Home > হিজবুত তাওহীদ > বাদ্যযন্ত্র হারাম নয়, হালাল, বরং ইবাদতও বটে।

বাদ্যযন্ত্র হারাম নয়, হালাল, বরং ইবাদতও বটে।

প্রিয় পাঠক! ইসলামে বাদ্যযন্ত্র হারাম করা হয়েছে।যার প্রমাণ পবিত্র কুরআন এবং হাদিস থেকে অহরহ পাওয়া যায়। এতদ্বসত্বেও বর্তমানে হেযবুত তওহীদ গান-বাদ্যকে হালাল বলার পাশাপাশি পাল্টাযুক্তি পেশ করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। আগে চলুন, দেখুন তারা কি বলছে-

হেযবুত তওহীদের দাবি:

“যে কোন জিনিস হারাম কিনা তা জানার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কেতাব দেখতে হবে।কোরআনে যা কিছু নিষিদ্ধ করা হোয়েছে সেগুলি ছাড়া আর সবই বৈধ।এখন কোরআনে দেখুন গান,বাদ্যযন্ত্র,চলচিত্র,নাট্যকলা,অভিনয়,নৃত্য,চিত্রাঙ্কন, ভাষ্কর্য নির্মাণ ইত্যাদি আল্লাহ হারাম কোরেছেন কিনা? যদি না কোরে থাকেন তাহলে এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ।আল্লাহ যেটিকে বৈধ কোরেছেন সেটিকে কোন আলেম,মুফতি,ফকীহ ,মোফাসসের হারাম করার অধিকার রাখেন না।”
সূত্রঃ আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই-পৃঃ১২

ধর্ম কখনো গান-বাদ্য নৃত্যকে না জায়েজ করতে পারেনা। সনাতন ধর্ম সহ অনেক ধর্মেই এগুলি ঈশ্বরের সান্নিধ্য প্রাপ্তির মাধ্যম ছিল প্রকৃতপক্ষে স্বয়ং স্রষ্টাই সুর ও নৃত্য সৃষ্টি করেছেন।
সূত্রঃ গনমাধ্যমের করণীয় পৃ:৫৯

মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত সুর, বিভিন্ন তার যন্ত্রের ওপর আঘাত বা ঘর্ষণজনিত আওয়াজ,দফ, তবলা বা অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ও হারাম নয়।
সূত্র: গনমাধ্যমের করণীয় পৃষ্ঠা-৬০

মুসলিম শিল্পীরা অনেক বাদ্যযন্ত্র শুরলহরী উদ্ভাবন ও রচনা করেছেন একথা সকলেই অবহিত আছেন।
সূত্র: গনমাধ্যমের করণীয় পৃষ্ঠা-৬০

এগুলো ছাড়াও তারা তাদের বক্তব্যে যে গান-বাদ্যে সমাজের উপকার হয়, সে বাদ্য যন্ত্রকে তারা শুধু হালাল নয়, বরং ইবাদত বলে প্রচার করছেন এবং তাদের সদস্যদেরকে সেদিকে উতসাহ যোগাচ্ছেন।

ইসলাম কি বলে?

চলুন এবার দেখি বাদ্যযন্ত্রসহ গান সম্পর্কে ইসলাম কি বলছে?

বাদ্যযন্ত্র ও নর্তকী ইসলামে হারামঃ .
১. আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

১. মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ

অর্থাৎ একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে لهو الحديث অনর্থক কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
সূরা লুকমান আয়াত: ৬

উক্ত আয়াতে لهو الحديث এর ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ রহ. বলেন,

اللهو الطبل

অর্থাৎ لهو الحديث হলো, ঢোল-তবলা।
সূত্র: তাফসীরে তাবারী খ. ২০ পৃ. ১৩০

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন,

وَقَالَ الْحَسَنُ الْبَصْرِيُّ أُنْزِلَتْ هذه الآية ‘وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْم’ فِي الْغِنَاءِ وَالْمَزَامِيرِ

অর্থাৎ এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে গান এবং বাঁশির ব্যাপারে।
সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৩ পৃ. ৪৫১

২. নবীজি সা. বলেন,

إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيَّ أَوْ حُرِّمَ الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْكُوبَةُ

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন অথবা হারাম করা হয়েছে মদ, জুয়া এবং বাদ্যযন্ত্র।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস: ৩৬৯৬

১. রাসুলুল্লাহ সঃ বলেন-

عن أبي أمامة الباهلي قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم لا تبيعوا القيّناتِ ولا تشتروهنّ. ولا تُعلّموهنّ. ولا خيرَ في تجارةٍ فيهن. وثمنهنّ حرامٌ. في مثْلِ هذا أنزلتْ هذهِ الآيةِ ( وَمِنَ النّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الحَدِيثِ لِيضلَّ عَنْ سبيلِ اللهِ

অর্থঃ তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম।
সূত্রঃ জামে তিরমিযী হাদীস-১২৮২ ইবনে মাজাহ হাদীস- ২১৬৮ মুসনাদে আহমাদ হাদিস-২২২৮০

৩. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ

অর্থঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে।
সূত্রঃ
সহীহ বুখারী-৫৫৯০ তাহযিবুস সুনান খঃ১০ পৃঃ১৫৩ ফতহুল গফফার খঃ৪ পৃঃ১৮৯১

৪. হাদিস শরিফে এসেছে-

أبا مالِكٍ الأشعريَّ صاحبَ رسولِ اللَّهِ ﷺ يحدِّثُ عنِ النَّبيِّ ﷺ أنَّهُ قالَ ليشربَنَّ أُناسٌ من أمَّتي الخَمرَ يسمُّونَها بغيرِ اسمِها ويُضرَبُ على رءوسِهِمُ المعازِفُ والمغنِّياتُ يخسفُ اللَّهُ بِهِمُ الأرضَ ويَجعلُ منهمُ القردةَ والخَنازيرَ

অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।
সূত্রঃ বায়হাকী খঃ১০ পৃঃ২২১ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস-৪০২০ সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস-৬৭৫৮

৫. অন্য হাদিসে এসেছে-

عن سهل بن سعد الساعدي قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم سيكونُ في آخرِ الزَّمانِ خسفٌ وقذفٌ ومسخٌ قيل ومتى ذلك يا رسولَ اللهِ قال إذا ظهَرَتِ المعازفُ والقَيْناتُ واستُحِلَّتِ الخمرُ

অর্থাত নবী সঃ বলেন অদূর ভবিষ্যতে শেষ যামানায় মানুষের চেহারা বিকৃতি,ভূমিধ্বস হবে।
সাহাবা রাঃ বললেন হে রাসুল সঃ সেটা কখন হবে? নবি সঃ বললেন যখন বাদ্যযন্ত্র,নর্তকী বেশি বেড়ে যাবে এবং মদকে হালাল মনে করা হবে।
সূত্রঃ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খঃ৮ পৃঃ১৩

৬. হাদিস শরিফে এসেছে-

عن أبي أمامة الباهلي قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم إنَّ اللهَ بَعَثَني رَحمةً للعالمينَ وهُدًى للعالمينَ وأمَرَني ربِّي بمَحقِ المَعازفِ والمَزاميرِ والأَوْثانِ والصُّلُبِ وأمْرِ الجاهليَّةِ

অর্থাৎ আবু উমামা বাহিলী রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী সঃ বলেছেন যে,মহান আল্লাহ আমাকে বিশ্ববাসির জন্য রহমত এবং পথপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন এবং আমাকে আদেশ করেছেন যেন আমি বাদ্যযন্ত্র এবং মূর্তি,ক্রুশ এবং জাহিলী যুগের কর্ম ধংশ করে দিই।
সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ হাদিস-২২৩০৭ তয়ালিসি হাদিস-১২৩০ তবরানী হাদিস-৭৮০৩

৭. বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে

عَنْ نَافِعٍ، قَالَ: سَمِعَ ابْنُ عُمَرَ، مِزْمَارًا قَالَ: فَوَضَعَ إِصْبَعَيْهِ عَلَى أُذُنَيْهِ، وَنَأَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَقَالَ لِي: يَا نَافِعُ هَلْ تَسْمَعُ شَيْئًا؟ قَالَ: فَقُلْتُ: لَا، قَالَ: فَرَفَعَ إِصْبَعَيْهِ مِنْ أُذُنَيْهِ، وَقَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ مِثْلَ هَذَا فَصَنَعَ مِثْلَ هَذَا

অর্থ: একদা হযরত ইবনু উমার রা. বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেয়ে উভয় কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা থেকে সরে গিয়ে আমাকে বললেন, হে নাফি‘! তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছো? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি কান থেকে হাত তুলে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি এ ধরণের শব্দ শুনে এরূপ করেছিলেন।
সূত্র. মুসনাদে আহমদ হাদীস: ৪৫৩৫ সুনানে আবু দাউদ: ৪৯২৪ সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৯০১

সুপ্রিয় পাঠক! এমন প্রমাণ যদি দিতে থাকি ভুরিভুরি প্রমাণ দেয়া যাবে কোরআন এবং হাদিস থেকে।

একটি উদহরণঃ

যদি আপনি একজন অমুসলিম সাধকের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করেন যে, ঠাকুর মশাই! দেখি আপনার কাছে কি কি আছে যা দিয়ে সাধক হতে পারলেন?
দেখা যাবে রবীন্দ্রনাথের মত দাঁড়ি,মোচ আছে, তবে মেসওয়াক নাই,টুপি নাই,জায়নামাজ নাই। আছে টা কি? দেখাবে ঢোল, তবলা,গিটার,হারমুনিয়াম ইত্যাদী ইত্যাদী।
এবার যদি প্রশ্ন করেন- ‘এগুলো কেন’?
তখন তিনি বলবেন- ‘আমাদের ধর্মে এগুলো প্রচলন রয়েছে। এগুলো অবৈধ নয়।’

পক্ষান্তরে কোন এক আল্লাহওয়ালার কাছে যান গিয়ে যদি প্রশ্ন করেন যে, হুজুর! দেখি আপনার কাছে কি কি আছে? দেখা যাবে টুপি,দাঁড়ি,পাঞ্জাবী,মেসওয়াক,জায়নামাজ আছে।

সুতরাং যে সমস্ত মাজারে শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের মত দাঁড়ী,মোচ আছে, তারা যেমন মুসলমানদের ধর্ম গুরু নন, বরং তারা হিন্দুদের ধর্মগুরু।
তেমনি হিন্দুদের কাছে গেলে যেমন ঢোল তবলা পাওয়া যায়,তেমনি হেবযুত তওহীদের কাছেও ঢোল-তবলা পাওয়া যায়।
হিন্দুরা যেমন মুসলমান নন, তেমনি হেযবুত তওহীদদের কেউ মুসলমান নন। তাদের মুসলমান বলার কোন সুযোগ নেই।

নাচ-গান সংস্কৃতি কাদের কালচার?

প্রিয় পাঠক, নাচ-গান বা প্রচলিত সংস্কৃতি অমুসলিমদের কালচার এটা আমরা সবাই জানি। শুধু আমরা নই, খোদ হেযবুত তওহীদেরও দাবি হলো: এগুলো কাফেরদের কাজ। তারা তাদের বইয়ে লিখেছে যে-

পতিতাবৃত্তি, মদ্যপান, নাচ-গান ক্রীড়া-কৌতুক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রোমক কাফেরদের কাজ ছিল।সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে পৃ:৫

আমরা তাদের বই থেকেই পেলাম যে, নাচ-গান বা প্রচলিত এ অপসংস্কৃতি কাফেরদের কাজ ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সে কাজটি হেযবুত তওহীদ তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচির অন্তুর্ভূক্ত করেছে। প্রমাণ স্বরূপ তাদের ভিডিওগুলোতেও রয়েছে। পাশাপাশি তাদের বইয়ে এ কথার স্বীকৃতি প্রদান করত: তারা রুখেছেন,

সেমিনারগুলিতে হেযবুত তওহীদের সদস্য সদস্যারা যন্ত্রানুসঙ্গ সহযোগে সংগীত পরিবেশন করে।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃ:১২৩

নতুন নতুন গান নাটক ইত্যাদি তৈরি করা। আমাদের সদস্যদের মধ্যে যেন শিল্প প্রতিভা বিকশিত হয় সে জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস বা বিষয় উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।
সূত্র: গঠনতন্ত্র পৃ-৩৪

অথচ অমুসলিম কাফের-মুশরিকদের সকল কাজের বিরোধিতা করা শরীয়ত প্রবর্তক নবীজি সা. এর নির্দেশ। হাদিসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ

অর্থ’ হযরত ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের উল্টো করবে- দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৫৮৯২

কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, কাফেরদের এই কাজ নাকি নবীজি সা. নিজেও করতেন!ইসলামে বাদ্যযন্ত্র, নর্তকীকে স্পষ্টত হারাম ঘোষণা করার পরও হেযবুত তওহীদের দাবী হলো- নবী সঃ নাকি যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে বাদ্যযন্ত্রসহ গান শুনেছেন নারীদের থেকে। নাউযুবিল্লাহ। কতবড় গোমরাহী! খোদ নবীজি সঃ এর উপর এতবড় মিথ্যা অপবাদ দিতে যাদের অন্তরে বাধে না, তারা কিভাবে মুসলিম হতে পারে আমার বোধগম্য নয়।

তারা লিখেছেন,

নবীগৃহে গান-বাজনা দেখে আবু বকর রা: কন্যা আয়েশাকে তিরস্কার করতে আরম্ভ করলেন। তখন মহানবী বলেলেন: আবু বকর! ওদেরকে বিরক্ত করো না। আজ ওদের উৎসবের দিন বুখারী-মুসলিম।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃ:৯৭

নবী করিম স: আরবে প্রচলিত সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোকে উৎসাহিত করেছেন, মদিনায় থাকা অবস্থায় তিনি নিজে গান শুনেছেন, গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড গুলো যেমন নাচ-গান, চিত্রকলা, ভাস্কর্য নির্মাণ ইত্যাদি ধর্মে অনুমোদিত নয়। মূলত অশ্লীলতার অনুপ্রবেশের কারণেই বিভিন্ন ধর্মবেত্তা আলেমরা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড গান, নাটক,বাদ্য,অভিনয়, নৃত্য এগুলোকে হারাম বলে রায় দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ অনুচিত।
সূত্র: গঠনতন্ত্র পৃ:৩৩-৩৪

যুদ্ধ বিয়েসহ যেকোনো আনন্দ-উৎসবে মদিনায় নাচ ও গানের অনুষ্ঠান করা হতো।
সূত্র: গনমাধ্যমের করণীয় পৃষ্ঠা-৫৯।

মদিনা জীবনের প্রতি ৩২ দিনে তাকে একটি করে যুদ্ধ সংগঠন করতে হয়েছিল। তাঁর পক্ষে সঙ্গীত, অভিনয় ইত্যাদি শিল্পচর্চা নিয়ে মেতে থাকা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তাই বলে কি তিনি এগুলো নিষিদ্ধ করেছেন? কখনোই নয়। এত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি বাদ্য সহযোগে গান শুনেছেন এমন ভুরি ভুরি উদাহরন তার পবিত্র জীবনে রয়েছে। আরবের বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে, বিবাহে, যুদ্ধে সর্বত্র গানের চর্চা ছিল। অথচ বর্তমানে কেবল হামদ-নাত জাতীয় সংগীত গাওয়াকেই আলেম কোন বৈধ বলে মনে করে থাকেন। তাদের পক্ষে স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি বা পহেলা বৈশাখের গান দূরে থাক, জাতীয় সংগীত গাওয়া ও কাম্য নয়।
সূত্র: গনমাধ্যমের করণীয় পৃষ্ঠা-৬০

উপরন্তু তারা নবিজির উপর মিখ্যা তোহমত লাগিয়ে বলে থাকে- যুদ্ধ থেকে ফিরে নবি স: মহিলাদের বলতেন গাও বাজাও। এমন জঘন্য মিথ্যুকদের ব্যাপারে বিশ্বনবী সঃ বলেন-

عن أنَسِ بنِ مالِكٍ قال قال أبو القاسِمِ ﷺ مَن كَذَبَ عليَّ مُتعمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقعَدَه مِن النّار

অর্থাৎ নবীজি সঃ বলেন যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করবে সে তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেবে।
সূত্রঃ বুখারী হাদিস-১০৮ মুসলিম হাদিস-২ তিরমিযি হাদিস-২৬৬১ নাসাঈ হাদিস-৫৯১৪ ইবনে মাযাহ হাদিস-৩২ মুসনাদে আহমাদ হাদিস-১৩১০০।

প্রিয় পাঠক! ইসলামে বাদ্যযন্ত্রসহ গান পরিস্কার হারাম। যা উপরোল্লিখিত আয়াত-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো। মনে রাখতে হবে হারামকে হালাল মনে করা কুফরী। এই কুফরীর দরিয়ায় সমস্ত মুসলমানকে তারা ডুবাতে চায়। এদের এ গভীর ষড়যন্ত্রের কবল থেকে বিশ্বমুসলিম সতর্ক থাক।সে কামনা রইল।

Check Also

নবী-রাসুলগণ কি ব্যর্থ ছিলেন?

সকল নবীগণ আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব স্বীয় স্থানে পূর্ণভাবে পালন করেছেন। কেউ তাঁদের দায়িত্বে কোনো ত্রুটি …

২ comments

  1. চালিয়ে যান ভাই

  2. যদি ছেমা মাহফিল নিয়ে কিছু লিখে আমাকে মেইল করতে অত্যান্ত খুশি ভাই।

    আমার মেইল chowdhurymahin74@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.