Home > কুরবানীর মাসআলা > কুরবানী না দিয়ে টাকা দান করা যাবে?

কুরবানী না দিয়ে টাকা দান করা যাবে?

জিলহজ্ব মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই তিন দিন যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক তথা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার যেকোনো একটির সমপরিমাণ সম্পত্তির মালিক হলে, তার জন্য গরু, মহিষ, উট এগুলোর একটা অংশ অথবা ছাগল, দুম্বা এসব পশুর একটি কোরবানি করা ওয়াজিব এবং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন।

তবে সম্প্রতিকালে এ বিষয়ে মানুষের মাঝে একটি ধারণা আছে যে, কুরবানি না দিয়ে সে টাকা অসহায়,বিবিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের মাঝে দান করে দিলে মানুষের আরো বেশি উপকার হবে। কিন্তু বিষয়টি মোটেই ইসলাম সম্মত নয়, বরং কুরবানীর দিন প্রাণী যবাহ না করে সে টাকা দান করলে কুরবানীর ওয়াজীব আদায় হবে না, বরং কুরবানীই করতে হবে। কারণ সামর্থবানের উপর পশু কুরবানী করা ওয়াজীব। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

فصل لربك وانحر

অর্থাৎ আপনি আপনার রবের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কোরবানী করুন।
সুরা কাউসার-২

হাদিস শরীফে এসেছে,

عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من كان له سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانًا

অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরবানি দিতে সক্ষম কিন্তু দেয়নি সে যেন আমাদের ঈদগাহেও না আসে।
সূত্রঃ জামে সগীর-৮৯০৪ ইবনে মাযা-২১২৩ মুসনাদে আহমাদ-৮২৭৩ আত-তামহীদ- খ:২৩ পৃ: ১৯০ আল-ইযতিযকার খ:৪ পৃ: ২২৮ (হাদিসটি সহিহ।

উপরন্তু কুরবানীর করলে যে নেকী পাবে, ততটুকু নেকী টাকা দান করলে পাবে না। কারণ হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏مَا عَمِلَ آدَمِيٌّ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ إِنَّهَا لَتَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَشْعَارِهَا وَأَظْلاَفِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللَّهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ مِنَ الأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا ‏

অর্থ’ হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরবানীর দিন মানুষ যে কাজ করে তার মধ্যে আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচাইতে পছন্দনীয় হচ্ছে রক্ত প্রবাহিত করা (কুরবানী করা)। কিয়ামতের দিন তা নিজের শিং, পশম ও ক্ষুরসহ হাযির হবে। তার (কুরবানীর পশুর) রক্ত যমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ্ তা’আলার নিকটে এক বিশেষ মর্যাদায় পৌছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দিত মনে কুরবানী কর।
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ১৪৯৩

যুক্তিভিত্তিক জবাব:

যদি কেউ বলে, আমি নামাজ না পড়ে বিপদগ্রস্তদের উদ্ধারকাজে সময় ব্যয় করবো। তাহলে সেটা কি করা যাবে? নিশ্চয় না।

এমনিভাকে যদি কেউ নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ান, তাহলে তার কি ক্ষুধা মিটবে? নিশ্চয় মিটবে না। তাহলে দ্বীনের ব্যাপারে এত সুযোগ সন্ধানী কেন আমরা?

মনে রাখা উচিৎ, কুরবানী করা হয় মূলত গোশত নিজে খাওয়ার জন্য নয়, বরং গরীব মিসকিনকেও খাওয়ানো। সুতরাং এটাও অসহায় মানবতার দরদেই করা হয়।

আসলে এখানে শরিয়তের চাহিদা হলো, ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি করা একটি সুনির্দিষ্ট ইবাদত ও বিধান। এটি পালন করতে হয় নির্দিষ্ট সময় ১০ থেকে ১২ জিলহজ্বের মধ্যে। এটাই ওয়াজিব। ইসলামকে ইসলামের বিধান অনুযায়ী মানতে হবে। অন্য তরীকা অবলম্বন করলে কুরবানীর ওয়াজীব আদায় হবে না।

যারা মানবদরদী সেজে কুরবানীর টাকা বিপদগ্রস্ত মানুষকে দিতে বললেন, তাদের কাছে আমার দাবি, দশ দিনের ধুমপানের টাকা দিতে বলতেন, দশটা গায়ে হলুদের টাকা দিতে বলতেন, দশটা ডিজে পার্টির টাকা তাদেরকে দিতে বলতেন, একটা সিনেমার তৈরির টাকাটা দান করতে বলতেন। সেটা না বলে দ্বীনের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কেন হস্তক্ষেপ করলেন আমার বুঝে আসছে না।

Check Also

মহিলারা কুরবানীর পশু যবাহ করতে পারবে?

  মুসলিম মহিলারা কুরবানীর পশু যবাহ করতে পারবে। যদি তারা যবাহের নিয়ম ভালোভাবে জানে। তবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.