প্রিয় পাঠক, যে বিষয়টি আজ লিখছি, এটা লিখতে আমার হাঁত কাঁপছে! এমন জঘন্য বিষয়ও আমাদের লিখতে হবে, এটা যেকোনো রুচিশীল মানুষের কল্পনার বাহিরে। তবুও বাধ্য হচ্ছি। কারণ, আমাদের দেশে কাদিয়ানিয়্যাত ভাইরাস ব্যপকতা লাভ করছে। সরলপ্রাণ মুসলিমদের ধোকা দিয়ে ‘আহমাদী মুসলমান’ নাম ধারণ করে জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে মুরতাদ বানানোর চূড়ান্ত মিশনে নেমেছে এই কাদিয়ানী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
এ বিষয়ে প্রথমে মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তাঁর কোনো শরীক নেই, তিনি নৈতিকতার স্রষ্টা, তাঁর থেকে অনৈতিক কাজ প্রকাশের কল্পনাও বোকামী। তাঁর স্ত্রী বা সন্তান নেই। এটাই আহলে সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআত’-এর আকিদা। যা কুরআন-সুন্নাহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। মহান রব্ব বলেন,
وَأَنَّهُ تَعَالَىٰ جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا
এবং এই (বিশ্বাস করেছি) যে, আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সমুচ্চ। তিনি কোনো স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং কোনো সন্তানও নয়। –সুরা জ্বীন : ৩
তাছাড়া ‘সুরা ইখলাস’-এ বলা আছে,
قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ
বলে দাও, (কথা হলো) আল্লাহ সব দিক থেকে এক। আল্লাহই এমন যে, সকলে তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তার কোনো সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন। –সুরা ইখলাস : ১-৩
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মির্যা কাদিয়ানী মহান আল্লাহ-এর শানে এমন এক জঘন্য বক্তব্য উচ্চারণ করেছে, যা শুনলেই গা শিউরে ওঠে। দেখুন মির্যা কাদিয়ানী কী লিখেছে,
درحقیقت میرے اور میرے خدا کے درمیان ایسے باریک راز ہیں جن کو دنیا نہیں جانتی اور مجھے خدا سے ایک نہانی تعلق ہے جو قابل بیان نہیں
আসলে, আমার এবং আমার আল্লাহ-র মধ্যে এমন কিছু সূক্ষ্ম গোপন রহস্য রয়েছে, যা পৃথিবী জানে না, এবং আল্লাহ-র সাথে আমার একটি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে, যা বর্ণনা করা যায় না। –বারাহীনে আহমাদিয়া, খ. ৫ পৃ. ৬৩; রুহানী খাযায়েন, খ. ২১ পৃ. ৮১
মির্যা কাদিয়ানীর এই কথার ব্যাখ্যা লিখেছে তার একান্ত ও বিশ্বস্ত মুরিদ কাজী ইয়ার মুহাম্মাদ। দেখুন, সে কী লিখেছে,
حضرت مسیح موعود علیہ السلام نے ایک موقع پراپنی حالت یہ ظاہر فرمائی ہے کہ کشف کی حالت آپ پر اس طرح ہوئی کہ گویا آپ عورت ہیں اور اﷲ تعالیٰ نے رجولیت کی طاقت کا اظہار فرمایا تھا۔ سمجھنے والے کے لیے اشارہ ہی کافی ہے
হযরত প্রতিশ্রুত মসীহ্ (মির্যা কাদিয়ানী) আলাইহিস সালাম একবার তাঁর অবস্থা প্রকাশ করেছিলেন যে, একদা তার উপর এমন অবস্থায় কাশফ সংগঠিত হয়েছিলো যে, যেন তিনি একজন মহিলা এবং আল্লাহ তাআলা পুরুষত্বের শক্তি প্রকাশ করলেন। যে ব্যক্তি বুঝতে পারে, তার জন্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট। –ইসলামী কুরবানী, ট্র্যাক্ট নং : ৩৪ পৃ. ১২
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা নাকি মির্যার সাথে সহবাস করেছেন! নাউযুবিল্লাহ। কী ভয়ঙ্কর কথা! ভাবা যায়? এমন অপদার্থ, তোহমত প্রদানকারীদের ব্যাপারে মহান রব্ব বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُ ۚ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَافِرِينَ
তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ-র প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, কিংবা যখন তার কাছে সত্য বাণী পৌঁছে, তখন তা প্রত্যাখ্যান করে? (এরূপ) কাফেরদের ঠিকানা কী জাহান্নামে নয়? –সুরা আনকাবুত : ৬৮
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ وَمَن قَالَ سَأُنزِلُ مِثْلَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ ۗ وَلَوْ تَرَىٰ إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنفُسَكُمُ ۖ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ
সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, কিংবা বলে, আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে, অথচ তার প্রতি কোনও ওহী নাযিল করা হয়নি এবং যে বলে, আল্লাহ যে কালাম নাযিল করেছেন, আমিও অনুরূপ নাযিল করব? তুমি যদি সেই সময় দেখ (তবে বড় ভয়াল দৃশ্য দেখতে পাবে) যখন জালিমগণ মৃত্যু যন্ত্রণায় আক্রান্ত হবে এবং ফিরিশতাগণ তাদের হাত বাড়িয়ে (বলতে থাকবে), নিজেদের প্রাণ বের করো, আজ তোমাদেরকে লাঞ্ছনাকর শাস্তি দেওয়া হবে, যেহেতু তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা কথা আরোপ করতে এবং যেহেতু তোমরা তার নিদর্শনাবলীর বিপরীতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে। –সুরা আনআম : ৯৩
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا ۚ أُولَٰئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَىٰ رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَىٰ رَبِّهِمْ ۚ أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়? এরূপ লোকদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত করা হবে এবং সাক্ষ্যদাতাগণ বলবে, এরাই তারা, যারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি মিথ্যা আরোপ করত। সকলে শুনে নিক, ঐ জালেমদের উপর আল্লাহর লানত। –সুরা হুদ : ১৮
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ وُجُوهُهُم مُّسْوَدَّةٌ ۚ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِينَ
কিয়ামতের দিন তুমি দেখবে, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিলো, তাদের চেহারা কালো হয়ে গেছে। এরূপ অহংকারীদের ঠিকানা কি জাহান্নামে নয়? –সুরা যুমার : ৬০
মির্যা কাদিয়ানী যেভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলো
উপমহাদেশে সর্বপ্রথম নিজেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ হিসাবে দাবী করা ব্যক্তির নাম মির্যা কাদিয়ানী। দেখুন, সে কী লিখেছে–
اُس نے میرا نام مریم رکھا پھر دو برس تک صفت مریمیت میں میں نے پرورش پائی اور پردہ میں نشو و نما پاتا رہا پھر جب اُس پر دو برس گزر گئے تو مریم کی طرح عیسی کی روح مجھ میں نفخ کی گئی اور استعارہ کے رنگ میں مجھے حاملہ ٹھہرایا گیا اور آخر کئی مہینہ کے بعد جو دس مہینے سے زیادہ نہیں بذریعہ اس الہام کے مجھے مریم سے عیسی بنایا گیا پس اس طور سے میں ابن مریم ٹھہرا۔ اور خدا نے اس سرخفی کی مجھے خبر نہ دی
খোদা আমার নাম রাখেন মরিয়ম। অতঃপর দুই বছর আমি মরিয়ম হিসেবে প্রতিপালিত হই এবং নারীসুলভ গোপনীয়তায় বেড়ে উঠি। অতঃপর ঈসার রূহ আমার ভেতর ফুঁকে দেওয়া হয় সেভাবে, যেভাবে মরিয়মকে দেওয়া হয়েছিল। কাজেই রূপকভাবে আমি গর্ভবতী বিবেচিত হতাম। বেশ কয়েক মাস পর, যা দশ মাসের বেশি নয়, এই ইলহামের (বারাহীনে আহমদিয়ার) মাধ্যমে আমাকে মরিয়ম হতে ঈসা বানানো হলো। এভাবেই আমি হয়ে গেলাম ‘ইবনে মরিয়ম’। কিন্তু খোদা সে সময় এই গোপন বিষয়টি আমাকে অবহিত করেননি। –কিস্তিয়ে নূহ, পৃ. ৪৭; রূহানী খাযায়েন, খ. ১৯, পৃ. ৫০
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা নাকি মির্যা কাদিয়ানিকে ‘মারইয়াম’ নাম রাখেন! তারপর দুই বছর মারইয়াম হিশাবে থাকার পর ঈসা আ.-এর রুহ নিজের গর্ভে ধারণ করে গর্ভবতী হয়ে গেলো। এরপর দশ মাসের ভেতর নিজের গর্ভে নিজেই হয়ে উঠলো ‘ঈসা ইবনে মারইয়াম’! প্রিয় পাঠক, এই কথাটি লেখার সময় আমি কিছু সময়ের জন্য শকড ছিলাম। কারণ, এমন মানুষের অনুসারী দুনিয়ায় থাকতে পারে! এটা আমার বোধগম্য হচ্ছিলো না।