Home > হেযবুত তওহীদ > তসলিমা নাসরিন ও হেযবুত তওহীদের চেতনা এক ও অভিন্ন:

তসলিমা নাসরিন ও হেযবুত তওহীদের চেতনা এক ও অভিন্ন:

 

প্রিয় পাঠক! আমরা বাংলাদেশের অধিবাসীদের কাছে পরিচিত ও প্রশিদ্ধ এক নাস্তিকের নাম হলো, ‘তসলিমা নাসরিন’। প্রশ্ন হলো, তসলিমা নাসরিন নাস্তিক কেন? কারণ নাস্তিক হতে গেলে মোটামুটি চারটা গুন প্রয়োজন। এ চারটা গুন খোদ তসলিমা নাসরিন নিজেই তার বইয়ে লিখেছে,
‘আমার ভাবতে ভালো লাগে এই মৌলবাদ বিরোধি সংগ্রামে আমি একা নই, অগুনতি ধর্মমূক্ত যুক্তিবাদী মানববাদী মানুষের মিছিলে আমি একজন।’ -নারীর কোনো দেশ নেই, পৃ. ১৯২ (পিডিএফ)

বুঝা গেলো, নাস্তিক তসলিমাদের বিশ্বাস, চেতনা ও মিশন মূলত চারটা-
১. মৌলবাদের বিরোধিতা করা। (নাস্তিকরা মূলত মৌলবাদ বলতে আলেমদের বুঝিয়ে থাকে।)
২. ধর্মমুক্ত হওয়া তথা কোনো ধর্মের অনুসারী না হওয়া।
৩. যুক্তিবাদী হওয়া তথা সব কিছু যুক্তির আলোকে গ্রহণ করা।
৪. মানববাদী হওয়া তথা মানবতার পাশে থাকা।

অর্থাৎ এই চারটা গুনে গুনান্বিত থাকলেই তাকে তসলিমা নাসরিন বলা যায়। তাহলে চলুন, এই চারটা গুন হেযবুত তওহীদের মধ্যে আছে কী না দেখা যাক।

এক. মৌলবাদ তথা আলেমদের বিরোধিতায় তসলিমা ও হেযবুত তওহীদ:
নাস্তিকদের চোখে আলেমরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট, ঘৃণিত গোষ্ঠি। তাই তারা সবসময় আলেমদের সামলোচনায় নিজেদের লিপ্ত রাখে। আর মানুষকে আলেমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিভিন্নভাবে তাদের সামলোচনা করে থাকে। ঠিকই একই কাজটা কয়েকগুন বাড়িয়ে হেযবুত তওহীদ লিখেছে,
আলেমরা পৃথিবীর সবচে নিকৃষ্ট জাতি। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৩৭
ঘৃণ্য জাতি ও স্বার্থবাদী। আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ৯
কূপমুন্ডুক। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৬৪
কুয়োর ব্যাঙ। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩২
সত্য বিরোধি। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৪৯
ইহুদী পুরোহিতদের মতো। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৩৫
কাফের-মুশরিক। – এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৪২
আলেমদের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা নেই। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৩৭
রাষ্ট্রপরিচালনার যোগ্যতাও নেই। -জঙ্গীবাদ সঙ্কট, পৃ. ৬৬
কোনো জ্ঞানই নেই। -দাজ্জাল পৃ:৬৬
তারা অন্ধ ও পথভ্রষ্ট জাতি। -জঙ্গীবাদ সঙ্কট, পৃ. ৩৯
এই আলেমদের মেনে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। -ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ২৭
তাদের অনুসারীরা দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই হারাচ্ছে। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪২
ফলে তারা জাহান্নামী হচ্ছে। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১২৫
আলেমরা অপদার্থ ওয়ারিশ। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৮
আলেমরা সম্মান ও টাকার ধান্ধায় সকল অন্যায় জায়েয করে দিয়েছে। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ৩২
এই আলেমদের ফতোয়া দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। -আক্রান্ত দেশ ও ইসলাম, পৃ. ১৮
তাদের ওয়াজ মিথ্যা। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৮৭
শুধু মানুষকে ক্ষিপ্ত করে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো ব্যতীত ইতিবাচক কোনো কিছুই তাদের দ্বারা হয় না। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে? পৃ. ৪৪
তারা সন্ত্রাস জন্ম দেয়। -মহাসত্যের আহ্বান পৃ:৩৪
মানুষের ঈমান হাইজ্যাক করে, মিথ্যা গুজব রটিয়ে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে তারা ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায়। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৮৬
তারা মানুষের মন থেকে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করতে, মানুষের আত্মাকে বিশুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১১১
এদের প্রতি মানুষ এখন বিরক্ত। -ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ৪
এই আলেম তৈরি করে দেশ ও ধর্মের কোনো লাভ হচ্ছে না। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ২০
তাই আলেমদের থেকে ধর্ম কেড়ে নিতে হবে, নইলে সহিংসতা, সন্ত্রাস ও যুদ্ধ কমবে না। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৯২

বুঝা গেলো, নাস্তিক তসলিমা নাসরিনরা যেমন নিজেরা আলেমবিদ্বেষী এবং মানুষকে আলেমবিদ্বেষী বানায়, ঠিক তেমনিভাবে হেযবুত তওহীদও তসলিমার মতো নিজেরাও যেমন আলেমবিদ্বেষী, অন্যদেরও আলেমবিদ্বেষী বানাচ্ছে।

ধর্মহীনতায় তসলিমা ও হেযবুত তওহীদ:
নাস্তিকরা যেমন নিজেরা ধর্মহীন, ঠিক তেমনিভাবে তারা মানুষকেও ধর্মমুক্ত করার মিশনে নেমেছে। একই ভাবে হেযবুত তওহীদও মানুষকে ধর্মমুক্ত করতে চায়। তারা লিখেছে,
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়।  -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৫২
আর আমরা কাউকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না, এমনকি ইসলামের দিকেও ডাকছি না। -মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-১০৫
কারণ ইসলাম খ্রিস্টানদের বানানো। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ২২
এই ইসলাম দিয়ে আর শান্তি আসবে না। -চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াই, পৃ. ৬
এটা নারকীয় সিস্টেম। তাই এই ইসলামকে পাল্টাতে হবে। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ২০
আর অন্যান্য ধর্মগুলো বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ:৫১।
একটা সমস্যার সমাধানও কোন ধর্মে নেই। -ধর্ম বিশ্বাস, পৃ. ১৫
কোনো ধর্ম দিয়ে জাতির সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা করা সম্ভবও নয়। -হলি আর্টিজেনের পর-১৭
বরং সকল বড় সমস্যার কারণ ধর্ম। -জঙ্গিবাদ সংকট, পৃ. ৬৬
এই ধর্মগুলোই অশান্তির কারণ। -ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ৫
এই ধর্মের কারণেই রক্তপাত হয়। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ৭২
শুধু কী তাই বর্তমানে প্রতিটি ধর্মই বিষে পরিণত হয়েছে। ধর্ম থেকে জন্ম নিচ্ছে জঙ্গিবাদ, ফতোয়াবাজি, সাম্প্রদায়িকতা, হুজুগে উম্মাদনা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষতিকারক রোগজীবাণু, প্যারাসাইট’। -ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩৯
তাই আমরা কোনো ধর্মের দিকে আহ্বান করছি না। -মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-১০৫
এমনকি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানোও আমাদের কাজ নয়।  -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৫২
সুতরাং প্রচলিত সকল ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াই প্রতিটি বোধসম্পন্ন মানুষের অবশ্যকর্তব্য’। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৯

বুঝা গেলো, তারা মূলত মানুষকে তসলিমা নাসরিনের মতো ধর্মমুক্ত বানাতে চায়।

যুক্তিবাদী তসলিমা ও হেযবুত তওহীদ:
নাস্তিক ততসলিমারা যুক্তিশীল। যুক্তিই তাদের মূলধন। যুক্তি ছাড়া তারা কিছুই মানে না। তারা যেমন যুক্তিবাদী, তেমনিভাবে তারা মানুষকেও যুক্তিবাদী বানাতে বদ্ধপরিকর। ঠিক নাস্তিক তসলিমাদের মতো একই ভাবে সবাইকে যুক্তিবাদী বানাতে চায় হেযবুত তওহীদ। তাই তারা লিখেছে,

আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলেও আনতে হবে যুক্তির মাধ্যমে। -চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াইয়ের অপরিহার্যতা, পৃ. ১৩
এমনকি ইসলামও মানতে হবে যুক্তির আলোকে। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে? পৃ. ৩৬
কিন্তু বর্তমানে যে ইসলাম চর্চিত হচ্ছে তা কোনোভাবেই বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার যুগের উপযোগী নয়’। -ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১১৫
তাই অনেক যুক্তিশীল মানুষ ধর্মের নামে চলা এই কুপমন্ডুকতাকে মেনে নিতে না পেরে পুরোপুরি ধর্মবিদ্বেষী হয়েছেন’। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৯

বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদ মানুষকে তসলিমা নাসরিনের মতো যুক্তিশীল বানাতে চায়।

মানববাদী তসলিমা ও হেযবুত তওহীদ:
নাস্তিক তসলিমাদের ধর্মের নাম ‘মানবতা’ বা ‘মানবধর্ম’। মানবসেবার স্লোগানে তারা নিজেদের হারিয়ে ফেলতে চায়। যদিও মুসলিমদের দুঃখ-কষ্ট তাদের হ্নদয় বিগলিত করে না। তবুও তারা মানববাদী। যাহোক, তবুও তারা নিজেদের মানববাদী বলে পরিচয় দেয়। ঠিক একই পরিচয় হেযবুত তওহীদও দেয়। তারা লিখেছে,
মানুষের একমাত্র ধর্ম হচ্ছে মানবতা। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪৫
নামাজ রোজা হজ্ব, উপাসনা ইত্যাদি কোনো ইবাদত নয়। -ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ১৪
মানবতার কল্যানই একমাত্র ইবাদত। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৭৫
একমাত্র মানবতার কাজই মানুষকে মুমিন বানায়। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮৩
মানবতার কাজ না করলে সে মুমিন হতে পারবে না।  -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৪
মানবতাবাদীরাই একমাত্র সফল। -সবার ঊর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১৭
শিক্ষার মূল টার্গেট মানবতাবোধ। -প্রস্তাবনা, পৃ. ৭
যে জ্ঞান সমাজের বা জাতির কল্যাণে লাগে না সেই জ্ঞান অর্থহীন। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ১৮
একমাত্র মানবকার কল্যানেই জান্নাত নিহিত। -জঙ্গীবাদ সঙ্কট, পৃ. ৭৬
মানববাদী না হলে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৪৪
মানববাদী না হয়ে নামাজ, রোযা, হজ্ব ইত্যাদী সকল আমল করলেও সে জাহান্নামি। -ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ৩

বুঝা গেলো, ‘মানবধর্ম’ অনুসরনে হেযবুত তওহীদ ও তসলিমা এক ও অভিন্ন। পাঠকদের কাছে আমার প্রশ্ন, যদি উপরিউক্ত চারটা কারণে তসলিমা  নাসরিন যদি নাস্তিক হয়, তবে হেযবুত তওহীদ কেন নয়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.