কুরবানী শব্দের আভিধানিক অর্থ:
কুরবানী (قربانى) শব্দটি উর্দূ বা ফার্সিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। যা আরবী قرب বা قربان শব্দ হতে রূপান্তরিত। যার আভিধানিক অর্থ হলো, নিকটবর্তী হওয়া, কাছে আসা বা ঘনিষ্ঠ হওয়া।
সূত্র: আল-মু’জামুল ওয়াফী পৃ: ৭৮৬
পারিভাষিক অর্থ:
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় কুরবানী হলো, “একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির, নির্দিষ্ট জানোয়ার জবেহ করা।”
প্রমাণ:
وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ
অর্থ: এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়।
সুরাঃ হজ্ব আয়াত: ২৮
সুতরাং নিয়তে কোনো ত্রুটি থাকলে সেটাকে কুরবানী হিসাবে ধরা হবে না। যা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِن أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الآخَرِ
অর্থ: আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের গৃহীত হয়নি।
সুরাঃ মায়িদা আয়াত: ২৮
আরও দেখুন:
ফাতহুল ক্বাদীর খ. ৯ পৃ. ৫০৫ আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ খ. ২ পৃ. ৩৪০
উর্দূ ও ফার্সীতে () রূপে হয়েছে। যার অর্থ, নৈকট্য, সান্নিধ্য।
পবিত্র কুরআন ও হাদীছে কুরবানীর কয়েকটি সমার্থক শব্দ পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
এক. নাহর نحر অর্থে:
যেমন- আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
অর্থ: সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।
সুরাঃ কাওছার আয়াত: ২ এই অর্থে কুরবানীর দিনকে يوم النحر বলা হয়।
দুই. نسك (নুসুক) অর্থে:
যেমন, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
অর্থ: আপনি বলুন, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ’র জন্য নিবেদিত।
সুরাঃআন‘আম আয়াত: ১৬২
এ আয়াতে نُسُكٌ শব্দটি نَسِيْكَةٌ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ হল, আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য আল্লাহর নামে জবাইকৃত পশু। এজন্য আরবী ভাষায় এবং শরীয়তের পরিভাষায়ও কুরবানীর স্থানকে مَنْسِكٌ বলা হয়।
সূত্র: লিসানুল আরব খ. ১৪ পৃ. ১২৭-১২৮ আসসিহাহ খ. ৪ পৃ. ১৬১২ তাজুল আরূস খ. ৭ পৃ. ২৮৭ আলমুফরাদাত ফী গারীবিল কুরআন পৃ. ৮০২ মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার খ. ৪ পৃ. ৭১৪-৭১৫ আলমিসবাহুল মুনীর ফাইয়ুমী পৃ. ৩১১ আল-মুগরিব (মুতাররিযী) খ. ২ পৃ. ৩০০ আন-নিহায়া ফী গারীবিল হাদীসি ওয়াল আছার খ. ৫ পৃ. ৪৮
তিন. منسك (মানসাক) অর্থে।
যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেন,
لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكاً
অর্থ: আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানীর বিধান রেখেছি।
সুরাঃ হজ্জ আয়াত: ৩৪
চার. الاضحى (আল-আযহা) অর্থে।
যেমন, হাদীস শরীফে এসেছে,
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالاَ لَمْ يَكُنْ يُؤَذَّنُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَلاَ يَوْمَ الْأَضْحَى.
অর্থ: হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের নামাজে কিংবা ‘ কুরবানীর দিনের (নামাজে) আযান দেয়া হত না।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৯৬০
এই অর্থে কুরবানীর ঈদকে عيد الاضحى বলা হয়।