Home > QRF-আহলে কোরআন > QRF এর ভ্রান্তির যুক্তিভিত্তিক জবাব।

QRF এর ভ্রান্তির যুক্তিভিত্তিক জবাব।

(QRF) কোরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভ্রান্ত যুক্তির পাল্টা যুক্তি।

তাদের যুক্তি ও খন্ডন:

“কবিরা গুনাহকারী ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামী” বলে তাদের মতবাদটি প্রতিষ্ঠিত করতে তারা কয়েকটি যুক্তি পেশ করে থাকে। তার মধ্যে একটি হলো-
দুনিয়াতে অনেক অপরাধের স্থায়ী শাস্তি রয়েছে, যেমন কোন ব্যক্তি চুরি করলে তার হাত কেটে দেয়া হয়। যেহেতু অপরাধি কখনো তার হাতটি ফিরে পাবে না, সেহেতু এটা স্থায়ী শাস্তি। তাহলে কেয়ামতের দিনও স্থায়ী শাস্তি হওয়াটা কি যৌক্তিক নয়?

যুক্তি খন্ডন:
প্রথম কথা হলো: দুনিয়ার বিচারকে আল্লাহর বিচারেরর সাথে তুলনা করা একদমও যুক্তিসঙ্গত নয়। কেননা মানুষ যত ছোট অপরাধই করুক না কেন, দুনিয়ার বিচারে কোন অপরাধিকে বিচারক অকারণে বা নিজ ইচ্ছায় ক্ষমা করতে পারেন না । কিন্তু মহান রব এত মহান যে, যতবড়ই অপরাধি হয় না কেন, তওবা করলে মাফ করতে তিনি দ্বীধাবোধ করেননা।
সুতরাং দুনিয়ার বিচারকের সাথে মহান বিচারক আল্লাহ তা’য়ালার সাথে তুলনা দেয়া নিতান্তই বোকামী ছাড়া বিছু না।

দ্বিতীয়ত কথা হলো- একজন বিচারকের সামনে অনেক ধরণের অপরাধির বিচার আসে।সংবিধান অনুযায়ী কারো বিচারের রায় হয় ১ মাস জেল, আবার কারো আমৃত্যু কারাদন্ড আবার কারো মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু বিচারকের সামনে কে কোন ধর্মের সেটা বিবেচ্য নয়।
কিন্তু কেয়ামতের ময়দানে রবের সামনে ধর্মের বিষয়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মুমিনদের জন্য এহসানের (দয়া) করার বিষয়টি তো মহান রব স্পষ্টত কুরআনে হাকিমে উল্লেখ্য করেছেন। শুধু কি তাই বরং মুমিনদের যেকোন নেক আমলকে দ্বীগুন করে দেয়া হবে। মহান রব বলেন-
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَظۡلِمُ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖۖ وَإِن تَكُ حَسَنَةٗ يُضَٰعِفۡهَا
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না। ‎আর যদি সেটি নেক কাজ হয়,তাহলে তিনি তাকে দ্বিগুণ ‎করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান ‎প্রদান করেন।
সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪০
কিন্তু বেঈমানদের কোন নেক কাজ কোন উপকারে কেয়ামতে আসবে না। হাদিসে কুদসীতে এসেছে-
أبي هريرة عن النبي صلي الله عليه وسلم يَلْقى إبْراهِيمُ أباهُ، فيَقولُ: يا رَبِّ إنَّكَ وعَدْتَنِي أنْ لا تُخْزِيَنِي يَومَ يُبْعَثُونَ، فيَقولُ اللَّهُ: إنِّي حَرَّمْتُ الجَنَّةَ على الكافِرِينَ.
অর্থাত মহান আল্লাহ বলেন-
আমি কাফেরদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছি। সূত্রঃ বুখারী-৪৭৬৯

অর্থাত বুঝাতে চাচ্ছি দুনিয়ার আদালতে ধর্মের বিষয়টি বিবেচ্য নয়, কিন্তু আখেরাতে ধর্মের বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং দুনিয়ার বিচার দিয়ে আখেরাতের বিচারকে তুলনা করা ছেলেমি বিষয় ছাড়া কিছু নয়।

তৃতীয়ত কথা হলো-
তারপরও ধরে নিলাম (QRF) এর যুক্তি যুক্তিযুক্ত। কিন্তু তাদের যুক্তির ভেতরে যে আমাদের যুক্তি লুকিয়ে রয়েছে, সেটা তারা বুঝতেই পারেননি। চলুন তাদের যুক্তি দিয়ে আমাদের মতবাদই প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে দেখে নিই।

দুনিয়ার আদালতে কিন্তু দুই প্রকার শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। সবাইকে শুধু স্থায়ী শাস্তিই দেওয়া হয় না। অস্থায়ী শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে। যেমন- কোন অবিবাহিত ছেলে যিনা করলে ৮০ টা বেত্রাঘাত। কারো বা কিছু দিন জেল, পরে মুক্তি। এটা তো অস্থায়ী শাস্তি। দুনিয়ার আদালতে বড় অমার্জনীয় অপরাধের জন্য যেমন স্থায়ী শাস্তি, আর ছোট অপরাধের কারণে অস্থায়ী শাস্তি থাকা যুক্তিসঙ্গত,
তেমনি কাফের,মুশরিকরা যেহেতু অমার্জনীয় বড় অপরাধে অপরাধী, তাই তারা জাহান্নামের স্থায়ী শাস্তি পাবে। কারণ কুফর শিরক সবচে বড় অমার্জনীয় অপরাধ। তেমনি কেয়ামতেও কুফর শিরকের মত সবচে বড় ও অমার্জনীয় অপরাধের জন্য চিরস্থায়ী শাস্তি অর্থাৎ চিরদিনের জাহান্নামে থাকতে হবে।

পক্ষান্তরে দুনিয়ার নিয়ম হলো- যে অপরাধ ছোট, সেগুলোর জন্য অস্থায়ী শাস্তি দেয়া হয়। আর এমনটিই আল্লাহ পাকও করেছেন, অর্থাৎ মুমিনরা যেহেতু কুফর,শিরিকের মত বড় অমার্জনীয় অপরাধ করেনি,তাই মুমিনদের অস্থায়ী শাস্তি দিয়ে কিছুদিন জাহান্নামে রাখবেন, অতপর জান্নাতে দেবেন। অতএব দুনিয়ার আদালতে যেমন স্থায়ী এবং অস্থায়ী শাস্তির ব্যবস্থা থাকা যুক্তিসঙ্গত, তেমনি জাহান্নামেও স্থায়ী ও অস্থায়ী শাস্তি থাকা যুক্তিসঙ্গত।

কিন্তু আফসোস! (QRF) জাহান্নামের শাস্তির জন্য শুধু স্থায়ীটা রাখলো, কিন্তু দুনিয়ার আদালতে থাকা অস্থায়ী শাস্তির মত জাহান্নামেও যে সেটা থাকা লাগবে সেটা যে কমনসেন্সের দাবী সে বুঝটি কিন্তু তাদের মাথায় আসেনি।

চতুর্থ কথা হলো- ফাইনাল্লি কমনন্সেন্স কি বলে?

ক. সাধারণ জ্ঞান তথা বিবেকের দাবীও এটাই যে, মুমিনরা সবাই জান্নাতে থাকবে। কেউ প্রথম থেকেই জান্নাতে যাবে গুনাহ না থাকায়, আর কেউ গুনাহের কারণে রবের এহসান তথা দয়ার কারণে প্রথমেই জান্নাতে যাবে অথবা ইনসাফ বা ন্যায়বিচারের কারণে শাস্তি ভোগ করে পরে জান্নাতে যাবে। কারণ যদি কবিরাগুনাহের জন্য মুমিনদের চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হয়, তাহলে কাফের আর মুমিনদের মধ্যে পার্থক্য কি রইল?
তাহলে তো কাফের মুমিন একাকার হয়ে যাবে।

খ. যেমনিভাবে কোন কাঠে ময়লা লেগে থাকলে সেটা পরিস্কার না করে ভালো কাজে ব্যবহার করা যায় না। পরিস্কার হয়ে গেলে সেটা দিয়ে পবিত্র কুরআনের তাকও বানানো যায়। কিন্তু কাঠটি পরিস্কার করে যদি কেউ ফেলে দেয় সেটা হয় অপচয়।
তেমনি মুমিনদের শরীরে যদি গুনাহের ময়লা থাকে তবে সেটা পরিস্কার হবে হয়তো রবের রহমে অথবা জাহান্নামের আগুনে। আগুনে পোড়ানোর পর যখন পরিস্কার হয়ে যাবে তখন সেই পরিস্কার কাঠ ফেলে দেয়া যেমন অপচয় তেমনি মুমিন গুনাহ থেকে পবিত্র হবার পর তাকে জাহান্নামে ফেলে রাখা কতটুকু যৌক্তিক?

সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন-
তাহলে কাফেরদেরও তো আগুনে পুড়িয়ে পরিস্কার করা যায়।তাহলে কাফেররাও তো একদিন না একদিন পরিস্কার হয়ে জান্নাতে যেতে পারবে?

উত্তর-
কাফেরদের কুফরী ও শিরকী ময়লাটা এমন যেটা হাজার পোড়ালেও পরিস্কার হওয়ার নয়।
যেমন কয়লা ধুলে ময়লা যায় না।
তেমনি কাফের-মুশরিকরা কখনো পরিস্কার হবে না।
অতএব কমনসেন্সেরও দাবী হলো- গুনাহগারের গুনাহের ময়লা হয়রতো রবের দয়ায় সাফ হবে অথবা শুরুতে কিছুদিন জাহান্নামে রেখে পরিস্কার হয়ে পরে জান্নাতে যাবে। কিন্তু বেঈমানরা কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.