ইসলামে সাহাবায়ে কেরাম রা:
সাহাবায়ে কেরাম আমাদের জন্য ঈমান ও হিদায়াতের নমুনা। তাদের মত ঈমান আনতে পারলে যে কেউ হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। এটা সরাসরি পবিত্র কুরআনের ঘোষণা। ইসলামের জন্য সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগ ও কুরবানী অতুলনীয়। নিজেদের জান-মাল কুরবানী করে মহান আল্লাহকে যারা খুশি করে জান্নাতের ঘোষণা পেয়েছেন, তারাই সাহাবায়ে কেরাম রাঃ। যাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের সমালোচনা বা বিদ্বেষ রাখা ইসলামী শরীয়তে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক কথা হলো, সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে সবচে বেশি সমালোচনা করেছে শিয়া সম্প্রদায় এবং এই শিয়াদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে সকল বাতিল ফিরকা সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বিভিন্নভাবে সমালোনা এবং দোষচর্চা করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের উপর বিভিন্ন রকম মিথ্যা অভিযোগ করে সাহাবায়ে কেরামের মান নষ্ট করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, হেযবুত তওহীদ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এখন সময়ের দাবী। চলুন ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা শুরু করা যাক।
সাহাবী শব্দের অর্থঃ
আভিধানিক অর্থঃ
সাহাবী’ শব্দটি আরবী ভাষার صُحبةً ‘সুহবতুন’ শব্দের একটি রূপ। একবচনে ‘সাহেব’ ও ‘সাহাবী’ এবং বহুবচনে أصحاب و صَحابة ‘সাহাবা’ ও ‘আসহাব’ ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থ সঙ্গী, সাথী, সহচর, এক সাথে জীবন যাপনকারী অথবা সাহচর্যে অবস্থানকারী।
পরিভাষায় সাহাবী বলা হয়,
الصحابي من لقي النبي صلى الله عليه وسلم مؤمناً به ومات على الإسلام
অর্থাৎ যারা ঈমান অবস্থায় নবী করীম (সা.) -এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং মুমিন অবস্থাতেই ইন্তেকাল করেছেন।
আল ইসাবা খঃ১ পৃঃ৫ জামিউল উসূল খ:১ পৃ:১৩৪ অাল মিনহাজ পৃ-৬৭ কাওয়াইদুল ফিকহ পৃঃ ৩৪৬
সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদাঃ
পবিত্র কুরআনে সাহাবায়ে কেরাম:
সাহাবায়ে কেরাম সফলকাম ও জান্নাতীঃ
لَـكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ جَاهَدُواْ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَأُوْلَـئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ أَعَدَّ اللّهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থঃ কিন্তু রসূল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তারা তাতে বাস করবে অনন্তকাল। এটাই হল বিরাট কৃতকার্যতা।
সুরা তাওবা আয়াত-৮৮
সাহাবায়ে কেরাম সত্যিকারের মুমিনঃ
وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ آوَواْ وَّنَصَرُواْ أُولَـئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
অর্থঃ আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী।
সুরা আনফাল আয়াত-৭৪
সাহাবায়ে কেরাম ঈমানের প্রতি আগ্রহী আর কুফরীর প্রতি ঘৃণা অবলম্বনকারী ছিলেন,
وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُولَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَنِعْمَةً وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থঃ তোমরা জেনে রাখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রসূল রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন, তবে তোমরাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী। এটা আল্লাহর কৃপা ও নিয়ামতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। সুরা হুজুরাত আয়াত-৭-৮
مُّحَمَّدࣱ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِینَ مَعَهُۥۤ أَشِدَّاۤءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَاۤءُ بَیۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعࣰا سُجَّدࣰا یَبۡتَغُونَ فَضۡلࣰا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَ ٰنࣰاۖ سِیمَاهُمۡ فِی وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ ذَ ٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِی ٱلتَّوۡرَىٰةِۚ وَمَثَلُهُمۡ فِی ٱلۡإِنجِیلِ كَزَرۡعٍ أَخۡرَجَ شَطۡـَٔهُۥ فَـَٔازَرَهُۥ فَٱسۡتَغۡلَظَ فَٱسۡتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ یُعۡجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِیَغِیظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ مِنۡهُم مَّغۡفِرَةࣰ وَأَجۡرًا عَظِیمَۢا
অর্থঃ মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।
সুরা ফাতহ আয়াত-২৯
সাহাবাদের প্রতি আল্লাহ খুশি:
وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থঃ আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা
সুরা তওবা আয়াত: ১০০
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আনসার ও মুহাজির সাহাবাদের উচ্চ মর্যাদা ও ফজিলত বয়ান করেছন। পাশাপাশি ঐ সমস্ত সাহাবাদেরকেও যারা মুহাজির ও আনসার সাহাবাদের অনুসরণ করেছেন এবং উম্মতের মধ্যে যারা নেককার দ্বীনদার শ্রেণী।
এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে ইমাম আমের রঃ ও শা’বী রঃ বলেন-
“المهاجرون الأولون” الذين شهدوا بيعة الرضوان
অর্থঃ মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে অগ্রবর্তী ও প্রথম তাঁরাই যাঁরা (হুদায়বিয়ায়) বায়আ’তে রিদওয়ানের শরিক হয়েছিলেন।
সূত্রঃ তাফসীরে তবারী খ:১৪ পৃঃ৪৩৫ তাফসীরে কুরতুবী খঃ১০ পৃ:৩৪৪
এ কথাটি অপর আয়াতে এসেছে,
لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ
অর্থাৎ মুমিনরা যখন বৃক্ষতলে তোমার নিকট বায়’আত গ্রহন করলো তখন আল্লাহ্ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন।
সুরা ফাতাহ আয়াড-১৮
পাশাপাশি কাতাদা র: ইবনে সিরিন র: ,সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব র: ,মুহাম্মাদ র: বলেন,
المهاجرون الأولون من صلى القبلتين مع النبيّ ﷺ
অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে অগ্রবর্তী ও প্রথম তাঁরাই যাঁরা নবিজির সঃ সাথে উভয় কিবলার দিকে ফিরে নামাজ পড়েছিলেন।
সূত্রঃ তাফসীরে তবারী খ:১৪ পৃঃ৪৩৮
উপরন্তু আয়াতটির ব্যাপারে ওমর রাঃ থেকে একটি হাদির রয়েছে,
عن محمد بن كعب القرظي قال مرّ عمر بن الخطاب برجل يقرأ “والسابقون الأولون من المهاجرين والأنصار” حتى بلغ “ورضوا عنه” قال وأخذ عمر بيده فقال من أقرأك هذا قال أبي بن كعب فقال لا تفارقني حتى أذهب بك إليه فلما جاءه قال عمر أنت أقرأت هذا هذه الآية هكذا قال نعم قال أنت سمعتها من رسول الله ﷺ قال نعم قال لقد كنت أظن أنّا رُفِعنا رَفْعة لا يبلغها أحدٌ بعدنا فقال أبيّ بلى تصديق هذه الآية في أول سورة الجمعة “وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ “إلى “وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُوفي سورة الحشر “وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلإخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالإيمَانِ” وفي الأنفال “وَالَّذِينَ آمَنُوا مِنْ بَعْدُ وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا مَعَكُمْ فَأُولَئِكَ مِنْكُمْ” إلى آخر الآية
অর্থঃ মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কুরাযী রাঃ বলেন, যে,ওমর ইবনুল খাত্তাব(রাঃ) এমন একজন লোকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন, যিনি এই আয়াতটি পাঠ করছিলেন,
والسابقون الأولون من المهاجرين والأنصار
অর্থাৎ আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন) তখন ওমর (রাঃ)তাঁর হাতখানা ধরে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘কে তোমাকে এটা এরুপে পাঠ করালেন?
লোকটি উত্তরে বললেনঃ “উবাই ইবনে কা’ব রাঃ। তখন ওমর (রাঃ)বললেন, চলো। আমরা উবাই ইবনে কা’বের কাছে যাই এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। অতঃপর উবাই ইবনে কা’বের কাছে গিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনি কি এই আয়াতটি এভাবে পড়তে বলেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন ওমর(রাঃ)তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনি কি রাসুলুল্লাহ(সাঃ)কে এভাবেই পড়তে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। ওমর(রাঃ) বললেনঃ “তাহলে দেখা যাচ্ছে যে,আমরা এমন এক মর্যাদা লাভ করেছি যা আমাদের পরে কেউ লাভ করতে পারবেনা”।এ কথা শুনে উবাই ইবনে কা’ব(রাঃ) বলেন যে,এই আয়াতের সত্যতা প্রমাণকারী সুরায়ে জুমাআ’র প্রথম দিকের আয়াতটিও বটে। তা হচ্ছে-
وأخرين منهم لَمَّا يلحقوا بهم وهو العزيز الحكيم
অর্থাৎ “আর(উপস্থিতরা ব্যতিত)অন্যান্ন লোকদের জন্যেও, যারা তাদের সাথে শামিল হবে,কিন্তু এখনও শামিল হয়নি,আর তিনি মহাপরাক্রান্ত,প্রজ্ঞাময়। সুরা জুমআ আয়াত: ৩
উপরন্ততু সুরা হাশরেও রয়েছে,
وَٱلَّذِینَ جَاۤءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ یَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَ ٰنِنَا ٱلَّذِینَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِیمَـٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِی قُلُوبِنَا غِلࣰّا لِّلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ رَبَّنَاۤ إِنَّكَ رَءُوفࣱ رَّحِیمٌ
অর্থাৎ “আর (তাদের জন্যেও এ মর্যাদা) যারা (ইসলাম ধর্মে)তাদের(আনছার ও মুহাজিরদের)পরে এসেছে,যারা প্রার্থনা করে “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ক্ষমা করুন,আর আমাদের ঐ ভাইদেরকেও যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং ঈমানদারদের প্রতি আমাদের অন্তরে যেন ঈর্ষা না হয়। হে আমাদের প্রভু! আপনি বড় স্নেহশীল,করুণাময়। সুরা হাশর আয়াত: ১০
সুরায়ে আনফালেও রয়েছেঃ
وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ مِنۢ بَعۡدُ وَهَاجَرُوا۟ وَجَـٰهَدُوا۟ مَعَكُمۡ فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ مِنكُمۡۚ
অর্থাৎ “আর যারা(নবী সাঃ এর হিজরতের)পরবর্তীকালে ঈমান এনেছে,হিজরত করেছে, এবং তোমাদের সাথে একত্রে জিহাদ করেছে,বস্তুতঃ তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত”।সুরা আনফাল আয়াত: ৭৫ (সূত্রঃ তাফসীরে তবারী খ:১৪ পৃ: ৪৩৮)
এক কথায় আয়াতগুলো সামনে রেখে মুল অর্থ দাড়াল, মুহাজিরদের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী ও প্রথম এবং আনসার ও তাদের অনুসারীদের প্রতি আল্লাহপাক সন্তুষ্ট।
সাহাবায়ে কেরাম শ্রেষ্ঠ উম্মতঃ
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ
অর্থঃ তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবেনা। সুরা আলে-ইমরান-১১০
তাফসীরে তাবরীতে আয়াতের ব্যাখায় হযরত ওমরের(রাঃ) একটি উক্তি তুলে ধরেছেন
لو شاء الله لقال انتم فكنا كلنا ولكن قال كنتم فى خاصة من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسل
অর্থাৎ “যদি আল্লাহপাক ইচ্ছা করতেন তাহলে কুনতুম না বলে “আনতুম খায়রা উম্মাতিন”বলতে পারতেন এবং সেক্ষেত্রে আমরা সকলেই এ আয়াতের আওতায় চলে আসতাম। কিন্তু! আল্লাহপাক এখানে সাহাবাদের মধ্যে বিশেষ জামায়াতকে সম্বোধণ করেছেন।
সূত্রঃ তাফসীরে তবারী খন্ডঃ ৭ পৃষ্টাঃ ১০১ তাফসীরে শাওকানী খ:১ পৃ:৩০৩ হায়াতুস সাহাবাহ খ:১ পৃ:৫২
এ আায়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন,
كنتم خير أمة أخرجت للناس قال هم الذين هاجروا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم من مكة إلى مدينة
অর্থাৎ- “খায়রে উম্মত” দ্বারা ঐ সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম যারা মক্কা হতে মদিনাতে হিজরত করেছিলেন। নিঃসন্দেহে তাঁরা সাহাবায়ে কেরাম।
সূত্রঃ জামিউল মাসানিদি ওয়াস সুনান খঃ ৩০ পৃঃ ২৬৭ তাফসীরে ইবনে কাসীর খন্ড: ৩ পৃষ্টা: ১৪২ উমদাতুত তাফসীর খ:৩ পৃ:২০
উপরন্তু যদি অত্র আয়াত সকল উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্যও প্রযোজ্য হয়ে থাকে, তাহলে সর্ব প্রথম ও সর্ব শ্রেষ্ঠ উম্মত হলেন সাহাবায়ে কেরাম রাঃ। অতএব সাহাবায়ে কেরামের শ্রেষ্ঠত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার থেকেই প্রমাণিত ও ঘোষিত।
সাহাবাদের দানঃ
لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
সুরা হাদিদ আয়াত-১০
সাহাবাদের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনঃ
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِنْ شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থঃ আর তাদেরকে বিতাড়িত করবেন না, যারা সকাল-বিকাল স্বীয় পালকর্তার এবাদত করে, তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও আপনার দায়িত্বে নয় এবং আপনার হিসাব বিন্দুমাত্রও তাদের দায়িত্বে নয় যে, আপনি তাদেরকে বিতাড়িত করবেন। নতুবা আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন।
সুরা আনআম আয়াত-৫২
সাহাবারাও ছিলেন নবিজির সঃ শক্তিঃ
هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ
অর্থঃ তিনিই তোমাকে শক্তি যুগিয়েছেন স্বীয় সাহায্যে ও মুসলমানদের মাধ্যমে।
সুরা আনফাল আয়াত-৬২
সাহাবাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্টঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
অর্থঃ হে নবী, আপনার জন্য এবং যেসব মুসলমান আপনার সাথে রয়েছে তাদের সবার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট।
সুরা আনফাল আয়াত-৬৪
সাহাবাদের প্রতি আল্লাহ দয়াশীলঃ
لَقَد تَّابَ الله عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِن بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِّنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থঃ আল্লাহ দয়াশীল নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা কঠিন মহূর্তে নবীর সঙ্গে ছিল, যখন তাদের এক দলের অন্তর ফিরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর তিনি দয়াপরবশ হন তাদের প্রতি। নিঃসন্দেহে তিনি তাদের প্রতি দয়াশীল ও করুনাময়।সুরা তাওবা আয়াত-১১৭
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত ১৫ টি আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা আল্লাহ তায়ালা কত বেশি দান করেছেন। এবার চলুন, হাদিসে কি বলা হয়েছে।
হাদিসে শরীফে সাহাবাদের মর্যাদাঃ
সাহাবায়ে কেরাম উম্মতের সর্বোত্তম মানবঃ
عن عمران بن الحصين قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خَيْرُ أُمَّتي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ
অর্থঃ হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সঃ বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা তাবেয়ীগণ)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীণ)
সূত্রঃ সহিহ। বুখারী হাদিস-৩৬৫০
عن عمر بن الخطاب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أكرموا أصحابِي فإنهم خيارُكم
অর্থঃ হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত নবিজি সঃ বলেন, তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব।
সূত্রঃ সুনানে তিরমিযি হাদিস-২১৬৫ ইবনে মাযা-২৩৬৩
সাহাবায়ে কেরাম উম্মতের জন্য আমানতস্বরুপঃ
عن أبى بردة رضي الله عنه قال : قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم النُّجُومُ أَمَنَةٌ لِلسَّماءِ، فَإِذا ذَهَبَتِ النُّجُومُ أَتى السَّماءَ ما تُوعَدُ، وَأَنا أَمَنَةٌ لأَصْحابِي، فَإِذا ذَهَبْتُ أَتى أَصْحابِي ما يُوعَدُونَ، وَأَصْحابِي أَمَنَةٌ لِأُمَّتِي، فَإِذا ذَهَبَ أَصْحابِي أَتى أُمَّتي ما يُوعَدُونَ
অর্থঃ হযরত আবু বুরদাহ(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ সঃ ইরশাদ করেছেন যে, নক্ষত্র সমুহ আসমানের জন্য আমানত স্বরুপ। যখন নক্ষত্রগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাবে তখন আসমানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেয়ামত চলে আসবে। এবং আমি আমার সাহাবীদের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন আমি ইহকাল ত্যাগ করব তখন তাঁদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁদের(সাহাবাদের) মধ্যে ইজতেহাদি মতানৈক্য দেখা দিবে। এবং আমার সাহাবীরা উম্মতের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন তাঁদের যুগের অবসান ঘটবে তখন আমার উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ফেতনা-ফ্যাসাদের সুত্রপাত ঘটবে।
সূত্রঃ সহিহ মুসলিম হাদিস-২৫৩১
সাহাবায়ে কেরামের জিবন্ত থাকা উম্মতের জন্য মঙ্গলঃ
عن واثلة بن الأسقع الليثي أبي فسيلة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تزالونَ بخيرٍ ما دام فيكم مَن رآني وصاحَبني واللهِ لا تَزالونَ بخَيرٍ ما دام فيكم مَن رأى مَن رآني وصاحَبني
অর্থ: হযরত ওয়াসিলা ইবনে আসকা রাঃ থেকে বর্ণিত নবিজি সঃ বলেন, তোমরা ততোদিন পর্যন্ত কল্যাণের মাঝে থাকবে যতক্ষণ তোমাদের মাঝে আমাকে যারা দেখেছে এবং আমার সংস্পর্শে থেকেছে তারা বর্তমান থাকবে। আল্লাহর শপথ, তোমরা কল্যানের মাঝে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মাঝে এমন লোক থাকবে, যারা আমার সাহাবী ও সংস্পর্শ অবলম্বনকারীদেরকে দেখেছে।
সূত্রঃ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খঃ ১০ পৃঃ ২৩ ফাতহুল বারী খ: ৭ পৃ: ৭
সাহাবাদের মহব্বত করা ঈমানের নমুনা, আর তাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখা মুনাফিকদের আলামতঃ
عن أنس بن مالك قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم آيَةُ الإيمانِ حُبُّ الأنْصارِ وآيَةُ النِّفاقِ بُغْضُ الأنْصارِ
অর্থ: হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সঃ বলেন,
ঈমানের নিদর্শন হলো, আনসারী সাহাবীদের মহব্বত এবং মুনাফেকীর নিদর্শন হলো, আনসারীদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস-৩৭৮৪ মুসলিম-৭৪
সাহাবাদের অন্তর উত্তম অন্তরঃ
عن عبدالله بن مسعود قال إنَّ اللهَ نظَرَ في قلوبِ العِبادِ فوجَدَ قلبَ محمَّدٍ صلّى اللهُ عليه وسلَّمَ خيرَ قلوبِ العِبادِ فاصطَفاه لنفْسِه فابْتعَثَه برِسالتِه ثُمَّ نظَرَ في قلوبِ العِبادِ بعدَ قلبِ محمَّدٍ فوجَدَ قلوبَ أصحابِه خيرَ قلوبِ العِبادِ فجعَلَهم وُزَراءَ نبيِّه يُقاتِلونَ على دينِه
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ বান্দাহদের অন্তরের দিকে তাকালেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরকে সবচেয়ে উত্তম পেলেন। ফলে তাকে নবুওতের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং রিসালাত দিয়ে প্রেরণ করেছেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরের পরে আবার বান্দাহর অন্তরের দিকে তাকালেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরের পরে সাহাবীদের অন্তর উত্তম অন্তর হিসেবে পেলেন। ফলে তিনি তাদেরকে তাঁর নবীর সাহায্যকারী করলেন, তারা তাঁর দ্বীনের জন্য জিহাদ করেছেন”
সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ হাদিস-৩৬০০ তবরানী-৮৫৮২
সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত।
عن جابر بن عبدالله قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن اللهَ اختار أصحابِي على العالمينَ سوى النبيينَ والمرسلينَ واختار لي من أصحابِي أربعةً يعني أبا بكرٍ وعمرَ وعثمانَ وعليًّا رحمهم اللهُ فجعلهم أصحابِي وقال في أصحابِي كلِّهم خيرٌ واختار أمتي على الأممِ
অর্থঃ হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা আমার সাহাবীকে মনোনীত করেছেন বিশ্ববাসীর উপর। কেবল নবী রাসূলগণ ব্যতীত, আমার সাহাবীগণ থেকে চারজনকে আমার জন্য মনোনীত করেছেন, তারা হলেন হযরত আবু বকর, (রা.), হযরত ওমর (রা.), হযরত ওসমান (রা.) ও হযরত আলী (রা.)। তাঁরা আমার শ্রেষ্ঠ সাহাবী। তবে আমার সকল সাহাবী উত্তম। সকল উম্মত থেকে আমার উম্মতকে মনোনীত করেছেন।
সূত্রঃ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ:১০ পৃ:১৮ আল ইসাবাহ খ:১ পৃ:১২ তাফসীরে কুরতুবী খ:১৯ পৃ:৩৪৮
সাহাবাদের সুন্নাত গ্রহণ করা।
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ مَنْ كَانَ مُسْتَنًّا فَلْيَسْتَنَّ بِمَنْ قَدْ مَاتَ فَإِنَّ الْحَيَّ لَا تُؤْمَنُ عَلَيْهِ الْفِتْنَةُ. أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ ﷺ كَانُوْا أَفْضَلَ هذِهِ الْأُمَّةِ أَبَرَّهَا قُلُوْبًا وَّأَعْمَقَهَا عِلْمًا وَأَقَلَّهَا تَكَلُّفًا اِخْتَارَهُمُ الله لِصُحْبَةِ نَبِيِّه وَلْإِقَامَةِ دِيْنِه فَاَعْرِفُوْا لَهُمْ فَضْلَهُمْ وَاتَّبِعُوْهُمْ عَلى آثَرِهِمْ وَتَمَسَّكُوْا بِمَا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ أَخْلَاقِهِمْ وَسِيَرِهِمْ فَإِنَّهُمْ كَانُوْا عَلَى الْهُدَى الْمُسْتَقِيْمِ. رَوَاهُ رَزِيْن
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কারো কোন ত্বরীক্বাহ্ (তরিকা) অনুসরণ করতে চায়, সে যেন তাদের পথ অনুসরণ করে যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। কারণ জীবিত মানুষ (দীনের ব্যাপারে) ফিতনাহ্ হতে মুক্ত নয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ, যারা এ উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ। পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসেবে ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের দিক দিয়ে এবং দূরে ছিলেন কৃত্রিমতার দিক থেকে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর প্রিয় রসূলের সাথী ও দীন ক্বায়িমের জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের ফাযীলাত ও মর্যাদা বুঝে নাও। তাদের পদাংক অনুসরণ করো এবং যথাসাধ্য তাদের আখলাক্ব ও জীবন পদ্ধতি মজবুত করে আঁকড়ে ধরো। কারণ তাঁরাই (আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশিত) সহজ-সরল পথের পথিক ছিলেন।
সূত্রঃ মিশকাত হাদিস-১৯১
সাহাবাদের ভালবাসা নবিজিকেই ভালবাসার নমুনা।
عن عبدالله بن مغفل قال قال رسول الله صلى الله عليه اللهَ اللهَ في أصحابي لا تتَّخِذوا أصحابي غَرَضًا مَن أحَبَّهم فبِحُبِّي أحَبَّهم ومَن أبغَضهم فبِبُغْضي أبغَضهم ومَن آذاهم فقد آذاني ومَن آذاني فقد آذى اللهَ ومَن آذى اللهَ يوشِكُ أنْ يأخُذَه
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমার সাহাবাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। যে তাঁদেরকে ভালবাসেন সে আমার প্রতি ভালবাসার কারণেই তাদেরকে ভালবাসেন এবং যে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল। যে তাদেরকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লহ তা’য়ালাকে কষ্ট দিল আর যে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আল্লাহ তায়ালা অচিরেই তাকে পাকড়াও করবেন।
সূত্রঃ সহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস-৭২৫৬
সাহাবায়ে কেরাম সর্বোচ্চ নেকীর অধিকারী।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا
অর্থঃ হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে, সে তার অনুসারীর সমান সাওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না।
সূত্রঃ সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৬৭৪ আবু দাউদ: ৪৬০৯
প্রিয় পাঠক! একবার ভেবে দেখুন, আমরা ইসলামের সকল বিধিবিধান পেয়েছি সাহাবায়ে কেরাম থেকে। তাহলে সাহাবায়ে কেরামের পর থেকে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত যত উম্মত সাজাবাদের বর্ণিত হাদিস পড়ে আমল করবে, সকল উম্মতের আমলের সমপরিমাণ নেকি সাহাবায়ে কেরামের আমলনামায় লিপিবদ্ধ হবে। তাহলে তাদের মর্যাদা কেয়ামতে কত উঁচু হবে!
সাহাবায়ে কেরামের ফযিলত সংক্রান্ত অসংখ্য আয়াত হাদিস রয়েছে। এখানে মাত্র সামান্য কয়েকটি উল্লেখ্য করলাম। আশা করি অল্পতেই সকলের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, সাহাবায়ে কেরামের রা: মর্যাদা কত বেশি!
সাহাবা সমালোচকদের প্রতি নবিজির ঘোষণাঃ
সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা না করা।
হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ ثَوْبَانَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا ذُكِرَ أَصْحَابِي فَأَمْسِكُوا
অর্থঃ হযরত সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। যখন আমার সাহাবীদের আলোচনা আসে, তখন (তাদের ব্যাপারে সমালোচনা করা থেকে) নিজেকে বিরত রাখো।
সূত্রঃ আল মু’জামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস: ১৪২৭সূত্রঃ জামে সগীর হাদিস-৬১৩ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ: ৭ পৃ:২০৫
হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ رِيَاحُ بْنُ الْحَارِثِ قَالَ كُنْتُ قَاعِدًا عِنْدَ فُلَانٍ فِي مَسْجِدِ الْكُوفَةِ وَعِنْدَهُ أَهْلُ الْكُوفَةِ فَجَاءَ سَعِيدُ بْنُ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ فَرَحَّبَ بِهِ وَحَيَّاهُ وَأَقْعَدَهُ عِنْدَ رِجْلِهِ عَلَى السَّرِيرِ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ يُقَالُ لَهُ قَيْسُ بْنُ عَلْقَمَةَ فَاسْتَقْبَلَهُ فَسَبَّ وَسَبَّ فَقَالَ سَعِيدٌ مَنْ يَسُبُّ هَذَا الرَّجُلُ قَالَ يَسُبُّ عَلِيًّا، قَالَ أَلَا أَرَى أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَبُّونَ عِنْدَكَ ثُمَّ لَا تُنْكِرُ وَلَا تُغَيِّرُ أَنَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ وَإِنِّي لَغَنِيٌّ أَنْ أَقُولَ عَلَيْهِ مَا لَمْ يَقُلْ فَيَسْأَلَنِي عَنْهُ غَدًا إِذَا لَقِيتُه أَبُو بَكْرٍ فِي الْجَنَّةِ وَعُمَرُ فِي الْجَنَّةِ وَسَاقَ مَعْنَاهُ ثُمَّ قَالَ لَمَشْهَدُ رَجُلٍ مِنْهُمْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْبَرُّ فِيهِ وَجْهُهُ خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمُرَهُ وَلَوْ عُمِّرَ عُمُرَ نُوحٍ
অর্থঃ হযরত রিয়াহ ইবনুল হারিস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি অমুক লোকের নিকট কুফার মাসজিদে বসা ছিলাম এবং তার নিকট কুফার লোকজনও উপস্থিত ছিলো। এ সময় সাঈদ ইবনু যায়িদ আমর ইবনু নুফাইল (রাঃ) এলে তিনি তাকে সাদর সম্ভাষণ ও সালাম জানিয়ে খাটের উপর নিজের পায়ের কাছে বসালেন। অতঃপর কায়িস ইবনু আলকামাহ নামক জনৈক কুফাবাসী এলে তাকেও অভ্যর্থনা জানালেন। তারপর সে গালাগালি করতে লাগলো। সাঈদ (রাঃ) বললেন, এ ব্যক্তি কাকে গালি দিচ্ছে? তিনি বললেন, সে আলী (রাঃ)-কে গালি দিচ্ছে। তিনি বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীকে আপনার সম্মুখে গালি দিচ্ছে অথচ আপনি তাকে নিষেধ করছেন না আর থামাচ্ছেনও না!
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ আমি তাঁর সম্পর্কে এমন উক্তি করা থেকে মুক্ত যা তিনি বলেননি। অতঃপর কিয়ামাতের দিন যখন তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হবে তখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আবূ বাকর (রাঃ) জান্নাতী, উমার (রাঃ) জান্নাতী। বর্ণনাকারী অতঃপর অনুরূপ অর্থের বর্ণনা করলেন এবং তিনি বললেন, তাদের কোনো একজনের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য লাভ, যে সাহচর্যে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না তাও তোমাদের কোনো ব্যক্তির সারা জীবনের আমলের চেয়ে উত্তম, যদিও সে নূহ (আঃ)-এর মতো দীর্ঘ আয়ু পায়।
সূত্রঃ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৬৫০ আহমাদ: ১৬২৯ ইবনে মাযা: ১৩৩
হাদিস শরীফে এসেছে,
ﻋﻦ أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهباً ما أدرك مد أحدهم ولا نصيفه
অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত নবিজি স: বলেন, তোমরা আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলোনা। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বততূল্য স্বর্ণও দান করে,তবুও তাঁদের সোয়া সের যব সদাকা করার সমানও হতে পারেনা বরং এর অর্ধেকেরও বরাবর হতে পারেনা ।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী: ৩৬৭৩ মুসলিম: ২৫৪০ তিরমিযী: ৩১৬৮
হাদিস শরীফে এসেছে,
عن ابنِ عمرَ رضي الله عنهما يقولُ لا تسبُّوا أصحابَ محمَّدٍ صلّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فلَمُقامُ أحدِهِم ساعةً خيرٌ مِن عمَلِ أحدِكُم عُمرَهُ
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন, তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের মন্দ বলো না, তাদের এক মুহুর্তের সৎকাজ তোমাদের সারা জীবনের সৎকাজের চেয়ে উত্তম।
সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং: ১৩৩ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ৩৩০৮২
সাহাবাদের সমালোচনা করলে বেত্রাঘাতের নির্দেশ।
হাদিস শরীফে এসেছে,
عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مَن سَبَّ نبيًّا قُتِل ومَن سَبَّ أصحابَه جُلِد
অর্থঃ হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল স: ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি নবীকে [ছাব্ব] মন্দ বলে,তাকে হত্যা করা হবে। আর যে সাহাবীকে [ছাব্ব] মন্দ বলে তাকে প্রহার করা হবে।
সূত্রঃ মু’জামে সগীর (তবরানী) হাদিস: ৬৫৯ দায়লামী হাদীস নং- ৫৬৮৮ তারিখে দিমাশক: ৫৬৮৮
সাহাবায়ে কেরামের সাথে দুশমনি রাখা আল্লাহর সাথে যু্দ্ধ ঘোষণার শামিল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَال قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْب
অর্থঃ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস: ৬৫০২
সকল সাাহাবায়ে কেরাম উম্মতের মধ্যে সবচে বড় ওলী ছিলেন। কারন তারা সবাই জান্নাতী, তাদের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। যা আমি পূর্বে উল্লেখ্য করেছি। সুৎরাং তাদের সাথে দুশমনি রাখলে রবের তরফ থেকে সরাসরি যুদ্ধের ঘোষণা।
সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা অভিসাপের কারণ।
হাদিস শরীফে এসেছে,
عن عبدالله بن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سبَّ أصحابِي فعليه لعنةُ اللهِ والملائكةِ والناسِ أجمعين
অর্থাৎ হযরত ইবনে আব্বাস রা: হতে বর্ণিতঃ রাসুলুলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, যারা আমার সাহাবীদেরকে মন্দ বলে, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফেরেস্তাদের এবং জগতবাসীর অভিশাপ বর্ষিত হোক।
সূত্রঃ জামে সগীর হাদিস-৮৭১৫ তাবরানী ফিল কাবির: ১২৭০৯ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ: ১০ পৃ: ২৪
হাদিস শরীফে আরও এসেছে,
عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا رأيتم الذين يسبون أصحابي فقولوا لعنة الله على شركم
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ স: বলেন, যখন তোমরা এ ধরনের লোক দেখবে, যারা আমার সাহাবীকে মন্দ বলে, তখন তাদের উদ্দেশে বলে দাও, তোমাদের অনিষ্টের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক”।
সূত্রঃ সুনানে তিরমিযি হাদিস: ৩৮৬৬ জামে সগীর: ৬৩৩
সাহাবাদের সাথে মহব্বত রাখা মানেই নবিজির সাথেই মহব্বত রাখা। সাহাবাদের সাথে দুশমনি রাখা মানেই নবিজির স: সাথে দুশমনি রাখা।
ﻋﻦ عبد الله بن مغفل المزني قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الله الله في أصحابي لا تتخذوهم غرضاً بعدي فمن أحبهم فبحبي أحبهم ومن أبغضهم فببغضي أبغضهم ومن آذاهم فقد آذاني ومن آذاني فقد آذى الله ومن آذى الله يوشك أن يأخذه
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা: থেকে বর্ণিত, নবিজি স: বলেন, আমার সাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরবর্তীকালে তোমরা তাঁদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ, যে তাঁদের ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাঁদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপছন্দ করবে সে আমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাঁদের অপছন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।
সূত্রঃ জামে সগীর হাদিস-১৪৩৬ সুনানে তিরমিযী: ৩৮৬২ আহমাদ-২০৫৪৯
সাহাবাদের প্রতি দুশমনি রাখা মুনাফিকের আলামত।
عن البراء بن عازب قال قال النبي صلى الله عليه وسلم الأنْصارُ لا يُحِبُّهُمْ إلّا مُؤْمِنٌ ولا يُبْغِضُهُمْ إلّا مُنافِقٌ فمَن أحَبَّهُمْ أحَبَّهُ اللَّهُ ومَن أبْغَضَهُمْ أبْغَضَهُ اللَّهُ
অর্থঃ বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মু’মিন ছাড়া আনসারদেরকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তাঁদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে না। যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালবাসবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ভালবাসবেন আর যে ব্যক্তি তাঁদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ঘৃণা করবেন।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস: ৩৭৮৩ মুসলিম: ৭৫ আহমাদ: ১৮৬০০
সাহাবাদের জন্য দোয়া করা।
عن عائشةَ قالت أُمِرُوا بالاستغفارِ لأصحابِ مُحَمَّدٍ فَسَبُّوهُمْ
অর্থঃ হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের ব্যাপারে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ করা করা হয়েছে, অথচ লোকেরা তাদের সমালোচনা করছে।
সূত্রঃ কিতাবুস সুন্নাহ হাদিস: ১০০৩ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ৩৩০৮৫
এ ছাড়া আরো অসংখ্য হাদিস রয়েছে, যা থেকে প্রমাণ হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম রা: সম্পর্কে কোন বিরুপ মন্তব্য করা অত্যান্ত গর্হিত কাজ। অতএব সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা থেকে সতর্ক থাকা প্রতিটি মুমিনের জন্য অত্যাবশ্যক।
সাহাবাদের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের অভিমতঃ
ইমাম মালেক রহ: অভিমতঃ
إنما هؤلاء أقوام أرادوا القدح في النبي صلى الله عليه وسلم فلم يمكنهم ذلك ، فقدحوا في أصحابه حتى يقال رجل سوء و لو كان رجلاً صالحاً لكان أصحابه صالحين
অর্থ: যারা সাহাবাদের ব্যপারে কুৎসা রটনা করে এবং তাদেরকে গালি দেয় এরা মূলত: রসূল স: এর বিরুদ্ধেও কুৎসা রটাতে চেয়েছিলো। কিন্তু তাদের দ্বারা তা সম্ভব হয়নি। তাই তারা সাহাবাগণের ব্যাপারে মিথ্যা রটিয়েছে এবং বলেছে, অমুক সাহাবী নিকৃষ্ট লোক ছিল, অমুকে এমন ছিল তেমন ছিল ইত্যাদি। (তারা বুঝাতে চায়) রাসূল স: যদি নেককার ও সৎ হয়ে থাকেন, তবে তাদের নিকট তার সাহাবীরাও সৎ ও নেককার বিবেচিত হতো।
সূত্রঃ আস-সরিমূল মাসলূল, পৃ: ৫৮০
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ: এর অভিমতঃ
وَقَالَ الْمَيْمُونِيُّ قَالَ لِي أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ يَا أَبَا الْحَسَنِ إِذَا رَأَيْتَ رَجُلًا يَذْكُرُ أَحَدًا مِنَ الصَّحَابَةِ بِسُوءٍ فَاتَّهِمْهُ عَلَى الْإِسْلَامِ.
অর্থঃ মাইমুনী রহঃ বলেন, আমাকে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ বলেছেন, হে আবুল হাসান! যখন তুমি দেখবে কোন ব্যক্তি সাহাবাগণের মাঝে কোন সাহাবীর ব্যাপারে সমালোচনা করছে, তাহলে তুমি বুঝে নিও তার ঈমান ও ইসলামে খাদ আছে।
সূত্রঃ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: খন্ড ৮ পৃ.: ১৪২ আল ফাতহুর রাব্বানী খ:২২ পৃ: ৩৫৬
وَقَالَ الْفَضْلُ بن زياد سمعت أبا عبد الله يسأل عَنْ رَجُلٍ تَنَقَّصَ مُعَاوِيَةَ وَعَمْرَو بْنَ الْعَاصِ أيقال له رافضي فقال إنه لم يجترئ عَلَيْهِمَا إِلَّا وَلَهُ خَبِيئَةُ سُوءٍ مَا انْتَقَصَ أحد أحداً من الصحابة إِلَّا وَلَهُ دَاخِلَةُ سُوءٍ
অর্থঃ হযরত ফজল বিন যিয়াদ হযরত ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহঃ থেকে শুনেছেন। তাকে একজন প্রশ্ন করল এমন ব্যক্তির ব্যাপারে, যে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এবং হযরত আমর বিন আস রাঃ এর ব্যাপারে মন্দ বলে। লোকটিকে কি রাফেজী বলা হবে?
তখন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ বললেন, অন্তর কলুষিত এবং খারাপ উদ্দেশ্য ছাড়া সে দু’জনের প্রতি এ দুঃসাহস দেখায়নি। আর অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ কোন সাহাবীর সমালোচনা করেনি।
সূত্রঃ আল বিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ খ:৮ পৃ: ১৩৯ কিতাবুস সুন্নাহ প: ৪৪৭
ইমাম শামী হানাফী র: এর অভিমতঃ
وأما من سب أحدا من الصحابة فهو فاسق ومبتدع بالإجماع
অর্থঃ যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরামের কাউকে নিয়ে সমালোচনা করে সে সর্বসম্মতিক্রমে ফাসেক এবং বিদআতি।
সূত্রঃ রদ্দুল মুহতার খ:১ পৃ২১৭
ইমাম ত্বহাবী র: এর অভিমতঃ,
ويقول الطحاوي ونحب أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا نفرط في حب أحد منهم . ولا نتبرأ من أحد منهم ونبغض من يبغضهم وبغير الحق يذكرهم ولا نذكرهم إلا بخير وحبهم دين وإيمان وإحسان وبغضهم كفر ونفاق وطغيان
অর্থঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাদের ভালোবাসি।তবে তাদের ভালোবাসার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করি না।এবং তাদের কাউকে তিরস্কার করিনা। তাদের সাথে যারা বিদ্বেষ পোষণ করে অথবা যারা তাদের কে অসম্মানজনকভাবে স্বরণ করে তাদের সাথে আমরা বিদ্বেষ পোষণ করি। আমরা তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করি। আমরা তাদেরকে শুধু কল্যাণের সাথেই স্মরণ করি। তাদের সঙ্গে মহব্বত রাখার দ্বীন, ইসলাম ও এহসানের অংশ। এবং তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী, মুনাফেকি এবং সীমালঙ্ঘন করার পর্যায়ভুক্ত।
সূত্রঃ শরহুল আকায়িদীত ত্বহাবিয়্যাহ পৃ:৪৭৭
ইমাম আবূ যুর’আ রঃ এর অভিমতঃ,
فإذا رأيت الرجل ينتقص أحدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعلم انه زنديق، وذلك ان الرسول صلى الله عليه وسلم عندنا حق، والقرآن حق، وإنما أدى إلينا هذا القرآن والسنة أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، وإنما يريدون أن يجرحوا شهودنا ليبطلوا الكتاب والسنة، والجرح بهم اولى وهم زنادقة
অর্থঃ তোমরা যখন কাউকে কোন সাহাবীর অবমাননা করতে দেখ, তখন বিশ্বাস করে নাও যে, সে যিন্দীক। তা এ জন্য যে, আমাদের নিকট রাসূল স: সত্য নবী,পবিত্র কুরআন সত্য; কুরআন হাদীস তথা পুরা দ্বীন যা আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে, তার প্রথম যোগসূত্র হলেন সম্মানিত এ জামাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সাহাবাগণের সমলোচনা করবে, সে আমাদের বিশ্বস্ত সাক্ষীদের সমালোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ দ্বীনকে অগ্রাহ্য বলে ঘোষণা করতে চায়। অর্থাৎ ইসলামের মূল ভিত্তি ধ্বংস করে দিতে চায়। সুতরাং এজাতীয় লোকদের সমালোচনা করা উত্তম বরং এরা হলো যিন্দিক।
সূত্রঃ সূত্রঃ আল কিফায়াহ পৃ: ৪৯ আল ইসাবা খ:১ পৃ: ২২ ফাতহুল মুগিস খ: ৪ পৃ: ৩২
ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক র: এর অভিমতঃ
قَالَ نا ابْنُ الْمُبَارَكِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ مُسْلِمٍ عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مَيْسَرَةَ قَالَ مَا رَأَيْتُ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ ضَرَبَ إِنْسَانًا قَطُّ إِلَّا إِنْسَانًا شَتَمَ مُعَاوِيَةَ فَضَرَبَهُ أَسْوَاطًا
অর্থঃ আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন, মুহাম্মদ বিন মুসলিম থেকে, তিনি ইবরাহীম বিন মায়সারা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত মুয়াবিয়ার সমালোচনাকারী এক ব্যক্তি ব্যতীত আমি উমর বিন আব্দুল আজীজকে কোন মানুষের গায়ে হাত উঠাতে দেখিনি। ঐ ব্যক্তিকে তিনি কয়েক ঘা চাবুক লাগিয়ে ছিলেন।
সূত্রঃ আল বিদায়া ওয়াননিহায়া খ: ৮ পৃ: ১৪৮
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম রঃ এর অভিমতঃ
كل الصحابة منيب إلى الله تعالى فيجب اتباع سبيله وأقواله و أفعاله واعتقاداته
অর্থঃ প্রত্যেক সাহাবীই আল্লাহর অভিমুখী হয়েছেন। সুতরাং তাঁর (সাহাবীর) পথ, কথাবার্তা, কাজকর্ম এবং আক্বীদাহ-বিশ্বাস অনুসরণ করা ওয়াজিব।
সূত্রঃ ই‘লামুল মুওয়াক্বক্বি‘ঈন, খণ্ড:৫ পৃষ্ঠা: ৫৬৭
আয়্যুব সাখতিয়ানী র: এর অভিমতঃ
من قال الخیر فی اصحاب رسول الله صلی الله علیه وسلم فقد برٸ من النفاق
অর্থঃ যে ব্যাক্তি নবিজির স: সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে ভাল আলোচনা করল, সে নেফাকি থেকে মুক্ত।
সূত্রঃ ফাযায়েলুল আখলাক পৃ: ১১২
কাযী আয়ায র: এর অভিমতঃ
قال القاضي عياض وسب آل بيته وأزواجه وأصحابه وتنقصهم حرام ملعون فاعله
অর্থঃ নবিজির আহলে বাইত, স্ত্রী এবং সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলা এবং খাটো করা হারাম। যারা করে তারা অভিসাপ্ত।
সূত্রঃ কিতাবুশ শিফা পৃ: ১১৮১
শামসুল আইয়িম্মাহ সারাখসী রঃ এর অভিমতঃ,
فَمن طعن فيهم فَهُوَ ملحد منابذ لِلْإِسْلَامِ دواؤه السَّيْف إِن لم يتب
অর্থঃ সুতরাং যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে সমালোচনা করবে সে মুলহিদ এবং বে-দ্বীন। ইসলামের দিকে পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী। যদি সে ব্যক্তি তওবা না করে তাহলে তার একমাত্র সমাধান তলোয়ার।
সূত্রঃ উসূলে সারাখসী: খ: ২ পৃ: ১৩৪
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রঃ এর অভিমতঃ
ثم أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد هؤلاء الأربعة خير الناس لا يجوز لأحد أن يذكر شيئا من مساويهم ولا يطعن على أحد منهم بعيب ولا نقص فمن فعل ذلك فقد وجب على السلطان تأديبه وعقوبته ليس له أن يعفو عنه بل يعاقبه ويستتيبه فإن تاب قبل منه وإن ثبت أعاد عليه العقوبة وخلده الحبس حتى يموت أو يراجع
অর্থঃ চারজন খলীফায়ে রাশেদের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমস্ত সাহাবা রাঃ খাইরুন নাস (উম্মত সেরা)। তাদের ব্যাপারে সামান্য খারাবী বর্ণনা করাও কারো জন্য জায়েজ নয়। কোন একজন সাহাবীর দোষ এবং ত্রুটি বর্ণনা করার সুযোগ নেই। যদি কোন ব্যক্তি এ কাজ করে, তাহলে শাসকের দায়িত্ব হল, তাকে শিক্ষা দেয়া এবং তাকে শাস্তি দেয়া। তাকে ক্ষমা করা যাবে না, বরং তাকে শাস্তি দিতে হবে। যদি সে তওবা করে, তাহলে তার তওবা গ্রহণ করা হবে। যদি সে তওবা না করে সমালোচনার উপর অটল থাকে, তাহলে তাকে দ্বিতীয়বার আবার কড়া শাস্তি দিতে হবে এবং তাকে আজীবনের জন্য বন্দী করবে যতক্ষণ না সে মারা যায় বা তওবা করে।
সূত্রঃ আস সারেমুল মাসলূল পৃ: ৪০৬
ইমাম যাহাবী র: এর অভিমতঃ
من ذم أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم بشيء وتتبع عثراتهم وذكر عيباً وأضافه إليهم كان منافقاً
অর্থঃ যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহর সঃ সাহাবায়ে কেরামের কোন বিষয়ে নিন্দা করে এবং তাদের ভুল তালাশ করে এবং দোষত্রুটি আলোচনা করে এবং সাহাবাদের প্রতি দোষ চাপিয়ে দেয় সে মুনাফিক।
আল কাবায়ির পৃ: ২৫১
সালাফে সালেহীনদের অভিমতঃ
وقال بعض السلف بينما أَنَا عَلَى جَبَلٍ بِالشَّامِ إِذْ سَمِعْتُ هَاتِفًا يَقُولُ مَنْ أَبْغَضَ الصِّدِّيقَ فَذَاكَ زِنْدِيقٌ وَمَنْ أبغض عمر فإلى جهنم زمراً وَمَنْ أَبْغَضَ عُثْمَانَ فَذَاكَ خَصْمُهُ الرَّحْمَنُ، وَمَنْ أبغض علياً فَذَاكَ خَصْمُهُ النَّبِيُّ وَمَنْ أَبْغَضَ مُعَاوِيَهْ سَحَبَتْهُ الزبانية، إلى جهنم الحامية، يرمى به في الحامية الْهَاوِيَهْ
অর্থঃ সালাফে সালেহীনদের একজন বলেন, যখন আমি শামের এক পাহাড়ে অবস্থান করছিলাম তখন এক (অদৃশ্য) ঘোষককে বলতে শুনলাম- (আবু বকর) সিদ্দীকের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হল যিনদীক, ধর্মদ্রোহী। উমরের প্রতি বিদ্বেষীর ঠাঁই হল জাহান্নাম। উসমান বিদ্বেষীর প্রতিপক্ষ হলেন আল্লাহ। আলী বিদ্বেষীর প্রতিপক্ষ হলেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর যে মুয়াবিয়ার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে (জাহান্নামের) ফেরেশতারা তাকে হেঁচড়ে নিয়ে যাবে। উত্তপ্ত জাহান্নামের দিকে এবং সে নিক্ষিপ্ত হবে উত্তপ্ত অগ্নি গহ্ববরে।
সূত্রঃ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ খ:৮ পৃ: ১৪৯
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অভিমতঃ
من أصول أهل السنة سلامة قلوبهم من بغض الصحابة ومن الغل والحقد عليهم، وكذلك ألسنتهم سليمة فلا يسبون ولا يتبرءون من أحد منهم بل يحبون أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم بقلوبهم ويثنون عليهم بألسنتهم ويدعون الله لهم كما وصف الله التابعين لأصحاب الرسول صلى الله عليه وسلم من المهاجرين والأنصار فقال الله سبحانه وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ [الحشر:10] .
অর্থঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আরো একটি মূলনীতি হলো, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের প্রতি তাদের অন্তর ও জবান পবিত্র রাখে। অন্তর দিয়ে তাদেরকে ভালবাসে, তাদের প্রতি কোন প্রকার ঘৃণা রাখেনা এবং জবান দিয়ে তাদের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করেনা। যেমন আল্লাহ তাআলা তাঁর এই বাণীতে সাহাবীদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
‘অর্থঃ এবং যারা এসব অগ্রবর্তী লোকদের পরে এসেছে, তারা বলেঃ হে আমাদের রব, আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করে দাও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে৷ আর আমাদের মনে ঈমানদারদের জন্য কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখোনা৷ হে আমাদের রব, তুমি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু’’। [সূরা হাশরঃ ১০] সূত্রঃ শরহুল আকায়িদীল ওয়াসিতিয়্যাহ খ: ১ পৃ: ৬৮
আল আসারিল ওয়ারিদা পৃ: ৫৭৯
প্রিয় পাঠক! কুরআন,হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আছার এবং ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত দিয়ে এতক্ষণের আলোচনায় আশা করি সকলের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করা ব্যাপারে ইসলাম কত কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে। তারপরও একনজরে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
সাহাবায়ে কেরামকে সমালোচনা করা হারামঃ
প্রিয় পাঠক! ইতিপূর্বে সাহাবায়ে কেরামের রা: মর্যাদা সম্পর্কে ও তাদের সমালোচনার কুফল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে এসেছি।এক কথায় সাহাবায়ে কেরামকে সমালোচনা করা ইসলামে একটি জঘন্য, নিকৃষ্ট ও গর্হিত কাজ। নবিজি স: এর অসংখ্য হাদিস দিয়েও এটা প্রমাণিত।
عن عبدالله بن مغفل قال قال رسول الله صلى الله عليه اللهَ اللهَ في أصحابي لا تتَّخِذوا أصحابي غَرَضًا مَن أحَبَّهم فبِحُبِّي أحَبَّهم ومَن أبغَضهم فبِبُغْضي أبغَضهم ومَن آذاهم فقد آذاني ومَن آذاني فقد آذى اللهَ ومَن آذى اللهَ يوشِكُ أنْ يأخُذَه
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমার সাহাবাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার সাহাবিদেরকে সমালোচনার পাত্র বানিও না।যে তাঁদেরকে ভালবাসেন সে আমার প্রতি ভালবাসার কারণেই তাদেরকে ভালবাসেন এবং যে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল। যে তাদেরকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লহ তা’য়ালাকে কষ্ট দিল আর যে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আল্লাহ তায়ালা অচিরেই তাকে পাকড়াও করবেন।
সূত্রঃ সহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস-৭২৫৬
ইজমায়ে উম্মতের সিদ্ধান্ত:
এ হাদিসসহ অসংখ্য হাদিসকে সামনে রেখে সমস্ত মুসলিম উম্মাহ এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে,
وأما من سب أحدا من الصحابة فهو فاسق ومبتدع بالإجماع
অর্থঃ যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরামের কাউকে নিয়ে সমালোচনা করে সে ফাসেক এবং বিদআতি।
সূত্রঃ রদ্দুল মুহতার খ:১ পৃ২১৭
কাযী আয়ায র: বলেন,
قال القاضي عياض وسب آل بيته وأزواجه وأصحابه وتنقصهم حرام ملعون فاعله
অর্থঃ নবিজির আহলে বাইত, স্ত্রী এবং সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলা এবং খাটো করা হারাম। যারা করে তারা অভিশপ্ত।
সূত্রঃ কিতাবুশ শিফা পৃ: ১১৮১
প্রিয় পাঠক! আমরা এতক্ষণের আলোচনা দিয়ে স্পষ্টত বুঝতে পারলাম যে, যারা সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে কোনো ধরণের সমালোচনা করে তারা নবি বিদ্বেষী, বিদআতি, মুনাফিক, যিন্দিক এবং অভিশপ্ত।
সুতরাং কুরআন,হাদিস ও উম্মতের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের উপর বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যারা সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে সমালোচনা করে, তারা কখনও ইসলামের বন্ধু হতেই পার না।
মওদুদী সাহেবের বক্তব্য
সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা বিষয়ে তিনি লেখেন,
رسول خدا کے سوا کسی انسان کو معیار حق نہ بنائے کسی کو تنقید سے بالاتر نہ سمجھے
অর্থঃ রাসূলে খোদা ছাড়া অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি বানাবে না এবং সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করবে না।
সূত্রঃ দস্তুরে জামাতে ইসলামী পৃ: ৭
উপরোক্ত কথা দিয়ে তিনি দুটি অপরাধ করেছেন।
১. সাহাবায়ে কেরামের রা. সমালোচনা উর্ধে মনে না করা।
২. সাহাবায়ে কেরামকে রা. সত্যের মাপকাঠি মনে না করা।
সাহাবায়ে কেরাম রা. এর সমালোচনা করা হারাম। এ বিষয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এবার চলুন দেখি সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি কি না?
সত্যের মাপকাঠি ও সাহাবায়ে কেরাম রা.
রাসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক ঘোষিত নাজাত প্রাপ্ত দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদা এটাই যে, الصحابة كلهم عدول অর্থাৎ -সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। যেটা পবিত্র কুরআনের আয়াত ও অসংখ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত। চলুন দেখে নেয়া যাক।
সাহাবাদের মত ঈমান আনতে হবে:
মহান আল্লাহ বলেন,
ءَامِنُوا۟ كَمَاۤ ءَامَنَ ٱلنَّاسُ
অর্থ: লোকেরা যেভাবে ঈমান এসেছে, তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো।
সুরা বাকারা আয়াত: ১৩
এখানে “নাস” বলতে সাহাবায়ে কেরাম উদ্দেশ্য। কারণ যখন এ আয়াত নাযিল হয়, তখন সেটা ছিল নবীজির সা. যুগ। অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামের মত ঈমান আনো। তাহলে সাহাবায়ে কেরাম রা. সত্যের মাপকাঠি না হলে তাঁদের মত ঈমান আনতে কেন বলা হতো?
সাহাবাদের রা. মত ঈমান হেদায়েতের মানদনণ্ড:
মহান রব বলেন,
فَإِنْ آمَنُواْ بِمِثْلِ مَا آمَنتُم بِهِ فَقَدِ اهْتَدَواْ وَّإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللّهُ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
অর্থ: অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত, তবে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
সুরা বাকারা আয়াত: ১৩৭
আয়াতে “তোমাদের ঈমান আনার মত”এর দ্বারা রাসুলুল্লাহ সা. এবং সাহাবায়ে কেরামকেই রা. বুঝানো হয়েছে। আয়াতে তাঁদের ঈমানকে আদর্শ ঈমানের ও সত্যের মাপকাঠি সাব্যস্ত করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত ঈমান হচ্ছে সে রকম ঈমান, যা রাসুলুল্লাহ সা. এর সাহাবায়ে কেরাম অবলম্বন করেছেন। সে ঈমান ও বিশ্বাস থেকে যদি চুল পরিমাণও ভিন্ন হয়, তাহলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নহে। সুতরাং উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত যে, সাহাবাদের রা. মত যারাই ঈমান আনবে সেই হেদায়েতপ্রাপ্ত।
সাহাবাদের মত ঈমান না আনা জাহান্নামী হওয়ার লক্ষণ:
মহান রব বলেন,
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءتْ مَصِيرًا
অর্থ: যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।
সুরা নিসা আয়াত: ১১৫
এখানে মুসলমানদের পথের কথা বলা হয়েছে, আর আমরা জানি সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ট মুসলিম হলেন সাহাবায়ে কেরাম রা.। সুতরাং উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, যারা সাহাবায়ে কেরামের রা. মত ও পথ যারা মানবে না, তারাই জাহান্নামী।
উক্ত আয়াতগুলো থেকে প্রমাণিত হলো যে, সাহাবায়ে কেরামই রা. হেদায়েত বা সত্যের মাপকাঠি।
যুক্তি.
যারা সাহাবায়ে কেরামকে রা. সত্যের মাপকাঠি মানেন না, তাদেরকে যদি প্রশ্ন করেন,
আপনি: নবীজি সা. সত্যের মাপকাঠি কি না?
তিনি: অবশ্যই।
আপনি: কিভাবে হলেন তিনি সত্যের মাপকাঠি?
তিনি: নবীজি সা. কখনও সত্য থেকে বিচ্যুৎ হননি। আপনি: সাহাবায়ে কেরাম কখনও সত্য থেকে বিচ্যুৎ হয়েছিলেন কি?
তিনি: না। সাহাবায়ে কেরামও রা. সত্য থেকে বিচ্যুত হননি।
এবার আপনি তাকে প্রশ্ন করুন, সত্য থেকে বিচ্যুৎ না হওয়ার কারণে যদি নবীজি সা. সত্যের মাপকাঠি হতে পারেন, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম কেন হবেন না?
সাহাবা বিদ্বেষীদের প্রশ্নসমূহের জবাব
অভিযোগ:
যারা সাহাবায়ে কেরামদেরকে রা. সত্যের মাপকাঠি মানতে নারাজ, তারা নিন্মোক্ত দুটি আয়াত বিশেষভাবে উল্লেখ্য করেন।
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا
অর্থ: রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক।
সুরা হাশর আয়াত: ৭
فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا
অর্থ: অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।
সুরা নিসা আয়াত: ৬৫
তাদের দাবি হলো, এ আয়াত দুটিতে শুধু নবীজির সা. কথা ও সিদ্ধান্ত মানতে বলা হয়েছে, সাহাবাদের রা. কথা এখানে নেই। সুতরাং এ আয়াত দুটিই প্রমাণ করে, সাহাবায়ে কেরাম রা. সত্যের মাপকাঠি নন।
জবাব:
এ আয়াত দুটিতে শুধু নবীজির সা. কথা বলা হয়েছে। সাহাবাদের কথা বলা হয়নি। সুতরাং এজন্য যদি সাহাবায়ে কেরামকে রা. সত্যের মাপকাঠি মানা না যায়, তাহলে আমি যদি প্রশ্ন করি, এ আয়াত দুটিতে তো শুধু নবীজির সা. কথা বলা হয়েছে, আল্লাহকে মানতে বলা হয়নি, তাহলে আল্লাহও কি সত্যের মাপকাঠি নন? তখন জবাবে তারা বলবেন নিন্মের আয়াতে আল্লাহকে মানতে বলা হয়েছে,
وَأَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ
অর্থ: তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসূলের অনুগত হও।
সুরা মায়িদা আয়াত: ৯২
তাহলে আমিও একটি আয়াত পেশ করি,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা “উলুল আমর” তাদের।
সুরা নিসা আয়াত: ৫৯
এখানে “উলুল আমর” বলে কারা উদ্দেশ্য,সে সম্পর্কে অনেকগুলো তাফসীর রয়েছে, তার মধ্যে একটি তাফসীর হযরত মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে,
كان مجاهد يقول أصحاب محمد
অর্থাৎ মুজাহিদ রহ. বলেন, (“উলুল আমর”) হলেন, মুহাম্মাদ সা. এর সাহাবায়ে কেরাম রা.।
সূত্র: তাফসীরে কুরতুবী খ. ৮ পৃ. ৫০১
ফের অভিযোগ:
এখন হয়তো বলবেন এখানে وَأُو۟لِی ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ এর আগে أَطِیعُوا۟ বলা হয়নি?
জবাব:
যিনি এ প্রশ্ন করেছেন, তিনি আরবী ভাষায় চরম পর্যায়ে জাহেল। কারণ এখানে اولاد الامر বলা হয়নি أُو۟لِی ٱلۡأَمۡرِ বলা হয়েছে। তার অর্থ হলো শব্দটি حالة منصوب আসছে। কারণ শব্দটি اطيعوا শব্দের مفعول। অর্থাৎ এটা পূর্বের শব্দের উপর عطف হওয়ার কারণেই أُو۟لِی হয়েছে। এতটুকু আরবী জ্ঞান যাদের নেই তারা কিভাবে কুরআন হাদিস নিয়ে আলোচনা করতে আসেন বুঝি না।
সুতরাং উপোরোক্ত আয়াতে শুধু আল্লাহ এবং রাসুলকে সা. মানার কথা থাকলেও এ আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের কথাও মানতে বলা হয়েছে। সুতরাং সুরা মায়িদার ৯২ নং আয়াতে শুধু আল্লাহ এবং রাসুল সা. এর মানার কথা থাকাতে যদি আল্লাহ এবং রাসুল সা. সত্যের মাপকাঠি হতে পারেন, তাহলে সুরা নিসার ৫৯ নং এ আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের রা. মানার কথা থাকলেও তাঁদেরকে সত্যের মাপকাঠি মানতে নারাজ কেন?
অভিযোগ:
যারা সাহাবায়ে কেরাম রা. কে সত্যের মাপকাঠি মানেন না, তারা দলীল হিসাবে নিন্মোক্ত হাদিস পেশ করে থাকেন।
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের নিকট দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষণ আকড়ে ধরবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো, আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নত।
সূত্র: মুয়াত্তা মালেক হাদিস: ১৬৬১
এ হাদিসটি সামনে রেখে তারা দুটি প্রশ্ন করেন।
প্রশ্ন ১.
যেহেতু নবীজি সা. কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাহকে আকড়ে ধরতে বলেছেন, এখানে তো সাহাবায়ে কেরাম রা. এর কথা নেই। তাহলে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি কিভাবে হন?
জবাব:
নিন্মোক্ত হাদিসটি দেখুন।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
অর্থ: আবদুল্লাহ্ ইবন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনু ইসরাঈলের যে অবস্থা এসেছিল আমার উম্মতরাও ঠিক তাদেরই অবস্থায় পতিত হবে। এমনকি তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে আমার উম্মতেরও কেউ তাতে লিপ্ত হবে। বনূ ইসরাঈলরা তো বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে আর আমার উম্মতরা বিভক্ত হবে তিহাত্তর দলে। এদের একটি দল ছাড়া সব দলই হবে জাহান্নামী। সাহাবীগণ (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! এরা কোন দল? তিনি বললেনঃ আমি এবং আমার সাহাবীরা যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ২৬৪২ উমদাতুত তাফসীর খ. ১ পৃ. ৩৫৩
এক.
এ হাদিসে তো বাহ্যিকভাকে সাহাবায়ে কেরাম রা. আর নবীজির কথা আছে, কুরআনের কথা নাই। তাহলে কুরআন কি সত্যের মাপকাঠি নয়?
দুই.
যে নবীজি সা. এর কথা মেনে কুরআন আর সুন্নাহকে সত্যের মাপকাঠি মেনে নিলেন, সেই একই নবী সা. সাহাবায়ে কেরাম রা. এর কথা এ হাদিসে বললেন, তাহলে নবীজি সা. এর একটি হাদিস মানবেন আরেকটা মানবেন না এটা কেমন কথা।
সুতরাং আগের হাদিসটির কারণে যদি কুরআন আর সুন্নাহ সত্যের মাপকাঠি হয়, তাহলে পরের এ হাদিসটির কারণেও সাহাকায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানা জরুরি।
প্রশ্ন দুই.
এখানে تَمَسَّكْتُمْ বলে সাহাবায়ে কেরামকে বলা হয়েছে। অর্থাৎ হে সাহাবারা তোমরা কুরআন ও সুন্নাহ আকড়ে ধরো। তাহলে সাহাবারা কেমনে সত্যের মাপকাঠি হন।
জবাব:
ক.
অর্থাৎ تَمَسَّكْتُمْ বলে সাহাবায়ে কেরামকে বলা হয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ আকড়ে ধরতে। অতএব সত্যের মাপকাঠি একমাত্র কুরআন এবং সুন্নাহ। তাহলে নিন্মোক্ত হাদিসটি খেয়াল করুন।
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
অর্থ: তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং উহার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস:
এখানে নবীজি সা. সাহাবায়ে কেরামকেই রা. খেতাব করে খোলাফায়ে রাশেদীনকে মানতে বলেছেন। সুতরাং একই খেতাবে সাহাবাদের জন্যও তো খুলাফায়ে রাশেদীন সত্যের মাপকাঠি হওয়ার দাবি রাখে। সেটা কিন্তু এরা আবার স্বীকার করেন না।
খ.
শুধু কি তাই? তিহাত্তর ফিরকার হাদিসের মধ্যে জান্নাতী ফিরকাকে নবীজি সা. খেতাব করে বলেছেন, জান্নাতী তারাই যারা আমি ও আমার সাহাবাদের পথ মেনে নেবে। নবীজি সা. বলেন,
مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
অর্থ: আমি এবং আমার সাহাবীরা যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ২৬৪২ উমদাতুত তাফসীর খ. ১ পৃ. ৩৫৩
সুতরাং নবীজি সা. সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে কুরআন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরতে বলেছেন বলে শুধু কুরআন আর সুন্নাহই সত্যের মাপকাঠি যারা বলতে চান, তারা হাদিসেও তো দেখলেন যে, নবীজি সা. সমস্ত উম্মাহকে উদ্দেশ্য করে নবীজি সা. এর সাথে সাহাবায়ে কেরামকেও রা. মানতে বললেন? সুতরাং একই যুক্তিতে কুরআন-সুন্নাহ যেমন সত্যের মাপকাঠি ঠিক তেমনি সাহাবায়ে কেরামও সত্যের মাপকাঠি।
অভিযোগ:
নবীজি সা. সত্যের মাপকাঠি। এখন যদি সাহাবাদেরকেও রা. সত্যের মাপকাঠি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে সাহাবাদেরকে রা. নবীর . সমান মর্যাদা দেয়া হয়ে যায়।
জবাব:
এটা একটি অবান্তর ও খোঁড়া যুক্তি। কারণ আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের।
সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নিজেই আল্লাহ, রাসুল এবং উলুল আমরকে মানতে বলেছেন। তাহলে যদি এ অভিযোগ মানতে হয় যে, সাহাবায়ে কেরামকে রা. সত্যের মাপকাঠি মানলে সাহাবাদেরকেও রা. নবীজির সা. সমান মর্যাদা দেয়া হলো। তাহলে উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলার পাশাপাশি রাসুল সা. এবং উলুল আমরকেও মানতে বলা হয়েছে, তাহলে কি রাসুল সা. এবং উলুল আমর তাঁরাও আল্লাহ তাা’য়ালার সমান মর্যাদার হয়ে গেলেন? কি সব অবান্তর যুক্তি! উক্ত যুক্তি মেনে নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা. কে সত্যের মাপকাঠি না মানলে তো এ আয়াতটিও মানা যুক্তিসঙ্গত নয়। (নাউযুবিল্লাহ)।
অভিযোগ:
জামাআতে ইসলামীর একজন গুরুত্বপূর্ণ আলোচক আবুল কালাম আজাদ বাশার সাহেব বলেন, যারা মাসুম (নিস্পাপ) নন বা ভুল করতে পারেন, তারা সতের মাপকাঠি হতে পারেন না।
জবাব:
অথচ জামাআতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী মরহুম লিখেছেন,
عصمت دراصل انبیاء کے لوازمات ذات سےنہیں ہے، بلکہ اللہ تعالیٰ نے ان کو منصب نبوت کی ذمہ داریاں صحیح طور پر ادا کرنے کے لیے مصلحتاً خطاؤں اور لغزشوں سے محفوظ فرمایا ہے ورنہ اگر اللہ کی حفاظت تھوڑی دیر کے لیے بھی ان سے منفک ہوجائے جس طرح عام انسانوں سے بھول چوک اور غلطی ہوتی ہے اسی طرح انبیاء سے بھی ہوسکتی ہے، اور یہ ایک لطیف نکتہ ہے کہ اللہ تعالیٰ نے بالارادہ ہر نبی سے کسی نہ کسی وقت اپنی حفاظت اٹھا کر ایک دو لغزشیں سرزد ہوجانے دی ہیں، تاکہ لوگ انبیاء کو خدا نہ سمجھ لیں اور جان لیں کہ یہ بشر ہیں، خدا نہیں ہیں
অর্থঃ নিস্পাপ হওয়াটা আসলে নবীদের জম্মগত অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য নয়, বরং আল্লাহ তাদের নবুয়ত নামক সুমহান পদটির দায়িত্ব ও কর্তব্য সুষ্ঠভাবে পালন করার সুযোগ দানের জন্য একটা হিকমত ব্যবস্থা হিসাবে ভুল ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেছেন। নচেৎ আল্লাহ তায়ালা এই সংরক্ষমুলক ব্যবস্থা যদি ক্ষনিকের জন্যও তাদের ব্যাক্তিস্বত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাহলে সাধারন মানুষের যেমন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তেমনি নবীদের ও হতে পারে। এটা একটা বড়ই মজার কথাা যে, আল্লাহ কোন না কোন সময় তার নিজের সংরক্ষন ব্যাবস্থা উঠিয়ে দিয়ে দু-একটি ভুল-ত্রুটি ঘটে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, যাতে মানুষ নবীদের কে সৃষ্টিকর্তা মনে না করে।”
সূত্রঃ তাহীমাত খ:২ পৃ:৫৬ নির্বাচিত রচনাবলী খন্ড: ২ পৃ:৭৩-৭৪
উক্ত কথা দ্বারা বুঝা গেল নবীরাও ভুল করেছেন,
সুতরাং যেহেতু যারা নিস্পাপ নন, তাদেরকে সত্যের মাপকাঠি মানা না যায়, তাহলে নবীদেরকেও সত্যের মাপকাঠি মানা যাবে না। নাউযুবিল্লাহ।
আসল কথা তো হলো, নবীজি সা. কোনো গুনাহ যেমন করেননি, ঠিক তেমনি কোনো সাহাবিই দ্বীনি বিষয়ে কোন ভুল তথ্য দিয়ে যাননি।
অভিযোগ:
তারা তো গুনাহও করেছেন।
জবাব:
১. নেক বা আমলের ক্ষেত্রে তাঁরা মাপকাঠি, গুনাহের জন্য নয়।
২. তাদের তওবার আগ্রহই দেখুন