Home > হিজবুত তাওহীদ > ঈমানের দাওয়াত আমাদের কাজ নয়: হেযবুত তওহীদ।

ঈমানের দাওয়াত আমাদের কাজ নয়: হেযবুত তওহীদ।

প্রিয় পাঠক! সকল নবিদেরকে আল্লাহ এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন একটি দাওয়াতে মিশন দিয়ে। সেটা হল, হে মানবজাতি বলো, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই”। সকল নবিগণ তাঁরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করত: আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করার দাওয়াত দিয়ে গেছেন। শেষ নবি মুহাম্মাদ স: তাঁরও এ কাজই ছিল মূল কাজ। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ হেযবুত তওহীদ নিজেদেরকে সত্যিকারের ইসলামের ধারক-বাহক দাবি করলেও মানুষকে ঈমান ও ইসলামের ধর্মের দিকে ডাকার মিশন নিয়ে তারা নামেনি।

তারা একদিকে দাবি করেছেন,
“হেযবুত তওহীদ পরিচালনা করেন স্বয়ং আল্লাহ”
অপরদিকে বলছেন,
“আল্লাহর প্রতি ঈমান আনানো বা ইসলামের দিকে আহ্বান করা হেযবুত তওহীদের কাজ নয়।” নাউযুবিল্লাহ।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

চলুন কি দাবি তাদের আগে সেটা দেখে নেয়া যাক।

১. হেযবুত তওহীদ সরাসরি আল্লাহ পরিচালনা করছেন।

তারা লিখেছেন,

“হেযবুত তাওহীদ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ স্বয়ং, তিনিই একে পরিচালনা করে আসছেন।”
সূত্র: আদর্শিক লড়াই পৃ:১৫

২. ঈমানের দাওয়াত আমাদের কাজ নয়:

“আমরা বলি না যে, আপনারা আল্লাহ বিশ্বাসী হয়ে যান, মো’মেন হয়ে যান, পরকালে বিশ্বাসী হয়ে যান। আল্লাহর প্রতি কে ঈমান আনবে কে আনবে না সেটা তারা আল্লাহর সঙ্গে বুঝবে। সুতরাং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়।”
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ: ৫২

“ধর্ম চাই মানুষের সঙ্গে মানুষের ঐক্য। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকল ধর্মাবলম্বীদের আজ হৃদয় দিয়ে বুঝতে হবে যে সকল মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি। তেমনি সকল ধর্ম একই স্রষ্টা থেকে আগত। স্রষ্টার অভিপ্রায় হচ্ছে মানব জাতি একতাবদ্ধ হয়ে তার বিধান মেনে শান্তিতে জীবন যাপন করুক। ঠিক যেমনভাবে একজন বাবা চান তার সন্তানরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুক। স্রষ্টার এ অভিপ্রায় পূরণের জন্য আমরা কি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না।”
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-১০০

“কাজেই এই আদর্শের লড়াইয়ে বাম আদর্শের সৈনিকদের কেউ এগিয়ে আসতে হবে আমরা বলছি না যে আপনাকে বিশেষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।মানুষকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গিবাদ ধর্মব্যবসা স্বার্থের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা দরকার মোটিভেশন করা দরকার সেটা ত্যাগী মানুষদেরকে দিয়েই। আমাদের ইহকালের সমস্যা তাই সমাধানটাও ইহকালের হিসেবেই করতে চাই।পবিত্র কোর’আনে আছে যার ইহকাল ভালো তার পরকালও ভালো।”
সূত্র: আদর্শিক লড়াই পৃষ্ঠা-১৪

তাদের উপরোক্ত কথাগুলো থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে-
১. হেযবুত তওহীদ সরাসরি আল্লাহর পরিচালিত ধর্ম।
২. আল্লাহর অভিপ্রায় বা ইচ্ছে হলো, সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে সবাই সুখে থাকুক।
৩. তারা যদি দুনিয়ায় সুখে থাকে, তাহলে আখেরাতেও সুখে থাকবে।
৪. এর জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ বা আল্লাহতে বিশ্বাসী হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

ইসলাম কি বলে?

এক. আল্লাহর প্রতি ঈমান ও হেযবুত তওহীদের মিথ্যাচার।

আল্লাহ তা’য়ালার উপর ঈমান আনয়ণের প্রতি নির্দেশ করত: মহান আল্লাহ বলেন,

فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

অর্থ: কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।
সুরাঃ বাকারা আয়াত-১৮৬

উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বান্দাদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর সেটি হলো, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।

শুধু তাই নয়, বরং আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. এবং আল্লাহর নাযিলকৃত পবিত্র কুরআনের প্রতি সমস্ত মানুষের ঈমান আনয়ন করা ফরজ ঘোষণা করতে আল্লাহ বলেন,

فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنزَلْنَا وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

অর্থ: অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং অবতীর্ন নূরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।
সুরা তাগাবুন আয়াত-৮

উক্ত আয়াতে আল্লাহর উপর, তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. এর উপর এবং পবিত্র কুরআনের উপর ঈমান আনার সরাসরি নির্দেশ করেছেন মহান আল্লাহ নিজেই।

আল্লাহর উপর, তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. এর উপর এবং পবিত্র কুরআনের উপর ঈমান আনার পাশাপাশি পূর্বযুগের নবীদের উপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাবের উপরও ঈমান আনার নির্দেশ এসেছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রসূলও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রসূলের উপর এবং সেসমস্ত কিতাবের উপর, যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে।
সুরাঃ নিসা আয়াত- ১৩৬

প্রিয় পাঠক, আমরা উক্ত আয়াতগুলো থেকে কয়েকটি বিষয় জানতে পারলাম-
১. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ফরজ।
২. মুহাম্মাদ সা. এর উপর ঈমান আনা ফরজ।
৩. পবিত্র কুরআনের উপর ঈমান আনা ফরজ।
৪. অন্যান্য আসমানী কিতাবের উপর ঈমান আনা ফরজ।

উক্ত আয়াতগুলো থেকে সকল পাঠক অন্তত এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, বান্দাদের কাছ থেকে আল্লাহর চাওয়া বা অভিপ্রায় কি? আল্লাহর অভিপ্রায় হচ্ছে, বান্দারা যেন, আল্লাহ,রাসুল সা., কুরআন ইত্যাদীর উপর ঈমান আনয়ণ করে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবী হলো-
“আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়।”
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ: ৫২

তাহলে আল্লাহর অভিপ্রায় আর হেযবুত তওহীদের কর্মকান্ড আদৌ কি মিললো? নিশ্চয় না। তাহলে “এ হেযবুত তওহীদ আল্লাহ সরাসরি নিজে পরিচালনা করছেন” দাবিটা কি জলন্ত মিথ্যাচার নয়? আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ নয়?

দুই. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের ফল ও হেযবুত তওহীদের দাবির অসারতা:

. ঈমান আনা ক্ষমাপ্রাপ্তী ও জান্নাতের যাওয়ার মাধ্যম:

মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ

অর্থ: হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য।
সুরাঃ ছ-ফ আয়াত-১০-১৩

অন্যত্র এসেছে,

سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

অর্থ: তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত। এটা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণের প্রতি বিশ্বাসস্থাপনকারীদের জন্যে। এটা আল্লাহর কৃপা, তিনি যাকে ইচ্ছা, এটা দান করেন। আল্লাহ মহান কৃপার অধিকারী।
সুরাঃ হাদিদ আয়াত: ২১

খ. ঈমান আনয়ণ; রহমত ও সঠিক পথের মাধ্যম:

পবিত্র কুরআনে এসেছে,

فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا

অর্থ: অতএব, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি তাদেরকে স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান দেবেন এবং নিজের দিকে আসার মত সরল পথে তুলে দেবেন।
সুরাঃ নিসা আয়াত: ১৭৫

গ. ঈমান সফলতার লক্ষণ।

فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থাৎ সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। (সুরাঃ আ’রাফ আয়াত: ১৫৭)

ঘ. ঈমান আনয়ণ: সত্যবাদীদের প্রথম আলামত।

এ প্রসঙ্গে কুরআন বলছে,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ

অর্থ: তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।
সুরাঃ হাদিদ আয়াত: ১৫

আল্লাহ তা’য়ালা আরও বলেন,

وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ أُولَئِكَ هُمُ الصِّدِّيقُونَ وَالشُّهَدَاءُ عِنْدَ رَبِّهِمْ لَهُمْ أَجْرُهُمْ وَنُورُهُمْ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ

অর্থ: আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তারাই তাদের পালনকর্তার কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত। তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার ও জ্যোতি এবং যারা কাফের ও আমার নিদর্শন অস্বীকারকারী তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে।
সুরাঃ হাদিদ আয়াত: ১৯

প্রিয় পাঠক, উল্লেখিত আয়াতসমূহ দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম-
১. রহমত প্রাপ্তীর মাধ্যম।
২. সঠিক পথের দিশা।
৩. ক্ষমাপ্রাপ্তী।
৪. সত্যবাদীদের আলামত।
৫. সফলতার লক্ষণ।
৬. জান্নাতের যাওয়ার মাধ্যম একমাত্র ঈমান আনয়ণ করা।

সুতরাং কুফরী সংগঠন হেযবুত তওহীদ যারা ঈমানের দাওয়াত দেওয়া নিজেদের মিশন বানায়নি, বরং যারা দাবী করছে,
“আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়।”
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ: ৫২

তারা কি আদৌ আল্লাহর প্রকৃত ধর্মের ধারক-বাহক হতে পারে? নিশ্চয় না।

তিন. মো’মেন ও কাফেরের পার্থক্য ও হেযবুত তওহীদের মিশন:

মুমিন কারা?

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা:

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِذَا كَانُوا مَعَهُ عَلَى أَمْرٍ جَامِعٍ لَمْ يَذْهَبُوا حَتَّى يَسْتَأْذِنُوهُ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُولَئِكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَنْ لِمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

অর্থ: মুমিন তো তারাই; যারা আল্লাহর ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং রসূলের সাথে কোন সমষ্টিগত কাজে শরীক হলে তাঁর কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ ব্যতীত চলে যায় না। যারা আপনার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে, তারাই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। অতএব তারা আপনার কাছে তাদের কোন কাজের জন্যে অনুমতি চাইলে আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুমতি দিন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, মেহেরবান।
সুরাঃ নূর আয়াত: ৬২

কাফের কারা?

কাফেরের প্রথম আলামত আল্লাহকে অবিশ্বাস করা। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

وَمَنْ لَمْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَعِيرًا

অর্থ: যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস করে না, আমি সেসব কাফেরের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।
সুরাঃ ফাতহ আয়াত: ১৩

উক্ত আয়াত দুটি থেকে বুঝতে পারলাম-
১. যারা ঈমান আনবে তারা মুমিন।
২. যারা ঈমান আনবে না তারা কাফের।
সুতরাং যে হেযবুত তওহীদ ইসলামের মূল স্তম্ভ ঈমানকে নিজেদের মিশন না বানিয়ে বরং দাবী করছেন,
“আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়।”
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ: ৫২

তারা কি আদৌ আল্লাহর প্রকৃত ধর্মের কাজ করছেন? নিশ্চয় না।

চার. জান্নাতের কর্মসুচী ও হেযবুত তওহীদের মিশন:

ক. আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনা পথভ্রষ্টতা:

মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا

অর্থ: যে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।
সুরাঃ নিসা আয়াত আয়াত: ১৩৬

খ. যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে না, সে জাহান্নামী:

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থ: যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।
সুরাঃ বাকারা আয়াত: ২৫৭

প্রিয় পাঠক, উল্লেখিত দু’টি আয়াত থেকে জানতে পারলাম-
১. ঈমান আনয়ণ না করা ভ্রষ্টতার লক্ষণ।
২. ঈমান আনয়ণ না করা জাহান্নামী হওয়ার লক্ষণ।

যে ঈমান না আনলে পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী হতে হয়, সে ঈমানের ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের দাবী হলো-
“আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়।”
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ: ৫২

তাহলে পাঠক, বলুন তো, হেযবুত তওহীদ কি মানুষকে আদৌ জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর মিশণ নিয়ে কাজ করছেন? নিশ্চয় না। তাহলে যারা জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর ফিকির নিয়ে কাজ করছে না, তারা ইসলামের প্রকৃত ধারক-বাহক হয় কিভাবে?

পাঁচ. ঈমানের দাওয়াত; সকল নবিগণের আগমণের উদ্দেশ্য:

ক. সকল নবীগণের দায়িত্ব ছিল আল্লাহরই আল্লাহর ইবাদত করার দাওয়াত।

আল্লাহ তা’য়ালা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন,

إِذْ جَاءتْهُمُ الرُّسُلُ مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ

অর্থ: যখন তাদের কাছে রসূলগণ এসেছিলেন সম্মুখ দিক থেকে এবং পিছন দিক থেকে এ কথা বলতে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও পূজা করো না।
সুরাঃ ফুসসিলাত আয়াত: ১৪

খ. মুহাম্মাদ সা. এর কর্মসূচী; ঈমানের দাওয়াত।

আল্লাহ তা’য়ালা বলছেন,

وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ لِتُؤْمِنُوا بِرَبِّكُمْ وَقَدْ أَخَذَ مِيثَاقَكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

অর্থ: তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছ না, অথচ রসূল তোমাদেরকে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার দাওয়াত দিচ্ছেন? আল্লাহ তো পূর্বেই তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছেন-যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
সুরাঃ হাদিদ আয়াত: ৮

আল্লাহ তা’য়ালা আরও বলেন,

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

অর্থ: বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।
সুরাঃ আ’রাফ আয়াত: ১৫৮

উক্ত আয়াতগুলো থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হলো-
১. সকল নবীগণের কাজ ছিল সকল শিরক থেকে মুক্ত করে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করা।
২. ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক আখেরী নবী মুহাম্মাদ সা. এর কর্মসূচি ছিল, উম্মত যেন ঈমাণ আনয়ণ করে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবী হলো-
“আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়।”
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ: ৫২

তাহলে ইসলামের প্রবর্তক নবী মুহাম্মাদ সা. এর কর্মসুচী আর হেযবুত তওহীদের কর্মকান্ড আদৌ কি মিললো? নিশ্চয় না। তাহলে “এ হেযবুত তওহীদ আল্লাহ সরাসরি নিজে পরিচালনা করছেন” এবং “হেযবুত তওহীদ আসল ইসলাম প্রচার করছে” দাবিটা কি জলন্ত মিথ্যাচার নয়?

Check Also

সংস্কৃতি ও ইসলাম এবং হেযবুত তওহীদের ভ্রান্তি:

ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গভাবে জিবন ব্যবস্থা। প্রত্যেকটি বিষয়ের বিধি-বিধান ইসলাম জানিয়ে দিয়েছে। ছবি অঙ্কন, মুর্তি-ভাষ্কর্য নির্মান …

১৩ comments

  1. আসসালামুআলাইকুম!
    আমরা কজন মিলে একটি ওয়েবসাইটে কাজ করছি বিভিন্ন মাসাঈল তুলে ধরছি, এগুলো সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারছি কি না তা দেখার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
    সঠিকতার উপর ঠিকে থাকার জন্য দোয়া পার্থী।
    আমাদের ওয়েবসাইটের নাম http://www.muslimbd24.com
    মাআসসালাম।

  2. I pay a visit daily a few sites and sites to read content,
    except this weblog presents feature based articles.
    asmr 0mniartist

  3. you are in point of fact a just right webmaster. The web site
    loading velocity is amazing. It sort of feels that you’re doing any unique trick.
    Furthermore, The contents are masterwork. you’ve done
    a wonderful process on this topic! asmr 0mniartist

  4. Good site you’ve got here.. It’s hard to find high-quality writing
    like yours these days. I really appreciate individuals like you!
    Take care!! asmr 0mniartist

  5. Good post. I learn something new and challenging on sites I stumbleupon on a daily basis.
    It will always be exciting to read content from other
    writers and use a little something from other sites.
    0mniartist asmr

  6. An intriguing discussion is definitely worth
    comment. I believe that you need to write more
    on this subject matter, it may not be a taboo subject but usually folks don’t speak about such subjects.
    To the next! Cheers!!

  7. scoliosis
    Good post. I learn something new and challenging on blogs I stumbleupon every day.
    It will always be helpful to read articles from other authors and practice something
    from other websites. scoliosis

  8. scoliosis
    Hello, i think that i saw you visited my weblog so i came to “return the favor”.I’m trying to find things to enhance my web
    site!I suppose its ok to use some of your ideas!! scoliosis

  9. cialis 20mg for sale: original cialis low price cialis original for sale
    cialis for daily use

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.