আব্দুল্লাহ সালেহী:
**বয়ান নাম্বার (৫)***
১৮/১২/২০১৯ ঈসায়ী
স্থান: নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ।
আলোচক:
হযরতুল আল্লাম শাহ মুফতী আব্দুল ওয়াহীদ কাসেমী দা.বা.।
মুহতামিম: জামিয়া ইমদাদিয়া দারুল উলূম মুসলিম বাজার মাদরাসা মিরপুর-১২ ঢাকা।
الحمد لله الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادي له ونشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له ونشهد ان سيدنا وسندنا وحبيبنا ومولانا محمدا عبده ورسوله الذي ارسله بالحق بشيرا ونذيرا و داعيا الى الله باذنه و سراجا منيرا فقد قال الله تعالى في كلامه المجيد والفرقان الحميد اعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم
هل اتى على الانسان حين من الدهر لم يكن شيئا مذكورا انا خلقنا الانسان من نطفة امشاج نبتليه فجعلناه سميعا بصيرا.
وقال في موضع اخر
يا ايها الانسان ما غرك بربك الكريم الذي خلقك فسواك فعدلك في اي صورة ما شاء ركبك كلا بل تكذبون بالدين وان عليكم لحافظين.
وقال في موضع اخر
الرحمن علم القران خلق الانسان علّمه البيان.
و عن عبدالله بن عباس قال.قال رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم نِعْمَتانِ مَغْبُونٌ فِيهِما كَثِيرٌ مِنَ النّاسِ: الصِّحَّةُ والفَراغُ. صحيح البخاري ٦٤١٢  [صحيح] او كما قال النبي عليه الصلاة والسلام.
صدق الله المولانا العظيم وصدق رسوله النبي الامي الكريم ونحن على ذلك لمن الشاهدين والشاكرين والحمد لله رب العالمين.
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على ابراهيم وعلى آل ابراهيم انك حميد مجيد.
سبحانك لا علم لنا الا ما علمتنا انك انت العليم الحكيم سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم.
আলহামদুলিল্লাহ ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ পাকের শুকর যিনি আমাদেরকে এই মোবারক মজলিসে আসার বসার তৌফিক দান করেছেন এজন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে অন্তরের অন্তস্থল থেকে গভীর মহব্বতের সাথে শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ।

যে শব্দটি আমরা এখন বললাম(আলহামদুলিল্লাহ) তার অর্থ হলো সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাকের জন্য।
সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যই।
কুরআনুল কারীম যা আপনার আমার জন্য আল্লাহ তাআলা হেদায়েত বানিয়ে পাঠিয়েছেন সেই কুরআনুল কারীমের প্রথম শব্দ হলো আল-হামদুলিল্লাহ। অর্থাৎ যত প্রশংসা সব আল্লাহ তায়ালার জন্যই।
আমার আপনার বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই প্রয়োজন মৃত্যুর জন্য তেমন কিছুই প্রয়োজন না।
যেমন আপনি আমি এখন যেখানে আছি এখানে বেঁচে থাকার জন্য এই প্যান্ডেলটা আপনার আমার উপরে স্থির থাকার প্রয়োজন ভেঙ্গে না পড়ার দরকার।শ্বাস-প্রশ্বাস জারি থাকার প্রয়োজন বন্ধ না থাকতে হবে একবার বন্ধ হলেই শেষ।
তাহলে আপনি আমি যে বেঁচে আছি এ বেঁচে থাকার জন্য কোটি কোটি প্রয়োজন এসব কিছু যিনি আঞ্জাম দিয়ে থাকেন তিনি একমাত্র আল্লাহ।
এসব নিয়ামত থেকে একটাও যদি আল্লাহ উঠিয়ে নেন তাহলে আপনি আমি এক সেকেন্ডও বাঁচতে পারব না।
তাহলে আপনার আমার উপরে যার রহমতের ছায়া প্রতিটি মুহূর্তে আছে যিনি ছায়া দিয়ে রেখেছেন প্রশংসা তো একমাত্র তারই হবে।
الحمد لله رب العالمين
যেমন আপনি আমি যে সুন্দর এই সৌন্দর্যের প্রশংসা কি আপনার আমার নাকি যিনি আপনাকে আমাকে সৃষ্টি করেছেন তার?অবশ্যই আল্লাহর।
কারোর চোখ সুন্দর কারোর নাক সুন্দর কারোর চামড়া সুন্দর এই সমস্ত সুন্দরের পিছনে যার হাত তিনি হলেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।
এজন্য সমস্ত বান্দাদেরকে আল্লাহ তায়ালা প্রথম সবকই দিয়েছেন এটা যে আমার আপনার এবং সকলের মুখ দিয়ে একমাত্র প্রশংসা হবে আল্লাহর।

👉কেন আল্লাহ তাআলারই একমাত্র প্রশংসা হবে?

এটার কারণ আল্লাহ তাআলা পরে বর্ণনা করেছেন..
কারণ হলো আল্লাহ তাআলা রব সমস্ত জগতের রব এবং জগৎবাসীর রব।
শব্দ عالمين এটা علم এর বহুবচন আর علم বলা হয়
ما يعلم به الصانع.
অর্থ:- জগৎ মানে এমন বস্তু যার দ্বারা সৃষ্টি কর্তাকে চেনা যায়।
👉 জগত: মানুষ-জ্বিন, দিন-রাত, পাহাড়-পর্বত আসমান-জমিন, ফেরেশতা সবকিছুই হলো আলম।

আজ যখন ঢাকা থেকে আসতেছিলাম তখন দেখতে ছিলাম রাস্তার দুই পাশে কি সুন্দর সজ্জিত সবুজ শ্যামল যার মধ্যখান দিয়ে নদী বয়ে গেছে যার সৌন্দর্য দেখে বর্ণনা করা সম্ভব না এই যা কিছুই চোখের সামনে আসলো সবটাই হলো আলম তথা জগত।
এ সমস্ত জগৎকে যিনি লালন পালন করেন রক্ষা করেন খাওয়ান তিনিই হলো একমাত্র আল্লাহ।
ইমাম আল্লামা ফখরুদ্দিন রাজি রহ: التفسير الكبير এর মধ্যে
الحمد لله رب العالمين
এ আয়াতের তাফসিরে হযরত জুন্নুন মিশরি রহ:এর এক আজিব ঘটনা লিখেছেন… তিনি একদিন কাপড় ধোয়ার জন্য নদীতে গিয়েছেন দেখেন  একটি কচ্ছপ নদী থেকে ডাঙ্গায় উঠে আসলো এবং একটি বিচ্ছু তার পিঠের উপরে চড়ে বসলো সেই বিচ্ছু কে নিয়ে সে নদীতে নেমে পড়ল।
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
فکر آبا شدکہ بکشا یاد رھے
راہ آبا شدکہ پیشا یاد شاہے
অর্থ:-__

হযরত জুন্নুন মিশরি তো পেরেশান!
হায় হায় এটা আমি কি দেখতেছি! বিচ্ছু তো একটা বিষধর প্রাণী। তাকে কেন সে তার কাঁধে উঠালো?
دری جہاں کیسے بے غم نہ باشد
অর্থ:-…
তিনিও নদীর ভিতরে নেমে কচ্ছপের পিছে পিছে সাঁতার কাটছেন।নদী পার হওয়ার পরে দেখল কচ্ছপ তার পিঠ থেকে বিচ্ছুকে নামিয়ে দিল বিচ্ছু সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তিনিও এবার বিচ্ছুর পিছু নিলেন যেতে যেতে দেখলেন এক গাছের নিচে এক আল্লাহ পাকের বান্দা শুয়ে আছে।

👉আরে ভাই যে কর্মচারী যত বেশি দামি তার সিকিউরিটি তো তত বেশি দামি হয়।
যে মানুষ যত বেশি দামি তার সিকিউরিটিও তত বেশি দামি।
গ্রামের মানুষের সিকিউরিটি আর শহরের মানুষের সিকিউরিটি একরকম নয়।
গুলশান বারিধারার মানুষের সিকিউরিটি আর ঢাকার শহরের সাধারণ মানুষের সিকিউরিটি একরকম নয়।
ঠিক তেমনি ভাবে প্রধানমন্ত্রী,প্রেসিডেন্টের সিকিউরিটি আর সাধারণ এমপি-মন্ত্রী সিকিউরিটি একরকম নয়।
হাঁ যে মানুষকে আল্লাহ এত সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন সূরা তীন পড়ে দেখেন..
সুরা ত্বীনঃ আয়াত নং ১
وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ. وَطُورِ سِينِينَ.وَهٰذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ.لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسٰنَ فِىٓ أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
অর্থঃ শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের, এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের এবং এই নিরাপদ নগরীর আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
এই সুরার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা ৪বার কসম খেয়ে মানুষের সুন্দর সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন।
এবং এই সুন্দর মানুষকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠ মাখলুক বানিয়েছেন এজন্যই তো তার সিকিউরিটি হিসাবে গোটা দুনিয়াকে বানিয়েছেন।
সুরা আল বাকারাঃ আয়াত নং ২৯
هُوَ الَّذِى خَلَقَ لَكُم مَّا فِى الْأَرْضِ جَمِيعًا…
অর্থঃ তিনিই সে সত্ত্বা যিনি জমীনে যা কিছু রয়েছে তা সব কিছুই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।

হযরত জুন্নুন মিশরি রহ: দেখেন ঐ ঘুমন্ত ব্যক্তির মাথার কাছে একটি সাপ ফণা ধরে আছে ছোবল দেওয়ার আগেই ঐ বিচ্ছুটা সাপের মাথার উপরে কামড় দিল এবং সাপটা সাথে সাথে মারা গেল।
এই দৃশ্যটি দেখে হযরত জুন্নুন মিশরি রহ: চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন “আলহামদুলিল্লাহ”!
তার “আল-হামদুলিল্লাহ” চিৎকারের শব্দ শুনে ঘুমন্ত ব্যক্তি জেগে উঠলো অথপর তিনি তার সামনে বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরলেন।
فَبِأَىِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
অর্থঃ অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?
আল্লাহ পাক আরো বলেন
يٰٓأَيُّهَا الْإِنسٰنُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ.الَّذِى خَلَقَكَ فَسَوّٰىكَ فَعَدَلَكَ
অর্থঃ হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল?যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন।
সুরা আল ইন্‌ফিতারঃ আয়াত নং ৬.৭

এজন্য আমাদের চিন্তা ফিকির করা দরকার! কারণ ফিকির করলেই তো আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা খুলবে।আমাদের তো কোন ফিকির নাই।
আমরা তো আছি “খাও-দাও ফূর্তি কর দুনিয়াটা মস্ত বড়” এর মধ্যে।
👉আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আকল কেনো দিয়েছেন?
হাদীস শরীফের ভিতরে এসেছে আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন আল্লাহ তায়ালা আকলকে সৃষ্টি করার পর আকলকে বলেছেন..
এই আকল দাঁড়াও আকল দাঁড়িয়েছে
বসে যাও বসে গিয়েছে
পিছনে যাও পিছনে গিয়েছে
সামনে যাও সামনে গিয়েছে।
তখন আল্লাহ তা’আলা আকলকে বলেছেন..
হে আকল!!
তোমাকে দিয়ে আমি বিচার করব তোমাকে দিয়ে আমি আমার বান্দাদেরকে পাকড়াও করবো তোমার মাধ্যমেই আমার বান্দারা আমার নৈকট্য লাভ করবে। এজন্যই তো আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت والعاجز من اتبع نفسه هواه وتمنى على الله
প্রকৃত জ্ঞানী তো সেই ব্যক্তি যে তার নিজের খায়েশাতকে দূরে ঠেলে দিয়ে আখেরাতের জন্য আমল করে প্রকৃতজ্ঞানী সেই ব্যক্তি নয় যে তার নিজের নফসের চাহিদা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে।

👉অঢেল সম্পত্তির মালিক হলে সে জ্ঞানী নয়।

নবীজি সা: এক সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করেছেন… দুনিয়াতে কি কেউ এমন আছে যে নিজের সম্পত্তি বাদ দিয়ে অন্যের সম্পত্তিকে বেশি মহব্বত করে সাহাবী বলে যে না।
তুমি যেটা দুনিয়ায় রেখে যাচ্ছ সেটা তো তোমার না। তুমি যেটা খেলে সেটা একমাত্র তোমার তুমি যেটা পড়লে সেটা একমাত্র তোমার তুমি যেটা দান করলে সেটা একমাত্র তোমার।
তাছাড়া দুনিয়াতে তুমি যা কিছু রেখে যাচ্ছ সেটা বাড়ি হোক গাড়ি হোক ব্যাংক ব্যালেন্স হোক যা কিছু হোক এটা তোমার না এটা তোমার ওয়ারিশদের এটা নিয়ে তোমার গর্বের কিছু নেই।

তাহলে জ্ঞানী কে ?
الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت
যে নিজের নফসকে দমিয়ে রাখলো।

ওহে ভাই! নফস কি জিনিস?

আল্লাহ তারা নিজেই সূরা ইউসুফের ভিতরে বলেছেন
ان النفس لعمارة بالسوء.
নফসের কাজ হল (লা-আম্মারতুম বিস-সু) শুধু খারাপের দিকে ডাকতেই থাকবে হুকুম করতেই থাকবে।খ্যান্ত হবে না।
যার কারণে আল্লাহ তাআলা নফসের ষড়যন্ত্রকে মারাত্মক বলেছেন। শয়তানের ষড়যন্ত্র এত বড় না নফসের ষড়যন্ত্র যত বড়।
ان النفس لعمارة بالسوء
এটা এত বড় দুশমন যা মৃত্যু পর্যন্ত আপনার আমার সাথেই থাকবে।
আচ্ছা কোন ব্যক্তির সাথে যদি দুশমন থাকে তাহলে সে ঐ দুশমন থেকে সতর্ক থাকে নাকি গাফেল থাকে? এমন ভাবেই সতর্ক থাকে যে, না জানি কোন সময় আমাকে আঘাত করে। কোন সময় আমাকে মেরে বসে।হ্যাঁ নফস তো এমন এক দুশমন।
কুতুবে আলম আরেফ বিল্লাহ রুমিয়ে যামানা শাহ হাকিম মোহাম্মদ আক্তার রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার কিতাবে লিখেন
بھروسہ کچھ نہیں نفس عمارہ کا آے جاھد
وہ فرشتہ بھی ہو جائے تو اس پر بد گماں رکھنا نا
ওহে ইবাদতকারী তোমার নফসে আম্মারার উপর কোন ভরসা নাই সে যদি ফেরেশতাও হয়ে যায় তারপরও তার উপরে তুমি খারাপ ধারণাই করো সুযোগ পেলেই কিন্তু তোমার ক্ষতি করে ফেলবে।
খুব সাবধান হওয়া চাই।
যার জন্য হযরত জালালুদ্দিন রুমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন
اندریں راہ میں تاراشو می خراش
تعدا میں آخر دمے فارغ مباش
এক মুহূর্তের জন্য তুমি কখনো অসাবধান হইও না গাফেল হইও না।খুব সাবধান থাকো
কোন সময় না জানি তুমি পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে যাও।
কারণ এই রাস্তাটা খুব বেশি পিচ্ছিল খুব পিচ্ছিল।
সুতরাং এর জন্য ফিকির করা উচিত।
এজন্য আল্লাহ তাআলা বলেন..
ان في خلق السماوات والارض واختلاف الليل والنهار لايات لاولي الالباب
নিশ্চয়ই আসমান জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং রাত দিনের পরিবর্তনের মধ্যে আমি আল্লাহ নসিহত, শিক্ষা, হেদায়েত, নিদর্শন রেখেছি ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য যারা জ্ঞানবান ।

👉জ্ঞানী কারা?

সুরা আল ইমরানঃ আয়াত নং ১৯১
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيٰمًا وَقُعُودًا وَعَلٰى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِى خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بٰطِلًا سُبْحٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থঃ যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।

এই আয়াতে কারীমার মধ্যে (تفكر) ফিকিরটাই মূল আসল।
এজন্য হযরত রুমি রাহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেন…মিয়া জ্ঞানী লোকেরা ফিকির করে। আর যে যত বেশি ফিকির করবে তার সামনে আল্লাহ তাআলা তাকে পাওয়ার রাস্তা তত বেশি খুলে দিবেন। অর্থাৎ
ফিকির করবে আর রাস্তা খুলবে
ফিকির করবে আর রাস্তা খুলবে
ফিকির করবে আর আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা খুলবে।
এর একটি বাস্তব উপমা দিয়েছেন হযরত হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত শাহ আলী থানভী রহ:
তিনি বলেন.. কেউ একটি রাস্তার মধ্যখানে দাড়ালে যেমন এই রাস্তার শেষ পর্যন্ত সে দেখতে পায় না বরং কোথাও দাঁড়াইলে চোখ যতদূর যায় মনে হয় রাস্তা ওখানেই শেষ তবে সে যত বেশি রাস্তায় চলবে তত বেশি তার সামনে রাস্তা বিস্তৃত হবে।
অর্থাৎ যত বেশি চলবে তত বেশি রাস্তা তার সামনে খুলতে থাকবে।এটার নামই ফিকির।
فکر آبا شدکہ بکشا یاد رھے
راہ آبا شدکہ پیشا یاد شاہے
অর্থ:-
আর এটার জন্য আল্লাহ তা’আলা উপকরণও বান্দাকে দিয়েছেন…আল্লামা রুমি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন
گوشہ گِلباں جملہ حیواں ہمدامست
گوشے دل مخصوص نسل آدم است
সমস্ত মাখলুককে আল্লাহ তায়ালা চামড়ার কান দিয়েছেন শুধুমাত্র বনী আদম(মানুষ)কে আল্লাহ তাআলা দিলের কান দান করেছেন।
এটার প্রমাণের জন্য কুরআনুল কারীম একটি আয়াতে কারীমা আপনাদের সামনে পেশ করি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন
ان في ذلك لذكرى لمن كان له قلب او القى السمع وهو شهيد.
নিশ্চয়ই কোরআনের ভিতরে নসিহত রয়েছে তাদের জন্য যাদের দিলের কান রয়েছে।

তাহলে প্রকৃত জ্ঞানী কারা!?
الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت والعاجز من اتبع نفسه هواه
যারা ما بعد الموت এর জন্য প্রস্তুতি নেয় এবং নফসকে এবাউট করে চলে আল্লাহ আমাদের প্রকৃত জ্ঞানী হওয়ার তৌফিক দান করেন।

আরে ভাই! ফিকির কেন করবে না? কেন আল্লার প্রশংসা করবে না!?
আল্লাহ তাআলা বলেন…
هو الذي خلق لكم ما في الارض جميعا
ওআমার বান্দারা দুনিয়ার উপরে যা কিছু আমি আল্লাহ সৃষ্টি করেছি সবকিছুই হল তোমাদের খাদেম।
ان الدنيا خلقت لكم وانكم خلقتم للاخرة
আল্লাহর রাসূল বলেন এই সমস্ত দুনিয়া আল্লাহ তোমাদের খেদমতের জন্য বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে আল্লাহ আখেরাত তথা ইবাদাতের জন্যই বানিয়েছেন।
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون.

আমি আল্লাহ জ্বীন এবং ইনসানকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য বানিয়েছি।
এই কপাল একমাত্র আমার জন্যই সেজদা দিবে কোন মাজার বা অন্য কোনো কিছুর সামনে সেজদা দিবে না। কারন কি?
এই কপাল যদি অন্য কোন কারোর সামনে নত হয় তাহলে সেটা শিরিক হবে আমি আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করবো কিন্তু শিরিকের গোনাহ মাফ করবো না।
ان الله لا يغفر ان يشرك به ويغفر ما دون ذلك لمن يشاء.

হে বান্দা তোমরা যত গুনাই করো না কেন আমি ইচ্ছা করলে সব গুনাহ মাফ করবো কিন্তু আমি শিরিকের গুনাহ মাফ করবো না।
এজন্য হাদিসের ভিতর আসছে আল্লাহর রাসূল সা: বলেন যদি তোমার জুতার ফিতারও প্রয়োজন হয় তাহলে সেটাও তুমি আল্লাহর কাছে চাও।

শিরিকের গুনাহ মাফ করবেন না কারণ হলো আল্লাহ তায়ালা এক অদ্বিতীয় যেমন সুরা ইখলাসঃ
قل هو الله احد الله الصمد لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا احد.
অর্থঃ বলুন, তিনি আল্লাহ,এক,আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।

তিনি এমন এক আল্লাহ
الله لا اله الا هو الحي القيوم لا تاخذه سنه ولا نوم
আল্লাহ রব্বুল আলামিন এমন এক জাত যিনি সর্বদা ছিলেন আছেন এবং থাকবেন  ঘুমান না এবং যার কোন তন্দ্রাচ্ছন্নও আসেনা।

আরে ভাই! ড্রাইভার যদি ঘুমায় তাহলে গাড়ি থাকবে না কি এক্সিডেন্ট? অবশ্যই এক্সিডেন্ট করবে।
একদিন আমি মিরপুর মাদ্রাসা থেকে বাসা দিকে যাচ্ছি তো বনানীর ওখানে ট্রাফিক সিগনাল ড্রাইভার নাই আমি নিজেই ড্রাইভার সিগনালে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছি আমি অনেক ক্লান্ত ছিলাম হঠাৎ দেখি একজন আমার গাড়ির জানালায় টকটক করে নক করছে আমি চোখ খুলে দেখি সামনের সব গাড়ি চলে গেছে পিছনের সব গাড়ি জ্যামে আটকে আছে মানে আমার ঘুম এসে গেছে।
আচ্ছা বলেন তো এটা যদি চলন্ত অবস্থায় হতো তাহলে কি গাড়ি আমি থাকতাম নাকি শেষ হয়ে যেতাম?
ড্রাইভার ঘুমাইলে যদি গাড়ি এক্সিডেন্ট করে তাহলে রাত দিন চন্দ্র সূর্য আসমান জমিন এ সব কিছুর ড্রাইভার যে আল্লাহ সে আল্লাহ যদি ঘুমান,ঘুমাতেন তাহলে কি উপায় ছিল!?সব কিছুই তো শেষ হয়ে যেতো।
সবাই ঘুমায় একজন ঘুমান না তিনি হলেন আল্লাহ।
আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন
لا تاخذه سنة ولا نوم
অর্থ আল্লাহ তায়ালাকে ঘুম এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন স্পর্শ করে না
কেন ঘুমান না ? জবাব হলো ওই শুরুর কথা
الحمد لله رب العالمين
কারণ হলো তিনি আল্লাহ যিনি সমস্ত জগতের প্রভু রব। সবাইকে দেখে রাখেন।

আচ্ছা আমরা যে অনেকে মাজারে সেজদা করি মাজার ওয়ালার কাছে চায় যিনি মাজারে শুয়ে আছেন তিনি কি আল্লাহর বান্দা না?
আল্লাহ আরো সুন্দর করে বলেছেন ও বান্দা তুমি কার কাছে কি চাও!?
সুরা আল-হাজ্জ্বঃআয়াত নং ৭৩
يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُۥٓ ۚ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُۥ ۖ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْـًٔا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ۚ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ.
অর্থঃ হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না,প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন।

সুতরাং সন্তান,রিজিক চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে।
আল্লাহতালা স্পষ্ট বলেছেন..সুরা হুদঃ আয়াত নং৬
وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِى الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِى كِتٰبٍ مُّبِينٍ
অর্থঃ আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।

সমস্ত প্রাণীর মাখলুকের রিজিক একমাত্র আল্লাহর হাতে আল্লাহ কারো হাতে এটার দায়িত্ব দেননি।
إِنَّ اللَّهَ عِندَهُۥ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِى الْأَرْحَامِ ۖ وَمَا تَدْرِى نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِى نَفْسٌۢ بِأَىِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌۢ
অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। সুরা লুকমানঃ আয়াত নং ৩৪
আমি আপনি আগামীকাল কি কামাই করব সেটাও আমি আপনি জানি না একমাত্র আল্লাই জানেন দোকানদার যখন দোকান খুলে সে তো মনে করে আজকে আমি অনেক বিক্রি করব কিন্তু সে কি বিক্রি করবে কি বিক্রি করবে না সেটা তো সে নিজেও বলতে পারে না।

অনেক দোকান আছে একই জিনিসের দোকান এবং মার্কেটের শুরুর দোকান সারাদিন দোকানদার দোকান খুলে বসে আছে তবে কিছুই বিক্রি করতে পারেনি তবে তার মত মার্কেটের একেবারেই কর্নারে আরেকটি দোকান আছে সে অনেক বেচাকেনা করেছে।
তাহলে কি বুঝা গেল রিজিক যদি আপনার আমার হাতে থাকতো তাহলে মার্কেটের প্রথম দোকান শুরুর দোকানের মালিক সে তো সবকিছুই বিক্রি করে ফেলত।
তখন ভিতরে কেউ দোকানই ক্রয় করত না ভিতরে দোকানদারি করত না।
তাহলে কি বুঝা গেল ভিতরে যিনি দোকান দিয়েছে তার রিজিক একমাত্র  আল্লাহ পাকেরই হাতে সে যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহ তাআলা তার রিজিকের ব্যবস্থা সেখানে করবেনই

কারন আপনার আমার রিজিক আল্লাহ বন্টন করে দিয়েছেন। যতটুক পাবো সেটা আল্লাহই বন্টন করেছেন।(আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার)

এজন্য আল্লাহ তায়ালা সূরা রহমান এর ভিতরে বলেছেন…
فَبِأَىِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
অর্থঃ অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?
তবে আল্লাহ তা’আলা বড় আফসোস করে বলেন…
مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِۦٓ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ
অর্থঃ তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা বোঝেনি। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, মহাপরাক্রমশীল।
সুরা আল হাজ্জ্বঃ আয়াত নং ৭৪
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন…
وقليل من عبادي الشكور
আমার বান্দাদের মধ্যে খুব কম বান্দাই আছে যারা আমার শুকুর-গুজার।
আচ্ছা আপনি আমি ছোটবেলায়  বাবা-মার কাছে ঘুমিয়ে ছিলাম ঘুমের ভিতর বাবা মা তো নিজের অজান্তে আপনার আমার গায়ের উপরে নিজেদের পা চাপিয়ে দিয়েছিল ওতটুকু বয়সে কি বাবা-মার পায়ের ভার নেওয়া সম্ভব?ঐ অবস্থায় আপনাকে আমাকে যিনি হেফাজত করেছেন তিনিই একমাত্র আল্লাহ।
তাই আল্লাহপাক বলেন তুমি সে আল্লাহকে কিভাবে ভুলে গেলে?
সুতরাং এই কথা যে বিশ্বাস করবে আল্লাহ তাআলা (খালেক) সৃষ্টিকর্তা (রাজ্জাক) রিজিকদাতা (হাফেজ) হেফাজত করনেওয়ালা রক্ষা করনেওয়ালা তার অন্তরের ভিতর আল্লাহ পাকের মহব্বত সবথেকে বেশি থাকবে।
والذين امنوا اشد حبا لله
অর্থ যারা ঈমানদার তারা সত্যিক আল্লাহকে বেশি মহব্বত করে।
এজন্য মসজিদ থেকে যখন আযানের ধনী আসত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তখন আর কাউকে চিনতেন না হাদিস শরীফের ভিতরে আসছে
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا سمع الاذان لم يعرف منا احدا
নিশ্চয়ই রাসুল সাঃ আযান শোনা মাত্রই আর আমাদের কাউকে চিনতেন না।
বিবিকেও চিনতেন না এমন কি আম্মাজান আয়েশা রা:কেও চিনতেন না। পরীক্ষা করার জন্য আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা একদিন নবীজির সামনে দাঁড়িয়ে গেছেন।
নবীজী বলেন..
من انت؟ قالت انا عائشة ومن عائشة؟ قالت بنت ابي بكر قال ومن ابو بكر؟ قالت ابن ابي قحافة؟ ومن ابو قحافة؟
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা মনে মনে ভাবলেন নবীজি যেহেতু আমাকে চিনতেছেন না তাহলে তিনি এখন দুনিয়া থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছেন আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়েছেন।

 

 

হাদিস শরিফে এসেছে
وعن أبي هريرة  قالَ: قالَ رسُولُ اللَّه ﷺ: سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لا ظِلَّ إلَّا ظِلُّهُ: إِمامٌ عادِلٌ، وشابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّه تَعالى، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ في المَسَاجِدِ، وَرَجُلانِ تَحَابَّا في اللَّه: اجتَمَعا عَلَيهِ، وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ، وَجَمَالٍ فَقَالَ: إِنِّي أَخافُ اللَّه، ورَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فأَخْفَاها، حتَّى لا تَعْلَمَ شِمالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينهُ، ورَجُلٌ ذَكَرَ اللَّه خالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ متفقٌ عَلَيْهِ.
কেয়ামতের ময়দানে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ আরশের নিচে ছায়া দান করবেন এর ভিতরে একজন ঐ ব্যক্তি যার অন্তরটা মসজিদের সাথে লেগে থাকে।
অর্থাৎ নামাজ পড়ার পরেও আবার কখন মসজিদ থেকে আওয়াজ আসবে সেই চিন্তা, ফিকিরে যারা থাকে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের অন্তরকে মসজিদের সাথে লাগানোর তৌফিক দান করেন।
তো যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে। আচ্ছা মসজিদের সাথে লেগে থাকে কার মুহাব্বতে?আল্লাহর মুহাব্বতে এজন্যই তো লেগে থাকে।
হযরত রুমী রহ: মুসনবীয়ে রুমির ভিতরে লিখেন
একবার মজনু লায়লার বাড়ির ওয়ালের সাথে শরীরটা লাগিয়ে ঘষাঘষি করতেছে একজন জিজ্ঞাসা আমি মজনু এই ওয়ালের সাথে ঘষাঘষি করো কেন এবারের ভিতরে কি আছে?
আমরা দেখি অনেক সময় ছাগল তার মালিকের গায়ের সাথে শরীর লাগিয়ে ঘষাঘষি করে।
মজনু বলে আমিতো এই ওয়ার্ল্ডকে মহব্বত করি না এই ওয়ালের ভিতরে যে থাকে আমি থাকি মহব্বত করি তার মহব্বতে এই ওয়ালের সাথে আমি আমার শরীর লাগিয়েছি।
আল্লাহর কোন বান্দা যখন মসজিদে যায় তো কার মোহাব্বতে যায় আল্লাহর মহব্বতে ওটা কার ঘর আল্লাহর ঘর।
হাদীস শরীফের ভিতরে এসেছে যে ব্যক্তি যতবার আল্লাহর ঘর (মসজিদে) যাবে কাল কিয়ামতের ময়দানে ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ভিতর ততবার মেহমানদারী করবেন।

আপনার আমার মহল্লায় যে মসজিদ আছে ওই মসজিদে আমরা যতদিন গিয়েছি কোনদিন কে আল্লাহতালা আমাদেরকে মরগ-পলোয়া দিয়ে মেহমানদারী করিয়েছেন!? করেননি তো। তাহলে সেই প্রতিবারের মেহমানদারী আমাদের জন্য আল্লাহ তাআলা বাকি রেখেছেন। যা জান্নাতের ভিতরে করানো হবে।
আমরা প্রতিদিন মসজিদে কতবার যাই? ৫বার।
তাহলে ৬০ বছরে কতবার হবে!?যতবার হয় ততবার আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে মেহমানদারী করাবেন। সুবাহানাল্লাহ
মেজবান যত দামি হয় তার মেহমানদারী তত দামি হয়
চেয়ারম্যানের মেহমানদারি,এমপির মেহমানদারী, মন্ত্রীর মেহমানদারী আর প্রধানমন্ত্রীর মেহমানদারীর ভিতর পার্থক্য হবে না হবে না? জি অবশ্যই হবে।
তাহলে যেখানে আল্লাহতায়ালা মেহমানদারী করাবেন না জেনেই জান্নাতে সেই মেহমানদারী কত সুন্দর হবে!
কেন এই মেহমানদারী করবেন?
কারণ আমার ঘরে আমার বান্দারা এসেছে তাদের মেহমানদারী বাকি আছে।

Check Also

বয়ান নাম্বার (১)*** ২৪-১০২০১৯ বৃহস্পতিবার। আলোচক: হযরতুল আল্লাম শাহ মুফতী আব্দুল ওয়াহীদ কাসেমী দা.বা.। মুহতামিম: …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.