Home > সুন্নাতি জিবন > ইন্তিঞ্জার সুন্নাতসমূহ:

ইন্তিঞ্জার সুন্নাতসমূহ:

 

১. তিনিটি ঢেলা,কুলুখ বা টিস্যু এবং পানি ব্যবহার করা।

ক. ইস্তিঞ্জা করার জন্য তিনটি ঢেলা বা টিস্যু নিয়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব। যদি আগ থেকেই বাথরুমে ব্যবস্থা করা থাকে তো ভাল।

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إذا ذهَبَ أحَدُكم إلى الغائطِ فلْيَذهَبْ معه بثلاثةِ أحجارٍ يَستطيبُ بهنَّ فإنَّها تجزئُ عنه

অর্থ: হযরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স: বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় যাবে, সে যেন তিনটি পাথর নিয়ে যায়। সে তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। আর এটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদীস-৪০ নাসাঈ-৪৪ আহমাদ-২৫০৫৬

বি: দ্র: বর্তমান সময়ে ঢিলা ব্যবহারে পরিবেশ নোংড়া হওয়ায় উলামায়ে কেরাম টিস্যু ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেন বাথরুম নোংড়া না হয়।
সূ্ত্র: পিয়ারে নবী কি পিয়ারি সুন্নাতি পৃ: ৭

খ. পানি ব্যবহার করা।

তিনটি ঢিলা,কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করার পর অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা।

قَالَ عَلِيٌّ إِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَبْعَرُونَ بَعْرًا وَإِنَّكُمْ تَثْلِطُونَ ثَلْطًا فَأَتْبِعُوا الْحِجَارَةَ بِالْمَاءِ

অর্থ: হযরত আলী রা. বলেছেন, তোমাদের পূর্বের লোকেরা পশুর মত (শক্ত) মল ত্যাগ করত। আর তোমরা পাখির মত (নরম) মল ত্যাগ কর। তাই তোমরা ঢিলা ব্যবহারের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করবে।
সূত্র: বায়হাকী খ:১ পৃ:১০৬ ই’লাউস সুনান হাদিস-৪৩১ নাসবুর রায়াহ খ:১ পৃ:২১৯ আদ দিরায়াহ খ:১ পৃ:৯৭ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস-১৬৪৫ ( ইবনে হাজার রাহ. বলেন- হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণিত)।

উপরন্তু আল্লাহ তা’আলা কুরআন মাজিদে এমন লোকদের প্রশংসা করে বলেন,

فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ

অর্থ: তাতে এমন লোকজন রয়েছে, যারা অধিক পবিত্রতা পছন্দ করে। আর আল্লাহ তাআলা পবিত্রতাঅর্জনকারীদের পছন্দ করেন।
সূরা তাওবা, আয়াত: ১০৮

অত্র আয়াতের তাফসীরের ভেতর এসেছে,

عن أَبُي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيّ وَجَابِر بْنُ عَبْدِ اللَّهِ وَأَنَس بْن مَالِكٍ أَنَّ هَذِهِ الآيَةَ نَزَلَتْ ‏فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَثْنَى عَلَيْكُمْ فِي الطُّهُورِ فَمَا طُهُورُكُمْ قَالُوا نَتَوَضَّأُ لِلصَّلاَةِ وَنَغْتَسِلُ مِنَ الْجَنَابَةِ وَنَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ قَالَ ‏هُوَ ذَلِكَ فَعَلَيْكُمُوهُ

অর্থ: হযরত আবূ আইউব আল-আনসারী, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ ও আনাস ইবনু মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিত। নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হলে (অনুবাদ) সেখানে এমন লোকও আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন।
সূরা তওবা আয়াত: ১০৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আনসার সম্প্রদায়, আল্লাহ তোমাদের পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে প্রশংসা করেছেন। তোমরা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করো? তারা বলেন, আমরা নামাজের জন্য উযূ করি, জানাবাতের (শারীরিক অপবিত্রতা দূরীকরণের) জন্য গোসল করি এবং পানি দিয়ে শৌচ করি। তিনি বলেনঃ এটাই (প্রশংসার) কারণ। অতএব তোমরা এটাকে অপরিহার্যরূপে ধারণ করো।
সূত্র: সুনানে ইবন মাজাহ হাদিস: ৩৫৫

২. মাথা ঢাকা ও জুতা পরিধান করে প্রবেশ করা।

বাথরুমে প্রবেশ করার আগে মাথা ঢেকে নেয়া এবং জুতা পরিধান করা। কারণ নবীজি সা. বলেছেন,

عَنْ حَبِيبِ بْنِ صَالِحٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ لَبِسَ حِذَاءَهُ وَغَطَّى رَأْسَهُ

অর্থ: হাবিব ইবনে সালেহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. শৌচাগারে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁর জুতা পরিধান করতেন এবং মাথা আবৃত করতেন।
সূত্র: সুনানে কুবরা (বায়হাকী) খ. ১ পৃ. ৯৬ হাদিস: ৪৫৬ জামে সগীর হাদিস: ৬৬৪৯

৩. দু’আ পড়া।

বাথরুমে প্রবেশ করার আগে নবীজি সা. একটি দু’আ পড়তেন। হাদিসে এসেছে,

عن أنس بن مالك قال كانَ إذا دخلَ الْكَنِيفَ قال بسمِ اللهِ اللهمَّ إنِّي أعوذُ بكَ منَ الخُبُثِ والخبائثِ

অর্থ: হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইস্তিঞ্জার জন্য গমন করলে এই দু‘আটি পাঠ করতেন-

بسمِ اللهِ اللهمَّ إنِّي أعوذُ بكَ منَ الخُبُثِ والخبائثِ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ, আল্ল-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-ইসি।

অর্থঃ “আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি – অপবিত্র, অকল্যাণ, খারাপ কর্ম থেকে বা পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে।”
সূত্র: জামে সগীর হাদিস: ৬৬৪৬ (হাদিসটি সহিহ)
যতটুকু সম্ভব জমীনের নিকটবর্তী হয়ে কাপড় খোলা।

বি:দ্র: মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বলেছেন, বাথরুমে প্রবেশ করার সময় উক্ত দুআটি পড়লে খবিশ জ্বিন এবং লোকটির মাঝে একটি পর্দা পড়ে যায়। ফলে জ্বিন উক্ত লোকটির লজ্জাস্থান আর দেখতে পায় না।

৪. বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা

বাথরুমে প্রবেশ করার সময় বাম পা আগে প্রবেশ করানো। কারণ হাদিসে এসেছে,

عن حَفْصَة زَوْج النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَجْعَلُ يَمِينَهُ لِطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ وَيَجْعَلُ شِمَالَهُ لِمَا سِوَى ذَلِكَ

অর্থ: হযরত হাফছা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদ্য গ্রহণ, পানি পান ও বস্ত্র পরিধানের সময় স্বীয় ডান হাত ব্যবহার করতেন, এছাড়া অন্যান্য যাবতীয় কাজে বাম হাত ব্যবহার করতেন। (অর্থাৎ তিনি ভাল কাজের জন্য ডান হাত এবং নিকৃষ্ট কাজের জন্য বাম হাত ব্যবহার করতেন)।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস: ৩২

৫. যমীনের নিকটবর্তী হয়ে কাপড় খোলা

বাথরুমে যখন কাপড় খুলবে, তখন সহজভাবে যতটুকু যমীনের নিকটবর্তী হয়ে কাপড় খোলা। কারণ হাদিসে এসেছে,

عن أنس بن مالك وعبدالله بن عمر وجابر بن عبدالله أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كانَ إذا أرادَ الحاجةَ لمْ يرفعْ ثوبَهُ حتى يدنُو مِنَ الأرضِ

অর্থ: হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পেশাব-পায়খানার ইরাদা করতেন, তখন তিনি জমীনের নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত কাপড় উঠাতেন না। সূত্র: জামে সগীর হাদিস: ৬৫২৬ (হাদিসটি সহিহ)

৬. বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় দু’আ পড়া।

বাথরুম থেকে বের হয়ে নির্দিষ্ট এতটি দু’আ রয়েছে, যা নবীজি সা. নিয়মিত পড়তেন। হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا خَرَجَ مِنَ الْخَلاَءِ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الأَذَى وَعَافَانِي

অর্থ: হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় বলতেনঃ

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الأَذَى وَعَافَانِي

অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য যিনি আমার থেকে কষ্ট দূর করেছেন এবং স্বস্তি দান করেছেন।
সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস: ৩০১ জামে সগীর: ৬৬৩১

৭. আল্লাহ রাসুল সা. ওর নাম বা কুরআনের আয়াত লিখিত আংটি খুলে রাখা।

আংটি অথবা কোনো জিনিষে যদি কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম বা নবী সা. এর নাম লেখা থাকে এবং তা প্রবেশমান থাকে অর্থাৎ দেখা যায়, তাহলে সেটা খুলে বাথরুমে প্রবেশ করতে হবে। বাথরুম শেষে পূনরায় পরে নেবে। অবশ্য তাবিজ যা মোম দ্বারা মুখ আটকানো থাকে এমন জিনিষ নিয়ে বাথরুমে যেতে অসুবিধা নেই। হাদিস শরীফে এসেছে,

َلَبِسَ خَاتَمًا مِنْ وَرِقٍ وَنَقَشَ فِيهِ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ

অর্থাৎ নবীজি সা. রূপার আংটি পরতেন, যাতে তিনি ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’ নকশা করিয়ে নেন।
সূত্র: সুনানে নাসাঈ হাদিস: ৫২১৫

যেহেতু আল্লাহ ও তার রাসুল সা. এর নাম আংটিতে লেখা ছিল, সেজন্য তিনি উক্ত আংটি খুলে বাথরুমে প্রবেশ করতেন। হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ نَزَعَ خَاتَمَهُ

অর্থ: হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামযখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর আংটি খুলে রাখতেন।
সূত্র: সুনানে নাসাঈ হাদিস: ৫২১২

৮. কিবলার দিকে মুখ ও পিঠ করে না বসা।

পায়খানা-পেশাব অবস্থায় কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে না বসা। কারণ হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْغَائِطَ فَلاَ يَسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ وَلاَ يُوَلِّهَا ظَهْرَهُ

অর্থ: হযরত আবূ আইয়ুব আনসারী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন শৌচাগারে যায়, তখন সে যেন কিবলার দিকে মুখ না করে এবং তার দিকে পিঠও না করে।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ১৪৪

৯. কোনো ধরণের কথা না বলা।

পায়খানা-পেশাব করা অবস্থায় আল্লাহর যিকির করা, সালাম আদান-প্রদান করা বা যেকোনো ধরণের কথাবার্তা বলা যাবে না। কারণ এগুলো নবীজি সা. থেকে নিষেধ করা হয়েছে,

ক. আল্লাহর যিকির না করা।

وقال عكرمة لا يذكر الله وهو على الخلاء بلسانه ولكن بقلبه
অর্থ: হযরত ইকরামা বলেন, পায়খানা-পেশাবেে করা অবস্থায় মুখ দ্বারা আল্লাহর যিকির করবে না,বরং অন্তরে অন্তরে করবে।
সূত্র: আল মুগনী (ইবনে কুদামা রহ.) হাদিস: খ: ১ পৃ: ১৬৬ আওসাত খ:১ পৃ: ৩৪১

খ. সালামের আদান-প্রদান না করাা।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً سَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَبُولُ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ

অর্থ: ইবনু উমার রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রস্রাবরত অবস্থায় একজন লোক তাকে সালাম দিল। কিন্তু তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দেননি।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ৩৭০ তিরমিযি: ২৭২০

গ. যেকোনো ধরণের কথা না বলা।

কারণ হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَبي سَعِيدٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لَا يَخْرُجُ الرَّجُلَانِ يَضْرِبَانِ الْغَائِطَ كَاشِفَيْنِ عَنْ عَوْرَتِهِمَا يَتَحَدَّثَانِ فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَمْقُتُ عَلَى ذَلِكَ

অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ আল-খুদরী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ দুই ব্যক্তি একই সঙ্গে পেশাব-পায়খানায় জন্য বের হবে না এবং আপন লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করে কথাবার্তা বলবে না। কারণ এরূপ কাজে মহাসম্মানিত আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।
সূত্র: সুনানে কুবরা (বাইহাকী) হাদিস: ৪৮৩ হাকেম: ৫৬০ আবু দাউদ: ১৫ ইবনে মাজাহ: ২৪ ইবনে খুযাইমাহ: ৭১ (হাদিস সহিহ)

১০. পেশাব-পায়খানার নাপাকীর ছিটা থেকে সতর্ক থাকা।

হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى قَبْرَيْنِ فَقَالَ أَمَا إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ قَالَ فَدَعَا بِعَسِيبٍ رَطْبٍ فَشَقَّهُ بِاثْنَيْنِ ثُمَّ غَرَسَ عَلَى هَذَا وَاحِدًا وَعَلَى هَذَا وَاحِدًا ثُمَّ قَالَ ‏لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি বললেন, (জেনে রাখ) এ দু’ কবরবাসীকে আযাব দেয়া হচ্ছে। তবে কোন কঠিন (কাজের) দরুন তাদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন চোগলখোরী করত। আর অপরজন তার প্রস্রাব থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না। তিনি [ইবনু আব্বাস (রাযিঃ)] বলেনঃ অতঃপর তিনি খেজুরের একটি কাঁচা ডাল আনিয়ে দু’টুকরো করলেন। তারপর প্রত্যেক কবরের ওপর একটি করে গেড়ে দিলেন। আর বললেনঃ সম্ভাবনা আছে, আযাব কিছুটা হালকা করা হবে যতদিন পর্যন্ত এ দুটি না শুকিয়ে যাবে।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৯২

১১. নাপাকী দূর করতে ডান হাত ব্যবহার না করা।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإِنَاءِ وَإِذَا أَتَى الْخَلاَءَ فَلاَ يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ وَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِينِهِ

অর্থ’ হযরত আবূ কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন শৌচাগারে যায় তখন তার পুরূষাঙ্গ যেন ডান হাত দিয়ে স্পর্শ না করে এবং ডান হাতে ইস্তিঞ্জা না করে।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ১৫৪ মুসলিম: ২৬৭

১২. মানুষের দৃষ্টি অগচরে চলে চলে যাওয়া।

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَأْتِي الْبَرَازَ حَتَّى يَتَغَيَّبَ فَلاَ يُرَى

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে এতটা দূরে যেতেন যে, তাঁকে দেখা যেত না। (সূত্র: সুনান ইবনে মাজাহ হাদিস: ৩৩৫

১৩.নরম জায়গায় পেশাব করা, যেন পেশাবের ছিঁটা কাপড়ের না লেগে বরং মাটিতে চু্ষে নেয়।

হযরত আবূ মূসা রা. সূত্রে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন,

إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يَبُولَ فَلْيَرْتَدْ لِبَوْلِهِ مَوْضِعًا‏

অর্থাৎ তোমাদের কেউ পেশাব করতে চাইলে যেন নীচু নরম জায়গা অনুসন্ধান করে নেয়।
সূত্র: সুনান আবু দাউদ হাদিস: ৩

১৪. বসে পেশাব করা, দাঁড়িয়ে পেশাব না করা।

عَنْ عُمَرَ قَالَ رَآنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَبُولُ قَائِمًا فَقَالَ يَا عُمَرُ لاَ تَبُلْ قَائِمًا فَمَا بُلْتُ قَائِمًا بَعْدُ

অর্থ: হযরত উমার রা. বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখেন। তিনি বলেনঃ হে উমার! দাঁড়িয়ে পেশাব কর না। (উমার রা. বলেন,) তারপর আমি আর কখনও দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি।”
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ১২

১৫. পেশাবের ফোঁটা আসা বন্ধ হওয়ার জন্য আড়ালে সামান্য হাটাহাটি, গলায় খাকরি ইত্যাদী করা।

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ مَكَّةَ أَوِ الْمَدِينَةِ سَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِي قُبُورِهِمَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ ثُمَّ قَالَ: بَلَى كَانَ أَحَدُهُمَا لَا يَسْتَبْرِئُ مِنْ بَوْلِهِ

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার অথবা মক্কার এক বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তখন দুই ব্যক্তির আওয়ায শুনতে পেলেন যাদেরকে কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদেরকে আযাব দেওয়া হচ্ছে। (এমন) বড় কোনো কারণে আযাব দেওয়া হচ্ছে না (যা থেকে বাঁচা খুব কঠিন)। এরপর বললেন, হাঁ, (তবে বড় গুনাহ)। তাদের একজন পেশাব থেকে ইস্তিবরা করত না। (নাসাঈ: ২০৭৬)

ইস্তিবরা” কি?

আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাসহ অনেক কিতাবে বলা হয়েছে,

طلب البراءة من الخارج بما تعارفه الإنسان من مشي أو تنحنح أو غيرهما إلى أن تنقطع المادة.

অর্থ: ইস্তিবরা হল, পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য প্রত্যেকের অভ্যাস অনুযায়ী এই পর্যন্ত হাঁটা-হাঁটি, গলা খাকরি ইত্যাদি করা যে, পেশাবের কিছুই বাকি না থাকে। ।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ: ১ পৃ: ৫৫৮ আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ খ:৪ পৃ: ১১৩

১৬. ডান পা দিয়ে বের হওয়া।

ডান পা দিয়ে বের হওয়া।

عن عائشة أم المؤمنين قالت كانَ النبيُّ ﷺ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ في تَنَعُّلِهِ وتَرَجُّلِهِ وطُهُورِهِ وفي شَأْنِهِ كُلِّه

আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুতা পরা, চুল অাঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন করা তথা প্রত্যেক কাজই ডান দিক হতে আরম্ভ করতে পছন্দ করতেন।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস-১৬৮ মুসলিম-২৬৮

Check Also

মসজিদে প্রবেশ করার সময় সুন্নাতসমূহ

১. ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা। হাদিস শরীফে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ يُحِبُّ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.