Home > মওদুদী ফিৎনা > সাহাবারা রা. সমালোচনার উর্ধ্বে নয় : মিস্টার মওদুদী।

সাহাবারা রা. সমালোচনার উর্ধ্বে নয় : মিস্টার মওদুদী।

মিস্টার মওদুদীর দাবি:
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোঁয়া পেয়ে যাঁরা ধন্য তাঁরাই হলেন সাহাবা রা.। পুরো জিবন তাঁরা সাজিয়েছেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুনাবলী দিয়ে। মুসলিম উম্মাহ যদি সাহাবাদের মতো অটল-মজবুত ঈমান বানাতে পারে, তাহলে তারা নিশ্চিত হেদায়েতপ্রাপ্ত হওয়ার ঘোষণা খোদ আল্লাহপাকই দিয়েছেন। যাঁদের সমালোচনা একমাত্র দূর্ভাগা ছাড়া কেউ মনে করতে পারে না। অথচ মিস্টার মওদুদী সাহেব সেই সাহাবাদের সমালোচনার লক্ষবস্তু বানাতে ছাড় দেয়নি। শুধু কী তাই, বরং সাহাবাদের সমালোচনা করার বৈধতার ফাতাওয়ায় প্রসব করেছে। দেখুন তিনি কী বলেছেন,
رسول خدا کے سوا کسی انسان کو معیار حق نہ بنائے کسی کو تنقید سے بالاتر نہ سمجھے
রাসূলে খোদা ছাড়া অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি বানাবে না এবং সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করবে না। -দস্তুরে জামাতে ইসলামী পৃ: ৭

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র হাদিস শরীফে সাহাবায়ে কেরামের রা. সমালোচনা না করার ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস এসেছে। কয়েকটি এখানে তুলে ধরলাম।

সাহাবা সমালোচনা নিষেধ : হযরত সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
إِذَا ذُكِرَ أَصْحَابِي فَأَمْسِكُوا
যখন আমার সাহাবীদের আলোচনা আসে, তখন (তাদের ব্যাপারে সমালোচনা করা থেকে) নিজেকে বিরত রাখো। -আল মুজামুল কাবীর (তাবরানী) হাদীস নং: ১৪২৭ ; জামে সগীর : হাদিস নং : ৬১৩ ; মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ. ৭ পৃ. ২০৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الله الله في أصحابي لا تتخذوهم غرضاً بعدي
আমার সাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরবর্তীকালে তোমরা তাঁদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ, যে তাঁদের ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাঁদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপছন্দ করবে সে আমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাঁদের অপছন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন। -জামে সগীর : হাদিস নং : ১৪৩৬ ; জামে তিরমিযী: হাদিস নং : ৩৮৬২ মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং : ২০৫৪৯

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا تسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهباً ما أدرك مد أحدهم ولا نصيفه
তোমরা আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলোনা (সমালোচনা করো না)। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বততূল্য স্বর্ণও দান করে,তবুও তাঁদের সোয়া সের যব সদাকা করার সমানও হতে পারেনা বরং এর অর্ধেকেরও বরাবর হতে পারেনা। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৩৬৭৩ : সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৫৪০ ; জামে তিরমিযী : হাদিস নং : ৩১৬৮

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন,
لا تسبُّوا أصحابَ محمَّدٍ صلّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فلَمُقامُ أحدِهِم ساعةً خيرٌ مِن عمَلِ أحدِكُم عُمرَهُ
তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাগণের মন্দ বলো না, তাদের এক মুহুর্তের সৎকাজ তোমাদের সারা জীবনের সৎকাজের চেয়ে উত্তম। -সুনানে ইবনে মাজাহ : হাদীস নং : ১৩৩ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : হাদিস নং : ৩৩০৮২

সাহাবা সমালোচকদের বেত্রাঘাতের নির্দেশ : উপরন্তু সাহাবাদের সমালোচনা করলে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَن سَبَّ نبيًّا قُتِل ومَن سَبَّ أصحابَه جُلِد
যে ব্যক্তি নবীকে সমালোচনা বা মন্দ বলে,তাকে হত্যা করা হবে। আর যে সাহাবীকে সমালোচনা বা মন্দ বলে তাকে প্রহার করা হবে। -মু’জামে সগীর (তবরানী) হাদিস নং : ৬৫৯ দায়লামী : হাদীস নং : ৫৬৮৮ তারিখে দিমাশক : হাদিস নং : ৫৬৮৮

সাহাবা সমালোচনা মানেই আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করা : সাহাবায়ে কেরামের সাথে দুশমনি রাখলে আল্লাহর সাথে যু্দ্ধ ঘোষণা করার শামিল। কারণ সকল সাাহাবায়ে কেরাম রা. উম্মতের মধ্যে সবচে বড় ওলী ছিলেন। কারন তারা সবাই জান্নাতী, তাদের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর ওলীদের সাথে দুশমনি করা মানেই আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْب
আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করি। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৬৫০২

সুৎরাং সাহাবাদের রা. সাথে দুশমনি রাখলে রবের তরফ থেকে সরাসরি যুদ্ধের ঘোষণা করা হয়।

সাহাবায়ে কেরামের রা. সমালোচনা অভিসাপের কারণ : হযরত ইবনে আব্বাস রা: হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
من سبَّ أصحابِي فعليه لعنةُ اللهِ والملائكةِ والناسِ أجمعين
যারা আমার সাহাবীদেরকে মন্দ বলে, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফেরেস্তাদের এবং জগতবাসীর অভিশাপ বর্ষিত হোক। -জামে সগীর : হাদিস নং : ৮৭১৫ ; মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ. ১০ পৃ. ২৪

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إذا رأيتم الذين يسبون أصحابي فقولوا لعنة الله على شركم
যখন তোমরা এ ধরনের লোক দেখবে, যারা আমার সাহাবীকে মন্দ বলে, তখন তাদের উদ্দেশে বলে দাও, তোমাদের অনিষ্টের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক। -সুনানে তিরমিযি : হাদিস নং : ৩৮৬৬ জামে সগীর : হাদিস নং : ৬৩৩

প্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত হাদিস থেকে জানা গেলো, যারা সাহাবাদের সমালোচনা করে তারা অভিশপ্ত ও আল্লাহর দুশমন। এতো এতো সুস্পষ্ট হাদিস থাকা সত্বেও মওদুদী সাহেব কিভাবে সাহাবারা ‘সমালোচনার উর্ধ্বে নন’ এমন জঘন্য দাবি করলেন!

সাহাবা প্রেম মানেই নবিপ্রেম : পক্ষান্তরে যারা সাহাবাদের প্রেমিক, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বন্ধু। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফল রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
فمن أحبهم فبحبي أحبهم ومن أبغضهم فببغضي أبغضهم ومن آذاهم فقد آذاني ومن آذاني فقد آذى الله ومن آذى الله يوشك أن يأخذه
যে তাঁদেরকে ভালবাসেন সে আমার প্রতি ভালবাসার কারণেই তাদেরকে ভালবাসেন এবং যে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল। যে তাদেরকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লহ তা’য়ালাকে কষ্ট দিল আর যে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আল্লাহ তাআলা অচিরেই তাকে পাকড়াও করবেন। -সহিহ ইবনে হিব্বান : হাদিস নং : ৭২৫৬

চলুন সাহাবাদের ভালোবাসতে শিখি, তাঁদের সমালোচনা করে নিজেকে মওদুদী সাহেবের মতো অভিশপ্ত না বানাই। আল্লাহপাক আমাদের ঈমানকে শিয়াদের প্রভাব মুক্ত করেন। আমীন!

Check Also

হাদিস অস্বীকার

মাওলানা মওদূদী যেভাবে বুখারী  মুসলিমের হাদীস অস্বিকার করার ধৃষ্টতা দেখালেন! মাওলানা মওদূদী সাহেব তার বিতর্কিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.