তারাবীহের নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। নফল বলে এর গুরুত্ব হালকা করার কোনো সুযোগ নেই।হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. থেকে বর্ণিত নবীজি সা. বলেন,
إنَّ اللهَ تعالى افترضَ صومَ رمضانَ، وسننت لكمْ قيامَهُ، فمنْ صامَه وقامَه إيمانًا واحتسابًا ويقينًا كانَ كفارةٌ لِما مَضى
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর রমজানের রোযাকে ফরজ করেছেন, আর এর রাতে তারাবীহ পড়াকে আমি সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি রোযা রাখবে ঈমান ও সওয়াবের আশায় তার পিছনের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।
সূত্র: মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৭৭০৫, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী: ৩৬১৯ জামে সগীর হাদিস: ১৬৮৪ কানযুল উম্মাল: ২৫৬৬০
হাদিসটির মান:
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহ. ও ইমাম সানআনী রহ. বলেছেন,
إسناده حسن
অর্থাৎ হাদিসটির সনদ হাসান
সূত্র: আত তানবীর শরহে জামে সগীর খ. ৩ পৃ. ২৭৪
ইমামগণের মতামত:
ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রহ. বলেন,
التَّرَاوِيحِ سُنَّةُ عَيْنٍ، فَلَوْ تَرَكَهَا وَاحِدٌ كُرِهَ،
অর্থাৎ তারাবীহ হলো আইনী সুন্নাত। যদি কেউ ছেড়ে দেয়, তাহলে সেটা মাকরুহ হবে।
সূ্ত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ২ পৃ. ৪৯৫
ইবনে কুদামা আল মাকদিসী হাম্বলী রহ. বলেন,
وقيام شهر رمضان عشرون ركعة يعني صلاة التراويح وهي سنة مؤكدة وأول من سنها رسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ রমাযানের বিশ রাকাত তারাবীহ সুন্নাতে মুৃযাক্কাদা। আর এ সুন্নাত সর্বপ্রথম নবীজি সা. আবিস্কার করেছেন।
সূত্র: আল মুগনী খ. ১ পৃ. ৪৫৬
ইমাম নববী শাফেয়ী রহ. বলেন,
صلاة التراويح سنة بإجماع العلماء
অর্থাৎ সকল উলামায়ে কেরামের নিকট তারাবীহের নামাজ সুন্নাত।
সূ্ত্র: আল মাজমু খ. ৩ পৃ. ৫২৬
একটি খোঁড়া যুক্তি
কিছু ভাই সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসকে সামনে রেখে একটি অপব্যাখ্যা করে তারাবীহের নামাজকে নফল বলতে চান। হাদিসটি আগে দেখে নেয়া যাক।
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم النُّعْمَانُ بْنُ قَوْقَلٍ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِذَا صَلَّيْتُ الْمَكْتُوبَةَ وَحَرَّمْتُ الْحَرَامَ وَأَحْلَلْتُ الْحَلاَلَ أَأَدْخُلُ الْجَنَّةَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم “ نَعَمْ
অর্থাৎ জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, নু’মান ইবনু কাওকাল (রাযিঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, যদি আমি হারামকে জেনে বর্জন করি এবং হালালকে হালাল বলে গ্রহণ করি তাহলে আমি কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ১৬
উক্ত হাদিস সামনে রেখে কিছু ভাই প্রশ্ন করে যাচ্ছেন যে, উক্ত হাদিসে শুধু ৫ ওয়াক্ত নামাজের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এর বাহিরে যত নামাজ আছে, সব নফল।
তাহলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন
উক্ত হাদিসে তো ঈদের নামাজ, বিতর নামাজ, জানাযার নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতের কথাও নেই। তাহলে
১. “ঈদের নামাজ” “বেতর নামাজ” তো ওয়াজিব এগুলো না পড়লেও কি গুনাহ হবে না? জানাযার নামাজ তো ফরজে কিফায়াহ, কেউ যদি না পড়ে তাহলে তাহলে কি গুনাহ হবে না।
২. রোজা, হজ্ব, যাকাতের মত ইমলামের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্তম্ভের কথাও নেই, তাহলে এগুলো আদায় না করলে গুনাহ হবে না?
আসলে মূল বিষয় হলো, ১ টা হাদিসে ইসলামের সকল বিধিবিধান বর্ণিত হয়নি। ইসলাম হলো প্রায় ১০ লক্ষ হাদিস এবং কুরআনের সমন্বয়। কেউ যদি শুধুমাত্র একটা হাদিস দিয়ে ইসলাম মানতে চায়, সে মুর্খ না হয় ইসলাামের অপব্যাখ্যাকারী।