Home > ঘটনাবালী > উসমান ইবনে তালহা রা. ও কা’বার চাবির ঘটনা।

উসমান ইবনে তালহা রা. ও কা’বার চাবির ঘটনা।

উসমান ইবনে তালহা রা. ও কা’বার চাবির ঘটনা।
হযরত উসমান ইবনে তালহা রা. বলেন,
لقيني رسول الله صلى الله عليه وسلم بمكة قبل الهجرة ، فدعاني إلى الإسلام
হিজরতের পূর্বে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় একদিন আমার সাথে সাক্ষাত করে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেদিন আমি তাঁকে বলেছিলাম,
يا محمد العجب لك حيث تطمع ان اتبعك وقد خالفت دين قومك وجئت بدين محدث ففرقت جماعتهم والفتهم واذهبت بَهاءهم فانصرف
হে মুহাম্মাদ, আমি আশ্চর্য হচ্ছি এটা ভেবে যে, তুমি তোমার সম্প্রদায়ের ধর্মের বিরোধিতা করে নতুন ধর্ম নিয়ে এসেছো, তাদের ঐক্য ও ভালোবাসায় ফাটল সৃষ্টি করেছো এবং তাদের গৌবরময় ইতিহাস ধ্বংস করে দিয়েছো। আবার আমাকে তোমার অনুসরন করাতে চাচ্ছো! অতঃপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলে গেলেন।
فاقبل يوما يريد ان يدخل الكعبة مع الناس فغلظت عليه ونلت منه فحلم عنى
(এরপর) একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের নিয়ে কা’বায় ঢুকতে চাইলেন। কিন্তু আমি কঠোরতার সাথে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করলাম। কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করে বললেন,
يا عثمان لعلك سترى هذا المفتاح يوما بيدي أضعه حيث شئت
হে উসমান, খুব দ্রুত একটা দিন এমন আসবে, যেদিন এ চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে। সেদিন আমি যেখানে মন চায়, সেখানে এ চাবি রাখবো। উসমান রা. (ঠাট্রা করে) বললেন,
لَقَدْ هَلَكَتْ قُرَيْشٌ يَوْمَئِذٍ وَذَلّتْ
নিশ্চয় সেদিন কুরাইশরা ধ্বংশ হয়ে যাবে এবং অপদস্ত হবে। (যা কখনও সম্ভব না, আর হে মুহাম্মাদ, তোমার স্বপ্নও কখনও পুরণ হবে না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
بَلْ عَمَرَتْ وَعَزّتْ يَوْمَئِذٍ وَدَخَلَ الْكَعْبَةَ
(না) বরং, সেদিন আরও সমৃদ্ধ ও সম্মানিত হবে। উসমান রা. বলেন,
فوقعت كلمة منى موقعا ظننت ان الأمر سيصير الى ما قال فاردت الإسلام و مقاربة محمد فاذا قومى يزبروننى زبرا شديدا ويزرون برائي فامسكت عن ذكره
সেদিন আমার মনে একটি কথা গেথে গেলো। আমি ধারণা করলাম, মুহাম্মাদ যা বললো, সেটা নিশ্চয় খুব দ্রুতই হবে। ফলে আমি ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলাম এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নৈকট্য অর্জন করতে চাইলাম। কিন্তু আমার কওমের লোকেরা এ ব্যাপার আমাকে খুব শাঁসালো। ফলে আমি এ বিষয়ে আলোচনা থেকে চুপ হয়ে গেলাম। –তাবাকাতে ইবনে সা’দ, খ. ৫ পৃ.  ১৬; তাফসীরে মাযহারী, খ: ২ পৃ: ১৩৭; তারিখে দিমাশক, খ. ২১ পৃ. ৩৩৪

এরপর যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবাইকে ফেলে মাদীনায় চলে গেলেন। কিন্তু কত দিনের জন্য যাচ্ছেন, তিনিও জানেন না। অথচ দুই পাঁচ বছরের জন্য কেউ বিদেশে কাজ করতে যাবার সময় বাড়িতে কী করুণ ইতিহাস রচিত হয়। এক সপ্তাহ আগ থেকেই বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। একবার বন্ধু-বান্ধব থেকে বিদায় নেয়, একবার স্ত্রীর সামনে গিয়ে কাঁদে, একবার সন্তানকে কোলে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদে। কখনও বাবার চোখে চোখ রেখে অশ্রুসিক্ত হয়, কখনও মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে অশ্রু ঝরায়। কখনও পুকুর পাড়, কখনও রান্না ঘর, কখনও ঘরের আঙ্গিনা দেখে কাঁদতে থাকে। অথচ আজ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলে যাচ্ছেন, তো স্বাভাবিক কখনও কা’বা নজরে আসছে, কখনও নিজের ঘরবাড়ি, কখনও সন্তান, আত্মীয়-স্বজনের কথা ভেবে নিশ্চয় অশ্রুসিক্ত হচ্ছেন। তবে প্রবাসীরা নির্দিষ্ট একটা টাইম নিয়ে যায়, ইচ্ছে হলে ফিরেও আসতে পারবে এয়ার্পোর্ট থেকেও। তবে আজ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবাইকে রেখে যাবেন, কিন্তু কতদিন পর সন্তানদের সাথে দেখা হবে তিনিও জানেন না। তাছাড়া প্রবাসীরা যেদিন চলে যায়, সেদিন তো বিদায় দেয়ার মত কতো মানুষ পাশে থাকে। কিন্তু আজ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবা-মা কেউ নেই। কী নির্মম সে দিনের ইতিহাস।

যাইহোক, দীর্ঘ দশ বছর পর মক্কার দিকে ফেরার সময় চলে আসলো, তিনি সাহাবায়ে কেরাম রা.-কে নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং কাবার হজরে আসওয়াদের চুমু খেয়ে সাতবার কাবা তওয়াফ করলের। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
وعلى الكعبةِ ثلاثمائةٍ وستونَ صنَمًا قدْ شدَّ لهم إبليسُ أقدامَها بالرصاصِ فجاء ومعه قَضيبٌ فجعل يَهْوِي به إلى كُلِّ صنَمٍ منها فَيَخِرُّ لوجْهِهِ فيقولُ  جاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْباطِلُ إِنَّ الْباطِلَ كانَ زَهُوقًا حتى مَرَّ علَيْها كلَّها
এদিকে কাবা শরীফে তিনশো ষাটটি মূর্তি ঝুলানো ছিল। ইবলিস তাদের পা সীসা দিয়ে বেঁধে রেখেছিলো। তারপর তিনি একটি লাঠি নিয়ে এসে প্রতিটি মূর্তিকে আঘাত করতে শুরু করলেন, ফলে প্রতিটা মূর্তি মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। সে সময় তিনি বলছিলেন, সত্য এসে গেছে, মিথ্যা ধ্বংস হয়ে গেছে, নিশ্চয় মিথ্যা ধ্বংসশীল। এভাবে সকল মূর্তি অতিক্রম করে গেলেন। –মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস নং : ১১১৩৮

فطلب رسول الله صلى الله عليه وسلم المفتاح فقيل له إنه مع عثمان
অতঃপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বার চাবি তালাশ করলে তাঁকে বলা হলো, চাবি তো উসমানের কাছে।
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أين عثمان بن طلحة
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, উসমান ইবনে তালহা কোথায়? –সিরাতে ইবনে হিশাম, খ. ২ পৃ. ৪১৩

অপর বর্ণনায় এসেছে,
فلما فرغ رسول الله صلى الله عليه وسلم من طوافه أرسل بلالاً إلى عثمان بن طلحة يأتيه بمفتاح الكعبة
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাওয়াফে কাবা শেষ করলেন, তখন হযরত বেলাল রা.-কে উসমানের কাছে চাবি আনার জন্য পাঠালেন।
فجاء بلال إلى عُثمان، فقال: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأمرك أن تأتي بالمفتاح، فقال: نعم هو عند سلافة
বেলাল রা. গিয়ে বললেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে কা’বার চাবি নিয়ে যেতে আদেশ করেছেন। তিনি বললেন, ঠিক আছে, চাবিটা (আমার মা) সুলাফা বিনতে শায়বার কাছে আছে।
فرجع بلال إلى رسول الله  فأخبره أنَّه قَالَ نعم، وأن المفتاح عِنْدَ أُمه، فبعث إليها رسول الله  صلى الله عليه وسلم. رسولاً
বেলাল রা. নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, উসমান বলেছে, চাবি দিয়ে দেবে। আর চাবিটা মূলত তার মায়ের কাছে আছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরেকজনকে পাঠালেন।
فجاء، فقالت: لا، واللات والعُزَّى، لا أدفعه إليك أبدا، فقال عثمان يا رسول الله أَرْسِلْني أخلصه لك منها، فأرسله
তিনি এসে (চাবি চাইলে) উসমান রা.-এর মা বললো, ‘না’ লাত এবং উজ্জার কসম, আমি চাবিটা কখনই তোমাকে দেবো না। অতঃপর উসমান রা. বললেন,  হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে পাঠান, যেন আমি চাবিটা তার থেকে আপনার কাছে আনতে পারি। ফলে তিনি তাকে পাঠালেন।
فقال: يا أُمه ادفعي إلي المفتاح، فإِن رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم قد أرسل إلي، وأمرني أن آتيه به
হে মা, আমাকে চাবিটা দিয়ে দেন। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে চাবি নিয়ে তাঁর কাছে যেতে আদেশ পাঠিয়েছেন।
فقالت أنه لا واللات والعزى لا أدفعه إليك أبداً
মা বললো, ‘না’ লাত এবং উজ্জার কসম, আমি চাবিটা কখনই তোমাকে দেবো না।
فقال: لا لات ولا عزى إنه قد جاء أَمرٌ غير ما كُنَّا عليه، وإنَّك إن لم تَفْعَلي قُتِلْتُ أَنَا وَأَخِي فَأَنت قَتَلْتِينَا
উসমান বললেন, না, লাতও না, উজ্জাও না। এমন কিছু বিষয় নিয়ে তিনি আগমন করেছেন, যা আমরা পালন করি, সেটা তার থেকে আলাদা কিছু। যদি তুমি এটা না করো, তাহলে আমার ভাই এবং আমি নিহত হব। তুমি আমাদের হত্যা করার জন্য দায়ী। –কিতাবুল মাগাযী লিল ওয়াকিদী, খ. ২ পৃ. ৮৩৩

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,
فَقَالَ وَاللَّهِ لَتُعْطِينِيهِ أَوْ لَيَخْرُجَنَّ هَذَا السَّيْفُ مِنْ صُلْبِي
উসমান রা. বললেন, আল্লাহর শপথ, তাঁকে চাবি দিয়ে দেন, অন্যথায় এ তরবারি আমার পিঠ ভেদ করে চলে যাবে। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৩২৯

তিনি মাকে আরও বললেন,
فوالله لتدفَعِنَّهُ، أو ليأتين غيري فيأخذه منك…فبينما هما على ذلك وهو يكلمها إذ سمعت صوت أبي بكر وعمر في الدار، وعمر رافع صوته حين أبطأ عثمان: يا عثمان اخرج.
আল্লাহর কসম, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে চাবি দিয়ে দেন, আর না হয়, আমার পরিবর্তে অন্য কেউ এসে আপনার থেকে চাবি নিয়ে যাবে…তারা কথা বলা অবস্থায় (দেরি করায়) হঠাৎ বাড়িতে আবু বকর রা. ও ওমর রা. এর কণ্ঠ শুনতে পেলেন। উসমানের দেরি হওয়ায় উমর রা. উচ্চস্বরে আওয়াজ দিয়ে বললেন, হে উসমান, বের হও। –তারিখে দিমাশক খ: ২১ পৃ: ৩৩৭

فَأَعْطَتْهُ إِيَّاهُ ‏فَجَاءَ بِهِ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
অতঃপর তাঁর মা তাঁকে চাবি দিয়ে দিলেন। তিনি চাবি নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন।
فَدَفَعَهُ إِلَيْهِ فَفَتَحَ الْبَابَ
অতপর নবীজির সা. নিকট চাবি হস্তান্তর করেন। তিনি কা’বার দরজা খুললেন। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৩২৯

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
أغلق عثمان باب البيت وصعد السطح فطلب منه فأبى وقال لو علمت أنه رسول الله صلى الله عليه وسلم لم أمنعه المفتاح فلوى علي بن أبي طالب يده وفي رواية عنقه وأخذ منه المفتاح
উসমান কা’বার দরজা বন্ধ করে ছাদে উঠে অবস্থান করছিলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাছে চাবি চাইলে, তিনি দিতে অস্বীকার করলেন। উসমান রা. বলেন, যদি আমি জানতাম যে, তিনি আল্লাহর রাসুল তাহলে চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানাতাম না। অতপর আলী রা. তাঁর হাত ধরে, আবার কোনো বর্ণানায় এসেছে, ঘাড় মুড়িয়ে চাবি নিয়ে নিলেন। –তাফসীরে মাযহারী, খ. ২ পৃ. ১৩৯

চাবি আনার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবার দরজা খুলতে বললেন, কিন্তু কাবার ভেতরেও মূর্তি সাজানো ছিলো। এক হাদিসে এসেছে,
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا قَدِمَ مَكَّةَ أَبَى أَنْ يَدْخُلَ الْبَيْتَ وَفِيْهِ الْآلِهَةُ فَأَمَرَ بِهَا فَأُخْرِجَتْ فَأُخْرِجَ صُوْرَةُ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ فِيْ أَيْدِيْهِمَا مِنَ الْأَزْلَامِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَاتَلَهُمْ اللهُ لَقَدْ عَلِمُوْا مَا اسْتَقْسَمَا بِهَا قَطُّ ثُمَّ دَخَلَ الْبَيْتَ فَكَبَّرَ فِيْ نَوَاحِي الْبَيْتِ وَخَرَجَ وَلَمْ يُصَلِّ فِيْهِ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা্য় আগমন করার পর তৎক্ষণাৎ বাইতুল্লাহর ভিতরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রইলেন, কেননা সে সময় বাইতুল্লাহর ভিতরে অনেক প্রতিমা স্থাপিত ছিল। প্রতিমাগুলো বের করে ফেলা হলো। তখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ.-এর মূর্তিও বেরিয়ে আসলো। +কাফেররা বিশ্বাস করতো যে) তাদের উভয়ের হাতে ছিল মুশরিকদের ভাগ্য নির্ণয়ের কয়েকটি তীর। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। তারা অবশ্যই জানত যে, ইবরাহীম আ. ও ইসমাঈল আঃ. কক্ষনো তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করেননি। এরপর তিনি বাইতুল্লাহর ভিতরে প্রবেশ করলেন। আর প্রত্যেক কোণায় কোণায় গিয়ে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিলেন। অতঃপর বেরিয়ে আসলেন। সেসময় তিনি সেখানে সালাত আদায় করেননি। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৪২৮৮

আরেকটি হাদিসে এসেছে, হযরত উসামা রা. বলেন,
دخلت على رسول الله صلى الله عليه وسلم في الكعبة فرأى صورا فدعا بدلو من ماء فأتيته به ، فضرب به الصور
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে গেলাম। কা’বার ভেতর কিছু ছবি দেখে পানি ভর্তি বালতি আনতে বললেন, আমি নিয়ে আসলে সেটা দিয়ে তিনি সব ছবি মিটিয়ে দেন। –ফাতহুল বারী, খ. ৩ পৃ. ৫৪৭

মনে রাখবেন, হিন্দুদের মন্দিরে থাকা মূর্তির প্রতিবাদ করা হয়নি, বরং আল্লাহর ঘরে এসব শিরক থাকা নবীজি বরদাশত করেননি। অথচ এ মূর্তি পাথরের, মূর্তির তো কোনো অপরাধ নেই। এরপরও শিরকের মাধ্যম হওয়ায় সেগুলো নবীজি সা. সেগুলো বরদাশত করেননি। এ থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি ভন্ডপীররা মূর্তির চেয়েও খারাপ, কারণ এরা মানুষ, এরা গুনাহগার। নিস্পাপ মূর্তিকে যদি মুসলমানদের ঘরে রাখা না যায়, ভন্ডপীরদের শিরকের মাজার এবং ঘরের ছবি ছিড়ে ফেলা এটাও নবীজির শিক্ষা।

যাইহোক, মূল কথায় আসি,
فلما خرج سأله العباس أن يعطيه المفتاح فيجمع له بين السقاية والسدانة
যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা থেকে বের হলেন, তখন আব্বাস রা. তাঁর কাছে কা’বার চাবি অর্পন করতে বললেন, যেন তিনি হাজীদের পানি পান করানো ও কা’বার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব একত্রে করতে পারেন। –আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ, খ. ১ পৃ. ৩২৩

অন্য বর্ণনায় এসেছে,
فَقَامَ إلَيْهِ عَلِيّ رَضِيَ اللّهُ عَنْهُ وَمِفْتَاحُ الْكَعْبَةِ فِي يَدِهِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللّهِ اجْمَعْ لَنَا الْحِجَابَةَ مَعَ السّقَايَةِ صَلّى اللّهُ عَلَيْك
আলী রা. নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে দাঁড়ালেন, তাঁর হাতে ছিল কা’বার চাবি। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, কা’বার রক্ষণাবেক্ষণ ও পানি পান করানোর দায়িত্ব আমাদেরকে দিন। আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন। –সিরাতে ইবনে হিশাম, খ. ২ পৃ. ৪১৩

فأمر رسول الله عليًّا أن يرد المفتاح إلى عثمان بن طلحة ويعتذر إليه، ففعل ذلك عليّ، فقال له عثمان: يا عليّ أكرهت وآذيت ثم جئت ترفق؟ فقال: لقد أنزل الله في شأنك، وقرأ عليه هذه الآية
কিন্তু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী রা.-কে বললেন, যেন তিনি চাবিটা উসমান রা.-কে দিয়ে দেন এবং তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। আলী রা. সেটাই করলেন। উসমান রা. বললেন, হে আলী, আমার উপর আপনি জোরজবরদস্তি করলেন, কষ্টও দিলেন, আবার নম্রতার সাথে আচরনও করলেন। আসলে এর কারণ কী? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমার ব্যাপারে আয়াত নাজিল করেছেন এবং এ আয়াতটি পড়লেন,
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤدُّواْ الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا
নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌঁছে দাও। (সুরা নিসা : ৫৮) –তাফসীরে বগবী, খ. ১ পৃ. ৩৫৩

এবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমান রা. কে বললেন,
هاك مفتاحك يا عثمان ، اليوم يوم بر ووفاء
হে উসমান, তোমার চাবি নাও। আজ অনুগ্রহের ও বিশ্বস্ততা রক্ষার দিন। –সিরাতে ইবনে হিশাম, খ. ২ পৃ. ৪১৩

পাশাপাশি তিনি কাবার চাবি গোপন করে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ‘ফাতুহল বারী’-তে এসেছে,
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لما ناول عثمان المفتاح قال له غيّبه قال الزهري فلذلك يغيب المفتاح
যখন উসমান চাবি পাইলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, চাবিটা গোপন রেখো। যুহরী রহ. বলেন, তিনি সব সময় চাবিটা গোপন রাখতেন। –ফাতুহুল বারী, খ. ৭ পৃ. ৬১২

যাইহোক, হযরত উসমান রা. বলেন,
فَلَمّا وَلّيْت نَادَانِي فَرَجَعْتُ إلَيْهِ فَقَالَ : أَلَمْ يَكُنْ الّذِي قُلْتُ لَكَ؟
যখন আমি চাবি নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ডাকলেন। আমি ফিরে গেলাম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, (হে উসমান,) আমি (সেই পূর্বে) যেমনটি বলেছিলাম, তেমনটি কী হয়নি?
قَالَ فَذَكَرْت قَوْلَهُ لِي بِمَكّةَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ لَعَلّك سَتَرَى هَذَا الْمِفْتَاحَ بِيَدِي أَضَعُهُ حَيْثُ شِئْت
আমি হিজরতের পূর্বের মক্কার সেই কথাটি স্বরণ করলাম, নবীজি সা. বলেছিলেন, “হে উসমান, খুব দ্রুত একটা দিন এমন আসবে যেদিন এ চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে, সেদিন আমি যেখানে মন চায় সেখানে এ চাবি রাখবো।
فَقُلْتُ بَلَى أشهد أن محمدا رسول الله
আমি বললাম, জ্বী হ্যাঁ, অতঃপর আমি বললাম, আমি আজ সাক্ষি দিলাম, ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’। –মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ খ: ১ পৃ: ৫৮৭

অতঃপর জিব্রাঈল আ. আগমন করে বললেন,
ما دام هذا البيت أو لبنة من لبناته قائمة فإن السدانة في أولاد عثمان فهو اليوم في أيديهم
যতদিন এই কা’বা ঘরের একটি ইটও থাকবে, ততদিন এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকবে উসমানের বংশধরের হাতে। আজও এটা তাঁদের হাতেই রয়েছে। –মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ, খ. ১ পৃ. ৫৮৮

প্রিয় পাঠক, এটাই ছিল আমাদের মডেল মুহাম্মাদ সা. এর মহান আখলাকের কিঞ্চিত নমুনা।

Check Also

মাশিতা ও ফিরআউন

عَنِ ‏‏ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما ‏‏قَالَ ‏ :قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ‏‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ …

Leave a Reply