Home > Uncategorized > হেযবুত তওহীদের মতবাদ ও ইসলাম

হেযবুত তওহীদের মতবাদ ও ইসলাম

হেফাযতে ইসলাম বাংলাদেশ’র সংগ্রামী মহাসচিব, ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদরাসার প্রধান শিক্ষাসচিব ও আপোষহীন রাহবার আল্লামা হাফেজ

জুনাঈদ বাবুনগরী দা:বা: এর

অভিমত।

মুসলমানদের ঈমান-আকীদা ও তাহযিব-তামাদ্দুন ধ্বংস করার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন ধরণের ফিতনার আবির্ভাব হয়েছে। একেক ফিতনার একেক রকম রংঢং ও হরেক রকম ধরণ। এরই ধারাবাহিকতায় হেযবুত “তওহীদ নামক” একটি কুফরী সংগঠনের আবিস্কার হয়। যাদের আকীদা অত্যান্ত ভয়ঙ্কর,ভ্রান্ত ও কুফরী। দীর্ঘদিন যাবৎ এই কুফরী সংগঠন হেযবুত তওহীদের মুখোশউম্মোচনে আমার পরামর্শক্রমে বিভিন্ন ধরণের মেহনত করে যাচ্ছেন আমার অত্যান্ত স্নেহের পাত্র মুফতী রিজওয়ান রফিকী। আমি তার কাজের ধারাবাহিকতা দেখে একনজরে হেযবুত তওহীদের ভ্রান্তি ও ইসলামের আসল মতবাদ সংক্রান্ত অতি সংক্ষেপে একটি বই লিখতে বলেছিলাম যেন, অতি স্বল্প সময়ে পাঠক তাদের বিষয়ে পূর্ণ একটি ধারণা পেয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ। সে কাজটি তিনি অতি যত্ন ও গুরুত্বসহকারে খুবই চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন। আমি বইটি মোটামুটি পড়ে দেখেছি বইটি সর্বমহলের,সর্বসাধারণের জন্য খুবই ফায়দাজনক হবে বলে আশা করছি।
আল্লাহ তার এ কাজটিকে কবুল করেন।

 

লেখকের কথাঃ

হক বাতিলের দন্ধ চিরন্তন।হযরত আদম আঃ এর যুগ থেকে অদ্যাবধি চলমান।মহান রবের দ্বীন ধংশ করার জন্য বেঈমানরা সব সময় বদ্ধপরিকর ছিল আছে এবং থাকবে।
তারই ধারাবাহিকতায় অত্যান্ত কৌশলে মুসলিম মিল্লাতকে গোপনে ঈমানহারা বানাতে অনেক ধরণের কুফরী শক্তি কাজ করছে।তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “হেযবুত তওহীদ”।যাদের প্রায় প্রতিটি ভ্রান্ত আকীদা নিমিষেই মুসলিমদের মুরতাদ বানাতে বারুতের মত কাজ করে।
যদিও মুখে মুখে তারা তাওহীদের কথা বলে থাকে।
কিন্তু মদের বোতলে হালাল লেখা থাকলে যেমন হালাল হয় না, তেমনি হেযবুত তওহীদ নামে তওহীদের দল হলেও তারা মূলত মুসলিম বা মুমিন নয়।
দীর্ঘদিন যাবত তাদের ঈমান বিধ্বংসী কার্যক্রম দেখে তাদের সম্পর্কে জাতীকে সজাগ করতে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করতে মনোনিবেশ করেছিলাম। কিন্তু বেশ কিছু কাজ করার পর আমার শায়খ আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী দাঃবাঃ এর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় লেখার মাধ্যমেও কিছু খেদমত করতে নিজেকে মগ্ন করি।
আর সেজন্যই পুস্তিকাটি লেখতে আরম্ভ করলাম।
বইটিতে তাদের আকীদা গুলোর রেফারেন্স তাদের মূল বই থেকে দিয়ে সাজিয়েছি এবং পাশাপাশি অতি সংক্ষেপে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দলীল উত্থাপন করেছি।
তবে বইটি দীর্ঘ করিনি এজন্য কারন অল্প সময়ে যেন সারসংক্ষেপ পাঠকের সামনে উপস্থিত করতে পারি সেজন্য সামান্য দালায়েলের মাধ্যমে তাদের মতবাদ পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে খন্ডন করার চেষ্টা করেছি। এ সম্পর্কে খুব দ্রুত বিস্তারিতভাবে বই আকারে আসছে। ইনশাআল্লাহ।
তবে কুরআন শরীফের আয়াত ও হাদিসের নাম্বার মূল গ্রন্থের আরবী নাম্বার দিয়েছি।কারো প্রয়োজন হলে আরবী রেফারেন্স তালাশ করতে হবে।সে ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামের দারস্থ হতে হবে।

তবে মানুষ মাত্র ভুল হওয়া স্বাভাবিক।যদি পাঠকের নজরে কোন ভুল দৃষ্টিগোচর হয় তাহলে সংশোধনের নিয়তে আমাদের অবগত করলে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
পাশাপাশি পাঠকের কোনন পরামর্শ থাকলে আমাদের অবহিত করলে পরবর্তি সংস্করণে সংযোজন বা বিয়োজন করার চেষ্টা করবো।ইনশাআল্লাহ।।

হেযবুত তওহীদ প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও কর্মকান্ডঃ

প্রিয় পাঠক! রাসুলুল্লাহ স: দুনিয়ায় থাকাকালীন সময়ে মুনাফিকরা বিভিন্নভাবে ইসলামকে ধংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। পরবর্তিতে নবিজি স: দুনিয়া থেকে চলে যাবার পর ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামকে তাহরীফ তথা অপব্যখ্যা,বিকৃতি করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে যাকাতকে অস্বীকার করে বসলো। এই ধারাবাহিকতায় মুসলমানদের ঈমান-আকীদা ও তাহযিব-তামাদ্দুন ধ্বংস করার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন ধরণের ফিতনার আবির্ভাব হয়েছে। একেক ফিতনার একেক রকম রংঢং ও হরেক রকম ধরণ।

এরই ধারাবাহিকতায় হেযবুত “তওহীদ নামক” একটি কুফরী সংগঠনের আবিস্কার হয়। যাদের আকীদা অত্যান্ত ভয়ঙ্কর,ভ্রান্ত ও কুফরী। এই নব্য মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন টাঙ্গাইল জেলার করটিয়ার পন্নী পরিবারের সন্তান জনাব মোহাম্মাদ বায়জীদ খান পন্নী। জন্মঃ ১১ মার্চ ১৯২৫ ঈঃ,। তার ডাক নাম ছিল “সেলিম খান পন্নী”। যিনি ৭১ সালে টাঙ্গাঈলে চার ভাগের এক ভাগ রাজাকার বানিয়ে বড় মাপের রাজাকার হিসাবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের কাঠগড়ায় লজ্জাজনক বিচারের সম্মুখীন হন।

পন্নী পরিবারটি টাঙ্গাইলের ঐতিহাসিক জমিদার পরিবার। বায়াজীদ খান পন্নী একজন সাবেক সেক্যুলার রাজনীতিবিদ, একজন রায়ফেল হাতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বন্য পশু শিকারী, তার রচিত বয়ের অন্যতম ‘বাঘ-বন-বন্দুক’ নামক বই, তার সবচে বড় পরিজয় তিনি একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। তিনি রাজনিতি এবং ব্যবসা বাণিজ্যে চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে জিবনের শেষ লগ্নে এসে ইসলামের মৌলিক আকীদা বিবর্জিত হয়ে “হেজবুত তওহীদ” নামে একটি দল গঠন করেন এবং ‘মোজেজার’ মাধ্যমে আল্লাহ তাকে বিশ্ব মুসলিমের ‘ইমাম’তি’ দিয়েছেন বলে দাবী করেন।

তার বক্তব্য হল, ইসলাম ধর্ম নাকি সমূলে বিকৃত হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ধর্ম বিগত ১৩ শো বছর ধরে বিকৃত। তিনি দাবি করেন, বিশ্বের “ইসলামবিহীন” ১৬০ কোটি ‘নামের এই মুসলিম জাতি কাফের,মুশরিক এবং জাহান্নামী। তবে তার ইমামতি স্বীকৃতির মাধ্যমে আবার হেদায়াতে ফিরে আসতে পারেন। তার দরজা দিয়েই এখন মুহাম্মাদের সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের ধর্মে ঢুকতে হবে। কেননা তিনি আল্লাহ মনোনীত ‘এমাম’।

এমনকি হিন্দুদের সনাতন ধর্মকে কুরআনে বর্ণিত দ্বীনুল কাইয়্যেমাহ, গিতা,বেত,ত্রিপিটকসহ সকল ধর্মগ্রন্থকে আল্লাহর কিতাব বলে দাবি করেন। উপরন্তু শ্রীকৃষ্ণ,রামচন্দ্র,যুধিষ্ঠির,মনু,বুদ্ধদেবকে আল্লাহর নবি বলে ঘোষণা দেন। পাশাপাশি ইসলাম না মেনে যেকোনো ধর্ম পালন করেও ওলী হওয়া বা জান্নাতে যাওয়া যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে হেযবুত তওহীদ। উপরন্তু তারা নাস্তিকদের সমর্থিত মুক্তমনাদের ধর্ম “মানবতা” কে আসল ধর্ম বলে দাবি করে মানবতাবাদী নাস্তিকদের মুত্তাকি এবং ধার্মিক এবং জান্নাতী বলে ঘোষণা করেন।

তাওহীদে থাকলে কবিরা গুনাহ করলেও জাহান্নামে যাওয়া লাগবে না। যুদ্ধ না করলে বা তরবারীর সাথে সম্পৃক্ত না থাকলে মুসলিম হওয়া বা জান্নাতে যাওয়া যাবে না বলে ইসলামের অপব্যখ্যা করেন এবং মুজাহিদদের মর্যাদা নবীদের চেয়েও বেশি বলে নবিদের মর্যাদা খাটো করতে দ্বীধা করেনি তারা। সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করে বেঈমান পর্যন্ত বলে বসেছে তারা। নামাযের মত একটি গুরুত্ববহ আমলকে সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের মত করে হাস্যকর পরিবেশ তৈরি করেছেন মুসলিম জনসাধারণের মাঝেও। শুধু তাই নয়। তার মতবাদ এত জঘণ্য যা অনেক ক্ষেত্রে কাদিয়ানীদেরকেও হার মানিয়েছে।

অবশেষে ১২ জানুয়ারী ২০১২ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। ফলে তারই দায়ীত্ব তার মেয়ে জামাতা হুসাইন সেলিম সংগঠণটির হাল ধরেন।

চলুন আমরা অতি সংক্ষেপাকারে তাদের কিছু কুফরী/ভ্রান্ত মতবাদ পাঠক সমীপে তুলে ধরি।

 

কালেমার অর্থ ও ইসলাম কি বিকৃত হয়ে হওয়া

হেযবুত তওহীদের দাবী।

আসল ইসলাম হারিয়ে গেছে ১৩০০ বছর আগে। যেটা ইসলামের নামে চলছে এটা ভুল,বিকৃত এবং বিপরীতমুখী ইসলাম।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:৯/৬১/৬৭ আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা পৃ:৯/৫৪ আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই পৃ:৫ সওমের উদ্দেশ্য পৃ:১৩।

ইসলাম কি বলে?

পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي أَوْ قَالَ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ضَلَالَةٍ

অর্থ: হযরত অাব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন অামার সকল উম্মতকে অাল্লাহ তায়ালা কখনও ভ্রান্ত (বিকৃত) বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না।
সূত্রঃ তিরমিযি হাদিস-২১৬৭ অাবু দাউদ হাদিস-৪২৫৩ অাল ইলালুল বাবির (বুখারী) হাদিস-৩২৪ মিযানুল ই’তিদাল খঃ১ পৃঃ২৯৫ তোহফাতুল অাহওয়াযী খঃ৬ পৃঃ১৬

প্রিয় পাঠক! আমরা জানি নবিজি স: এর হাদিসের ও আমলে ভিন্নতার কারণে উম্মতের আমলেও ভিন্নতা এসেছ এবং এক মাযহাব এক হাদিসের উপর,অপর মাযহাব অন্য হাদিসের উপর আমল করেছেন। ফলে বেশ কিছু বিষয়ে উম্মতের মধ্যে বাহ্যিকদৃষ্টিতে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও এ ব্যাপারে কিন্তু সবাই একমত যে, ইসলাম আজও আসল এবং অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে, বিকৃত হয়নি।

অতএব নবিজির স: এ কথা যদি সত্য হয় অর্থাৎ “উম্মতকে আল্লাহ তায়ালা কখনও ভ্রান্ত (বিকৃত) বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না।” তাহলে এ কথা বলতেই হয় যে, যেহেতু সমস্ত উম্মত ইসলাম ধর্ম বিকৃত না হওয়ার কথার উপর একমত, অতএব ইসলাম ধর্ম অবিকৃত এবং তার আসল রুপেই আমাদের মাঝে আজও রয়েছে।

পাশাপাশি আরেকটি প্রশিদ্ধ বাক্য মনে পড়ে গেল, সত্য কখনও লুকিয়ে রাখা যায় না। চোর চুরি করলেও কিন্তু ভুলক্রমে নিশানা রেখে যায়, তেমনিই হয়েছে হেযবুত তওহীদের বেলায়ও । তারা তাদের চল্লিশোর্ধ্ব কিতাবের সবখানে ইসলাম বিকৃতি হয়ে গেছে দাবী করলেও ভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেই ফেললেন,
“আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ:) এর উপর অবতীর্ণ এই সত্যদীন আল্লাহর সৃষ্টিজগতের মতই নিঁখুত ও অবিকৃত।
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই পৃষ্ঠা ১৯-২০

“মুক্তির পথ তো রসুল দেখিয়েই গেছেন আর শেষ বিধানও আল্লাহর দয়ায় অবিকৃত ছিল এবং আজও আছে।”
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে পৃষ্ঠা-৯

ইসলাম ধর্ম অন্যান্য ধর্মের মত একটি ধর্ম।

হেযবুত তওহীদ তাদের বইগুলোতে জোর দাবী করেছে যে, “প্রচলিত ইসলাম খৃষ্টান বানানো ও অগ্নীপূজকদের রঙ্গে রঙ্গিন। যা বর্তমানে খ্রিষ্টান,বৌদ্ধ,হিন্দু,ইহুদি,জৈন ইত্যাদি ধর্মের মত আরেকটি নতুন ধর্ম।”
সূত্র: এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-২২ ইসলামের প্রকৃত সালাহ-৭/২০

ইসলাম কি বলে?

ইসলামকে অন্য ধর্মের সাথে তুলনা করা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষেধ। পবিত্র কুরআনে আসছে,

وَلَا تَلۡبِسُوا۟ ٱلۡحَقَّ بِٱلۡبطِلِ

অর্থাৎ তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করে দিও না। সুরা বাকারা-৪২

উল্লেখিত আয়াতের ব্যাপারে হযরত কাতাদাহ রঃ বলেন-

وَقَالَ قَتَادَةُ وَلا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِل وَلَا تَلْبِسُوا الْيَهُودِيَّةَ وَالنَّصْرَانِيَّةَ بِالْإِسْلَامِ إِنَّ دِينَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ وَالْيَهُودِيَّةَ وَالنَّصْرَانِيَّةَ بِدْعَةٌ لَيْسَتْ مِنَ اللَّهِ

অর্থাৎ ইয়াহুদী,খ্রীষ্টানদের সাথে ইসলামকে মিশ্রিত করো না। নিশ্চয় আল্লাহর ধর্ম হলো ইসলাম। (কারন বর্তমানের) ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান নব্য আবিস্কৃত। আল্লাহর দ্বীন নয়।
সূত্রঃ তাফসীরে ইবসে কাসীর খঃ১ পৃঃ৩৭৯
মাআলিমুত তানযিল খঃ১ পৃঃ৮৭
জাযিরাতুল আরব খঃ১ পৃঃ৬৬

সুতরাং পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ইহুদী-খ্রীস্টান,হিন্দু,বৈদ্ধ,জৈন ও অগ্নীপুজকদের ধর্মের সাথে মিলানো এ আয়াতের প্রকাশ্য বিরোধী।

আল্লাহর প্রতি ঈমান ও ইসলামের দিকে ডাকা।

হেযবুত তওহীদের দাবী।

“ইসলামের এদিকে ডাকা বা আল্লাহর উপর ঈমান আনানো হেযবুত তওহীদ ও ইসলামের কাজ নয়।”
সূত্র: গঠনতন্ত্র পৃষ্ঠা-১৫ এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-৫০-৫১

ইসলাম কি বলে?

সকল নবিগণকে আ: আল্লাহ পাঠিয়েছেন মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকতে এবং নবীরাও সে দায়িত্ব পালন করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

إِذْ جَاءتْهُمُ الرُّسُلُ مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ

অর্থ: যখন তাদের কাছে রসূলগণ এসেছিলেন সম্মুখ দিক থেকে এবং পিছন দিক থেকে এ কথা বলতে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও পূজা করো না।
সুরা ফুসসিলাত আয়াত-১৪

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দাওয়াত দেয়া মহান রবের নির্দেশ। মহান রব বলেন,

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ
وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

অর্থ: বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার। (সুরা আ’রাফ আয়াত-১৫৮)

মহান আল্লাহ নিজেও ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করে ঘোষণা করেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ

অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
আল বাকারা আয়াত-২০৮

সুৎরাং যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান ও ইসলামের দিকে আহ্বান করা ইসলাম ও তাদের কাজ নয় বলে ঘোষণা দেয় তারা আল্লাহর এ সংক্রান্ত আয়াতের প্রকাশ্য বিরোধী।

ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা জাহান্নামী।

হেযবুত তওহীদের দাবি

প্রচলিত ইসলাম তার অনুসারীদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে পৃ:৫১

ইসলামের দাবি

মহান আল্লাহ খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন,

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

অর্থ: কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না, এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
সুরা আলে ইমরান আয়াত-৮৫

ইসলাম শান্তি দিতে পারবে না।

হেযবুত তওহীদের দাবি

প্রচলিত ইসলাম,মরা,পচা, দূর্গন্ধময় এবং অশান্তি সৃষ্টিকারী একটি নারকীয় সিস্টেম।
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ-৬০/৬১ আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই-২০ ধর্মবিশ্বাস পৃষ্ঠা-৫ জঙ্গিবাদ সংকট পৃষ্ঠা-৬৬ চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াই পৃ:৬

কুরআনের দাবি

আমি আগেই প্রমাণ পেশ করেছি যে, প্রচলিত ইসলাম অবিকৃত। আর এ দ্বীন কেউ মানলে শান্তি আসবে এটা মহান আল্লাহ ঘোষণা,

یٰۤاَهْلَ الْكِتٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلُنَا یُبَیِّنُ لَكُمْ كَثِیْرًا مِّمَّا كُنْتُمْ تُخْفُوْنَ مِنَ الْكِتٰبِ وَ یَعْفُوْا عَنْ كَثِیْرٍ قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَّ كِتٰبٌ مُّبِیْنٌ یَّهْدِیْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلٰمِ وَ یُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوْرِ بِاِذْنِهٖ وَ یَهْدِیْهِمْ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ

অর্থ: হে আহলে কিতবাগণ! তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায় এ দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং অন্ধকারসমূহ থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন নিজ ইচ্ছায়। আর তাদের পথ দেখান সরল পথ।
সূরা মাইদা আয়াত-১৫-১৬

প্রিয় পাঠক! ইসলাম সম্পর্কে হেযবুত তওহীদের সকল দাবি অযৌক্তিক,ভিত্তিহীন,অমূলক ও কুরআন হাদিস বহির্ভূত। এসকল ভ্রান্ত চিন্তাধারা থেকে আল্লাহ জাতিকে হিফাযত করেন।আমিন!

 

সব ধর্ম সত্য, এর যেকোনো ধর্ম মানা যাবে।

হেযবুত তওহীদের দাবি

পৃথিবীর সকল ধর্মই সত্য ধর্ম এবং আল্লাহর প্রেরিত ধর্ম। কোন ধর্মের মূলভিত্তি পাল্টায়নি। এর যেকোনো একটি ধর্ম মানা যায়।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-৮৩/১০৫ বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ পৃষ্ঠা-৯ দৈনিক বজ্রশক্তি’ ২/২/২০১৬ ঈ মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-৫১

ইসলাম কি বলে?

নবিজি স: নবুওয়াত ও রেসালত নিয়ে আসার পর পূর্বের কোনো ধর্ম আর মানার সুযোগ ছিল না, আজও নেই। যারা ভিন্ন ধর্ম মানবে তারা জাহান্নামী। মহান আল্লাহ বলেন,

تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ

অর্থ: এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে তিনি তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন।যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হবে। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।আর এটাই মহাসাফল্য।পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে তিনি তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন।যাতে সে চিরস্থায়ী থাকবে এবং তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।-সূরা নিসা (৪) : ১৩-১৪

উপরন্তু অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব্ব করাও মহান আল্লাহর নিষেধ।মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاء بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

অর্থ: হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না
সুরা মায়িদা আয়াত-৫১

সকল ধর্ম সত্য হলে সত্যের অনুসারিদের সাথে বন্ধুত্ব করতে আল্লাহ তা’য়ালা নিষেধ করলেন কেন?

বিষয়টি হাদিস শরীফে নবিজি স: স্পষ্ট করে বলেছেন,

أن عمر بن الخطاب أتى النبي صلى الله عليه و سلم بكتاب أصابه من بعض أهل الكتاب فقال يا رسول الله إني أصبت كتابا حسنا من بعض أهل الكتاب قال فغضب وقال امتهوكون فيها يا بن الخطاب فوالذي نفسي بيده لقد جئتكم بها بيضاء نقية لا تسألوهم عن شيء فيخبروكم بحق فتكذبوا به أو بباطل فتصدقوا به والذي نفسي بيده لو كان موسى حيا ما وسعه إلا أن يتبعني

অর্থ: হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রা. নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে কোন আহলে কিতাব (ইহুদীদের) থেকে একটি কিতাব নিয়ে আসলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি একজন আহলে কিতাব থেকে একটি সুন্দর কিতাব পেয়েছি। বর্ণনাকারী বলেন, নবীজী (হযরত উমর রা. এই কিতাব দেখে) রাগান্বিত হয়ে গেলেন এবং বললেন, হে উমর ইবনে খাত্তাব!  তোমরা কি তাতে হয়রান হয়ে পড়েছ? যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ তার কসম! নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট স্বচ্ছ উজ্জ্বল দীন নিয়ে এসেছি। তাদেরকে কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করোনা। তাহলে তারা সত্য সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করবে আর তোমরা তা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করবে। অথবা মিথ্যা সম্পর্কে অবহিত করবে আর তোমরা তা সত্য বলে মেনে নিবে। যেই সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ সেই যাতের কসম! যদি হযরত মূসা {আ.} জীবিত থাকতেন তাহলে তাঁর পক্ষেও আমার দীনের অনুসরণ ব্যতীত কোন সুযোগ থাকত না।
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ হাদিস-১৫১৫৬ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ:১ পৃ:১৭৯ আল বিদায়া খ:২ পৃ:১২২ ফাতহুল বারী খ:১৩ পৃ্:৩৪৫ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ২৬৪২১ মিশকাত হাদিস-১৭৭ হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা খ:১ পৃ:২৮৮

সকল ধর্ম যে অকেজো বা নষ্ট হয়ে গেছে সেটা শুধু আমাদের কথা নয়, বরং খোদ হেযবুত তওহীদই ঘটনাক্রমে লিখে ফেলেছে,
“সকল প্রাচীন আঞ্চলিক দীনগুলিকে অনুপযুক্ত ঘোষণা দিয়ে মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে শেষ দীন এসলামের মহাগ্রন্থ আল-কোর’আন নাযেল করেছেন।”
সূত্র: এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব পৃষ্ঠা-৫৬

আশা করি এরপরও কোন হেযবুত তওহীদের সদস্যদের এ বিষয়ে সংশয় থাকার কথা নয় যে, “ইসলাম পূর্ব সকল ধর্ম অনুপযুক্ত, সেগুলো মানার কোন সুযোগ আল্লাহর তরফ থেকে নেই।”

মুসলিম নিয়ে মন্তব্য

হেযবুত তওহীদের দাবি

বর্তমানে কোন মুসলমানের আকীদা ঠিক নেই।ফলে সমস্ত মুসলমান কাফের এবং মুশরিক হয়ে গেছে। মুসলমিরা কুরাইশী কাফেরদের মত। মুসলিমরা ইহুদীদের চেয়েও মালাউন। মুসলিমরা আবর্জনা এবং গলিত লাশ, শুধু দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মুসলিমদের আমল অন্যধর্মাবলম্বীদের মত নিস্ফল ও অনর্থক। সকল মুসলিম জাহান্নামী। অতএব এই মুসলিম সমাজ থেকে আমাদের আলাদা হাতে হবে।
সূত্র: এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-৪৮/৫৯ এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:৭৭/৮৩/১০৮ এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব পৃ:১১ ইসলামের প্রকৃত সালাহ-৫৯/৬০ শ্রেনীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ:১৪৮ ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে পৃ:৫৪ তাওহীদ জান্নাতের চাবি পৃ:২৪ বিকৃত সুফিবাদ পৃ:৩৬ মহাসত্যের আহ্বান (ছোট) পৃ:৬/১০

ইসলাম কি বলে?

আল্লাহর প্রেরিত দ্বীন ইসলাম এখনও পৃথিবীতে অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। যা আমি ইতিপূর্বে প্রমাণ করেছি। সুৎরাং এ ধর্মের অনুসারীদেকে মুসলিমই বলতে হবে। বেঈমান,কাফের বা মমালউন বলার অধিকার পৃথিবীর কারো নেই। যদি কেউ তার মুসলিম ভাইকে “কাফের” বলে তখন তা তাদের উভয়ের মধ্যে একজনের উপর বর্তায় । সে যা বলেছে তা যদি সঠিক হয় তাহলে তো ভাল নচেত যে বলেছে তার উপর সেই কথা ফিরে যায় অর্থাৎ কাফের হয়ে যায়। হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَبي ذَرٍّرَضِيَ اللهُ عَنهَ أَنَّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ مَنْ دَعَا رَجُلاً بِالْكُفْرِ أَو قَالَ عَدُوَّ اللهِ وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلاَّ حَارَ عَلَيْهِ

অর্থ: হযরত আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যে কাউকে ‘ওরে কাফের’ বলে ডাকে অথবা ‘ওরে আল্লাহর দুশমন’ বলে অথচ বাস্তবিক ক্ষেত্রে যদি সে তা না হয়, তাহলে তার [বক্তার] উপর তা বর্তায়।’
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৬০৪৫ সহিহ মুসলিম হাদিস: ৬১ আহমাদ: ৫২৫৯ তিরমিযি: ২৬৩৭ আবু দাউদ: ৪৬৮৭ মুয়াত্তা মালিক: ৬২৪৪

عن ابي هريرة ان رسول الله صلي الله عليه وسلم قال اذا قال الرجل هلك الناس فهو اهلكهم

অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্নিত রাসুলুল্লাহ সঃ বলেন, যে বলবে সমস্ত মানুষ ধংশ (অর্থাৎ বেঈমান) হয়ে গেছে সে লোকটিই সবচে ধংশপ্রাপ্ত। (অথবা সে তার অনুসারিদের ধংশ করে ছাড়বে।)
সূত্রঃ সহীহ মুসলিম- হাদিস নং-২৬২৩ সুনানে অাবু দাউদ-৪৯৮৩

সুতরাং পৃথিবীর সকল মুসলমানকে কাফের, মুশরিক,মালউন বলা নবিজির স: কথানুযায়ী তাদের নিজেদের ভ্রষ্টতার প্রমাণ।

 

সাহাবায়ে কেরামের রা: সমালোচনা

হেযবুত তওহীদের দাবি।

সাহাবীদের আকীদায় বিকৃতি ঢুকে গিয়েছিল। তাঁরা দু:খজনক বিভাজন সৃষ্টি করেছিলেন যা উচিৎ হয়নি। তারা ভুলে গিয়েছিলেন তাদেরকে কি উদ্দেশ্যে নবিজি স: তৈরি করেছিলেন। নবিজির বিদায়ের পরপরই তারা জাহেলি কালচার চালু করেছিলেন। ফলে তারা হলেন পথভ্রষ্ট, মোমেন থাকতে পারলেন না। পৃথিবীর সকল ফিৎনার জন্য সাহাবারাই দায়ী। ওহুদ যুদ্ধে সাহাবারা নবিজির অবাধ্যতা করেছিলেন। মেরাজের ঘটনায় শুধু আবু বকর রা: ছাড়া প্রায় সকল সাহাবীর ঈমান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সাহাবাদের চরিত্র ছিল যোদ্ধার চরিত্র ও বিস্ফোরনমুখী। একবার নবিজির ধরে সাহাবারা পাথর মেরেছিলেন। মুয়াবিয়া রা: ছিলেন একজন খুনি।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃষ্ঠা-১০০ এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব পৃ:৩৮/৬৬
ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা পৃষ্ঠা-৭-৮ ধর্মব্যবসার ফাঁদে পৃ:১২০ আকিদা পৃ:১৯ বিকৃত সুফিবাদ পৃ:২০/৩৩ আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা-৩৫/৩৬ সওমের উদ্দেশ্য পৃ:১৬ শোষণের হাতিয়ার পৃ:৮৮ শিক্ষাব্যবস্থা পৃ:৫-৬

ইসলাম কি বলে?

সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর মহান আল্লাহ খুশি হয়ে তাদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

অর্থঃ আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা
সুরা তওবা-১০০

সুৎরাং সাহাবায়ে কেরামের কোন ধরণের সমালোচনা করা নবিজি স: এর পক্ষ থেকে নিষেধ। হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ ثَوْبَانَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا ذُكِرَ أَصْحَابِي فَأَمْسِكُوا

অর্থঃ হযরত সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। যখন আমার সাহাবীদের আলোচনা আসে, তখন (তাদের ব্যাপারে সমালোচনা করা থেকে) নিজেকে বিরত রাখো।
সূত্রঃ আল মু’জামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস: ১৪২৭সূত্রঃ জামে সগীর হাদিস-৬১৩ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ: ৭ পৃ:২০৫

সুতরাং যারা আল্লাহ এবং রাসুলের অনুসারী তারা কখনও সাহাবায়ে কেরামের কোন সমালোচনা করতে পারে না।

 

কবিরা গুনাহ করলেও জান্নাত।

হেযবুত তওহীদের দাবি

তাওহীদে বিশ্বাস থাকলে হত্যা,চুরি,ব্যভিচারসহ পৃথিবীভর্তি কবীরা গুনাহ করলেও আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দেবেন না।
সূত্র: প্রিয় দেশবাসী পৃষ্ঠা-৬৫ আকীদা-৭ তওহীদ জান্নাতের চাবি-১৩/১৫

ইসলাম কি বলে?

তাওহীদে থাকলেই যে সব গুনাহ মাফ হবে এটা কোন মুসলিমের আকীদা হেতে পারে না। বরং ছোট বড় সকল গুনাহেে হিসাব কিয়ামতের দিন মানুষকে দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا

অর্থ: আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না। (সুরা কাহাফ আয়াত-৪৯)

হাদিস শরীফে এসেছে,

عن عائشة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لها يا عائشةُ إِيّاكِ و مُحقَّراتِ الذُّنوبِ فإنَّ لها مِنَ اللهِ طالِبًا

অর্থ: হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আয়েশা! ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। কারণ সেগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।
সূত্র: জামে সগীর হাদিস-২৯০১ ইবনে মাযাহ-৪২৪৩ মুসনাদে আহমাদ-২৪৪১৫ (হাদিস: সহিহ)

প্রিয় পাঠক! যেখানে ছোট গুনাহের হিসাবও কিয়ামতের দিন দিতে হবে, সেখানে দুনিয়া ভর্তি গুনাহ এমনকি হত্যা, চুরি, ব্যাভিচারের মত গুনাহ থাকলেও সে জান্নাতে যাবে বলে গ্যারান্টি দেয়া কোন মুসলিমের কাজ নয়। বরং এটা ইবলিসের নেক সুরতে ধোকা।

 

মানবতাই ধর্ম

হেযবুত তওহীদের দাবি

মানুষের প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে “মানবতা”। মানবতা থাকলেই সে ধার্মিক, আর মানবতা না থাকলে সে বিধর্মী। মানবতার জন্যই আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। নামাজ,রোজা,গজাব,যাকাত ইত্যাদী কোন ইবাদত নয়, বরং মানবতার পক্ষে কাজ করাই প্রকৃত ইবাদত। ”লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ হলো মানবসেবা। মানবতাবাদীরাই প্রকৃত মুমিন। মানবসেবা করলেই জান্নাত সুনিশ্চিত এক্ষেত্রে মুসলমান হওয়া বা আল্লাহকে বিশ্বাস করা শর্ত নয়। যারা মানবতার পক্ষে কাজ করে শুধুমাত্র তাদের ইবাদত কবুল হয়। মানবসেবা না করলে তার কোন ইবাদতই কবুল হয় না, বরং তাদের ঠিকানা জাহান্নাম।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-৪৫ গণমাধ্যমের করণীয় পৃষ্ঠা-৪৩/৪৪ ৯০ জঙ্গিবাদ সংকট পৃষ্ঠা-১০/৭৬/৫৫/৫৬ ধর্মবিস্বাস পৃ:১২ সবার ঊর্ধ্বে মানবতা পৃ:৯ ধর্মবিশ্বাস পৃ:৩ মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-১০৯ মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-১০৯ গঠনতন্ত্র পৃষ্ঠা-১৫ এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-৫০-৫১

ইসলামের দাবি

আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাদের জন্য ইসলামকেই একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করেছেন মানবতা নয়। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْإِسْلاَمُ

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে একমাত্র মনোনীত দ্বীন হল ইসলাম।
সুরা আলে ইমরান আয়াত-১৯

তবে যদি কেউ ইসলাম ধর্ম বাদ দিয়ে মানবধর্ম বা অন্য কোন ধর্মেরর অনুসারী হয়, তাহলে মহান আল্লাহ তাদের ব্যাপারে খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন,

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

অর্থ: কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না, এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
সুরা আলে ইমরান আয়াত-৮৫

তবে হ্যাঁ! মানবসেবা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। কিন্তু এ ইবাদতটিকে ধর্ম বলে চালিয়ে দেয়া ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার শামিল।

 

যেকোনো ধর্ম পালন করেই জান্নাত যাওয়া যাবে?

হেযবুত তওহীদের দাবি

পৃথিবীর সকল ধর্মই সত্য ধর্ম এবং আল্লাহর প্রেরিত ধর্ম। কোন ধর্মের মূলভিত্তি পাল্টায়নি। অতএব যেকোনো ধর্ম পালন করেই জান্নাতে যাওয়া যাবে।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-৮৩/১০৫ বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ পৃষ্ঠা-৯ দৈনিক বজ্রশক্তি’ ২/২/২০১৬ ঈ মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-৫১

ইসলাম কি বলে?

যদি কেউ ইসলাম ধর্ম বাদ দিয়ে অন্য কোন ধর্মের অনুসারী হয়, তাহলে মহান আল্লাহ তাদের ব্যাপারে খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন তারা আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত তথা জাহান্নামী হবে। মহান রব বলেন,

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

অর্থ: কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না, এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
সুরা আলে ইমরান আয়াত-৮৫

আরও স্পষ্টভাবে নবিজি স: জানিয়ে দিয়েছেন,

عن أبي هريرة والذي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بيَدِهِ لا يَسْمَعُ بي أحَدٌ مِن هذِه الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ ولا نَصْرانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ ولَمْ يُؤْمِنْ بالَّذِي أُرْسِلْتُ به إلّا كانَ مِن أصْحابِ النّارِ

অর্থ: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, সেই সত্তার কসম! এই উম্মতের যে কেউ—ইয়াহুদী হোক বা খ্রিস্টান আঁমার কথা শুনবে,অতঃপর যা দিয়ে আঁমি প্রেরিত হয়েছি,তার প্রতি ঈমান আনবে না, সেই জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সূত্র: সহিহ মুসলিম শরীফ- ১৫৩

সুতরাং যেকোনো ধর্ম পালন করে জান্নাতে যাওয়া যাবে এটা একটি ইসলাম বহির্ভূত কুফরী মতবাদ।

 

হেযবুত তওহীদ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি

হেযবুত তওহীদের দাবি

একমাত্র হেযবুত তওহীদই সত্য ও আসল ধর্ম। হেযবুত তওহীদ স্বয়ং আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং আল্লাহই চালাচ্ছেন। পপাশাপাশি আল্লাহ নিজে বলেছেন, হেযবতু তওহীদ দিয়েই সমগ্র দুনিয়ায় তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি পন্নীকে সব ধর্মের মানুষের জন্য এমাম হিসাবে মনোনীত করেছেন। সুতরাং পন্নী সাহেবের জন্য নবিদের চেয়ে বেশি দোয়া করা দরকার। মানুষের বাঁচার উপায় এবং সকল চাহিদা পুরণ করতে পারবে একমাত্র হেযবুত তওহীদ।
হেযবুত তওহীদে থাকলে নিশ্চিত জান্নাত এবং দুই শহীদের মর্যাদা। তাদের লাশ পচে না গলে না।তাদের নামের শেষে রাদিয়াল্লাহু আনহুম বলতে হবে।
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে পৃ:২২
মহাসত্যের আহ্বান পৃ:১১/১২/২৪ এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব পৃষ্ঠা-৩৩/৩৯ আদর্শিক লড়াই পৃ:১৩/১৫ আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই পৃষ্ঠা-১৮ মহাসত্যের আহ্বান (ছোট) পৃ:১৪ আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা-৫৪/৬৩/৬৪/৮৩ গঠনতন্ত্র পৃষ্ঠা-১৫ তওহীদ জান্নাতের চাবি পৃষ্ঠা-৩১

ইসলামের দৃষ্টিকোণ

এমন মিথ্যুকদের বিরুদ্ধে মহান রব বলেন,

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعَى إِلَى الْإِسْلَامِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

অর্থ: যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে আহুত হয়েও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে; তার চাইতে অধিক যালেম আর কে? আল্লাহ যালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
সুরা সফ আয়াত-৭

পাশাপাশি রাসূল সঃ বলেছেনঃ

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ

অর্থঃ
শেষ যুগে কিছু সংখ্যক প্রতারক ও মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের কাছে এমন সব হাদীস বর্ণনা করবে যা কখনো তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা শোননি। সুতরাং তাদের থেকে সাবধান থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তারা যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনায় না ফেলতে পারে।
সূত্রঃ
সহীহ মুসলিম হাদিস-৭ মুসনাদে আহমাদ হাদিস-৮২৬৭ ত্বহাবী হাদিস-২৯৫৪ আবু দাউদ হাদিস-৪৩৩৩ তিরমিযি হাদিস-২২১৮

পন্নী সাহেবের উপর মোজেজা সংগঠন।

হেযবুত তওহীদের দাবি

“মোজেজা” যা নবীদের সাথে নির্দিষ্ট সেটা পন্নীর দ্বারাও সংগঠিত কয়েছে এবং পন্নীর মোজেজা নবীদের চেয়ে বেশী। পন্নীর মোজেজা কুরআনের মত সত্য। পন্নীর মোজেজা মুহাম্মাদ স: এর মত।
মোজেজার ভাষণ মূলত আল্লাহরই কথা যা পন্নীর মুখ দিয়ে আল্লাহ নিজে বলেছেন। এটা যারা বিশ্বাস করবে না তারা মুনাফিক, বেঈমান এবং জাহান্নামী।
সূত্র: আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা পৃষ্ঠা-৭/৩৩/২৪/২৫/৫৭/৯১/৬২/৬৩/৬৫/৬৭/৭৯

 

ইসলাম কি বলে?

এমন উদ্ভট কথাবার্তা কোন সুস্থ,বিবেকবান মুসলমান করতে পারে না। বরং যারা প্রকৃতপক্ষে সমাজ থেকে ইসলামকে উঠিয়ে দিতে চায় তারাই আল্লাহর নামে এমন জঘন্য মিথ্যা চালিয়ে দিতে পারে। মহান অাল্লাহ তা’য়ালা এমন মিথ্যুকদের সম্পর্কে বলেছেন-

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أُولَئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَى رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ

অর্থাৎ আর তাদের চেয়ে বড় যালেম কে হতে পারে, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। এসব লোককে তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত সম্মূখীন করা হবে। আর সাক্ষিগণ বলতে থাকবে, এরাই ঐসব লোক, যারা তাদের পালনকর্তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। শুনে রাখ, যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে।
সূরা হুদ আয়াত-১৮

 

জন্মননিয়ন্ত্রণ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি

হেযবুত তওহীদের দাবি

জনসংখ্যার আধিক্য সমানুপাতিক ভাবে মানুষের ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করে। আত্মার ধ্বংস, সম্পদের ধ্বংস,স্বাস্থের ধ্বংস, জলবায়ুর ধ্বংস সবমিলিয়ে মানবজাতির অস্তিত্ব এখন সংকটে এবং ফলে চুরি,খুনের মত জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে মানবতা সব ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে।
অতএব জন্মনিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয় পৃ:৩৭/৩৮

ইসলামের দাবি

সংখ্যাধিক্যের কারণে আত্মার ধ্বংস, সম্পদের ধ্বংস,স্বাস্থের ধ্বংস, জলবায়ুর ধ্বংস ইত্যাদী বলা কুরআন-হাদিসের প্রকাশ্য বিরোধী। বরং জনগণের সংখ্যানুপাতে মহান আল্লাহ নিয়ামত দিয়ে থাকেন। মহান রব বলেন,

وَلَوْ بَسَطَ اللَّهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهِ لَبَغَوْا فِي الْأَرْضِ وَلَكِن يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَاء إِنَّهُ بِعِبَادِهِ خَبِيرٌ بَصِيرٌ

অর্থ: যদি আল্লাহ তাঁর সকল বান্দাকে প্রচুর রিযিক দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের খবর রাখেন ও সবকিছু দেখেন।
সুরা শুরা আয়াত-২৭

রিজিকের ভায়ের জন্মনিয়ন্ত্রণ না করার জন্য আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَلَا تَقۡتُلُوۤا۟ أَوۡلَـٰدَكُمۡ خَشۡیَةَ إِمۡلَـٰقࣲۖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُهُمۡ وَإِیَّاكُمۡۚ إِنَّ قَتۡلَهُمۡ كَانَ خِطۡـࣰٔا كَبِیرࣰا

অর্থ: দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই রিযিক দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহা অপরাধ।
সূরা বনী ইসরাইল আয়াত-৩১

জনসংখ্যা বৃদ্ধিকরণে নবিজির ঘোষণা:

উপরন্তু সাধারণ অবস্থায় নবিজি স: মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে। উপরন্তু নবি স: কিয়ামতের দিন স্বীয় উম্মাহর বিশালতা নিয়ে গর্ব করবেন।

عن أنس بن مالك عن النبي صلي الله عليه وسلم تزوجوا الودودَ الولودَ فإني مكاثرٌ بكم الأممَ يومَ القيامةِ

অর্থাৎ হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. নবি স. থেকে ববমর্ণনা করেন যে, তোমরা অধিক সন্তান প্রসবকারী মেয়েকে বিবাহ কর।কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে কিয়ামতের মাঠে গর্ব করব’।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস-২০৫০ নাসাঈ-৩২২৭ সহিহ ইবনে হিব্বান-৪০৫৬ আল মাকাসিদুল হাসানাহ-১৯৮ আহমাদ-১৩৫৯৪ ( হাদিস সহিহ)

 

তাহলে মতলব কি?

হেযবুত তওহীদের এহেন ষড়যন্ত্র বুঝান জন্য একটি রিপোর্ট পেশ করা জরুরী মনে করছি।”দৈনিক প্রথম আলো “ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের হাতে যাবে বিশ্বের দখল!” শিরোনামে একটি রিপোর্টে লেখেন,
“এক সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, আগামী ৫৩ বছর পর পৃথিবীতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা হবে সব থেকে বেশি। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে দ্য টেলিগ্রাফের খবরে এমনটাই বলা হয়েছে।
বিশ্বখ্যাত সমীক্ষা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার ওই প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, ২০৭০ সালে কেমন হবে বিশ্বের জনসংখ্যার চিত্রটি। সেখানে বলা হয়েছে আগামী ৫০ বছর পরে বিশ্ব মুসলমানদের দখলে যাবে। মার্কিন ওই সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীতে সব থেকে বেশি মানুষ হবে ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
এখন যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে এই ধারা চলতে থাকলে এ শতাব্দীর শেষের দিকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর থেকে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি হবে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইউরোপসহ বিশ্বের বহু অঞ্চলে আগামী বছরগুলোতে দ্রুত ইসলাম ধর্মের অনুসারীর লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
প্রতিবেদনে বলা বলছে, গোটা পৃথিবীতেই অন্যান্য ধর্মের তুলনায় দ্রুত হারে বাড়ছে মুসলিম জনসংখ্যা। অন্য দিকে খ্রিষ্টান জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার যেন প্রায় থমকে রয়েছে। ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, খ্রিষ্টানদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের হার যতটা বেশি, মুসলমানদের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই বেশি বংশ বৃদ্ধির হার। একজন মুসলমান নারী গড়ে তিনটি শিশু সন্তানের জন্ম দেন। অন্যদের ধর্মের নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে মুসলমান জনসংখ্যা বাড়বে ৭৩ শতাংশ, যা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন থেকে বেড়ে হবে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন। অন্য দিকে, খ্রিষ্টান জনসংখ্যা বাড়বে ৩৫ শতাংশ।
২০১০ সালে বিশ্বে মোট খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন। ২০৫০ সালে সেটা হবে ২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন। ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশই হবে ইসলাম ধর্মাবলম্বী।”
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ৩ মার্চ ২০১৭ ঈসায়ী

প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত রিপোর্ট দিয়ে আমরা বুঝতে পারি যে, বিজাতীয়দের ইসলাম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে হেযবুত তওহীদ যে বদ্ধপরিকর সেটা আর বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়।

 

অমুসলিমরা কি অপবিত্র?

হেযবুত তওহীদের দাবি

অমুসলিমদের অপবিত্র মনে করা মূর্খতা, আচারের নামে অনাচার।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-১০৪

ইসলামের দাবি

আমাদের জেনে রাখা উচিৎ “অমুসলিমদেরকে অপবিত্র ঘোষণা সর্বপ্রথম করেছেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তা’য়ালা। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسࣱ فَلَا یَقۡرَبُوا۟ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ بَعۡدَ عَامِهِمۡ هَـٰذَاۚ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে। সুরা তাওবা আয়াত-২৮

সুতরাং অমুসলিমদের অপবিত্র বলা যদি মূর্খতা হয় তাহলে কি আমাদের মহান রবও মূর্খ? (নাউযুবিল্লাহ)। এমন জঘন্য পাপ থেকে আল্লাহ আমাদের হিফাযত করেন।

 

ইসলাম সংস্কার করতে হবে।

হেযবুত তওহীদের দাবি

যে ইসলাম আজ নানা প্রকার রূপ নিয়ে আমাদের ১১৬ কোটি মুসলমানের দ্বারা চর্চিত হচ্ছে তা কোনোভাবেই বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার যুগের উপযোগী নয়। কিন্তু অপরাধহীন, অবিচারহীন পবিত্র সমাজ গঠন করার চিন্তাও হাস্যকর। অথচ যুগের চাহিদা মেটানো ধর্মের বৈশিষ্ট্য। তাই ইসলামের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা গুলো কোর’আনের মূলনীতি বজায় রেখে বর্তমান যুগের আলোকে সংস্কার করতে হবে।”
সূত্র: ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে পৃষ্ঠা-১১৫
ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে পৃষ্ঠা-২৭

ইসলামের দাবি

ইসলাম সর্বকালের,সর্বযুগের জন্য প্রয়োগযোগ্য ও যুগউপযোগী। যা হেযবুত তওহীদ নিজেই লিখেছে,
“এই দিনের একটি নাম হচ্ছে দীনুল ফেতরার অর্থাৎ প্রাকৃতিক দিন কারণ প্রাকৃতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল করে আল্লাহ এই জীবনব্যবস্থাটি প্রণয়ন করেছেন।আগুন-পানি আলো-বাতাস অক্সিজেন ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান গুলো যেমন পৃথিবীর সকল মানব জাতির জন্য অবশ্য প্রয়োজন এবং সবার উপযোগী তেমনি এই জীবন ব্যবস্থাও পৃথিবীর সর্বত্র প্রযোজ্য, প্রয়োগযোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিদায়ক।”
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃষ্ঠা-৭২

মহান আল্লাহ নিজেই পবিত্র কুরআনে বলেন,

وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ

অর্থ: আর আমি তোমার উপরে প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ কুরআন নাযিল করেছি।
সূরা নাহল আয়াত-৮৯

উপরন্তু ইসলাম এমন একটি চুড়ান্ত ধর্ম যা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সর্বকালের, সর্বযুগের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। যা মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন,
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا

অর্থ: আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
সূরা মায়েদা আয়াত-৩

সুতরাং এ ইসলামকে সংস্কার করতে হবে এমন দাবি যারা করছেন, তাদের মূলত উদ্দেশ্য হলো মনগড়া একটি মতবাদকে ইসলাম বলে জাতিকে ধোকা দেয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। অতএব সাবধান মুসলমান!

 

মুহাম্মাদ স: এর দায়িত্বের উপর অভিযোগ।

হেযবুত তওহীদের দাবি

বিশ্বনবী সঃ আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেননি।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃষ্ঠা-১০৪-১০৫ শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃষ্ঠা-১১৫/১৪৮

ইসলামের দাবি

নবিজি স: আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণরুপে সমাপ্ত করে গেছেন। তাঁর দায়িত্ব পুরণে কোন ত্রুটি ছিল না। প্রমাণ হলো, বিদায় হজ্বের ভাষণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, আমি আমার দায়িত্ব কি পরিপূর্ণ ভাবে তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি? প্রতিউত্তরে সাহাবায়ে কেরাম বললেন-

قالوا نشهدُ أنَّكَ قد بلَّغتَ وأدَّيتَ ونصحْتَ ثمَّ قالَ بأُصبعِهِ السَّبَّابةِ يرفعُها إلى السَّماءِ وينكبُها إلى النَّاسِ اللَّهمَّ اشهدْ اللَّهمَّ اشهدْ اللَّهمَّ اشهدْ

অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম বললেন অামরা সাক্ষী দিচ্ছি অাপনি অবশ্যই আপনার দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছেন এবং আদায় করেছেন এবং উপদেশ দিয়েছেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তার শাহাদাত আঙ্গুল উঁচিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করে বললেন যে, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো। তুমি সাক্ষী থাকো। তুমি সাক্ষী থাকো।
সূত্রঃ সহিহ মুসলিম হাদিস-১২১৮ আবু দাউদ হাদিস-১৯০৫ ইবনে মাযাহ হাদিস-৩০৭৪ নাসাঈ হাদিস-৬৫৬

আর সে সময়েই আল্লাহ তা’য়ালা সার্টিফিকেট দান করলেন-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

অর্থাৎ আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
সুরা মায়িদা আয়াত-৩

হেযবুত তওহীদ এত সুস্পষ্ট অায়াত এবং হাদিসকে অস্বীকার করেন কিভাবে? যেখানে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সাক্ষী দিলেন, নবি সঃ অাল্লাহকে তিনবার সাক্ষী রাখলেন, এমনকি মহান আল্লাহ তা’য়ালাও সার্টিফিকেট দান করলেন যে, নবি স. আল্লাহর দেয়া দায়ীত্ব পূর্ণ করেছেন। অথচ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, যে আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব নবি সঃ তার দায়ীত্ব পরিপূর্ণ করতে পারেননি। এরচে অপবাদ আর মিথ্যা কি হেতে পারে?

নবিজি স: রহমাতুল্লিল আলামিন নন।

হেযবুত তওহীদের দাবি

রাসুল স: এখনও ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ হন নি।’
সূত্র: আকিদা পৃ:১৯।

ইসলামের দাবি

রাসুলুল্লাহ স: মহান রবের পক্ষ থেকে রহমত হিসাবে আগমন করেছেন। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ

অর্থ: হে নবী; আমি আপনাকে একমাত্র ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ (উভয় জাহানের রহমত) করেই পাঠিয়েছি। (সূরা আম্বিয়া: আয়াত-১০৭)

আয়াতের ব্যাখ্যা:
এই আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ, মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল কুরতুবী রহঃ বলেন-

قَالَ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ مُحَمَّدٌ ﷺ رَحْمَةً لِجَمِيعِ النَّاسِ

অর্থাৎ হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মাদ স. সমস্ত মানুষের জন্য রহমত স্বরুপ ছিলেন।
সূত্র: তাফসীরে কুরতুবী খ:১১ পৃ:৩০৫

উপরন্তু বিশ্বনবি স: হাদিসে বলেন,

عَنْ أَبِى أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إنَّ اللهَ بَعَثَني رَحمةً للعالمينَ وهُدًى للعالمينَ

অর্থাৎ হযরত আবু উমামা রাঃ বলেন; রাসুল সাঃ এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ করে পাঠিয়েছেন।
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ হাদিস-২২৩০৭
তবরানী-৭৮০৩ তয়ালিসি-১২৩০ মুহাল্লা খ:৯ পৃ:৫৯। আবু দাউদ-৪৬৫৯

সুতরাং যেখানে মহান আল্লাহ রহমাতুল্লিল আলামিন বলে ঘোষণা দিলেন, খোদ নবি স. জিবদ্দশায় নিজেকে রহমাতুল্লিল আলামিন বলে দাবি করেছেন এবং নবি স. কে রহমাতুল্লিল আলামিন করে পাঠিয়েছেন বলে স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালাই দাবি করলেন, সেখানে পন্নী সাহেব দাবি করলেন নবি স: এখনও রহমাতুল্লিল আলামিন হতে পারেননি। কতবড় ধৃষ্টতা! কতবড় সীমালঙ্ঘন! ভাবা যায়?

 

সহশিক্ষা

হেযবুত তওহীদের দাবি

নবিজির স: সামনে বসে নারী-পুরুষ উভয়ই শিক্ষা অর্জন করতেন কাজেই প্রকৃত ইসলামের নারী পুরুষ উভয়েই একই সঙ্গে শিক্ষা অর্জন করবে।”
সূত্র: শিক্ষাব্যবস্থা পৃষ্ঠা-৬ আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই পৃষ্ঠা-১২/১৩ চলমান সংকট নিরসনে হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবনা পৃষ্ঠা-৮

ইসলাম কি বলে?

নবিজীর স: যামানায় মহিলাদের শিক্ষাব্যবস্থা:

সহীহ বুখারী ও সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছে,

عن أبي سعيد الخدري قال جاءَتِ امْرَأَةٌ إلى رَسولِاللَّهِ صَلّى اللهُ عليه وسلَّمَ فَقالَتْ يا رَسولَ اللَّهِ ذَهَبَ الرِّجالُ بحَديثِكَ فاجْعَلْ لَنا مِن نَفْسِكَ يَوْمًا نَأْتِيكَ فيهتُعَلِّمُنا ممّا عَلَّمَكَ اللَّهُ فَقالَ اجْتَمِعْنَ في يَومِ كَذا وكَذا فيمَكانِ كَذا وكَذا فاجْتَمَعْنَ فأتاهُنَّ رَسولُ اللَّهِ صَلّى اللهُعليه وسلَّمَ فَعَلَّمَهُنَّ ممّا عَلَّمَهُ اللَّهُ

অর্থ: হযরত আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাদীস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তাত্থেকে আপনি আমাদের শিখাবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে। সে মোতাবেক তাঁরা একত্রিত হলেন এবং নবিজি: সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাঁদের শিক্ষা দিলেন।
সূত্র: বুখারী হাদিস- ৭৩১০ মুসলিম-২৬৩৩

নারীকে যথাসম্ভব ঘরে থাকা উচিত। একান্তই যদি তাকে ঘর থেকে বের হতে হয়,তাহলে পর্দা করেই বের হতে হবে। পর্দা থেকে বের হলেই,

عن عبدالله بن مسعود قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم المرأةُ عورةٌ فإذا خرَجَتْ اسْتَشْرَفَها الشيطانُ

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সঃ) বলেছেন, মহিলারা হলো পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং, তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাইরে আসে তখন শয়তান তাদেরকে (অন্য পুরুষের দৃষ্টিতে) সুসজ্জিত করে দেখায়।
সূত্র: ১১৭৩ তিরমিযী মুসনাতে বাজ্জার-২০৬১ ইবনে খুযাইমা-১৬৮৫

 

বায়াজীদ খান পন্নী রাজাকার ছিলো।

৭১ সালে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী ও তার বাবা ছিলেন অনেব বড় রাজাকার। এ বিষয়টি বুঝার জন্য প্রথমে দুটি বিষয় আমাদের জানতে হবে।

১. পন্নীর বাবার নাম কি? ২. পন্নীর ডাক নাম কি?

পন্নীর বাবার নাম:
টাঙ্গাইলের করটিয়ার জমিদার পরিবারই হলো পন্নীদের পরিবার। তার বাবার নাম ছিলো, ‘মেহেদী আলী খান খসরু পন্নী।’
সূত্র: শ্রেণিহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ:১৮৪

পন্নীর ডাক নাম:
বায়াজীদ খান পন্নীর ডাক নাম ছিলো, ‘সেলিম খান পন্নী।’
সূত্র: শ্রেণিহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ:১৮৬

এখন চলুন আমরা দেখি এই মেহেদী আলী খান পন্নী এবং সেলিম (বায়জীদ) খান পন্নী ৭১ সালে কি ভূমিকা রেখেছিল। তার বিস্তারিত বিবরণী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার লিখিত ‘স্বাধীনতা ‘৭১’ বইটিতে লিখেছেন। বঙ্গবীর লেখেন,

‘টাঙ্গাইল হানাদার শিবিরে তৎপরতা শেষ নেই। ছুঁড়ে-দেওয়া উচ্ছিষ্টের হাড়-গোড় ভাগাভাগি কামড়া-কামড়ির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে হানাদার -সমর্থক কিছু প্রভুভক্ত রাজনৈতিক হ্যাংলা কুকুর। খান সেনাদের চাইতে তাদের উৎসাহ যেন বেশি। টাঙ্গাইল হানাদার প্রধান পাণ্ডা কাগমারি কলেজের কুখ্যাত অধ্যাপক আব্দুল খালেককে সাধারণ সম্পাদক, হেকিম হাবিবুর রহমানকে শান্তি কমিটির সভাপতি করে (৫১ বিশিষ্ট) সদস্য করা হয়েছে।
যার ১০ নাম্বারে ‘করটিয়ার জমিদার মেহেদী খান পন্নী খসরু (বায়াজীদ খান পন্নীর বাবা) এবং ১১ নাম্বারেই রয়েছেন ‘জমিদার-পূত্র সেলিম খান পন্নী অর্থাৎ বায়াজীদ খান পন্নী।
সূত্র: স্বাধীনতা ‘৭১ পৃ:৬৪৬-৬৪৭

তিনি আরো লেখেন,
আরো অনেককে নিয়ে টাঙ্গাইল জেলা শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কর্মকর্তারাই ছিল শান্তির নামে অশান্তির মূল। রাজাকার বানানো, ঘর-বাড়ি জ্বালানো, লুটতরাজ, নারী অপহরণ ও ধর্ষণে_ হেন জঘন্য অপকর্ম নেই যা শান্তিকমিটির সদস্যরা করেনি। আব্দুল খালেক এদের সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। এ ব্যাপারে করটিয়ার জমিদার মেহেদী খান পন্নীর (খসরু) স্থান দ্বিতীয়। রাজাকার-দল ভারী করতে দেয় পাল্লা পাল্লি-কে কার চাইতে বেশি রাজাকার বানাতে পারে।
সূত্র: স্বাধীনতা ‘৭১ পৃ:৬৪৮

পন্নীদের অপমানজনক বিচার:

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী পন্নীদের বিচারের ঘটনা বিস্তারিতভাবে তার এ বইটিতে তুলে ধরেছেন এভাবে,

পন্নীদের বিচার: আকাল আকাল।

২০ নভেম্বর। হানাদারদের প্রথম সারির দালাল করটিয়ার জমিদার খসরু খান পন্নী, তার দুই ছেলে-সেলিম (বায়াজীদ) খান ও বাবলু খান পন্নীকে কোমারে দড়ি বেঁধে এলাচী পুর আনা হয়েছিল। তাদের বিচার। ইতিমধ্যে পন্নীদের নিয়ে পরস্পরবিরোধী ছোটখাটো দু’একটা ঘটনা ঘটে গেছে। কোন-কোন মুক্তিযোদ্ধা পন্নীদের বিন্দুমাত্র মর্যাদা দিতে চাইনি। আবার দু’চারজন ছিল যারা হাজার হলেও তো জমিদার। গরিবের রক্তশোষক জমিদাররাও তাদের অহংকার ঠাট-বাট বজায় রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

অনেকটা শরৎচন্দ্রের নতুনদা’র হারানো পাম্প সু খোঁজার মতো। কোমরে দড়ি বাঁধার সময় তারা মুক্তিযোদ্ধাদের খুব অনুনয়-বিনয় করেছিল,কোমরে দড়ি বাঁধলে নাকি মানসম্মান থাকবে না। এলাচীপুরে যখন একটি বাড়িতে রাখা হয়, তখনও সাধারণ মানুষের রক্তের পয়সায় কেনা দুগ্ধ-ধবল-ফেননিভ মোলায়েম মখমলের বিছানায় অভ্যস্ত জমিদাররা সাধারণ শক্ত বিছানায় শুতে পারে না। গরিব প্রজাদের পিঠে চাবুক মেরে যারা বেড়ে উঠেছে, তাদের শক্ত কাঠের বেঞ্চিতে বসলে ইজ্জত যায়। দরিদ্র জনগণের মুখের গ্রাস কেড়ে পোলাও-কোরমায় অভ্যস্ত, গ্রামের সাধারণ খাবারে তাদের পেট জ্বালা করে। প্রথম-প্রথম এমনি নানা অনুযোগ করার পর যখন তারা বুঝল, তাদের কোনো বিশেষ মর্যাদা দেয়া হবে না, তখন শক্ত বিছানা, গ্রামের খাবার, বেঞ্চে বসা-কোন কিছুতেই আর অসুবিধা হয়নি। এলাচীপুর ও লাউহাটিতে রাখার সময়ে লাউহাটির চেয়ারমান ও স্বেচ্ছাসেবক কমান্ডার কামাল খাঁ পন্নীদের সাথে অপ্রয়োজনে বার কয়েক দেখা করেছে। কর্নেল ফজলুর রহমানের কাছে কামাল খাঁ একটি লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রস্তাবটি হলো দুই-তিনলক্ষ টাকা অর্থদণ্ড করে তাদেরকে ছেড়ে দিলে তারা মুক্তিবাহিনীর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে। এই সমস্ত কোন ঘটনাযই আমার অজানা ছিল না। তাই অবিলম্বে পন্নীদের ব্যাপারটা সেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। এই ধরনের জঘন্য প্রকৃতির লোকদের সংস্পর্শে মুক্তিযোদ্ধারা যত কম থাকে ততই মঙ্গল।

২ ডিসেম্বর দুপুরে কেদারপুর বাজারের পাশে খালের ধারে দুটি বিচার অনুষ্ঠিত হলো। প্রথমটি বিচার নয়, শুনানী। ধৈর্য ধরে রবিউলের সমস্ত কথা শুনে বললাম,
‘যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে আসলে একজন কমান্ডারকে যতটা দায়ী করা উচিত, এইক্ষেত্রে রবিউলকে তার চাইতেও বেশি দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। কারণ রবিউল শুধু পালিয়ে আসেনি, তার ভীরুতার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, এমনকি দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছে। তাই আমি মনে করি, ক্যাপ্টেন রবিউলের ব্যাপারে আরো খুঁটিয়ে দেখে বিচার করা উচিত। এজন্য তাকে সদর দপ্তরে অভ্যন্তরীণ রেখে একটি ট্রাইব্যুনালের হাতে বিচারের ভার ছেড়ে দেওয়া উচিত।
কমান্ডার রবিউলকে সরিয়ে নিলে রাজাকার হোতা, হানাদার দালালদের কোমরে দড়ি বেঁধে হাজির করা হল। করোটিয়ার জঘন্য বদমেজাজী জমিদার খসরু খান পন্নী ও তার দুই ছেলে সেলিম (বায়াজীদ) খান,বাবুল খান পন্নীর বাঁধন খুলে দেয়া হল। প্রথমে খসরু খান পন্নীর ছোট ছেলে বাবুল খান পন্নী কে জিজ্ঞেস করা হলো,
-তোমার কিছু বলার আছে?
-আমাকে কি কারনে আনা হয়েছে জানিনা। বাবা এবং ভাই বর্তমান সরকারের সাথে যুক্ত থাকলেও আমি নই। আমার আর কিছু বলার নেই?
এসময় খসরু খান পন্নী বসার জন্য চেয়ার চাইলেও তাকে জানিয়ে দেয়া হলো, কোন অভিযুক্তকে বিচারের সময় চেয়ার দেয়া হয়না এবং কোন অভিযুক্তকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত না-হওয়া পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে না। গাদি- গাদি টাকা আছে বলে তোমাদের জন্য এই রীতির কোনো হেরফের হবে না।
সেলিম (বায়াজীদ) খান পন্নী বিন্দুমাত্র আত্মপক্ষ সমর্থন না করে বলল,
–আমরা রাজাকার গঠন করেছি। আমরা এখন বুঝতে পারছি অন্যায় হয়েছে। আপনারা আমাদের অর্থদণ্ড করে অন্তত একবার সুযোগ দিন। আমরা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলছি, এরপর সর্বস্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করব।
পর্যায়ক্রমে খসরু খান পন্নী কে তার কিছু বলার আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলাম। খসরু খান পন্নী ও সবকিছু অকপটে স্বীকার করে বলল,
–আমাদের ভুল স্বীকার করছি। (একেবারে গলে গিয়ে) বাবা, আপনারা আমাদের অর্থদন্ড করে এবারের মত মাফ করুন।
–তোমাদের অর্থদণ্ড করা হলে তা কত হতে পারে বলে মনে করো?
আমার কথা শুনে খসরু খান পন্নী যেন কিছুটা ভরসা পেল। সে বেশ বিগলিত গলায় বলল,
–আমাদের আগের অবস্থা নেই। বাড়িতে কোন টাকা-পয়সা নেই। অর্থদণ্ড করা হলে বাড়ির বউদের গহনা ও বগুড়ার যে জমি আছে তা বিক্রি করে শোধ করতে হবে। সাহেব, আপনিই ভেবে চিন্তে বলে দিন।
পন্নীকে ব্যঙ্গ করে বললাম,
–না, সাহেব অর্থদণ্ডের পরিমাণ নিরূপণ করবে না। তোমাকেই তিনি পরিমাণটা বলতে বলছেন। খসরু খান পন্নী কয়েকবার হাত কচলে বললো,
–দুই লাখ হলে…আমরা কোনক্রমে শোধ করতে পারবো। তিন লাখ দিতে কষ্ট হবে। আপনি দয়া করে এর মধ্যে একটা ঠিক করে দিন।
–আমি খুব ভাল করে জানি, তোমাদের বিন্দুমাত্র লজ্জা-শরম নেই। তুমি যদি আমাকে তোমার জমিদারের প্রজা ভেবে থাক, তাহলে ভুল করছ। আমি তোমাদের মত লোকের মোসাহেব নই। তুমি কামাল খাঁকে দিয়ে কর্নেল ফজলুকে দুই লাখ টাকা পাইয়ে দেবার লোভ দেখিয়েছ। এমনিতেই রাজাকার বানানোর জন্য তোমার হাড়-মাংস কুত্তা দিয়ে খাওয়ান উচিত। তার উপর আবার মুক্তিবাহিনীকে অর্থের লোভ দেখাচ্ছ? নিশ্চয়ই অর্থদণ্ড হবে, তবে তোমার ইচ্ছা মতো না।
এ কথা শুনে খসরু খান পন্নী কেঁদে ফেলে হাতজোড় করে বলল,বাবা আমার অন্যায় হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করেন। এর চেয়ে বেশি জরিমানা আমরা দিতে পারব না।
–শুধু অর্থদণ্ড নয়, বেত্রাঘাত হবে। আমরা খুব ভাল করেই জানি, অর্থশালীদের শুধু অর্থ দণ্ড তাদের গায়ে-পায়ে বাজে না। বড় ছেলেসহ তোমাকে মুক্তিবাহিনী গুলি করে মারত। তবে আর-একবার অপরাধ করার জন্য বেত্রাঘাত ও অর্থদণ্ড করে ভবিষ্যতের টোপ হিসেবে রেখে দিচ্ছে। আরেকবার অপরাধ করলে মুক্তিবাহিনী তোমাদের পরপারে পাঠিয়ে দেবে।
খসরু খানের বাক শক্তি রহিত, একেবারে থ মেরে গেল। চোখ ফ্যাকাসে। তাকে দেখে মনে হবে একটা মৃতদেহ দড়িতে বেঁধে রাখা হয়েছে।
‘আসামিদের মধ্যে দু’জন –খসরু ও সেলিম (বায়াজীদ) খান পন্নী হানাদারদের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এরা দু’জন টাঙ্গাইলের চার ভাগের এক ভাগ রাজাকার বানিয়েছে। দু’জনকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে এবারের মতো বেত্রাঘাত ও অর্থদণ্ড করা হলো। বাবুল খান পন্নী হানাদারদের সাথে সক্রীয় না থাকায় তাকে মুক্তি দেওয়া হলো।
খসরু খান ও সেলিম (বায়াজীদ)খান পন্নীর একশ’-এক টাকা করে দুইজনের দুই’শ দুই টাকা জরিমানা ও প্রত্যেককে পাঁচটি করে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেওয়া হলো। খসরু খান পন্নীর বয়স যেহেতু ষাটের উর্ধ্বে সেহেতু তাকে মৃদু বেত্রাঘাত করা হবে। বেত্রাঘাত শেষে এরা পায়ে হেঁটে পাকা সড়ক পর্যন্ত যাবে। কোন যানবাহন ব্যবহার করতে পারবে না।
বিচার শেষে কামাল খাঁ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সে নানাভাবে বলার চেষ্টা করছিল, –স্যার, আমি অমন ভাবে বলি নাই। আমাকে পন্নী সাহেব বলেছিলেন, তাই কর্ণেল সাহেবকে বলেছিলাম, এদের অর্থদণ্ড করে ছেড়ে দেওয়া যায় কিনা।
–বুঝতে পারছি, আপনি ধনী মানুষ। জমিদাররা আপনার মত ধনী। আর একসময় তো আপনারা ওদের প্রজা ছিলেন। তাই মনিবের নুনের গুন ভুলতে পারেননি। এতে আর আপনার দোষ কি?
বিচার শেষে পন্নীদের বিদায় করে দেওয়া হলো। এখানেও কামাল খাঁ তার শ্রেণী স্বার্থে কাজ করে। কেদারপুর থেকে পাকা রাস্তা বারো মাইল। এতটা রাস্তা হেঁটে যেতে সত্যিই খসরু খান পন্নীর খুব কষ্ট হচ্ছিল। পন্নীরা যখন কেদারপুর থেকে চার-পাঁচ মাইল পাড়ি দিয়েছে, অন্য পথে কামাল খাঁ তখন ঘোড়ার গাড়িতে তাদের তুলে দিতে যাচ্ছিল। তার ধারণা ছিল, অতদূর মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো আর লক্ষ্য করবে না। কিন্তু দুটি গাড়ি যখন বানাইলের কাছে পৌঁছে, তখন একদল মুক্তিযোদ্ধা গাড়ির গতিরোধ করে। অপরিচিত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গাড়ির গতিরোধ করায় কামাল খাঁ নিজের পরিচয় দিয়ে বলল,
–দয়া করে গাড়ি ছেড়ে দিন। এর আমার আত্মীয়। আমার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
কামাল খাওয়ার অনুরোধ মুক্তিযোদ্ধারা শোনেনি। গাড়ি থেকে পন্নীদের নামিয়ে নেয়। তাদের এক কথা, ‘আপনাদের আবার কেদারপুরে যেতে হবে।’ পন্নীরা ঘোড়ার গাড়িতে যেতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধারা তাতেও আপত্তি তোলে। বাধ্য হয়ে পন্নীদের আবার তাদের হেঁটে কেদারপুর ফিরতে হয়।

পন্নীদের দেখে হাসতে হাসতে বললাম, ‘চোর বাটপারদের এমনই হয়।

তবে নির্দোষ বাবুল খান পন্নী কে মুক্তিযোদ্ধারা ফিরিয়ে এনে ঠিক করেনি। বাবুল খান পন্নী ইচ্ছা করলে এখানে থেকে যে কোনভাবে যেতে পারেন। কিন্তু বাকি দু’জনকে অবশ্যই পায়ে হেঁটে পাকা সড়ক পর্যন্ত যেতে হবে। আর-একবার ছলের আশ্রয় নিলে গুলি করা হবে।
শওকত আলী ব্যারিস্টারের চাচাতো ভাই লাউহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল খাঁকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেওয়া হলো, ‘স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যথেষ্ট অবদান থাকলেও আপনার অতীত কার্যকলাপ খুব প্রশংসনীয় নয়। আবার এই ধরনের অসৎ পন্থা অবলম্বন করলে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়েই গুলি করা হবে।
কামাল খাঁ ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তাকে যে এবারই গুলি করা হলো না, সেটাই তার পরম সৌভাগ্য। কামাল খাঁ এরপর আর তেমন ছলা কলা করেনি। পন্নীরাও পায়ে হেঁটে ঢাকা-টাঙ্গাইল পাকা সড়ক পর্যন্ত যেতে আর কোন চাতুরি করেনি।
সূত্র: স্বাধীনতা ‘৭১ পৃ:৭০৬-৭১০

প্রিয় পাঠক! এই হলঁ বায়াজীদ খান পন্নী ও তার পরিবারের অবস্থা।বলুন এমন জঘন্য লোক কি করে এমামুযযামান হয়?

 

বাদ্যযন্ত্রসহ গান

হেযবুত তওহীদের দাবি

কোন বাদ্যযন্ত্রসহ গান হারাম নয়। নবিজি স: নিজেও গান-বাজনা শুনতেন। ধর্ম কখনো গান-বাদ্য নৃত্যকে নাজায়েজ করতে পারেনা। সুতরাং মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত সুর, বিভিন্ন তার যন্ত্রের ওপর আঘাত বা ঘর্ষণজনিত আওয়াজ,দফ, তবলা বা অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ও হারাম নয়।
সূত্রঃ গনমাধ্যমের করণীয় পৃ:৫৯/৬০ মহাসত্যের আহ্বান পৃ:৯৭

ইসলাম কি বলে?

আধুনিক গান তো দূরের কথা বাদ্যযন্ত্রসহ ইসলামিক গান হলেও সেটা হারাম। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن یَشۡتَرِی لَهۡوَ ٱلۡحَدِیثِ لِیُضِلَّ عَن سَبِیلِ ٱللَّهِ بِغَیۡرِ عِلۡمࣲ وَیَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ لَهُمۡ عَذَابࣱ مُّهِینࣱ

অর্থঃ একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।(সূরা লুকমান-৬)

كَمَا قَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيث قَالَ: هُوَ -وَاللَّهِ-الْغِنَاءُ

অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে উক্ত আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদীস’-এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হল গান।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. একই কথা বলেন।(তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১)

উপরন্তু যারা বাদ্যযন্ত্র হালাল ঘোষণা দেয়, তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ স: অগ্রীম সতর্ক করে গেছেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ

অর্থঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে।
সূত্রঃ
সহীহ বুখারী-৫৫৯০ তাহযিবুস সুনান খঃ১০ পৃঃ১৫৩ ফতহুল গফফার খঃ৪ পৃঃ১৮৯১

অতএব যারা নবিজির স: উপর জঘন্য মিথ্যা তোহমত লাগিয়ে বলে থাকে- “নবিজির স: গৃহে গান-বাজনা হতো, নবিজি স: নিজেও বাদ্যযন্ত্রসহ গান শুতেন” এমন জঘন্য মিথ্যুকদের ব্যাপারে বিশ্বনবী সঃ বলেন-

عن أنَسِ بنِ مالِكٍ قال قال أبو القاسِمِ ﷺ مَن كَذَبَ عليَّ مُتعمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقعَدَه مِن النّار

অর্থাৎ নবীজি সঃ বলেন যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করবে সে তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেবে।
সূত্রঃ বুখারী হাদিস-১০৮ মুসলিম হাদিস-২ তিরমিযি হাদিস-২৬৬১ নাসাঈ হাদিস-৫৯১৪ ইবনে মাযাহ হাদিস-৩২ মুসনাদে আহমাদ হাদিস-১৩১০০

নাটক,সিনেমা,অভিনয়, নাচ, নর্তকী ও নৃত্য

হেযবুত তওহীদের দাবি

নাটক,সিনেমা,অভিনয়, নাচ, নর্তকী ও নৃত্য হারাম নয়।
সূত্র: গঠনতন্ত্র পৃ:৩৩-৩৪

ইসলাম কি বলে?

নাচ,নর্তকী ও অভিনেত্রীদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ স: বলেন,

عن سهل بن سعد الساعدي قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم سيكونُ في آخرِ الزَّمانِ خسفٌ وقذفٌ ومسخٌ قيل ومتى ذلك يا رسولَ اللهِ قال إذا ظهَرَتِ المعازفُ والقَيْناتُ واستُحِلَّتِ الخمرُ

অর্থাত নবী সঃ বলেন অদূর ভবিষ্যতে শেষ যামানায় মানুষের চেহারা বিকৃতি,ভূমিধ্বস হবে।
সাহাবা রাঃ বললেন হে রাসুল সঃ সেটা কখন হবে? নবি সঃ বললেন যখন বাদ্যযন্ত্র,নর্তকী বেশি বেড়ে যাবে এবং মদকে হালাল মনে করা হবে।
সূত্রঃ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খঃ৮ পৃঃ১৩

এমন স্পষ্ট হাদিসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যারা নাটক,সিনেমা,অভিনয়, নাচ, নর্তকী ও নৃত্যকে হালাল বানাতে চায় তারা কখনও মুসলিম হেতে পারে না।

চিত্রাঙ্কন ও ভাষ্কর্য

হেযবুত তওহীদের দাবি

ছবি আঁকা, ভাষ্কর্য নির্মাণ করা হারাম নয়। বরং এগুলো নিষিদ্ধ করা জঙ্গিদের ইসলাম।
সূত্র: গনমাধ্যমের করণীয় পৃষ্ঠা-৫৯/৭৭ গঠনতন্ত্র পৃ:৩৩-৩৪

ইসলাম কি বলে?

প্রথমে জেনে রাখা উচিত ভাষ্কার্য কাকে বলে?
মূর্তি আর ভাষ্কার্য কি একই জিনিষ নাকি আলাদা?
বাংলা অভিধানে ধাতব বা মর্মর মূর্তি নির্মান শিল্পকে ভাষ্কার্য বলা হয়। আরো বিস্তারিত দেখতে বাংলা অভিধান গুলো এবং উইকিপিডিয়া দেখতে পারেন।

অতএব পাঠক! আমরা বুঝতে পারলাম ভাষ্কার্য বা মূর্তি এক ও অভিন্ন জিনিষ।
চলুন ভাষ্কার্য (মূর্তি) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের আয়াত কি বলছে দেখে আসি। মহান আল্লাহ বলেন,

فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَ اجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُّوْرِۙ

অর্থৎ তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ (ভাষ্কার্য সমূহ) এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।
সূরা হজ্জ আয়াত-৩০

পবিত্র হাদিস শরীফে বিশ্বনবী সঃ বলেন-
أَرْسَلَنِي بصِلَةِ الأرْحَامِ وَكَسْرِ الأوْثَانِ وَأَنْ يُوَحَّدَ اللَّهُ لا يُشْرَكُ به شيءٌ
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তি বা ভাষ্কার্যসমূহ ভেঙ্গে ফেলার এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে।
সূত্রঃ সহীহ মুসলিম হাদিস- ৮৩২
বায়হাকী খঃ২ পৃঃ৪৫৪

চিত্রাঙ্কন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিত্রাঙ্কন করার ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন,

قالَ النبيُّ ﷺ: إنَّ مِن أشَدِّ النّاسِ عَذابًا يَومَ القِيامَةِ الَّذِينَ يُصَوِّرُونَ هذِه الصُّوَرَ

অর্থাৎ প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।
সূত্রঃ সহীহ বুখারী হাদিসক-৬১০৯ মুসলিম হাদিস-২১০৭ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খঃ৫ পৃঃ২৩২ নাসাঈ হাদিস-৫৩৭৯

প্রিয় পাঠক! ইসলামে বাদ্যযন্ত্রসহ গান, নর্তকীদের নাটক,সিনেমা,অভিনয়, নাচ এবং চিত্রাঙ্কন ও ভাষ্কর্য পরিস্কার হারাম। যা উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো। মনে রাখতে হবে হারামকে হালাল মনে করা কুফরী। এই কুফরীর দরিয়ায় সমস্ত মুসলমানকে তারা ডুবাতে চায়। এদের এ গভীর ষড়যন্ত্রের কবল থেকে বিশ্বমুসলিম সতর্ক থাক।সে কামনা রইল।

 

যেকোনো ধর্ম পালনে শান্তি।

হেযবুত তওহীদের দাবি

যেকোনো ধর্ম পালন করলে শান্তি পাওয়া যাবে।
সূত্র: আক্রান্ত দেশ আক্রান্ত ইসলাম পৃ:১৯

ইসলাম কি বলে?

সর্বত্র শান্তি একমাত্র ইসলাম ধর্ম অনুসরণের মাধ্যমেই আসবে। আমাদের এ কথা মহান আল্লাহ বলে দিয়েছেন ১৪০০ বছর আগেই। মহান রব বলেন,

وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِی فَإِنَّ لَهُ مَعِیشَةࣰ ضَنكࣰا وَنَحۡشُرُهُ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ أَعۡمَىٰ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِیۤ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِیرࣰا قَالَ كَذَ ٰ⁠لِكَ أَتَتۡكَ ءَایَـٰتُنَا فَنَسِیتَهَاۖ وَكَذَ ٰ⁠لِكَ ٱلۡیَوۡمَ تُنسَىٰ

অর্থ: এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুমান ছিলাম। আল্লাহ বলবেনঃ এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।
সুরা ত্ব-হা আয়াত-১২৩-১২৬

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল, সংকীর্ণ জীবন তথা ইহকাল ও পরকালের অশান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে একমাত্র আল্লাহর স্বরণ তথা পবিত্র কুরআনের অনুযায়ী চলতে হবে। অর্থাৎ দো’জাহানে শান্তি পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো কুরআনের বিধান তথা ইসলাম গ্রহণ করা। অন্য কোন উপায়ে শান্তির ব্যবস্থা মহান আল্লাহ রাখেননি। এমন দাবি যারা করবে তারা কুরআন বিরোধী।

 

হালাল-হারামের মানদণ্ড একমাত্র কুরআন।

হেযবুত তওহীদের দাবি

এসলামের সরল নীতি হোল, বৈধ-অবৈধ নির্ধারণের বেলায় মানদন্ড হোচ্ছে আল্লাহর আদেশ এবং নিষেধ অর্থাৎ আল-কোরআন। কোর’আনে যা আল্লাহ বৈধ কোরেছেন, তাই বৈধ,কোর’আনে যা অবৈধ কোরেছেন তাই অবৈধ।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:১৩৪ আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই-১২

ইসলাম কি বলে?

ইসলামে হালাল-হারামের মানদণ্ড দুটি আল্লাহ পাকের কুরআন এবং রাসুল স: এর হাদিস।

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

অর্থ: রাসুল তোমাদেরকে যা দেন,তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,তা থেকে বিরত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
সূরা হাশর আয়াত-৭

উপরন্তু পবিত্র হাদিস শরিফে নবিজি স: বলেন-

عن المقدام بن معدي كرب ان النبي صلي الله عليه وسلم قال ألا إنِّي أُوتِيتُ الكتابَ ومِثْلَهُ معه، ألا يُوشِكُ رجُلٌ شَبْعانُ على أريكتِهِ يقولُ: عليكم بهذا القرآنِ فما وجَدْتُم فيه مِن حلالٍ فأحِلُّوه، وما وجَدْتُم فيه مِن حرامٍ فحرِّموه

অর্থ: হযরত মিকদাদ ইবনে মাদিকারাব রা: থেকে বর্ণিত, নবি স: বলেন- জেনে রাখ, আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি এবং তার সাথে আরও অনুরূপ আরেকটি জিনিস (তা হল হাদিস)। অচিরেই দেখা যাবে, এক লোক ভরা পেটে তার খাটের উপর থেকে বলবে: তোমরা এই কুরআনকে আঁকড়ে ধর। এতে যে সকল বস্তু হালাল পাবে সেগুলোকে হালাল মনে কর, আর যে সব বস্তুকে হারাম পাবে সেগুলোকে হারাম মনে কর।
সূত্র: আবু দাউদ হাদিস-৪৬০৪

সুতরাং যারা শুধুমাত্র কুরআনকে হালাল-হারামের মানদণ্ড মনে করে তারা আল কুরআন ও হাদিসের অসংখ্য আয়াত এবং হাদিস বিরোধী।

 

দাঁড়ির সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।

হেযবুত তওহীদের দাবি

দাঁড়ির সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।মূলত দাঁড়ি ছিল আরব দেশের নেতা নির্ধারণের মাপকাঠি এবং পৌত্তলিক কাফেরদের প্রথা। যা রাসুলেরও নয়, কোরআন সম্মতও নয়। প্রকৃতির আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থার সাথে এগুলো সম্পর্ক রয়েছে। সিংহের যেমন কেশর,ময়ূরের যেমন লেজ,হাতির যেমন দাত,হরিণের যেমন সিং, তেমনি দাড়ি মানুষের প্রাকৃতিক পৌরুষ সৌন্দর্য। নবিজি স: নিজেই দাড়ি ছেটে পরিপাটি করে রাখতেন। উপরন্তু ইয়াজিদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য হলো দাঁড়ি। এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই দাঁড়ির গুরুত্বসম্বলিত কিছু জাল হাদিস তৈরি করা হয়।
অতএব জাতিকে বুঝাতে হবে এখন দাড়ি,টুপি,নফল ইবাদতের কথা বাদ দিন।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:১৩১/১৩৬/১৩৭ প্রিয় দেশবাসী পৃ:৯৮/১১৩ আকীদা-১৭ ধর্মব্যবসার ফাঁদে পৃ:১৩১

ইসলাম কি বলে?

দাঁড়ি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। উপরন্তু হাদিস শরীফে এসেছে-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ

অর্থঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের উল্টো করবেঃ দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস-৫৮৯২ মুসলিম হাদিস-২৫৯ অাল মু’জামুল আওসাত (তাবরানী) খঃ৯ পৃঃ১৬২ বায়হাকী হাদিস-২৮৬৪ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খঃ৮ পৃঃ৪১ আহমাদ ৪৬৫৪ দাঁড়হী অাওর ইসলাম (বাবুনগরী) পৃঃ২৮

এমনকি উম্মতের সকলের ঐক্যমতে সিদ্ধান্ত যে, দাঁড়ী অন্তত একমুষ্ঠি রাখা ওয়াজীব। একমুষ্ঠি থেকে ছোট বা সেভ করা হারাম।

وذلك محرم بالاجماع

অর্থাৎ এ (দাড়ী কাটা বা সেভ করা) সর্বোসম্মতক্রমে হারাম।
সূত্রঃ
অাল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ খঃ১৪ পৃঃ২৭৪

এতদ্বসত্ত্বেও দাঁড়ির সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই বলাটা প্রকাশ্য ইসলাম বিরোধী।

জিহাদ, যুদ্ধ ও অস্ত্র

হেযবুত তওহীদের দাবি

জিহাদ হলো আসল ইবাদত। বাকি নামাজ, রোজা,হজ্ব,যাকাত এগুলো ইবাদত নয়, জিহাদের ট্রেনিং। ফকীহরা জিহাদের অংশ অবহেলা করে বাদ দিয়েছেন। জিহাদ না করে যতই ইবাদত করুক সব অনর্থক। জিহাদ ছেড়ে দিলে সে কাফের, মুশরিক। যোদ্ধা না হলে ইসলামের প্রাথমিক সদস্যই হওয়া যায় না। অস্ত্রের সাথে সম্পর্ক না থাকলে সে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। জিহাদ আত্মরক্ষামূলক নয় আক্রমনাত্মক।মুজাহিদদের মর্যাদা নবিদের চেয়ে বেশি।
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ-১৬/১৮/২২/৪৫/৪৬/৪৭ এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-১০/৪৯/৪০ বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ পৃ:৫৪

ইসলামের দাবি

জিহাদ ইসলামের একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। কিন্তু জিহাদ না করলে সে কাফের বা মুশরিক হয়ে যাবে এটা জিহাদের নামে অপব্যখ্যা। কারণ ইসলামের মূল স্তম্ভ ৫ টির ৪ টি তথা নামাজ,রোজা,হজ্বের,যাকাত যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয় তবুও তাকে বেঈমান বা কাফের বলার সুযোগ নেই। তবে দ্বীনের কোন বিধান কেউ অস্বীকার করলে বা ঠাট্রা করলে ঈমান চলে যায় । তবে যদি কেউ ইসলামের প্রথম স্তম্ভ তাওহীদ ছেড়ে দিলে সে কাফের বা বেঈমান হয়ে যাবে। উপরন্তু জিহাদ আক্রমনাত্মক নয় বরং আত্মরক্ষামূলক। পাশাপাশি মুজাহিদদের মর্যাদা নবীদের চেয়ে বেশি নয়। বরং উম্মত যত বড়ই ওলী বা মুজাহিদ হোক না কেন নবিদের আ: সমান হওয়ার প্রশ্নই আসে না। পবিত্র কুরআন শরীফে এসছে-

وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا

অর্থাৎ যাঁরা অাল্লাহ তা’য়ালা এবং রাসুল কে অনুসরণ করবে তাঁরা নেয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের সাথে অর্থাৎ (১) নবীদের সাথে (২) সিদ্দিকিনদের সাথে (৩) শহীদদের সাথে (৪) সালেহীনদের সাথে থাকবে। এরা কতই না উত্তম বন্ধু।
সূরা নিসা আয়াত-৬৯

উক্ত অায়াতে অাল্লাহ পাক সুস্পষ্ট ভাবে ৪ ধরণের নেককার বান্দাদের মর্যাদার কথা বলে সর্বপ্রথম নবিদের কথা বলে এটাই বুঝালেন নবিদের মর্যাদা সবার উপরে।

অনুরুপ ভাবে হাদিসে এসেছে-

عن جابر بن عبدالله قال قال النبي صلي الله عليه وسلم إن اللهَ اختار أصحابِي على العالمينَ سوى النبيينَ والمرسلينَ

অর্থাৎ হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবি সঃ বলেছন যে, অামার উম্মতদেরকে মহান অাল্লাহ বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্যে নির্বাচিত করেছেন। তবে নবি এবং রাসুলদের থেকে নয়।
সূত্রঃ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খঃ১০ পৃঃ১৮ তারিখে বাগদাদ খঃ৩ পৃঃ৩৮১ অাল অাহকামুস সুগরা হাদিস-৯০৫ মুখতাসারুল বাযযার খঃ২ পৃঃ৩৬৪ মিযানুল ই’তিদাল খঃ২ পৃঃ৪৪২ মারেফাতুত তাযকিরাহ হাদিস-১০৭ তাফসীরে কুরতুবী খঃ১৬ পৃঃ৩৪৭

এই ধরণের কুরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট বক্তব্যের ভিত্তিতে সমস্ত উম্মত একমত যে,

الأنبياء أفضل الخلق باتفاق المسلمين وبعدهم الصديقون, والشهداء, والصالحون

অর্থাৎ সমস্ত উম্মতের ঐক্যমত হলো সমস্ত সৃষ্টির ভেতর সর্বোত্তম হলেন নবীগণ।
তাঁদের পর সিদ্দিকিন তাঁদের পর শহীদগণ, তাঁদের পর সালেহীন।
সূত্রঃ মিনহাজুস সুন্নাহ-২/৪১৭

এমন স্পষ্ট আয়াত এবং হাদিস উপরন্তু উম্মতের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত যারা বাদ দেন তাদেরকে কি বলা যায় সেটা পাঠক সমীপে সোপর্দ করলাম।

ঈসা আ: এর সমালোচনা।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

ঈসা আ: নিজের উম্মতের অপরাধমূলক কাজের ফলে তিনিও আংশিকভাবে দায়ী।
(দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা!-৫৫)

ইসলাম কি বলে?

সকল মানুষ নিজের অপরাধে নিজেই দায়ী। কেউ কারো অপরাধ বহন করবে না। বরং একজনের অপরাধ আরেকজনের উপর চাপানো পবিত্র কুরআন বিরোধী। মহান রব বলেন-

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ

অর্থাৎ কেউ কারো অপরাধের বোঝা বহন করবে না।
সুরা ফাতির আয়াত-১৮।

অথচ কুফরী সংগঠন হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নীর দাবী হলো হযরত ঈসা আঃ ও নাকি খ্রিষ্টানদের অপরাধের কিছুটা অংশীদার। একজন গুরুত্বপূর্ণ নবীর শানে কতবড় বেয়াদবি।নাউযুবিল্লাহ।

হিন্দুদের সনাতন ধর্ম মূলত কুরআনের ধর্ম।

হেযবুত তওহীদের দাবি

উপমহাদেশে প্রচলিত এই ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম, কোর’আনে যেটাকে বলা হোয়েছে দীনুল কাইয়্যেমা,শাশ্বত, চিরন্তন ধর্ম, অর্থাৎ তওহীদ।
সূত্র: শোষণের হাতিয়ার পৃঃ ৬২-৬৩

ইসলাম কি বলে?

আল্লাহ তা’য়ালার কাছে মনোনিত এবং কুরআনের ধর্ম একমাত্র ইসলাম। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ

অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনিত দ্বীন বা ধর্ম হলো ইসলাম। সুরা আলে ইমরান আয়াত-১৯

উপরন্তু যারা ইসলাম ধর্ম বাদ দিয়ে অন্য ধর্মকে সত্যায়িত করতে চায় তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

অর্থঃ যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত হবে।
সুরা আলে ইমরান অায়াত-৮৫

পবিত্র কুরআনে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম বলা হয়েছে “ইসলাম” কে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবি হলো “সনাতন”। এটা কি কুরআনের নামে জলন্ত মিথ্যাচার নয়?

 

পোষাক নিয়ে মন্তব্য

হেযবুত তওহীদের দাবি

গণতন্ত্রের মত ইসলামের কোন নির্দিষ্ট পোশাক থাকতে পারে না। আরবের কাফেরদের পোষাক আর নবিজি সঃ ও সাহাবাদের পোষাক একই রকম ছিল। নবিজি ভিন্ন কোন পোশাকের আদেশ দেননি।
সূত্র: শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ:৪৮ এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:১৩৪ ধর্মব্যবসার ফাঁদে পৃ:১০৯

ইসলাম কি বলে?

নবি স: আরবের সকল প্রথা ভেঙ্গে ইসলাম দিয়ে সাজিয়েছিলেন। তিনি কাফের মুশরিকদের সর্ব বিষয়ে উল্টো করেছিলেন এবং সাহাবাদের আদেশও করতেন। হাদিসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ

অর্থঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের উল্টো করবে।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস-৫৮৯২ মুসলিম হাদিস-২৫৯ অাল মু’জামুল আওসাত (তাবরানী) খঃ৯ পৃঃ১৬২ বায়হাকী হাদিস-২৮৬৪ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খঃ৮ পৃঃ৪১ আহমাদ ৪৬৫৪ দাঁড়হী অাওর ইসলাম (বাবুনগরী) পৃঃ২৮

উপরন্তু নবিজি স: বলেন,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

অর্থ: হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস-৪০৩১ আহমাদ-৫১১৪

সুতরাং যেই নবি মুহাম্মাদ স: কাফের,মুশরিকদের সর্বক্ষেত্রে উল্টো করতে বলতেন, তিনি সেই কাফেরদের মত পোষাক পরেছেন এটা নবিজির নামে ডাহা মিথ্যাচার। প্রত্যেকটি বিষয়ে ইসলামের স্বতন্ত্র নিয়ম রয়েছে। সুতরাং পোষাকের ক্ষেত্রেও ইসলামের সুন্নাতি দিকনির্দেশনা রয়েছে।

আল্লাহর সিফাত বা গুনাবলী ও মানুষ

হেযবুত তওহীদের দাবি

মানুষের মধ্যে আল্লাহর রুহ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং সকল গুনাবলী রয়েছে।
সূত্র: আকিদা পৃ:৫ প্রিয় দেশবাসী পৃষ্ঠা-৬৭ গঠনতন্ত্র পৃ:৯

ইসলাম কি বলে?

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত। এর অর্থ হলো, আল্লাহ নিজেকে যে সমস্ত নামে নামকরণ করেছেন এবং তাঁর কিতাবে নিজেকে যে সমস্ত গুণে গুণাম্বিত করেছেন সে সমস্ত নাম ও গুণাবলীতে আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় হিসেবে মেনে নেওয়া। যদি কেউ আল্লাহর নামে বা গুনে শরীক করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

لَيۡسَ كَمِثۡلِهِ شَيۡءٞ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ

অর্থ: কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
সূরা আশ-শূরা আয়াত: ১১

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

فَلَا تَضۡرِبُواْ لِلَّهِ ٱلۡأَمۡثَالَ

অর্থ: তোমরা আল্লাহর জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করো না। সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৭৪

যদি কেউ আল্লাহর নামে বা গুনাবলীতে অংশীদার সাব্যস্ত করে তাহলে সে মুশরিক। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

إِنَّهُ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ

অর্থ: নিশ্চয় যে ব্যক্তি শির্কে লিপ্ত হবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।
সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২

সুতরাং বান্দার মধ্যে আল্লাহর সকল গুনাবলী রয়েছে এটা পরিস্কার শিরকী মন্তব্য। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের হিফাযত করেন।

টুপি-পাগড়ির সাথে ইসলামের কোন সম্পর্কই নেই।

হেযবুত তওহীদের দাবি

“প্রকৃতপক্ষে দাড়ি, টুপি, পাগড়ীর, সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই”।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃঃ১৩১

ইসলাম কি বলে?

টুপি

টুপি নবিজি স: নিয়মিত ব্যবহার করতেন। যা বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে,

عن ابن عمر قال كان رسول الله صلي الله عليه وسلم يلبس قلنسوة بيضاء

অর্থঃ ইবনে ওমর রাঃ বলেন নবি সঃ সাদা টুপি পরিধান করতেন।
সূত্রঃ বায়হাকী খঃ৫ পৃঃ২১৪৪ ফয়জুল কাদির হাদিস-৭১৬৬ অাওনুল মা’বুদ খঃ১১ পৃঃ১২৯
যাখিরাতুল হুফফায খঃ৩ পৃঃ১৮০৮ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খঃ৫ পৃঃ১২৪

পাগড়ী

নবিজি স: নামাজ ও নামাজের বাহিরে পাগড়ি ব্যবহার করতেন। হাদিসে এসেছে,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ مَكَّةَ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ بِغَيْرِ إِحْرَامٍ ‏

অর্থ: হযরত জাবির রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি ছিল।
সূত্র: সহীহ মুসলিম হাদীস : ১৩৫৮

টুপি,পাগড়ির ব্যাপারে এমন সুস্পষ্ট হাদিস থাকা সত্ত্বেও এগুলোর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে হেযবুত তওহীদ।

 

দাজ্জাল নিয়ে অপব্যখ্যা

হেযবুত তওহীদের দাবি

দাজ্জাল কোন মানুষ আকৃতির নয়।বরং বর্তমানের ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতাই হচ্ছে দাজ্জাল।
সূত্র: দাজ্জাল? ইহুদী খৃষ্টান সভ্যতা।

ইসলাম কি বলে?

দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালের শারীরিক গঠনের বর্ণনাও প্রদান করেছেন। তিনি বলেনঃ

فَإِذَا رَجُلٌ جَسِيمٌ أَحْمَرُ جَعْدُ الرَّأْسِ أَعْوَرُ الْعَيْنِ كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ قَالُوا هَذَا الدَّجَّالُ

অর্থাৎ (স্বপ্নে) হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি স্থুলকায় লাল বর্ণের, কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙ্গুরের মত। লোকেরা বলল এ-হল দাজ্জাল!
সূত্র: সহিহ বুখারি হাদিস: ৩৪৪১

এ সম্পর্কে প্রচুর হাদিস রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে দাজ্জাল মানুষের থেকেই একজন হবে। তাতিত আদ দারি রা: তাকে নিজের চোখে পাকাদেখা আটকানো অবস্থায় দেখেছেন বলে হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে। সুতরাং এত প্রচুর হাদিস কে অস্বীকার করে বর্তমানের “ইহুদী-খ্রিষ্টান সভ্যতাই দাজ্জাল” বলে যারা বক্তব্য দেয় তারা হাদিসের আলোকে নয়, মূলত বাইবেলের সুরে কথা বলছে।

আম্বিয়ায়ে কেরাম নিয়ে মন্তব্য

হেযবুত তওহীদের দাবি:

সকল নবীরা আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু পন্নীকে দিয়ে পূর্ণ করাবেন বলে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন। ঈসা আ: অপরাধী ছিলেন। পন্নী সাহেবের মোজেজা নবীদের চেয়ে বেশি। পন্নী সাহেবের জন্য নবিদের চেয়ে বেশি দোয়া করতে হবে। কারণ অন্যান্য নবিদের এলাকা ছিল সীমিত আর আমাদের সমস্ত। মুহাম্মাদ স: আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেননি, তিনি রহমাতুল্লিল আলামিন নন।
সূত্র: আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা-৫৮/৬৫/৬৮/৮৩ এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃষ্ঠা-১০৪-১০৫ শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃষ্ঠা-১১৫ দাজ্জাল পৃ: ৫৫ আকীদা পৃ: ১৯

قُلۡ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَاۤ أُنزِلَ عَلَیۡنَا وَمَاۤ أُنزِلَ عَلَىٰۤ إِبۡرَ ٰ⁠هِیمَ وَإِسۡمَـٰعِیلَ وَإِسۡحَـٰقَ وَیَعۡقُوبَ وَٱلۡأَسۡبَاطِ وَمَاۤ أُوتِیَ مُوسَىٰ وَعِیسَىٰ وَٱلنَّبِیُّونَ مِن رَّبِّهِمۡ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ أَحَدࣲ مِّنۡهُمۡ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ

অর্থ: বলুন, ‘আমরা আল্লাহ্‌তে ও আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি যা নাযিল হয়েছিল এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাঁদের রবের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছিল তাতে ঈমান এনেছি; আমরা তাঁদের কারও মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী (তথা মুসলিম)।
সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮৪

সুতরাং কোন নবিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা বা ব্যার্থতার আলোচনা করে তাদের সম্মানে আঘাত করা কোনো মুসলমানের কাজ হতেই পারে না।

 

হেযবুত তওহীদে আসলে জান্নাত নিশ্চিত

হেযবুত তওহীদের দাবি:

“হেযবুত তওহীদে যারা সত্যিকার ভাবে এসেছ তাদের জন্য জান্নাত তো নিশ্চিত। এইখানেও যেন কারো মনে কোন সন্দেহ না থাকে যে জান্নাত নিশ্চিত”।
সূত্র: আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা পৃঃ৬৩

এমনকি একটি ভিডিও ক্লিপে হুমাইন সেলিম সাহেবের বক্তব্যে দেখলাম তিনি বলছেন, তোমরা হিন্দুদের হও,খ্রিষ্টান হও, ইহুদী হও যেউ যে ধর্মের হও না কেন? তোমরা যদি হেযবুত তওহীদের ডাকে সাড়া দাও তোমরা জান্নাতি।

ইসলাম কি বলে?

পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে, উম্মতের জন্য কাউকে নিশ্চিতরূপে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা নিষেধ।
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ كَانَ رَجُلَانِ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ مُتَوَاخِيَيْنِ، فَكَانَ أَحَدُهُمَا يُذْنِبُ وَالْآخَرُ مُجْتَهِدٌ فِي الْعِبَادَةِ، فَكَانَ لَا يَزَالُ الْمُجْتَهِدُ يَرَى الْآخَرَ عَلَى الذَّنْبِ فَيَقُولُ أَقْصِرْ فَوَجَدَهُ يَوْمًا عَلَى ذَنْبٍ، فَقَالَ لَهُ: أَقْصِرْ. فَقَالَ: خَلِّنِي وَرَبِّي أَبُعِثْتَ عَلَيَّ رَقِيبًا؟ فَقَالَ: وَاللَّهِ لَا يَغْفِرُ اللَّهُ لَكَ أَوْ لَا يُدْخِلُكَ اللَّهُ الْجَنَّةَ، فَقَبَضَ أَرْوَاحَهُمَا فَاجْتَمَعَا، عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ، فَقَالَ لِهَذَا الْمُجْتَهِدِ: أَكُنْتَ بِي عَالِمًا؟ أَوْ كُنْتَ عَلَى مَا فِي يَدِي قَادِرًا، وَقَالَ لِلْمُذْنِبِ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِي، وَقَالَ لِلْآخَرِ: اذْهَبُوا بِهِ إِلَى النَّارِ

অর্থঃ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “বনি ইসরাইলে দুই বন্ধু ছিল। তাদের একজন পাপ করত, দ্বিতীয়জন খুব ইবাদত গুজার ছিল। ইবাদত গুজার তার বন্ধুকে সর্বদা পাপে লিপ্ত দেখত, তাই সে বলত বিরত হও, একদিন সে তাকে কোন পাপে লিপ্ত দেখে বলে: বিরত হও। সে বলল: আমাকে ও আমার রবকে থাকতে দাও, তোমাকে কি আমার ওপর পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছে? ফলে সে বলল: আল্লাহর কসম আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না, অথবা তোমাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর তাদের উভয়ের রূহ কবজ করা হল এবং তারা উভয়ে আল্লাহর দরবারে একত্র হল। তিনি ইবাদত গুজারকে বলেন: তুমি কি আমার ব্যাপারে অবগত ছিলে? অথবা আমার হাতে যা রয়েছে তার ওপর তুমি ক্ষমতাবান ছিলে? আর পাপীকে তিনি বলেন: যাও আমার রহমতে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর ব্যক্তির জন্য বলেন: তাকে নিয়ে জাহান্নামে যাও ?
সূত্রঃ আবু দাউদ হাদিস-৪৯০১ মুসনাদে আহমাদ হাদিস-৮২৯২ ইবনে হিব্বান হাদিস-৫৭১২ উমদাতুত তাফসির খঃ ১ পৃঃ৫২২

উক্ত হাদিস থেকে স্পষ্ট হলো কাউকে জাহান্নামী বলার ভয়াবহতা কত মারাত্মক!
কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা একমাত্র তার দ্বারাই সম্ভব যার নিকট ওহী আসে। রাসূলুল্লাহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর ভিত্তিতেই সাহাবায়ে কেরামকে সুসংবাদ দিয়েছেন।
তাও আবার মাত্র ১০ জন সাহাবা রাঃ কে।

পৃথিবীতে যত উম্মতে মুহাম্মাদী এসেছেন তাদের ভেতর সর্বোত্তম মানুষ হলেন সাহাবায়ে কেরাম,
যারা একাত্ববাদ তথা তওহীদের চুড়ান্ত পর্যায়ের সর্বোচ্চ শিখরে ছিলেন। এতদ্বসত্বেও মাত্র ১০ জন ব্যতিত কাউকে খোদ নবিজি সঃ তাঁর জিবদ্দশায় জান্নাতি হওয়ার সার্টিফিকেট দান করেননি।
অথচ এতবড় সার্টিফিকেট দান করছেন বর্তমানের এই কুফরী গোষ্ঠিটি।

 

আলেম ও ফকীহদের নিয়ে সমালোচনা

হেযবুত তওহীদের দাবি:

আলেমরা সবচে হাসির পাত্র, ঘৃণিত, নিকৃষ্ট ও নেতৃত্বের অযোগ্য। আলেমদের নামাজ হয় না। আলেম,ফকীহ ও সুফিরা ইসলামকে কঠিন ও বিকৃত করে ধ্বংস করেছে এবং কুফরকে ইবাদত মনে করে কাজ করেছে। আলেমরা সত্যের বিরোধিতা করেন।তারা ইহুদী পুরোহীত ও আবু জেহেলেরমত। তাদের অনুসারীরা জাহান্নামী। তাদের হাতে ধর্মের নিয়ন্ত্রণ রাখা যাবে না। যারা দীনের বিনিময় নেন তারা আলেম নন। এরা খৃষ্টানদের এজেন্ট।এদের কারণে নবির নাম কালিমালিপ্ত হয়েছে। আলেমদের ফাতাওয়ার কারণে জাতি মুর্খ হয়ে জাহিলিয়াতকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফাতাওয়া দেয়ার অধিকার তাদের নেই। তারা অপদার্থ ওয়ারীশ। আলেমরা দাজ্জালকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছেন। মাযহাব অনৈসলামিক কাজ এবং মাযহাব উম্মাহকে ৭২ ফিরকায় তৈরি করে বিভক্ত করেছে। ফকীহদের কারণে মুসলিমরা অপমানিত।হেযবুত তওহীদ মাযহাব ধ্বংস করতে চায়।
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই-৯ ইসলামের প্রকৃত সালাহ-৩৫ এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:২৩/২৭/২৮/৩৫/৩৬/৪৯/৯৩/৯৪/৯৭/১০১/১২৫/১৩২ গণমাধ্যমের করণীয় পৃ:৯২ এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব পৃ:৩৭ আদর্শিক লড়াই পৃ:৭ মহাসত্যের আহ্বান পৃ:৩৪ আক্রান্ত দেশ ও ইসলাম পৃ:১৮ জঙ্গীবাদ সঙ্কট পৃ:৩৯/৬৬ ধর্মব্যবসার ফাঁদে পৃ:১৮/৯৯/১১৩ তওহীদ জান্নাতের চাবি-২৪ এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-৩১ হলি আর্টিজেনর পর-৯ ধর্মবিশ্বাস পৃষ্ঠা-১৯ সবার ঊর্ধ্বে মানবতা পৃষ্ঠা-৫ শিক্ষাব্যবস্থা পৃষ্ঠা-১৯/৫৬

ইসলাম কি বলে?

উম্মতের উলামায়ে কেরামের মর্যাদা দোজাহানে অপরিসীম। খোদ আল্লাহ তা’য়ালাই বলছেন,

يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা কিছু তোমরা কর।
সুরা মুজাদালাহ আয়াত: ১১

হাদিস শরীফে রাসুল সা: বলেন,

إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ

অর্থ : ‘‘আলিমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী, আর নবীগণ দিরহাম ও দিনারের (বৈষয়িক কোনো সম্পদের) উত্তরাধিকার রেখে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন ইলম। অতএব যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বিপুল অংশ লাভ করেছে।’’
সূত্র: সুনান আবু দাউদ হাদিস: ৩৬৪১ তিরমিযি: ৩৬৮২ ইবনে মাজা:২২২ আহমাদ:২১৭১৫

প্রিয় পাঠক! আলেম-উলামাকে মর্যাদা দান করেছেন মহান আল্লাহ ও তার রাসুল স:। পক্ষান্তরে আলেমদের নিয়ে কটাক্ষ করে নাস্তিক আর ইসলাম বিদ্বেষীরা।

তাযকিয়াতুন নফস

হেযবুত তওহীদের দাবি

আধ্যাতিক ঘষামাজা ইসলাম ও নবির স: শিক্ষা নয়,বরং খ্রিষ্টানদের শেখানো। এগুলো বেদাত। সুফিরা ধর্মকে বিকৃত করেছে।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:১১২
হলি আর্টিজেনের পর-১৩ বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ পৃষ্ঠা-১৭ প্রিয় দেশবাসী পৃ:১১৪ শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃষ্ঠা-৫৭

ইসলাম কি বলে?

তাযকিয়াতুন নফস বা আত্মশুদ্ধি ইসলামের মৌলিক মিশনের মধ্যে অন্যতম। যে কারণে মহান আল্লাহ নবিদের পাঠানোর মিশনের মধ্যে আত্মশুদ্ধিকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন,

لَقَدْ مَنَّ اللّهُ عَلَى الْمُؤمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُّبِين

অর্থ: আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।
আলে ইমরান আয়াত:১৬৪

যারা আত্মশুদ্ধি করে তাদের সফলতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا

অর্থ: যে নিজেকে আত্মশুদ্ধ (তাযকিয়াতুন নফস) করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।
সুরা শামস আয়াত:৯/১০

يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ

অর্থ: যে দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কোন উপকারে আসবে না; কিন্তু যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।
সুরা শুয়ারা আয়াত: ৮৮-৮৯

তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধির বিরুদ্ধে কথা বলা মানে পবিত্র কুরআনের এমন প্রকাশ্য আয়াতকে অস্বীকার করা।

 

ইবলিসের চ্যালেঞ্জ ও আল্লাহর পরাজয়

হেযবুত তওহীদের দাবি

ইবলিস আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল। আল্লাহও ইবলিসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ইবলিসের কাছে আল্লাহ হেরে গেছেন।
সূত্র: তওহীদ জান্নাতের চাবি-৪ প্রিয় দেশবাসী পৃষ্ঠা-৫৯ দাজ্জাল পৃ:১৬ এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-৩৭/৩৪ ধর্মব্যবসার ফাঁদে পৃ:১৩১

ইসলাম কি বলে?

সমস্ত ক্ষমতার মালিক হলেন মহান আল্লাহ। তাঁর উপর কোন ক্ষমতাধর নেই। মহান রব বলেন,

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاء وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاء وَتُعِزُّ مَن تَشَاء وَتُذِلُّ مَن تَشَاء بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

অর্থ: বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।
সুরা আলে ইমরান আয়াত: ২৬

সুতরাং আল্লাহ ইবলিসের কাছে হেরে গেছেন এমন আকীদা পোষণ করা কি শিরক নয়?

 

দ্বীনের বিনিময় নেয়া।

হেযবুত তওহীদের দাবি

দ্বীনের কাজে বিনিময় নেয়া হারাম। যারা নেয় তারা পথভ্রষ্ট,জাহান্নামী। যারা জায়েয করেছেন তারা বেঈমান। বিনিময় নিলে দ্বীন বিকৃত হয়ে যায়। তাদের পেছনে নামাজ,দোয়া হয় না।তাদের ওয়াজে কেউ পরিবর্তন হয় না। তারা আল্লাহর কাছে কোন প্রতিদান পাবে না।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:৪২/৭০ হলি আর্টিজেনের পর-৮ শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম পৃ:১৭৬ আক্রান্ত দেশ আক্রান্ত ইসলাম পৃ:৮ ধর্মব্যবসার ফাঁদে পৃ:৬৫/৭০/৮১

ইসলাম কি বলে?

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ

إنَّ أحَقَّ ما أخَذْتُمْ عليه أجْرًا كِتابُ اللَّهِ

অর্থাৎ যে সকল জিনিসের উপর তোমরা বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তন্মধ্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার সবচেয়ে বেশি হক রয়েছে আল্লাহর কিতাবের।
সূত্র: বুখারী হাদিস-৫৭৩৭

সুতরাং দ্বীনের যেকোনো কাজ করে বিনিমিয় নেয়া হারাম বা জাহান্নামে যাওয়ার কারন এমন কথা বলা পরিস্কার বিভ্রান্তিকর। কারণ নবি স: নিজে জিহাদে অর্জিত মালে গণীমত গ্রহণ করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামও গণীমতের মাল এবং খিলাফতের ভাতা গ্রহণ করেছেন। যা হেযবুত তওহীদ তাদের বই গুলোতেও স্বীকার করেছেন।
সূত্র: শিক্ষাব্যবস্থা পৃ:৬১ ধরব্যবসার ফাঁদে পৃ:৭৪ বিকৃত সুফিবাদ পৃ:৫৬

সুতরাং এমন বিভ্রান্তিকর, বানোয়াট কথা এবং আয়াতের অপব্যখ্যা থেকে জাতিকে মহান আল্লাহ হেফাযতের করেন।

 

কুরআন নিয়ে মন্তব্য

হেযবুত তওহীদের দাবি

কুরআনের আত্মা হারিয়ে গেছে এবং অর্থ পাল্টে গেছে।
সূত্র: সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ পৃষ্ঠা-১৯ ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে পৃষ্ঠা-৬

ইসলাম কি বলে?

কুরআন একটি অকাট্য মহাগ্রন্থ। যার হিফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিজেই নিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

অর্থ: আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
সুরা হিজর আয়াত: ৯

পবিত্র কুরআনের কোন শব্দ, অর্থ কেউ কোন ভাবে পাল্টাতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

وَإِنَّهُ لَكِتَابٌ عَزِيزٌ لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ

অর্থ: এটা অবশ্যই এক সম্মানিত গ্রন্থ। এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ
সুরা ফুসসিলাত আয়াত: ৪০-৪২

সুতরাং এমন স্পষ্ট আয়াত থাকা সত্ত্বেও “কুরআনের আত্মা নষ্ট হয়ে গেছে বা অর্থ পাল্টে গেছে” এমন দাবি করা প্রকাশ গোমরাহী।

 

নামাজ,রোজা,হজ্ব

হেযবুত তওহীদের দাবি

নামাজ কোন ইবাদত নয়,জিহাদের ট্রেনিং।
জিহাদ ছাড়া নামাজের কোন দাম নেই।বর্তমানে নামাজের উদ্দেশ্য বিকৃত হয়ে গেছে। বর্তমানের নামাজ মরা নামাজ।নামাজ জান্নাতের চাবি নয়।
রোজা নষ্ট হয়ে গেছে বহু আগে।’
চরিত্র ঠিক না হলে রোজা রেখে লাভ নেই। রোজা না রাখলে শাস্তি হবে এমন কথা কোরআনে নেই।
হজ্ব কোন ইবাদত নয়, মুসলিমদের বাৎসরিক সম্মেলন।
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই-১৪ ইসলামের প্রকৃত সালাহ-২২/৩০/৩২/৫৪/৫৫/৫৭/৬৬ সওমের উদ্দেশ্য-১০/১১/১২

ইসলাম কি বলে?

জিহাদ ইসলামে একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান।কিন্তু নামাজ,রোজা,হজ্ব এগুলো ইসলামের স্তম্ভ। হাদিসে এসেছে,

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ رَسُوْلُهٗ وَإِقَامِ الصَّلَاة وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ

অর্থ: ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল, নামাজ ক্বায়িম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্ব পালন করা এবং রমাযান মাসের সিয়াম পালন করা।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৮ মুসলিম: ১৬

ঘরের মূল খুঁটিকে ঘরের জানালা বা দরজার উপর নির্ভরশীল বলাটা যেমন বোকামী, তেমনি “নামাজ, রোজা,হজ্বকে জিহাদের ট্রেনিং বা জিহাদ ছাড়া এগুলোর মূল্য নেই” কথা বলাটা তেমন বোকামী।

 

নবিজির স: সুন্নাত

হেযবুত তওহীদের দাবি

সুন্নাত মানে জিহাদ। নবিজির স: ব্যক্তিগত খাওয়া,শোয়া,ওঠা,বসা অভ্যাস, পছন্দ-অপছন্দ পোশাক,টুপি,পাগড়ী, ইত্যাদী সুন্নাত নয়। এ গুলোর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্কই নেই।
সূত্র: আকীদা পৃ:১৬/১৭ এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-৩৮

ইসলাম কি বলে?

হাদিস শরীফে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে,

عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يُؤمن أحدكم حتى يكون هواه تبعا لما جئت به

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা: থেকে বর্ণিত, নবি স: বলেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার আনিত বিষয়াদী তার স্বভাবে পরিনত না হয়।
সূত্র: আল কাবায়ির (যাহাবী) হাদিস:৪৬৮ (হাদিস:সহিহ)

উপরন্তু নবিজি স: বলেন,

عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كُلُّ أُمَّتي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلّا مَن أَبى، قالوا: يا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَن يَأْبى قالَ مَن أَطاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَن عَصانِي فقَدْ أَبى

অর্থ: আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু অস্বীকারকারী ব্যতীত। তারা বললেন, কে অস্বীকার করে। তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হয় সে-ই অস্বীকার করে’
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৭২৮০

দিবস

হেযবুত তওহীদের দাবি

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন আঞ্চলিক নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে নিষিদ্ধ করেন নি, কারো সংস্কৃতিকেই অবজ্ঞা করে নি। সুতরাং নবান্ন উৎসব, চৈত্রসংক্রান্তি বা পহেলা বৈশাখসহ সকল উৎসব আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী হয়।
সূত্র: গনমাধ্যমের করণীয় পৃষ্ঠা-৫৯/৬০ গঠনতন্ত্র পৃ:৩৩-৩৪ মহাসত্যের আহ্বান পৃ:৯৪/৯৬/৯৭ আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই-১২

ইসলাম কি বলে?

ইসলামে দুটি ঈদ ব্যতিত কোন দিবস পালন করা যাবে না। যা নবিজির স: এ হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,

عن أنس بن مالك قال قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟ قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ

অর্থ: হযরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন মদীনাবাসীদের দু’টি দিবস ছিল, যে সময় তারা খেলাধুলা, রঙ-তামাশা ইত্যাদি উৎসব করতেন। তা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : এ দু’টি দিবস কী? তারা বললেন : আমরা এতে জাহিলী যুগে খেলতামাশা উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন : ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১১৩৪, নাসাঈ:১৫৫৬ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১২০০৬

এমন সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকার পরও যারা এগুলো হালাল বলতে চায়, তারা মূলত মুক্তমনাদের চেতনা বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর।

 

কালেমার অর্থ

হেযবুত তওহীদের দাবি

“লা-ইলাহা ইল্লাহ” এর অর্থ আল্লাহ ছাড়া বিধানদাতা নাই। কিন্তু বর্তমানে অর্থ করা হয় ” আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নাই। এটা ভুল।
“ইলাহ” শব্দের অর্থ মাবুদ নয়, বরং প্রকৃত অর্থ হলো বিধানদাতা। প্রচলিত কালেমার অর্থ “আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নয়” এটা খ্রিষ্টানদের তৈরি।
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:১১১
তওহীদ জান্নাতের চাবি-১৮ ইসলামের প্রকৃত সালাহ-৮-৯/৬১

ইসলাম কি বলে?

এ বিষয়টি বুঝতে আমাদের জানতে হবে, আগের যুগে প্রচুর পরিমান লোক মূর্তি পুজা করতো। আজও যারা মুর্তি পুজা করে তারা কিন্তু শুধু মুর্তির পুজা করে, মুর্তির হুকুম বা বিধান মানে না। কারণ তারাও জানে মুর্তি কোন কথা বলতে পারে না। যে মুর্তি কথাই বলতে পারে না, তার বিধান আসবে কোথেকে? মূলত এ পুজা থেকেই উম্মতকে বিরত থাকতে সমস্ত নবিরা আল্লাহর তরফ থেকে এসেছিলেন। সে কথা খোদ আল্লাহ তা’য়ালাই বলেছেন-

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

অর্থ: আর আমি প্রত্যেক জাতির কাছে একজন রাসুল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো। (সুরা নাহাল—৩৬)

উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে সমস্ত নবিগণ মুর্তির ইবাদত থেকে বিরত থাকতে বলতেন। প্রশ্ন হলো কি বলে দাওয়াত দিতেন? সে জবাবও আল্লাহ দিচ্ছেন-

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ

অর্থ: আর আপনার পূর্বে আমি যে রাসুলই প্রেরণ করেছি, তার ওপর এই প্রত্যাদেশই করেছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সুরা আম্বিয়া—২৫)

প্রিয় পাঠক! সমস্ত নবিগণ মুর্তির ইবাদত থেকে উম্মাতকে ফিরাতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দাওয়াত দিয়েছেন। এখানে ‘ইলাহ’ এর অর্থ যদি করা হয় আল্লাহ ছাড়া কোন বিধানদাতা নেই, তাহলে এটা কি কোন সচেতন মানুষের কাজ? কারণ তারা করতো মূর্তির ইবাদত, মুর্তির বিধান মানতো না। যেহেতু তারা মূর্তি ইবাদত করতো,সেহেতু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ তখনও করা হতো আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই।
যদি তখনকার কাফেররা মূর্তির হুকুমানতো তাহলে অর্থ ধরা হতো- আল্লাহ ছাড়া কোন বিধানদাতা নেই।

 

যুক্তি ও ইসলাম।

হেযবুত তওহীদের দাবি

ইসলামকে যুক্তির আলোকে মানতে হবে।
সূত্র: আকীদা-১

ইসলাম কি বলে?

ইসলাম যুক্তিনির্ভর নয়। বরং যুক্তি ইসলাম নির্ভর। আল্লাহ ও তার রাসুল স: এর বাধানো যুক্তি ভুজা পালন করার চেষ্টা করা এক চরম অন্যায়। বরং গোলাম তার মুনিবের সকল কথা বিনা যুক্তিতে মেনে নেবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا

অর্থ: আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়।
সুরা আহযাব আয়াত:৩৬

যুক্তিনিষ্ঠ কারণে ফিরিস্তা আযাযিল মারদুদ হয়ে ইবলিসে পরিনত হয়েছে। যা পবিত্র কুরআনে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। অতএব আমরা ইসলামের কোনো বাধানো, কোনো বিষয়ে যুক্তি তালাশে মত্ত না হই।

Check Also

…৫১ নাম্বারে আমার নাম। …করোনাকালীন সময়ে কোথায় ছিলে ما يلفظ من قول الا الخ তোমাদের …