স্বামীর সামনে স্ত্রী পরোকিয়া করে না,
বাবার সামনে সন্তান অপরাধ করে না,
শিক্ষকের সামনে ছাত্র অপরাধ করে না,
মালিকের সামনে কর্মচারী ডিউটি ফাঁকি দেয় না।
সরকারের সৈন্য পুলিশ থাকলে তো অপরাধ করে না। কিন্তু আল্লাহর সৈনিক ফিরিস্তাদের সামনে কেমনে অপরাধ করো? জানেন? প্রত্যেক বান্দার সাথে রবের সৈনিক নিযুক্ত রয়েছেন।
কেরামান-কাতিবিন।
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ كِرَامًا كَاتِبِينَ يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ
অর্থ: অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর।
সুরা ইনফিতার আয়াত: ১০-১২
কেরামান-কাতিবিন থাকেন কোথায়?
إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ
অর্থ: যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে।
সুরা ক্ব-ফ আয়াত: ১৭
ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন,
ان قعد فاحدهما عن يمينه والاخر عن يساره وان مشي فاحدهما امامه والاخر خلفه وان رقد فاحدهما عند رأسه والآخر عند رجليه
অর্থাৎ যখন বান্দা বসে, তখন একজন ফিরিস্তা ডান পাশে বসেন, আরেকজন বাম পাশে বসেন। আর যখন বান্দা হাটে, তখন একজন ফিরিস্তা সামনে চলেন, আরেকজন পেছনে চলেন। যখন বান্দা শুয়ে পড়ে, তখন একজন মাথার কাছে থাকেন, আরেকজন পায়ের কাছে থাকেন।
সূত্র: আদ্দুররুল মানসুর খ: ৬ পৃ: ১১৯
আল- হাবায়িক ফী আখবারিল. মালায়িক (সুয়ুতী) পৃ: ৮৯ হাদিস: ৩১২
কেরামান-কাতিবিনের কাজ কি?
مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
অর্থ: সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।
সুরা ক্ব-ফ আয়াত: ১৮
ফিরিস্তা দু’জনের দায়ীত্ব
ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন,
ملكان احدهما عن يمينه يكتب الحسنات وملك عن يساره يكتب السيئات
অর্থাৎ দু’জন ফিরিস্তা থাকেন। একজন থাকেন ডান কাঁধে, যিনি নেকী লেখেন, আরেকজন থাকেন বাম কাঁধে যিনি গুনাহ লেখেন……
সূত্র: আদ্দুররুল মানসুর খ: ৬ পৃ: ১১৯
আল- হাবায়িক ফী আখবারিল. মালায়িক (সুয়ুতী) পৃ: ৮৯ হাদিস: ৩১২
ডান কাধের ফিরিস্তা বাম কাধের ফিরিস্তার দায়ীত্বশীলদের
কারণ নবীজি সা. বলেন,
وَكَاتِبُ الْحَسَنَاتِ أَمِينٌ عَلَى كَاتِبِ السَّيِّئَاتِ
অর্থাৎ নেকীর লেখক ফিরিস্তা গুনাহের লেখক ফিরিস্তার দায়ীত্বশীল।
সূত্র: তাফসীরে কুরতুবী খ: ৯ পৃ: ৮
ইবনে জুরাইহ রহ. বলেন,
فالذي عن يمينه يكتب بغير شهادة من صاحبه والذي عن يساره لا يكتب الا عن شهادة من صاحبه
অর্থাৎ ডান কাঁধের ফিরিস্তা তাঁর (বাম পাশের) সাথীর স্বীকৃতি ছাড়াই নেকী লিখে দেন। কিন্তু বাম পাশের ফিরিস্তা ডান কাঁধের সাথীর স্বীকৃতি ছাড়া গুনাহ লেখেন না।
সূত্র: আদ্দুররুল মানসুর খ: ৬ পৃ: ১১৯ আল- হাবায়িক ফী আখবারিল. মালায়িক (সুয়ুতী) পৃ: ৮৯ হাদিস: ৩১২
গুনাহের নিয়ত করা।
ক. আগের উম্মতে অবস্থা।
আগের যুগের উম্মত গুনাহ করার ইচ্ছা করলেই গুনাহ লিপিবদ্ধ করা হতো,
খ. উম্মতে মুহাম্মাদী
কিন্তু উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য লেখা হয় না। হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَقُولُ اللهُ إِذَا أَرَادَ عَبْدِي أَنْ يَعْمَلَ سَيِّئَةً فَلاَ تَكْتُبُوهَا عَلَيْهِ حَتَّى يَعْمَلَهَا
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ বলেন, (হে ফিরিস্তা,) আমার বান্দা কোন গুনাহর কাজ করতে চাইলে তা না করা পর্যন্ত তার গুনাহ্ লেখো না।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৭৫০১
কারণ হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ يَرْفَعُهُ قَالَ إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ لِأُمَّتِي عَمَّا وَسْوَسَتْ أَوْ حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ بِهِ أَوْ تَكَلَّمْ
অর্থাৎ হযরত আবূ হুরাইরাহ রা. অন্যত্র হাদীস মারফূ‘ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার উম্মাতের ঐ সকল ওয়াস্ওয়াসা ক্ষমা করে দিয়েছেন যা তাদের মনে উদিত হয় বা যে সব কথা মনে মনে বলে থাকে; যতক্ষণ না তা বাস্তবে করে বা সে সম্পর্কে কথা বলে।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৬৬৬৪
ভুলক্রমে গুনাহ করা
ক. আগের উম্মতের অবস্থা
আগের যুগের উম্মত যখন গুনাহ করার নিয়ত করতো,সাথে সাথেই তাদের আমলনামায় গুনাহ লেখা হতো এবং আল্লাহ তার শাস্তি দুনিয়াতে দ্রুত বাস্তবায়ন করতেন।
وقد كان بنو إسرائيل إذا نسوا شيئاً مما أمروا به أو أخطؤوا عجلت لهم العقوبة
অর্থাৎ বনি ইসরাইল সম্প্রদায় যখন তাদের উপর নির্দেশিত বিষয়গুলো ভুলে যেত অথবা ভুলে (কোনো গুনাহ) করতো তখন দ্রুত শাস্তি চলে আসতো।
সূত্র: মাওয়াহেবে লাদুনিয়া খ: ২ পৃ: ৩২৬ তাফসীরে বগবী খ: ১ পৃ: ৩৫৭
খ. উম্মতে মুহাম্মাদীর অবস্থা।
এই উম্মতের এত সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন যে, তারা গুনাহ করার নিয়ত করলে যতক্ষন বাস্তবায়নের সূচনা না করবে, ততক্ষন কোনো শাস্তি দেয়া হবে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُم بِهِ وَلَكِن مَّا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থাৎ এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সূরাঃ আহযাব আয়াত: ৫
হাদিসে আরও এসেছে,
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللهَ وَضَعَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
অর্থ: হযরত ইবনু ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ আমার উম্মাতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কৃত কাজের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
সূত্র: সুনান ইবনে মাজাহ হাদিস: ২০৪৫ সহিহ ইবনে হিব্বান: ৭২১৯
ইচ্ছাকৃতভাবে গুনাহ করলে।
ক. আগের যুগের উম্মতের অবস্থা:
আবুল আলিয়া রহ. বলেন, নবীজি সা. বলেছেন,
كانت بنو إسرائيل إذا أصاب أحدهم الخطيئة وجدها مكتوبةً على بابه وكفارَتها فإنْ كفَّرها كانت خزيًا في الدنيا وإنْ لم يكفِّرها كانت له خزياً في الآخرة
অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের কেউ যখন কোন পাপ করে ফেলতো সেটি এবং তার কাফ্ফারা সে তার ঘরের দরজায় লেখা দেখতে পেত। যদি সে ঐ পাপের কাফফারা আদায় করতো, তাহলে তা তার জন্য দুনিয়ায় অপমানের কারণ হতো। আর যদি সে তার কাফফারাহ আদায় না করতো, তাহলে তা তার জন্য আখিরাতে অপমানের কারণ হবে।
সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর খ: ১ পৃ: ৩৮১
মুসা আ. ও তাঁর উম্মত
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنفُسَكُمْ بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوبُواْ إِلَى بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُواْ أَنفُسَكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِندَ بَارِئِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
অর্থ: আর যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদেরই ক্ষতিসাধন করেছ এই গোবৎস নির্মাণ করে। কাজেই এখন তওবা কর স্বীয় স্রষ্টার প্রতি এবং নিজ নিজ প্রাণ বিসর্জন দাও। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর তোমাদের স্রষ্টার নিকট। তারপর তোমাদের প্রতি লক্ষ্য করা হল। নিঃসন্দেহে তিনিই ক্ষমাকারী, অত্যন্ত মেহেরবান।
সুরাঃ বাকারা আয়াত: ৫৪
আয়াতের তাফসীর:
عَنْ عَلِيٍّ قالَ قالُوا لِمُوسى ما تَوْبَتُنا قالَ يَقْتُلُ بَعْضُكم بَعْضًا فَأخَذُوا السَّكاكِينَ فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَقْتُلُ أخاهُ وأباهُ وأُمَّهُ لا يُبالِي مَن قَتَلَ حَتّى قُتِلَ مِنهم سَبْعُونَ ألْفًا فَأوْحى اللَّهُ إلى مُوسى مُرْهم فَلْيَرْفَعُوا أيْدِيَهُمْ وقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لِمَن قُتِلَ وتِيبَ عَلى مَن بَقِيَ
অর্থাৎ হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারা (বনী ইসরাঈল) মুসা আ. কে বলল, আমাদের তওবার পদ্ধতি কি? তিনি বললেন, একে অপরকে হত্যা করা। অতঃপর তারা ছুরি হাতে নিয়ে প্রত্যেকেই তার ভাই, বাবা, এবং মা (যাকে সামনে পেল হত্যা করল। এ ক্ষেত্রে কোনো ভ্রক্ষেপই করল না যে সে কাকে হত্যা করছে। এভাবে ৭০ হাজার লোক নিহত হলো। অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা মুসা আ. এর উপর ওহী নাযিল করলেন, “তুমি তাদেরকে হাত তুলে (দুআ করার) নির্দেশ দাও। তাদের ভেতর নিহত ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা’য়ালা ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জিবন্তদের তওবা কবুল করেছেন।
সূত্র: ফাতহুল কাদীর খ. ২ পৃ: ৯৪
খ. উম্মতে মুহাম্মাদীর অবস্থা।
وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থ: যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।
সুরা নিসা আয়াত: ১১০
গুনাহ করে ফেললে
ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন,
ডান কাধের ফিরিস্তা থামিয়ে দেন।
وَإِذَا عَمِلَ سَيِّئَةً قَالَ صَاحِبُ الْيَمِينِ لِصَاحِبِ الشِّمَالِ دَعْهُ
অর্থাৎ যখন বান্দা গুনাহ করেই ফেলে তখন ডান কাধের ফিরিস্তা বাম কাধের ফিরিস্তাকে বলেন, থামো অর্থাৎ এখনই গুনাহ লিখো না।
সূত্র: তাফসীরে কুরতুবী খ: ৯ পৃ: ৮
থামিয়ে কি করেন? নবীজি সা. বলেন,
إن صاحب الشمال ليرفع القلم ست ساعات عن العبد المسلم المخطئ أو المسيء فإن ندم واستغفر الله منها ألقاها
অর্থাৎ বাম কাধের ফিরিস্তা তখন মুসলিম গুনাহগারের গুনাহ লেখা থেকে ৬ ঘন্টা কলম থামিয়ে রাখেন। যদি বান্দা অনুশোচনা করে এবং ক্ষমা চায় তাহলে গুনাহ ছুড়ে ফেলে দেন।
সূত্র: তবরানী হাদিস: ৭৭৬৫ শুয়াবুল ঈমান (বায়হাকী): ৬৬৫০ ফয়যুল কাদীর শরহে জামে সগীর হাদিস: ২২৯১ (হাদিস: হাসান)
فَإِنْ عَمِلَهَا (ولم يندم ولم يستغفر) فَاكْتُبُوهَا بِمِثْلِهَا
অর্থাৎ আর যদি তা করেই ফেলে (এবং অনুশোচিত হয়নি এবং ক্ষমাও চায়না, তখন আল্লাহ ফিরিস্তাকে বলেন,) তাহলে তা সমপরিমাণ লেখো
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৭৫০১
কতটুকু লেখেন?
وَمَن جَاء بِالسَّيِّئَةِ فَلاَ يُجْزَى إِلاَّ مِثْلَهَا وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
অর্থ: এবং যে, একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।
সুরাঃ আনআম আয়াত: ১৬০
তওবা করলে কি কি পুরস্কার?
১. গুনাহ মাফ হয়:
সুতরাং গুনাহ লেখার পরও যদি তওবা করা হয়, তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে মাফ করে দেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থ: যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।
সুরা নিসা আয়াত: ১১০
নবী সা. বলেন,
عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لاَ ذَنْبَ لَهُ
অর্থাৎ আবূ উবায়দা ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য।
সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস: ৪২৫০
আল্লাহ নিজেই মুছে দেন।
আল্লাহ নিজেই গুনাহগুলো এমন ভাবে মাফ করে দেন যে, ফিরিস্তাদের মনেই থাকবে না।
عن أنس بن مالك قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم إذا تاب العبدُ من ذنوبِه أنسى اللهُ حفَظتَه ذنوبَه، وأنسى ذلك جوارحَه ومعالمَه من الأرضِ حتّى يلقى اللهَ يومَ القيامةِ وليس عليه شاهدٌ من اللهِ بذنبٍ
অর্থাৎ হযরত আনাস রা. থেকে বর্নিত নবীজি সা. বলেন, যখন বান্দা তার গুনাহ থেকে তওবা করে, তখন আল্লাহ নিযুক্ত ফিরিস্তাদেরকে ভুলিয়ে দেন এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও ভুলিয়ে দেন এবং যমীনে গুনাহের চিহ্ন গুলো মুছে দেন। সে কিয়ামতে এমন ভাবে উঠবে যেন তাঁর বিপক্ষে গুনাহের কোনো সাক্ষ্যিই থাকবে না।
সূত্র: আত তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস: ৭৭৮ তারিখে দিমাশক
২. গুনাহ সমপরিমান সওয়াব হয়:
কোনো স্ত্রী যদি স্বামীকে ছেড়ে অন্যের সাথে পরোকিয়া করে, তো কিছু ব্যক্তি আছেন তারা আর মেনেই নেয় না। কিন্তু কোনো বান্দা যদি সব অপরাধ ছেড়ে রবের কাছে তওবা করে তবে রব সীমাহীন তাকে পুরস্কৃত করেন।
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থ: কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সুরা ফুরকান আয়াত: ৭০
কতদিন তওবা করার সুযোগ আছে?
مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا تَابَ اللهُ عَلَيْهِ
‘‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিকে থেকে সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে তাওবাহ্ করবে, আল্লাহ তার তাওবাহ্ গ্রহণ করবেন।’
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৭০৩
মা যেমন সারা রাত ঘুমান না।
বাবা ছেলের সাথে রাগ করে ঘর থেকে যদি বের করে দেন, তাহলে রাত হয়ে গেলে সবাই ঘুমালেও মা ঘুমায় না। কারণ সন্তানকে সবচে বেশি ভালোবাসেন মা। সন্তান যদি গভীর রাতে মাকে ডাক দেয়, আর মা যদি ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে এটা মায়ের পরিচয় হয় না। এজন্য অপরাধী সন্তানকে কাছে ডাক দিলে ঘরে টেনে নেয়ার জন্য মা যেমন সারা রাত ঘুমায় না। ঠিক তেমনি আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُهٗ سِنَۃٌ وَّ لَا نَوۡمٌ
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়।
সুরাঃ বাকারা আয়াত: ২৫৫
বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ তা’য়ালা কখনও ঘুমান না।
عَنْ أَبِي مُوسَى عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا
অর্থ: হযরত আবূ মূসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতে আল্লাহ তা’আলা তার নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তওবা করে এমনিভাবে দিনে তিনি তার নিজ হাত প্রশস্ত করেন যেন রাতের অপরাধী তার নিকট তওবা করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৭৫৯
নিস্বাসে নিস্বাসে নিয়ামত পাই আমি