয় পাঠক, উপরে আলোচনা থেকে আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে, দ্বীনের মূল টার্গেট হুকুমত প্রতিষ্ঠা নয়। অথচ এই হুকুমতকেই দ্বীনের মূল টার্গেট বানিয়ে মওদুদী সাহেব ইসলামি ইবাদতের বিরুদ্ধে কিভাবে কলম চালাচ্ছে দেখুন-
حکومت کے بغیر دین بالکل ایسا ہے جیسے ایک عمارت  کا نقشہ آپ کے دماغ میں ہو مگر عمارت  زمین پر موجود نہ ہو، ایسے دماغی نقشے کے ہونے کا فائدہ ہی کیا ہے؟
রাষ্ট্র ছাড়া দ্বীন অবিকল একটি বিল্ডিংয়ের কাল্পনিক চিত্র, ভূ-পৃষ্ঠে যার অস্তিত্ব নাই। এমন কাল্পনিক চিত্রের ফায়দাটাই বা কি? -খুতবাত : পৃ. ২৭১

مگر اب میں تمہیں بتاتا ہوں کہ جس دل میں جہاد کی نیت نہ ہوں ،اور جس کے پیش نظر جہاد کا مقصد نہ ہوں اس کی ساری عبادتیں بے معنی ہیں
কিন্তু এখন আমি তোমাদের বলছি যে, যার অন্তরে জিহাদের নিয়ত নেই এবং যার সামনে জিহাদের উদ্দেশ্য নেই, তার সকল ইবাদত অর্থহীন। -খুতবাত, পৃ. ২৬৭

অথচ ইসলাম হুকুমতের ওপর নির্ভরশীল নয় যে, সর্বত্র হুকুমত প্রতিষ্ঠিত না হলে এর কোনো মূল্য থাকবে না। কারণ ইসলাম স্বস্ব স্থানে মূল্যবান ও কার্যকরী। যে বা যারা সেটাকে কবুল করবে, তারা উভয় জগতে ফল ভোগ করবে। যদি কেউ সেটা কবুল না করে, তবুও ইসলামের ইবাদতের মূল্য বিন্দু পরিমান হ্রাস পাবে না। যেমন ধরুন স্বর্ণ। কেউ যদি সেটা ব্যবহার না করে আলমারিতে রেখে দেয়, তাহলে স্বর্ণ কী মূল্যহীন হয়ে যায়? এটা তো পাগলেও বোঝে। কিন্তু মওদুদী সাহেব কেন বোঝে না। কারণ তাদের মূল টার্গেটই হলো ইসলাম বিদ্বেষ। বিদ্বেষী চক্ষু দিয়ে কখনও ইসলামের সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায় না।

দেখুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কালেমার দাওয়াত নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেন, তখন কি তিনি সামষ্টিকজিবনে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠিত করে তারপর ব্যক্তিগত জিবনে ইবাদত করেছিলেন? নিশ্চয় না, বরং আমরা সবাই জানি যে, যখন মক্কায় ইসলামী হুকুমত কায়েম হয়নি, তখনই নামায ফরজ করা হয়েছিলো। পাশাপাশি দুয়েকজন নবী ছাড়া কোনো নবীই রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন না। তাহলে মওদুদী সাহেবের ফাতাওয়া অনুসারে নবীজি সা. সহ সকল নবী-রাসুলগণ এবং সাহাবায়ে কেরামও রা. কী দ্বীনের অর্থ ভুল বুঝেছিলেন? তাদের ইবাদতও কী নিরর্থক ছিলো?

অপব্যাখ্যার কুফল:
মূলত কুরআন শরীফে যে সকল আয়াতে নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাতকে বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সে সকল আয়াতে নামাজকে জিহাদের ট্রেণিং বলা হয়নি। সুতরাং কুরআনের শর্তহীন আয়াতকে শর্তযুক্ত করা নিঃসন্দেহে অপব্যাখ্যার শামিল। আর কোনো আয়াতের মনগড়া উক্তি করা এক জঘন্যতম অন্যায়। যার কারণে হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,
مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِرَأْيِهِ فَأَصَابَ فَقَدْ أَخْطَأَ
যে ব্যক্তি নিজের মত অনুযায়ী কুরআন প্রসঙ্গে কথা বলে, সে সঠিক বললেও অপরাধ করলো (এবং সঠিক ব্যাখ্যা করলো-সেও ভুল করলো)। -জামে তিরমিযি : হাদিস নং : ২৯৫২

অপর একটি হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি সঠিক ইলম ব্যতীত কুরআন প্রসঙ্গে কোন কথা বলে, সে যেন জাহান্নামকে নিজের জন্য বাসস্থান বানিয়ে নিল। -জামে তিরমিযি, হাদিস : ২৯৫০

আল্লাহপাক মওদুদী সাহেবের ভ্রান্তি থেকে আমাদের ঈমান-আমলকে হিফাযত করেন। আমীন!

Check Also

অশ্লীল এলাকায়ে যিনার শাস্তি রজমকে জুলুম বলা:

যিনার শাস্তি জুলুম: جہاں معیار اخلاق بھی اتنا پست ہو کہ ناجائز تعلقات کو کچھ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.