যে পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কুরবানীর দিনগুলোতে নিচের শর্তগুলো বিদ্যমান থাকবে, শুধু তাদের উপরই কুরবানী ওয়াজিব হবে।
ক. মুসলমান হওয়া।
হানাফীদের মতবাদ।
لأنها قربة والكافر ليس من أهل القرب
অর্থাৎ কুরবানী হলো, নৈকট্য অর্জনের নাম। কিন্তু কাফেররা নৈকট্য অর্জনের জন্য উপযুক্ত নয়।
সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে খ: ৬ পৃ: ২৮১
لو كان كافرا في اول الوقت ثم اسلم في آخره تجب عليه
অর্থাৎ কোনো কাফের বা অমুসলিম যদি কুরবানীর দিনের কোন এক সময়ে মুসলিম হয় (এবং নেসাব পরিমান মালের মালিক হয়ে থাকে,) তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজীব হয়ে যাবে।
সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে খ: ৬ পৃ: ২৮১
প্রমাণ:
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ
অর্থ: এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া।
সুরাঃ হজ্ব আয়াত: ৩৭
অত্র আয়াত দ্বারা বুঝা গেল, আল্লাহর কাছে মূল বিষয়টি ধর্তব্য হলো, তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা। আর তাকওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো, ঈমান। যা মুসলিম হওয়া ছাড়া সম্ভব নয়।
খ. স্বাধীন হওয়া।
কুরবানী ওয়াজীব হওয়ার জন্য লোকটি স্বাধীন হতে হবে। যদি দাস-দাসি হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না।
হানাফী মাযহাবের মত:
لأن العبد لا يملك
অর্থাৎ গোলাম সম্পদের মালিক হয় না।
সূ্ত্র: বাহরুরর রায়েক খ: ২ পৃ: ২৭১ ই’লাউস সুনান খ: ১৮ পৃ: ৩৪৮
প্রমাণ:
১. মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
ضَرَبَ اللّهُ مَثَلاً عَبْدًا مَّمْلُوكًا لاَّ يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ
অর্থাৎ আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, অপরের মালিকানাধীন গোলামের যে, কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না ।
সুরাঃ নাহল আয়াত: ৭৫
উক্ত আয়াতে দাস-দাসিদের জন্য কোনো জিনিষের উপর নিজস্ব শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি মাইনাস করা হয়েছে। কারণ তারা কোনো কিছুর মালিক হতে পারে না। যদি মালিক হতে পারতো, তাহলে প্রয়োগ শক্তি মাইনাস করা হতো না।
২. আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
ضَرَبَ لَكُم مَّثَلًا مِنْ أَنفُسِكُمْ هَل لَّكُم مِّن مَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُم مِّن شُرَكَاء فِي مَا رَزَقْنَاكُمْ فَأَنتُمْ فِيهِ سَوَاء تَخَافُونَهُمْ كَخِيفَتِكُمْ أَنفُسَكُمْ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
অর্থ: আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই মধ্য থেকে একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেনঃ তোমাদের আমি যে রুযী দিয়েছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীরা কি তাতে তোমাদের সমান সমান অংশীদার? তোমরা কি তাদেরকে সেরূপ ভয় কর, যেরূপ নিজেদের লোককে ভয় কর? এমনিভাবে আমি সমঝদার সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করি।
সুরাঃ রুম আয়াত: ২৮
উক্ত আয়াতে গোলাম বা দাস-দাসিদের জন্য তার মুনিবের সম্পত্তিতে অংশাদারিত্ব মাইনাস করা হয়েছে। যদি দাস-দাসি মালিকের মত বা স্বাধীন মানুষের মত সম্পত্তির মালিক হতে পারে, তাহলে আল্লাহ তা’আলার এ উদহারণের অর্থ কি দাঁড়াবে। অতএব বুঝা গেল, দাস-দাসিরা কখনও সম্পত্তির মালিক হতে পারে না।
৩. হাদিস শরীফে এসেছে
عن جَابِر بْن عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَاعَ عَبْدًا وَلَهُ مَالٌ فَمَالُهُ لِلْبَائِعِ إِلَّا أَنْ يَشْتَرِطَ الْمُبْتَاعُ
অর্থ: হযরত জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন গোলাম বিক্রয় করে যার কিছু মাল আছে, তাহলে ঐ মাল বিক্রেতা পাবে। কিন্তু ক্রেতা যদি নিজের জন্য শর্ত করে তাহলে ভিন্ন কথা।
সূত্র: সুনান আবু দাউদ হাদিস: ৩৪৩৫
উক্ত হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্নিত হলো যে, গোলামের কোন মাল থাকলেও সেটার মালিক সে থাকবে না। গোলাম যদি সম্পদের মালিক হতো, তাহলে উক্ত মাল বিক্রেতা বা ক্রেতা মালিক হতে পারতো না। সুতরাং হাদিস দ্বারা বুঝা গেল, গোলাম কখনও সম্পদের মালিক হতে পারে না।
ঘ. মুসাফির না হওয়া।
প্রমাণ:
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থ: যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
সুরাঃ তাওবা আয়াত: ৬০
উক্ত আয়াতে যাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে, তাদের ৮ টা খাতের মধ্যে একটি হলো মুসাফির। সুতরাং বুঝা গেল, মুসাফিররাও গরীবদের কাতারে অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং মুসাফিরের উপর যেমন জুম’আ, রোযা ইত্যাদী ওয়াজীব নয়, তেমনি কুরবানীও ওয়াজীব নয়। এজন্য আলী রা. বলেন,
عن علي رضي الله عنه قال ليس على المسافر أضحية
অর্থাৎ হযরত আলী রা. বলেন, মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
সূত্র: আল মুহাল্লা খ: ৬ পৃ: ৩৭ নাসবুর রায়াহ খ: ৪ পৃ: ২১১