হেযবুত তওহীদ একে একে ইসলামের সকল বিষয়ে নিয়ে অপব্যাখ্যা ও কটুক্তি করেছে। যেখানে ইসলাকের মৌলিক বিষয় যেমন- কালেমা, নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাতসহ সকল বিষয়ই আঘাত করেছে, সেখানে সুন্নাতের ব্যাপারটি তো একেবারেই স্বাভাবিক। চলুন সুন্নাত নিয়ে তাদের কটুক্তিগুলো দেখা যাক।
১. জিহাদই একমাত্র সুন্নাত। নবিজি সাঃ-এর ব্যক্তিগত কাজ সুন্নাত নয়।
২. টুপি, পাগড়ি, জুব্বা, মিসওয়াক, তাসবীহের দানা, মোচ, কুলুখ, হায়েজ-নেফাস, জিকির আযকার ও তালাকের মাসআলার চর্চা করা খ্রিস্টানদের আবিস্কার ও জাহান্নামিদের সুন্নাত।
৩. টুপি, দাঁড়ি, জুব্বা, পাগড়ি কী আরবদের সংস্কৃতি?
৪. পোষাকের কী নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই?
৫. দাঁড়ির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই, এটা কাফেরদের ছিলো।
নবিজি সাঃ-এর ব্যক্তিগত কাজ সুন্নাত নয়।
ইসলামী পরিভাষায় ইসলামের বিধানগুলোকে বিভিন্ন ভাষায় বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন- ফরজ, ওয়াজীব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, মুবাহ, হারাম, মাকরুহ ইত্যাদী। সুন্নাত বলতে নবীজি সা. এর অধিকাংশ কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে বুঝানো হয়। কিন্তু হেযবুত তওহীদের কাছে সুন্নাত বলতে একমাত্র জিহাদকেই বুঝানো হয়।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, জিহাদই একমাত্র সুন্নাত। তাঁর ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ই সুন্নাতের অন্তুর্ভূক্ত নয়। দেখুন তারা কী বলে-
আমার সুন্নাহ বলে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত খাওয়া, শোয়া, ওঠা, বসা অভ্যাস, পছন্দ-অপছন্দ পোশাক-পরিচ্ছদ বোঝাননি। এ গুলোর সাথে এসলামের কোন সম্পর্কই নেই। -আকীদা, পৃ. ১৬
আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা ‘দীনুল কাইয়্যেমা’কে সমস্ত পৃথিবীকে কার্যকরী করে মানব জাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম (জেহাদ) ও সশস্ত্র সংগ্রাম (কিতাল) করার যে সুন্নাহ বিশ্বনবী ও তাঁর সঙ্গীরা (রা.) রেখে গেছেন সেই সুন্নাহকে বুঝিয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন যার উপর আমি ও আমার সঙ্গীরা আছি এবং এও বলেছেন যে যারা এই সুন্নাহ ছেড়ে দেবে তারা আমাদের কেউ নয় অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদী নয়। -আকীদা, পৃ. ১৭
জেহাদ ছেড়ে দেবার পর নবীর সুন্নাহর বিকল্প হিসাবে নেয়া হোল তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস অভ্যাস-অনভ্যাস পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি যে গুলোর সাথে তাঁর জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য, তাঁর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বের কোন সম্বন্ধই নেই; যেগুলো নেহায়েৎ ব্যক্তিগত ব্যাপার। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১০৫
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ব্যক্তি জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো সুন্নাতের অন্তুর্ভূক্ত নয়, বরং একমাত্র জিহাদই সুন্নাত।
ইসলাম কী বলে?
ইসলামী পরিভাষায় সুন্নাত কাকে বলে তার পরিচয় আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আত দিয়ে গেছেন। চলুন আগে সুন্নাত শব্দের অর্থ দেখে নেওয়া যাক।
সুন্নাতের শাব্দিক অর্থ: সুন্নাত শব্দের শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ হলো, الطريقة والسيرة অর্থাৎ জীবন পদ্ধতি, কর্মধারা, রীতি, আদর্শ ইত্যাদি। -লিসানুল আরব, খ. ১৩ পৃ. ২৭৩
সুন্নাতের পারিভাষিক অর্থ: সুন্নাতের শরয়ী পারিভাষিক অর্থ উল্লেখ করতে গিয়ে আরবী অভিধানের বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ লিসানুল আরবে ইবনু মানযুর রহি. লিখেন:
وإذا أطلقت في الشرع فإنما يراد بها ما أمر به النبي صلى الله عليه وسلم ونهى عنه وندب إليه قولا وفعلا مما لم ينطق به الكتاب العزيز ولهذا يقال في أدلة الشرع الكتاب والسنة أي القرآن والحديث
তবে যখন শরীয়তে সুন্নাত শব্দটি প্রয়োগ করা হয় তখন এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব বিষয়ের আদেশ করেছেন, যে সব থেকে নিষেধ করেছেন, কথা ও কর্মের মাধ্যমে যে দিকে আহ্বান করেছেন, যা সম্মানিত কিতাব কুরআনে বলা হয় নি। এ জন্যই বলা হয়, শরীয়তের দলীল কিতাব ও সুন্নাত। অর্থাৎ হাদীস এবং কুরআন। -লিসানুল আরব, খ. ১৩ পৃ. ২৭৩
উসূলে ফিকহের কিতাবাদিতে সুন্নাতের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে এভাবে-
السنة في اصطلاح الأصوليين هي ما صدر عن النبي صلى الله عليه وسلم غير القرآن وهذا يشمل قوله صلى الله عليه وسلم وفعله وتقريره وكتابته وإشارته وهمه وتركه
উসূলীদের পরিভাষায় সুন্নাত হচ্ছে, কুরআন ছাড়া যা কিছুই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রকাশ পেয়েছে। এই সংজ্ঞায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কর্ম, স্বীকৃতি, লিখা, ইঙ্গিত, প্রতিজ্ঞা ও বর্জন সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। -কাওয়ায়েদুল উসূল, পৃ. ৩৮
আল্লামা কিরমানী রহি. বলেন,
السنة تطلق في الأكثر على ما أضيف إلى النبي من قول أو فعل أو تقرير
সুন্নাত বলা হয়, রাসুলুল্লাহ সাঃ-কথা, কাজ ও মৌনসম্মতির অধিকাংশকেই। -শরহুল কিরমানী খ. ১ পৃ. ৪৭
সুতরাং প্রমাণ হলো, শুধুমাত্র জিহাদই সুন্নাত এমন কোনো কথা পৃথিবীর কোনো আলেম বলেন নি। এমন বক্তব্যে কুরআন-সুন্নাহ এর কোথাও নেই। বরং হাদিস শরীফে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা: থেকে বর্ণিত, নবি সা. বলেন,
لا يُؤمن أحدكم حتى يكون هواه تبعا لما جئت به
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার আনিত বিষয়াদী তার স্বভাবে পরিনত না হয়। -আল কাবায়ির (যাহাবী) হাদিস : ৪৬৮
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
كُلُّ أُمَّتي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلّا مَن أَبى قالوا يا رَسُولَ اللَّهِ وَمَن يَأْبى قالَ مَن أَطاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ وَمَن عَصانِي فقَدْ أَبى
আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু অস্বীকারকারী ব্যতীত। তারা বললেন, কে অস্বীকার করে। তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হয় সে-ই অস্বীকার করে। -সহিহ বুখারী হাদিস : ৭২৮০
সুতরাং বুঝা গেলো, রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর থেকে প্রকাশিত সকল স্বীকৃত বিষয়গুলো সুন্নাহ বলেই বিবেচিত ও পালনীয়। শুধু কী তাই? এই হেযবুত তওহীদ নিজেরাও তাদের বইয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ব্যক্তিগত বিষয়কেও সুন্নাত বলে স্বীকার করে নিয়েছে। দেখুন তারা কী বলে?
সুন্নাহ শব্দের অর্থ হলো কারো কোন রীতি নীতি অভ্যাস, নিয়ম ইত্যাদি’। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৫৯
এমনকি তারা রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ব্যক্তিগত অভ্যাসকে সুন্নাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং সুন্নাহ পালন না করলে উম্মতের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার দাবিও অকপটে স্বীকার করে দলীলও পেশ করেছেন। -বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ২৮
সুতরাং প্রমাণ হলো, নবিজি সাঃ-এর থেকে প্রকাশিত সকল বিষয়কে তারা সুন্নাত বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। অথচ এই সুন্নাহ সম্পর্কে কত জঘণ্য কটুক্তি তারা করেছে দেখুন-
আসল জান্নাতি ফেরকার সুন্নাহর সাথে বাকি বাহাত্তর ফেরকার সুন্নাহর আসমান-জমিন তফাৎ। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হল দাঁত মেসওয়াক করা ; জান্নাতি ফেরকার কাছে সুন্নাহ হল রাসূলুল্লাহ ও আবু ওবায়দার (রা:) মত সশস্ত্র সংগ্রামের দাঁত ভেঙে ফেলা। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো নিজেদের ঘরে বা হুজরায় মাথার কাছে তসবি রেখে ডান পাশে শোয়া; জান্নাতি ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো মাথার কাছে অস্ত্র রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে শোয়া। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো টুপি, পাগড়ি পড়া; জান্নাতি ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো শিরস্ত্রাণ পরা। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাক হলো, লম্বা জোব্বা পড়া; জান্নাতি ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো যোদ্ধার কাপড় ও বর্ম পরা। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হল খাবার পর মিঠাই খাওয়া ; জান্নাতি ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো অনাহারে থেকে পেটে পাথর বেঁধে যুদ্ধ করা। আরো বহু আছে দরকার নেই। বাহাত্তর ফেরকার সুন্নাহ পালন করতে রসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবাদের মত কোরবানির প্রয়োজন হয়না, আহত হতে হয়না, নিগৃহীত অপমানিত হতে হয় না, বিপদের সম্মুখীন হতে হয় না। কাজেই তারা অতি নিষ্ঠার সাথে ঐ অতি নিরাপদ সুন্নাহগুলি পালন করেন এবং নবীর ও আল্লাহর সন্তুষ্টি আশা করেন। শুধু আশা করেন না ও সম্বন্ধে তারা অতি নিশ্চিত। যদিও তারা জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবেন না। কারণ বিশ্বনবী বলেছেন তারা নারী অর্থাৎ আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। বাহাত্তর ফেরকা যে সুন্নাহগুলি পালন করেন সেগুলো শুধু বিশ্ব নবীর সুন্নাহ নয়, লক্ষ-কোটি খ্রিস্টান ইহুদী হিন্দু বৌদ্ধদের সুন্নাহও।জান্নাতি ফেরকা সুন্নাহ হলো শেষ জীবন ব্যবস্থা দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অপরিসীম দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে সংগ্রাম করা’। -আকীদা, পৃ. ১৭
ঘটনা হয়েছে কি পূর্ববর্তী যুগের ফকীহ,ইমাম,মুফাসসিরগণ রাসুলুল্লাহ সমস্ত আচরণকে ইসলামের মাসলা-মাসায়েল এর মধ্যে বিধি-বিধানের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। তাদের যুক্তি হলো, আল্লাহ রাসূলকে অনুসরণ করার হুকুম দিয়েছেন, আলেম-ওলামারা এই অনুসরণের মানে করেছেন যে, রসুলের দাঁড়ি ছিল, তিনি খেজুর খেতেন,পাগড়ি পরিধান করতেন, তাই এগুলোকেও সুন্নাত। এগুলোকেউ তারা শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আরবের খাদ্যাভ্যাস পোশাক-আশাক ইত্যাদি ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে গেছে। ঐ লেবাস না থাকলে এখনকার ইসলামে কথা বলার অধিকার থাকে না। এই যে শরীয়ত বা প্রথা প্রচলন করা হলো এটা কিন্তু কোরআনের শিক্ষা নয়, ইসলামের শিক্ষা নয়, এটা আলেম-উলামা বিভিন্ন মাজহাবের ইমামদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি করা শরীয়ত। এমন আরও বহু উদাহরণ দেওয়া যাবে। এই জন্য জাতির ঐক্য গঠনের গুরুত্বের চেয়ে লেবাসের গুরুত্ব বেশি। এই অপ্রাকৃতিক বিধান গুলোকে আল্লাহর বিধান বলে প্রচার করছেন ইসলামের ধারক-বাহক এক শ্রেণীর আলেমগণ। অথচ ইসলাম কোন নির্দিষ্ট এলাকার সংস্কৃতিকে অন্য এলাকার মানুষের উপর জোর করে আরোপ করার পক্ষে নয়। সাংস্কৃতিক বিবর্তন একটি প্রক্রিয়ায,এটিকে ঘটানো যায় না, এটি কালক্রমে ঘটে। এই মহাসত্যটি ইসলামের এই অনন্য সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলার কারণে ইসলাম তার আবেদন সৃষ্টি করতে পারছে না’। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে? পৃ. ২৪
টুপি, পাগড়ি, জুব্বা, মিসওয়াক, তাসবীহের দানা, মোচ, কুলুখ, হায়েজ-নেফাস, জিকির আযকার ও তালাকের মাসআলার চর্চা করা খ্রিস্টানদের আবিস্কার ও জাহান্নামিদের সুন্নাত।
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, ‘খ্রিস্টান পণ্ডিতরা তাদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলিতে শিখিয়েছেন তাদের তৈরি করা এমন একটি ইসলাম যেটা তৈরি করে মৃত্যুভয়ে ভীতু কাপুরুষ, যারা দাড়ি, মোচ,টুপি, পাগড়ি, মেসওয়াক,কুলুখ, হায়েজ-নেফাস, জিকির-আসকার আর বিবি তালাককেই ইসলাম মনে করে তাই নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তাই নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে থাকে যাতে খ্রিস্টানরা নিশ্চিন্ত মনে তাদের দাসদের ওপর রাজত্ব করতে পারে’। -যুগসন্ধিক্ষণে আমরা, পৃ. ১৮
হেযবুত তওহীদের উপরোক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, তাদের কাছে টুপি, পাগড়ি, জুব্বা, মিসওয়াক, তাসবীহের দানা, মোচ, কুলুখ, হায়েজ-নেফাস, জিকির আযকার ও তালাকের মাসআলার চর্চা করা খ্রিস্টানদের আবিস্কার। যারা রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর সুন্নাহ নিয়ে এমন জঘন্য কটুক্তি করতে পারে তারা কী আদৌ মুসলিম হতে পারে? নিশ্চয় না। চলুন এগুলোর প্রত্যেকটি বিষয়ে কিঞ্চিত আলোকপাত করা যাক।
টুপি, পাগড়ি ও জুব্বা:
টুপি, পাগড়ি ও জুব্বা হলো, মুসলমানের একটি ধর্মীয় প্রতিক। যা ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সা. এর আমল থেকে সাহাবা রা. ও তাবেয়ীনদের যুগ হয়ে আজ অবধি ধারাবাহিকভাবে মুসলিমরা করে পরিধান করে আসছেন। কিন্তু সময়ের উল্লেখ্যযোগ্য ফিৎনা হেযবুত তওহীদ দাবি করছে এক ভিন্ন কথা।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ তাদের বইসমূহে যেসব দাবি করেছেন, তার কয়েকটা নমুনা নিন্মে পেশ করা হলো-
বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো টুপি, পাগড়ি পড়া; জান্নাতি ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো শিরস্ত্রাণ পরা। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাক হলো, লম্বা জোব্বা পড়া; জান্নাতি ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো যোদ্ধার কাপড় ও বর্ম পরা। -আকীদা, পৃ. ১৭
অনেকের ধারণামতে যে দাড়ি ছাড়া ইসলামই হয় না, সেই দাড়ি তো আল্লাহর রাসূলের বিরোধিতাকারী, ঘৃণিত কাফের বোলে আমাদের নিকট পরিচিত আবু জেহেল, আবু লাহাব, ওতবা,শায়েবার মুখেও ছিল। তারাও জোব্বা পোরত, ঠিক রসুল যে জোব্বা পোরতেন ঠিক একই ধরনের জোব্বা। প্রকৃতপক্ষে দাড়ি, টুপি, পাগড়ী, জোব্বার সাথে এসলামের কোন সম্পর্ক নাই। প্রকৃতির আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থার সাথে এগুলো সম্পর্ক রয়েছে। টুপি তো ইহুদীরা,শিখরা বা অন্যান্য ধর্মের ধর্মগুরুরাও পরেন, তাদেরও দাঁড়ি আছে, তারাও জোব্বা পড়েন, তাদের অনেকেই পাগড়ী পরেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাড়ি-টুপি, জোব্বা সবই ছিল। শুধু ধর্মীয় সাধু-সন্ন্যাসী নয়, আল্লাহর অস্তিত্বে সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী হিসাবে পরিচিত অনেকেরই দাড়ি ছিল যেমন কার্ল মার্কস, চার্লস ডারউইন,আব্রাহাম লিঙ্কন প্রমুখ। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩১
রাসুলের স: আগমনের পূর্বেও আরবের মানুষগুলো দাড়ি রাখত, টুপি-পাগড়ি জোব্বা পরত, এটা প্রাচীন যুগ থেকে আরবের সংস্কৃতি। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩১
ইসলামের বিশেষজ্ঞরা কোরআন হাদিস নিয়ে গবেষণা করে বের করেছেন যে সালাতের বাইরে শর্তমূলক ৭ ফরদ ভিতরে ৭ ফরদ (রোকন)।২১ টি ওয়াজিব ২১ টি সুন্নাত, ৭ টি মুস্তাহাব এর মতে দাড়ি-টুপি, জোব্বা, পাগড়ী ইত্যাদি কোন একটি বিষয়ে কোন উল্লেখ্য নেই। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩৫
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোনরূপ বাধ্যবাধকতা নেই যে, পুরুষদেরকে আরবীয় জুব্বা পরিধান করতে হবে, মেয়েদেরকে আপাদমস্তক ঢাকা বোরকা পরিধান করতে হবে পৃথিবীর একেক অঞ্চলের মানুষ একেক ধরনের পোশাক পরে থাকে। ভৌগলিক অবস্থা, জলবায়ু ঐতিহাসিক পটভূমি ইত্যাদি এলাকার মানুষের পোশাক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসলাম যেহেতু সমগ্র পৃথিবীর জন্য এসেছে তাই এর কোন নির্দিষ্ট পোশাক থাকা সম্ভবও নয়। শুধু
একটি মাত্র শর্ত আল্লাহ দিয়েছেন তা হলো পোশাক যেন শালীনতা পরিপন্থী না হয়। অশালীন পোশাক পরিধান করা নিশ্চয় কোন ধর্মমতেই অনুমোদিত নয়। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৭
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা গেলো, তারা দাবি করতে চায় যে,
১. টুপি-পাগড়ী, জুব্বা এটা মক্কার কাফেরদের সংস্কৃতি।
২. টুপি-পাগড়ী,জুব্বা সুন্নাত বা মুস্তাহাব কোনটাই না।
৩. টুপি-পাগড়ী ও জুব্বার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
ইসলাম কী বলে?
রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমলকে অনুসরণের চেষ্টা করা নবিপ্রেমিকের কাজ। নবিজি সাঃ-এর আমল বর্জনের বাহানা খোঁজা নবি বিদ্বেষীদের কাজ। সাহাবায়ে কেরাম রাসুল সাঃ যাই করেছেন, যে কারণেই করেছেন, তা’ই অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন দলিল ও যুক্তি ছাড়া। রাসূল সা. এর সকল আমলকে আদর্শ সাব্যস্ত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। -সূরা আহযাব : ২৩
সুতরাং চলুন দেখা যাক, রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রা. টুপি, পাগড়ি বা জুব্বা ব্যবহার করতেন কী না?
টুপি:
নবিজি সাঃ টুপি ব্যবহার করতেন। তাঁর টুপির ধরণ কেমন ছিলো, সে সম্পর্কে হাদিস শরীফে বিস্তারিত বর্ণনাও রয়েছে। নিন্মে নবিজি সাঃ-এর টুপির ধরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
নবিজি সা. সাদা টুপি পরতেন: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كان يلبس قلنسوة بيضاء
রাসুল সা. সাদা টুপি পরিধান করতেন। -জামে সগীর, হাদিস : ৭১৪৮
রাসুল সাঃ গোল টুপি পরিধান করতেন: হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كان يلبس كمة بيضاء
নিশ্চয় রাসুল সা. সাদা গোল টুপি পরতেন৷ -তারিখে দিমাশক, খ. ২ পৃ. ৩৯১
হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত,
ان رسول الله كانت له كمة بيضاء
নিশ্চয় রাসুল সা. এর সাদা গোল টুপি ছিলো৷ -তারিখে দিমাশক, খ. ২ পৃ. ৩৯১
উপরোক্ত হাদিসে كمة এর ব্যাখ্যা:
আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রহি. বলেন,
( ﻛﻤﺎﻡ ) ﺑﻜﺴﺮ ﺍﻟﻜﺎﻑ ﺟﻤﻊ ﻛﻤﺔ ﺑﺎﻟﻀﻢ ﻛﻘﺒﺎﺏ ﻭﻗﺒﺔ ﻭﻫﻰ ﻗﻠﻨﺴﻮﺓ ﺍﻟﻤﺪﻭﺭﺓ ﺳﻤﻴﺖ ﺑﻬﺎ ﻻﻧﻬﺎ ﺗﻐﻄﻰ ﺍﻟﺮﺃﺱ
কাফের নীচে যের দিয়ে কিমাম ( ﻛﻤﺎﻡ) শব্দটি কুম্মাতুন (ﻛﻤﺔ ) এর বহুবচন যেরূপ ক্বিবাব (قباب) শব্দটি কুব্বাতুন (قبة) এর বহুবচন। আর ‘কুম্মাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে গোল টুপি। যেহেতু তা মাথাকে ঢেকে ফেলে, তাই এ নামে নামকরণ করা হয়েছে ৷ -তুহফাতুল আহওয়াযী, খ. ৫ পৃ. ৪৭৯
নবিজি সাঃ-এর টুপি মাথায় লেগে থাকতো: হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كان لرسول الله قلنسوة بيضاء لاطئة اى لازقة يلبسها
রাসুলুল্লাহ সাঃ এমন সাদা টুপি পরতেন যা মাথার সাথে লেগে থাকতো। -তারিখে দিমাস্ক, খ. ৪ পৃ. ১৯৩
উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে বুঝা যায়, রাসুল সাঃ সাদা কালারের গোল টুপি পরতেন, যা তাঁর মাথার সাথে লেগে থাকতো। অতএব মাথায় লেগে থাকে এমন সাদা ও গোল টুপি পরা রাসুল সাঃ-এর সুন্নাত ৷
সাহাবাদের রা. টুপি:
টুপি পরিধান করা সুন্নাত বলে নবিজি সাঃ-এর সাহাবারাও রা. টুপি ব্যবহার করতেন। তাঁদের টুপি কেমন ছিলো সেটার বর্ণনাও রয়েছে। হযরত আবূ কাবশাহ্ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে,
كَانَ كِمَامُ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُطْحًا
রাসুল সা. এর সাহাবীদের টুপি ছিল (بطحا) চ্যাপটা। -মিরকাতুল মাফাতীহ খ. ৮ পৃ. ২০৯
বুতহান (بطحا) এর ব্যাখ্যা:
মোল্লা আলী ক্বারী রহি. ‘বুতহান’ এর ব্যাখ্যায় বলেন,
( ﺑﻄﺤﺎ ) ﺑﻀﻢ ﺍﻟﻤﻮﺣﺪﺓ ﻓﺴﻜﻮﻥ ﺍﻟﻤﻬﻤﻠﺔ ﺟﻤﻊ ﺑﻄﺤﺎﺀ ﺍﻯ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﺒﺴﻮﻃﺔ ﻋﻠﻰ ﺭﺅﺳﻬﻢ ﻻﺯﻗﺔ ﻏﻴﺮ ﻣﺮ ﺗﻔﻌﺔ ﻋﻨﻬﺎ
বুতহান (بطحا) প্রথম অক্ষর ‘ বা ‘ উপর পেশ , ত্বোয়া এর উপর সাকিন ৷ ‘বুতহুন এটা ‘ বুতহাউ’ এর বহু বচন । অর্থাৎ হযরত সাহাবাদের রা. টুপি, তাঁদের মাথার সাথে এমনভাবে লেগে থাকতো যে, তা মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতো না ৷ -মিরকাতুল মাফাতীহ খ. ৮ পৃ. ২০৯
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম, নবিজি সাঃ টুপি পরিধান করতেন। সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর পরম অনুসারি সাহাবায়ে কেরামও রা. টুপি পরার সুন্নাত আদায় করতেন। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এই সুস্পষ্ট সুন্নাতকে অস্বীকার করে ‘টুপির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই’ বলে যে দাবি তুলেছেন, তা একান্তই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। সুতরাং টুপির সাথে নয় বরং হেযবুত তওহীদের দাবির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
লোহার টুপি:
হেযবুত তওহীদের দ্বিতীয় এমাম হুসাইন মেলিস সাহেবের একটি ভিডিও বক্তব্যে দাবি করেছেন যে, নবীজির সা. টুপি ছিলো লোহার টুপি। সেটাকে বাদ দিয়ে সুতার টুপি আবিস্কার করেছে ধর্মব্যবসায়ীরা। এটার মত ডাহা মিথ্যাচার আর কী হতে পারে? আসল কথা হলো, রাসুলুল্লাহ সা. এর যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার জন্য লোহার টুপি ব্যবহার করতেন। কিন্তু সেটা সব সময় ব্যবহার করতেন এমন কোনো প্রমাণ কী সেলিম সাহেবদের কাছে আছে? নিশ্চয় না। যদি থাকেও তবুও তো প্রমাণ হলো নবিজি সাঃ-এর টুপি ছিলো। তাহলে সে টুপি হেযবুত তওহীদের এমাম ও সদস্যরা পরে না কেন? এবং কিভাবে এ কথার দাবি হেযবুত তওহীদ বললো যে, ‘টুপির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই?’ এটা কি হেযবুত তওহীদের মিথ্যাচারের অংশ নয়?
পাগড়ি:
পাগড়ী পরিধান করাও সুন্নাতে নববি। এটি পোশাকের সুন্নাত। অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত। অন্য সকল সুন্নাত আদায়ের যে সাওয়াব রয়েছে, পাগড়ি পরিধান করার মধ্যেও সে সুন্নাত আদায়ের সাওয়াব হবে। পাগড়ির প্রমাণ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস নিন্মে পেশ করা হলো।
নবিজি সাঃ-এর পাগড়ি: হযরত ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا اعْتَمَّ سَدَلَ عِمَامَتَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ
নবিজি সাঃ যখন পাগড়ি বাঁধতেন তখন এর এক পার্শ্ব তাঁর দুই কাঁধের মাঝে ঝুলিয়ে দিতেন। -জামে তিরমিযি, হাদিস : ১৭৪২
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
دَخَلَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ بِغَيْرِ إِحْرَامٍ
রাসুলুল্লাহ সাঃ মক্কা বিজয়ের দিন ইহরামবিহীন অবস্থায় কালো পাগড়ী পরিধান করে মক্কায় প্রবেশ করেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৩১৭৯
হযরত জাফর ইবনে আমর ইবনু হুরায়স রা. থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَطَبَ النَّاسَ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ
রাসুলুল্লাহ সাঃ একবার মাথায় কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৩২০২
হযরত জাফার ইবনু আমর ইবনু হুরায়স রা. এর পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি আরও বলেন,
كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى الْمِنْبَرِ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ قَدْ أَرْخَى طَرَفَيْهَا بَيْنَ كَتِفَيْهِ
রসুলুল্লাহ সাঃ কে কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মিম্বারের উপর (উপবিষ্ট) দেখতে পাচ্ছি এবং তিনি পাগড়ীর দু’ প্রান্ত কাঁধের মাঝ বরাবর ঝুলিয়ে রেখেছেন। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২০৩
হযরত আনাস ইবনু মালিক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَتَوَضَّأُ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ قِطْرِيَّةٌ فَأَدْخَلَ يَدَهُ مِنْ تَحْتِ الْعِمَامَةِ فَمَسَحَ مُقَدَّمَ رَأْسِهِ وَلَمْ يَنْقُضِ الْعِمَامَةَ
একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ-কে কিতরিয়াহ্ নামীয় পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় অযু করতে দেখেছি। এ সময় তিনি তার হাত পাগড়ীর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে মাথার সম্মুখভাগ মাসেহ্ করেন, কিন্তু পাগড়ী খুলেননি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৭
সাহাবাদের পাগড়ি: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রহি. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর আমল সম্পর্কে বলেন,
أَنَّهُ كَانَ إِذَا خَرَجَ إِلَى مَكَّةَ كَانَ لَهُ حِمَارٌ يَتَرَوَّحُ عَلَيْهِ إِذَا مَلَّ رُكُوبَ الرَّاحِلَةِ وَعِمَامَةٌ يَشُدُّ بِهَا رَأْسَهُ
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. যখন তিনি মক্কাহ অভিমুখে রওনা হতেন তখন তার সাথে একটি গাধা থাকত। উটের সওয়ারীতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে ক্ষণিক স্বস্তি লাভের জন্য তাতে আরোহণ করতেন। আর তার সঙ্গে একটি পাগড়ী থাকত, যা দিয়ে তিনি মাথা বেঁধে নিতেন। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬২৮৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রহি. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর আমল সম্পর্কে আরও বলেন,
أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ وَأَعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ
মক্কার এক রাস্তায় আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর সাথে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হলো। আবদুল্লাহ রা. তাকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে আরোহণ করতেন, সে গাধটি তাকে আরোহণের জন্য দিয়ে দিলেন এবং তিনি তার মাথার পাগড়ীটিও তাকে দান করলেন। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৫২
তাবেয়ীদের পাগড়ি: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এর খাদেম হযরত নাফে’ রহি. বলেন,
كَانَ ابْنُ عُمَرَ يَسْدِلُ عِمَامَتَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ . قَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ وَرَأَيْتُ الْقَاسِمَ وَسَالِمًا يَفْعَلاَنِ ذَلِكَ
ইবনু উমার রা. তাঁর দুই কাঁধের মাঝে পাগড়ীর এক পার্শ্ব ঝুলিয়ে রাখতেন। উবায়দুল্লাহ রহি. বলেন, (বিশিষ্ট দু’জন তাবেয়ী) কাসিম ও সালিম রহি. ও এরূপ করতেন। -জামে তিরমিযি, হাদিস : ১৭৪২
সুতরাং প্রমাণ হলো, নবিজি সাঃ সাহাবায়ে কেরাম রা. এবং তাবেয়ীগণ সবাই পাগড়ি ব্যবহার করতেন। অতএব এ পাগড়িকে অবজ্ঞা করে অস্বীকার করা কোনো মুসলমানের কাজ হতেই পারে না
জুব্বা:
রাসুলুল্লাহ সাঃ জুব্বা পরিধান করতেন। যা অসংখ্য সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নিন্মে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হলো। হযরত মুগীরাহ ইবনে শু’বাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَبِسَ جُبَّةً رُومِيَّةً ضَيِّقَةَ الْكُمَّيْنِ
নবিজি সাঃ রোম দেশীয় আঁটসাট আস্তিনবিশিষ্ট জুব্বা পরিধান করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮২৬৫
হযরত মুগীরাহ রা. হতে আরও বর্ণিত হয়েছে,, তিনি বলেন,
كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي مَسِيرٍ فَقَالَ لِي أَمَعَكَ مَاءٌ قُلْتُ نَعَمْ فَنَزَلَ عَنْ رَاحِلَتِهِ فَمَشَى حَتَّى تَوَارَى فِي سَوَادِ اللَّيْلِ ثُمَّ جَاءَ فَأَفْرَغْتُ عَلَيْهِ مِنَ الإِدَاوَةِ فَغَسَلَ وَجْهَهُ وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ مِنْ صُوفٍ فَلَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يُخْرِجَ ذِرَاعَيْهِ مِنْهَا حَتَّى أَخْرَجَهُمَا مِنْ أَسْفَلِ الْجُبَّةِ فَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ ثُمَّ أَهْوَيْتُ لأَنْزِعَ خُفَّيْهِ فَقَالَ دَعْهُمَا فَإِنِّي أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ وَمَسَحَ عَلَيْهِمَا
কোন এক সফরে এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, “তোমার সাথে কি পানি আছে”? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তার সওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। তারপর হাঁটতে হাঁটতে রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলেন। তখন আমি বদনা থেকে তাকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি তার মুখমণ্ডল ধুলেন তখন তার গায়ে ছিল একটি পশমের জুব্বা। তিনি তা থেকে হাত বের করতে না পেরে জুব্বার নীচ দিয়ে বের করলেন। তারপর তার উভয় বাহু ধুলেন এবং মাথা মাসাহ করলেন। আমি তার উভয় মোজা খুলে দিতে চাইলাম। কিন্তু (বাধা দিয়ে) তিনি বললেন, ওভাবেই থাকতে দাও। কারণ আমি ও দু’টি পবিত্র অবস্থায় পায়ে দিয়েছি। (এই বলে) তিনি তার উভয় মোযার ওপর মাসাহ করলেন। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫১৯
হযরত মুগীরাহ ইবনে শু’বা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আরও বলেন,
انْطَلَقَ النبيُّ ﷺ لِحاجَتِهِ، ثُمَّ أقْبَلَ، فَتَلَقَّيْتُهُ بماءٍ، فَتَوَضَّأَ، وعليه جُبَّةٌ شَأْمِيَّةٌ
আল্লাহর রসূল সা. একদা হাজত পূরণের জন্য গেলেন। সেখান থেকে ফিরে এলে, আমি তাঁর নিকট পানি নিয়ে গেলাম। তিনি তা দিয়ে উযূ করেন। তাঁর পরিধানে ছিল সিরীয় জুব্বা। -সহিহ বুখারী হাদিস : ৫৭৯৮
হযরত সালমান ফারসী রা. বলেন,
ان رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم توضَّأَ فقَلبَ جُبَّةَ صوفٍ كانت علَيهِ فمسحَ بِها وجهَه
একদা রাসুল সাঃ অযু করলেন এবং নিজের পরনের জুব্বা উল্টিয়ে চেহারা মুছলেন। -ইবনে মাজাহ হাদিস : ৪৬৮
ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবি সাঃ বলেছেন,
كَانَ عَلَى مُوسَى يَوْمَ كَلَّمَهُ رَبُّهُ كِسَاءُ صُوفٍ وَجُبَّةُ صُوفٍ وَكُمَّةُ صُوفٍ وَسَرَاوِيلُ صُوفٍ وَكَانَتْ نَعْلاَهُ مِنْ جِلْدِ حِمَارٍ مَيِّتٍ
হযরত মূসা আ. যেদিন আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, সেদিন তাঁর পরিধানে ছিল একটি পশমের চাদর, পশমের জুব্বা, পশমের টুপি, পশমের পায়জামা। আর তাঁর চপ্পল দুটি ছিল মৃত গাধার চামড়ার। -জামে তিরমিযি, হাদিস : ১৭৪০
সুতরাং প্রমাণ হলো, টুপি, পাগড়ি ও জুব্বা এসবই ইসলামের পোষাক। এগুলোকে অবহেলা ও অস্বীকার করা কোনো মুসলমানের কাজ নয়।
টুপি, দাঁড়ি, জুব্বা, পাগড়ি কী আরবদের সংস্কৃতি?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, পাগড়ি আরব দেশের সংস্কৃতি। এটার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
ইসলাম কী বলে?
এটা সত্য যে, ইসলামের আগমনের আগেও আরব দেশে পাগড়ির প্রচলন ছিল। কিন্তু এটা কিছুতেই ঠিক নয় যে, ইসলামে পাগড়ির প্রচলন আরবের অনুকরণেই হয়েছে। কেননা পাগড়ির ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান ও পাগড়ি পরিধানের ইসলামী পদ্ধতি অনেকটাই আরব্য সংস্কৃতির চেয়ে ভিন্ন ধরনের। এ ব্যাপারে হযরত রুকানা রা. বলেন, আমি নবি সাঃ কে বলতে শুনেছি,
إنّ فَرْقَ ما بينَنا وبينَ المشركينَ العمائمُ على القَلانِسِ
আমাদের ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য এই যে, আমরা টুপির উপর পাগড়ী ব্যবহার করি (কিন্তু তারা তা করে না, বরং আরবরা শুধু পাগড়ি পরে টুপি পরে না। -জামে তিরমিযি : ১৭৮৪
সুতরাং পাগড়ি টুপি আরবদের সংস্কৃতি বলে হেযবুত তওহীদের করা দাবিটা নিতান্তই ভিত্তিহীন ও অমূলক। উপরন্তু কাফেরদের কোনো বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতি রাসুলুল্লাহ সাঃ গ্রহণ করবেন ও সে অনুযায়ী আমল করেছেন, এটা কোনো ইসলাম সম্পর্কে বিজ্ঞ কারো মতামত হতে পারে না। কারণ রাসুল সা. সব সময় আরবের প্রচলিত সকল সংস্কৃতির বিরোধিতা করতেন। কেননা আরবরা কেউ ছিলো অগ্নীপূজক, কেউ বা মুশরিক, কেউবা আহলে কিতাব তথা ইহুদী নাসারা। রাসুলুল্লাহ সাঃ বিভিন্ন শব্দে এদের সবার বিরোধিতা করতে হুকুম করেছেন। হযরত আবু উমামা বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
خالِفُوا أهلَ الكتابِ
তোমরা আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো। -শুয়াবুল ঈমান, (বাইহাকী) হাদিস : ৬৪০৫
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
خالِفوا اليهودَ والنَّصارى
তোমরা ইহুদী এবং খ্রিষ্টানদের বিরোধিতা করো। -সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২১৮৬
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
خالِفُوا المَجُوسَ
তোমরা অগ্নীপূজকদের বিরোধিতা করো। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৬০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
خالِفُوا المُشْرِكِينَ
তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৯
সুতরাং যে নবি সাঃ নিজে এতভাবে অমুসলিমদের সংস্কৃতির বিরোধিতা করতে বলেছেন, সেই তিনিই আবার আরব্য সংস্কৃতি হিসাবে দাঁড়ি, টুপি, পাগড়ি ব্যবহার করেছেন? এটা কল্পনাও করা যায়? এটা নিতান্তই ইসলাম বিদ্বেষী আহম্মক ও মূর্খদের কথা। উপরন্তু নবিজি সাঃ ইরশাদ করেছেন,
من تشبه بقوم فهو منهم
যে ব্যক্তি যে জাতির সাথে সামঞ্জস্য রাখবে সে তাদের মধ্যেই গন্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১
উক্ত হাদিস থেকে বুঝা গেলো, নবিজি সাঃ অমুসলিমদের কালচারের প্রতি কত বিরোধি ছিলেন। আর এজন্যই নবিজি সাঃ কাফেরদের কোনো পোষাক নিজেও পরতেন না, অন্যদেরও পরতে দিতেন না। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ’আস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا
রাসুলুল্লাহ সাঃ আমার পরিধানে হলুদ রংয়ের (জাফরান রঙে) দুটি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফিরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৭৭
সুতরাং হেযবুত তওহীদের দাবি ‘নবিজি সাঃ আরবের পোশাক তিনি পরতেন’ নবিজি সাঃ-এর শানে এমন বেয়াদবিপূর্ণ শব্দ কিভাবে উচ্চারণ করা যায়? এটা সম্ভব নাস্তিক ও কাফেরদের জন্য।
পোষাকের কী নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই?
ইসলাম এমন এক পূর্ণাঙ্গ ধর্ম, যে ধর্মে বাথরুম থেকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সকল বিষয়ের দিক নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসাবে মানুষের দৈনন্দিন জিবনে পালণীয় পোষাকাদির ব্যাপারেও যথেষ্ট নিয়ম-কানুননও রয়েছে। অথচ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, ইসলাম ধর্মে নির্দিষ্ট কোনো পোষাক নেই, থাকতে পারে না। চলুন তাদের দাবিটা দেখে নেওয়া যাক।
ইসলাম কী বলে?
তাদের বইয়ে তারা লিখেছে, ‘পৃথিবীর একেক অঞ্চলের মানুষ একেক ধরনের পোশাক পরে থাকে। ভৌগলিক অবস্থা, জলবায়ু ঐতিহাসিক পটভূমি ইত্যাদি এলাকার মানুষের পোশাক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসলাম যেহেতু সমগ্র পৃথিবীর জন্য এসেছে তাই এর কোন নির্দিষ্ট পোশাক থাকা সম্ভবও নয়। শুধু একটি মাত্র শর্ত আল্লাহ দিয়েছেন তা হলো পোশাক যেন শালীনতা পরিপন্থী না হয়। অশালীন পোশাক পরিধান করা নিশ্চয় কোন ধর্মমতেই অনুমোদিত নয়। -আসুন-সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৭
অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, পুরুষ হোক বা মহিলা হোক ইসলামে উভয়ের কোন নির্দিষ্ট পোশাক নেই এবং ইসলামে কোন নির্দিষ্ট পোশাক থাকা সম্ভবও নয়। এমনকি তাদের লেখনীর মধ্যে একটি বিষয় ফুটে উঠেছে, আর তা হল, তারা শরীয়তের পোশাকের বাধ্যবাধকতা মানে না। নাউযুবিল্লাহ।
ইসলাম কী বলে?
ইসলামে পোষাকের ব্যাপারে অসংখ্য দিকনির্দেশনা কুরআন এবং হাদিসের তুলে ধরা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, পোষাকের ধরণ কেমন হবে এটা জানার মাধ্যম কুরআনের পাশাপাশি মহান আল্লাহ তাঁর রাসুল সা. এর আমলও আমাদের জন্য মহানির্দেশক। তো চলুন দেখা যাক পোষাকের বিষয়ে কি দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা নিন্মে কোরআন-সুন্নাহ থেকে কিছু বিষয় দেখে নিই।
সতর আবৃত করা: মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করন,
يَا بَنِي آَدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآَتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آَيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
হে বনী-আদম, আমি তোমাদের জন্য পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ-সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোষাক এটি সর্বোত্তম। এটা আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। -সুরা আরাফ : ২৬
প্রিয় পাঠক, উক্ত আয়াতে সমগ্র সমস্ত মানবজাতীর পোষাক কেমন হতে হবে, তা উল্লেখ্য করে পোষাকের দু’টি পার্ট উল্লেখ্য করা হয়েছে যথা-
এক. لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآَتِكُمْ এখানে يُوَارِي শব্দটি مُوَارَاةٌ
শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো, গোপন করা বা আবৃত করা।
আর سوآت শব্দটি سوأة এর বহুবচন। এর অর্থ হলো, গুপ্তাঙ্গ। সুতরাং আয়াতের لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآَتِكُمْ অংশের উদ্দেশ্য হলো, আমি তোমাদের মঙ্গলার্থে এমন একটি পোশাক সৃষ্টি করেছি যদ্বারা, তোমরা গুপ্তাঙ্গ আবৃত করতে পারো।
দুই. এরপর বলা হয়েছে وَرِيشًا এর অর্থ হলো,وهُوَ ما يُتَجَمَّل بِهِ مِن الثِّياب অর্থাৎ সাজসজ্জার জন্য মানুষ যে পোষাক পরিধান করে তাকে رِيش বলা হয়। ফলে আয়াতের অর্থ দাঁড়ালো এই যে, গুপ্তাঙ্গ আবৃত করার জন্য তো সংক্ষিপ্ত পোষাকই যথেষ্ট হয়, কিন্তু আমি তোমাদেরকে আরও পোশাক দিয়েছি যাতে তোমরা তদ্দ্বারা সাজসজ্জা করে বাহ্যিক দেহাবয়বকে সুশোভিত করতে পারো।
সুতরাং উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো, পোষাকের ক্ষেত্রে গুপ্তাঙ্গ আবৃত করার নির্দেশ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধিত করণ বিষয়টিও খেয়াল করা।
অমুসলিমদের পোষাক না হওয়া: ভিন্ন ধর্মীয় কোন পোশাক পরিধান করতে নবীজি সা. নিষেধ করে দিয়েছেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আছ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا
রাসুলুল্লাহ সাঃ আমার পরিধানে হলুদ রংয়ের দুটি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফিরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৭৭
অমুসলিমদের সামঞ্জস্যপূর্ণ পোষাক না হওয়া: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১
সুতরাং নবিজি সাঃ-এর দিকনির্দেশিত পথ হলো, আমাদের পোশাক যেন বিজাতীয় কোন পোশাকের সাথে সামঞ্জস্য না হয়। অতএব আমরা যা খুশি তাই পরতে পারবো না।
টাখনুর নিচে কাপড় না পরা: নবিজি সাঃ আমাদের পোষাকের একটা সীমানাও নির্ধারন করে দিয়েছেন। আর তা হলো, আমাদের পরিধানের বস্ত্র যেন টাখনুর নিচে না যায়। হযরত আবু হুরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাঃ বলেছেন,
مَا أَسْفَلَ مِنْ الْكَعْبَيْنِ مِنْ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ
ইযার বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নীচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৫৭৮৭
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন,
مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلَاءَ لَمْ يَنْظُرْ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যে ব্যক্তি গর্বের সঙ্গে পরনের কাপড় টাখ্নুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফিরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দিবেন না। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩৬৬৫
প্রশিদ্ধির পোশাক না হওয়া: নবিজি সাঃ ঐ পোষাক পরিধান নিষিদ্ধ করেছেন যে পোষাক অন্যান্য মানুষের চেয়ে খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য পরা হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ فِي الدُّنْيَا أَلْبَسَهُ اللَّهُ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ أَلْهَبَ فِيهِ نَارًا
যে ব্যক্তি দুনিয়াতে যশ লাভের উদ্দেশ্যে পোশাক পরে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে অপমানের পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে অগ্নিসংযোগ করবেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬০৭
অহংকার-বড়ত্ব-রিয়া সৃষ্টিকারী পোশাক না হওয়া: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
مَنْ جَرَّ ثَوْبَه مَخِيلَةً لَمْ يَنْظُرْ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, তার দিকে আল্লাহ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তাকাবেন না। -সহিহ বুখারী, হাদীস : ৫৭৯১
পুরুষ-নারী একে অপরের পোষাক না পরা: মহিলাদের জন্য নির্ধারিত বা তাঁদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পুরুষদের পরিধান করা নিষিদ্ধ। তেমনি পুরুষদের জন্য নির্ধারিত বা তাদের পোশাকের সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাকও, মহিলাদের জন্য পরিধান করা হারাম। হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
নবিজি সাঃ ঐ সব পুরুষকে লা’নত করেছেন যারা নারীর বেশ ধরে এবং ঐসব নারীকে যারা পুরুষের বেশ ধরে। -সহিহ বুখারী হাদিস : ৫৮৮৫
পুরুষদের জন্য রেশমী পোষাক না পরা: পুরুষের জন্য মেয়েদের পোশাক পরিধান করা হারাম। আর এ কারণেই পুরুষের রেশমের কাপড় পরিধান না করা হারাম করা হয়েছে। কেননা রেশমের কাপড় মহিলাদের কাপড়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরকে রা. খুতবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
قَالَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم مَنْ لَبِسَ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْه فِي الآخِرَةِ
নবিজি সাঃ বলেছেন, যে লোক দুনিয়ায় রেশমী কাপড় পরবে, আখিরাতে সে তা পরতে পারবে না। -সহিহ বুখারী হাদিস : ৫৮৩৩
হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রা. বলেন, একদা আল্লাহর নবিজি সাঃ তাঁর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেন,
إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِيْ
এ দু’টি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম। সুনানে আবূ দাঊদ, হাদিস : ৪০৫৭
তবে রেশমি কাপড় মহিলাদের জন্য বৈধ। কেননা হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আলী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم حُلَّةُ سِيَرَاءَ فَبَعَثَ بِهَا إِلَىَّ فَلَبِسْتُهَا فَعَرَفْتُ الْغَضَبَ فِى وَجْهِهِ فَقَالَ إِنِّى لَمْ أَبْعَثْ بِهَا إِلَيْكَ لِتَلْبَسَهَا إِنَّمَا بَعَثْتُ بِهَا إِلَيْكَ لِتُشَقِّقَهَا خُمُرًا بَيْنَ النِّسَاءِ.
রাসুলুল্লাহ সাঃ কে একটা রেশমের পোশাক উপহার দেওয়া হলো পরে তিনি সেটা আমার নিকট পাঠিয়েন দিলেন। আমি সেটি পরলাম। এতে তাঁর চেহারায় অসন্তোষের চিহ্ন দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, ওটা তোমার নিকট এজন্য পাঠাইনি যে, তুমি পরবে। বরং এটা তোমার কাছে এজন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি ওটা টুকরো করে ওড়না বানিয়ে মহিলাদের মধ্যে বিতরণ করবে। -সহিহ মুসলিম হাদিস : ২০৬৮
সুতরাং প্রমাণ হলো, পুরুষের জন্য মহিলাদের পোষাক পরিধান করা হারাম। ঠিক তদ্রুত পুরুষের পোষাক যেমন প্যন্ট,শার্ট ইত্যাদী পরিধান করা মহিলাদের জন্য হারাম।
পুরুষের জন্য জাফরানি, হলুদ বা লাল কালার না হওয়া: কাপড়ের কালারের ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন পুরুষের জন্য জাফরানি, হলুদ বা লাল কাপড় পরা নিষেধ। কিন্তু নারীদের জন্য জায়েয। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
طِيبُ الرِّجَالِ مَا ظَهَرَ رِيحُهُ وَخَفِيَ لَوْنُهُ وَطِيبُ النِّسَاءِ مَا ظَهَرَ لَوْنُهُ وَخَفِيَ رِيحُهُ
পুরুষদের সুগন্ধি তাই যার গন্ধ ছড়ায় হয় আর রং ভাসে না। আর মহিলাদের সুগন্ধির রং উজ্জ্বল এবং গন্ধ ছড়ায় না। -জামে তিরমিযি, হাদিস : ২৭৮৭
আর এজন্য পুরুষের জন্য জাফরানি, হলুদ বা লাল কাপড় পরা নিষেধ। নিন্মে প্রত্যেকটির দলীল পেশ করা হলো-
ক. জাফরানি রংয়ের কাপড় না পরা: হযরত আনাস বিন মালেব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نَهٰى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَتَزَعْفَرَ الرَّجُلُ
নবিজি সাঃ পুরুষদের জাফরানী রং-এর কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। -সহিহ বুখারী হাদিস : ৫৮৪৬
খ. হলুদ পোষাক না পরা: হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আছ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا
রসুলুল্লাহ সাঃ আমার পরিধানে হলুদ রংয়ের দুটি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফিরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না। -সহিহ মুসলিম হাদিস : ২০৭৭
গ. লাল পোষাক না পরা: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
نُهِيتُ عَنْ الثَّوْبِ الْأَحْمَرِ وَخَاتَمِ الذَّهَبِ وَأَنْ أَقْرَأَ وَأَنَا رَاكِعٌ
আমাকে লাল রঙের কাপড় ও স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে এবং রুকুতে কুরআন তিলাওয়াত করতে (রাসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক) নিষেধ করা হয়েছে। -সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ৫২৬৫
অধিক পাতলা বা আঁটশাট পোষাক না হওয়া: যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের উপরে ফুটে উঠে তা-ও সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েয পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান করা হারাম। উপরন্তু এ ধরণের পোষাকে অশ্লীতা ছড়ায়। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। -সূরা নূর, আয়াত : ১৯
কাপড় নিসফে সাক পর্যন্ত হওয়া: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَرَرْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَفِي إِزَارِي اسْتِرْخَاءٌ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ ارْفَعْ إِزَارَكَ فَرَفَعْتُهُ ثُمَّ قَالَ زِدْ فَزِدْتُ فَمَا زِلْتُ أَتَحَرَّاهَا بَعْدُ فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ إِلَى أَيْنَ فَقَالَ أَنْصَافِ السَّاقَيْنِ
আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার লুঙ্গিটা একটু ঝুলানো অবস্থায় ছিল। তিনি বললেন, হে ’আবদুল্লাহ! তোমার ইযারটি (লুঙ্গি বা পায়জামা) উপরে উঠও। সে সময় আমি তা উপরে উঠালে তিনি আবার বললেনঃ আরো উপরে। আমি আরো উপরে তুললাম। তখন থেকেই সব সময় আমি এর ব্যাপারে সজাগ থাকি। উপবিষ্ট লোকদের একজন বলল, কত উপরে তুলেছিলেন? তিনি বললেন নিস্ফ সাক অর্থাৎ অর্ধ গোছা পর্যন্ত। -সহিহ মুসলিস, হাদিস : ২০৮৬
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَأَيْتُ سَبْعِينَ مِنْ أَصْحَابِ الصُّفَّةِ مَا مِنْهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدَاءٌ إِمَّا إِزَارٌ وَإِمَّا كِسَاءٌ قَدْ رَبَطُوا فِي أَعْنَاقِهِمْ فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْنِ وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الْكَعْبَيْنِ فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَرَاهِيَةَ أَنْ تُرَى عَوْرَتُهُ
আমি সত্তরজন আসহাবে সুফ্ফাকে দেখেছি, তাঁদের কারো গায়ে বড় চাঁদর ছিল না। হয়ত ছিল কেবল তহবন্দ কিংবা ছোট চাদর, যা তাঁরা ঘাড়ে বেঁধে রাখতেন। (নীচের দিকে) কারো নিসফে সাক বা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত আর কারো টাখনু পর্যন্ত ছিল। তাঁরা লজ্জা-স্থান দেখা যাওয়ার ভয়ে কাপড় হাতে ধরে একত্র করে রাখতেন। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৪২৯
সুতরাং বুঝা গেলো, নবিজি সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. কাপড় পরিধান হাটু ও গোঁড়ালির মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত। আমাদেরও সেভাবেই করা উচিৎ।
নবিজি সাঃ-এর পছন্দনীয় পোশাক কী ছিলো?
মহানবি হযরত মুহাম্মাদ সাঃ আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। তাঁর সকল সুন্নাহ আমাদের জন্য আবশ্য পালনীয়। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। -সূরা আহযাব : ২১
সুতরাং নবিজি সাঃ-এর ভালো লাগা বিষয়টিও উম্মতের ভালো লাগা উচিত। চলুন পোষাকের ক্ষেত্রে নবিজি সাঃ-এর পছন্দ কী ছিলো তা দেখি। হাদিস শরীফে নবিজি সাঃ-এর পছন্দনীয় পোশাকের বর্ননায় এসেছে, হযরত উম্মে সালমা রা. বলেন,
كانَ أحبَّ الثِّيابِ إلى النَّبيِّ ﷺ القَميصُ
নবিজি সাঃ-এর পছন্দনীয় পোশাক ছিলো ক্বামিস। -জামে তিরমিযি, হাদিস : ১৭৬২
কামিস কাকে বলে?
কামিসের সংজ্ঞা করতে গিয়ে ইমাম জাযারী রহি. বলেন,
ﺍﻟﻘﻤﻴﺺ ﺛﻮﺏ ﻣﺨﻴﻂ ﺑﻜﻤﻴﻦ ﻏﻴﺮ ﻣﻔﺮﺝ
উহা এমন সেলাইযুক্ত কাপড় যা দু’আস্তিন বিশিষ্ট; যার গায়ে কোন ফাঁড়া নেই। -তুহফাতুল আহওয়াযী খ. ৫ পৃ. ৩৭২
সুতরাং মনে রাখতে হবে, পোশাক দ্বারা শুধু শরীর আবৃত করাই উদ্দেশ্য নয়, বরং তার পাশাপাশি সওয়াবের আশা এবং আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসুল সা. এর অনুসরনীয় বিষয়েরসাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অতএব আমাদের পোশাক ইসলামি নীতিমালা অনুযায়ী ও নবীজি সা. এবং সাহাবায়ে কেরামের রা. নির্দেশিত পোষাক হতে হবে। বিভিন্ন অঞ্চলের পোষাক আর ইসলামী পোষাক কখনও এক নয়। সুতরাং হেযবুত তওহীদের পোষাক সংক্রান্ত মন্তব্য সরাসরি ইসলামের দিকনির্দেশনা বিরোধী।
পোষাকের ব্যাপারে হেযবুত তাওহীদের দ্বিতীয় ভাষ্য:
পোষাকের ব্যাপারে হেযবুত তওহীদ মাত্র একটি শর্তের কথা বলেছে যে-
এসলাম যেহেতু সমগ্র পৃথিবীর জন্য এসেছে তাই এর কোন নির্দিষ্ট পোশাক থাকা সম্ভবও নয়। শুধু একটি মাত্র শর্ত আল্লাহ দিয়েছেন তা হলো পোশাক যেন শালীনতা পরিপন্থী না হয়। অশালীন পোশাক পরিধান করা নিশ্চয় কোন ধর্মমতেই অনুমোদিত নয়। -আসুন-সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৭
অর্থাৎ শালীনতা রক্ষা হলেই হবে, আর কিছুর প্রয়োজন নেই। অথচ উপরে কতগুলো শর্তের আলোচনা করেছি। এসব ধর্মের আলোকে নির্দিধায় বলা যায়, হেযবুত তওহীদের দাবি চুড়ান্ত মিথ্যা ও ভ্রান্ত। উপরন্তু যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে, ‘শালীনতা রক্ষা হলেই হবে, আর কিছুর প্রয়োজন নেই’ তাহলে প্রশ্ন হলো কোনটা শালীন পোশাক আর কোনটা অশালীন পোশাক এটা নির্বাচন করে দিবে কে?সেটা ঠিক করবে হেযবুত তওহীদ? না কুরআন সুন্নাহ? নিশ্চয় কুরআন-সুন্নাহ। অতএব এসব ভ্রান্তদের দিতে কথায় কান না দিয়ে উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে জেনে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক চলাটাই সচেতন মুমিনের কাজ।
মিসওয়াক জাহান্নামিদের সুন্নাহ?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হল দাঁত মেসওয়াক করা ; জান্নাতি ফেরকার কাছে সুন্নাহ হল রাসূলুল্লাহ ও আবু ওবায়দার (রা:) মত সশস্ত্র সংগ্রামের দাঁত ভেঙে ফেলা। -আকীদা, পৃ. ১৭
ইসলাম কী বলে?
নবিজি সাঃ-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ ‘মিসওয়াক’ করা নিয়ে এতবড় মারাত্মক কথা কল্পনাও করা যায়? অথচ হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ
রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন ঘরে প্রবেশ করতেন প্রথমে মিসওয়াক করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৩
হযরত ওয়াসিলা ইবনুল আসকা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেন,
أُمِرْتُ بِالسِّوَاكِ حَتَّى خَشِيتُ أَنْ يُكْتَبَ عَلَيَّ
আমাকে মিসওয়াকের আদেশ দেয়া হয়েছে। আমার আশঙ্কা হতে লাগল, না জানি তা আমার উপর ফরয করে দেয়া হয়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬০০৭
যে ‘মিসওয়াক করা’ নবিজি সাঃ কে জিবরাঈলের আ. মাধ্যমে মহান রব আদেশ করেছেন, সে মিসওয়াক করা ৭২ দল তথা জাহান্নামী ফিরকার কাছে সুন্নাহ বলা কি কোনো মুসলিমের পক্ষে সম্ভব?
কুলুখ নেওয়া কী সুন্নাত নয়?
পেশাব-পায়খানার পর ভালোভাবে পরিচ্ছনতা অর্জন করা ইসলামের শিক্ষা। আর এ কারণেই কুলুখ নেওয়ার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাঃ নির্দেশ করে গেছেন।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘খ্রিস্টান পণ্ডিতরা তাদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলিতে শিখিয়েছেন তাদের তৈরি করা এমন একটি ইসলাম যেটা তৈরি করে মৃত্যুভয়ে ভীতু কাপুরুষ, যারা দাড়ি, মোচ, টুপি, পাগড়ি, মেসওয়াক, কুলুখ, হায়েজ-নেফাস, জিকির-আসকার আর বিবি তালাককেই ইসলাম মনে করে তাই নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তাই নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে থাকে যাতে খ্রিস্টানরা নিশ্চিন্ত মনে তাদের দাসদের ওপর রাজত্ব করতে পারে’। -যুগসন্ধিক্ষণে আমরা, পৃ. ১৮
ইসলাম কী বলে?
বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, পেশাব থেকে ভালভাবে পবিত্র না হওয়া কবর আযাবের অন্যতম কারণ। একটি হাদীসে এসেছে, ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مرَّ بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ إِنَّهُمَا يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبيرٍ بَلَى إِنَّهُ كَبِيرٌ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ
একদা রাসুলুল্লাহ সাঃ দুটো কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, ’ঐ দুই কবর-বাসীর আযাব হচ্ছে। অবশ্য ওদেরকে কোন বড় ধরনের অপরাধ [বা কোন কঠিন কাজের] জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না।
’ [তারপর বললেন,] হ্যাঁ, অপরাধ তো বড়ই ছিল। ওদের একজন [লোকের] চুগলী করে বেড়াতো। আর অপরজন পেশাবের ছিটা থেকে বাঁচত না। -সহীহ বুখারী : হাদিস নং : ২১৬
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুললাহ সাঃ বলেছেন,
أَكْثَرُ عَذَابِ اَلْقَبْرِ مِنْ اَلْبَوْلِ
কবরের অধিকাংশ শাস্তি পেশাব থেকে। -সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস : ৩৪৮
সুতরাং বুঝা গেলো, পেশাব-পায়খানার পর ভালোভাবে কুলুখ ব্যবহার করা জরুরি। তাই এর শিক্ষা গ্রহণ করাও জরুরি। এ শিক্ষাকে খ্রিষ্টানদের আবিস্কার বলা কী চরম ধৃষ্টতা নয়?
দাঁড়ির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই?
পুরুষের মুখে দাঁড়ি ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গুরুত্বটা এতটাই বেশি যে, দাঁড়ি না রাখা , মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ ঘোষণা করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাঁড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়েও ছোট করে ফেলে, তার আমল নামায় পুনরায় দাঁড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কবীরা গুনাহ লেখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল, দাঁড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাঁড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত সে দাঁড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে, ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লেখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাঁড়ি মুন্ডানো এমন কবীরা গুনাহ যা ছোট করা বা মুন্ডানোর ফলে গুনাহ চলমান থাকে। সুতরাং যে ব্যক্তি দাঁড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়ে ছোট করে, সে ফাসিক।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
সময়ে অন্যতম কুফরী মতবাদ হেযবুত তওহীদ এই দাঁড়ি সম্পর্কে এমন আক্বীদা পোষণ করেন যে, দাঁড়ি ইসলামের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই না। চলুন হেযবুত তওহীদ কি বলে আগে সেটা দেখে নেও য়া যাক।
অনেকের ধারণামতে যে দাড়ি ছাড়া ইসলামই হয় না, সেই দাড়ি তো আল্লাহর রাসূলের বিরোধিতাকারী, ঘৃণিত কাফের বোলে আমাদের নিকট পরিচিত আবু জেহেল, আবু লাহাব, ওতবা,শায়েবার মুখেও ছিল। তারাও জোব্বা পোরত, ঠিক রসুল যে জোব্বা পোরতেন ঠিক একই ধরনের জোব্বা। প্রকৃতপক্ষে দাড়ি, টুপি, পাগড়ী, জোব্বার সাথে এসলামের কোন সম্পর্ক নাই। প্রকৃতির আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থার সাথে এগুলো সম্পর্ক রয়েছে। টুপি তো ইহুদীরা,শিখরা বা অন্যান্য ধর্মের ধর্মগুরুরাও পরেন, তাদেরও দাঁড়ি আছে, তারাও জোব্বা পড়েন, তাদের অনেকেই পাগড়ী পরেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাড়ি-টুপি, জোব্বা সবই ছিল। শুধু ধর্মীয় সাধু-সন্ন্যাসী নয়, আল্লাহর অস্তিত্বে সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী হিসাবে পরিচিত অনেকেরই দাড়ি ছিল যেমন কার্ল মার্কস, চার্লস ডারউইন,আব্রাহাম লিঙ্কন প্রমুখ। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩১
কথিত আছে পরবর্তীকালে যখন উমাইয়া রাজতন্ত্র চালু হয়, তখন দাড়িকে ইসলামের চিহ্ন বলে এবং রসুলের সুন্নাহ বলে চালু করা হয়। এ কাজে ইয়াজিদের দরবারে পালিত ভাড়াটে আলেমদের বেশ অবদান রয়েছে। ইয়াজিদের বেশ লম্বা দাড়ি ছিল, দাড়ি ছিল তার পিতা মুয়াবিয়ার রা: পিতা আবু সুফিয়ানেরও লম্বা দাড়ি ছিল এবং দাড়ি ছিল তাদেরই পূর্বপুরুষদের অভিজাত বা ঐতিহ্য।সুতরাং সে ঐতিহ্য যেন একেবারেই সমাজ থেকে মুছে না যায়, সেটারই আজীবন মেয়াদে কঠোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল জাল হাদিসের দাড়ির গগণস্পর্শি গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যম’। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩১
ইসলামের বিশেষজ্ঞরা কোরআন হাদিস নিয়ে গবেষণা করে বের করেছেন যে সালাতের বাইরে শর্তমূলক ৭ ফরদ ভিতরে ৭ ফরদ (রোকন)।২১ টি ওয়াজিব ২১ টি সুন্নাত, ৭ টি। মুস্তাহাব এর মধ্যে দাড়ি-টুপি, জোব্বা, পাগড়ী ইত্যাদি কোন একটি বিষয়ে কোন উল্লেখ্য নেই। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩৫
আদিকাল থেকে দাড়ি মানুষের পৌরুষ ও সৌন্দর্যের প্রতিক হোয়ে আছে। সিংহের যেমন কেশর,ময়ূরের যেমন লেজ,হাতির যেমন দাত,হরিণের যেমন সিং, তেমনি দাড়ি মানুষের প্রাকৃতিক পৌরুষ সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য নষ্ট না করার উদ্দেশ্যেই দাড়ি রাখার নির্দেশ। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩৬
আল্লাহ ও রসূলের উপর দৃঢ় বিশ্বাস ঈমান থাকা সত্ত্বেও আকিদার বিকৃতির ফলে কার্যতঃ শেরক ও কুফরের মধ্যে নিমজ্জিত জাতিকে মনে করিয়ে দিতে হবে দাঁড়ি, মোচ, পাজামা নফল এবাদতের কথা বাদ দিন। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ১১৩
বিশ্বনবী তার নিজের জাতিকে নির্দেশ দিলেন আমার এই দ্বীনের সন্ন্যাস বৈরাগ্য নেই।তোমরা ওইসব সংসার থেকে সন্ন্যাসীদের বিপরীত করবে অর্থাৎ দাড়ি ও।মোচ রাখবে এবং ইহুদীদের বিপরীত করবে অর্থাৎ দাড়ি ও মোচ ছেটে ছোট করে রাখবে। জাতিকে সুন্দর দেখানোর শেখানোর জন্য মহানবী নিজে পরিস্কার সুন্দর কাপড় পোরতেন, দাঁড়ি মোচ সুন্দর করে ছেটে রাখতেন। তিনি সফরে গেলেও তার সঙ্গে কাচি, চিরুনি ও আয়না থাকতো’। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩৭
যে জাতি এখনো দাড়ি এক মুষ্টি হবে না বড় হবে টাখনু কতটুকু দেখা যাবে নবী নূরের তৈরী না মাটির তৈরী তা নিয়ে বিতর্ক করে ঝগড়া করে তাদের কাছে মানবজাতি কি আশা করবে’। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ২৬
প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদের উপরোক্ত বক্তব্যগুলোর সারাংশ দাবি হলো,
১. দাঁড়ির সাথে ইসলামেে সম্পর্ক নেই।
২. দাঁড়ি অমুসলিমদেরও কালচার।
৩. ইসলামে দাঁড়ি জাল হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, এ ব্যাপারে কোনো সহিহ প্রমাণ নেই।
৪. দাঁড়ি মূলত অনর্থক একটি ব্যাপার, যা বাদ দিতে জাতিকে উৎসাহ দিতে হবে।
নাউযুবিল্লাহ। উপরোক্ত বক্তব্যগুলো থেকে জানতে পারলাম, দাঁড়ির প্রতি হেযবুত তওহীদের যথেষ্ট অনীহা এবং বিদ্বেষ রয়েছে। তা না থাকলে এত এত জঘন্যতম কথা কিভাবে বলতে পারে? সুতরাং চলুন, দাঁড়ি সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী সেটা তেখে যাক।
ইসলাম কি বলে:
দাঁড়ি মুসলিমদের ধর্মীয় সংস্কৃতি। যা সুন্নাত নয়, বরং ওয়াজিব আমল। যা মুসলিম হিসাবে কাউকে চেনার প্রাথমিক একটি চিহ্ন। এই দাঁড়িকে নিয়ে বাতিলদের ভেতর অনেক বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি দেখা যায়। এ সম্পর্কে এ পর্বে আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ। এর আগে দাঁড়ি কাকে বলে এ বিষয়ে জানা দরকার।
দাঁড়ির সংজ্ঞা:
ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহ. বলেছেন, পরিভাষায় দাড়ি বলা হয়,
الشعر النابت على الخدين من عذار وعارض والذقن
যা উভয় গাল, কানপট্টির উপর,গালের সামনের অংশ,এবং থুতনি সবকিছুকেই মূলত দাঁড়ি বলা হয়ে থাকে। -রদ্দুল মুহতার, খ. ১ পৃ. ২১৫
দাঁড়ি না রাখা , মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাঁড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়েও ছোট করে ফেলে, তার আমল নামায় পুনরায় দাঁড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কবীরা গুনাহ লেখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল, দাঁড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাঁড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত সে দাঁড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে, ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লেখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাঁড়ি মুন্ডানো এমন কবীরা গুনাহ যা ছোট করা বা মুন্ডানোর ফলে গুনাহ চলমান থাকে। সুতরাং যে ব্যক্তি দাঁড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়ে ছোট করে, সে ফাসিক।
দাঁড়ি সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নববীতে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। কয়েকটি দলীল নিচে পেশ করা হলো-
পবিত্র কুরআনের আলোকে দাঁড়ি: দাঁড়ি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কয়েকটি আয়াত রয়েছে। যা কুরআন সম্পর্কে অভিজ্ঞরা জানেন। নিন্মে পেশ করছি।
দাঁড়ি কামানো আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করার নামান্তর:
শরীরে এমন কোনো কাজ করা জায়েয নেই, যা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন বয়ে আনে। যেমন ভ্রুপ্লাক করা ইত্যাদী। তবে যেসকল বিষয়ে আয়াত-হাদিসের মাধ্যমে অঙ্গের কোনো অংশ কাটার কথা এসেছে সেগুলো জায়েয। যেমন, নক কাটা, চুল কাটা ইত্যাদী। বাকি সকল ক্ষেত্রে মানুষকে আল্লাহ তা’আলা যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক সেভাবে থাকা হলো, আল্লাহর চাওয়া। কারণ বিতাড়িত শয়তান আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করার সময় বলেছিলো,
وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللّهِ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا
এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। -আলে ইমরান : ১১৯
উক্ত আয়াত দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, শয়তানের বড় টার্গেট হলো, আল্লাহর সৃষ্টির নমুনা যেন মানুষ পাল্টে ফেলে সেটাই শয়তানের চ্যালেঞ্জে সফলতার জন্য বড় পাওয়া। একারনেই ভ্রুপ্লাক করা, উল্কি অঙ্কণ করা ইত্যাদীর মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির নমুনা পরিবর্তন করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে। এজন্য উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা কুরতুবী রহ. বলেন,
وَكَذَا لَا يَجُوزُ لَهَا حَلْقُ لِحْيَةٍ أَوْ شَارِبٍ أَوْ عَنْفَقَةٍ إِنْ نَبَتَتْ لَهَا لِأَنَّ كُلَّ ذَلِكَ تَغْيِيرُ خَلْقِ اللَّهِ
দাঁড়ি, মোচ এবং ঠোটের নিচের পশম গজালে তা মুণ্ডন করা জায়েয হবে না। কারণ এটা আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তনের অন্তুর্ভূক্ত। -তাফসীরে কুরতুবী, খ. ৩ পৃ. ২৫২
দাঁড়ি কামানো অঙ্গহানীর নামান্তর:
উপরন্তু শরীরের যেকোনো অঙ্গহানি করা ইসলামে পরিস্কার হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। -সূরা রুম : ৩০
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর রহি. বলেন,
قَالَ بَعْضُهُمْ مَعْنَاهُ لَا تُبَدِّلُوا خَلْقَ اللَّهِ
কেউ কেউ বলেন, এ আয়াতের অর্থ হলো, তোমরা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করো না। -তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ. ১১ পৃ. ২৬
অর্থাৎ আয়াতটি থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, আল্লাহর কোনো সৃষ্টি পরিবর্তন করা তথা অঙ্গহানি করা জায়েয নয়। আর এজন্যই হাদিসে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ আনসারী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْ النُّهْبَى وَالْمُثْلَةِ
নবিজি সাঃ নিষেধ করেছেন লুটতরাজ করতে এবং জীবকে বিকলাঙ্গ বা অঙ্গহানি করতে। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ২৪৭৪
আরও স্পষ্টরুপে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত নবিজি সঃ বলেছেন,
مَن مثَّل بالشِّعرِ فليس له عندَ اللهِ خَلاقٌ
যে ব্যক্তি চুল মারফত অঙ্গহানি করবে, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিদান থাকবে না। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খ. ৮ পৃ. ১২৪
দাঁড়ি মুণ্ডানো কি অঙ্গহানি?
এ সম্পর্কে আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আল-মাগরিবী রহ. বলেন,
حلق اللحية لا يجوز وكذلك الشارب وهو مثلة وبدعة
দাঁড়ি মুণ্ডানো জায়েয নয়, এমনিভাবে মোচ মুণ্ডানো। কারণ এটা অঙ্গহানি এবং বিদ’আত। -মাওয়াহেবুল জলিল, খ. ১ পৃ. ৩১৩
সুতরাং বুঝা গেল, দাঁড়ি মুণ্ডানো যেহেতু অঙ্গহানি বা বিকলাঙ্গের মধ্যে অন্তুর্ভূক্ত, সেহেতু উক্ত আয়াতদ্বয়ের কারণে দাঁড়ি মুণ্ডানোর সুযোগ নেই।
হাদিসের আলোকে দাঁড়ি:
দাঁড়ি লম্বা রাখার ব্যাপারে সহিহ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে আদেশ করা হয়েছে। নিন্মে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হলো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أنّه أمَرَ بإحْفاءِ الشَّوارِبِ وإعْفاءِ اللِّحْيَةِ
রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদেরকে গোঁফ খাটো করতে এবং দাড়ি লম্বা করতে আদেশ করেছেন। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৯
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
قُصُّوا الشَّوَارِبَ وَأَعْفُوا اللِّحَى
তোমরা গোঁফ অধিক ছোট করবে এবং দাড়ি ছেড়ে দিবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭১৩২
দাঁড়ি মুণ্ডন করা অমুসলিমদের কালচার:
একটি হাদীছে এসেছে, হযরত আবু উমামা বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা সাহাবায়ে কেরাম রা. একদা রাসুল সা. কে বললাম,
يا رسولَ اللهِ إنّ أهلَ الكِتابِ يَقُصُّونَ عَثانينَهم ويُوَفِّرونَ سِبالَهم قال فقال النَّبيُّ ﷺ قُصُّوا سِبالَكم ووَفِّروا عَثانينَكم وخالِفوا أهلَ الكتابِ
হে আল্লাহর রাসূল সা. আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও খৃষ্টানরা দাঁড়ি মুন্ডন করে এবং গোঁফ লম্বা করে। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা গোঁফসমূহ খাটো করে ফেল এবং দাঁড়িগুলো ছেড়ে দাও। আর (এভাবেও) আহলে কিতাবদের বিরোধিতা কর’। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২২৮৩
উক্ত হাদিসে অমুসলিমদের বিরোধীতা করার জন্য দাঁড়ি লম্বা করার কথা খোদ নবিজি সাঃ বলেছেন।
ইবনু উমার রা. বলেন, নবিজি সাঃ বলেছেন,
خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ
তোমরা মুশরিকদের উল্টো করবেঃ দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৫৮৯২
দীর্ঘ এক হাদিসে বর্ণিত আছে,
ودخلا على رسول الله صلى الله عليه وسلم وَقَدْ حَلَقَا لِحَاهُمَا وَأَعْفَيَا شَوَارِبَهُمَا فَكَرِهَ النَّظَرَ إليهما ثم أَقْبَلَ عَلَيْهِمَا فَقَالَ وَيْلَكُمَا مَنْ أَمَرَكُمَا بِهَذَا قَالا أَمَرَنَا بِهَذَا رَبُّنَا يَعْنِيَانِ كِسْرَى فَقَالَ رسول الله لَكِنَّ رَبِّي قَدْ أَمَرَنِي بِإِعْفَاءِ لِحْيَتِي وَقَصِّ شَارِبِي
রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে দু’জন (মুশরিক) আগমন করলেন, যাদের মোচ লম্বা এবং দাঁড়ি মুণ্ডানো ছিলো। নবিজি সাঃ তাদের দিকে তাকাতে অনীহা পেশ করে বললেন, ‘তোমরা ধ্বংশ হও! কে তোমাদেরকে এমনটা করতে বলেছে? তারা দু’জন বললেন, আমাদের প্রভূত কেসরার বাদশা। অতপর রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, কিন্তু আমার রব আমাকে দাঁড়ি লম্বা এবং মোচ ছোট করার আদেশ দিয়েছেন। -তারীখে তাবারী, খ. ২ পৃ. ১৪৩
বুঝা গেলো, দাঁড়ি কর্তন করা, মোচ লম্বা করা এগুলো অমুসলিমদের কালচার। উপরোক্ত হাদিসগুলো ছাড়াও দাঁড়ি লম্বা রাখার নির্দেশ সংক্রান্ত অনেক সহিহ হাদিস বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
এক. إعفاء اللحى (ইফা) সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১২২১
দুই. أعفوا اللحى (আ’ফু) সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮৯৩
তিন. أَرْخُوا اللِّحَى (আরখু) সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬০
চার. أَوْفُوا اللِّحَى (আওফু) সহীহ মুসলিম হাদীস নং-২৫৯
পাঁচ. وَفِّرُوا اللِّحَى (ওয়াফ্ফিরু) সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮৯২
ছয়. أوفِروا اللِّحى (আওফিরু) জামে সগীর, হাদিস নং- ৩৮৭৮
এ সকল হাদিসে দাঁড়ি লম্বা করার আদেশ করা হয়েছে। মূন্ডানোর নির্দেশ তো দূরের কথা অনুমতি সংক্রান্ত কোন জাল হাদীসও নেই। আরও দেখতে চাইলে দেখুন। সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ২৫৯ আল মু’জামুল আওসাত (তাবরানী) খ. ৯ পৃ. ১৬২ বায়হাকী, হাদিস নং- ২৮৬৪ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ. ৮ পৃ. ৪১ মুসনাদে আহমাদ,হাদিস নং- ৪৬৫৪ দাঁড়হী আওর ইসলাম (বাবুনগরী) পৃ. ২৮
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদিসসমূহ থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, দাঁড়ি মুণ্ডানো ইসলামের কোনভাবেই বৈধ নয়।
বিভিন্ন মাযহাবে দাঁড়ি:
হানাফী মাযহাবে দাঁড়ি : দাঁড়ি মুণ্ডানোর ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের সুস্পষ্ট বক্তব্য কী এ ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ইমাম শামী রহি. বলেন-
ويحرم على الرجل قطع لحيته
পুরুষের জন্য দাঁড়ি মুণ্ডানো হারাম। -রদ্দুল মুহতার, খ. ৯ পৃ. ৫৮৩
মালেকী মাযহাবে দাঁড়ি : মালেকী মাযহাবের শায়েখ আদ-দুসুকী রহি. বলেন,
يحرم على الرجل حلق لحيته
পুরুষের জন্য দাঁড়ি মুণ্ডানো হারাম। -হাশিয়াতুদ দুসুকী, খ. ১ পৃ. ১৫০
হাম্বলী মাযহাবে দাঁড়ি : হাম্বলী মাযহাবের প্রশিদ্ধ ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি. বলেন,
ويحرم حلق اللحية
দাঁড়ি মুণ্ডানো হারাম। -আল ফাতাওয়া আল কুবরা, খ. ৫ পৃ. ৩০২
শাফেয়ী মাযহাবে দাঁড়ি : এ ব্যাপারে শাফেয়ী মাযহাবের ফাতাওয়া খোদ ইমাম শাফেয়ী রহি. বলেন,
وهو وإن كان في اللحية لا يجوز
মুণ্ডানোর বিষয়টি যদি দাঁড়ির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, তাহলে সেটা তো জায়েযই নেই। -কিতাবুল উম্ম, খ. ৭ পৃ. ২০৩
সালাফী মাযহাবে দাঁড়ি : সালাফী মাযহাবের অন্যতম মূখপাত্র বিন বায রহি. বলেন,
وليس لأحد من الناس الأخذ منها ولا حلقها ولا تقصيرها بل يجب إعفاؤها وتوفيرها وإرخاؤها عملاً بقول النبي
নবিজি সাঃ-এর নির্দেশ মোতাবেক কোনো পুরুষের জন্য দাঁড়ি মুণ্ডানো, কাটা বা ছাটা জায়েয নেই বরং লম্বা করা ওয়াজিব। -নূরুন আলাদ্দারব, খ. ১ পৃ. ৫৮৭
জাহেরী মাযহাবে দাঁড়ি : ইমাম দাউদ জাহিরি রহি. বলেন,
والمذهب الظاهري قال حلق اللحية حرام
জাহেরী মাযহাব হলো, দাঁড়ি মুণ্ডন করা হারাম। -আল-বুরহানুল মুবিন, খ. ১ পৃ. ৪৬৫
ইজমায়ে উম্মাত মতে দাঁড়ি: শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি. বলেন,
ويُحرم حلق اللحية للأحاديث الصحيحة ولم يُبحه أحد
দাঁড়ি রাখার ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীছ বর্ণিত হওয়ায় তা মুন্ডন করা হারাম। আর এটিকে কেউ বৈধ বলেননি’। -আল-বুরহানুল মুবিন, খ. ১ পৃ. ৪৬৫
ইমাম শামী রহি. বলেন,
وأما الأخذ منها وهي دون ذلك كما يفعله بعض المغاربة مُخَنَّثة الرجال فلم يبحه أحد
পশ্চিমা সভ্যতা ও হিজড়াদের মত এক মুষ্ঠি থেকে দাঁড়ি ছেটে ফেলাকে কেউ বৈধতা দেননি। -রদ্দুল মুহতার, খ. ৩ পৃ. ৩৯৮
ইমাম ইবনে হাযেম রহি. বলেন,
وذلك محرم بالاجماع
এ দাঁড়ি সেভ করা সর্বোসম্মতক্রমে হারাম। -আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খ. ১৪ পৃ. ২৭৪
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, দাঁড়ি মুণ্ডন করা ইসলামে পরিস্কার হারাম। কিন্তু এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কাটা বা ছাটা বৈধ। নিন্মে এ সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হলো।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম, অন্তত দাঁড়ি রাখা পুরুষের জন্য ওয়াজিব। একটি ওয়াজীব বিধানের প্রতি হেযবুত তওহীদের কতটা বিদ্বেষ! এটা কী ইসলাম বিকৃতির নামান্তর নয়? যাদের দাঁড়ি সম্পর্কে কনসেপ্ট এতটা জঘন্য, তারা কিভাবে মুসলিম হয়? জবাব আশা করি পাঠক মহলই বের করবেন।
মোচ কতটুকু রাখতে হবে?
ওপরে জেনেছি, হেযবুত তওহীদের কাছে মোচ খাটো করা বিষয়ক চর্চা করা খ্রিস্টানদের আবিস্কার। অথচ ‘মোচ বড় হবে না ছোট হবে’ এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজেই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أنّه أمَرَ بإحْفاءِ الشَّوارِبِ وإعْفاءِ اللِّحْيَةِ
রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদেরকে গোঁফ খাটো করতে এবং দাড়ি লম্বা করতে আদেশ করেছেন। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৯
হযরত যায়দ ইবন আরকাম রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا
যে ব্যক্তি মোচ ছাঁটে না সে আমার উম্মতভুক্ত নয়। -জামে তিরমিজী, হাদিস : ২৭৬১
সাহাবী হযরত আনাস রা. বলেন,
وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإِبِطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ يَوْماً
গোঁফ ছোট রাখা , নখ কাঁটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং নাভীর নিচের লোম চেঁছে ফেলার জন্যে আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যেন, আমরা তা করতে চল্লিশ দিনের অধিক দেরী না করি। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮
প্রিয় পাঠক, যে মোচ বা গোঁফ লম্বা রাখলে প্রকৃত উম্মতে মুহাম্মাদী থাকা যায় না, সে ব্যাপারে কী জ্ঞান চর্চা করা অহেতুক? সেটা খ্রিষ্টানদের আবিস্কৃত শিক্ষা? এতবড় জঘন্যতা কল্পনা করা যায়?
হায়েজ-নেফাস সম্পর্কে চর্চা করা খ্রিস্টানদের আবিস্কার?
মহিলাদের হায়েজ (মাসিক) নেফাস (বাচ্চা প্রসবের সময় ও তার পরবর্তীতে নারীর জরায়ু থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে নেফাস বলে) সম্পর্কে আলোচনা পবিত্র কুরআন ও হাদিসে অহরহ আছে। মহান রব বলেন,
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُواْ النِّسَاء فِي الْمَحِيضِ وَلاَ تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىَ يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। -সূরা বাকারা : ২২২
সুতরাং বুঝা গেলো, হায়েজের সময় সহবাস করা হারাম। এমনিভাবে হায়েজ-নেফাসের সময় আরও অসংখ্য বিষয় জড়িত। ফলে এ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মানুষের জন্য ফরজ। যে কারণে কুরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে, সেই চর্চা মুসলিমরা করে থাকেন। সেটাকে খ্রিষ্টানদের আবিস্কার বলে আখ্যায়িত করা হেযবুত তওহীদের পক্ষেই সম্ভব। কারণ তারা তো মুসলমানই নয়।
তালাক বিষয়ক মাসআলা চর্চা করা খ্রিস্টানদের শিক্ষা?
তালাক সম্পর্কে আলোচনা মহান রব পবিত্র কুরআনে করেছেন। মহান রব বলেন,
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلاَثَةَ قُرُوَءٍ وَلاَ يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَلِكَ إِنْ أَرَادُواْ إِصْلاَحًا وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللّهُ عَزِيزٌ حَكُيمٌ الطَّلاَقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُواْ مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلاَّ أَن يَخَافَا أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَعْتَدُوهَا وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللّهِ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ فَإِن طَلَّقَهَا فَلاَ تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىَ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِن طَلَّقَهَا فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النَّسَاء فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَلاَ تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لَّتَعْتَدُواْ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ وَلاَ تَتَّخِذُوَاْ آيَاتِ اللّهِ هُزُوًا وَاذْكُرُواْ نِعْمَتَ اللّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنزَلَ عَلَيْكُمْ مِّنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُم بِهِ وَاتَّقُواْ اللّهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاء فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْاْ بَيْنَهُم بِالْمَعْرُوفِ ذَلِكَ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ مِنكُمْ يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكُمْ أَزْكَى لَكُمْ وَأَطْهَرُ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীরদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কতৃêক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে নেয়, তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও অথবা সহানুভুতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও। আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যে আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে। আর আল্লাহর নির্দেশকে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করো না। আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর, যে কিতাব ও জ্ঞানের কথা তোমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে যার দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয়। আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ সর্ববিষয়েই জ্ঞানময়। আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও এবং তারপর তারাও নির্ধারিত ইদ্দত পূর্ন করতে থাকে, তখন তাদেরকে পূর্ব স্বামীদের সাথে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী বিয়ে করতে বাধাদান করো না। এ উপদেশ তাকেই দেয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ ও কেয়ামত দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। -সূরা বাকারা : ২২৮-২৩২
সুতরাং তালাকের জ্ঞান মানুষের দৈনন্দিন জিবনের হালাল-হারাম বা জান্নাত-জাহান্নামের বিষয়, যেটা নিয়ে খোদ মহান রব আলোচনা করেছেন, সেটার চর্চা করাকে খ্রিষ্টানদের আবিস্কার বলা কতবড় ধৃষ্টতা! কল্পনা করা যায়?
যিকির-আযকার:
আল্লাহ পাকের নামে যিকির করার বিষয়ে চর্চা করাকেও তারা একটা অনর্থক কাজ ও খ্রিষ্টানদের আবিস্কার মনে করে থাকে। অথচ মহান রবের যিকির সম্পর্কে আয়াত, হাদিস লিখতে গেলে এর শেষ নেই। মহান রব বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। -সূরা আহযাব : ৪১-৪২
উক্ত আয়াত ছাড়াও কুরআন-সুন্নাহ’তে শত শত আয়াত ও হাদিস রয়েছে যিকির-আযকারের ব্যাপারে। এই বিষয়ে চর্চা করা কী খ্রিষ্টানদের আবিস্কার? আল্লাহ পাক তাদের থেকে আমাদের হিফাযত করেন। আমীন!