Home > কুরবানীর মাসআলা > কোন কোন পশু দিয়ে কুরবানী করা যাবে?

কোন কোন পশু দিয়ে কুরবানী করা যাবে?

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শ হলো,
কুরবানীতে যেসব প্রাণী যাবাহ করা যায় তা এই,
১. ভেড়া-দুম্বা, ২. ছাগল, ৩. গরু, ৪. মহিষ, ৫. উট।

হানাফী মাযহাবের মতবাদ

أَمَّا جِنْسُهُ فَهُوَ أَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْأَجْنَاسِ الثَّلَاثَةِ الْغَنَمِ أو الْإِبِلِ أو الْبَقَرِ وَيَدْخُلُ في كل جِنْسٍ نَوْعُهُ وَالذَّكَرُ وَالْأُنْثَى منه وَالْخَصِيُّ وَالْفَحْلُ لِانْطِلَاقِ اسْمِ الْجِنْسِ على ذلك وَالْمَعْزُ نَوْعٌ من الْغَنَمِ وَالْجَامُوسُ نَوْعٌ من الْبَقَرِ

অর্থাৎ কুরবানীরতে যাবাহ করার জন্য তিন প্রকার প্রাণী হতে হবে। ১. ছাগল ২. উট ৩. গরু। আর এই তিন প্রকার পশুর ভেতরে তার প্রকারগুলোও অন্তুর্ভূক্ত হবে। নর বা মাদি, খাসি করা বা না করা সব প্রকার প্রাণী অন্তুর্ভূক্ত। ভেড়া ছাগলের প্রকারের অন্তর্ভুক্ত এবং মহিষ গরুর প্রকারের অন্তুর্ভূক্ত।
সূত্র: ফাতাওয়া আলমগিরিয়্যাহ খ: ৫ পৃ: ৩৬৭

দলীল

১. ভেড়া, ২. ছাগল, ৩. গরু, ৪. উট এ চারটা প্রাণী দিয়ে কুরবানী জায়েয হওয়ার দলীল সরাসরি পবিত্র কুরআনে এসেছে। নিন্মে বিস্তারিত দেওয়া হলো,

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ

অর্থ: আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।
সুরাঃ হজ্ব আয়াত: ৩৪

উক্ত আয়াতে بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ তথা চতুস্পদ জন্তু দ্বারা উদ্দেশ্য কি সে সম্পর্কে কুরআর শরীফের অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে,

وَمِنَ الأَنْعَامِ حَمُولَةً وَفَرْشًا كُلُواْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّهُ وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ثَمَانِيَةَ أَزْوَاجٍ مِّنَ الضَّأْنِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الْمَعْزِ اثْنَيْنِ قُلْ آلذَّكَرَيْنِ حَرَّمَ أَمِ الأُنثَيَيْنِ أَمَّا اشْتَمَلَتْ عَلَيْهِ أَرْحَامُ الأُنثَيَيْنِ نَبِّؤُونِي بِعِلْمٍ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ وَمِنَ الإِبْلِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الْبَقَرِ اثْنَيْنِ قُلْ آلذَّكَرَيْنِ حَرَّمَ أَمِ الأُنثَيَيْنِ أَمَّا اشْتَمَلَتْ عَلَيْهِ أَرْحَامُ الأُنثَيَيْنِ أَمْ كُنتُمْ شُهَدَاء إِذْ وَصَّاكُمُ اللّهُ بِهَذَا فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللّهِ كَذِبًا لِيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

অর্থ: তিনি সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে বোঝা বহনকারীকে এবং খর্বাকৃতিকে। আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন, তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
সৃষ্টি করেছেন আটটি নর ও মাদী। ভেড়ার মধ্যে দুই প্রকার ও ছাগলের মধ্যে দুই প্রকার। জিজ্ঞেস করুন, তিনি কি উভয় নর হারাম করেছেন, না উভয় মাদীকে ? না যা উভয় মাদীর পেটে আছে? তোমরা আমাকে প্রমাণসহ বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
সৃষ্টি করেছেন উটের মধ্যে দুই প্রকার এবং গরুর মধ্যে দুই প্রকার। আপনি জিজ্ঞেস করুনঃ তিনি কি উভয় নর হারাম করেছেন, না উভয় মাদীকে, না যা উভয় মাদীর পেটে আছে? তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন আল্লাহ এ নির্দেশ দিয়েছিলেন? অতএব সে ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী অত্যচারী কে, যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা পোষন করে যাতে করে মানুষকে বিনা প্রমাণে পথভ্রষ্ট করতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না।
সুরাঃ আনআম আয়াত: ১৪২-১৪৩-১৪৪

অর্থাৎ بَهِيمَةُ الأَنْعَامِ বা চতুষ্পদ প্রাণী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ৮ প্রকার প্রাণী। ভেড়াতে ২ প্রকার, ছাগলে ২ প্রকার, উটে ২ প্রকার এবং গরুতে ২ প্রকার।

আয়াতের তাফসীর:

১. হযরত আলী রা. এর মত:

এই আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবনে আবী হাদেম রাযী রহ. আলী রা. এর মত তুলে ধরে বলেন,

عَنْ أَبِي جَعْفَرٍ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ أَنَّ رَجُلا سَأَلَ عَلِيًّا عَنِ الْهَدْيِ مِمَّا هُوَ فَقَالَ مِنَ الثَّمَانِيَةِ الأَزْوَاجِ فَكَاَنَّ الرَّجُلَ شَكَّ قَالَ عَلِيٌّ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَسَمِعْتَ اللَّهَ يَقُولُ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ أُحِلَّتْ لَكُمْ بَهِيمَةُ الأَنْعَامِ قَالَ وَسَمِعْتَهُ يَقُولُ لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الأَنْعَامِ… وَمِنَ الأَنْعَامِ حَمُولَةً وَفَرْشًا قَالَ فَسَمِعْتَهُ يَقُولُ مِنَ الضَّأْنِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الْبَقَرِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الْمَعْزِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الإِبِلِ اثْنَيْنِ

অর্থ: হযরত আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলী রহ. বলেন, জনৈক ব্যক্তি হযরত আলী রা. কে কুরবানী প্রাণী সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, যে এ প্রাণীগুলো কি কি? আলী রা. জবাব দিলেন, ৮ প্রাণী থেকে হবে। তখন লোকটির বিষয়টি নিয়ে কিছু ধোঁয়াশা তৈরি হলে আলী রা. বললেন, তুমি কি কুরআন শরীফ পড়ো? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। আলী রা. বললেন, তুমি কি আল্লাহ তা’আলার এ আয়াত শোনোনি?

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَوْفُواْ بِالْعُقُودِ أُحِلَّتْ لَكُم بَهِيمَةُ الأَنْعَامِ

মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ন কর। তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে।
সুরাঃ মায়িদা আয়াত: ১

এবং এ আয়াত কি শোনোনি? আল্লাহ বলেন,

لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ

যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।
সুরাঃ আনআম আয়াত: ৩৪

এবং এ আয়াতের এরশাদ কি শোনোনি?

وَمِنَ الأَنْعَامِ حَمُولَةً وَفَرْشًا

অর্থ: তিনি সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে বোঝা বহনকারীকে এবং খর্বাকৃতিকে।
সুরাঃ আনআম আয়াত: ১৪২

এরপর আলী রা. বললেন,

مِنَ الضَّأْنِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الْبَقَرِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الْمَعْزِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الإِبِلِ اثْنَيْنِ

অর্থাৎ ভেড়ার মধ্যে দুই প্রকার ও গরুর মধ্যে দুই প্রকার, ছাগলের মধ্যে দুই প্রকার এবং উটের মধ্যে দুই প্রকার।
সূত্র: তাফসীরে ইবনে আবী হাতেম খ: ৫ পৃ: ৯৪

২. হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর মত:

قالَ ابْنُ عَبّاسٍ الأزْواجُ الثَّمانِيَةُ مِنَ الإبِلِ والبَقَرِ والضَّأْنِ والمَعْزِ

অর্থাৎ আট প্রকার প্রাণী হলো, উট,গরু,ভেড়া এবং ছাগল (নর এবং মাদীসহ ৮ প্রকার)।
সূত্র: বায়হাকী খ: ৯ পৃ: ২৭২ ফাতহুল ক্বাদীর খ: ২ পৃ: ২৪৩

গরু দ্বারা কুরবানী

হাদিস শরীফে এসেছে,

ضَحَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَزْوَاجِهِ بِالْبَقَرِ‏

অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছেন।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৫৫৪৮

উট দ্বারা কুরবানী

হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ

অর্থ: হযরত জাবিন বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুদাইবিয়ার বছর এক একটি উট ও গরুতে সাতজনে শরীক হয়ে কুরবানী করেছি।
সূত্র: সহীহ মুসলিম হাদীস: ১৩১৮

ভেড়া-দুম্বা দ্বারা কুরবানী

হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏لاَ تَذْبَحُوا إِلاَّ مُسِنَّةً إِلاَّ أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ ‏

অর্থ: হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরবানীতে ‘মুছিন্না’ ছাড়া যবেহ করবে না। তবে সংকটের অবস্থায় ছ’মাস বয়সী ভেড়া-দুম্বা যবেহ করতে পারবে। (মুছিন্না হল, ৫ বছর বয়সী উট, ২ বছরের গরু, মহিষ এবং ১ বছর বয়সী ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা -শরহুন নববী)।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদীস: ১৯৬৩ সুনানে আবু দাউদ: ২৭৯৭; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১৭৯ ফাতাওয়া কাযীখান খ: ৩ পৃ: ৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে খ: ৪ পৃ: ২০৫-২০৬

অন্য হাদিসে এসেছে,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ ذَبَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الذَّبْحِ كَبْشَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مُوجَأَيْنِ

অর্থ: হযরত জাবের ইবনে ‘আব্দুল্লাহ রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন দু’টি ধূসর বর্ণের শিংবিশিষ্ট ও খাসী করা দুম্বা যবাহ করেন।
সূত্র: সুনান আবু দাউদ হাদীস: ২৭৯৫

ছাগল দ্বারা কুরবানী

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,

كَانَ الرَّجُلُ يُضَحِّي بِالشَّاةِ عَنْهُ وَعَنْ أَهْلِ بَيْتِهِ فَيَأْكُلُونَ وَيُطْعِمُونَ

অর্থ: কোন লোক তার ও তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষে একটি ছাগল দ্বারা কুরবানী আদায় করত এবং তা নিজেরাও খেত, অন্যান্য লোকদেরকেও খাওয়াত।
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ১৫০৫

মহিষ দ্বারা কুরবানী

উপরোল্লিখিত প্রাণীসহ মহিষও কুরবানী দেওয়া যায়।

হানাফী মাযহাবের বক্তব্য:

الْجَامُوسُ نَوْعٌ من الْبَقَرِ

অর্থাৎ মহিষ গরুর একটি প্রকার।
সূত্র: ফাতাওয়া আলমগিরি খ: ৫ পৃ: ৩৬৭

মহিষ কুরবানী জায়েয হওয়ার দলীল:

১. আরবী অভিধান।

আরবি অভিধানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশিদ্ধ অভিধানের “আল মুনজিদ” এ মহিষের পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে,

اَلْجَامُوْسُ ضَرْبٌ مِّنْ کِبَا رِ الْبَقَرِ

অর্থাৎ মহিষ হলো, বড় গরুর একটি প্রকার।
সূত্র: আল মুনজিদ পৃ: ১০১

তাবেঈগণের বক্তব্য:

১. হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন,

الجاموس بمنزلة البقر

অর্থা ৎমহিষ গরুর স্থলবর্তী।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা খ: ৭ পৃ: ৬৫ হাদিস: ১০৮৪৮

২. হযরত সুফইয়ান ছাওরী রহ. বলেন,

تحسب الجواميس مع البقر

অর্থাৎ মহিষ গরুর সাথে বিবেচ্য।
সূত্র: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক খ: ৪ পৃ: ২৩ হাদিস: ৬৮৮১

ইমাম মালেক রহ. এর বক্তব্য:

ইমাম মালেক বিন আনাস রহ. বলেন,

إنما هي بقر كلها

অর্থ: মহিষ সর্ব দিক থেকে গরুই।
সূ্ত্র: মুয়াত্তা ইমাম মালেক পৃ: ২৯৪ আওজাযুল মাসালিক খ: ৬ পৃ: ২০

তিনি আরও এক জায়গায় বলেন,

الجواميس و البقر سواء

অর্থ: মহিষ এবং গরু একই।
সূত্র: কিতাবুল আমওয়াল (ইবনে উবাইদ) খ: ২ পৃ: ৩৮৫

উম্মতের ইজমা:

আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহিম ইবনে মুনযির আন নিসাপুরী রহ. বলেন,

وَاَجْمَعُوْا عَلیٰ اَنَّ حُکْمَ الْجَوَامِیْسِ حُکْمُ الْبَقَرِ

অর্থাৎ এ ব্যাপারে উলামায়ে উম্মতের ইজমা সংগঠিত হয়েছে যে, মহিষের হুকুমও গরুর হুকুমের মতোই।
সূত্র: কিতাবুল ইজমা পৃ: ৫৬

লা-মাযহাবীদের মত:

আহলে হাদিসের কিছু শায়খ বলে থাকেন, মহিষ দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।

যুক্তি:

যুক্তি হিসাবে তারা বলে থাকেন, নবীজি সা. এর যুগে আরবে মহিষ ছিল না।
সূত্র: ফিকহুল হাদিস খ: ২ পৃ: ৪৭৫

জবাব: ১

যদি ধরেও নিই যে, নবীজির সা. যুগে মহিষ ছিল না, কিন্তু উম্মতের সর্বসম্মত মত হলো, মহিষ গরুর সাথে পরিপূর্ণ সাদৃশ্য থাকায় গরুর হুকুম আরোপ করা হয়েছে। যেমন যাকাতের ক্ষেত্রে মহিষের বিষয়ে গরুর বিধান আরোপ করা হয়েছে।

জবাব: ২

যদি “নবীজির সা. যুগে না থাকায় কুরবানী দেওয়া যাবে না ” কথাটি যুক্তিসঙ্গত হয়, তাহলে এ যুক্তিতে তো মহিষের গোশত, দুধ, মাখন, চামড়া ইত্যাদী ব্যবহার নাজায়েয হওয়ার কথা। কারণ মহিষ নবীজির সা. যুগে ছিল না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে খোদ আহলে হাদিসর শায়খরাই তো জায়েয বলে থাকেন।

জবাব: ৩

লা-মাযহাবীদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শায়খ নাঈমুল হক মুলতানী তার কিতাব بھینس کی قربانی کا تحقیقی جائزہ (ভেস কি কুরবানী কা তাহকিকি জায়েযাহ) তে মহিষ কুরবানী করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে বিষদ লম্বা আলোচনা করেছেন, এবং যেসকল আহলে হাদিস শায়খরা মহিষ কুরবানী করা জায়েয নেই বলে ফাতাওয়া দিয়ে থাকেন, তাদের প্রত্যেকটি কথার দালিলিক জবাব দিয়েছেন।

উপরন্তু মুসনাদে ফিরদাউম (দাইলামী) খ: ২ পৃ: ২০২ হাদিস: ২৪৭২ এর সূত্র দিয়ে হাদিস বর্ণনা করেন,

عن علي بن ابي طالب الجاموس يجزئ عن سبعة في الاضحىة

অর্থাৎ হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কুরবানীতে মহিষ ৭ জনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।
সূত্র: ভেস কি কুরবানী কা তাহকিকি জায়েযাহ পৃ: ৫৯

উপরোল্লিখিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, কুরবানী করার জন্য গরু, মহিষ. উট, ছাগল, ভেড়া,দুম্বা দিয়ে কুরবানী করা জায়েয। এর বাহিরে কোনো প্রাণী দিয়ে কুরবানী করা জায়েয নয়।

ইমাম নববী রহ. বলেছেন,

وَلَمْ يُنْقَلْ عَنْهُ صلى الله عليه وسلم وَلا عَنْ أحد من أَصْحَابِهِ التَّضْحِيَةُ بِغَيْرِهَا

অর্থাৎ উপরোল্লিখিত প্রাণীগুলো ব্যতিত অন্য পশু দ্বারা কুরবানী করা নবীজি সা. এবং তাঁর কোনো সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি।
সূত্র: রওযাতুত তালিবীন খ: ২ পৃ: ৪৬২

Check Also

মহিলারা কুরবানীর পশু যবাহ করতে পারবে?

  মুসলিম মহিলারা কুরবানীর পশু যবাহ করতে পারবে। যদি তারা যবাহের নিয়ম ভালোভাবে জানে। তবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.