Home > জায়েয-নাজায়েয > ঝাড়ফুঁক কি ইসলামে জায়েয?

ঝাড়ফুঁক কি ইসলামে জায়েয?

এ ব্যপারে রাসুল স: থেকে দু ধরণের হাদিস এসেছে।কোন কোন হাদিসে ঝাড়ফুঁক কে শিরক বলা হয়েছে।

১. ঝাড়ফুঁক শিরক সম্বলিত হাদিস:

عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول انّ الرّقَى وَالتّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত নবিজি স: বলেন, নিশ্চয় রুকইয়া, তামীমা ও তিওয়ালা শিরক।
সূত্র: আবু দাউদ হাদীস ৩৮৮৩

উক্ত হাদিসে রুকইয়া বলতে ‘ঝাড়ফুঁক’ কে বুঝানো হয়েছে অর্থাৎ কিছু পড়ে কারো গায়ে দম করা, ফুঁ দেওয়া শিরক।

২. ঝাড়ফুঁক জায়েয সম্বলিত হাদিস:

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

أن النبي صلى الله عليه وسلم كان ينفث على نفسه في المرض الذي مات فيه بالمعوذات، فلما ثقل كنت أنفث عليه بهن وأمسح بيد نفسه لبركتها

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর সময় অসুস্থ হলে সূরা ফালাক ও নাস পড়ে উভয় হাতে ফুঁ দিয়ে শরীরে বুলিয়ে দিতেন। যখন অসুস্থতা এত বেড়ে যেত যে, নিজে নিজে তা করতে পারছেন না তখন আমি নিজেই পড়ে তাঁর গায়ে দম করতাম এবং তাঁর হাত তাঁর গায়ে বুলিয়ে দিতাম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৩৫

আম্মাজান আয়েশা রা: আরও বলেন,

عن عائشة أم المؤمنين قالت كانَ رَسولُ اللَّهِ ﷺ إذا أوى إلى فِراشِهِ، نَفَثَ في كَفَّيْهِ بقُلْ هو اللَّهُ أحَدٌ وبِالْمُعَوِّذَتَيْنِ جَمِيعًا، ثُمَّ يَمْسَحُ بهِما وجْهَهُ، وما بَلَغَتْ يَداهُ مِن جَسَدِهِ قالَتْ عائِشَةُ: فَلَمّا اشْتَكى كانَ يَأْمُرُنِي أنْ أفْعَلَ ذلكَ به

অর্থ: হযরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবিজি স: যখন রাতে শোয়ার জন্য বিছানায় আসতেন তখন সূরা ইখলাস-ফালাক-নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁ দিতেন। অতপর উভয় হাত, মুখ ও শরীরের যে পর্যন্ত পৌঁছে সে পর্যন্ত বুলাতেন, ইন্তেকালের পূর্বে যখন নবীজী অসুস্থ হন তখন আমাকে তা পড়ে তাঁর গায়ে এমন করে দিতে বলতেন।
সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৪৮

জিব্রাঈল আ. নিজেও ঝাড়ফুঁক করেছেন:

 عن أبي سعيد الخدري أنَّ جِبْرِيلَ أَتى النبيَّ صَلّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ فَقالَ يا مُحَمَّدُ اشْتَكَيْتَ فَقالَ نَعَمْ قالَ باسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ مِن كُلِّ شيءٍ يُؤْذِيكَ مِن شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ باسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ রা. বর্ণনা করেন, জিব্রাইল আ. নবী সা. এর কাছে এসে বলেন, হে মুহাম্মাদ আপনি কি আসুস্থ? তিনি বলেন হ্যাঁ! জিব্রাইল আ. নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে তাঁকে ঝেড়ে দেন,

بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

সূত্র: মুসলিম হাদিস-২১৮৬ তিরমিযি-৯৭২ ইবনে মাজা-৯৫২৩

আমরা উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে দু রকম তথ্য পেলাম। প্রথম হাদিসে ঝাড়ফুঁক শিরক বলা হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় হাদিসে নবিজি স: নিজেই ঝাড়ফুঁক করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

সমাধান:

উপরোল্লিখিত হাদিসগুলোর ভেতর বাহ্যিক বৈপরিত্য থাকলে বাস্তবে কোন বিরোধ নেই। কারণ যে হাদিসে ঝাড়ফুঁক শিরক বলা হয়েছে, সেটা শিরক,কুফর মন্ত্র সম্বলিত ঝাড়ফুঁক। পক্ষান্তরে নবিজি স: ও জিব্রাঈল আল যে ঝাড়ফুঁক করেছেন, সেটা ছিল কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর নাম দ্বারা। সুতরাং এ থেতে স্পষ্ট হয় যে, কুফর-শিরক তন্ত্র-মন্ত্র ব্যতিত জায়েয দোয়া কালাম দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা যায়। এ সম্পর্কে আরো কয়েকটি হাদিস লক্ষনীয়।

এক.

عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِىِّ قَالَ كُنّا نَرْقِي في الجاهِلِيَّةِ فَقُلْنا يا رَسولَ اللهِ، كيفَ تَرى في ذلكَ فَقالَ اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقاكُمْ لا بَأْسَ بالرُّقى ما لَمْ يَكُنْ فيه شِرْكٌ

অর্থ: হযরত আউফ ইবনে মালেক আশজায়ী রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহেলিয়াতের যুগে আমরা ঝাড় ফুঁক করতাম অতপর বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেন তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার সামনে পেশ কর। ঝাড় ফুঁকে যদি শিরকের শব্দ না থাকে তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই।
সূত্র: মুসলিম হাদিস-২২০০

দুই.

عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهى رَسولُ اللهِ صَلّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ عَنِ الرُّقى فَجاءَ آلُ عَمْرِو بنِ حَزْمٍ إلى رَسولِ اللهِ صَلّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ فَقالوا يا رَسولَ اللهِ إنَّه كانَتْ عِنْدَنا رُقْيَةٌ نَرْقِي بها مِنَ العَقْرَبِ وإنَّكَ نَهَيْتَ عَنِ الرُّقى قالَ فَعَرَضُوها عليه فَقالَ ما أَرى بَأْسًا مَنِ اسْتَطاعَ مِنكُم أَنْ يَنْفَعَ أَخاهُ فَلْيَنْفَعْهُ

অর্থ: হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সা. ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করলেন। আমর ইবনে হাযম গোত্রের লোকেরা রাসুল রাসুল সা. এর কাছে এসে আরজ করল ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের কাছে কিছু মন্ত্র আছে। এ দিয়ে আমরা বিষ ঝেড়ে থাকি। আপনি তো ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারা মন্ত্রগুলো তাঁর সামনে পেশ করল। তিনি বললেন এতে খারাপ তো কিছু নেই। তোমাদের যে কেউ তাঁর ভাইয়ের উপকার করতে পারে সে যেন তা করে।
সূত্র: মুসলিম হাদিস-২১৯৯ সহিহ ইবনে হিব্বান-৬০৯৭

তিন.
সাহাবী উমায়ের বলেন-

عرضت على النبي صلى الله عليه و سلم رقية كنت أرقي بها من الجنون فأمرني ببعضها ونهاني عن بعضها وكنت أرقي بالذي أمرني به رسول الله صلى الله عليه و سلم.

আমি উন্মাদের ঝাড়ফুঁক করতাম। নবীজীকে আমার পঠিত কথাগুলো শোনালাম। তখন নবীজী কিছু বাক্যের অনুমোদন দিলেন (অর্থাৎ এগুলো পড়ে ঝাড়ফুঁক করা যাবে) আর কিছু বাক্য থেকে নিষেধ করলেন (এগুলো পড়ে ঝাড়ফুঁক করা যাবে না)। নবীজী যেগুলোর অনুমতি দিয়েছিলেন পরবতীর্তে আমি শুধু তা দিয়েই ঝাড়ফুঁক করতাম। -শরহু মাআনিল আসার, হাদীস ৭০৪৫

চার.

   جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ أَرْخَصَ النبيُّ ﷺ في رُقْيَةِ الحَيَّةِ لِبَنِي عَمْرٍو قالَ أَبُو الزُّبَيْرِ وَسَمِعْتُ جابِرَ بنَ عبدِ اللهِ يقولُ لَدَغَتْ رَجُلًا مِنّا عَقْرَبٌ، وَنَحْنُ جُلُوسٌ مع رَسولِ اللهِ ﷺ، فَقالَ رَجُلٌ يا رَسولَ اللهِ أَرْقِي قالَ مَنِ اسْتَطاعَ مِنكُم أَنْ يَنْفَعَ أَخاهُ فَلْيَفْعَلْ

অর্থ: হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, নবী সা. বনু আমর গোত্রের লোকদের সর্প দংশনে ঝাড় ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন। আবু যুবাইর বলেন, আমি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহকে রা. বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমাদের একজনকে বিচ্ছু দংশন করল। আমরা তখন রাসুল সা. এর কাছে বসা ছিলাম। এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি ঝেড়ে দেই? তিনি বলেন, তোমাদের যে কেউ তার ভাইয়ের উপকার করতে পারে সে যেন তা করে।
সূত্র: মুসলিম হাদিস-২১৯৯

পাঁচ.

عن الأسود بن يزيد قَالَ سَأَلْتُ عائِشَةَ عَنِ الرُّقْيَةِ فَقالَتْ رَخَّصَ رَسولُ اللهِ ﷺ، لأَهْلِ بَيْتٍ مِنَ الأنْصارِ في الرُّقْيَةِ مِن كُلِّ ذِي حُمَةٍ

অর্থ: হযরত আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ র: বলেন, আমি হযরত আয়েশা রা. কে ঝাড়ফুঁকের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম।অতপর তিনি বললেন, রাসুল সা: এক আনসার পরিবারের লোকদের বিষক্রিয়ার ঝাড়  ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন।
সূত্র: মুসলিম হাদিস-২১৯৩

ছয়.

عن أم ابن أبي حثمة قالَتْ قالَ النبيَّ صَلّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ
ارقي ما لم يكن فيها شرك

অর্থ: হযরত উম্মে ইবনে আবি হাছমা রা: থেকে বর্ণিত নবিজি স: বলেন, শিরক-কুফর ব্যতীত অন্য সবকিছু দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে থাক।
সূত্র: সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস-৬০৯২

পানিতে ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করা:

عَنْ عَائِشَةَ: أَنّهَا كَانَتْ لَا تَرَى بَأْسًا أَنْ يُعَوّذَ فِي الْمَاءِ ثُمّ يُصَبّ عَلَى الْمَرِيضِ.

অর্থ: হযরত আয়েশা রা. রোগীর জন্য পানিতে কিছু পড়ে তা রোগীর গায়ে ঢেলে দেওয়াতে কোনো অসুবিধা মনে করতেন না।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস- ২৩৯৭৫

 

উপরোক্ত হাদিস গুলো দ্বারা আমরা এ কথা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে, ঢালাও ভাবে ঝাড়ফুঁক কে শিরক বলার কোন সুযোগ নেই।

এজন্য ইমাম তহাবী র: বলেন,

فدل ذلك أن كل رقية لا يشرك فيها فليست بمكروهة

অর্থ: (এসব) হাদীস প্রমাণ করে, যেসব ঝাড়ফুঁকে শিরক নেই। তা বৈধ।
সূত্র: শরহু মাআনিল আসার খ:৪ পৃ:১৫৩

অতএব ঢালাওভাবে ঝাড়ফুঁক কে শিরক বলা মানে নবিজি স: ও জিব্রাইল আ: কে মুশরিক বলা নয় কি?(নাউযুবিল্লাহ)।তবে শিরক-কুফর মন্ত্র সম্বলিত ঝাড়ফুঁক কে জায়েয বলারও কোন সুযোগ নেই। এটাই সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীন,ফুকাহা ও উলামায়ে কেরামের মত।

ঝাড়ফুঁক জায়েয হওয়ার শর্তাবলী:

তবে এ ঝাড়ফুঁক জায়েয হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত। যা আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী র: বলেছেন,

وقد أجمع العلماء على جواز الرقي عند اجتماع ثلاثة شروط: أن يكون بكلام الله أو بأسمائه وبصفاته. وباللسان العربي أو بما يعرف معناه من غيره، وأن يعتقد أن الرقية لا يؤثر بذاتها بل بذات الله تعالى…

অর্থ: এ ব্যাপারে সকল উলামায়ে কেরাম একমত যে, তিনটি শর্তে ঝাড়ফুঁক বৈধ।

এক. আল্লাহর কালাম বা তাঁর নাম-সিফাত দিয়ে হতে হবে।

দুই. (আল্লাহর নাম-সিফাত বা আল্লাহর কালাম দিয়ে না হলে) আরবী ভাষায় বা এমন শব্দাবলী দ্বারা হতে হবে, যার অর্থ বুঝা যায় (এবং তাতে ‘মুনকার’ কিছুও নেই)।

তিন. এমন বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহই সুস্থতা দানকারী, ঝাড়ফুঁক নয়।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ: ১৩ পৃ: ১৫৫

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, শিরকী ঝাড়ফুঁক ইসলামে কোনভাবেই জায়েয বলে না। তবে জায়েয ঝাড়ফুঁক শর্তসাপেক্ষে জায়েয।এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ রইল না। এবার চলুন দেখে নিই কোন কি দিয়ে নবিজি স: ঝাড়ফুঁক করতেন?

ঝাড়ফুঁকের মাসনুন দোয়া:

১. সুরা ফাতিহা:

عن أبي سعيد الخدري قالَ أنَّ ناسًا مِن أَصْحابِ رَسولِ اللهِ ﷺ كانُوا في سَفَرٍ فَمَرُّوا بحَيٍّ مِن أَحْياءِ العَرَبِ فاسْتَضافُوهُمْ فَلَمْ يُضِيفُوهُمْ فَقالوا لهمْ هلْ فِيكُمْ راقٍ فإنَّ سَيِّدَ الحَيِّ لَدِيغٌ أَوْ مُصابٌ فَقالَ رَجُلٌ منهمْ نَعَمْ فأتاهُ فَرَقاهُ بفاتِحَةِ الكِتابِ فَبَرَأَ الرَّجُلُ فَأُعْطِيَ قَطِيعًا مِن غَنَمٍ فأبى أَنْ يَقْبَلَها وَقالَ حتّى أَذْكُرَ ذلكَ للنبيِّ ﷺ فأتى النبيَّ ﷺ فَذَكَرَ ذلكَ له فَقالَ يا رَسولَ اللهِ واللَّهِ ما رَقَيْتُ إلّا بفاتِحَةِ الكِتابِ فَتَبَسَّمَ وَقالَ وَما أَدْراكَ أنَّها رُقْيَةٌ ثُمَّ قالَ خُذُوا منهمْ واضْرِبُوا لي بسَهْمٍ معكُمْ

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. এর একদল সাহাবী সফরে ছিলেন। তারা আরবের কোন গ্রাম দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তাদের কাছে আতিথ্য চাইলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করল। তারা বলল, তোমাদের কেউ কি ঝাড় ফুঁক জানে? আমাদের এই গ্রামের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে। এক সাহাবী বললেন, হ্যাঁ! আমি ঝাড় ফুঁক জানি। অতএব তিনি তাদের সাথে গেলেন এবং সুরা ফাতিহা পাঠ করে তাকে ঝাড়লেন। সে ভাল হয়ে গেল। তাকে এক পাল বকরী দেয়া হল। কিন্তু তিনি তা গ্রহন করলেন না এবং বললেন যে, নবী সা. কে জিজ্ঞেস করে নেই। অতএব তিনি নবী সা. এর কাছে এসে সবকিছু বর্ণনা করলেন এবং বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! আমি সুরা ফাতেহা ছাড়া অন্যকিছু কোন মন্ত্র পড়িনি। তিনি মুচকি হেসে বললেন এটা যে মন্ত্র তা তুমি কিভাবে জানলে? অতপর তিনি বললেন, তাদের থেকে বকরি গ্রহণ কর এবং আমাকেউ একটা ভাগ দিও।
সূত্র: মুসলিম হাদিস-২২০১

২. সুরা ফালাক ও নাস:
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

أن النبي صلى الله عليه وسلم كان ينفث على نفسه في المرض الذي مات فيه بالمعوذات، فلما ثقل كنت أنفث عليه بهن وأمسح بيد نفسه لبركتها.

অর্থ: নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর সময় অসুস্থ হলে সূরা ফালাক ও নাস পড়ে উভয় হাতে ফুঁ দিয়ে শরীরে বুলিয়ে দিতেন। যখন অসুস্থতা এত বেড়ে যেত যে, নিজে নিজে তা করতে পারছেন না তখন আমি নিজেই পড়ে তাঁর গায়ে দম করতাম এবং তাঁর হাত তাঁর গায়ে বুলিয়ে দিতাম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৩৫

৩. অন্য দোয়া:

عن عبدالله بن مسعود إن الرقى والتمائم والتولة شرك قالت قلت لم تقول هذا والله لقد كانت عيني تقذف وكنت أختلف إلى فلان اليهودي يرقيني فإذا رقاني سكنت فقال عبد الله إنما ذاك عمل الشيطان كان ينخسها بيده فإذا رقاها كف عنها إنما كان يكفيك أن تقولي كما كان رسول اللهِ ﷺ يقول أذهب البًاس رب الناس اشف أنت الشافي لا شفاء إلا شفاؤك شفاء لا يغادر سقما

অর্থ: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. একদিন তাঁর স্ত্রী যায়নাবকে হাদীস শোনান যে, নবীজী বলেছেন, নিশ্চয় জাহেলী ঝাড়ফুঁক শিরক। তখন যায়নাব বলেন, বিষয়টি বুঝলাম না; আমার চোখ ফুলে যেত এবং পানি ঝরত। তাই আমি এক ইহুদী নারী থেকে ঝাড়ফুঁক নিতাম। ঝাড়ফুঁক করালেই সুস্থ হয়ে যেতাম। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, এটা শয়তানের কাজ। সে তোমার চোখে খোঁচা দেয় আর তাতে তা ফুলে যায় ও পানি ঝরতে থাকে আর যখন সে ইহুদী নারী (মন্ত্র দিয়ে) ঝাড়ফুঁক করে তখন শয়তান থেমে যায়। তোমার জন্য তো সে দুআটিই যথেষ্ট, যা নবীজী বলতেন-

أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبّ النّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشّافِي لَا شِفَاءَ إِلّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮৩

অতএব ঢালাওভাবে সর্বপ্রকার ঝাড়ফুঁক কে শিরক না বলে আসুন আমরা বিষয়টি গবেষণা করি। সহিহটা মেনে নিই। মহান আল্লাহ আমাদের সকল ফিতনা থেকে হিফাযত করেন।আমিন!

 

লেখক:

মুফতী রিজওয়ান রফিকী

পরিচালক- মাদরাসা মারকাযুন নূর বোর্ড বাজার,গাজীপুর।

Check Also

পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরা হারাম।

  عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.