এটা শিয়াদের বানানো একটি ঘটনা। চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। প্রথমে জেনে রাখা উচিত। হযরত হাসান রা. ও হুসাইন রা. নবিজি সাঃ-এর কলিজার টুকরা ছিলেন। যাঁদের উভয়কে জান্নাতের সর্দার বলে খোদ নবিজি সাঃ বলে গেছেন। কিন্তু তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে কোনো জাল বা শিয়াদের আবিস্কৃত কোনো ঘটনা বর্ণনা করা কোনো মুসলমানের জন্য জায়েয নয়।
ঘটনাটি মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী বিহারুল আনওয়ারে ৪৩ পৃ. ২৮৯ বর্ণনা করেছেন। এই মাজলিসা শিয়াদের খ্যাতনামা ও প্রভাবশালী ইরানি শিয়া মুসলিম ধর্মগুরু। যাকে সর্বকালের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী শিয়া ওলামাদেরর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যিনি আবু বকর সিদ্দিক রা. ও ওমর রা. কে তার কিতাবে কাফের বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, তিনি ঘটনাটা নকল করেছেন শিয়া সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব শেখ মুফীদ থেকে। যিনি ছিলেন শিয়াদের একাধারে একজন ধর্মতাত্ত্বিক, ফকীহ ও মুতাকাল্লিম। এই শেখ মুফিদ তার কিতাবুল আমালিতে ঘটনাটা বর্ণনা করেছেন, শিয়াদের ৮ম ইমাম আলী ʾইবনে মুসা আর-রিযা থেকে তিনি বলেন,
عري الحسن و الحسين صلوات الله عليهما وأدركهما العيد، فقالا لأمهما: قد زينوا صبيان المدينة إلا نحن، فما لك لا تريننا؟ فقالت: إن ثيابكما عند الخياط فإذا أتا ني زينتكما، فلما كانت ليلة العيد أعادا القول على أمهما فبكت ورحمتهما، فقالت لهما ما قالت في الأولى فردا عليها فلما أخذ الظلام قرع الباب قارع، فقالت فاطمة: من هذا؟ قال: يا بنت رسول الله أنا الخياط جئت بالثياب، ففتحت الباب، فإذا رجل ومعه من لباس العيد قالت فاطمة والله لم أر رجلا أهيب سيمة منه، فناولها منديلا مشدودا ثم انصرف. فدخلت فاطمة ففتحت المنديل فإذا فيه قميصان، ودراعتان، وسراويلان ورداءان، وعمامتان، وخفان أسودان معقبان بحمرة، فأيقظتهما وألبستهما، فدخل رسول الله (صلى الله عليه وآله) وهما مزينان فحملهما وقبلهما ثم قال: رأيت الخياط؟ قالت:
نعم، يا رسول الله، والذي أنفذته من الثياب قال: يا بنية ما هو خياط إنما هو رضوان خازن الجنة قالت فاطمة: فمن أخبرك يا رسول الله؟ قال: ما عرج حتى جاءني و أخبرني بذلك
কোনো এক ঈদে হাসান রা. ও হুসাইন রা. উলঙ্গ ছিলেন। অতপর তাদের মা ফাতেমা রা. কে বললেন, আমরা ছাড়া মদীনার সকল শিশুরা নতুন পোষাকে সজ্জিত করা হয়েছে। তুমি আমাদের সাজাচ্ছো না কেন? তিনি বললেন, তোমাদের কাপড় দর্জির কাছে রয়েছে, সে আনলেই তোমাদের সাজিয়ে দেবো। অতপর ঈদের দিন তারা দু’ভাই মায়ের কাছে এসে একই প্রশ্ন করলে তিনি কেঁদে দিয়ে সেই আগের কথাই পূনরাবৃতি করলেন। অন্ধকার নেমে আসলে হঠাৎ তাদের দরজায় একজন নক করলো। ফাতেমা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, কে আপনি? লোকটি জবাব দিলো, হে আল্লাহর রাসুলের মেয়ে, আমি দর্জি কাপড় নিয়ে এসেছি। তিনি দরজা খুলে দেখলেন, একজন লোক হাতে ঈদের কাপড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হযরত ফাতেমা রা. বললেন, খোদার কসম, আমি তার চেয়ে ভয়ংকর চেহারার কাউকে দেখিনি। অতপর লোকটি রুমালে ভাঁজ করা কাপড়গুলো দিয়ে চলে গেলেন। ফাতেমা রা. ঘরে ঢুকে রুমাল খুলে দেখলেন, তাতে দুটো পাঞ্জাবী, দুটো শেরওয়ানী, দুটো পায়জামা, দুটো চাদর, দুটো পাগড়ি এবং দুটো লাল ফিতা বিশিষ্ট জুতা ছিলো। অতপর তিনি হাসান রা. ও হুসাইন রা. কে ঘুম থেকে জাগ্রত করে পোষাক পরিয়ে দিলেন। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাঃ তাঁদের ঘরে তাশরিফ আনলেন। দেখলেন, তাঁরা নতুন কাপড়ে সজ্জিত। অতপর তাঁদের দুজনকে কোলে নিয়ে চুমা খেলেন। অতপর তিনি প্রশ্ন করলেন, ফাতেমা, তুমি কী দর্জিকে দেখেছিলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ। নবিজি সাঃ বললেন, তিনি কোনো দর্জি ছিলেন না, বরং তিনি জান্নাতের দদায়িত্বশীল রিজওয়ান ছিলেন। ফাতেমা রা. প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি কীভাবে জানতে পারলেন? নবিজি সাঃ বললেন, আমাকে জানানোর আগে তিনি উপরে আরোহন করেন নি। -বিহারুল আনওয়ার : খ. ৪৩ পৃ. ২৮৯
ঘটনাটি শিয়াদের অন্য কিতাবেও বর্ণিত হয়েছে। যেমন- মানাকিবে শিয়াদের শায়খ মুহাম্মাদ বাকির রচিত ‘আল-খাসায়েসুল ফাতিমিয়্যাহ’ : খ. ২ পৃ. ৪১৪
শিয়াদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শায়খ ইবনে শাহরে আশুব রচিত ‘মানাকিবে আলি আবি তালিব : খ. ৩ পৃ. ১৬১
সুতরাং যেসকল মুসলিম নামধারি সুন্নি সম্প্রদায় এ ঘটনাকে সত্য বলে আলোচনা করে যাচ্ছেন তাদের আরও সতর্ক হয়ে বয়ান করা উচিত। মনে রাখা চাই, উক্ত ঘটনায় ফাতিমা রা. কে মিথ্যুক প্রমাণ করা হয়েছে। কারণ দর্জির কাছে কাপড় আছে বলে তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন বলে তাঁকে মিথ্যুক বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। উপরন্তু এটা নবিজি সাঃ-এর নামে বানানো মিথ্যাচার। যা সবার জন্য পরিত্যাগ করা জরুরি।